আবুল কাশেম
মক্কা বিজয়ের পর নবী কোথায় গেলেন?
নবী মুহাম্মদ বাহুবলে মক্কা দখল করলেন। কয়েকজন ছাড়া সাধারণ ক্ষমাও ঘোষণা করলেন। মক্কার লোকেরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। সবাই আশা করছিল মুহাম্মদ পৈত্রিক ভিটেমাটিতে অবস্থান করবেন, যথা তাঁর চাচা আবু তালেবের গৃহে। কিন্তু নবী তা না করে কাবার সন্নিকটে নিজের থাকার জন্য একটা তাঁবু গাড়লেন। সেখানে তাঁর সাথে ছিলেন তাঁর কনিষ্ঠ কন্যা ফাতেমা ও অন্যান্য নিকট আত্মীয়। তাঁবুটি যে উম হানী বা আবু তালেবের গৃহের খুব কাছেই ছিল তাতে কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়। আমরা উপরে একটা হাদিসে দেখেছিলাম যে উম হানী যখন নবীর তাঁবুতে গেলেন উনার গৃহে আশ্রিত দুই দেবরের প্রাণ ভিক্ষা করতে যাদেরকে হযরত আলী হত্যার হুমকি দিয়েছিলেন, তখন নবী গোসল সারলেন এবং ভোরের নামায পড়লেন। আমরা ধরে নিতে পারি এটা ফজরের নামাযের সময় ছিল—যা সূর্য উঠার আগেই হয়। এই ঘটনা থেকেই অনুমান করা যায় যে নবীর তাঁবু ছিল উম হানীর গৃহের কাছেই। তখন উম হানীর গৃহে যে তাঁর স্বামী হুবায়রা ছিল না তা একেবারে পরিষ্কার। নবী ফজরের নামায শেষ করলেন। তারপর উম হানীর সাথে কথাবার্তা বললেন এবং তাঁকে আশ্বস্ত করলেন যে উনি (উম হানী) যাকে আশ্রয় দিবেন তারা তাঁর নিরাপত্তা পাবে। এখন ব্যাপার হচ্ছে—এত ভোরে মুহাম্মদ উম হানীকে তাঁর তাবুতে আপ্যায়ন করার পর কি করলেন? মুহাম্মদ কি উম হানীর গৃহে তাঁর পদধূলি দিলেন?
এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা অনেক ইসলামী পণ্ডিতেরা কৌশলে এড়িয়ে যেতে চান। কারণ যদি দেখান হয় যে নবী উম হানীর গৃহে তশরীফ নিয়েছিলেন তবে উম হানী এবং মুহাম্মদের মাঝে যে পরকীয়া প্রেম তখনও জীবিত ছিল তার প্রমাণ দেওয়া যায়। আর এই কর্ম যদি নবী করে থাকেন তবে উনি নিজের আইন নিজেই ভঙ্গ করেছেন প্রমাণিত হয়। এই ঘটনা আরও প্রমাণিত করে যে উম হানীর স্বামী তাঁর স্ত্রীর সাথে থাকতেন না। এর কারণ আগে দেওয়া হয়েছে। পরে আরও জোরালো প্রমাণ দেখান হবে।
এই প্রসঙ্গেএখন দেখা যাক কিছু হাদিস এবং ঐতিহাসিক দলিল।
প্রথমেই দেখা যাক কয়েকটি তিরমিজি হাদিস।
আবদুর রহমান বিন আবি লায়লা বর্ণনা করলেন: “উম হানী ছাড়া আর কেউ-ই আল্লাহর রসূলকে জুহার (দুহা) নামায পড়তে দেখেনি। উনি (উম হানী) বললেন: ‘মক্কা বিজয়ের দিন আল্লাহর রসূল তাঁর গৃহে (উম হানীর গৃহে) ঢুকলেন। তারপর তিনি গোসল করলেন এবং ঐচ্ছিক আট রাকাত নামায পড়লেন। তিনি নবীকে এত লঘুভাবে আর কোন দিন নামায পড়তে দেখেন নাই। কিন্তু তিনি রুকু (মাথা নত করা) ও সিজদা (স্যাষ্ঠাঙ্গ করা) ঠিক মতই করলেন। (সহিহ) (জামি আত তিরমিজি, খণ্ড ১, হাদিস নম্বর ৪৭৪, পৃঃ ৪৭৬-৪৭৭; অনুবাদ লেখকের)
উম হানী বললেন: মক্কা বিজয়ের সময় আমি আল্লাহর রসূলের কাছে গেলাম। আমি দেখলাম উনি গোসল করছেন। আর ফাতেমা তাঁকে একটা কাপড় দিয়ে তাঁকে অন্তরাল করে রেখেছেন। আমি তাঁকে সালাম জানালাম। উনি বললেন: “এ কে?” আমি বললাম, আমি উম হানী।” তিনি বললেন: “স্বাগতম উম হানী।” (সহিহ) (জামি আত তিরমিজি, খণ্ড ৫, হাদিস নম্বর ২৭৩৪, পৃঃ ১১৭; অনুবাদ লেখকের)
এখন বুখারী শরীফ থেকে কিছু হাদীস:
আবদুল্লাহ ইব্ন মুসলিম (র)…উম্মে হানী বিনত আবু তালিব (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি মক্কা বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ-এর কাছে গিয়ে তাঁকে গোসল-রত অবস্থায় দেখলাম, ফাতিমা (রা) তাঁকে পর্দা করে রেখেছিলেন। রাসূলুল্লাহ জিজ্ঞাসা করলেন: ইনি কে? আমি বললাম: আমি উম্মে হানী। (বুখারী শরীফ, হাদিস ১.২৭৬, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত)
