মনে করুন একজন লোক একটি সাধারণ দড়িকে সাপ মনে করে ভয় পেয়ে মারা গেল।পরবর্তীতে পরীক্ষা করে দেখা গেল যে ওটা দড়ি। এখন কোন ব্যাপারটি খুব সত্যি? অনেকেই এই যুক্তির উপসংহার টানেন জগতের পরম-আপেক্ষিকতার মতবাদে।বলেন যে সব কিছুই সাবজেক্টিভ বা ব্যাক্তিক অনুসিদ্ধান্তের ব্যাপার।এ উপসংহার মেনে নিলে প্রশ্ন উঠে তাহলে নিখাদ ও নৈর্ব্যাক্তিক বাস্তবতা বলতে কী কিছুই নেই?যদি অধিকাংশ লোক ঐ বস্তুটিকে দড়ি বলে সাব্যস্ত করে তবে কী অধিকাংশের দাবি প্রসূত ব্যাপার বলেই তাদের কথা সঠিক?এবং ঐ মৃত ব্যক্তি একজন বলেই দাবিটি ভুল? আমি অনেককেই প্রশ্নটি করেছি।তাদের অধিকাংশই মনে করেন বাস্তবতা একটি সাবজেক্টিভ ব্যাপার।কিন্তু সেই সাথে এটাও স্বীকার করতে বাধ্য হন যে ঐ বস্তুটি দড়িই-সাপ নয়।কিন্তু অনেকাংশেই তাদের ঝোঁক থেকে যায় পুরো ব্যাপারটিকে আপেক্ষিক ব্যাপার হিসেবে ব্যাখ্যা করার।আমার ধারণা এই যে পুরো ব্যাপারটিকে আপেক্ষিকভাবে বিচার করার ঝোঁক থেকে যায় তার পেছনে যুক্তির বদলে একটা বিরাট সহানুভূতি কাজ করে-আর সেটা হচ্ছে মৃত ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতি। এ সহানুভূতির ফলেই তৈরী হয় সব কিছু আপেক্ষিক ভাবে বিচার করার মনস্তত্ত্ব।সেই সাথে এটাও অস্বীকার করা যায় না যে ঐ বস্তুটি আসলে দড়িই। এ উদাহরণের মধ্য দিয়ে একটি বিরাট ব্যাপার উঠে আসে।তা হল- আমাদের সমস্ত অপরিক্ষীত ঘটনাবলীর সাথে জড়িত থাকে আমাদের মৌলিক ও আদিম নানারকম আবেগের মিথস্ক্রিয়া।আমরা এটাকে নাম দিতে পারি আবেগযুক্ত-ভ্রান্তি। এ আবেগযোগ্য ভ্রান্তির ফলেই মানব মনে তৈরী হতে পারে বিশ্বজগতের নানারকম প্রতিরূপ। হ্যাঁ এটা সত্যি হতে পারে যে অন্যান্য প্রজাতির কাছে জগতের প্রতিরূপ মানুষের তৈরী করা প্রতিরূপের থেকে কিছুটা ভিন্ন।কিন্তু এ ভিন্নতা প্রকৃতির কোন সাধারণ সূত্র কে লঙ্ঘন করে না ।কিন্তু একই প্রজাতির মধ্যে প্রকৃতি সম্পর্কিত এই যে মতপার্থক্যের উদ্ভব তার নিশ্চয় সবগুলোই সত্যি হতে পারে না। এর নানারকম প্রমাণ পাওয়া যায়।মানুষ হাজার হাজার কুসংস্কারে বিশ্বাস করে।এবং এগুলোর যে কোন ভিত্তি নেই তা প্রমাণিত।কিন্তু প্রামাণিক না হয়েও কিছু কিছু ব্যাপার কেন এখনো আমাদের আনন্দ দেয়?কেন আমরা উপভোগ করি ইলিয়াড, ওডিসি কিংবা মহাভারত রামায়ণের পৌরাণিক দেব-দেবীদের কাহিনী ও তাদের প্রকৃতির নিয়ম বহির্ভূত কার্যকলাপ?একজন কবি আমাকে যুক্তি দিচ্ছিলেন যে আমাদের লজিক নানারকম ভাবে খেলা করতে পারে।এবং তিনি মনে করেন মানসিক-বাস্তবতা বলতে কোন ব্যাপার আছে যা কিনা যৌক্তিক এবং যা কিনা এখনও আমরা বুঝে উঠতে পারি নি। কবিতায় ব্যবহৃত অযৌক্তিক ও অসমাঞ্জস্যহীন উপমা কিংবা উৎপ্রেক্ষা অনেক ক্ষেত্রে আমাদের তৃপ্তি দেয় কেন? মস্তিষ্ক কী ব্যাপারটিকে বাস্তবিক ও যৌক্তিক মনে করে? মস্তিষ্ক যা কিছু যৌক্তিক মনে করে তাতেই তৃপ্তি পায় এবং সন্তুষ্ট হয় বলেই আমার ধারণা।কেননা যা কিছু মস্তিষ্কের কাছে গ্রহণযোগ্য নয় তা কখনো মস্তিষ্ককে তৃপ্তি দিতে পারে না। কিন্তু কেন মানুষের মন কিছু অদ্ভূত ব্যাপারকে গ্রহণযোগ্য মনে করে?এবং বর্জন করে সঠিক যৌক্তিক প্রক্রিয়া?
