[স্বীকারোক্তি : ইতঃপূর্বে মুক্তমনায় ‘অস্পৃশ্য ও ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং একজন দাদাসাহেব’ শিরোনামে আট পর্বের একটি ধারাবাহিক লেখা দেয়া হয়েছিলো। যা মুক্তমনার ই-বুক আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে। সেটাতে ব্রাহ্মণ্যবাদী বৈদিক ধর্মের অনুশাসক গ্রন্থ মনুসংহিতকে ভিত্তি ধরে জঘন্য বর্ণাশ্রম প্রথায় অমানবিক অস্পৃশ্যতার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে এবং দলিত আন্দোলনের অমর ব্যক্তিত্ব ড. ভিমরাও আম্বেদকরের জীবন ও কর্মের উপর কিছুটা আলোকপাতের চেষ্টা করা হয়েছিলো। সেখানে প্রাসঙ্গিকভাবেই নারীকে মূল্যায়নের সামান্য কিছু নমুনাও উপস্থাপিত হয়েছিলো। তবে বর্তমান লেখাটায় মনুসংহিতার ঊৎস, প্রভাব ও তার দৃষ্টিতে নারীকে কিভাবে দেখা হয়েছে তাকে প্রাধান্য দিয়ে বিশদ আলোচনার চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে সচেতন পাঠকের কাছে কোথাও কোথাও পূর্বোল্লেখিত লেখাটার সামান্য কিছু বিষয়ের পুনরাবৃত্তি থাকতে পারে বলে মনে হতে পারে, যা বিষয়ের প্রয়োজন ও ধারাবাহিকতায় অনিবার্য ছিলো বলেই মনে করেছি।
ধর্মের কচকচানি বাদ দিয়ে স্রেফ নারীকে কোন্ উপজীব্যতায় দেখা হয়ে থাকে তার সাপেক্ষেই আসলে যেকোন ধর্মের প্রকৃত মানবিক-অমানবিক রূপটি উন্মোচিত হয়ে যায়। ফলে বর্তমান ধারাবাহিক লেখাটাতে বৈদিক ধর্মকে সেই আয়নায় প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, লেখাটা বাংলাদেশ নারী ও প্রগতি সংঘের নিয়মিত ষান্মাসিক জার্নাল ‘নারী ও প্রগতি’র ডিসেম্বর ২০১০ দ্বাদশ সংখ্যায় অখণ্ডভাবে প্রকাশিত হয়েছে। ]
…
এটা কোন কথার কথা নয়
মানব সভ্যতার ইতিহাস আসলে ধর্মেরই ইতিহাস। সম্ভবত কথাটা বলেছিলেন দার্শনিক ম্যাক্স মুলার, যিনি প্রাচীন ভারতীয় দর্শন (Indian Philosophy) তথা বৈদিক সাহিত্য বা সংস্কৃতিরও একজন অনুসন্ধিৎসু বিদ্বান হিসেবে খ্যাতিমান। তবে যে-ই বলে থাকুন না কেন, সভ্যতার এক দুর্দান্ত বিন্দুতে দাঁড়িয়েও উক্তিটির রেশ এখনো যেভাবে আমাদের সমাজ সংস্কৃতি ও জীবনাচরণের রন্ধ্রে রন্ধ্রে খুব দৃশ্যমানভাবেই বহমান, তাতে করে এর সত্যতা একবিন্দুও হ্রাস পায় নি। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে তা অনেক বেশিই প্রকট। কেননা বর্তমান বিশ্বে এমন কোন সভ্যতার উন্মেষ এখনো ঘটেনি যেখানে মানুষের জন্ম মৃত্যু বিবাহ উৎসব উদযাপন তথা প্রাত্যহিক জীবনাচরণের একান্ত খণ্ড খণ্ড মুহূর্তগুলো কোন না কোন ধর্মীয় কাঠামো বা অনুশাসনের বাইরে সংঘটিত হবার নিরপেক্ষ কোন সুযোগ পেয়েছে আদৌ। ব্যক্তির সাথে ব্যক্তির, গোষ্ঠির সাথে গোষ্ঠির, সমাজের সাথে সমাজের ইত্যাদি পারস্পরিক সম্পর্কের প্রেক্ষিতগুলো এখনো ধর্মকেন্দ্রিকতার বাইরে একচুলও ভূমিকা রাখতে পারে নি বলেই মনে হয়। এমন কি মানুষ হিসেবে আমাদের ব্যক্তি বা সামাজিক পরিচয়ের অন্তঃস্থ চলকগুলোও নিরেট ধর্মীয় পরিচয়েই মোড়ানো।
.
একেবারে বহিরঙ্গের পরিচ্ছদে যে যেই রঙের আঁচড়ই লাগাই না কেন, এই আলগা পোশাকের ভেতরের নিজস্ব যত্নশীল শরীরটা যে আসলেই কোন না কোন ধর্মীয় ছকের একান্তই অনুগত বাধক হয়ে আছে তা কি আর স্বীকার না করার কোন কারণ সৃষ্টি করতে পেরেছে ? অন্তত এখন পর্যন্ত যে পারে নি তা বলা যায়। আর পারে নি বলেই আরো অসংখ্য না-পারার ক্ষত আর খতিয়ানে বোঝাই হতে হতে আমরা ব্যক্তিক সামাজিক ও জাতিগতভাবেও একটা ঘূর্ণায়মাণ বৃত্তে আবদ্ধ হয়ে পড়ছি কেবল, বাইরের সীমাহীন সম্ভাবনায় পা রাখতে পারছি না সহজে। এবং একই কারণে আমাদের সমাজ-সংগঠন-চিন্তা বা দর্শনের জগতটাও অসহায়ভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে একটা স্থবিঢ় বা অনতিক্রম্য বিন্দুতে। বাড়ছে না আমাদের বৃত্তাবদ্ধতার আয়তন বা সংগঠিত করা যাচ্ছে না কোন সংস্কারমূলক কর্মকাণ্ডও। কিন্তু কেন তা ভাঙা সম্ভব হচ্ছে না ?
.
প্রশ্নের আকার যতো শীর্ণই হোক না কেন, ভাবগত অর্থে এতো বিশাল একটা প্রশ্নকে সামনে রেখে কোন একরৈখিক আলোচনা যে আদৌ কোন মীমাংসা বা সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্যে একান্তই অকার্যকর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে আলোচনার কান ধরে টান দিলে হয়তো এমন অনেক প্রাসঙ্গিক প্রশ্নও সামনে চলে আসার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেয়া যাবে না যেগুলোর যথাযথ উত্তর অনুসন্ধানের মধ্যেই কোন না কোন সমাধানের বীজ লুকিয়ে থাকতে পারে। সে বিবেচনায় একেবারে নিশ্চুপ থাকার চেয়ে কিঞ্চিৎ হল্লাচিল্লা করায় সম্ভাব্য সুবিধা রয়েছে বৈ কি। তাই সমাজ সভ্যতা সংস্কৃতির বহুমাত্রিক স্রোতে অত্যাবশ্যকীয় উপাদান হিসেবে মানুষের লিঙ্গীয় (Gender) অবস্থান বা আরও খোলাশা করে বললে সামগ্রিক জনগোষ্ঠির অর্ধাংশ জুড়ে যে নারী তাঁর ভূমিকা, কার্যকর প্রভাব ও অবস্থান চিহ্নিত করতে গেলে অনিবার্যভাবেই প্রচলিত ধর্ম ও অনিরপেক্ষ ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির প্রসঙ্গটি অনায়াসে সামনে চলে আসে। অনিরপেক্ষ বলা হচ্ছে এজন্যেই যে, আমাদের ধর্মীয় চেতনদৃষ্টি যে প্রকৃতপক্ষেই লিঙ্গ-বৈষম্যমূলক ও সুস্পষ্টভাবেই পুরুষতান্ত্রিক পরম্পরায় গড়ে ওঠা তা বোধ করি অস্বীকার করার উপায় নেই। এ ক্ষেত্রে আলোচনার সূত্র ধরে আমরা নাহয় একটু খোঁজার চেষ্টা করে দেখি, কী আছে এই ধর্মতত্ত্বের পেছনে ?
.
ধর্মীয় অমানবিকতার আদিম ধারাটির নাম বৈদিক সংস্কৃতি
জগত জুড়ে ধর্মীয় সংস্কৃতির যে ক’টি প্রধান ধারার অস্তিত্ব এখনো বহাল রয়েছে তার মধ্যে সম্ভবত বৈদিক সংস্কৃতিই প্রাচীনতম। তার উৎস হচ্ছে বেদ (Veda), যা বর্তমান হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হিসেবে বিশ্বাস করা হয়। অথচ বহিরাগত একদল লিপিহীন বর্বর আক্রমণকারী শিকারি আর্য গোষ্ঠির দ্বারা এককালের আদিনিবাসী জনগোষ্ঠির মাধ্যমে গড়ে ওঠা সমৃদ্ধ প্রাচীন হরপ্পা বা সিন্ধু সভ্যতার ধ্বংস হওয়া এবং এই ধ্বংসাবশেষের উপর ক্রমে ক্রমে গড়ে ওঠা আর্য সংস্কৃতির বিকাশের আর্যাবর্ত ধারাক্রমই মূলত এই বৈদিক সংস্কৃতি। যেখানে আর্যরা (Aryan) হয়ে ওঠে মহান শাসক আর আদিনিবাসী জনগোষ্ঠিটাই হয়ে যায় তাদের কাছে অনার্য বা শাসিত অধম, নামান্তরে দাস বা শূদ্র (Sudra)। তাই এই বৈদিক সংস্কৃতির ঐতিহাসিক ক্রমবিকাশের মধ্যেই একটি সভ্যতার উন্মেষ ও পর্যায়ক্রমে তার মাধ্যমে ধর্ম নামের একটি শাসনতান্ত্রিক ধারণার জন্ম ও আধিপত্য কায়েমের মধ্য দিয়ে এ ব্যবস্থার পরিণতি পর্যবেক্ষণ করলেই ধর্ম কী ও কেন- এ সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায় বলে বিদ্বানেরা মনে করেন। আর প্রতিটা ধর্মেরই যেহেতু অন্যতম প্রধান শিকার হচ্ছে নারী, তাই আধিপত্যবাদী পুরুষতন্ত্রের ধারক ও বাহক এই ধর্মের প্রত্যক্ষ আক্রমণে কিভাবে সামাজিক নারী তার পূর্ণ মানব সত্তা থেকে সমূলে বিতাড়িত হয়ে কেবলই এক ভোগ্যপণ্য চেতনবস্তুতে পরিণত হয়ে যায় তারও উৎকৃষ্ট নমুনা-দলিল এই প্রাচীন বৈদিক শাস্ত্রই। বয়সে প্রবীণ এই শাস্ত্রের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা ও সাফল্য থেকেই সম্ভবত পরবর্তী নবীন ধর্মশাস্ত্রগুলো তাদের পুরুষতান্ত্রিক শোষণের হাতিয়ারটাকে আরেকটু আধুনিক ও বৈচিত্র্যময় করে তার শাসন-দক্ষতাকেই সুচারু করেছে কেবল, খুব স্বাভাবিকভাবেই কোন মৌলিক মানবিক উন্নতি ঘটেনি একটুও। তাই সম্যক পর্যালোচনার খাতিরে আমরা এই বৈদিক শাস্ত্রের বিষয়-সংশ্লিষ্ট প্রসংগগুলো চয়ন করে এতদবিষয়ক কিছু প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা নেয়ার কিঞ্চিৎ চেষ্টা করে দেখতে পারি।
.
