আমার মনে হয় এই পৃথিবীতে প্রধানত দুই ধরনের জ্ঞান পিপাসু আছে। এক হলো বই পিপাসু, যাকে বলে ‘বুক স্মার্ট’ আর আরেক হলো নিজের বা পরের অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞান নেওয়া ‘স্ট্রিট স্মার্ট’। আমাদের সবার মধ্যেই এই দুই উপায়ে জ্ঞান আহরণের ইচ্ছা ও শক্তি আছে, কোনটা কম বা বেশি। আমার নিজের মধ্যে হয়তো স্ট্রিট স্মার্ট টাইপটা বেশি, কারণ মোটা মোটা জ্ঞান গর্ভ বই পড়তে গেলে আমার প্রবল ঘুম আসে। কিন্তু তথ্য জানার ইচ্ছার শেষ নাই, তাই আমি যা করি তা হলো কোটি কোটি প্রশ্ন করে আশে পাশে সবার মাথা খারাপ করে ফেলি। উত্তর যতই উদ্ভুত হোক আর আজব হোক, আমি আগ্রহ নিয়ে হাসি মুখে সবার সব উত্তর আর মন্তব্য শুনে যাই, কারণ আমি একজন হাসি খুশি সহনশীল মানুষ। কিন্তু ইদানিং আমি মানুষের অদ্ভুতুড়ে কথা শুনে রাগ সামলাতে পারি না, কুসংস্কারাছন্ন উত্তর শুনলে বমি আসে, রাগে দুঃখে ঐ “জ্ঞানী”-দের দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতে ইচ্ছা করে। মানুষের মহা বিরক্তিকর উত্তর তাদের মুখের থেকে না শুনে বা ইউটিউব ভিডিও থেকে না দেখে, মোটা মোটা বই অনেক কষ্টে হাতে তুলে নিচ্ছি। অন্তত মানুষের অদ্ভুতুড়ে প্রশ্ন এবং উত্তর শুনে রাগে তাদের আক্রমণ করে জেলে যাবার থেকে বোকা বই পড়ে মাথা চাপড়ানো অনেক ভাল। আর বইটা যদি হিজিবিজি হয় আমি ওটাতে বার কয়েক মাথা ঠুকরে উচু শেলফে উঠিয়ে রাখতে পারব! কিন্তু, মানুষকে একবার মুখে থেকে গালি দিলে ওটা আর ফেরত নেবার উপায় নেই।

যাই হোক, আমার অনেক বিরক্তির মধ্যে একটা বিশাল নাটকীয় বহিঃপ্রকাশ নিয়ে কিছু বলব বলে ভাবলাম। যারা আমার আগের লেখাটা পড়েছেন, তারা জানেন হয়তো আমি উচ্চশিক্ষার জন্য গায়ে বিদেশের বাতাস লাগাচ্ছি। আমার নানান দেশের বন্ধুদের মধ্যে প্রতিবেশি দেশের অনেক বন্ধু আছে। প্রথম যখন জানলাম আমার বেশির ভাগ সহপাঠী ভারতের, খুশীর সীমা ছিল না আমার। টেলিভিশন দেখে, গান শুনতে শুনতে এতদিন যা হিন্দি শিখেছি তা এখন ভাল মত প্রেক্টিস করা যাবে। কিন্তু কথপোকথনের প্রথম দুই মিনিটেই জানলাম এরা শাহরুখ খান এর হিন্দি বলার ভারতীয় না, এরা সব রজনীকান্ত-এর দেশের লোক। হিন্দি এর ‘ক’ ‘খ’ ও জানে না। বেশীর ভাগই তামিলনাড়ুর, কেউ অন্ধ্র প্রদেশের বড়জোর মুম্বাই এর। মোট কথা এদের সবার থেকে আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা “কেয়া হুয়া, হুক্কা হুয়া” হিন্দি অনেক অনেক গুন ভালো। যাক, আমাদের কথপকথনের পনের মিনিটের মাঝে জানলাম, ভারত শুধু ফারাক্কা বাঁধ বা টিপাইমুখ বাঁধ দিয়ে তার ছোট্ট প্রতিবেশী দেশকেই শুধু ছিলা দেই নাই, দক্ষিণ ভারতেরও সুযোগ পেলে কল্লা কাটা করেছে এবং এখনো করছে। আমরা একজন আরেকজনের সাথে নিজেদের আচার-রীতি, খাবার, সঙ্গীত, সামাজিকতা, ধর্মীয় ভাবানুবাদ সব আদান প্রদান করতে থাকলাম। দিল্লীর “আন্তপ্রদেশ/আন্তর্জাতিক শোষণ, দুষ্টু-রাজনীতি” আমার দক্ষিণভারতীয় সহশিক্ষার্থীদের কাছে এই অভাগা বাঙ্গালকে দেশি ভাই বোন বানিয়ে দিল খুব সহজেই। দেখতে দেখতে সৌহার্দের দুটি বছর কেটে গেল। মাঝে দিয়ে কদিন আগে বাধ সাদলো আমার এই সদ্য কুসংস্কার সহ্য না করতে পারা অটুট মনোভাব।

