বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তার বহির্গামী নাগরিকের হাতে প্রথম বারের মতো যে সবুজ রঙ্গের পাসপোর্টটি ধরিয়ে দেয়া হয়েছিল তাতে দুইটি দেশ ছিল নিষিদ্ধের তালিকায় এর একটি ইস্রাইল ও অন্যটি দক্ষিণ আফ্রিকা।ইস্রাইলকে নিষিদ্ধ করার কারন অতি সরল।কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিষিদ্ধ করা ছিল অধিক তাৎপর্যপূর্ণ।সময়ের বিচারে একে এক দুঃসাহসী এবং স্পর্ধিত সিদ্ধান্ত বলে মনে হলেও তাতে ছিল একটি বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের মহান স্বপ্ন আর অঙ্গীকার কিন্তু স্বাধীনতার অসাধারণ সব প্রাপ্তির সাথে বিশাল অপ্রাপ্তির জায়গা হলো সব ধরণের বৈষম্য দূরীকরণে নিদারুণ ব্যর্থতা । মানুষে মানুষে ধর্মে ধর্মে সমাজে সমাজে বৈষম্যের দেয়াল ক্রমশঃ উঁচুই হচ্ছে।দরিদ্রের কাছ থেকে ধনী চলে যাচ্ছে স্পর্শাতীত দুরত্বে ধর্মীয় সংখ্যাগুরুদের আগ্রাসনে সংখ্যালঘুরা বিপন্ন জনগোষ্টিতে পরিনত আর সামাজিক সংখ্যাগুরুদের কাছে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন সামাজিক সংখ্যালঘুরা।শেষোক্ত শ্রেণীতেই পড়েন সিলেটের মাইমাল সমাজ।মাইমাল পৃথক কোনও মানব গোত্র বা আদিবাসী উপজাতী নৃগোষ্টির কেউ নয়। এরা এই সমাজেরই একটি অংশ একই বর্ণ একই আকার আকৃতি অভিন্ন ভাষা সংস্কৃতি।ব্যবধান শুধু পেশাতে অর্থাৎ মাইমাল একটি পেশাভিত্তিক সমাজ ।সিলেটে মুসলমান সমাজ পেশার ভিত্তিতে হিন্দু সমাজের মতো বহুধাবিভক্ত নয় মোটাদাগে বলা যায় দ্বিধাবিভক্ত। এই দ্বিধা বিভক্ত সম্প্রদায় হলো বাঙ্গাল এবং মাইমাল।যাদের বর্তমান বা আদি পেশা মাছধরা বা মাছ বিক্রয় করা তারাই হলেন মাইমাল আর বাদ বাকী সবাই হলেন বাঙ্গাল।আরও স্পষ্ট করে বলা যায় যারা জল আর জালের উপর নির্ভরশীল তারাই জালুয়া বা মাইমাল আর যারা হাল বেয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তারাই হালুয়া বা বাঙ্গাল।

কিন্তু স্মরণাতীত কাল থেকে পাশাপাশি অবস্থান করা এই দুই সম্প্রদায়ের সম্পর্কের মাঝখানে যে দেয়াল ছিল একাবিংশ শতাব্দীতে এসেও সে দেয়ালে সামান্য চিড়ও ধরেনি।বিশেষ করে সংখ্যাগুরু বাঙ্গাল সমাজের কাছে মাইমাল সম্প্রদায় সেই প্রাথমিক অবস্থা থেকে অবজ্ঞা আর অবহেলাই পেয়ে আসছেন।যদিও বৃহত্তর বাঙ্গালী মানস গঠনে দুই সম্প্রদায়ের শ্রমলব্ধ ফসল সমান অবদান রেখেছে।হালুয়ার উৎপাদিত ধান বা ভাত আর জালুয়ার ধৃত মাছ খেয়েই গড়ে ওঠেছে ‘মাছে ভাতে বাঙ্গাল’ এর মন ও শরীর।এই নিরিখে দুই পেশাই মহৎ কিন্তু এই দুই পেশাজীবী সমাজ কী করে আশরাফ আতরাফ বা উৎকৃষ্ট নিকৃষ্টে বিভাজিত হয়ে গেল তা নির্ণয় করতে হলে শেকড়ে যেতে হবে। অবশ্য তারপূর্বে সিলেটের এই সামাজিক বর্ণবাদ সম্পর্কে সামান্য আলোকপাত করা প্রয়োজন নইলে একজন ননসিলেটীর পক্ষে সিলেটের অভ্যন্তরের এই সমস্যাকে অনুধাবন করা বেশ কঠিন হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই অঞ্চলের মানুষ হিসেবে একেবারে শৈশবকাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত অনেক অন্তরঙ্গ বন্ধু পেয়েছি যারা মাইমাল সম্প্রদায়ভুক্ত আমি কখনো তাদের আচারে আচরনে বর্ণে চেহারায় ভাষা সংস্কৃতিতে কোনও ভিন্নতা খুঁজে পাইনি।পাওয়ার সঙ্গত কোনো কারণও নেই।এই বন্ধুদের কেউ সফলতার শীর্ষে উঠেছেন কেউ ব্যর্থ হয়ছেন কিন্তু এরা কেউ আত্নীক গঠনে চিন্তায় মননে হৃদয়বৃত্তিতে আমার থেকে ভিন্ন এটা আমি কখনো দেখিনি। কিন্তু শুধু ভিন্নতা নয় ভয়াবহ ভিন্নতা আবিষ্কার করব তখনই যখন আমি এদের কারো সাথে কোনো সামাজিক সম্পর্ক করতে যাব।আমার সমাজ তখন রে রে করে তেড়ে আসবে যেন আমি ভয়ানক কোনো অপরাধ করতে চলেছি।সমাজের বাধা উপেক্ষা করলে আমাকে বা আমার পরিবারকে একঘরে করে ফেলা হবে।একজন মানুষকে বা একটি পরিবারকে একঘরে করে রাখার চেয়ে বড় নিপীড়ন আর কী হতে পারে?এই একাবিংশ শতকে এসেও সামাজিক বর্ণবাদের এই উৎকট প্রকাশ অন্যজেলার মানুষের কাছে বিষ্ময়করই মনে হবে।আরও বেশী হতাশার ব্যাপার উচ্চ শিক্ষিতেরাও এই ব্যাধি থেকে মুক্ত হতে পারেননি। এত বড় একটি সামাজিক ইস্যু যুগের পর যুগ সরবে এবং সদম্ভে বয়ে চললেও সিলেটের লেখক গবেষকদের লেখায় চিরকালই তা উপেক্ষিত থেকে গেছে।