আমরা ২০১৩ সালে হেফাজতিদের তাণ্ডব দেখছি। এই সময়ের কথা আবার মনে করে দেখি। তখন হেফাজতিদের হুংকারে দেশ যেন অচল হয়ে পড়েছিল বারবার। শুধু হেফাজতি না, সারা দেশ জুড়ে মৌলবাদি, জামাত-শিবির-রাজাকার গোষ্ঠী আর ধর্মান্ধদের চিৎকারে কান জ্বালাপালা অবস্থা। সমস্ত ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া জুড়ে তাদের নিরন্তর হুমকি-মিথ্যাচার-গুজব আর আহাজারি। কিন্তু তাদের এত ক্ষেপে যাওয়ার কারণ কী? তাদের ভাষ্যমত এর মূল কারণ হচ্ছে, নাস্তিকরা নাকি ধর্ম অবমাননা করেছে, রসুলের অবমাননা করেছে তাই তাদের ফাঁসি দিতে হবে, শায়েস্তা করতে হবে।
নাস্তিকদের কেউ যদি ব্লগে ধর্মের বিরুদ্ধে লেখে তবে তার প্রতিবাদ হতে পারত লেখা দিয়ে। কেউ ধর্মের বিরুদ্ধে একটা ব্লগ লেখলে তারা পারতেন এর বিরুদ্ধে একশ’টা লেখতে। প্রতিটি মানুষের অধিকার আছে যেকোনো কিছুর নিন্দা করার, বিরোধিতা করার, স্যাটায়ার করার, মতামত দেয়ার। জিসাসকে উলঙ্গ করা পাশ্চাত্যে স্বাভাবিক ব্যাপার। প্রেসিডেন্ট বুশকে বানর বানিয়ে পশ্চাৎদেশে লেজ জুড়ে দেয়া অসংখ্য ছবি নির্দ্বিধায় পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, এ ধরণের প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ হয়েছে – কিন্তু এগুলোতে তার সম্মান চলে যায় নি, তার সম্মানহানি যা ঘটেছে সবই নিজের কর্মকাণ্ডে। আমাদের দেশে জাতির স্থপতিকে নিয়ে কটূক্তি করা যায় মহান সংসদে বসেই, যেকোনো ব্যক্তিকে ইচ্ছেমত তুলোধুনো করা যায় তা তিনি যতই মহান হোন না কেন।
কোনো ধর্ম/মতবাদ সত্য কিনা তা যাচাই করতে, উপলব্ধি করতে হলে অবশ্যই এমন একটি পরিবেশ বজায় রাখতে হবে যেখানে মুক্তভাবে এর সমালোচনা করা যায়, নিন্দা করা যায়। যদি এই পরিবেশ না থাকে তবে যেকোনো মিথ্যাচারকে ধর্ম হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। বর্ণ প্রথার সমালোচনাকে যদি মেনে নেয়া না হয়, সতীদাহ প্রথার নিন্দা করার পরিবেশ না থাকে তবে হিন্দু ধর্মের বর্বর রূপ পুনরায় ফিরে আসবে। একটি ধর্ম সত্য, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হওয়া উচিত এর সমালোচনাকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে, ইচ্ছেমত নিন্দা করার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার মাধ্যমে, কলমের জবাব কলম দিয়ে দেয়ার মাধ্যমে। নিন্দা করাকে মেনে নেয়া হবে না, শুধুই প্রশংসা করতে হবে এরকম শর্ত আরোপ করলে সকল প্রশংসা স্তুতিতে পর্যবসিত হয়। প্রকৃত প্রশংসা তখনই পাওয়া সম্ভব যখন নিন্দা করার স্বাধীনতা থাকে। ইসলামের শুধু প্রশংসা করতে হবে, কোনো নিন্দা-সমালোচনা করা যাবে না, এর উচ্ছসিত প্রশংসা করা যাবে কিন্তু কঠোর সমালোচনা করা যাবে না – এটি কোন নীতি?
কিন্তু মোল্লা-মৌলবিদের অতশত বুঝে কাজ কী! তারা নব্য রাজাকার মাহমুদুরের উস্কানিতে অন্ধ হয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে হুংকার দিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। উগ্র ইসলামি অসূরীয় মতাদর্শের একদল গুপ্তঘাতক দ্বারা আগেই নিহত হলেন ব্লগার রাজীব যিনি পেশাগত জীবনে একজন স্থপতি ছিলেন। হত্যা করেই শেষ নয়, সরকারী প্রণোদনায় তৈরী করা ৮৪ জনের তালিকায়ও তার নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়; একজন মানুষকে মাত্র একবারই হত্যা করা সম্ভব সে ব্যাপারটাও ধর্মোন্মাদদের উত্তপ্ত মস্তিষ্ক উপলব্ধিতে অক্ষম। হেফাজতি এবং ধর্মীয় মৌলবাদি গোষ্ঠীদের শান্ত করার জন্য, খুশি করার জন্য সরকারও নিরপরাধ ব্লগার গ্রেফতারের এক অনন্য নজির সৃষ্টি করল।
একই মতাদর্শের মৌলবাদিরা শুধু বাংলাদেশ নয় সারা দুনিয়ায় একই কাজ করে আসছে দিনের পর দিন। সালমান রুশদির স্যাটানিক ভার্সেস এর প্রতিবাদে সে কী কাণ্ড সারা বিশ্ব জুড়ে! নিহত হোন অনেকেই। এমনকি বইটির অনেক অনুবাদকও হামলার হাত থেকে রক্ষা পান নি। আজও রুশদি মুক্তভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। ডেনিস কার্টুন নিয়ে কী ঘটেছিল স্মরণ হলে শিউরে উঠতে হয়।
.
.
