তরুন রবীন্দ্রনাথ আর অভিজ্ঞতার ভারে নুয়ে পড়া বঙ্কিম চন্দ্রের মধ্যে একবার একটা বিতর্ক হয়েছিল। সেই বিতর্ক আজকের মতন টিভি সেটের সামনে দুই পক্ষের উপস্থিতিতে অথবা হলরুমে বিচারকের সামনে হয় নি – একজন পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখেছেন, আরেকজন মাসাধিককাল পরে আরেক পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখে সেটার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। প্রথম পক্ষ পরে আবার জবাব দিয়েছেন। সেই বিতর্কে বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন বাস্তবতাবাদী, আর কবিগুরু ছিলেন সত্যের সেবক। বঙ্কিমবাবু এবং রবীন্দ্রনাথ দুজনই ছিলেন ভারতের স্বাধীনতার আন্দোলনের কর্মী, পর্দার পেছনে। বঙ্কিমচন্দ্র ইংরেজ সরকারের চাকুরী করা সত্ত্বেও ভারতের জাতীয় গনজাগরনে বলিষ্ঠ ভুমিকা রেখেছেন তার লেখনীর মাধ্যমে। তার এই মত ছিল যে, ইংরেজকে তাড়াতে হলে ছলে বলে কৌশলে যেভাবে সম্ভব চেষ্টা করতে হবে, তাতে সত্য-মিথ্যার মিশেল দিতে হলেও ক্ষতি নেই। পক্ষান্তরে রবীন্দ্রনাথ শত্রুর সাথেও সত আচরণ করতে প্রস্তুত ছিলেন সবসময়, এবং সাময়িক সুবিধার জন্য তিনি নীতিকে বিসর্জন দিতে প্রস্তুত নয়।
বঙ্কিমচন্দ্র প্রসঙ্গটির অবতারনা করেছেন এভাবেঃ খাঁটি সোনায় যেমন ভালো মজবুত গহনা গড়ানো যায় না, তাহাতে মিশাল দিতে হয়, তেমনি খাঁটি ভাব লইয়া সংসারের কাজ চলে না, তাহাতে খাদ মিশাইতে হয়। যাহারা বলে – সত্য কথা বলিতেই হইবে, তাহারা সেন্টিমেন্টাল লোক, কেতাব পড়িয়া তাহারা বিগড়াইয়া গিয়াছে, আর যাহারা আবশ্যকমতো দুই-একটা মিথ্যা কথা বলে ও সেই সামান্য উপায়ে সহজে কার্যসাধন করিয়া লয় তাহারা প্র্যাকটিক্যাল লোক। তিনি বলেন, যেখানে লোকহিতার্থে মিথ্যা নিতান্ত প্রয়োজনীয়, সেখানে মিথ্যা বলা বারণ নয়। উদাহরন দিয়েছেন মহাভারত থেকেঃ
‘কর্ণের যুদ্ধে পরাজিত হইয়া যুধিষ্ঠির শিবিরে পলায়ন করিয়া শুইয়া আছেন। তাঁহার জন্য চিন্তিত হইয়া কৃষ্ণার্জ্জুন সেখানে উপস্থিত হইলেন। যুধিষ্ঠির কর্ণের পরাক্রমে কাতর ছিলেন, ভাবিতেছিলেন, অর্জ্জুন এতক্ষণ কর্ণকে বধ করিয়া আসিতেছে। অর্জ্জুন আসিলে তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, কর্ণ বধ হইয়াছে কি না। অর্জ্জুন বলিলেন, না, হয় নাই। তখন যুধিষ্ঠির রাগান্ধ হইয়া, অর্জ্জুনের অনেক নিন্দা করিলেন, এবং অর্জ্জুনের গাণ্ডীবের অনেক নিন্দা করিলেন। অর্জ্জুনের একটি প্রতিজ্ঞা ছিল–যে গাণ্ডীবের নিন্দা করিবে, তাহাকে তিনি বধ করিবেন। কাজেই এক্ষণে “সত্য” রক্ষার জন্য তিনি যুধিষ্ঠিরকে বধ করিতে বাধ্য–নহিলে “সত্য”-চ্যুত হয়েন। তিনি জ্যেষ্ঠ সহোদরের বধে উদ্যত হইলেন–মনে করিলেন, তার পর প্রায়শ্চিত্তস্বরূপ, আত্মহত্যা করিবেন। এই সকল জানিয়া, শ্রীকৃষ্ণ তাঁহাকে বুঝাইলেন যে, এরূপ সত্য রক্ষণীয় নহে। এ সত্য-লঙ্ঘনই ধর্ম্ম। এখানে সত্যচ্যুতিই ধর্ম্ম। এখানে মিথ্যাই সত্য হয়।’
রবীন্দ্রনাথ তার নিজের অবস্থানের প্রতি যুক্তি দিচ্ছেন এভাবেঃ
‘কলসি যত বড়োই হউক না, সামান্য ফুটা হইলেই তাহার দ্বারা আর কোনো কাজ পাওয়া যায় না। তখন যে তোমাকে ভাসাইয়া রাখে সেই তোমাকে ডুবায়। মনুষ্যত্বের যে বৃহত্তম আদর্শ আছে, তাহাকে যদি উপস্থিত আবশ্যকের অনুরোধে কোথাও কিছু সংকীর্ণ করিয়া লও, তবে নিশ্চয়ই ত্বরায় হউক আর বিলম্বেই হউক, তাহার বিশুদ্ধতা সম্পূর্ণ নষ্ট হইয়া যাইবে। সে আর তোমাকে বল ও স্বাস্থ্য দিতে পারিবে না। শুদ্ধ সত্যকে যদি বিকৃত সত্য, সংকীর্ণ সত্য, আপাতত সুবিধার সত্য করিয়া তোল তবে উত্তরোত্তর নষ্ট হইয়া সে মিথ্যায় পরিণত হইবে, কোথাও তাহার পরিত্রাণ নাই।’
রবীন্দ্রনাথ আরো বলছেনঃ ‘সুবিধার অনুরোধে সমাজের ভিত্তিভূমিতে যাঁহারা ছিদ্র খনন করেন, তাঁহারা অনেকে আপনাদিগকে বিজ্ঞ তথা প্র্যাকটিকাল বলিয়া পরিচয় দিয়া থাকেন। তাঁহারা এমন ভাব প্রকাশ করেন যে, মিথ্যা কথা বলা খারাপ, কিন্তু পলিটিক্যাল উদ্দেশ্যে মিথ্যা কথা বলিতে দোষ নাই। সত্যঘটনা বিকৃত করিয়া বলা উচিত নহে, কিন্তু তাহা করিলে যদি কোনো ইংরাজ অপদস্থ হয় তবে তাহাতে দোষ নাই। ***** হইতেও পারে, সমস্ত জাতিকে মিথ্যাচরণ করিতে শিখাইলে আজিকার মতো একটা সুবিধার সুযোগ হইল, ইংরেজ পালাইল– কিন্তু তাহাকে যদি দৃঢ় সত্যানুরাগ ও ন্যায়ানুরাগ শিখাইতে তাহা হইলে সে যে চিরদিনের মতো মানুষ হইতে পারিত! অতএব স্বজাতির যথার্থ উন্নতি যদি প্রার্থনীয় হয়, তবে কলকৌশল ধূর্ততা চাণক্যতা পরিহার করিয়া যথার্থ পুরুষের মতো মানুষের মতো মহত্ত্বের সরল রাজপথে চলিতে হইবে, তাহাতে গম্য স্থানে পৌঁছিতে যদি বিলম্ব হয় তাহাও শ্রেয়, তথাপি সুরঙ্গ পথে অতি সত্বরে রসতল রাজ্যে গিয়া উপনিবেশ স্থাপন করা সর্বথা পরিহর্তব্য।’
শুনেছি রাজনীতি অথবা যুদ্ধে, এমনকি প্রেমেও নাকি সত্য-মিথ্যার মিশেল জায়েজ। ন্যায়শাস্ত্রে উপযোগিতাবাদ থেকে শুরু করে নানা তত্ব আছে, যেগুলোতে কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল, তা নির্ণয় করা হয় নানা উপায়ে। সে সব আলোচনায় যেতে চাই না। সম্প্রতি মুহম্মদ জাফর ইকবাল ‘না, বাংলাদেশ মরে নি’ শিরোনামে একটা লেখা লিখেছেন, যা দেশের নানা পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। লেখাটি মূলত বাংলাদেশি ব্রিটিশ লেখক জিয়া হায়দার রহমানের কিছু বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ঠিক বলেছেন নাকি ভুল বলেছেন, সেটা আমার বিবেচ্য নয়। আমি শুধু তার লেখার ধরণ তথা তার লেখায় ব্যবহৃত কিছু উপাদান নিয়ে কথা বলব, যেগুলো তার লেখাটিকে একটি অর্ধসত্য, অপযুক্তি ও বিদ্বেষের মিশেলে পরিণত করেছে। মুহম্মদ জাফর ইকবাল যে প্রেক্ষিতে এই প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন তা একটু বলে নেওয়া ভাল। তার আগের নানা লেখার সুবাদে বলা যায়, তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে প্রচণ্ড আশাবাদী মানুষ। যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং আরো বেশ কিছু প্রসঙ্গে তিনি বেশ সরব ছিলেন এবং তরুন প্রজন্ম তাকে একজন আলোকবর্তীকা এবং রোলমডেল মনে করে, সঙ্গত কারণেই। সাদাসিধে কথা নামে তার সমসাময়িক নানা বিষয়ে লেখা প্রবন্ধগুলো বের হওয়া মাত্রই ফেসবুক-টুইটারে বন্যার পানির মত ছড়িয়ে পড়ে। শুধু লেখালেখিই নয়, তার মধ্যে সক্রিয় এক্টিভিজমও আমরা দেখেছি – যেমন প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে, শাবিপ্রবি’র নানা ইস্যুতে, ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তিনি বরাবরই সরব, সরব আরো নানা বিষয়ে। ফলে, তার লেখার পজিটিভ প্রভাবের দিকটা আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বেশ ঈর্ষাণীয় একটা ব্যাপার। সেই একই কারণে তার লেখা আশার বেসাতির সাথে সাথে যদি নেগেটিভ কিছুও ছড়িয়ে দেয়, সেটিও সবার কাছে খুব সহজেই পৌঁছুবে, এবং তার প্রভাব মুহম্মদ জাফর ইকবালের সৃষ্ট পজিটিভ প্রভাবকেও হয়তোবা ছাড়িয়ে যেতে পারে, এই আমার আশঙ্কা।