ইসমা’ঈল ইবন্ আবু উওয়ায়স (রঃ)…উম্মে হানী বিন্ত আবু তালিব (রাঃ) বলেন: আমি বিজয়ের বছর রাসূলুল্লাহ-এর কাছে গিয়ে দেখলাম যে, তিনি গোসল করছেন আর তাঁর মেয়ে ফাতিমা (রাঃ) তাঁকে পর্দা করে রেখেছে। তিনি বলেন: আমি তাঁকে সালাম করলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: এ কে? আমি উত্তর দিলাম: আমি উম্মে হানী বিনত আবু তালিব। তিনি বললেন: মারহাবা, হে উম্মে হানী! গোসল করার পর তিনি এক কাপড় জড়িয়ে আট রাক’আত সালাত আদায় করলেন। সালাত আদায় শেষ করলে তাঁকে আমি বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ। আমার সহদর ভাই [আলী ইব্ন আবূ তালিব (রাঃ)] এক লোককে হত্যা করতে চায়, অথচ আমি লোকটিকে আশ্রয় দিয়েছি। সে লোকটি হুবায়রার ছেলে অমুক। তখন রাসূলুল্লাহ বললেন: হে উম্মে হানী! তুমি যাকে আশ্রয় দিয়েছ, আমিও তাকে আশ্রয় দিলাম। উম্মে হানী (রাঃ) বলেন: তখন ছিল চাশতের সময়। (বুখারী শরীফ, হাদিস ১.৩৫০, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত)
হাফ্স ইব্ন উমর (র.)……ইব্ন লায়লা (র.) থেকে বর্ণিত, উম্মে হানী (রা.) ব্যতীত অন্য কেউ নবী করীম (স.) কে সালাতুয্ যুহা (পূর্বাহ্ন এর সালাত) আদায় করতে দেখেছেন বলে আমাদের জানাননি। তিনি (উম্মে হানী) (রা.) বলেন নবী (স.) মক্কা বিজয়ের দিন তাঁর ঘরে গোসল করার পর আট রাকা’আত সালাত আদায় করেছেন। আমি তাঁকে এর চাইতে সংক্ষিপ্ত কোন সালাত আদায় করতে দেখিনি, তবে তিনি রুকূ’ ও সিজদা পুর্ণভাবে আদায় করেছিলেন। লায়স (র.) আমির (ইব্ন রাবীআ’) (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ (স.)কে রাতের বেলা সফরে বাহনের পিঠে বাহনের গতিমুখী হয়ে নফল সালাত আদায় করতে দেখেছেন। (বুখারী শরীফ, হাদিস ২.১০৪০, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত)
আদম (র.)……আবদুর রহমান ইব্ন লায়লা (র.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন উম্মে হানী (র.) (নবী করীম (স.)-এর চাচাত বোন) ব্যতিত অন্য কেউ নবী করীম কে চাশ্তের সালাত আদায় করতে দেখেছেন, এরূপ আমাদের কাছে কেউ বর্ণনা করেননি। তিনি উম্মে হানী (র.) অবশ্য বলেছেন, নবী করীম (স.) মক্কা বিজয়ের দিন (পূর্বাহ্নে) তাঁর ঘরে গিয়ে গোসল করেছেন। (তিনি বলেছেন) যে, আমি আর কখনো (তাঁকে) অনুরূপ সংক্ষিপ্ত সালাত (আদায় করতে) দেখিনি। তবে কিরআত সংক্ষিপ্ত হলেও তিনি রুকু’ ও সিজদা পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করেছিলেন। (বুখারী শরীফ, হাদিস ২.১১০৬, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত)
এই ধরণের আরও কিছু হাদিস রয়েছে বুখারী শরীফে।
দেখা যাক মুসলিম শরীফের কিছু হাদিস:
উম হানী বিন্ত আবু তালিব বর্ণনা করলেন: সেই দিনটি ছিল মক্কা বিজয়ের দিন। উনি (উম হানী) আল্লাহর রসূলের (সঃ) নিকট গেলেন। তখন তিনি (রসূল) নগরের এক উঁচু অংশে অবস্থান করছিলেন। আল্লাহর রসূল গোসল করতে উঠলেন। ফাতেমা একটা কাপড় দিয়ে তাঁকে ঘিরে রাখলেন। তারপর তিনি নিজের কাপড় নিলেন এবং নিজেকে আবৃত করে ফেললেন। এরপর নবী আট রাকাতের পূর্বাহ্ণের নামায পড়লেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ০৬৬৪; অনুবাদ লেখকের)
আবু তালিব তনয়া উম হানীর মুক্ত ক্রীতদাস আবু মুরা বলেছেন। উম হানী বললেন: যেদিন মক্কা দখল হয় সেদিন আমি আল্লাহর রসূলের (সঃ) কাছে গেলাম। আমি দেখলাম উনি গোসল করছেন আর ফাতেমা উনাকে এক কাপড়ের সাহায্যে পর্দা দিচ্ছেন। আমি সালাম জানালাম। উনি বললেন: এ কে? আমি জবাব দিলাম: আমি উম হানী, আবু তালিবের কন্যা। গোসল শেষ হলে উনি নিজেকে এক টুকরো কাপড়ে জড়িয়ে নিলেন এবং আট রাকাত নামায আদায় করলেন। নামায শেষ হলে উনি পেছনে তাকালেন। আমি বললাম: আল্লাহর রসূল, আমার মায়ের পুত্র আলী বিন আবু তালিব ফুলান বিন হুবায়রাকে হত্যা করতে প্রস্তুত। এদিকে আমি ফুলানকে আশ্রয় দিয়েছি। এই কথা শুনে আল্লাহর রসূল বললেন: ও উম হানী, আমরাও তাকে রক্ষা করব যাকে তুমি রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছ। উম হানী বললেন তখন ছিল পূর্বাহ্ণ। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৫৫৫; অনুবাদ লেখকের)