মানব মনের এ রকম একটি প্রবণতার উদাহরণ দেখা যায় ভাষা ব্যবহারে।ভাষা ও বস্তুর মধ্যকার সম্পর্ক এতোটাই আরোপিত যে এর সঠিক কোন ব্যখ্যা আজো পাওয়া যায় নি।কিন্তু ভাষা ব্যবহার করার যোগ্যতা প্রতিটি মানুষই জন্মগতভাবে নিয়ে আসে।আর অনেক দার্শনিকের মতো যদি এটা স্বীকার করে নেই যে কোন কিছুই ভাষার বাইরে নয়-তবে একটি ব্যাপার উঠে আসে যে মানুষ জগত সম্বন্ধে যে প্রতিরূপ তৈরী করে তাও ভাষা দ্বারা আবদ্ধ।আমরা যে পরিচ্ছন্ন যুক্তি তৈরী করি তাও কী ভাষা দ্বারা আবদ্ধ? যদি তাই হয় তার মানে কী এটা যে (যেহেতু ভাষার অনেকাংশ আরোপিত;ফলে এটি একটি অযৌক্তিক ক্ষেত্র) আমরা যখন যুক্তি তৈরী করি তখন কেটে ফেলি বা ছেঁটে ফেলি ভাষার অযৌক্তিক অংশগুলোকেই? যদি ভাষাকে ধরা হয় মিম পুলে জড়িয়ে থাকা কোন স্বত্ত্বা রূপে তবে ধরে নিতে হয় ভাষা আমাদের বিবর্তনের ধারায় একটি উপজাত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।যেমন উপজাত হিসেবে এসেছে ধর্ম ও ভালোবাসা বা প্রেম,স্বজাত্যবোধ। আমরা পৌরাণিক ধর্মে যখন আস্থা হারিয়ে ফেলি তখন কী ছেঁটে ফেলি ভাষার অপ্রয়োজনীয় কিছু অংশ?এবং অসীম বাক্যক্ষেত্র থেকে তুলে আনি অন্য কোন বাক্য পরিপূরক হিসেবে? এবং যখন এ পরিশোধন ক্রিয়া চলে তখন কী তার সাথে যুক্ত হয়ে যায় কিছু নতুন অপরিশোধিত আবেগ?এবং এটিই কী আমাদের মাঝে জন্ম দেয় কিছু অযৌক্তিক ব্যাপারকে উপভোগ করার তাড়না?অথবা এমন কী হতে পারে মানুষের ভাষা শুধুমাত্র বর্ণনা করতে পারে বলেই তা অন্য ইন্দ্রিয় যেমনঃ চোখ কান নাক বা ত্বকের অনুভূতিকে ব্যখ্যা করার জন্য অপর্যাপ্ত হয়ে পড়ে?যদি তাই হয় তবে এক ধরণের ব্যাখ্যা চলে আসে যে আমরা যেটাকে অযৌক্তিক মনে করি তা আসলে আমাদের জন্মগতভাবে পাওয়া বর্ণনা করার (ভাষা ব্যবহারের) ত্রুটি। ফলে যা আমরা বর্ণনা করতে ব্যর্থ হই তা আমাদের কাছে অযৌক্তিক বলে মনে হয়?।যেমন একজন পেইন্টার ব্যাবহার করেন রঙ তুলি।