লিখেছেন: প্রত্যয় প্রকাশ
মৌলবাদী শক্তির প্রতিনিধিরা, গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি জরিপের তথ্য শেয়ার দিয়ে; উদ্ধৃত করেছেন; ধার্মিক এবং নাস্তিকেরাও মনে করে, নৈতিকভাবে নাস্তিকেরা অসৎ[১]। তাদের অনেকেই নাস্তিকদের নীচু করে বলছে, এদের তো যাওয়ার আর জায়গা থাকছে না। মজার বিষয় হল: এই ধরনের গবেষণা ২০১৪ এবং ২০১১ তে’ও হয়েছিল।[২] এই দুইটা জরিপই কিভাবে হয়েছে, সে সম্বন্ধে একটু বলি: গবেষক দল জরিপে অংশগ্রহণকারীদের কাছে যান, গিয়ে একটা গল্পের মত প্লট সামনে উপস্থাপন করেন। সব ক্ষেত্রেই প্লট’টা ছিলো এরকম:
একটি ছোট ছেলে শৈশবে পশু-পাখিদের হত্যা করতো, তাদের অকারণে নির্যাতন করতো। এরপর একদিন সে বড় হয়ে শিক্ষক হয়, তারপর তার মনে হয়, পশু – পাখি হত্যা করে, সে ঠিক থ্রিলটা পাচ্ছে না। তারপর থ্রিল পাওয়ার জন্য পাচঁজন মানুষকে বিনা কারণে খুন করলো, এবং তাদের লাশ পুতে ফেলল।
অংশগ্রহণকারীদের কাছে প্রশ্নটা ছিলো, আপনার কী মনে হয়, সিরিয়াল কিলার; ধার্মিক না নাস্তিক???
অংশগ্রহণকারীদের বিরাট অংশই উত্তর দিয়েছে, মানুষটা নাস্তিক। এ জায়গা থেকেই বলা হচ্ছে নাস্তিকেরা অসৎ। ২০১৭ সালের এই গবেষণাটা করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, ভারত(যথাক্রমে খ্রিষ্টান, মুসলিম, হিন্দু) সহ মোট ১৩’টা দেশে। এখানে ছিল চীন নেদারল্যান্ডের মত সেক্যুলার রাষ্ট্রও। গবেষকরা দেখেছেন নাস্তিকেরা নৈতিকভাবে অসৎ, এ বিশ্বাস মানুষের মধ্যে প্রবলভাবে দেখা গেলেও, এ বিশ্বাসের ভিত্তি ভারত, দুবাই, যুক্তরাষ্ট্রে দৃঢ়, পক্ষান্তরে, সেক্যুলার রাষ্ট্রগুলোতে এটা দুর্বল। আবার ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ডে এ প্রভাব প্রায় নেই বললেই চলে।
এবার প্রশ্নটা হচ্ছে, এ প্রভাবটা কেন দেখা যাচ্ছে? উত্তরটা খুব একটা সহজ নয়, একটু ধৈর্য ধরে পড়তে হবে। খেয়াল করুন উক্ত তিনটি ধার্মিক দেশগুলোতে নাস্তিকেরা কিন্তু ভয়ানকভাবে সংখ্যালঘু (বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ধার্মিক বাস করে ভারতে, ৩য় অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র, আর আমিরাত তো মুসলিম দেশই, (নাস্তিক বলে কেও আছে কিনা গবেষণার বিষয়)[৩]), তারপরেও নাস্তিকেরা এতটা প্রবলভাবে অসৎ, এটা উক্ত তিন দেশের নাগরিকরা এতটা দৃঢ়তার সাথে বলছে কিভাবে? এর উত্তর টা পাওয়া যায়, ‘কনজাংকশন ফ্যালাসি’ [৪] থেকে।(দুইয়ের মধ্যে কোনটা ঘটার সম্ভাবনা অধিক বেশি, তা নির্ণয় করা। এই ফ্যালাসির কারণেই আমাদের সিনেমা গুলোতে দেখানো হয়, সম বুদ্ধিসম্পন্ন এলিয়েন এলে আমাদের মেরেধরে শেষ করে দিবে)।