এই সব হাদিসগুলো খুবই বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে। মুহাম্মদ সেদিন কয়বার ভোরের নামায পড়লেন? মনে হবে একবারই। কিন্তু এখানে দেখতে হবে যে ফজরের পরের নামায হচ্ছে যুহা বা দুহার নামায যা সধারণতঃ দুপুরের নামায। তাই স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফজর এবং যুহার নামাযের মাঝে অন্য নামায বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু মুহাম্মদ তার ব্যতিক্রম করলেন। তিনি সূর্য উঠার আগে নিজের তাঁবুতে ফজরের নামায পড়লেন। উম হানীর সাথে আশ্বাসের কিছু কথাবার্তা করলেন। তারপর সূর্য উঠে গেলে উম হানীর গৃহে গেলেন পরিস্থিতি অবলোকনের জন্য। এই সময়টাকে চাশতের সময় বলা হয়। এই সময়ের নামাজকে চাশতের বা পূর্বাহ্ণের নামায বলা হয়। চাশত কয়টার সময় তার সদুত্তর আমি পাইনি। অনুমান করা যেতে পারে সময়টা মধ্যাহ্নের আগে—খুব সম্ভবত: সকাল আট থেকে দশটা হবে। ধরা যাক সকাল নয়টা। এই সময় নবী উম হানীর গৃহে আসলেন। আবার গোসল করলেন এবং আবার আট রাকাত নামায পড়লেন—কিন্তু খুব দ্রুত ভাবে। এই ব্যাপারটা খোলাসা হয় এই হাদিসে।
আবদুল্লাহ বিন হারিস বিন নৌফল বর্ণনা করলেন: আমি এক ব্যাপারে অনেককেই জিজ্ঞাসা করছি। আল্লাহর রসূল কি পূর্বাহ্ণের নামায আদায় করেছেন? কিন্তু আবু তালিবের কন্যা উম হানী ছাড়া কেউই এ ব্যাপারে জানাতে পারে নাই। উম হানী বললেন: মক্কা বিজয়ের দিন আল্লাহর রসূল (স.) আমাদের গৃহে আসলেন। তখন সূর্য যথেষ্ট উঠে গেছে। এক টুকরা কাপড় দিয়ে উনার নিভৃতে গোসল করার ব্যবস্থা করা হল। উনি গোসল করলেন এবং নামাযের জন্য দণ্ডায়মান হলেন। আট রাকাত নামায পড়লেন। আমি ঠিক বলতে পারিনা উনার রুকু এবং সিজদা কি একই সময়ের ছিল কি না। উম হানী আরও বললেন: এর আগে আমি উনাকে আর কখনো এই নফল (ঐচ্ছিক) নামায পড়তে দেখি নাই। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৫৫৪; অনুবাদ লেখকের)
উপরের হাদীসে বুঝা গেল নবী একবারই চাশতের নামায পড়েছিলেন এবং তা করেছিলেন উম হানীর গৃহে। একমাত্র উম হানীর জন্যই মুহাম্মদ তাঁর নামাযের ব্যতিক্রম করলেন; একমাত্র উম হানীর জন্যই নবী মুহাম্মদ প্রাত্যুষে দুইবার গোসল করলেন। উম হানিই করলেন নবীর গোসলের ব্যবস্থা।
আমরা আগেই দেখেছি উম হানী মক্কা বিজয়ের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন নাই। তাঁর স্বামীও উম হানীর সাথে থাকতেন না। তবে উম হানী তাঁর দুই দেবর বা ঐ ধরণের দুই আত্মীয়কে আশ্রয় দিচ্ছিলেন। অনুমান করা যায় যখন নবী উম হানীর গৃহে আসলেন তখন উম হানী ইসলাম গ্রহণ করলেন।
সব শেষে আল ওয়াকেদীর কিতাব আল মাঘহাযি বই থেকে:
মক্কা বিজয়ের দিনে উম হানীর দুই দেবর তাঁর গৃহে আশ্রয় নেন। সেই সময় উম হানীর স্বামী গৃহে ছিলেন না।
তারা বলল: উম হানী বিন আবু তালিব বিবাহ করেন হুবায়রা বিন আবি ওহব আল মাখযুমিকে। মক্কা বিজয়ের দিনে উম হানীর দুই দেবর আবদুল্লাহ বিন আবি রাবিইয়া আল মাখযুমি এবং আল হারিস বিন হিশাম উম হানীর কাছে এসে নিরাপত্তা চাইল। তারা বলল: “আমরা কি আপনার কাছে নিরাপদ থাকব?” উম হানী উত্তর দিলেন; “হাঁ, আপনারা আমার নিকট নিরাপদেই থাকবেন।” উম হানী আরও বললেন: “তারা দুজন আমার কাছেই ছিল, এমন সময় আমি দেখলাম লৌহ শিরস্ত্রাণ পরিহিত আলী ধীরে ঘোড়ায় চড়ে আমার গৃহে ঢুকলেন। বর্মে ঢাকা থাকার জন্য আমি আলীকে চিনতে পারি নাই। আমি বললাম; “আমি হচ্ছি নবীর চাচার কন্যা।” তারপর আলী তাঁর মুখ দেখালেন। আমি তখন তাঁকে দেখে বলে উঠলাম: “এ যে আলী, আমার ভাই!” আমি আলীকে অভ্যর্থনা জানালাম এবং আলিঙ্গন করলাম। কিন্তু আলী ঐ দুই ব্যক্তির দিকে তাকালেন আর তরবারি উঁচিয়ে নিলেন। আমি বলে উঠলাম: “এরা আমার নিজের লোক। তুমি এদের প্রতি নির্দয় হবে না।” তারপর আমি ঐ দু’জনের দিকে একটা জামা ছুড়ে দিলাম। তখন আলী বললেন: “তুমি কি অবিশ্বাসীদের আশ্রয় দিয়েছ?” এর পর আমি আলী ও তাদের মাঝে দাঁড়িয়ে গেলাম এবং বললাম: “আল্লাহর কসম, তুমি যদি এদেরকে হত্যা করতে চাও তবে আমাকে দিয়ে শুরু কর।” উম হানী বললেন: “তখন আলী বাইরে চলে গেলেন, আর আমি তৎক্ষণাৎ গৃহে তালা লাগিয়ে দিলাম আর ওদেরকে বললাম: “তোমরা ভীত হবে না।”’ (আল ওয়াকেদী, পৃঃ ৪০৮-৪০৯)
জীবন বাঁচাবার জন্য উম হানীর স্বামী হুবায়রা পালিয়ে গেলেন নাজরানে এবং সেখানেই থেকে গেলেন। উম হানী ইসলাম গ্রহণ করলেন। মক্কা বিজয়ের পর হুবায়রা যখন এই সংবাদ জানলেন তখন বললেন: (আল ওয়াকেদী, পৃঃ ৪১৭) [এখানে আল ওয়াকেদী হুবায়রার লেখা এক দীর্ঘ কবিতা দিয়েছেন—যা ইবনে ইসহাক এবং তাবারির উদ্ধৃত কবিতার মতই।]
