[স্বাধীন ইচ্ছা নিয়ে মুক্তমনা গ্রুপে পূর্বে আমার দুটো লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। একটি হল “স্বাধীন ইচ্ছা, মন্দ আর ইশ্বরের অস্তিত্ব, আর অন্যটা ইংরেজীতে, “Freewill vs. Destiny“,যার উপর ভিত্তি করে ডারউইন দিবস উপলক্ষ্যে পরিবর্ধিত আকারে বাংলায় মুক্তমনা ব্লগের জন্য বিশেষ করে এটা লেখা।]

[ আমি ইচ্ছার স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি না। শোপেনহাওয়ারের “মানুষের যা করতে ইচ্ছা হবে সেটা সে করতে পারে। কিন্তু সে কি ইচ্ছা করবে সেটা সে ইচ্ছা করতে পারে না” সেই উক্তিটি আমার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিত্য সাথী হয়ে আছে, অন্যের কর্মকান্ডের সাথে মানিয়ে চলার জন্য, যদি তা আমার জন্য পীড়াদায়কও হয়। স্বাধীন ইচ্ছার অনস্তিত্বের এই উপলব্ধি আমাকে আমার নিজের আর সঙ্গী সাথীদের বিচারবুদ্ধি বা ক্রিয়াকলাপকে খুব গাম্ভীর্যের সাথে নিয়ে পাছে আমার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলি, তা থেকে আমাকে রক্ষা করে। – আইনস্টাইন, Mein Glaubensbekenntnis (আমার বিশ্বাস) , আগস্ট,১৯৩২ ]

বিবর্তন মনোবিদ্যা মানব প্রকৃতির যেসব বৈবর্তনিক ব্যাখ্যা দিচ্ছে তা আমাদেরকে মানব মন নিয়ে নতুন করে ভাবতে ও উপলব্ধি করতে বাধ্য করছে। স্বাধীন ইচ্ছার অনুভূতি নিয়েও নতুন উপলব্ধি আসছে আমাদের। স্বাধীন ইচ্ছা নিয়ে ভাবনা চিন্তাটা অনেক পুরোনো ব্যাপার। মানুষের কর্ম কি তার মনের স্বাধীন ইচ্ছা জনিত সচেতন সিদ্ধান্তের দ্বারা নির্ধারিত হয় না কি মন বহির্ভূত প্রাকৃতিক কারণের দ্বারা এই প্রশ্নটি সুদূর অতীত থেকে ধ্রূপদী দার্শনিকদের বিতর্কের এক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। আধুনিক বিজ্ঞানের অভিজ্ঞানের অভাবে তাঁদের তাঁদের অধিকাংশরাই এই বিষয়ে স্পষ্ট, যুক্তিপূর্ণ কোন মত দিতে পারেন নি। একমাত্র শোপেনহাওয়ারই পরিস্কার যৌক্তিক বিশ্লেষন দিয়েছিলেন স্বাধীন চিন্তা নিয়ে। ১৮৩৯ সালে নরওয়েজীয় বিজ্ঞান সমিতির এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্বাধীন চিন্তার উপর এক প্রবন্ধ সমিতির কাছে পেশ করেন, যাতে তিনি লিখেছিলেনঃ

“You can do what you will, but in any given moment of your life you can will only one definite thing and absolutely nothing other than that one thing.”

[“তুমি যা খুশি তাই করতে পার। কিন্তু জীবনের যে কোন একটি মুহূর্তে তুমি কেবলমাত্র একটা কাজ করার ইচ্ছাই প্রকাশ করবে, সেই কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজের ইচ্ছা নয়।” ]

প্রবন্ধের শুরুতে দেয়া আইনস্টাইনের উদ্ধৃতিতে আইনস্টাইন শোপেনহাওয়ারের এই উক্তিকেই একটু ঘুরিয়ে বলেছিলেন। আইনস্টাইনের ভাষ্যতেই স্বাধীন চিন্তার অধ্যাসটা সুন্দরভাবে ব্যক্ত হয়েছে। (আইনস্টাইনের নিজের গলায় জার্মান ভাষায় এই উক্তিটি শুনতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন)। শোপেনহাওয়ার তাঁর প্রবন্ধে বস্তুত এটাই বলতে চেয়েছিলেন যে মানুষকে একটা প্রপঞ্চময় বস্তু (phenomenal objects) হিসেবে দেখলে প্রেক্ষকের কাছে তার কোন স্বাধীন চিন্তা প্রতীয়মান হবে না। মানুষের শরীর কারণ ও উদ্দীপকের তাড়নায়ই চালিত হয়। তবে প্রেক্ষকের দৃষ্টিতে না দেখে মানুষের নিজের দৃষ্টিতে দেখলে তার যে স্বাধীন চিন্তা আছে সেটা ভাবলে ভুল হবে না। সমসাময়িক স্নায়ুবিজ্ঞানীদের বক্তব্যের সাথে তাঁর বক্তব্যের মিল লক্ষণীয়।

স্বাধীন চিন্তা নিয়ে আইন্সটাইনের আরেকটা উদ্ধৃতি না দিলেই নয়। রবী ঠাকুরের সপ্ততিতম জন্ম বার্ষিকীতে তাঁর সম্মানে ১৯৩১ সালে রামানন্দ চ্যাটার্জি সম্পাদিত ও কোলকাতার Golden Book Committee কর্তৃক প্র্রকাশিত “The Golden Book of Tagore” নামে এক দুর্লভ বইতে দেশ বিদেশের অনেক জ্ঞানীগুণী লোক লেখা পাঠিয়েছিলেন। আইনস্টাইনও ঐ বইতে “About Free Will” (প্রসংগঃ স্বাধীন চিন্তা) নামে তাঁর একটা প্রবন্ধ পাঠান। এতে তিনি এক জায়গায় লিখেছিলেনঃ

“যদি পৃথিবীর চারিদিকে সদা ঘূর্ণায়মান চাঁদকে সহসা আত্মসচেতনতাপ অর্পণ করা যেত তাহলে চাঁদ হয়ত নিশ্চিত ভাবত যে সে তার নিজের ইচ্ছায়ই পৃথিবীর চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঠিক তেমনভাবেই উন্নততর বুদ্ধি আর অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন কোন সত্তা যদি মানুষ ও তার কর্মকে পর্যবেক্ষণ করত তাহলে নিজের ইচ্ছায় কাজ করছে বলে মানুষের যে অধ্যাস সেটা ভেবে নিশ্চয় মুচকি হাসত।”

আমার নিজের একটা চিন্তা মাঝে মাঝে মনে আসে, সেটা হল পিপড়ার সারির দিকে তাকিয়ে থাকলে মনে হয় তারা যেন একটা প্রোগ্রাম অনুসরণ করে চলছে। এমনকি সারিতে দূটো পিপড়া হঠাৎ থেমে গিয়ে মত বা কি যেন বিনিময় করল, এটা দেখে মনে হয় সেটাও সেই প্রোগ্র্যামেরই অংশ। কিন্তু পিপড়ারা হয়ত ঠিকই তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করছে এই সচেতনতা নিয়েই কাজ করছে।

স্বামী বিবেকানন্দ যদিও কিছু অবৈজ্ঞানিক কথা বলেছিলেন, কিন্তু স্বাধীন চিন্তার বিষয়ে তাঁর নীচের বক্তব্য বিজ্ঞানসমঞ্জস বা যুক্তিপূর্ণ বলা যায়ঃ

[Therefore we see at once that there cannot be any such thing as free-will; the very words are a contradiction, because will is what we know, and everything that we know is within our universe, and everything within our universe is moulded by conditions of time, space and causality. … To acquire freedom we have to get beyond the limitations of this universe; it cannot be found here.]