জরিপে ধার্মিক দেশগুলোর মানুষদের এটা জিজ্ঞেস করা হয় নি, আপনার কী কোনো নাস্তিক বন্ধু আছে? আপনার কী মনে হয়, তারা অসৎ??? বরং তাদের একটা সিরিয়াল কিলার আর একটা কাল্পনিক গল্প শুনানো হয়েছে, এবং জিজ্ঞেস করা হয়েছে, আপনার কী মনে হয় সিরিয়াল কিলারটি ধর্ম পালন করে থাকে? উত্তর এসেছে, অবশ্যই না (এখানে যতটা না উত্তর দানকারীদের অভিজ্ঞতা বা পর্যবেক্ষণ কাজ করেছে, তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করেছে, তার মানসিক চিন্তা, বিবেচনা)। নিশ্চয়ই, সকল বোমাবাজির পর ইহা সহী মুসলমানের কাজ নয়, এটা শুনেছেন হাজারবার, কিছুদিন আগেও সৌদি আরবের এক মন্ত্রী বলেছেন, every terrorist is an atheist. মনে আছে কি? কিন্তু সত্যি কী তাই? আইএস, বোকো হারাম, তালেবান বা বাংলা ভাইরা কী সত্যিই নাস্তিক? তাহলে, ধার্মিক দেশগুলোর নাগরিকের কাছে কেন নাস্তিকেরা নৈতিকভাবে অসৎ, তার উত্তর কী পাওয়া যায়? আসলে এটাই হচ্ছে বিশ্বাসের ভাইরাস। এ ভাইরাসের কারণে তাদের মাথায় এটা গেথে গিয়েছে যে, যে ধর্মই আমাকে নৈতিকভাবে রক্ষা করতে পারছে না, (ভারতে নিরন্তর গরু নিয়ে মানুষ হত্যা, মুসলিম দেশে নিরন্তর বোমাবাজি আর আমেরিকায় দিনে দুপুরে বন্দুক নিয়ে অসংখ্য মানুষ হত্যা) সেখানে ধর্মহীন সমাজ কিভাবে আমাকে, আমার দেশকে নিরাপত্তা দিবে। অর্থাৎ অধার্মিক মানেই খারাপ, চারিত্রিকভাবে অসৎ। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ধার্মিক দেশগুলোর নাস্তিকেরাও কী মনে করে, নাস্তিকেরা নৈতিকভাবে অসৎ??? ওয়েল এই উত্তর অন্তত জরিপে খোলসা করা হয় নি।
কিন্তু তবুও প্রশ্ন জাগে মনে, সেক্যুলার রাষ্ট্রের নাস্তিকেরা কেন মনে করছে, নাস্তিকেরাই অসৎ হয়??? হ্যা, এই উত্তরটা আরো বেশি সহজ। আচ্ছা একজন বাংলাদেশী হিসেবে যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, কী মনে হয়, ভারতে হিন্দুরা ভালো, না বাংলাদেশের হিন্দুরা ভালো??? কী বলবেন? অবশ্যই বাংলাদেশের, তাই না? জাতি, ধর্ম, বর্ণ এক হওয়া সত্বেও এরকম ভিন্নতা কেন??? কারণ আর কিছুই না। অন্যতম কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। এই সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কেন্দ্র করে, আপন গায়ে কুকুর রাজা প্রবাদকে সত্যতা সমেত, ভারতের হিন্দুরা অবলা জীবকে কেন্দ্র করে মানুষ হত্যা করতে পিছপা হয় না। যা বাংলাদেশে কোনোদিন সম্ভব নয়। সেক্যুলার রাষ্ট্র গুলোতে একজ্যাক্টলি এটাই ঘটছে, দফায় দফায় সেখানে ধার্মিকের সংখ্যা কমছে। [৫] তাই যদি সেখানকার জেল গুলোতে কাওকে যেতেই হয়, তারা কিন্তু সেই সংখ্যাগুরু নাস্তিকদের থেকেই যাবে। আবার ধার্মিকরা সংখ্যালঘু হওয়ায়, তারা কিন্তু বেশ কাচুমাচু পরিস্থিতিতে পরে আছে। যেমন: ধরুন না, আপনি কোনো মুসলিম দেশে নবীকে; নবী মুহম্মদ বললে আপনার কল্লা চলে যেতে পারে, কিন্তু