আল ওয়াকেদী লিখেছেন হুবায়রার সাথে তাঁর এক সঙ্গীও নাজরানে চলে যায়। কিন্তু কিছুদিনের মাঝেই সে মক্কায় ফিরে আসে এবং ইসলাম গ্রহণ করে। হুবায়রা অনেক কাকুতি মিনতি করেছিলেন ঐ সঙ্গীকে মক্কায় না ফিরে যাবার জন্য এবং পৈতৃক ধর্ম পরিত্যাগ না করার জন্য। কিন্তু হুবায়রার সঙ্গী তাঁর সাথে প্রতারণা করে।
অনুমান করা যায় মনের দুঃখে হুবায়রা উম হানীর স্মৃতিচারণ করে বেশ কিছু কবিতা রচনা করেছিলেন। এর পর কিছু সময়ের ব্যবধানে, নিতান্ত একাকীত্বের মাঝে হুবায়রা মারা যান। উম হানী হয়ে যান বিধবা।
মনে রাখা দরকার, হুবায়রার স্বামী কোনদিনই তাঁর স্ত্রী উম হানীকে তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদ দেন নাই।
নবী বিজয়ী হলেন, সমগ্র আরব জাতীকে ইসলামের পদানত করলেন। উম হানী ইসলাম গ্রহণ করলেন, নবীর বশ্যতা স্বীকার করে নিলেন। কিন্তু নবী পারলেননা উম হানীকে উনার স্ত্রী বানিয়ে হারেমে তুলে নিতে।
উপসংহার
এই রচনা পড়ে আমরা নিম্নের কয়েকটি সিদ্ধান্ত দিতে পারি।
১। নবী মুহাম্মদ উনার চাচাত বোন উম হানীকে বাল্য এবং কৈশোর থেকেই ভালবাসতেন। নবী তাঁর এই প্রথম প্রেম কোনদিনই ভুলেন নাই।
২। আবু তালেব যখন যুবক মুহাম্মদ কর্তৃক উম হানীকে বিবাহের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন তখন মুহাম্মদ অতিশয় নিরাশ এবং অপমানিত বোধ করেন। এই অপমানের জ্বালা মুহাম্মদ কখনই ভুলেন নাই। হয়ত প্রতিশোধ গ্রহণের প্রবণতাও তাঁর মধ্যে ছিল। মুহাম্মদ নবূয়ত লাভের পর এই প্রতিশোধ গ্রহণের আকাঙ্ক্ষা আরও তীব্র হয়ে উঠে। অনুমান করা যায় নবীর আগ্রাসন এবং প্রতিহিংসাপরায়ণতার অন্যতম কারণ উম হানীর সাথে নবীর ব্যর্থ প্রেমেই নিহিত আছে। এটা বলা অতিশয় হবেনা যে আবু তালেব উম হানীকে (হিন্দকে) ভেড়ার পালের রাখাল, নিরক্ষর, বেকার মুহাম্মদের হাতে তুলে দিলে ইসলামের জন্ম হত না।
৩। খদেজাকে বিবাহের পরেও নবী উম হানীর সাথে যোগাযোগ রাখতেন, যদিও অনুমান করা যায় যে ধনকুবের খদিজার বিবাহের অন্যতম শর্ত ছিল যে তাঁর জীবদ্দশায় মুহাম্মদ অন্য স্ত্রী নিতে পারবেন না। খদেজা হয়ত মুহাম্মদের পরকীয়া প্রেমের ব্যাপারে অবহিত ছিলেন না। নবী অতি কৌশলে তাঁর পরকীয়া প্রেম খদেজার কাছ থেকে গোপণ রেখেছিলেন।
৪। মুহাম্মদ উম হানীর স্বামী হুবায়রাকে মনে প্রাণে ঘৃণা করতেন, এবং চিরজীবন তাকে পথের কাঁটা হিসাবে ভেবেছেন।
৫। উম হানীর স্বামী হুবায়রা কোন দিনই মুহাম্মদের বশ্যতা স্বীকার করেন নাই, ইসলাম গ্রহণ করেন নাই। নির্বাসন, একাকীত্ব বেছে নিয়েছেন—কিন্তু মুহাম্মদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন নাই।
৬। উম হানীর স্বামী সর্বদায় ইসলামের বিরুদ্ধে ছিলেন। বিভিন্ন যুদ্ধে যোগদান করেছেন, মুসলিম সৈন্য হত্যা করেছেন এবং নিজেও আহত হয়েছেন।
৭। উম হানী এবং মুহাম্মদের সাক্ষাত ছিল খুবই ঘন ঘন—বিশেষত্ব হুবায়রার অবর্তমানে। এর কারণ এই হতে পারে যে কাবার যেখানে মুহাম্মদ নামায পড়তেন অথবা কোরান আবৃত্তি করতেন তা ছিল উম হানীর গৃহের অতি নিকটে—শ্রুতির দূরত্বের মাঝে।
৮। মুহাম্মদ শত চেষ্টা করে—এমনকি আল্লাহর কাছ থকে বার্তা আনিয়েও পারেন নাই উম হানীকে মদিনায় নিয়ে গিয়ে উনার হেরেমে ঢুকাতে। উম হানী তাঁর স্বামী থেকে দূরে থাকলেও কখনই তাঁর স্বামী হুবায়রাকে ছাড়েন নাই।
৯। হুবায়রার পরিবার পরিজনের প্রতি উম হানীর যথেষ্ট দরদ ছিল। তার প্রমাণ দেখা যায় যখন উম হানী আশ্রয় দিলেন তাঁর দুই দেবরকে। আলী চেয়েছিলেন এই দুই দেবরকে হত্যা করতে।
১০। নবীর জীবনে যদি কোন ব্যর্থতা থেকে থাকে তা হবে উম হানীকে উনি তাঁর অগুনতি স্ত্রীর মধ্যে একজন বানাতে পারেন নাই। উম হানী কখনও চান নাই অন্য সতীনদের সাথে মুহাম্মদের সংসারে ঢুকতে।
সমাপ্ত।।
উম হানী এবং নবী মুহাম্মদ (পর্ব-১)
উম হানী এবং নবী মুহাম্মদ (পর্ব ২)
উম হানী এবং নবী মুহাম্মদ (পর্ব ৩)
উম হানী এবং নবী মুহাম্মদ (পর্ব ৪)
সূত্র
Ali, Abdullah, Yusuf, The Holy Qur’an: Translation and Commentary. Amana Corp., Brentwood, Maryland, 1983.
