লিখেছেন: শামিম মিঠু

“মুক্তমনার” অন্যতম শ্রদ্ধেয় লেখক জনাব “স্বপন মাঝি” সদর উদ্দিন আহমেদ চিশতির রচিত “মাওলার অভিষেক ও ইসলামের মতভেদের কারন” পুস্তকের নাম উল্লেখ করায় আমার কিছু কমন পড়লো। তাই মুক্তমনার কমেন্টারস হিসেবে আত্মপ্রকাশ হল। মুক্তমনার নিয়মিত পাঠক জনাব জিল্লুর রহমানের মাধ্যমে “মুক্তমনার” সন্ধান পাওয়ার পর থেকে গত চারমাস ধরে নিয়মিত পাঠ করে যাচ্ছি ও বিভিন্ন বিষয়ে মন্তব্য ব্যক্ত করছি । মূলতঃ আমি পাঠক, পাঠ করাই আমার ধর্ম। তবে সমঝদার পাঠক নই। যার দরুন আমার মন্তব্য অজ্ঞতার কারনে ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। লিখতে হলে যে পূর্ব প্রস্তুতিসহ ধৈর্য লাগে সেক্ষেত্রে আমার কোনটাই নেই। তারপরও যেমন মনের আনন্দে লালন-রবীন্দ্র-নজরুলের গজল ও সঙ্গীত শুনে আপন মনে গুনগুন করে গেয়ে উঠি, ঠিক তেমনি বিভিন্ন সাহিত্য পড়ে মনের সাধ মিটিয়ে নিজেকে বোঝার ও চেনার; জানার ও শেখার জন্য বা নিজের জন্য নিজে লিখি। সেটাকে লেখা বললে ভুল হবে, কারন তাতে সম্মানিত লেখক মহোদয়গনের লেখাকে অবমাননা করা হবে। অন্ততঃ পাঠক হিসেবে আমাকে দ্বারা তা অসম্ভব।বিশ্বসাহিত্য দরবারে লেখকের অভাব নেই। কিন্তু সমঝদার পাঠকের বড়ই অভাব। সমঝদার পাঠকই কেবল লেখক তৈরিতে সহায়ক। শরৎবাবুর বিখ্যাত উক্তিটি প্রায়ই মনে পড়ে “পা থাকলে হাটা যায়, হাত থাকলেই লেখা যায় না”। তাঁর মানে লিখতে মাথা লাগে। আর সেই মাথা বা মন-মস্তিষ্ক এখনও আমার গড়ে উঠেনি। তবুও যদি লিখি তাহলে হবে স্ববিরোধিতা।

মুক্তমনার সম্মানিত লেখকদের লিখিত বিভিন্ন বিষয়-সমূহ যথাঃ ধর্মীয়-সাহিত্য, ইতিহাস, বিজ্ঞান, দর্শন, সংস্কৃতি প্রভৃতি ধারাবাহিকভাবে আলোচিত-সমালোচিত ও প্রকাশিত হচ্ছে এবং হবে। কিন্তু আন্তরিকভাবে দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে যে, একজন নবীন পাঠক হিসেবে সময়ের স্বল্পতার কারনে বা সুযোগের অভাবে ও নানান অজুহাতে সবকিছু ঠিকমত বিস্তারিত পড়ে উঠতে পারিনি। অল্পবিস্তর চোখ বুলিয়েছি মাত্র। যারপরনাই মুক্তমনার কাউকে ও তাদের লেখাকে ভালো করে বুঝে উঠতে পারিনি এবং সেগুলি নিয়ে সুচিন্তিত, জ্ঞানগর্ভ গবেষণা ও নিরপেক্ষ দর্শন, বস্তুনিষ্ঠ ও বাস্তব, গঠনমূলক সমালোচনা ও বিচার-বিশ্লেষণ করে নিজের ভিতরের অজ্ঞতা-অন্ধকার ও কুসংস্কার, অপবিশ্বাস ও অপবিজ্ঞান, মিথ্যা, মোহাবিলতা, কলুষ-কালিমামাখা বস্তুবাদী ও ভাববাদী মন মানসিকতা থেকে কতটুকু মুক্ত হয়ে বা উত্তোরিত হয়ে আধুনিক সচেতনশীল জ্ঞানময় হাল-হাকিকতে ও উন্মুক্ত আলোয় নিজেকে উদ্ভাসিত করতে পারবো কিনা সেটাই এখন প্রশ্নঃ আমি কি মুক্তমনা?