পশ্চিমে আপনি তাকে নিয়ে এক-আধটু কটূক্তিও করে ফেলতে পারবেন। অর্থাৎ সেক্যুলার রাষ্ট্রগুলোতে আপনি কিন্তু ধার্মিকদের আসল চেহারা দেখছেনও না। ফলে নম্র ভদ্র একজন অসহায় ধার্মিককে, সৎ মনে হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। তারপরেও নাস্তিকেরা যে নৈতিকভাবে অসৎ, এই ধারণা কিন্তু সেক্যুলার রাষ্ট্রে বেশ দুর্বল। (আর যদি নাস্তিকেরা অসৎ’ই হত নিশ্চয়ই নাস্তিক রাষ্ট্রগুলোতে (নেদারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, সুইডেন) কয়েদিদের সংখ্যা কমতে কমতে জেলখানা বন্ধ হয়ে যেত না।[৬], [৭]
আমি কে না কে, আমার কথাকে সিরিয়াসলি নেওয়ার কী আছে? ওয়েল, আপনার এ ধরনের কোনো বক্তব্য যদি থেকে থাকে, আমি তাকে মুল্যায়ন করি ঠিকই। তবে কিছু বলার আগে; চলুন শুনি এই বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট গবেষকের কথা। গবেষক উইল
জার্ভেই (Will Garveis) ২০১১ সালে হুবহু এই গবেষণাটি করেছিলেন, সেখানেও একই ফলাফল এসেছিল। অর্থাৎ ম্যাক্সিমাম জনগোষ্ঠী মনে করে, নাস্তিকেরা অসৎ। কিন্তু জার্ভেই এখানে থামেন নি। তিনি এর পরপর আরো কিছু গবেষণা করলেন। তিনি আরেকটা জরিপে করলেন কী, সিরিয়াল কিলারের জায়গায় ইন্সেস্ট বসিয়ে দিলেন। অর্থাৎ কারা বেশি অজাচার করে? নাস্তিক না ধার্মিক’রা। মানুষ উত্তর দিল, নাস্তিকেরা। এরপর তিনি আরেকটা জরিপ করলেন, কারা বেশি পশুকামিতায় জড়িত, ধার্মিক’রা নাকি নাস্তিকেরা? এবারো মেজরিটি বললো, নাস্তিকেরা।
জার্ভেই এই গবেষণাকে বিশ্লেষণ করেছেন, বেশ চমৎকারভাবে। তার মতে, এর জন্য নাস্তিক বা সাধারণ মানুষ দায়ী নয়। এর জন্য দায়ী আমাদের সমাজ। তিনি বলেছেন, আমাদের সমাজ আমাদের শিক্ষা দেয়: You can’t be good without God..। এটা আমাদের সমাজে বদ্ধমূল ভাবে গেথে দেওয়া হয়েছে, এটা হয়ে উঠেছে আমাদের সংস্কৃতির অংশ। যেখান থেকে সহসা বের হওয়া সম্ভব নয়। তার মতে, মানুষের এই যে ভুল ধারণা, একে দুর করতে নাস্তিকদের আরো বহুদূরের পথ পাড়ি দিতে হবে। [৮]
শেষ করি, এই গবেষণাটিতে যারা ফাণ্ড ঢেলেছে, তাদের নিয়ে একটু কথা বলে, এর পিছনে ছিল জন টেম্পলেটন নামক ফাউন্ডেশন। এটা এমন একটা বায়াসড ফাউন্ডেশন, যাকে ঘিরে রেখেছে হাজারটা বিতর্ক [৯] এই ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে আইডি (Intelligent Design) কে প্রমোট করা, রক্ষণশীল মানসিকতা টাইপ গবেষণার পিছনে অর্থ ঢালার মত ভয়াবহ অভিযোগও আছে। এই ফাউন্ডেশনের সাথে বেশ কিছু বিজ্ঞানীর বিরোধও চলছে। [৯, দেখুন কন্ট্রোভার্সিয অনুচ্ছেদ] এই ফাউন্ডেশনের সাথে কাজ করবে না, বলে জানিয়েছে দার্শনিকেরা। [১০]
