তরুন রবীন্দ্রনাথ আর অভিজ্ঞতার ভারে নুয়ে পড়া বঙ্কিম চন্দ্রের মধ্যে একবার একটা বিতর্ক হয়েছিল। সেই বিতর্ক আজকের মতন টিভি সেটের সামনে দুই পক্ষের উপস্থিতিতে অথবা হলরুমে বিচারকের সামনে হয় নি – একজন পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখেছেন, আরেকজন মাসাধিককাল পরে আরেক পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখে সেটার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। প্রথম পক্ষ পরে আবার জবাব দিয়েছেন। সেই বিতর্কে বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন বাস্তবতাবাদী, আর কবিগুরু ছিলেন সত্যের সেবক। বঙ্কিমবাবু এবং রবীন্দ্রনাথ দুজনই ছিলেন ভারতের স্বাধীনতার আন্দোলনের কর্মী, পর্দার পেছনে। বঙ্কিমচন্দ্র ইংরেজ সরকারের চাকুরী করা সত্ত্বেও ভারতের জাতীয় গনজাগরনে বলিষ্ঠ ভুমিকা রেখেছেন তার লেখনীর মাধ্যমে। তার এই মত ছিল যে, ইংরেজকে তাড়াতে হলে ছলে বলে কৌশলে যেভাবে সম্ভব চেষ্টা করতে হবে, তাতে সত্য-মিথ্যার মিশেল দিতে হলেও ক্ষতি নেই। পক্ষান্তরে রবীন্দ্রনাথ শত্রুর সাথেও সত আচরণ করতে প্রস্তুত ছিলেন সবসময়, এবং সাময়িক সুবিধার জন্য তিনি নীতিকে বিসর্জন দিতে প্রস্তুত নয়।

বঙ্কিমচন্দ্র প্রসঙ্গটির অবতারনা করেছেন এভাবেঃ খাঁটি সোনায় যেমন ভালো মজবুত গহনা গড়ানো যায় না, তাহাতে মিশাল দিতে হয়, তেমনি খাঁটি ভাব লইয়া সংসারের কাজ চলে না, তাহাতে খাদ মিশাইতে হয়। যাহারা বলে – সত্য কথা বলিতেই হইবে, তাহারা সেন্টিমেন্টাল লোক, কেতাব পড়িয়া তাহারা বিগড়াইয়া গিয়াছে, আর যাহারা আবশ্যকমতো দুই-একটা মিথ্যা কথা বলে ও সেই সামান্য উপায়ে সহজে কার্যসাধন করিয়া লয় তাহারা প্র্যাকটিক্যাল লোক। তিনি বলেন, যেখানে লোকহিতার্থে মিথ্যা নিতান্ত প্রয়োজনীয়, সেখানে মিথ্যা বলা বারণ নয়। উদাহরন দিয়েছেন মহাভারত থেকেঃ

‘কর্ণের যুদ্ধে পরাজিত হইয়া যুধিষ্ঠির শিবিরে পলায়ন করিয়া শুইয়া আছেন। তাঁহার জন্য চিন্তিত হইয়া কৃষ্ণার্জ্জুন সেখানে উপস্থিত হইলেন। যুধিষ্ঠির কর্ণের পরাক্রমে কাতর ছিলেন, ভাবিতেছিলেন, অর্জ্জুন এতক্ষণ কর্ণকে বধ করিয়া আসিতেছে। অর্জ্জুন আসিলে তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, কর্ণ বধ হইয়াছে কি না। অর্জ্জুন বলিলেন, না, হয় নাই। তখন যুধিষ্ঠির রাগান্ধ হইয়া, অর্জ্জুনের অনেক নিন্দা করিলেন, এবং অর্জ্জুনের গাণ্ডীবের অনেক নিন্দা করিলেন। অর্জ্জুনের একটি প্রতিজ্ঞা ছিল–যে গাণ্ডীবের নিন্দা করিবে, তাহাকে তিনি বধ করিবেন। কাজেই এক্ষণে “সত্য” রক্ষার জন্য তিনি যুধিষ্ঠিরকে বধ করিতে বাধ্য–নহিলে “সত্য”-চ্যুত হয়েন। তিনি জ্যেষ্ঠ সহোদরের বধে উদ্যত হইলেন–মনে করিলেন, তার পর প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ, আত্মহত্যা করিবেন। এই সকল জানিয়া, শ্রীকৃষ্ণ তাঁহাকে বুঝাইলেন যে, এরূপ সত্য রক্ষণীয় নহে। এ সত্য-লঙ্ঘনই ধর্ম্ম। এখানে সত্যচ্যুতিই ধর্ম্ম। এখানে মিথ্যাই সত্য হয়।’

