ঢাকা শিকাগো
পর্বঃ দ্বিতীয়ার্ধ
শিকাগো শহরে ৯১১ কল করার পর পুলিশ আসার জন্য সর্বোচ্চ সময় ধরা হ’য়ে থাকে দুই মিনিট। অবশ্য সেটা তারা যাত্রা শুরু করবার পর। প্রথম দিকে এ-তথ্য পেয়ে মনে মনে আপ্লুত হ’য়ে পড়তাম। আহা! এ-যেন এক ইউটোপিয়ান রাজ্য, সিস্টেম বলে কিছু যদি থাকে সেতো এখানেই। কিন্তু আমি ভুলেই গিয়েছিলাম, ‘চোরের উপর বাটপারি’ বলে বাংলায় একটা কথা আছে। অপরাধী সবসময় পুলিশের থেকে স্মার্ট হয় -এটা বলতে গেলে ‘অপরাধের নিত্যতা সূত্র’। শেষদৃশ্য ছাড়া অন্য সব দৃশ্যে দেবতার চেয়ে শয়তান বেশি স্মার্ট, নায়কের চেয়ে ভিলেন বেশি। বাংলা সিনেমা, হিন্দি ফিল্ম কিংবা ইংলিশ ম্যুভি যেখানেই দেখি না কেন, ভিলেনের আধিপত্য সবসময়। কেবল শেষদৃশ্যে পরিচালক জোর করে ভিলেনকে হারিয়ে দেয় -নায়কের সাথে নায়িকার বিয়ে দেবার জন্য। মিলিসেকেন্ডের আর ন্যানোসেকেন্ডের এই যুগে দুই মিনিট যে কতটা বিশাল সময় সেটা অনেক আগেই প্রমাণ করে রেখছেন এখানকারই বিখ্যাতরা। শিকাগোর রবিনহুড্খ্যাত একসময়কার ব্যাংক ডাকাত জন ডিলিঞ্জারকে একবার আটক হবার পর সাংবাদিকরা যখন জিজ্ঞেস করেন, ‘একটা ব্যাংক ডাকাতি করার জন্য আপনারা কতটুকু সময় নিয়ে থাকেন?’ তখন তার আত্মবিশ্বাসমাখানো বিদ্রূপাত্মক উত্তর ছিল, ‘উমমম্…ঠিক এক মিনিট চল্লিশ সেকেন্ড।’ অতএব দুই মিনিট যে এখানে আপত্তিকর রকমের দেরী হয়ে যাওয়া তাতে আর কোন আপত্তি থাকবার কথা নয়।
পুলিশ অফিসাররা গাড়ী থেকে নেমে এসে জানতে চাইলো, কেউ একজন পুলিশ কল করেছি কি না। আমি হ্যাঁ বলতেই, কাগজ কলম নিয়ে প্রস্তুত। আমার কাছ থেকে ছিনতাই এর সব বর্ণনা শুনলো, বিভিন্ন তথ্য লিখে নিলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো, ‘ঘটনা ঘটেছে এত আগে, তুমি এতক্ষণ পর পুলিশ কল করলে কেন?’ আমি ভাবলেশহীনভাবে বললাম, ‘আমার ক্লাস ছিলো’। এরকম একটা উত্তর পাবার জন্য মনে হয় তারা কেউই প্রস্তুত ছিলো না। তাই কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে নির্বাক হয়ে বোকার মত তাকিয়ে থেকে, কি বলবে বুঝতে না পেরে বলে উঠলো, ‘We appreciate Sir.’ তারপর একটা ফর্মে আমাকে একটা রেফারেন্স নাম্বার দেয়া হলো, দেয়া হলো একটা ফোন নাম্বারও। বলা হলো, কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যদি এরপরও আমার মনে পড়ে তাহলে যেন তাদের দেয়া ফোন নাম্বারে সাথে সাথে ফোন করে জানিয়ে দেই। পরবর্তীতে যেকোনো সময় অপরাধীদের কাউকে দেখলে বা চিনতে পারলে, আমাকে দেয়া রেফারেন্স নাম্বার দিয়ে যেন পুলিশ কল করি। আরো বলা হলো, আমার সেল ফোন যেন আমি কাস্টমার সার্ভিসে ফোন করে বন্ধ না করি। আমি ‘তথাস্তু’ বলে তখনকার মত তাদের কাছ থেকে বিদায় নিলাম।
বাসায় পোঁছতে না পৌঁছতেই আবার পুলিশ। এবার UIC Police, এরা আমার বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ। ‘ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট শিকাগো’র সমস্ত ক্যাম্পাসে জুড়ে প্রায় ১৫০০ ‘ইমারেজেন্সি বক্স’ বসানো হয়েছে, যেখান থেকে বাটন প্রেস করলে সাথে সাথে ক্যাম্পাস পুলিশ চলে আসার কথা। গত সাত-আট মাসে ক্যাম্পাসে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কম করে হলেও বিশটি। কিন্তু কাউকে এরেস্ট করতে পারবার সুসংবাদ শোনার সৌভাগ্য এখনো আমাদের হ’য়ে উঠেনি। প্রতিবার-ই অপরাধ সংঘটিত হবার পর ক্যাম্পাস পুলিশের কাজ হচ্ছে সবার কাছে একটা করে ই-মেইল পাঠিয়ে দেয়া। প্রায় প্রতিটা ই-মেইলই আবার একই ধরণের। কিছুটা বাংলাদেশে ‘RAB এর সাথে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীদের বন্দুকযুদ্ধে ঘটনাস্থলেই তিন সন্ত্রাসীর ক্রসফায়ারে মৃত্যু’ হবার ঘটনার মত। সে-রকম ই-মেইলগুলির একটি এখানে তুলে দিলাম।