শিরোনাম দিয়ে শুরু করি। জিয়া হায়দার রহমান কোথাও বলেন নি যে বাংলাদেশ মৃতদের দেশ। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে মৃত চিন্তাভাবনার দেশ, যেখানে নতুন কোনো ধারণার প্রকাশ ঘটা মাত্রই তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও শ্রেণির বাধায় নতুন চিন্তা-চেতনা, ধ্যানধারণা বিকশিত হতে পারে না।’ ইংরেজী বাক্যটি এরকম ছিলঃ ‘Bangladesh is a land of dead ideas, where new concepts are throttled at birth and never get passed on because of social, political and class barriers.’ মুহম্মদ জাফর ইকবাল লিখছেন, তিনি নাকি প্রথমে পড়েছিলেন এরকমঃ ‘বাংলাদেশ হচ্ছে মৃতদের দেশ’, এবং পরে চোখ কচলে দ্বিতীয়বার পড়ে বুঝতে পারলেন যে, ইংরেজি শিরোনামটির বাংলার সঠিক অনুবাদ করলে অর্থ হয় আরও ভয়ানক, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে মৃত চিন্তা-ভাবনার দেশ। বাক্যটির দ্বিতীয় অংশ তিনি পড়েছেন নিশ্চয়ই, তবে তার নিজের প্রতিক্রিয়ার শিরোনাম দেবার সময় তার প্রথমবারের ভুল যে পঠন, সেখানেই আটকে রয়ে গেছেন। তিনি শিরোনাম করলেন, ‘না, বাংলাদেশ মরে নি’। যারা শুধু অনলাইন সাংবাদিকদেরকেই চটকদার হেডলাইন করার অপরাধে দোষী করেন, তারা এইটাকে কি বলবেন সেটা তাদের ব্যাপার, তবে আমি বলব, এই শিরোনামের মধ্যে অসততা রয়েছে। তিনি যদি বলতেন, ‘না, বাংলাদেশ মৃত চিন্তা ভাবনার দেশ নয়’, অথবা জিয়া হায়দারের পুরো বক্তব্যের রেশ ধরে অন্য যে কোন উপযুক্ত শিরোনাম করতেন, তাতে কি তার বক্তব্যের ধার কমে যেত? জিয়া হায়দার রহমান ওই অনুষ্ঠানে আরও বলেছেন, মূলত দেশটা বিপুল ক্ষমতাধর ও অসামান্য সুযোগ-সুবিধাভোগীদের, তাঁরা তাঁদের ধ্যানধারণা নিচের স্তরের জনগণের ওপর চাপিয়ে দেন এবং সাধারণ মানুষও তাকে ‘হ্যাঁ’ বলে মেনে নেয়। মৃত ব্যক্তিদের ছায়াকে পুঁজি করে দুই নারী বাংলাদেশের রাজনীতিতে আধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছেন। জাফর ইকবাল যদি এই বাক্যটির উপরে ভিত্তি করে বলতেন, ‘না, বাংলাদেশে ভবিষ্যতের নেতারা দুই পরিবার থেকে আসবে না, আসবে মেধাবী সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে’, তাহলে আমি ব্যক্তিগতভাবে খুশী হতাম, কিন্তু আমি জানি সেটা দিবাস্বপ্ন। এমনকি তিনি যদি এটাও বলতেন যে, ‘না, দুই নারী নয়, দুই জন যোগ্য ব্যক্তিই এই দেশ চালাচ্ছেন’, তাতেও শিরোনামের বুদ্ধিবৃত্তিক সততা বজায় থাকত।
কারো সমালোচনা করছি বলেই যে বক্তাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করতে হবে এমন কোন দিব্যি কেউ দেয় নি। বিতর্ক বলুন আর আলোচনা বলুন, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ সেখানে থাকতেই হবে। মুহম্মদ জাফর ইকবালের যে বৃহত প্রভাব বলয়, তার সম্পর্কে তিনি ওয়াকিফহাল বলেই আমি মনে করি। তার লেখা এদেশের মানুষকে প্রভাবিত করে, এবং তিনি সেটা জানেন। সেই কারণেই তার দায়িত্বের মাত্রাটা বেশি হওয়া উচিত – তার কাছ থেকে আমরা শামীম ওসমান – সেলিনা হায়াত আইভী বা মীর্জা ফখরুল – সৈয়দ আশরাফুল মানের বিতর্ক আশা করি না। ব্যক্তিগত আক্রমণের অনেক উপায় আছে, তার একটা হল প্রতিপক্ষকে গুরুত্ব না দেওয়া, তার সম্পর্কে না জানা অথবা না জানার ভাণ করা। মুহম্মদ জাফর ইকবাল তার লেখার শুরুতে জিয়া হায়দার রহমানের বক্তব্য সম্পর্কে বললেন, ‘উক্তিটি একজন ব্রিটিশ লেখকের। লেখক তরুণ এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে তার এ রকম একটা মন্তব্য করার অধিকার রয়েছে বলে মনে করেন। কারণ, তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত।’ এখানেই তিনি থামলেন না, আরো যোগ করলেনঃ ‘কিন্তু একজন মানুষ যদি বাংলাদেশি না হয়ে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হয় এবং মানুষটি যদি লেখালেখির জগতে খুব অল্প বয়সে অনেক সুনাম অর্জন করে থাকেন, তাহলে বাংলাদেশ সম্পর্কে তার মন্তব্য সবাইকে হজম করতে হবে। …… তাই জিয়া হায়দার রহমান নামের অত্যন্ত প্রতিভাবান এবং বিখ্যাত সেই তরুণ লেখকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেই বক্তব্যটি আমি পড়ে দেখার প্রয়োজন মনে করিনি, চোখ বন্ধ করে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে ফেলেছি এবং কিছুক্ষণের মাঝে পুরো বিষয়টি ভুলে গেছি।’ জিয়া হায়দার রহমানের জন্ম বাংলাদেশে, এবং তিনি ছেলেছোকরা জাতীয় কেউ নন বয়স বা পরিপক্কতার দিক থেকে – যারা তার লেখা পড়েছেন, তার অনুষ্ঠানে গিয়েছেন বা ইউটিউবে তার বক্তব্য শুনেছেন তারা এতে একমত হবেন আশা করি। তার সাহিত্যচর্চাও কোন পাল্প ফিকশন বা বাজারী হুজুগে বস্তু নয় সম্ভবত, যদিও সে ব্যাপারে সময়ই আসল সাক্ষী দেবে। তবে তার মানসিক গড়নে বাংলাদেশের যে প্রভাব, বাংলাদেশের সাথে তার যে আত্নিক সম্পর্ক, তা তার লেখায় এবং বক্তব্যে এসেছে বারবার। তিনি কোন পলিটিক্যাল পার্টির বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর কেউ নন, ব্রিটিশ সরকারের বা জাতির প্রতিনিধিও নন যে তাকে সন্দেহ করতেই হবে। আমরা তাকে যে সন্মান দেব, তাতে তার কিছু যাবে আসবে না, কিন্তু এতে আমাদের নিজেদের সন্মানই বাড়বে প্রকারান্তরে।
