আজ ১০০ দিন।
১০০ দিনই কেন গুনছি, ১০১ নয়, ১০২ নয়, ১০৩ নয় তা কোন যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারবো না। এ কি মেট্রিক পদ্ধতির পরিমাপের সাথে সংলগ্নতা, নাকি আমাদের রাউন্ড নম্বরের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ, নাকি প্রথম ত্রিপদী সংখ্যার বিশালত্বে প্রবেশ? আসলে এর যৌক্তিক মানে তো একটাই -অভি চাপাতির কোপের আঘাতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে রাস্তায় নিথর হয়ে পড়ে যাওয়ার পর পৃথিবীটা ১০০ বার ঘুরেছে নিজের কক্ষপথে। সাড়ে চারশো কোটি বছরে আমাদের ছোট্ট পৃথিবীটা তো কত লক্ষ কোটিবারই ঘুরেছে নিজের চারদিকে, সেখানে একশো’বার বার ঘুরলেই কী আর দু’শো আট বার ঘুরলেই বা কী? সব দিনই তো সমান।
আসলেই তো, কিছুতেই কিছু এসে যায় না।
একেকজন একেকভাবে স্মৃতিচারণ করে, আমাদের মেয়ে মাস, দিনের হিসেব করে না। প্রতি বিষ্যুদবার ঘুম থেকে উঠেই তার মনটা খারাপ হয়ে যায়। সেই বিষ্যুদবারে ক্লাস থেকে বেরুতে বেরুতে কীভাবে, কখন, ঠিক কোন জায়গাটায় খবরটা পেয়েছিলো তা মনে পড়ে যায়। তবে এটুকু বলতে পারি যে এই একশো দিনে বুকের ভিতরে জমাটবাঁধা কষ্টটা একটু আলগা হয়ে আসতে শুরু করলেও, হাহাকার করা শূন্যতাটার ব্যাপ্তি কিন্তু একটুও কমে নি। এখন আর নিয়ম করে আতঙ্কের ওষুধ খেয়ে ঘুমাতে হয় না, ঠিক রাত সাড়ে তিনটায় ঘুম ভেঙে গিয়ে আঁধারের বিশালতা মাপতে হয় না, সারাদিন আর একটা কথাও না বলে পাথরের মত নিথরভাবে বসেও থাকি না। অনেকে বলেন, জীবনের চাকা নাকি অমোঘ নিয়মেই ঘুরতে শুরু করেছে। আমি চাই বা না চাই তাকে থামানোর কোনো উপায় নেই। কিন্তু চারদিকে নিরন্তর এক শূন্যতা বিরাজ করে, এই একশো দিনে কেমন করে যেন আমি এই শূন্যতার অসীম চাদরটা হাত দিয়ে ছুঁতে শিখেছি, কান পেতে শুনতে শিখেছি নীরবতার শব্দ। সময়ের কাঁটা যেন একই সাথে খুব দ্রুত এবং খুব ধীরে ঘুরে চলে। কখনো আতঁকে আঁতকে উঠি নিথর নীরবতায় থমকে থাকা ঘড়ির কাঁটাটা দেখে, আবার কখনো মনে হয় নীরবতার নিরবচ্ছিন্ন কাঁটাতার ভেদ করে আমার একান্ত এই জায়গাটায় কেউ যেন প্রবেশ না করে। পরক্ষণেই আবার মনে হয়, গত ১৩টা বছর এত দ্রুত কেটে গেলো কেমন করে, চোখের নিমেষে কি করে সবকিছু ওলট পালট করে দিয়ে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যায় মানুষের জীবন।
মহাজগৎটা যে র্যান্ডম, আমার চারপাশের ঘটনাগুলো যে ইতস্তত, বিক্ষিপ্ত তা তো জানতামই। পরম উদ্দেশ্য বলে কিছু নেই, কপাল বলে কিছু নেই, নেই কোন অলৌকিক হাতের নির্দেশনা আমার জীবনের উপর। উদ্দেশ্য বিধেয় সব কিছুই এই জগতেই, সবকিছুই এই জীবনটাতেই সীমাবদ্ধ। ব্যক্তি আমার কী হলো বা না হলো তা নিয়ে বিশ্বজগতের কোনো মাথাব্যথাই নেই, নেই ইতিহাসের, নেই নিয়তি বা ঈশ্বর নামের কোনো অদৃশ্য মহাশক্তির। আসলে এখানে কোনো মাথাই নেই তো আর ব্যথা আসবে কোথা থেকে? এ প্রসঙ্গে রিচার্ড ডকিন্সের কথাগুলো মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে কতো জায়গাতেই তো লিখেছি যে, “আমাদের চারপাশের বিশ্বজগতে বিদ্যমান বৈশিষ্টগুলো দেখলেই বোঝা যায় এর মধ্যে কোনো পরিকল্পনা নেই, উদ্দেশ্য নেই, নেই কো্নো শুভাশুভের অস্তিত্ব; আসলে অন্ধ করুণাবিহীন উদাসীনতা ছাড়া এখানে আর কিছুই নেই।”
জীবনের সবচেয়ে সঙ্কটময় অবস্থায় এসে এই কথাগুলোই আজ অদ্ভুতভাবে শক্তি জোগায়।
আমার খুব কম বয়সী এক নিকটাত্মীয়ার স্বামী মারা গেছে হার্ট এ্যাটাকে কিছু দিন আগে। সে এই র্যান্ডমনেসের কথা শুনলেই খেপে ওঠে। তার একটাই কথা: আমারই এমন হলো কেনো? আমি কী করেছি যার জন্য আমার এমন শাস্তি পেতে হলো? র্যান্ডমনেস বা পৃথিবীর উদাসীনতার কথা ভাবলে তার খুব অসহায় লাগে।
কী অদ্ভুতভাবেই না কাজ করে আমাদের মাথার নিউরনগুলো! ছোট্টবেলা থেকে মাথায় গেঁথে থাকা পাপ-পুণ্যের হিসেব, কোনো অলৌকিক শক্তির শাস্তি দেওয়ার বিধানগুলো জীবনের প্রতি পদে পদে ধরে আমাদের। আর তা থেকে ‘আমিই কেনো?’ বা ‘আমিই বা নই কে্নো?’ বা ‘আমার কোন পাপে এমনটা হলো?, এই ধরনের বৃত্তগুলোর মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকি আমরা।
সব পাওয়ার পর হারানোটা খুব কষ্টের। আমাদের ছোট্ট মাথাটা খালি ঘুরেফিরে কী হারিয়েছি, কতটা হারিয়েছি, কেমন করে হারিয়েছি তার হিসেব করতে থাকে। যখন ভাবি, আমি আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে হারিয়েছি, কোনো ছোট্ট বিষয় নিয়ে রাতের পর রাত তর্ক করার সাথীকে হারিয়েছি, সুখদুঃখ মান অভিমান ভাঙ্গা-গড়া ঝগড়া ভালোবাসায় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে থাকা জীবনটা হারিয়েছি, তখন কাঁদতে না চাইলেও চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। গত তেরো বছরে দুজন দুজনকে হাতে লেখা কয়েকশো চিঠির গাট্টি খুলে পড়তে বসি, চোখের জলে ভাসি। কিন্তু তার পরক্ষণেই আবার ভাবি যে উদাসীন এই জগতের ইতস্তততার শিকার তো যে কোন সময়ই যে কেউ হতে পারে, সে হলে আমিই বা নই কেনো? মুহূর্তের ব্যবধানে সব হারানোর শোকের অতলতায় তলিয়ে যেতে যেতেও মনে হয় আমি তো একা নই, এরকম ঘটনা তো আরো ঘটেছে, ঘটছে, ঘটবে। এটাই শক্তি যোগায়, বলে ওরা পারলে আমিও পারবো জীবনের চপোটাঘাতগুলো মেনে নিতে!