On January 11, at 6:48 p.m., a UIC student was the victim of a strong-arm robbery at 811 S. Wood St., between the Administrative Office Building and the College of Pharmacy. The victim stated that two offenders pushed him to the ground demanding his property. The victim complied, and the offenders took his property and fled southbound on Wood Street. The victim was not injured.
UIC Police offer the following security tips:
–be aware of your surroundings
–try to travel in groups when possible, particularly after dark
–use well-lit walkways
–on campus, look for the location of the nearest emergency call box (there are more than 1,500 across campus)
–the emergency number for UIC Police is *-**** or ***-***-****, which should be set on speed-dial on your cell phone
–report crime promptly to police
The UICPD/CPD Joint Robbery Task Force will conduct the follow-up investigation.
Both offenders are described as black males, 17 to 20 years old, 5-6 to 5-7 in height, 120 to 150 pounds, with light complexions. Both were wearing blue jeans, and one had a black top.
Anyone with information is asked to call UIC Police at ***-***-****.
ক্যাম্পাস পুলিশ সব কিছুর বর্ণনা নিয়ে বাসা থেকে বের হবার কিছুক্ষণ পরেই আবার আসলো শিকাগো পুলিশ। তারা ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে এরেস্ট করেছে, তাই বলতে এসেছে, আমি রাত দশটার দিকে অপরাধী সনাক্ত করার জন্য একবার যদি পুলিশ স্টেশানে যেতে পারি, তাহলে তাদের আনন্দের আর সীমা থাকবে না। আমি একপায়ে খাড়া, বললাম, আমার গাড়ী নেই, তোমরা এসে নিয়ে যেতে হবে। তাতে তাদের আপত্তি নেই, যেন তারাই বিপদে পড়েছে।
এই এরেস্ট হওয়া নিয়ে বাংলাদেশে একটা কাহিনী প্রচলিত আছে। কোন এক পুলিশের বড় কর্মকর্তা -অবশ্য বাংলাদেশ পুলিশে কোন ছোট কর্মকর্তা নেই, সেখানে সবাই বড় কর্তা, সূর্যের থেকে বালি গরম টাইপ অবস্থা- কোনো এক অনুষ্ঠান থেকে আসার পর বুঝতে পারেন, তার পকেট থেকে দামী ঘড়িটা চুরি হয়ে গেছে। রাগে কাঁপতে কাঁপতে থানায় এসে জুনিয়র অফিসারদের বললেন, ‘যে-করেই হোক চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে আমার ঘড়ি ফেরত চাই।’ নিম্নস্থরা ‘ইয়েস স্যার’ বলেই ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে অপারেশানে বেরিয়ে পড়লো। ওদিকে বড় সাহেব রাতে ঘুমোতে যাবার আগে দেখলেন, ঘড়িটা আসলে চুরি হয়নি, তার কোটের পকেটেই রয়েছে, শাওয়ার নেবার আগে আগে খুলে রেখেছিলেন, পরে হাতে পরতে ভুলে গেছেন। তিনি থানায় ফোন করে খবরটা দিতেই, ঘড়ি উদ্ধার অভিযানের নেতৃত্বে থাকা অফিসার বললেন, ‘বলেন কি স্যার, আমরা এর মধ্যেই সাতজনকে এরেস্ট করেছি, যার মধ্যে তিনজন স্বীকারও করেছে যে, তারাই আপনার ঘড়িটা চুরি করেছে।’ বস্তুত, আটকের পর বাংলাদেশে এমন পরিমাণ নির্যাতন করা হয় যে, অনেকে মিথ্যা করে হলেও অপরাধ স্বীকার করে তৎক্ষণাৎ কষ্টের হাত থেকে বাঁচতে চায়।
