[এই লেখাটা গত ২৬ মে ২০১১, ফেসবুক নোটে শেয়ার করেছিলাম। এছাড়া প্রথমআলো ব্লগেও প্রকাশ করেছিলাম। অনেকে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। অমিত হিল মুক্তমনাতে পাহাড়ের রাজনৈতিক দলগুলোর ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত নিয়ে একটা লেখা দিয়েছিলেন। সেই আলোচনার সাথে আরো কিছু বিষয় যোগ করার উদ্দেশ্যে মুক্তমনা’র বন্ধুদের উদ্দেশ্যে আমার এ লেখাটা এখানে আবারও পত্রস্থ করলাম। ]
রাঙামাটির বরকল উপজেলাধীন সুবলং ইউনিয়নে জেএসএস-র সশস্ত্র গ্রুপের হামলায় ইউপিডিএফ-এর চার কর্মী নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে ফেসবুক গ্রুপগুলোতে উত্তপ্ত আলোচনা চলছে।উভয় পার্টির প্রতি সাধারণ মানুষের তীব্র ঘৃণা-ক্ষোভ-নিন্দা ঝরে পড়ছে ফেসবুকের দেওয়ালে দেওয়ালে।কেউ কেউ পশুর সাথে তুলনা করে গালি দিচ্ছে উভয় পার্টিকে।এসব ঘৃণা ক্ষোভ দেখে স্পষ্টভাবে অনুধাবন করা যায় সাধারণ মানুষ বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম কতটা জেএসএস-ইউপিডিএফ-এর প্রতি ক্ষুব্ধ।তীব্র ঘৃণা-ক্ষোভ-নিন্দার মাঝেও মোটামুটিভাবে সবাই একটা জায়গায় একমত – জুম্মজনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গেলে অবশ্যই উভয় পার্টিকে এক হতে হবে।এমনকি জেএসএস-র তরুণ কর্মী বা জেএসএস ঘরানার ফেসবুকবন্ধুদেরও উভয় পার্টির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই।তবে কিছু কিছু তরুণ জেএসএস কর্মী ইউপিডিএফ-র সাথে রাজনৈতিক সংঘাতের জন্যে প্রবীণ নেতাদের একগুঁয়েমীকে দায়ী করছেন। অন্যদিকে, ইউপিডিএফ-র কর্মীরা তো অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন বৃহত্তর ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের স্বার্থে তারা জেএসএস-র সাথে সমঝোতা করতে প্রস্তুত। এককথায়, অনেক জেএসএস-ইউপিডিএফ কর্মীসহ সাধারণ জুম্মজনগণ পাহাড়ের দুই রাজনৈতিক দলের ঐক্যের ব্যাপারে সোচ্চার এবং প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মাধ্যমে বিশেষকরে ফেসবুক ও ব্লগের মাধ্যমে তাদের কাছে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আকুল আবেদন জানিয়ে যাচ্ছেন।কিন্তু এত আবেদন নিবেদন সত্ত্বেও উভয় দল বিভিন্ন ছলছুতোয় নিজেদের মধ্যে মারামারি ও খুনোখুনি এখনো বন্ধ করেনি।স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, উভয় দল কী জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল?রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংঘাত বন্ধে তারা সত্যিই কী আন্তরিক?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে বিস্তারিত বিশ্লেষণে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।সহজভাবে বললে বলতে হয়, উভয় দলই জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়।ওরা যদি সত্যি সত্যিই জনমত ও জনগণের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে থাকতো তাহলে তারা এতদিন আন্তরিকভাবে চেষ্টা করতো রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংঘাত বন্ধের জন্যে।কিন্তু তা করার জন্যে কোন কার্যকর পদক্ষেপ এখনো পর্যন্ত চোখে পড়েনি (যদিও ইউপিডিএফ মাঝে মাঝে জেএসএসকে ঐক্যের আহবান জানিয়েছিলো)।এই দুই দলের মধ্যেকার সংঘাতের কারণে কত লোকের জীবন হানি ঘটেছে, কত লোকের সংসার তছনছ হয়ে গেছে, কত মায়ের অশ্রু ঝরেছে, কত শিশু অনাথ হয়েছে, অর্কির মত নিরীহ শিশুকে নির্মমভাবে গুলিবিদ্ধ হয়ে মরতে হয়েছে – এসব জঘন্যতম ঘটনার জন্যে কোন দলই কখনো জনগণের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেনি।দুঃখ প্রকাশ তো দূরের কথা, নির্লজ্জভাবে দুই দল বরাবরই এসব ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে আসছে।দু’দলই দাবী করে আসছে তাদের কোন সশস্ত্র দল নেই। যদি উভয় দলের কোন সশস্ত্র দল না থাকে, তাহলে কারা অস্ত্র নিয়ে মারামারি করছে? দুঃখের বিষয়, দু’দলই পার্টিগতভাবে “কোন সশস্ত্র দল নেই” এরকম কথাবার্তা বলে সহিংসতা ও অপরাধ প্রবণতাকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে।এ প্রেক্ষিতে বলা যায়, দুই উদাসীন দলের মাধ্যমে জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে সে সম্ভাবনা খুবই কম। তারপরেও সাধারণ মানুষের একান্ত চাওয়া হলো জেএসএস-ইউপিডিএফ ঐক্যবদ্ধ হোক।জনগণের এ চাওয়ার প্রেক্ষিতে আরো একটি প্রশ্ন এসে যায় – জেএসএস-ইউপিডিএফ কী কখনো এক হতে পারবে? হলে কীভাবে? নিচে বিশ্লেষণ করে দেখা যাক তাদের মধ্যে ঐক্য সম্ভব হতে পারে কি না।
অধিকারের লাগি জুম্মজনগণ চাহে ঐক্য, ঐক্য মিলে নাঃ কেন মিলে না?
রবি ঠাকুরের গানের সুর স্মরণ করতে হয়, “এরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মিলে না/শুধু সুখ চলে যায়”। ঠিক তেমনিভাবে বলতে হয়, “এরা (জুম্ম জনগণ) অধিকারের লাগি চাহে ঐক্য, ঐক্য মিলে না।শুধু সুখ চলে যায়”।অন্যদের বেলায় জানি না, তবে আমার বেলায় পার্বত্য চট্টগ্রামের একজন দুর্ভাগা নাগরিক হিসেবে সুখহীন মনে জেএসএস-ইউপিডিএফ-এর মধ্যেকার ঐক্য হবে সে ব্যাপারে আমি কখনো আশাবাদী হতে পারি না।আশাবাদী হতে না পারার কিছু কারণও রয়েছে।যেমন,
১) ঐক্যের ন্যূনতম শর্ত হলো পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও বিশ্বাস।দুই দলের, সহজ করে বললে জেএসএস প্রধান সন্তু লারমা ও ইউপিডিএফ প্রধান প্রসিত খীসার মধ্যে এ দু’টো জিনিস চরমভাবে অনুপস্থিত।এছাড়া বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতিতে ইউপিডিএফ একটি রাজনৈতিক বাস্তবতা হলেও সন্তু লারমা সে বাস্তবতা মানতে রাজী নন। অর্থাৎ, ইউপিডিএফ তো দূরের কথা সন্তু লারমা জেএসএস বাদে অন্য কোন পাহাড়ী রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব মানেন না।যার অস্তিত্ব তিনি মানেন না, তার সাথে কীভাবে জেএসএস-এর ঐক্য হবে?
অন্যদিকে, জেএসএস-র সাথে ঐক্যের আহবান জানালেও ইউপিডিএফ-এর আহবান খুবই আন্তরিক বলে মনে হয় না।কেননা, তারা একদিকে জেএসএস-এর প্রতি ঐক্যের আহবান জানান, অন্যদিকে তারা তাদের মুখপত্র ও বিভিন্ন লিফলেট-বিবৃতির মাধ্যমে জেএসএস-এর প্রধান সন্তু লারমাকে “গণদুশমন”, “সরকারের দালাল” ইত্যাদি অভিধায় অভিহিত করে অসৌজন্যমূলক ভাষায় গালিগালাজ করে থাকেন। সন্তু লারমার গাড়ী বহরে ইটপালকেল নিক্ষেপ করে।“গণদুশমন”-এর সাথে ইউপিডিএফ-এর ঐক্য কীভাবে সম্ভব? এরকম শ্রদ্ধাহীন-ভালবাসাহীন পরিবেশে কী দুই পার্টির মধ্যে কোলাকুলি হবে?
(২) জেএসএস ও ইউপিডিএফ প্রধানগণের ব্যক্তিগত অহংবোধ ও স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতাও বর্তমান সমস্যার অন্যতম কারণ।ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক কর্মী না হলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সাথে আলাপক্রমে যতটুকু জানতে পেরেছিলাম সেটা হলো সরকারের সাথে সংলাপ চলার সময় তৎকালীন পাহাড়ী গণপরিষদের নেতা ও বর্তমান ইউপিডিএফ প্রধান প্রসিত খীসা সংলাপে অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। এর পেছনে প্রসিতের যুক্তি ছিলো, আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকার সময় জেএসএস পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে পারেনি। সেই জায়গায় পাহাড়ী ছাত্রপরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পাহাড়ী গণপরিষদ এ তিন সংগঠন মিলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলো। কাজেই সংলাপে এই তিন সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব থাকা চাই। সেই হিসেবে প্রসিত খীসা সরকারের সাথে সংলাপ প্রক্রিয়ায় প্রতিনিধিত্ব করতে চেয়েছিলেন।কিন্তু জেএসএস নেতৃত্ব তার এ চাওয়াকে ভিন্ন চোখে দেখেছিলেন।যার কারণে তারা প্রসিতের প্রস্তাবে রাজী হননি।এতে প্রসিত খীসা অপমানিত বোধ করেন।সন্তু বলেন, “প্রসিত, তুমি কে?” আর প্রসিত বলেন, “আমি কম কীসের?” এই অহংবোধের ফলশ্রুতিতে সংলাপের শুরু থেকেই পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের ধুয়া তুলে জেএসএস-এর নেতৃত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন প্রসিত।
অন্যদিকে, সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসও প্রসিতদের পুরোপুরি উপেক্ষা করে সংলাপ চালিয়ে যান এবং অবশেষে ’৯৭ সালে পার্বত্যচুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।চুক্তি স্বাক্ষরের পর দিনই ঢাকার রাজপথে প্রসিতরা চুক্তির বিরোধিতা করে চুক্তির কপিতে আগুন ধরিয়ে দেন। এছাড়া যেদিন সন্তু লারমা অস্ত্র জমা দেন, সেদিন প্রসিতরা সন্তু লারমাদের কালো পতাকা প্রদর্শন করেন।এভাবে দু’জনের ব্যক্তিগত অহংবোধ ও অপ্রতিরোধ্য জেদাজেদি ক্রমে ক্রমে চরম সংঘাতের দিকে এগিয়ে যায়। সেই সংঘাতের চরমরূপ হলো “শান্তিচুক্তির পক্ষ” ও “শান্তিচুক্তির বিপক্ষ” এবং তাদের মধ্যে খুনোখুনি ও অস্ত্রের ঝনঝনানি। তাই, সন্তু ও প্রসিতের ব্যক্তিগত অহংবোধ ও আহতমনের বেদনাবোধের অবসান না হলে জেএসএস-ইউপিডিএফ-এর ঐক্য প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা আছে কী?
(৩) একটা চাকমা প্রবাদ আছে, এক জঙ্গলে দুই বাঘ থাকতে পারে না।সেই চাকমা সমাজের দুই বাঘ সন্তু আর প্রসিত এক সঙ্গে বসবাস করতে পারবেন এমন সম্ভাবনা খুবই কম।এ প্রসঙ্গে বাস্তব উদাহরণ টানতে হয়, প্রসিত বাঘকে পাহাড়ের রাজনীতির জঙ্গল থেকে তাড়ানোর জন্যে সন্তু বাঘ সরকারের কাছে বারবার দাবী জানাচ্ছেন সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধ করা হোক।অন্যদিকে, প্রসিত বাঘের দল ইউপিডিএফও সন্তু লারমাকে “দন্তহীন বুড়োবাঘ”, “গণদুশমন”, “জাতীয় বেঈমান”, “সরকারের দালাল” ইত্যাদি উপাধি দিয়ে তাকে নিশ্চিহ্ন করার আহবান জানিয়ে আসছে।মাঝে মাঝে সন্তু বাঘের গাড়ী বহরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে নিজেদের পেশিশক্তির পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়।
প্রসঙ্গক্রমে আরো একটি বিষয় উল্লেখ না করে পারি না। দুই বাঘই বিশ্বাস করে বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস।সেই ক্ষমতা সুসংহত করতে দু’জনই বন্দুকের নল ব্যবহারের পক্ষে।যেহেতু দুই বাঘই ‘একাদাজ্জে’ (একক কর্তৃত্বপরায়ন), সেহেতু বন্দুকের নলের মাধ্যমে কে ‘একাদাজ্জে’ থাকতে চান না? ‘একাদাজ্জে’ থাকার জন্যে দু’জনেরই বন্দুকের নল খুবই প্রিয়।
(৪) জুম্মদের রাজনৈতিক ইতিহাসে ঐক্যের নজির নেই।দূর অতীতে না গিয়ে জেএসএস-এর “লাম্বা-বাদি”র ইতিহাসটা দেখলেই চলে। জেএসএস “লাম্বা-বাদি”তে বিভক্ত হওয়ার পর যখন এক হতে চাইলো তখন তার কী পরিণতি হয়েছিলো সেটা আমাদের সবার জানা।সেখানে আমরা হারিয়েছিলাম জুম্মজাতির অগ্রদূত এম.এন লারমাকে।এই নজিরবিহীন জুম্ম ইতিহাসে দুই ‘একাদাজ্জে’ বাঘ ঐক্যের নজির সৃষ্টি করতে পারবেন কী? তবে আমার বড়ই সন্দেহ হয়।
জেএসএস-ইউপিডিএফ ঐক্য কখনো কী সম্ভব হবে?
উপরে কিছু নেতিবাচক দিকের কথা বললাম। আমাদের সমাজে ও রাজনীতিতে আরো অনেক নেতিবাচক দিক আছে। কেবল জেএসএস-ইউপিডিএফ-এর চোখ দিয়ে নয়, সমাজ-মনস্তাত্বিক, দার্শনিক ও ধর্মীয় লেন্স দিয়েও সেসব নেতিবাচক দিকগুলোর বিস্তারিত বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে।তবে এই জাতীয় দুর্যোগ মুহুর্তে এসব নেতিবাচক কথাবার্তা শুনে অনেকে হয়ত প্রশ্ন করতে পারেন, তাহলে কী জেএসএস-ইউপিডিএফ-এর মধ্যে কখনো ঐক্য সম্ভব হবে না?
এ প্রশ্নের সহজ সরল উত্তর নেই। উত্তর পেতে হলে ঐক্যের ধরনটা কী হতে পারে সে ব্যাপারে আগে স্পষ্ট হতে হবে।জেএসএস্-ইউপিডিএফ-এর ঐক্যের ব্যাপারে সবাই এক রা হলেও ফেসবুকবন্ধু ও ব্লগারদের আলোচনা থেকে এ ব্যাপারে কোন স্পষ্ট ধারনা পাইনি।তবে রাধামন ধনপুদি (Radhamon Donpudi)নামে জনৈক ফেসবুক বন্ধু জুম্ম ঐক্যের ব্যাপারে আবেগময়ী নোট দিয়েছিলেন কিছুদিন আগে।স্বাভাবিকভাবে তার লেখাতে আবেগ ছিলো।কিন্তু কীভাবে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সে ব্যাপারে কোন দিক নির্দেশনা খুঁজে পাইনি। শান্তিচুক্তির প্রতি শোকগাথা লিখে রাধামন বলেছিলেন, যারা “পক্ষে” ছিলেন আর যারা “বিপক্ষে” ছিলেন তাদের কারোর জন্যেই চুক্তিটা কোন সুফল বয়ে আনতে পারেনি ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি ও খুনোখুনি ছাড়া।তাই তিনি চুক্তির “পক্ষ” ও “বিপক্ষ” কাউকে দোষারোপ না করে চুক্তিটাকে ইতিহাসের এক বাঁকে রেখে দিয়ে নতুন করে শুরু করার আহবান জানিয়েছিলেন। অত্যন্ত যৌক্তিক আহবান। কিন্তু ঐক্য কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে সেটা এখনো বড় প্রশ্ন।
তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, “ঐক্য” বলতে যদি সবাই জেএসএস্-ইউপিডিএফ এই দু’দলের একটা সংগঠনে একীভূত হওয়াকে বুঝে থাকেন, তাহলে সেই ঐক্য কখনো সম্ভব হবে না।সেটা অবাস্তব ধারনাও বটে।কেননা, যারা অস্ত্র হাতে নিয়ে পরস্পরকে ধাওয়া-ধাওয়ি করেছিলেন এবং গুলি ছুঁড়েছিলেন, তারা ভবিষ্যতে পরস্পরের সাথে শ্রদ্ধায়-ভালবাসায়-বিশ্বাসে কোলাকুলি করবেন সেই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, জুম্মজাতির ইতিহাসে বিরলও বটে।এ অবস্থায় তাদের মধ্যে ঐক্য কোন উপায়ে হতে পারে?
আমার সাধারণ জ্ঞান বলে, জেএসএস্-ইউপিডিএফ একটি সংগঠনে একীভূত না হলেও তাদের মধ্যে ঐক্য সম্ভব হতে পারে যদি নিম্নে উল্লেখিত শর্তাবলী পূরণ করা সম্ভব হয়।
এক, এত মারামারির পরও দুই দলের দুই ‘একাদাজ্জে’ বাঘ সন্তু লারমা ও প্রসিত খীসার মনের মধ্যে জুম্মজাতির ঐক্যের ব্যাপারে বিবেকের তাড়নাবোধ বা উপলব্দি হয়েছে কী না। যদি না হয়, তাহলে তাদের মধ্যে সেই তাড়নাবোধ বা উপলব্দি সৃষ্টি করতে হবে।
দুই, উভয়কে পরস্পরের অস্তিত্বকে স্বীকার করতে হবে ও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে যার যার কাজ করতে হবে।
তিন, দলীয়ভাবে জুম্মর বিরুদ্ধে জুম্ম লেলিয়ে দেওয়া – এরকম বল প্রয়োগের নীতি থেকে তাদের সরে আসতে হবে।অর্থাৎ দলীয়ভাবে পরস্পরের প্রতি অনাক্রম নীতি কঠিনভাবে অনুসরণ করতে হবে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, জেএসএস-ইউপিডিএফ তাদের ঐক্য প্রতিষ্ঠায় এ তিনটি শর্ত পুরণে কী আগ্রহী?
জেএসএস-ইউপিডিএফ ঐক্য কোন পথে হতে পারে?
আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নই, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তত্ত্ব দিয়ে জেএসএস-ইউপিডিএফ ঐক্যের সম্ভাবনা আলোচনা করতাম। তবে অধম কাঁচা নাগরিক হিসেবে তাদের ঐক্যের ব্যাপারে দু’টো উপায় দেখতে পাই। একটা হলো শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়া, আর অন্যটা বেদনাদায়ক প্রক্রিয়া। এবার এ দু’টো প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করতে চাই।
শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় ঐক্যঃ এ প্রক্রিয়ায় নিজেদের মধ্যে ঐক্য বা সহাবস্থান বজায় রাখার জন্যে আপাতত: দু’টো উপায় খোলা আছে। একটা হলো, যার যার সংগঠনের অস্তিত্ব বজায় রেখে কর্মসূচী ভিত্তিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা; আর অন্যটি হলো অহিংসা প্রক্রিয়ার মাধমে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা।
১) কর্মসূচী ভিত্তিক ঐক্য
জেএসএস-ইউপিডিএফ-র দাবীসমূহ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তাদের মধ্যে মৌলিক কোন পার্থক্য নেই।শুধু পথের ভিন্নতা রয়েছে। প্রথমোক্ত দল মনে করছে, “পার্বত্য চুক্তি” বাস্তবায়নের মাধ্যমে জুম্ম জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা; আর অন্যদল মনে করছে, “পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের” মাধ্যমে তা করতে হবে।দু’দল দু’টো পরিভাষায় কথা বললেও জুম্ম জনগণের মৌলিক দাবীসমূহ একই। যেমন, (১) পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্মজনগণের জন্যে সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ স্বশাসন ব্যবস্থার কায়েম করা; (২)জুম্মজনগণের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করা; (৩) সেটেলার বাঙালিদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করা এবং তাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে প্রত্যাহার করা; (৪) সেনাশাসন প্রত্যাহার করা; এবং (৫)আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।উভয় দলের রাজনৈতিক সাহিত্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এগুলোই হলো দু’দলেরই মৌলিক দাবী।তাহলে দু’দল কেন “পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন” ও “পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের” নামে শুধু শুধু মারামারি করছে?নিজেদের মধ্যে হানাহানি না করে, শক্তিক্ষয় না করে দু’দলই এসব দাবীর সাথে সংগতি রেখে নিজ নিজ দলের রাজনৈতিক কর্মসূচী নির্ধারণ করতে পারে।
এখানে প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করতে হয়, ইউপিডিএফ ন্যূনতম কর্মসূচীর ভিত্তিতে জেএসএস-এর সাথে ঐক্যের আহবান জানিয়েছিল।সর্বশেষ, ইউপিডিএফ তার আগের অবস্থান থেকে সরে এসে জেএসএসকে চুক্তি বাস্তবায়নে সহযোগিতা দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলো।ইউপিডিএফ-এর এসব ঘোষণা কতটুকু আন্তরিকতাপূর্ণ ছিলো সেটা বিতর্কের বিষয়। তবে ইউপিডিএফ-এর এসব ঘোষণা সত্বেও জেএসএসকে উদাসীন থাকতে দেখা গেছে, যা জুম্মজাতির জন্যে অত্যন্ত বেদনাদায়ক।এখানে জেএসএস-এর একধরনের অহংবোধ কাজ করছে বলে মনে হয়।
এটাও জুম্মজাতির জন্যে চরম দুর্ভাগ্য, ইউপিডিএফ-এর অস্তিত্বকে জেএসএস স্বীকার করে না।জেএসএস-এর “মনোকালচার”(জেএসএসই সব) নীতি এই অনৈক্যের পেছনে অনেকাংশে দায়ী।তবে জেএসএস ইউপিডিএফকে রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বীকার করুক বা না করুক, ইউপিডিএফ এখন পার্বত্য রাজনীতিতে একটি বাস্তবতা।পার্বত্য চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষ নিয়ে যদি জেএসএস আন্দোলন করতে চায় তাহলে অবশ্যই ইউপিডিএফ-এর বাস্তবতাকে তার উপেক্ষা করার কোন উপায় নেই।
আর এটাও সত্য, একপাক্ষিকভাবে কখনো ঐক্য বা সমঝোতা সম্ভব নয়।একদিকে জেএসএস-এর “এক বনে দুই বাঘ থাকতে পারে না”-এরকম একরোখা মানসিকতা, অন্যদিকে ইউপিডিএফ-র সমঝোতা বা ঐক্যের আহবান – এই দু’য়ের মধ্যে কী ঐক্য প্রতিষ্ঠা সম্ভব? এই রাজনৈতিক ধাঁধার উত্তর দু’দলকে বের করতে হবে।তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা মারামারি-খুনোখুনি চালিয়ে যাবে নাকি ঐক্যের পথ খুঁজে বের করবে; তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে মারামারি-খুনোখুনির জন্যে পরস্পরকে দোষারোপ করতে থাকবে নাকি নিজেরা নিজেদের সমাধানের পথ শান্তিপূর্ণ উপায়ে খুঁজবেন।
২) রাজনৈতিক সহিংসতার পথে নয়, অহিংসার পথে ঐক্য খুঁজতে হবে
জেএসএস-ইউপিডিএফ পরস্পরের সাথে মারামারি করে অনেক নেতা-কর্মীকে হারিয়েছে (প্রথম আলোর সূত্রমতে, ৭০০-এর অধিক নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন)।অসংখ্য লোককে অপহরণ করা হয়েছে, জিম্মি করে চাঁদা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া অস্ত্র কেনা ও নিজেদের পার্টির লোকজনের খাওয়া-পরা নিশ্চিত করতে সাধারণ জনগণের উপর চাঁদার জগদ্দল পাথর চাপানো হচ্ছে। অস্ত্রকেনা ও জেএসএস-ইউপিডিএফ চালানোর জন্যে সাধারণ জনগণ আর চাঁদার বোঝা বইতে পারে না। দুই দলের (এখন হয়েছে তিন দল) সহিংস রাজনীতির কারণে জনগণ যেমন ধনে-জনে চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছে, ঠিক তেমনি মনস্তাত্তিকভাবেও জুম্মসমাজ বিশেষ করে যুব সমাজ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে।যুবসমাজের এ হতাশার ভবিষ্যত পরিণতি কী হতে পারে রাজনৈতিক দল হিসেবে জেএসএস-ইউপিডিএফকে এখনই ভাবতে হবে।তাই জেএসএস-ইউপিডিএফের কাছে উদাত্ত আহবান সহিংসতার পথে নয়, অহিংসার পথে সমাধান আনতে আপনাদের আন্তরিক হতে হবে।
অহিংসা আন্দোলনের অনেক সফল উদাহরণ আমাদের সামনে আছে। বৌদ্ধধর্মের প্রবর্তক কেবল মহামতি গৌতম বুদ্ধ নন, আরো অনেক উজ্জ্বল কিংবদন্তী ব্যক্তির দৃষ্টান্ত আমাদের অনুপ্রাণিত করতে পারে।দূরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, আমাদের কাছের মানুষ মহাত্মা গান্ধী, অংসান সূচি ও দালাইলামার দৃষ্টান্ত দেখেও আমাদের নেতারা শিক্ষা নিতে পারেন। সাদাসিধে কথায়, অহিংসা চর্চার জন্যে মনের বিরুদ্ধে দু’দলের একীভূত হওয়ার প্রয়োজন নেই, একসাথে যৌথ কর্মসূচী দেওয়ার প্রয়োজন নেই। দু’দলের কাছে সাধারণ জনগণের প্রত্যাশা দু’পার্টিই নিজ নিজ দলের মধ্যে অহিংসার চর্চা করুক।অহিংসা চর্চার জন্যে কঠিন কিছু করতে হবে না। কেবল এ তিনটি নীতি পালন করতে হলো: ১)রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা জনগণের প্রতি নিজেদের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন থাকবেন; (২) একে অপরকে মারার বা ক্ষতি করার অভিপ্রায় থেকে বিরত থাকবেন এবং নিজ নিজ দলের কর্মীদেরও মারামারি থেকে বিরত থাকার শিক্ষা দেবেন; (৩)সব ধরনের সহিংসতা বন্ধে দলীয়ভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকবেন।এ ত্রিশরণ পালনের জন্যে কেবল প্রয়োজন দু’দলের রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
আরো একটা কথা এখানে উল্লেখ করতে হয়।দু’দলই সাধারণ জনগণের কাছে রাজনৈতিক আহবান জানায় তাদের মধ্যেকার মারামারি বন্ধে উদ্যোগ নিতে এবং সোচ্চার হতে।জনগণ নয়, দু’দলের মধ্যেকার এই মারামারির সমাধান দু’দলকেই করতে হবে।এর সমাধানসূত্র বৌদ্ধধর্মের ধম্মপদে পাওয়া যাবে। আর সেই সমাধান নিজ নিজ দলের মধ্যে আছে।দু’দলের নেতা-কর্মীরা সংযত ও সহনশীল হলে মারামারি আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যায়। ধম্মপদে বলা হয়েছে,
“The others do not understand that we should restrain ourselves here.
Those who understand that, therefore appease their quarrels.” (DhP 6)
(অনেকে জানেন না নিজেদেরই সহনশীল হতে হয়।আর যারা এই সত্য অনুধাবন করতে পারেন, তারা নিজেদের ঝগড়া প্রশমিত করতে পারেন)।
কাজেই নিজেদের মধ্যেকার মারামারি বন্ধ করতে হলে দু’দলের নেতাকর্মীদের পরমতসহনশীল ও সংযত হওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই।এই সত্য উপলব্দি করতে না পারলে জেএসএস-ইউপিডিএফ সবসময় পরস্পরকে দোষারোপ করতে থাকবে। এতে জুম্মজনগণের তো উপকার হবে না, তাদের মধ্যেকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আগুনও কখনো নিভবে না।ধম্মপদের (ধম্মপদ:৬) আরো একটি চিরন্তন বাণী “শত্রুতা দিয়ে শত্রুতার অবসান হয় না, মিত্রতা দিয়ে শত্রুতার অবসান হয়”। এই সত্য জেএসএস ও ইউপিডিএফ যত তাড়াতাড়ি উপলব্দি করতে পারবে, তত তাড়াতাড়ি জুম্মজনগণ সহিংস রাজনীতির করালগ্রাস হতে মুক্ত হতে পারবে।
জেএসএস-ইউপিডিএফ কী বেদনাদায়ক প্রক্রিয়ায় ঐক্য খুঁজবে?
উপরে উল্লেখিত শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় সমস্যার সমাধান বা ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না হলে জেএসএস-ইউপিডিএফকে বেদনাদায়ক প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। এর অর্থ হলো অস্ত্রের মাধ্যমে আপোসরফা করতে হবে। অস্ত্রই ঠিক করবে কে থাকবে – জেএসএস নাকি ইউপিডিএফ?কিন্তু বড় প্রশ্ন হলো, এই পথে চূড়ান্ত সমাধান আসবে কী? অবশ্য, দু’দল তো গত এক যুগ ধরে এই বেদনাদায়ক পথে হাঁটছে।অনেক খুনোখুনি ও রক্তারক্তি করেও কেউই কাউকে নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি। বরং নতুন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আরো একটি নতুন সংযোজন হয়েছে জেএসএস (এমএন লারমা)। সন্তু-প্রসিত-রূপায়ন নেতৃত্বাধীন তিনটি রাজনৈতিক দল এখন জনসাধারণের কাছে “সন্তুজ, গুন্ডুষ ও ফান্ডুজ” হিসেবে পরিচিত। “ফান্ডুজ” নতুন সংযোজন হলেও ইতোমধ্যে এর কিছু নেতাকর্মী “সন্তুজের” হাতে মারা গেছে। অনুমান করা যাচ্ছে, আগামীতে “ফান্ডুজরা”ও বেদনাদায়ক পথে হাঁটতে পারে।“সন্তুজ-গুন্ডুষ-ফান্ডুজ”-এ ত্রিশক্তির সংঘর্ষে জুম্মজাতির অস্তিত্ব কী টিকে থাকবে?
এ প্রশ্নের উত্তরে বেদনাদায়ক পরিসংখ্যানটা দেখে নিলে ভালো হয়। গত ২২ মে ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুসারে, পার্বত্য চুক্তির পর থেকে গত এক যুগ সময়ে জেএসএস ও ইউপিডিএফ-এর মধ্যেকার সংঘাতে ৭০০-এর অধিক নেতা-কর্মী খুন হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে পাঁচ শতাধিক।অপহৃত হয়েছেন দেড় হাজারের বেশি।খুনোখুনির ব্যালেন্সশিট এখনো মেলানো শেষ হয়নি। এছাড়া এই ব্যালেন্সশিটে শুধু মানুষের সংখ্যার হিসেবটা দেওয়া হয়েছে। এখানে পুরো জুম্মজাতির মন ও মানসিক বেদনার হিসেবটা দেয়া হয়নি।দেওয়া হয়নি জেএসএস-ইউপিডিএফ-এর মারামারিতে কী পরিমাণ অর্থের অপচয় হয়।হিসেব নেই “সন্তুজ-গুন্ডুষ-ফান্ডুজ”-এর চাঁদাবাজিতে সাধারণ মানুষ কী পরিমাণ ক্ষতির শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এই ক্ষতি, এই বেদনা জুম্মজনগণ কতদিন বহন করতে পারবে?এ প্রেক্ষিতে “সন্তুজ-গুন্ডুষ-ফান্ডুজ”দের ভাবতে হবে এই বেদনাদায়ক প্রক্রিয়ায় তারা সমাধান চান কী না।তবে তাদের লড়াইয়ের গতিপ্রকৃতি দেখে আমার ভয় হয়, তারা চাকমা রূপকথার রোঙ্যাবেঙার দুই বনমোরগের লড়াই* শুরু করে দিয়েছে কী না।যদি তাই হয়, তাহলে জুম্মজনগণকে, বিশেষকরে তরুণ প্রজন্মকে ভাবতে হবে, “সন্তুজ-গুন্ডুষ-ফান্ডুজ”দের বেদনাদায়ক পথে তাদের সমস্যার সমাধান হতে দেবে কী না।যদি ‘না’ হয়, তাহলে জেএসএস-ইউপিডিএফকে চূড়ান্তভাবে বয়কট করতে হবে।
শেষকথা
জুম্মজাতির অধিকারের নামে জেএসএস-ইউপিডিএফ নিজেদের স্বার্থে যে সংকট সৃষ্টি করেছে সেটা পুরো জুম্মজাতির ঐক্যের সংকট নয়।বরং তাদের স্বার্থের জন্যে পুরো জুম্মজাতিকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এটা হতে পারে না।জেএসএস-ইউপিডিএফ ছাড়াও জুম্মজনগণ নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্যে লড়াই করতে পারে। যেমন, জেএসএস-ইউপিডিএফ নিজেদের মারামারিতে মশগুল তখন বান্দরবানের রুমার জনসাধারণ গত ৩ মে সেনাবাহিনী কর্তৃক ভূমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে ৪০ কিমি. পথ পায়ে হেঁটে লংমার্চ করেছিলো (যদিও পত্র-পত্রিকায় এ খবর তেমন গুরুত্ব পায়নি)।জনগণের এই চেতনা থেকেও জেএসএস-ইউপিডিএফ-এর শিক্ষা নিতে হবে।
জেএসএস-ইউপিডিএফ নিজেদের ব্যর্থতাগুলো কখনো জনগণের কাছে স্বীকার করেনি। তাদের সৃষ্ট দুর্ভোগের জন্যে জনগণের কাছে কখনো দুঃখ প্রকাশ করেনি। বরং তাদের ব্যর্থতার জন্যে তারা অন্যকে দায়ী করে থাকে। ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব আবিষ্কার করে থাকে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করে। অন্যকে দোষারোপ করার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে উভয় দলকে নিজেদের বিকৃত চেহারাগুলো দেখতে হবে।তাদের মনে রাখতে হবে, তাদের মারামারি সমস্যার সমাধান অন্য কেউ করে দেবে না, নিজেদেরকেই করতে হবে।জেএসএস সমাধান চায় না কিংবা ইউপিডিএফ সমাধান চায় না – এরকম খোঁড়া যুক্তি বাদ দিতে হবে। মারামারি সমস্যার সমাধান নিজেদের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। নিজের মধ্যেই শান্তি নিহিত আছে। এ প্রেক্ষিতে আবারও তাদেরকে মহামতি গৌতম বুদ্ধের চিরন্তনবাণী স্মরণ করিয়ে দিতে চাই,
“Peace comes from WITHIN, don’t seek it WITHOUT” (শান্তি আসে নিজের ভেতর থেকে, একে খুঁজতে যেও না নিজেকে বাদ রেখে)।
অতএব, জেএসএস-ইউপিডিএফ মারামারি-খুনোখুনি বাদ দিন, পরমতসহিঞ্চু হতে শিখুন। নিজের মধ্যে ঐক্য-শান্তিু খুঁজে নিন।নচেত আপনাদের মুখে জুম্মজনগণের অধিকারের পক্ষে কথা বলা মানাবে না।জুম্মজনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে কোন অধিকার আপনাদের দেয়া হয়নি।
—————————–
পাদটীকাঃ রোঙ্যাবেঙার দুই বনমোরগের লড়াইয়ের কাহিনী ছোটবেলায় গ্রামের এক দাদুর কাছে শুনেছিলাম। অল্প কথায় গল্পটা হলো এইঃ একদিন চৈত্রের ভরদুপুরে জুমঘরে বসে রোঙ্যাবেঙার হুকা টানতে ইচ্ছা হলো।কিন্তু আগুন জ্বালানোর মত ম্যাচ-শলাকা জাতীয় তার হাতে কিছুই ছিলো না। মনে মনে ভাবছিলো যদি আগুন জ্বালানো যায় মনভরে হুকা টানা যেতো।ঠিক সেই সময় দুই বনমোরগ লড়াই শুরু করলো। এমন তুমুল লড়াই সে জীবনে দেখেনি। প্রথমে দুই মোরগের পালকগুলো খসে পড়লো। একটাও অবশিষ্ট নেই। তারপরও দু’জনের লড়াই থামে না।মাংসে মাংসে ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু হলো।একসময় সব মাংসও খসে পড়লো। তবুও লড়াই থেমে নেই। তারপর শুরু হলো হাড়ে হাড়ে লড়াই। টুসটাস্ টুসটাস্।এমনি শব্দ করতে করতে স্যাঁৎ করে আগুন জ্বলে উঠলো। চৈত্রের খাঁ খাঁ রোদ। তখন কী আর আগুন থামানো যায়?পুড়ে ছারখার হয়ে গেলো পুরো জুম আর ছয়কুড়ি ঘরের আদাম (গ্রাম)।
রোঙ্যাবেঙার দুই বনমোরগের লড়াইয়ের সাথে জেএসএস-ইউপিডিএফ-এর লড়াইয়ের মধ্যে সাদৃশ্য দেখতে পাচ্ছি।একযুগ লড়াই করেও এখনো তাদের মধ্যেকার খুনোখুনি, রক্তারক্তি থামেনি। এ অবস্থায় সরকার, সেনাবাহিনী ও সেটেলার লাগবে না। জেএসএস-ইউপিডিএফই মারামারি করে পুরো জুম্মজাতিকে লেলিহান শিখায় জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মেরে ফেলতে পারে।
অতএব, জনগণ জেএসএস-ইউপিডিএফ হতে সাবধান।
*******
অডঙ চাকমা, ২৬ মে ২০১১
চাওয়া একটাই
পারস্পরিক বিদ্বেষ ভুলে জুম্মঐক্য গড়ে তুলুন…
আদিবাসী অধিকার বাস্তবায়নে একযোগে কাজ করুন…
ফেসবুক গ্রুপ ‘পাহাড়ের রূদ্ধকণ্ঠ CHT Voice’ [লিংক] এ ইউপিডিএফ-এর দলছুট নেতা (এখন প্রবাসী) সঞ্চয় চাকমার একটি প্রাসঙ্গিক পোস্ট এখানে সংযুক্ত করা হচ্ছে:
সবাইকে ধন্যবাদ। (Y)
@বিপ্লব রহমান,
ধন্যবাদ বিপ্লব ভাই সঞ্চয় চাকমার লেখাটা মুক্তমনায় নিয়ে আসার জন্যে। ‘পাহাড়ের রূদ্ধকণ্ঠ CHT Voice’-এ নিষিদ্ধ হওয়ায় সেখানে যাওয়া আমার সুযোগ নেই। তাই এতদিন সঞ্চয় চাকমার লেখা হতে বঞ্চিত ছিলাম।
সঞ্চয় চাকমা যা লিখেছেন তার সাথে দ্বিমত নেই। আমার লেখাতেও অনেক বিষয় তুলে এনেছিলাম। রাজনৈতিক তত্ত দিয়ে জেএসএস-ইউপিডিএফ-এর মধ্যেকার দ্বন্দ্ব নিয়ে অনেক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দেওয়া যায়। অর্থাৎ বহু কারণবাদ অনুসারে অনেক সমস্যার কথা বলা যায়। সেখানে সহজ সরল সমাধান পাওয়া কঠিন। সঞ্চয় চাকমা তার নাতিদীর্ঘ লেখাতে সেই বহুকারণবাদ থেকে সরে এসে আসল একটি কারণের কথাই বলে ফেলেছেন। সেই কারণটা হলো দুই নেতার Ego বা অহংবোধ। তিনি আরো স্পষ্ট করে বললেন, নিরনবাবুর বস মনে করেন, “the only superior of all others! ( তিনি সবার সেরা)। আর দীপায়ন বাবুর বসের ব্যাপারে তো কোন কথাই নেই। তার বস অনেক আগেই “এক বনে এক বাঘের তত্ত” (‘Theory of one tiger in a jungle’!) ঘোষণা দিয়েছেন। কাজেই জাতীয় ঐক্যের সম্ভাবনাটা অনেক কম, যদি না দুই নেতা তাদের অহং ত্যাগ না করেন । সে কারণে সঞ্চয় চাকমা অকপটে বলে ফেললেন,
সহজ অনুবাদঃ “সাধারণ জুম্মজনগণ জাতীয় ঐক্যের পক্ষে। এমনকি দু’দলের অধিকাংশ কর্মীও ঐক্যের পক্ষে। একমাত্র বাধা হলো দু’দলের দুই শীর্ষ নেতা”। একদম খাঁটি কথা। দু’নেতা চাইলে রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করার সময়ের ব্যাপার মাত্র।