রবীন্দ্রনাথ তার নিজের অবস্থানের প্রতি যুক্তি দিচ্ছেন এভাবেঃ

‘কলসি যত বড়োই হউক না, সামান্য ফুটা হইলেই তাহার দ্বারা আর কোনো কাজ পাওয়া যায় না। তখন যে তোমাকে ভাসাইয়া রাখে সেই তোমাকে ডুবায়। মনুষ্যত্বের যে বৃহত্তম আদর্শ আছে, তাহাকে যদি উপস্থিত আবশ্যকের অনুরোধে কোথাও কিছু সংকীর্ণ করিয়া লও, তবে নিশ্চয়ই ত্বরায় হউক আর বিলম্বেই হউক, তাহার বিশুদ্ধতা সম্পূর্ণ নষ্ট হইয়া যাইবে। সে আর তোমাকে বল ও স্বাস্থ্য দিতে পারিবে না। শুদ্ধ সত্যকে যদি বিকৃত সত্য, সংকীর্ণ সত্য, আপাতত সুবিধার সত্য করিয়া তোল তবে উত্তরোত্তর নষ্ট হইয়া সে মিথ্যায় পরিণত হইবে, কোথাও তাহার পরিত্রাণ নাই।’

রবীন্দ্রনাথ আরো বলছেনঃ ‘সুবিধার অনুরোধে সমাজের ভিত্তিভূমিতে যাঁহারা ছিদ্র খনন করেন, তাঁহারা অনেকে আপনাদিগকে বিজ্ঞ তথা প্র্যাকটিকাল বলিয়া পরিচয় দিয়া থাকেন। তাঁহারা এমন ভাব প্রকাশ করেন যে, মিথ্যা কথা বলা খারাপ, কিন্তু পলিটিক্যাল উদ্দেশ্যে মিথ্যা কথা বলিতে দোষ নাই। সত্যঘটনা বিকৃত করিয়া বলা উচিত নহে, কিন্তু তাহা করিলে যদি কোনো ইংরাজ অপদস্থ হয় তবে তাহাতে দোষ নাই। ***** হইতেও পারে, সমস্ত জাতিকে মিথ্যাচরণ করিতে শিখাইলে আজিকার মতো একটা সুবিধার সুযোগ হইল, ইংরেজ পালাইল– কিন্তু তাহাকে যদি দৃঢ় সত্যানুরাগ ও ন্যায়ানুরাগ শিখাইতে তাহা হইলে সে যে চিরদিনের মতো মানুষ হইতে পারিত! অতএব স্বজাতির যথার্থ উন্নতি যদি প্রার্থনীয় হয়, তবে কলকৌশল ধূর্ততা চাণক্যতা পরিহার করিয়া যথার্থ পুরুষের মতো মানুষের মতো মহত্ত্বের সরল রাজপথে চলিতে হইবে, তাহাতে গম্য স্থানে পৌঁছিতে যদি বিলম্ব হয় তাহাও শ্রেয়, তথাপি সুরঙ্গ পথে অতি সত্বরে রসতল রাজ্যে গিয়া উপনিবেশ স্থাপন করা সর্বথা পরিহর্তব্য।’

