প্রথম পরিচ্ছেদ (পূর্ব কথা)
পদার্থ বিজ্ঞানে বিভিন্ন ধরনের সংরক্ষণশীলতা সূত্র বজায় আছে যার মধ্যে দু-একটি সবারই মোটামুটি জানা। যেমন: শক্তির সংরক্ষণশীলতা সূত্র। এর উপরেই তাপগতিবিদ্যার প্রথমসূত্র টিকে আছে। এই সূত্রটি বিবৃত করে শক্তিকে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না এবং মহাবিশ্বের মোট শক্তির পরিমান সুনির্দিষ্ট। এছাড়া আমরা অনেকে চার্জের সংরক্ষণশীলতার বিষয়টিও জানি। এই সূত্রের ভাষ্যমতে চার্জেরও সৃষ্টি নেই বা ধ্বংস নেই। জগতে ধ্বনাত্মক ও ঋনাত্মক চার্জেরস সমষ্টির পরিমাণ সুনির্দিষ্ট। চার্জকে এককভাবে শূন্য থেকে উৎপন্ন করা যায় না এবং চার্জকে শূন্যে বিলীনও করা যায় না। একটি ধনাত্মক ও একটি ঋনাত্মক চার্জ মিলে শূন্য চার্জ প্রদর্শন করতে পারে বটে তবে এগুলো বিচ্ছিন্ন করে আবার সেই ধনাত্মক ও ঋনাত্মক চার্জ পাওয়া যায়।
পরমাণুর অভ্যন্তরীণ কণিকাগুলোর ক্ষেত্রে উল্লিখিত সংরক্ষণশীলতা সূত্রগুলোতো রয়েছেই তবে এর সাথে আরো কিছু সংরক্ষণশীলতা সূত্রও সেগুলোর ক্ষেত্রে আরোপ করা হয়। এগুলোকে বিভিন্ন সংখ্যার মাধ্যমে সূচিত করা হয়। যেমন: চার্জের সংখ্যা +১ বা -১ ইত্যাদি। তেমনি ঘুর্ণন সংখ্যা: +১/২, -১/২, + ৩/২ ইত্যাদি। সংরক্ষণশীলতাসূত্রগুলো পরমাণুর আভ্যন্তরীন বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে গবেষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। যদি কোনো গবেষণায় কোনো সংরক্ষণশীলতা সূত্রের লংঘন দেখা যায় তাহলে প্রাথমিক ভাবে ধরে নেওয়া হয় সেখানে কোনো ভুল হয়েছে এবং সেসব পরীক্ষার ফলাফল বিভিন্ন পদ্ধতিতে নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়। এই কারণে যদি কোনো গবেষনায় বিজ্ঞানীরা দেখতে পান কোনো একটি সংরক্ষণশীলতাসূত্রের আপাত ব্যঘাত ঘটছে তাহলে তাঁরা বেশ বিচলিত হয়ে পড়েন। তার উপরে এটি যদি হয় খুব মৌলিক, খুব ভিত্তিগত এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু তাহলে পরিস্থিতি বলার অপেক্ষা রাখে না। এধরনেরই একটি পরিস্থিতিতে ১৯২০ সালে শক্তির সংরক্ষণশীলতাসূত্র একটু ঝাঁকুনি খেয়েছিলো।
আইনস্টাইনের বিখ্যাত সূত্র E = mc^2 অনুসারে আমরা জানি শক্তির পরিমাপকে আমরা ভর হিসেবে পেতে পারি। একটি পরমাণুর নিউক্লিয়াসের যদি তেজস্ক্রিয় বিভাজন হয় তাহলে তা থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ নির্গত হয় এবং নিউক্লিয়াসটি কিছুটা ভর তথা শক্তি হারায়। কিন্তু বিকিরিত কণিকার নিশ্চল ভর এবং ভাঙ্গনের ফলে অবশিষ্ট নিউক্লিয়াসের মোট