Al Waqidi, Muhammad b. Umar. Al Waqidis’s Kitab al Maghazi. The Life of Muhammad. Translated by Rizwi faizer, Amal Islmail and AbdulKader Tayeb. Edited by Rizwi Faizer. Published by Routledge. 2 Park Square, Milton Park, Abingdon, Oxon , OX14 4RN. 2011. ISBN 978-0-415-57434-1 (bbk).
al-Hilali, Muhammad Taqi-ud-Din (Dr) and Dr Muhammad Muhsin Khan. The Noble Qur’an Transliteration in Roman Script And English Translation of the Meanings. Darussalam Publishers, Riyadh, Saudi Arabia, 1996. [The internet version of the English translation by these two modern translators can be read at: [ http://www.witness-pioneer.org/vil/ ]
al-Tabari, Abu Ja’far Muhammad b. Jarir, The Victory of Islam, vol. viii. Translated by Michael Fishbein. State University of New York Press, Albany, 1997. ISBN 0 7914 3150-9
al-Tabari, Abu Ja’far Muhammad b. Jarir. The Last Years of the Prophet, vol. ix. Translated by Ismail K. Poonwala. State University of New York Press, Albany, 1990. ISBN 0-88706-692-5.
Ibn Ishaq, Muhammad b. Yasr. Sirat Rasul Allah. Translated in English by A. Guillaume. First published by Oxford University Press, London in 1955. Fifteenth reprint by Oxford University Press, Karachi, Pakistan, 2001.
Ibn Sa’d, Abu Abd Allah Muhammad. Kitab al-Tabaqat, vol i. Translated in English by S. Moinul Haq, Kitab Bhavan, 1784, Kalan Mahal, Daraya Ganj, New Delhi, India, 1972.
Imam Hafiz Abu ‘Eisa Mohammad Ibn ‘Eisa At Tirmidhi, Jami’ At Tirmidhi (vol. 1-6), Tr. Abu Khaliyl, Final review by Islamic Research Section Darussalam, Darussalam, P.O. Box 22743, Riyadh 11416, Saudi Arabia, First Ed. November 2007
Ibn Musa al-Yahsubi, Qadi ‘Iyad. Ash-Shifa. Tr. Aisha Abdarrahman Bewley. Medina Press, P.O. Box 5531, Inverness IV5 7YA, Scotland, UK, fifth print 2004.
Haykal, Muhammad Husayn. Life of Muhammad (PBUH). Translated by Isma’il Razi A. al-Faruqi. http://www.witness-pioneer.org/vil/Books/MH_LM/default.htm
Lings, Martin. Muhammad his life based on the earliest sources. Inner Traditions International, One Park Street, Rochester, Vermont 05767, USA, 1983.
Muir, William, with an Introduction to the reprint. The Life of Mahomet From Original Sources. Voice of India, New Delhi 110 002, Second Indian reprint: 2002. ISBN: 81 85990 76 X.
Muslim, Abu al-Hussain b. al-Hajjaj al-Qushairi. Sahi Muslim. Translated in English by Abdul Hamid Siddiqui: [http://www.usc.edu/dept/MSA/fundamentals/hadithsunnah/muslim/ ]
Rodinson, Maxine. Muhammad., Translated from French by Anne Carter. First published in 1971; The New York Press publication, 2002.
Shafii, Mufti Muhammad. Qura’nul Karim Tafsir Maariful Quran. Translated in Bengali by Muhiuddin Khan. Medina Publications, 38/2 Banglabazar, Dhaka, Bangladesh. Volumes I and II. 2004. ISBN: 084-8367-60-2. http://www.banglakitab.com/
Walker, Benjamin. 2004. Foundations of Islam. Rupa & Co. New Delhi. First published in Great Britain by Peter Owen Publishers, 1998.
Watt, Montgomery W. Muhammad At Mecca, published by: Ameena Saiyid. Oxford University Press, Plot No. 38, Sector, 15, Korangi Industrial Area, PO Box 8214, Karachi 74900, Pakistan. Sixth Impression 2006. ISBN 10: 0 19 577278 4.
Watt, Montgomery W. Muhammad At Medina, published by: Ameena Saiyid. Oxford University Press, Plot No. 38, Sector, 15, Korangi Industrial Area, PO Box 8214, Karachi 74900, Pakistan. Sixth Impression 2004. ISBN : 0 19 577307 1.