ইসলাম সকল ধর্মান্তরিত মুসলমানকে এক পংক্তিতে স্থান দিয়েছে বলে মোল্লা মৌলভীরা দিবারাত বয়ান ঝাড়লেও সিলেটের মাইমাল সম্প্রদায় কেন পংক্তিভুক্ত নয় এ ব্যাপারে তাদের টু শব্দটিও নেই। মাইমাল সমাজের বিরুদ্ধে বাঙ্গাল সমাজের বড় অভিযোগ এরা আচার আচরনে উগ্র এবং অমার্জিত।‘মাছবাজার’ বাগধারাটি সম্ভবতঃ এই ধারণা থেকেই উদ্ভূত।অভিযোগটি স্থানকাল ভেদে আংশিক সত্য হলেও এর মনস্তাত্ত্বিক কারণটি খতিয়ে দেখা হয়না।একটি সম্প্রদায়কে যুগ যুগ ধরে অন্যায় অন্যায্যভাবে ব্রাত্য করে রাখা হলে তাদের মানসিকতায় একটি স্থায়ী চাপ পড়বেই।মাইমাল সম্প্রদায়বহুল এলাকায় এদের কারো কারো উদ্ধত ও অগ্রহণযোগ্য আচরনের জন্য মাঝে মাঝে সেই অঞ্চলের গোটা সম্প্রদায়কে তার চড়া মূল্য দিতে হয়।আমার জানামতে বৃহত্তর সিলেটের একটি উপজেলায় একাধিকবার এরকম অনাকাংখিত ঘটনা ঘটেছে।একজন ব্যক্তির অন্যায় আচরনের প্রতিক্রিয়ায় গোটা উপজেলার মাইমাল সম্প্রদায়কে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।নিরাপত্তার অভাবে অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রত্যন্ত এলাকায় পালিয়ে যান।খাল বিল জলাশয়ে জেলেদের মাছ ধরা বন্ধ করে দেয়া হয়।রোজ আনা রোজ খাওয়া প্রান্তিক মানুষগুলিকে তখন অবর্ণনীয় দুঃখকষ্টে দিন কাটাতে হয়।অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়লে মাইমাল সম্প্রদায়ের নেতাগণ প্রকাশ্য গণ জমায়েতে অবমাননাকর অবস্থায় নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থণা করে তার অবসান ঘটান।রেকর্ড হিসেবে সেই অবমাননাকর দৃশ্যের ভিডিও পর্যন্ত করে রাখা হয়।মাইমাল সম্প্রদায়ের সাথে সামাজিক বৈষম্য নিয়ে প্রবীন আলেম ও লেখক মৌলানা আব্দুল্লাহ বিন সাইদ জালালাবাদীর লেখা ‘সিলেটের মাইমল সমাজ ; ঐতিহ্য থাকা সত্ত্বেও অবহেলিত’ শীর্ষক রচনা থেকে কিঞ্চিত উদ্ধৃত করছি “দেওয়ান-চৌধুরীদের মতো সেই শেরশাহী আমলের অভিজাতদের বর্তমান প্রজন্ম তো বটেই সাধারণ কৃষক ও চাষা-ভূষারাও, যাদেরকে উপর তলার লোকজন ‘কিরান’ বলে উপেক্ষা করেন, তারাও মাইমল বংশোদ্ভুত বা তাদের এলাকাবাসী জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিদের প্রতি পর্যন্ত কটাক্ষ করতে কুণ্ঠাবোধ করেন না।এ যুগের উন্নত ও শিক্ষিত পরিবেশে যেখানে উচ্চশিক্ষিত মন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ের লোকেরা পর্যন্ত নিজেদের পরিচয় দিতে চাষী ও শ্রমিক নেতা শব্দটি ব্যবহারে গর্ববোধ করেন তখন মাইমল শব্দটি একটি গালিরূপে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ফলে এ সমাজের কোটিপতি, শিল্পপতি, সচিব-যুগ্মসচিব এবং ডক্টরেট করা উচ্চ শিক্ষিত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পর্যায়ের লোকেরা পর্যন্ত হীনম্মন্যতার শিকার হয়ে থাকেন। বংশ-গোত্রপরিচয়ে পরিচিত হওয়াটাকে লজ্জাজনক বিবেচনা করেন”।ভুক্তভোগী সমাজের একজন সদস্য হিসেবে জালালাবাদী সাহেব ক্ষোভের বহিপ্রকাশ করতে গিয়ে সাধারণজনের প্রতি ‘চাষাভূষা’ ‘কিরান’ ইত্যাদি হীনতাসূচক শব্দ ব্যবহার করে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গিকে কিছুটা সংকীর্ণতা দোষে দুষ্ট করেছেন বলে মনে হলেও তাঁর লেখার বিষয়বস্তুর সাথে আমার বিন্দুমাত্র দ্বিমত নেই বরং আমি বলব বাস্তব অবস্থা তার চেয়েও অনেকগুণ খারাপ।আমার মাইমাল সম্প্রদায়ভুক্ত অন্তরঙ্গ বন্ধুগণ যখন আমার বাড়িতে আসতেন তখন সব সময় আমাকে আতংকে থাকতে হতো কখন আমার চারপাশে অবস্থান করা কোনো এক মূর্খ অসভ্য তাদের সমাজ তুলে একটি বাজে উক্তি করে বসে বন্ধুদের সামনে আমার মাথাটি হেঁট করে দেয়।এই অবস্থাটি সিলেটের সর্বত্র।উদার বৈষম্যহীন মানসিকতার অধিকারী ছাড়া এই রুঢ় বাস্তবতাটি আর কারো পক্ষে উপলব্ধি করাও সম্ভব নয়।দেশেতো বটেই বিদেশে গিয়েও এই সম্প্রদায়ের মানুষের রক্ষে নেই।কর্মক্ষেত্রে শপিং সেন্টারে সর্বত্র তাদের কান দুটিকে বন্ধ করে চলতে হয়।যারা স্বজাতীয় মানুষদের এই বিজাতীয় শব্দপ্রয়োগে বিব্রত বোধ করেন তারা অপেক্ষাকৃত বাঙ্গালমুক্ত এলাকাই বসবাসের জন্য বেছে নেন।

লালন বলে জাতের কি রূপ…
ষোঢ়শ সপ্তদশ শতাব্দীর স্পেনিশ লেখক মিগুয়েল ডি কারভেন্তেসের ‘ডন কুইক্সট’ উপন্যাসটি যারা পড়েছেন তারা জানেন নিজেকে সহসা অসাধারণ এবং অন্যকে ইতর ভাবা একটি মানসিক সমস্যা যা মানুষকে এক সময় বদ্ধ উন্মাদ করে দিতে পারে।বৃহত্তর সিলেটের ডন কুইক্সট সিম্পটম আক্রান্তদের উচিৎ জাত বর্ণের আদি ইতিহাসটি জেনে নেয়া তাহলে এই মানসিক কমপ্লেক্স থেকে এরা মুক্তি পেলেও পেতে পারেন।
