রিয়াজুদ্দীন বাজারের ছাতা, মুসলিম ব্রাদারহুড ও অন্যান্য স্মৃতি – ইছামতি কিম্বা ইয়ারার তীরে ঘরবসতি (বই আলোচনা। ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন। ডঃ প্রদীপ দেব)
মাঝে মাঝে এমন হয়। আমার ধারণা, এক্ষেত্রে আমি একা নই। অচেনা জায়গায় গিয়ে আমার বারেবারে ফেলে আসা জায়গার জন্য আফসোস হতে থাকে – যেন ওখানেই বেশ ছিলাম, এখানে কেন মরতে এলাম? মানুষ তার নিজের অবস্থান থেকে অন্য সবকিছুকে বিচার করতে ভালবাসে, এবং করতে থাকে, বিশেষ করে নতুন কোথাও গেলে বা নতুন কারো সাথে সাক্ষাত হলে। একটা নতুন জায়গায় গিয়ে জাজমেন্ট করা বাদ দিয়ে তাকে দোষে-গুণে গ্রহণ করতে চায় খুব কম মানুষ। তবে তারাই জিতে যায় শেষতক। অচেনাকে আপন করতে পারা কঠিন কাজ, এবং তাকে আরো কঠিন করে দেয় পেছনের অভিজ্ঞতা আর নগদ জীবনের বন্ধুর পথ। সময়ের পরীক্ষায় পাশ করে তবেই অনেকে ইয়ারাকে ইছামতীর জায়গায় বসাতে রাজী হবেন, শুরুতেই নয়।
পড়ছি ডঃ প্রদীপ দেবের স্মৃতিচারণ কিম্বা ভ্রমণকাহিনী, ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন। যারা মেলবোর্নের বাইরে আছেন, তারা এটাকে ভ্রমণকাহিনিই বিবেচনা করুন; আমার জন্য এটা পুরাতন ছবির এলবাম। মেলবোর্নে এসেছি ২০১০ সালে। লেখক এই শহরে পড়তে এসেছেন আমার এক যুগ আগে, ১৯৯৮ সালে। ফলে তার এই বইটি আমাকে অন্য এক অদেখা মেলবোর্নের সন্ধান দিচ্ছে। আমার এলাকায় একটা লোকাল পত্রিকা আছে, যেটি প্রায় একশ বছর ধরে প্রকাশিত হয়। সেই পত্রিকায় একটা পাতা আছে, যেখানে মাঝে মাঝে ১০/২০/৩০ বছরের আগের নিউজ ছাপানো হয় – স্রেফ পুরাতন দিনের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য। (প্রথম আলোও একসময় ঢাকা প্রকাশ পত্রিকার কিছু সংবাদ ছাপাতো)। আমি নিয়মিত পড়ি। ঠিক সেরকম একটা স্বাদ পাচ্ছি পৌনে তিনশ পাতার এই বইটির পাতায় পাতায় – সেই সময়ের মেলবোর্নের রাস্তাঘাট, বাজারাদি, প্রবাসী কমিউনিটি, নানা প্রযুক্তি ও পরিবহনের খবর – সবই যেন একটু পালটে গেছে এই এক যুগে। পুরাতন ছবির এলবাম দেখছি আর মিলিয়ে নিচ্ছি, এই ক’দিনে কে কতটুকু মুটিয়ে/বুড়িয়ে/শুকিয়ে গেল।
ধারণা করছি, বইটি লেখক তার প্রথম প্রবাসের একেবারে শুরুর দিকেই লিখেছিলেন। না হলে এত্ত ডিটেইলস থাকার কথা নয়। প্রকাশিত হয়েছে ২০১১ সালে – এক যুগেরও বেশি সময় পরে। ফলে বইটির কাভারে যে ছবিটি দেখছি, সেটি এই নতুন আমলের – ইয়ারা নদীর উপরে একটা সেতুতে স্টীলের বড় যে আর্চ দেখা যাচ্ছে, সেটা গত শতকে ছিল না ওখানে। লেখক তার কোন এক প্রিয়জনকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন পুরো স্মৃতিকথাটি। সেখানে পেলাম অস্ট্রেলিয়ানদের কুখ্যাত উচ্চারণের ইংরেজী নিয়ে তার সমস্যায় পড়ার কথা, কিম্বা কালচারাল শক-তাড়িত হয়ে বিব্রত হওয়ার কথা। আমার নিজের অভিজ্ঞতার সাথে মিলিয়ে