মুসলিম মৌলবাদিরা ধরাকে শুধু সরা ভাবেন তা না, তারা একে নিজের সম্পত্তি বলেই মনে করেন। যারা ইসলামে বিশ্বাস করেন না তারাও এ ধর্মের সকল কিছুকে সম্মান করতে বাধ্য থাকবেন, এমনকি যে দেশে মুসলিম নেই বললেও চলে সেখানেও মুহাম্মদের সমালোচনা কেউ করতে পারবেন না। গুটিকয়েক মুসলিম মনীষী যাদের নিয়ে মুসলমানরা গর্ব করেন তাদের এক বড় অংশই নির্যাতিত হয়েছিলেন মোল্লাদের হাতে। আমাদের কবি কাজী নজরুলকেও এই মোল্লারাই কাফের ফতোয়া দিয়েছিল, বুদ্ধির মুক্তি আন্দোলনের সাথে জড়িত অনেকেই নিগৃহীত হয়েছিলেন। আরজ আলী মাতুব্বরকেও নিগৃহীত হতে হয়েছিল। তসলিমা নাসরিনের লেখা মৃদু দুয়েকটা সমালোচনা নিয়ে মোল্লারা যা করল তা অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার। সারা বাংলাদেশ জুড়ে যে ওয়াজ মাহফিল হোক তাতে তসলিমা ছিলেন লাগাতার কয়েক বছর, মাথার দাম ঘোষণা করা হয় প্রকাশ্যেই; এখনো নিয়মিত তার বিরুদ্ধে বিষোদগার করা হয়। মোল্লাদের কল্যাণে একেবারে মফস্বলের লেখাপড়া না জানা লোকেরাও জানে তসলিমা নাসরিন নামক ইসলাম বিরোধী লেখক বাংলাদেশে ছিলেন! হুমায়ুন আজাদের পরিণতি তো আমরা নিজ চোখেই দেখেছি। আহমদ শরীফ হুমকি পেয়েছেন, বাসায় হামলা হয়েছে প্রিয় কবি শামসুর রাহমানের। প্রথম আলোর আলপিনে মোহাম্মদ বিড়াল নামক নির্দোষ একটা কৌতুক ছাপা হলে সম্পাদক পর্যন্ত এসে হুজুরদের কাছে করজোড়ে মাফ চাইতে বাধ্য হলেন, নির্যাতিত হলেন কার্টুনিস্ট আরিফ। আমাদের দেশের বাউল শিল্পীরা উদার দর্শনের চর্চা করেন। তাই তারাও হোন মোল্লাদের অত্যাচারের-ফতোয়াবাজির শিকার। কিন্তু এই মৌলবাদি, জঙ্গি গোষ্ঠী ও এদের সমর্থকরা কি চান? সারা দুনিয়াকে মরুভূমিতে পরিণত না করে তারা কি ক্ষান্ত হবেন না?
এবং এসব মোল্লা-মৌলবাদিরা কোন কাজে লাগেন? এদের উপযোগিতাটা কী বর্তমান যুগে? মানবতার উপকারে লাগে এমন কিছু কি তারা করতে পেরেছেন? তারা কথায় কথায় বলেন, ইসলাম মানবতার ধর্ম, শান্তির ধর্ম। কিন্তু একাত্তরে যখন পাকিস্তানিরা গণহত্যা চালালো তখন হুজুররা কেন ফতোয়া দিলেন না, কেন মজলুম আর জালিমের ফারাক বুঝলেন না? অথচ কেউ বিবি তালাক দিবে কিনা সেসব বিষয়েও তারা ফতোয়া ঝাড়েন। এদেশে মোল্লা-হুজুররা অতীতেও ছিলেন এখনো আছেন এবং তারা শুধু ধ্বংসের কাজে লাগেন, মানুষকে বিভ্রান্ত করার কাজেই লাগেন। একাত্তরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হুজুররা হানাদারদের সহযোগিতা করেছিলেন। বাংলাদেশ হওয়ার পর জনগণের কোন আন্দোলনে তাদের সম্পৃক্ততা ছিল না, জনগণ না খেয়ে মরছে নাকি বেচে আছে এগুলো কখনো তাদের বিষয় ছিল না। তাদের একমাত্র চিন্তার বিষয় হল ধর্ম, এটাকে রক্ষা করতে হবে রুটি-রোজগারের জন্যই। চূড়ান্ত বিপদের সময়ও তাদের কাছে পাওয়া যায় নি কিন্তু তাদের পাওয়া গেল জাতিকে বিভ্রান্ত করার ক্ষেত্রে, তারা জামাতি চক্রান্তে বেরিয়ে পড়লেন ইসলাম রক্ষার হুজুগ তোলে।
বলাবাহুল্য এইসব অপদার্থ, প্রতিক্রিয়াশীল ফতোয়াবাজ মুফতি, মোল্লা-মৌলবাদি-মৌলানার আখড়া মাদ্রাসাগুলো। আনসারুল্লার আধ্যাত্মিক গুরু মাওলানা জসীম উদ্দিন, অর্থাৎ তিনি কোনো এক মাদ্রাসার তৈরী। বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা শাহ আহমদ শফী বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড এর চেয়ারম্যান, দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসার মহাপরিচালক। জামাতি রাজাকার সাইদি, উনিও মাদ্রাসার তৈরি। তাদের কর্মক্ষেত্র শুধু মাদ্রাসায় সীমাবদ্ধ থাকেনি, তারা এর বাইরে বেরিয়ে এসেছেন।