ভর যোগ করলে কিছুটা ভর কম পাওয়া যায়। যেটুকু ভর কম পাওয়া যায় তা আসলে বিকিরিত কণিকার গতিশক্তি হিসেবে বিদ্যমান থাকে। উদাহরণস্বরূপ: একটি তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম পরমাণু হতে একটি আলফা কণিকা নিঃসৃত হয়ে তা একটি থোরিয়াম নিউক্লিয়াসে পরিণত হতে পারে। তবে উৎপন্ন আলফা কণিকা এবং থোরিয়াম নিউক্লিয়াসের মোট ভর প্রাথমিক ইউরেনিয়াম নিউক্লিয়াসটির চেয়ে কম পাওয়া যায়। যেটুকু কম পাওয়া যায় সে্টুকু বিকিরিত আলফা কণিকার গতিশক্তি হিসেবে বিদ্যমান থাকে।
এই পর্যন্ত শক্তির নিত্যতাসূত্র ভালোই বিদ্যমান আছে। কিন্তু বিপত্তি দেখা গেলো বিটা কণিকা নিঃসরণের ক্ষেত্রে। বিটা রশ্মি হলো প্রকৃতপক্ষে উচ্চগতির ইলেক্ট্রনের প্রবাহ। একটি তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস যদি একটি ইলেক্ট্রন নিঃসরণ করে অন্য একটি নিউক্লিয়াসে পরিণত হয় তাহলে উৎপন্ন নিউক্লিয়াস + ইলেক্ট্রন + ইলেক্ট্রনের গতিশক্তিজনিত ভর এই তিনএর সমষ্টি হওয়ার কথা প্রাথমিক নিউক্লিয়াসের ভরের সমান। চুড়ান্ত অবস্থার মোট ভর তথা শক্তির সমষ্টি প্রাথমিক নিউক্লিয়াসের শক্তির চেয়ে কখনো বেশী হবে না। যদি তেমনটি হতো তার অর্থ দাঁড়াবে তেজস্ক্রিয় বিভাজনে উৎপন্ন বিটা কণিকা শূন্য থেকে শক্তি সৃষ্টি করছে। আবার অন্য দিকে চূড়ান্ত অবস্থায় সম্মিলিত শক্তি প্রাথমিক অবস্থার চেয়ে কমও হওয়ার কথা নয়। কারণ তাতে মনে হবে শক্তি ধ্বংস হচ্ছে যা সংরক্ষনশীলতার লংঘন। মোটকথা প্রাথমিক শক্তি ও চূড়ান্ত শক্তি সমান হতে হবে। পরিমানে কম-বেশী হয়ে গেলে তা সংরক্ষনশীলতার লংঘন বলে প্রতীয়মান হবে। কিন্তু প্রথমদিকের গবেষনায় বিটা কণিকার নিঃসরণের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত অবস্থায় মোট শক্তি কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থার চেয়ে কম পাওয়া গেলো। অর্থাৎ শক্তি সমান থাকতে হলে ইলেক্ট্রনকে যে বেগে গতিশীল থাকার কথা ইলেক্ট্রনের গতি পাওয়া গেলো তার চেয়ে কম।
এটি নিয়ে বিজ্ঞানীরা বিশটি বছর কাটিয়ে দিলেন। উপর্যুপরি একই ধরনের ফলাফল পাওয়া যেতে লাগল এবং কেউই হারানো শক্তির কোনো কিনারা করতে পারলেন না। নীলস বোর এটি নিয়ে এতোই উদ্বিগ্ন হলেন যে তিনি ভাবলেন শক্তির নিত্যতা সূত্রটিকে বোধ হয় বাতিল করে দেওয়ার সময় এসেছে। (তবে নীলস বোর বলেই হয়তো তিনি এই প্রস্তাবনা দিতে পেরেছেন। অপেক্ষাকৃত কমপ্রভাবশালী বিজ্ঞানীরা এটিকে একধরনের ব্লাসফেমিই মনে করতেন এবং প্রস্তাব করার হয়তো সাহসই করতেন না!)