নিলাম। এমনটা আমারও হয়েছিল, যদিও ২০১০ সালে ইন্টারনেটের কল্যাণে আমি মেলবোর্ন সম্পর্কে যতটুকু জেনে আসতে পেরেছিলাম, লেখকের হাতে সেই সুযোগ সম্ভবত ছিল না ১৯৯৮ সালে। অস্ট্রেলিয়ান সমাজের নীচের তলার মানুষের সাথে বাসা শেয়ার করে থাকার অভিজ্ঞতাটা আমার হয় নি। ব্যাকপ্যাকার্স হোস্টেলেও যাইনি কখনো। লেখককে ঈর্ষা করি – তিনি একা এসেছিলেন বলেই ওরকম বাঘের ডেরায় শয্যা পাততে পেরেছিলেন। তবে বাসা খুঁজে পাওয়া আর কাজ পাওয়া নিয়ে তার যত বিচিত্র অভিজ্ঞতা, তা প্রায় সব নবাগতেরই হয়ে থাকে, যদি না তাদের কোন বন্ধু-স্বজন থাকে। আলী সাহেবেরা বরাবরই দুস্প্রাপ্য – আমার জন্য এরকম কোন আলী সাহেব ছিলেন না দুর্ভাগ্যবশতঃ।
দুনিয়া বদলায়, শুধু বদলায় না বদ্ধ সমাজের বদ্ধ বিশ্বাস আর সংস্কার। প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটি ঠিক আগের মতই রয়ে গেছে – সেই হালাল চা-বিস্কুট, মুসলিম উম্মাহ, পরচর্চা আর বড়াই। বিরক্তি বেগম কিম্বা আহামাদেরা এখনো এখানেই থাকেন। বাংলাদেশী বা সোমালিয়ান মুসলিম ট্যাক্সি ড্রাইভারেরা কল্পিত ইসলামিক ব্রাদারহুডের সন্মানে অচেনা মানুষকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, কিন্তু সেই অচেনা মানুষটি মুসলমান না হলে সেই হাত আবার ফিরিয়ে নেন। বাংলাদেশ থেকে নৌকাযোগে যারা এসেছেন সম্প্রতি, তাদেরকে সাহায্য করতে এগিয়ে গেছেন এই ‘ভার্চুয়াল’ মুসলিম ব্রাদারহুডের লোকেরাই, যতদূর জানি। তবে সে সব কথা এখানে অপ্রাসঙ্গিক।
বাংলা সিনেমায় একটা গান ছিল, যার প্রথমটা এরকমঃ আরো আগে কেন এলে না, আরো আগে ভালবাসলে না। দুই শিক্ষাব্যবস্থার নানা দিক তুলনা করে লেখকের মনে যে আফসোসের জন্ম হয়েছে, তা মোটামুটিভাবে সার্বজনীন। বাংলাদেশে আমরা যে ভাবে পড়াশোনা করি, তার সাথে এখানকার অনেক পার্থক্য – পদ্ধতি ও সংস্কৃতিতে। ফলে আমরা আগের জীবনে যা হারিয়েছি তা বুঝতে শুরু করি নতুন জীবনের শুরুতে, এবং এর ফলে দীর্ঘশ্বাস ফেলাটাই আমাদের নিয়তি। বাংলাদেশে আমরা আগে ম্যাট্রিক ইন্টার বিএ এমএ পাশ করে ফেলি, পরে গিয়ে ঠিক করি আমরা আসলে কি ভালবাসি, কি হতে চাই। এখানে উলটা। আমাদের কাছে স্বপ্নের মত মনে হয় অনেক সময়। ফলে, যা পেয়েছি তাকে উপভোগ করার চাইতে আগে যা হারিয়েছি তার শোক প্রকাশেই অনেকখানি সময় চলে যায়। আমার চেনা এক ছেলে বলল, সে তিন বছর মেডিক্যাল পড়ার পরে এক বছর ইউরোপে ব্যাকপ্যাকিং করে ঘুরে বেড়িয়েছে। পরে ফিরে এসে আরো এক বছর মেডিক্যাল পড়ার পরে (মেডিক্যাল এর পড়াশোনা মোট পাঁচবছর) সব বাদ দিয়ে ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর উপরে ডিপ্লোমা করছে। তার ইচ্ছা ভবিষ্যতে রেডিওতে কাজ করার। আমি ভাবি, এ যে স্বপ্নসম। আমার দেশে একটা ফুলের মত কিশোর এ-প্লাস না পেয়ে মৃত্যুকে বেছে নেয়। ফলে লেখক যখন শোনেন