ছোট বেলায় একসময় পিতৃ-তান্ত্রিক পৌত্তলিক ধর্মের প্রতি আমি অনুগত-অনুরক্ত ও অনুগামী ছিলাম। ১৯৮৩ সালে যখন আমি ছয় বছরে পা দিলাম ঠিক তখনই “ঈদুল ফিতর” নামে এক ধর্মীয় উৎসবের দিন প্রসবকালীন অবস্থায় “কন্যা-সন্তান” জন্মদান কালে Proper Treatment and nursing এর অভাবে মাত্র ২৬ বছর বয়সে অকালে মা আমার দেহ-ত্যাগ করলেন। সে সময়ে অনেকে অনেক কথা বলেছিল, “হায়াত-মউত আল্লার হাতে!!! আয়ু ছিলনা!! তাই মৃত্যু হয়েছে। আল্লার মাল আল্লাই নিয়ে গিছে! একদিন তো সবাই মরবে, দু’দিন আগে আর পরে ইত্যাদি ইত্যাদি”।. কোন কিছুই ভাল করে বুঝে উঠতে পারিনি, তখন অবুঝ ছিলাম। তাই সবকিছু খুব সহজেই মেনে নিতে পেরেছিলাম। কিন্তু এখন নানান যৌক্তিক কারণে আমার মন মেনে নিতে পারছে না। যেমনঃ ভুল-চিকিৎসা, পারিবারিক অযত্ন- অবহেলাই কি তাহলে রাইট ছিল? এখন আমার মুক্তমন জানে, “What’s the true or right? My free thinker knows ………..” সামাজিক অবিচার ও নিপীড়নের স্বীকার হলাম আমি এবং আমার মা। মা তো মরেই বেঁচে গেল, রয়ে গেলাম এই আমি অধম-ছন্নছাড়া-হতছাড়া, ক্ষ্যাপা পাগল মনটা । তখন কাঁচা হাতে শৈশবে ছড়া-কবিতা লিখি এভাবে

“মৃত্যু”
(১)
মা, মাগো
তুমি আজ কত দূর?
রেখে গেলে একা,
ছন্নছাড়া-হতছাড়া, ক্ষ্যাপা যেন আমি।
যখন আমায় কেউ বলে,
“মা ছাড়া পুত,
স্বর্গ ছাড়া ভূত”।
তখন মোর প্রাণে বাজে
দুঃখের ঘন্টা।
কেঁদে উঠে পাগল মনটা।
গেয়ে উঠে-
আমারই ক্ষুদ্র দেহখানি
কেন হবে মরন!
এ কেমন নিয়তির বরণ
মাটির দেহখানি
মাটিতে লুটাইয়া পরিবে
প্রাণ পাখি আমার
কোথায় যাবে চলে?

তারপর আবার কৈশোরে লিখি-

“মৃত্যু”
(২)
“দেহ হতে মন
হয় যদি পৃথকীকরণ
হয় যদি মৃত্যু বরণ
প্রকৃতির এ-দেহখানি
প্রকৃতিতেই রইবে
কোন সে মহাকাশে,
মহাশুন্যে বা বায়ুমণ্ডলে
প্রাণ-পাখি যাবে উড়ে?
মৃত্যু, তুমি চিরন্তন-সত্য-সুন্দর, শ্বাশ্বত
অন্তিম পরিনতিতে তোমার মাঝে
পাইবে কি সবাই তারে খুজে?
যুগে-যুগে কত সাধক,
মনী-ঋষি ও জ্ঞানীগুণী
তার প্রেমে-ধ্যানে-খেয়ালে
র’হে ভালবেসে।
মৃত্যু, তোমার মাঝে
সবাই তারে পায় কি খুঁজে অবশেষে?
মৃত্যু, তুমি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
রক্ষা করে চলো প্রকৃতির ভারসাম্য।
তুমি দূর কর,
ধর্ম-বর্ণ, উচু-নিচু, ধনী- দরিদ্র
যত সব ভেদাভেদ বৈষম্য;

