বার্ট্রান্ড রাসেলের বক্তৃতা ‘আমি কেনো খ্রিস্টান নই’ (১৯২৭),
শহিদ ভগত সিং-এর “Why I am an Atheist”/ “কেন আমি নাস্তিক”(১৯৩০),
Free Inquiry magazine-এ প্রকাশিত David Dvorkin এর আর্টিকেল “why I am not a jew”(১৯৯০),
ইবনে ওয়ারাকের “why I am not a muslim” (১৯৯৫),
কাঞ্চা ইলাইয়াহের Why I Am Not a Hindu (১৯৯৬, কলকাতা) [বইটির পিডিএফ কারও লাগলে চাইবেন]
প্রবীর ঘোষের ‘আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না’(১৯৯৬),
হুমায়ুন আজাদের ‘আমার অবিশ্বাস’ (১৯৯৭);

নাম থেকেই এই বইগুলোর টপিক কি নিয়ে তা আন্দাজ করতে কারও কষ্ট হবার কথা না। এগুলোর মাঝে তুলনামূলক বিশ্লেষণ ভবিষ্যতে করার ইচ্ছা থাকলেও আজ শুধু রাসেল আর ওয়ারাকের বই নিয়েই কথা হল কারণ শিবলি আজাদ, পিনাকীদের দাবী শুধু এই দুইজনকে নিয়েই। ৯০র দশকে লেখকরা এই টপিকে লিখতে প্রণোদিত হয়েছিলেন তা এই তালিকার সনগুলো দেখলেই বোঝা যায়।

রাসেলের “Why I am not a Christian, And other essays on religion” বইটির বাংলা অনুবাদ আছে তবে লেখক-প্রকাশক বেশী বিক্রির উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃতভাবেই ভুল করে “আমি কেন ধর্ম বিশ্বাসী নই” নামকরণ করেছে সেটার।

রাসেলের বইটিতে কি আছে দেখা যাকঃ
1 Why I am not a Christian
2 Has Religion Made Useful Contributions to Civilisation?
3 Do We Survive Death?
4 Seems, Madam? Nay, it is
5 On Catholic and Protestant Sceptics
6 Life in the Middle Ages
7 The Fate of Thomas Paine
8 Nice People
9 The New Generation
10 Our Sexual Ethics
11 Freedom and the Colleges
12 The Existence of God—a Debate Between Bertrand Russell and Father F. C. Copleston, SJ
13 Can Religion Cure Our Troubles?
14 Religion and Morals

আর আজাদের‘আমার অবিশ্বাস’ বইটিতে কি আছে দেখা যাকঃ
প্রথম অধ্যায়টিতে করেছেন বিশ্বাস সম্পর্কিত ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ব্যাপারগুলোর আলোচনা। দ্বিতীয় অধ্যায়টি মূলত রবীন্দ্রনাথ, সুধীন্দ্রনাথ, দান্তে সহ অন্যান্য কবিদের কাব্যে-লেখনীতে বিশ্বাসের উপাদানগুলোকে চিহ্নিত করেছেন। তৃতীয় অধ্যায়টিতে এসেছে ইয়েটস, ডিলান টমাস, এজরা পাউন্ড, এলিয়ট, অডেন, ডিলান টমাস, কিটস, জীবনানন্দ, মোহিতলাল মজুমদার আর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কাব্যালোচনা। চতুর্থ অধ্যায়টিতে দেখিয়েছেন মহাবিশ্বে পৃথিবীর অবস্থান আর বিশ্বসৃষ্টির ধর্মীয় উপাখ্যানগুলো। পঞ্চম অধ্যায় হচ্ছে বিভিন্ন ধর্মের উৎপত্তি আর ক্রমবিকাশ নিয়ে। ষষ্ঠ অধ্যায়টি হচ্ছে বিধাতা বিষয়ক ফিলোসফিকাল আলোচনা। সপ্তম অধ্যায়টিতে রাড়িখালে হুমায়ুন আজাদের বাল্যজীবন, স্কুলজীবনের কথা এতে এসেছে, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, আবুল ফজল, সুফিয়া কামাল, ইব্রাহিম খা এর সমালোচনা এতে আছে।