( “অতয়েব সহসাই আমরা দেখতে পাচ্ছি যে স্বাধীন ইচ্ছা বলে কিছু থাকতে পারে না, এরশব্দগুলোই স্ববিরোধিতাপূর্ণ,কারণ ইচ্ছা হল যা আমরা জানি, আর আমরা যা কিছুই জানি তা আমাদের মহাবিশ্বের ভেতরেই বিরাজ করে, আর মহাবিশ্বে বিরাজমান সব কিছুই স্থান,কাল ওকার্যকারণের দশার দ্বারা নির্মিত …স্বাধীনতা পেতে হলে আমাদের মহাবিশ্বের সীমাবদ্ধতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, যা এখানে পাওয়া যাবে না”) – স্বামী বিবেকানন্দ (বিবেকানন্দ রচনা সমগ্র) (http://en.wikisource.org/wiki/The_Complete_Works_of_Swami_Vivekananda/Volume_1/Karma-Yoga/Freedom))

আধুনিক কালে স্নায়ুবিজ্ঞান, জেনেটিক্স, কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা, জটিলতার তত্ব ইত্যাদি এবং সর্বোপরি বিবর্তনতত্ব দ্বারা লব্ধ অভিজ্ঞানের অনিবার্য পরিণতিতে আমরা এখন শোপেনহাওয়ারের মত এই উপলব্ধিতে আসতে বাধ্য হচ্ছি যে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার ধারণা একটি অধ্যাস মাত্র। এর কোন বাস্তব অস্তিত্ব নেই। এই স্বাধীন ইচ্ছার অধ্যাসের অনুভূতিও মানুষের অন্যান্য অনুভূতির মত বিবর্তনীয় তাগিদে সৃষ্ট। বিবর্তনীয় মনোবিদ্যার মূল বক্তব্যই হল মানুষের সব আচার অনুভূতিই কোন না কোন বিবর্তনীয় উদ্দেশ্য মেটায় বা অতীতে মিটিয়েছিল বলে টিকে আছে। বৈবর্তনিক কারণ ছাড়া কিছুর অস্তিত্ব নেই বলেই আমরা জানি। স্বাধীন ইচ্ছাও তার ব্যতিক্রম নয়। দড়িকে সাপ বলে ভুল করা যেমন বিবর্তনের এক উদ্বর্তনীয় কৌশল ঠিক তেমনই স্বাধীন ইচ্ছা আছে মনে করাটাও এক বিবর্তনীয় উদ্বর্তনীয় কৌশল মাত্র। এই স্বাধীন ইচ্ছায় বিশ্বাসের জন্যই সমাজে জবাবদিহিতার ও নৈতিক দায়িত্ববোধের ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যা মানুষ প্রজাতির উদ্বর্তনে সহায়ক হিসেবে কাজ করে আসছে। যেমনটি কাজ করেছে পাপ পুণ্য স্বর্গ নরকের ধারণা। কিছু দার্শনিক বা যুক্তিবাদীদের জন্য এটা অপ্রয়োজনীয় হলেও গড় মানুষের জন্য এটা সত্য। বিবর্তনের প্রধান উৎপাদ সাধারণ মানুষ, দার্শনিক বা যুক্তিবাদী নয়, কাজেই বিবর্তনীয় কৌশল গড় সংখ্যাগরিষ্ঠের জন্য প্রযোজ্য হবে সেটাই প্রত্যাশিত। নৈতিক জবাবদিহিত্বের ব্যাপারে স্বাধীন ইচ্ছার ভূমিকাকে ধর্মবাদীরা তো বটেই, অনেক সমাজবিজ্ঞানীরাও বেশ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেন । বিশেষ করে আইনের ব্যাপারে এর সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য আছে বলেই মনে করা হয়। সমাজবিজ্ঞানীরা ছাড়া কিছু মনোবিজ্ঞানীও আশঙ্কা করেন যে স্বাধীন ইচ্ছার অনস্তিত্বের জ্ঞান মানুষকে নৈতিক স্খলনের দিকে ঠেলে দিতে পারে (যেমন মনোবিজ্ঞানী Saul Smilansky,Roy Baumeister প্রমুখ) । তাঁরা এই আশঙ্কার সমর্থনে কিছু মনস্তাত্বিক জরীপের উল্লেখও করেন। এমনই একটা জরীপ করা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাথেলিন ভস আর কানাডার বৃটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী জনাথান স্কুলার এর যৌথ উদ্যোগে ২০০৮ এ যার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল মনস্তাত্বিক বিজ্ঞান (Psychological Science) পত্রিকায় । ভস ও স্কুলার মূলত এটাই বলতে চেয়েছেন স্বাধীন ইচ্ছা যে নেই এটা সত্য হলেও জনসাধারনকে তা না জানানই ভাল!। এই মতের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত আছে তাঁদের প্রবন্ধের শেষ অনুচ্ছেদে (উপরের লিঙ্ক দ্রঃ)। Robert Kane এর সম্পাদিত Oxford Handbook on Free Will এর স্বাধীন ইচ্ছার অধ্যায়ে দার্শনিক সল স্মিলান্সকি তাঁর “Free Will, Fundamental Dualism, and the Centrality of Illusion” (স্বাধীন ইচ্ছা, মৌলিক দ্বৈতবাদ ও অধ্যাসের কেন্দ্রিকতা) নামক প্রবন্ধে লেখেনঃ

“যদিও প্রচলিত উদারবাদী, কার্যকারণহীন অর্থে আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা নেই, তথাপি সর্বজনের কাছে এই সত্যটি ছড়িয়ে পড়লে তা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব ও আচরণের উপর এক সাঙ্ঘাতিক হুমকি হয়ে দেখা দেবে। স্বাধীন ইচ্ছায় অবিশ্বাস একটি বিপজ্জনক ধারণা। আমাদের নৈতিক মূল্যবোধকে রক্ষা করতে হলে স্বাধীন ইচ্ছা আছে বলে ভুল ধারণা করাই বরং অধিকতর বাঞ্ছণীয়”।