বৈদিক শব্দটি এসেছে ‘বেদ’ থেকে। ‘বেদ’ মানে হচ্ছে পবিত্র ও পরম জ্ঞান। ‘বেদ’ নামে সাধারণ্যে কোন একটি গ্রন্থবিশেষ বোঝালেও মূলত এটি প্রায় শতাধিক গ্রন্থের সমষ্টিই বোঝায়। যদিও বেদকে অপৌরুষেয় বলা হয়ে থাকে, অর্থাৎ বেদ মনুষ্যসৃষ্ট নয় বলে দাবী করা হয়, তবু সামগ্রিকভাবে এই শতাধিক গ্রন্থের সমষ্টিকেই ‘বৈদিক সাহিত্য’ বলা হয়। ভারতবর্ষীয় তথা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষার সর্বপ্রাচীন সাহিত্য এটি। এখানে স্মর্তব্য যে প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির ক্ষেত্রে দুটো মূল ধারা রয়েছে- বৈদিক ও অবৈদিক। বেদ বহির্ভূত যা কিছু নিকৃষ্ট ও আদিম- ওই অবৈদিক জড়বাদী (চার্বাক) উপাদান সম্বলিত লোকায়ত ধারাটির গুরুত্ব সেকালে পারতপক্ষে স্বীকার করা হতো না। শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর অনুকূল ভাববাদী বৈদিক ধারাটিরই জয়জয়কার ছিলো। বৈদিক ধারার ধারক ও বাহক ছিলো ‘বৈদিক সাহিত্য’ নামের এক বিশাল শাস্ত্র-ভাণ্ডার। তাই বিষয় অনুসঙ্গ হিসেবে এ মুহূর্তে আমাদের লক্ষ্য হতে পারে এই বৈদিক সাহিত্যের কিছুটা সুলুক-সন্ধান করা, যেখানে সুকৌশলে এক আধ্যাত্মিক ভণ্ডামো আরোপ করে খুব সদম্ভেই নারী জাতিকে কেবলই ভোগ্যপণ্য ক্রিতদাসীতে পরিণত করে ফেলা হয়েছে ।
.
রচনাকালের পরম্পরা ও প্রকৃতি অনুযায়ী ‘বেদ’ চারটি- ১) ঋগ্বেদ, ২) সামবেদ, ৩) যজুর্বেদ, ৪) অথর্ববেদ।
এই প্রতিটি বেদের চারটি অংশ:
ক) ‘সংহিতা’ বা সংগ্রহ- গান, স্তোত্র, মন্ত্র প্রভৃতির সংকলন।
খ) ‘ব্রাহ্মণ’- গদ্যে রচিত একজাতীয় যাগযজ্ঞ-বিষয়ক সুবিশাল সাহিত্য।
গ) ‘আরণ্যক’- অরণ্যে রচিত একজাতীয় সাহিত্য, বিশ্ব-রহস্যের সমাধান অন্বেষণই তার প্রধান উদ্দেশ্য।
ঘ) ‘উপনিষদ’- আক্ষরিক অর্থে গুহ্য-জ্ঞান, দার্শনিক তত্ত্বের বিচারই এর প্রধান বিষয়বস্তু। এই উপনিষদকে ‘বেদান্ত’ সাহিত্যও বলা হয়।
.
বেদের সংহিতা ও ব্রাহ্মণ অংশকে কর্মকাণ্ড, আরণ্যককে উপাসনাকাণ্ড এবং উপনিষদকে জ্ঞানকাণ্ড বলা হয়। রচনাকাল ও বিষয়বস্তুর দিক থেকে প্রত্যেকটি অংশের মধ্যে একটা ধারাবাহিকতা রয়েছে বলে স্বীকৃত। বৈদিক সাহিত্যের বহু প্রাচীন অংশই বিলুপ্ত হয়েছে। তবুও যা টিকে আছে তাও আকারে সুবিশাল।
.
বেদের কাল
বেদের সুক্ত বা সংহিতাগুলো অতি প্রাচীনকালে দীর্ঘ সময় নিয়ে রচিত হয়েছে। অর্থাৎ তা কোন একক ব্যক্তির রচিত নয়। বংশ পরম্পরাক্রমে তা মুখে মুখে রচিত হয়েছে এবং শ্রুতির মাধ্যমে তা সংরক্ষিত হয়েছে। তাই বেদকে শ্রুতি গ্রন্থ্ও বলা হয়। বেদের রচনাকাল নিয়ে মতভেদ থাকলেও ধারণা করা হয় খিস্টপূর্ব ২০০০ বা ২৫০০-তে এর রচনাকাল শুরু এবং রচনা সম্পন্ন হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ৭৫০ থেকে ৫০০-এর মধ্যে। সুনির্দিষ্ট কোন সন-তারিখের হিসাব করা সম্ভব না হলেও গবেষকদের স্থির সিদ্ধান্ত এটুকু যে, গৌতম বুদ্ধের পূর্বেই এ-সাহিত্যের রচনা ও সংকলন সমাপ্ত হয়েছিলো। এই দীর্ঘ সময়ের পরিক্রমায় বহু শতাব্দির ব্যবধানের কারণেই বেদের প্রথম দিকের রচনাগুলোর সাথে শেষের দিকের রচনাগুলোর উদ্দেশ্য, ভাব ও দৃষ্টিভঙ্গিতে বিস্তর পার্থক্য তৈরি হয়ে গেছে। প্রথম দিকের রচনা সুক্তগুলোর মাধ্যমে স্বাভাবিক প্রাকৃতিক সত্তা যেমন অগ্নি, নদী, বাতাস, সোম (এক জাতীয় লতা)-কে দেবতা জ্ঞান করে লিপিহীন আদিম পশুপালক জনগোষ্ঠির চাওয়া-পাওয়ার লক্ষ্য নিবদ্ধ ছিলো। এবং তা নিবিষ্ট ছিলো কোন যজ্ঞরূপ আয়োজনের মধ্য দিয়ে দৈনন্দিন ইহলৌকিক জীবনযাত্রার সাধারণ ধনসম্পদ ভোগের কামনার মধ্যে। বা কোন গোত্র-প্রধান ইন্দ্রের প্রতি নিজেদেরকে রক্ষার আবেদনে। ফলে তাকে অনেকটাই আদিম টোটেম উপজাত বৈশিষ্ট্য হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। যেমন-
‘উপঃ নঃ সবনা গহি সোমস্য সোমপাঃ পিব। নোদা ইদ্রেবতো মদঃ।।’
হে সোমপায়ী ইন্দ্র! আমাদের অভিষবের নিকট এস, সোমপান কর; তুমি ধনবান তুমি হৃষ্ট হলে গাভী দান কর। (মণ্ডল ১। সুক্ত ৪। ঋক ২)।
‘স নো দূরাচ্চাসাচ্চ নি মর্ত্যাদঘায়োঃ। পাহি সদমিদ্বিষবায়ুঃ।।’
হে সর্বত্রগামী অগ্নি! তুমি দূরে ও আসন্ন দেশে পাপাচারী মানুষ হতে আমাদের সর্বদা রক্ষা করো। (মণ্ডল ১ সুক্ত ২৭ ঋক ৩)।
‘আ নো ভজ পরমেষবা বাজেষু মধ্যমেষু। শিক্ষা বষ্বো অন্তমষ্য।।’
পরম অন্ন ও মধ্যম অন্ন আমাদের প্রদান কর, অন্তিকস্থ ধন প্রদান কর। (মণ্ডল ১ সুক্ত ২৭ ঋক ৫) ইত্যাদি।
আর শেষের দিকের এসে রচিত সুক্তগুলোয় একধরনের পারলৌকিক ধারণার উপস্থিতি দেখা যায়। অর্থাৎ তাদের আদিম অগভীর বিশৃঙ্খল চিন্তাসূত্রের মধ্যে ততদিনে আরো উন্নত কল্পনার একটা শৃঙ্খলা তৈরি হয়ে গেছে। যেমন-
‘যত্রে যমং বৈবস্বতং মনো জগাম দূবকম্। তত্ত আ বর্তয়ামসীহ ক্ষয়ায় জীবসে।।’
তোমার যে মন অতি দূরে বিবস্বানের পুত্র যমের নিকট গিয়েছে, তাকে আমরা ফিরিয়ে আনছি, তুমি জীবিত হয়ে ইহলোকে এসে বাস কর। (মণ্ডল ১০। সুক্ত ৫৮। ঋক ১)।
উল্লেখ্য, এই কাল্পনিক পারলৌকিক ধারণাই যে ধর্ম ব্যবস্থার প্রধানতম হাতিয়ার হয়ে পরবর্তীকালের মানবসংস্কৃতিকে বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে এবং এখনও করে যাচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিংবা তুলনামূলক আরেকটু উন্নত চিন্তার উপস্থিতি দেখতে পাই, যখন বলা হয়-
‘কিয়তী যোষা মর্যতো বধূয়োঃ পরিপ্রীতা পন্যসা বার্ষেণ। ভদ্রা বধূর্ভবতি যৎসুপেশাঃ স্বরং সা মিত্রং বনুতে জনে চিৎ।।’
কত স্ত্রীলোক আছে, যে কেবল অর্থেই প্রীত হয়ে নারীসহবাসে অভিলাষী মনুষ্যের প্রতি অনুরক্ত হয়? যে স্ত্রীলোক ভদ্র, যার শরীর সুগঠন, সে অনেক লোকের মধ্য হতে আপনার মনোমত প্রিয় পাত্রকে পতিত্বে বরণ করে। (মণ্ডল ১০ সুক্ত ২৭ ঋক ১২)।
অর্থাৎ তখন একটা সুস্পষ্ট সামাজিক কাঠামো দাঁড়িয়ে গেছে যেখানে অর্থের বিনিময়ে ভোগ-উপভোগ বা অন্যদিকে নিরাপদ পরিবার গঠনের নীতিবোধ বিরাজ করতে শুরু করেছে সামাজিক আবহে। এই তুলনামূলক পার্থক্যগুলো উপলব্ধি করতে এখানে স্মর্তব্য যে, বেদজ্ঞ পণ্ডিতদের মতে প্রাচীন ঋগ্বেদের মোট দশটি মণ্ডলের মধ্যে সর্বশেষ দশম মণ্ডলের সুক্তগুলো বেদের পূর্ববর্তী নয়টি মণ্ডলের সার্বিক আবহের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়। অর্থাৎ ধারণা করা হয় আরো বহুকাল পরে হয়তো উপনিষদ যুগে এই দশম মণ্ডলটি ঋগ্বেদে সংযোজিত হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য বেদসংহিতা গ্রন্থেও ঋগ্বেদের বহু শ্লোকের পুনরুক্তি রয়েছে। সম্ভবত পরবর্তীকালের ধর্মীয় উপজগুলো এভাবেই কথিত বেদাশ্রিত হয়ে আগ্রাসী ধর্মরথকে তার উদ্দেশ্যমূলক গতিপথে বেগবান করতে সহায়তা করেছে। তাৎক্ষনিক অবস্থায় হাতের সামনে যা চোখে পড়লো উদাহরণ হিসেবে তা-ই উদ্ধৃত করা হলো। বেদে এ ধরনের উদাহরণ ভুরি ভুরি রয়েছে।
.