মুহম্মদ জাফর ইকবালের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরো এক ধাপ উপরে – কারণ বাংলাদেশে তিনি গুটিকয়েক রোলমডেলদের একজন। তিনি যে দৃষ্টান্ত রাখছেন আমাদের সামনে, অনেকে সেটাকে বিনা প্রশ্নে মেনে নেয় তাদের আদর্শ হিসেবে। সেই একই লেখাতে মুহম্মদ জাফর ইকবাল নিজেই বলছেন যে, ‘একজন শ্রদ্ধেয় বুদ্ধিজীবী এভাবে একটা ধারণা প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করলে অনেক তরুণ কমবয়সী ছেলেমেয়ে সত্যি সত্যি সেটা বিশ্বাস করে ফেলতে পারে, তারা মনে করতে পারে সত্যি বুঝি বাংলাদেশে চিন্তা-ভাবনার জন্ম হয় না, সত্যিই বুঝি বাংলাদেশ চিন্তা-ভাবনার দিক থেকে মৃত এবং একটি বন্ধ্যা ভূখণ্ড। কাজেই আমার মনে হয়েছে, আমি নিজে এ ব্যাপারে কী ভাবি সেটা একটু বলা দরকার।’ তিনি এ কথা বলেছেন প্রথম আলো পত্রিকায় সৈয়দ আবুল মকসুদের লেখা প্রসঙ্গে, যেখানে সৈয়দ আবুল মকসুদ জিয়া হায়দার রহমানের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। তো, সৈয়দ আবুল মকসুদের লেখার একটা নেগেটিভ প্রভাব পড়তে পারে তরুণ কমবয়সী ছেলেমেয়েদের উপরে, এটা মুহম্মদ জাফর ইকবাল জানেন, আর সেই কারণেই তার নিজের লেখার প্রভাব, তা পজিটিভ বা নেগেটিভ যাই হোক, আমাদের তরুণ কমবয়সী ছেলেমেয়েদের উপরে পড়ে আরো বেশি মাত্রায়, সেটা তার মাথায় রাখা জরুরী।
প্রথম আলো পত্রিকায় সৈয়দ আবুল মকসুদের লেখা প্রসঙ্গে মুহম্মদ জাফর ইকবাল আরো বললেন, কেউ নাকি শ্রদ্ধেয় আবুল মকসুদকে দায়িত্ব দিয়েছেন বিখ্যাত তরুণ লেখক জিয়া হায়দার রহমানের দুই-তিনটি লাইনকে অনেক বড় করে ব্যাখ্যা করার জন্যে, এমন ধারণা হয়েছে তার। কারো সাথে মতের মিল না হলেই আসল বক্তব্যকে এড়িয়ে গিয়ে সেটার পেছনে বক্তার ধান্দা খোঁজা সুস্থ বিতর্কের পরিপন্থী। এটা অবশ্যই সৈয়দ আবুল মকসুদের জন্য অপমানজনক। তিনি যা লিখেছেন বুঝে শুনেই লিখেছেন বলে ধরে নেওয়াটাই রীতি – তার পেছনে অন্য কারো মদদ খোঁজাটা একটা অসুস্থ মানসিকতার প্রকাশ। সৈয়দ আবুল মকসুদের বক্তব্যকে যুক্তি দিয়েই খণ্ডন করতে হবে, অন্য কিছু দিয়ে নয়।
মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখার সবচেয়ে আপত্তিকর অংশ হলো পরিবারতন্ত্রের পক্ষে সাফাই গাওয়া, সেক্সিজম নামে এক অদৃশ্য (এবং এই ক্ষেত্রে সম্ভবতঃ অস্তিত্বহীন) শত্রুকে খতম করার ছলে। ব্রিটেনে পোষাকী রাজতন্ত্র আছে, সেটা সবাই জানে। কিন্তু ব্রিটেনের গণতান্ত্রিক চর্চা কি আমাদের কাছে শিখবার বিষয় নয়? কাজেই, কোন ব্রিটিশ নাগরিক যদি আমাদের দেশের পরিবারতন্ত্র নিয়ে সমালোচনা করে, সেটা খণ্ডন করতে গিয়ে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের খোঁটা দেওয়াটা নেহাতই একটা ছেলেমানুষী। তিনি লিখছেন ‘প্রথমে আমি ছোট একটা ধাক্কা খেলাম, তিনি বলেছেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে আধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছেন দুজন মহিলা, নিজেদের যোগ্যতায় নয়, মৃত ব্যক্তিদের ছায়ায়! (যে দেশে রাজা রাণী, রাজপুত্র, রাজকন্যা থাকে সেই দেশের মানুষ যখন এরকম কথা বলেন তখন আমি কৌতুক অনুভব করি – যাই হোক সেটা ভিন্ন কথা)।’ জিয়া হায়দার রহমানকে উদ্ধৃত করছে ডেইলি স্টার এভাবেঃ Haider, who came to Dhaka last month to attend the Hay Festival, was also critical of the dominance of Bangladeshi politics by two ladies who according to him “stand in the shadow of the dead” and rely on their dead relatives to legitimise their moral authority to rule the country. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এই কথা শুনে ধাক্কা খেলেন কেন, সেই প্রশ্ন তোলাই যায়। আমি কোন ধাক্কা খাই নি, বরং আমার মনের কথাটা বলার জন্য বক্তাকে মনে মনে ধন্যবাদ দিয়েছিলাম। জিয়া হায়দার রহমানকে এখানে সেক্সিস্ট বানিয়ে আক্রমণ করে, ব্রিটিশ বানিয়ে, রাজতন্ত্রের খোঁটা দিয়ে, নিজের জীবনের মহান নারীদের মহত্বের গল্প ফেঁদে, পাঠকের মনোযোগ নিয়ে যাওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ অন্য দিকে। পাঠকের মনে পরিবারতন্ত্রের প্রতি একটা সহানুভূতি তৈরী করা হয়েছে দেশপ্রেমের মিশেল দিয়ে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে ধাক্কা খেলেও, তার প্রভাব বলয়ের কথা মাথায় রাখলে, তিনি যে পরিবারতন্ত্রের দীর্ঘস্থায়িত্বের ঠিকাদারী নিয়েছেন, তেমন মনে হওয়াটা কি স্বাভাবিক নয়?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল ক্লাসরুমে একজন খুব ভালো শিক্ষক বলেই শুনেছি। ভালো শিক্ষকেরা কমিউনিকেশনে খুব ভালো হন, কারণ ছাত্র/শ্রোতার মনে ঢোকার রাস্তা তারা জানেন বা তৈরী করে নেন। কোন শব্দের কিভাবে প্রয়োগ করে, কোন বাক্যের পরে কোন বাক্য সাজিয়ে শ্রোতার মনে কি অর্থ তৈরী করা যাবে, সেটা মুহম্মদ জাফর ইকবাল ভালো করেই জানার কথা। জিয়া হায়দার রহমানের ‘মৃত চিন্তাভাবনার দেশ’ বক্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে ‘দুই মহিলা’ তত্ব হাজির করে তিনি কি বলতে চাইছেন আসলে, সেটা বেশ পরিষ্কার। আগের প্যারাগ্রাফে জিয়া হায়দার রহমানের বক্তব্যটি ইংরেজীতে পড়ুন – এখানে two ladies না বলে two persons বললে কি সেটা স্বাভাবিক শোনাত? বক্তার সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু কি এই দুইজনের লৈঙ্গিক পরিচয়, নাকি পরিবারের মৃত সদস্যদের কল্যাণে তাদের ক্ষমতা দখল করে রাখার প্রবণতা? এই দু’জন প্রধানমন্ত্রী পুরুষ হলে কথায় কথায় পরিবারতন্ত্র নিয়ে এখন যে একটা সমালোচনা হয়, সেটা চাপা পড়ে যেত, তেমনটাও মনে হয় না – কালকে যখন জয়-তারেক উপাখ্যান দেখতে হবে আমাদেরকে, তখনো আমরা এই পরিবারতন্ত্রের কথাই বলব। টু লেডিজ থেকে টু প্রিন্স, যাদের আসল যোগ্যতা তাদের মরা নানা/বাবা। এখানে আসলে জিয়া হায়দার রহমানের বক্তব্যকে টুইস্ট করে আলগা সমালোচনা করার একটা প্রসঙ্গ হিসেবেই তার ‘দুই নারী’ শব্দগুচ্ছটা বেছে নেওয়া হয়েছে। আমাদের নেত্রীরা যে ‘নারী’, তা একটি ফ্যাক্ট, সেইটা বললেই নারীবিদ্বেষী হয় না কেউ। জিয়া হায়দার রহমান two ladies বলেছিলেন, ‘দুই বেগম’ বলেননি। ‘দুই বেগম’, ‘ইকোনোমিস্ট’ ‘পশ্চিমা মিডিয়া’এসব শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করে তাকে প্রচ্ছন্নভাবে জামায়াত বা ইসলামপন্থীদের সাথে এসোসিয়েট করার চেষ্টা আছে এখানে। আগেই বলেছি, মুহম্মদ জাফর ইকবাল একজন খুব ভালো কমিউনিকেটর, ফলে তার লেখা প্রতিটি শব্দের প্রভাব সম্পর্কে তার জানা আছে বলেই ধারণা করি।