নাস্তিকতায় বিশ্বাস নৈতিক স্খলনের কারণ বলে ধর্মবাদীদের মতের সাথে এই মতের এক সাদৃশ্য লক্ষণীয়। জীববিজ্ঞানী অ্যান্টনী ক্যাশমোর আমেরিকার Proceedings of the National Academy of Sciences উদ্বোধনী প্রবন্ধ “The Lucretian swerve: the biological basis of human behavior and the criminal justice system.” এ স্বাধীন ইচ্ছা যে একটি অধ্যাস সেটা বলেই ক্ষান্ত হন নি, তিনি স্বাধীন ইচ্ছা ভিত্তিক প্রচলিত আইন ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ বলে অভিমত দিয়ে তার সংস্কারের পরামর্শও দেন।

স্বাধীন ইচ্ছার অস্তিত্ব/অনস্তিত্বের প্রশ্নটা এতই গুরুত্বের সাথে নেয়া হয় বলেই আমেরিকার প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান “জন টেম্পলটন ফাউন্ডেশন”, যার মূল লক্ষ্য হল বিজ্ঞানের সাথে আধ্যাত্মিকতার সমন্বয় সাধন,তারা ফ্লোরিডা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক ড: অ্যালফ্রেড মেলের নেতৃত্বে স্বাধীন ইচ্ছার অস্তিত্বের অভিজ্ঞতাভিত্তিক ও দার্শনিক অনুসন্ধানের জন্য তিন বছর মেয়াদের (২০১৩ সালে সমাপনীয়) একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের জন্য চুয়াল্লিশ লক্ষ ডলারের অনুদানও বরাদ্দ করা হয়েছে!।

স্বাধীন ইচ্ছা যে একটি অধ্যাস এই সিদ্ধান্ত আগে ভাগে বলে ফেলার পরেও অনেক কথা বলার আছে, কেন বিজ্ঞানীরাবা আধুনিক দার্শনিকরা এই উপলব্ধিতে এসেছেন তার যৌক্তিক ব্যাখ্যার জন্য। বিজ্ঞানীদের স্বাধীন চিন্তা নিয়ে বিভিন্ন চিন্তা ভাবনা ও বক্তব্যের আরও কিছু উদ্ধৃতি দিয়ে বিষয়টা পরিস্কার করার চেষ্টা করব এই লেখায়।

স্বাধীন ইচ্ছা আছে কি নেই এর উত্তর খোঁজার আগে স্বাধীন ইচ্ছা বলতে কি বোঝায় সেটা পরিস্কার করে নেয়া যাক। কারণ একটা সুস্পষ্ট সংজ্ঞাকে ভিত্তি করে অগ্রসর না হলে যে যার ইচ্ছামত সংজ্ঞা বা ব্যাখ্যা ধরে নিয়ে স্বাধীন ইচ্ছা আছে বা নেই দুটোই দাবী করতে পারে, যুক্তিকে লঙ্ঘন না করে। সংজ্ঞাটা এমন হওয়া বাঞ্ছণীয় যাতে প্রশ্নটা অর্থবহ ও বুদ্ধিমান মনে হয়। অধিকাংশি মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার অস্তিত্বের স্বপক্ষে যুক্তির সাধারণ সুর হল “আমি তো আমার ইচ্ছামত কি করব না করব সিদ্ধান্ত নিতে পারি, কারো বা কোন কিছুর দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে, এই যেমন আজ আমি কি খাব, বা কি পরব, বা কোথায় বেড়াতে যাব, রিপুর বশবর্তী হয়ে কোন মন্দ কাজে লিপ্ত হব না কি বিবেকের তাড়নায় সেই মন্দ কাজ করা থেকে বিরত থাকব, এ সব আমার নিজের সিদ্ধান্ত, কেউ বা কিছু চাপিয়ে দিচ্ছে না” অথবা “আমি যে কোন বিষয়ে যখন একাধিক সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব তখন আমি নিজের পছন্দ অনুযায়ী যে কোন একটা সিদ্ধান্ত বেছে নিতে পারি, কোন কিছু বা কারও দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে”, কাজেই আমার স্বাধীন ইচ্ছা আছে”। এইরকম সাধারণ অর্থে নিলে স্বাধীন ইচ্ছা অবশ্যই বর্তমান (বেছে নেয়ার ক্ষমতা থাকার), কারণ তা এক অনুভূতি ভিত্তিক ধারণা। এখানে “আমার/আমি/নিজের” ইত্যাদি শব্দের ব্যবহারও লক্ষণীয়। এই শব্দ গুলোই স্বাধীন ইচ্ছার প্রচলিত ধারণা বা সংজ্ঞার কেন্দ্রবিন্দু। এই শব্দগুলির দ্বারা স্পষ্টতই এটাই বোঝান হচ্ছে যে মানুষের সকল কর্ম ও সিদ্ধান্তের মূলে আছে “আমি(Self)” নামক কোন সত্তা যা মানুষের দেহকে চালিত করছে,কারণ সকল সিদ্ধান্তের চূড়ান্ত রূপ নেয় দৈহিক কোন কর্মে (যাওয়া, খাওয়া, করা ইত্যাদি)। এই “আমি” অন্য কোন কিছুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বা চালিত নয় (স্বাধীন ইচ্ছার অস্তিত্বের প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী) । অর্থাৎ “আমি” নিজে কোন কার্য কারণ মেনে চলে না (Self-Caused/Uncaused), ভৌত (বা বিজ্ঞানের) নিয়ম দ্বারা নির্ধারিত হয় না, বরং এই “আমি”ই মানুষের সকল কর্মকান্ডের নির্ধারক/নিয়ামক। এই ধারণা অনুযায়ী, একাধিক সম্ভাবনার মধ্যে কোনটা “ক” বেছে নিল সেটা “ক” এর “আমি” নামক সত্তার কার্যকারণহীন (Uncaused) সিদ্ধান্ত, অন্য কোন উপাদান,গুণক বা নিয়ামকের হাত নেই এই সিদ্ধান্ত নির্বাচনের এর ব্যাপারে। স্বাধীন ইচ্ছায় বিশ্বাসী অনেক বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তি মন যে মস্তিষ্কের কার্যকলাপ এটা স্বীকার করেন বটে কিন্তু তারাও কার্যকারণহীন এই “আমি” র সার্বভৌম অস্তিত্বে (অর্থাৎ বিজ্ঞানের কার্য কারণের বহির্ভূত) বিশ্বাসী যা মস্তিষ্কের মাধ্যমে ব্যক্ত হয় অ কাজ করে। পাঠক এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যে এই স্বাধীন ইচ্ছার “আমি” র ধারণা আত্মার ধারণার সাথে কার্যত সমার্থক। সেই পুরান যন্ত্রের মধ্যে ভূতের ধারণা (Ghost in the Machine) । স্বাধীন ইচ্ছায় বিশ্বাস করা অর্থ আত্মায় বিশ্বাস করা। জীববিজ্ঞানী অ্যান্টনী ক্যাশমোর তো আরও এক ধাপ এগিয়ে স্বাধীন ইচ্ছায় বিশ্বাসকে ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে তুলনা করেছেনঃ