(চলবে…)
[*] [২য় পর্ব]
…
দয়া করে এমন এ্কটি ‘বৈদিক’ শ্লোক দেখিয়ে জান যেখানে মনুসংহিতাকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে। কারন মনুসঙ্ঘিতায় যদি এমন লেখা থাকে যে তা বেদ সমর্থিত, তা থেকে এটা প্রমানিত হয় না যে মনুসঙ্ঘিতা বেদ সমর্থিত।কারন আজ আমিও দেশের রাজা হই,তবে আমিও কিন্তু একটা বই লিখে বলতে পারি এটা বেদ সমর্থিত। তাতে কিন্তু এটা প্রমানিত হয় না যে সে বইটা বেদ সমর্থিত। :-X তাই এমন কোন বৈদিক শ্লোক চাই দেখানে মনুসঙ্ঘিতার বৈধতা আছে। (I) :rotfl:
দাদা,
আমি সাধারণত ধর্ম বিষয়ক লেখাগুলো পড়তে আগ্রহ পাই না। নারীর প্রতি সব ধর্মেরই বিদ্বেষ রয়েছে – — আমার এ ধারণা ও অভিজ্ঞতাই এ অনাগ্রহের কারণ। আমার মনে হয়,ধর্মে যখনই নারীর প্রসঙ্গ আসে তা হয় চর্বিত চর্বন।
তবে আপনার লেখা অনেক খেটে লেখেন বলে পড়া ও সংগ্রহে রাখার মত হয় জানি বলেই পড়ি। আর এর প্রমান আপনি ভূমিকাতেই তো দাদাগিরির সার্থক প্রতিফলন ঘটিয়েছেন।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
@গীতা দাস,
এভাবে লজ্জা দিচ্ছেন কেন গীতা দি ! চর্বনের জন্য এটা তো নতুন জিনিস না ! তাই তো না চাইলেও চর্বিতকেই চর্বন করতে হবে ! হয়তো নিজের মতো করে চাবাবো, এটুকুই পার্থক্য আর কি !
বেদ তো আর আগের বেদ নাই, সময় এর সাথে পরিবর্তন হয়া গেছে, (O)
@বেয়াদপ পোলা, বেদ আগের বেদই রয়ে গেছে, তবে মানামানিটা কমে এসেছে সময়ের পরিবর্তনে বাধ্য হয়েই। কিন্তু মৌলিক বিষয়গুলোর অনুশাসনে খুব একটা পরিবর্তন এসেছে বলে মনে হয় না। মেনে চলায় অক্ষমতা আর জেনেবুঝে বর্জন করা দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস। অক্ষমতায় একটা অপরাধবোধ থেকে যায় এবং সুযোগ পেলে আবার প্রত্যাবর্তন করে। অন্যদিকে জেনেবুঝে যা বর্জন করা হয়, তাতে কোন মানসিক ন্যুব্জতা থাকে না বলে আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিত্ববোধ অটল থাকে।
ধন্যবাদ দাদা এরকম একটা সিরিজ শুরু করার জন্য …
@প্রণব আচার্য্য, আপনাকেও ধন্যবাদ গো দাদাবাবু !
মনু সংহিতা অনেক প্রাচীন একটা গ্রন্থ, মনুসংহিতা প্রথম স্যার উইলিয়াম জোনস্ ১৭৯৪ সালে ইংরেজীতে অনুবাদ করেন এর পাশাপাশি অনেক ইতিহাস বিদ যেমন হান্টার, এলফিনস্টোন, ড: কল্ডওয়েল প্রভৃতি মনিষীগন ও মনুসংহিতার সঠিক সময়কাল নির্ণয় করতে পারেনি। তবে আর একটু তথ্য দেই
মনু সংহিতা সরাসরি মনু কতৃক লিখিত হয়নি, মনু ছিলেন বেদএর বিভিন্ন শাখার জ্ঞানধারী একজন ঋষি, তার দ্বারা আদেশ প্রাপ্ত হয়ে মহর্ষি ভৃগু মনুসংহিতার শ্লোকগুলো বয়ান করেন। কিন্তু আরো কথা আছে এখানে –
পুরান মতে “সর্বপ্রথম মনু এক বৃহৎ ধর্মশাস্ত্র রচনা করেন, তাহার পর তাহাকে ভৃগু সংক্ষিপ্ত করিয়া রচনা করেন; ভৃগুর পর নারদ, নারদের পর বৃহষ্পতি এবং বৃহষ্পতির পর অঙ্গিরা: উক্ত মানব ধর্মশাস্ত্রকে ক্রমে সংক্ষিপ্তভাবে সঙ্কলন করেন”। আবার আর নারদ স্মৃতিমতে “সর্বপ্রথম মনু কৃতৃক রচিত ধর্ম শাস্ত্রতে এক লক্ষ শ্লোক ছিল যা ১৮০ অধ্যায়ে বিভক্ত ছিল, সেটা নারদ সংক্ষিপ্ত করিয়া ১২,০০০ এ আনেন আবার মার্কন্ডেয় ঋষি তাকে ৮,০০০ এ আনেন এবং সর্বশেষ ভৃগুর পুত্র সুমতি তাহা ৪,০০০ এ সংক্ষিপ্ত করেন।
এর পরেও আমার জানামতে আর্যরা তাদের প্রভাব বিস্তার করার জন্য এটাকে আরো কিছু কিছু যায়গায় কাটাছেড়া করেছে, আর বর্তমানে প্রথম মনু সংহিতার অল্প কিছু গদ্য শ্লোক ই পাওয়া যায় বাকীগুলো বিভিন্ন মনীষীর টীকা থেকে পাওয়া যায়, কিন্তু বর্তমানে যেটা আমরা দেখছি তাতে মেধাতিথি নামে এক মনিষির অবদান ই বেশী তিনি খ্রিষ্টীয় নবম বা দশম শতাব্দিতে মনু সংহিতার অনেক টিকা তৈরি করে গিয়েছিলেন ।
তাহলে আজকে আমরা মনুসংহিতা বলে বলে চিল্লাপাল্লা করছি, সতীদাহ করছি তার সত্যতা কতটুকু ধর্মে?? আমি মানি একটা ধর্ম মানুষকে সৎ হতে পথ দেখাবে তার মাঝে মানবিকতার জ্ঞান জাগিয়ে উঠাবে, যদি এমন কোন কিছু এখন ও আসে তবে তাকেও আমার ধর্ম বলতে আপত্তি নেই। তাই নদীর মত বহমান এই ধর্মগুলো থেকে সার বা ভালো অংশটুকু আমাদের তুলে নিতে হবে। তবেই তো প্রকৃত মানুষ হওয়া যাবে, ধর্মের ভুল গুলো দেখে দেখে সেগুলো থেকে সমাজকে বাচিয়ে নিতে হবে। তবেই তো সভ্য সমাজ গড়ে তোলা যাবে।
আর মনুসংহিতা নিয়ে কথা হচ্ছে, বাংলায় মনুসংহিতা শেয়ার করতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু ফাইল সাইজ বেশী বড় হওয়ার কারণে শেয়ার করতে পারছিনা। ৮৭ মেগাবাইট। তবে সামনে দেব আশা করি। ধন্যবাদ আবার ও।
@পদ্মফুল,
মনুসংহিতার বারোটা অধ্যায়কে কি খণ্ড খণ্ড করে আপলোডের উপায় নাই ? তাহলে সাইজও কমে আসতো, আর লোডও কম পড়তো।
মনু সংহিতা আমার জানা মতে দুনিয়ার অন্য সব ধর্মের যে কোন গ্রন্থের চেয়ে বেশী বর্বর ও পাশবিক।
@ভবঘুরে,
আপনার সাথে সহমত পোষণে আমার কোন দ্বিধা নেই। আশা করছি এই সিরিজটাতেই মনুর মাহাত্ম্য বেরিয়ে আসবে।
@রণদীপম বসু,
দাদা – ফাটাফাটি লেখা দিলেন। এই লেখা কয়েকবার না পড়লে মন ভরবে না।
@আফরোজা আলম,
আপু, লেখা তো এখনো শুরুই হয়নি ! ফাটাফাটি হলো কী করে !!