মাদ্রাসাগুলোতে শিশুদের মানসিকভাবে পুরোপুরি তালেবান করে গড়ে তোলা হয়, জঙ্গিতে পরিণত হতে যাদের প্রয়োজন শুধু অস্ত্র আর উস্কানি। যেকোনো প্রগতিশীল উদ্যোগ নিতে গেলে মোল্লারা বাধা দেয়, সরকারের নারীনীতি বাস্তবায়ন করতে পারে নি এদের জন্য, হেফাজতে ইসলামও নারীদের যাবতীয় উন্নয়নের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। শুনেছি যখন প্রথম নলকূপ খনন শুরু হয়েছিল তখন শুকরের চামড়ার ওয়াসারের গুজব তুলে ফতোয়া দিয়ে তা বন্ধ করা হয়েছিল বিভিন্ন এলাকায়, তাই প্রায় অর্ধশত বছর পর্যন্ত লোকে পুকুরের পানি পান করেছে। তাদের ফতোয়ায় বিভিন্ন এলাকায় বন্ধ হয়ে গেছে যাত্রা গান, পালা গান, বাউল গান। রেডিও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, টেলিভিসন তো ছিল শয়তানের বাক্স, ডিস এন্টেনার কথা চিন্তাও করা যেতনা- অথচ এখন তারা চ্যানেলে চ্যানেলে ধর্মপ্রচার করে বেড়ান। তারা প্রগতির ঠিক বিপরীত এবং যেহেতু তারা অস্বাভাবিক তাই স্বাভাবিকের সাথে লড়াই করে ভণ্ডামি করে বেচে থাকতে হয় তাদের। মেয়েরা স্কুলে যাবে – হুজুররা ফতোয়া দেন, তারা চাকরি করবে – হুজুররা ফতোয়া দেন, মহিলারা পুরুষের সমানাধিকার পাবে যা মানুষ হিসেবে তাদের জন্মগত অধিকার – কিন্তু হুজুররা ফতোয়া দেন, সরকার এ ধরণের উদ্যোগ নিতে গেলে গদি উলটে দেয়ার হুমকি দেন। হিল্লা বিয়ের অভিশাপ থেকে এখনো মুক্ত হওয়া যায় নি, এখনো দোররার খবর পত্রিকায় পাওয়া যায়। দেশের অর্ধেক জনগণই মহিলা, এদের অবদ্ধ রেখে কিভাবে দেশের উন্নয়ন সম্ভব তা সম্পূর্ণ আবোধগম্য। হেফাজতিদের ১৩ দফায় দেখতে পাবেন নারীদের ইছলামি হয়ে যাওয়ার সবক দেয়া হয়েছে কিভাবে, যেন নারীদের সাথে তাদের আজন্ম শত্রুতা, তাদেরকে তাই তালেবানি অন্ধকার বোরকায় পোরতেই হবে। আর জন্মনিয়ন্ত্রণ হারাম! এদের ফতোয়ার কারণে গ্রামগঞ্জে এখনো অনেকেই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেন না। কওমি মাদ্রাসাগুলো তাদের পূর্বসূরী পাকিস্তানিদের উর্দুভাষা এখনো জারি রেখেছে। তারা বাংলা-ইংরেজি কোনো ভাষাই ঠিকমত শিখে না।
কেউ কী একবারও ভেবেছেন মাদ্রাসায় কেন এত অপদার্থ তৈরী হয়? যেসব গ্রন্থে নাকি দুনিয়ার সকল জ্ঞান আছে সেসব দিন-রাত পড়েও এরা এমন মূর্খ থাকে কিভাবে? তেঁতুল তত্ত্বের জনক আল্লামা শফিরা কিন্তু অশিক্ষিত না, তারা মাদ্রাসা শিক্ষায় কুশিক্ষিত। আমরা হেফাজতিদের ১৩ দফা একটু দেখি (লিংক ১, লিংক ২)। এই ১৩ দফাতে পরিষ্কার যে তারা এমনকি স্কুলগুলোকে মাদ্রাসায় পরিণত করতে চায়, নারিদের অন্ধকার আবরণে আবৃত করতে চায়। কাদিয়ানি নামক এক অত্যন্ত নিরীহ মুসলিম দল আছে দেশে, এদের সমূলে বিনাশ চায়, সকলের বাক-স্বাধীনতাকে চিরদিনের জন্য স্তব্ধ করে দিতে চায়।
ওদের ফতোয়া মতে ছায়াছবি হারাম, গান-বাজনা হারাম, অভিনয় হারাম, ছবি আঁকা হারাম, নাচ হারাম, নারী-পুরুষের মেলামেশা হারাম, সহশিক্ষা হারাম, পহেলা বৈশাখ হারাম, শহীদ মিনারে ফুল হারাম, গণতন্ত্র হারাম, নারীনেতৃত্ব হারাম; দুনিয়ার সকল প্রগতিশীল কর্মকাণ্ডই বোধহয় হারাম নইলে প্রগতির নাম শুনলেই উনারা চেচিয়ে উঠেন কেন? আর তারা খুঁজে বের করতে নারাজ ধর্মের সমস্যা কোন জায়গায় যে কারণে প্রগতিশীল হতে হলে নাস্তিকঘেষা হয়ে যেতে হয়। সুস্থ বিনোদনের সকল আয়োজনকে ‘না’ বলা মোল্লারা স্বাভাবিক জীবন থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েন। তাদের সদা উত্তপ্ত মস্তিষ্ক নৃশংস জেহাদের দিকে, বিশৃঙ্খলার দিকে, অমানবিক নোংরামির দিকে সহজেই চালিত করে; অলৌকিক মুলোর লোভে মানুষ খুন করে খর্জুর বৃক্ষ সমৃদ্ধ মরুভূমি প্রতিষ্ঠার স্বপ্নদোষে বিভোর হতে দেখা যায় তাদের একারণেই।
এখানে কেউ এসে বলতে পারেন হেফাজতি এবং অন্যান্য মোল্লাদের বিভিন্ন অপশক্তি ব্যবহার করেছে। হ্যা, তাতো বঠেই। হেফাজতিদের সাথে বিএনপি-জামাতিদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ও অর্থসংযোগ ছিল, হয়ত দেশের বাইরের কারো ইন্ধনও ছিল। এক্ষেত্রে বলা যায়, দেশের অভ্যন্তরে এমন কোনো দলের অস্তিত্ব কাম্য নয় যারা বিভিন্ন অপশক্তি কর্তৃক ব্যবহৃত হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে থাকে এবং যাদের দ্বারা কোনো উন্নয়নমূলক কাজ আদতেই সম্ভব নয়। আফগানিস্তানের তালেবানরাও কিন্তু গোবেচারা মাদ্রাসার ছাত্রই ছিল যারা নিজ হাতেই দেশকে বিভৎস অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল। অনেকেই রাষ্ট্রধর্মের বিলোপ চান, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ চান, নারী-পুরুষের সমানাধিকার চান কিন্তু মোল্লাতন্ত্র ও মাদ্রাসা প্রসঙ্গে সম্পূর্ণ নিরব থাকতে দেখা যায় তাদের। বলি, এগুলো কিভাবে সম্ভব মাদ্রাসা-ব্যবস্থা, মোল্লাতন্ত্র জারি রেখে?