কাজেই পাহাড়ে জাতীয় ঐক্য পুনরুদ্ধার করতে চাইলে দু’ই নেতাকে লক্ষ্য করে কর্মসূচী ও কর্ম কৌশল ঠিক করতে হবে।
@ অডঙ চাকমা,
নিরনবাবুর লেখাগুলোতে অবশ্যই দেওয়ার চেষ্টা আছে৷ যাই হোক, তবুও যেহেতু অভিযোগ করছেন আপনার প্রশ্নগুলো এড়িয়ে গেছি, তাই উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছি৷ আমি যতদূর জানি, সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মধ্যে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো অন্তর্ভুক্ত হতে পারে:
১৷ ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে পোস্টার ছাপানো, লিফলেট প্রকাশ, ইউপিডিএফ-এর বুলেটিনে লেখা৷
২৷ জেএসএস-এর ভুলের সমালোচনা করা, ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত যে জুম্ম স্বার্থের পরিপন্থী সে সম্পর্কে লেখা৷
৩৷ বিভিন্ন এলাকার মুরুব্বীদেরকে সন্তু লারমাসহ জেএসএস নেতাদের কাছে পাঠানো যাতে তারা ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করতে তাদেরকে অনুরোধ করেন/চাপ দেন৷
৪৷ চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় যাতে দুই পক্ষের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের উদ্যোগ নেন সে ব্যাপারে তাকে অনুরোধ করতে কিছু মুরুব্বীকে ইউপিডিএফ তার কাছে কাছে পাঠায়৷ (তবে রাজাবাবু জানেন না তাদেরকে ইউপিডিএফ পাঠিয়েছিল৷)
৫৷ তিন জেলার মুরুব্বীদেরকে (যেমন প্রয়াত উপেন্দ্র লাল চাকমা, অনন্ত বিহারী খীসা, গৌতম দেওয়ান) খাগড়াছড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়ে আহ্বান জানানো হয়েছিল তারা যাতে সংঘাত বন্ধের জন্য উদ্যোগ নেন৷
৬৷ ইউপিডিএফ চুক্তি বাস্তবায়নে জেএসএস-কে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷ চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে ইউপিডিএফ পূর্ণ সমর্থন দেবে বলে সংবাদপত্রে বিবৃতিসহ নানাভাবে জানিয়েছে৷ কেবলমাত্র রক্তপাত বন্ধের উদ্দেশ্যেই ইউপিডিএফ এতবড় ছাড় দিয়েছে৷ কারণ চুক্তি বাস্তবায়ন ইউপিডিএফ-এর নিজস্ব কর্মসূচী নয়৷ বরং চুক্তির বিরোধীতা করেই ইউপিডিএফ-এর জন্ম৷
৭৷ উপেনবাবুর প্রচেষ্টায় ২০০০ সালে দুই পার্টির মধ্যে খাগড়াছড়িতে সমঝোতা হয়৷ ইউপিডিএফ সমঝোতার শর্তগুলো অক্ষরে অক্ষরে পালন করে৷ কিন্তু জেএসএস (অর্থাত্ সন্তু গ্রুপ) সভাপতি সন্তু লারমা সমঝোতাকেই অস্বীকার করেন৷
৮৷ ২০০৬ সালে জেএসএস (সন্তু) এর সকল শর্ত মেনে আলোচনায় বসে ইউপিডিএফ এবং জেএসএস যেভাবে চেয়েছে সেভাবে সমঝোতা হয়েছে৷ কোন উচ্চবাচ্য করেনি বৃহত্তর স্বার্থে৷ অপরদিকে, ইউপিডিএফ-এর পক্ষ থেকে কোন শর্ত ছিল না৷ তবে ইউপিডিএফ চেয়েছিল সমঝোতা লিখিত করতে৷ কিন্তু জেএসএস রাজী হয়নি৷ তারপরও ইউপিডিএফ মেনে নিয়েছে এই ভেবে যে, লিখিত অলিখিত যেই হোক, সংঘাত বন্ধ হলেই হলো৷ কিন্তু এত কিছুর পরও জেএসএস ঐ সমঝোতা লঙ্ঘন করে৷ আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার বার বার আহ্বান সত্ত্বেও জেএসএস হামলা অব্যাহত রাখে৷
৯৷ ২০০৭ সালে সাজেকে আবার সমঝোতা হয়৷ আসলে কোনঠাসা হওয়ার পর সন্তু গ্রুপ এই সমঝোতা করতে বাধ্য হয়েছিল৷ ইউপিডিএফ সেই শর্ত পুরোপুরি মেনে চলে৷ সে কারণে ২০০৭ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কোন ধরনের সংঘাত হয়নি৷ কিন্তু এই সময়ের মধ্যে সন্তু গ্রুপ বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করে এবং নতুন কর্মী রিক্রুট ও সশস্ত্র ট্রেনিং সম্পন্ন করে৷ এভাবে শক্তি সঞ্চয়ের পর তারা আবার ২০১০ সাল থেকে আক্রমণ শুরু করে দেয়৷ আর এর ফল হচ্ছে এখন আপনারা সেই সংঘাতের রূপ দেখতে পাচ্ছেন৷
১০৷ ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ পুনারায় ক্ষমতায় আসলে নতুন করে চুক্তি বাস্তবায়নের সম্ভাবনা দেখা দেয়৷ সেই সম্ভাবনায় যাতে ব্যত্যয় না ঘটে এবং আওয়ামী লীগ যাতে আইন শৃঙ্খলা, ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত ইত্যাদিকে অজুহাত হিসেবে খাড়া করতে না পারে সেজন্য নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার কিছুদিন পরই জেএসএস (সন্তু গ্রুপ) নেতৃবৃন্দের কাছে পুনরায় সমঝোতার প্রস্তাব পাঠানো হয়৷ বলা হয়, নিদেনপক্ষে সংঘাত বন্ধ রাখা হোক৷
১১৷ ২০১০ সালে সাজেক হামলার পর যখন দেশে বিদেশে প্রতিবাদ বিক্ষোভ চলছিল, তখন সন্তু গ্রুপ জুরাছড়িতে ইউপিডিএফ অফিসসহ ৮টি ঘর পুড়িয়ে দেয় ও রাজু চাকমাসহ আরো একজনকে খুন করে৷ তারপরও ইউপিডিএফ সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করে, সন্তু গ্রুপের ওপর কোন ধরনের প্রতিশোধমূলক হামলা চালায়নি৷ এমনকি ওই ঘটনা প্রচারিত হলে দেশে বিদেশে জুম্মদের বিক্ষোভে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে সেই আশঙ্কায় ওই হামলার ঘটনাগুলো ইউপিডিএফ প্রচার পর্যন্ত করেনি৷
১২৷ রাজাবাবু ছাড়াও দেশ বিদেশের আরও যারা মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছেন তাদের সবাইকে আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করা হয়েছে ইউপিডিএফ-এর পক্ষ থেকে৷
১৩৷ সমপ্রতি অনিমেষ চাকমাসহ ৪জন এবং এরপর আরও একজন ইউপিডিএফ সদস্যকে মেরে ফেলার পরও ইউপিডিএফ আজ পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করে চলেছে৷
১৪৷ সংঘাত বন্ধের দাবিতে কিছুদিন আগে হেডম্যান-কার্বারী, উপজেলা চেয়ারম্যান, শিক্ষকসহ খাগড়াছড়ির বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যে বিবৃতি দেন, সেই বিবৃতিতে স্বাক্ষর সংগ্রহসহ বিভিন্নভাবে ইউপিডিএফ সমর্থন ও সহযোগিতা করেছে৷
উপরোক্ত উদ্যোগ ও কাজগুলো অবশ্যই যথেষ্ট নয়৷ (এগুলো ছাড়াও আরও কিছু বিষয় আছে যেগুলো এখন আলোচনা করা ঠিক হবে না৷) নিঃসন্দেহে ইউপিডিএফ-এর আরো অনেক করার ছিল৷ কিন্তু পার্টি হিসেবে তারও তো অনেক সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে৷ তাছাড়া জেএসএস সন্তু গ্রুপ ছাড়াও তাকে সরকার, সেনাবাহিনীসহ আরো অনেক পক্ষকে মোকাবিলা করতে হয়৷
তো, আপনার মতে ইউপিডিএফ-এর আরো কী কী করা উচিত বলে আপনি মনে করেন? আপনার পরামর্শ নিশ্চয়ই ইউপিডিএফ নেতৃবৃন্দ শুনতে চাইবেন৷
ইউপিডিএফ বার বার বলে আসছে, ফ্যাসিস্টদের ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিহত করতে হয়৷ কারণ ফ্যাসিস্টরা যুক্তি বোঝে না, গণদাবি মানে না, জাতীয় স্বার্থ বোঝে না৷ যেমন আপনার কোন প্রশ্নের উত্তর কি আজ পর্যন্ত তারা ভদ্রভাবে দিতে পেরেছে? উত্তরও তো দেয়নি, এড়িয়ে গেছে৷ একে ত তারা বিতর্ক করতে চায় না৷ দ্বিতীয়ত, হুমকি না দিয়ে তারা আলোচনা শেষ করতে পারে না৷ বুঝতেই পারছেন এদের মোকাবিলা করা সহজ নয়৷ তাদের ওই হুমকিতে যদি “যিয়ত পায় ন সেরেয়্য” (উদ্ধৃতি হুবহু নাও হতে পারে) বলে তাদেরকে বিরক্তভাবে উত্তর দিতে বাধ্য হন, তাহলে বুঝতে চেষ্টা করুন, যারা প্রতিনিয়ত সন্তু লারমার অগণতান্ত্রিক ও উস্কানিমুলক কথাবার্তা শুনছে, যাদের সহযোদ্ধারা একের পর এক হামলায় মারা যাচ্ছে, যাদের মাথার চারপাশ দিয়ে ছোঁ ছোঁ করে গুলি যাচ্ছে, যে কোন মুহূর্তে মারা যেতে পারে, তারা কীভাবে সংযম প্রদর্শন করছে! বাক্য বিস্তার করা অনেক সহজ, কিন্তু বাস্তব বড়ই কঠিন৷ কাউকে দোষ দেওয়া সহজ, কিন্তু নিজে করা কঠিন৷
যাই হোক, সংঘাত বন্ধ করতে আপনার যে প্রচেষ্টা তাকে আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাই৷ আপনার মতো আরো অনেকের এ ব্যাপারে এগিয়ে আসা উচিত৷
@সুশান্ত চাকমা,
ধন্যবাদ আপনার জবাবের জন্যে। সময়ের অভাবে বিস্তারিতভাবে আরো কিছু লেখা সম্ভব হচ্ছে।
আপনি যা বলেছেন সেগুলো হলো কিছু কাজের (ইংরেজীতে বলছি tasks) বিবরণ। এ কাজগুলোর অবশ্যই দরকার আছে। কিন্তু আরো পরিকল্পিত হওয়া প্রয়োজন মনে করি। আপনারা রাজনৈতিক দলগুলো প্রায়ই বলে থাকেন কর্মসূচী (ইংরেজীতে Program)। কর্মসূচী ভাঙলে হয় র্কাযক্রম (ইংরেজীতে activity)। আর কার্যক্রম ভাঙলে কাজ বা tasks. আপনি কাজের বিবরণ দিয়েছেন। কেবল বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্ত কাজ দ্বারা বড় কিছু অর্জন কঠিন হতে পারে। রাজনৈতিক তত্ত বলে, “প্রথমে তত্ত্ব, আর তত্ত্ব নির্ধারণ করে দেবে কর্মসূচী (Program)। সেই হিসেবে সার্বিক বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে জেএসএস-এর সাথে সংঘাত বন্ধ করার ব্যাপারে রাজনৈতিক দল হিসেবে ইউপিডিএফকে তার তত্ত্বটা আগে ঠিক করতে হবে। সেই তত্ত্বই নির্ধারণ করে দেবে কর্মসূচী, কার্যক্রম, কাজ ও কৌশল ইত্যাদি। আর এসব বিষয় আপনারা যে বাস্তবায়ন করছেন, সেগুলোর কার্যকারিতার মূল্যায়ন হতে হবে নিয়মিতভাবে।
সে যা হোক, অনেক তত্ত্বকথা বলা যায়। কোন দ্বন্দ্ব-সংঘাত বন্ধের জন্যে সুনির্দিষ্ট ফর্মুলা নেই। বাস্তবতা ফর্মুলা ঠিক করতে হবে। তবে যেসব পন্ডিত conflict resolution/transformation নিয়ে লেখালেখি করেন তাদের মূল বক্তব্য হলো, দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনের প্রথম শর্ত হলো বিবদমান দলগুলোর পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা অর্জন করা। এখন সন্তু লারমা যদি প্রসিত খীসাকে অসম্মান করেন কিংবা বিশ্বাস না করেন, তাহলে প্রসিত খীসা আলোচনার টেবিলে যেতে পারবেন না। বিপরীতভাবেও তাই। প্রসিত খীসাও যদি সন্তু লারমাকে মানসিকভাবে মেনে নিতে পারেন, এবং সন্তু লারমার নেতৃত্বের প্রতি অবিশ্বাস রাখেন, সেখানে কোন আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি হবে না।
আর তৃতীয় কোন পক্ষ মধ্যস্থতা করলেও সেখানেও অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। যিনি বা যারা মধ্যস্থতা করবেন তার বা তাদের নিরপেক্ষতা কঠিনভাবে বজায় রাখা। আর অনেক সময় বিবদমান পার্টিগুলো মধ্যস্থতাকারী/দের প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ বা অনাস্থা আনতে পারেন। সেরকম পরিবেশে আলোচনা ভেস্তে যেতে পারে বা সমঝোতা হয়ে গেলেও সেটা যে কোন সময় ভেস্তে যেতে পারে। যেমন, আপনি উপেনবাবু বা অন্যান্য মুরুব্বিদের কথা বলেছেন। সমঝোতা হয়ে সমঝোতা ভেঙে গেছে। তাহলে, মধ্যস্থতাকারী তৃতীয় পক্ষকে হয় বিবদমানদলগুলোর চেয়ে অনেক শক্তিশালী হতে হবে। যেমন, উদাহরণ হিসেবে বলা যায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন। জাতিসংঘ কর্তৃক আফ্রিকাতে অনেক মিশন পাঠানো হয়েছে। আপনি উদাহরণ দিয়ে কী দেখাতে পারবেন, কোন দেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন সফল হয়েছে? তবে এটা ঠিক, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন অনেকভাবে বিবদমান দলগুলোকে কিছু সময়ের জন্যে হলেও মারামারি হতে বিরত রাখতে পেরেছে। এর মাধ্যমে অগণিত মানুষের জীবন হানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি রোধ করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্ত তারপরেও টেকসই শান্তি প্রক্রিয়া বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ ছিলো।
এই প্রেক্ষিতে বলতে হয়, বিবদমান পার্টিগুলো সংযত না হলে, পরস্পরের প্রতি সহনশীল না হলে দ্বন্দ্ব সংঘাত সহজে বন্ধ করা কঠিন।
আশা করি, পরে আরো আলোচনা করা যাবে। ধন্যবাদ।
@অডঙ চাকমা,
আপনার জবাবের জন্য ধন্যবাদ।
আসলে অডংবাবু তার তীক্ষ্ণ মেধা খরচ করে মোটা দাগে একটা কথা বলতে চান। ইনিয়ে বিনিয়ে বুঝাতে চান। কেন জানি আবার এড়িয়েও যান। হয়তবা তকমা লাগার ভয়। তিনি সুধাসিন্ধু তাতিন্দ্রলাল আর রূপায়ন দেওয়ানদের ভক্ত। তারা সংস্কারপন্থী নামে পরিচিত। অডংবাবু আড়ালে আবডালে তাদের কথা বলতে চান। আবার তকমাটাও লাগাতে লজ্জ্বা পান। অডংবাবুকে এভাবে পাঠ করলে তাকে বুঝতে সহজ হবে।
@দীপায়ন খীসা,
দীপায়নবাবু, এটাকে বলে malady of interpretation. একজায়গায় আমাকে (যদিও সরাসরি আমার নামটা উল্লেখ ছিলো না) বললেন ফেরিওয়ালা, আর এখন বলছেন “সুধাসিন্ধু তাতিন্দ্রলাল আর রূপায়ন দেওয়ানদের ভক্ত” । বা! বা! কি দীপায়নবাবুর পাঠ কী সুন্দর! দীপায়নবাবু, আপনার যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে অডঙকে পাঠ করতে পারেন সেই স্বাধীনতা আপনার আছে।
তবে আপনাকে বলে রাখি, সন্তু-প্রসিত-সুধাসিন্ধু-তাতিন্দ্র-রূপায়ন কারোর ‘তকমা’ আমার লাগেনা, ভবিষ্যতেও লাগবে না। সন্তু-প্রসিত-সুধাসিন্ধু-তাতিন্দ্র-রূপায়নদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড যদি সামগ্রিকভাবে জুম্ম সমাজকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত না করতো তাহলে আমার মত নগন্য ব্লগারের এ ধরনের বিষয় নিয়ে লিখতে হতো না। আর অডঙরা কার তকমা পরে সেটা খুঁজে বের করার প্রয়োজন হতো না আপনার বা আপনার মত তকমাপরা লোকদের।
তবুও আপনাকে ধন্যবাদ।
@দীপায়ন খীসা,
আপনার এই অভ্যেসটা রয়েই গেলো;জানি না ,কখন আপনার এই অবস্থা থেকে মুক্তি হবে।
সেই পুরোনো অভ্যেস!!আমাদের মতো সাধারন জুম্মরা চলমান পাহাড়ে রাজনীতি নিয়ে ঐক্য কিংবা সমাধানে অভিব্যক্ত করলেই আপনাদের মতো সুপারম্যানদের চোখে সুধাসিন্ধু,ইনিয়ে-বিনিয়ে,সংস্কারপন্থী উপাধিগুলো সহজেই জুটে যায়।
তাই বলি সাবাশ দীপায়ন বাবু :lotpot: :lotpot: :lotpot:
” আঞ্ছলিক দলগুলো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ছাড়া মানুষের কল্যানের জন্য কিছু করার ক্ষমতা রাখে না ।”
আপনার কয়েকটা পোস্ট পড়ে মনে হয়েছে আপনি বাম ঘরানার হবেন৷ কিন্তু এটা পড়ে মনে খটকা লাগছে, আপনি বাম সেজে অন্য কেউ কিনা৷ কারণ কোন বাম নেতাকর্মীকে এ ধরনের বক্তব্য দিতে আগে কখনো দেখিনি৷ তবে আপনি যেই হোন, আপনাকে প্রশ্ন করি, যদি আঞ্চলিক দলগুলো আপনার ভাষায় বিশৃঙ্খলা ছাড়া মানুষের কল্যাণের জন্য কিছু করার ক্ষমতা না রাখে, তাহলে বাম দলগুলো তাদের সমর্থন দেয় কেন? তাদের সভাসমাবেশে উপস্থিত থাকে কেন? আপনার বক্তব্যে স্ববিরোধীতা স্পষ্ট৷
“তাই দেখা যাচ্ছে আপনি একজন হতাশাগ্রস্ত মানুষ, যার কিছু করার ক্ষমতা নাই৷”
আমার কিছু করার ক্ষমতা আছে কি নেই সেটা আমি বুঝি৷ কিন্তু মেনন-ইনুদের মতো বামদের কী ক্ষমতা আছে তা তো ৩০ জুন জাতীয় সংসদে দেখলাম৷ তারা যা করেছেন তাতে কি তাদের ব্যাপারে হতাশ না হয়ে উপায় আছে?
@সুশান্ত চাকমা
আঞ্ছলিক দলগুলো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ছাড়া মানুষের কল্যানের জন্য কিছু করার ক্ষমতা রাখে না । গণতন্ত্রে আস্থাবান জনতা সমস্যা সমাধানের জন্য নিজ পছন্দের দলকে ভোট দেয় । তার পছন্দের দল ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় পছন্দের দলকে ভোট দেয় । এই ভাবেই গণতন্ত্র চলে ।
ডান ও বাম, কারও উপরেই যখন আপনার ভরসা নাই, তখন আপনি কি করতে চান তাও আপনি বলেন নি । তাই দেখা যাচ্ছে আপনি একজন হতাশাগ্রস্থ মানুষ, যার কিছু করার ক্ষমতা নাই ।
@আ হা মহিউদ্দীন,
“আঞ্ছলিক দলগুলো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ছাড়া মানুষের কল্যানের জন্য কিছু করার ক্ষমতা রাখে না ।”
আপনার কয়েকটা পোস্ট পড়ে মনে হয়েছে আপনি বাম ঘরানার হবেন৷ কিন্তু এটা পড়ে মনে খটকা লাগছে, আপনি বাম সেজে অন্য কেউ কিনা৷ কারণ কোন বাম নেতাকর্মীকে এ ধরনের বক্তব্য দিতে আগে কখনো দেখিনি৷ তবে আপনি যেই হোন, আপনাকে প্রশ্ন করি, যদি আঞ্চলিক দলগুলো আপনার ভাষায় বিশৃঙ্খলা ছাড়া মানুষের কল্যাণের জন্য কিছু করার ক্ষমতা না রাখে, তাহলে বাম দলগুলো তাদের সমর্থন দেয় কেন? তাদের সভাসমাবেশে উপস্থিত থাকে কেন? আপনার বক্তব্যে স্ববিরোধীতা স্পষ্ট৷
“তাই দেখা যাচ্ছে আপনি একজন হতাশাগ্রস্ত মানুষ, যার কিছু করার ক্ষমতা নাই৷”
আমার কিছু করার ক্ষমতা আছে কি নেই সেটা আমি বুঝি৷ কিন্তু মেনন-ইনুদের মতো বামদের কী ক্ষমতা আছে তা তো ৩০ জুন জাতীয় সংসদে দেখলাম৷ তারা যা করেছেন তাতে কি তাদের ব্যাপারে হতাশ না হয়ে উপায় আছে?
@আ হা মহিউদ্দীন,
:hahahee: :hahahee: :hahahee:
আ হা মহিউদ্দীন,
মূল রাজনৈতিক দল বলতে কোন রাজনৈতিক দলকে বোঝাতে চাচ্ছেন? যদি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত, জাতীয় পার্টিকে বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে বলবো তাতে পাহাড়িদের কোন মঙ্গল হবে না৷ আওয়ামী লীগকে পাহাড়িরা তিন বার ভোট দিয়েছে, শেষ পর্যন্ত তার প্রতিদান হিসেবে আওয়ামী লীগ পাহাড়িদেরকে “বাঙালি জাতীয়তা” উপহার দিয়েছে৷ আর মূল রাজনৈতিক দল বলতে যদি বাম দলগুলোকে বুঝিয়ে থাকেন, তাহলে বলবো তারা পাহাড়িদের আন্দোলনে মৌখিক সমর্থন দেয়া ছাড়া বিশেষ কিছু করতে পারেনি৷ তাছাড়া তারা বহুধাবিভক্ত এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের সমাধান কীভাবে হবে সে ব্যাপারে তাদের স্পষ্ট কোন ধারণা নেই৷ কিছুদিন আগে হালখাতা নামক একটি লিটল ম্যাগাজিনে বাসদ এর সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামানের একটি লেখা পড়েছি৷ সেখানে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধানের জন্য তথা “আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন ও বৈষম্যের অবসানকল্পে” যা সুপারিশ করেছেন, উদারনৈতিক বুর্জোরাও তার থেকে বেশী করে থাকেন৷ তাহলে বামদের ওপরও পাহাড়ি জনগণ কীভাবে ভরসা রাখেন বলুন?