বাঙ্গালী বর্ণপ্রথার উত্তরাধিকার লাভ করেছে আর্যদের মাধ্যমে।প্রাচীন আর্য সমাজ ব্রাহ্মণ ক্ষত্রীয় বৈশ্য ও শূদ্র এই চার বর্ণে বিভক্ত হলেও অনেক দৃষ্টান্ত থেকে দেখা যায় শুরুতে এই বর্ণগুলি বংশ পরম্পরাগত ছিলনা অর্থাৎ ব্যক্তির কর্মগুণে তার বর্ণ নির্ধারিত বা পরিবর্তিত হতো তার মানে ব্রাহ্মণের সন্তান জন্মসূত্রে ব্রাহ্মণ হওয়ার সুযোগ ছিলনা তেমনি শুদ্রের সন্তান শূদ্র হিসেবেই পরিচিতি পাবে তেমনটিও ছিলনা।শূদ্রের সন্তানও ব্রাহ্মণ বা ক্ষত্রিয় হয়েছে আবার ব্রাহ্মণ বা ক্ষত্রিয়ের সন্তানও শূদ্র হয়েছে। যেমন ঋষি ঐতরেয়া ছিলেন দাসপুত্র তিনি ব্রাহ্মণ হয়েছিলেন এবং ‘ঐতরেয়া ব্রাহ্মণ’ ও ‘ঐতরেয়াপোনিষদ’ রচনা করেন।সত্যকাম জাবাল ছিলেন এক পতিতার সন্তান তিনি ব্রাহ্মণ হন, প্রীষধ ছিলেন রাজা দক্ষের পুত্র তিনি শূদ্র হন।নবগ রাজা নেদিস্থের পুত্র, হন বৈশ্য আবার তার অনেক পুত্র ক্ষত্রিয় হয়ে যান।ধৃষ্ট ছিলেন নবগের পুত্র তিনি ব্রাহ্মণ হন আবার তার পুত্র হয়ে যান ক্ষত্রিয়।মাতঙ্গ জন্মেছিলেন চন্ডালের ঘরে কিন্তু তিনি ব্রাহ্মণ হন।এ রকম বর্ণ থেকে বর্ণান্তরে পরিবর্তনের অনেক দৃষ্টান্ত আছে পরিসর সীমিত রাখার জন্য কয়েকটি মাত্র উদ্ধৃত করলাম।যতদিন বর্ণ থেকে বর্ণান্তরে উন্নয়ন বা অবনমনের ধারাটি চালু ছিল ততদিন পর্যন্ত এই বর্ণপ্রথায় খারাপ কিছু ছিলনা বরং বলা যায় এটি ছিল সময়ের বিচারে একটি আধুনিক এবং আদর্শ ব্যবস্থা কেননা এ ব্যবস্থায় ব্যক্তি সত্তাকে গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি ব্যক্তি উৎকর্ষতাকেও উৎসাহিত করা হয়েছে কিন্তু কালক্রমে এই আদর্শ ব্যবস্থা যখন বংশ পরম্পরাগত মৌরসি উত্তরাধিকারে রূপান্তরিত হলো সাথে সাথেই এর বিভৎস উল্টোপিঠও সক্রীয় হয়ে উঠল।শুরু হলো সামাজিক বৈষম্যের তথা জাত্যাভিমান এবং ঘৃণ্য বর্ণভেদ প্রথার।আর্যরা যখন অনার্য দ্রাবিড় অসুরদের তথা আমাদের পূর্বপুরুষদের সংস্পর্শে আসে তখনই সম্ভবতঃ বর্ণান্তরে গমনের সচল চাকাটি থেমে যায়। বিজয়ীরা বিজিত থেকে শ্রেষ্টতর এই চিরন্তন জাত্যাভিমান থেকে সেরা তিন বর্ণ নিজেদের জন্য রেখে শূদ্র শ্রেণীটি বিজিতদের জন্য বরাদ্ধ করে দেয়।এটাও ইতিহাসের অনিবার্য ধারা। কোনও বিজয়ী জাতি বিজিতকে নিজেদের সমান পংক্তিতে বসিয়েছে এমন উদারতার নজীর বোধ হয় ইতিহাসে খুব একটা পাওয়া যাবেনা।আর্যদের মতো বিজয়ী মুসলমানরাও স্থানীয়দের প্রতি একই আচরন করেছে।উপমহাদেশের অন্যান্য বিজিত অনার্যের মতো বাঙ্গালীর শুদ্রত্বও স্থায়ী রুপ লাভ করে।পাল আমল পর্যন্ত বাঙ্গালীর একটি বর্ণ বৈষম্যহীন সমাজ ছিল বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু অবাঙ্গালী সেন রাজাদের সময়ে সেই বর্ণ বৈষম্যহীন সমাজকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়।সমাজ স্পষ্টতঃ অভিজাত ও ইতর এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।উৎপাদক শ্রেণী পরিনত হল ইতর শ্রেণীতে আর উৎপাদন ভোগকারী প্যারাসাইটরা হয়ে গেল কুলীন শ্রেণীভুক্ত।যদিও প্রথমে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছিল প্রজাদের সৎ পথে পরিচালিত করতেই এই কৌলিন্য প্রথার সৃষ্টি এবং নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে প্রজাদের জীবনধারা পর্যালোচনা করে কুলীন অকুলীন পুনর্মূল্যায়ন করা হবে কিন্তু কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তক স্বয়ং বল্লাল সেনই প্রবর্তিত নিয়ম ভঙ্গ করে রাজতোষণকে মাফকাঠি ধরে কৌলিন্য নির্ধারণ করতে শুরু করেন।এ কাহিনীটিও বেশ কৌতুহলোদ্দীপক। আনন্দভট্ট রচিত বল্লালসেন এর জীবনীমুলক কাব্য ‘বল্লাল চরিত’ থেকে জানা যায় রাজা বল্লালসেন বৃদ্ধ বয়সে পত্নী থাকা সত্ত্বেও এক ষোড়শী চর্মকার কন্যাকে বিয়ে করে প্রবল সমালোচনার মুখোমুখি হন।প্রজাদের মুখ বন্ধ করার জন্য রাজা অবশেষে এক ভোজের আয়োজন করেন যাতে ভুরিভোজের সাথে সাথে উপস্থিতদের মাঝে কৌলীন্য বণ্টনেরও ব্যবস্থা রাখা হয়।রাজার এই চাতুর্যপূর্ণ কৌশলটি আশাতিরিক্ত সাড়া ফেলে।