খাদিজা যখন এক দুর্বৃত্ত দ্বারা আক্রান্ত হন তখন আশপাশে তার সতীর্থ বন্ধু বান্ধব তথা সমগোত্রীয় অনেকেই ছিলেন কিন্তু কেউ তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে যাননি।যারা তার পাশে ছিলেন তারা কেউই অক্ষম অথর্ব ছিলেননা বলা যায় সমাজের সবচেয়ে সজীব সাহসী আর প্রাণবন্ত অংশের প্রতিনিধিরা সেখানে ছিলেন কিন্তু এদের কেউই বুক চিতিয়ে দাঁড়াননি বা দৃঢ় পায়ে এগিয়ে যাননি তাদের সতীর্থকে রক্ষা করতে।তাদের কেউ দূরে দাঁড়িয়ে হল্লাগোল্লা করেছে্ন ভয়ে আতংকে এদিক সেদিক ছুটাছুটি করেছেন আবার কেউ আয়েশ করে ক্যামেরায় এক বাস্তব হরর দৃশ্যের চিত্রায়ন করেছে্ন।এক সময় ছাত্র সমাজকে বড় একটি ফোর্স ভাবা হতো।নজরুল এদেরকে নিয়ে গান রচনা করেছিলেন “আমরা ছাত্র আমরা বল আমরা ছাত্র দল’।ছাত্রদের মাঝ থেকে ‘বল’ জিনিষটি এখন উধাও হয়ে গেছে। অবশ্য যারা রাজনীতি করে, বড় দুই দল এবং জামাতের অঙ্গ সংগঠনের সাথে যুক্ত তাদের কথা আলাদা।তারা শুধু বলবানই নয় মহা ক্ষমতাবানও।এখানে বলা হচ্ছে গণছাত্রদের কথা।এই গণছাত্রদের মতো সমাজের গণমানুষগুলিরও একই সকরুণ অবস্থা।দুর্বল হীনবীর্য। সমাজের ভেতরের বাঁধনটি আস্থে আস্থে আলগা হয়ে যাচ্ছে।সমাজ ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ভাঙ্গনের শেষ ইউনিটে এসে ঠেকেছে।প্রতিটি মানুষই যেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো ভাসমান।সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী খাদিজাকে আক্রমনকারীর বিচারের আশ্বাসের সাথে সাথে আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকাদের বিরুদ্ধেও তাঁর ক্ষোভ ঝেড়েছেন। এ ক্ষোভ আমার আপনার সকলের।প্রধানমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে সাধারণের মনের কথাটিই বলেছেন।কেন তারা আক্রান্ত খাদিজাকে রক্ষা করতে এগিয়ে গেলেননা ? ভিডিওচিত্র ধারণ করেছিলেন যিনি তিনি কেন ক্যামেরাটি পকেটে ঢুকিয়ে দুইহাত মুষ্টিবদ্ধ করে ধেয়ে গেলেননা সেই পাষন্ডের দিকে ? একটি নির্মম দৃশ্যের চিত্রধারণের চেয়ে ঘটনাটি ঘটতে না দেয়া বা প্রতিহত করাটাই কি অধিক নৈতিক এবং মানবিক ছিলনা ? এখানে ভিডিও ধারণকারী বলতে হল্লাগোল্লা করা ছুটে পালানো তথা উপস্থিত সকলের কথাই বলা হচ্ছে।
আবার এটাওতো ঠিক সমাজ কেন একা এর দায়ভার বহন করবে? রাষ্ট্র কি সমাজকে এই আশ্বাস দিতে পেরেছে যে সামাজিক সদস্যরা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করলে রাষ্ট্র তার যথাযথ মূল্যায়ন করবে ?ঝুঁকিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করলে রাষ্ট্র তার নিরাপত্তা দেবে ? যুদ্ধাপরাধের প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী জোগাড় করতে গিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ গলদঘর্ম হয়েছেন। কেন ? কারণ রাষ্ট্র তা্দেরকে এই নিশ্চয়তা দিতে পারেনি সাক্ষ্যপ্রদানোত্তর সময়ে রাষ্ট্র তাদের জান মালের পূর্ণ নিরাপত্তা দেবে।বরং একজন সাক্ষীকে খুন করে প্রতিপক্ষ উল্টো এই ম্যাসেজই দিয়েছে তাদের হাত থেকে রাষ্ট্রও তাদেরকে বাঁচাতে পারবেনা।
দুই বছর আগে ১লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল রাষ্ট্র নিয়োজিত পুলিশ বাহিনী কিন্তু পুলিশ নিরাপত্তা দিতে শুধু ব্যর্থ ই হয়নি বিবেকের তাড়নায় স্বপ্রনোদিত হয়ে সমাজেরই কিছু প্রতিবাদী মানুষ একাধিক উত্তুক্তকারীকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করলে পুলিশ তাদেরকেও সসম্মাণে ছেড়ে দেয়।