@সমরেশ চাকমা
জন সমর্থিত কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল গঠিত হয় । উদ্দেশ্য হারিয়ে গেলে বা স্বার্থের টানাটানি আরম্ভ হলে অথবা জন সমর্থনের হ্রাস ঘটলে দলে বিভক্তি হয় এবং মারামারি আরম্ভ হয়ে যায়, যা পার্বত্য চট্টগ্রামে বর্তমানে চলছে । পাহাড়ী আদি বাসীরা যার শিকার এবং পাহাড়ী মধ্যবিত্তরা আদি বাসী নাম ভাঙ্গিয়ে ফয়দা লুটতে চাচ্ছে ।
পাকিস্তান কালীন সময় সমতল ভূমির আদি বাসীরা সমস্যা দেখা দিলেই মোকাবিলা না করে ভারতে পালিয়ে যেত । কিন্তু দেশ স্বাধীনের পর ভারত তাদেরকে গ্রহন করা থেকে বিরত থাকায়, তারা সমস্যা মোকাবিলা করতে আরম্ভ করেছে । তাই পাহাড়ী ও সমতল ভূমির আদি বাসীদের ঐক্য এবং বাংলাদেশের মূল রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সম্পৃক্ততা প্রয়োজন ।
সমস্যা যখন আছে, তখন বিভিন্ন জনের বিভিন্ন চিন্তা ধারা থাকাটা স্বাবাভিক ।
@আ হা মহিউদ্দীন,
আপনি অন্যএক লেখাতে মন্তব্য করেছিলেন ইউপিডিএফের ‘আদিবাসী’ আন্দোলনের কোন ভূমিকা লক্ষ্য হচ্ছে না যেমন সন্তু লারমার উপস্থিতি বামদলকে সাথে দেখা যায় । এখন আপনি বললেন “পাহাড়ী মধ্যবিত্তরা আদি বাসী নাম ভাঙ্গিয়ে ফয়দা লুটতে চাচ্ছে” এটা কি স্ববিরোধীতা নই ? ইউপিডিএফ স্রেফ জাতির অধিকার চাই; জাতিস্বত্তার স্বীকৃতি চাই । আদিবাসী নিয়ে লাফালাফি করছে না কারণ, আদিবাসী অধিকারের নামে অনেক বেসরকারী সংস্থা নিজেদের ফায়দা লুটছে ।
@সমরেশ চাকমা,
পাহাড়ী মধ্যবিত্তের একাংশ জন সংহতি সমিতির সাথে, অন্য অংশ ইউপিডিএফ এর সাথে, আর একটি অংশ দুই আঞ্ছলিক দলের মধ্যে ঐক্য ঐক্য চিল্লাচ্ছে । আলোচ্য এই মধ্যবিত্তের রাজনৈতিক ভাবে সচেতন অংশটি বামদলগুলির সাথে যুক্ত । বাকিরা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ফয়দা লুটছে । তাই আমার বক্তব্যে স্ববিরোধীতা নাই ।
@অডং চাকমা ও @সমরেশ চাকমা
অডং চাকমা
আপনার দেয় লিকং এ পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যা সংক্রান্ত আমার মন্তব্যের উপর হরি কিশোর চাকমার প্রতিমন্তব্য পড়লাম । এটা স্বাভাবিক একই ঘটনা বিভিন্ন জন বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখে থাকেন । আপনাদের সাথে আমি আলোচনা করছি মুক্তমনায় । তাই হরি কিশোর চাকমার উচিত ছিল মুক্তমনায় আমার বক্তব্যের প্রতিউত্তর দেয়া । তিনি যখন দেন নাই, তখন আমি তার মন্তব্যের কোন উত্তর দেব না ।
সমরেশ চাকমা
রাজনৈতিক দল তার নিজ কর্মকান্ড দিয়েই প্রমান করে, সে সন্ত্রাসী না গণতান্ত্রিক রাজনীতি করে । ইউপিডিএফ বা জেএসএস এর তুলনা করা আপনাদের কাজ হলেও আমার কর্ম নয় । তাছাড়া আমি মনে করি আঞ্চলিক দল দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার সমাধান হবে না । তাদেরকে বাংলাদেশের মূল দলগুলি, যারা আদি বাসীদের সমস্যার সমাধান চায়, তাদের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করতে হবে ।
@আ হা মহিউদ্দীন, আমি মনেকরি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের ভিত্তি না থাকলে পার্বত্য চট্রগ্রামের সংখ্যালঘু জাতিগুলো অচিরে বিলীন হয়ে যাবে, যেমনটা সমতলের অনেক আদিবাসী জাতিসম্প্রদায় আজ প্রায় বিলুপ্তি এবং ধ্বংসের পথে । সংখ্যালঘুদের সমঅধিকারকে প্রাধান্য না দিয়ে রাষ্ট্রের ভৌগলিকতার দোহায় দিয়ে যে আজবগুবি সেসব মানসিকতা মন থেকে উপড়ে তুলতে পারা না গেলে সংখ্যালঘুদের অধিকার কখনো সম্ভব হবে না ।
ইউপিডিএফ ও জেএসএস -এর মধ্যে চলমান সংঘাত ও তার নিরসনের উপায় সম্পর্কে যে বিতর্ক সূচিত হয়েছে সেটা দেখছি অডং চাকমা মুক্তমনায়ও নিয়ে এসেছেন৷ অবশ্য তাতে ভালোই হয়েছে৷ আরো অনেকে এ বিষয়ে জানতে পারবেন৷ তবে তার ওই লেখার সূত্র ধরে তার সাথে ইউপিডিএফ নেতা নিরন চাকমার ফেইসবুকে যথেষ্ট বিতর্ক হয়েছে৷ অডঙের সমস্যা হচ্ছে, তিনি সংঘাত বন্ধ হোক সেটা চান, কিন্তু সেজন্য কোথায় আঘাত করতে হবে এবং কার সাথে ঐক্য করতে হবে সেটা জানেন না৷ অর্থাত্ রাজনীতির ভাষায় যাকে বলে রণনীতি ও রণকৌশল, সে ব্যাপারে তার ধারণা হয় কম, নতুবা মোটেই নেই৷ সেজন্য তিনি সমস্যা দেখে হাবুডুবু খান৷ সমস্যার গভীরে না গিয়ে ঢালাওভাবে সংঘাতে জড়িত সবাইকে সমানভাবে দোষী সাব্যস্ত করেন৷ তিনি এক অর্থে প্যাসিফিস্ট৷ এমনকি তার মধ্যে রাজনীতিকদের প্রতি (বিশেষত পাহাড়ি রাজনীতিকদের প্রতি) এক ধরনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি আছে বলেও আমার মনে হয়েছে৷ তবে হিলে রক্তপাত বন্ধে তার আন্তরিকতার প্রতি আমি পুরোপুরি শ্রদ্ধাশীল৷
তার উপরোক্ত লেখার জবাবে নিরন চাকমার প্রথম পোস্টটি এখানে পত্রস্থ করলাম, কারণ সমরেশ চাকমা নিরনের পরের পোষ্টগুলো এখানে যোগ দিলেও সেটা বাদ পড়েছে৷ অথচ ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত নিরসন প্রশ্নে ইউপিডিএফ-এর ভূমিকা বোঝার জন্য সেটা জানা দরকার৷ আর এর সাথে অডঙের অন্য একটি পোষ্টও যোগ করছি৷ আশাকরি আগ্রহী পাঠকরা পড়ে নেবেন৷
প্রিয় অডং চাকমা,
সমপ্রতি সুবলঙে ইউপিডিএফ-এর চার সদস্য নিহত হওয়ার প্রেক্ষিতে আপনার “জেএসএস-ইউপিডিএফ ঐক্য কী সম্ভব?” শিরোনামের লেখা পড়েছি৷ আপনার লেখার হাত অত্যন্ত চমত্কার (তোষামোদী নয়)৷ তবে লেখায় কিছুটা আবেগ এবং কিছু তথ্যগত ভ্রান্তি থাকলেও আপনি প্রধানতঃ যুক্তি, তথ্য ও উপমার মাধ্যমে আপনার বক্তব্য উপস্থাপন করতে চেয়েছেন৷ সমাধান সূত্রও বাতলানোর চেষ্টা করেছেন৷ এ জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই৷ তবে বিষয়বস্তুর আরো গভীরে যাওয়া উচিত ছিলো বলে আমার মনে হয়েছে৷
যাই হোক, আমি আপনার লেখার পিঠে কয়েকটি কথা যোগ করতে চাই৷ আশাকরি আপনি আমার কথাগুলো অন্যভাবে নেবেন না৷
এক. আপনার এবং অন্যদের ঐক্যের আকাঙ্খার প্রতি আমি এবং আমাদের পার্টি ইউপিডিএফ পুরোপুরি শ্রদ্ধাশীল৷ বোধশক্তি সম্পন্ন কেউ ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের পক্ষপাতী হতে পারে না৷ যত তাড়াতাড়ি এ সংঘাতের নিরসন হবে ততই সবার জন্য মঙ্গল৷ আপনি যেমনটা বলেছেন, কেবল একপক্ষ চাইলে তো সংঘাত বন্ধ হবে না৷ উভয়পকে এর জন্য এগিয়ে আসতে হবে৷ তাহলে আমাদের কি উচিত নয়, যে পাটি ভাইয়ে ভাইয়ে হানাহানি বন্ধ করতে চাইছে না তার ওপর চাপ সৃষ্টি করা? প্রয়োজনে তাকে সংঘাত বন্ধ করতে বাধ্য করা? এবং এ লক্ষ্যে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা? কিন্তু, দেখা যাচ্ছে, যে পটি সংঘাত বন্ধ করতে চাইছে এবং বহু আগে থেকে চেষ্টা চালিয়ে আসছে তাকেও জেএসএস-এর সাথে সমভাবে দোষী করা হচ্ছে৷ এটা কোন ধরনের বিচার? এটা কি নিরপেতা দেখানোর জন্য? তাই যদি হয়, তাহলে আমি বলবো সেই তথাকথিত নিরপেতা সংঘাত জিইয়ে রাখার পক্ষে সহায়ক হচ্ছে৷ আমি উদাহরণ দিচ্ছি৷
ধরা যাক, “ক” ভুল ধরিয়ে দিয়ে “খ”এর সমালোচনা করলো৷ “খ” ওই সমালোচনার জবাব না দিয়ে “ক” কে মারতে লাগলো৷ “ক” মার খাওয়া থেকে বাঁচতে দৌঁড়ে পালাতে চেষ্টা করলো৷ কিন্তু “খ” তাকে ধরে আবারও মারতে শুরু করলো৷ এ অবস্থায় “ক” উপায়ান্তর না দেখে আত্মরার চেষ্টা করতে লাগলো৷ এ সময় “গ” ও “ঘ” এসে দেখে “ক” ও “খ” মারামারি করছে৷ এখন যদি “গ” ও “ঘ” কি কারণে মারামারি হচ্ছে সেটার কারণ অনুসন্ধান না করে, মারামারির প্রেক্ষাপট না জেনে উভয়কে সমানভাবে দোষী সাব্যস্ত করে তাহলে তা কি ঠিক হবে? এটা প্রথম প্রশ্ন? এরপর আরো ধরা যাক, “গ” ও “ঘ” বিবেকবান ও দায়িত্বজ্ঞান সম্পন্ন মানুষ এবং সে কারণে তারা মারামারি বন্ধের জন্য “ক” ও “খ”-এর উদ্দেশ্যে নিরাপদ দূরত্ব থেকে উপদেশ বর্ষণ করতে লাগলেন “আপনারা মারামারি করবেন না; মারামারি করা ঠিক নয়৷” দেখা গেল “ক” মারামারি বন্ধ করতে চাইছে, কিন্তু “খ” আগ্রাসী হয়ে আগের মতো “ক” ওপর আক্রমণ করে চলেছে৷ এ অবস্থায় “গ” ও “ঘ” এর করণীয় কি? “খ” মারামারি বন্ধ করতে চাইছে না তা জেনেও যদি “গ” ও “ঘ” নিরপেতার ভাব দেখানোর জন্য যদি কেবল ওই একটি কথাই বলতে থাকেন “আপনারা মারামারি করবেন না; মারামারি করা ঠিক নয়৷” তাহলে তাদের সেই তথাকথিত নিরপেতা কি “খ” এর প েযাচ্ছে না? “গ” ও “ঘ” এর কি উচিত নয় “খ” কে জোর করে মারামারি বন্ধ করতে বাধ্য করা?
আমরা কবে তথাকথিত নিরপেক্ষতার মুখোশ খুলে সোজা সাপটা সত্য কথাটা উচ্চারণ করে বলতে পারবো “সন্তু লারমা, আপনি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করুন৷” এটা যতদিন না পারছি ততদিন আপনার ভাষায় “অহিংস পথে” ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ হওয়ার কোন আশা নেই৷ আমি বুঝতে পারি না এই সত্য উচ্চারণে কেন এত দ্বিধা, কেন এত ভয়?
দুই. সুবলঙের ঘটনার পর জনগণের মধ্যে এবং বিশেষত ইন্টারনেটে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যে ক্রোধ ও ঘৃনা উত্সারিত হয়েছে তা অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গত৷ এটাকে প্রতিবাদের একটা রূপ বলা যায়৷ তবে প্রতিবাদের ভ্রুণ বা পূর্বাবস্থা বলাই বোধ হয় সবচেয়ে সঠিক হবে৷ কিন্তু এই ক্রোধ, এই প্রতিবাদ সঠিক লক্ষ্যবস্তুর দিকে চালিত না হলে কোন ফল পাওয়া যাবে না৷ তা অমের ক্রোধ প্রকাশের মতোই হবে৷ আপনি অনেক কষ্ট করে নদী থেকে পানি তুললেন, কিন্তু সেই পানি ধান ক্ষেতে গিয়ে পড়লো না; তাতে কী লাভ হবে? সাফল্যের জন্য লক্ষ্যবস্তু অবশ্যই সঠিক হওয়া চাই৷ আন্দাজে এদিক সেদিক ফায়ার করলে তো শিকার মিলবে না৷ তদ্রুপ, আন্দাজে না জেনে না বুঝে যার তার ওপর রাগ ঝারলে তো হবে না৷ যার ওপর রাগ ঝারা দরকার, যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা দরকার তার বিরুদ্ধে রাগ ঝারলে এবং প্রতিবাদ করলে তবেই তো কাজ হবে৷
তিন. ইউপিডিএফ কখনো দাবি করেনি যে তার কোন ভুল নেই, সবকিছু ঠিকভাবে করতে পেরেছে৷ নতুন পার্টি হিসেবে ইউপিডিএফ-এর অনেক সীমাবদ্ধতা আছে এবং ইউপিডিএফ-এর নেতারা ফেরেশতা নন৷ কিন্তু কেউ যদি বলে ইউপিডিএফ সংঘাত বন্ধের প্রশ্নে আন্তরিক ছিল না বা আন্তরিক নয়, তাহলে চরম অবিচার করা হবে৷ ইউপিডিএফ মরিয়া হয়ে চেষ্টা করেছে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত বন্ধ করতে৷ এ ব্যাপারে আমি অন্যত্র লিখেছি৷ কিন্তু যা লিখেছি তা সব নয়৷ মোট কথা, দুই পার্টির মধ্যে হানাহানি বন্ধের জন্য বহু মধ্যস্থতার চেষ্টা হয়েছে এবং ইউপিডিএফ সেই প্রচেষ্টায় আন্তরিকভাবে সহযোগিতা দিয়েছে৷ কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য তারপরও সফল হওয়া যায়নি৷ সফল না হওয়ার কারণও স্পষ্ট৷
চার. আপনি লিখেছেন, ‘”গণদুশমন”-এর সাথে ইউপিডিএফ-এর ঐক্য কীভাবে সম্ভব? এ রকম শ্রদ্ধাহীন-ভালবাসাহীন পরিবেশে কী দুই পার্টির মধ্যে কোলাকুলি হবে?” উত্তর হলো: স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে, ভাই-ভাইয়ের মধ্যে, বন্ধু-বন্ধুর মধ্যে ঝগড়াঝাটি হলে উভয়ের মধ্যে হাজারো প্রকার “শ্রদ্ধাহীন-ভালবাসাহীন” বাক্য বিনিময় হয়৷ তারপরও কি তাদের মধ্যে মিটমাট হয় না৷ দু্ই পার্টির মধ্যে ঐক্য না হওয়ার জন্য এই “শ্রদ্ধাহীন-ভালবাসাহীন পরিবেশকে” দায়ি করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? এই “শ্রদ্ধাহীন-ভালবাসাহীন পরিবেশ” থাকা সত্বেও তো জেএসএস আলোচনায় এসেছে, চুক্তিও করেছে, যদিও পরে সেই চুক্তির শর্ত তারা লক্সঘন করে৷
পাঁচ. আপনি লিখেছেন, “ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক কর্মী না হলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সাথে আলাপক্রমে যতটুকু জানতে পেরেছিলাম সেটা হলো সরকারের সাথে সংলাপ চলার সময় তত্কালীন পাহাড়ি গণ পরিষদের নেতা ও বর্তমান ইউপিডিএফ প্রধান প্রসিত খীসা সংলাপে অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন৷” এই কথা আপনি কার কাছ থেকে শুনেছেন জানি না, তবে হলফ করে বলতে পারি এর মধ%E
@সুশান্ত চাকমা
আপনার পুরো লিংকটা আসেনি। আর আমি ফেসবুকের পুরনো আলোচনা এখানে আনতে চাচ্ছি না। তবে এখানে আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ। আমার লেখা নিয়ে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত থাকতে পারে এবং সেটাই স্বাভাবিক। পরমত সহিঞ্চুতাকে শ্রদ্ধা করি।
আপনার একটি বিষয়ে কিছু বলতে চাই। আপনি লিখেছেন,
আমি রাজনৈতিক কর্মী নই। তাই রণনীতি ও রণকৌশল বিশ্লেষকও নই। তবে এসব বিষয় সম্পর্কে একেবারে জ্ঞান নেই তেমনটা দাবী করবো না। যেহেতু আমি শান্তিকামী (আপনার ভাষায় প্যাসিফিস্ট) মানুষ হিসেবে কোথায় আঘাত করতে হবে জানিনা, সেহেতু আপনাকে বা আপনাদেরকে আহবান জানাবো “আসল জায়গায়” আঘাত করতে যাতে জেএসএস-ইউপিডিএফ দ্বন্দ্ব চিরতরে বন্ধ হয়। দ্বন্দ্ব-সংঘাত বন্ধ হলে জুম্মজাতিরও মঙ্গল হয়। এই সাথে আরো প্রশ্ন রাখবো, যারা রণনীতি ও রণকৌশল বিশ্লেষক বা অভিজ্ঞ ব্যক্তি আছেন, তারা কেন আমাদেরকে জেএসএস-ইউপিডিএফ-এর রণনীতি ও রণকৌশল সম্পর্কে বিশ্লেষণ বা সম্যক ধারনা দিচ্ছেন না? আপনি বা যে কেউ দু’দলের রণনীতি ও রণকৌশল সম্পর্কে সম্যক ধারনা দিলে ব্যক্তিগতভাবে আমি খুবই উপকৃত হবো। আমার যা জ্ঞানবুদ্ধি আছে তা নিয়ে আমিও আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে পারবো।আলোচনায় অংশ নিতে পারলে নিজেও অনেক আলোকিত হবো।
ধন্যবাদ।
@অডঙ চাকমা,
ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধে করণীয় বা রণনীতি ও রণকৌশল সম্পর্কে নিরন চাকমা আভাস দিয়েছেন৷ তিনি লিখেছেন “ইউপিডিএফ এবং জেএসএস (সন্তু) এর একটি অংশ আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত বন্ধ করতে চায়৷ তাই যদি হয়, তাহলে জেএসএস-এর অপর অংশটিকে চেপে ধরতে হবে৷ তাদেরক বাধ্য করতে হবে আলোচনায় বসতে ও সংঘাত বন্ধ করতে৷ এত কথা বলা হয়, অথচ এই সহজ ও সরল সত্যটা উচ্চারণ করা হয় না কেন আমি বুঝতে পারি না৷” এটাই হলো ইউপিডিএফ-এর রণনীতি এবং আমিও মনে করি সেটাই সঠিক৷ অর্থাত্ কোথায় আঘাত করতে হবে সেটার স্পষ্ট জবাব এখানে আছে৷ জেএসএস-এর একটি অংশ ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জিইয়ে রাখতে চাইছে – এটা পরিস্কার৷ এখন জেএসএস-এর সেই অংশকে বিরোধীতা করতে সব পকে (জেএসএস-এর যে অংশটি সংঘাত বন্ধ করতে চায় তাকেসহ) একত্রিত করতে হবে এটাই হলো একমাত্র যুক্তিসিদ্ধ ও বাস্তববাদী রণকৌশল৷
আমি আমার পূর্বের পোস্টে যেটা বলতে চেয়েছি, তাহলো অডং চাকমাসহ যারা ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করতে চান তাদের উচিত ইউপিডিএফ ও জেএসএস-এর যে অংশটি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ করতে চায় তাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হওয়া৷ একটা বৃহত্তর ঐক্য সৃষ্টি করা৷ কারণ ঐক্যের পরে সকল শক্তি একত্রিত হলেই কেবল ভালোভাবে ঐক্যবিরোধীদের পরাস্ত করা সম্ভব হবে৷ তবে ঐক্য করার অর্থ এই নয় যে আপনাদেরকে ইউপিডিএফ কিংবা জেএসএস (সংস্কারবাদীদের) এর মধ্যে বিলীন হয়ে যেতে হবে বা তাদের নীতি আদর্শ মান্য করতে হবে৷ যদি ঐক্য-বিরোধীতাকারীরা দেখতে পায় যে তারা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে, জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, তাদের বিরুদ্ধে জনগণের সকল মহল ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, কেবল তখনই তারা সংঘাত বন্ধ করতে বাধ্য হবে, নচেত্ নয়৷ দুনিয়ায় এটা বার বার প্রমাণিত হয়েছে৷ তাই ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত সম্পর্কে কেবল আলোচনা না করে উচিত হবে সত্যিকার অর্থে ঐক্যবদ্ধ হওয়া৷ আশাকরি, আমি আমার বক্তব্য বোঝাতে পেরেছি৷
@সুশান্ত চাকমা,
আমি আশা করেছিলাম, আপনি আমাকে বা আমার মত অতি সাধারণ মানুষ যারা জেএসএস-ইউপিডিএফ-র “রণনীতি ও রণকৌশল” সম্পর্কে জানেন না, তাদেরকে সম্যকভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দেবেন। কেবল নিরনবাবুর লেখার রেফারেন্স টেনে আপনার দায়িত্ব শেষ করলেন। লিখলেন
আপনার উল্লেখিত বক্তব্যটি যদি সত্যি সত্যিই ইউপিডিএফ-এর ‘রণনীতি’ হয়ে থাকে, তাহলে আমি ব্যক্তিগতভাবে ইউপিডিএফ-এর রাজনৈতিক জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও যোগ্যতা নিয়ে চরমভাবে হতাশ। ‘রণনীতি ও রণকৌশল’ সম্পর্কে আমার যে অ আ ক খ জ্ঞান আছে তাই দিয়ে আপনার বক্তব্য পড়ে মনে হয়েছে, ‘নীতি ও কৌশল’ সম্পর্কে [এখানে ‘রণ’ উপর্সগটা আপাতত উহ্য রেখে দিলাম] আপনার ধারনাও অত্যন্ত গোঁজামিল। সে যাক, আপনার কথার সূত্র ধরে প্রশ্ন রাখতে চাই। আপনার কথা অনুসারে ধরে নিলাম, “জেএসএস-এর যে অংশটি সংঘাত জিইয়ে রাখতে চায় সে অংশটিকে আলোচনায় বসতে ও সংঘাত বন্ধ করতে বাধ্য করা” – এই হলো ইউপিডিএফ-এর (রণ) নীতি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কে জেএসএস-এর সেই অংশটিকে [যারা সংঘাত জিইয়ে রাখতে চায়] আলোচনায় বসতে ও সংঘাত বন্ধ করতে বাধ্য করবে? এখানে ইউপিডিএফ-এর (রণ)কৌশল কী? আর কর্মসূচী কী কী আছে?
আমি এ যাবত ইউপিডিএফ কিংবা জেএসএস কোন লিখিত সাহিত্যে বা তাদের বক্তব্যে তাদের (রণ)কৌশল ও (রণ)নীতি সম্পর্কে কোন বিশ্লেষণ পাইনি। আমি আশা করবো, আপনি অন্তত ইউপিডিএফ-এর রণকৌশল ও নীতি সম্পর্কে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ নিয়ে আসবেন। আমি আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে অত্যন্ত আগ্রহী।
আর ঐক্যের ব্যাপারে আমার বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট। আমার লেখায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া মানে সব পার্টিকে এক জায়গায় বিলীন হয়ে যাওয়ার কথা বলিনি। পার্বত্য চট্টগ্রামের স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের যে অবস্থা তাতে ’এক জায়গায়’ বিলীন হয়ে যাওয়ার ধারনা অবাস্তব বলে মনে হয়। তাই বৌদ্ধ দর্শনের অহিংস নীতির আলোকে আমার মূল সুর হলো, ঐক্য বাইরে খুঁজতে যাওয়া বৃথা, রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে ঐক্য খুঁজতে হবে। যার যার দলের (রণ)কৌশল ও নীতির মধ্যে খুঁজতে হবে।
ধন্যবাদ আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্যে।
@অডঙ চাকমা,
আপনার বক্তব্য: “রণনীতি ও রণকৌশল’ সম্পর্কে আমার যে অ আ ক খ জ্ঞান আছে তাই দিয়ে আপনার বক্তব্য পড়ে মনে হয়েছে, ‘নীতি ও কৌশল’ সম্পর্কে [এখানে ‘রণ’ উপর্সগটা আপাতত উহ্য রেখে দিলাম] আপনার ধারনাও অত্যন্ত গোঁজামিল।”
নীতি কৌশল সম্পর্কে আমার ধারণা আপনার কাছে গোঁজামিল মনে হয়েছে৷ তো এ সম্পর্কে আপনার জ্ঞানের বহর দেখতে চাই৷ অনেক হাঁক ডাক করেছেন কিন্তু এ ব্যাপারে কিছুই তো বলেননি৷ ভাব দেখিয়েছেন আপনার অ আ ক খ জ্ঞানও অনেক বড়৷ কিন্তু গর্জন করলেন, বর্ষণ করলেন না৷ রণনীতি-রণকৌশল সম্পর্কে আপনার জ্ঞান থেকে আমাদের বঞ্চিত করা মোটেই ঠিক হয়নি৷………………….