অবশ্য এই একই কাহিনীর অন্য আরেকটি পুরুষতান্ত্রিক সংস্করণও আছে। এক ভদ্রলোকের স্ত্রী রাতে বাড়ি না ফেরায় সকাল বেলা স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলেন, রাতে কোথায় ছিলো। ভদ্রমহিলা বললেন, ‘আমার বান্ধবীর বাসায় ছিলাম।’ ভদ্রলোকের সন্দেহ দূর না হওয়ায় তিনি একে একে তার দশজন ঘনিষ্ঠ বান্ধবীকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলেন, রাতে তার স্ত্রী ওদের বাসায় ছিলো কি না? একে একে দশজন বান্ধবীই উত্তরে ‘না’ ব’লে দিলো, সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজন বললো, গত এক সপ্তাহেও তার সাথে তার বান্ধবীর দেখা হয় নি। একইভাবে, ভদ্রলোক একদিন বাড়ী না ফেরায় সকাল বেলা তার স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, রাতে কোথায় ছিলো। ভদ্রলোকও একইভাবে উত্তর দিলো ‘আমার এক বন্ধুর বাসায় ছিলাম।’ সন্দেহের বশবর্তী হয়ে ভদ্রমহিলা তখনি তার ঘনিষ্ঠ দশজন বন্ধুকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলো, রাতে তার হাজব্যান্ড তাদের সাথে ছিলো না কি। দেখা গেলো, দশজন বন্ধুর মধ্যে পাঁচজনই বললো, রাতে তার বন্ধু তার সাথেই তার বাসায় ছিলো। বাকী পাঁচজনের মধ্যে তিনজন বললো, তাদের বন্ধু এখনো তাদের বাসায়, তাদের সাথে বসেই চা খাচ্ছে।
সে যাই হোক। এদিকে শিকাগো পুলিশ কাদেরকে যে এরেস্ট করে নিয়ে এসেছে সে তারাই জানে। রাত সাড়ে দশটার দিকে আমাকে পুলিশ স্টেশানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অফিসার আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি এখানে কি করছো?’ আমি বললাম, ‘পিএইচডি করছি।’ শুনে দুইপয়সার দামও দিলো না। মনে হলো, সে মনে মনে বলছে, ‘বোকা কোথাকার, মাথায় তিল পরিমাণ বুদ্ধি থাকলেও কেউ পিএইচডি করে।’ তারপর জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি ঠিক আছো তো? এই ঘটনার কারণে নার্ভাস হয়ে যাচ্ছো না তো?’ সাথে সাথে আমার বাঙ্গালিত্ব জেগে উঠলো। আমরাতো আবার সেই জাতি, যারা না-কি জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার হয়ে গেলেও মাথা নোয়ায় না। তাকে শুনিয়ে দিলাম আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি, এগুলো আমাদের কাছে ডাল-ভাত, বরং তোমরাই বেশি অস্থির হয়ো না। তারপর সে আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘তোমাদের দেশে ছিনতাইকারীরা কি ধরণেরে অস্ত্র ব্যবহার করে।’ এইবার আমার মনে হলো, এটা একটা স্ট্যাটাসের ব্যাপার। ছুরি-টুরির কথা বলা যাবে না। ভালো কোন পিস্তলের নাম না জানায় নিজের উপর একটু রাগই হলো। আমি শুধু ‘একে৪৭’ এর নাম জানি। কিন্তু সেটা দিয়েতো আর বলতে পারছি না যে, আমাদের দেশে ছিনতাইকারীরা ছিনতাইয়ের সময় ‘একে৪৭’ ব্যবহার করে। তারপরও বললাম, বেশিরভাগ সময় ‘গান্’ ব্যবহার করে। তার মুখ দেখে এবার মনে হলো, পিএইচডি করছি বলে যে সন্মানটুকু হারিয়েছি এবার তার কিছুটা হলেও পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হলো। ঠিক সেই মুহূর্তে বাংলাদেশের সকল ছিনতাইকারীর প্রতি আমি বেশ অনুরক্তই হয়ে পড়লাম।