শুনেছি রাজনীতি অথবা যুদ্ধে, এমনকি প্রেমেও নাকি সত্য-মিথ্যার মিশেল জায়েজ। ন্যায়শাস্ত্রে উপযোগিতাবাদ থেকে শুরু করে নানা তত্ব আছে, যেগুলোতে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল, তা নির্ণয় করা হয় নানা উপায়ে। সে সব আলোচনায় যেতে চাই না। সম্প্রতি মুহম্মদ জাফর ইকবাল ‘না, বাংলাদেশ মরে নি’ শিরোনামে একটা লেখা লিখেছেন, যা দেশের নানা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লেখাটি মূলত বাংলাদেশি ব্রিটিশ লেখক জিয়া হায়দার রহমানের কিছু বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ঠিক বলেছেন নাকি ভুল বলেছেন, সেটা আমার বিবেচ্য নয়। আমি শুধু তার লেখার ধরণ তথা তার লেখায় ব্যবহৃত কিছু উপাদান নিয়ে কথা বলব, যেগুলো তার লেখাটিকে একটি অর্ধসত্য, অপযুক্তি ও বিদ্বেষের মিশেলে পরিণত করেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল যে প্রেক্ষিতে এই প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন তা একটু বলে নেওয়া ভাল। তার আগের নানা লেখার সুবাদে বলা যায়, তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে প্রচণ্ড আশাবাদী মানুষ। যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং আরো বেশ কিছু প্রসঙ্গে তিনি বেশ সরব ছিলেন এবং তরুন প্রজন্ম তাকে একজন আলোকবর্তীকা এবং রোলমডেল মনে করে, সঙ্গত কারণেই। সাদাসিধে কথা নামে তার সমসাময়িক নানা বিষয়ে লেখা প্রবন্ধগুলো বের হওয়া মাত্রই ফেসবুক-টুইটারে বন্যার পানির মত ছড়িয়ে পড়ে। শুধু লেখালেখিই নয়, তার মধ্যে সক্রিয় এক্টিভিজমও আমরা দেখেছি – যেমন প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে, শাবিপ্রবি’র নানা ইস্যুতে, ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তিনি বরাবরই সরব, সরব আরো নানা বিষয়ে। ফলে, তার লেখার পজিটিভ প্রভাবের দিকটা আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বেশ ঈর্ষাণীয় একটা ব্যাপার। সেই একই কারণে তার লেখা আশার বেসাতির সাথে সাথে যদি নেগেটিভ কিছুও ছড়িয়ে দেয়, সেটিও সবার কাছে খুব সহজেই পৌঁছুবে, এবং তার প্রভাব মুহম্মদ জাফর ইকবালের সৃষ্ট পজিটিভ প্রভাবকেও হয়তোবা ছাড়িয়ে যেতে পারে, এই আমার আশঙ্কা।

শিরোনাম দিয়ে শুরু করি। জিয়া হায়দার রহমান কোথাও বলেন নি যে বাংলাদেশ মৃতদের দেশ। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে মৃত চিন্তাভাবনার দেশ, যেখানে নতুন কোনো ধারণার প্রকাশ ঘটা মাত্রই তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও শ্রেণির বাধায় নতুন চিন্তা-চেতনা, ধ্যানধারণা বিকশিত হতে পারে না।’ ইংরেজী বাক্যটি এরকম ছিলঃ ‘Bangladesh is a land of dead ideas, where new concepts are throttled at birth and never get passed on because of social, political and class barriers.’ মুহম্মদ জাফর ইকবাল লিখছেন, তিনি নাকি প্রথমে পড়েছিলেন এরকমঃ ‘বাংলাদেশ হচ্ছে মৃতদের দেশ’, এবং পরে চোখ কচলে দ্বিতীয়বার পড়ে বুঝতে পারলেন যে, ইংরেজি শিরোনামটির বাংলার সঠিক অনুবাদ করলে অর্থ হয় আরও ভয়ানক, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে মৃত চিন্তা-ভাবনার দেশ। বাক্যটির দ্বিতীয় অংশ তিনি পড়েছেন নিশ্চয়ই, তবে তার নিজের প্রতিক্রিয়ার শিরোনাম দেবার সময় তার প্রথমবারের ভুল যে পঠন, সেখানেই আটকে রয়ে গেছেন। তিনি শিরোনাম করলেন, ‘না, বাংলাদেশ মরে নি’। যারা শুধু অনলাইন সাংবাদিকদেরকেই চটকদার হেডলাইন করার অপরাধে দোষী করেন, তারা এইটাকে কি বলবেন সেটা তাদের ব্যাপার, তবে আমি বলব, এই শিরোনামের মধ্যে অসততা রয়েছে। তিনি যদি বলতেন, ‘না, বাংলাদেশ মৃত চিন্তা ভাবনার দেশ নয়’, অথবা জিয়া হায়দারের পুরো বক্তব্যের রেশ ধরে অন্য যে কোন উপযুক্ত শিরোনাম করতেন, তাতে কি তার বক্তব্যের ধার কমে যেত? জিয়া হায়দার রহমান ওই অনুষ্ঠানে আরও বলেছেন, মূলত দেশটা বিপুল ক্ষমতাধর ও অসামান্য সুযোগ-সুবিধাভোগীদের, তাঁরা তাঁদের ধ্যানধারণা নিচের স্তরের জনগণের ওপর চাপিয়ে দেন এবং সাধারণ মানুষও তাকে ‘হ্যাঁ’ বলে মেনে নেয়। মৃত ব্যক্তিদের ছায়াকে পুঁজি করে দুই নারী বাংলাদেশের রাজনীতিতে আধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছেন। জাফর ইকবাল যদি এই বাক্যটির উপরে ভিত্তি করে বলতেন, ‘না, বাংলাদেশে ভবিষ্যতের নেতারা দুই পরিবার থেকে আসবে না, আসবে মেধাবী সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে’, তাহলে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুশী হতাম, কিন্তু আমি জানি সেটা দিবাস্বপ্ন। এমনকি তিনি যদি এটাও বলতেন যে, ‘না, দুই নারী নয়, দুই জন যোগ্য ব্যক্তিই এই দেশ চালাচ্ছেন’, তাতেও শিরোনামের বুদ্ধিবৃত্তিক সততা বজায় থাকত।

