টুপি দাড়ির সউদি ঝড় কেটে যাবার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবিসির সামনে উদয় হয়েছেন। সাক্ষ্যাৎকারে তিনি বলেছেন নতুন ‘ব্লাসফেমী’ আইনের নাকি প্রয়োজনই নেই। টুপি দাড়ির সউদি পঙ্গপালের সামনে দুর্দম সাহসে দাঁড়ানো বাংলার জনগন, যারা শেখের বেটির এই বক্তব্যে বগল বাজানোর আনন্দে ভুগছেন, তাদের বলি.. ‘একটু দাঁড়ান ভাইজান, নতুন কোন আইন হবে না, তিনি বলেছেন। তার মানে এই নয় বাংলাদেশে ব্লাসফেমী আইন ইতোমধ্যেই নেই। ভুলে যাবেন না, বস্তাপঁচা ২৯৫ক ধারা আদতে একটি ব্লাসফেমী আইন’।

 

বিশ্বের কিছু কিছু দেশে এখনো এই আইনের দেখা মিললেও জাতিসংঘ এবং চিন্তা/বাক-স্বাধীনতা নিশ্চিতকারী বেশিরভাগ দেশেই মধ্যযুগীয় এই আইনের কোন নাম গন্ধ নেই। বিবিসির সাথে কথা বার্তায় তিনি যা বলেছেন তা শুনে কারো কারো মনে হতে পারে বাংলাদেশ তাঁর বাপের তাল্লুক বলেতিনি মনে করেন। তিনি বলেছেন কোটেশন // এটা খুব স্বাভাবিক।আমি একজন মুসলমান। এখন নবী করিমসা: সম্পর্কে কেউ যদি আজেবাজে কথা লেখে,আমরাতো চুপ করেবসে থাকতে পারি না। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।//

 

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ পরিচালনার দায়িত্বে আছেন, কিন্তু এটা তাঁর ভুলে গেলে চলবে না, এই দায়িত্বের মানে এই নয়, যে তিনি ‘আমি একজন মুসলমান’ হিসেবে দেশ চালাবেন। ‘ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের’ পরিচালনায় তিনি যখন থাকবেন, তখন তাঁর মুসলমানিত্ব কোন বিবেচ্য বিষয় নয়, এবং ব্যাক্তিগত ধর্মবিশ্বাস ব্যক্ত করে তিনি সম্ভবতঃ কোন না কোন আইন ভঙ্গ করেছেন। আমি আইনজ্ঞ নই, কিন্তু বাংলাদেশের সংবিধান এবং আইন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং মেরুদন্ডবান কোন আইনজ্ঞ হয়তো এ বিষয়ে আরো নিশ্চিত করে বলতে পারবেন। তবে এটা বলা যায়, ‘প্রকৃত’ ধর্মনিরপেক্ষ কোন রাষ্ট্রের প্রধান কখনোই ব্যাক্তিগত ধর্মবিশ্বাসের আছর রাষ্ট্র পরিচালনায় পড়তে দেবেন না।

 

একজন মুসলমান হয়ে চৌদ্দশ বছর পুর্বে মৃত সউদি মহাপুরুষের চরিত্র নিয়ে কথা উঠলে ‘চুপ করে বসে থাকতে’ যদি তিনি না পারেন, তবে নাহয় দাঁড়িয়েই থাকবেন, কিন্তু ব্যবস্থা নেবার কথা বলার হুমকির ফসল হবে একাত্তরে ধর্মনিরপেক্ষতার ওপর সৃষ্ট এই রাষ্ট্রের একটা ধর্মীয় চরিত্র তৈরি করা।

 

তিনি যদি মোল্লামাশায়েখোলেমাদের বাক-স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারেন, মসজিদ, মক্তব, টেলিভিশন, পত্রিকা, মাহফিলে নিরন্তরবিধর্মী এবং নিধর্মীদের প্রতি ক্রমাগত কটুক্তি, হুমকি, অশ্লীলতা মেনে নিতে পারেন, তখন সেই তিনিই বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের একটা ক্রমবর্ধমান নিধর্মী অংশের যৌক্তিক বক্তব্যের বিরূদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেবার কথা বলতে পারেন না। এটা হবে হিপোক্রেসী এবং সম্পূর্নগায়ের জোর।

 