অনেকে গর্ব করে বলেন বাংলাদেশ কখনো পাকিস্তান হবে না। যেদেশে এত মাদ্রাসাপ্রেমী বুদ্ধিবেশ্যা আর পীর, মাশায়েখ, আল্লামা, আলেম, হজরত, মাওলানা সেদেশকে নিয়ে এরকম বলার আগে ভাবতে হবে। আমরা কিন্তু ইসলামি স্বপ্নে বিভোর হয়ে ২৩ বছর পাকিস্তান হয়েই ছিলাম এবং এখনো এদেশের কিছু মানুষের পাকিস্তানী স্বপ্নদোষের আছর ছাড়ে নাই এবং যারা রাজাকার ছিল, ধর্ষক ছিল, হাতে এখনো রক্ত লাগানো তারা মন্ত্রী হয়, এমপি হয় এবং ভবিষ্যতে তা হওয়ার পথ উন্মুক্তই আছে। ধর্মান্ধতা মানুষের ঘিলু নষ্ট করে দেয়, এমনকি জাতিরও। ইমানী বলে বলীয়ান হওয়ায় ৪৭ এ পাকিস্তান নামে অত্যন্ত উদ্ভট রাষ্ট্রের জন্ম হতে পেরেছিল। কী পাকিস্তান প্রেম! আমার ছোটবেলায় স্বাধীনতার অনেক পরেও ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিতে শোনেছি, হেফাজতি নাস্তিক বিরোধী হুজুগের সময়ও ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান নাকি ধ্বনিত হয়েছে প্রকাশ্যে। আফগানিস্তানও একসময় বেশ প্রগতিশীল রাষ্ট্র ছিল, ইরানও ছিল মোল্লাবিপ্লবের আগে। সেসময় আফগানিস্তান বা ইরান একদিন মোল্লারাষ্ট্রে পরিণত হবে তা অকল্পনীয় ছিল। আফগানিস্তান ও ইরানে বহু প্রগতিশীল মানুষ ছিলেন কিন্তু তাতে রক্ষা হয়নি। ধর্ম এবং এর ব্যবহার-অপব্যবহারই দেশগুলোর অধোগতির কারণ। তাই বাংলাদেশের পরিণতি এদের মত হতে পারে না বলে বসে থাকা কতটা বোকামি হবে তা বলাই বাহুল্য। পচাত্তরের আগে আমরা কল্পনাও করতে পারতাম না এদেশে একদিন জামাতের উত্থান ঘটবে, তারা মন্ত্রী হবে, দেশে নৈরাজ্য চালাবে, ক্ষমতায় আসবে। আমরা ভাবতে পারি নাই জেএমবি এর মত জঙ্গি সংগঠন সারা দেশের ৬৩ জেলায়ই হামলা করবে, আত্মঘাতী বোমা চালাবে। আমরা ভাবতে পারি নাই, কিন্তু তা ঘটেছে।
আমাদের দেশে হেফাজতিরা, অপদার্থ মোল্লারা এবং জঙ্গি ও জামাত-শিবিরের একটা বড় অংশই মূলত মাদ্রাসা থেকেই উঠে এসেছে। এই মাদ্রাসাগুলো পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষালয়ে ব্রেন ওয়াস করা হবে, সাম্প্রদায়িকতা শেখানো হবে, অজ্ঞানতায় ভরিয়ে দেওয়া হবে মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষ – এটা কোনো সভ্য সমাজে চলতে পারে না। একটা শিশুকে দিনের পর দিন ক্রমাগত মিথ্যার অবগাহনে অমানুষ করা তোলা হবে – এটা মেনে নেওয়া অসম্ভব। যে শিশুরা, ছাত্ররা মাদ্রাসায় পড়ছে তারা পুরোপুরি তালেবানি দর্শনে বেড়ে উঠছে। আরবীয় বর্বরতা যেমন অপরাধীর শাস্তি হাতকাটা, পা-কাটা, পাথর ছুড়ে হত্য, দোররা মারা এসব শিক্ষা দেয়া হয় তাদের। তারা জাতীয় সংগীত গায় না, বাংলা ভাষার বিশাল সাহিত্যভাণ্ডার তাদের কাছে অজানাই থেকে যায়। উর্দু ভাষায় লেখাপড়া করে অনেকে!
আমার আশেপাশের কিছু মানুষ মাদ্রাসার পৃষ্ঠপোষকতার সাথে জড়িত থাকায় একে আমি ভেতর থেকে দেখতে পেরেছি। একবার দেখলাম মাদ্রাসায় বাংলা বই। আনন্দিত হলাম এই ভেবে যে ওরা হয়ত আস্তে আস্তে বাংলা শিখছে। কিন্তু ভেতরে দেখলাম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কিছু কবিতা আছে ঠিকই কিন্তু তার নাম উল্লেখ নেই। পরে দেখলাম মুসলিম নামধারী ছাড়া বাকি কোনো লেখকেরই নাম উল্লেখ করা হয়নি। কওমি মাদ্রাসাগুলো আশংকাজনকভাবে গজিয়ে উঠছে এখানে সেখানে। সেগুলোর জন্য কোনো অনুমোদন প্রয়োজন হয় না, শিশুরা কী শিখছে তা দেখার প্রয়োজনও কেউ অনুভব করে না। শিশুদের উপর মাদ্রাসায় যে দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয় সেটা বেশ করুণ, বেশ বীভৎস। একটি শিশুর মাদ্রাসায় পড়ার অর্থই হচ্ছে তাকে স্কুলের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত করা। বর্তমানে দেশের সব অঞ্চলেই স্কুল আছে, শিশুরা বিনাবেতনে সেখানে পড়তে পারে, কিন্তু মাদ্রাসা তাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেকাংশে। একটি ভিডিওতে দেখেছিলাম, মাদ্রাসার ছাত্রদের জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, তার বড় হয়ে কী হবে? অনেকেই বলল, আল্লাহর ওলি। কেউ বলে নি শিক্ষাবিদ হবে, বিজ্ঞানী হবে, ডাক্তার হবে, আইনজীবি হবে, শিল্পী হবে, গায়ক হবে। কিছু শিশু যারা কখনো চিন্তা করতে পারবে না, স্বপ্ন দেখতে পারবে না – বড় হয়ে বিজ্ঞানী হবে, ডাক্তার বা প্রকৌশলী হবে, বৈমানিক হবে, কৃষিবিদ হবে, আইনবিদ হবে, বিচারক হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে, শিল্পী হবে, নাচ-গান-অভিনয়ের সাথে যুক্ত হবে, প্রেম করবে, বন্ধু-বান্ধবকে নিয়ে হৈ চৈ করে ঘোরে বেড়াবে! শিশুদের স্বাভাবিক স্বপ্ন দেখার অধিকার কেড়ে নেয় মাদ্রাসা শিক্ষা, এটা অত্যন্ত অমানবিক।
মাদ্রাসা থেকে তৈরী হয় একদল ধর্মব্যবসায়ী যারা সারা দেশজুড়ে ওয়াজ মাহফিল করে বেড়ান। একদম প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহর-বন্দর সর্বত্র সক্রিয় এসব অন্ধকারের ফেরিওয়ালারা। সাধারণ মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা, অজ্ঞতা, অসহনশীলতা, কূপমণ্ডুকতা, ঘৃণা ছড়ানোই যাদের কাজ। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ আদতে সহনশীল এবং অসাম্প্রদায়িক কিন্তু এর বিপরীতটা তাদের মধ্যে দেখতে পাই ওদের কল্যাণেই। ওদের উসকানি আর তৈরি করে দেয়া ধর্মান্ধ মূল্যবোধ সৃষ্টি হওয়ার ফল হিসাবে গণহারে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, ধর্মালয় ভাঙ্গা, মূর্তি ভাঙ্গা যেন মহামারিতে পরিণত হয়েছে। এ ভিডিও দেখুন।
মাদ্রাসায় যারা পড়ে তাদের মধ্যে জামাত-হেফাজত আর জঙ্গি দল ছাড়া অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী-সমর্থক তৈরী হয় না। বি এন পি, আওয়ামীলীগ, বামপন্থী দলের কোনো ছাত্র সংগঠনগুলোর কোনো তৎপরতা সংগত কারণেই এখানে চোখে পড়ে না। মাদ্রাসায় পড়া মোল্লাদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ হয় না, এরা চিন্তা-ভাবনায় অসহনশীল ও সাম্প্রদায়িক হয় বোধগম্য কারণেই। সেখানে সহশিক্ষা অসম্ভব, নারীদের পুরুষের একটি বক্র হাড় থেকে প্রস্তুতকৃত পণ্য ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারে না। তারা শিখে একমাত্র ইসলাম ছাড়া সকল ধর্ম জাহিলিয়াত, নাস্তিকদের-মুরতাদদের জবাই করা ইমানি দায়িত্ব, নারী নেতৃত্ব হারাম – এদের ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখতে হবে। তারা আবার তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সে পথে ঠেনে নিচ্ছে। মাদ্রাসাগুলো বন্ধ না হলে এই দুষ্টচক্র চলতেই থাকবে। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে কেউ কি এ ধরণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন? কেউ কি চেয়েছিলেন আমাদের এই শিশুরা তালেবান না হয়ে মানুষ হোক?