যে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্নের ডজনখানেক লাইব্রেরী থেকে একসাথে সর্বোচ্চ ষাটটি বই ধার নিতে পারবেন তার গবেষণাকর্মের জন্য, এবং তাতে তিনি আনন্দে বিহবল হয়ে যান, আমি তাতে অবাক হই না। আমরা লাইব্রেরীই চিনি না, অথচ দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বই পড়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়েছি বলেই কথিত।
লেখককে ধন্যবাদ দিতে হয় এই কারণে যে, তিনি ইয়ারাকে ইছামতীর জায়গায় বসাতে চেয়েছেন, নানা প্রতিকূলতা সত্বেও। আমি এখনো প্রবাসী বাংলাদেশীদের অনেককে শুনি ইয়ারাকে ঘোলা পানির একটা ছোটখাট খাল বলতে। আহত হই। ইয়ারাকে ভালবাসি বলে। ইয়ারার ইতিহাস জানি বলে। ইয়ারা কি করে আদিবাসীদের জীবনধারার একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, সেটা অনুধাবন করি বলে। ফলতঃ ‘ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন’ পড়ার সময় আমি ছিলাম পক্ষপাতদুষ্ট। লেখক যেমন রিয়াজুদ্দীন বাজার থেকে কেনা ছাতায় কার্লটনের বৃষ্টি সামলাতে পারছিলেন না, আমিও তেমনি ক্যাটস আই থেকে কেনা শার্ট পরে ইন্টারভিউ দিয়ে চাকুরী পাচ্ছিলাম না। এর পরে ধরলাম লোকাল মাল – টাকা টু ডলার হিসাব উপেক্ষা করে। লেখকের বাবা যেমনটা বলতেন, অঋণী অপ্রবাসী ব্যক্তিরাই প্রকৃত সুখী – সেই বেদবাক্যকে মিথ্যা প্রমাণ করতে গিয়ে ঋণী এবং প্রবাসী আমরা আসলে অনেক কঠিন পথই পাড়ি দিই। জীবনের অর্থ এখানে অন্যরকম, আর সেই জীবনে অভ্যস্ত হওয়ার চেষ্টায় লেখকের হোঁচট খাওয়াটা আমার কাছে সহমর্মিতা পেয়েছে, যেহেতু আমিও একই পথে হেঁটেছিলাম, যদিও তার অনেক পরে।
লেখকের কিছু মন্তব্য, বিশেষ করে এ দেশের মানুষের জুয়া খেলার প্রবণতা, জনসমক্ষে চুমু খাওয়া ও পতিতাবৃত্তি নিয়ে, আমার কাছে একটু বেশি জাজমেন্টাল মনে হয়েছে। কয়েক জায়গায় ‘সভ্যতা’ / ‘সভ্য’ শব্দগুলোর ব্যবহারও দৃষ্টিকটু মনে হয়েছে। তবে একজন বাংলাদেশী তরুনের প্রথম প্রবাসে লেখা স্মৃতিকথা – সেই বিবেচনা আমার আপত্তিটুকুকে দূর্বল করে দেয়।
উপরে যা লিখেছি, তা আসলে বই রিভিউ বা বইয়ের আলোচনা নয়। এটি বরং ‘এই বইটি পড়িলে কি কি জানিতে পারিবেন’ ধরণের একটি টীজার বিজ্ঞাপণ। লেখককে ব্যক্তিগতভাবে যেহেতু চিনি না, তাতে বরং সুবিধা হয়েছে – আমি তাকে বিচার করতে বসি নি এখানে। তিনি কে বা কি, সে সব না দেখে আমি শুধুমাত্র অচিন দেশে একজন নবাগত বাংলাদেশীর প্রথম প্রবাসের যে সংগ্রাম, সেভাবেই বইটি পড়েছি। পড়ে আনন্দিত হয়েছি। যারা পড়বেন তারাও একই ধরণের আনন্দের অংশীদার হতে পারবেন বোধ করি। আগ্রহীদের জন্য বইটির ফ্ল্যাপ থেকে কিছু বাক্য উদ্ধৃত করছি এখানেঃ
“বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি সাধারণ নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে শুধুমাত্র স্বপ্ন আর কিছুটা সাহস সম্বল করে লেখাপড়া করতে এসেছিল অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে। সম্পূর্ণ অপরিচিত পরিবেশ, বৈরী আবহাওয়া, দুর্বোধ্য ভাষা ও সংস্কৃতির সাথে পদে পদে ঠেকে ঠেকে তাকে করে নিতে হয়েছে নিজের পথ, নিজের জায়গা। ‘ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন’ একজন বাংলাদেশী ছাত্রের প্রথম প্রবাসের বাস্তব অভিজ্ঞতার রেখাচিত্র, যেখানে ব্যক্তিগত অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার পাশাপাশি উঠে এসেছে অস্ট্রেলিয়ার নৃতাত্বিক, ভৌগোলিক ও সামাজিক ইতিহাস। অস্ট্রেলিয়ান পরিবারের সাথে বাস করে লেখক প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের নাগরিক ও পারিবারিক সংস্কৃতি। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা ও গবেষণা করার সুবাদে লেখক কাছ থেকে দেখেছেন সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানচর্চার সংস্কৃতি। ‘ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন’ বইতে বর্ণিত ঘটনাগুলো লেখকের ব্যক্তিগত জীবন-যাপন থেকে উঠে এলেও তা প্রতিনিধিত্ব করে যে কোন বাংলাদেশী প্রবাসী শিক্ষার্থীর – প্রবাসে বিদেশ বিভুঁইয়ে যাদের একাকী সংগ্রাম করতে হয়, শুরুতে মাথা গোঁজার জন্য, পরে মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্য।”
ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন
ডঃ প্রদীপ দেব
মীরা প্রকাশন, ২০১১
বিজ্ঞাপণঃ বইটি মেলবোর্নের ওয়েস্টার্ন রিজিয়ন বাংলা স্কুলের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ভিক্টোরিয়ান বাংলা মোবাইল লাইব্রেরীর সংগ্রহে আছে। বইটি ধার নিতে হলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন (শুধুমাত্র অস্ট্রেলিয়া প্রবাসীদের জন্য)
বইটি শুধুমাত্র অষ্ট্রেলিয়াবাসিরা ধার করতে পারবে জেনে একটু কষ্ট পেলাম।
রিভিউ চমৎকার হয়েছে, পড়তে ইচ্ছে করছে।
“একদিন অহনার অভিবাসন” অনেকটা এ ধরনের বিষয়ের ওপরই লেখা। অন্য ভাষা, সাংস্কৃতি, আবহাওয়ার দেশে মেয়েদের জীবন যুদ্ধ
বইটির ‘নরম’ কপি যেহেতু নেই, কি আর করা যাবে বলুন? মুক্তমনাতেই অবশ্য ধারাবাহিকভাবে লেখাগুলি প্রকাশিত হয়েছিল। সময় করে পড়ে ফেলতে পারেন। ধন্যবাদ।
চমৎকার একটি ভ্রমণ (কিংবা জীবন) কাহিনী ‘ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন’। প্রদীপ’দার লেখা ভ্রমণ কাহিনীগুলোতে কাহিনীর সাথে সাথে উঠে আসে জীবন বোধ আর গভীর দর্শণ। কঠিন কিংবা সহজ কথা সহজে বলার অষাধারণ ক্ষমতাও তাঁর আছে। বেশ কয়েক বছর আগে বইটি পড়েছিলাম, আজ আপনার রিভিউ পড়ে ভালো লাগলো।
একথা ঠিক যে, সবার দেখার চোখ এক নয়। ফলে যারা গভীর ভাবে দেখেন, তাদের লেখা পড়ে পাঠক এক অন্য ধরণের আনন্দ পায়, যা আমি পেয়েছি এই বইটি থেকে। এটিকে ভ্রমণকাহিনী বা জীবনকাহিনী দুইই বলা যাক!