এই ফাউন্ডেশন দ্বারা পরিচালিত একটি গবেষণার গল্প বলি, এই ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে পরিচালিত একটি গবেষণায়, জনসাধারন বিজ্ঞানকে কিভাবে গ্রহণ করে, তার উপর ৮টি দেশের ২০,০০০ বিজ্ঞানীর উপর একটি জরিপ করা হয়েছিল।[১১] যুক্তরাজ্যের ১৫৮১ জন বিজ্ঞানী র্যান্ডমলি এই জরিপে অংশগ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ১৩৭ জনকে গভীর ভাবে প্রশ্ন করা হয় (উনাদের কিভাবে বাছাই করা হয়েছে, তা অবশ্য জানা নেই)। এদের মধ্যে আবার ৪৮ জন ডকিন্স নিয়ে মন্তব্য করেন যার ৮০% ছিল নেগেটিভ মন্তব্য(হিসাব করলে দাঁড়ায় ৩৮ জনের মত)। এই হল গবেষণা। কিন্তু তাতে কি? পুরো পৃথিবীর সকল আস্তিকদের পেইজে, এমনকি কিছু সেক্যুলার মিডিয়ায়ও বলা হয়েছে, বিজ্ঞানীরা ডকিন্স’কে একদমই পছন্দ করেন না। ৩৮ জনের মত মানুষকে দাবী করা হয়েছে, বিজ্ঞানীদের ৮০ শতাংশ। এরকম বায়াসড একটি প্রতিষ্ঠান দ্বারা করা অর্থায়নে, সব তথ্য নিখুঁত কিনা, তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন। ডকিন্স’কে নিয়ে করা রিসার্চের সম্বন্ধে আরো ভালোভাবে জানতে এখান থেকে ঘুরে আসতে পারেন। [১২]
রেফারেন্স
১) https://amp.theguardian.com/world/2017/aug/07/anti-atheist-prejudice-secularity
২) http://www.plosone.org/article/info%3Adoi%2F10.1371%2Fjournal.pone.0092302
৩) http://www.gallup.com/poll/142727/religiosity-highest-world-poorest-nations.aspx
৪) https://en.m.wikipedia.org/wiki/Conjunction_fallacy
৫) http://relay.nationalgeographic.com/proxy/distribution/public/amp/2016/04/160422-atheism-agnostic-secular-nones-rising-religion
৬) http://www.banginews.com/web-news?id=2ff8e0a8578d312941a0b88e2711ef2e7db7a827
৭) http://bn.mtnews24.com/exclusive/61461/——-
[৮]http://www.patheos.com/blogs/friendlyatheist/2014/04/16/new-study-shows-that-even-atheists-think-atheists-are-immoral/
৯) https://en.m.wikipedia.org/wiki/John_Templeton_Foundation
১০) https://richarddawkins.net/2015/05/philosopher-says-no-to-major-science-forum-over-templeton-funding/
১১) http://journals.sagepub.com/doi/10.1177/0963662516673501
১২) https://whyevolutionistrue.wordpress.com/2016/11/18/in-defense-of-richard-dawkins-elaine-ecklund-and-team-write-a-pointless-templeton-funded-paper-saying-that-surveyed-scientists-feel-that-dawkins-misrepresents-science/amp/
চিরদিন কিছু মানুষের সন্তোষ
ধর্মের প্রতি। দিয়ে যাবে নাস্তিকতার দোষ
তারা তো জানে না ধর্মের ছলে কেউ
তুলে আনছে আধারে ভয়াল ঢেউ
সৎ ও সাহসী নাস্তিক যারা ছড়ায় অবিশ্বাস
তাদের প্রচেষ্টায় এ পৃথিবী আজও নেয় নিঃশ্বাষ
আমারও কি ছিল জানা?