অতঃপর যৌবনে এসে আবার লিখি-
“মৃত্যু”
(৩)
মৃত্যু, তুমি দেহ-মন বিচূর্ণকারী
সবার তরে সপ্তৈন্দ্রিয়-দুয়ারে এসে কর আলিঙ্গন;
দূর কর অবসাদ
এবং সব যন্ত্রনার কর অবসান,
তুমি সমুন্নত; সুমহান,
তোমায় ভুলে মন যে রহে
সংসার-দুনিয়ার মোহ-মায়ার বন্ধনে
কাম-ক্রোধ, লোভ-মোহ, অহম-হিংসার ছলে
আজ বারে বারে নীরবে-নিভৃতে
ব্যাকুলিত হিয়ার মাঝে,
পুরুষোত্তম নজরুল;
খুব বেশী তোমায় মনে পড়ে,
তুমি চির বিদ্রোহী বীর,
চির উন্নত, সুমহান তব শির!
একদা বৃটিশ পুলিশ
পিস্তল দেখিয়ে,
যখন তোমায় বলেছিল,
“মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও!”
সে কী যে অট্টহাসি হেঁসে,
হাঃ হাঃ হাঃ করে তুমি হেঁসে বললে,
“কোথায় মৃত্যু?
মৃত্যুকে আমি খুঁজে বেড়াই”।
সেদিন তোমার অট্টহাসি দেখে-
সমস্ত ভয়-ভীতির উৎস
মৃত্যুও ভয়ে পালিয়েছিল
কোন সে সুদূর!!
তোমার কাব্যে তুমি বলেছিলে,
“মৃত্যুর যিনি মৃত্যু
আমি স্মরণ নিয়াছি তাঁর
ওরে নাই,নাই মোর চিত্তে
মৃত্যুর ভয় আর”।
আজি খুব বেশি মনে পড়ে-
বারে বারে, নীরবে-নিভৃতে
গোপন হিয়ার মাঝে-
চির বিদ্রোহী মহা-বীর
বেগম রোকেয়া’র আমার বাণী,
“মৃত্যুর পূর্বে মরিয়া থাক”।
প্রাকৃতিক মৃত্যুর পূর্বে মরিয়া
যারা অমর, অব্যয়-অক্ষয়
মৃত্যুঞ্জয়ী কালজয়ী র’হে তারা,
তারাই কেবল “মুতু কাব্লা আনতা মুতু’র” –
বিধান দাতা।

শৈশবে ভাঙ্গা- কাঁচা মন অনেকের প্রেমে পরে, অনেকের দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাঁর মধ্যে যার নাম না বললেই নয় তিনি হলেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি আমার মনের মানুষ হয়ে যান, নিজেকে তাঁর মত করে ভালবাসতে শিখি। তিনি আমার প্রিয় কবি বাবরি দোলানো ঝাঁকড়া চুল, সুনিপুন নাক, কাজল-কালো ডাগর-ডাগর আঁখি, সুশ্রী মুখাবয়ব, সুঠাম দেহধারী। সৃষ্টি সুখের উল্লাসে, চোখ হাঁসে তাঁর মুখ হাঁসে, টগবগিয়ে খুন হাঁসে। নজরুলের দ্বারা দারুণ ভাবে সে সময় প্রভাবিত হই। এখনও ভালো লাগে তাঁর অসাম্প্রদায়িতা, সাম্যবাদী মানবতা, প্রেম ও বিদ্রোহী চেতনা। তাঁর প্রবল প্রেমের বলয় হতে মুক্তি পেয়েছি কিনা জানিনা? তবে মাঝে মাঝে প্রশ্ন করি নিজেকে, তুমি কি মুক্তমনা? এ-প্রশ্নের উত্তর আসেনা। কবি নীরব, তাহলে নীরবতা কি সম্মতির লক্ষণ? কবির ভাষায়,