তাফসীর ইবনে কাসীর; ড: মুহাম্মদ মুজীবুর রহমান অনুদিত। http://islamiboi.wordpress.com/tafsir-ibn-kathir-in-bangla/
বুখারী শরীফ; ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক অনুদিত ও প্রকাশিত। http://islamiboi.wordpress.com/sahih-bukhari-in-bangla/
বোখারী শরীফ; বাংলা তরজমা; মাওলানা আজিজুল হক সাহেব; মহাদ্দেছ জামিয়া কোরআনিয়া, লালবাগ ঢাকা কর্তৃক অনুদিত; হামিদিয়া লাইব্রেরী লিঃ; ৬৫, চক সারকুলার রোড, ঢাকা-১১। http://www.banglakitab.com/
আল্লামা জালালুদ্দিন আবদুর রহমান সিয়ুতী (রাহঃ);খাসায়েসুল কুবরা; অনুবাদ: মাওলানা মুহিউদ্দিন খান; মদীনা পাবলিকেশান্স; ৩৮/২, বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০; ফেব্রুয়ারি: ১৯৯৯। http://www.banglakitab.com/
আর গোসল উম্মে হানীর গৃহে হয় নি।
ভাই সেই সময় উনাদের উভয়ের বয়সই ছিল ৬০ এর উপরে, আপনাদের কি মাথা খারাপ হয়েছে নাকি।
@আবুল কাশেম
কাশেম ভাই। ভাল আছেন নিশ্চই, :))
ধর্ম বিষয়ে বিভিন্ন যায়গায় বিভিন্ন সময়ে তর্ক বিতর্কের সময় যেন সহজেই রেফারেন্ছগুলো খুজে পাওয়া যায় সেজন্য আপনাদের বিভিন্ন লেখা পড়ার সময়ই পোয়োজনীয় আয়াতগুলো নিজের প্রয়োজনেই আমি বিষয়ভিত্তিকভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে Doc file করে রাখতাম। তারপর সেগুলো অনেকের সাথে Share করার প্রয়োজন হয়। নেটে আপলোড করা দরকার হয়। এভাবে আস্তে আস্তে আরও ভালভাবে সাজানো গোছানো হয়ে যায়। একসময় দেখি বেশ ভাল একটা Collection হয়ে গেছে 🙂 । সবগুলো নিয়ে অধ্যায়ভিত্তিক একটা PDF e-Book হয়ে যায়। সম্পুর্ন Unofficial একটা বই :-s । শুধুমাত্র Personal use এর জন্য। আমার হয়তো আপনাদের অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন ছিল কিন্তু নানা কারনে অনুমতি নেওয়া হয়ে ওঠেনি। সেজন্য আমাকে ক্ষমা করবেন আশাকরি।
বইয়ের Link টা দিলাম। নামিয়ে দেখবেন Plz. আপনাদের কাছে আসলে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ :guru: (F) (W) (F) :guru: , কারন আপনারা কষ্ট করে গবেষনা না করলে আমরা হয়তো কখনই এসব জানতে পারতাম না ।
Link:- http://www.mediafire.com/?yfbkp07dku7zhgb
ধন্যবাদ
@Triple A,
আপনি এক ভীষণ উপকার করলেন। আমি ডাউনলোড করে নিলাম–ভবিষ্যতে খুব কাজে লাগবে।
@আবুল কাশেম, খুশি হলাম 🙂
At last, I read the entire episode (five parts) of this very interesting and highly intriguing and doubtful made-up story of Muhammad’s love affairs with Umm Hani. All the episodes have been written by well researched references and maintaining enough neutrality. Yet, it was very clear that, MO actually was caught in his love making business which he tried to cover-up by his BS false story of Miraj only to fool more Islamic robots. Only muslim zombies can believe such ridiculously stupid story. Truth is, MO had to tell thousands of lies to cover-up his first “greatest lie” of talking to Gabriel inside the cave of hira. This miraj story was one such totally made-up and false story. Many thanks to Abul Kasem for bringing this important story before the readers.
SKM
@Syed K. Mirza,
আপনার মন্তব্য আমার কাছে খুব`ই মূল্যবান। কষ্টকরে পড়েছেন সেই জন্য ধন্যবাদ।
নীচে অভ্র বোতামে ক্লিক করে আপনি বাঙলায় লিখতে পারেন
পড়লাম, জানলাম এবং কিছু বুঝার চেষ্টা করলাম।
সৈয়দ আব্দুল হাদী’র একটা গান আছে না ! ‘…যে ডাল ধরি ভেঙে পড়ি…!’
ধর্মের ডালগুলো বড় নাজুক !
@রণদীপম বসু,
সত্যি।
তবে ডালগুলো নাজুক হলেও কাণ্ড অতিশয় প্রকাণ্ড এবং শিকড় বড়ই গভীর।
@আবুল কাশেম, আমড়া গাছ। প্রকান্ড কান্ড, কিন্তু অসম্ভব নরম কাঠ। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের ভার নেবার ক্ষমতা নেই!
@আবুল কাসেম
১ম হতে শেষ পর্ব পর্ষন্ত পূর্বাপর বিচার-বিশ্লেষণ এবং উপসংহার ভালো লেগেছে। দীর্ঘশ্রমসাধ্য লেখার জন্য ধন্যবাদ, ভালো থাকুন।
পুরো সিরিজটা পড়লাম… অসম্ভব তথ্যবহুল লেখা।
@থাবা,
আপনার ধৈর্য্যের প্রশংসা করছি।
ছি ছি… এ তো দেখি পুরা রসময় কেস…
@আরিফুর রহমান,
কিসের রস?
আদি রস?
সম্পূর্ণ টুকুই পড়লাম।
অসম্ভব পরিশ্রম করে পূর্ণ উদ্ধৃতি ও যুক্তি সহ পর্বটি শেষ করলেন, এজন্য ধন্যবাদ।
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
আপনি ধৈর্য্য ধরে সবগুলো পর্ব পড়েছেন তার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
শ্রমসাধ্য এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যবহুল লেখাটির জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
@তামান্না ঝুমু,
আপনি এতদিন ধৈর্য্য ধরে পড়েছেন সেই জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
শ্রমলব্ধ সিরিজটি সুষ্ঠুভাবে শেষ করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি, কাশেম ভাই। ইতিহাসের অনেক লুকানো কথা জানা গেল। পয়গম্বরদের যাবতীয় পয়গম্বরীর মিথ ভাঙতে এ ধরনের লেখার গুরুত্ব কখনোই ম্লান হবার নয়।
ধন্যবাদ!