আজ যদি আমাদের শিশুদের জন্য সুস্থ ধারার শিক্ষাগ্রহণের উপযোগী পরিবেশ তৈরী না করা হয় এবং জঙ্গি তৈরীর কারখানা মাদ্রাসাগুলো চিরতরে বন্ধ না করা হয়, শিক্ষা ব্যবস্থাকে সেক্যুলার করে না তোলা হয় তবে তালেবানদের সরবরাহ বাড়তেই থাকবে। অদূর ভবিষ্যতে দেশটা পাকিস্তানে পরিণত হবে, আফগানিস্তানে পরিণত হবে, আর আমরা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বলব, ‘এ বাংলাদেশ মোরা চাই নি’, কিন্তু তখন আর থাকবে না কোনো প্রতিকার। আমাদের দেশ, আমাদের সমাজকে সুস্থ করে তোলার এবং প্রগতির দিকে চালনা করার দায়িত্ব আমাদেরই, অন্য কারো নয়।
.
.
.
লিংক
১। কওমিতে উপেক্ষিত বাংলা, অবহেলায় একুশে
২। মাদ্রাসায় দাসত্বের অবসান হোক
৩। নাস্তিকদের কতল করা ওয়াজিব হয়ে গেছে
৪। আল্লাহর অলি হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে বেড়ে উঠছে কওমি শিক্ষার্থীরা !…
৫। আরব থেকে দেওবন্দ হয়ে হাটহাজারী
৭। ধর্মশিক্ষার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতার সরল পাঠ
৮। “মাদ্রাসাকে মাদ্রাসার যায়গায়” রেখে দেয়া কি “মাদ্রাসা প্রেম”?
৯। কূটতর্ক নয়- কওমী প্রেমিকদের প্রতি জিজ্ঞাসা..
আপনি অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ। সম্ভবত, তসলিমা নাসরিনের মত বদমাশ মেয়ে মানুষের মত কেউ আপনি। বড্ড নাস্তিক আর রাজাকার চিনে ফেলেছেন তাইনা? আপনি যত বড় মাপের লেখক বা ব্যক্তিই হন না কেন এখনও জাহেলিয়া যুগেই অবস্থান করছেন। সাহস থাকলে এই লম্বা লম্বা বক্তব্য গুলো রাস্তার মাঝে দাড়িয়ে মাইক নিয়ে বলুন যেখানে পাবলিকের ধোলাই খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। লিখে সবাই ধোয়া উড়াইতে পারে। এখানে কিছু লোকের পিছনে আগুন না ধরিয়ে যাদের সম্পর্কে বলছেন তাদের সামনে গিয়ে বলুন। বেঁচে থাকলে আবার লিখতে আসবেন। ধন্যবাদ।
অসাধারন দাদা, পৃথিবীতে সব জাতি সামনের দিকে এগিয়ে গেলে ও আমরা বাংলাদেশিরা একমাএ ধর্মের কারনে পিছিয়ে পড়ছি। সহমত আপনার সাথে, মাদ্রাসা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। একটা মাদ্রাসার ছাএ কোনোভাবেই গতানুগতিক সমাজে মিশে যেতে পারে না, তার অন্যতম কারন তার মাদ্রাসায় শিখা মতাদর্শ। অনেক শিক্ষিত ব্য়ক্তি ও তার কয়েক সন্তান এর একজন কে হলে ও মাদ্রাসায় পাঠান এই বলে একটাকে অন্তত আল্লার পথে দিলাম। ইদানিং কালের নতুন উপদ্রব ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রাসা। আমার পরিচিত আনেকেই ( উচ্চ শিক্ষিত এবং সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত ) গর্বের সাথে তাদের বাচ্চাকে ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রাসায় পাঠান। এইটা শুধু বাংলাদেশে প্রচলিত তা কিন্তু নয়, অস্ট্রেলিয়া সহ অনেক উন্নত দেশে ও আমাদের দেশিরা তাদের বাচ্চাদের ইসলামিক স্কুলে পাঠাই। তাই আমার মনে হয় সমস্য়া অনেক গভীরে, যতদিন না বিশ্বসে আমূল পরিবর্তন আসবে, পরকাল এর পরোয়া বাদ দিয়ে ইহকাল কেই আপন এবং একমাএ কাল হিসাবে বিবেচনা করা হবে, ততদিন আমাদের মুক্তি নেই।
যে প্রয়োজনে মাদ্রাসার জন্ম হয়েছিল সেই প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে সে আপনা আপনিই বন্ধ হয়ে যাবে, কেউ বন্ধ করা লাগবেনা। অথচ এর আগে কেউ বন্ধ করতে বা করাতে পারবে বলে আমার মনে হয় না। যেখানে আলো নেই সেখানে অন্ধকার থাকবেই। সূর্য যখন উঠবে রাতকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে। ধর্ম যেখানে নেই মাদ্রাসা সেখানে নেই। একদিন ধর্মও থাকবেনা মাদ্রাসাও থাকবেনা।
বহু বছর পর উপলব্ধিতে এসেছে অশান্তির বীজ কোথায়। অবশেষে অরিন্দম কহিলা বিষাদে-
এই poison আর hate কোথায় উৎপন্ন হয় আমরা এটাই বলে আসছি বছরের পর বছর ধরে।
এ বক্তব্য সমর্থনযোগ্য নয়। মাদ্রাসা অবশ্যই বন্ধ করা সম্ভব আগে রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবি ও সাধারণ জনগণের এ উপলব্ধি হওয়া প্রয়োজন। মাদ্রাসাগুলোকে সাধারণ স্কুলে রুপান্তরিত করা যেতে পারে তবে এ সবের জন্য দরকার দীর্ঘ সংগ্রাম। ব্যাপারটি দুঃসাধ্য, অতি-আবশ্যক এবং অবশ্যই অসম্ভব নয়। মাদ্রাসা ব্যবস্থা অনন্ত কাল পর্যন্ত চলবে এরকম ধারণা হওয়াও উচিত না।
