পৃথিবীতে কেওই নিধার্মিক না। কেওই অবিশ্বাসী না। আমরা সবাই ধার্মিক। সবাই বিশ্বাসী।
ঈশ্বরে বিশ্বাস-এক মাত্র বিশ্বাস না। বৌদ্ধরা বিশ্বাস করে পরের জন্মে। কমিনিউস্টরা বিশ্বাস করে মার্ক্স-লেনিনের তত্ত্বে। অনেকে বিশ্বাস রাখে কঠোর পরিশ্রম আর সততায়। কেউ কেই বিশ্বাস করে মানুষ নিস্পাপ কিন্ত তাকে পরিস্থিতি পাপী করে তোলে।
ইনফ্যাক্ট দুজন মুসলমানের বিশ্বাস কি হুবহু এক হতে পারে? কখনোই না। সব ইস্যুতেই তদের মাত্রাভেদ থাকবে। কিছু কিছু ইস্যুতে তারা এক হবেন, আবার অন্য অনেক ইস্যুতেই তাদের মতৈনক্য থাকবে।
আমরা মুক্তমনারাও নিশ্চয় মানবিকতা, সার্বিক নৈতিকতা, নরনারীর সমানাধিকারে বিশ্বাস করি।
সুতরাং বিশ্বাস, ধর্ম শব্দটাকে যতই ঘৃণা করি না কেন- নৈতিকতা, রাজনৈতিক অবস্থান, জীবনের উদ্দেশ্য কি হওয়া উচিত ইত্যাদি নিয়ে আমদের সবারই কিছু বিশ্বাস আছে-আর সেই বিশ্বাসকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে আমাদের নিজস্ব ধর্ম।
আমি সাধারনত মুক্তমনা বা ব্লগে ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মগুরুদের কাছ থেকে কি শিখেছি-সেগুলো লিখতে চাই না। কারন এগুলো ভাববাদ। আমি এখনো ১০০% বস্তুবাদি। কিন্ত সমাজবিজ্ঞান নৃতত্ত্বের বাইরে ধর্মের যে ভাববাদি ডাইমেনশন আছে সেগুলো নিয়েও আমাদের ভাবা উচিত।
আসলে আমাদের রাষ্ট্র, সমাজ জীবন-কোন কিছুই পারফেক্ট না। এখানে অনেক হিংসা, অনেক অত্যাচার, অনেক শোষন-অনেক বৈষম্য । ফলে আমার কাছে ঐশ্বরিক সমাধান আছে-যাতে সব কিছু একদম পারফেক্ট হয়ে যাবে-পৃথিবী স্বর্গরাজ্য হবে-ইত্যাদি আশার ছলনে ভুলি-অনেকেই র্যাডিক্যাল পলিটিক্যাল মতধারাতে বিশ্বাসী হয়। শুধু মুসলমান হিন্দুদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। বার্নি স্যান্ডার্সের ক্যাম্পেইনেও সেই একই ড্রাগের মাদকতা। আমি সব কিছুর সমাধান করে দেব-আমার কাছে তোমার সব সমস্যার সমাধান আছে-ইত্যাদি টাঊস ঢপ যদি বিশ্বাসযোগ ককটেল সহযোগে খাওয়ানো যায়, যারা চোখের সামনে অসাম্য, অত্যাচার দেখে বড় হচ্ছে-তারা সহজেই জীবনের একটা মিনিংফুল উদ্দেশ্য পেয়ে যেতে পারে।
ফুলের মতন নিস্পাপ শিশুগুলো জঙ্গী হল কেন? কারন তারাও চোখের সামনে অনাচার, বৈষম্য, দুর্নীতি দেখে বিশ্বাস করতে শিখল শরিয়ার মাধ্যমে এক ইউটোপিয়ান রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্ম দেওয়া সম্ভব যেখানে অন্যায় অবিচার থাকবে না! বার্নি সমর্থক থেকে হিন্দুত্ববাদি, কমিনিউস্ট কিম্বা জঙ্গী-সবাই কিন্ত সেই ইউটোপিয়ান সিস্টেমের আশার ছলনে ভুলি, আগুনে ঝাঁপাচ্ছে। শরিয়া বা বৈদিক সমাজ বা কমিনিউস্ট সমাজের ক্রীটিক্যাল এনালাইসিস না করেই। এবং যত এদের মধ্যে ওই চিন্তাটা দৃঢ় হয় যে ওইরকম ইউটোপিয়ান রাষ্ট্র বানানো সম্ভব-তত এদের জঙ্গীপনা বাড়ে। নিজেদের মুসলমান বা কমিনিউস্ট প্রমান করার প্রবণতা বাড়ে।