আমার দক্ষিণ ভারতীয় সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু, ধরুন তার নাম দিলাম সীতা। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা এই দক্ষিন ভারতীয় মেয়ে-এর সহজ সরলতা আমাকে বরাবর মুগ্ধ করেছে। সে কখনো কারো সাথে উচ্চ স্বরে কথা বলে না, তার সরলতার সুযোগ নিয়ে তাকে সব সময় আমরা ক্ষেপাতাম, বেচারা রাগে দুক্ষে আড্ডা থেকে চলে যেত। ক্লাসের বেশিরভাগিই হিন্দু/মুসলিম/খ্রিস্টান-দের ধর্মের খারাপ দিক নিয়ে প্রবল তর্ক করে, আমরা সবাই South Park কার্টুন সিরিজ দেখে হাঃ হাঃ হিঃ হিঃ করি, সীতা কানে আঙ্গুল দিয়ে বসে থাকে, ধর্ম নিয়ে কোনো রসিকতা শুনবে না। মাঝে মাঝে রেগে গেলে তামিল ভাষায় গালি টালি দেয় এই যা। এই সুযোগে আমি তামিলের কিছু অতি নিরীহ টাইপ গালি শিখে গেলাম। ধর্ম নিয়ে আমাদের যা তর্ক হতো, তার চেয়ে বেশী তর্ক হত দক্ষিন ভারতীয় কাস্টিং নিয়ে। যারা বাংলাদেশের কাস্টিং এর সাথে এর তুলনা করছেন, ভুল করছেন। এদের ১০০ এর ও বেশি কাস্ট, আর দক্ষিন ভারতীয়রা বিবাহ ক্ষেত্রে এই কাস্ট মেনে চলে অন্ধের মত। বাবা মা এর অমতে অন্য কাস্টের এমনকি নিজের কাস্টের কাউকে নিজ ইচ্ছায় বিয়ে করা মানেই পরিবারের তুমি আর অংশ না!! আমরা এগুলো নিয়ে তুমূল আলোচনা চালিয়ে যাই। সব নাস্তিক-আস্তিক দক্ষিন ভারতীয় বন্ধুরা এর বিপক্ষে থাকলেও আমাকে জানায় কম বেশী তাদের সবার পরিবার এই কাস্ট এর বাইরে চিন্তাই করতে পারে না। আশ্চর্জনক ভাবে কাস্টিং এর পক্ষে সাফাই গাইতে থাকে আমাদের সবার প্রিয় সীতা। ও একটা মেয়ে, তাই কোনো এক আজব কারনে পরিবারের সামনে ভাল মেয়ে সাজার এই একটাই কঠিন পরীক্ষা, বিদেশে উচ্চ শিক্ষায় অধ্যয়ণরত সীতাকে বাবা-মা,মামা, চাচা-ফুপু, দাদা-নানি চৌদ্দগুষ্টি, জ্যোতিষতত্ত্ব-এর পুরোহিত, চন্দ্র দেবতা- সূর্‍্য দেবতা সবার মত অনুসারে, একি কাস্টের এক উল্লুককে বিয়ে করতে হবে!! এবং এই নিয়ে ওকে কিছু বলা যাবে না, বললেই চোখ লাল করে সীতা কান্না কান্না চেহারা করে বাড়ি চলে যায়।