@ রণদীপমদা,
একটা জমজমাট লেখা পাচ্ছি দেখে আনন্দ লাগছে।
ধর্মের কচকচানি বাদ দিয়ে স্রেফ নারীকে কোন্ উপজীব্যতায় দেখা হয়ে থাকে তার সাপেক্ষেই আসলে যেকোন ধর্মের প্রকৃত মানবিক-অমানবিক রূপটি উন্মোচিত হয়ে যায়।
পাশাপাশি কোন প্রেক্ষাপটে তখনকার ধর্মবাদীরা ঐসব মানবিক-অমানবিক বিষয়গুলিকে ধর্মের অর্ন্তভুক্ত করেছিল, তা জুড়ে দিলে ভাল হয়। হয়তো আপনার পরের সিরিজে এসব পাব, তবু আগাম অনুরোধ জানিয়ে গেলাম।
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
@হেলাল, মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ভারতীয় ধর্ম ও দর্শন নিয়ে আলোচনা করার সমস্যা হচ্ছে, সবকিছু একসাথে নিয়ে আগাবার উপায় নেই এর বিশাল বিস্তৃত বহুমুখী প্রেক্ষাপটের কারণেই। তাই একেকটা বিষয়কে উপজীব্য করেই আলোচনায় নামতে হয়।
আপনার প্রস্তাবনাটা মাথায় থাকলো।
@ রণদীপম বসু,
আমি এখনও মাঝে মাঝে চিন্তা করি সেই মানুষ নামের অমানুষগুলোর কথা, যারা সতীদাহ প্রথার প্রচলন ঘটিয়েছিল। মানলাম সতী তার স্বামী শিবের জন্যে আগুনে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। সে তো তার ইচ্ছেয় করেছিল, বাস্তব জগতে এমন ঘটনা হয়তো আরো ঘটেছিল। যদিও পরবর্তি ঘটনা অর্থাৎ সতীর পার্বতি নামে পুনর্জনম প্রমাণ করে এ নিছক এক কল্প কাহিনি ছাড়া আর কিছুই নয়। অমানবিক ভয়ংকর নিষ্ঠুর সেই প্রথার কিছুটা বিবরণ হয়তো আপনার লেখায় আসতে পারে, তবু আপনার পাঠকদের উদ্দেশ্যে আমার একটি লেখা থেকে এখানে কিছুটা উল্লেখ করলাম-
ঋগবেদের দশম মণ্ডলের ১৮নং সূক্তের ৭ নং শ্লোক (১০/১৮/৭):
Let these women, whose husbands are worthy and are living, enter the house with ghee (applied) as collyrium (to their eyes). Let these wives first step into the pyre, tearless without any affliction and well adorned.
অথর্ববেদে রয়েছে : “আমরা মৃতের বধু হবার জন্য জীবিত নারীকে নীত হতে দেখেছি।” (১৮/৩/১,৩)।
পরাশর সংহিতা বলছে: “মানুষের শরীরে সাড়ে তিন কোটি লোম থাকে, যে নারী মৃত্যুতেও তার স্বামীকে অনুগমন করে, সে স্বামীর সঙ্গে ৩৩ বৎসরই স্বর্গবাস করে।” (৪:২৮)।
দক্ষ সংহিতার ৪:১৮-১৯নং শ্লোকে বলা হয়েছে, A sati who dies on the funeral pyre of her husband enjoys an eternal bliss in heaven. (যে সতী নারী স্বামীর মৃত্যুর পর অগ্নিতে প্রবেশ করে সে স্বর্গে পূজা পায়)।
দক্ষ সংহিতার অন্য শ্লোকে (৫:১৬০) বলা হয়েছে, “যে নারী স্বামীর চিতায় আত্মোৎসর্গ করে সে তার পিতৃকুল, স্বামীকুল উভয়কেই পবিত্র করে।” যেমন করে সাপুড়ে সাপকে তার গর্ত থেকে টেনে বার করে তেমনভাবে সতী তার স্বামীকে নরক থেকে আকর্ষণ করে এবং সুখে থাকে। ব্রহ্মপুরাণ বলে, “যদি স্বামীর প্রবাসে মৃত্যু হয়ে থাকে তবে স্ত্রীর কর্তব্য স্বামীর পাদুকা বুকে ধরে অগ্নিপ্রবেশ করা।”
মহাভারতের মৌষল পর্বে, ভগবান কৃষ্ণের মৃত্যুর পর তাঁর চার স্ত্রী রুক্মিণী, রোহিণী, ভদ্রা এবং মদিরা তাঁর চিতায় সহমৃতা হয়েছিলেন। বসুদেবের আট পত্নীও তাঁর মৃত্যুর পরে সহমরণে গিয়েছিলেন। ব্যাসস্মৃতি বলছে, চিতায় বিধবা নারী তার স্বামীর মৃতদেহে আলিঙ্গন করবেন অথবা তার মস্তকমুণ্ডন করবেন। (২:৫৫)।
বরাহমিহির তার বৃহৎসংহিতায় বলেন, “অহো নারীর প্রেম কি সুদৃঢ়, তারা স্বামীর দেহ ক্রোড়ে নিয়ে অগ্নিতে প্রবেশ করে।” (৭৪:২৩)।
অসুর পুরুষ ভগবানেরা একবার লিখতে পারলোনা- “অহো পুরুষের প্রেম কি সুদৃঢ়, তারা স্ত্রীর দেহ ক্রোড়ে নিয়ে অগ্নিতে প্রবেশ করে”।
মনুস্মৃতি বা মনুসংহিতার মতো অশ্লীল, জগন্য বই এই পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আছে কি না সন্দেহ। মনু বলছেন-
Never trust a woman. Never sit alone with a woman even if it may be your mother, she may tempt you. Do not sit alone with your daughter, she may tempt you. Do not sit alone with your sister, she may tempt you.
ছি,ধর্ম ছি। ঘৃণা, ঘৃণা ঘৃণা। ধ্বংস হউক জগতের সকল ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থ।
@আকাশ মালিক,
উপরের ইংরেজী উদ্ধৃতির রেফারেন্স দেয়া প্রয়োজন। তা না হলে ইসলামিস্টেরা ইসলামের সমালোচকেরা নিজের সুবিধার্থে কুরাণ বা হাদিসের অনুবাদ বিকৃত করে বলে যে অভিযোগ করে সেরকম অভিযোগ এখানেও করা হতে পারে। মনুসংহিতার ইংরেজী অনুবাদ আমার জানা মতে Buhler করেছেন। তারঁ অনুবাদে আছেঃ
(Ch-1, #215)
সূত্রঃ http://hinduism.about.com/library/weekly/extra/bl-lawsofmanu2.htm
215. One should not sit in a lonely place with one’s mother, sister, or daughter; for the senses are powerful, and master even a learned man.
এখানে স্পষ্টত পুরুষের রিপুর কথাই বলা হচ্ছে। মা বোনদের প্রলোভন দেখান নয়। পুরুষেরাই যে মা বোন মেয়েদের প্রতি আসক্ত হতে পারে সেই সম্ভাবনার কথা ভেবেই এই সতর্ক বানী দেয়া হচ্ছে। ভয়টা অমূলক নয়। পিতা কর্তৃক মেয়ে ধর্ষণ, ছেলে ও মাএর বা বা ভাই বোনের মধ্যে সঙ্গমের উদাহরণ কম নেই যে কোন সমাজে। মুসলিম বাংলাদেশেও ঘটে এমন। মার্কিন মুল্লুকেও। কোন কোন টিভি টক শোতে আমি দেখেছি মা ও ছেলে প্রেমিক প্রেমিকা নিয়ে ফীচার (পভিচ বা অন্য কেউ, মনে পড়ছে না টক শোর নাম টা)। কাজেই এই ভয় অমূলক নয়। মনু সংহিতার এই শ্লোককে বাস্তবতার (অস্বাভাবিক যদিও) প্রতিফলন বলা যায়। মনু সংহিতার অনেক কিছুই অসভ্য ও লিংগবাদী সন্দেহ নেই। কিন্তু শুধু এই শ্লোকের জন্য ছি ছি বলার কারণ দেখিনা। ছি ছি তাদের জন্য যারা এই অস্বাভাবিক কাজে লিপ্ত হয় এবং সেইসব টক শো হোস্ট যারা এটা নিয়ে বিনোদন করে।
@যাযাবর,
মনুর এই শ্লোকটা সামনে রেখেই G. Buhler অনুবাদিত The Laws of Manu এর নবম চ্যাপ্টার থেকে কিছু শ্লোকের দিকে তাকানো যাক-
Day and night woman must be kept in dependence by the males (of) their (families), and, if they attach themselves to sensual enjoyments, they must be kept under one’s control
Her father protects (her) in childhood, her husband protects (her) in youth, and her sons protect (her) in old age; a woman is never fit for independence.
Women must particularly be guarded against evil inclinations, however trifling (they may appear); for, if they are not guarded, they will bring sorrow on two families.
He who carefully guards his wife, preserves (the purity of) his offspring, virtuous conduct, his family, himself, and his (means of acquiring) merit.
No man can completely guard women by force; but they can be guarded by the employment of the (following) expedients:
Let the (husband) employ his (wife) in the collection and expenditure of his wealth, in keeping (everything) clean, in (the fulfilment of) religious duties, in the preparation of his food, and in looking after the household utensils.
Women, confined in the house under trustworthy and obedient servants, are not (well) guarded; but those who of their own accord keep guard over themselves, are well guarded.
Women do not care for beauty, nor is their attention fixed on age; (thinking), ‘(It is enough that) he is a man,’ they give themselves to the handsome and to the ugly.
Through their passion for men, through their mutable temper, through their natural heartlessness, they become disloyal towards their husbands, however carefully they may be guarded in this (world).
Knowing their disposition, which the Lord of creatures laid in them at the creation, to be such, (every) man should most strenuously exert himself to guard them.
(When creating them) Manu allotted to women (a love of their) bed, (of their) seat and (of) ornament, impure desires, wrath, dishonesty, malice, and bad conduct.
for disloyalty to her husband a wife is censured among men, and (in her next life) she is born in the womb of a jackal and tormented by diseases, the punishment of her sin.
By the sacred tradition the woman is declared to be the soil, the man is declared to be the seed; the production of all corporeal beings (takes place) through the union of the soil with the seed.