রাজ ভোজ আর জাত সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় বাঙ্গালী দলে দলে সেই ভোজ সভায় যোগদান করে এবং রাজার অসবর্ণ তরুণী ভার্যা গ্রহণকে তিরস্কারের বদলে প্রশংসনীয় কাজ বলেই স্বীকৃতি দেয়।যে যত স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে রাজার অনৈতিক কাজকে প্রশংসিত করেছেন চাটুকাবৃত্তির মাত্রানুসারে নিজ কুলকে ততখানিই উপরে তুলতে সমর্থ হন। বল্লালসেনের মোসাহেবি করে অনেকে যেমন জাত কামিয়েছেন তেমনি তার রোষাণলে পড়ে অনেকে জাতিভ্রষ্টও হয়েছেন।যেমন রাজার কৌলিন্য বণ্টন অনুষ্টান বর্জন করে বৈদিক ব্রাহ্মণেরা জাতিভ্রষ্ট হন।আবার বল্লভানন্দ নামক জনৈক ধনাঢ্য সুবর্ণবণিক রাজাকে যুদ্ধার্থে ঋণ প্রদানে অনীহা প্রকাশ করলে রাজা ক্রুদ্ধ হয়ে গোটা সুবর্ণ বণিক জাতিকেই পতিত করেন এবং তাদেরকে নানাভাবে নিপীড়ন করেন।বল্লাল চরিত থেকে এখানে বিভিন্ন শংকর জাতি উৎপত্তির কিছু বিবরণ উদ্ধৃত করা হলো। “বৈশ্যের গর্ভে শূদ্রের ঔরষে তৈলকার জাতির উৎপত্তি হয়।বৈশ্যের ঔরষে শূদ্রকন্যার গর্ভে কন্দুক জাতির, কন্দুকের ঔরষে ব্রাহ্মণীর গর্ভে কল্লপাল জাতির, শূদ্রের ঔরষে ক্ষত্রিয়া বৈশ্যা ও ব্রাহ্মণীর গর্ভে যথাক্রমে আয়গব, বৈণ ও নরাধম চন্ডাল জাতির, শূদ্রা জাতির গর্ভে কুম্ভকারের ঔরষে পলগন্ডক জাতির, কুম্ভকার কন্যার গর্ভে শূদ্রের ঔরষে মালাকার জাতির, ক্রয়ক্রীত কন্যার গর্ভে দাস জাতির, ব্রাহ্মণের ঔরষে শূদ্রকন্যার গর্ভে নাপিত জাতির, হতভাগ্য ব্রাহ্মণ কন্যার গর্ভে শূদ্র বৈশ্য ও ক্ষত্রিয়ের ঔরষে চন্ডাল, কিরাত ও ভড় জাতির যথাক্রমে উৎপত্তি।বিভিন্ন জাত সৃষ্টির লম্বা ফর্দ থেকে বাছাই করা এই সংক্ষিপ্ত তালিকাতে দেখা যায় তথাকথিত উচ্চ বর্ণের ঔরষে ও নীচ বর্ণের গর্ভে তূলনামুলক ভাল জাতের সৃষ্টি হয়েছে আবার নীচ জাতের ঔরষে উচ্চ বর্ণের গর্ভে ব্রাত্য জাতিগুলির সৃষ্টি হয়েছে।বল্লালচরিতে এর ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে এরকম “ক্ষেত্র ও বীজ ভেদে কখন ক্ষেত্রের উৎকর্ষে কখন বা বীজের উৎকর্ষে জাতি উচ্চ বা নীচ হইয়া থাকে, কখন বা অনুলোমানুসারে জাতি মাতৃজাতির তুল্য হইয়া থাকে।গুণানুসারে কখন অনার্য কন্যার গর্ভে আর্য জাতির ঔরষে উৎপন্ন জাতি আর্য্য হয় কখন বা আর্য্যকন্যার গর্ভে অনার্য্যের ঔরষে জাত জাতি অনার্য হইয়া যায়।“উপরের বর্ণনাকে যদি আমরা একটি এনিমেল ব্রিডিং সেন্টারের বা পশু খামারের ক্রস ব্রিডিং পদ্মতির সাথে তুলনা করি তবে তা খুব বেমানান মনে হবে কি ? ব্রিডিং ষ্টকের উঁন্নত ষাঁড়ের বীজ দিয়ে যেভাবে হাইব্রীড শংকর জাতি উৎপন্ন করা হয় তেমনি যেন উন্নত আর্য্যবীর্যে বাঙ্গালীর তথাকথিত উচ্চ বর্ণগুলির সৃষ্টি হয়েছে।আরও হাস্যকর ব্যাপার হলো শূদ্র বাঙ্গালীর মাঝে ভেদ সৃষ্টির লক্ষ্যে শূদ্রকে ভাগ করা হলো সৎ শূদ্র ও অসৎ শূদ্রে।সাধারনতঃ সৎ অসৎ নির্ণয় হয় ব্যক্তির চরিত্রগুণে কিন্তু আর্যদের বেঁধে দেয়া বিধানানুসারে কেউ জন্মই নেয় সৎ বা অসৎ হিসেবে। সেই অনিবার্য ধারা আজও চলছে।


উৎপাদক ও নান্দনিক শিল্পপেশাগুলিকে করা হলো ব্রাত্য

যে কামারের হাত দিয়ে আমাদের শিল্পের উদ্বোধন হলো তাকে নীচে নামিয়ে দেয়া হলো যে মুচির শৈল্পিক হাত আমাদিগকে চামড়ার চপ্পল পড়িয়ে সভ্য পংক্তিভুক্ত করলো তাকে শুধু নীচু নয় অস্পৃশ্য বানানো হলো।মালীকে ব্রাত্য করা হলো অথচ মালীর পেশা এখন নন্দনতত্ত্ব নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত, ধোপার কাজ এখন ড্রাই ক্লিনিং শিল্পে রুপান্তরিত, বাদ্যকর, ঢুলী, ঢুকলা, নাগারচি আদিম সমাজের ব্যান্ড দল, নাপিতের পেশা এখন নান্দনিক বিউটি পার্লারে রূপান্তরিত হয়েছে, কুমারদের মৃৎ শিল্প বাঙ্গালীর শিল্প ভাবনায় অংকুরের কাজ করেছে ,কর্মকার লৌহ শিল্পের সাথে এবং স্বর্ণকার স্বর্ণশিল্পের কারিগর। যে কৈবর্ত জাল টেনে মাছ ধরে আমাদের আমিষের জোগান দিল তাকে বলা হলো মৎস্যঘাতি চন্ডাল বা চাড়াল আর যার উৎপাদিত ফসলে জাতির ক্ষুন্নিবৃত্তি হয় তাকে করে রাখা হলো হালুয়া চাষাভূষা করে। শুধুমাত্র সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টির লক্ষ্যে সৎ অসৎ এর গ্যাঁড়াকলে ফেলে আর্যরা কাউকে উপরে তুলেছে কাউকে জায়গা দিয়েছে পায়ের নীচে।

নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলায় অবস্থিত দিবর দীঘি ও কৈবর্তস্তম্ভ।

জাতে উঠতে সিলেটের মাইমাল সম্প্রদায় ব্যর্থ কেন ?