ম্যাথিউ আরনল্ড, নিটশে, জর্জ স্মিথ, বোকাচ্চিও, দেমোস্থেনেস, প্লাউতুস, নজরুল, ভলতেয়ার, পিটার পেত্রিক্স, খুশবন্ত সিং, চার্লস প্লাস, মিহজান, মার্ক্স, থিয়াগনেস, জেনোফানেস, ম্যাক্স মুলার, ওল্ড ও নিউ টেস্টামেন্ট, ঋগ্বেদ, ক্লেমেন্ট, টাইরিউস, ডেভিড স্ট্রাউস, বাউআর, আল-মারি, জালালুদ্দিন রুমি, খলিফা উমর, টমাস পেইন, সন্ত পল, দস্তভয়স্কি, এরিস্টটল, টলেমি, কান্ট, চার্লস গ্লাস, স্টিফেন হকিং, আইনস্টাইন, স্পিনোজা সহ আরও অনেকেরই বক্তব্য হুমায়ুন আজাদ তাদের নাম উল্লেখ করেই ব্যবহার করেছেন।

রাসেলের বইটি পুরোপুরি একাডেমিক স্টাইলের। আর আজাদের বইটির টার্গেট রিডার হচ্ছে আমজনতা। দর্শনের ছাত্র নই বলে রাসেলের বইটি পড়তে আমার বরাবরই কষ্ট হয়েছে, আর আজাদের বইটি একেবারেই জলবৎ তরলং। দুই বইয়ের ভাষা ও প্রকাশভঙ্গি আর টপিকের মধ্যে এতটাই পার্থক্য যে কোনও পাঠক দুইটা বইয়ের যেকোন এক দুইটা দুই পৃষ্ঠা পড়লেই বুঝবেন। হু-আ তার ধর্ম নামের অধ্যায়ের শুরুতেই বার্ট্রান্ড রাসেলের ‘আমি কেনো খ্রিস্টান নই’ বইটির নাম উল্লেখ করেই সেখান থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন, ‘সব ধর্মই ক্ষতিকর ও অসত্য।’ পুরো বইটাতে রাসেল থেকে যতবারই বক্তব্য নিয়েছেন ততবারই রাসেলের নাম উল্লেখ করেছেন। ওয়ারাক তার why I am not a muslim বইটিতেও রাসেল থেকে কোট করেছেন একাধিকবার। যেহেতু কোট করে বক্তব্য নেয়া হয়েছে সেহেতু রাসেলের বই থেকে চুরির যে দাবী শিবলি করেছেন সেটাকে মিথ্যা বলেই মনে করি।

আহমদ ছফা তাঁর আর্টিকেলে লিখেছিলেন,

“হুমায়ুন আজাদ একটা দাবি অত্যন্ত জোরের সঙ্গে করে আসছেন, তিনি পশ্চিমা ঘরানার পন্ডিত। এতদঞ্চলের নকলবাজ, অনুকরণসর্বস্ব পল্লবগ্রাহী বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে তাঁর কোন সম্পর্ক নেই। তাঁর ‘আমার অবিশ্বাস’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পর এই দাবির যথার্থতা প্রমাণিত হল। প্রয়াত বৃটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল ঊনত্রিশ বছর বয়সে যে গ্রন্থটি ‘Why I am not a christian’ লিখেছিলেন, তার বঙ্গীয় সংস্করণ প্রকাশ করে সর্বত্র আস্ফালন করে বেড়াতে লাগলেন এটা তার মৌলিক কীর্তি। কী করে পশ্চিমা ঘরানার পন্ডিত হতে হয়, এ সময়ের মধ্যে হুমায়ুন আজাদ তার এক সহজ ফর্মুলা উদ্ভাবন করে ফেলেছেন। স্বর্গত পশ্চিমা লেখকদের লেখা আপনার মাতৃজবানে অনুবাদ করবেন এবং তার সঙ্গে খিস্তি-খেউর মিশিয়ে দেবেন। তাহলেই আপনি পশ্চিমা ঘরানার পন্ডিত বনে যাবেন।”
মানবজমিন। ১ ডিসেম্বর, ১৯৯৮।