আমিও ছিলাম এমনি অন্ধ, আমিও ছিলাম কানা।
নৈতিকতা-অনৈতিকতা, সততা-অসততা, সত্য-মিথ্যা, সুন্দর-অসুন্দর-ইত্যাদি সবকিছুই সম্ভবত ভালো-মন্দের ধারণা প্রসুত। এই ভালো-মন্দের ধারণা নিয়ে বিভিন্ন দর্শন-মতবাদ থাকলেও কিছু কিছু ‘বিষয়’ সভ্যতার মৌলিক ভিত্তি হিসাবে সার্বজনীন রূপ পেয়েছে। এটি সম্ভবত সৃষ্টি থেকেই সভ্যতার মূল্যবোধে অপরিবর্তীয়, অলঙ্ঘনীয়।
যেমন ‘সত্য বলা, প্রকাশ করা বা সত্যকে সত্য বলে মেনে নেওয়া ভালো’- এ ‘ধারণা’ এমনই স্পষ্ট বাস্তবতা এবং অলঙ্ঘনীয় যে জরীপ বা জনমত যাচাইয়ে সারা বিশ্বের সাড়ে সাতশ কোটি মানুষও যদি একমত হয় সত্য বলা ভালো নয় তবুও ‘সত্য’-কে ‘মন্দ’ বা ‘অগ্রহনযোগ্য’ হিসাবে গণ্য করা যায় না।
একইভাবে দুস্থ-দরিদ্রকে দান করা, অঙ্গিকার বা প্রতিশ্র“তি রক্ষা করা, সাধারণভাবে মানুষকে ক্ষমা করা, নির্যাতন, নিপিড়ন অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদ করা-ইত্যাদিসহ আরো বহু বিষয় ‘ভালো’ হিসাবে সভ্যতার অংশ হয়ে আমাদের ধারণায় বা মূল্যবোধে এমনভাবেই প্রোথিত যে এগুলো আর জরীপের ফলাফল দিয়ে বিবেচনা করার অবকাশ নেই।
সুতরাং যে ব্যক্তি এসব অলঙ্ঘনীয় ‘ভালো’-কে ভালো হিসাবে নিঃর্শতভাবে প্রথমত: মেনে নেয় এবং দ্বিতীয়ত: সেগুলো নিজ জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আন্তরিক চর্চ্চা করে সে নৈতিকভাবে সৎ, আদর্শ-নীতিবান সর্বপরি ‘ভালো মানুষ’। এখন বিশ্বের সকল মানুষ যদি ঐ ব্যক্তিকে মন্দ বলে তবুও সে ‘ভালো’।
আলোচ্য প্রবন্ধে যে জরীপের ফলাফল নিয়ে বলা হচ্ছে, সে জরীপের মাধ্যমে সাধারণভাবে আমরা খুব বেশী একটি সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারি তা হলো, ‘জরীপে অংশগ্রহনকারীরা ব্যক্তিগতভাবে নাস্তিকদের পছন্দ করেন না।’ এ বিষয়ে উত্তরদাতাদের মনোস্তাত্ত্বিক কারণ নিয়ে দীর্ঘ একাডেমিক আলোচনার হতে পারে, তবে বিস্তারিত আলোচনাই না যেয়ে জরীপের ধরণ থেকেই আরেকটি সিদ্ধান্তে সহজেই পৌছানো যায়, ‘উত্তরদাতারা তাদের ‘অভিজ্ঞতা’ নয় ‘পূর্ব-ধারণা’ (প্রি-জুডস- সভ্যতার মূল্যবোধে এটি মন্দ বা অনৈতিক) প্রসুত হয়ে উত্তর দিয়েছেন এবং জরীপকারীরা নাস্তিকদের বিরুদ্ধে ‘সস্তা জনপ্রিয়তা’ (পপুলিস্ট থিউরী- এটিও সভ্যতার মূল্যবোধে মন্দ ও অনৈতিক বলে বিবেচিত) সৃষ্টির অসৎ উদ্দেশ্যে এ জরীপ পরিচালনা করেছেন। এটি এক ধরণের প্রতারণাও।
আমার আলোচনার বিষয়টি অবশ্য জরীপ নয়। ভালো-মন্দ বা নৈতিকভাবে সৎ-অসৎ প্রসঙ্গে আমার একটি তাত্ত্বিক প্রশ্ন : ‘ভালো’ ও ‘মন্দ’ সভ্যতার ধারণায় সমান বলে গণ্য করা নৈতিক কি-না? অথবা এভাবেও বলা যায় : ‘কোন ব্যক্তি সভ্যতার ধারণায় এই যে ‘ভালো এবং মন্দ’ -পরিণতিতে উভয়ই সমান- এই তত্ত্বে বিশ্বাস করেন- তাকে কি আদৌ ‘নৈতিকভাবে সৎ’ বলা যায় কি-না?