যে দিন মুহম্মদ জাফর ইকবালের এই লেখাটা আমি পড়েছি অনলাইনে, সেই একই দিনে আরেক পত্রিকায় পড়লাম, আওয়ামী লীগের নেতা মোহাম্মদ নাসিম বলছেন, শেখ হাসিনা হ্যাটট্রিক করবেন। মোহাম্মদ নাসিম ভাল করেই জানেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব মানেই শেখ হাসিনা বা তার ছেলে। অন্য দলেও একই অবস্থা। গত কয়েক দশকে দুইটা প্রধান দলের নিউক্লিয়াস হলেন দুইজন মহিলা। তারা আজীবন দলের নেতা। তাদের মরা বাপ/স্বামীই তাদের প্রধানতম যোগ্যতা। এটাই আমাদের ডেমোক্রেসি। তাদের পরে জয়-তারেক আজীবন দলের নেতা। এইটাই আমাদের গণতন্ত্র। যেহেতু ব্রিটেনে রাজতন্ত্র আছে, সেহেতু একজন ব্রিটিশ নাগরিকের আমাদের অগণতন্ত্র বা পরিবারতন্ত্র নিয়ে কথা বলবার অধিকার নাই, হোক না সে বাংলাদেশে জন্মানো কেউ। তারা কেউ মুখ খুললেও তাদেরকে নারীবিদ্বেষী বানিয়ে দাও, বিদেশী বানিয়ে দাও, অথবা নিদেনপক্ষে শ্রী নীরদচন্দ্র চৌধুরী বানিয়ে দাও, কেল্লা ফতে! বাংলাদেশে আরো দীর্ঘদিন পরিবারতন্ত্র জারি থাকবে আমাদের দেশের মানুষের কারণেই, এবং সেখানে আমাদের রোল মডেলরাও এর দায় এড়াতে পারবেন না।
জিয়া হায়দার রহমান ও সৈয়দ আবুল মকসুদ তাদের লেখায় দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা, আমাদের গণতন্ত্রের দূর্বলতা, আইনের শাসনের অভাব এবং সামাজিক ন্যায়বিচার নিয়ে বলেছেন। জিয়া হায়দার রহমান বলেন, তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ছবিতে কোনো আলো দেখতে পাচ্ছেন না, কারণ বর্তমান অবস্থা থেকে সংস্কার করে বেরিয়ে আসা তরুণ প্রজন্মের জন্য খুবই কঠিন হবে। তিনি শুধু শাসকশ্রেণি নয়, জনগণের দুর্বল ভূমিকার কথাও বলেছেন। এখানে আমার দ্বিমত করার সুযোগ খুবই কম। জনগণের ভূমিকা যদি শক্ত হতো, আশাবাদী হতে বাধা ছিল না, কিন্তু গোলাম আজমের জানাজায় লাখ মানুষ দেখে আমার আশা উবে যায়। সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেছেন যে, যতই বলা হোক জিডিপি বাড়বে, বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হবে, এশিয়ার টাইগার হবে ইত্যাদি ইত্যাদি—তাতে কী লাভ? রানা প্লাজায় হাজার মানুষ মেরে তৈরি পোশাক বা অন্য কোনো দ্রব্যের রপ্তানি বাড়ালেই বা কী লাভ, কার লাভ? বন্ধ্যা, পুরোনো সমাজব্যবস্থা যদি একই রকম থাকে, ঘণ্টায় ঘণ্টায় ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় নারী, প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চশিক্ষা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে, ন্যায়বিচার যদি মানুষ না পায়, আইনের শাসন বলে কিছু না থাকে, শাসকশ্রেণির ইচ্ছা জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা না থাকে, হাজার বছরের জাতীয় সংস্কৃতি যদি বিলীন হয়ে যায়, জাতিগত, ভাষাগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা যদি হারায় তাদের অধিকার—তাহলে কিসের মধ্যে আশার আলো দেখছি আমরা? এ দেখা মরীচিকা দেখা নয় তো? এ প্রশ্নের উত্তর আমাদের জানা দরকার। কারো যদি অসুখ করে, তাহলে তাকে ঔষধ খাওয়াতে হয়। ‘আপনার কিছুই হয়নি’ বলে মিথ্যে সান্ত্বনা দিলে কি রোগ ভাল হবে? জিয়া হায়দার রহমান বাংলাদেশকে বন্ধ্যা বলেন নি, কিম্বা বাংলার মানুষকেও মৃত বলেন নি। তিনি বন্ধ্যা বলেছেন বাংলাদেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে, অপরাজনীতিকে, পরিবারতন্ত্রকে – আর এটা দিবালোকের মতই সত্য। আশাবাদের বেসাতি করলেই যে সত্যকে চিনির প্রলেপ দিয়ে পরিবেশন করতে হয়, অথবা অপ্রিয় সত্যকে যা ইচ্ছা তাই ভাবে আক্রমণ করতে হয়, তা ঠিক নয়।
বিদেশে থাকা বাংলাদেশীদের থালাবাসন ধোয়া নিয়ে তিনি যে স্টেরিওটাইপিং করেছেন, তা আমাকে আশাহত করেছে। কথায় কথায় তিনি আঠারো বছর বিদেশে থাকার কথা বলেন, অথচ আজো যদি তিনি এ ধরণের শ্রমের অমর্যাদামূলক এবং বৈষম্যমূলক কথাবার্তা জনসমক্ষে বলেন, তাতে তার ভাবনার দৈন্যই কেবল প্রকাশ পায়। আমরা বোধহয় বীরের জাতি, থালাবাসন ধোয়া আমাদের সাজে না। আমরা কেবল ড্রোন আর রোবট বানাব, রান্না/থালাবাসন ধোয়া ওগুলো বুয়াদের কাজ, অথবা আমাদের স্ত্রীদের কাজ। মুহম্মদ জাফর ইকবালকে কি তাহলে প্রকারান্তরে সেক্সিস্ট আখ্যা দেওয়া যায়? জিয়া হায়দার রহমান মৃত চিন্তাভাবনার দেশ কেন বলেছিলেন তার কারণ অনুসন্ধান করতে আমাদেরকে খুব বেশিদূর যেতে হবে না। সৈয়দ আবুল মকসুদকে ধন্যবাদ তার সময়োপযোগী লেখাটির জন্য। তার কথাকে আক্ষরিক অর্থে নিয়ে, ভুল ব্যাখ্যা করে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত আবেগ ঢেলে দেশপ্রেমের আতিশয্য দেখাতে গিয়ে মুহম্মদ জাফর ইকবাল যে ভঙ্গিতে প্রতিপক্ষের সমালোচনা করলেন, তাতে লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি। কেউ গ্লাস অর্ধেক খালি কিংবা কেউ অর্ধেক ভরা বলতেই পারেন। মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাথে আমার দ্বিমত করার জায়গাটা কিন্তু তার আশাবাদ নিয়ে নয় মোটেও। দেশটা অনেক মৌলবাদ, ধর্মান্ধতা, সন্ত্রাস, দলবাজিতে যেমন ভরে আছে, তেমনি সেখানে আছে দেশাত্ববোধ, মানবতাবোধ, মুক্ত চিন্তা। বাংলাদেশ কিভাবে এগুচ্ছে, এবং কাদের পরিশ্রমে এগুচ্ছে, সেটা আমি জানি। অন্যকে ছোট না করেও বক্তব্য প্রকাশ করা যায়। মুহম্মদ জাফর ইকবাল কাউকে ব্যঙ্গ না করে, কাউকে ছোট না করে, কাউকে স্টেরিওটাইপিং না করে এবং অপযুক্তির আশ্রয় না নিয়ে যদি এই লেখাটা লিখতেন, তাহলে তার সাথে দ্বিমত করলেও এতটা আশাহত হতাম না।
গোপাল ভাঁড়ের অথবা অন্য কারো একটা কৌতুক মনে পড়ছে – সে উট বিক্রী করছে এক টাকায়, কিন্তু উটের রশির দাম ৯৯ টাকা। অবস্থাটা প্রায় সেরকমঃ ১০ টাকার দেশপ্রেম গেলাতে গিয়ে মুহম্মদ জাফর ইকবাল ৯০ টাকার অসত্য অপযুক্তি কূতর্ক ও বিদ্বেষ গেলাচ্ছেন তার পাঠককূলকে। এতে করে লাভের খাতায় কতটুকু অবশিষ্ট থাকবে তা এখনই বলার উপায় নেই, তবে সবশেষে কবিগুরুকে প্যারোডি করতেই হয়ঃ
হইতেও পারে, জিয়া হায়দার রহমানকে অপদস্থ করিলে আজিকার মতো একটা সুবিধার সুযোগ হইল, দেশপ্রেম বাঁচিল, মানুষের মনোবল চাঙ্গা হইল, রাজাকার ফাঁসির দড়িতে ঝুলিল– কিন্তু তাহাকে যদি দৃঢ় সত্যানুরাগ ও ন্যায়ানুরাগ শিখাইতে, সুস্থ বিতর্ক ও যুক্তির ব্যবহার শিখাইতে, অন্যকে সন্মান করিয়া দ্বিমত পোষণ করিতে শিখাইতে, তাহা হইলে সে যে চিরদিনের মতো মানুষ হইতে পারিত!