বৃহত্তর সিলেটে চামার মেথর মালী ঢুলী যোগী তেলী ধোপা কৈবর্ত জালো নমঃশূদ্র দাস জলদাস ইত্যাদি নিম্ন বর্ণীয় মানুষ গণহারে ধর্মান্তরিত হয় মুলতঃ দারীদ্র এবং সামাজিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে।কিন্তু ইসলাম গ্রহণ করেও সুদীর্ঘকাল তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন খুব একটা হয়নি।W.W. Hunter তার A statistical account of Assam গ্রন্থে সিলেটের মুসলমান প্রসঙ্গে লিখেন “ In point of social rank they take precedence of the Hindus, but Islam does not appear to be now much progress in the District. A convert however, is occasionally obtain from among the low castes of the Hindus community ,who change their faith from interested motive. ধর্মান্তরের কয়েক শতাব্দী ধরে বহিরাগত এবং স্থানীয় তথাকথিত অভিজাত মুসলমানদের কাছে এরা চাষাভূষা মাইমাল হালুয়া জালোয়া নানকার ষাইটা খানে বাড়ির মানুষ ইত্যাদি তুচ্ছ এবং অবমাননাকর অভিধায় পরিচিত ছিল আর হিন্দুদের কাছে ছিল অস্পৃশ্য ম্লেচ্ছ যবন তুর্কা ইত্যাদি ঘৃণাব্যাঞ্জক পরিচয়ে পরিচিত।ধর্মান্তরের পর সিলেটের নিম্নশ্রেণীর মুসলমানের হতাশা আর নৈতিক অবস্থান যে কতটুকু চরমে পৌঁছেছিল তার প্রমাণ সিলেটের কুখ্যাত খোজকর প্রথা।সামান্য কিছু টাকার লোভে দরীদ্র মুসলমানদের অনেকে আপন সন্তানকে খোজা বানিয়ে স্থানীয় রাজস্ব কর্মকর্তা মাল ওয়াজিবিতে হস্তান্তর করত।এজন্য শুধু ভারতবর্ষ নয় পুরো পৃথিবীর ইতিহাসেই সিলেট নামটি কুখ্যাত হয়ে আছে।(এ বিষয়ে বিস্তারিত পাবেন আমার পরবর্তি রচনা ‘সিলেটের কুখ্যাত খোজকর প্রথা ; ইতিহাসের কালো অধ্যায়’ এ) অভিজাত আর চাষাভূষাদের ব্যবধান কমতে কমতে কয়েক শত বছরের মতো সময় লেগে যায়।ইতর ভদ্রের এই সম্মিলনে অনেকে ইসলামের সামাজিক সাম্যের কৃতিত্ব আবিষ্কার করতে চান কিন্তু বাস্তব সত্য হলো অর্থনৈতিক।যে অর্থনৈতিক কারণে সিলেটের তথাকথিত ইতরশ্রেণী ব্যাপকহারে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন একই অর্থনৈতিক কারণে অভিজাতশ্রেণীর উন্নাসিকতার মরচেধরা খোলস এক সময় নমনীয় হয়ে আসে।কারণ কয়েকশত বছরের নিরন্তর জীবন সংগ্রামের মাধ্যমে এই চাষাভূষা মাইমাল জেলেদের অনেকেই বিত্তবান হয়ে ওঠেন পক্ষান্তরে পরজীবী অভিজাতদের বেশীরভাগই অন্তঃসারশূন্য খোলসসর্বস্ব হয়ে পড়েন।সরকারী সুযোগ সুবিধা সীমিত হয়ে আসলে এদের অনেকে পূর্বপুরুষের কবরকে মাজার বানিয়ে আয়ের নতুন উৎস আবিষ্কার করে বসেন অনেকে আবার অভিনব কায়দায় ছোটবড় হাটবাজারে চাদর বিছিয়ে মানুষের সাহায্য প্রার্থনা করে দোকানদার ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আলুটি মূলাটি নিয়ে জীবিকা নির্বাহের পথ বেছে নেন।গত শতাব্দীর শুরু এবং মাঝামাঝি সময়ে সিলেটের নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মুসলমানদের ব্যাপক হারে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র গমন সিলেটের সামাজিক ইতিহাসের পটভূমিকে উলটপালট করে দেয়।বিশেষতঃ লন্ডনী পরিবারগুলির আর্থিক জৌলুষ ক্ষয়িষ্ণু অভিজাতদের চোখ ঝলসে দেয় তখন এরা জাত বিক্রির দোকানদারে পরিনত হয়ে আওয়াজ তুলেন ‘ভাতের ঘরেই জাত’ আর দীর্ঘকাল অবজ্ঞা অবহেলা আর ঘৃণায় বেড়ে ওঠা ছোট থেকে বিত্তশালী হওয়াদেরও শিখিয়ে দেয়া হয় ‘জাতের মেয়ে কালাও ভালা,নদীর জল ঘোলাও ভালা’ এই মন্ত্র।দীর্ঘকাল নিষ্পেষিত থাকার কারণেই এই শ্রেণীর জাতে ওঠার আকুতি লক্ষণীয়।দেখা যায় বংশের কেউ যদি কোনও চৌধুরী পদবীধারীর সাথে সম্পর্ক স্থাপনে সমর্থ হয় তবে গুষ্টিসুদ্ধু মানুষ নামের পেছনে চৌধুরী পদবী জুড়ে দিতে শুরু করে কখনও গ্রামকে গ্রাম এই পদবী সংক্রমনে আক্রান্ত হয়ে যায়।বৃহত্তর সিলেটের একটি উপজেলার বৃহৎ সংখ্যক প্রবাসী বা অভিবাসীর নামের পেছনে চৌধুরী পদবী যুক্ত থাকতে দেখা যায়।জাতে ওঠার প্রবনতা শুধু মুসলমান নয় নিম্ন পংক্তিভুক্ত হিন্দুদের মাঝেও কিরকম লেলিহান ছিল তার প্রমান মেলে ১৯১১ সালের আদমশুমারীর প্রাক্কালে যখন আগাখান ভাইয়েরা দাবি করে বসেন হাড়ি ডোম চন্ডাল সাওতলরা হিন্দু নন তখন বর্ণহিন্দুদের টনক নড়ে আর সেসাথে শুরু হয় হিন্দুত্ববাদের আঙ্গিনার বাইরে ফেলে রাখা ছোট জাত গুলিকে হিন্দুকরণের পালা। সুযোগের সদ্ব্যবহার করে নিম্ন বর্ণরাও ইচ্ছেমতো খান্দানের দাবি করে বসেন।এদের কাছ থেকে বর্ণোত্তরনের এত বেশী আবেদন পড়েছিল যে তার ওজন না কি ছিল দেড় মন। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার সে সময়কার চল্লিশজন সেরা ব্রাহ্মণ কাগজে সই করে বিবৃতি দেন “The caste called Namasudra is Brahmin by origin beging descented from the great Brahmin, Kashypa and not Chandal” অর্থাৎ শুধুমাত্র রাজনৈতিক কূটচক্রে পতিত নমশূদ্রদের সামাজিক ষ্ট্যাটাস সহসা লাফ দিয়ে আকাশে উঠে গেল। কিন্তু এই জাতোত্তরনে সিলেটের মাইমাল সম্প্রদায় একেবারে গোড়া থেকেই অপাংক্তেয় থেকে যান।