ফলে একই বিষয় নিয়ে একজন কবি যা বলেন তা একজন আর্টিস্টের কাজের সাথে হুবহু যায় না।আর্ট তৈরী করে আলাদা ভাষা-সম্ভবত আলাদা বাস্তবতাতাহলে ইলিউশনের ব্যাপারটি কী রকম?এটা কী সত্যি?তা হতে পারে না-ইলিউশন হচ্ছে এটা সত্ত্যি।কিন্তু এর ফলে আমরা যে উপসংহারে পৌঁছাই তা সত্যি হতে পারে না।এবং এটি কী এরকম যে আমরা যখনই এ রকম ইলিউশনের সঠিক ব্যখ্যা করে ফেলি তখনই আমরা পরিশুদ্ধ করে ফেলি আমাদের ভাষাকে? কিন্তু সম্ভবত পরিত্যক্ত জিনিসের প্রতি আমাদের ভালোলাগা অনেক দিন ধরেই থেকে যায়।তাই আমরা উপভোগ করতে পারি কবিতার মতো ভালো লাগার ব্যাপারগুলোকে যার অধিকাংশের কথাই হয়তো এখন বাজে কথায় পরিণত হয়েছে। এ কথাও কী তাহলে বলা যায় যে ধর্মগ্রন্থ( যেগুলোকে আমি কবিতার বই হিসেবে পড়ি এখন) সমূহের অযৌক্তিক বাণী আমাদের অশিক্ষিত মনে প্রভাব ফেলে যাবে আরো বহু বছর?কেননা আমরা মাত্র (মোটামুটি একশ শতাব্দী) শুরু করেছি ধর্মকে বাতিল করার যুদ্ধ;পুরনো জিনিস এখুনি মানুষের মন থেকে পুরোপুরি সরানো যাবে বলে মনে হচ্ছে না।একজন ধার্মিকের রিয়েলিটি ( পুরোটাই ইলিউশন) কতদিন আমাদের মিম পুলে থাকবে তা হয়তো নির্ভর করবে আরো নানা ঘটনা প্রবাহের উপর। এবং এ সময়ে হয়তো ঝরে যাবে আরো কিছু মেধাবী আর প্রগতিশীল মানুষ।
( এ লেখাটি আমার নিজস্ব অভিমত।এবং এর কোন কিছুই হয়তো প্রমাণসিদ্ধ না।আমি আমার কিছু এসাম্পশনের আলোকে কবিতা ও ভাষা নিয়ে কিছু আলোচনা করতে চেয়েছি।মুক্তমনায় অনেকেই আছেন যারা এ ব্যাপারে অনেক ভালো বলতে পারবেন। নিখাদ বাস্তবতার সাথে ভাষা ও কবিতার উপমা উৎপ্রেক্ষার অনেক বিরোধ রয়েছে বলে আমার ধারণা।এ ব্যাপারটির ব্যাখ্যা খুঁজতেই এ প্রসংগে আলোচনার সূত্রপাত করলাম)
এ লেখাটি আসলেই “ক্রিটিকাল থিঙ্কিং” এর আওতায় পড়ে। আমার ধারনা অভিজিৎ বিবরতনিয় মতবাদের আওতায় এর সঠিক ব্যখ্যা একটু চেষ্টা করলেই বের করে ফেলবেন এবং যেকন মুহূর্তে আমরা তা পেয়ে যাব এখানেই। অপেক্ষায় থাকলাম।
.