এখানে শষ্যক্ষেত্র ও বীজ এর নোংরা ধারণা, দেবর কর্তৃক পুত্রোৎপাদন এ সব না হয় বাদই দিলাম।
মনুস্মৃতির সাথে হাদিসের, ভগবান মনুর সাথে নবী মুহাম্মদের আশ্চর্য মিল দেখে অবাক হতে হয়। তবে কি সকল ধর্ম প্রবর্তকগন একই জিনের দ্বারা প্রভাবিত হতেন? হয়তো এরও কোন বিবর্তনীয় ব্যাখ্যা থাকতে পারে।
এখানে ভারতের ইতিহাস জানতে গিয়ে একটি ইন্টারেস্টিং Myth of Aryan Invasion of India – Dr. David Frawley. পড়লাম।
——————————————————————————–
@আকাশ মালিক,
যে সব জিনিষ নোংরা সে সবের প্রতি মানুষের একটা আকর্ষন লক্ষ্য করা যায়, আর সেটাই তুরুপের তাষ হিসেবে অত্যন্ত চাতুর্য্যতার সাথে ব্যবহার করে ধর্ম প্রবর্তকগন সমাজে তাদেরকে গ্রহনযোগ্য করে তোলে।
@আকাশ মালিক, ভাই, নারী নিয়ে আপনার মন্তব্যে উদ্ধৃত বিষয় তো বটেই, চেষ্টা করেছি নারীকে নিয়ে যতগুলো দিক রয়েছে মনুসংহিতায়, নমুনা স্বরূপ তার সবই তুলে আনার । এক কথায় ভয়ঙ্কর !!
@আকাশ মালিক,
আবার সেই চর্বিত চর্বন করি।দেখুন,ইংলিশ ট্রান্সলেশনকে বিশ্বাস করে লাভ নেই।হয়ত সংস্ৃৎ এ ছিল,নারিরা কখন নিজের নিরাপত্তা বিধানে স্বাধিন নয়। সেটাকে ইংরেজিতে independence বলা হলে তো অর্থ বদলে যাচ্ছে…অতএব,বলতে এলে authentic সংস্ৃত শ্লোক নিয়ে আসুন। translation নিয়ে আলোচনা করা এক্ষে্ত্রে মূর্খতা।
:thanks:
@আকাশ মালিক, ভাই, মনুসংহিতা বইটা আমার কাছে জঘন্য মনে হয় নি। এর বর্ণবাদী দর্শন ও কট্টর পুরুষতান্ত্রিক নারীভোগী দৃষ্টিভঙ্গিটাই জঘন্যতম মনে হয়েছে ! হা হা হা !!
@রণদীপম বসু,
সব ধর্মেরই মূল সূর এক। তা হলো – নারী হলো ভোগ্য পণ্য, তা সব পাপের উৎস।যে নারী না হলে জীব কুলের কোন অস্তিত্ব থাকত না , তারা কিভাবে সব পাপের উৎস হয় তা আমার বোধগম্য নয়। আর যদি তারা সব পাপের উৎসই হয়, তাহলে পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তা পুরুষমানুষদের বিপথগামী করার জন্য কেনই বা সৃষ্টি করল তাও বুঝতে অক্ষম। খোদ নারীরা বিষয়টি জানার পর সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসীই বা কেমনে হয় সেটাই বড় আশ্চর্যের।
স্বেচ্ছায় কোন এক নারী তার মৃত স্বামীর চিতায় গিয়ে জ্বলে পুড়ে মারা গেছিল এটা দেখে নরাধম পুরোহিতেরা পরে সহমরণ প্রথা চালু করেছিল। ঠিক একই ভাবে স্বেচ্ছায় ইসমাইল ( মতান্তরে ইসহাক) স্বেচ্ছায় কুরবানী হয়েছিল তা দেখে কুরবানী চালু করা হয়। পার্থক্য- হিন্দুরা তাদের প্রথাটি ঘৃণ্য মনে করে সেটা ত্যাগ করতে পেরেছে( যদিও মাঝে মাঝে কিছু ঘটনা এখনও ঘটে), মুসলমানরা সেটা পারেনি, বরং সাড়ম্বরে সেই হত্যাযজ্ঞটি পালন করে থাকে।
আশা করছি ভারতীয় দর্শনের সম্প্রদায় গুলো সহ জ্ঞানবিদ্যার আলোচনাও হয়ত কিছুটা হবে। আর সবার মত আমিও মহা আগ্রহ নিয়ে পর্বগুলো পড়বো। ভালো লাগছে আরব মাটি ছেড়ে আমাদের মাটির কথা শুনতে। রণদীপম বসুকে আগাম সাধুবাদ।
@কাজী রহমান, ধন্যবাদ আপনাকে।
ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন সম্প্রদায়গুলো নিয়েই এখন কাজ করতে নেমেই বুঝতে পারছি কী ভয়ঙ্কর ভুল করে ফেলেছি আমি। সবকিছু বাদ দিয়ে এটাতেই পড়ে আছি বেশ কিছুদিন যাবৎ। এখনো নিজেকে অনুধাবন করাচ্ছি। তারপর সংশ্লেষ, তারপর হয়তো পর্বতের মুষিক প্রসব হবে ! হা হা হা !
তবে সেটা ভিন্ন প্রেক্ষিতের আলোচনা, যা বর্তমান লেখাটার বিষয় নয়। তবে সেসবের নির্যাস ধর্মশাস্ত্র মনুসংহিতা, এটা এড়ানোর উপায় নেই। এজন্যেই বর্তমান পোস্টের ভূমিকা অবতারণা। ভারতীয় ধর্ম ও দর্শনে যাকিছুই করতে হবে, টুকরো টুকরোভাবে করতে হবে, এ ছাড়া উপায় নেই। সবকিছু একসাথে মিশিয়ে লাবড়া বানানোর সুযোগ মনে হয় ভারতীয় দর্শনে নাই। আর বানালেও সেটা হয়তো একটা অর্থহীন কাজ হবে, আমার ধারণায়।
@রণদীপম বসু,
আপনার অবস্থা হয়ত একটু হলেও বুঝতে পারছি। আমরা আলসে সবাই হয়ত একটু বেশীই আশা করি। আচ্ছা আপনার মনমত করেই লিখুন। সবার মন্তব্যে হয়ত অনেক কিছু এসে যাবে।
@কাজী রহমান,
আসলে আশা করায় তো দোষ নেই ! আমি নিজেও তো সর্বভুখের মতো সবকিছু আশা করি ! কিন্তু সেই আশাকে জোগান দেয়ার সামর্থও তো থাকতে হবে ভাই ! সেখানেই তো আমার সমস্যা ! হা হা হা !!
অনেক দিন পর আরেকটি ভিন্ন মাত্রার লেখার আগমন। দাদাকে অনেক ধন্যবাদ প্রাচীণ সমাজ ব্যাস্থার প্রচলিত চিন্তা চেতনার রূপটিকে আধুনিক যুগে এসে নতুন করে বিশ্লেষনের সুযোগ করে দেয়ার জন্য। বেশ মজাদার পর্বের আয়োজন হচ্ছে বুঝতে পেরে অপেক্ষায় আছি পরবর্তী পর্বের।
@রাজেশ তালুকদার, ধন্যবাদ।
তবে আমার এখনকার লক্ষ্য মূলত বৈদিক ধর্মের স্বীকৃত অনুশাসক গ্রন্থ মনুসংহিতা ও তার দৃষ্টিতে নারীর অবস্থান।
আর বেদ ও তার সমাজ নিয়ে বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে আলোচনার ইচ্ছেটা পরের কোন সিরিজের জন্য তোলা রইলো।
মূল পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ,ধন্যবাদ (F)
ভালো লাগলো। আশাকরি পরবর্তী পর্বগুলো তাড়াতাড়ি আসবে। বিপ্লব পালের সাথে একমত হয়ে মনে করছি সংকীর্নভাবে শুধু ধর্মকে আক্রমন না করে সেইসাথে এসব টেক্সকে সমাজ বিবর্তনের দলিল হিসেবে আলোচনা করলে সেটা আরো মনোগ্রাহী হবে।
@সফিক,ভাই, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
সংকীর্ণভাবে শুধু ধর্মকে আক্রমণ করা বলতে কী বুঝায় তাই বুঝি না আমি। তবে আমার বিবেচনায়, সরাসরিভাবে নির্দিষ্ট কোন ধর্ম-বিশ্বাসীকে যদি আক্রমণ করা হয়, তা খুবই অনৈতিক ও অনুচিত। আর কোন গ্রন্থ বা দর্শনের মূল্যায়ন প্রচেষ্টায়, তা যাই হোক না কেন, যুক্তি দিয়ে ব্যবচ্ছেদের প্রয়াসকে আক্রমণ বিবেচনা করাটাই হবে সংকীর্ণতা।
এখন কে কোন্ দৃষ্টিতে দেখছে সেটাই বিবেচ্য।
দারুণ! মুক্তমনায় বহুদিন পর লেখা দিলেন। আপনার আগের সিরিজ পুরোটাই পড়েছি। এবারো আশা করছি জলদিই সব পর্ব পাবো।
@নিটোল, ধন্যবাদ। চাইলে জলদিও দেয়া যাবে। কিন্তু মুক্তমনার প্রথম পাতাটায় যদি সব বাদ দিয়ে কেবল মনুর চোখ আর চোখই ভাসতে থাকে, তখন অভিজিৎ দা আকাশ মালিক ভাইদের লাঠিসোটার তাড়া খাওয়া যে কী জিনিস হবে, তা বৈদিক যুগে গিয়ে পালালেও পার পাওয়া যাবে না রে ভাই ! হা হা হা !!
তার চে আপনারা বেশি বেশি লেখা পোস্ট করে এই পর্বটাকে পগার পার করে দিন, তখন এমনিতেই পরের পর্ব আসতে থাকবে।
কী আশ্চর্য্য! কোরানও নাকি মনুষ্য সৃষ্টি নয়।
ভাল লাগল। চালিয়ে যান, হিন্দু বা সনাতন ধর্মের মূল জানার জন্য আপনার এই লেখা মূল্যবান।
@আবুল কাশেম,
আধ্যাত্মবাদী কোন ধর্মই তো মনুষ্যসৃষ্ট নয় বলে কথিত হয় ! তবে এই দাবি যুক্তিবোধরহিত অন্ধ বিশ্বাসীদের কাছেই সমাদৃত হবে এটা তো অস্বাভাবিক কিছু না !
@রণদীপম বসু,
উহহ, জিজ্ঞাসা করতে ভুলে গেছিলাম–
সমস্ত বেদ্গুলো কি বাঙলায় অনুবাদ হয়েছে? কোন ওয়াবসাইটে কী বেদের এই সব বাঙলা অনুবাদ পড়া অথবা ডাউনলোড করা যায়?
তা না হলে বাঙলাদেশের অথবা ভারতের কোন বই বিক্রেতার কাছ থেকে বেদ এবং মনুসংহিতার বাঙলা অনুবাদ কেনা যায় জানাবেন কী?