“নিশ্চল, নিশ্চুপ মুক্ত মনে পুরিব একাকী গন্ধ বিধূর ধূপ”

মুক্তমনা’র সেই ধোঁয়াবিহীন ধূপশিখা আমার মনের মাঝে জেগে উঠেছে। যা আমাকে আমার কুসংস্কার, অজ্ঞতা, অন্ধকার, মূর্খতাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে। কাফের। বারংবার যখন আমার মনের অজান্তে জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে পিতৃতান্ত্রিক পৌত্তলিক ধর্ম হাজির হয় আমার সামনে, আমার চির চেনাজানা পরিবার-পরিজনে বিশ্ব সমাজ-সংসারে অনেকেই তো ঐ-ধর্মে দিক্ষীত, যা প্রকাশিত পায় আমাদের কার্যক্রমে, কথাবার্তায়, আচার-আচারনে, চিন্তা-চেতনায় বা স্বভাব-ধর্মে এবং উঠে আসে অজ্ঞতা, অন্ধতার কুসংস্কার, অপবিশ্বাস, মিথ, চিরপুরাতন, জরাজীর্ণ বার্ধক্য সংকীর্ণ মনগড়া ধ্যান-ধারনা, ধর্ম ও অন্ধবিশ্বাস, যা অবৈজ্ঞানিক দর্শন বিহীন কল্পনা প্রসূত, যুক্তি বিহীন ভ্রান্ত মতবাদ।

ডঃ নীলিমা ইব্রাহীম যখন একবার বলেছিলেন, “রবীন্দ্র-সাহিত্য কোরান বোঝার সহায়ক” আর তখনই মৌলীবাদী পেশীশক্তি/অপশক্তি ফতোয়া দিল, “ফাঁসী চাই, ফাঁসী চাই! নীলিমা ইব্রাহীমের ফাঁসী চাই”। এটা শুধু ডঃ নীলামা ইব্রাহিমের ক্ষেত্রে নয় বরং সকল মুক্তমনার ক্ষেত্রে এই অভিযোগ, “ওঁরা কাফের, ওঁরা নাস্তিক-যবন-চার্বাকচেলা” ইত্যাদি। আমার একজন অতি সুপরিচিত প্রিয় লেখক সদর উদ্দিন আহমদের জীবনে এরূপ ঘটনা দেখতে পাই, “তাঁর বাড়িঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে, তাঁকে বস্তুভিটা ছাড়া করে খ্যান্ত হয়নি, তাঁর লিখিত বই-পুস্তক বাজেয়াপ্ত করে, জেল-হাজতে প্রেরন করে এবং সামাজিকভাবে তিনি সহ তাঁর পরিবার ও স্বজনদেরকে বিভিন্ন অপমান-অপবাদ দিয়ে অবাঞ্জিত ঘোষণা করেছে।” পরে অবশ্য তাঁকে স্বসম্মানে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। সে যাইহোক “কাফের” প্রসঙ্গে পুরুষোত্তম নজরুল বলেছেন, ”আপনাদের দেওয়া কাফের ফতোয়া আমি গ্রহন করেছি, তবে লজ্জা হয়েছি এই ভেবে, কাফের আখ্যায় বিভূষিত হওয়ার মত বড়তো আমি হইনি। অথচ হাফেজ- খৈয়াম- মনসুর প্রভৃতি মহাপুরুষদের সাথে কাফেরের পংক্তিতে উঠে গেলাম।” “কাফের ছিল মনসুর- খৈয়াম- হাফেজ এঁরা, এ ফতোয়া গ্রহন করিলে আমিও তাঁদের সাথে উন্নীত হই”। তিনি আরোও বলেছেন, “আমরা কথায় কথায় সাম্যবাদীদের কাফের বলিয়া থাকি। কাফেরের অর্থ আবরণ বা আবৃত করে রাখা। আল্লাহ ও আমার মাঝে যতক্ষন আবরন রইল ততক্ষন আমি কাফের। যতক্ষন আবরণ অরথ্যাত ভেদাভেদ জ্ঞান, সংস্কার, কোন প্রকার বাঁধা বন্ধন আছে ততক্ষন আমার মাঝে কুফুর ও আছে। এমনি আবরণ মুক্ত, বন্ধনমুক্ত, সংস্কারমুক্ত কেউ যদি থাকে আমি তাঁর কাছে মুরিদ হিতে রাজি আছি। ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পণ। আল্লাহর পূর্ণ আত্মসমর্পণ যার হয়েছে তিনি এ দুনিয়াকে এ মুহূর্তে ফেরদৌসে পরিনত করিতে পারেন।”