@অভিজিৎ,
তোমাকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি—এত সমস্যার মুখেও ধৈর্য্য ধরে পড়েছ। আশা করি এখন সব কিছু ঠিক হয়ে আসছে।
পূর্ণাঙ্গ একটা সিরিজ শেষ হলো। অনেক ভালো লাগছে, আপনার প্রতি অনেক শ্রদ্ধা ও ভালবাসা রইলো। কারণ কেউ চাইলে ৫ টা পোষ্ট করতে পারে কিন্তু একটা বিষয়ের উপরে ৫ টা পোষ্ট করা যে কি পরিমান শক্ত কাজ তা যারা করে তারাই ভাল বলতে পারবে। তার উপরে এমন সেন্সেটিভ বিষয়ে লিখছেন যেখানে অনুবাদের একটা ভুল ও মারাত্বক আকারে দেখা যেতে পারে। তবুও শেষ ভালো যার সব ভালো তার। আপনার সিরিজের সুন্দর সমাপ্তির জন্য আবার ও ধন্যবাদ। তবে আপনাকে এমন নতুন কিছু নিয়ে আরো লিখতে দেখব আশা করছি। ধন্যবাদ
@পদ্মফুল,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
একেবারে সত্যি কথা। ইসলামের সমালোচনা করে লেখে সহজ নয়–আবার বিপদজনকও বটে।
অসম্ভব কষ্ট করে এমন একটা লেখা শেষ করেছেন কাশেম ভাই, ধন্যবাদ সেজন্য। পুরো সিরিজটা এবার ই বুক করে সংরক্ষিত করে রাখা গেলে একটা কাজের কাজ হবে।
@কাজী রহমান,
আপনি যে কষ্ট করে ধৈর্য্য ধরে পড়েছেন, সেই জন্য ধন্যবাদ।
ভাল কথা। এটা মুক্ত-মনা কর্তৃপক্ষের চিন্তা-ভাবনার উপর নির্ভর করছে। আমার করার কিছু নাই। আমি রচনা শেষ করেছি–আপাততঃ তাই থাকবে।
@কাজী রহমান,
একমত। দারুন এবং খুব দরকারি একটি সিরিজ। এই ব্যাপারে মুক্ত-মনা কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
একমত। শ্রমসাধ্য ও তথ্যবহুল এসকল লেখাগুলো থেকে পাঠকরা অনেক উপকৃত হবেন। আশা করি মুক্তমনা কর্তৃপক্ষ পাঠকদের সুবিধার্থে এ কাজটি করবেন।
@গোলাপ,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ–কষ্ট করে সব গুলো পর্ব্ব মনযোগ দিয়ে পড়েছেন।
কাশেম ভাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। (F) (W) (F)
সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলছি, মুক্তমনা হয়তো এই সিরিজটির ই-বুক তৈরি করবে, কিন্তু অতক্ষন অপেক্ষা করার ধৈয্য কোথায় ? আমি নিজেই বানিয়ে ফেলেছি :)) শুধু এইটা নয়, লেখকের অকেনগুলো পোষ্টই আ
আমার তো মনে হয় বিষয়টা অন্য। যুবক বয়েসে মোহাম্মদ উম্মে হানির প্রেমে পড়েছিল ঠিকই কিন্তু মক্কা বিজয়ের সময় তার বয়স ছিল ৬০ আর উম্মে হানিও আর তরুণী ছিল না। যদি খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন, মোহাম্মদ মদিণার জীবনে একটাও বয়স্ক নারী বিবাহ করেন নি। অধিকাংশই ছিল কম বয়সী তরুনী। তাই সম্ভবত মক্কা বিজয়ের পর মোহাম্মদের কোন খায়েশ ছিল না প্রায় বৃদ্ধা উম্মে হানিকে ঘরে তোলার। আর তাছাড়া এর আগেই তো আল্লাহ তাকে বিয়ে করতে নিষেধ করেছে। উম্মে হানির সাথে ফুর্তি করা যেত একমাত্র তাকে দাসী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে, কারণ দাসীর সাথে যৌনফুর্তি করার অনুমোদন দিয়েছিল আল্লাহ। আমার মনে হয়, এ ধরণের কোন সামাজিক মর্যাদা তার কাছে মান হানিকর মনে হয়। যে কারণেই উম্মে হানি একা একাই থাকে, দাসী বাদী হিসাবে মোহাম্মদের হেরেমে ওঠেনি। মনে রাখতে হবে , এক সময় এই উম্মে হানির বাপের বাড়ীতেই মোহাম্মদ কাজের ছেলের মত থাকত। তবে মনে হয় সময় সুযোগ বুঝে যদি মোহাম্মদ চাইত তাহলে তার সাথে ফুর্তি করত। জীবনের প্রথম প্রেম বলে কথা , তাই উম্মে হানির অনুরোধ ফেলতে পারে নি মোহাম্মদ এতে বিস্ময়ের কিছু নেই।
ধণ্যবাদ আপনার তথ্যবহুল নিবন্ধের জন্য ।
@ভবঘুরে,
আপনার সাথে একমত। তবে আমি যা বলতে চেয়েছি তা হচ্ছে—নবী যথা সময়ে উম হানীকে (অর্থাৎ উম হানীর যৌবনাবস্থায়) বিবাহের প্রসঙ্গে। হয়ত আমার দুর্বল বাঙলার জন্য তা পরিষ্কার হয় নি। বৃদ্ধা উম হানীকে নবী আর বিবাহের উপযোগী মনে করেন নাই–সে টা পরিষ্কার। কারণ নবী চাইলে মক্কা বিজয়ের পর, উম হানীর ইসলাম গ্রহণের পর ইচ্ছা করলেই উম হানীকে বিবাহ করে মদীনায় তাঁর হেরেমে নিতে পারতেন। কারণ উম হানীর ইসলাম গ্রহণের সাথে সাথেই তাঁর স্বামী হুবায়রার সাথে তালাক হয়ে যায়–এইটাই ইসলামী নিয়ম।
কিন্তু এত সহজ হওয়া সত্ত্বেও, কেন সুযোগ পেয়েও নবী উম হানীকে বিবাহ করলেন না সেটা আমারও প্রশ্ন। আপনি যে কারণ দেখিয়েছেন অন্যান্য কারণের সাথে তাও অন্যতম কারণ হতে পারে।