যারা বিবেকতাড়িত হয়ে বা সাংগঠনিক নৈতিক শিক্ষায় উজ্জীবিত হয়ে এই মহৎ কর্মটি করেছিলেন তাদেরকে কি রাষ্ট্র পুরস্কৃত করেছিল ? ঘোষণা করেছিল এরাই সমাজের আদর্শ। প্রত্যাশিত আগামীকাল ? না এ রকম কিছুই করা হয়নি কারণ যারা এই কাজ করেছিলেন তারা ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের নেতা কর্মী।ছাত্র ইউনিয়নের সুকৃতিকে হাইলাইটস করলে সরকারেরতো তাতে কোনও কৃতিত্ব থাকেনা। আর যে কাজে সরকারের কৃতিত্ব থাকেনা তা প্রচার করে সরকার কি আত্নঘাতি হবে ?এতে বরং নিজেদের ছাত্র সংগঠনটির নৈতিক দীনতাই পরিস্ফুট হয়ে উঠত।এ ক্ষেত্রে ছাত্র ইউনিয়ন না হয়ে যদি ছাত্রলীগ হত প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিতই এদের গলায় মেডেল ঝুলিয়ে দিতেন প্রয়োজনে সাহসিকতার নতুন পুরষ্কার প্রবর্তন করতেন।
মুক্তমনা তরুণ লেখক ওয়াশিকুর রহমান বাবুর এক হত্যাকারীকে ঝাপটে ধরেছিলেন লাবণ্য নামের তৃতীয় লিঙ্গের যে সাহসী মানুষটি তিনি কোথায় কেমন আছেন সে খবরটি কি পুলিশ জানে বা রাখে ?বহু আগে পড়েছিলাম লাবণ্য প্রাণের ভয়ে ঢাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।জঙ্গীরা হিজরত ত্যাগ করে মাতৃক্রোড়ে ফিরে এসে আনুষ্টানিকভাবে হাতেম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে পাঁচলাখ দশলাখ টাকার চেক নিয়ে যাচ্ছে আর জঙ্গী খুনীকে হাতে নাতে ধরে লাবণ্য ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কী অদ্ভুত প্রহসন! এ যেন দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন কথাটির বিপরীত অবস্থা।এরকম অনুষ্টান করে লাবণ্যকেইতো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাঁচ দশলাখ টাকার চেক দেয়ার কথা ছিল এতে অনুপ্রাণিত হয়ে হাজারো লাবণ্যের সৃষ্টি হত এবং জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে এমনিতেই একটি সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে উঠত।

বদরুল গণ ধোলাইয়ের শিকার হওয়ার পর দু’টি পত্রিকার রিপোর্ট।
সরকার যদি মুক্তবুদ্ধি অনুশীলনকারীদের জীবনের নিরাপত্তা দিত তবে দশ কি পনেরো বছরের মধ্যে এ দেশের চেহারা বদলে যেত ।কেননা নিরেট মগজ নিয়ে ক্ষমতায় থাকা গেলেও প্রকৃত অগ্রগতি যে কিসে হয় তা বুঝা যায় না ।বুঝতে গেলে যুক্তিবাদী হতে হয় ।আর এখানে যুক্তি বাদ নাম শুনলই ধর্ম ধারীরা কেপে ওঠে ।খাদিজাদের মতোরা মারা গেলে ওরা ওদের অভস্ত বুলি বলবে । কিছুই হবে না ।আইনকে বেধে রেখেছে ওরা ।আর আমরাও চেচাতে চেচাতে একদিন ক্ষমতায় যাবো । অন্য রকম দেশ গড়ব ।তবে তা এখনও অনেক পথ । ধর্মের খোয়াড় থেকে আগে মগজকে মুক্ত করতে হবে ।তবেই ভয় কাটবে ।সাহস বাড়বে ।মুক্তমনাদের কাছে অনুরোধ রাজনৈতিক স্তর থেকে দেশকে চালানোর জন্য আধুনিক বৈজ্ঞানিক শিক্ষায় দক্ষ হয়ে উঠতে হবে আমাদের ।
চলন্ত অস্ত্রের সামনে প্রাণ হারানোর নিশ্চয়তা নিয়ে ক’জন অন্যকে বাঁচাতে আসার সাহস রাখে? এবং এর পরে নিরাপত্তাহীনতা ও জীবনের নিশ্চিত ঝুঁকির ব্যাপার তো আছেই। তার চেয়ে বরং কাউকে আক্রান্ত হতে দেখলে পুলিশ কল করা উচিত ও কর্তব্য। কিন্তু কল পেয়ে কি বাংলাদেশের পুলিশ আসবে ঘটনাস্থলে আক্রান্তকে বাঁচাতে? সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করতে? পুলিশ তো পাশে দাঁড়িয়ে তামাশা উপভোগ করে।
শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি খাদিজার পাশে আছেন। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে এটা তার দায়িত্ব এবং একজন মানুষ হিসেবেও। যারা দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছিল তারা কেউ এগিয়ে এসে খাদিজাকে সাহায্য করেনি বলে তিনি ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। আমরা সাধারণ মানুষ হিসেবেও তাই করি। কিন্তু তিনি এই একই রকম কথাগুলি নাস্তিক লেখকরা খুন হবার পর বলেননি কেন?