নজরুল একজন মুসলিমের (আত্মসমর্পণকারীর) মুরিদ হতে রাজী ছিলেন এবং তিনি তাঁর নামের পাশে “খাদেমুল ইসলাম” লিখতেন। অথচ তাঁকে তথাকথিত ইসলাম ও হিন্দু ধর্মের ধার্মিকগণ তাঁকে কাফের উপাধিতে বিভূষিত করেন। কী হাস্যকর! বড়ই বিচিত্র ব্যাপার। মুক্ত-ধর্ম তত্ত্বের প্রবক্তা সদরউদ্দিন আহমদ চিশতী’র মত করে বলতে হয়, “সখিগো কেমনে কহি, একথা সকলি গড়ল ভেল”। অবশ্য কাফের প্রসঙ্গে তিনি তার “কোরান দর্শনে” বলেছেন, “ক্বাফারা” অর্থ ঢাকিয়া রাখা। কোরানের পরিভাষায়, “সত্যকে যারা সত্য জানিয়াও ঢাকিয়া রাখে তারা কাফের”। ইহা ছাড়া সত্য যার মধ্যে ঢাকা পড়িয়াছে সেই কাফের”। কাফেরের সংজ্ঞা যদি এরূপ সর্বকালীন ও সর্বজনীন হয় তাহলে কাফের কে নয়? আমি নিজেই তো একজন বড় কাফের।আমার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত সত্য জাগ্রত নয় বরং তা ঢাকা পরে আছে। মানুষক সত্য প্রকাশের যন্ত্র । নজরুল তাঁর কবিতায় বলেন,

“সত্যতে নাই ধানাই-পানাই
সত্য যাহা সহজ তাই
সত্য যাহা সহজ তাই
আপনি তাতে বিশ্বাস আসে।
আপনি তাতে শক্তি পাই
সত্যতে জোর জুলুম নাই।
সেই সে মহান সত্যকে মান
রইবেনা আর দুঃখ-শোক।
বিধির বিধান সত্য হোক
বিধির বিধান সত্য হোক!! (সত্যমন্ত্র)
এবং তিনি আরও বলেছেন, “সত্য স্বয়ং প্রকাশ”। সেই সত্যের সন্ধানে মুক্তমনে ছুটছি, আনমনে খুজেছি, আপন দেহমনে।স্বভাব কবি লালন সাঈজির মত করে গেয়ে উঠি,

“সত্য বল সুপথে চল ও রে আমার মন।
সত্য সুপথে না চিনিলে পাবি নে মানুষের দরশন”।
কিংবা “সত্য কাজে কেউ নয় রাজি সব দেখি তা না না না”।