সীতা আমার খুবই প্রিয় বন্ধু, কিন্তু আমি তাকে কাস্ট নিয়ে বেশী ঘাটাই না। ক্লাসের ছেলেগুলো ওকে বেশি গুতালে, সীতাকে রক্ষা করতে ঝাপিয়ে পড়ি। যে কটা তামিল গালিও শিখেছি, ওগুলোই ভাঙ্গা তামিলে চিৎকার করে ঝাড়তে থাকি, সবাই সীতা কে ছেড়ে দিয়ে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে। এই জন্যই কিনা জানি না, সীতার সাথে আমার একটা আত্মার বন্ধন তৈরী হয়। ও আমার সাথে নিজের চিন্তা ভাবনা ভয় ভীতি শেয়ার করে। বলে যে সে কাস্ট কে দুই চক্ষে দেখতে পারে না, কিন্তু কিছু করার নাই। এমনকি আমাদেরই এক পরিচিত ভারতীয় ছেলেকে তার মনে মনে খুব পছন্দ, কিন্তু কিছুতেই সে সেটা নিয়ে ভাববে না কারণ তারা একই কাস্ট এর হলেও কোনো এক সাব কাস্ট এক না। আবার যদি একও হয়, তারা এক এলাকার না!!! এই কাস্ট আর সাব কাস্ট আমার মাথা খারাপ করে দিত। আমি ওকে বুঝাতে থাকি এটা কোন ব্যাপার না, ও যাতে ওর মনের কথাকেই গুরুত্ব দেয়, বাবা মা এর অবুঝ কাস্টিং সিস্টেম না। ও আমার সব কথা এক কান দিয়ে শুনে আর আরেক কান দিয়ে বের করে দেয়। আমাকে হাস্যকর সব লজিক দিতে থাকে। আমি ওকে বুঝাতে থাকি। আমার ওর জন্য খুব মায়া জন্মে। কি করব আমি ওর জন্য! কি করতে পারি। প্রজেক্ট এর কাজে দুই জন দুই দিকে চলে গেলাম, কথা হলো না অনেক দিন।

কদিন আগে আমরা আবার একত্রিত হলাম। সে আমাকে কথা প্রসঙ্গে বলল যে সে আর পূজা করে না। সে অনেক চিন্তা করেছে, এই অকারণ ধর্ম বিশ্বাসের কোনো মানে নেই। আমিও একই পথের পথিক। পরিচিত কাউকে ভুলেও বলি নি আমার ধর্মীয় যাত্রাভঙ্গের কথা, আমার মনে অনেক ভয়। আপনজন দ্বারা নিগৃহীত হবার ভয়। ধর্মীয় মৌলবাদীদের দ্বারা কল্লা হারানোর ভয়। এই দূর দেশে যখন আমারই পথের আরেক পথিককে পেলাম, কি যে খুশি হলাম বলার মত না। দুই জন নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম। সীতা ডকিন্স, হিচেন্স এদের নাম কখনো শুনে নাই, আমি ওকে ওদের ভিডিও লিঙ্ক দিতে থাকলাম। দুইজনই আমরা খুব আগ্রহ নিয়ে ডকিন্স এর লেখা পড়ছি। ও আমারি মত বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী, তাই এগুলো নিয়ে একসাথে পড়াশোনা করা সহজ। গোল্লায় যাক থিসিস এর কাজ। মাঝে দিয়ে আমি জোরেসোরে আবারো ওকে কাস্টিং নিয়ে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করলাম। আমাকে সে তরুণ তামিল কবি মিনা কান্দাস্বামী এর কবিতা পড়তে দেয়, যদিও আমি কবিতা কিছু বুঝি না, কিন্তু এই তামিল মেয়ে এর ইংরেজি কবিতা পড়ে ভালোই লাগলো। আমি সীতা কে কাস্টিং নিয়ে প্রতিবাদী লেখা লিখতে বললাম। সে খালি আমার কথা শুনে আর শুনে। এই বিষয় আসলেই খালি বলে, “সম্ভব না সম্ভব না”, আর নিজের দূঃখের কথা চিন্তা করে কান্না কাটি করে!!