যা-ই হোক, শেষ পর্যন্ত শক্তির সংরক্ষণসূত্রটিকে অটুট রেখে এর ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা সকলে চালিয়ে গেলেন এবং ১৯৩০ সালে উলফগ্যাং পাউলি বিটা নিঃসরণে শক্তির এই অস্বাভাবিকতা ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য একটি তত্ত্ব নিয়ে হাজির হলেন। তিনি প্রস্তাব করেন যখন একটি নিউক্লিয়াস একটি বিটা কণিকা নিঃসরণ করে তখন আসলে পাশাপাশি আরেকটি কণিকা নির্গত হয় যা থেকে সেই্ হারানো ভরের হিসেবটুকু পাওয়া যায়। যার ফলে সবগুলো কণিকার মোট শক্তি প্রারম্ভিক শক্তির সমান থাকে। কিন্তু ২০ বছরের গবেষনায় এই ধরনের দ্বিতীয় কোনো কণিকা সনাক্ত না হওয়ায় পাউলির এই তত্ত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হলো। একজন বিজ্ঞানী যখন একটি তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন তখন সেটিকে ডিফেন্ড করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেন। পাউলিও তাই ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করে গেলেন। তিনি বললেন বিটা কণিকাটি যেহেতু ইলেক্ট্রনের চার্জটি বহন করে নিয়ে যায় তাই দ্বিতীয় কণিকাটি চার্জহীন হয়। এই চার্জহীন হওয়ায় তাদেরকে সহজে সনাক্ত করা যায় না এবং ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। এই বিষয়টি অবশ্য যুক্তিগ্রাহ্য। সেই আমলে একটি কণিকা সনাক্ত করার জন্য তার চার্জ ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য যার মাধ্যমে সেটিকে সনাক্ত করা যেত। কোনো কণিকার চার্জ না থাকলে তাকে অন্য কোনো কিছুর সাথে মিথষ্ক্রিয়া ঘটনোর মাধ্যমে খুঁজে বের করা মোটেও সহজসাধ্য ছিলো না। এই কারণেই প্রোটন ১৯১৩ সালে সনাক্ত হলেও কাছাকাছি ভরের নিউট্রন আবিষ্কৃত হয়েছে অনেক পরে, ১৯৩২ সালে, কেননা নিউট্রনের চার্জ নেই। নিউট্রনকে সনাক্ত করা গিয়েছিলো কারণ এটি একটি ভারী বলে নিউক্লিয়াসকে আঘাত করে সেখান থেকে প্রোটন বের করে দিতে পারে, সেই প্রোটন সনাক্ত করে বোঝা যায় কোনো একটা কিছু নিউক্লিয়াসটিকে আঘাত করেছিলো।
কিন্তু পাউলির প্রস্তাবনা অনুযায়ী, বিটা রশ্মির সাথে নির্গত দ্বিতীয় কণিকাটি এত সামান্য পরিমান শক্তিই ধারণ করে যে সেটি দিয়ে যে অন্য কোনো কিছুকে আঘাত করে পরোক্ষভাবে নির্ণয় করা হবে তা-ও দুষ্কর। এমনকি সবসময় যে বিটা কণিকা নিঃসরণের ক্ষেত্রে হারানো শক্তি কম পাওয়া যায় তা-ও নয়। অর্থাৎ দ্বিতীয় কোনো কণিকা যদি নিঃসৃত হয়ও তাহলে তার আদৌ কোনো ভর না-ও থাকতে পারে।