আপনার বক্তব্য : “কিন্তু প্রশ্ন হলো, কে জেএসএস-এর সেই অংশটিকে [যারা সংঘাত জিইয়ে রাখতে চায়] আলোচনায় বসতে ও সংঘাত বন্ধ করতে বাধ্য করবে? এখানে ইউপিডিএফ-এর (রণ)কৌশল কী? আর কর্মসূচী কী কী আছে?”
আপনি আসলে সারারাত রামায়ণ পড়ে সীতা কার বাপ প্রশ্ন করছেন।
………………..
আপনার বক্তব্য: “আমি এ যাবত ইউপিডিএফ কিংবা জেএসএস কোন লিখিত সাহিত্যে বা তাদের বক্তব্যে তাদের (রণ)কৌশল ও (রণ)নীতি সম্পর্কে কোন বিশ্লেষণ পাইনি।”
নিরন বাবুর সাথে আপনার যে বিতর্ক হয়েছে সে সময় কল্পনা চাকমা নামে একজন সে বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন৷ তাকে উত্তরে নিরনবাবু যা লিখেছেন তাতে তিনি ইউপিডিএফ এর রণকৌশল ব্যাখ্যার চেষ্টা করেছেন, অবশ্য “রণকৌশল” শব্দটা উচ্চারণ না করে৷ যেমন তিনি বলেছেন “আমাদের কোন লুকোচুরি নেই, জেএসএস-এর অবিরাম আক্রমণের মুখে আমরা প্রথম থেকে দ্বৈত নীতি গ্রহণ করেছি৷ এক. নিজেদের রা করা৷ দুই. সংলাপের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো৷ আমাদের এই নীতি এখনো বলবত্ আছে৷”
আশাকরি, সেটা পড়ে থাকবেন৷ খেয়াল রাখবেন এখানে জেএসএস-ইউপিডিএফ -এর মধ্যকার সংঘাত মীমাংসার প্রশ্নে রণনীতি-রণকৌশলের আলোচনা হচ্ছে৷
কমনসেন্স ডিকটেট করে যে, যারা ঐক্যের পক্ষে তাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে৷ আপনি ঐক্যের পক্ষে অনেক কথা বলেন, অন্যকে ঐক্যের ব্যাপারে উপদেশ বর্ষণ করেন, অথচ আপনি নিজেই তো যাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার তাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হন না৷ এ কি আপনার স্ববিরোধীতা নয়?
@সুশান্ত চাকমা,
এখানে জায়গায় আপনার সাথে আমার ভুল বোঝাবুঝি রয়েছে।আপনি কেবল জেএসএস-ইউপিডিএফ -এর মধ্যকার সংঘাত মীমাংসার প্রশ্নে রণনীতি-রণকৌশলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে আলোচনা করতে চেয়েছেন। আর আমি চেয়েছি ইউপিডিএফ-এর সামগ্রিক রণনীতি ও কৌশলের ব্যাখ্যা যেখানে জেএসএস-এর সাথে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনের উপায় সম্পর্কেও আলোচনা থাকবে।
ভাই, ভাব বা জ্ঞানের বহর দেখানোর জন্যে লিখি না। সাধারণ নাগরিক হিসেবে যা বলা সঠিক বলে মনে করি তাই লিখি। আমার লেখাতে রণনীতি-রণকৌশল ব্যবহারও করিনি। বরং রণনীতি-রণকৌশল না বুঝার জন্যে আপনি আমার এক চোট নিয়েছিলেন। সেজন্যে আপনাকে আগেই বলেছিলাম, আমি রণনীতি-রণকৌশল বিশ্লেষক নই। তবে রণনীতি-রণকৌশল ধারনার ব্যাপারে একেবারে অজ্ঞ তাও দাবী করি না। সেই সাথে এও বলেছিলাম, জেএসএস-ইউপিডিএফ-র রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, গঠনতন্ত্র, পলিসি কিংবা তাদের রাজনৈতিক সাহিত্যে রণনীতি-রণকৌশল সম্পর্কে কোন স্পষ্ট ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ পাইনি। আমার এ সীমাবদ্ধতার কারণে আপনার কাছ থেকে অন্তত ইউপিডিএফ-এর রণনীতি ও কৌশল সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। অনুরোধ করেছিলাম, আমার ঘাটতি পূরনের জন্যে। আমি নই, বরং আপনিই ইউপিডিএফ-এর রণনীতি-রণকৌশল সম্পর্কে আপনার জ্ঞান থেকে আমাদের বঞ্চিত করলেন।
নিরনবাবুর রেফারেন্স দিয়ে বলেছেন,
হ্যাঁ, নিরনবাবুর ঐ লেখাটা পড়েছিলাম। এটা ইউপিডিএফ-এর নীতি নাকি কৌশল? যাক, শব্দার্থগত বিতর্কে যাচ্ছি না। অবশ্যই ইউপিডিএফ রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজেদের সংগঠিত করবে। পাশাপাশি সংলাপের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব নিরসনের ব্যবস্থা করবে। এসব ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু এই নীতি বিশেষ করে দ্বিতীয় নীতিটা বাস্তবায়নের ব্যাপারে যে “সর্বাত্মক প্রচেষ্টা” চালানোর কথা বলা হয়েছে। সেই “সর্বাত্মক প্রচেষ্টা” সফল করার জন্যে ইউপিডিএফ কী কী করে আসছে বা করার পরিকল্পনা নিয়েছে, এবং কীভাবে/কী কী কৌশলে সেগুলোর সফল বাস্তবায়ন করেছে বা করবে সেসব ব্যাপারে তো নিরনবাবু ধারনা দেননি। আপনিও তো ধারনা দিলেন না। বরং “আপনি আসলে সারারাত রামায়ণ পড়ে সীতা কার বাপ প্রশ্ন করছেন” – এই কথা বলে আমার প্রশ্নগুলো এড়িয়ে গেলেন।
বুঝলাম না কোথায় আমার স্ববিরোধিতা পেলেন। কাউকে উপদেশ দিতে লিখিনি। ফেসবুকে ঐক্য নিয়ে লোকজন চিৎকার করছিলো। কিন্তু কীভাবে? সে ব্যাপারে কেউ ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ দিচ্ছিলো না। সেই প্রেক্ষিতে চিন্তার খোরাক হিসেবে আমার লেখাটার অবতারণা করেছিলাম। কাজেই আমার লেখার উদ্দেশ্য পান্ডিত্য জাহির করার জন্যেও নয়, উপদেশ দেওয়ার জন্যেও নয়। নগন্য ব্লগার হিসেবে আমার চিন্তাগুলো আমার লেখনির মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করছি মাত্র। আমার লেখা বা বিশ্লেষণের সাথে আপনারা একমত হতেও পারেন আবার নাও হতে পারেন। ভিন্নমত থাকাটাই স্বাভাবিক। আমার ছোট লেখার মাধ্যমে যদি একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যূতে মুক্তবিতর্ক করা যায় এবং এতে করে যদি পরমতসহিঞ্চুতার চর্চা সূচিত তাতেই আমি খুশী হবো।
@সমরেশ চাকমা
রাজনীতির পথটা আকাবাকা । সরলরেখায় চলে না । বড় শত্রুর সাথে লড়াই করতে ছোট শত্রুর সাথে কখন কখনও আপোষ করতে হয় । তাছাড়া সম আদর্শ গোষ্ঠির সাথে কৌশলগত পার্থক্য থাকে । তাই যাদেরকে আপনি সরকারের সাথে দেখছেন, তারাও কিন্তু আদি বাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না দেয়ার জন্য ও ধর্ম নিরাপেক্ষতার সাথে সাংঘর্ষিক অনুচ্ছেদ সংবিধানে সংযোজনের জন্য সরকারের বিরোধীতা করেছে ।
সময়ের দাবী হলো বাম ঐক্য । এই ঐক্য নিয়ে আসতে পারে মধ্যবিত্তরা । যেমনটি বিগত শতাব্দির ষাট দশকে বাম প্রগতিশীল ও জাতিয়তাবাদের মধ্যে ছাত্ররা ঐক্য নিয়ে এসেছিল । ফলে দেশ স্বাধীন হয়েছে । আজ প্রয়োজন বাম প্রগতিশীলদের ঐক্য । যুব সমাজের মধ্যে রাজনৈতিক বিভ্রান্ত থাকা সত্বেও আপনারা ঐক্যের যে ক্রিয়া সৃষ্টি করে চলছেন, তার প্রতিক্রিয়ায় ভবিষ্যতে ঐক্য সৃষ্টি হবে । কারণ ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া হবেই । এটাই দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের কথা ।
@আ হা মহিউদ্দীন, রাজনীতির পথটা আকাবাকা । দ্বিমত নেই । আশাকরি আমার উপরোক্ত মন্তব্যের খাটিরে লেখাগুলো ও পড়েছেন নিশ্চয় । যে যার যুক্তি টানে । বাংলাদেশের রাজনীতিতে দল-উপদল, পক্ষ-প্রতিপক্ষদের মধ্যে মারামারি হয় । তাই বলে এক রাজনীতিক দলকে “সন্ত্রাসী” বলা ঠিক নয় । দায়ী করা যেতে পারে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে । ইউপিডিএফ একটা করলে জেএসএস করছে দুই-তিনটা । জেএসএসের হত্যাকান্ডের রেকর্ডটা সবসময় বেশি । তাই ইউপিডিএফকে সমালোচনা করার আগে জেএসএস (সন্তু লারমার) ব্যাপারে ও সতর্ক থাকুন, অন্তত যা প্রগতিশীলদের জন্য দরকারী । অবশ্যই এই যুবকগুলো বিনা পয়সায় লিখে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন ঐক্যবদ্ধতার জন্য । সেজন্য প্রাইমারি, সেকেন্ডারী সব স্টকহোল্ডারদের টেনে আনছেন যাতে প্রক্রিয়াটা আরোবেশি সহজ এবং তাৎপর্যমন্ডিত হয় । আলোচনায় সাথে থাকার জন্য অনেক ধন্যবাদ ।
জুম্ম জনগণসহ বাংলাদেশে বসবাসরত সকল সংখ্যালঘুদের সমঅধিকার নিশ্চিত করা হোক । আর সাথে জেএসএস এবং ইউপিডিএফের নেতাদের শুভবুদ্ধি উদয় হোক । ভ্রাতৃঘাতের সহিংসতা বন্ধ করে সত্যিকার অধিকার আদায়ে একবাক্য উচ্চারণ করুক -কামনা রাখি । (Y)
@জীবন,
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্যে। কামনা করি, জেএসএস এবং ইউপিডিএফের নেতাদের শুভবুদ্ধি উদয় হোক ।
অডঙ চাকমাকে ধন্যবাদ সময়োপযোগী সমালোচনায় অংশ নেয়ার জন্য ।
প্রত্যাশারাখি মুক্তমনার লেখকরা যারা পাহাড়ের ঘটনাসমূহ জানতে আগ্রহী তারা সত্যগুলো জানবে এবং বুঝতে সতেষ্ট হবেন পাহাড়ে এত কেন সংঘাত(?) ।
আমি বলবো না ইউপিডিএফ সেরা অথবা সবচেয়ে ভালো আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল, তবে তাদের আলোচনাগুলো যথেষ্ট যৌক্তিক এবং গঠনতান্ত্রিক । ফেসবুকে লক্ষ্য করেছি অডঙ চাকমা এবং অমিত হিল প্রায়ই জেএসএস এবং ইউপিডিএফকে ভতৃঘাতি রাজনীতির জন্য আলোচনা সমালোচনা করতেন, অনেকসময় দেখা গেছে ইউপিডিএফের শীর্ষ নেতাকর্মী ও আলোচনা অংশগ্রহণ করেছেন । তাদের মধ্যে নিরন চাকমা ( http://www.facebook.com/profile.php?id=100000129657315 ) এবং মিথুন চাকমা ( http://www.facebook.com/mithuncht )অন্যতম । মিথুন চাকমা সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিলেন বেশ কয়েকবার কিন্তু জেএসএসের নেতা-কর্মীরা নিশ্চুপ ছিলেন কারণ, মিথুন চাকমা আদর্শিকভাবে খুব সৎ এবং নিষ্ঠ । আলোচনা চলুক ।
আলোচনা-১:
প্রিয় অডং ভেই,
আপনার লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ৷ আপনি আমার লেখার পয়েন্ট বাই পয়েন্ট উত্তর দিতে চেয়েছেন৷ তবে আমি বলবো আপনি মূল বিষয়টাকে সব সময় পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন৷ কে চুরি করেছে তা পরিস্কার, কিন্তু আপনি চোরকে ধরতে চাচ্ছেন না৷ কে সংঘাত বন্ধ করতে চাইছে না তা সকলের কাছে দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট, কিন্তু তারপরও আপনি তার নিন্দা করছেন না ও তাকে সংঘাত বন্ধ করতে স্পষ্ট ভাষায় কিছু বলছেন না৷ আপনি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ হোক সেটা চান — এতে আমার কোন সন্দেহ নেই৷ কিন্তু যেভাবে আপনি মূল বিষয়টাকে না ধরে প্রান্তিক বিষয়গুলোকে প্রধান করে তোলেন তাতে গোলমাল পাকিয়ে যায়৷ জন্ডিস হলে চোখ লাল হয়, তার জন্য কী কেউ চোখের চিকিত্সা করায়? আসল রোগের চিকিত্সা না করে উপসর্গ নিয়ে (ভাষার ব্যবহার ইত্যাদি) মাতামাতি হলে রোগী তো মারা যাবে৷
ইউপিডিএফ-এর সকল “দোষ” সত্বেও যদি জেএসএস-এর একটি অংশ সমঝোতা করতে পারে, অন্য অংশটি অর্থাত্ সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন অংশটি পারবে না কেন? তাহলে এক্ষেত্রে সন্তু লারমাকে “দুষলে” আমাদের দোষ হবে কেন?
আপনি বলেছেন, “যেই “আত্মরক্ষা” মারামারিতে উস্কানি দেয় সেই আত্মরক্ষাতে আমার আস্থা নেই।” তো কোন ধরনের আত্মরক্ষায় আপনার আস্থা? কোন ধরনের “আত্মরক্ষা মারামারিতে উস্কানি দেয় না” তা আমাদের জানালে খুশী হবো৷
“এখানে আরো একটি কথা না বললেই নয়, দু’দলের মনোভাব “আমিই সঠিক” “আমিই সবচেয়ে বিপ্লবী।” আমি আগেই বলেছি আমাদের অনেক সীমাবব্ধতা রয়েছে এবং ইউপিডিএফ নেতাকর্মীরা দেবদূত নন৷ নিজেদের আমি বা আমরা কখনোই বিপ্লবী দাবি করিনি৷ যদি ইউপিডিএফ-এর সেলফ-রাইটিস্ট মানসিকতা থাকতো, তাহলে কী আমরা বৃহত্তর স্বার্থে বড় ধরনের ছাড় দিয়ে চুক্তি বাস্তবায়নে জেএসএস-কে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিতাম, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের বা ঐক্যের প্রস্তাব দিতাম?
সুশীল সমাজ সম্পর্কে — খেয়াল করবেন “সুশীল সমাজ” শব্দগুলো ইনভারটেড কমার মধ্যে ছিল৷ উপযুক্ত কোন শব্দ না পাওয়ায় সেটাই ব্যবহার করেছি৷ পার্টিগতভাবে আমরা “সুশীল সমাজ” কথাটি ব্যবহার করি না৷ যাই হোক এ ব্যাপারে আলোচনা করার জায়গা এটা নয় এবং যে আলোচনায় কারো উপকার হয় না সে আলোচনায় যেতে আমি রাজী নই৷ তাছাড়া, আমি একজন সামান্য রাজনৈতিক কমী, কতগুলো গুরুত্বহীন বিষয়ে বুদ্ধিজীবী সুলভ আলোচনায় আমি নিতান্ত অনভ্যস্ত৷ আমাকে খোঁচা দিলেও কোন কাজ হবে না৷ সুশীল সমাজ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে আমাদের আসল সমস্যাটা চাপা পড়ে যাক তা আমি চাই না৷
আমি অনেকের মতো বিতর্কে অংশ নিয়েছি৷ কিছু যুক্তি উপস্থাপন করতে চেয়েছি৷ আপনাকে বা কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য নয়৷ আপনাদের মতো আমিও একটা মহত্ আকাঙ্খা থেকে বিতর্কে অংশ নিয়েছি৷
ইউপিডিএফ এবং জেএসএস উভয়ের সুখ কামনা করেছেন৷ সেজন্য ধন্যবাদ৷ আপনিও সুখী হোন, সবাই সুখী হোক৷
৩০ মে ২০১১
আলোচনা -২:
প্রিয় অডং,
ধন্যবাদ আবারও আমার মন্তব্যের জবাব দেবার জন্য৷ সংক্ষেপে আপনার পোস্ট থেকে কিছু উদ্ধৃতি তুলে তার নিচে আমার মন্তব্য যোগ করছি৷
(১)”কেবল সন্তু লারমাকে চাপ দিলে, প্রয়োজনে তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে পারলেই সমস্যার সমাধান হবে মনে করছেন৷”
সন্তু লারমাকে দুনিয়া থেকে সরে দেয়ার কথা কোথায় বলেছি? আমি তো কখনো সেটা বলিনি৷ আপনি এভাবে যে কথা আমি বলিনি বা লিখিনি সে কথা আমি বলেছি বা লিখেছি বলে উল্লেখ করতে পারেন না৷ এটা ডিসঅনেস্টি!
আমি চাপ দেয়ার কথা বলেছি, এবং আমি মনে করি সেভাবে অর্থাত্ অহিংসভাবে চাপ দিলে সংঘাত অবশ্যই বন্ধ হবে৷ চীনের জনগণ ও সামরিক বাহিনীর চাপে যদি চিয়াং কাইশেক-এর মতো একজন দুর্দান্ত ফ্যাসিস্ট গৃহযুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য হয়, তাহলে সন্তু লারমা বাধ্য হবে না কেন? আপনি হয়তো বলতে পারেন চীন আর পার্বত্য চট্টগ্রাম এক নয়৷ এক্ষেত্রে আমার জবাব কী হতে পারে এটা বলা ছাড়া যে, কূটতর্কের কোন শেষ নেই৷
(২) “আপনি যে জন্ডিসের কথা বললেন, সেই জন্ডিসের জন্যে কেবল সন্তু লারমা দায়ী নয়, প্রসিত খীসাও দায়ী৷”
হ্যাঁ অবশ্যই দায়ী৷ কারণ তার দোষ তিনি চুক্তির দুর্বলতাগুলো তুলে ধরেছেন ও সমালোচনা করেছেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে চুক্তির বিরোধীতা করেছেন, সহজ সরল সত্যবাদী বালকটি যেভাবে ন্যাংটো রাজাকে ন্যাংটা বলেছে, তিনিও সেভাবে জেএসএস সম্পর্কে সত্য কথা বলেছেন; তার দোষ তিনি একের পর হামলার মুখে আত্মরার কৌশল গ্রহণ করেছেন, তার দোষ তিনি জেএসএস-এর কাছে বার বার ঐক্য ও সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছেন, তার দোষ তিনি বড় ধরনের ছাড় দিয়ে চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে জেএসএস-কে পূর্ণ মাত্রায় সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷
(৩) “অর্থাত্ জেএসএস-এর সভাপতি সন্তু লারমাকে মূল সমস্যা হিসেবে দায়ী করছেন৷ এরকম সংকীর্ণ diagnosis দিয়ে জেএসএস-ইউপিডিএফ-এর মধ্যেকার সংঘাত বন্ধ হবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম৷”
অবশ্যই সন্তু লারমাই মূল সমস্যা৷ সন্তু লারমা tip of the iceberg নন, তিনিই জেএসএস-এ সর্বেসর্বা৷ তিনি যেমন সিদ্ধান্ত নেবেন জেএসএস-এ সেটাই হবে৷ জেএসএস যেভাবে চলে তাতে জেএসএস আর সন্তু লারমা সমার্থক বলেই ধরে নেয়া হয়৷ তিনি সংঘাত বন্ধ করতে রাজী হলে ও আন্তরিকভাবে চাইলে জেএসএস-এ কেউ তার কথার দ্বিমত করতে পারবে? অন্ততঃ আমি সেই সম্ভাবনা দেখি না৷ আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমার সাথে গুটিকয় বাদে সবাই একমত হবেন৷
(৪) “ইউপিডিএফ-র কর্মী হিসেবে আলোচনায় অংশ নিয়ে আপনি সত্ সাহস দেখিয়েছেন৷”
আমরা আলোচনায় বিশ্বাসী৷ আমরা আলোচনা সমালোচনাকে ভয় পাই না৷ কারণ আমরা জানি দুনিয়ায় এমন কেউ নেই যে সমালোচিত হয় না, যে সমালোচনা এড়াতে পেরেছে; দুনিয়ায় এমন কোন পার্টি নেই যে পার্টি সমালোচিত হয় না বা সমালোচনা এড়াতে পেরেছে৷ কোথায় যেন পড়েছি, মহামতি গৌতম বুদ্ধ বলেছেন: Even the Buddhas are blamed. জগতে বুদ্ধগণ পর্যন্ত নিন্দিত হন৷ ইউপিডিএফ বা তার নেতাকর্মীরা কোন ছাড়!