কারো সমালোচনা করছি বলেই যে বক্তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে হবে এমন কোন দিব্যি কেউ দেয় নি। বিতর্ক বলুন আর আলোচনা বলুন, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সেখানে থাকতেই হবে। মুহম্মদ জাফর ইকবালের যে বৃহত প্রভাব বলয়, তার সম্পর্কে তিনি ওয়াকিফহাল বলেই আমি মনে করি। তার লেখা এদেশের মানুষকে প্রভাবিত করে, এবং তিনি সেটা জানেন। সেই কারণেই তার দায়িত্বের মাত্রাটা বেশি হওয়া উচিত – তার কাছ থেকে আমরা শামীম ওসমান – সেলিনা হায়াত আইভী বা মীর্জা ফখরুল – সৈয়দ আশরাফুল মানের বিতর্ক আশা করি না। ব্যক্তিগত আক্রমণের অনেক উপায় আছে, তার একটা হল প্রতিপক্ষকে গুরুত্ব না দেওয়া, তার সম্পর্কে না জানা অথবা না জানার ভাণ করা। মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার লেখার শুরুতে জিয়া হায়দার রহমানের বক্তব্য সম্পর্কে বললেন, ‘উক্তিটি একজন ব্রিটিশ লেখকের। লেখক তরুণ এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে তার এ রকম একটা মন্তব্য করার অধিকার রয়েছে বলে মনে করেন। কারণ, তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত।’ এখানেই তিনি থামলেন না, আরো যোগ করলেনঃ ‘কিন্তু একজন মানুষ যদি বাংলাদেশি না হয়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হয় এবং মানুষটি যদি লেখালেখির জগতে খুব অল্প বয়সে অনেক সুনাম অর্জন করে থাকেন, তাহলে বাংলাদেশ সম্পর্কে তার মন্তব্য সবাইকে হজম করতে হবে। …… তাই জিয়া হায়দার রহমান নামের অত্যন্ত প্রতিভাবান এবং বিখ্যাত সেই তরুণ লেখকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেই বক্তব্যটি আমি পড়ে দেখার প্রয়োজন মনে করিনি, চোখ বন্ধ করে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে ফেলেছি এবং কিছুক্ষণের মাঝে পুরো বিষয়টি ভুলে গেছি।’ জিয়া হায়দার রহমানের জন্ম বাংলাদেশে, এবং তিনি ছেলেছোকরা জাতীয় কেউ নন বয়স বা পরিপক্কতার দিক থেকে – যারা তার লেখা পড়েছেন, তার অনুষ্ঠানে গিয়েছেন বা ইউটিউবে তার বক্তব্য শুনেছেন তারা এতে একমত হবেন আশা করি। তার সাহিত্যচর্চাও কোন পাল্প ফিকশন বা বাজারী হুজুগে বস্তু নয় সম্ভবত, যদিও সে ব্যাপারে সময়ই আসল সাক্ষী দেবে। তবে তার মানসিক গড়নে বাংলাদেশের যে প্রভাব, বাংলাদেশের সাথে তার যে আত্নিক সম্পর্ক, তা তার লেখায় এবং বক্তব্যে এসেছে বারবার। তিনি কোন পলিটিক্যাল পার্টির বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর কেউ নন, ব্রিটিশ সরকারের বা জাতির প্রতিনিধিও নন যে তাকে সন্দেহ করতেই হবে। আমরা তাকে যে সন্মান দেব, তাতে তার কিছু যাবে আসবে না, কিন্তু এতে আমাদের নিজেদের সন্মানই বাড়বে প্রকারান্তরে।