যখন ধর্ষিত গারো মেয়েটাকে দেখি পত্রিকার পাতায়, চাকমা মেয়েদের একের পর এক ধর্ষণের খবর পড়ি, আইসিসের দাসি করে আটকে রাখা ইয়াজিদি নারী বা সাগরে ভেসে থাকা পাচারকৃত অসংখ্য নারী পুরুষের ছবি দেখি, তখন আসলেই বুঝতে পারি প্রকৃতির ইতস্ততার অর্থ। অন্যায়, অত্যাচার, কুসংস্কারাচ্ছন্ন দানবীয় পাশবিকতা তো অন্যান্য আমাদের মধ্যে সদা বিদ্যমান। তার শিকারও হয়েছে হাজার হাজার মানুষ, ইতিহাস জুড়েই তো আছে তার সাক্ষী। আর অভির মত যারা এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে তারা তো সমাজের ‘স্ট্যাটাস ক্যো’র বলি হয়েছে সব যুগেই। মন মানতে না চাইলেও মাথা দিয়ে তো বুঝি আমি একা নই, আমার মতো অবস্থায় বা আমার চাইতেও অনেক অনেক ভালোবাসাহীন অসহায় অবস্থায় আছে এই পৃথিবীর বহু মানুষ। ওরা পারলে আমিই বা পারবোনা কে্নো?
অভির মৃতদেহটা এভাবে ঢাকা মেডিকেলে দান করলাম কীভাবে সেটা নিয়েও আমাকে অনেকে প্রশ্ন করেছেন, খুব আন্তরিকভাবেই জিজ্ঞেস করেছেন, আমার এটা করতে খারাপ লেগেছে কিনা? না লাগে নি, খারাপ তো লাগেই নি, ভালো লেগেছে, এখনো লাগে। মনে হয়েছে আমাদের শরীরটা পচে-গলে মাটিতে মিশে যাওয়ার চেয়ে যদি মানুষের কাজে লাগে তাতেই তো অভির উদ্দেশ্য সফল হবে। সেও তো তাইই চেয়েছিল, এই ছোট্ট কাজটাও তো আমার বা অভির ধারণ করা আদর্শেরই বহিঃপ্রকাশ। এই প্রশান্তিটাও আসে সেই জীবনদর্শন থেকেই। অভি লরেন্স ক্রাউসের এই কথাটা খুব পছন্দ করতো যে, আমরা সবাই নক্ষত্রেরই সন্তান। সে তার শেষ বই শূন্য থেকে মহাবিশ্বে এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে লিখেছে, “এই জায়গায় এসে একটি মজার তথ্য উল্লেখ করব, আর তথ্যের অভিব্যক্তিটি এতোই শক্তিশালী যে, এটা আমাদের মত কাঠখোট্টা বিজ্ঞান লেখকদেরও কাব্যিক করে তোলে প্রায়শই। বিষয়টা হল-বিগ ব্যাং থেকে সবকিছুর শুরু বলে আমরা জানি। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, মহাবিস্ফোরণের পর মুহূর্তে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম কিংবা লিথিয়ামের মত মৌল তৈরি হলেও আমাদের জীবনের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যে মৌলগুলো-কার্বন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন এবং লৌহ-এগুলো কিন্তু সে সময় তৈরি হয় নি। এগুলো তৈরি হয়েছে অনেক অনেক পরে কোনো না কোনো নাক্ষত্রিক বিস্ফোরণ থেকে, যাদের আমরা মহাকাশে সুপারনোভা বলে জানি। ‘অনেক অনেক পরে’ বলছি কারণ, বিজ্ঞানীরা গণনা করে দেখেছেন, প্রথম নক্ষত্র তৈরি হয়েছিল বিগ ব্যাং ঘটার অন্তত ৭৫ কোটি বছর পরে। আর তারকার বিস্ফোরণ-মানে সুপারনোভার মত ব্যাপার স্যাপার ঘটতে সময় লেগেছিল আরো অনেক। তবে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল-আমাদের কার্বনভিত্তিক দেহ, কিংবা দেহের অভ্যন্তরে ক্যালসিয়াম দিয়ে গঠিত হাড় তৈরি হতে পেরেছে, কেননা সুদূর অতীতে কোনো না কোনো নক্ষত্র নিজেদের বিস্ফোরিত করে তার বহির্জগতের খোলস থেকে এই জীবনোপযোগী মৌলগুলো ছড়িয়ে দিয়েছিল মহাশূন্যে। অনেক পরে সেই মৌলগুলো শূন্যে ভাসতে ভাসতে জড়ো হয়েছে সূর্য নামক এক সাদামাঠা নক্ষত্রের চারপাশে ঘূর্ণনরত এক সুনীল গ্রহে, এবং শেষ পর্যন্ত তৈরি করেছে প্রাণের বিবর্তনীয় উপাদান। আমাদের ছায়াপথের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে অন্তত ২০ কোটি নক্ষত্র এভাবে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে, হয়তো আমার আপনার ভবিষ্যৎ জন্মকে সার্থক করে তুলবে বলে। আমরা সবাই আসলে নক্ষত্রের ধূলি-স্টারডাস্ট । এর চেয়ে কাব্যিক অনুরণন আর কীই বা হতে পারে?”
সে যে্নো প্রতিধ্বনিত করেছিলো কার্ল সাগানের কসমস-এর সেই অমর পঙক্তিগুলোর, যা কাব্যগুণে এতোটাই সমৃদ্ধ যে রূপকথার মহাকাব্যের মতোই শোনা যায়:
“The nitrogen in our DNA, the calcium in our teeth, the iron in our blood, the carbon in our apple pies were made in the interiors of collapsing stars. We are made of star stuff.”