আপনার লেখা পড়ে হিন্দু ধর্মের প্রাচীনতম উৎস পড়ার ইচ্ছে হচ্ছে–বাঙলায়।
না, হিন্দু ধর্ম নিয়ে আমার লেখার কোন ইচ্ছে নাই। ইসলামের ‘কচকচানী’ নিয়েই সারা জীবন যাচ্ছে। আরেকটা জীবন পেলে অন্য ধর্ম নিয়ে চিন্তা করতে পারতাম। আপাততঃ আপনি এই কাজটা করছেন।
আপনার পূর্বের সিরিজটাও আমি মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। ধর্ম নিয়ে আপনার ‘কচকচানী’ ভাল লাগলো–আরও ‘কচকচানী’ চলুক।
@আবুল কাশেম,
আপনার আগ্রহকে সম্মান জানাই। বছর সাতেক আগে আমার সংগৃহীত পাঁচটি ভল্যুমে অনুদিত চারটি বেদ-সংহিতার প্রকাশনা সংস্থা হচ্ছে কলকাতার হরফ প্রকাশনী। আমারটি চতুর্থ মুদ্রণ ফেব্রুয়ারি ২০০০। ওখানে প্রথম প্রকাশ লেখা আছে জুন ১৯৭৬।
এক খণ্ডে ৩৫টি উপনিষদ সংগ্রহ কলকাতার গ্রন্থিক সংস্করণের। আমারটা পরিবর্ধিত পঞ্চম সংস্করণ ১৪১৬ বাংলা। প্রথম প্রকাশ ১৩৯৪ বাংলা।
ডঃ মানবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় শাস্ত্রীর সম্পাদনা ও অনুবাদে মনুসংহিতা সুলভ সংস্করণ কলকাতার শ্রীবলরাম প্রকাশনী ১৪১২ বাংলা।
এছাড়া দর্শন আলোচনায় আরো অনেক সহায়ক গ্রন্থ তো রয়েছেই। তবে ভারতীয় দর্শনের উপর রাহুল সাংকৃত্যায়ন, দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় প্রমুখের গ্রন্থাবলির তো জুড়ি নেই !
সবচাইতে বড় কথা হলো অকালে যদি মাথার জোড়াজাড়া তার সব ছিঁড়ে জট পাকানোর মহৎ ইচ্ছা পোষণ করেন, তাইলে চাউল-চিড়া নিয়ে ভারতীয় দর্শনের অকুল সাগরে নির্দ্বিধায় ঝাঁপ দিতে পারেন। কুলে উঠার পর দেখবেন, আদালতেও আর আপনার সাক্ষ্য নেবে না ! হা হা হা !!!
@রণদীপম বসু,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, কষ্টকরে তথ্যগুলো দিলেন।
কোলকাতায় না গিয়ে, অস্ট্রেলিয়া থেকে এই সব বইগুলো কেনার কোন ব্যবস্থা আছে? মানে অনলাইন কেনার? যেমন ধরেন আমাজন…অথবা এই ধরণের।
এই সব বই কি বাঙলাদেশের কোথাও পাওয়া যাবে?
@আবুল কাশেম,
ওহহো, ভুলে গেছি, এ বিষয়ে কোন ওয়েবসাইটের সন্ধান পাই নি আমি। বাংলায় তো নয়ই ! সেই ব্রাহ্মণ্যবাদের উপর লেখার আগ্রহে গুগলে বাংলায় মনুসংহিতা সার্চ দিয়ে না পেয়ে অতঃপর নিজেই বই সংগ্রহ করে নেই। এখন সার্চ দিলে হয়তো আমার লেখাগুলোই পাবেন। এই আর কি !
@আবুল কাশেম,
এখানে কিছু লিঙ্ক পেলাম। পড়ে দেখতে পারেন।
http://bedbangla.blogspot.com/
http://hinduismsite.ucoz.com/blog/download_rig_veda/2011-08-03-112
@আলোকের অভিযাত্রী,
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে লিংকটা দেয়ার জন্য। বাংলা বেদ ব্লগস্পটটা এ বছরের জুনে খোলা হয়েছে দেখলাম। সামান্য কিছু সংযুক্তি হয়েছে। গোটা বেদকে তুলতে ক’বছর লাগবে কে জানে !! তবে তাদের প্রয়াসটা অভিনন্দনযোগ্য।
@আলোকের অভিযাত্রী,
অনেক অনেক ধনুবাদ।
আমার মত আনাড়ির (বেদ বাক্যের সাথে) জন্য আপাততঃ এই টুকুই যথেষ্ট হবে।
@আবুল কাশেম, ভাই
নিচে আলোকের অভিযাত্রী ভাই যে লিংকটা দিছেন বেদ এর hinduismsite এর সেটা দেখতে পারেন, বেদ এর বাংলা সংস্করণ পিডিএফ ফাইলে দেয়া আছে, এবং এটা বঙ্গাব্দ ১২৯৩ সালের লেখা, আশা করি আপনার কাজ চলবে । ঋগবেদ দেয়া আছে, সামনে বাকী বেদগুলো দিব, কিছুদিনের মধ্যেই, তবে তা http://www.shonaton.com এ পাবেন। বিনয়ের সাথে জানাচ্ছি এই দুইটা আমাদের সাইট। ধন্যবাদ।
@পদ্মফুল,
আমি ডাউনলোড করে নিলাম। কিন্তু বুঝতে পারছি না–মানে অনুচ্ছেদ, মণ্ডল, শুক্ত–ইত্যাদি। মনে হচ্ছে সম্পূর্ণ বেদ নাই।
আমার কাছে রালফ্ গ্রিফিতের অনুবাদিত The Hymns of THE RIGVEDA আছে। তার সাথে ডাউনলোডের তুলনা করলাম–কিন্তু তেমন মিল পেলাম না।
তাই একটু বিভ্রান্তির মাঝে আছি।
একটু পরিষ্কার করে জানাবেন কি?
@আবুল কাশেম, ভাই গ্রিফিনের অনুবাদ স্বীকৃত নয় হিন্দুসমাজে। কারণ এখানে বেশ কিছু ভুল আছে। আর আমাদের শেয়ারকৃত বেদে প্রথম দিকের কিছু শ্লোক নেই তবে ৮৫% এর বেশী ই পাবেন। প্রথমে একটু মিলাতে কষ্ট হবে। মাঝের থেকে মিলান দেখবেন ঠিক ই মিল পাবেন গ্রিফিন এর টার সাথে। আমার কাছে ও গ্রিফিন এর টা আছে সেটা দিয়ে মিলিয়েছিলাম।
@পদ্মফুল,
বাকী ১৫% কী কোথাও পাওয়া যাবে? নাকি আপনারাই আপলোড করবেন?
হাঁ, আমি এখন মিলাতে পারছি। এই মর্মে আমি আপনাকে আর একটি মন্তব্য দিয়েছিলাম।
আবার একটু বিরক্ত করছি–
কোথাও কী রামায়ন এবং মহাভারতের বাঙলা অনুবাদ পাওয়া যায়? আমার কাছে এই দুই বিশ্বখ্যাত এপিকদ্বয়ের ইংরাজি অনুবাদ আছে।
কিন্তু বুঝতেই পারছেন–আমি ভারতবর্ষের এই ঐতিহ্য মাতৃভাষায় পড়তে চাই। যেমন আমি চাইছি চারটি বেদ মাতৃভাষায় পড়তে।
@পদ্মফুল,
আবার আপনাকে বিরক্ত করছি।
ঋগ বেদের গঠন সম্পর্কে আমি যা বুঝলাম তা হচ্ছে–
মণ্ডল. শুক্ত. ঋক
ঋক মনে হয় মন্ত্র বলা যায়।
ইংরাজিতে এই হবে–
Book. Hymn. Verse
এই ভাবেই দেখলাম গ্রিফিত সাহেবের ইংরাজি অনুবাদ এবং তা মিলছে বাঙলা অনুবাদের সাথে।
যেমন ডাউনলোডে চতুর্থ অষ্টক, প্রথম অধ্যয় থেকে–
মণ্ডল ৫, ৯ শুক্ত, ঋক (মন্ত্র) ৩ এই ভাবে বাংলায়: (৫।৯।৩)
মনুষ্যলোকের পোষণকারী ও যজ্ঞশোভা বিধানকারী যে অগ্নিকে নব শিশুর ন্যায় অরণিদ্বয় উৎপাদন করিয়াছে।
ইংরাজিতে রালফ্ গ্রিফিতের অনুবাদ বইতে:
Book 5. Hymn 9. Verse 3 (that is, 5.9.3)
Whom, as an infant newly born, the kindling-sticks have brought to life.
এখন আমি মিল খুজে পেলাম।
যাই হোক, দেখা যাচ্ছে–ডাউনলোডে বাঙলা ঋগ বেদের মাত্র অল্প কিছু অংশ আছে।
আমি কী সঠিক?