পুলিশ স্টেশানে যেতে না যেতেই, আমাকে একটা ফোন সেট দেখিয়ে বলল, ‘দেখতো এটা তোমার কি না?’ আমি কিছুটা অবাকই হলাম, বললাম ‘দেখেতো তাই মনে হ’চ্ছে।’ তারা বলে, ‘নিশ্চিত করতে হবে। মনে হ’লে হবে না।’ আমি বলি, ‘তাহলে আমাকে কল করতে হবে।’ কল করতে না করতেই রিং বেজে উঠলো। আমি মহা খুশি। তারপর তারা আমাকে একটা এমপিথ্রি প্লেয়ার দেখিয়ে বলে, ‘দেখো এটা তোমার না কি?’ আমি বলি, ‘না।’ তারা বলে, ‘ভালো করে দেখ, নিশ্চিতও করতে হবে না। বললেই হবে তোমার। আমরা তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি।’ তারপর সবাই একসাথে হাসতে শুরু করলো। এখানকার ছিনতাইকারীরা মোবাইল সেট কিছুদূর নিয়েই ফেলে দেয়, কারণ সেটা খুব একটা কাজে লাগাতে পারে না। বরং মোবাইল সিগন্যাল থেকে অনেক সময় তাদের অবস্থান খুঁজে বের করা সম্ভব হয়। শিকাগো পুলিশ আমাকে অবশ্য জানায়নি তারা সেটটা কি ক’রে খুঁজে পেয়েছে। কিছুক্ষণ পরেই বুঝতে পারি, এখানে খাজনার থেকে বাজনা বেশি। একজন অফিসার এসে হ্যান্ডশেক করে পরিচয় দিলো, সে ডিটেকটিভ অমুক-তমুক। বুঝলাম মশা মারতে এরা কামানের ব্যবস্থা করেছে। কাগজপত্র প্রস্তুত করতে আরো কিছুক্ষণ সময় লাগবে, তাই ডিটেকটিভ্ শার্লক হোমস্ আমাকে চিপস্ আর কফি ধরিয়ে দিয়ে একটা কক্ষে বসতে ব’লে কাগজপত্র প্রস্তুত করতে চলে গেলেন।
তারপর যথারীতি এলো আমার সই করবার পালা। কতগুলো জিনিস যে আমি বুঝতে পেরেছি, সেটা স্বীকার ক’রে কাগজে অঙ্গীকার প্রদান। এই যেমন, আমি বুঝতে পেরেছি, যাদেরকে আমাকে দেখানো হবে তাদের থেকে একজনকে যে সনাক্ত করতেই হবে, এমন কোন কথা নেই। আমি আরো বুঝতে পেরেছি এবং বিশ্বাস করি যে, অফিসারদের কেউ অপরাধী কোনজন সেটা আগ থেকে জানেন না। এই-সেই অনেক কিছু করার পর, রাত একটার সময় আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো মহামান্যদের সামনে। আমি গ্লাসের ভিতর দিয়ে চারজনকে একে একে দেখে নিলাম। খুব কম বয়সী কিছু আফ্রিকান-আমেরিকান বালক। তারা ভয়ে আড়ষ্ট হ’য়ে আছে। কিন্তু নাহ, তাদের কেউই না। আমাকে সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে দেখতে বলা হ’লো। আমি নিশ্চিত করলাম যে, এদের কেউই নয়। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। অফিসার অনেক সুন্দর করে আমাকে বুঝাতে চেষ্টা করলেন যে, আমাকে আরেকটু ব’সতে হবে। কারণ, তাদের কাছে এরেস্ট হওয়া কিশোর অপরাধীও আছে। আমার দেয়া বর্ণনা অনুযায়ী একজনের বয়স যেহেতু ১২ বছর, তাই তাকেও সনাক্ত করার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু তার বয়স যেহেতু অত্যধিক কম, যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী তাকে সরাসরি সন্মুখে গিয়ে সনাক্ত করা যাবে না। আমাকে বসতে হবে, কারণ তারা এখনি ফটো তুলে প্রিন্ট করবে এবং পূর্বের অনেকের ফটোর সাথে মিশিয়ে তার পর আমার হাতে দেয়া হবে। যাই হোক ফটো দেখেও আমি সনাক্ত করতে ব্যর্থ হ’লাম। এদের কেউই আসলে না। শার্লোক হোমস্ সাহেবের সাথে ধন্যবাদ বিনিময়ের পর অবশেষে রাত দুইটার সময় শিকাগো পুলিশ আমাকে আমার বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেলো, আর ব’লে গেলো, ‘be safe, be careful.’