“A belief in free will is akin to religious beliefs. .. – Neither religious beliefs, nor a belief in free will, comply with the laws of the physical world” (স্বাধীন ইচ্ছায় বিশ্বাস ধর্মীয় বিশ্বাসের সমতুল্য। দুটোর কোনটাই ভৌত জগতের বিধিসমূহকে মেনে চলে না)

(উপরে ক্যাশমোরের প্রবন্ধের লিঙ্ক দ্রঃ)

আত্মায় বিশ্বাসীরাও মানুষের সকল কর্ম বা সিদ্ধান্তের পেছনে আত্মা আছে বলে ধরে নেয় যা মনের মাধ্যমে কাজ করে । এখন আমরা স্বাধীন ইচ্ছার একটা স্পষ্ট ধারণা ব্যক্ত করতে পারি। স্বাধীন ইচ্ছা আছে তখনই বলব যদি মানুষের সমস্ত কর্মকান্ড কোন প্রাকৃতিক নিয়ম দ্বারা বা দেহ বহির্ভূত কোন নিয়ামক দ্বারা কার্যকারণ অর্থে নিয়ন্ত্রিত বা প্রভাবিত না হয় (contra-causal )। এই অর্থে স্বাধীন ইচ্ছা কি আছে, না নেই? বিজ্ঞানের অভিজ্ঞানের আলোকে স্পষ্ট উত্তর হল,না নেই। এই “আমিত্ব” এর সার্বভৌম অস্তিত্বের ধারণা একটা অধ্যাস। এই আমিত্বের অধ্যাস মানুষকে উত্তমপুরুষের দৃষ্টিতে দেখার ফল। প্রথমপুরুষের দৃষ্টিতে দেখলে অধ্যাসটা অদৃশ্য হয়ে যায় (শোপেনহাওয়ারের পূর্বেল্লিখিত সেই বিজ্ঞবাণীর কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়) । প্রথমপুরুষের দৃষ্টিতে মানুষ কোটী কোটি কোষের সমন্বয়ে গঠিত একটি তন্ত্র, যা পদার্থেবিজ্ঞানের নিয়ম মেনে চলে। কোটি কোটি স্নায়ুকোষ বিজ্ঞানের নিয়মে কাজ করে “আমির” অধ্যাস সৃষ্টি করে। মানুষের দেহ ও মস্তিষ্ক কে সূক্ষ্ণ ভাবে বিশ্লেষণ করলে অণু পরমাণু দ্বারা গঠিত কোষ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাবে না। বিবর্তনের ক্রিয়ায় সৃষ্ট মস্তিষ্কের কর্টেক্স এ কোটি কোটি স্নায়ুকোষগুলির সম্মিলিত ক্রিয়ার ও বিশেষ বিন্যাসের ফলে উদ্ভূত বিকাশমান ধর্ম (Emergent properties) এই আমিত্ব, স্বাধীন ইচ্ছা ইত্যাদির অনুভূতি বা অধ্যাস সৃষ্টি করে। আধুনিক বিজ্ঞান স্বাধীন ইচ্ছা/আত্মার কফিনে শেষ পেরেক মেরে দিয়েছে বলা যায়। আধুনিক বিজ্ঞান (বিশেষ করে স্নায়ুবিজ্ঞান) এর যুগান্তকারী অভিজ্ঞান সম্পর্কে অবহিত হয়ে “Bonfire of the Vanities” খ্যাত টম উল্‌ফের মত একজন সাহিত্যিক ও লেখকও হয়ত অভিভূত হয়েই “দুঃখিত, আপনার আত্মা এইমাত্র মৃত্যু বরণ করেছে” নামে একটা প্রবন্ধ লিখেছিলেন ১৯৯৬ সালে,যা থেকে একটা উদ্ধৃতি নীচে তুলে দিলামঃ

“Eventually, as brain imaging is refined, the picture may become as clear and complete as those see-through exhibitions, at auto shows, of the inner workings of the internal combustion engine. At that point it may become obvious to everyone that all we are looking at is a piece of machinery, an analog chemical computer, that processes information from the environment. “All,” since you can look and look and you will not find any ghostly self inside, or any mind, or any soul.”(সারমর্মঃ আরো পরে যখন ব্রেইন ইমেজিং আরো সূক্ষ্ণ ভাবে করা যাবে, তখন চিত্রটা পরিস্কার হয়ে আসবে, ঠিক যেমন প্রদর্শনীর সেই স্বচ্ছ গাড়ীগুলো, যার ভেতরের অন্তর্দাহ ইঞ্জিন স্পষ্টই দেখা যায় । সেই সময় এটা সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে যেআমরা কেবল একটা যন্ত্রের দিকে তাকিয়ে আছি, একটা অ্যানালগ রাসায়নিক কম্পিউটার যা তার চারিপাশ থেকে তথ্য উপাত্তনিয়ে প্রক্রিয়া করছে। কেবল বলছি এজন্য যে যতই দেখনা কেন, এর ভেতরে আত্মা, অহম্‌, মন কিছুই খুঁজে পাবে না)

নোবেল বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ক্রিক তাঁর বই “আশ্চর্যজনক প্রকল্পঃ আত্মার বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান” (The Astonishing Hypothesis: The Scientific Search for Soul ) বইতে লিখেছেনঃ

‘You,’ your joys and your sorrows, your memories and your ambitions, your sense of personal identity and free will, are in fact no more than the behavior of a vast assembly of nerve cells and their associated molecules. Who you are is nothing but a pack of neurons … although we appear to have free will, in fact, our choices have already been predetermined for us and we cannot change that.