মৃত্যুই যদি সব কিছুর শেষ হয়, এরপরে যদি আর কিছু না থাকে, পরকালের কোন প্রাপ্তি নয় এই জীবনের কাজের মধ্যেই যদি আমাদের বেঁচে থাকা হয় তাহলে জ্ঞান-বিজ্ঞানের দুয়ারে এই জৈবিক দেহটাকে সঁপে দেওয়াই তো সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত কাজ। কফিনের চার দেওয়ালের মধ্যেই হোক, পুড়ে গিয়েই হোক আর সাদা কাফনে জড়ানোই হোক শেষ পর্যন্ত মানুষের নশ্বর দেহটাতো পচে গলে প্রকৃতিরই অংশ হয়ে যাবে। আর যে নক্ষত্রের ধূলিকণাগুলো, অণু পরমাণুগুলো এতদিন আমাদের দেহ গড়েছিল তারা আবার উন্মুক্ত হয়ে গড়বে নতুন কোন জীবের দেহ। প্রকৃতির চক্র এভাবেই তো ঘুরতে থাকে।
আরজ আলী মাতুব্বর তাঁর উইলে মরণোত্তর দেহদান নিয়ে তাঁর চিন্তা ও আদর্শ এভাবেই লিপিবদ্ধ করে গিয়েছিলেন,‘আমি আমার মৃতদেহটিকে বিশ্বাসীদের অবহেলার বস্তু ও কবরে গলিত পদার্থে পরিণত না করে, তা মানব কল্যাণে সোপর্দ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আমার মরদেহটির সাহায্যে মেডিক্যাল কলেজের শল্যবিদ্যা শিক্ষার্থীগন শল্যবিদ্যা আয়ত্ত করবে, আবার তাদের সাহায্যে রুগ্ন মানুষ রোগমুক্ত হয়ে শান্তিলাভ করবে। আর এসব প্রত্যক্ষ অনুভূতিই আমাকে দিয়েছে মেডিকেলে শবদেহ দানের মাধ্যমে মানব-কল্যাণের আনন্দলাভের প্রেরণা।‘
তাঁর এবং এমনি আরো অনেকের অভিজ্ঞতা, অনুভূতি, প্রয়োজনীয়তা এসব তুলে ধরে অভি মুক্তমনায় একটা ব্লগও লিখেছিলো, সেখানে সে আহ্বান জানিয়েছিলো সবাইকে এব্যাপারে এগিয়ে আসার। ( https://blog.mukto-mona.com/2012/08/22/28869/) এবং সেখানে সে জানিয়েছিলো যে, সে নিজেই মরণোত্তর দেহদান করেছে। তার এই ইচ্ছাটা বাস্তবায়ন করে আমাদের দুজনের মতাদর্শের প্রতি আমি আস্থা পুনর্ব্যক্ত করেছি, সাথে তার লড়াইয়েরও অসম্মান হতে দেই নি বলেই ভাবি। অভির বাবা, ড অজয় রায় অভির খুনের ২৪ ঘন্টার মাথায় এসে আমাকে হাসপাতালের আইসিইউ তে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘ মা তুমি গুল্লুর (অভিকে গুল্লু ডাকেন উনি) দেহ নিয়ে কী করতে চাও, এ ব্যাপারে তোমাদের সিদ্ধান্ত কী ছিল? হাতে দুটো অপশন আছে, ধর্মীয় মতে দাহ করা যায় বা হাসপাতালে দান করা যায়। তোমরা নিশ্চয়ই প্রথমটা চাইবে না…’। আবারও শ্রদ্ধায় নত হয়েছি ওনার কাছে। আমার সাথে অভির সম্পর্কের সেই প্রথম থেকেই বাবা এভাবেই আমাদের সব কিছুতে সমর্থন দিয়ে গেছেন!
আমি নিশ্চিত জানি অভিকে যদি বলা হত যে তুমি হয় এভাবে প্যাশানের জন্য, যা বিশ্বাস কর তার জন্য অকালে জীবন দাও, অথবা লেখালিখি বাদ দিয়ে অনেকদিন বেঁচে থাকো, আমার দৃঢ় ধারণা সে প্রথমটাই বেছে নিত। গ্রিক পুরাণের এক চরিত্রকে নাকি দেবতারা বলেছিলো, সে কী বেছে নেবে, দীর্ঘ, নিরুত্তাপ জীবন, নাকি সংক্ষিপ্ত চরম উত্তেজনাপূর্ণ জীবন। সে বেছে নেয় দ্বিতীয়টা। অভিও সেটাই বেছে নিলো, চিরতরুণ, চিরযোদ্ধা হয়ে রয়ে গেলো আমৃত্যুই। আমি জানি আমি নিষেধ করলেও সে শুনতো না, বলতো এভাবে বেঁচে থেকে কী হবে! তারপরই হয়তো বরাবরের মত হেসে বলতো ‘তুমি খুব শক্ত মেয়ে, ইউ উইল বি অলরাইট’! আজকাল কেউ আমাকে স্ট্রং বললেই খুব বিরক্ত লাগে, আমি তো জেনে গেছি, নো ওয়ান ক্যান বি মোর স্ট্রং। নিয়তি মানুষকে চরম ধ্বংসের দিকেও নিতান্ত অবহেলাতেই ঠেলে দিতে পারে। কেউ উঠে দাঁড়ায়, কেউ হয়তো পথ হারায়। হেমিংওয়ে কোথায় যেন বলেছিলেন ‘Life breaks us all, but some emerge stronger at broken places.’
অনেকে বলেন আমার দায়িত্ব হচ্ছে অভির লড়াই চালিয়ে যাওয়া। এটা নিয়ে অনেক ভেবেছি। অভির সাথে আমার দার্শনিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং তত্ত্বগতভাবে বেশিররভাগ ব্যাপারে একমত থাকলেও অমিলও ছিল। অভিরও ছিল আমারও ছিল। এসব নিয়ে এতটাই চুটিয়ে তর্ক বিতর্ক করতাম যে ছোটবেলায় আমাদের মেয়েটা ভাবতো আমরা শুধু ঝগড়া করছি। এগুলো যে তাত্ত্বিক তর্কাতর্কি তা বুঝতে তার অনেক সময় লেগেছে। আমরা এও বলতাম যে আমাদের দুজনের এতটা স্বাধীন মতামত আছে বলেই আমরা দুজন দুজনকে আরো শক্তি জোগাই। অভির লড়াই আমি চালাতে পারবো কিনা জানিনা, ওর মতো যোগ্যতাও আমার আছে কিনা তাও জানিনা। তবে আমি যে অভির অকাল মৃত্যুতে অনুপ্রাণিত হয়ে আমার মতো করে আমার লড়াই চালিয়ে যাবো তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমার ধারণা অভি আজ বেঁচে থাকলেও আমাকে তাই-ই করতে বলতো। অভির হাসিমুখ যেনো অভিজিৎ নক্ষত্রের আলো হয়ে চিরঞ্জীব হয়ে রইলো আমায় আলোকিত করবে বলে।
চলবে…
নমস্কার বন্যা দি
