আশির দশকে মরিস বুকাইলি নামে এক সাদা চামড়া আমেরিকান আরবের তৈল-ডলারের মোহে অন্ধ হইয়া ‘বাইবেল কোরান এন্ড সায়েন্স’ নামে এক বই লিখা ম্যালা পয়সা কামাইছিলেন। হের পর থেইক্যা আমরা মুসলিমেরা পৃথিবীর যাবতীয় আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান কোরানে খুইজ্যা পাইতেছি – সেইটা বিগ ব্যাংই হোক, আর মিশরের পিরামিডই হোক। ইহুদী নাসারা খ্রীস্টান বিজ্ঞানীরা অনেক কষ্ট কইরা – পাটিগণিত, বীজগনিত, জ্যামিতি সমাধান কইরা বিজ্ঞানের যেইগুলা জিনিস বাইর করেন, এর পরের দিনই আমরা ওইগুলা কোরানে পাইয়া যাই। কেমনে কোরানে বিজ্ঞান পাইতে হইব – বুকাইলী গুরু পথ দেখাইয়া গেছেন আমাগো। কোরানের কোন আয়াতে হয়ত কইছে – ‘আসমান আর জমিন এক লগে ছিলো’ – ব্যাস আমরা ওইটারে বিগব্যাং বানায়া ‘কোরান কত মিরাকেল’ কইয়া লাফালাফি লাগায় দেই। কোনো আয়াতে হয়তো ‘দুখান’ শব্দটা আছে – আমরা ওইটারে প্লাজমা বানায়া দেই, আর বলি – আল্লাহ কত আগে বইলা দিছে – ‘প্লাজমা থেইকাই মহাবিশ্ব আইছে’। আমগো কোরান কত অলৌকিক। এই হইতেছে আমাদের রিসার্চ।

কিন্তু নব্বইয়ের দশক থেইকা বুকাইলী গুরুর আর খুব একটা ভাত নাই। কারণ ময়দানে হাজির হইছেন আরো দুই পীর বাবা – হারুন ইয়াহিয়া আর জোকার নায়েক। ইসলামী বিশ্বে হোগো দারুন প্রভাব। বিজ্ঞান না বুইঝাও বিজ্ঞানের উপরে ঢাউস ঢাউস সব বই লিখা ফালান। আর সেই সব বই আবার তারা মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচা কইরা পৃথিবীর সবগুলা দেশের লাইব্রেরিতে ফ্রি বিলান (এত টেকা তারা কইত্থেইকা পান কে জানে?)। আমি লক্ষ্য করতাছি এই দুই পীর বাবারই জানি শত্রু হইতাছে ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব। কোন দিন কোন ফসিলের চেহারা না দেইখাও, কোন দিন বিবর্তনের উপর ভাল কোন বই না পইড়াও তারা বিবর্তনের  মহা পন্ডিত। পন্ডিত হওয়া হেগো জন্য সোজা।  ইন্টারনেটে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন আর খেরেস্তান ক্রিয়েশনিস্ট গো ম্যালা হাবি জাবি সাইট আছে। ওইগুলা থেইকা তারা টুক্লিফাই করে আর ‘যীশু’র বদলে ‘আল্লাহ’ বসায় দেয় আর বাইবেলের বদলে ‘কোরান’। আজকের দুনিয়ায় পন্ডিত হওন কত সোজা। বায়োলজিস্ট আর প্যালিন্টিওলজিস্টরা কত কষ্ট কইরা রিসার্চ কইরা বিবর্তনের নানা সাক্ষ্য প্রমাণ পাইতাছেন – আর জোকার নায়েক আর ইয়াহিয়া  সাবে কোরানের ‘প্রমাণ’ হাজির কইরা সব কিছু এক ফুঁ দিয়ে উড়ায় দিতাছে। তবে, যারা বিবর্তন লইয়া একটু পড়ছেন তারা বহুবার এই দুই পীর বাবার জারিজুরি বহুবার ফাঁস করছেন। মুক্তমনায় শিক্ষানবিস একবার লিখছিলেন – ‘জাকির নায়েকের মিথ্যাচার: প্রসঙ্গ ‘বিবর্তন’। ওই পোস্টে শিক্ষানবিস জোকার নায়েকের ২৮ টা মিথ্যার কাহিনী ফাঁস করছেন। এক্কেরে ভালামত বুঝায় দিছেন বিবর্তন সম্বন্ধে জাকির নায়েকের জ্ঞান কতটা তলানিতে।
 

জাকির নায়েক তো ধরাশায়ী হইলেন। বাকি আছে আরেক পীর হারুন ইয়াহিয়া (আসল নাম হইলো আদনান ওকতার)। আমি আজকে একজনের ইমেইল থেকে পাইলাম হারুন ইয়াহিয়ার ‘আটলাস অব ক্রিয়েশন’ নামের একটা বইয়ের আলোচনা করছেন রিচার্ড ডকিন্স। আলোচনা উনি করছিলেন ব্রিটেনের একটা ‘এক্স মুসলিম’ কনফারেন্সে কয়েক বছর আগে। ভিডিওটা দেইখ্যা ব্যাপক মজা পাইলাম। পাঠকদের সাথে চার পর্বের ভিডিওগুলা শেয়ার করতাছি।

httpv://www.youtube.com/watch?v=FPxGDXSJZfc
[1]

httpv://www.youtube.com/watch?v=uyzPpJazwY8 
[2]

httpv://www.youtube.com/watch?v=rFZJsz8aJq0
[3]

httpv://www.youtube.com/watch?v=uxT8qhP1v7Q
[4]

একই ভিডিও আরেকটা সাইটেও আছে। সেইটারও লিঙ্ক দিলাম। যদি ইউ টিউব কারো স্লো লাগে এইটা দেখতে পারেন

 
হারুন সাহেবের বইটা লইয়া রিচার্ড ডকিন্স আলোচনাও করছেন তার সাইটে (Venomous Snakes, Slippery Eels and Harun Yahya) । হেইটা পইড়াও দারুন মজা পাইলাম। ইয়াহিয়া সাবে নাকি ‘ইল’ মাছের ছবি কইয়া সাপের ছবি তার বইয়ে ছাপায় দিছেন। বইটাতে আরো আছ হাজারখানেক ভুল ভাল। আমি যেহেতু বিবর্তন সম্বন্ধে এত বেশি কিছু জানিনা, তাই নিজের কোন মন্তব্য দিলাম না। মুক্তমনায় অনেকেই বিবর্তন লইয়া লেখালেখি করেন – তারা ভাল কইতে পারবেন।

আমি শুনছি হারুন ইয়াহিয়া ডকিন্স সাবের উপ্রে মহা ক্ষেপছেন। মামলাও নাকি করছেন। টুর্কি তে ডকিন্সের সাইট বন্ধ কইরা দিছেন। তামসার কোন সেষ নাই।  এইখানে ওই লইয়া আলোচনা আছে। 

হারুন ইয়াহিইয়া কোকেইন রাখন, শিশু নির্যাতন আর নানা ক্রিমিনাল এক্টিভিটির কারণে আগে তিন বছর জেল খাটছেন। আর সেই ড্রাগ খাওয়া, পেডোফাইল, জেলখাটা আসামী এখন হইছেন মুসলিমদের ক্রিয়েশনিস্ট পীর, বিবর্তনের পন্ডিত। আর হেই পীরের বই লইয়া কত ফালাফালি! দেখলেও লজ্জা লাগে।