>>আহমদ ছফার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, তাঁর এই মন্তব্যকে আমি যুক্তি দিয়েই ভুল প্রমাণ করতে পারি। রাসেল জন্মেছিলেন ১৮৭২ এ, March 6, 1927 তারিখে রাসেল একটা বক্তৃতা দিয়েছিলেন তাই “Why I Am Not A Christian” নামে পরিচিত। পাঠক খেয়াল করেন, এই সময় রাসেলের বয়স ৫৫। অথচ ছফা লিখেছেন ঊনত্রিশ বছর বয়সের কথা। আবার বক্তৃতাকে ছফা বলেছেন গ্রন্থ। এই বক্তৃতাটি পুস্তিকা আকারে সে বছরই বের হয়, মাত্র ১৫ পৃষ্ঠা যার আয়তন। ছফা কি করে আজাদের ১৫৬ পৃষ্ঠার বইটিকে রাসেলের ১৫ পৃষ্ঠার পুস্তিকার ‘বঙ্গীয় সংস্করণ’ বললেন তাও বোধগম্য না। আমরা রাসেলের যে বইটি বর্তমানে পাই “Why I am not a Christian, And other essays on religion” সেটি হল ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ধর্ম সম্পর্কিত প্রবন্ধ, আলোচনা ও ডিবেটের জোড়াতালি যা ১৯৫৭ সালে প্রকাশিত(রাসেলের বয়স তখন ৮৫)(edited by Paul Edwards. London: George Allen & Unwin.)। এই বইটির সাথেও যে আজাদের বইটির মিল নেই তা বুঝতে বইগুলো না পড়লেও অন্তত সূচীপত্র মেলালেই বুঝতে পারতেন আহমদ ছফা। যতই ‘খিস্তি-খেউড় সহকারে মাতৃজবানে অনুবাদ’ করা হোক তবুও যে বইটি রাসেলের বইটির ‘বঙ্গীয় সংস্করণ’ নয় তা বুঝতে ‘আহমদ ছফা’ হতে হয় না, ক্লাস সেভেন/এইটের বাচ্চারাই যথেষ্ট। কারণ রাসেলের বইটির সাথে আজাদের বইটির কন্টেন্টের পার্থক্য। আজাদের বইটির অর্ধেকের বেশী জুড়ে আছে মূলত কাব্যালোচনা, যা কিনা বইটিকে রাসেল ও ওয়ারাকের বই থেকে পুরোপুরি স্বতন্ত্র করে তুলেছে। ছফার মত লেখক যিনি কিনা নিজেও রাসেল থেকে অনুবাদ করেছেন তিনি এইসব ভুলভাল লিখলেন কিভাবে? (ছফার অনুবাদঃ 1963. Essays in Skepticism : সংশয়ী রচনা: বার্টাণ্ড রাসেল-১৯৮২)

আমার অনুমান, আহমদ ছফা এই বই দুটোর কোনটিই না পড়ে ব্যক্তিগত ক্রোধের বশেই আজাদের বইটির নামে এই মিথ্যাচার করেছিলেন। এবং ইতিহাস সাক্ষী ছফার এই মিথ্যাচার আজাদের বিরুদ্ধে ছাগুদের প্রপাগান্ডার মূল অস্ত্র হয়ে দাড়িয়েছে কালে কালে।

WhyImnotaMuslim

vagat sing

ami-keno-ishware-bishwas-kori-na-probir-ghosh

amar obisshash

417iG5vSWAL

41ewiF46ZDL._SY344_BO1,204,203,200_