[ভাষান্তর- আতিকুর রহমান সিফাত]

“বিজ্ঞান প্রাণের জটিলতা ও শৃঙ্খলা ব্যাখ্যা করতে পারে না। নিশ্চয়ই ইশ্বর এভাবে সবকিছু সাজিয়েছেন।”

ধর্মগুলোর প্রাথমিক কাজ ছিল মোটের ওপর আদিম গুহা মানবেরা যেসব প্রাকৃতিক ঘটনার ব্যাখ্যা করতে পারতো না সেগুলার ব্যাখা দেওয়া। যেমন ধরুন বজ্যসহ বৃষ্টি ও অগ্নুৎপাত মত প্রাকৃতিক শক্তিগুলোকে দেবদেবী প্রেরিত মনা করা হত। এখন বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে এটা পরিস্কার যে কিভাবে ও কেন এই জিনিসগুলা ঘটে, এখন আর এসবের ব্যাখ্যায় ইশ্বরের প্রয়োজন নেই। একই কথা আরো নানা প্রাকৃতিক প্রকৃয়ার ক্ষেত্রেও খাটে, এবং বিজ্ঞান এসব ঘটনা ব্যাখ্যায় আরো নতুন বিশদ ও সুদূরপ্রসারী পদ্ধতি আবিষ্কারের সাথে সাথে অতিপ্রাকৃতিক ব্যাখ্যাগুলো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। যদিও এটা সত্যি যে এখনো পৃথিবীতে অনেক ব্যাপার আছে যার ব্যাখ্যা আমরা জানিনা, ভবিষ্যতেও জানবো কিনা জানিনা, তবে শুধু শুধু একটা মনগড়া ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর কোন মানেই হয়না। প্রকৃতপক্ষে স্রষ্ঠায় বিশ্বাস কোন সমাধান না, এটা বরং “আমি জানি না” র ই নামান্তর। তথাপি দেবদেবীর অস্তিত্ব আমাদের ধাঁধার সমাধানের পরিবর্তে বরং আরো বেশি প্রশ্নের আবির্ভাব ঘটায়।
১৮০২ সালে দার্শনিক উইলিয়াম প্যালি “দ্যা টেলিওলজিক্যাল আর্গুমেন্ট” এর আবির্ভাব ঘটান তার বই “ন্যাচারাল থিওলজি” তে। এটাতে তিনি যুক্তি দেন যে মহাবিশ্ব অবশ্যই কোন বুদ্ধিমান স্রষ্ঠা দ্বারা তৈরি কারন এটা এতই জটিল যে দৈবাৎ হওয়া সম্ভব না। ব্যাপারটা বোঝানোর জন্যে সে একটা ঘড়ির সাথে তুলনা করেন; যদি তুমি বিচে হেটে যাও ও একটি ঘড়ি পাও তুমি বলবে যে এই জটিল ঘড়ি কেউ না কেউ বানিয়েছে। এটা ভাবা অযৌক্তিক যে এই ঘড়ি এমনি এমনি এখানে চলে এসছে। একইভাবে জটিলতা মানে হচ্ছে এটার অবশ্যই কোন পরিকল্পনাকারী রয়েছে।
তখন থেকেই বিজ্ঞানি ও দার্শনিকেরা এই বিষয়টি মোকাবেলা করেছে এবং দেখিয়েছে যে জটিল কোন সিস্টেমও কোন পরিকল্পনা ছাড়া তৈরি হতে পারে। প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে যে বিবর্তন হয়েছে সেটাও তারই অংশ। আমরা এখানে নকশা ছাড়া জটিলতার ব্যাপারটা সাধারণভাবে খতিয়ে দেখবো, তবে আপনি চাইলে সহজ ও ছোটকরে বিবর্তন কিভাবে কাজ করে তা ব্যাখ্যা করা ভিডিও EvolutionSimplyExplained.com সাইটটি ঘুরে দেখে আসতে পারেন।
গণিতবিদ জন কনওয়ে “দ্যা গেম অব লাইফ” নামে একটি মডেল বানিয়েছিলেন। সেটায় দেখে গিয়েছিল কিভাবে গুটিকয়েক নিতান্ত কোষ থেকে গণিতের সাধারণ সূত্র মেনে জটিল সব কিছুর আবির্ভাব হতে পারে। গেমটিতে একজন খেলোয়াড় কোষগুলোর প্রাথমিক একটা প্যাটার্ন তৈরি করে দিয়ে গণিতের কিছু হিসেব অনুসারে এদেরকে ছেড়ে দেন বংশবৃদ্ধি ও ধ্বংস হওয়ার জন্যে।