আমি কে? কি আমার পরিচয়? কখন-কোথায়-কিভাবে এলাম? কোথা হতে এলাম? কেন, কী কারণে এলাম? কখন-কোথায়- কি-কারনে, কোথায় যাবো? এসব প্রশ্নের সন্ধানে ব্যাকুলিত প্রাণ সে-ই আমার আমিকে দেখার-বোঝার-জানার চেষ্টা করছি। আমার আদি উৎপত্তি স্থল, অন্ত-অবসান খোজার চেষ্টা করছি। আমি আমার সন্ধানে খুজে বেড়াই। এ সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক, যৌক্তিক ও সুচিন্তিত মতবাদ ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করার মত যোগ্যতা সম্পন্ন শক্তি যাদের আছে তারা তাঁদের কথামালা প্রমানসহ দলিল উপাস্থাপন করচ্ছেন বিভিন্ন সময়ে, বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন মিডিয়াতে। সেই সত্যটুকু যাচাই-বাছাই করার মত মন-মানসিকতা, ধ্যান-ধারনা, চিন্তা-চেতনা গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করার সামর্থ্য-যোগ্যতা, শক্তি-সাহস ও ক্ষমতা তথা সর্বোপরি জ্ঞানার্জনের আবশ্যিকতা কি আমার আছে? আমি কি মুক্তমনা? মুক্ত-স্বাধীন চিন্তাশক্তি, নির্বাচনী ক্ষমতা যদি না থাকলে আমি কিসের মুক্তমনা? কিংবা আমি প্রশ্ন হতে মুক্ত হব কি-কারনে, কিভাবে? আমাদের অধ্যাপক কিবরিয়া স্যার বলতেন, ”যার মধ্যে প্রশ্ন নেই সেটাই হল সমাধান বা উত্তর”। আমি সেই উত্তর বা সমাধান খুঁজতে আমার ভিতরে-বাহিরে তাকাই, দেখার চেষ্টা করি এবং বোঝা ও জানার চেষ্টা করি। কবে আমি প্রশ্নবান হতে মুক্ত হব? মনের মাঝে অসংখ্য প্রশ্নের ভীরে আমি আমাকে আমার মত খুজে বেড়াই কেন? আমি কি আমার আপন? কিছুই জানি না, কিছুই বুঝি না?

আমি কি মুক্তমনা?

মুক্তমনা তোমায় করি উপাসনা
তোমায় নিয়ে আমার যত সব ভাবনা,
বাস্তব সত্য-সুন্দর জল্পনা-কল্পনা।
নব্য-নতুনত্বে তুমি আসো
মোর প্রানে-ধ্যানে-জ্ঞানে,
মুক্ত-স্বাধীন, চিন্তাশক্তির প্রেরনা নিয়ে-
ভেঙ্গে ফেলো যা-কিছু প্রথাগত চির পুরাতন
জড়াজীর্ণ, পরাধীন বার্ধক্যে আবদ্ধকরণ,
মোহঘেরা, গোঁড়া, মনগড়া ভ্রান্ত ধ্যান-ধারনা।
মুক্তমনা, তুমি লৌকিক বাস্তবিক
সত্য অনুসন্ধানে
সত্যে তরে ধেয়ে চল
ধীর-স্থির-অচঞ্চল স্বনির্ভর
মুক্ত-স্বাধীন মন নিয়ে।
তুমি কর সত্যের আহ্বান
গেঁয়ে উঠ বিশ্ব-মানবতার জয়গান
তুমি ভাব-বস্তু, ধর্ম-নিরপেক্ষ
নির্মোহ, নিঃস্বার্থ, নির্বিকার সত্যাকার
জাতি-ধর্ম-বর্ণ, গোত্র প্রথা মুক্ত
“সবার উপরে মানুষ সত্য”
এই তো তোমার ব্রত।
সৎকর্মশীল, কল্যাণকামী মানব প্রেমিক
প্রেম, ত্যাগ আর সেবার বিমূর্ত প্রতীক
কলুষ-কালিমা মুক্ত
মননশীলতায় বিবর্তিত-
বিশুদ্ধ রূপান্তরিত ও জন্মান্তরিত।