মন্তব্যগুলো পড়ে ভলোলাগলো ‘চলুক
পুরো লেখাটি নিয়ে আমার দুটো মতামত আছে,
প্রথমত, জিয়া হায়দার আসলে মোটেই বাংলাদেশকে মৃতদের দেশ বলেননি। ইংরেজী বাক্যটি এরকম ছিলঃ ‘Bangladesh is a land of dead ideas, where new concepts are throttled at birth and never get passed on because of social, political and class barriers.’” এই লাইনদুটো থেকে দেখা যায় তিনি প্রথমে মৃত চিন্তাভাবনার দেশ বললেও পরে নিজের অবস্থানটি পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে মৃত চিন্তাভাবনার মানে এই নয় যে এখানে বসে সবাই মৃত চিন্তা করে বরং যেকোন নতুন চিন্তাকে এখানে গলা টিপে হত্যা করা হয়,মেরে ফেলা হয়। সেক্ষেত্রে লেখকের জিয়া হায়দারকে একটু ডিফেন্ড করা আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়নি।
দ্বিতীয়ত, লেখক তার লেখাটি যে উদ্দেশ্যে লেখা তা থেকে নিজেই মনেহয় একটু দূরে সরে গিয়েছেন। আমার কেন জানি মনেহয় তিনি নিজেই জাফর ইকবাল স্যারকে কিছু কথা বলার মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত আক্রোশের পরিচয় দিয়েছেন। যেমনঃ
একারণটি কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হওয়ার মত হবে না বলেই আশা রাখি।
জাফর স্যারের “না, বাংলাদেশ মারা যায় নি” লেখাটি পড়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া লেখক জিয়া হায়দারের বক্তৃতা শুনলাম। আমার মনে হয়েছে স্যারের আলোচনা/সমালোচনা অসম্পূর্ণ এবং তা জিয়া হায়দারের বক্তব্যের বাক-স্বাধীনতা-সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ দিকটি তুলে ধরে নি। এর একটা কারণ হতে পারে যে, জাফর স্যার জিয়া হায়দারের বক্তৃতা সরাসরি শোনেন নি, অন্যের লেখা পড়ে এর আংশিক বিষয়বস্তু সম্পর্কে জেনেছেন। আবার এও হতে পারে যে তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাক-স্বাধীনতা/প্রচলিত ধ্যান-ধারনার বিরুদ্ধাচারন নিয়ে আলোচনা ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেছেন। এমন না যে, জিয়া হায়দার যা বলেছেন তার প্রত্যেকটি শব্দ স্থান, কাল, পাত্র নির্বিশেষে বাংলাদেশের জন্য ধ্রুব সত্য; তবে বক্তব্যের মূলভাব যথেষ্ট চিন্তা-জাগানিয়া।
জিয়া হায়দার আমাদের দেশে বাক-স্বাধীনতা নিয়ে বলেছেন, নতুন আইডিয়ার উদ্ভাবন আর এর প্রচারের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন। উনি যা বলেছেন তার মর্মার্থ এই যে আমাদের সামাজিক অবস্থা, রাজনৈতিক আর সরকারী বিধি-নিষেধ সাধারণ মানুষকে নতুন ভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে বা তার প্রকাশ/প্রচার করতে উৎসাহ দেয় না। এখানে আইডিয়া আসে মুষ্টিমেয় কিছু ক্ষমতাশালী লোকদের কাছ থেকে; বাকীদের ভূমিকা এখানে কেবল তা প্রশ্ন না করে মেনে নেয়ার জন্য, প্রতিবাদ করার জন্য বা গঠনমূলক সমালোচনার জন্য নয়। বাংলাদেশে স্বল্পকালীন অবস্থানে ওনার যা মনে হয়েছে তা তিনি খোলাখুলি বলেছেন এবং নতুন আইডিয়ার প্রচার ও প্রসারে বৈরী পরিবেশের কারণেই তিনি বর্তমানের বাংলাদেশকে রূপকার্থে মৃতদের দেশ বা মৃত আইডিয়ার দেশ বলেছেন।
অধ্যাপক ইকবালের সমালোচনার প্রথম অংশ আমার কাছে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছে। জিয়া হায়দারের বক্তৃতা শুনে আমার মনে হয় নি যে উনি আমাদের দুই নেত্রীকে “মহিলা” বলে অসম্মান করেছেন (বিভিন্ন সময়ে ওনাদের বক্তব্য আর কর্মকাণ্ড যথেষ্ট সম্মানজনক, আমাদের তা মনে রাখতে হবে। খালেদা জিয়া যখন কালো টাকা সাদা করতে ছোটেন, আর শেখ হাসিনা যখন আবুল হোসেন কে দেশপ্রেমিক হিসাবে সার্টিফিকেট দেন তখন আমার মনে কি ভাবের উদয় হয় তা এখন গুপ্তই থাক)। উনি তাদের “ladies” বা ভদ্রমহিলা বলেছেন যা আমার মতে হেয়-কারী নয়। আমি উত্তর আমেরিকায় পুরুষ কংগ্রেস-ম্যানদের “gentleman” হিসাবে সম্বোধন করতে শুনেছি। জাফর স্যার লিখেছেন যে “তিনি (জিয়া হায়দার) বলেছেন বাংলাদেশের রাজনীতিতে আধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছেন দুজন (ভদ্র)মহিলা, নিজেদের যোগ্যতায় নয়, মৃত ব্যক্তিদের ছায়ায় (যে দেশে রাজা রাণী, রাজপুত্র, রাজকন্যা থাকে সেই দেশের মানুষ যখন এরকম কথা বলেন তখন আমি কৌতুক অনুভব করি – যাই হোক সেটা ভিন্ন কথা)!” জিয়া হায়দার এখানে ভুল কি বলেছেন বুঝতে পারছি না! আসলে আমি জিয়া হায়দার না, জাফর স্যারের কথায় কৌতুক অনুভব করছি। ইউকে তে যে রাজপরিবারের ক্ষমতা কতটুকু আর সেখানে প্রধানমন্ত্রী হতে মৃত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর কন্যা বা স্ত্রী হওয়া যে বিশেষ যোগ্যতা বলে বিবেচিত হয় না সেটা জাফর স্যার নিশ্চয় জানেন। আর উনি কি করে নিশ্চিত হলেন যে জিয়া হায়দার রাজতন্ত্রের একনিষ্ঠ সমর্থক? জাফর স্যার তাঁর লেখায় জিয়া হায়দারের নামের আগে বেশ কয়েকবার ‘বিখ্যাত’ বিশেষণ ব্যবহার করেছেন যা শ্লেষাত্মক ও অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়েছে। আরও মনে হয়েছে (আশা করছি আমার ধারনা ভুল) যে, উনি বিদেশে ছুটকো কাজ করাকে তাঁর লেখায় ছোট করেছেন। একসময়ের খন্ডকালীন গার্বেজ-কালেক্টর হিসাবে আমার তা ভাল লাগার কথা না। স্যার কে বলতে চাই বিদেশে আমাদের ছেলেমেয়েরা থালা-বাসন মাজার ফাঁকে ফাঁকে সত্যিই গর্ব করার মতো আরও অনেক কিছুই করে। আর অন্যকিছু না করলেও তাদের থালা-বাসন মাজার কাজ -লীগ আর -দলের ছেলেদের সন্ত্রাস আর চাঁদাবাজির চেয়ে অনেক বেশী সম্মানজনক।
জিয়া হায়দার বাংলাদেশকে দেখেছেন খুবই অল্প সময়ের জন্য। এই অল্প সময়ে এখানকার মানুষদের সংগ্রামী জীবন, অন্যের বিপদে পাশে দাঁড়ানোর প্রবণতা বা বৈরী পরিবেশে টিকে থাকার জন্য তাদের উদ্ভাবনী শক্তির ক্ষমতা সম্পর্কে তিনি সম্যক অবহিত নন বলেই মনে হয়েছে। এই দিকগুলো আলোচনায় না এনে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ঋণাত্মক মন্তব্য করাটা অনভিজ্ঞ লোকের অতিকথনের পর্যায়েই পড়ে। জাফর স্যার তাঁর লেখার দ্বিতীয় অংশে এর যথার্থ জবাব দিয়েছেন; এক্ষেত্রে আমি তার সাথে একমত। অন্যদিকে আমার মতে বাক-স্বাধীনতা নিয়ে লেখক জিয়া হায়দারের বক্তব্য যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে বিবেচনার দাবী রাখে।
@নাফিজ আরেফিন,
আপনি একেবারে আসল কথাটা তুলে এনেছেন। এই যে ভালোর শুধু খারাপ অংশটিকে খারাপ বললে লোকে আপনার দিকে সন্দেহের চোখে তাকায়, এই অসহিষ্ণুতাই আমাদের বড় সমস্যা। আমি চেষ্টা করেছিলাম মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখার কিছু খারাপ দিক তুলে ধরতে – তার মূল বক্তব্যকে খণ্ডন করি নি। বাংলাদেশ নিয়ে তার যে আশাবাদ, তা নিয়ে আমার কোন সমালোচনা ছিল না। লেখার শুরুতে সেটা পরিস্কার করে বলে দিয়েছিলাম। আবারো বলি, বাংলাদেশ নিয়ে আমি নিজে অত্যন্ত আশাবাদী, তবে কেউ আমার/আমাদের ন্যায্য সমালোচনা করলে শুধু দেশপ্রেমের খাতিরে বা আশা-জাগানিয়া স্টেটমেন্ট দেওয়ার খাতিরে অথবা অযৌক্তিক অযুহাতে (যেমন, সমালোচক বিদেশী, তার দেশে রাজতন্ত্র আছে, ইত্যাদি) সেই সমালোচনাকে আমি বাতিলের খাতায় ফেলে দিতে রাজী নই।
অনেকদিন পরে একটা দীর্ঘ জোরালো তর্ক হলো। আমার মতো যারা শুধুই পাঠক, আমরা খুব এনজয় করলাম/করছি।
কোন নির্দিষ্ট বিষয়ভিত্তিক তর্ক নয়, আমার মনে হচ্ছে, তর্ক ইটসেল্ফ আমাদের সমাজে একটা ইন্টারেস্টিং দিকে মোড় নিচ্ছে। আমরা বেশির ভাগই স্রেফ জেতার জন্য তর্ক করছি বা সমালোচনা করছি। কুযুক্তি দিয়ে, আলোচনাকে অন্যদিকে নিয়ে গিয়ে, প্রতিপক্ষকে আক্রমন করে, টিজ করে, যেকোনভাবে আমরা শুধু জিততে চাই। আলোচনার মাধ্যমে একটা বেটার ডিসিশনে পৌঁছা যেন আমাদের লক্ষ্য নয় আর। আমরা শুধুই চাই নিজের মতটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে।
আজকালকার সমালোচনার বা তর্কাতর্কির একটা কমন বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিপক্ষের বক্তব্যের একটা অংশ (যেটা আমার পছন্দ হয়নি) তুলে ধরে, বাকী সমস্ত কথাকে অগ্রাহ্য করে, ঐ অংশটাকেই বক্তব্যে সারাংশ জ্ঞান করে সেটার বিশাল সমালোচনা করে ফেলা। আমরা অনেক সময়ই লক্ষ্যই রাখি না যে যেকথাটার এত সমালোচনা করছি সেটাই বক্তার মূল বক্তব্য কি না। তর্কে জেতার নেশায় পেয়েছে সবাইকে। মুহম্মদ জাফর ইকবালের জিয়া হায়দারকে সমালোচনা কিংবা আশরাফুল আলমের জাফর ইকবালকে সমালোচনা কিংবা মন্তব্যে অনেকের আশরাফুল আলমকে সমালোচনা সবটাতেই ঐ নেশার ঝাঁজ কি একটু একটু পাওয়া যাচ্ছে? কি জানি, মনে হয় আমিই ভুল করছি।
তবে রবীন্দ্রনাথ ভুল করেন নি। তিনি কিভাবে টের পেয়েছিলেন জানি না। তিনি বলেছিলেন, “যুক্তি পেয়েছি বলে বিশ্বাস করি, সেটা অল্প ক্ষেত্রেই; বিশ্বাস করি বলেই যুক্তি জুটিয়ে আনি, সেইটেই অনেক ক্ষেত্রে” (-স্বরাজসাধন, কালান্তর)। বস্, আপনি বসই রয়ে গেলেন, বস্। কিভাবে পারলেন এত সোজাসুজি এই কথাটা বলতে! অত আগে!!