মুহম্মদ জাফর ইকবালের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরো এক ধাপ উপরে – কারণ বাংলাদেশে তিনি গুটিকয়েক রোলমডেলদের একজন। তিনি যে দৃষ্টান্ত রাখছেন আমাদের সামনে, অনেকে সেটাকে বিনা প্রশ্নে মেনে নেয় তাদের আদর্শ হিসেবে। সেই একই লেখাতে মুহম্মদ জাফর ইকবাল নিজেই বলছেন যে, ‘একজন শ্রদ্ধেয় বুদ্ধিজীবী এভাবে একটা ধারণা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করলে অনেক তরুণ কমবয়সী ছেলেমেয়ে সত্যি সত্যি সেটা বিশ্বাস করে ফেলতে পারে, তারা মনে করতে পারে সত্যি বুঝি বাংলাদেশে চিন্তা-ভাবনার জন্ম হয় না, সত্যিই বুঝি বাংলাদেশ চিন্তা-ভাবনার দিক থেকে মৃত এবং একটি বন্ধ্যা ভূখণ্ড। কাজেই আমার মনে হয়েছে, আমি নিজে এ ব্যাপারে কী ভাবি সেটা একটু বলা দরকার।’ তিনি এ কথা বলেছেন প্রথম আলো পত্রিকায় সৈয়দ আবুল মকসুদের লেখা প্রসঙ্গে, যেখানে সৈয়দ আবুল মকসুদ জিয়া হায়দার রহমানের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। তো, সৈয়দ আবুল মকসুদের লেখার একটা নেগেটিভ প্রভাব পড়তে পারে তরুণ কমবয়সী ছেলেমেয়েদের উপরে, এটা মুহম্মদ জাফর ইকবাল জানেন, আর সেই কারণেই তার নিজের লেখার প্রভাব, তা পজিটিভ বা নেগেটিভ যাই হোক, আমাদের তরুণ কমবয়সী ছেলেমেয়েদের উপরে পড়ে আরো বেশি মাত্রায়, সেটা তার মাথায় রাখা জরুরী।

প্রথম আলো পত্রিকায় সৈয়দ আবুল মকসুদের লেখা প্রসঙ্গে মুহম্মদ জাফর ইকবাল আরো বললেন, কেউ নাকি শ্রদ্ধেয় আবুল মকসুদকে দায়িত্ব দিয়েছেন বিখ্যাত তরুণ লেখক জিয়া হায়দার রহমানের দুই-তিনটি লাইনকে অনেক বড় করে ব্যাখ্যা করার জন্যে, এমন ধারণা হয়েছে তার। কারো সাথে মতের মিল না হলেই আসল বক্তব্যকে এড়িয়ে গিয়ে সেটার পেছনে বক্তার ধান্দা খোঁজা সুস্থ বিতর্কের পরিপন্থী। এটা অবশ্যই সৈয়দ আবুল মকসুদের জন্য অপমানজনক। তিনি যা লিখেছেন বুঝে শুনেই লিখেছেন বলে ধরে নেওয়াটাই রীতি – তার পেছনে অন্য কারো মদদ খোঁজাটা একটা অসুস্থ মানসিকতার প্রকাশ। সৈয়দ আবুল মকসুদের বক্তব্যকে যুক্তি দিয়েই খণ্ডন করতে হবে, অন্য কিছু দিয়ে নয়।

মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখার সবচেয়ে আপত্তিকর অংশ হলো পরিবারতন্ত্রের পক্ষে সাফাই গাওয়া, সেক্সিজম নামে এক অদৃশ্য (এবং এই ক্ষেত্রে সম্ভবতঃ অস্তিত্বহীন) শত্রুকে খতম করার ছলে। ব্রিটেনে পোষাকী রাজতন্ত্র আছে, সেটা সবাই জানে। কিন্তু ব্রিটেনের গণতান্ত্রিক চর্চা কি আমাদের কাছে শিখবার বিষয় নয়? কাজেই, কোন ব্রিটিশ নাগরিক যদি আমাদের দেশের পরিবারতন্ত্র নিয়ে সমালোচনা করে, সেটা খণ্ডন করতে গিয়ে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের খোঁটা দেওয়াটা নেহাতই একটা ছেলেমানুষী। তিনি লিখছেন ‘প্রথমে আমি ছোট একটা ধাক্কা খেলাম, তিনি বলেছেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে আধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছেন দুজন মহিলা, নিজেদের যোগ্যতায় নয়, মৃত ব্যক্তিদের ছায়ায়! (যে দেশে রাজা রাণী, রাজপুত্র, রাজকন্যা থাকে সেই দেশের মানুষ যখন এরকম কথা বলেন তখন আমি কৌতুক অনুভব করি – যাই হোক সেটা ভিন্ন কথা)।’ জিয়া হায়দার রহমানকে উদ্ধৃত করছে ডেইলি স্টার এভাবেঃ Haider, who came to Dhaka last month to attend the Hay Festival, was also critical of the dominance of Bangladeshi politics by two ladies who according to him “stand in the shadow of the dead” and rely on their dead relatives to legitimise their moral authority to rule the country. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এই কথা শুনে ধাক্কা খেলেন কেন, সেই প্রশ্ন তোলাই যায়। আমি কোন ধাক্কা খাই নি, বরং আমার মনের কথাটা বলার জন্য বক্তাকে মনে মনে ধন্যবাদ দিয়েছিলাম। জিয়া হায়দার রহমানকে এখানে সেক্সিস্ট বানিয়ে আক্রমণ করে, ব্রিটিশ বানিয়ে, রাজতন্ত্রের খোঁটা দিয়ে, নিজের জীবনের মহান নারীদের মহত্বের গল্প ফেঁদে, পাঠকের মনোযোগ নিয়ে যাওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ অন্য দিকে। পাঠকের মনে পরিবারতন্ত্রের প্রতি একটা সহানুভূতি তৈরী করা হয়েছে দেশপ্রেমের মিশেল দিয়ে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে ধাক্কা খেলেও, তার প্রভাব বলয়ের কথা মাথায় রাখলে, তিনি যে পরিবারতন্ত্রের দীর্ঘস্থায়িত্বের ঠিকাদারী নিয়েছেন, তেমন মনে হওয়াটা কি স্বাভাবিক নয়?