যদিও মাইমাল সমাজে জলমহাল ব্যবসায় অনেক বিত্তবানের সৃষ্টি হয় পড়ালেখা করে অনেকে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার শিক্ষাবিদ হন মন্ত্রী হন বৃটিশরাজ থেকে খানসাহেব খান বাহাদুর উপাধী অর্জন করেন কিন্তু জাতে ওঠার সিঁড়িটি তাদের স্পর্শের বাইরেই থেকে যায়।এর কারণও মুলতঃ পেশাগত।নদ নদী হাওর বিল অধ্যুষিত সিলেটে বৃহৎ সংখ্যক মানুষের পেশা হলো কৃষি এর পরেই মৎস্য। অন্যান্য প্রান্তিক পেশাজীবী সম্প্রদায়ের মানুষ ধর্মান্তরিত হয়ে সহজেই পূর্বপুরুষের বনেদী পেশাকে বর্জন করে কৃষিপেশায় যোগদান করেছে এবং কয়েক পুরুষের ব্যবধানে নিজেদের পূর্বপুরুষ ধোপা মালী হাড়ি জোলা মুচি মেথর বা অন্যান্য প্রান্তিক পেশাধীনের পরিচয় মুঁচে ফেলে অনায়াসেই এরা কৃষিজীবীদের সমাজভুক্ত হয়ে যায় কিন্তু মৎসজীবীরা ধর্মান্তরিত হয়ে পূর্বপুরুষের পেশাকে ত্যাগ করেনি বা করতে পারেনি।এর কারণ সিলেটে এদের পেশাগত ক্যানভাসের বিশালত্ব এবং স্বল্প পূঁজিনির্ভরতা।কৃষি পেশাতে প্রয়োজন জমির সেটা ক্রয়সূত্রেই হোক আর বর্গাসূত্রেই হোক সে সাথে প্রয়োজন হালের বলদ ও কৃষি সঞ্জামাদির, এসব যাদের নেই তাদেরকে হয় গৃহস্থের ঘরে কামলা থাকতে হবে অথবা মুক্ত কৃষি শ্রমিকের বা ছুটা কামলার কাজ নিতে হবে কিন্তু একজন জেলের এসব ঝক্কি ঝামেলার কোনো প্রয়োজন নেই তার একটি জাল থাকলেই হলো সেই জাল ফেলার জন্য নিখিল বিশ্ব তার নামে বরাদ্ধ।এটা স্বল্প পূঁজির স্বাধীন পেশা।কৃষিতে ফল পেতে দীর্ঘসূত্রিতার ঝামেলা আছে ,আছে প্রকৃতির আনুকূল্যের প্রশ্ন কিন্তু জেলের ফসল নগদ এবং তাৎক্ষণিক।জাল ফেললেই কম হোক বেশী হোক মাছ ধরা পড়বেই আর মাছ মানেই তার জীবিকা তার বেঁচে থাকা।এই সহজ সরল পেশাকে ত্যাগ করতে পারেনি বলেই হিন্দু মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের বিশাল অংশটি ধর্মান্তরিত হয়ে মাইমাল নামে পরিবর্তিত হলেও তাদের সামাজিক অবস্থানটি অপরিবর্তিত থেকে যায়। তাই জন্মে জন্মে বাঙ্গালী হয়েও এরা বাঙ্গালীর মূলধারায় উঠতে পারেননি আসলে উঠতে দেয়া হয়নি।মৎস্য বা নৌজীবী সম্প্রদায় স্থান কাল ভেদে বিভিন্ন নামে পরিচিত।এ প্রসঙ্গে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বিপন্ন ভাষাগোষ্ঠী পান্ডুলিপি চর্চা ও লোকসংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক রমাকান্ত দাস তাঁর ‘কৈবর্ত সম্প্রদায় ; উদ্ভব ও পরিচিতি বইয়ে লিখেছেন “দেশকালভেদে কৈবর্তরা বিভিন্ন নামে অভিহিত।নামগুলির মধ্যে তাঁদের পেশাগত ইঙ্গিত যেমন আছে, তেমনি কোনো কোনো নাম আবার হীনতাব্যঞ্জকও।যেমন-মৎস্যঘাতি, কেবট্ট, কেওট, মৎস্যজীবী, জেলে, জাইল্যা, মাছুয়া, মাছমারা, মেছো, দাস, দাশ, জলদাস, মালো, মল্লবর্মণ, রাজবংশী, ধীবর, পাতর ইত্যাদি”।১৮৭২ সালের আদমশুমারীর পেশাওয়ারী তালিকা অনুযায়ী ডব্ল্যু ডব্ল্যু হান্টার তার A Staitstical Account of Assam,Volume- 2 গ্রন্থে গনরী (Gonrhi),জালো (Jhal)পাটনী (Patuni)পদ(Pod) তিওর(Tior) নামে আরও কয়েকটি মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের নামোল্লেখ করেছেন। B.C. Allen, ‘Assam District Gazetteer Volume 2’ তে নমঃশূদ্র বা চন্ডাল ডোম পাটনী ও ভুইমালী সম্প্রদায়গুলিকেও মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ভুক্ত দেখিয়েছেন। কিন্তু এ সম্প্রদায়গুলি ধর্মান্তরিত হওয়ার পর সিলেট তথা আসাম অঞ্চলে এদের নাম হয় শুধুই মাইমল বা মাইমাল।ফার্সী মাহি আর মাল্লা মিলে হয়েছে মাহিমাল যা সিলেটী কথ্যতে মাইমালে রূপান্তরিত হয়েছে।মাহি শব্দের অর্থ মাছ বা মাছের সাথে সম্পৃক্ত মাল্লা শব্দের অর্থ মাঝি।পূর্বে পরিবহন বা যাতায়াতের অন্যতম বাহন ছিল নৌকা আর এই নৌ পরিবহন পেশাটি মাইমাল ও নমশূদ্র সম্প্রদায়ের একচ্ছত্র পেশা ছিল কিন্তু তা অবমাননাকর হবে কেন ? বর্তমান সময়ের রিক্সাওয়ালা টেক্সি ক্যাব ড্রাইভার থেকে শুরু করে ট্রেনচালক জাহাজ বিমানচালক সবইতো ভিন্ন ভিন্ন পরিবহন পেশার ক্রম বিবর্তিত রুপ।সিলেটের প্রতিবেশী জেলা সমূহেও মাইমাল শব্দের অস্থিত্ব রয়েছে যেমন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি পাড়ার নাম মাইমাল পাড়া।তবে সিলেটে এ সম্প্রদায়টিকে যেমন ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে অন্যান্য জেলায় তেমনটি নয়।সিলেটের লাগোয়া ভারতের আসাম প্রদেশের মোট মুসলমান জনসংখ্যার তিনভাগ মাইমাল সেখানে মাইমাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি আছে। Assam District Gazetteer,Volume-2 তে (Mirdha) মিরধা নামক মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কখনো মাইমাল সম্প্রদায়ের লোকদের চরম অসম্মানার্থে ‘মাছুয়া’ বলে গালি দেয়া হয় কিন্তু যারা এ শব্দটি ব্যবহার করেন তারা কি জানেন এটা হিন্দু মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের একটি শাখা এবং তা কোনো ভাবেই অসম্মানজনক হতে পারেনা।১৮৭২ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী সিলেটে এদের মোট সংখ্যা ছিল ৩৭জন।