অনেকে হয়তো ডকিন্স এর কুসংস্কার এর বিরুদ্ধে “SLAVES TO SUPERSTITION” টাইটেলে অনেক ভিডিও দেখেছেন। ওখানে হোমিওপ্যাথি, স্পিরিচুয়াল হিলিং এর পাশাপাশি জ্যোতিষতত্ত্ব নিয়ে অনেক কথা আছে। ডকিন্স তার প্রায় সব বইয়েই কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস এর বিপক্ষে বিজ্ঞানকে দাঁড় করিয়ে গেছেন। আমিও খুব আগ্রহ নিয়ে সীতাকে এগুলো নিয়ে পড়তে বললাম। একদিন সকালে দেখি তার মুখ খুব ভার। আমাকে বলে, সবকিছু তুমি ধর্মীয় পর্যায়ে নিয়ে যাও কেন? আমি তার হঠাৎ প্রশ্ন এর আগা মাথা কিছুই বুঝি না। হঠাৎ করে সে বলে উঠে, “ডকিন্স যে জ্যোতিষতত্ত্ব নিয়ে কথা বলেছে তা কুসংস্কার, কিন্তু সীতার নিজের অঞ্চলের, তথা দক্ষীণ ভারতীয় জ্যোতিষতত্ত্ব নাকি অতি পুরানো বিজ্ঞান। এই জ্যোতিষতত্ত্ব পশ্চিমাদের(!!!)জ্যোতিষতত্ত্ব না, এটা চার হাজার বছর পুরানো একটা খুবই বিজ্ঞানভিক্তিক astronomical chart. এই চার্টের মাঝখানে পৃথিবী বসিয়ে, চারদিকে সব গ্রহ নক্ষত্র ক্রমানুসারে বসানো আছে, যা এখনকার যেকোন astrological তথ্যের সাথে পুরাপুরি মিলে যায়। এখানে অনেক কঠিন গাণিতিক গণনা করা হয়েছে যা সব নির্ভূল, পুরহিতরা বিশাল বড় গণিতবিদ, ডকিন্স কিছুই জানে না”। পুরহিতরা বিশাল বড় গণিতবিদ এটা আমি যোগ করলাম, ও ওটা ঠিক ওভাবে বলে নাই! কিন্তু এই কথাগুলো শুনা মাত্র আমি জানি না কেন, মাথায় মনে হলো একটা বোম বাস্ট হলো। এত রাগে, এত উচ্চস্বরে আমি এর আগে জীবনে বুঝি দুইবার চিৎকার দিয়েছি। জানি না কেন, ওদিন হঠাৎ ধৈর্্যের সব বাধ ভেঙ্গে গেল!

আমরা হয়তো মিনিট তিরিশ গলাবাজি করেছি। আমি আর শান্ত শিষ্ট সীতা দুইজনই। আমি একটুকু গর্ববোধ করছি না, বরং নিজের রূঢ় ব্যবহারে আমি বিস্মিত। কিন্তু আমাদের চিৎকারের কিছু কথা ছিল এমন,
– জ্যোতিষতত্ত্ব বিজ্ঞান হয় কি করে?
–এটা অনেক পুরানো বিজ্ঞান, এবং অনেক গাণিতিক প্রমাণের পর এই বিজ্ঞান এসেছে।
-কি? গাণিতিক প্রমাণ? দেখাও আমাকে কি গাণিতিক প্রমাণ।
— আমি জানি না, আমার সময় হয় নি পড়ার, কিন্তু আমি এই চার্টগুলো বিশ্বাস করি।
-কেন তুমি শুধু শুধু একটা জিনিস বিশ্বাস করবা, ওটা ঠিক কিনা যাচাই করবা না, না যেনেশুনে বিজ্ঞান দাবী করবা!
–আমি কি সব কিছু জানি নাকি? তুমি যে origin of universe কিছু না পড়েই সব বিশ্বাস করসো, তোমাকে প্রমাণ দেখাতে বললে পারবা এখন দেখাতে, দেখাও এক্ষণ দেখাও। যেহেতু তুমি কিছু পড় নাই, তাই তুমিও আমার মত এই ধারার সব বিজ্ঞানকে বিশ্বাস কর, প্রমাণ ছাড়া।