সমস্ত বিকাল-রাত অভিযান চালিয়ে শিকাগো পুলিশ কয়েকশো ডলার সমমানের সময়, প্রযুক্তি ও জনশক্তি ব্যয় করে আমার বিশ ডলারের সেটখানা উদ্ধার করে নিজেদের মান-সন্মান বাঁচালো। ঘটনার ঠিক একমাস পর, একই ধরণের পোশাক প’রে, ঠিক একই তিনজন, একই স্টাইলে হেলে দুলে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যাচ্ছে, আমার ছিনতাই হওয়ার ঠিক একই জায়গার দিকে। সাথে আছে ১২ বছরের সেই ক্ষুদ্র বালকও। আমার বাসার জানালায় দাঁড়িয়ে তাদেরকে চিনতে আমরা এতটুকু কষ্টও হয়নি। কিন্তু তারা থেমে থাকছে না, হাঁটছেতো হাঁটছেই। দ্রুত আমার ঘটনার রেফারেন্স নাম্বার দেখে নিলাম, মোবাইল হাতে নিয়ে ৯১১ চাপলাম, সেন্ড বাটনটা ঠিক আমার বুড়ো আঙ্গুলের নীচে। হেঁটে চলে যাচ্ছে তিনজন। ভাবতে থাকলাম এদেরকে ধরিয়ে দেবার পরবর্তী সম্ভাব্য ঝুঁকির কথা, ভাবতে থাকলাম শিকাগো পুলিশের দেয়া সম্ভাব্য পুরষ্কারের কথাও। আর ভাবতে থাকলাম, এখনি কি আমার সেন্ড বাটনটা প্রেস করা উচিত?
(সমাপ্ত)
• ‘জন ডিলিঞ্জার’ সম্পর্কে ধারণা পাবার জন্য দেখে নিতে পারেন জনি ডেপ্ অভিনীত ‘পাবলিক অ্যানিমিজ’ ম্যুভিটি।
• ‘শিকাগো পুলিশ’ সম্পর্কে ধারণা পাবার জন্য দেখে নিতে পারেন হ্যারিসন ফোর্ড অভিনীত ‘দ্যা ফিউজিটিভ্’ ম্যুভিটি।
১৮ এপ্রিল ২০১০
আজ সারাদিন শুধু আপনার লিখাই পড়ছি।
রাজু ভাই, পূর্ব থেকে পশ্চিম সিরিজটা এক বসায় মন্তব্য সহ পড়া শেষ করলাম,
আপনার মজার লোক জানতাম, কিন্তু আপনার লেখার হাত যে এত ভাল তা জানতাম না। আরও লেখার অপেক্ষায় রইলাম।
@সাদী,
সাদী ভাই,
অনেক ধন্যবাদ।
আপনি কি ইউনিকা’র সাদী ভাই?
ভালো থাকবেন।
@মইনুল রাজু,
জী, আমিই সেই ব্যাক্তি 😎 । আচ্ছা সামহোয়ার ইন ব্লগে কি আপনার কোন ব্লগ আছে?