তবে সমগ্র বাংলাব্যাপীই যে এই সম্প্রদায়ের বিস্তৃতি ছিল তার প্রমাণ বাংলার আদি মূদ্রণ শিল্পের সাথে জড়িত কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ‘মেছোয়াবাজার ষ্ট্রিটে’র নামকরণ।জল মাছ আর নৌকার উপর নির্ভরশীল বলেই মাইমালপাড়া বা গ্রামগুলি গড়ে ওঠেছে জলাশয় বা নদীর তীর ঘেঁষে।যদিও বৃহত্তর সিলেটে জালিক মাইমালের সাথে সাথে অনেক হালিক মাইমালও রয়েছেন যারা ভূস্বামী হিসেবে পরিচিত এবং তাদের পেশাও জল বা মাছ নির্ভর নয়।পাল আমলে বরেন্দ্র উপত্যকায় যে বিখ্যাত কৈবর্ত বিদ্রোহ সংঘটিত হয় তা গড়ে উঠেছিল মুলতঃ হালিক কৈবর্তদের দ্বারা।পরবর্তিতে সেন আমলে প্রাণভয়ে পালিয়ে যাওয়া যুবক লক্ষণসেনকে ছব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ধরে এনে পিতা বল্লাল সেনের হাতে তুলে দেয়ার পর রাজা সন্তুষ্ট হয়ে পূর্বঘোষণা মোতাবেক কৈবর্তদের হাল কর্ষণের অধিকার দান করার ঘটনা থেকে মনে হয় সেন আমলের প্রথমদিকে হালিক কৈবর্তদের হাল কর্ষণের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছিল বল্লালসেনের মাধ্যমে যা পূনর্বহাল করা হয়।পূর্বসূরীদের হালিক জালিকের উত্তরাধিকার সিলেটের মাইমাল সম্প্রদায়ের মাঝেও লক্ষ্য করা যায়।মাইমাল সম্প্রদায়ের সিংহ ভাগ মানুষ অতিশয় দরীদ্র শ্রেণীভুক্ত তাদের সম্পদ বলতে মাথার উপর একটি চালা ছোট্ট একটি নৌকা এবং জাল।এই দরীদ্র শ্রেণীর পাশাপাশি প্রতিটি মাইমাল গ্রামেই একাধিক গৃহস্থ পরিবার থাকেন যারা স্বচ্ছল এবং বিত্তবান এদের ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করে ভাল পেশায় নিয়োজিত হন।তবে বর্তমানে পরিস্থিতি অনেক পাল্টেছে।দরীদ্র শ্রেণীর মাঝেও এখন লেখাপড়ার বিপুল আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।আশার কথা কোনো কোনো এলাকার দরীদ্র জেলে সন্তানরা মেধায় অন্য সকলকে ছাড়িয়ে যেতে শুরু করেছে।মাইমাল সম্প্রদায়ের অনেকেই সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের সাথে সমানে পাল্লা দিয়ে সমাজের নানা ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্টিত হয়েছেন বা হচ্ছেন যদিও এই প্রতিষ্টার পেছনেও তাদেরকে অনেক সামাজিক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করতে হয়।নির্মম বাস্তবতা হলো কঠোর সংগ্রাম করে প্রতিষ্টার পরেও তাদেরকে এক অবর্ণনীয় হীনমন্যতাকে সাথে নিয়ে চলতে হয়। অথচ ব্রাহ্মণ্যবাদী শাসকদের স্বেচ্চাচারিতায় অবনমিত প্রতিটি পেশাজীবী সম্প্রদায়ের মতো মৎস্যজীবী সম্প্রদায়েরও রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল অতীত ইতিহাস আর এ সম্প্রদায়ে জন্ম নিয়েছেন অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব।মেদিনীপুরের তাম্রলিপ্ত অঞ্চলে আনুমানিক ত্রয়োদশ শতকে কালু ভুঁইয়া কৈবর্ত রাজত্ব প্রতিষ্টা করেন।অনেক ঐতিহাসিকের মতে উড়িষ্যার গঙ্গা বংশীয় রাজা অনন্ত বর্মা কৈবর্ত ছিলেন।সিরাজদৌলার অন্যতম সেনাপতি মোহনলাল কৈবর্ত ছিলেন বলে অনেকে মত প্রকাশ করেন।অশোকের মৃত্যুর পর তার দৌহিত্র বৃহদ্রথকে হত্যা করে যে পুষ্ফমিত্র সিংহাসন দখল করেন তিনি কৈবর্ত ছিলেন।তার পরবর্তিতে অগ্নিমিত্র বসুমিত্র প্রভৃতি কৈবর্ত রাজাগণ রাজত্ব করেন।বায়ু পুরানে উল্লেখ আছে মৌর্য বংশের পতনের পর তেরোজন কৈবর্তরাজা মগধে রাজত্ব করেন।মৎস্যপুরাণে এ সংখ্যা বলা হয়েছে বত্রিশ।বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদ রচয়িতাদের অন্যতম লুইপাঁ বা মৎস্যেন্দ্রনাথ জাতিতে কৈবর্ত ছিলেন।বাংলার সমাজ জীবনের এক বিপর্যস্ত অবস্থায় সমাজকে নেতৃত্ব দেবার জন্য হরিদাস মন্ডল নামের এক কৈবর্ত যুবক মাত্র দুইশত উদ্যমী যুবক নিয়ে সংকোচ উপত্যকায় কামতাপুর রাজত্ব প্রতিষ্টা করেন।পাল রাজত্বের সময়ে বাংলার ইতিহাসের বিখ্যাত কৈবর্ত বিদ্রোহ সংঘটিত হয় এবং এই বিদ্রোহে দ্বিতীয় মহীপালকে হটিয়ে তার সামন্ত কর্মচারী কৈবর্ত নায়ক দিব্যক সিংহাসন দখল করেন(আনুমানিক ১০৭১-৮০) দিব্যকের পর তার ভাই রুদোক বরেন্দ্রের ক্ষমতায় আসেন তার পরে রাজত্ব করেন ভ্রাতুষ্পুত্র ভীম।ভীমকে পরাজিত করে রামপাল কৈবর্ত শাসনের অবসান ঘটিয়ে পূনরায় পাল রাজত্বের সূচনা করেন।এ ব্যাপারে আরো জানতে ‘রমাকান্ত দাস’প্রনীত শ্রমলব্ধ বই কৈবর্ত সম্প্রদায়;উদ্ভব ও পরিচিতি বইটি পড়ে দেখতে পারেন।উড়িষ্যার ভুবনেশ্বর মন্দীর,পুরীর জগন্নাথের মন্দির,কলকাতার উপকন্ঠে দক্ষিণেশ্বরের শিব মন্দির ও ভবতারিনী কালী মন্দির, নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলায় অবস্থিত দিবর দীঘি ও কৈবর্তস্তম্ভ এই জাতির কীর্তির স্বাক্ষর বহন করছে। কৈবর্ত বা জেলে মালোদের জীবন ও জীবিকা নিয়ে বাংলা সাহিত্যে অনেকগুলি স্মরণীয় উপন্যাস রচিত হয়েছে যেমন মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ‘পদ্মা নদীর মাঝি, অমরেন্দ্র ঘোষের ‘চর কাশেম, অদ্বৈত মল্ল বর্মণের ‘তিতাস একটি নদির নাম, সমরেশ বসুর ‘গঙ্গা’ ,সত্যেন সেনের ‘বিদ্রোহী কৈবর্ত, সাধন চট্টোপাধ্যায়ের ‘গহীন গাঙ, শামসুদ্দিন আবুল কালামের ‘সমুদ্র বাসর, মহাশ্বেতা দেবীর ‘কৈবর্ত খন্ড, ঘন শ্যাম চৌধুরীর ‘অবগাহন, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘গঙ্গা একটি নদির নাম ইত্যাদি।