(তুমি, তোমার সুখ দুঃখ, তোমার স্মৃতি ও আকাংখা,তোমার নিজস্ব সত্তার অনুভূতি ও স্বাধীন চিন্তায় বিশ্বাস, এ সবই বহূসংখ্যক স্নায়ূকোষ ও তাদের সংশ্লিষ্ট অণুসমূহের সমষ্টিগত আচরণের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তুমি এক রাশ স্নায়ূকোষ বৈ কিছুই নও – যদিও আমাদের স্বাধীন চিন্তা আছে বলে মনে হয়, আসলে আমাদের ইচ্ছা আগে ভাগেই নির্ধারিত হয়ে আছে যা আমরা পরিবর্তন করতে পারি না)

স্নায়ুবিজ্ঞানী রামাচন্দ্রন তাঁর বই “মস্তিষ্কের ভূতসমূহ” (Phantoms of the Brain, সানড্রা ব্লেকস্‌লীর সহায়তায় লেখা) এর ২৫৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেনঃ “আমাদের প্রত্যেকের যে ব্যক্তিগত একটা অশরীরী আত্মা আছে যা জগতের সব কিছুকে অবলোকন করছে বলে মনে হয় তা আসলে একটা অধ্যাস”।

সমসাময়িক বৃটিশ দার্শনিক গেলেন স্ট্রসন (Galen Strawson) যাঁর স্বাধীন ইচ্ছা নিয়ে অনেক প্রবন্ধ আছে তিনি তাঁর বই “স্বাধীনতা ও বিশ্বাস” (Freedom and Belief) শুরুই করেছেন এই ঘোষণা দিয়ে যে “স্বাধীন ইচ্ছা বলে কোন জিনিষ নেই”।

একই কথা বলেছেন হার্ভার্ডের মনোবিজ্ঞানী ড: ড্যানিয়েল ওয়েগ্‌নার (Daniel M. Wegner)। তিনি বেশ জোরাল ভাবেই স্বধীন ইচ্ছার ধারণাকে অপোহ করেছেন। তিনি তাঁর বই “স্বাধীন ইচ্ছার অধ্যাস”(The Illusion of Free Will) এ লিখেছেন স্বাধীন ইচ্ছা হল একটা অনুভূতি, আমাদের কর্মের উপর আমাদের নিয়ন্ত্রনের একটা অনুভূতি। আমরা যখন মন করি যে এখন আমি উঠব, এবং তার কিছুক্ষণ পর যখন উঠলাম, তখন আমরা এই উঠবার অনুভূতিকে কৃতিত্ব দেই উঠবার কারণ হিসেবে। কিন্তু এটা সুবিদিত যে কারণ আর অনুবন্ধ এক জিনিষ নয় (correlation is not causation)। ড: ওয়েগ্‌নার সম্মোহন, উইজা বোর্ড, ডাউজিং (Dousing) ইত্যাদির উদাহরণ টেনে যুক্তি দেন যে স্বধীন চিন্তা প্রকৃত অর্থে থাকলে এরকম মনের উপর সচেতন নিয়ন্ত্রণ হারানো অর্থহীন হয়ে পড়ে। এছাড়া তিনি বেঞ্জামিন লিবেটের বিখ্যাত পরীক্ষার উল্লেখ করেন যাতে প্রমাণিত হয় যে আমাদের ইচ্ছানুযায়ী কোন ক্রিয়া করার সচেতন উপলব্ধির আগেই ক্রিয়াটি কৃত হয়। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করে রাখি যে ২০০৮ সালের এপ্রিলে জার্মানীর ম্যাক্স প্লাঙ্ক ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা লিবেটের ১৯৮৩ সালের মূল পরীক্ষাকে (যা এর আগে জার্মান স্নায়ুবিজ্ঞানী হ্যান্‌য্‌ কর্নহুবার এর এক পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে করা) আধুনিকীকরণ করে পুনর্বার সম্পন্ন করার পর যে ফল পেয়েছেন তা লিবেটের পরীক্ষার ফলাফলকে আবারও সমর্থন করে। এই নবীকৃত লিবেটের পরীক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

অতিসম্প্রতি আরেক স্নায়ুবিজ্ঞানী স্যাম হ্যারিস তাঁর বিতর্ক সৃষ্টিকারী “The Moral Landscape: How ScienceCan Determine Human Values” বই এর “The Illusion of Free Will” (স্বাধীন ইচ্ছারঅধ্যাস) অধ্যায়ে (পৃঃ ১০২-১১২) বলেছেনঃ “no account of causality leaves room for free will.” “Our belief in free will arises from our moment-to-moment ignorance of specific prior causes.”
(“কার্য কারণের যে কোন ব্যাখ্যাতেই স্বাধীন ইচ্ছার কোন স্থান নেই। স্বাধীন ইচ্ছায় আমাদের বিশ্বাসের কারণ হলপ্রতিটিমুহূর্তে ই সেই মুহূর্তের বিশেষ পূর্বকারণ সম্পর্কে আমাদের অজ্ঞতা”)

এই স্বাধীন ইচ্ছার অধ্যাস মানুষের এতই মজ্জাগত যে এটা যে শুধু বিশ্বাসীদের মধ্যেই আছে তা নয়, অনেক উদারবাদী ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যেও এই অধ্যাস বর্তমান। তাঁরা স্বাধীন ইচ্ছাকে মহিমান্বিত করা মানবতাবাদের অংগ হিসেবেদেখেন বা স্বাধীন ইচ্ছার কারণেই মানুষ যে অন্য প্রাণী থেকে আলাদা বা শ্রেয় এটা প্রমাণ করার জন্যই হয়ত এটা ভাবেন।এটা তাদের চিন্তায় আসে না যে বিজ্ঞানের সত্য মানবতার ধার ধারে না। তাদের একটা বাধা বুলি হল, স্বাধীন ইচ্ছা নেই,মানুষের সব কাজই কার্যকারণ দ্বারা নির্ধারিত এরকম কথা বা ধারণা খুব যান্ত্রিক (Mechanistic), মানুষকে রোবট বানানোর সামিল। ধর্মবাদী সহ ধর্মনিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবীদেরও এই অধ্যাস ও মানসিকতার সমালোচনা করেছেন ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন,মনস্তত্ব ও মস্তিষ্ক বিজ্ঞানের অধ্যাপক ওয়েন ফ্ল্যানাগান তাঁর “The Problem of the Soul: Two Visions of the Mind and How to Reconcile Them” বইতে। তিনি ডেকার্টেকের দ্বৈতবাদকেই এই অধ্যাসের জন্য দায়ী করেন।