আগে ধেড়ে ইঁদুর ফাঁদস্থ করুন, মোল্লামাশায়েখোলেমাঅর্থাৎ সউদি সাম্রাজ্যের রাজার পালিত প্রতিনিধিদের সামলান। তারপরে দেশেরসু-সন্তানদের দিকে নজর দেবার নৈতিক সাহস অর্জন করুন। গোটা বিশ্ব আজ সউদি রাজার অঢেল অর্থে পালিত এই  মোল্লামাশায়েখোলেমাদের ধর্মপ্রচারের নামে অসহিষ্ণুতা ও জঙ্গীবাদ চাষবাসে রীতিমতো বিরক্ত এবং এদের নিয়ন্ত্রনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। মূলতঃ এই পঙ্গপালের দলই পেটের দায়ে দাঙ্গাহাঙ্গামা বাঁধিয়ে ‘ধর্মানুভূতি’ নামীয় জুজু সৃষ্টি করে চলেছে সেই ১৯২৩ সালের ইলমুদ্দী কেসের পর থেকে।

মনে রাখবেন ধর্মসেবনকারী সাধারন জনগন কখনোই ধর্মানুভূতি রক্ষায় রাস্তায় নেমে আসে না, মোহাম্মদের চরিত্রের অজানা দিকগুলি জানতে পেলে বড়জোর মুখটা বিষন্ন করে। আপনার ভোটেও কোন আঁচড় পড়বে না। রাস্তায় বরঞ্চ নেমে আসে তারাই যাদের পেটে লাত্থি পড়ে মোহাম্মদের কল্পিত মহানবীত্ব হুমকির মুখে পড়লে। রাষ্ট্র ও সমাজকে ফুটো পয়সার উৎপাদন দিতে না পারা গলাবাজ এই মোল্লামাশায়েখোলেমা’র পাল এবং তাদের উঠতি ধর্মপেশাজীবি কচিকাঁচারা একদিকে যেমন সমাজ-বিচ্ছিন্ন, চরিত্রে ভিক্ষুক অন্যদিকে তেমনি মাথামোটা ও উগ্র।

 

আপনি চিন্তাশীল নিরীহ ব্লগারদের দিকে চোখ তুলে তাকাবার আগে আইন প্রণয়ন করে মোল্লামাশায়েখোলেমাদের জিহ্বা নিয়ন্ত্রন করুন। প্রতিশুক্রবার দেশের অসংখ্য মসজিদে যে সকল উগ্র ও অসহিষ্ণুতার বাণী মুসুল্লীদের হৃদয় বিষাক্ত করে চলেছে সে সকল বাণী প্রদান শাস্তিযোগ্য অপরাধের তালিকায় আনুন। যদি সত্যিই বাংলাদেশকে একটা সুখী এবং সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিনত হতে দেখতে চান (আমার সন্দেহ আছে),তবে ধর্মের বাড়াবাড়ি নিয়ন্ত্রন করুন। দেশের সন্তানদের সাথে কথা বলুন, হেফাজত জাতীয় যুদ্ধাপরাধী-সমর্থক সংগঠনের সাথে ‘আলোচনা’র পাঁকে না জড়িয়ে ব্লগারদের সাথে আলোচনায় বসুন। এবং অতি অবশ্যই ব্লগার বলতে শুধু আপনার মতো মুসলিম নয়, বিধর্মী এবং নিধর্মীদের নিয়েই আপনার বসা উচিত।

 

দেশ এগিয়ে নেবার জন্য, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে এই ব্লগাররা, (ধার্মিক এবং নিধার্মিক সন্মিলিত) যে পরিমান পরিশ্রম করছে, দেশের জন্য আপনার এতটুকু মায়া থাকলে তাদের শত্রু ভাবতেন না।

 

ব্লগাররা এই প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা, মুখ ফুটে কথা বলা কোন অপরাধ হতে পারে না, মুক্ত-মত প্রকাশ তো নয়ই।

 

আরিফুর রহমান,

লন্ডন, যুক্তরাজ্য
সূত্র:
১. http://www.bbc.co.uk/bengali/news/2013/04/130407_ms_sheikh_hasina_interview.shtml
২. http://bangla.bdnews24.com/bangladesh/article611159.bdnews
৩. http://www.suprobhat.com/?p=17471
৪. http://www.shaptahik2000.com/shonkha/2006/20060414/iv20060414.pdf
৫. http://www.shaptahik2000.com/shonkha/2006/20060728/fu20060728.pdf
৬. মুক্ত-মনা আর্টিকেল: https://blog.mukto-mona.com/?p=34254
৭. http://www.jjdin.com/print_news.php?path=data_files/398&cat_id=3&menu_id=13&news_type_id=1&index=7

 

[ ফেসবুক নোট আকারে, এবং আমারব্লগে  প্রকাশিত।  ]