অভিজিত দার মৃত্যুর কথা বললে তো মনটা আবার খারাপ হয়ে যায় ৷আমার প্রিয় বিজ্ঞান লেখক হচ্ছে অভিজিত দা ৷আমি কলেজে থাকতে আমাদের প্রাণীবিজ্ঞানের মেধাম ভালভাবে বিবর্তনবাদ জিনিসটি শেখায় নি,একটু করে শিখিয়ে এড়িয়ে চলেছেন ৷বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে আমার মুক্তমনার সাথে পরিচয় ৷তারপর অভিজিত দার বইগুলো পড়ে বিবর্তন সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পেরেছি ৷আর আপনার ‘ বিবর্তনের পথ ধরে’ বইটি অসাধারণ লেখনী ৷
সঠিক বিচার পাব না নিশ্চিত ৷আমিতো একজন চাকমা আদিবাসী ৷আমাদের জমি বেদখল,ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া নিয়ে সরকারের কাছে যখন বিচার চাই ৷সরকার নির্বাক শ্রোতা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ৷
অভিজিত দার মৃত্যু বাংলাদেশের এক অপূরণীয় ক্ষতি ৷আর বাংলাদেশের শাহবাগ,টিএসসি,বাংলা একাডেমী এই জায়গাগুলো এখন মৃত্যুর জাদুঘর ৷
দিদি ,
আমি কখনো কোনদিন তোমার আর অভিজিৎ দাদার ঋণ শোধ করতে পারবো না, ক্ষমা করে দিও । আমার জীবনকে তোমরা পুরোটাই পাল্টে দিয়েছো । আমি আজীবন ঋণী হয়ে থাকবো তোমাদের কাছে ।
ক্ষমা করে দিও এই ছোট মানুষটাকে …
বন্যা আপু, অভিজিৎদার রক্তের ঋণ কোনোদিন আমরা শোধ করতে পারবো না। কিন্তু ওনার জ্বালিয়ে দেওয়া আলোর মশাল নিয়ে আমরা পৃথিবীর পথে পথে ঘুরতে থাকবো। বেঁচে থাকার একটা কারন উনি আমাকে শেখালেন- তাই এই তুচ্ছ জীবনটা ওনার আদর্শের বাণী প্রচারের জন্য উৎসর্গ করলাম।
অভিজিৎ দা আমাদের স্পার্টার রাজা লিওনাইডাস। তার আত্মত্যাগ আমাদের সবার নতুন করে যুদ্ধে যাবার প্রেরনা।
মুক্ত মনের জয় হোক-মুক্তচিন্তার আলো সবার মগজে পৌছাক-বিশ্বাসের ভাইরাসমুক্ত হয়ে উঠুক এই পৃথিবী।
লেখাটা পুরো পড়ে শেষ করতে পারি না … পড়তে শুরু করলেই চোখ দিয়ে পানি বের হয় …
তারপরেও বারেবারে এই লেখাটা খুলে চোখের সামনে রাখি … ঝাপ্সা চোখে এই কটা লাইন বারেবারে পড়ার চেষ্টা করি …
খুব খুব খুব- দরকারী কটা লাইন … আমার জন্যে … মৃত্যু ভয় খুব বেশী কাপুরুষ বানিয়ে দিচ্ছিল … অভি দা জীবিত অবস্থাতে পথ দেখাতেন … এখনো দেখাচ্ছেন … অনেক শক্তি পাই, পাচ্ছি … ধর্মের অন্ধকার দিকগুলো নিয়ে, আমার অবিশ্বাস নিয়ে, বিজ্ঞানমনস্কতা নিয়ে … আবার লেখা শুরু করবো নিশ্চয়ই …
“তবে আমি যে অভির অকাল মৃত্যুতে অনুপ্রাণিত হয়ে আমার মতো করে আমার লড়াই চালিয়ে যাবো তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমার ধারণা অভি আজ বেঁচে থাকলেও আমাকে তাই-ই করতে বলতো।”
সেটাই সবচাইতে কাজের লড়াই বন্যাদি। অনিঃশেষ শুভকামনা রইলো। পরের পর্ব পড়ার অপেক্ষায়।
আবার মন্তব্য করছি
এই লেখাটি প্রিন্ট করে অফিসের একজনকে পড়তে দিলাম, তিনি পড়লেন। পাঠপ্রতিক্রিয়াতে তিনি জানালেন যে “লেখক আল্লাহতে বিশ্বাস করেন না ”
বললাম, আর কিছু মনে হল না, একজনকে তার আদর্শের জন্য প্রান বিসর্জন দিতে হল, একজন মানুষ তার শ্রেষ্ঠ বন্ধুকে হারালেন, একজন সন্তান তার বাবাকে হারালেন, এক বাবা তার সন্তান কে , কোন কিছুই মনে হলো না ? উত্তর পেলাম, “হ্যা মহিলাদের জীবনে স্বামী অনেক বড়”
কতদূর যেতে হবে অভিজিত স্যার জানতেন আমিই জানতাম না। নতুন করে উপলব্ধি হল লড়াই এর
আবারো বলছি, লড়াই চলবেই, যুক্তির লড়াই, আলোর লড়াই চলবেই।
আপনার লেখাটি পড়ে মনটা অনেক শান্ত হল । অভিজিতকে হারানো আমাদের কারো জন্যই সহজ হয় নি। আমরা হারবো না এই প্রত্যয়ে প্রত্যয়ী হয়ে উঠছি আবার। আপনার লেখা আমাদের জন্য দারুন প্রেরণা যোগাবে।
বন্যা,
আমার ভালবাসা নিবেন। লেখার অভ্যাস একদম নেই। আমি প্রথম থেকে মুক্তমনআর ভক্ত। আপনাকে সান্ত্বনা জানাবার ভাষা আমার নেই। শুধু একটা আনুরোধ
আপনি যদি বনে -Global Media Forum আসেন। আমাকে ফোন করলে খুব খুশী হব।আমি আজ প্রায় ৩৭ বছর বন শহএর পাশে থাকি।
আনেক শুখদুখের কথা জমা হয়ে আছে। অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো । khokon
Sekander Sayeed Khokon
In den Seebenden 10
53879 Euskirchen.
Germany
Mobil 0049 1758225603
আমরা লড়াই চালিয়ে যাব। থেমে থাকার কোন সুযোগ নেই। হাজার বছর ধরে আমাদের উত্তরসুরীরা যে পথ দেখিয়েছেন, সেখানে অভিজিৎ এবং অনন্ত দা নতুনভাবে আলোকজ্জ্বল পথ রচনা করলেন, তাঁদের জীবনকে উৎসর্গ করে। … অভিজিৎ দাকে নিয়ে আপনার এ স্মৃতিচারণ এবং একই সঙ্গে কমিটমেন্টের কথাগুলো তাড়াতাড়ি শেষ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আপনি সামনে আরো এগিয়ে যাবেন, সেই প্রত্যাশায়…।
বিচার পাব কি কোনদিন?