কিন্ত ধর্ম কি তাই বলে জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে? যে ইউটোপিয়া, সামাজিক ধর্মীয় পরিচিতির দিকে ছোটা-তা কি ধর্ম সাধনা হতে পারে? কেন নিজেকে আবদ্ধ করা ধর্মের ক্ষুদ্র পরিচয়ে? সুফীগুরুরা কি তাই বলেন ? জালালুদ্দিন রুমীর কয়েকটা লাইন তুলে দিই —
মুক্তহৌক আমার এ আত্মা, রাতের অন্ধকারে, দিনের সকালে
উড়ে যাও পাখি-এ দেহের খাঁচা ছেড়ে
মুছে সাফ
সাদা কাগজের মতন পরিস্কার মনন
সেই কাগজে লেখ, আর মোছ, লেখ আর পরিস্কার কর
গভীর রাতে কেউ কেউ মুক্ত হয়ে যায়
মুক্ত মাঠে বন্দী মানুষ অন্দরে ঘুমায়
প্রতাপশালী বাদশাহ তখন বড়ই অসহায়
দম্ভ-দাপট প্রাসাদ ছেড়ে অরণ্যে পালায়
সুখের নদী তরঙ্গহীন দুঃখ ডুবে তল
মোহ-মায়ার পৃথিবীটা পাথর জগদ্দল
নিদ্রাহীন এক সাধু দেখো মগ্ন অচেতন
কেউ জানে না এই ঘুমে তার কাটবে কতক্ষণ
ধর্ম সাধনা, নিজেকে মুক্ত করার সাধনা। সমস্ত রিপু ইহজাগতিক ইচ্ছার মাহামোহ কাটিয়ে-ওই যে রুমি লিখলেন-সব মুছে আবার সাদা কাগজের মন করে দাও-সেই মুক্তির জন্যই লোকে ধর্ম সাধনা করে। রবীন্দ্রনা আবার মুক্তি খুঁজেছেন ইহজাগতিক ছন্দে, সৌন্দর্য্যে –
আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে,
আমার মুক্তি ধুলায় ধুলায় ঘাসে ঘাসে ॥
দেহমনের সুদূর পারে হারিয়ে ফেলি আপনারে,
গানের সুরে আমার মুক্তি ঊর্ধ্বে ভাসে ॥
আমার মুক্তি সর্বজনের মনের মাঝে,
দুঃখবিপদ-তুচ্ছ-করা কঠিন কাজে।
বিশ্বধাতার যজ্ঞশালা আত্মহোমের বহ্নি জ্বালা–
জীবন যেন দিই আহুতি মুক্তি-আশে।
সেখানে নিজেকে ক্ষুদ্র ধর্মীয় পরিচয়ের গন্ডীতে আবদ্ধ করাটাও একটা বন্ধন। এই যে আমার অস্তিত্ব-পরিচিতি-ইঞ্জিনিয়িয়ার, হিন্দু মুসলমান, বাংলাদেশী, ভারতীয় অমুক কমিটির প্রেসিডেন্ট-ইত্যাদি-প্রতিটা পরিচয়ের পেছনেই আছে বন্ধন-অনেক দ্বায়িত্ব, গর্ব ইত্যাদির বন্ধন। তা অবশ্যই সাধন পথের অন্তরায়। তাই রুমি বলছেন
মুসলিমরা, আমাকে বল কি করা উচিত
আমি জানি না নিজেকে কিভাবে সনাক্ত করবো
না আমি খ্রিস্টান, না ইহুদী, না প্যাগন, না মুসলিম
আমি অভিবাদন করি না, পূর্বে কিংবা পশ্চিম হতে
আমি আসিনি ভূমি কিংবা সাগর থেকে
আমি এই পৃথিবীর কোন সৃষ্টি নই!”
নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, লালন এরা ধর্মীর পরিচয়ের গন্ডী কাটিয়ে মুক্তির স্বাদ নিয়েছেন। হিন্দু মুসলমান হিসাবে যে পরিচিতি, তার বন্ধন ও একধরনের মায়া-তারা বাঁধন কাটাই ধর্ম সাধনা। লালন সাঁই এর গানে
এমন মানব সমাজ কবে গো সৃজন হবে
যে দিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খৃস্টান
জাতিগোত্র নাহি রবে ।।
আপনি বলেছেন ধর্মহীন মানুষ হয় না, তালে কোন ধর্ম মানব সমাজের উপযগী হবে ?
আমার মনে হয় মূল সমস্যা হল ঘৃণা – কোন বেক্তি, মত বা সমষ্টি কে ঘৃণার পাত্র বানিয়ে ফেলা। ঘৃণা ছাড়া জঙ্গি হওয়া সম্ভব নয়। তাই ঘৃণা যারা ছড়ায়, বা যে সব মতাদর্শ ঘৃণার উপর নির্ভরশীল তারাই মানব জাতির মূল শত্রু। সমস্যা হল ধর্ম বা ধর্মগুরুরা কমবেশি ঘৃণা ছড়িয়েই থাকে। এ ছাড়াও আছে ডোনাল্ড ট্রাম্প জাতিও কিছু নেতা। এদের কাজই হল ভাঙ্গন ধরানো।
Sir !!!!!!!!!!!!!!!!! “প্রকৃত ধার্মিক কখনো হিন্দু মুসলমান হতে পারে না” এর মধ্যেই পরস্পর বিরোধী কথা এবং অস্পস্ততা রয়েছে। ধর্ম ,প্রাতিস্থানিক ধর্ম ,মানবিক ধর্ম ,বিশ্বাস,যুক্তি এগুলি কে ব্যাখ্যা করা প্রয়জন……।। কোরান আর হাদিস ,বেদ বাইবেল ইত্যাদি পড়লে ,মেনে চললে, প্রকৃত ধার্মিক মুসল্মান ,হিন্দু বা খ্রিস্টান হওয়া যাই …কারন সঠিক মুসল্মান ধার্মিক হতে গেলে বা সঠিক হিন্ধু ধার্মিক বা খ্রিস্টান ধার্মিক হতে গেলে তাকে সেই সব ধর্মের ধর্ম গ্রন্থে লিখিত নিয়ম নিতি অন্ধভাবে মেনে চলতেই হবে ।। অর্থাৎ তাকে মউলবাদি হতেই হবে ‘ আর প্রকৃত ধর্ম বলতে যদি মানবিক ধর্ম বোঝানো হই ..তাহলে সে যে কোন প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মকেই ছুঁড়ে ফেলে দেবে এবং মানুষের .”সঠিক ভাবে ” বেঁচে থাকার টিকে থাকার জন্য যা যা করনীয় তাই তাই করবে । .
বাইবেল কোরান ফলো করা যায় নাকি ? সব ধর্ম গ্রন্থে পরস্পর বিরোধি অবস্থান এতটাই একজন উন্মাদই কেবল ধর্মগ্রন্থ ১০০% ফলো করতে পারে।
কত মতবাদ কাকে দিই বাদ
অলক্ষ্যে দেখি সবই জল্লাদ
রুখো মৌলবাদ রুখে দাও জল্লাদ
রুখে দিতে ওদের যুদ্ধে যাবো ফের
ওরা নারীকে ভাবে ভোগ্যপণ্য, নিত্য ব্যবহার্য
আজ যুদ্ধ অনিবার্য
বুকেতে বহমান রক্ত শহীদের
রুখে দিতে ওদের যুদ্ধে যাবো ফের
মুক্তবুদ্ধী নাস্তিক ওরে নাস্তিক মুরতাদ
কতল করো কতল করো ওরা ডাকে জিহাদ।
শহীদ মিনার ভাঙ্গে ভাঙ্গে মন মন্দির
হত্যা করতে জিকির ধরে নারায়ে তাকবির
ওরা ৭১ এর শকুন সেই পুরোন চিল
মানবতাকে ঠুকরে ঠুকরে কামিয়াবী হাসিল
ধর্ম ওদের পুঁজি ওদের ধর্মে রুটি-রুজী
শান্তির বিপরীত, ওদের বেহেস্ত নিশ্চিত
মন মানসে নয়,ওরা নামে মুসলমান
আসলে ওরা পাকিস্থানী বীর্জে বেড়ে ওঠা…
একেকটা জারজ সন্তান।।