একটি কণিকা যার কোনো ভর নেই, চার্জ নেই তাকে সনাক্ত করা সত্যিই দুঃষ্কর। কিন্তু সেটিও পুরোপুরি ঠিক নয়। আলোর কণিকা ফোটনেরও কোনো ভর নেই, চার্জ নেই, অথচ সেটি কিন্তু ঠিকই খুব সহজে সনাক্ত হয়, কেননা ফোটন পদার্থের সাথে মিথষ্ক্রিয়া দেখায়। তাহলে এমনও হতে পারে বিটা নিঃসরণের দ্বিতীয় কণিকাটি হয়তো পদার্থের সাথে কোনো মিথষ্ক্রিয়ায় যায় না।
বিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মি, পাউলির এই প্রস্তবনায় বেশ আগ্রহী হলেন এবং তিনি এই ধরনের কণিকার একটি নামও দিয়ে দিলেন। আর এটিই হচ্ছে নিউট্রিনো। (নিউট্রনের সাথে মিল রেখেই এই নামকরণ করা হয়ছে, ইতালীয় ভাষায় যার অর্থ ছোট নিউট্রন।) তিনি এই ধরনের কণিকার বৈশিষ্ট্য কেমন হতে পারে তার খুঁটি-নাটি চিন্তা করে বের করলেন। তাঁর ধারনা হয়েছিলো এই ধরনের কণিকার বস্তুতঃ কোনো ভর নেই, কোনো বৈদ্যুতিক চার্জ নেই এবং কার্যতঃ কোনো ধরনের পদার্থের প্রতি কোনো প্রতিক্রিয়াও দেখায় না। সব দেখেশুনে মনে হতে লাগল শুধুমাত্র শক্তির সংরক্ষণশীলতাকে বলবৎ রাখার জন্য একটি অলীক কণিকাকে হাজির করা হয়েছে। যদি এমনই হয় তাহলে সংরক্ষণশীলতা সূত্রটিকে বাতিল করে দেওয়াই আরো বেশী যুক্তিযুক্ত। কিন্তু নিউট্রিনোর ধারনা আরো বেশ কিছু সংরক্ষণসূত্রকেও বাঁচিয়ে দেয়।
উদাহরণ স্বরূপ একটি গতিহীন নিউট্রনের কথা মনে করি। এর বেগ শুন্য, তাই এর ভরবেগও (ভর এবং বেগের গুণফল হচ্ছে ভরবেগ) হচ্ছে শূন্য। ভরবেগের সংরক্ষণের একটি সূত্র আছে যা বিজ্ঞানীরা শক্তির সংরক্ষণ সূত্র অনুধাবন হওয়ার আগে থেকেই জানতেন। অন্যভাবে বললে, একটি নিশ্চল নিউট্রনে যাই ঘটুক না কেন, নিউট্রনের মধ্য থেকে উৎপন্ন কণিকাগুলোর মোট ভরবেগের পরিমাণ শূন্য হতে হবে- যদি ধরে নেওয়া যায় বাকী সমগ্র মহাবিশ্ব এর উপর কোনো প্রভাব ফেলে নি।
একটি নির্দিষ্ট সময় পরে নিশ্চল নিউট্রনটি ভেঙ্গে গিয়ে একটি প্রোটন এবং একটি ইলেক্ট্রনে পরিণত হবে। উৎপন্ন ইলেক্ট্রনটি উচ্চ গতিতে কোনো একদিকে উড়ে যাবে এবং তাই একটি ভালো আকারের ভরবেগ থাকবে তার। নিউট্রন, যেটি এখন একটি প্রোটনে পরিণত হলো তা অপেক্ষাকৃত অনেক কম বেগে কিন্তু অনেক বেশি ভর নিয়ে বিপরীত দিকে গুটিয়ে যাবে। যথাযথ ভাবে, ইলেক্ট্রনের ভরবেগ (ক্ষুদ্র ভর X বৃহৎ বেগ), প্রোটনের ভরবেগের (বৃহৎ ভর X ক্ষুদ্র বেগ) সমান হতে হবে। এই দুজন যদি পরস্পর ঠিক বিপরীত দিকে নিক্ষিপ্ত হয় তাহলে একজনের ভরবেগ +X হলে আরেকজনের ভরবেগ হবে –X। এই দুটি ভরবেগের যোগফল হবে ০; তাই ভরবেগের সংরক্ষণশীলতা সূত্র অটুট থাকবে।