নাহ…
লড়াই চলছে চলবে। একজন তুলনারহিত অভিজিৎ চলে গেছেন, কিন্তু আরও অভিজিৎ, অনন্ত তৈরি হচ্ছে। ইউরোপীয় রেনেসাঁ ৫০০ বছর ধরে চলেছে, আমাদের ত সবে শুরু।
অভিজিৎ দা যে পথ দেখিয়ে গেছেন সে পথের শেষ আমরা না দেখতে পারলেও ভবিষ্যৎ যোদ্ধারা তার পরিণতি অবশ্যই টানবেন। অভিজিৎ দার রক্তের ঋণ তারা অবশ্যই শোধ করবেন। বন্যাদি আপনার প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে শেষ করছি।
অভির লড়াই আমি চালাতে পারবো কিনা জানিনা, ওর মতো যোগ্যতাও আমার আছে কিনা তাও জানিনা। তবে আমি যে অভির অকাল মৃত্যুতে অনুপ্রাণিত হয়ে আমার মতো করে আমার লড়াই চালিয়ে যাবো তাতে কোন সন্দেহ নেই……………………দিদি আমাদের জন্য হলে ও চালিয়ে যেতে হবে এই লড়াই, আপনি না লিখলে অনেক কিছু্ই যে অজানা থেকে যাবে আমাদের, আমরা এবং আমাদের পরের প্রজন্মের কাছে আপনাদের মতাদর্শ টাকে বঁাচিয়ে রাখতে আপনাকে লিখতে হবে…………………অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইলো দিদি।
এই ১০০ দিনে বাংলাদেশে “বিচার” শব্দটাকেই মনে হয়েছে উদ্ভট একটি শব্দ। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব আশাবাদী মানুষ হয়েও অভিজিতের খুনীদের বিচারের ব্যাপারে প্রচন্ড আশাহত। তবু মুক্তমনা চলছে, মুক্তচিন্তা চলছে, কলম চলছে, অভিজিতের চিন্তার নৈকট্যে যাঁদের অবস্থান-তাঁদের প্রত্যয়ের দৃঢ়তায় এতটুকু পরাজয়ের ছোঁয়া পড়েনি; আশার কথা সেখানেই। বন্যা ও অভিজিতের পরিবারের লড়াইটা আমরা যাঁরা তাঁর আদর্শের সাথী তাঁদের চেয়ে আরও কঠিন, তবু এ লড়াইয়ে আমরা সাথেই আছি এবং থাকবো, বন্যা।
বিচারের আশা করে কোন লাভ আছে বলে মনে হয়না। খুব বেশী হলে অনন্তের খুনীদের ধরার নাম করে একজন ফটোগ্রাফারকেই না হয় ধরবে! এগুলো কোন ব্যক্তিবিশেষের কাজ নয়। এর পিছনে যারা আছে তাদের ধরার ক্ষমতা বা ইচ্ছা কোনটাই সরকারের থাকার কথা নয়।
একজন অসামান্য কৃতবিদ্য মানুষ অসময়ে চলে গেছেন; অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে বাংলা ভাষায় মুক্তচিন্তার চর্চার, সার্বিকভাবে বলতে গেলে মুক্তচিন্তার আন্দোলনের, দেশের। তবে সবকিছু ছাপিয়ে বারবারই মনে হয়েছে এই অবিচ্ছেদ্য মানুষটিকে এভাবে হারিয়ে তাঁর নিকটজনেরা কিভাবে দিন কাটাচ্ছেন…… তাঁদের এই শূন্যতা তো কোন কিছু্তেই পূরণ হবে না। জানি চলমান মহাবিশ্বের অসীম ঘটনাক্রমে আমাদের নিয়ন্ত্রণ অতি নগণ্য, প্রায় শূন্য; আমাদের জীবন বড়ই পলকা; তবুও মনে হয়েছে, কেন এভাবে অসময়ে নিকটজনকে হারাতে হবে! প্রিয়জনের স্মৃতি, তাঁর কাজ আর অসংখ্য চেনা-অচেনা মানুষের ভালবাসা আপনাকে প্রেরণা দিক সামনে এগিয়ে চলার। শ্রদ্ধাসহ শুভেচ্ছা।
আপনাকে সান্ত্বনা জানাবার ধৃষ্টতা আমার নেই। আভিজিত দা যেদিন চলে গেলেন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম নিজের কাছে…দুইজন অভিজিৎ গড়ে উঠবে আমার ঘরে… হাজার অভিজিৎ চারা মেলবে আমার স্কুলে। এই প্রতিজ্ঞা আপনাকে জানিয়ে গেলাম।
এভাবেই তো এগিয়েছে সভ্যতা…
লড়াই চলুক। আমরা সাথে আছি।
বন্যা, আপনার লেখাটি নাতিদীর্ঘ – কিন্তু মনের মধ্যে আপনার এই লেখাটি যেন কেমন এক সুদীর্ঘ রেশ রেখে গেল – কেমন যেন মনের গহনটা একেবারে আলোড়িত করে দিয়ে গেল – অন্তরের প্রতিটি অণু-পরমাণু যেন কেমন ছুঁয়ে গেল ! বলার অপেক্ষা রাখে না অভিজিতের এমন অকালে চলে যাওয়া মুক্তবুদ্ধির মানুষদেরকে এক দুঃখের তিমিরে ভাসিয়ে দিয়ে গেল ! কিন্তু আপনার দুঃখ, আপনাদের মেয়ের দুঃখ বোঝার ক্ষমতা নিশ্চয়ই অন্য কারোর নেই ! আপনার লেখাটি পড়ে মনে হয় আপনি যেন শাব্দিক অর্থেই সেই কঠিনতম দুঃখকে ছুঁয়ে দেখলেন আর আপনি যেন কেমন নিপুণ ভাবে সেই দুঃখটাকে ভাষায় রূপ দিলেন ! আপনার এই কঠিন দুঃসময়ে আপনাকে সাহস দেবার দুঃসাহস আমার নেই – আপনি নিজেই এক অসম সাহসী মানুষ, আপনার এই কঠিনতম দুঃখের সময়ে আপনাকে সান্তনা যোগাবার যোগ্যতা আমার নেই – আপনি নিজেই সেই অনন্য মেধার অধিকারী যে নিজেই নিজের জন্য সান্তনা খোঁজে নিতে সক্ষম ! আপনার জন্য, আপনাদের মেয়ের জন্য আমার শুধু এই শুভ কামনা, যে দানবনা অভিজিতের মত এক নক্ষত্রকে অকালে নিভিয়ে দিল তাদের হাত থেকে আপনারা নিজেদেরকে রক্ষা করুন ! এক অসীম প্রত্যয়ে আপনার অনন্য সাধারণ সৃষ্টিশীলতা অব্যাহত ভাবে আগামী প্রজন্মের মানুষদের অনুপ্রাণিত করুক সবার জন্যে একটি বাসযোগ্য পৃথিবীর গড়ার লক্ষ্যে মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতে !
কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি উক্তি মনে পড়ছে, ” এমন অনেক দুঃখ আছে যাকে ভোলার মত দুঃখ আর নেই” ! অভিজিৎকে হারিয়ে আপনার, আমার, আমাদের সকলের পাহাড়সম দুঃখ, কিন্তু তাঁকে ভোলার মত দুঃখ আমাদের কোনদিনও ছুঁতে পারবে না ! অভিজিৎ অমর, অব্যয় ও অক্ষয় !
পরম উদ্দেশ্য বলে কিছু নেই, কপাল বলে কিছু নেই, নেই কোন অলৌকিক হাতের নির্দেশনা আমার জীবনের উপর। উদ্দেশ্য বিধেয় সব কিছুই এই জগতেই, সবকিছুই এই জীবনটাতেই সীমাবদ্ধ। ব্যক্তি আমার কী হলো বা না হলো তা নিয়ে বিশ্বজগতের কোনো মাথাব্যথাই নেই, নেই ইতিহাসের, নেই নিয়তি বা ঈশ্বর নামের কোনো অদৃশ্য মহাশক্তির…..কী ভীষণ সত্যি কথাগুলো.. কী ভীষণ বাস্তব..