মুহম্মদ জাফর ইকবাল ক্লাসরুমে একজন খুব ভালো শিক্ষক বলেই শুনেছি। ভালো শিক্ষকেরা কমিউনিকেশনে খুব ভালো হন, কারণ ছাত্র/শ্রোতার মনে ঢোকার রাস্তা তারা জানেন বা তৈরী করে নেন। কোন শব্দের কিভাবে প্রয়োগ করে, কোন বাক্যের পরে কোন বাক্য সাজিয়ে শ্রোতার মনে কি অর্থ তৈরী করা যাবে, সেটা মুহম্মদ জাফর ইকবাল ভালো করেই জানার কথা। জিয়া হায়দার রহমানের ‘মৃত চিন্তাভাবনার দেশ’ বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে ‘দুই মহিলা’ তত্ব হাজির করে তিনি কি বলতে চাইছেন আসলে, সেটা বেশ পরিষ্কার। আগের প্যারাগ্রাফে জিয়া হায়দার রহমানের বক্তব্যটি ইংরেজীতে পড়ুন – এখানে two ladies না বলে two persons বললে কি সেটা স্বাভাবিক শোনাত? বক্তার সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু কি এই দুইজনের লৈঙ্গিক পরিচয়, নাকি পরিবারের মৃত সদস্যদের কল্যাণে তাদের ক্ষমতা দখল করে রাখার প্রবণতা? এই দু’জন প্রধানমন্ত্রী পুরুষ হলে কথায় কথায় পরিবারতন্ত্র নিয়ে এখন যে একটা সমালোচনা হয়, সেটা চাপা পড়ে যেত, তেমনটাও মনে হয় না – কালকে যখন জয়-তারেক উপাখ্যান দেখতে হবে আমাদেরকে, তখনো আমরা এই পরিবারতন্ত্রের কথাই বলব। টু লেডিজ থেকে টু প্রিন্স, যাদের আসল যোগ্যতা তাদের মরা নানা/বাবা। এখানে আসলে জিয়া হায়দার রহমানের বক্তব্যকে টুইস্ট করে আলগা সমালোচনা করার একটা প্রসঙ্গ হিসেবেই তার ‘দুই নারী’ শব্দগুচ্ছটা বেছে নেওয়া হয়েছে। আমাদের নেত্রীরা যে ‘নারী’, তা একটি ফ্যাক্ট, সেইটা বললেই নারীবিদ্বেষী হয় না কেউ। জিয়া হায়দার রহমান two ladies বলেছিলেন, ‘দুই বেগম’ বলেননি। ‘দুই বেগম’, ‘ইকোনোমিস্ট’ ‘পশ্চিমা মিডিয়া’এসব শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে তাকে প্রচ্ছন্নভাবে জামায়াত বা ইসলামপন্থীদের সাথে এসোসিয়েট করার চেষ্টা আছে এখানে। আগেই বলেছি, মুহম্মদ জাফর ইকবাল একজন খুব ভালো কমিউনিকেটর, ফলে তার লেখা প্রতিটি শব্দের প্রভাব সম্পর্কে তার জানা আছে বলেই ধারণা করি।