সাধারনত “সবকিছুই আপেক্ষিক” কথাটা বলার সময়ে বক্তা ভুলে যায় তার নিজের কথাটাই পরম। প্রমানযোগ্য প্রপঞ্চ কখনই আপেক্ষিকতার উপরে নির্ভনশীল নয়। দড়ি আর সাপের ঘটনাটা সহজেই প্রমানযোগ্য।
লেখক এখানে ধরে নিচ্ছেন মানব মস্তিষ্ক যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে সেটা সে মেনে নেবে না বা তৃপ্তি পাবে না। আমার একটু দ্বিমত আছে এ ব্যাপারে। বস্তুত অনেক অযৌক্তিক জিনিসই আমরা বাস্তব বলে মেনে নিচ্ছি। মানব মন মেনে নিচ্ছে। তৃপ্তি পাচ্ছে। বাবা-মায়ের প্রতি ছেলেপানের ঢলঢলে ভালোবাসা কোনভাবেই যৌক্তিক নয়। কিন্তু বিবর্তনীয় ইতিহাসে এটা দাপটে চলে আসছে। কারন তার সারভাইভাল ভ্যালু আছে। মিথ্যা কথা যুক্তিযুক্ত নয়। সারভাইভাল ভ্যালু থাকার কারনেই সেটা এখনও টিকে আছে।
তৃপ্তির ব্যাপারটা কিন্তু আপেক্ষিকই বটে। নির্ভর করবে কার তৃপ্তি কিসের মাধ্যমে আসছে। কবিতা আমাকে তৃপ্তি দেয়। কাউকে দেয় না। আবার যে কবিতা আমাকে তৃপ্তি দেয় সেই একই কবিতা আরেকজনের কাছে আবর্জনা মনে হয়। ব্যক্তিগত উপলব্ধির সময় আপেক্ষিকতার প্রসংগ আসবেই। কেননা সেটা ছাড়া ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।
লেখাটা ভালো লাগল। চলুক।
@সাইফুল ইসলাম,
সারভাইভাল ভ্যালু থাকলেই ওটা যৌক্তিক হবে না এমন কোন কারণ নেই। আবেগকে আপনি নানাভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন।তবে একেবারেই রিডাকশনিজম করে ফেললে যে প্রবলেমটা হয় তা হল দেহের সমগ্র এটম বা মলিকিউল মিলে যে একটা মিথস্ক্রিয়া বা আউটপুট-এখানে আমরা আবেগকে আউটপুট/মিথস্ক্রিয়া হিসেবে ধরলাম-তার ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যাবে না।
@ইমরান মাহমুদ ডালিম,
একটু মনে হয় উলটো হয়ে গেল। আমি বলেছিলাম, সারভাইভাল ভ্যালু থাকলে সেটা অযৌক্তিক হলেও টিকে যায়। অযৌক্তিকই হবে এমন কোন কথা অবশ্যই নেই। কিন্তু অযৌক্তিক হলেও সেটা শুধুমাত্র সারভাইভাল ভ্যালু থাকার কারনেই টিকে যেতে পারে। 🙂
ডালিম ভাই,
ছুটির দিন সকালে আপনার এই অসামান্য দার্শনিক আলোচনা খুব ভাল লেগেছে! আপনার চিন্তা-জাগানিয়া প্রশ্নগুলো গ্রহণ করার পর্যাপ্ত অবকাশ পেয়েছে মস্তিষ্ক!
আমার মতে, মস্তিষ্ক অবশ্যই যৌক্তিক মনে করে; কিন্তু সবসময় বাস্তব মনে করে না বোধহয়! কবি যখন কোন নারীর রূপ বর্ণনা করতে গিয়ে প্রকৃতির উপাদানগুলো নিয়ে আসেন, তখন তিনি তার ঠিক সেই মুহূর্তের অনুভূতি ব্যাখ্যা করেন যখন তার মনে নারী আর প্রকৃতির সৌন্দর্য একাকার হয়ে যায়; অন্তত সেই সময়টুকুতে উপমাটি অবশ্যই বাস্তব মনে হয় তার কাছে! আর পাঠকের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একইভাবে সময় ও অনুভূতির উপর নির্ভরশীল।
অনেক ভাবিয়েছে এই কথাগুলো! পরে আবিষ্কার করলাম কথাটা নিদারুণ সত্য। কিন্তু ভাষা ব্যবহারের এই ত্রুটি ঘুচবে কখনো?
এই লাইনগুলো পরিষ্কার হয়নি বলে আমার ধারণা!
এ কথায় আমার তীব্র আপত্তি রয়েছে, যদি না আপনি কবিতা বলতে পৌরনিক কাহিনি নির্ভর আদি মহা-কাব্যগুলোকেই নির্দেশ করে থাকেন! শুদ্ধ কবিতার কথা কখনো বাজে হতে পারে না!