চিন্তা ভাবনা মৃত না জীবিত জানি না। তবে বাংলাদেশে চিন্তা ভাবনার কিছু নতুন ট্রেন্ড এই বেলা নোট ডাউন করে রাখি-
১। আশাবাদী হতেই হবে। যা কিছুই ঘটুক আশা রাখতেই হবে। একশ তলা বিল্ডিং এর ছাদ থেকে মুক্তভাবে পড়ন্ত অবস্থায় পঞ্চাশ তলা ক্রস করার সময়ও আশাবাদী হতে হবে- এখনো তো মরি নাই.. এখনো তো বেঁচে আছি।
২। দেশপ্রেম মাস্ট বি ব্লাইন্ড। বাংলাদেশের নর্দমার ময়লাকেও আমেরিকার নর্দমার ময়লার চেয়ে পরিস্কার ময়লা মনে করতে হবে।
৩। নিরপেক্ষতা আবার কি! যত্তসব ভন্ডামী! ভালো হলো ভালো, খারাপ হলো খারাপ, ব্যাস। (এহেম.. ভালোর শুধু খারাপ অংশটাকেও খারাপ বলা যায়, আবার খারাপের শুধু ভালো অংশটাকেও ভালো বলা যেতে পারে.. এহেম.. যাই হোক এসব ভন্ডামী ধাঁচের কথা আমরা শুনবো না।)
যে লোক স্পষ্টভাবে ঘোষনা করে, “ঠিক কি কারন জানিনা জ্ঞানী গুনী বিচক্ষন যুক্তিবাদী নিরপেক্ষ বুদ্ধিজীবি থেকে কমবয়সী আবেগপ্রবন যুক্তিহীন কিন্তু তীব্রভাবে দেশপ্রেমিক তরুনদের আমি বেশী বিশ্বাস করি, তাদের উপর আমি অনেক বেশী ভরসা করি”, সেই লোকই হবে বাংলার মুক্তচিন্তকদের আদর্শপুরুষ; যুক্তিবিহীন আবেগই মুক্তমনের প্রধান অবলম্বন।
রাজনীতি বিষয়ে জাফর ইকবালের প্রতিটি লেখার, প্রায় প্রতিটি প্যারা অযুক্তিতে পরিপূর্ন, আবেগে টইটুম্বুর। আর এই আবেগের সুগার কোটেড পিলে অযুক্তি গিলে যাচ্ছে আমাদের বিজ্ঞানমনষ্ক(?) তরুনদল। এই আলোচিত লেখায় সবচেয়ে ‘আবেগিত’ বিষয় যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে তার কথাটাই দেখা যাক। “পৃথিবীর বেশীরভাগ দেশ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করার জন্যে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সাহায্য নেয়। আমাদের দেশে নিজেদের ট্রাইবুনাল তৈরী করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছি, সেটি কী সারা পৃথিবীর জন্যে ভবিষ্যতের একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে না?”।
আহ কি দারুন! মহাযুদ্ধে বিজয়ী আমেরিকা, রাশিয়া যেটা পারে নি, রুয়ান্ডা, ক্যাম্বোডিয়া, যুগোস্লাভিয়া যেটা পারে নি, লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওন, সুদান যেটা পারে নি, সেই নিজ দেশে যুদ্ধাপরাধের বিচার নিজে নিজে একাই করে ফেলা, সেটা বাংলাদেশ প্রথম নিজে নিজে করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে!
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানীতে লাইপজিগে যুদ্ধাপরাধের বিচার করার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পর থেকেই এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে যুদ্ধের একপক্ষের দেশের ডমেস্টিক কোর্টে আন্তজাতিক যুদ্ধাপরাধের বিচার করার চেষ্টা সফল হওয়া কঠিন। একারনেই নুরেমবার্গ হতে আফ্রিকার লাইবেরীয়া-সিয়েরা লিওন পর্যন্ত প্রতিটি যুদ্ধাপরাধের বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছে আর্ণ্তজাতিক ছত্রছায়ায়। নুরেমবার্গের পরে প্রতিটি বিচারে হয়েছে হয় জাতিসংঘ কিংবা হেগের আইসিসি’র তত্বাবধানে। এটা কোনো দেশের বিচার করার ক্ষমতার প্রশ্ন নয় এটা একটা মৌলিক উপলদ্ধির বিষয় যে যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহনকারী কোন পক্ষ একা একাই সেই যুদ্ধের আচরনের বিচার করা সবসময়েই প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে।
জাফর ইকবাল যুদ্ধে বিজয়ী পক্ষ নিজে নিজেই বিজিতের বিচার করে ফেলবে কোন তৃতীয় পক্ষের তত্বাবধান ছাড়াই, এটাকেই ভবিষৎ পৃথিবীর জন্যে চমৎকার উদাহরন তুলে ধরেছেন। আর আবেগকোটেড পিলে সেটা গিলে ফেলাটাও তাৎক্ষনিক!
আমার দেয়া লিংকগুলিতে আমি এই গনতন্ত্র বিরোধী, মুক্তচিন্তাবিদ্বেষী মহাপুরুষের রাজনীতি নিয়ে লেখাগুলোর সমালোচনা করেছি। কারো যদি সেই লেখাগুলোর কোনো পয়েন্টে আপত্তি থাকে তবে সেটা স্পেসিফিক ভাবে উল্লেখ করলে আমি ব্যাখা করবো নাহলে নিজের ভুল মেনে নেবো। যুক্তিপূর্ন পয়েন্ট ছাড়া ‘আবেগী মুক্তমনা’দের আবেগাহত প্রতিবাদগুলির কোন মূল্য দেখছি না।
@সফিক,
আবেগাহত মুক্তমনাদের প্রতিবাদ আপনার কাছে মূল্যহীন হবে সেটা অপ্রত্যাশিত নয়। আপনার লিঙ্কগুলোতে কী লিখেছেন সেটা না দেখিয়ে বরং সেখান থেকে কিছু নমুনা এখানে পেশ করুন, আমরা দেখি জাফর ইকবাল কেমন গনতন্ত্র বিরোধী, মুক্তচিন্তাবিদ্বেষী মানুষ। আর লিখতে লিখতে এই লেখাটাও পড়ে নিতে পারেন-
নিরপেক্ষদের ইতিকথা-
@সফিক,
এতোটা পরিহাস করার মতো কিছু এখানে নেই। ভাষা আন্দোলনের মতো একটা সফল অধ্যায় আমাদের ইতিহাসে আছে, যাদের উদাহরণ এখানে দিলেন তাদের নেই! ওরা যা পারেনি তা আমাদের পারা উচিৎ নয় এমন ভাবনাটিইবা আপনার মস্তিষ্কে এলো কি করে ভাবছি!
@কেশব কুমার অধিকারী,আমি আপনার মন্তব্যের আগামাথা বুঝলাম না। আপনি কি মনে করেন ভাষা আন্দোলন করা, ভাষার জন্যে রক্ত দেয়া, এই ইতিহাস কেবল বাংগালী জাতিরই আছে? পৃথিবী অনেক জাতিরই রক্তাক্ত ভাষা সংগ্রামের ইতিহাস আছে, আমাদের দেশের চেয়ে শত বছর আগেই। ভাষা হলো জাতীয়তাবোধের অন্যতম মূল নিয়ামক। আধুনিক জাতীয়তাবোধ নিয়ে আন্দোলন, সংগ্রামের ইতিহাস পৃথিবীতে কয়েকশত বছর পুরনো। আপনার কেমন করে ধারনা হলো যে আমাদের মতো নবীন জাতিয়তাবোধপ্রাপ্ত একটি দেশেরই কেবল মাত্র ভাষা সংগ্রামের ইতিহাস আছে। আমার নীচের লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন সময় হলে।
http://alalodulal.org/2014/02/10/the-glorious-and-bloody-history-of-tamil-language-movement/
@সফিক,
না বুঝবার কি আছে? আপনি যাদের উদাহরণ দিয়েছেন তাদের ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস নেই….! আপনার কেনো মনে হলো যে আমরা আমাদের যুদ্ধাপরাধের বিচার নিজেরা করতে পারবো না?
লেখাটি একটা বিতর্ক ধরনের। আমার কাছে বংকিমের কথা গুলাকে যুক্তিগত মনে হয়েছে।
সমালোচনার উর্ধে কেউ-ই নয়। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল সমালোচনার উর্ধে সেটা কেউ বলেনিও। কিন্তু এখানে তাকে “মহানবী হযরত মুহাম্মদ জাফর ইকবাল” বলার অর্থ কেউ চরম বিদ্বেষ প্রসন করে এই মানুষটির প্রতি। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিমুখ, প্রায় উদাসিন একটা কিশোর প্রজন্মকে জাগাতে পেরেছেন। তিনি কিশোরদের জন্য লিখেন। তার লেখার উদ্দেশ্য শিশু-কিশোরদের বিজ্ঞানমনস্ক করে গড়ে তোলা। তাদের একটা সুস্থ শৈশব দেয়ার জন্য তিনি অবিরাম কলাম চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই লেখক একেবার “মহানবী হযরত” কেমন করে হয়ে গেলেন? এ জন্য যে মাহমুদুর রহমানের মত সম্পাদকের মুক্তির দাবীকৃত সম্পাদকদের বিবৃতিকে তিনি নিন্দা করেছেন বলে? “একমুখি” যুদ্ধাপরাধ বিচারকে তিনি জোরকন্ঠে সমর্থন করেন বলে? তিনি আওয়ামী লীগের প্রতি কিছুটা দুর্বল বলে?