@আবুল কাশেম, ভাই আপনি ঠিক ই আছেন, বাংলাতে মন্ডল দিয়ে ইংরেজীর সাথে মিলানো যায়না। মন্ডল। সূক্ত। শ্লোক এভাবে মিলাতে হবে তাহলেই মিল পাওয়া যাবে। আমি তো বাংলাতে অনেক অনেক শ্লোক ই পেলাম আপনি কষ্ট করে আর
@আবুল কাশেম,
কাশেম ভাই, আপনার বেদ-বেদান্ত পড়ার আগ্রহ দেখে আমি ভাবছি, আপনি কি পুনরায় মুসলমান হওয়ার চিন্তা ভাবনা করছেন? ঐ লিঙ্কে গিয়ে যা দেখলাম আর পাঠকদের যা মন্তব্যগুলো পড়লাম, ভাবছি আরো সামনে অগ্রসর হওয়ার আগে হেমায়েত পুর, না এই দেশেই মেনট্যাল হসপিটালে বুকিং দিয়ে রাখবো। আমার তো মনে হয় যারা বা যে সকল ঋষি মুণী চোখ বন্ধ করে এসব কল্পনা করেছেন ও লিখে রেখেছেন, তাদের মাথায় কোন সমস্যা ছিল, বা তারা কোন প্রকারের মানসিক রোগী ছিলেন।
@আকাশ মালিক,
সত্যি বলি; বেদের প্রতি আমার আগ্রহ অনেক দিন থেকেই। বাল্য বয়সে হিন্দু বন্ধুদের সাথে পুজা মণ্ডপে গেলে শুনতাম এইসব অবোধ্য মন্ত্র এবং যজ্ঞ। বন্ধুরা বলত, পুরোহিত বেদের মন্ত্র পড়ছেন। কিন্তু কেউই ঐ সব মন্ত্রের এক শব্দও বুঝত না। সেই থেকেই, আমি ঠিক করেছিলাম বেদ আমাকে জানতেই হবে। পরে জানলাম বেদ হচ্ছে বিশ্বের সর্বপ্রাচীন লিখিত গ্রন্থ–বোধ করি বাইবেলের চাইতেও পুরোন।
আজ আশ্চর্য্য হই যখন দেখি বাঙলাদেশের ৯৫% মুসলিম কোরান বুঝে না। কী অপূর্ব মিল বেদের সাথে।
তার পর বিদেশে চলে যাই, বাঙলায় বেদ পড়ার সুযোগ হলোনা। বেদের ইংরাজি অনুবাদ কিনলাম–দুই খণ্ডের। অল্প কিছু পড়লাম। ইংরাজি খটমট হওয়ার জন্য পড়া অতি ধীরে চলল। তার পর শুরু করলাম ইসলাম নিয়ে কচকচানী–তাই বেদ সম্পূর্ণ পড়া হোল না। এখন বাঙলায় বেদ পড়ার আকর্ষণ সামলাতে পারছি না।
হয়ত জিজ্ঞাসা করবেন–আমার কী মত বেদ নিয়ে। আমি বলব বেদ নিয়ে আমার কোন সমস্যা নাই। এই বইকে আমি ঐতিহাসিক দলিল হিসাবেই দেখছি। বেদেও প্রচুর অস্বাস্থ্যকর বিবৃতি এবং রক্তপাতের কথা আছে। কিন্তু ঐ সব নিয়ে আজ পর্য্যন্ত কোন হিন্দুকে দেখি নাই সে মাথা ঘামায় অথবা বেদ, মনুসংহিতার জন্য জিহাদ চালাতে আত্মঘাতী পথ বেছে নিতে চায়। আর তা’ছড়া বেদ আমাদের ঐতিহ্যের অঙও বলা চলে।
সেই জন্যই বেদের প্রতি–তথা সমস্ত হিন্দু ধর্মপুস্তকের উপর আমার গভীর আগ্রহ ছিল এবং এখনও আছে।
বেদ অনেকটা বাইবেলের মত–ঢোঁড়া সাপের মত। আমরা যেমন হোমারের ‘ইলিয়াদ’ পড়ি–এই সব গ্রন্থও তাই।
তবে ইসলাম এবং কোরানের ব্যাপার অন্য রকম–তা আপনিও জানেন। কোরানের প্রতিটি বাক্য জীবন্ত এবং বিশ্বের প্রতিটি মুসলিম আল্লার কাছে দায় বদ্ধ ইসলামের জন্য তরবারি তুলে নিতে। কাফের মারতে হবে দরকার হলে নিজেকেও তার জন্য জীবন দিতে হবে।
আমাদের উপর কেঊ বেদ, উপনিষদ বা মনু সংহিতা চাপিয়ে দিচ্ছে না। কিন্তু কোরান, হাদিস, সুন্না, শরিয়া আমাদের উপর জোর করে চাপানো হচ্ছে। এই খানেই তফাত।
খুব ভাল লেগেছে আপনার লেখাটি, রনদীপমদা! মুক্তমনার পাঠকরা আরও একটি অসাধারণ সিরিজ পেতে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে!
হরপ্পা ও সিন্ধু সভ্যতা তাহলে অনার্য আদিনিবাসীদের কীর্তি? আর তার ধ্বংসাবশেষের উপর দাঁড়িয়ে বৈদিক সংস্কৃতি? আপনার লেখাটি পড়ে অনার্য জাতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা অনুভব করছি! পাশাপাশি, মনে প্রশ্ন জাগছে, হাজার হাজার বছর পূর্বে অনার্য জাতি এত উৎকৃষ্ট চিন্তা-চেতনার অধিকারী হলো কি করে? উপমহাদেশের পরিবেশ-প্রকৃতির কোন ভূমিকা ছিল এতে?
অভিজিৎ-দার লেখাতেও চার্বাকের কথা পড়েছি। আশা করছি, আপনার লেখায় ‘বৈদিক আধিপত্যবাদের’ বিপরীতে ‘চার্বাক আলোর’ আরও বিস্তারিত সুলুক সন্ধান করা হবে।
@কাজি মামুন, চার্বাক নিয়ে আরেকটি ভিন্ন সিরিজ না লিখলে তো আমার এখনকার ভারতীয় দর্শনপাঠই অমূলক হয়ে যাবে ! কেউ না চাইলেও আমার নিজের তৃপ্তির তাগিদেই সেটা লিখতে হবে। আর আপনাদের চাওয়া সেটাকে আরো উস্কে দিচ্ছে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
@কাজি মামুন,
হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো সভ্যতা গুলো সম্ভবত দ্রাবিরদের কীর্তি।
প্রিয় রণদীপম বসু,
আপনার আগের লিখা “অস্পৃশ্য ও ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং একজন দাদাসাহেব” পড়েছি, খুবই উন্নতমানের লিখা ! আপনার এই লিখাটি পড়ে পরবর্তী অংশগুলোর জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে আছি | এমন সুন্দর বিশ্লেষণধর্মী লিখা উপহার দেবার জন্য আপনাকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ | ভালো থাকুন |
অমল |
@অমল রায়, আপনাকেও ধন্যবাদ ধৈর্য্য ধরে পড়ার জন্য। যথাসময়ে পরবর্তী পর্বগুলো দেয়ার চেষ্টা করবো অবশ্যই।
লেখাটার মধ্যে কিছু তথ্যগত ভুল আছে।
সেকেন্ডারী সোর্স থেকে না লিখে, লেখক, বৈদিক ভাষয়গুলি পড়ে এই লেখা লিখলে, তা দামী হবে।
প্রথমত ঋক বেদ পড়ে আমার যা মনে হয়েছে-এটা একটা নমাডিক সমাজের রিচুয়াল ম্যানুয়াল। আদিবাসী সমাজ ব্যবস্থা-এবং আদিবাসিদের মধ্যে মারামারি, অন্যদের প্রতি রোষ, গোষ্ঠিবাজি কোন কিছুই বাদ যায় নি। ঋকবেদের সময়ে মেয়েদের স্বাধীনতা বেশীই ছিল। এই সব নিয়ে মুক্তমনাতেই আমার প্রথম লেখা
http://www.mukto-mona.com/new_site/mukto-mona/Articles/biplab_pal/veda_mathematics.htm
এর পরবর্তীকালে আর্য্য সমাজ যত প্যালিওলিথিক থেকে কৃষিজীবি হয়েছে উত্তরাধিকারের জন্যে এবং অধিক সন্তানের জন্যে মেয়েদের স্বাধীনতা কাড়া হয়েছে। অর্থর্ববেদের এসে নারী আর গাভীর মধ্যে পার্থক্য নেই। এটা ঋকবেদের সময় ছিল না-তখন আর্যরা ছিল আদিবাসি নমাডিক। হরিন গরু মেরে খায়। ফলে উত্তরাধিকার বা অধিক সন্তানের চিন্তা তখনো আসে নি গভীর ভাবে-যেটা এসেছে পরবর্তী বেদে। সে সময়টা আর্যরা বন কেটে জনপদ বানাচ্ছে-তখন চাষের জন্য তাদের অনেক অনেক সন্তান দরকার। সেটাই নারী স্বাধীনতা কেটে নিয়ে সরাসরী তাদের গাভী বানানো হয়। যা মনুসংহিতাতে সম্পূর্ণ।
ধর্ম সমাজ বিচ্ছিন্ন কিছু না। সমাজের তৎকালীন প্রয়োজনে নির্বাচিত মিম এগুলি। তৎকালীন সমাজে কেন মেয়েদের স্বাধীনতা আস্তে আস্তে হরণ করা হল যা আদিবাসি আর্য্য সমাজে ( খৃষ্ট পূ ৩০০০-১২০০) ছিল না সেটা বোঝাটাই আসল কাজ হবে মনু সংহিতা বোঝার জন্যে।
@বিপ্লব পাল,
ধন্যবাদ বিপ্লব দা। বেদ, উপনিষদের অনুদিত বাংলা ভলিউমগুলোকে যদি সেকেন্ডারি সোর্স হিসেবে উল্লেখ করে থাকেন, তাহলে আমার দ্বারা তার থেকে মূলে যাওয়া সত্যিই সাধ্যের বাইরে। কেননা ভাষা ও উৎস দুটোই আমার অনধিগম্য।
তবে বর্তমান সিরিজটা আসলে বেদ বা তার বিশ্লেষণী কোন লেখা নয়। কেননা সেটা আরেকটা বিশাল প্রেক্ষাপট, যার প্রস্তুতিতেই মাথার ভেতরকার আরো অনেকগুলো জোড়াজাড়া তার ছিঁড়তে হবে। তাই এটার টার্গেট পরের জন্য তোলা রয়েছে। আদতে মনুসংহিতার নারীভোগ্যা জগতে প্রবেশের আগে জাস্ট একটা প্রাক-প্রস্তুতি ভূমিকা হিসেবে এই পোস্ট এবং ধারাবাহিকতায় তার পরের পোস্টও এর রেশ টানবে হয়তো। এবারকার টার্গেটটা যেহেতু ভিন্নমুখী, তাই আমি দৃষ্টিটাকে অন্যদিকে নিবদ্ধ করে রেখেছি। তবে আপনার উদ্ধৃত বিষয়টা মাথায় থাকবে সেই প্রেক্ষাপট নিয়ে যথাকালের প্রাসঙ্গিক আলোচনার সময়ে। তবে আশা করি এখনো সঙ্গ দিয়ে যাবেন। আর তথ্যগত ত্রুটি থাকলে জানাবেন তো অবশ্যই।
@বিপ্লব পাল, ঋকবেদ নিয়ে আপনার লেখাটা দেখলাম ইংলিশে ,বাংলায় পড়ার অপেক্ষায় রইলাম,
@বিপ্লব পাল,
আচ্ছা একটা কথা ছিল আমার যদি জানাতেন দয়া করে ( প্রশ্ন টা লেখককেই করা উচিত ছিল, কিন্তু উনাকে তো দেখি না, তাই আপনাকে করলাম), বেদ আমার কাছেও আছে, এবং খানিকটা পড়েছি। লেখক যে বলেছেন যে এটা হিন্দুদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ( আমিও তাই জানি), কিন্তু এটার দেবতাদেরকে কি কারনে পুজা করা হয় না? মানে আমি বলতে চাচ্ছি যে শিব, বিষ্ণু, কালী, দুর্গা, গনেশ, লক্ষী এদের মধ্যে যতদূর পড়েছি আমি শুধু এক বিষ্ণু ছাড়া কারো নাম পাই নাই।
দুর্দান্ত! (Y)
এবং মুক্তমনায় পুনরাগমনের শুভেচ্ছা। 🙂
@অভিজিৎ, দা, অনেক ধন্যবাদ। তবে এখনো তো বিষয়ের মধ্যেই ঢোকা হয় নি, তাই কতটুকু দুর্দান্ত হলো বা হবে তার চুড়ান্ত বিবেচনার সময় এখনো হয়নি।
আর মুক্তমনায় পুনরাগম মানে !! আমি কি মুক্তমনা থেকে প্রস্থান করেছিলাম নাকি !! হা হা হা !!