সম্পূর্ণ একমত!
আপনার কথার সাথে সম্পূর্ণ একমত। কিন্তু সবকিছুকে ‘সাধারণীকরণ’ করার একটা অন্য ধরণের মনস্তত্তও আমাদের অনেকের ভিতর দেখা যায়। যেমন: কিছু অত্যন্ত বাজে লোক নোবেল পেয়েছে বলেই, নোবেল জিনিসটাই খারাপ (দেখুন, এভাবে চিন্তার ফলে বেশিরভাগ ভাল লোকের নোবেল প্রাপ্তির ঘটনা উপেক্ষিত হচ্ছে!)। আবার, জাতিসংঘ ইরাক আক্রমণের সময় ঠুঁটো জগন্নাথের ভূমিকা পালন করেছে বা বিশ্বব্যাংক অনেক ক্ষেত্রে আমেরিকার পদলেহন করেছে বলেই জাতিসংঘের বিন্দুমাত্র অবদান নেই মনে করা (দেখুন, এভাবে চিন্তার ফলে জাতিসংঘের অনেক অপরিহার্য অবদানকে আমরা অস্বীকার করছি; যেমন- বর্তমান সরকার তার বড় সাধের পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করতে পারছে না শুধুমাত্র বিশ্বব্যাংকের ফান্ড স্থগিতের কারণে)!
@কাজি মামুন, ধন্যবাদ।
আমার প্রশ্নও কিন্তু তাই।কেন কবি বা কোন শিল্পী তা সত্যি মনে করবে? এর কি কোন নির্দিষ্ট ব্যখ্যা আছে? বা যা কিছু যৌক্তিক তা বাস্তব নয় কেন?
আমিও জানি না। আমার মতে ভাষার বর্ণনা করার ক্ষমতা একদিকে যেমন খুব চমকপ্রদ আবার একই সাথে তা ত্রুটিযুক্ত।মনে করূন একজন জন্মান্ধ ব্যক্তিকে কী কখনো বিভিন্ন প্রকার রং সম্বন্ধে ধারণা দেয়া যাবে কেবল ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে?মনে হয় না।
শুদ্ধ কবিতার ধারণায় আমার আস্থা নেই। যেকোন কবিতা স্থান কাল পাত্র ভেদে শুদ্ধ হতে পারে।অশুদ্ধও হতে পারে।
আমিও একমত।কিন্তু আমি কি ব্যাপারটা সাধারণীকরণ করে ফেলেছি? আবেগ এবং সহানুভূতি আমরা বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় পেয়েছি।কিন্তু এর কিছু ত্রুটিপূর্ণ প্রয়োগও আমাদের মাঝে দেখা যায়।আমি এটা বলতে চেয়েছিলাম।
@ইমরান মাহমুদ ডালিম,
ভাইয়া, আপনার জবাব ও আলোচনার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ!
আমরা যখন লিটল মার-মেইড বা রূপবান কাহিনি উপভোগ করি, তখন কিন্তু আমাদের মস্তিষ্ক ভালভাবেই সচেতন থাকে যে ঘটনাগুলো পুরোপুরি অবাস্তব; তবু আমরা জিনিসগুলি উপভোগ করি তার কারণ বোধহয় এই যে, এর ভিতরকার ভাল-মন্দের লড়াই, অধ্যবসায় প্রভৃতি জীবন-সত্যগুলো আমাদের যৌক্তিক মনে হয়! অনেকটা সিনেমা দেখার মত! আমরা কি জানি না, সিনেমাগুলি সব মিথ্যা? তবু আমরা মোহিত হয় এই কারণে যে, কাহিনিগুলোর যৌক্তিকতা একে একটি আপাত বাস্তবতা প্রদান করে।
সব কবিতাই? তাহলে বলুন নীচের লাইনগুলো কোন কালে, কোন স্থানে, কোন পাত্রে অশুদ্ধতার কালি গায়ে মাখতে পারে?
”সেইদিন এই মাঠ স্তব্ধ হবে নাকো জানি- এই নদী নক্ষত্রের তলে
সেদিনও দেখিবে স্বপ্ন – সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে!”