আমরা জানি ও বুঝি, আমরা যতই ভালো কাজ করি না কেন সবার কাছে সমান প্রিয় পাত্র হতে পারবো না৷ আমাদের সমালোচনা করার লোক থাকবে৷ যারা ইউপিডিএফ সম্পর্কে Prejudiced view লালন করেন ও যারা ছিদ্রান্বেষী তাদের কাছে ইউপিডিএফ কখনোই ভালো হতে পারবে না৷ পূর্ণস্বায়ত্তশাসন কেন ইউপিডিএফ যদি পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য স্বাধীনতাও আনতে পারে তবুও এই দুই ধরনের লোক ইউপিডিএফ-কে সমালোচনা করবে৷
তবে এটাও বিশ্বাস করি, দুনিয়ায় সবকিছু পরিবর্তনশীল৷ মানুষের মনও পরিবর্তনশীল৷ আজকে যা বিশ্বাস করছে, নতুন যুক্তি শুনে নতুন তথ্য পেয়ে তার সেই বিশ্বাস নাও থাকতে পারে৷ কারণ মানুষের মন সাধারণত যুক্তিবাদী৷ কাজেই এটাও হতে পারে যে, আমাদের কথা ও যুক্তি শুনে ও কাজ দেখে হয়তো অনেকে তাদের পূর্ব মত পরিবর্তন করে আমাদের পক্ষে দাঁড়াতে পারে৷
(৫) আপনি আমাদের সহযোদ্ধা অনিমেষদা সহ ৪ জনের মৃত্যুর পর যে আলোচনা শুরু করেছেন তার জন্য আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই৷ ইউপিডিএফ-কে সমালোচনা করে আপনিও সত্সাহসের পরিচয় দিয়েছেন৷ আমি আপনার সাথে বিতর্কে অংশ নিয়ে অত্যন্ত লাভবান হয়েছি৷ অনেক কিছু জানতে পেরেছি৷ আপনি কোন প্রজন্মের মানুষ জানি না, তবে আমি দেখেছি যারা নতুন প্রজন্মের তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের আন্দোলন ও ইউপিডিএফ সম্পর্কে অনেক কিছু জানে না, অথবা ভুল ধারণা রয়েছে৷ এই না জানার জন্য তাদের দোষ নেই৷ কিন্তু যদি জানার আগ্রহ না থাকে তাহলে তা অবশ্যই দোষের৷ অবশ্য পার্টি হিসেবে আমাদেরও দায়িত্ব আছে তাদের জানানো৷ এটাও স্বীকার করতে হবে৷
যাই হোক আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ৷ ( উৎসঃ http://www.facebook.com/note.php?note_id=215532908466990 ) ।
সংঘাতের উৎস, পুরা সত্য না হলে ও আংশিক সত্য হিসেবে ধরে নিন । তারপর যাচাই করুণ ।
ইউপিডিএফ ও জেএসএস-এর মধ্যে মধ্যস্থতার প্রচেষ্টা । (উৎসঃ http://www.facebook.com/note.php?note_id=194202520600029 ) ।
@সমরেশ চাকমা,
ধন্যবাদ। হ্যাঁ, জেএসএস-এর নেতা কর্মীদের কাছ থেকে তেমন সাড়া পাইনি। কয়েকজনের ফেসবুকে দু’এক বাক্যে মন্তব্য ছাড়া তেমন কোন আলোচনা চোখে পড়েনি। এটার পেছনে অনেক অনুসিদ্ধান্ত আসতে পারে, যেমন উপরের ভয়ে নিচের লেভেলের কর্মীরা আলোচনায় আসতে ভয় পায়; অথবা অনেকে সামাজিক নেটওয়ার্ক যেমন ফেসবুক ও ব্লগ ব্যবহার করার সুযোগ পায় না; অথবা, লেখালেখি করে বিতর্কে অংশ নেওয়ার দক্ষতা ও যোগ্যতার অভাব; অথবা বিতর্কে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে চরম উদাসিনতা ইত্যাদি।
তারপরও ইতিবাচক হিসেবে নেওয়া দরকার। অন্তত এক পক্ষের লোক আলোচনায় আসছেন। আলোচনার সূচনা হচ্ছে। আলোচনা চলতে থাকুক।
সুষ্ঠ আলোচনার নমুনা -১, যা সবাইকে অনুপ্রাণিত করতে পারে । অডঙ চাকমা একজন নিরপেক্ষ (বর্তমান পার্বত্য রাজনীতির প্রেক্ষাপথে) এবং যুক্তিবাদী, আদিবাসীদের অন্যতম ব্লগার এবং ভালো লেখক । তাই জেএসএস এবং ইউপিডিএফের নেতৃবৃন্ধকে গঠনতান্ত্রিকভাবে উত্তর এবং সমালোচনা করা উচিত । ফেসবুকে আলোচনার কিছু অংশঃ
“ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত ও আমার কিছু মন্তব্য”শীর্ষক লেখার উপর অডঙ চাকমার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে নিগিরা ধন চাকমার বক্তব্য
প্রিয় অডঙ,
আপনার জবাব পড়েছি৷ ধন্যবাদ৷ সংক্ষেপে আমার বক্তব্য এই৷
১৷ আত্মরক্ষা সম্পর্কে — “ভুল” শব্দটি ছিল না ঠিকই৷ কিন্তু আপনার লেখা পড়ে যে কেউ এই সিদ্ধান্তে আসতে বাধ্য যে আপনি আত্মরক্ষাকে ভুল মনে করেন এবং ইউপিডিএফ-কে আত্মরক্ষার অধিকার দিতে নারাজ৷ “আত্মরক্ষা” শব্দটির ব্যাখ্যা সম্পর্কেও বোধ হয় আপনার আর আমার মধ্যে পার্থক্য থাকতে পারে৷ অন্ততঃ আপনার লেখা পড়ে তাই মনে হয়েছে৷ “আপনাদের কয়টা আক্রমণ ছিলে আত্মরক্ষার, আর কয়টা ছিলো স্ব-প্রণোপনাদের কয়টা আক্রমণ ছিলো আত্মরক্ষার, আর কয়টা ছিলো স্ব-প্রণোদিত।” এটারও তো মানে বুঝতে আমার অসুবিধা হচ্ছে৷ আপনি আসলে ঘটনাগুলো খন্ড খন্ড ভাবে দেখছেন “এটা আক্রমণ” “এটা আত্মরক্ষা” “এটা স্বপ্রণোদিত” “এটা পূর্বপরিকল্পিত” এভাবে৷ আত্মরক্ষা ও আক্রমণকে আপনি সামগ্রিক দৃষ্টিতে ও একটি অখন্ড প্রক্রিয়া হিসেবে দেখছেন না৷ সেখানেই গলদ৷ আমরা সবাই জানি আত্মরক্ষা মানে তো নিছক হাত গুটিয়ে বসে থাকা নয়৷ নিষ্ক্রিয় আত্মরক্ষা ও সক্রিয় আত্মরক্ষা বলে যুদ্ধ বিজ্ঞানে দুটো কথা আছে৷ নিষ্ক্রিয় আত্মরক্ষা কোন আত্মরক্ষা নয়৷ আর আত্মরক্ষার মধ্যেও তো আক্রমণ আছে৷ এটা তো আমার কথা নয়, রণ বিশারদদের কথা৷ ইউপিডিএফ যেহেতু একভাবে “যুদ্ধে” লিপ্ত ছিল বা আছে, কাজেই তাদেরকে নিশ্চয়ই যুদ্ধের এই নীতি ফলো করতে হয়েছে৷ মোট কথা হচ্ছে আমার কাছে যেটা স্পষ্ট তা হলো ইউপিডিএফ-কে নিজেদের আত্মরক্ষার প্রয়োজনে উপায়ান্তর না দেখে বাধ্য হয়ে সংঘাতে যেতে হয়েছে৷ এবং তারা যে কোন সময় সংঘাত বন্ধ করতে চায়৷ কিন্তু অপর পক্ষ সেটা চায় না৷ এটাই হলো মৌলিক বিষয়৷
২৷ “আমি যা বলতে চেয়েছিলাম সেটা হলো, খুনোখুনি ঘটনায় ইউপিডিএফ নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা কখনো স্বীকার করেনি।” এটা কি পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে স্বীকার করার মতো ব্যাপার, অন্ততঃ পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতির বাস্তবতায়? স্বীকার করলেই কি ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধ হবে? আর খুনোখুনি যে হচ্ছে সেটা তো সবাই দেখছে, স্বীকার করা না করার প্রসঙ্গটি আমার কাছে অবান্তর৷
৩৷ “ইউপিডিএফই প্রথম একপাক্ষিকভাবে সমঝোতার আহবান জানিয়েছে। সেই আহবান সফল করতে হলে তাকে কায়িক, বাচনিক ও চিন্তায় সৎ হতে হবে।” আপনি ইউপিডিএফ-এর স্বাধিকার ও অন্যান্য বুলেটিনগুলো পড়ুন৷ দেখবেন সমঝোতার আহ্বান জানানোর পর তারা “কায়িক বাচনিক ও চিন্তায়” যথেষ্ট সংযম প্রদর্শন করেছিল৷ ইউপিডিএফ-এর এক নেতা আমাকে একবার বলেছেন, “স্বাধিকারের বহু সংখ্যা পড়লে দেখবেন আমরা (ইউপিডিএফ) কেবল সরকার ও সেনাবাহিনীকে আমাদের লেখায় আক্রমণ করেছিলাম, অপরদিকে, জেএসএস আমাদের নেতাকর্মীদেরর খুন করলেও ঘটনাটা হয় চেপে গেছি, নয়ত কেবল নিউজটা দিয়েছি জেএসএস-এর নাম উল্লেখ না করে৷” তিনি আমাকে আরো বলেন, গত বছর সাজেকে ও খাগড়াছড়িতে জুম্মদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলার কয়েকদিন পর জেএসএস (সন্তু) জুরাছড়িতে তাদের পার্টি অফিস পুড়িয়ে দিয়েছিল ও তাদের যুব সংগঠনের একজন বা দু’জনকে অপহরণ করেছিল৷ সে সময় দেশে বিদেশে সাজেক ঘটনার ব্যাপারে ব্যাপক আন্দোলন হচ্ছিল৷ সেই আন্দোলনে যাতে নেতবাচক প্রভাব না পড়ে সে জন্য তারা জেএসএস এর ওই হামলাটা চেপে রেখেছিল, প্রচার পর্যন্ত করেনি৷ আমার মতে ইউপিডিএফ যথেষ্ট সংযত আচরণ করেছে ও বড় ধরনের ছাড় দিয়েছে৷ কিন্তু তারপরও জেএসএস-এর মন গলেনি৷ জেএসএস তাদের সাথে অন্ততঃ তিন বার সমঝোতা চুক্তি করেও তা লঙ্ঘন করেছে৷ ইউপিডিএফ তাদের প্রকাশনায় কখনো অরাজনৈতিক শব্দ ব্যবহার করেছে বলে আমার মনে হয়নি৷
৪৷ নিরন চাকমার উত্থাপিত যে বিষয়গুলো এড়িয়ে গেছেন:
(ক) ক ও খ এর মারামারির উদাহরণে যে সব প্রশ্ন রেখেছেন সেগুলো আপনি এড়িয়ে গেছেন৷ সরাসরি উত্তর দেননি৷
(খ) নিরন একেবারে শেষে আপনাকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, “আপনার লেখায় পরিস্কার যে, ইউপিডিএফ এবং জেএসএস (সন্তু) এর একটি অংশ আলোচনার মাধ্যমে সংঘাত বন্ধ করতে চায়৷ তাই যদি হয়, তাহলে জেএসএস-এর অপর অংশটিকে চেপে ধরতে হবে৷ তাদেরক বাধ্য করতে হবে আলোচনায় বসতে ও সংঘাত বন্ধ করতে৷ এত কথা বলা হয়, অথচ এই সহজ ও সরল সত্যটা উচ্চারণ করা হয় না কেন আমি বুঝতে পারি না৷ এটা অত্যন্ত দুঃখজনক৷ আমরা কেবল আন্দাজে গুলি ছুঁড়ি লক্ষ্যবস্তু ঠিক না করে৷ এভাবে কখনোই ঐক্য হবে না।” এখানে সোজাসুজি প্রশ্ন না থাকলেও এটাই নিরনের লেখার মর্মকথা বলে আমার মনে হয়েছে৷ অথচ আপনি এই মৌলিক বিষয়টিই বেমালুম এড়িয়ে গেছেন৷ অর্থাত্ জেএসএস-এর অপর অংশকে সমঝোতায় আসতে বাধ্য করতে চাপ প্রয়োগ করা (অহিংস পথে) উচিত কিনা সে ব্যাপারে আপনার মতামত আমি আশা করেছিলাম৷
নিগিরা ধন চাকমা, ৩১ মে ২০১১
(উৎসঃ http://www.facebook.com/profile.php?id=100002355864577 ) ।
প্রিয় অডং,
আবারো পয়েন্ট বাই পয়েন্ট উত্তর দেবার চেষ্টা করছি।
১। কিছু উদ্ধৃতি: মাও সেতুঙ এর Probems of Strategy in China’s revolutionary war থেকে:
Active defence is also known as offensive defence, or defence through decisive engagements. Passive defence is also known as purely defensive defence or pure defence. Passive defence is actually a spurious kind of defence, and the only real defence is active defence, defence for the purpose of counter-attacking and taking the offensive.
( http://www.marxists.org/reference/archive/mao/selected-works/volume-1/mswv1_12.htm )
Clausewitz -এর অন ওয়ার থেকে:
WHAT is defence in conception? The warding off a blow. What is then its characteristic sign? The state of expectancy (or of waiting for this blow). This is the sign by which we always recognise an act as of a defensive character, and by this sign alone can the defensive be distinguished from the offensive in war. But inasmuch as an absolute defence completely contradicts the idea of war, because there would then be war carried on by one side only, it follows that the defence in war can only be relative and the above distinguishing signs must therefore only be applied to the essential idea or general conception: it does not apply to all the separate acts which compose the war. A partial combat is defensive if we receive the onset, the charge of the enemy; a battle is so if we receive the attack, that is, wait for the appearance of the enemy before our position and within range of our fire; a campaign is defensive if we wait for the entry of the enemy into our theatre of war. In all these cases the sign of waiting for and warding off belongs to the general conception, without any contradiction arising with the conception of war, for it may be to our advantage to wait for the charge against our bayonets, or the attack on our position or our theatre of war. But as we must return the enemy’s blows if we are really to carry on war on our side, therefore this offensive act in defensive war takes place more or less under the general title defensive—that is to say, the offensive of which we make use falls under the conception of position or theatre of war. We can, therefore, in a defensive campaign fight offensively, in a defensive battle we may use some divisions for offensive purposes, and lastly, while remaining in position awaiting the enemy’s onslaught, we still make use of the offensive by sending at the same time balls into the enemy’s ranks. The defensive form in war is therefore no mere shield but a shield formed of blows delivered with skill.
http://www.clausewitz.com/readings/OnWar1873/BK6ch01.html
আত্মরক্ষা ও আক্রমণ -এই সামরিক বিষয়গুলো অখণ্ডভাবে বিবেচনা না করলে অন্ধের হস্তি দর্শনের মতো হবে৷ পুরো প্রেক্ষাপট থেকে বিচ্ছিন্ন করে দু’একটি ঘটনার উল্লেখপূর্বক সেগুলোকে ‘আক্রমণ’ অথবা ‘আত্মরক্ষা’ বলা, আর একজন অন্ধ কর্তৃক একটি হাতির কেবল শুঁড়কে স্পর্শ করে ওটাকে হাতি বলা একই জিনিস৷ অর্থাত্ সামগ্রিক বিষয়টাকে দেখতে না পাওয়া৷ খণ্ড খণ্ডভাবে দেখা৷
যাই হোক, বিতর্কের বিষয়টি বাদ দিলেও, আমি বলবো Sun Zu’ এর The Art of War বইটি পড়লে আপনার কাজে লাগতে পারে৷ যুদ্ধ বিষয়ক হলেও এই বইটা পড়তে সমরবিদ ছাড়াও রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রনায়ক, পরিকল্পনাবিদ, একাডেমিশিয়ান, ছাত্র, এমনকি ব্যবসায়ীদেরকেও পরামর্শ দেয়া হয়েছে৷ আমি আপনার বা অন্য কারো কাছে জানার বাহাদুরী দেখাচ্ছি না৷ সে রকম অহংবোধ যাতে আমার কোনদিন না হয়৷ আমি আপনার লেখা পড়ে যতদূর বুঝতে পেরেছি আপনার বুদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে ভালো পড়াশোনা আছে ৷ তাই আপনার জানা থাকার কথা, বুদ্ধ নিজে রাজপুত্র ছিলেন এবং যুদ্ধ বিদ্যা সম্পর্কে তার গভীর জ্ঞান ছিল .. অন্তত সে সময়ের বিবেচনায়৷
২৷ যাই হোক, আমি যতদূর জানি ইউপিডিএফ জনগণের ওপর অন্যায় করা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করে থাকে৷ তারপরও যদি কারো ওপর অন্যায় করা হয়, তাহলে দুঃখ প্রকাশ বা এমনকি ক্ষমা চাওয়া হয়৷ যেমন একটা উদাহরণ দিচ্ছি: কয়েক মাস আগে সন্তু লারমার কিছু অস্ত্রধারী লোকজন পানছড়িতে দুই কি তিন জন নিরীহ গ্রামবাসীকে (পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সর্বোত্তম চাকমার বড় ভাই তাদের মধ্যে একজন) অপহরণ করে ১২ লাখ টাকা মুক্তি পণ আদায় করে৷ ওই ঘটনার পাল্টা হিসেবে ইউপিডিএফ -এর লোকজন সন্তু লারমার এক আত্মীয়সহ অন্য একজনকে ধরে নিয়ে যায় এবং চার কি পাঁচ ল টাকা আদায় করে৷ পরে বিষয়টি উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয় এবং টাকাগুলো ফেরত দিয়ে ভিকটিমদের কাছ থেকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়৷ সেটা করা হয়েছে৷ এভাবে অনেক জায়গায় ভুলের জন্য ইউপিডিএফ জনগণের কাছে ক্ষেত্র বিশেষে দুঃখ প্রকাশ করেছে অথবা ক্ষমা চেয়েছে৷
আপনার লেখা পড়ে বোঝা যায় আপনি একজন প্যাসিফিস্ট৷ সে জন্য আপনি উভয় পকে সমানভাবে দোষারোপ করতে পারেন৷ কিন্তু ইতিহাসে দেখা যায় প্যাসিফিজম যুদ্ধ বন্ধ করতে পারে না, হয়তো যুদ্ধ বন্ধে যত্সামান্য ভূমিকা রাখতে পারে৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেন নাত্সী নেতা হিটলার৷ বাধ্য হয়ে বৃটেন, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া অর্থাত্ মিত্র শক্তিকে যুদ্ধে জড়াতে হয়েছে৷ কেউ কি ওই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হওয়ার জন্য মিত্র পকে দোষী সাব্যস্ত করে? মিত্র শক্তির আক্রমণেও নিশ্চয়ই সাধারণ নিরীহ মানুষ মারা গেছেন৷ তাহলে এজন্য মিত্র শক্তির নেতাদেরকে কি যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার করা হবে? কিন্তু আমরা জানি, নুরেমবার্গ ট্রায়ালে কেবল নাত্সী নেতাদের বিচার করা হয়েছে৷ মিত্র শক্তির কাউকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়নি৷ করা হলে সেটা অন্যায় হতো নিশ্চয়ই৷ এ প্রসঙ্গটি তুললাম এ জন্য যে, চলমান ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতে জড়িত দুই পকেই সমানভাবে দায়ী করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত সেটা গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত৷ … আবার ধান ভানতে শীবের গীত হলো না তো?
৩৷ ধন্যবাদ৷ আশাকরি সে চেষ্টায় সফল হবেন৷ ( উৎসঃ http://www.facebook.com/profile.php?id=100002355864577 )
@সমরেশ চাকমা,
ধন্যবাদ এ নোটগুলো তুলে আনার জন্যে। তবে এ বিষয়ে আমিও জবাব দিয়েছিলাম। সেগুলো আপনার হাতে আছে কি না জানি না। আমার সব নোট ফেসবুকে আছে এবং CHTDB group-এও ট্যাগ করেছিলাম। যদি পড়ে না থাকেন, CHTDB group-এ খোঁজ করতে পারেন।
@অডঙ চাকমা, আমি পেয়েছি কিন্তু আপনার নোট হিসেবে তুলে আনিনি, যেহেতু আপনি নিজেই উপস্থিত বরং সেগুলো আমার তুলে আনা নোটগুলোর পিছনে তুলে ধরতে পারেন, যাতে করে সবাই বুঝতে পারেন । আলোচনা চলুক ।
পুরা লেখাটি আমি পড়েছি খুব যুক্ত যুক্তি মনে হয়েছে। আসলে এই লেখাটা যাদেরকে নিয়ে লেখা তাদের নিকট পৌছে কি? পাহাড়ের সামস্যা নিয়ে আরো বেশি বেশি আপনার লেখা চাই।
@অরূপ,
ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্যে।
যাদের উদ্দেশ্যে লেখা, তাদের কাছে সরাসরি না পৌঁছলেও অন্তত তাদেরকে বাহকরা হলেও পড়তে পারেন।
পার্বত্য এলাকায় শান্তির জন্য প্রয়োজন দুদলের ঐক্য যা আপনার লেখায় স্পষ্ট। যাদের জন্য শান্তি দরকার তারাই নিজেদের মধ্যে রক্তারক্তি করছে। সুতরাং শান্তির পথ আপাতত বন্ধ। দুদলের ঐক্য বা গৃহীত যৌথ কর্মসূচীতে অংশগ্রহন এর ব্যাপারে আপনার প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য একটা যোগ্য ও শক্তিশালী মধ্যস্থতার দরকার। হতে পারে সেটা কোন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু যা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। কারণ, মধ্যস্থতাকারীর কথাই বা তারা শুনবেন কেন? যদি না তাদের মধ্যে ঐক্যের মানসিকতা না থাকে।
আপনি পার্বত্য সমস্যাটার অন্তর্নিহিত ও গঠনমূলক আলোচনা করেছেন। আমি পার্বত্য এলাকায় তিনবছর থেকে এসব উপলব্দি করতে পারিনি যা, আপনার লেখায় উঠে এসেছে। ধন্যবাদ আপনাকে।
@বাদল চৌধুরী,
ধন্যবাদ আপনাকেও।
আপনার মন্তব্যের সাথে দ্বিমত নেই। “শক্তিশালী মধ্যস্থতার” বিষয়ে আপনার সাথে একটু যোগ করতে চাই। মধ্যস্থতা একেবারে হয়নি তা নয়। অবশ্য আপনি নিজেই উত্তর দিয়েছেন, ঐক্যের মানসিকতা না থাকলে সেটা সম্ভব নয়। দু’দলের মধ্যেও ঠিক তাই ছিলো। মধ্যস্থতা চলতে পারে। পাশাপাশি দু’দলের দ্বন্দ্বের ব্যাপারে মুক্ত বিতর্ক চলতে পারে। মুক্ত আলোচনার পরিবেশ এ যাবত হয়নি। পাহাড়ে এ বিষয়ে মুক্তভাবে কথা বলাও কঠিন। যার পক্ষে যায় সেই খুশী, আর যার বিপক্ষে যায় সে প্রচন্ডভাবে বেজার হয়। সেই বেজার হওয়ার পরিণাম খুব ভয়াবহ হতে পারে। এই মুক্ত আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে ফেসবুক ও ব্লগের কল্যাণে। আলোচনা চলুক। দু’দলের সুড়সুড়ি ভেঙে দিতে হবে আগে।
[অতিথিদের বাংলায় মন্তব্য করতে অনুপ্রানিত করা হচ্ছে। ইংরেজী হরফে বাংলা লিখে মন্তব্য করলে তা ভবিষ্যতে প্রকাশিত নাও হতে পারে – এডমিন]
========================
জেএসএস-ইউপিডিএফ ঐক্য কী সম্ভব? –Mr. Odong Chakmar lekhonir bishoye aamader praticriya.