জনবহুল পরিসরেঃ
*যদি কোন কোষের আশেপাশে এক বা তার কম প্রতিবেশী থাকে তাহলে সেটা মারা যাবে
*যদি কোন কোষের আশেপাশে চার বা ততোধিক প্রতিবেশী থাকে তাহলে তা মারা যাবে
*যেসব কোষের আশেপাশে তিন বা চার টা প্রতিবেশী থাকবে তারা টিকে থাকবে

শূন্য পরিসরেঃ
*তিনটি প্রতিবেশী থাকা কোষগুলো জনবহুল হবে

প্রাথমিক অবস্থার ওপরে ভিত্তি করে বিভিন্ন খেলার ফলাফল ব্যাপকভাবে আলাদা হতে পারে। কিছু অবিশ্বাস্য জটিল ও প্রতিসম নকশা তৈরি করে যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলে। অন্যরা বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে একেবারে স্থবির হয়ে পড়ে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিনত নকশাটি কোষের আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী গণিতের সূত্রে মেনেই ঘটে, খেলোয়াড়ের সচেতন আচরণ দিয়ে না। খেলাটি থেকে এটা বোধগম্য হয় যে একটি সিস্টেমের পক্ষে নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হতে পারে এবং আস্তে আস্তে আরো জটিল ফলাফলের দিকে ধাবিত হতে পারে কোনরূপ বাহ্যিক হস্তক্ষেপ ছাড়া। সহজ সূত্র থেকে আবির্ভূত হওয়া জটিল সব জিনিস যা কিনা চমকপ্রদভাবে সুন্দর নকশার মত করে বিস্তৃত হচ্ছে ও মিথস্ক্রিয়া করছে এমন কিছু ভিডিও দেখতে চাইলে FromBasicLaws.com সাইটে ঘুরে আসুন।

জটিলতাই নকশা তৈরি করে না

ঘড়ির উপমা টা এখানে খাটে শুধুমাত্র এই কারণে যে এটা প্রাকৃতিক না এবং এমনি এমনি হয়ে যায় না। যদি নকশাই প্রকৃতপক্ষে সবকিছুর মূলে থাকতো তাহলে একটি পাথর ও ঘড়ির মধ্যে কোন মৌলিক পার্থক্য থাকতো না কারন তারা একই বুদ্ধিমান স্রষ্ঠা দ্বারা পরিকল্পিত। সেক্ষেত্রে আমরা নকশাকৃত ও নকশা ছাড়া জিনিসগুলোকে আলাদা করতে পারতাম না, ফলশ্রুতিতে এই টার্মটাই গুরুত্বহীন হয়ে পড়তো। নকশা ব্যাপারটা আদতে প্রাকৃতিক ঘটনার সাথে সাংঘর্ষিক।

যদি জটিলতার জন্যে স্রষ্ঠা প্রয়োজন হয় তাহলে স্রষ্ঠা কে কে সৃষ্টি করলো?
এটাই সম্ভবত নকশাকৃত জটিলতার মূল সমস্যা। দেবতা কে টেনে আনলেই জটিলতার সমস্যার সমাধান হয় না; এটা নতুন আরেক সমস্যার জন্ম দেয়। যদি সকল জটিল জিনিস তৈরি হতে স্রষ্ঠার দরকার হয় তাহলে স্রষ্ঠার নিজের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না কেন? সেই জটিল দেবতার তৈরি হওয়ার জন্যে আরো জটিল দেবতার প্রয়োজন নয় কি? এবং এভাবে চলতে থাকবে অনন্তকাল।
মহাবিশ্বের জটিলতা বিজ্ঞানিরা প্রতিনিয়ত অনুসন্ধান করে চলেছে, এবং আমরা হয়তো কোনদিনও সকল উত্তর পাবো না। সেটা কোন সমস্যা না। কোন প্রশ্নের উত্তর না জানলেই সেটাকে রূপকথা দিয়ে ব্যাখ্যা করা গ্রহণযোগ্য অজুহাত হতে পারে না।

সূত্রঃ
1)Paley, William, and Matthew Eddy. Natural Theology: or, Evidences of the Existence and Attributes of the Deity, Collected from the Appearances of Nature. Oxford: Oxford University Press, 2006.
2) Gardner, Martin. “Mathematical Games The Fantastic Combinations of
John Conway’s New Solitaire Game ‘Life.”” Scientific American 223, October, 1970, 120-23.