@রণদীপম বসু,
দুর্দান্ত মানে … আরেকটা দুর্দান্ত মানের সিরিজ পেতে চলেছি আর কি! 🙂
@রণদীপম বসু,
নো এক্সকিউজ প্লিজ। আশা করা যায় মুক্তমনায় বহুদিন পরে এবার একটি দুর্দান্ত আলোচনার আসর বসবে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, বিপ্লব দার আগমনে তা আরো প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে। আপাতত অত্যন্ত জ্ঞানগর্ব লেখাটির জন্যে লেখককে ধন্যবাদ (Y) জানিয়ে গ্যালারিতে আছি।
@আকাশ মালিক, ধন্যবাদ আপনাকে। আপনারা আলোচনায় অংশগ্রহণ করলে আসর জমবে তো নিশ্চয়ই !
দাদা আপনার পোষ্টের প্রতি অনেক ভালবাসা রইলো। অনেক সুন্দর সুন্দর কথাগুলো এখানে আলোচনা করেছেন ও করবেন বুঝতে পারছি। আপনার সাথে একদিন রমনা মন্দির এর বাইরে আমরা কয়েকজন বসে এসব দর্শন নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছিলাম, আপনার আজকের কথাগুলো সেদিনের কথাগুলোর ই লিখিত রুপ তাই একটু বুঝতে সুবিধা হলো বেশি।
যাই হোক আমার মতামত কিছু বলি, একটা দেশে বা দেশীয় সংস্কৃতিতে যখন কোন ধর্ম পালিত হয় বা প্রচারিত হয়, তাকে অবশ্যই সেই সংস্কৃতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। সংস্কৃতি, সভ্যতা যদি নদীর মত হয় তাহলে ধর্মকেও ডিঙির মত নদীকে অনুসরণ করতে হয়। এর কারণেই মরুভুমির ধর্ম আমাদের দেশে এসে সুফিবাদ এ রুপান্তরিত হয়েছে, মারফতি মাধ্যম এসেছে। সেটা কিন্তু সংস্কৃতির ই রুপ। যে ধর্ম পরিবর্তিত হতে পারেনা তার বিস্তৃতি কম, একসময় তা মুখ থুবড়ে পরবে।
আসি বৈদিক ধর্ম বা সনাতন ধর্ম বা হিন্দু ধর্ম নিয়ে। প্রাচীনতম এই ধর্মীয় দর্শনে যুগে যুগে পরিবর্তন এসেছে এবং এখন ও পরিবর্তন চলছে। দেখেন বেদ এর সময়কালের সব কিছু কিন্তু এখন মানা হয়না বা অনেকক্ষেত্রে সম্ভব ও না। তখনকার সময়ে তাদের জ্ঞান এর পরিধি এখনকার থেকে আপাতদৃষ্টিতে কম। তাই তাদের সময়ে তারা যেটা সঠিক মনে করেছে তাই তুলে ধরেছে, এজন্যই কিন্তু স্বয়ং বেদে ই সময়ভেদে পরিবর্তন এসেছে।
তেমনি মনুসংহিতার কথা এসেছে, আপনি তো অবশ্যই জানেন মনুসংহিতার প্রথম সময়ে কি লিখা ছিল তাই কিন্তু আমরা জানিনা। এর পরে অনেক সময়ের পরিবর্তিত একটা রুপ হিসেবে মনুসংহিতা আমরা পাই যেখানে বলা আছে মেয়েদের বেদ পড়া নিষিদ্ধ। অথচ বেদ এ অনেক নারী শ্লোক লিখেছেন। ???? তবুও অনেক অনাচার আছে যার থেকে পরিত্রান পাওয়া উচিত। কিন্তু গোড়ামির কারণে আমরা তা পারছিনা। তবে উদ্ধার পেতেই হবে।
@পদ্মফুল,
অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
আপনার মন্তব্যে কয়েকটি বিষয় এসেছে। বেদ ও মনুসংহিতা সময়ান্তরে পরিবর্তনের কথা বলেছেন। এবং তার সাথে জনপদের সংস্কৃতির বিষয়টিকেও সমন্বয় করেছেন। অবশ্যই আপনার উদারনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান জানাচ্ছি।
এবারে একটু ভেতরে ঢুকি। প্রথমে যদি বেদের পরিবর্তনের কথা ধরি, তাহলে প্রথমেই দুটো বিষয় আসে। সত্যি কি বেদে পরিবর্তন হয়েছিলো ? দ্বিতীয়ত যদি পরিবর্তন হয়ে থাকে, তা কি ইতিবাচক কোন উদ্দেশ্য ছিলো ? উত্তরে দুটোকেই না বলবো।
বেদে আসলে কোন পরিবর্তন হয়নি কখনো। বরং উপনিষদের কালে এসে যখন বেদ সংরক্ষিত হয়, তখনই সেকালের ব্রাহ্মণ্যবাদীরা বেদের মধ্যে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও দর্শনটাকে সুকৌশলে ঢুকিয়ে দেয়। যা আমার এই পোস্টে কিঞ্চিৎ বলেছি যে, পুরো ঋগ্বেদের সাথে বেদের দশম মণ্ডলের চিন্তাসূত্র খাপ খায়না। তাই বেদের এই দশম মণ্ডলকে বেদজ্ঞ দার্শনিকরা অর্বাচীন আখ্যায়িত করেছেন। কেননা যারা বেদের সুক্তগুলো রচনা করেছিলেন, তাদের মাথায় কিন্তু শঙ্করাচার্যের অদ্বৈত দর্শন ছিলো না বা থাকা সম্ভবও ছিলো না। আর এই ব্রাহ্মণ্যবাদী দর্শনই কিন্তু মনুসংহিতায় রাজত্ব করেছে। এবং ক্ষয়িষ্ণু হলেও এখনো করছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জীবনাচারে। যাকে আপনি অনাচার বলে উল্লেখ করেছেন।
এই অনাচার থেকে পরিত্রাণের উপায় কী ? যেহেতু বেদ বা মনুসংহিতা পরিবর্তনের আদৌ কোন সুযোগ নাই, তাই এটার অমানবিক দর্শনগুলো আমাদের জীবনাচার থেকে বর্জন করেই এই অনাচার থেকে মুক্ত হতে পারি। সংস্কৃতির বহমানতার নদীটা কিন্তু আমাদের চাওয়ার তীব্রতা দিয়েই গতিমুখ পরিবর্তন করে। যে প্রথা নীতি বা আইন মানুষ মানতে অস্বীকার করে, তা সামাজিকভাবেই রদ হয়ে যায়। এজন্যে আমাদের চাওয়াটাকে সুনির্দিষ্ট তো করতে হবে !
আরেকটা বিষয়, আমাদের সমাজ ধর্মীয় পুরুষতান্ত্রিক নিগড়ে বাঁধা। এর মাশুল কিন্তু সেই মনুর আমলের মতো এখনো দিয়ে যাচ্ছেন নারীরাই। অতএব, ধর্মীয় সমাজে নারী জীবনে কতটুকু পরিবর্তন এসেছে, তা দিয়েই কিন্তু পরিমাপ করতে হবে আমাদের বর্তমান অবস্থা কতোটা মানবিক, কতোটা অমানবিক, কতোটা বর্জনীয়, কতোটা প্রতিরোধযোগ্য। এবার আপনিই ভাবুন, আমাদের ধর্মীয় বর্ণবাদী সমাজজীবনে আমরা মনুর কাল থেকে মৌলিকভাবে কতোটা এগিয়েছি। এই প্রশ্ন এবং উত্তরের মধ্যেই নিহিত আছে আপনার আমার কর্তব্যগুলো কী হবে। আবারো ধন্যবাদ।
@রণদীপম বসু,
আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত। সংস্কৃতি কোন বদ্ধ ডোবা নয় যে একে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না বা পূর্বপুরুষের রীতিনীতির অন্ধ অনুসরণও সংস্কৃতি হতে পারে না। আর একটা ব্যাপার পদ্মফুল ভাই বললেন যে hinduismsite ও shonaton সাইটদুটি তাদের।তাই ওনাকে বলছি এই দুটি সাইটেই আমার বেশকিছু আপত্তিকর জিনিষ চোখে পড়েছে। যেমন অনেকে মুসলিমদের অসুর ও যবন বলেছে। কোন ইসলামিক সাইটে হিন্দুদের কাফের বা মালাউন বলে সম্বোধন করা হলে যেমন সেটাকে আমরা সাম্প্রদায়িকতা ও সংকীর্ণমনতা বলি তেমন ব্যাপার কিন্তু এক্ষেত্রেও ঘটছে। এক ধর্মের লোক অন্য ধর্মের সমালোচনা করলে প্রায় সময়ই সেটা ভণ্ডামিতে পরিণত হয় কারণ সব ধর্মই overall খারাপ। আজকে একবিংশ শতাব্দীতে এসে ইসলামকে নিয়ে সমালোচনা বেশি হচ্ছে কারণ অন্য ধর্মগুলির খারাপ দিকগুলিকে সামাজিক ও আইনিভাবে প্রতিহত করা গেছে এবং সেসব ধর্মের অনুসারীদের বেশিরভাগই আজ আর ধর্মকর্ম নিয়ে তেমন চিন্তিত নয়। তার মানে এই নয় যে এসব ধর্মকে খুব সহজেই ঠাণ্ডা করা গেছে। পনেরশ শতকে খ্রিস্টধর্ম ও উনিশ শতকে হিন্দুধর্মকে ঠিক কোরতে সমাজসংস্কারক ও যুক্তিবাদীদের প্রচুর বেগ পেতে হয়েছে। ওসব সমাজের অবস্থাও তখন করুণ ছিল। ধর্মগুলো বরাবরই গোঁড়ামি ও স্থবিরতার পক্ষে।