কতটা শক্তি-সাহস-যুক্তির উপর বিশ্বাস রাখলে যে এ ভাবে কথাগুলো বলা যায়… শ্রদ্ধা রইল দিদি… অনেক অনেক শ্রদ্ধা.. জীবনে যদি কোনও কিছু শক্তি জোগায়, তা তোমার মতো মানুষেরাই…
হার্ট ব্রেকিং ……………… কতো শতবার তোমার কথা ভেবেছি এই একশ দিনে। পশুগুলো জানলোও না কী তছনছ করে দিলো। চোখ জলে ভরে আসার পর বারবার ভাবি তুমি উঠে দাঁড়াও, তুমি শক্তি পাও, তুমি বিজয়ী হও। তোমার জয়েই অভিজিৎ ভাই জয়ী হবেন। অমরত্ব পাবেন।
চারিদিকে এতো শোরগোল, এতো কন্ঠের আওয়াজ- একটি হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া আরেকটি হত্যাকাণ্ডের পথকে প্রসস্থ করে; কিন্তু রাষ্ট্র রা করছেনা। রাষ্ট্র রা করছেনা কারণ রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীনদের লক্ষ্য ক্ষমতায় টিকে থাকার পথ প্রসস্থ করা, অন্য কোন্ পথ প্রসস্থ হলো সেই বিবেচনার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সরকারের পদক্ষেপে তার কোন পথ সংকুচিত হলো সেটি। ফলে সংবিধান যেটিকে নির্দেশ করে, দেশের আইনি ব্যবস্থা যেটিকে অনুমোদন করে সেটিতে মাথা না ঘামিয়ে সরকারের উপদেষ্টা বলে বসেন- তাঁরা সুক্ষ সুতোর উপর দিয়ে হাঁটছেন। নাস্তিক তকমা লাগুক সেটি তাঁরা চাননা। বিপরীতে তৈরি হচ্ছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি।
রাষ্ট্রযন্ত্র পেরে উঠছেনা, পেরে উঠবেইবা কী করে? পেরে উঠার মতো করে ঘটনা প্রতিরোধে কিংবা বিচারে উদ্যোগীতো তাঁরা হচ্ছেনা । সরকারী দায়িত্বশীলরা প্রকাশ্যে কুলূপ এঁটে আছেন। কেন? কারণটা অজানা নয়। রাষ্ট্র ধর্মকে ধারণ করেছে সাংবিধানিক ভাবে। ধর্মকে ব্যবহার করছে ক্ষমতায় টিকে থাকতে এবং দীর্ঘস্থায়ী করতে। ইতালির প্রখ্যাত দার্শনিক সেনেকার যেমনটি বলেছেন- Religion is regarded by the common men as true, by the wise men as false and by the rulers as useful. ফলে এই ‘ভাসুরের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ততোটা সহজ নয় রাষ্ট্রের জন্য।
নাস্তিক অপবাদ থেকে গা’ বাঁচিয়ে চলতে গিয়ে ধরি মাছ না ছুঁই পানির যে অবস্থান সরকার নিয়েছে তাতে করে যেকোন সময় হাঁটতে থাকা সুক্ষ সুতাটি ছিড়ে যেতে পারে; যদি শত্রু চিনতে আরো খানিকটা দেরি হয়ে যায়। বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের যে আগ্রাসীরূপ পরিলক্ষিত হচ্ছে বর্তমানে, তার আঁচ বাংলাদেশেও লেগেছে। সেটা কেউ মানুক আর না মানুক। গহিন অরণ্যে অস্ত্রঘাটিতো মাঝে সাজেই পাওয়া যাচ্ছে। সাথে শহুরে জীবনেও জঙ্গিরা জানান দিচ্ছে তাদের উপস্থিতি। ফলে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে বড় কিছু ঘটে গেলে অবাক হবার কিছু থাকবেনা। দ্রুত বিকাশমান ধর্মীয় জাতীয়তাবাদকে ইঁদুরসম শত্রু ভাবার অবকাশ নেই, বরং দৈত্য ভেবে ব্যবস্থা নেয়ার সময় এখনই।
বন্যা’দি আপনার কলমেই এগিয়ে যাক অভি’দার অসমাপ্ত কাজ। ভালো থাকুন সবটুকু কষ্ট ছাপিয়ে, কারণ কলম যে চালাতেই হবে—-
দেশের কোন সরকারের কাছ থেকেই বিচারের আশা করিনা। আপনি বলেছেন,
আমি মনে করিনা তারা মৌলবাদকে ‘শত্রু’ মনে করে। বাংলাদেশে বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের আঁচ লাগেনি, সুপরিকল্পিতভাবে এর বীজ বপন করা হয়েছে কয়েক দশক ধরে, সব সরকারের আমলেই, তাদের সুবিধার্থেই।
টিএসসিতে গেলেই বুকটা হুহু করে উঠে 🙁
অভিজিৎ রায় নেই এটা আমার এখনো মেনে নিতে কষ্ট হয়, কিন্তু বাস্তবতা টা বাধ্য হয়ে উপলব্ধি করি।
এই ১০০ দিনে অভিজিৎ দা-র কলম চলে নি, কিন্তু অভিজিৎ দা-কে নিয়ে চলেছে। হয়তো অভিজিৎ দা থাকলে ১০ টা আরটিক্যাল লিখতো। কিন্তু এখন অভিজিৎ দা কে নিয়ে লেখা হয়েছে শত শত। সেই সক্রেটিস থেকে শুরু করে অভিজিৎ দা পর্যন্ত কত জনকে প্রান দিতে হল সমাজের সংখ্যা গরিস্টের বাইরে গিয়ে নতুন কিছু সাহসের সাথে বলার জন্য। কিন্তু বিজ্ঞান-দর্শন থেমে যায় নি, বরং এগিয়েছে। যারা লেখে তারা পিছনের ইতিহাস জানে, জেনেই তারা লেখে। সব পাখি খাঁচায় বন্ধি হওয়ার জন্য জন্মায় না। কিছু পাখি ছুটে আকাশে চলে যায়, পৃথিবীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। তেমনি ছিলেন অভিজিৎ দা। হুমকিকে তোয়াক্যা না করে।
আজ আপনিও কলম ধরেছেন, লিখতে থাকুন এখনো সব অন্ধকারে ডুবে যায় নি, কিছু জোনাকি এখনো মিটি মিটি করে জ্বলছে। এরাই হয়তো আগামী দিনের সুর্য।
আপু আপনার প্রতি রইলো গভীর শ্রদ্ধা ও শুভ কামনা।
হ্যা, অভিও তাই বলতো। আমরা যারা লেখালিখি করি তারা এই রিস্কগুলো জেনেই করি।
প্রতিটা লড়াই-ই আসলে নিজের লড়াই।