@ বিবর্তিত মানুষ,
কথাটা আমাকে উদ্দশ্য করে যদি বলে থাকেন তাহলে বলি, আমি কোনটাই বন্ধ করতে বলিনি। পজিটিভ-নেগেটিভ, এডভান্টেজ-ডিস এডভান্টেজ, ভাল-মন্ধ দুটো দিকই পাশাপাশি তুলনা করে ওপরে দেখিয়েছি। বেশ্যালয় উচ্ছেদ আর মাদ্রাসা বন্ধ এ দুটো বিষয় নিয়ে প্রচুর আলোচনা সমালোচনা এমন কি সভা সেমিনার মিছিল মিটিংও বোধ হয় হয়েছে। দুটোর সাথেই জীবিকা বা প্রাণে বাঁচা জড়িত। এ জন্যেই বিকল্প পথ না খুঁজে জোর করে কোনটাই উচ্ছেদ সম্ভব নয়। মাদ্রাসায় রাজাকার সৃষ্টি হয় তা তো আমরা একাত্তরেই স্বচক্ষে দেখেছি। উপযুক্ত কারণ, উপযুক্ত সময় উপযুক্ত পরিবেশ তখনই তো ছিল মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়ার। মুক্তিযোদ্ধারা সে দাবী তুলেন নি কেন? যে কারণে তখন সম্ভব ছিলনা একই কারণে আজও সম্ভব নয়। যদি ইসলামী সন্ত্রাস বা জঙ্গীবাদ রোধের লক্ষ্যে মাদ্রাসা বন্ধের প্রস্তাব উঠে তা হলে আমি বলবো, বিশাল তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে তা এক অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছু নয়। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের হাতের মুঠোয় একটি করে মাদ্রাসা আছে, কয়টা বন্ধ করবেন? আমার ইউথক্লাবের প্রাক্তন সদস্য, ইংল্যান্ডে যাদের জন্ম তাদের দশজন জেলে আছে আই এস এর সমর্থক জঙ্গীবাদী কেইসে। একটাও কোনদিন মাদ্রাসায় পড়ে নাই, শুদ্ধ করে আলহামদু উচ্চারণ করতে পারেনা। কিন্তু আনোয়ার আওলাকী, ওমর, লাদেন, জাকের নায়েক, হারুন ইয়াহিয়া, ইবনে কাথির, ইবনে হিশাম তাদের নখ দর্পনে আর কোরানের যত জিহাদী আয়াত আছে সব মুখস্থ, আরবীতে নয় ইংরেজিতে।
আপাতত এ পর্যন্তই থাক। আলোচনা চলুক।
যে দেশে যত বেশি ধর্মী্য শিক্ষার প্রভাব, সেই দেশ তত বেশি ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে গেছে!! বাংলাদেশ সেই পথেই এগুচ্ছে! এই মাদ্রাসাই, মাদ্রাসা থেকে পাশ করা ব্যক্তিরাই বাংলাদেশকে মূল আদর্শ থেকে দূরে নিয়ে যাচ্ছে! কারো বিশ্বাস না হলে এক বার মাদ্রাসগুলো ঘুরে আসুন, বিশেষ করে কওমি মাদ্রাসা! ধর্মের দোহাই দিয়ে এই কোমলমতি (যাদের ৯৯% এতিম কিংবা গরীব) ছেলেমেয়েদের কি শেখানো হচ্ছে একবার ঘুরে আসুন সেই কওমি মাদ্রাসাগুলো!!! তাদের এই ছোটবেলা থেকেই ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক করে ব্রেইন ওয়াস করা হচ্ছে ১০০%!!!!!
আগে প্রমান করুন কোরান ঐশী বানী নয়। তাহলে মাদ্রাসা এমনিতেই ভেঙ্গে যাবে। যতদিন কোরান ঐশী বানী থাকবে ততদিন কারো বাবার সাদ্ধি নাই মাদ্রাসায় চুল পরিমান হস্তক্ষেপ করার। বরং এখন কওমী মাদ্রাসা ৪০ হাজার আছে আর কয়েক বৎসর পরে লক্ষাধিক হয়ে যাবে। আর এর থেকে বহিরাগত রা বাংলাদেশকে আর একটা IS বানিয়ে দিবে। কারো ঠেকাবার ক্ষমতা থাকবেনা। সামনে ভয়ংকর দুর্দিন।
প্রচুর পরিশ্রমসাধ্য লেখা নিঃসন্দেহে। একটা ব্যাপারে একটু কারেকশন প্রয়োজন খুব সম্ভবত। মকছুদুল মুমিন, কেসাসুল আম্বিয়া, বেহেশতি জেওর, স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য, মেয়েদের ৪০ হাদিস, মরণের আগে ও পরে, ফাজায়েলে কোরান, নেয়ামুল কোরান, স্ত্রী-শিক্ষা, স্ত্রী সহবাসের নিয়ম-কানুন, হায়েজ-নেফাস ইত্যাদি বই আমাদের প্রায় প্রতি বাড়িতে কমন। কিন্তু ক্বওমী মাদ্রাসায় এসব পড়ানো হয়না। এমমকি এসবে লেখা বেশ কিছু ফতোয়ার ব্যাপারে তাদের দ্বিমত দেখা যায়।
মাদ্রাসায় পড়ানো হয় সেটি বলি নি। মাদ্রাসার হুজুরদের দ্বারাই এসব বইয়ের প্রচার ও প্রসার।
এটা fallacious argument
যেমন একজন লোক চুরি করেন। তিনি এখন বলতে পারেন তিনি ঘুষ খান না, খুন করেন না, সন্ত্রাসী করেন না, ডাকাতি করেন না, ধর্ষণ করে্ন না, বোমাবাজি করেন না, তাহলে তিনি যে চুর সে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি তিনি কি পাবেন?