Aamra aapnake agei bolechi, aabekprabon (emotional) na hote. Dekhun, ekjan lekhoker (columnist) othova Journalist othova So-called Neutral othova Peace Broker-der bhasha kintu aapni jevabe likhechen serup noi. “পশুর সাথে” “নির্লজ্জভাবে” “বিবেকের তাড়নাবোধ” etc. shabdagulo ekebare okamyo.
“এমনকি জেএসএস-র তরুণ কর্মী বা জেএসএস ঘরানার ফেসবুকবন্ধুদেরও উভয় পার্টির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই।তবে কিছু কিছু তরুণ জেএসএস কর্মী ইউপিডিএফ-র সাথে রাজনৈতিক সংঘাতের জন্যে প্রবীণ নেতাদের একগুঁয়েমীকে দায়ী করছেন”
Aapnar ukto lekhati joteshta sandeha janak. PCJSS-e senior—junior policy maker nei. Central command-ke follow kora hoi.
“পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতিতে ইউপিডিএফ একটি রাজনৈতিক বাস্তবতা হলেও সন্তু লারমা সে বাস্তবতা মানতে রাজী নন। অর্থাৎ, ইউপিডিএফ তো দূরের কথা সন্তু লারমা জেএসএস বাদে অন্য কোন পাহাড়ী রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব মানেন না”
Aapnar ukto motamat niye aamra ekmot noi. PCJSS President Mr. J. B. Larma alias Santu Larma jeta bolte cheyechilen seta hochche, jara “Purnoswayatashasan” name jummader dwangsha korte hatiyar doroche, tader ostitoke (UPDF) mene nenni. Tini nijer kotha noi, partir policy kothatai bolechen. PCJSS kormira unar baktabyo niye sabai ek. Tobe Jodi, UPDF satyikar orthe sarkarer biruddhye aandolon kore, tahole PCJSS-o tader (UPDF)-ke sahajogita korbe – e kotha PCJSS 2000 sale bolechilo. Kintu UPDF, PCJSS dhwangsha karo policy anukaran koreche matra.
“তৎকালীন পাহাড়ী গণপরিষদের নেতা ও বর্তমান ইউপিডিএফ প্রধান প্রসিত খীসা সংলাপে অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন। এর পেছনে প্রসিতের যুক্তি ছিলো, আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকার সময় জেএসএস পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে তুলে ধরতে পারেনি। সেই জায়গায় পাহাড়ী ছাত্রপরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পাহাড়ী গণপরিষদ এ তিন সংগঠন মিলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যাকে রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছিলো”
Aapnar aro odhyan kora uchit. Aamader jana mote, Party-te aalochanar ekta paddati aache. Sutarang, Prasit-er sate erakam aalochana kakhano hoini.
“পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের ধুয়া তুলে জেএসএস-এর নেতৃত্বের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিলেন প্রসিত”
Prasit-er “পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের ধুয়া PCJSS-ke noi, Bangladesh Sarkarer prati চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে dewa uchit chilo.
“এক জঙ্গলে দুই বাঘ থাকতে পারে না।সেই চাকমা সমাজের দুই বাঘ সন্তু আর প্রসিত এক সঙ্গে বসবাস করতে পারবেন এমন সম্ভাবনা খুবই কম”
Aamader baktabyo, UPDF Nitigatobhave Bangladesh Sarkarer biruddhye sangram korle PCJSS oboshoi UPDF-ke purno sahajogita deve.
“দু’জনেরই বন্দুকের নল খুবই প্রিয়”
Amader mantobyo, PCJSS 1997-98 sale chukti motabek hatiyr sarkarer kache joma diyechilo. Tobe, UPDF-er hotyajagga theke bachar janyo PCJSS hatiyar doreche. Onyotai, UPDF aaj PCJSS-er existence dhwangsa kore dito. Sutarang, Pratirksharthye PCJSS hatiyar doreche.
“ইউপিডিএফ-এর অস্তিত্বকে জেএসএস স্বীকার করে না।জেএসএস-এর “মনোকালচার”(জেএসএসই সব) নীতি এই অনৈক্যের পেছনে অনেকাংশে দায়ী”
Aamra agei bolechi, UPDF Nitigatobhave Bangladesh Sarkarer biruddhye sangram korle PCJSS purno sahajogita deve. Eta 2000 saler PCJSS-er commitments.
“মহাত্মা গান্ধী, অংসান সূচি ও দালাইলামার”
Amader mantobyo, aapnar ukto byiktider bishoye aaro porashuna kora uchit.
“ফান্ডুজরা”ও বেদনাদায়ক পথে হাঁটতে পারে”
Amader mantobyo, aapni CHT bahire thaken bole mone hoi. Karon, ফান্ডুজরা-der bishoye aapni janenna.
“নচেত আপনাদের মুখে জুম্মজনগণের অধিকারের পক্ষে কথা বলা মানাবে না।জুম্মজনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে কোন অধিকার আপনাদের দেয়া হয়নি”
Amader mantobyo, aapni Jodi likhte najanen lekhoni bandha korun. Aapnar lekhoni bibhranti mulok. Ei-bhave bibhranti mulok lekha likhte aapnakeo adhikar dewa hoini. Aapnar lekhoni deke mone hoi aapni ekjan non-Jumma.
Porisheshe, aapnake aamra khub bhalo lok bevechilam. Kintu, ebarer lekhoni dekhe mone holo je, aapni ekjan odharjyo ebong pagoler moto.
HJC
@HJC, আপনার নামটি HRC (Hill Regional Council) হওয়া উচিত ছিল । HJC এর সম্পূর্ণ অর্থ ধরতে না পারার জন্য দূঃখ প্রকাশ করছি । আপনি অভিযোগ করেছেন ইউপিডিএফ শুধু জুম্ম মারার জন্য আন্দোলন করছে আর তাদের সরকারের বিরুদ্ধে কোন কর্মসূচি নেই যা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াদ । সঠিক তথ্য জানতে হলে ভার্চ্যুয়াল মেডিয়ায় চোখ রাখুনঃ ( http://chtnewsbangla.blogspot.com/ )। এইটা একটা নীতি হয়েছে যে কেউ যুক্তিযুক্ত লেখা বা আলোচনায় অংশ নিলে আপনারা আঘাত হেনে লেখনি বন্ধ করতে চান । এমন উগ্রতার কারণে আজ পাহাড়ে রক্ত ঝরছে ।
পাহাড়ে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধের আহ্বান
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি | তারিখ: ১১-০৬-২০১১
(উৎসঃ http://www.prothom-alo.com/detail/date/2011-06-11/news/161474 ) ।
বিভেদ নয় আসুন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করি- সন্তুকে ইউডিডিএফ
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, ০৩ জুলাই, ২০১১ ( উৎসঃ http://www.banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=177cab79f0687e2ae5d883d4acf44e5c&nttl=03+Jul+2011+%C2%A0+08%3A02%3A14+PM+%C2%A0+Sunday47448 )
@HJC,
ধন্যবাদ সমরেশ চাকমাকে HJC-র প্রত্যুত্তরে কিছু জবাব দেওয়ার জন্যে।
HJC-র জবাবে বেশি কিছু বলার প্রয়োজন মনে করছি না। দু’একটা কথা বলে শেষ করতে চাই।
তিনি একটা জায়গায় লিখেছেন,
আপনার জ্ঞাতার্থে বলছি, CHT bahire থাকি না। CHT-তে থাকি বলে সন্তুজ-গুন্ডজ-ফান্ডুজদের নিয়মিত দেখতে হয়। CHT-র বাইরে থাকতে পারলে সব “তুজ”-দের যন্ত্রণা থেকে মুক্ত থাকতে পারতাম।
আপনি আমাকে আমার লেখার ব্যাপারে অনেক উপদেশ দিলেন। দুঃখিত, আপনার সব উপদেশ পালনের যোগ্যতা আমার নেই। আর আমার সব মতামতের সাথে আপনি একমত হবেন সেটাও মনে করি না।
আপনার ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করে বলছি, কাউকে লেখনি বন্ধ করতে উপদেশ বা হুমকি দেবেন না। আমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা আপনার কাছে কিংবা জেএসএস-ইউপিডিএফ বা অন্য কারোর কাছে বন্ধক দিইনি। আমার কথা আমি বলবো এবং বলে যাবো। আমার লেখা পড়া না পড়া আপনার স্বাধীনতা।
শেষে সন্দেহ করেছেন, আমি হয়ত একজন non-Jumma. হা! হা ! হা! সন্দেহ রোগ বড় রোগ। এই রোগ থেকে তাড়াতাড়ি মুক্ত হোন সেই প্রার্থনা করি। যেহেতু সন্দেহ করছেন সেহেতু জুম্ম ভাষায় একটা কটু কথা বলে মন্তব্য শেষ করবো। তবে কটু কথার জন্যে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। ভেইধন,
মুক্তমনাত এ্যাইনে ছন্দবাচ ন মাদিসচ্ছি। ইয়ান ছন্দবাচ মাদিবার জাগা নয়। লাজো নে ন লাজ হিযেনি যিয়ত পাই চেড়েই পারো দে। তোমা দোক্কে মানুষচ্চুনে যিয়োত পাই সিয়োদ চেড়ো হেনে গোদা জুম্ম জাত্তরো হেই ফেলেলা।
@অডঙ চাকমা,
দু:খিত; কিছু মনে করবেন না। মোটা হরফে চাকমা ভাষায় আপনি যে প্রচ্ছন্ন ধমক দিচ্ছেন (মুক্তমনায় এসে ছদ্মনামে মাতামাতি করো না। এটি ছদ্মনামে মাতামাতি করার জায়গা নয়, লজ্জা নেই তোমার– ইত্যাদি ), আমরা মুক্তমনায় ঠিক এমন ভাষা ব্যবহার করিনা। তাছাড়া মুক্তমনায় ছদ্মনাম-পরিচয়ে প্রচুর লেখক ও মন্তব্যকারী আছেন। HJC যদি বাড়াবাড়ি কিছু করেই থাকেন, সেটি দেখার জন্য অ্যাডমিন তো আছেনই।
HJC-র বক্তব্যের বিষয়ে কোনো আগ্রহ নেই। ধন্যবাদ।
জনাব বিপ্লব রহমান,
আপনাকে কিছু একটা না বলে চুপ থাকতে পারলাম না । আপনার বেশ কয়েকটি লেখা এবং মন্তব্য অনেক অব্যবহারযোগী শব্দ থাকাস্বত্তেও আপনি মিথ্যা অপবাদ অডঙ চাকমাকে চাপিয়ে দিচ্ছেন দেখে মুখ খুলতে হলো, দূঃখিত । আপনার অনুবাদটি যে কেউ চাকমা দেখলে হাসবেঃ
বুঝা যাচ্ছে আপনি চাকমা ভাষা পারেন না অথবা ব্যক্তিকে হীয় করতে আপনি মিথ্যা অপবাদটি চাপাতে চাইছেন । আপনি যে অনুবাদ করলেন তার অর্থ হয়েছে সম্পূর্ণ নেতিবাচক যদিও অডঙ ইতিবাচক অর্থে বলেছিলেন । এবার আমার অনুবাদটা পড়ুনঃ
মুক্তমনাত এ্যাইনে ছন্দবাচ ন মাদিসচ্ছি (মুক্তমনাতে এসে আবোল-তালোল বকো না ) । ইয়ান ছন্দবাচ মাদিবার জাগা নয় (এটা আবোল-তাবোল মাথার জায়গা না) । লাজো নে ন লাজ হিযেনি যিয়ত পাই চেড়েই পারো দে (লজ্জা পাও কি পাও না যেখানে সেখানে মলত্যাগ করে দাও) । তোমা দোক্কে মানুষচ্চুনে যিয়োত পাই সিয়োদ চেড়ো হেনে গোদা জুম্ম জাত্তরো হেই ফেলেলা (তোমাদের মতো লোকগুলো যেখানে সেখানে মলত্যাগ করো বিধায় জুম্ম জাতিকে ধ্বংস করছো )।
*ছন্দবাচ = আবোল-তাবোল বকা
বিপ্লব রহমান, আপনি আরো ….ইত্যাদি দিয়ে অনুবাদকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলাতে চেয়েছেন । আপনার মন্তব্যগুলো ঠিকই চোখে ঠেকতেছে ।
@সমরেশ চাকমা,
এ ক দ ম নয়। আমি যা বলেছি, সেটা চাকমা ভাষা না বোঝার ভুল। নীচে অডঙ চাকমার উদ্দেশ্যে দেওয়া আমার বক্তব্যটি পাঠের বিনীত অনুরোধ। 🙂
বিপ্লব দা,
পৃথিবীটা সূর্যের চারদিকে ঘুরছে নিজস্ব নিয়মে; মানুষ আছে বলে কথা নেই । প্রকৃতি এমনই ধরাবাঁধা নিয়মে আবদ্ধ । কর্মফল নামে একটা কথা আছে । HJC নিয়মের বাইরে গিয়ে অডঙ দাদাকে পরবর্তীতে লেখা না লিখতে হুমকি দিয়েছে । অডঙ দাদার প্রতিউত্তরটি এরচেয়ে বেশি সহনশীল হলে HJC’ র মতো অনেকেই অপ্রাসঙ্গিক ঘটনা ঘটাবে । মানুষ বুদ্ধিমত্তা জীব । জানতে গিয়ে বুঝতে চেষ্টা করে ।
ভাসাভাসা ভাষা বুঝলেও অসুবিধা নেই যদি ভুল অনুবাদ করা না হয় । ভুল অনুবাদে জন্য অন্যএকজনের জীবন পর্যন্ত যেতে পারে । আপনার ভুল অনুবাদের জন্য অডঙ দাদার একাউন্টি বানচালের প্রশ্ন উঠতে পারতো । তাই আসুন সততার মাঝে সত্যতাকে আলিঙ্গন করি ।
@জীবন,
HJC একজন নিছক মন্তব্যকারী; তিনি মুক্তমনার লেখক নন। তাছাড়া তার মন্তব্যটি অ্যাডমিন অনুমোদন করার পরেই এটি প্রকাশিত হয়েছে। তার মন্তব্যটি একেবারেই অবান্তর বলে আগেই জানিয়েছি, এ বিষয়ে আমার কোনো আগ্রহ নেই।
মাফ করবেন। অমূলক আশঙ্কার মাত্রা একটু বেশী হয়ে যাচ্ছে বোধহয়। মানুষের জীবন এতো সস্তা নয় যে, ব্লগ সাইটে একজন সহব্লগারের ভুল অনুবাদিত মন্তব্যের একটি মাত্র বাক্যেই তা চলে যাবে। আর এ কারণে অ্যাকাউন্ট বানচালের প্রশ্নে আপনি যা বলছেন, তা নিছকই ভ্রান্ত ধারণা– মুক্তমনাকে এতোটা হালকা ব্লগ সাইট ভাবা ঠিক নয়। 🙂
ধন্যবাদ।
@বিপ্লব রহমান,
চাকমা ভাষা পুরোপুরি না বুঝে আপনি আমার বক্তব্যকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছেন। আমি HJC-কে ধমক দেয়নি। তার ছদ্মনাম নিয়েও প্রশ্ন তুলিনি। HJC যেহেতু আমার জুম্ম পরিচিতি সন্দেহ করছেন সেহেতু কেবল তার সন্দেহ দূর করার জন্যে দু’একটা কথা চাকমা ভাষায় বলেছি। আমার কথাটার অনুবাদ এখানে দিলাম
“মুক্তমনাতে এসে প্রলাপ বকবেন না। এটা প্রলাপ বকার জায়গা নয়।লজ্জাশরম কী নেই, যেখানে সেখানে loose motion করে ফেলেন। আপনার মত লোকগুলো যেখানে সেখানে loose motion করেন বলে আজকে পুরো জুম্ম জাতিকে শেষ করে ফেললেন।”
এবার আপনিই বলুন এটা ধমক কি না। HJC-র মত লোকগুলো যখন আমার লেখা বন্ধ করতে বলেন, বিভিন্নভাবে হেয় করার চেষ্টা করেন তখন কী আমাদের মনের দুঃখ প্রকাশ করতে পারবো না?