আসলেই… এছাড়া লড়াইয়ের কোন অর্থ হয়না।
অলৌকিকতা বলে কিছু নেই, মৃত্যুর পরে কিছু নেই। অভিদা ছিলো, আজ ১০০ দিন উনি নেই। এটাই চরম সত্য আমরা যারা বেঁচে আছি তাদের কাছে। কোনোদিন আমরা অভিদার আর লেখা পাবো না, ইমেইল পাবো না, মন্তব্য পাবো না, ওনাকে বাইকে করে ঘোরাতে পারবো না। এই শূন্যতা আমার কাছে মহাবিশ্বের সমান। আমাদের অনেকের কাছেই। তারপরও শূন্যতাকে বুকে ধরে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। অভিদার যুদ্ধকে আমাদের এগিয়ে নিতে যেতে হবে। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা বন্যাপা।
শূন্যতা জিনিসটা এভাবে আগে উপলব্ধি করিনি কোনদিন রায়হান। একে যেন এখন চোখে দেখতে পাই, ছুঁয়ে দেখতে পারি।
আমরা শুধু দিন গুনে যাবো, বিচারহীনতার বিভীষিকা দেখে দেখে অসীম অন্ধকারে হাহাকার করবো। তবুও আমাদের কলম চলবে, চলবেই।
মহাজগতের চরম উদাসীন বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে বিচারহীনতাটাও অন্যতম একটা। ইতিহাসের ছাত্র হলে মন না মানলেও মেনে নিতে হয় যে এভাবেই পৃথিবী এগিয়ে চলে।
🙁 🙁 অনেক মন খারাপের মাঝেও আপনাকে লিখতে দেখে ভাল লাগে। ভাল লাগা কথাটা শুনতে খারাপ শোনালেও , আভিজিতদার কাছ থেকে এই ভাল লাগাটুকুই আমরা খুঁজে বেড়াতাম। সুতরাং এইভাবেই আপনি অভিজিতদা কে বাঁচিয়ে রাখবেন । অনেক ধন্যবাদ বন্যা আপু।
আপনি উত্তরোত্তর আরো সুস্থ এবং লেখালেখিতে নিয়মিত হবেন এই আশাই করি।
ধন্যবাদ আদনান। ভালো থাকবেন আপনিও।
আমি অনেকবার এই প্রশ্নগুলো নিয়ে ভেবেছি-এই অনন্ত মহাবিশ্বের কাছে, উদ্দেশ্যহীন জগতের কাছে জন্ম মৃত্যুর আসলেই ত কোন মূল্য নেই। তবুও আমাদের জীবনটা সেই জন্ম আর মৃত্যুক ঘিরেই আবর্তিত হয়-তারই অনন্তচক্রে সাত পাকে বাঁধা আমরা। সেই আপাত ভালো লাগা, ভালোবাসা, যা চিরস্থায়ী নয় জানি, তা ঘিরেই আমাদের সব কিছু। হয়ত এই শুভঙ্করের ফাঁকি আছে বলেই ধর্ম ঢুকে যায় মানুষের জীবনে।
তবে বন্যার কাছে আমাদের পার্থনা- আরো অনেক লেখা চাই। ও যত নক্ষত্ররাজি, ছায়াপথ হেঁটেছে, খুব কম মানুষ তার পৃথিবীর ডেরা থেকে বেড়িয়েছে। ও যত লিখবে, বাঙালী তত সমৃদ্ধ হবে। এই চিন্তার গভীরতা , ভাবের অন্তস্পর্ষী গহন মেদুরতা- এই মুহুর্তে কোন বাঙালী লেখকের কাছে পাওয়া যাবে না।
হ্যা, ঠিকই বলেছো বিপ্লব, অনেক রকমের অনেক পথ হাটলাম ইতোমধ্যেই। ক্লান্ত লাগে আজকাল মাঝেমাঝে…
আমরাও প্রথমটাক্ বেছে নিয়েছি! অভিজিৎদা কখনো একা ছিল না, অভিজিৎদা মিলে আমরা সবাই “আমরা” ছিলাম। তাই অন্ধকার, কুসংস্কার, মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই চলছে, চলবে!
ধন্যবাদ।
অভির হাসিমুখ যেন অভিজিৎ নক্ষত্রের আলো হয়ে চিরঞ্জীব হয়ে রইলো আমায় আলোকিত করবে বলে।
এমন নক্ষত্রের মিট মিট হাসিমুখের আলো যেন আমাদের সবার জীবনে বয়ে এনে এই নশ্বর ক্ষনস্থায়ী উদ্দেশ্যহীন জীবনকে এক চিমটে আলোকিত করে এ প্রত্যাশাই করছি আজ।
চলবে…………
কারন চলা-ই যে জীবন।
বিচারহীনতার শততম দিন, অন্ধ তমিস্রার গাঢ়ত্বের শততম দিন, অভিজিতের আলোহীনতার শততম দিন, মুক্তবুদ্ধিচর্চার অগ্রপথিকের হায়েনার হাতে হননের শততম দিন।
কোনো সান্ত্বনা কি আছে মহাবিশ্বের কোথাও, আছে কি শান্তি অনন্ত গগনতলে?
হয়তো মহাকালই পারবে এর উত্তর দিতে কখনো।
ততদিন, ভালো থাকুন, নিমগ্ন থাকুন নিজের কাজে। কিছুটা স্বস্তি, কিছুটা পরিচিতি যেন আসে জীবনচক্রের ঘূর্ণনে।
বিচারহীনতায় অবাক হইনা আর, বরং যুগে যুগে বিচারহীনতাই প্রমাণ করেছে এই পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্ব। শান্তি বা সান্ত্বনা কোনটাই আর খুঁজিনা বোধ হয় আর। আবারো ধন্যবাদ আপনাকে অভিকে নিয়ে সুন্দর লেখাটার জন্য।
চলবেই
শেষ লাইনের ‘চলবে…’ কথাটার মাঝে যে অমিত শক্তি তা ছুঁয়ে যাক সবার প্রাণ।
না চালিয়ে আর উপায় কি তানভীর?
এমন লেখায় কিছু বলবার শক্তি আপনা থেকেই জমাট বেঁধে যায়। অদেখা গভীর কষ্টগুলো অনুভবের ভাষাকে অতিক্রম করে ফেলে। তবে এইটুকু বলবো, আরো অনেক দূরপথে আমরা সবাই আরো কাছাকাছি হয়ে একসাথে হাত ধরাধরি করে হাঁটবো। আমাদের বেঁচে থাকা প্রতিদিন অভিজিতের বেঁচে থাকার মত অর্থবহ করে তুলতে চাইবো।
ধন্যবাদ।
অভিজিৎ দার মত মানুষদের মৃত্যু স্পর্শ করতে পারেনা।
আমি ঠিক করেছি তাই করব।
ধন্যবাদ।
আমরা সবাই নক্ষত্রেরই সন্তান..।
অভিজিৎদাকে মনে পড়লেই মীজান মামাকে, মীজান মামাকে মনে পড়লেই অভিজিৎদাকে…কী অদ্ভুত এই দুইয়ের যোগাযোগ, শূন্য থেকে মহাবিশ্বের আদলে। মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি, তাঁদের এই প্রস্থান- এও কি সম্ভব !!!
