৯০ এর দশকের প্রথম দিকে বাংলাদেশ পরিকল্পনা একাডেমী ও সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত জেন্ডার বিষয়ক একটি প্রশিক্ষণে অংশগ্রহন করেছিলাম। প্রশিক্ষণটির প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছিলেন শিরীন হক, নারীপক্ষ এবং নায়লা কবির,শিক্ষক,সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়। কয়েকটি অধিবেশন ছিল কীভাবে বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচিতে জেন্ডার বিষয়টিকে আরোপিত করা যায় এবং বিভিন্ন প্রকল্প ও কর্মসূচি জেন্ডার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিশ্লেষণ করার কৌশল। এ কাজে প্রত্যেকেই তাদের অফিসে বাধার সন্মুখীন হচ্ছেন বলে জানালেন। নায়লা কবির রবীন্দ্র সংগীতের শব্দ বদলিয়ে —
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে আবার ডাক রে — বলেছিলেন।
অর্থাৎ ডাক শুনে কেউ না আসলে একলা না চলে আবার ডাকার আহ্বান করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমিও গত পর্বের অনেক বিতর্কের পরও আবার ডাকছি। একলা চলতে চাই না। একলা সাফল্য আসে না। আসবে না।
নায়লা কবির অথবা তপন রায়চৌধুরীর মত নিজের প্রয়োজনে শব্দের অভিযান চালাতে চাই।
তবে কেউ যেন ভাববেন না যে আমি শুধু ঢালাওভাবে সবখানে নারীবাদী শব্দ ব্যবহারের কথা বলছি। অথবা আমি প্যারডি পদ্য লিখতে চাচ্ছি। কিংবা আমি কবিতার ইসলামীকরণকে উদ্ধুদ্ধ করছি বা তা যৌক্তিক করার জন্যে আমার নারীবাদীকরণকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করতে ইন্ধন যোগাচ্ছি। কেউ কেউ হয়ত ভাবছেন যে আমি শুধু কাজী নজরুলের কবিতা ও গান নিয়ে মেতেছি। যদিও প্রথম পর্বে তাঁর নারী ও বীরাঙ্গনা কবিতার কথা উল্লেখ করে আমার বক্তব্য দিয়েছিলাম।
যাহোক, যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে আবার ডাক রে–।
আমিও আবার ডাকছি।
আমার পন্ডিত পাঠকদের নিয়ে আমি হরিশ্চন্দ্র রাজার মত পাতালেই যেতে চাই।
রাজা হরিশ্চন্দ্রকে প্রস্তাব করা হয়েছিল তিনি ১০০ মূর্খ নিয়ে স্বর্গে যাবেন না কি পাঁচজন পন্ডিত নিয়ে পাতালে যাবেন? বলা বাহুল্য তিনি পাতালে যাবার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। আমিও মুক্ত- মনার পাঠকদের সাথে নিয়েই আমার যাত্রা সফল করতে চাই এবং তাহলে যাত্রার গন্তব্যে পৌঁছতে পারব বলেই আমার বিশ্বাস।
‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়া এ ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি।।’
নমস্য এ গানের গীতিকার ও সুরকার। অজস্র প্রণাম তাদেরকে এমন ভাব জাগানিরা সৃষ্টির জন্যে। বাংলাদেশের সংগীত জগতে এমন জনপ্রিয় গান কমই আছে। তাই তো বিবিসি শ্রোতা জরিপে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ গানের তালিকায় এটি তৃতীয় স্থান লাভ করে। এ গানের সুর আমার মধ্যেও আবেগ সৃষ্টি করে বৈ কি। আমার ধারণা ফেব্রুয়ারি মাসে এ গানটি সর্বাধিক গাওয়া গান।
এটি প্রথমে আব্দুল গাফফার চৌধুরীর একটি কবিতা ছিল। প্রথম সুরারোপ করেন আব্দুল লতিফ। কিন্তু পরবর্তীতে সুরকার আলতাফ মাহমুদ গানের সুরে পরিবর্তন আনেন। বর্তমানে আলতাফ মাহমুদের সুর করা গানটিই গাওয়া হয়। ত্রিশ লাইনের কবিতাটি থেকে মাত্র উপরের উল্লেখিত ছয়টি লাইন গাওয়া হয়। ঐতিহাসিক দলিল এ গান। এখানে ভাইদের জীবন ত্যাগ আর মায়েদের ছেলে ত্যাগের কথা পাই। উপেক্ষিত ভাষা আন্দোলনে নারীর নিজের অবদান। অথচ কবিতাটির ২৬তম লাইনে নারীর ত্যাগের কথা আছে।
‘তুমি আজ জাগো তুমি আজ জাগো একুশে ফেব্রুয়ারি
আজো জালিমের কারাগারে মরে বীর ছেলে বীর নারী
আমার শহীদ ভায়ের আত্মা ডাকে
জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাটে।
দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালবো ফেব্রুয়ারি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।’’
কাজেই আগামীতে গানটির প্রথম ছয় লাইনের সাথে শেষ ছয় লাইনও গাওয়ার জোর দাবি করছি। তা না হলে এ ঐতিহাসিক গানে যা দলিলের চেয়েও কম মূল্যবান নয় তাতে ভাষা আন্দোলনে নারীর যে অবদান তা অস্বীকৃত — অপ্রকাশিত — অপ্রচারিত — অজানিতই রয়ে যাচ্ছে। নারীর সত্ত্বা তো এভাবেই অবহেলায় ধূলায় গড়ায়।
লেখার ভূমিকাটি বেশ খানিকটা দীর্ঘ ও অপ্রাসঙ্গীক হলেও মূল বক্তব্যের সঙ্গে একমত। :yes:
আমার বিস্ময় লাগে, মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের লিখিত ইতিহাসে শেষ পর্যন্ত নারী কি ভাবে উপেক্ষিত থেকে যান!