আমি কথপকথনের এই পর্‍্যায়ে সত্যি একটু হতভম্ব হয়ে যাই, আমি ফিজিক্স এর ছাত্র নই, কিন্তু তার মানে এই না যে আমাকে অঢেল টাইম দেওয়া হলে আমি থিওরিগুলো বুঝবো না। আমার থিসিস এর মাঝে তার কথাটা ভুল প্রমাণিত করার জন্য আমি সব ছেড়ে ছুড়ে কসমোলজি পড়া আরম্ভ করবো না। আর আমি বিশ্বাস করি মানে!! আমি বিজ্ঞানীদের কাজকে বিশ্বাস করি, কারণ তারা বৈজ্ঞাণিক জার্নালে লেখে, অন্য বিজ্ঞানীরা, যারা ঐ ধারায় কাজ করে তারা তাদের কাজকে পর্‍্যালোচণা করে! সব শেষে আমরা সাধারণ পাঠকরা গনমাধ্যম থেকে জানতে পাই যে, নতুন কোন থিওরী বৈজ্ঞাণিক সমাজে গ্রহনযোগ্যতা পাচ্ছে। ওকে আমি এই কথাগুলোই বললাম, হয়তো অনেক জোরেসোরে, কারণ গায়ের রক্ত তখন গরম। ওকে সায়েন্স আর সুডো সায়েন্স এর কথা আবার স্মরণ করিয়ে দিলাম। ও PhD এর ছাত্রী এখন, ওকে এগুলো নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নাই। আমরা যারা এখন evolutionary science সম্পর্কে একটু আধটু জানি, সে তাদের বড় বড় ল্যাবগুলোতে কাজ করে। ও তো গাধা, বা ও তো বিজ্ঞানের ছাত্র না- এমন তো না, যে বিজ্ঞান কিভাবে কাজ করে ওকে আমার বুঝাতে হবে। বহুক্ষণ গলাবাজির পর যখন ওকে বললাম, Astrology কোন সায়েন্স না, এটা সুডো সায়েন্স, ও যাতে কখনই ওটাকে সায়েন্স দাবী না করে, হিন্দু মিথলজির মত ওটাও কোন কাজের না। এই পুরহিতদের তথাকথিত জ্যোতিষগণনাই ওর নিজের জীবনের সবচেয়ে বড় কাঁটা! কোথাকার এক মঙ্গল গ্রহ ওর জীবনের সব দিক নির্দেশনা দিচ্ছে! ও আর আমার বিষ কথা সহ্য না করতে পেরে কেঁদে উঠে বলে, আমি নাকি তার ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিচ্ছি!!! আমার সব রাগ, মুখের কথা নিমিষে চলে যায়!! ফেল ফেল করে ওর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে নিশব্দে মাথা নিচু করে আমি বের হয়ে যাই রুম থেকে।

রাস্তা দিয়ে ঐদিন যখন একা একা হাটছিলাম, খুব হতাশ লাগছিল। এই সীতাই গত দুই মাস ধরে নিজেকে আমার কাছে অধার্মিক হিসেবে দাবী করে আসছে, এই মেয়েই আগামীর বৈজ্ঞানিক, মুক্তমনের পথচারী। কিন্তু যখনি তার সর্বশেষ কুসংস্কারে আঘাত পড়ল, তখনি সে মুক্তমনের পথ ছেড়ে দিয়ে ধার্মিক হবার পথ ধরে নিল, কারন ধর্মের অজ্ঞানতাই কেবল মাত্র এ যুগের বিজ্ঞানভিক্তিক পৃথিবীতে তাকে দিতে পারে একটুখানি আশ্রয়। এই মেয়ে হয়তো ১০ বছর পর জাকির নায়েকের মত ভাষণ দিবে, বেদ হচ্ছে বিজ্ঞানভিক্তিক বই ইত্যাদি ইত্যাদি। হয়তো সামাজিক ভাবে এই কাস্টকেন্দ্রিক জ্যোতিষতত্ত্বই ওকে বাধ্য করে এরকম একটা অবৈজ্ঞাণিক প্রথাকে মনে প্রাণে মেনে নিতে। এরকম ভাবে, আর কত মানুষ আবারো ধর্মীয় কুসংস্কারের ছত্রছায়ায় চলে যাবে! হয়তো ও শুধুই তর্কের পর্‍্যায়ে বলেছে, হয়তো পরে ভূল বুঝতে পারবে। কিন্তু আমি আর এই ব্যাপারে খোজ নেই নি। ওর সাথে দেখা হয় প্রতি নিয়ত, কিন্তু কখনো আর আগের মত আড্ডা হয় না, যেন কোথাও একটা সুর কেটে গেছে। আমার সত্যি মাথা ব্যাথা নেই। “স্বশিক্ষিত মানুষই কেবল সুশিক্ষিত”। কুসংস্কারচ্ছন্ন মানুষের সাথে হাই-হ্যালো ছাড়া কি বলব। আমার জ্ঞান সীমিত হতে পারে, কিন্তু ঐ সীমিত জ্ঞান তো খাঁদ সম্পন্ন হতে পারে না। এসব নতুন নতুন চিন্তাই ঘোরপাক খায় মাথায়।

ঐদিন রাস্তায় এক মিতভাষী লোককে বলতে শুনছিলাম “Meekness and Humility, God’s cure for Pride, Haughtiness and Egotism.” – আমি মনে মনে বলি, ওরে দুনিয়া, আরেকটা গডলেস্‌, ইগোইসটিক নাস্তিকের জন্য তৈরী হয়ে যাও, গাধা কে গাধা বলব নাতো কি বলবো!