আপনিও ভাল থাকবেন।
@সাদী,
আরে সাদী ভাই!! ইউনিকার সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে এখনো অন্যরকম লাগে। আমাদের সময় আপনিতো ছিলেন রুখে দাঁড়ানো প্রথম জন। রেসপেক্ট।
আমি অন্যকোনো ব্লগে লিখি না। তবে শুনেছি অন্য ব্লগগুলোতে ‘পরশপাথর’ নামের আরো লেখক আছেন। ওগুলো আসলে আমার না।
আগে কন, আম্রিকান ছিনতাইকারীরা কি মূল্যবান কিছু না পাইলে গুলি করে দেয়? দেশে তো ছিনতাইকারী ভাইদের নিরাশ না করার জন্য পকেটে কিছু উপঢৌকন রাখতে হয়। আমরা সবাই জানি আমাদের জান-মালের নিরাপত্তা নাই, সো হোয়াই সো সিরিয়াস?
:hahahee:
@পৃথিবী,
কিছু না পাওয়ার পর গুলি করে দেবার ঘটনা আমি আসার পর এখনো ঘটেনি। ওরা এত ঝুঁকি নিয়ে কাজগুলো করে, ভদ্রতা করেও কিছু না রাখলেতো খারাপ দেখায়। তবে, গুলি না করলেও হসপিটালে পাঠানোর সু-ব্যবস্থা করে দিতে পারে।
রাজু,
এই পর্বের অপেক্ষায় ছিলাম, তাই ইচ্ছে করেই আগের পর্বে মন্তব্য করি নি। খুবই উপভোগ্য উপাখ্যান। জানি, ঘটনার সবকিছুই তোমার কাছে নিশ্চয়ই উপভোগ্য ছিল না। সাবধানে থেকো।
@ইরতিশাদ,
অনেক ধন্যবাদ ইরতিশাদ ভাই।
আমি রাত দুইটা-তিনটার সময়ও শিকাগোর পথে ঘাটে হাঁটি। কখনো কিছুই হয়নি। অথচ যেটা হলো সেটা প্রকাশ্য দিবালোকে।
সবচেয়ে বাজে ব্যাপার হচ্ছে, এখন রাতে হাঁটতে বের হলে সারাটাক্ষণ আতঙ্কিত না থাকলেও সতর্ক থাকতে হয়, যেটা আমার একদম ভালো লাগে না।
আর সাবধানে আসলে থাকি। সাবধানতার অংশ হিসেবে সবসময় কিছু ক্যাশ সাথে রাখি, কখন আবার উনাদের দরকার হয়ে যায়। ক্যাশ না-পেলে কি না কি করে বসে আবার।
ভালো থাকবেন।
@মইনুল রাজু,
কথা খুবই সত্য। ওনাদের ভেটের জন্য কিছু নগদ নারায়ন সর্বদা প্রস্তুত রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। তবে ভুক্তভোগিদের থেকে শুনেছি যে তেনাদের লেদার জ্যাকেটও নাকি খুব পছন্দ। সক্রিয় বিবেচনা করতে পারেন। হাতের কাছে না থাকলে দেশের লটকন মার্কেট থেকে আমদানী করাতে পারেন।
@আদিল মাহমুদ,
দেশ থেকে আসার সময় এবার লেদার জ্যাকেট নিয়ে আসতে হবে। তবে আপনার আগের বুদ্ধিটা খুব কাজের। ওদের সাথে বন্ধুত্ব করে ফেলা। তারপর আর পায় কে? ওদেরকে নিয়েই শহর ঘুরতে বের হব। তবে সেটার একটা সমস্যা হচ্ছে, পুলিশ ওদের সাথে সাথে আমাকেও এরেস্ট করে নিয়ে যাবে।
@মইনুল রাজু,
আমার কাছে সব সমস্যারই সমাধান আছে, মাঝে মাঝে ভাবি যে প্রফেশনাল পরামর্শ কেন্দ্র খুলে বসব কিনা।
পুলিশে ধরলে তখন ইংরেজীই না জানার ভান করবেন, চার হাত পা নেড়ে করুন স্বরে খালি Me no English বলে যাবেন।
@আদিল মাহমুদ,
🙂 আসলেই দেখছি সব সমাধান আছে। বুঝতে পারছি, আপনার লাইফেতো কোন সমস্যাই থাকবেনা।
আর বোলেন না, এই সবকিছু নিয়ে বড়ই বিপদে আছি। 🙂
:lotpot: :hahahee: :hahahee: :hahahee: