জনৈক ডাক্তার মুশফিক ইমতিয়াজ চৌধুরী(এমবিবিএস) আজ সকালে আমার ফেসবুক প্রফাইলের দেয়ালে একটা লিঙ্ক পোস্ট করেছেন। লেখাটি সদালাপ নামক ধর্মব্লগেও পোস্ট হয়েছে দেখালাম, অভিজিৎ ভাইয়ের লেখার সমালোচনা বলে একটু পড়ে দেখার আগ্রহ জন্মালো। লেখাটি পড়া শুরু করা মাত্রই উনার যুক্তিবোধ আমাকে আরেক “স্বনামধন্য ডাক্তার” বিখ্যাত যাকাত ব্যাবসায়ী জোকার নায়েকের কিছু বক্তব্য মনে করিয়ে দিলো, এবং আমি তার লেখাটির কিছু সমালোচনা করলাম আমার ফেসবুকে দেয়া লিঙ্কের মন্তব্য ঘরে। কিছুক্ষণ পরেই দেখলাম, তিনি আমার মন্তব্যগুলো মুছে ফেলেছেন এবং নিজের দেয়া লিঙ্কটিও মুছে ফেলেছেন। অগুরুত্ত্বপুর্ণ বিধায় লিঙ্কটি আর আমি শেয়ার করছি না, তবে কিয়দাংশ এই আলোচনার সুবিধার্থে কপি করবো। এর একটু পরে খুব আশ্চর্য্য হয়েই দেখলাম, তিনি আমাকে ব্যাক্তিগত মেসেজ পাঠাচ্ছেন, এবং অত্যন্ত নোংরা ভাষায় আমাকে গালাগালি করেছেন। সেই গালিগুলোর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ছিল, “শুয়ারের বাচ্চা” “মূর্খের বাদশাহ” এবং আরও কুরুচিকর গালি যা মুক্তমনার মত ব্লগে বলতে আমার রুচিতে বাধছে।

ডাক্তার মুশফিকের লেখাটি শুরু হয়েছে এভাবেঃ

আমাদের দেশের জনগণের একটি মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য হলো, তারা ডাক্তারের কাছে সহজে যেতে চায়না, নিজেই নিজের চিকিৎসা করে, আমাদের অভিজিৎ বাবুও চিকিৎসক না হয়েই এইডসের মত একটি মরনঘাতী ব্যাধিতে সমকামের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই বলে প্রচার করে সমাজের উপর তার অপচিকিৎসা চালিয়ে যান । আমার বাবা ইতিহাসের লোক, চিকিৎসক নন, আমার মাতামহ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের লোক – ১৯৫২ সালের ভাষা সৈনিক তথা একাত্তরের বুদ্ধিজীবী মুহাম্মদ জিয়াদ আলী, তিনিও চিকিৎসাবিদ্যার সঙ্গে জড়িত নন । তাদের মাঝে মাঝে দেখি ড্রাগ ম্যানুয়াল বা মিমস, সিমস, পিমস ইত্যাদি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে, হয়তো কারো কোন ছোটখাটো শারীরিক সমস্যা হয়েছে, তখন তারা মিমস লব্ধ জ্ঞানে রোগীকে বলেন প্যারাসিটামল বা অ্যান্টি অ্যালারজিক খেতে । এই কাজটি বাংলাদেশে অনেকেই করেন, একটু কাশি হলেই দেখা যায়, কফ সিরাপ তুসকা খাওয়া শুরু করেন । ভাইরাল কমন কোল্ডে অনেকে অনেকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করেন । কেউবা ঘন সর্দিতে আন্দাজে অ্যালাট্রল খাওয়া শুরু করেন । আমি মনে মনে হাসি, কেননা চিকিৎসক হতে গেলে ৫ বছর এমবিবিএস পড়তে হয়, তারপর তিনি ডাক্তারি করতে পারেন, শুধু ইন্ডিকেশন- ডোজ-সাইড এফেক্ট-প্রিকোশন দেখে ঔষধ দেওয়া যায়না ।

অজয় রায় পুত্র অভিজিৎ রায় সমকাম এবং সমকামীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি বিজ্ঞানময় কিতাব (!) লিখেছেন বলে দাবী করে আসছেন । এই মহাকিতাবের নাম – ““সমকামিতা : একটি বৈজ্ঞানিক এবং সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক অনুসন্ধান” , সমকামিতার পক্ষ নিতে যেয়ে অজস্র মিথ্যে বলেছেন অভিজিৎ রায়, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের দাবী করে বইটির মধ্যে জুড়ে দিয়েছেন চরম অবৈজ্ঞানিক তথ্য যা অধুনা চিকিৎসাবিজ্ঞান সমর্থন করেনা, সেগুলো নিয়েই আমার এই পোস্টের অবতারনা ।

এই অংশটুকু পড়বার পরেই ডাক্তার মুশফিক সাহেবের দৌড় আমি বুঝে ফেললাম, এবং তারপরেও পুরোটা পড়ে দেখলাম। পড়ে দেখার পরে বুঝলাম, উনি অভিজিৎ ভাইয়ের বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করে একটু লাইমলাইটে আসবার চেষ্টা করছেন।

এই এমবিবিএস পাশ ডাক্তার সাহেবের একটা লেখা ইতিপুর্বে মুক্তমনাতে পড়েছিলাম, এবং কিছুটা সমর্থনও দিয়েছিলাম। এর কারণ হচ্ছে, উনার সাথে আগে একবার আমার মেসেঞ্জারে চ্যাট হয়েছিল বেশ ক’বছর আগে। নতুন লেখকদের আমি সবসময়ই উৎসাহ দেই, উনাকেও দিয়েছিলাম। কিন্তু উনি আমার উৎসাহকে মনে হয় ভুলভাবে নিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন আমি উনার শিশুতোষ প্রবন্ধটি পড়ে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি।

বেশ ক’বছর আগে যখন উনার সাথে চ্যাট হয়েছিল, উনি নিজেই বলেছিলেন, উনি একটা বই বের করে নিজেই সেটার বিরুদ্ধে লাগবেন, যেভাবেই হোক বইটি ব্যান করিয়ে বিখ্যাত হবেন। বিখ্যাত হবার অদম্য আকাংখা এই তরুন ছেলেটিকে পেয়ে বসেছে, এবং সে বিখ্যাত হবার আকাংখায় এখন অভিজিৎ ভাইয়ের লেখার সমালোচনা করছেন-নিজের মেধা-যোগ্যতা-জ্ঞানকে বিবেচনায় না এনেই।

আমার ফেসবুক দেয়ালেই আমি মন্তব্য লিখলাম, এবং উনি আমার মন্তব্য মুছে ফেললেন কোন কারণ ছাড়াই। একজন সমালোচক যখন অন্যের সমালোচনা করেন, অন্যের লেখার সমালোচনা করেন, এবং নিজের সমালোচনাগুলোকে কৌশলে মুছে ফেলেন, এবং সমালোচককে “শুয়ারের বাচ্চা” বলে ফেসবুকে গালি পাঠান, তখন উনার মানসিক বয়স এবং বদ্ধ উন্মাদ হবার সম্ভাবনা আমাকে আতংকিত করে তোলে।

তাকে লেখা আমার মন্তব্যগুলো এখানে পোস্ট করছি।

আসিফ মহিউদ্দীনঃ অত্যন্ত নিম্নমানের লেখা। সমালোচনা সব সময়ই স্বাগত জানাই, কিন্তু লেখাটাতে সমালোচনা ছাড়া সব কিছুই হয়েছে। প্রথমেই নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে অভিজিৎকে খারিজ করার একটা মানসিক আবহ সৃষ্টি করা হয়েছে।

ভাবখানা এমন, “আমি ডাক্তর, আমি সবাত্থে বেশি বুঝি”। ঠিক যেন আমিনী দাবী করেন যে সে দাড়ি টুপি ওয়ালা এবং কোরান হাদিস পড়া বলে সে ধর্ম সম্পর্কে বেশি বুঝে এবং আর কেউ কিছু বোঝে না। সেদিনও আমিনী সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিল “আমনে আমাত্থে বেশি বুজেন?”। এই মুশফিক সাহেবের শুরুটাও তেমন।

দুনিয়া অনেক এগিয়ে গিয়েছে, এইডস কিভাবে ছড়ায় তা জানার জন্য এমবিবিএস পাশ করার এখন আর প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। লেখক প্রথমেই এই ভুলটি করেছেন। অভিজিৎ ভুল না ঠিক সেটা ভিন্ন ব্যাপার, কিন্তু “আমি ডাক্তর, আমি সবাত্থে বেশি বুঝি” এই ধরণের ভাব কোন আলোচনার উপযুক্ত নয়। ব্যাক্তিগত ভাবে আমি বিভিন্ন জায়গাতে আড্ডা দেই, এবং এমবিবিএস পাশ বহু ডাক্তার আমার আলোচনায় চেয়ারে বসারই সুযোগ পায় না, কিন্তু এটা বলে কোন আলোচনার আবহ সৃষ্টি করাটা আমার কাছে নোংরামী বলেই মনে হয়েছে।
9 minutes ago · Like//

আসিফ মহিউদ্দীনঃ এই মুশফিক সাহেব বোধকরি আরেক “স্বনাম ধন্য ডাক্তর” জোকার নায়েকের কিছু বক্তব্য নিয়মিত শোনেন। কারণ তার বক্তব্যের সাথে জোকার নায়েকের কিছু বক্তব্যর অদ্ভুত মিল পেলাম। জোকার নায়েক বলেন, ” বিজ্ঞান সম্পর্কে জানতে বিজ্ঞানী হতে হবে, রাজনীতি সম্পর্কে জানতে রাজনীতিবিদ হতে হবে, রোগ সম্পর্কে জানতে ডাক্তার হতে হবে, সুতরাং ইসলাম সম্পর্কে জানতে মুসলিম হতে হবে” এই বলে সে অমুসলিম/নাস্তিক/মুক্তমনা/মানবতাবাদীদের ইসলাম সম্পর্কে সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে দেন। তিনি বোঝান, ওরা কেউই ইসলাম সম্পর্কে বক্তব্য দেয়ার যোগ্য না, কারণ ওরা কেউই মুসলিম না। একমাত্র একজন প্রকৃত মুসলিমই ইসলামের সমালোচনার যোগ্যতা রাখেন। কি হাস্যকর যুক্তি!
4 minutes ago · Like//

আসিফ মহিউদ্দীনঃ ইসলাম সম্পর্কে সমালোচনার জন্য আমাদের মুসলিম হতে হবে, দুর্নীতিবাজদের সমালোচনা করতে হলে আমাদের দুর্নীতিবাজ হতে হবে, ধর্ষককে ঘৃণা করতে আমাদের ধর্ষন করতে হবে। এই হচ্ছে আমাদের প্রিয় ডাক্তর জোকার নায়েকের ধ্বজভঙ্গ যুক্তির নমুনা।(এই অংশটুকু শুধুই জোকার নায়েকের যুক্তির নমুনা বোঝবার জন্য ব্যাবহার করেছি)
3 minutes ago · Like//

আসিফ মহিউদ্দীনঃ এই লেখাটিতেও তেমনি একটা হামবড়া ভাব, যে “আমি ডাক্তর, কোথাকার কোন অভিজিৎ কি আমাত্থে বেশি বুজে?” দেখানো হয়েছে প্রবলভাবে।

কিন্তু জনাব, এইডস কিভাবে ছড়ায় তা জানতে একটি এমবিবিএস সার্টিফিকেট লাগে না। আর সার্টিফিকেট ধারী অনেকের মধ্যেও বিবর্তনবাদ নিয়ে যা শুনেছি, এখন সার্টিফিকেট ধারী শুনলেই হাসি পেয়ে যায়।
about a minute ago · Like//

আসিফ মহিউদ্দীনঃ এর চাইতে বেশি বলতে গেলে ঐ লেখাটির একটা সমালোচনা লিখতে হবে, তা করলে ঐ লেখাটিকে গুরুত্ত্ব দিয়ে ফেলা হয়। যার কোন প্রয়োজন দেখছি না। লিঙ্ক শেয়ারের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
2 hours ago · Like · 1 person

এরপরে আমাদের এমবিবিএস ডাক্তর সাহেব যিনি সবাত্থে বেশি বোঝেন, প্রথমে এই মন্তব্যগুলো, পরে তার শেয়ার করা লিঙ্ক মুছে ফেলেন। যিনি সমালোচনাই সহ্য করতে পারেন না, তিনি এসেছেন সমালোচক সাজতে। কি হাস্যকর ব্যাপার!!! এরপরে আমাকে অত্যন্ত কুৎসিত ভাষায় বেশ কয়েকটি মেসেজ পাঠান, মেসেজটার স্ক্রীনশট চাইলে দেয়া হবে।

আমাদের এমবিবিএস পাশ ডাক্তর মুশফিক সাহেব নিজেকে নাস্তিক দাবী করে, মুক্তমনা দাবী করে আমাকে মেসেজ পাঠিয়েছেন, এবং সেই মেসেজে Avijit Roy ভাইকে বদ্ধমনাও তিনি দাবী করেছেন। বেশ ভাল কথা। অভিজিৎ ভাই আসলেই বদ্ধমনা, মুক্তমনা হলে তিনি এই এমবিবিএসের পিছনে কষে একটা লাথি ঠিকই লাগাতেন বলেই আমার মনে হয়। তো আমাদের “স্বঘোষিত মুক্তমনা” এবং “যুগশ্রেষ্ট নাস্তিককুল শিরঃমনি” মুশফিক ভাই (এমবিবিএস-সুভানাল্লাহ) এর মুক্তমনের পরিচয় পেলাম আমারই বক্তব্য ডিলিট করে আমাকে কুৎসিত ভাষায় গালাগালিতেই। যে আমার ছোট কয়েক লাইন সমালোচনা সহ্য করতে পারছেন না, তিনি অভিজিৎ ভাইয়ের লেখার সমালোচক এবং “স্বঘোষিত মুক্তমনা” বনে গেছেন। কি কান্ড!!!

উনার লেখার উপরোক্ত সমালোচনা করায় তিনি আমাকে “শুয়ারের বাচ্চা” “মূর্খের বাদশাহ” “নাস্তিক মৌলবাদী” “ছাগবৎস” “হস্তমৈথুনকারী” “অর্বাচীন যুবক” “মুক্তমনার দালাল” সহ বিভিন্ন উপাধীতে এবং গালাগালিতে ভূষিত করেছেন ব্যাক্তিগত মেসেজের মাধ্যমে। ডাক্তর মুশফিক নামক দ্বিতীয় জোকার নায়েকের মেসেজ পেয়ে আমি মুগ্ধ। কি বলবো ভেবেই পাচ্ছি না। একজন সমালোচক যখন তার সমালোচককে শুধুমাত্র সমালোচনার জন্য সেই মন্তব্যগুলো মুছে “শুয়ারের বাচ্চা” বলে গালি দেন, তখন তার চাইতে বেশী মুক্তমনা আর কে হতে পারে?

আমাকে এইটুকু সমালোচনার অপরাধে “শুয়ারের বাচ্চা” বলে গালি দেয়া মেসেজের ছবিঃ

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, উনি আমাকে গালি দিয়েছেন নাকি লেখার শেষে নিজের সাক্ষর রেখেছেন ব্যাপারটা ঠিক ধরতে পারি নি। আপনাদের কারো জানা থাকলে প্লিজ জানাবেন।

ধন্যবাদ সবাইকে।