না ভাই, আপনি মোটেই সাধারণীকরণ করেননি মূল লেখায়। বরং আমার প্রশ্ন ছিল, সবকিছুই কি স্থির দৃষ্টিতে দেখা যায়? এমন কি আপনিও কবিতার শুদ্ধতা বিচার করতে যেয়ে আপেক্ষিকতার কাছেই আশ্রয় নিয়েছেন! তবে আপনার এই বিষয়ক আপেক্ষিক ধারণাটি আমি গ্রহণ করতে পারিনি, কারণ এর সঙ্গে ‘সাধারণীকরণ’ কিছুটা হলেও এসে পড়েছে। আমার মতে , অনেক কিছুই আপেক্ষিক, আবার অনেক কিছুই শুধু ‘দড়িই, সাপ নয়’। তবে ভুলটা আমাদের তখনই হয়, যখন আমরা ‘সাধারণীকরণ’-কে কখনো ‘আপেক্ষিকতা’, আবার কখনো ‘স্থিরতা’-এর সাথে গুলিয়ে ফেলি!
@কাজি মামুন,
তাই কি?তবে আমাদের মধ্যে অনেকেই ভূতের মুভি দেখে পরবর্তীতে ভয় পায় কেন যদিও তারা জানে ভূত বলে কিছু নেই? ‘ভাল-মন্দের লড়াই’-এটারও স্থান কাল পাত্র ভেদ আছে।
আমার কেন যেন মনে হচ্ছিল আপনি জীবনানন্দ দাশের কবিতা থেকেই উদ্ধৃতি দিতে পারেন।জীবনানন্দ আমার প্রিয় কবিদের একজন।এবং এ লেখা তৈরী করার সময় আমি জীবনানন্দের কথাই মনে মনে ভাবছিলাম।ধরুন ঐ লাইন দুটোর একটি ইংরেজি অনুবাদ করলাম এ রকমঃ
“This field would never come into silence-this river would dream
under the stars-oh when the golden dream would splash itself down upon the earth”
অনুবাদটি বাজে হয়েছে।এটি কোন ইংরেজের মনে ছাপ নাও ফেলতে পারে।কিন্তু যখনই এটি কোন ভাল কবির হাতে অনূদিত হবে,ঠিক সেই মূহুর্তে হয়তো ব্যাপারটি ইংরেজি ভাষাভাষি কারো উপর প্রভাব ফেলতে পারে।অর্থ্যাৎ ঐ অনুবাদে এমন কিছু ঢুকবে যেটা ঐ ভাষার একান্ত সম্পদ।আমি এটাই বলতে চেয়েছিলাম।যেমন ধরুন আমার বাজে অনুবাদেও একটি ‘oh’ ধ্বনি ঢুকে পড়েছে।এটি আমার কাছে মনে হয়েছে ঐ ভাষাভাষিদেরকে এই দুটি লাইন বুঝতে বেশি সাহায্য করবে।দ্বিমত করতে পারেন।দ্বিমতের অবকাশ আছে।
@ইমরান মাহমুদ ডালিম,
সত্যি তারা জানে, ভুত বলে কিছু নেই? নাকি আপাত বিজ্ঞান-মনস্কতার আড়ালে মনের গহিনে লুকিয়ে রাখে ভুত-দেবতার প্রতি অগাধ বিশ্বাস?
এটা তো খুবই ঠিক যে, রহিম যাকে ভাল বলে, করিমের কাছে তাই খারাপ মনে হয়। আবার রহিমের আজ যা ভাল মনে, কাল তাই খারাপ মনে হয়। তবে, এমন ব্যক্তি বিশেষের মূল্যায়নের বাইরেও ভাল-মন্দের একটা পরম মান রয়েছ, যা ছাড়া সমাজ-সংসার-সভ্যতা টিকতে পারে না! আমাদের মুক্তিযুদ্ধই এর প্রকৃষ্ঠ উদাহরণ!
অনুবাদকের ব্যর্থতার দায়ভার আমরা কবিতার উপর চাপিয়ে দেব? যাহোক, আপনার অনুবাদ ভাল লেগেছে; শুধু ‘কবে আর ঝরে!’-এই অংশটুকু খুঁজে পেলাম না!