ভাই, কারোর ছদ্মনাম নিয়ে এ যাবত কোথাও প্রশ্ন তুলিনি। আসল নাম হোক, ছদ্মনাম হোক যে কারোর লেখা ও মন্তব্যকে স্বাগত জানাই।
আশা করি, আমার বক্তব্য স্পষ্ট করতে পারলাম। ধন্যবাদ।
@অডঙ চাকমা,
ঠিক বলেছেন, চাকমা ভাষা আমার প্রায় আসেই না। তবে খানিকটা বোঝার চেষ্টা করেছিলাম, সেটিও ভাল করে বুঝিনি দেখছি। এরপরেও HJC র উদ্দেশ্যে আপনি যা বলেছেন, তা-ও মুক্তমনায় ব্যবহৃত সচারাচর ভাষা নয়। এতে প্রচ্ছন্ন ধমকই শুধু নেই– বেশ খানিকটা ব্যক্তি বিদ্বেষও রয়েছে, যা আমার আগের বক্তব্যকেই সমর্থন করে [আমরা মুক্তমনায় ঠিক এমন ভাষা ব্যবহার করিনা। তাছাড়া মুক্তমনায় ছদ্মনাম-পরিচয়ে প্রচুর লেখক ও মন্তব্যকারী আছেন। HJC যদি বাড়াবাড়ি কিছু করেই থাকেন, সেটি দেখার জন্য অ্যাডমিন তো আছেনই]।
আপনার সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ। (Y)
@বিপ্লব রহমান,
পুনরায় জবাব দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো না। কিন্তু যখন আমার বিরুদ্ধে “ব্যক্তি বিদ্বেষের” অভিযোগ আনলেন তখন কিছু না বলে পারছি না। দয়া করে, একটু ব্যাখ্যা দেবেন কী কীভাবে “ব্যক্তি বিদ্বেষ” করলাম।
অ্যাডমিনের কাছ থেকেও ব্যাখ্যা আশা করছি এখানে মুক্তমনায় কি রকম ভাষা ব্যবহার করা হয়।
@অডঙ চাকমা,
HJC-র উদ্দেশ্যে আপনার অনুবাদিত বক্তব্য:
আর এখন বলছেন:
মন্তব্য নিস্প্রয়োজন। 😛
অ্যাঁ!! 😕
অডঙ চাকমাকে মুক্তমনায় স্বাগতম। (F) (F)
@তামান্না ঝুমু,
ধন্যবাদ আপনাকেও।
পাহাড় এবং পাহাড়ি জনগনের অধিকার নিয়ে মুক্তমনায় সম্প্রতি বেশ কিছু ভাল লেখা এসেছে। যদিও অমিত হিল এবং বিপ্লব রহমানের বিতর্ক কিছুটা ব্যক্তি আক্রমণপ্রসুত ছিল, তারপরেও এই বিতর্কের ফলেই আমরা সাধারণ ব্লগাররা অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারলাম।
আমি গতকাল অডঙ চাকমাকে অনুরোধ করেছিলাম তার অভিমতগুলো প্রকাশ করার জন্য। তিনি যে ব্যস্ততার মাঝেও সেই অনুরোধ রেখেছেন সেজন্য ধন্যবাদ প্রকাশ করছি।
আপনার লেখা থেকে যেটুকু বুঝলাম পাহাড়ি জনগনের অধিকার আন্দোলনের ব্যাপারটা এখন সন্তু লারমা আর প্রসিতের ক্ষমতা দখলের লড়াই আর ইগোতে পরিণত হয়েছে। সে হিসেবে, ‘জনগণ জেএসএস-ইউপিডিএফ হতে সাবধান’ বলার তাৎপর্য আমি অনুভব করতে পারছি, কিন্তু এর প্র্যাকটিকাল সমাধান কি হতে পারে? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় জনগনের দাবী আদায় এমনি এমনি হয় না, অনেক সময়ই যোগ্য নেতার দরকার হয়। শেখ মুজিবের স্বাধীনতা উত্তোর সময়ে যতই ব্যর্থতা থাকুক না কেন, শেখ মুজিবের মত ক্যারিশমেটিক নেতা ছাড়া বাংলাদেশ হয়তো স্বাধীন হতে পারতো না, এটা নিঃসন্দেহ। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে জুম্মজনগণের অধিকার আর সায়ত্ত্ব শাসনের দাবী এখন সন্তু আর প্রসিতের ক্ষমতার কামড়াকামড়িতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এ দু’জনকে বাদ দিয়ে জনগণ অধিকার আধায় করে নিতে সমর্থ হবে কি? নেতৃত্বের দিকটা আরেকটু স্পষ্ট হলে একটা দিকনির্দেশনা পাওয়া যেত।
এই গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধটির জন্য অশেষ ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ দা ,
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্যে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে, খুব narrow sense-এ ব্যাখ্যা করলে দু’নেতার ব্যক্তিগত ইগো বা একগুঁয়েমির কারণে এ দ্বন্দ্ব। হ্যাঁ, প্র্যাকটিক্যাল সমাধান কিভাবে হতে পারে সেটা অনেক আলোচনার বিষয়। দু’দলই পরস্পরকে দোষারোপ করে থাকে। কিন্তু এ দোষারোপের মধ্যে কোন সমাধান নেই। অন্যদিকে, উভয় দলের মধ্যে মধ্যস্থতা করার মত তৃতীয় কোন পক্ষ নেই। এ অবস্থায় কীভাবে তাদের দ্বন্দ্ব নিরসন হবে সেটা অনেক বড় প্রশ্ন। কিন্তু তাদের দ্বন্দ্বের কারণে সাধারণ মানুষরা প্রচন্ডভাবে দুর্ভোগের শিকার। এ প্রেক্ষিতে আমি সাধারণ নাগরিক হিসেবে তাদের মধ্যে কীভাবে ঐক্য হতে পারে এবং ঐক্য প্রক্রিয়ায় কী কী অন্তরায় থাকতে পারে সেসব ব্যাপারে আমার চিন্তাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র।
যেহেতু আমি কোন দলের ভেতরের লোক নয়, সেহেতু তাদের নেতৃত্বের ধরন বা স্টাইল সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া একটু কঠিন বটে। তবে বাইরে থেকে যা দেখতে পাই বা শুনতে পাই, সেই দেখা-শুনা হতে দু’একটা মন্তব্য করা যায়। জেএসএস পুরনো দল, তবে অধিকাংশ সময় ধরে আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিলো। গেরিলা দল হিসেবে রেজিমেন্টেড পার্টি । স্বাভাবিকভাবে পার্টির নেতৃত্বের স্টাইলও রেজিমেন্টেড।সর্বাধিনায়ক যা বলেন সেটাই অবশ্যই পালনীয়। অর্থাৎ রেজিমেন্টেড পার্টি হিসেবে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের খুব বেশি চর্চা হয়েছিলো তেমনটা মনে করার কোন কারণ নেই। চুক্তির পর স্বাভাবিক রাজনৈতিক জীবনে ফিরে এলেও জেএসএস সেই রেজিমেন্টেড স্ট্রাকচার থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে বলে মনে হয় না। স্বাভাবিকভাবে রেজিমেন্টেড স্ট্রাকচারে পার্টির মধ্যে মুক্ত জ্ঞানবুদ্ধি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। এ অবস্থায় জাতীয় কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উন্মুক্ত বিতর্কের মধ্য দিয়ে কোন পার্টির কোন কর্মসূচী বা পরিকল্পনা গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনাও খুবই কম।
অন্যদিকে, ইউপিডিএফ-এর নেতৃত্বও খুব গণতান্ত্রিক তেমনটা বিশ্বাস করতে পারি না। তাদের কিছু কাজকর্ম দেখলে মনে হয়, তারাও হুজুগে সিদ্ধান্ত নেন এবং রোমান্টিসিজমে ভুগেন। প্রতিষ্ঠা হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে ইউপিডিএফ ভাঙনের শিকার হয়। অনেক কেন্দ্রীয় নেতা পালিয়ে গেছেন, অথবা জেএসএস-এ যোগদান করেছেন। এসব বিষয় ভালো নেতৃত্বের নির্দেশক হতে পারে না। সাধারণ নাগরিক হিসেবে এটা আমার পর্যবেক্ষণ। আশা করি, জেএসএস-ইউপিডিএফ সংশ্লিষ্টরা তাদের নেতৃত্বের স্টাইল সম্পর্কে আলোচনা করবেন।
হ্যাঁ, যোগ্য নেতার প্রয়োজন। এই মুহুর্তে জুম্ম সমাজে শেখ মুজিবের মত ক্যারিশম্যাটিক নেতা দেখতে পাচ্ছি না যার ডাকে পুরো জুম্মজনগণ সাড়া দেবে, একত্রিত হবে । সন্তু লারমা কিংবা প্রসিত কেউই আর অবিসংবাদিত নেতা নন। তারা বাদ-বিসংবাদে লিপ্ত। করার কিছুই নেই। এ মুহুর্তে তাদের দু’জনের ভূমিকা চলতে থাকবে। তবে তাদের দু’জনের ব্যর্থতার চলতে থাকলে মেকানিক্যালি নয়, অর্গানিক্যালি এক সময় নেতৃত্ব বের হয়ে আসবে। এটা সময়ের উপর ছেড়ে দিতে হবে।
অভিজিৎ, আপনাকে আবারও ধন্যবাদ আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্যে এবং মুক্তমনায় আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্যে।
@অভিজিৎ দা, আমি আন্তরিকভাবে দূঃখিত আমার লেখাতে যদি অমার্জিত ব্যক্তি আক্রমন থেকে থাকে । আমার লেখাতে আবেগ ছিল আমি লেখার প্রারম্ভে পরিষ্কার করেছিলাম । আশাকরি ভবিষ্যতে সচেতন হবো । ধন্যবাদ মনে করিয়ে দেয়ার জন্য ।
@অভিজিৎ দা,
এটি একটি খুব ভালো কাজ হয়েছে। অডঙ চাকমাও তার প্রথম লেখায় মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। তার লেখাটি স্পর্শকাতর হলেও এতে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্তি বা ব্যক্তি কুৎসা — কোনোটিই নেই।
আদিবাসী বিষয়ক একজন পর্যবেক্ষক হিসেবে আমি বরাবরই বিশ্বাস করি, আদিবাসী সমস্যা নিয়ে আদিবাসী লেখকরা লিখলেই দাবিনামার কণ্ঠস্বর আরো উচ্চকিত হয়। চলুক। (Y)
অডঙ চাকমাকে মুক্তমনায় স্বাগতম।
চিন্তা-জাগানিয়া সুন্দর বিশ্লেষণধর্মী লেখা।পাহাড় নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ লেখা এবং সুস্থ গঠনমূলক আলোচনা চলুক অব্যাহত।
@ফরিদ আহমেদ,
ধন্যবাদ আপনাকেও।
ঐতিহাসিক ভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অবিচ্ছেদ অংশ । তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার সমাধান বাংলাদেশের রাজনীতির মধ্যে নিহীত । যদি আঞ্ছলিক দলগুলি সমস্যার সমাধান চান, তা হলে তাদেরকে নিজ পছন্দের বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে ।
আজ হউক কাল হউক শান্তি চুক্তি বাস্তবায়িত হবে । কিন্তু আঞ্ছলিক দলগুলির মধ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে হালুয়া-রুটির ভাগ বাটরা নিয়ে । দলগুলি ন্যাড়া কুকুরের মত মাংসের টুকরা নিয়ে কামড়া-কামড়ি করছে ।
@আ হা মহিউদ্দীন,
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্যে। কিন্তু একটা বাক্যে একটু খটকা লাগলো,
এর মাধ্যমে কী বুঝাতে চাচ্ছেন? ধরলাম, আমাদের পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলো আওয়ামীলীগ কিংবা বিএনিপির সাথে মিশে গেলো। কিন্তু সেখানে তো দল হিসেবে আওয়ামীলীগ বা বিএনিপি যা বলে সেই বাইরে ভিন্ন কোন মত থাকে না। বাস্তবে ঘটছেও তাই। অনেক আদিবাসী রাজনৈতিক নেতা আওয়ামীলীগ বা বিএনিপি করছেন, কিন্তু আদিবাসীদের জন্যে তাদের নিজস্ব কোন কন্ঠ নেই। যদিও তারা জন্মে, রক্তে-মাংসে আদিবাসী, কিন্তু তাদের মনে আদিবাসী চেতনা নেই, আছে কেবল আওয়ামীলীগ বা বিএনিপি চেতনা।
হালুয়া-রুটি বা মাংসের টুকরা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে কামড়া-কামড়ি ইত্যাদি উত্তেজক শব্দ ব্যবহার করা যায়, কিন্তু এতে প্রকৃত সমস্যার বিশ্লেষণ পাওয়া যায় না। তত্তগতভাবে বললে চুক্তি বাস্তবায়ন বা আদিবাসী সমস্যার সমাধান না হওয়ার সমস্যটা রাষ্ট্র ব্যবস্থার মধ্যে নিহিত আছে। এখানে, প্রথমে সংবিধানের কথা বলা যায়। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় অংশ গ্রহণের জন্যে সংবিধান তো আদিবাসীদের পক্ষে কোন ব্যবস্থা রাখেনি। বাংলাদেশ রাষ্ট্রে জাতি গঠনের দর্শন হলো ‘একক সত্তাবিশিষ্ট জাতি’। বাংলাদেশ শুরু হওয়ার সময় থেকে এ নীতি ছিলো, এখনো আছে। বরং পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তা আরো পাকাপোক্ত করা হয়েছে।
@অডঙ চাকমা,
রাজনীতিতে ধরে নেয়ার কোন স্থান নাই । রাজনীতি হলো শ্রেনী সংগ্রাম । বিভিন্ন শ্রেনীর ও ব্যক্তি স্বার্থের লড়াই । বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ছাড়াও বাংলাদেশে আরও দল আছে, যারা মেহনতি মানুষের কথা বলে, আদি বাসীদের কথা বলে । এদের চাপেই আওয়ামী লীগ শান্তি চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছে । এদের চাপে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে শাসক গোষ্ঠি বাধ্য হবে । এরাই আদি বাসীদের সংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়ার ব্যাপারে সোচ্চার । তাই এদের হাতকে শক্তিশালী করা প্রয়োজন । এদের ছাড়া আঞ্ছলিক দলগুলি কিছু করার ক্কমতা রাখে না । তাছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে সশস্ত্র আন্দোলনের অবস্থা বিরাজ করে না । পার্বত্য চট্টগ্রামে যে মধ্যবিত্তের উন্মেষ ঘটেছে, তারা এখন সমতল ভূমির মধ্যবিত্তের মত হালুয়া রুটির ভাগবাটোরা নিয়ে ব্যস্ত ।
@আ হা মহিউদ্দীন, আপনি যাদের দ্বারা চাপের কথা বলছেন তাঁরাতো বর্তমানে সরকারের চেয়ারে । আপোষ করেছিল কিছু পাবার আশায়, রাষ্ট্রধর্মের পরিবর্তন হয়েছে বটে আশাকে নিরাশা করে । আদিবাসীদের স্বীকৃতিতো শুধু অস্বীকার করা হয়নি, দেয়া হয়েছে বেশকিছু সুন্দর-সুন্দর অভিধা যেমনঃ “ক্ষুদ্র-নৃ গোষ্ঠী/উপজাতি/জনজাতি” । শ্রেণী সংগ্রাম অব্যাহত থাকুক …..। বামদলদের প্রগতিশীলতার পরিচয় দেয়া জরুরী; দিতে পারলে হাত শক্ত হবে । সন্তু লারমা খুন করলে তাঁকে খুন করতে বাঁধা প্রদান করা উচিত ঠিক একইভাবে প্রসিত খীসা যদি করেন তাঁকে ও । মধ্যেবিত্তদের অংশগ্রহণ ব্যতীত রাজনীতি চলতে পারে না । খারাপ এবং ভালো দুটাই উপস্থিত । দ্বান্দিকতা বিদ্যমান; নির্ভর করছে বাংলাদেশের মূল রাজনৈতির প্রভাবের উপর । তবে বিরাট ব্যবধান ।
@সমরেশ চাকমা,
(Y)
@আ হা মহিউদ্দীন,
আপনার মন্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রথম আলোর সাংবাদিক হরি কিশোর চাকমা অন্য একটি ব্লগে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। আপনার জন্যে লিংকটা এখানে দিলাম
http://www.news.chtbd.net/?p=724#comment-174
ধন্যবাদ আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্যে।
(Y)
@Sedampanja Chakma,
পানজা ভেইধন, তরে দেগিনে গম লাগের। দ্বি-এক কলম বোজেই যেদে আরো হুঝি ওলুংঙুন।
অডঙ চাকমাকে মুক্তমনায় স্বাগতম। (F)
আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির প্রশ্নটির বাইরে পাহাড়ের সমসাময়িক রাজনীতির সবচেয়ে আলোচিত বিষয় নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ। লেখাটির মূল সুরের সঙ্গে এ ক ম ত। কোনো যুক্তিতেই পাহাড়ের দ্বি/ত্রি পক্ষীয় ভাতৃঘাতি সংঘাত মেনে নেওয়া যায় না। অনর্থক রেফারেন্সের কচকচানির বাইরে লেখকের নিজস্ব যুক্তি ও বিশ্লেষনের ধরণটিও বেশ ভালো। তবে লেখার শেষ বাক্যটির সঙ্গে বেশ খানিকটা দ্বি ম ত।
এর সঙ্গে আরকটু যোগ করে বলতে চাই, পার্বত্য আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে এক পক্ষ চায় শান্তিচুক্তির বাস্তবায়ন; চুক্তি বিরোধী অন্য পক্ষটি চায় পূর্ণসায়ত্বশাসন (?)। অর্থাৎ পাহাড়ি আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের প্রশ্নে উভয়ের আদর্শ এক হলেও রণনীতিগত দিক থেকে দুপক্ষের অবস্থান বিপরীতমুখি। এদিক থেকে বিচার করলে, উভয়ের ঐক্য বেশ খানিকটা অসম্ভব ব্যাপার। এ কারণে একে অপরকে অস্বীকার করেই পক্ষ দুটি পাহাড়ে আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে চায়।
তবে উভয়েরই লক্ষ্য যেহেতু জুম্ম (পাহাড়ি) জাতির মুক্তি, অর্থাৎ আদর্শিক প্রশ্নে উভয়ের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা হতে পারে। একে অপরকে আঘাত না করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান হতে পারে। বরং এটিই এখন জোর কাম্য।
অন্যদিকে, পার্বত্য চট্টগ্রামের অদূর ভবিষ্যত শেষ পর্যন্ত সেখানের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের শক্তির ওপরেই বর্তায়। তাই —
এমনটি বলা কোনো কাজের কথা নয়। জুম্ম জাতি রক্তদিয়ে পার্বত্য শান্তিচুক্তি [লিংক] আদায় করেছে। পাঁচ দফা দাবি আদায়ে জনসংহতি সমিতির সাবেক গেরিলা দল শান্তিবাহিনী পাহাড়ে প্রায় তিন দশক সশস্ত্র যুদ্ধ করেছে। এই পাঁচ দফাই সংশোধিত আকারে শান্তিচুক্তির রূপ নিয়েছে। চাকমা রাজা যেমনটি অভিমত প্রকাশ করেন:
[লিংক]
তাই কোনোভাবেই এ চুক্তিকে বৃথা যেতে দেওয়া যায় না। এই চুক্তিতে পার্বত্য সমস্যা সমাধানের যে দিক-নির্দেশনা দেওয়া আছে, তা বাস্তবায়নেও সত্যিকার অর্থে আন্তরিকদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন হতে পারে। নইলে শুধুমাত্র ভাতৃঘাতি লড়াই বন্ধ হলেই পার্বত্য সমস্যার সমাধান হবে না। সংগ্রামের পথটি অনেক দীর্ঘতর। এ জন্য পাহাড়ে ও সমতলের সমমনাদের যুথবদ্ধতাও প্রয়োজন বৈকি।
চিন্তাটিকে উস্কে দেওয়ার জন্য আবারো লেখককে সাধুবাদ জানাই। চলুক। (Y)
@বিপ্লব রহমান,
আপনাকেও ধন্যবাদ আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্যে।
“জেএসএস-ইউপিডিএফ হতে সাবধান” অর্থ তাদের ককুর্ম হতে সাবধান হওয়া। তারা যে কোন যুক্তি খাড়া করুক না কেন, তাদের মারামারি, খুনোখুনি যে কোন বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারে না।
আপনি, দু’দলের রণণীতি ও আদর্শিক প্রশ্ন নিয়ে কিছু বলতে চেয়েছিলেন। তবে তাদের গঠনতন্ত্র কিংবা লিখিত সাহিত্যে এসব ব্যাপারে তেমন একটা ধারনা পায়নি। আপনার রেফারেন্স থাকলে আলোচনা করতে পারেন। আমার কাছে তাদের এসব বায়বীয় শব্দ এখন অদ্ভুত মনে হয়। কোনটা নীতি আর কোনটা কৌশল আমরা সাধারণ মানুষরা কীভাবে বুঝবো? এসব দুর্বোধ্য রাজনৈতিক পরিভাষা দিয়ে সাধারণ মানুষকে কিছু সময়ের জন্যে বিমোহিত করা যায়, কিন্তু সেখানে প্রকৃত সমাধান নেই। সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমরা মনে করি, যদি সত্যিকার অর্থে জেএসএস-ইউপিডিএফ জুম্মজনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাদেরকে অনেক পরিবর্তন হতে হবে, দ্বন্দ্ব সংঘাত অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। পরস্পরকে নির্মূল করার চিন্তা থেকে সরে আসতে হবে। মারামারি করা ছাড়া আরো অনেক বিকল্প পথ আছে। খুনোখুনির মত বর্বরতা দেখতে চাই না, তাদের কাছ থেকে মনেপ্রাণে রাজনৈতিক সৃজনশীলতা ও গতিশীলতা কামনা করি।
আমি পার্বত্য চুক্তিকে অস্বীকার করি না। মনে প্রাণে চেয়েছিলাম চুক্তি হোক। এখনো চাই, চুক্তি বাস্তবায়ন হোক। চুক্তির সাথে অগণিত মানুষের যে আত্মত্যাগ সেটা অবশ্যই শ্রদ্ধা করি। সে শ্রদ্ধা আজীবন অটুট থাকবে।
ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, জেএসএস-এর অতীত আছে, কিন্তু বর্তমানটা বড়ই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও চুক্তিবাস্তবায়ন প্রশ্নে জেএসএস চুক্তিস্বাক্ষরকারী দল হিসেবে এ যাবত রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে পারেনি। চুক্তিবাস্তবায়নের জন্যে জেএসএস কেবল সরকারের দিকে তাকিয়ে ছিলো, এখনো আছে। কিন্তু নিজের কোন প্রস্তুতি ছিলো না এবং এখনো নেই। চুক্তিবাস্তবায়ন নিয়ে নিজস্ব কোন ভিশন বা পরিকল্পনা তারা তৈরী করতে পারেনি এবং সেভাবে এগুতে পারেনি। বরং ইউপিডিএফ-এর সাথে সংঘাতে গিয়ে নিজেদের শক্তি ক্ষয় করেছে। এখন নিজেরাই দ্বিধাবিভক্ত হয়েছে জেএসএস (সন্তু) ও জেএসএস (এন এন লারমা) নামে। তাই আগামীতে চুক্তি সফল হবে নাকি বৃথা যাবে সেটা নির্ভর করবে জেএসএস-র রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও সৃজনশীলতার উপর।
হ্যাঁ, আপনার সাথে একমত – কেবল “ভাতৃঘাতি লড়াই বন্ধ হলেই পার্বত্য সমস্যার সমাধান হবে না। সংগ্রামের পথটি অনেক দীর্ঘতর”। এই দীর্ঘতর সংগ্রামে জাতিকে কে এগিয়ে নেবে সেটাই বড় প্রশ্ন।
ধন্যবাদ আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্যে।
@অডঙ চাকমা,
ওহ! আচ্ছা, এইবার বুঝেছি। 🙂
মাফ করবেন। আপনার বক্তব্যের উগ্রতাটুকু ভালো লাগলো না। রাজনৈতিক পরিভাষায় বিমোহিত করার কোনো চেষ্টাই আমার নেই। স্বঘোষিত দ্বন্দ্ববাদের
তাত্ত্বিক বিশ্লেষকও আমি নই। বিষয়টি আপনার কাছে দুর্বোধ্য মনে হচ্ছে দেখেই হয়তো অমনটি বলেছেন, গঠনতান্ত্রিক রেফারেন্সও চেয়েছেন। 🙁
আসলে আমি যা বলতে চেয়েছি, তা হলো:
জেএসএস ও ইউপিডিএফ প্রকৃত অর্থে জুম্ম জাতির মুক্তি চাইলে, তাদের সংগ্রামের ধরণ যা-ই হোক না কোনো, নূন্যতম এই আদর্শিক অবস্থানে ভাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধে উভয়ের রাজনৈতিক সমঝোতা হতে পারে; বরং এটিই এখন সময়ের দাবি। অর্থাৎ বক্তব্যের ফোকাস পয়েন্টে আপনার সঙ্গে আমার মতৈক্য রয়েছে বৈকি। চলুক। (Y)
@বিপ্লব রহমান,
দুঃখিত, আপনি আমার বক্তব্যে উগ্রতা খুঁজে পেলেন। আপনার বিরুদ্ধে দুর্বোধ্য রাজনৈতিক পরিভাষা ব্যবহারের অভিযোগ আনিনি। ভালো করে আমার মন্তব্যের সুরটা ধরার চেষ্টা করুন। আমি আপনাকে indicate করিনি।
জেএসএস-ইউপিডিডিএফ উভয় দলই “রণীতি, রণকৌশল ও আদর্শের” দোহাই দিয়ে একে অপরকে ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করার চেষ্টা করে থাকে। আদর্শের দোহাই দিয়ে তাদের মধ্যেকার ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতকে জায়েজ করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এ যাবত তাদের গঠনতন্ত্র কিংরা তাদের রাজনৈতিক সাহিত্য বা তাদের কোন লেখালেখিতে তাদের কথিত “রণীতি, রণকৌশল ও আদর্শ ” সম্পর্কে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ পাইনি। “রণীতি, রণকৌশল ও আদর্শ” এসব প্রত্যয় সম্পর্কে একেবারে ধারনা নেই সেটা নয়। কিন্তু দু’দলের নেতারা যখন “রণীতি, রণকৌশল ও আদর্শ” নিয়ে কথা বলেন এবং এসব শব্দের আবরণে খুনোখুনি রাজনীতিকে সমর্থন দিয়ে যান, স্বাভাবিকভাবে তাদের কথিত “নীতি, কৌশল ও আদর্শ” নিয়ে প্রশ্ন জাগে। আপনিও আপনার মন্তব্যে “রণীতি ও রণকৌশল” শব্দগুলো উচ্চারণ করেছেন।
যেহেতু আপনি তাদের কাছাকাছি থাকেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতি অধ্যয়ন করেন এবং লেখালেখি করেন, সেহেতু আপনাকে অনুরোধ করেছি তাদের “নীতি, কৌশল ও আদর্শ” সম্পর্কে জানা থাকলে বা রেফারেন্স থাকলে আমাদেরকে আলোকিত করেন। আপনাকে বাধ্যতামূলকভাবে গঠনতান্ত্রিক রেফারেন্স দিতে বলিনি।
ধন্যবাদ আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্যে।
@অডঙ চাকমা,
ঠিকাছে। কিপিটাপ। (Y)
মুক্তমনায় স্বাগতম এবং লাল গোলাপের শুভেচ্ছা । (F)
আশাকরি গঠনতান্ত্রিক আলোচনা এবং সমালোচনার জন্য প্রগতিশীল মুক্তমনাদের পাশাপাশি পাহাড় পরিদর্শক, অভিজ্ঞ, পাহাড়ের রাজনীতিবিদ এবং শান্তিকামীরা অংশগ্রহণ করে আলোচনাকে সফল করবেন ।
আলোচনা চলুক । (Y)
@অমিত হিল, ধন্যবাদ অমিত। ব্যস্ততার মধ্যেও চেষ্টা করবো নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণের জন্যে।
@অডঙ দা,
(Y) (Y)