স্বাধীন ইচ্ছায় মজ্জাগত বিশ্বাস পরিত্যাগে অনিচ্ছুক অনেকেই তাদের বিশ্বাসের সমর্থনে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার অনিশ্চয়তা (Uncertainty বা অক্রম (Randomness/Stochasticity) এর ধারণাকে প্রয়োগ করে স্বাধীন ইচ্ছাকে জীইয়ে রাখতে চেষ্টা করেন। কোয়ান্টামবলবিদ্যা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান বা যুক্তিজ্ঞানের অভাবের ফলেই তাদের এই চেষ্টা। প্রথমত কোয়ান্টাম বলবিদ্যা প্রকৃতির এক নিয়মেরই ব্যক্তীকরন। প্রকৃতির সবকিছুই যদি অনিশ্চিত বা অক্রম হত তাহলে প্রকৃতিতে কোন নিয়মই থাকার কথা নয়, কোয়ান্টামই হোক বা ধ্রূপদী বলবিদ্যাই হোক। কোয়ান্টাম বলবিদ্যা প্রতিটি আণুবীক্ষণিক ঘটনার সম্ভাব্যতা একটি প্রমাদহীন সংখ্যা দিয়ে ভবিষ্যৎবাণী করে। যা পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করা যায়। প্রকৃতি আসলেই অনিশ্চিত, অক্রম বা নিয়মহীন হলে এটা সম্ভব হত না। দ্বিতীয়ত স্বাধীন ইচ্ছার সাথে অক্রম এর কি সম্পর্ক? স্বাধীন ইচ্ছায় বিশ্বাস মানে বিশ্বাস করা যে ইচ্ছার নিয়ন্ত্রক হল আত্মা বা অহম্‌ (Self) । আত্মা বা অহম্‌ তো অক্রম, অনিশ্চিত বা কার্যকারণহীন হতে পারে না, হলে তো স্বাধীন ইচ্ছার আর কোন মানেই থাকে না। যারা আত্মার পরিবর্তে মস্তিষ্কের দ্বারা সৃষ্ট স্বাধীন ইচ্ছায় বিশ্বাসী তাঁরাও ভুলে যান যে মস্তিষ্ক একটি বৃহৎ তন্ত্র (Macroscopic Object) যেখানে কোয়ান্টাম প্রভাব অবর্তমান। আর মস্তিষ্কের কর্মকান্ড সম্পূর্ণভাবে ভৌত কার্যকারণ মেনে চলে। কোটি কোটি কোয়ান্টাম আণুবীক্ষণিক কণাসমূহ একসঙ্গে সমন্বিততভাবে কাজ করলে কণাসমষ্টি দ্বারা গঠিত কোন বৃহৎ তন্ত্রে কোয়ান্টাম ক্রিয়া উবে যায়। এটাকে কোয়ানন্টাম ডিকোহারেন্স(Decoherence) বলে। কাজেই কোয়ান্টাম বলবিদ্যা টেনে এনে স্বাধীন ইচ্ছাকে বাচানোর চেষ্টা নিষ্ফল।

স্বাধীন ইচ্ছার অনস্তিত্বের উপলব্ধির বিপজ্জনক সামাজিক পরিণতির আশঙ্কাটা একটু অতিরঞ্জিতই মনে হয়। প্রথমতঃ স্বাধীন ইচ্ছার অনস্তিত্বের উপলব্ধির কোন হিড়িক পড়বে না মানুষের মধ্যে। সমাজের অধিকাংশ মানুষই স্বাধীন ইচ্ছায় বিশ্বাস করে যাবে। ক্রীড়াতত্ব দিয়ে যেমনটি প্রমাণ করা যায় যে সমাজে ১০০% সত্যবাদী বা ১০০% মিথ্যাবাদী সামাজিক স্থিতিশীলতা আনতে পারে না। এটাই একটা বৈবর্তনিক তাড়না। আর যদি উপলব্ধির হিড়িক পড়েও, বিবর্তনবাদ আমাদের শেখায় যে মানুষ প্রজাতির উদ্বর্তনের জন্য বিভিন্ন কৌশল খুঁজে বের করাটাও বিবর্তনের নিয়মের মধ্যে নিহিত (গড় অর্থে) । কেবল কোন দৈব বিপর্যয় (Catastrophic Event) মানুষ বা যে কোন প্রজাতিকে ধ্বংস করতে পারে। কাজেই বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন মানুষ কোন কিছু উপলব্ধি করলেও তা বিবর্তনের নিয়মের বাইরে যাবে না এটাই যুক্তিতে বলে। বিবর্তনের কৌশল হিসেবে নতুন কোন উপলব্ধি বা প্রবৃত্তি উদ্ভূত হয়ে স্বাধীন ইচ্ছার অনস্তিত্বের উপলব্ধির সম্ভাব্য খারাপ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াকে প্রশমিত করে সামাজিক স্থিতি বজায়ে রাখতে সাহায্য করবে আশা করা যায়। মানব প্রজাতির ইতিহাসে এমন কোন নজীর নেই যে কোন উপলব্ধি মানুষ প্রজাতির জন্য বিপর্যয় ডেকে এনেছিল।

স্বাধীন ইচ্ছার অনস্তিত্বের কথা উঠলে অবশ্যম্ভাবীভাবে নিয়তির প্রশ্ন উঠে আসে। স্বাধীন ইচ্ছা যদি নাই থাকে তাহলে সবই কি পূর্বনির্ধারিত হতে হয় না?,কারণ স্বাধীন ইচ্ছা ছাড়া তো ভাগ্য পরিবর্তন করা যায় না, স্বাধীন ইচ্ছায় বিশ্বাসীরা একথা বলবেন। কিন্তু তাঁরা কার্যকারণের অর্থ বুঝতে ভুল করছেন। ভাগ্য পরিবর্তন করার কথার মধ্যেই তো একটা ব্যাকরণগত ভুল রয়েছে। যা ভবিষ্যতে ঘটবে সেটাই তো ভাগ্য। পরিবর্তন করার লক্ষ্যে মানুষ বর্তমানে যা কিছু করবে বা চেষ্টা করবে তার সবই ঐ ভাগ্যের হিসাবের মধ্যেই ধরা আছে। নিয়তি তো একটাই । সম্ভাবনা অনেকগুলিই আছে ঠিকই কিন্তু নিয়তির মানে হল ভৌত কার্যকারণের ফলে বহূ সম্ভাবনার মধ্যে একটা নির্ধারিত হয়ে যাওয়া। একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝান যাক। সবাই জানে যে লেখাপড়া মন দিয়ে করলে পরীক্ষায় ভাল ফল হয়, পরিণামে ভাল চাকুরীবা পেশা পাওয়া যায়। কিন্তু তারপরেও অনেকে লেখাপড়ায় ঢিলেমী দেয়। তারা কি ভাক চাকুরী বা পেশা মনে মনে চায় না। কিন্তু তার জন্যএই মূল্য দিতে তারা প্রস্তুত নয়। রক্ত চাপের রুগী জানে যে লবন খাওয়া খারাপ, ডায়াবীটিসের রূগী জানে চিনি খাওয়া নিষেধ, তারপরও অনেক রূগী বিধি নিষেধ না মেনে মৃত্যুকে এগিয়ে নিয়ে আসে। ধূমপান করলে ফুস্ফুসের ক্যান্সার হতে পারে জেনেও অনেকে ধূমপানে লিপ্ত হয়। বলা হবে নিয়ম মানা না মানা তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। স্বাধীন ইচ্ছার দ্বারা সে নিজেই তার সর্বনাশ ডেকে এনেছে। কিন্তু আরেকটু তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে কে বিধি নিষেধ মানল আর কে মানলো না (বা মেনে চলতে চাইল বা চাইলি না) সেটা তাদের মধ্য একটা মৌলিক স্বভাবগত পার্থ্যক্যের জন্য হচ্ছে, যার মূলে আছে তাদের বংশাণুগত বা/এবং পরিবেশগত পার্থক্য। এর কোনটাই তাদের নিয়ন্ত্রণে নয় । কাজেই ইচ্ছাজনিত সিদ্ধান্ত বা কাজ যদি বংশাণু বা পরিবেশের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় তাহলে ইচ্ছাটা প্রকৃত অর্থে স্বাধীন নয় (আইনস্টাইনের সেই শোপেনহাওয়ারেরউদ্ধৃতি “মানুষ যা চাইবে সেটা সেটা অবশ্যই করতে পারে। কিন্তু কি চাইবে সেটা সে চাইতে পারে না” এর কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়) ।