হেফাজতিদের উত্থানের সময় এরা কী করেছিল সেটা স্মরণ করা দরকার। এরা তো কওমি মাদ্রাসার ছাত্র। আর নতুন করে কিছু বলছি না, সব তো লেখায় বলেছি।
একদিন নগ্ন পায়ে শক্ত মাটির জমির আল ভেঙ্গে মিছিলের সামনে থেকে, শরীরের সকল শক্তি গলা দিয়ে বের করে শ্লোগান দিতাম ডঃ ফজলুর ফাঁসি চাই, কুত্তা ফজলুর বিচার চাই / আমাদের দাবী মানতে হবে, নইলে গদি ছাড়তে হবে। সাত মাইল দূরে যাত্রাগানের প্যান্ডল ভাঙ্গতে পায়ের স্যান্ডেল ছিড়ে আগে নিজের পা ভেঙ্গেছি। একদিন বোধোদয় হলো এ সব ভুল করেছি, মিথ্যা অস্তিত্বহীন ভুতের পেছনে শরীরের এনার্জি অপচয় করেছি। তারপর একদিন লিখতে শুরু করলাম ভুতেশ্বরের আস্তানা গুড়িয়ে দাও পুড়িয়ে দাও, মসজিদ মাদ্রাসা বন্ধ করো ধ্বংস করো। কিছুদিন পর যখন তারুণ্যের উচ্ছাস, রক্তকণিকার তেজস্বিতা হ্রাস পেতে লাগলো, বুঝতে পারলাম এ মসজিদে আমার বাবাও নামাজ পড়েন, জগতে যার কোন শত্রু নেই। এই মাদ্রাসায় আমার ভাই পড়ে, যে সন্ধ্যারাতে বাড়ির সকল পাঠশালা পড়ুয়া শিশুদের নিয়ে কোরান থেকে সত্যবাদীতা, শালীনতা, মানবতা শিক্ষা দেয়। আমার জীবনের প্রায় ষোলটি বছর কউমি মাদ্রাসায় কাটিয়েছি, খুব কাছে থেকে উস্তাদ-ছাত্রদের দেখেছি, এক প্লেইটে (বর্তনে) খেয়েছি, এক বিছানায় শুয়েছি। একজন কউমি মাদ্রাসা পড়ুয়ার দৃষ্টিতে নিচের কথাগুলো আপনাদের সামনে পেশ করবো। ভুল যদি হয় শুধরায়ে দিবেন, অবনত মস্তকে গ্রহণ করে নেবো।
কউমি মাদ্রাসার ছাত্রদের রয়েছে স্বতন্ত্র একটি আদর্শ ও বৈশিষ্ট।
◀ তারা অস্ত্রবাজি করেনা।
◀ হল দখল করেনা।
◀ টেন্ডারবাজি করেনা
◀ চাঁদাবাজি করেনা।
◀ মানুষ খুন করেনা।
◀ ধর্ষণের সেঞ্চুরী অর্জন করতে জানেনা।
◀ উস্তাদকে সম্মান করে লাঞ্ছিত করেনা।
◀ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হোস্টেলে আগুন দেয়না।
◀ ভর্তি বানিজ্য করেনা।
পক্ষান্তরে কলেজ ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা-
◀ তাদের শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে।
◀ শিক্ষককে রুমে তালাবদ্ধ করে রাখে।
◀ তারা ভর্তি বানিজ্য করে।
◀ চাঁদাবাজী করে।
◀ টেন্ডারবাজী করে।
◀ হল দখল করতে গিয়ে অস্ত্রবাজী আর বন্ধুক যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
◀ বিশ্বজিতের মতো নিরপরাধ মানুষকে দিনে দুপুরে হত্যা করে।
◀ ধর্ষণের সেঞ্চুরী অর্জন করতে ইতিহাস সৃষ্টি করে।
◀ সিলেট বিশ্ববিদ্যালয়ের হোষ্টেলে আগুন দিয়ে ভবন জ্বালিয়ে দেয়।
◀ ফারাবী উৎপন্ন করে।
◀ নাফিস তৈরী করে।
কেউ যদি বলেন মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রদের চেয়ে তুলনামূলকভাবে স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের ট্যালেন্ট, মেরিট, মেধা-প্রতিভা, অন্য কথায় I.Q. (intelligence quotient) লেবেল বা চিন্তা চেতনাশক্তি বেশী, আমি বলবো আপনারা ভুল বুঝেছেন। সমান পরিবেশ, সমান ফ্যাসিলিটির পাল্লায় ওজন দিয়ে দেখুন আসলেই কোন পার্থক্য নেই।
কোনটা রাখবেন আর কোনটা বন্ধ করবেন, আপনাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম।
পুনশচঃ সৈকতের লেখায় আসল কালপ্রিটের নামটা প্রায় অনুল্লেখিতই রয়ে গেছে। তার নাম রাষ্ট্র ও তার মাথায় বসে থাকা অসৎ দুষ্ট রাজনীতি। অসম্ভবের পানে হাত বাড়িয়ে লাভ নেই। মাদ্রাসা বন্ধ করা সম্ভব নয়,সংস্কার করা সম্ভব।
আপনার ফাইন্ড আউট ঠিক আছে কিন্তু আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা দ্বারাই যেখানে সারা বিশ্ব শাসিত সেখানে কি কলেজ ইউনিভার্সিটি বন্ধ করে দিয়ে সবগুলোকে কউমি মাদ্রাসায় কনভার্ড করা উচিত?