ভদ্রলোক এতটাই জ্বলুনি অনুভব করছেন যে মুক্তমনা সাইডটিকেও অন্ধের মত “মুক্তমনার পবিত্র মঞ্চ” বলে মুক্তমাকে একটা ফ্যাসিস শক্তি বলতে ছাড়েননি! কারণ বলা হয়েছে জাফর ইকবালের সমালোচনা করে লেখা লিখে মুক্তমনা কেমন করে ব্লাসফেমি সহ্য করছে! আসলে মুক্তমনা ব্লগ সাইটটি এখন আর “প্রকৃত সহি মুক্তমনা” বলতে এক বিশেষ প্রজাতীকে ধারন করতে পারছে না!
@সুষুপ্ত পাঠক,
আমি আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত – সফিক যে লেখাগুলোর লিঙ্ক দিয়েছেন এবং যে মতামত ব্যক্ত হয়েছে সেই লেখাগুলিতে, তার সাথে আমি একমত নই। তার মন্তব্যে ব্যক্তি মুহম্মদ জাফর ইকবালের প্রতি যে কটাক্ষ আছে, তা অগ্রহনযোগ্য। মহানবী হযরত, মুক্তমনার পবিত্র মঞ্চ, ব্ল্যাসফেমী- এই শব্দগুলির প্রতি তীব্র আপত্তি জানাচ্ছি। আমার সমালোচনা মুহম্মদ জাফর ইকবালের শুধুমাত্র একটি লেখার কয়েকটি বিষয় নিয়ে। আমার আপত্তি তার লেখায় প্রকাশিত আশাবাদ কিম্বা আমাদের সম্পর্কে বিদেশীদের ঢালাও মন্তব্যের যে বিরোধীতা, তা নিয়ে নয়। তার সমালোচনার ধরণ নিয়ে, কিম্বা সেখানে ব্যবহৃত কিছু যুক্তি বা তুলনা নিয়ে – যেগুলো না থাকলেও লেখাটির মূল বক্তব্য একইরকম ভাবে প্রকাশ পেত। মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এই দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে বিমুখ, প্রায় উদাসীন একটা প্রজন্মকে জাগাতে পেরেছেন, এবং সেজন্য আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
@আশরাফুল আলম,
:thanks:
:good: :clap :clap
মুহাম্মদ জাফর ইকবালের অনেক কিছু আমিও ভাল পাইনা বা দ্বিমত পোষণ করি তার ভাবনার সাথে। পরীক্ষাপত্র ফাঁস নিয়ে সরকারের সমালোচনা করার কারণে একদল মানুষ তার সমালোচনা করতে গিয়ে শুধু রাজাকার বলার বাকি রেখেছে, আরেকদল তাকে নাস্তিক প্রমাণে সদা ব্যস্ত। তাকে কথা বলতে হয় অনেক আগ-পিছ ভেবে। তিনি সমালোচনার উর্ধে নয় কিন্তু তার অবদানকে খাটো দেখার কোন অবকাশ নেই।
আজ বিডিনিউজ২৪ পত্রিকায় প্রায় একই ধরনের অভিমত জানিয়ে একটি লেখা লিখেছেন সাগুফতা শারমীন তানিয়া।
জাফর ইকবাল, জিয়া হায়দার রহমান ও মৃত্যু সমাচার (বিডিনিউজ২৪ ডট কম, ২৫ December ২০১৪)
উপরের মন্তব্যে তৃতীয় প্যারাগ্রাফের শেষের দিকে ‘ষড়যন্ত্র’ এর জায়গায় ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ হবে। সবাইকে ধন্যবাদ।
@আশরাফুল আলম,
আপনি যে তথ্য উপাত্ত্ব গুলো দিলেন তা কিন্তু ঠিক জবাব বলে মানতে পারছিনা আশরাফুল আলম। উপড়ে যে কথা গুলো বরেছেন, তাতে আমার মনে হলো দেশের দুই নেত্রীকে নিয়েই যতো সমস্যা! কেনো এই দুই নেত্রী এখনো টিকে আছে দুটি পরিবারের প্রতীক হয়ে! অধ্যাপক জাফর ডেইলী স্টারের এই কথাতে ধাক্কা খেয়েছেন বলে আমার মনে হয়নি। আমার মনে হচ্ছে, দেশের সম্ভাবনাকে এক ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে এক আজন্ম বিরাণভূমি বলাতে তিনি জনাব সৈয়দ আবুল মকসুদের কথায় হতাশ হয়েছেন। আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই দুই নেত্রীর আবির্ভাব এবং সহাবস্থান যে অবস্যম্ভাবী এবিষয়ে আশাকরি কারোরই কোন দ্বিমত নেই। আমি বিষয়টিকে নিছক পরিবারতন্ত্র বলতে নারাজ। আমি মনে করি এর কারণ (অর্থাৎ এই দুই নেত্রীর নেতৃত্ত্ব) যথাযথ বিকল্পের অনুপস্থিতি। আমি আরোও একটা বিষয় এখানে পরিষ্কার করতে চাই এই বলে যে এই দুই নেত্রীকে পরষ্পর সমান গুরুত্ত্বের সাথে বিবেচনা করিনা। আরোও একটি বিষয় এইযে, আমাদের জাতীয় রাজনৈতিক বলয়ে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি দুটি বৃহৎ ও গোটা দেশ ব্যাপী প্রভাববিস্তারকারী শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি। এ দুটি দলের স্বাভাবিক গনতান্ত্রিকতার ধরারাবাহিকতার উপড়েই আপাততঃ দেশের দুঃখ সুখের ব্যারোমিটার উঠা নামা করে। দল দুটির স্বাভাবিক অগ্রগতি অনেকটা দেশের অগ্রগতির নিয়ামক। সেই কারণে দল দুটির অখন্ডতা ও অগ্রযাত্রার জন্যে এই দুই নেত্রীর বিকল্প এখনো গড়ে উঠেনি। আর তা যে গড়ে উঠবেনা, সে কি হলপ করে বলা সম্ভব? সে যদি বলা সম্ভব না হয় তাহলে দেশ চিন্তা-ভাবনার দিক থেকে মৃত বা বন্ধ্যা হয় কি করে? আমেরিকার সিনিয়র বুশের স্থলাভিসিক্ত জুনিয়র বুশের ক্ষেত্রে কি সেটা পরিবারতন্ত্র মনে হয়েছিলো?
“আমরা অনেকেই হরহামেশা দুই নারীর ব্যাপারে এই কথা বলি, এবং তা সত্যও বটে – তাদের চেয়ে যোগ্য রাজনীতিবিদ এই দেশে গত দুই/আড়াই দশকে আর পয়দা হয় নি, সে কথা আমি বিশ্বাস করি না।” দেখুন মেধা আর সংগঠক তো এক জিনিষ না, তাই ……………বলুন না কোন সে যোগ্য জন যিনি বিগত ৯/১১ -র ধকল সামলিয়ে দল এবং দেশ দুটিকেই আজ পর্যন্ত টেনে আনতে সক্ষম ছিলেন?