একটা মজার ব্যাপার লক্ষণীয় যে স্বাধীন ইচ্ছায় বিশ্বাসীদের অনেকের জীবনে এমন ঘটনাও ঘটে যখন কোন একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে সৌভাগ্যের দ্বার খুলে গেল, বা জীবনে চরম বিপর্যয় নেমে আসল, তখন তারাই অতীতের দিকে তাকিয়ে বলে এরকম দুর্ভোগ তার কপালে লেখা ছিল বলেই ঘটেছে, বা এরকম সৌভাগ্য কোন দৈব কারণ ছাড়া ঘটতে পারে না। অর্থাৎ সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় মনে হয় এটা তার নিজস্ব স্বাধীন চিন্তা জনিত, কিন্তু সিদ্ধান্তের ফলাফলের উপর নির্ভর করে পরে সেটা নিয়তির ক্রিয়া বলে মনে হয়।

দৈনন্দিন জীবনে আমরা আরেকটা ব্যাপার লক্ষ্য করি বা শুনি সেটা হল ভাগ্যে বিশ্বাস করে না এমন অনেকেও কোন বিমান দুর্ঘটনার খবরশুনে, যে ফ্লাইটে তার ওড়ার কথা ছিল কিন্তু কোন কারণে তার ওড়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হল, বলে “ভাগ্যিস আমি ঐ ফ্লাইটে ছিলাম না”,থাকলে আমি আজ বেচে থাকতাম না। এর দ্বারা সে এটাই বলতে চাইছে যে সে ঐ ফ্লাইটে থাকলেও বিমানটি দুর্ঘটনায় পতিত হত।কিন্তু একটু খতিয়ে দেখলে এই চিন্তার কিছু অসংগতি ধরা পড়ে। ধরি ব্যক্তিটির নাম ‘ক’ । চারটি সম্ভাবনা দেখা যায়ঃ

১। ‘ক’ ফ্লাইটে ছিল এবং ফ্লাইটটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
২। ‘ক’ ফ্লাইটে ছিল না এবং ফ্লাইটটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
৩। ‘ক’ ফ্লাইটে ছিল এবং ফ্লাইটটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে না।
৪। ‘ক’ ফ্লাইটে ছিল না এবং ফ্লাইটটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে না।

আমাদের উদাহরণে ২ নং সম্ভাবনাটি ঘটে। ‘ক’ এর উক্তির অর্থ অনুযায়ী সে এটাই বলতে চাইছে যে (২) নং সম্ভাবনা না ঘটলে(১) নং সম্ভাবনাই ঘটবে, (৩) নং সম্ভাবনা নয়। কিন্তু এরকম মনে করার কোন যৌক্তিক ভিত্তি নেই। (২) নং সম্ভাবনা ঘটার পূর্বে অসীম সঙ্খ্যক কার্যকারণ প্রতি মুহূর্তে কাজ করে করে একটা কার্যকারণের শৃংখল (Infinite chain of causality) তৈরী করে যার অনিবার্য পরিণতিতে (২) নং সম্ভাবনা ঘটে। (২) নং সম্ভাবনা না ঘটনার অর্থ হল (২) ঘটার জন্য পূর্বশর্তের অসীম কার্যকারণের শৃংখল তৈরী হয় নি, অন্য কোন অসীম কার্যকারণের শৃংখল তৈরী হয়েছিল। কিন্তু এই ভিন্ন কার্যকারণের শৃংখল যে (১) সম্ভাবনাকেই ঘটাত, (৩) কে নয় এটা কি করে বলা যায়?। (১) ঘটার পূর্বশর্ত তো “(২) না ঘটা” নয়। (১) এর পূর্বশর্ত তো আমাদের জানারই কথা নয়। কোনটারই পূর্বশর্ত আমাদের জানা সম্ভব নয়, কারণ তা এক অসীম শৃংখল । অবশ্য যে সম্ভাবনাটা ঘটল তার পরই আমরা বলতে পারব যে সেটি ঘটার পূর্বশর্ত মিটেছিল বলেই সেটা ঘটেছে । আর এমনটি তো নয় যে (২) এবং (১) এর মধ্যকার তফাৎ শুধুই একটি, অর্থাৎ ‘ক’ ফ্লাইট এ ছিল। অন্য সব ঘটনা একই ছিল। কিন্তু প্রত্যেকটি ঘটনার পেছনে অনেক অণুঘটনা (বা ছোট ছোট ঘটনা) জড়িয়ে থাকে যার ফলে দু ঘটনার অসীম কার্যকারণের শৃংখল ভিন্ন হতে পারে। যেমন ‘ক’ ফ্লাইটে থাকলে বিমানের যাত্রী সঙ্খ্যা ভিন্ন হত, ভর বন্টন অন্যরকম হত, তা ছাড়া ‘ক’ যে কারণে ফ্লাইটে উঠল সেই কারণটা বিমানের যাত্রার উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারে। এরকম অনেক কিছু। আমরা “Butterfly Effect” এর কথা জানি। জটিলতার ক্ষেত্রে খুব ক্ষুদ্র কোন ক্রিয়া বিরাট আকারে ব্যক্ত হতে পারে অন্য কোন ক্রিয়ার মাধ্যমে। কাজেই (২) এবং (১) এর মধ্যে ‘ক’ ফ্লাইটে এ ছিল, এটা ছাড়াও অন্য যে কোন ক্ষুদ্র ঘটনার তফাৎ থাকলে তার কারণেও (১) না ঘটে (৩) ঘটতে পারত।