মাদ্রাসা বন্ধের আগে এই মাদ্রাসাগুলোতে কারা পড়ছে , কেন পড়ছে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর অনুসন্ধান আগে জরুরী। যারা এই মাদ্রসাগুলোতে পড়ছে তারা কি কাল্পনিক স্বর্গের লোভে “ইসলামের সেবক” ওলামা হওয়ার উদ্দেশ্যে পড়ছে নাকি স্বল্প কিংবা বিনা খরচেরর সুবিধা থাকায় নিতান্তই বাধ্য হয়ে? আমাদের দেশের কওমি মাদ্রাসাগুলোর অধিকাংশই আবাসিক। এখানে যারা পড়ে তাদের অধিকাংশই গরীব , অনেকেই এতিম। মূলধারার শিক্ষায় শিক্ষিত করার ক্ষমতা তাদের পরিবারের নেই। তাছাড়া শিক্ষায় যেভাবে বাণিজ্যকরন ঘটেছে তাতে এইসব দরিদ্র ছেলেদের পক্ষে উচ্চশিক্ষার তুমুল প্রতিদ্বন্দীতায় টিকে থাকা কঠিন। সমাজে বিদ্যমান এই সামাজিক বৈষম্যকে কেন্দ্র করেই মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা বিকশিত হয়েছে। শিক্ষার বাণিজ্যিকরন বন্ধ করা এবং রাষ্ট্র কর্তক শিক্ষাকে সকলের জন্য উন্মুক্ত এবং অবৈতনিক করা না পর্যন্ত এই সমস্যা থেকে আপাতত মুক্তি নেই।
অনেক সামর্থবান পরিবারও বাচ্চাদের মাদ্রাসায় পড়ান। শুধু দারিদ্রতাই মূল কারণ নয়। এখন আবার ক্যাডেট মাদ্রাসা নামক আদ্ভূত মাদ্রাসার উদয় হয়েছে দেশে। বাকিটা আপনার সাথে একমত।
খুব দারুন সমোপযোগী লেখা আজকের বাংলাদেশের জন্য।
বাংলাদেশের আম্বালীগ সহ বামেরা এটা বুঝে ? না একদম বুঝে না।কারন এতে তাদের কি আসে যায় ?
কলম যুদ্ধের দ্বারা আমাদের ভোতা মাথা চূর্ন-বিচূর্ন হয়ে যাক………
ধন্যবাদ্
সুতরাং ধর্মের শর্তে ধার্মিকের চলতে হবে ধর্ম-বইয়ের কথা মেনে। কিন্তু বেশির ভাগ ধার্মিক’রা তা করছে না। তা করলে তো তারা মহা-যান্ত্রিক হয়ে যাবে। যেহেতু যান্ত্রিক টাইপ জীবনে ভোগ করবার তেমন কিছু নেই তাই নিজেরাই তাদের নিজ ধর্ম নিজের মত করেই ব্যাক্ষ্যা করে নিয়ে মানেন। স্তুতির অভিনয়, অর্থাৎ শর্ত মানার ভান করেন কিন্তু জাগতিক ভোগে ছাড় দেন না।
এই মানসিকতা কি অসুস্থ মানসিকতা নয়? মডারেটদের আশ্রয় কোরানের সেই ‘‘লাকুম দ্বীনুকুম’ আয়াত কি শুধু ভান করবার জন্য নয়?
এইসব শিশুদের মগজধোলাই নিজ নিজ ঘর থেকে বন্ধ না হলে মহা মুশকিল। সরকার দল বা সুবিধাবাদী সরকার-বিরোধী দল এরা সবাই ভোটভিক্ষুক। এদের মাধমে প্রগতিশীল মানসিকতা কি করে তৈরী হবে? এদের কি দায় পড়েছে ভোট হারানোর। আজকের নতুন মা বাবারা যদ্দিন না সুস্থ মানুষের মত ভাবতে শিখবে, শিশুদের মগজধোলাই বন্ধ করে মুক্ত ভাবে বড় হতে দিবে তদ্দিন মুক্তচিন্তা গতি পাবে না। প্রগতি গতি পাক বা না পাক, এইসব লেখাগুলো বহু বহুগুন হয়ে বাতিঘরের আলোর মত জ্বলতেই থাকবে।
ধন্যবাদ সৈকত চৌধুরী।
আপনাকে ধন্যবাদ
বাংলাদেশে এখন স্কুলের চেয়ে মাদ্রাসার সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে বলতে গেলে। মাদ্রাসাগুলো থেকে বেরিয়ে আসরে এক একজন লাদেন। ধ্বংস করবে ওরা দেশের শিল্প সাহিত্য ভাস্কর্য। খুন করবে প্রগতিশীল মুক্তমনের মানুষদের, বস্তায় আর টুপিতে ঢেকে দেবে সব মানুষের মগজ। সরকার তাই ত চায়। দেশে অগণিত মসজিদ থাকার পরেও সরকার আরো ৫০০ নতুন মসজিদ বানানোর অঙ্গিকার করে। অসংখ্য গৃহহীন ও খাদ্যহীন মানুষ যে রাস্তায় পড়ে থাকে তাদের নিয়ে কোনো কথা বলে না।
খুব জরুরী লেখা। মাদ্রাসা টিকিয়ে রেখে মুখে মুখে ধর্মনিরপেক্ষতার বয়ান করে লাভ হবে না, ধর্মের সমালোচনার পরিবেশ কিম্বা ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশানও মিলবে না। মাদ্রাসা থেকে শুধু জঙ্গীই তৈরী হয় না, সেই ইন্ডাস্ট্রির পেছনের তাত্বিক কাঠামো এবং সাপোর্ট সার্ভিসগুলোও মাদ্রাসাকেন্দ্রিক। আমি নিজে মাদ্রাসায় পড়েছি, সালমান রুশদীর বিরুদ্ধে ফাঁসি চেয়ে স্লোগান দিয়েছি পঞ্চম শ্রেণীতে থাকার সময়। আমার গ্রামের ইমাম সাহেব দুনিয়াবী শিক্ষাকে শয়তানী শিক্ষা আখ্যা দিয়ে খুতবা দেন অহরহ। আমার মডারেট দোস্তরা সারাদিন মদ খেয়ে বাপের মৃত্যুবার্ষিকীতে যে কোরান খতম দেওয়ান কল্পিত পূণ্যের লোভে, সেই সার্ভিসও দেয় মাদ্রাসা, এবং এভাবে কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের বিশ্বাসের জগতে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখে। এ এক বহুমূখী চক্র, মাদ্রাসা যার নিউক্লিয়াস।
ধন্যবাদ
বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে?
ধন্যবাদ।
আগে আমাদের উপলব্ধি দরকার যে এগুলো বন্ধ করতে হবে। এ উপলব্ধি কোনোদিনই আমাদের হয় নাই।
সম্পূর্ণ সহমত । মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার মধ্যে যেমন ভালো কোন অভিসন্ধি নেই তেমনি উজ্জ্বল ভবিষ্যতও নেই।