কিন্তু বাস্তবে তা ঘটতে দেখা যায় না। ইলেক্ট্রনের ভরবেগ সাধারণত অপেক্ষাকৃত কম পাওয়া যায় এবং প্রোটনও ইলেক্ট্রন ঠিক বিপরীত দিকে গমন করে না। যার ফলে সামান্য পরিমান ভরবেগের হিসেব পাওয়া যায় না। যদি আমরা নিউট্রিনোর উপস্থিতি ধরে নিতে রাজি হই তাহলে শুধু হারানো শক্তিই নয় বরং হারানো ভরবেগেরও হদিস পাওয়া যায়।
তাছাড়াও, নিউট্রনের ঘূর্ণন সংখ্যা হয় +১/২ অথবা -১/২। ধরি এটি ভেঙ্গে গিয়ে শুধু প্রোটন এবং ইলেক্ট্রন ছাড়া আর কিছু উৎপন্ন হয় না। প্রোটনের ঘূর্ণন সংখ্যা +১/২ অথবা -১/২ এবং ইলেক্ট্রনেরও তাই। প্রোটন এবং ইলেক্ট্রনের মোট ঘূর্ণন সংখ্যা সর্বদাই +১, ০ অথবা -১, যা নির্ভর করবে চিহ্ন নির্বাচনের উপর। তাই প্রোটন এবং ইলেক্ট্রনের ঘূর্ণন সংখ্যার সমষ্টি কখনোই +১/২ অথবা -১/২ হবে না, যা প্রারম্ভিক নিউট্রনের ক্ষেত্রে পাওয়া যায়। এর অর্থ হচ্ছে কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণশীলতা সূত্র (এটিও আরেকটি সুপরিচিত এবং দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত সংরক্ষণশীলতা সূত্র) লঙ্ঘিত হচ্ছে।
তবে, যদি নিউট্রন ভেঙ্গে গিয়ে প্রোটন, ইলেক্ট্রন এবং নিউট্রিনো উৎপন্ন হয়, তাহলে এই সবগুলোরই ঘূর্ণন সংখ্যা হবে হয় +১/২ অথবা -১/২ করে। মিলিতভাবে তিনটি কণিকার ঘূর্ণন সংখ্যা হবে (উদাহরণস্বরূপ +১/২, +১/২, -১/২) বা সবমিলিয়ে +১/২ যা প্রারম্ভিক নিউট্রনের কৌণিক ভরবেগের সমান, এবং এতে কৌণিক ভরবেগ সংরক্ষিত থাকছে।
চতুর্থ আরেকটি সংরক্ষণশীলতা সূত্র আছে যা অন্যগুলোর চেয়ে অনেক পরে আবিষ্কৃত হয়েছে: লেপটন সংখ্যার সংরক্ষনশীলতা সূত্র। একটি নিউট্রন এবং একটি প্রোটন উভয়েরই লেপটন সংখ্যা ০, অপরদিকে একটি ইলেক্ট্রনের লেপটন সংখ্যা +১ ইবং পজিট্রনের লেপটন সংখ্যা -১।