বন্যা, আপনার লিখন, অভিব্যক্তি সবই আপনার নিজের মতো করে। তবু কোথায় যেন ভেসে আসে ধ্বংসের পরও আশার আরতি। সব হারানোর পরও ফিরে পাবার প্রত্যাশা, যা কিনা সকলের জন্য অনুপ্রেরণার। সুস্থ হয়ে উঠুন। যে কলম তুলে নিয়েছেন, তাই দিয়েই বারবার লিখে যান অভিজিৎ রায়কে। যে মানুষটি ছিলেন তাঁর সময়ের চেয়ে হাজারো গুণ এগিয়ে। এই সময় তাঁকে ধারণ করতে পারেনি, তাই বলে আগামী পৃথিবী কেন বঞ্চিত হবে। শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা আপনাদের দুজনার জন্য।
হ্যা মিজান আঙ্কেলের সাথে আমার সেই কার্ল্টনে পড়ার সময় থেকে পরিচয়। অভির সাথেও যে আলাদা পরিচয় ছিল সেটা অনেকদিন পরে জেনেছিলাম। অভি ওনাকে ভাই বলতেন আমি আঙ্কেল বলতামঃ)।
‘‘দীর্ঘ, নিরুত্তাপ জীবন, নাকি সংক্ষিপ্ত চরম উত্তেজনাপূর্ণ জীবন। সে বেছে নেয় দ্বিতীয়টা। অভিও সেটাই বেছে নিলো, চিরতরুণ, চিরযোদ্ধা হয়ে রয়ে গেলো আমৃত্যুই। ”
অভি’দার মৃত্যু আমাদের আরও বেশী দায়িত্ব নিতেই ডাক দিয়ে যায়।
সক্রেটিস তার বিচারের জুরির সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিল, ‘ if you offered to let me off this time on condition I am not any longer to speak my mind… I should say to you, ‘ Men of Athens, I shall obey the Gods rather than you. ‘ আমাদের তো আর ‘গড’ নেই আদর্শগত অবস্থানটাই ভরসা।
“আমাদের তো আর ‘গড’ নেই আদর্শগত অবস্থানটাই ভরসা”
এই অবস্থানটাই তো আমাদের পৃথিবী – আমরা বাস করি সেই মহাবিশ্বে যেখানে ধর্মের চাষ নেই,
মারামারি নেই, কাটাকাটি নেই। আছে সহমর্মিতা, পৃথিবীটাকে সুন্দর করে গড়ে তোলার
অঙ্গিকার।
চিত্ত যেথা ভয় শুন্য উন্নত শির – অভিজিতের ছিল। তোমারও আছে।
তোমার শির উন্নত। এগিয়ে চল। দুঃখ-যন্ত্রণা আমরা ভাগাভাগি করে নিয়েছি।
অভি’দার অসমাপ্ত লড়াই আমাদের চালিয়ে নিতে হবে।
তবুও এগিয়ে যেতে হবে।
প্রাণস্পর্শী এই লেখায় মন্তব্য করব এমন সাহস হচ্ছে না। শুধু একটি কথা – “অনেকে বলেন আমার দায়িত্ব হচ্ছে অভির লড়াই চালিয়ে যাওয়া।” এই উপদেশের যথার্থ উত্তর বন্যা দিয়েছেন। একটি মানুষের চেতনা যখন জন্ম ও মৃত্যুর মাঝে বাধা থাকে সেই চেতনা মহাবিশ্বের সঙ্গে কিভাবে বোঝাপড়া করবে সেটা একান্তই সেই মানুষটিরই সিদ্ধান্ত।
আর একটি কথা – ভাগ্যের পরিহাস বলতে হবে অভিজিতের প্রিয় বিজ্ঞানী লরেন্স ক্রাউস মৃত্যুর মাধ্যমে অভিজিৎকে ভাল করে চিনল। অনেকেই চিনল। তাতে কি সান্ত্বনা পাওয়া সম্ভব? আমি জানি না। লুসার্ন শহরের কাঠের সেতুটির পাশে বন্যা ও অভিজিতের ছবিটি দেখে মনে পড়ে ঐ সেতুটির ওপর আমি ১৯৮৮ সনে হেঁটেছিলাম। কিন্তু সেই সেতুটি ঠিক এই ছবির সেতুটি নয়, ১৯৯৩ সনে সেটি অনেকাংশে আগুনে ধ্বংস হয়ে যায়, তারপর সেটিকে আবার নির্মাণ করা হয়। মানুষের জীবন আগুনে ধ্বংস হবার পরে কি ঠিকমত নির্মাণ করা যায়? তার উত্তরও সজে মেলে না।
কিন্তু শেষাবধি আমাদের সবারই শুভ ইচ্ছা সম্সত সীমাবদ্ধতা নিয়েও আপনার ভবিষ্যৎ জীবন যেন সুস্থ ও শান্তির হয়।
দীপেন দা, ‘মানুষের জীবন আগুনে ধ্বংস হবার পরে কি ঠিকমত নির্মাণ করা যায়?’
নাহ, যায় না। যারা বেঁচে থাকে তাদের। তছনছ হয়ে যাওয়া জীবনটায় হয়তো এক সময় নতুন কোন অর্থ আসে, কিন্তু আগের মত করে ঠিক আর হয়না। অনেকটা বড় কাটা দাগের মত। ক্ষত শুকায়, ব্যাথা কমে কিন্তু দাগটা থেকে যায় সারা জীবন।
মাভৈ: লড়াই চালিয়ে যেতেই হবে। অভিজেতের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে তার প্রতি শ্রেষ্ঠ সন্মান জানানো সম্ভব।
ধন্যবাদ আপনাকে।
প্রতিদিনই একবার নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করি যা ঘটেছে সব কিছু একটা দুঃস্বপ্ন। ঘড়ির কাটাটা ঘুড়িয়ে দিয়ে, টাইম মেশিনে চড়ে বসে বলি, আপনারা ঐ মৃত্যুপুরীতে যাবেন না। ওখানে মানুষগুলোর মনটা নষ্ট হয়ে গেছে। একটা বাঘও আরেকটা বাঘকে এভাবে হত্যা করে না। মানুষ যেভাবে স্বজাতিকে খুন করে তা প্রাণীকুলে আর কেউ করে কিনা আমার জানা নেই।
শুভ কামনা জানাই কি করে বলুন? আপনাকে আপনার এতদিনের যত্নে গড়ে তোলা সংসারটা আবার যত্ন করে ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা আমার নেই। শুধু পাশে থেকে সাহস দিতে পারবো। প্রতিটা মুহুর্তে মন থেকে আপনার পাশে আছি। আপনার কথা বারবার অভিজিৎ রায় বলে গিয়েছেন, বলেছেন, আমি এক সাহসী এবং লড়াই করতে জানা নারীর সঙ্গে সংসার করছি, যার কাছে আমি প্রতি মুহুর্তে কিছু না কিছু শিখি। আপনি সুস্থ হোন। পৃথিবীটাকে অভিজিৎ রায়ের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিন।
ধর্ম, কপাল (ফাটা কপাল?), অলৌকিকতা এসব বিশ্বাস করলে ভাবতে পারতাম সবাই আমাকে সাহসী ভাবে বলেই এরকমটা হল আমার ঃ)। সেটাও করার উপায় নেই। ধন্যবাদ স্নিগ্ধা।
অভিজিৎ দা তাঁর স্বপ্নের জন্য আজীবন লড়ে গেছেন…
কোনো কিছু বলার মতো ভাষা নেই । শুধু শুভকামনা রইলো আপনার জন্য আপু ।
অনেক ধন্যবাদ আসমা।