এ ছাড়া সমসাময়িক সময়ে কলকাতা থেকে প্রকাশিত রণবীর পুরকায়স্থের ‘সুরমা গাঙ্গর পানি’ এবং হরিশংকর জলদাসের ‘জলপুত্র’ ও ‘দহন’ জেলে জীবন নিয়ে লেখা উপন্যাস।শেষোক্তটি প্রথম আলোর বর্ষসেরা পুরষ্কার প্রাপ্ত।‘জলপুত্র’ প্রসঙ্গে এর লেখক হরিশংকর জলদাস লিখেছেন ‘অদ্বৈত মল্ল বর্মণের মৃত্যুর ৫৭ বছর পর আরেক জেলের হাত দিয়ে কৈবর্ত জীবননির্ভর উপন্যাস রচিত হলো জলপুত্র”। অদ্বৈত মল্লবর্মণ যেমন জেলে সম্প্রদায়ের লোক ছিলেন হরিশংকর জলদাসও তাই, আর নিজের পরিচয়ে এভাবেই নিজেকে জেলে বলে গর্বভরে পরিচয় দিয়ে সমাজের সকল লাঞ্চিত অবহেলিত প্রান্তিক সম্প্রদায়ের মানুষের অনুকরণীয় হয়েছেন হরি শংকর।সিলেটের মাইমাল সম্প্রদায়ের শিক্ষিত বিদ্বজ্জন হরিশংকরের এই লাইনটি হৃদয় দিয়ে পড়লে সামাজিক হীনমন্যতাবোধ থেকে কিছুটা হলেও স্বস্থি পাবেন।

শেষকথা
বহিরাগত অবাঙ্গালী সেনরাজারা কুলীন ইতরের ভেদাভেদ সৃষ্টি করে বাঙ্গালীর ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে ইংরেজদের অনেক পূর্বেই ডিভাইড এন্ড রুলস পলিসির প্রবর্তন করেছিল যদিও এতে তারা খুব একটা লাভবান হতে পারেনি উল্টো তাদের সাম্রাজ্যটিই তাসের ঘরের মতো উড়ে গিয়েছিল আর তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিল আরেক বহিরাগত শক্তি।সমাজ আর ইতিহাস আমুল উলটপালট হয়ে গেলেও সেনরা বিভেদের যে জোয়ালটি বাঙ্গালীর কাধে চাপিয়ে দিয়েছিল তা আমরা নির্বোধের মতো যুগের পর যুগ ধরে পরমানন্দে বহন করে চলেছি কবি নজরুলের ভাষায় বলতে পারি ‘জাতের নামে বজ্জাতি’ করে চলেছি কিন্তু এবার মনে হয় এ জোয়াল কাধ থেকে নামাবার সময় হয়েছে।এক যুক্তিহীন বিবেকহীন প্রথা অনন্তকাল ধরে চলতে পারেনা চলতে দেয়া যায়না।বৃহত্তর সিলেট এক সময় পড়ালেখায় একটি অগ্রগামী অঞ্চল ছিল কিন্তু এখন সেটা ইতিহাস।শিক্ষার হারের শোচনীয় অবস্থার মাঝেও সিলেটে এখনও অনেক বিবেকবান মুক্ত চিন্তক প্রগতিশীল মানুষ আছেন তাদের এই লজ্জাজনক ইস্যুতে সরব হওয়া প্রয়োজন।আমাদের স্বাধীনতা নির্মাণের মহান কারিগরগণ যে মহৎ লক্ষ্য নিয়ে স্রেফ বর্ণবাদের জন্য একটি শক্তিশালী দেশকে নিষিদ্ধ করেছিলেন সেই দেশটি বর্ণবাদের অচলায়তনকে কবেই অপসারিত করে তাদের বদ্ধ দুয়ারটি খুলে দিয়েছে আর কালো মানুষের অধিকার আন্দোলনের অবিষ্মরণীয় নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা সে দেশের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্টিত হয়ে যথারিতি অবসরে গিয়ে ক’বছর হয় জীবন থেকেও মহা অবসর নিয়ে ফেলেছেন সেসাথে আমাদের সবুজ পাসপোর্টে নিষিদ্ধ তালিকা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার নামটিও মুঁছে গেছে কিন্তু আমরা এখনও বর্ণবাদের ধ্বজা ধরে এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের স্বাধীনতা নির্মাতাদের অঙ্গীকারকে ক্রমাগত অবজ্ঞা আর ব্যঙ্গ করে চলেছি এর সমাপ্তি প্রয়োজন। ইংল্যান্ড আমেরিকায় বর্ণবাদের সামান্য একটি ঘটনা ঘটলেও বাংলাদেশের মিডিয়া আর সামাজিক যোগাযোগের সকল মাধ্যমে ঝড় বয়ে যায় অথচ আমাদের সারা শরীরে বর্ণবাদের অসংখ্য ক্ষত নিয়েও আমাদের অদ্ভুত নিরবতা প্রমান করে আমরা জাতি হিসেবে কত স্ববিরুধী।আমরা অন্যের মন্দ নিয়ে সমালোচনায় মুখর হলেও সেই একই নিন্দনীয় কাজ করতে আমাদের বিবেক দ্বিধাগ্রস্থ হয়না।
[email protected]

তথ্যসূত্র-

১।শীমদানন্দ ভট্ট বিরিচিত বল্লাল চরিতের বঙ্গানুবাদ-শ্রী দীননাথ ধর বি,এল কতৃক অনুবাদিত. কলকাতা ১৯০৪
২।কৈবর্ত সম্প্রদায় ঃ উদ্ভব ও পরিচিতি- রমাকান্ত দাস।শিলচর,২০১৫।
৩। বর্ণ প্রথা বনাম কৌলীন্য প্রথাঃ একটি ছোট্ট আলোচনা- অলরাউন্ডার
https://joydev93.wordpress.com/2015/04/29
৪।সিলেটের মাইমল সমাজ ;ঐতিহ্য থাকা সত্বেও উপেক্ষিত/মৌলানা আব্দুল্লাহ বিন সাইদ জালালাবাদী
http://www.alkawsar.com/author/mawlana-abdullah-bin-sayeed
৫।চন্ডালের শূদ্র হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনী- নাগরাজ চন্ডাল
saradindu-uddipan.blogspot.com/2013/06/blog-post_2213.html
৬। দিবর দিঘি ও কৈবর্ত স্তম্ভ-বাংলা পিডিয়া
/http://saradindu-uddipan.blogspot.com/2013/06/blog-post_2213.html
৭।বাংলার পথে-দিবর দিঘি ও তার রহস্যে মোড়া স্তম্ভ-তারেক অনু
http://www.sachalayatan.com/tareqanu/48540
৮।বাংলাদেশের কথা সাহিত্যে কৈবর্ত জীবন সংগ্রাম-হরিশংকর জলদাস। কালি ও কলম,অক্টোবর-২০১৬
৯। A Statistical Account of Assam-W.W.Hunter Voll-2 second reprint-1982
১০। Assam District gazetter, Volume-2,1905
১১। The Tuzuk-i-Jahangiri or Memoirs of Jahangir Translated by Alexander Rogers,Edited by Henry Beveridge Published 1909 by Royal Asiatic Society in London,Page 150-151)