ধরা যাক, ‘এক্স’ একজন চরম স্মার্ট ব্যক্তি। সে মনে করে, সত্য বলা, অঙ্গিকার রক্ষা, মানুষের কল্যাণে ত্যাগ করা-‘ভালো কাজ’ এটি শুধুমাত্র ধারণা বিশেষ-কেবলমাত্র কিছু বোকা মানুষ ঠকানোর কৌশল। দুনিয়ায় অর্থ, যশ-খ্যাতি ও ভোগই মুল। সে মনে করে, আইন ও মানুষের চোখে সহজেই ফাঁকি দিয়ে নিজের ভাগ্য গড়া ও জীবন উপভোগের সহজ পথ ধর্ম ব্যবসা। এবং সুযোগ-নিরাপদ মনে করলে সে নির্দ্ধিধায় ধর্ষন করেছে, প্রতারণা-সত্য-মিথ্যা যখন যেটি সুবিধা তার আশ্রয় নিয়েছে। এ যাত্রায় সে একজন সফল সম্মানীয় ব্যক্তি হিসাবে তার জীবন অতিবাহিত করল। একইভাবে ম্যাকীয়ভালী কায়দায়, আমরা আজ বহু সফল জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ, সফল ব্যবসায়ীও দেখছি।
অন্যদিকে ‘ওয়াই’-একজন সাধারণ মানুষ। তার মধ্যে ভালো মন্দের এই ধারণা প্রবল। ‘ভালো’-কে ভালো হিসাবে নিঃর্শতভাবে মেনে নেয় এবং সে ভালো নিজ জীবনে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আন্তরিক চর্চ্চা করে। সে নৈতিকভাবে সৎ, আদর্শ-নীতিবান সর্বপরি ‘ভালো মানুষ’ একারণে তাকে সদা সত্য কথা বলতে হয়, সর্বতভাবে অঙ্গিকার রক্ষা করতে হয়। ফলে সে যশ-খ্যাতিবিহীন অবস্থায় লোকচক্ষুর অন্তরালে সে একটি কঠিন সংগ্রামময় সাধারণ জীবন অতিবাহিত করল।
যেহেতু উভয়ের জন্যই মৃত্যুই চরম পরিণতি। সুতরাং ভালো-মন্দের চরম পরিণতি উভয়ের জন্যই একই।
প্রশ্ন হচ্ছে একজন সফল প্রতারক কি কঠিন জীবন-যুদ্ধে ত্যাগী সৎ ব্যক্তির সমান হতে পারে ? সেটি যদি সত্যিই ঘটে তাহলে আমাদের এই সত্য-মিথ্যার ধারণার আদৌ কী কোন মূল্য থাকে? ‘স্মার্ট প্রতারকরা এভাবে পার পেয়ে যাবেন’- কোন নৈতিকভাবে সৎ ব্যক্তির পক্ষে কি সেটি মেনে নেওয়া সম্ভব?
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
যত যুক্তিই দেন, যত প্রমাণই দেখান, তালগাছবাদীরা তবু ঘ্যান ঘ্যান করে বলতেই থাকবে, আঁমি যঁদি নাঁস্তিক হঁতাম তঁবে আঁমি নিঁশ্চয়ই ভীঁষন অঁসৎ হঁতাম কাঁরণ আঁমিতো তঁখন ঘ্যানর ঘ্যানর ঘ্যানর ঘ্যানর…