যে দিন মুহম্মদ জাফর ইকবালের এই লেখাটা আমি পড়েছি অনলাইনে, সেই একই দিনে আরেক পত্রিকায় পড়লাম, আওয়ামী লীগের নেতা মোহাম্মদ নাসিম বলছেন, শেখ হাসিনা হ্যাটট্রিক করবেন। মোহাম্মদ নাসিম ভাল করেই জানেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব মানেই শেখ হাসিনা বা তার ছেলে। অন্য দলেও একই অবস্থা। গত কয়েক দশকে দুইটা প্রধান দলের নিউক্লিয়াস হলেন দুইজন মহিলা। তারা আজীবন দলের নেতা। তাদের মরা বাপ/স্বামীই তাদের প্রধানতম যোগ্যতা। এটাই আমাদের ডেমোক্রেসি। তাদের পরে জয়-তারেক আজীবন দলের নেতা। এইটাই আমাদের গণতন্ত্র। যেহেতু ব্রিটেনে রাজতন্ত্র আছে, সেহেতু একজন ব্রিটিশ নাগরিকের আমাদের অগণতন্ত্র বা পরিবারতন্ত্র নিয়ে কথা বলবার অধিকার নাই, হোক না সে বাংলাদেশে জন্মানো কেউ। তারা কেউ মুখ খুললেও তাদেরকে নারীবিদ্বেষী বানিয়ে দাও, বিদেশী বানিয়ে দাও, অথবা নিদেনপক্ষে শ্রী নীরদচন্দ্র চৌধুরী বানিয়ে দাও, কেল্লা ফতে! বাংলাদেশে আরো দীর্ঘদিন পরিবারতন্ত্র জারি থাকবে আমাদের দেশের মানুষের কারণেই, এবং সেখানে আমাদের রোল মডেলরাও এর দায় এড়াতে পারবেন না।

জিয়া হায়দার রহমান ও সৈয়দ আবুল মকসুদ তাদের লেখায় দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা, আমাদের গণতন্ত্রের দূর্বলতা, আইনের শাসনের অভাব এবং সামাজিক ন্যায়বিচার নিয়ে বলেছেন। জিয়া হায়দার রহমান বলেন, তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ছবিতে কোনো আলো দেখতে পাচ্ছেন না, কারণ বর্তমান অবস্থা থেকে সংস্কার করে বেরিয়ে আসা তরুণ প্রজন্মের জন্য খুবই কঠিন হবে। তিনি শুধু শাসকশ্রেণি নয়, জনগণের দুর্বল ভূমিকার কথাও বলেছেন। এখানে আমার দ্বিমত করার সুযোগ খুবই কম। জনগণের ভূমিকা যদি শক্ত হতো, আশাবাদী হতে বাধা ছিল না, কিন্তু গোলাম আজমের জানাজায় লাখ মানুষ দেখে আমার আশা উবে যায়। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন যে, যতই বলা হোক জিডিপি বাড়বে, বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হবে, এশিয়ার টাইগার হবে ইত্যাদি ইত্যাদি—তাতে কী লাভ? রানা প্লাজায় হাজার মানুষ মেরে তৈরি পোশাক বা অন্য কোনো দ্রব্যের রপ্তানি বাড়ালেই বা কী লাভ, কার লাভ? বন্ধ্যা, পুরোনো সমাজব্যবস্থা যদি একই রকম থাকে, ঘণ্টায় ঘণ্টায় ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় নারী, প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে, ন্যায়বিচার যদি মানুষ না পায়, আইনের শাসন বলে কিছু না থাকে, শাসকশ্রেণির ইচ্ছা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা না থাকে, হাজার বছরের জাতীয় সংস্কৃতি যদি বিলীন হয়ে যায়, জাতিগত, ভাষাগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা যদি হারায় তাদের অধিকার—তাহলে কিসের মধ্যে আশার আলো দেখছি আমরা? এ দেখা মরীচিকা দেখা নয় তো? এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা দরকার। কারো যদি অসুখ করে, তাহলে তাকে ঔষধ খাওয়াতে হয়। ‘আপনার কিছুই হয়নি’ বলে মিথ্যে সান্ত্বনা দিলে কি রোগ ভাল হবে? জিয়া হায়দার রহমান বাংলাদেশকে বন্ধ্যা বলেন নি, কিম্বা বাংলার মানুষকেও মৃত বলেন নি। তিনি বন্ধ্যা বলেছেন বাংলাদেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে, অপরাজনীতিকে, পরিবারতন্ত্রকে – আর এটা দিবালোকের মতই সত্য। আশাবাদের বেসাতি করলেই যে সত্যকে চিনির প্রলেপ দিয়ে পরিবেশন করতে হয়, অথবা অপ্রিয় সত্যকে যা ইচ্ছা তাই ভাবে আক্রমণ করতে হয়, তা ঠিক নয়।