তাই একটি নিউট্রনের প্রারম্ভিক ভাবে ব্যারিয়ন সংখ্যা +১ এবং লেপটন সংখ্যা ০ হয়ে থাকে। যদি এটি ভেঙ্গে গিয়ে একটি প্রোটন (ব্যারিয়ন সংখ্যা +১ এর সমান এবং লেপটন সংখ্যা ০ এর সমান) একটি ইলেক্ট্রন (ব্যারিয়ন সংখ্যা ০ এবং লেপটন সংখ্যা +১) এবং একটি নিউট্রিনোতে (ব্যারিয়ন সংখ্যা ০ এবং লেপটন সংখ্যা -১) পরিণত হয় তাহলে এই তিনটি কণিকার মোট ব্যারিয়ন সংখ্যা হয় +১ এবং মোট লেপটন সংখ্যা হয় ০। এতে করে ব্যারিয়ন সংখ্যা এবং লেপটন সংখ্যা উভয়টিই সংরক্ষিত থাকে।
তবে অবশ্যই নিউট্রিনোর লেপটন সংখ্যা -১ হতে হলে এটিকে এর দর্পন প্রতিবিম্ব প্রতিনিউট্রিনোর বিপরীত হতে হবে। তবে এতে কোনো সমস্যা নেই। একটি প্রতিনিউট্রিনো, নিউট্রিনোর মতোই শক্তি, বৈদ্যুতিক চার্জ, ভরবেগ এবং কৌনিক ভারবেগের সংরক্ষণশীলতা অটুট রাখবে। প্রতিনিউট্রিনো একই সাথে লেপটন সংখ্যাও সংরক্ষণ করবে।
শুধু মাত্র একটি সংরক্ষণশীলতা সূত্রকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য একটি শনাক্তকরণের অযোগ্য কণা ধরে নেওয়া উৎসাহব্যাঞ্জক নয়। চারটি সংরক্ষণশীলতা সূত্রকে রক্ষা করার জন্য চারটি পৃথক কণিকা ধরে নেওয়া আরো কম উৎসাহব্যঞ্জক। তবে, একটি শনাক্তকরণের অযোগ্য কণিকা যদি চারটি সরংক্ষণশীলতা নীতিকেই বাঁচিয়ে রাখতে পারে তাহলে সেটি খুবই উৎসাহব্যাঞ্জক হয়ে ওঠে। যতই বছরের পর বছর যেতে লাগল পদার্থবিদগণ ততোই এর উপস্থিতির ব্যাপারে উৎসাহীত হয়ে উঠতে লাগলেন, কণিকাটি সনাক্ত হোক বা না হোক।
(আনুমানিক তিন খন্ডে সমাপ্য)
(দ্বিতীয় খন্ডের লিংক)
নতুন করে এবার ব্যপক ভাবে আলোচিত হচ্ছে নিউট্রিনো। বাংলায় বিজ্ঞান লেখার এই অভাবের সময়ে বাকি পর্বগুলো ঝটপট নেমে গেলে আসলেই খুব ভালো হয়।
শুভেচ্ছা।
দ্বিতীয় পর্ব আসছে। আমি আশা করব একই লেখকের দুটি লেখা প্রথম পাতায় না দেওয়ার মুক্তমনার যে নীতিমালা আছে সেটি একই ক্ষেত্রে শিথীল করা হবে। যদি না করা হয় তাহলে আমি এই লেখাটি প্রথম পাতা থেকে সরে যাওয়ার পর্যন্ত অপেক্ষা করব। 🙂
ভাল লেগেছে লেখাটি। সম্পূর্ণ লেখাটি চাচ্ছি। ধন্যবাদ। :good:
ধন্যবাদ
পদার্থবিজ্ঞানে এ বছরের নোবেল পুরষ্কার ঘোষিত হবার পর থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার আগ্রহ ছিল। পরের পর্বের অপেক্ষায়…
খুব সুন্দর পোষ্ট। বিষয়টি জানতে আগহী ছিলাম। অপেক্ষায় থাকলাম।
অপেক্ষার অবসান হয়েছে। এই পোস্টের শেষে লিংক দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় খন্ডের।
অসাধারণ লেখা! পরের অংশের জন্য আগ্রহভরে অপেক্ষায় থাকলাম।
পরের অংশের জন্য অপেক্ষায় আছি । :good:
দ্বিতীয় খন্ড প্রকাশিত হয়েছে। 🙂