আপনার রিভিউটা চমৎকার হয়েছে। আবেগবাহুল্য নেই, অথচ প্রশংসনীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও নৈর্ব্যক্তিক আলোচনা। আশা করি, নিয়মিত থাকবেন।
চেষ্টা করব। আপনাকেও ধন্যবাদ
মুক্তমনায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে ইয়ারার তীরে মেলবোর্ন ২০০৯-১০ সালে। লেখাগুলো এখনো মুক্তমনায় আছে। অনেক ধন্যবাদ আশরাফুল আলম বইটি পড়ার জন্য এবং চমৎকার একটা রিভিউ লেখার জন্য। সময়ের সাথে কতকিছু বদলে যায় – মেলবোর্ন শহরেও বদলেছে অনেক কিছু। কিন্তু এতবছর পরেও যখন আমি ইয়ারার তীর দিয়ে হাঁটি আমার প্রথম দিনের কথা মনে পড়ে। চট্টগ্রামের পর মেলবোর্ন আমার দ্বিতীয় শহর যেখানে আমি বাস করেছি।
সময়ের সাথে সব বদলে যায়। আপনার প্রথমবারের চলন্ত সিঁড়িতে ওঠার কথা পড়ে আমারও মনে পড়ল, গ্রাম থেকে প্রথমবার ঢাকায় এসে নানা ঝক্কি ঝামেলা করে ইস্টার্ন প্লাজায় গেছিলাম শুধুমাত্র এই এস্কেলেটরে ওঠার লোভে। সে সময় ঢাকা শহরে একমাত্র ওই জায়গাতেই এই আরাধ্য বস্তু ছিল। ১৯৯৫ সালের কথা। আপনার বইটা পড়তে পড়তে আমার প্রথম প্রবাসের কথা বারবার মনে পরে যাচ্ছিল – সেই যে গ্রাম থেকে শহরে আসা!
“কিন্তু এতবছর পরেও যখন আমি ইয়ারার তীর দিয়ে হাঁটি আমার প্রথম দিনের কথা মনে পড়ে” – সে কথা আমারও। আমি এসেছিলাম সামারে। সামার এলেই প্রথম দিনটার কথা মনে পড়ে। এই তো সে দিন …
প্রদীপ দেব আমার প্রিয় লেখকদের একজন। এই বইটি পড়ার ইচ্ছা ছিল। যোগাড় করতে পারিনি। আপনার রিভিউও চমৎকার হয়েছে।
আপনাকে ধন্যবাদ। বইটা আমাদের কাছে হার্ডকপি আছে, না হলে শেয়ার করা যেত পিডিএফ না অন্য কোন ভাবে। মুক্তমনাতেই পড়ে ফেলুন, সময় করে!
আমি অনেক আগে থেকেই প্রদীপ দেবের একজন গুণমুগ্ধ পাঠক। এই বইটা সম্পর্কে আগ্রহ ছিলো অনেকদিন ধরেই। আসলেই কোনো দেশে যাওয়ার পর নতুন থাকতেই সেই দেশ সম্পর্কে লিখে ফেলা ভাল। নাইলে পরে ভিন্নতাগুলো অভ্যস্ততার আড়ালে ঢাকা পড়ে। এরা ইউরোপ আসার পর ভেবেছিলাম লিখব। শুরু করেও পরে নানা কারণে আর ধারাবাহিকতা রাখতে পারিনি। আমার আর সব প্রোজেক্টের মতই।
এই লেখাটা সুখপাঠ্য হয়েছে। এই পুরো পৃথিবীটাই আমাদের। মানুষের। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য যে দেশ-সীমানার গণ্ডি কেটে আমরা একে অপরকে পর করে রেখেছি। কখনো বাইরের গন্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেও অনেকে মনের গণ্ডি পেরুতে পারে না। তাই নতুন অভিবাসে গিয়েও নিজেদের ক্ষুদ্র একটা চক্র কেটে রাখে। এই ব্যাপারটা আমার ভালো লাগেনা মোটেই। আপনার লেখা থেকে বুঝতে পারছি আপনার মধ্যে সেই প্রবণতা নেই। নেই প্রদীপ দেবের মধ্যেও।
আপনার হল্যান্ড/নেদারল্যান্ড দর্শন চালু করুন আবার। পড়তে মন্দ লাগতো না। মুক্তমনাতেও দিতে পারেন ফেবুর পাশাপাশি।
ধন্যবাদ তানভীর।
একথা মানতেই হয়। আমি যেমন ছ’বছরে অভ্যস্ত হয়ে গেছি – কিছুতেই আর অবাক হই না, বা নতুন কিছু খুঁজে পাই না। তবে আপনার পুরাতন সেই প্রজেক্টটা আবার টার্ন-অন করে দিন, দেখবেন স্মৃতি থেকে অনেক কিছুই উঠে আসতে পারে!