অনেক ধন্যবাদ কাশেম ভাইয়া, আপনার পরিশ্রম সাধ্য অসাধারন তথ্যবহুল লেখাটার জন্য। (Y)
এখন বেচারা নবীর জন্য আমার খানিকটা মায়াই লাগছে, মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে।
কিন্তু আমার একটাই প্রশ্ন যে, উনি উম্মি হানি কে কতটা ভালোবাসতেন যে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে, এত ভীষণ প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে উঠতে হবে। এটা কেমন প্রেম তা আমার জানা নেই, যদিও আমরা প্রেম, ভালবাসা এগুলোকে আবেগ দিয়েই বিচার করি, কিন্তু তবু উনি ভাল লোক হলে তো এই ধরনের কাজ করা তার উচিত হয় নাই।আর উম হানিও ভালই, স্বামী থাক্া কালীন সময়ে পরকিয়া। অবশ্য আরব্ পুরুষ গুলো যেমন বহুগামি, তাতে আমি উম হানির সমর্থক, কারন এই অধিকার সমাজে থাকলে, নারী পুরুষ দুজনেরই থাকা উচিত। কিন্তু মহাম্মদের মধ্যে ভাল যদি কিছুমাত্র জিনিস থাক্ত, উনি তবে হয় এটিকে, বন্ধ করতে পারতেন, না হয় অন্তত শুধু পুরুষকেই নতুন নিয়মের আওতায় এনে,একচ্ছত্র আধিপত্য দিতেন না, যৌন জীবন, বা আর সব ক্ষেত্রে।অবশ্য দিলে তো আর উনার নিজের ভোগবিলাস হত না। কারন অন্যের স্ত্রী কে সম্ভোগ করা যেমন মজার, নিজের স্ত্রীকে, অন্যের সাথে দেখাটা পুরুষ প্রভুর জন্য তেমনি কষ্টের। হায়রে মানবতা। কাজেই ধরি মাছ না ছুঁই পানি। এদিকে আমার ১৩ স্ত্রী আমারি থাকল, আর প্রেমিকা উম হানি থাকল উপুরি পাওনা হিসাবে। অন্য কেউ সেই অধিকার পাক বা না পাক, যেহেতু আমি নবি, তাই আমার সাত খুন মাফ।
@অচেনা,
মোহাম্মদ মূলত: হিটলার এর প্রকৃতির একজন লোক ছিল। যদি সত্যি সত্যি আপনি তার জীবনী গ্রন্থ, হাদিস আর কোরান ভাল মতো পড়ে থাকেন আর আপনার যদি একটা নিরপেক্ষ চোখ থাকে তাহলে এটা বোঝা কঠিন নয়। এখন হিটলারকে যদি আপনার ভাল মনে হয় , তাহলে মোহাম্মদ ও একজন ভাল লোক।
@ভবঘুরে,
:-O ভাই শুনেন, আমার মনে হয় আমি আপনাকে বুঝাতে ব্যর্থ হচ্ছি আমার বক্তব্য!! আমার ত কোন দিন মুহাম্মদ কে ভাল মানুষ বলে মনে হয় নাই। আপনার লেখাগুলর আমি খুব বড় একজন ভক্ত তা আপনি জানেন না হয়ত। আমি নিজে মুহাম্মদ কে যতটা অপছন্দ করি, তা মনে হয় না আর কেউ করতে পারবে (মনে হয় আপনি নিজেও অতটা অপছন্দ মুহাম্মদ কে করেন না, যত টা আমি করি। পার্থক্য এক্টাই যে আমি ভাল লেখক না আর তাই আপনাদের মত লিখতে পারি না!) ।ঐ লোকটিকে( মুহাম্মদ কে ) আমি নিউ টেস্টামেন্ট এ বর্ণিত ডেভিল বলেই মনে করি!!
আমার মনে হয় যে আপনি আমাকে আগেও আপনার একটি মন্তব্য ভুল বুঝেছিলেন।কিন্তু আসলে মহাম্মদ কে আমি একটা নিচু শ্রেণীর দুর্বৃত্ত ছাড়া আর কিছুই মনে করিনা ভাই!
আমি বরং হিটলার কে মুহাম্মদ এর থেকে ভাল লোক বলেই মনে করি, কারন হিটলারের কাজ ছিল শুধু অন্ধ ইহুদি বিদ্বেষ আর মুহাম্মদ তো শিখিয়েছে গোটা মানব সম্প্রদায় কে ঘৃণা করতে!!
যাক ভাল থাকবেন!!!!
@অচেনা,
হাঁ, তা স্বভাবিক।আপনার মনে প্রচুর মানবিক বোধ আছে।
তবে মুহাম্মদের মাঝে কি কোন মানবিক অনুভুতি ছিল? সেইটা আমার কাছে বিশাল প্রশ্ন। নিজের মাতা এবং পিতৃব্যের প্রতিও তাঁর তেমন দরদ ছিল বলে মনে হয় না। এই রকম পাষাণ হৃদয়, এবং নিষ্ঠুর চরিত্র বিশ্ব ইতিহাসে নিতান্তই বিরল।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। এই জন্যেই ত আমি এক কাঠখড়ি পুড়িয়ে এই রচনা লিখলাম। জানিনা, এই রচনায় মুহাম্মদের চরিত্রের কোন দিকটা প্রকাশিত হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে মুহাম্মদের নির্দয়তা এবং প্রতিহিংশার কোন জুড়ি নাই।
ধন্যবাদ কাশেম ভাই সাংঘাতিক পরিশ্রম করে প্রত্যেকটা পোষ্ট যথাযত ভাবে উপস্থাপনের জন্য। এ সমস্ত পোষ্ট লেখা যে কত কষ্টের তা এক মাত্র পোষ্ট লেখকরাই বুঝতে পারে। প্রত্যেক পর্বের মত এ পর্বও যথেষ্ট তথ্য বহুল হয়েছে।
আপনার উপসংহার আমি পড়তে পারছি না ঘর ঘর দেখায়। উপরের লেখা ঠিক আছে। শুধু আমার কম্পুতে এ সমস্যা দেখা দিচ্ছে কিনা তা অবশ্য আমি নিশ্চিত নই। একটু দেখবেন কি?
@রাজেশ তালুকদার,
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ধৈর্য্য ধরে এই রচনা পরেছেন।
আমার কম্পুটারে আমি সব কিছুই ঠিক মত পড়তে পারছি। আমি অন্য আর একটা কম্পুটারে দেখলাম। সেটাতেও উপসংহার সহ সব কিছুই পড়া যাচ্ছে।
দেখুন আপনার কম্পুটারে কোন গোলযোগ আছে কি না।