অন্য ভাবেও দেখা যাক বিষয়টা। “২” না ঘটলে “১” ঘটত (বা (৩) ঘটত না) এই ধরণের উক্তির দ্বারা বোঝান হয় যে (১) এর কার্যকারণহল (২) না ঘটা। এই ধরণের কার্যকারণের রূপকে “প্রতিবাস্তব কার্যকারণের শর্ত বলা হয় “(Counterfactual Causality/conditional) ।কিন্তু এই কার্যকারণ আরোপ যে উপরের ক্ষেত্রে ভুল সেটা উল্লেখ করেছি। যাঁরা সমান্তরাল বিশ্বের কথা জানেন তাঁরা উপরোক্ত চারটি সম্ভাবনাকে সমান্তরাল বিশ্বের চারটি ভিন্ন ইতিহাস হিসেবে দেখতে পারেন (অবশ্য এই চারটির আরও অনেক ক্ষুদ্র অণুঘটনার তফাৎ আছে, কাজেই প্রকৃত ভিন্নসম্ভাবনার সংখ্যা অসীম) । সব গুলোরই অস্তিত্ব আছে। কিন্তু একটার সাথে আরেকটার কোন কার্যকারণগত সম্পর্ক নেই। কার্যকারণের সঠিকতা যাঁচাইনা করে এই ধরণের উক্তি বলাকে প্রতিবাস্তব চিন্তা (Counterfactual Thinking) বলা হয়। প্রতিবাস্তব চিন্তা সঠিক হতে পারে, বা ভুলও হতেপারে, যেমন উপরের উদাহরণে দেখলাম এটা বলা বা ইঙ্গিত করা যে (২) না ঘটলে (১) ঘটত, যেখানে (১) এর কারণ (২) না ঘটা নয়। ইতিহাসবেত্তারা ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে প্রায়ই প্রতিবাস্তব চিন্তা করেন। এটাকে প্রতিবাস্তব ইতিহাস (Counterfactual history) বলে । কোন এক বিশেষ ঐতিহাসিক ঘটনা না ঘটলে ইতিহাস কোনদিকে যেত সেটা অনুমান করাই প্রতিবাস্তব ইতিহাসের কাজ।

এবার আসি নিয়তির ব্যাপারে বিজ্ঞানের কি বক্তব্য সেটা নিয়ে। এটা শুনে অনেকে হয়ত আশ্চর্যান্বিত হতে পারেন যে অনেক বিজ্ঞানীই নিয়তিতে বিশ্বাস করেন। নিরেট মহাবিশ্বের তত্ত্ব বা দৃষ্টিকোন(Block Universe View) সে কথাই বলে। এই দৃষ্টিতে অতীত, বর্তমান অ ভবিষ্যতের মধ্যকার সীমারেখাকে কৃত্রিম বিবেচনা করা হয়। মহাবিশ্বের যা কিছু ঘটেছে, ঘটছে ও ঘটবে সবই একই সাথে বিদ্যমান বলে মনে করা হয়।ত্রিমাত্রিক স্থানে কোন রেখা যেমন ‘ক’ বিন্দু থেকে ‘খ’ বিন্দু পর্যন্ত বিস্তৃত হলে আমরা বলিনা রেখাটা ‘ক’ থেকে ‘খ’ তে গেছে। ঠিক তেমনি জগতের অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতের সব ঘটনাই চতুর্মাত্রিক স্থানে বসান একটা ঘটনা রেখা। এটা বলা যায় না যে সময় অতীত থেকে ভবিষ্যৎএর দিকে তা প্রবাহিত হচ্ছে। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সব ঘটনা সমূহ চতুর্মাত্রিক এক জালিকায় (Matrix) এ গাঁথান আছে। আমরা শুধু আমাদের অতীত বা বর্তমান সম্পর্কে সচেতন। ঠিক যেমন সমুদ্র বা নদীর ওপার না দেখতে পেলেও আমরা জানি যে ওপার আছে, ঠিক তেমনই ভবিষ্যৎ আমরা দেখতে বা জানতে না পারলেও (গণৎকার বা দৈবজ্ঞ ব্যতীত) ভবিষ্যৎ যে নেই সেটা বলা যায় না। ইউটিউবে বৃটিশ পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক (পপ তারকা?) ব্রায়ান কক্সের ব্লক মহাবিশ্বের এক সুন্দর ভিডিও দেখুন।

ব্লক মহাবিশ্বের ধারণার প্রথম প্রবক্তা ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী মিনকাউস্কি (Minkowski)। আইনস্টাইন ও এই ব্লক মহাবিশ্বে বিশ্বাস করতেন। তিনি তাঁর সারা জীবনের বন্ধু মিশেল বেসোর মৃত্যুতে বেসোর পরিবারকে লেখা এক শোক বার্তায় বলেছিলেনঃ

“Now he has departed from this strange world a little ahead of me. That means nothing. People like us, who believe in physics, know that the distinction between past, present, and future is only a stubbornly persistent illusion.” (http://wist.info/einstein-albert/209/) [এখন সে এই রহস্যময় জগত থেকে বিদায় নিয়েছে, আমার একটু আগেই। এতে কিছুই আসে যায় না। আমাদের মত মানুষ, যারা পদার্থবিজ্ঞানে বিশ্বাস করে, জানে যে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের মধ্য পার্থক্যটা একটা একগুঁয়েমীভাবে লেগে থাকা অধ্যাস মাত্র]

পদার্থবিজ্ঞানী ও পিবিএস চ্যানেলের “The Elegant Universe” সিরিজের উপস্থাপক ব্রায়ান গ্রীন ব্লক মহাবিশ্বে বিশ্বাস করেন। তাঁর বই “The Fabric of the Universe” এই ব্লক মহাবিশ্ব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বর্তমানের ধারণাটা যে একটা অধ্যাস, বা পুরো সময়ের ধারণাটাই অধ্যাস, “বিশেষ এখন” বলে যে কিছু নেই সেটা নিয়ে পিবিএস এর রেডিও ল্যাব এক বিশেষ রেডিও শো’র (No Special Now) আয়োজন করে যেখানে বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী ব্রায়ান গ্রীন, মিচিও কাকু, লিসা রেন্ডল, স্নায়ূবিজ্ঞানী রামাচন্দ্রন এক মনো-গ্রাহী আলোচনয় অংশ নেন। এতে স্বাধীন চিন্তা নিয়েও আলোচনা করা হয়েছে। পুরো অনুষ্ঠানের রেকর্ড শুনতে পাবেন এখানে । কাটছাঁট করে আসল অংশটি আমি পাঠকদের জন্য এখানে আপলোড করে রেখেছি।

নির্দেশঃ

স্বাধীন চিন্তা নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ একটি সাইটঃ
http://www.naturalism.org/freewill.htm
এখানে আগ্রহী পাঠকেরা অনেক কিছুই পাবেন।