বিদেশে থাকা বাংলাদেশীদের থালাবাসন ধোয়া নিয়ে তিনি যে স্টেরিওটাইপিং করেছেন, তা আমাকে আশাহত করেছে। কথায় কথায় তিনি আঠারো বছর বিদেশে থাকার কথা বলেন, অথচ আজো যদি তিনি এ ধরণের শ্রমের অমর্যাদামূলক এবং বৈষম্যমূলক কথাবার্তা জনসমক্ষে বলেন, তাতে তার ভাবনার দৈন্যই কেবল প্রকাশ পায়। আমরা বোধহয় বীরের জাতি, থালাবাসন ধোয়া আমাদের সাজে না। আমরা কেবল ড্রোন আর রোবট বানাব, রান্না/থালাবাসন ধোয়া ওগুলো বুয়াদের কাজ, অথবা আমাদের স্ত্রীদের কাজ। মুহম্মদ জাফর ইকবালকে কি তাহলে প্রকারান্তরে সেক্সিস্ট আখ্যা দেওয়া যায়? জিয়া হায়দার রহমান মৃত চিন্তাভাবনার দেশ কেন বলেছিলেন তার কারণ অনুসন্ধান করতে আমাদেরকে খুব বেশিদূর যেতে হবে না। সৈয়দ আবুল মকসুদকে ধন্যবাদ তার সময়োপযোগী লেখাটির জন্য। তার কথাকে আক্ষরিক অর্থে নিয়ে, ভুল ব্যাখ্যা করে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত আবেগ ঢেলে দেশপ্রেমের আতিশয্য দেখাতে গিয়ে মুহম্মদ জাফর ইকবাল যে ভঙ্গিতে প্রতিপক্ষের সমালোচনা করলেন, তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি। কেউ গ্লাস অর্ধেক খালি কিংবা কেউ অর্ধেক ভরা বলতেই পারেন। মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাথে আমার দ্বিমত করার জায়গাটা কিন্তু তার আশাবাদ নিয়ে নয় মোটেও। দেশটা অনেক মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা, সন্ত্রাস, দলবাজিতে যেমন ভরে আছে, তেমনি সেখানে আছে দেশাত্ববোধ, মানবতাবোধ, মুক্ত চিন্তা। বাংলাদেশ কিভাবে এগুচ্ছে, এবং কাদের পরিশ্রমে এগুচ্ছে, সেটা আমি জানি। অন্যকে ছোট না করেও বক্তব্য প্রকাশ করা যায়। মুহম্মদ জাফর ইকবাল কাউকে ব্যঙ্গ না করে, কাউকে ছোট না করে, কাউকে স্টেরিওটাইপিং না করে এবং অপযুক্তির আশ্রয় না নিয়ে যদি এই লেখাটা লিখতেন, তাহলে তার সাথে দ্বিমত করলেও এতটা আশাহত হতাম না।

গোপাল ভাঁড়ের অথবা অন্য কারো একটা কৌতুক মনে পড়ছে – সে উট বিক্রী করছে এক টাকায়, কিন্তু উটের রশির দাম ৯৯ টাকা। অবস্থাটা প্রায় সেরকমঃ ১০ টাকার দেশপ্রেম গেলাতে গিয়ে মুহম্মদ জাফর ইকবাল ৯০ টাকার অসত্য অপযুক্তি কূতর্ক ও বিদ্বেষ গেলাচ্ছেন তার পাঠককূলকে। এতে করে লাভের খাতায় কতটুকু অবশিষ্ট থাকবে তা এখনই বলার উপায় নেই, তবে সবশেষে কবিগুরুকে প্যারোডি করতেই হয়ঃ

হইতেও পারে, জিয়া হায়দার রহমানকে অপদস্থ করিলে আজিকার মতো একটা সুবিধার সুযোগ হইল, দেশপ্রেম বাঁচিল, মানুষের মনোবল চাঙ্গা হইল, রাজাকার ফাঁসির দড়িতে ঝুলিল– কিন্তু তাহাকে যদি দৃঢ় সত্যানুরাগ ও ন্যায়ানুরাগ শিখাইতে, সুস্থ বিতর্ক ও যুক্তির ব্যবহার শিখাইতে, অন্যকে সন্মান করিয়া দ্বিমত পোষণ করিতে শিখাইতে, তাহা হইলে সে যে চিরদিনের মতো মানুষ হইতে পারিত!