বেশ কয়েকবছর আগে মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান– এ বিষয়ে বিবিসি রেডিওর বাংলা বিভাগে আফসান চৌধুরী একটি চমৎকার ধারাবাহিক প্রতিবেদন করেছিলেন। এর সূচনা সংগীতটি ছিল:
@বিপ্লব রহমান, ধন্যবাদ গঠননমূলক সমালোচনাসহ মন্তব্যের জন্যে।
ভাল লাগল আপনার দেয়া আফসান চৌধুরীর রেফারেন্সটি।
ব্রাইট স্মাইলকে ধন্যবাদ বকলমের উত্তর দেয়ার জন্যে। বিশেষ করে জোর দেয়ার জন্যে যে —-
লাইজু নাহারকে ধন্যবাদ আলোচনায় যোগ দেয়ার জন্যে।
আসলে নারীদের কথা নারীদেরই বলতে হবে।
আন্দোলন করেই হোক বা লেখলেখি করেই হোক।
এখন তো বাংলাদেশে বহু নারী সংগঠন।
সংগঠনগুলোকে একসাথে কাজ করতে হবে ও বিভিন্ন মিডিয়ায় আনতে হবে,
তাহলে মনে হয় কিছুটা কাজ হতে পারে।
এ পৃথিবীতে কেউ কাউকে এমনিতে মর্যাদা দেয়না।
জয় করে নিতে হয়!
ধন্যবাদ!
ভাষাগতভাবে যে জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন আছে তা আমরা জানি। কিন্তু এটাকে একটা সময়ের অভিব্যক্তি হিসাবে ধরাইকি ঠিক হবেনা? কাজেই যেসব জায়গায় ছেলেদের কথা বলা হয়েছে সেখানে মেয়েদের কথা বলে তাকে নারীবাদী বানানোটা ঠিক কতটা উপযোগী হবে?
আর লাইনের মধ্যে নারীর কথা থাক বা না থাক বস্তুত চেতনার যায়গায় নারীবাদী হলেই আমার মতে চলবে। হয়ত উত্তরকালে আমরা ভাষার এই ডিসক্রিমিনেশন এড়াতে পারব।
আর এই বিষয়ে আমি মার্ক্স এর ধারনাকে সঠিক বলে মনে করি। নারীকে সমান কাতারে আসতে হলে উৎপাদন ব্যবস্থায় তাকে আরো সামিল করা জরুরী, তা না হলে নারীর সমানাধিকার সম্ভব কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।
@বকলম,
আমি মনে করি এখানে নারীবাদী-পুরুষবাদী বিষয়ের খুব গভীরে না যেয়ে মাত্র কয়েকটি লাইন গানটিতে গীতা দাস যোগ করতে বলেছেন। এতে কারও কোন অসুবিধা হবেনা, বরং কিছু লোকের গাইতে এবং শুনতে ভালো লাগবে। এটা একটি নির্দোষ দাবী বলেই আমার মনে হয়।
উত্তরকালটা এখনই শুরু করা যাকনা। 🙂
@গীতা দাস,
এটা একটা ন্যায়সংগত ও সমর্থনযোগ্য দাবি।
@ব্রাইট স্মাইল্,
দাবির সাথে একমত হওয়ার জন্যে ধন্যবাদ।