চিন্তা-ভাবনায় বন্ধ্যা হয়ে গেলো দেশ..(?)..! অথচ এদেশেই টু-মাইনাস ফর্মূলা উদ্ভাবিত হয়, আবার ওয়ান মাইনাস ফর্মূলা বাস্তবায়নে কতোনা ঘটা! যদিও এসব নিষ্ফলা ভাবনা ছিলো, কিন্তু এগুলো? যেখানে পাটের জীনমের জট খুলে যায়, ক্ষুদ্র ঋন ব্যবস্থার রপ্তানী হয, একেবারে ক্ষমতার বলয় থেকে শুরু করে ঐ যে মটর মেকানিক, কিংবা অভিনব ভিক্ষাবৃত্তি কোথায় না আমাদের সৃজনশীলতা আছে বলুন! আমাদের এই সমস্ত সৃজনীকে অবজ্ঞা করি বলেই মাঝে মাঝে ইংরেজী মোড়কে বিদেশী ছবক গুলোকে দারুণ উপযুক্ত আর ঝকঝকে মূল্যবান মনে হয়।
উপড়ে জনাব মাজহারকে এ কথা গুলো বলেছিলেন, “‘বাংলাদেশ মৃতদের দেশ’ কিংবা ‘মৃত চিন্তাভাবনার দেশ’ কোনটাই এভাবে বলা হয় নি, বলা হয়েছে যে, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে মৃত চিন্তাভাবনার দেশ, যেখানে নতুন কোনো ধারণার প্রকাশ ঘটা মাত্রই তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও শ্রেণির বাধায় নতুন চিন্তা-চেতনা, ধ্যানধারণা বিকশিত হতে পারে না।’ ইংরেজী বাক্যটি এরকম ছিলঃ ‘Bangladesh is a land of dead ideas, where new concepts are throttled at birth and never get passed on because of social, political and class barriers.’ অর্থাত নতুন ভাবনা এখানে জন্ম নিচ্ছে, কিন্তু সেগুলো হালে পানি পাচ্ছে না বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও শ্রেণির বাধায়।”
তাই যদি সত্যি হবে তো টু-মাইনাস ফর্মূলার পত্তন হলো কিকরে? আর সে ফর্মূলা হালে পানি পেলেই বুঝি আমাদের জাতিটা চিন্তায় চেতনায় সৃজনশীল হয়ে উঠতো! মৃত চিন্তার দেশ হতো না তাই না? শাহবাগ জেগেছিলো কি করে? শুধু নিজে জাগেনি, দেশ সহ গোটা পৃথিবীইতো নাড়িয়ে দিয়েছিলো! আজইতো বোধ হয় দেখলাম আমাদের চাঁদপুরের মেয়ে মঙ্গলে পাড়ি জমাতে যাচ্ছে! আপনার কি এখনো মনে হচ্ছে সেয়দ আবুল মকসুদ কিংবা জিয়া হায়দার ঠিক বলেছেন? জাফর স্যারের আর বাকী যেসব কথায় আপনি আপত্তি তুলেছেন তা আমি বিবেচনায় নেবোনা এই কারণে যে, সৈয়দ আবুল মকসুদের লেখায় যে প্রতিক্রিয়া আমার হয়েছিলো অধ্যাপক জাফরের মাধ্যমে তা অত্যন্ত রুচিশীল ও মার্জিত ভাবেই উপস্থাপিত হয়েছে বলে আমি মনে করি।
@কেশব কুমার অধিকারী, অসাধারণ বলেছেন। :guru:
জিয়া হায়দার কিংবা প্রথম আলোর বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবি মকসুদ সাহেবদের কাছে শাহবাগে তরুণ প্রজন্মের জাগরণ যে মৃত চিন্তা-ভাবনার ফসল হিসেবেই ধরা দিবে, এটা নিয়ে সন্দেহের কোন অবকাশ নাই।
মুক্তিযুদ্ধ হলো মৃত ইস্যু আর দেশের উন্নয়নের জোয়ারের কথা চিন্তা না করে মুক্তিযুদ্ধের মত মৃত ইস্যুকে কবর থেকে তুলে আনা মানে দেশের অগ্রগতিকে আটকানোর চেষ্ঠা। যেখানে সময় এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ফেতনা ভুলে “পাকিস্থান-বাংলাদেশ ভাই ভাই” মেনে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। সেখানে এই দেশের তরুণ প্রজন্ম কিনা এখনো সেই মুক্তিযুদ্ধ/যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মত মৃত বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে! এদের চিন্তা-ভাবনার আসলেই কোন অগ্রগতি হয় নাই, অর্থাৎ এদের চিন্তা-ভাবনা প্র্যাকটিক্যালি ডেড। এই বাঙ্গাল তরুণ প্রজন্ম নিয়ে কোনও আশা নাই। 😥
@তারিক,
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। তবে প্লিজ, এই ইস্যুতে ‘মুক্তিযুদ্ধ / যুদ্ধাপরাধীদের বিচার মৃত ইস্যু’ অথবা “পাকিস্তান-বাংলাদেশ ভাই ভাই” এগুলো খামাখা টেনে আনবেন না – এগুলো অপ্রাসঙ্গিক। সব দড়িকেই সাপ মনে করার দরকার নেই, আর জিয়া হায়দার রহমান ডেভিড বার্গম্যানের কোন আত্নীয়ও নন। প্রসঙ্গভিত্তিক আলাপ করুন। আলাপ হোক, বিতর্ক হোক, না হলে আমাদের ভুল ভাঙবে না, জাতি হিসেবে আত্নশুদ্ধিও হবে না। সবকিছুতেই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব খাটে না।
@আশরাফুল আলম,
আমার প্রতিমন্তব্যটি স্পেসিফিক একটা বিষয়ে ছিল, আপনার সম্পূর্ণ লেখা নিয়ে নয়। আপনার সুচিন্তিত লেখার ব্যাপারে আমি কোন মন্তব্য করি নাই, কারণ এই লেখার প্রত্যেক লাইনে লাইনে আমার দ্বিমত আছে। আর সেটা প্রকাশ করতে হলে আমাকে আরেকটা বালছাল লিখতে হবে। সেটা লেখা এখন সম্ভব না।
জিয়া হায়দার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বক্তব্য দিয়েছে সেটার প্রতিক্রিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আসা উচিত ছিল, কিন্তু প্রতিক্রিয়া আসছে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের কাছ থেকে… এখানেই সমস্যাটা হইছে।
আরেকটা কথা ‘আই হেইট পলিটিক্স’ প্রজন্মকে আরও হতাশায় ডুবাতে এবং দেশের দুই প্রধান নারী নেত্রীত্বের ব্যাপারে বিদ্বেষী করে তুলতে জিয়া হায়দারের বক্তব্যটি খুব কার্যকরী, আর প্রথম আলো গোষ্ঠী তাদের পারপাস সার্ভ করা ব্যক্তিদের চিনতে ভুল করে না।
ধন্যবাদ। 🙂
@তারিক,
দেশের দুই প্রধান নারী নেতৃত্বের ব্যাপারে বিদ্বেষী করে তোলা যাবে না, তাদের হাতকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে, তাই তো? এটা যার যার ভাবনা ও দেখার উপরে নির্ভর করে।
জিয়া হায়দার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটার প্রতিক্রিয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আসা উচিত ছিল, আমার এমন মনে হয় না। প্রতিক্রিয়া আপনার-আমার কাছ থেকেও আসতে পারত। মুহম্মদ জাফর ইকবাল প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন, তাই ধন্যবাদ তার প্রাপ্য। কিন্তু এই প্রতিক্রিয়া সমালোচকের প্রতি কোন বিদ্বেষ প্রকাশ না করে অথবা অযথা কিছু সাধারণীকরণ না করেও করা যেত। বাংলাদেশ নিয়ে মুহম্মদ জাফর ইকবালের যে আশাবাদ, তাতে আমিও একমত। আমিও বাংলাদেশ নিয়ে আশাবাদী, তবে কেউ আমার/আমাদের ন্যায্য সমালোচনা করলে শুধু দেশপ্রেমের খাতিরে বা আশা-জাগানিয়া স্টেটমেন্ট দেওয়ার খাতিরে অথবা অযৌক্তিক অযুহাতে (যেমন, সমালোচক বিদেশী, তার দেশে রাজতন্ত্র আছে, ইত্যাদি) সেই সমালোচনাকে আমি বাতিলের খাতায় ফেলে দিতে রাজী নই।
আমার লেখার ব্যাপারে দ্বিমত থাকতেই পারে – সময় করে লিখুন। আলোচনা হওয়া দরকার। একটা ছোট্ট জিনিস বলি, আশা করি ভুল বুঝবেন নাঃ ‘প্রত্যেক লাইনে লাইনে’ নয়, লিখুন ‘লাইনে লাইনে’ অথবা ‘প্রত্যেক লাইনে’। ‘বালছাল’ শব্দটার ব্যবহার করাটাও মনে হয় ঠিক হল না। ধন্যবাদ।
@আশরাফুল আলম,
ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য একটা বিশাল ধন্যবাদ। এখন থেকে “লাইনে লাইনে” কিংবা “প্রত্যেক লাইনে” দ্বিমত জানাবো। আমি এখনও শুধুমাত্র নাস্তিক তাই বালছাল লেখা লেখি, প্রকৃত মুক্তমনা হয়ে উঠতে পারলে নিশ্চয়ই উচ্চমার্গীয় লেখা লেখতে পারবো।
আপনার শেষ মন্তব্যের বাকি অংশ নিয়ে আমার আর বিশেষ কিছু বলার নাই। কারণ মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের যে বক্তব্য আপনার কাছে সরলীকরণ মনে হয়েছে, আমার কাছে কিন্তু সেই বক্তব্যই যথেষ্ঠ যৌক্তিক মনে হয়েছে। এটাও যার যার ভাবনা ও দেখার উপরেই নির্ভর করে। কি আর করার আছে!?
ভাল থাকুন, লিখতে থাকুন। 🙂
@তারিক,
বলতে কি, লেখাটা শুরুতে চিত্তাকর্ষকই ছিল, কিন্তু যতই এগুচ্ছিলাম, ততই বিষাদে ভরে উঠছিল মন। জাফর ইকবালের বিরূপ সমালোচনা করে লেখার শতভাগ অধিকার লেখকের রয়েছে, কিন্তু পাঠকেরও অধিকার রয়েছে লেখকের প্রতিটি যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলার, যেহেতু লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পর সেটি আর লেখকের একার থাকে না, পাঠকের সমঅংশিদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় সেখানে। আসলে পাঠক যদি লেখকের যুক্তি মেনে নিতে না পারে, লেখকের দায়িত্ব সেক্ষেত্রে আরও বেড়ে যায়, কারণ পাঠক যদি লেখকের বার্তা ধরতে না পারে, তাহলে পাঠকের জন্য কষ্ট করে লেখাটি প্রকাশের উদ্দেশ্যটিই তো মাটি হয়ে যায়। অথচ লেখক মনে হয় পাঠকের গ্রহণ করা বা না করা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত বা আগ্রহী নন, বরং একটি ভূমিধ্বস লেখা (মানে, সেলিব্রিটি কাউকে এক হাত নিয়ে শোরগোল ফেলে দেয়ার মত লেখা) লিখতে পেরেই তিনি সন্তুষ্ট এবং আনন্দিত।
না হলে, জাফর ইকবাল স্যারের মাকে নিয়ে করা স্মৃতিচারণকে তিনি কেন ‘গল্প ফাঁদা’র সাথে তুলনা করলেন বা ‘১০ টাকার দেশপ্রেম গেলাতে গিয়ে মুহম্মদ জাফর ইকবাল ৯০ টাকার অসত্য অপযুক্তি কূতর্ক ও বিদ্বেষ গেলাচ্ছেন তার পাঠককূলকে।’ – এ ধরনের কুৎসিত মন্তব্য কি করে করলেন, তার কিছু উত্তর থাকত! বস্তুত এমন একটি ভূমিধ্বস বাক্য লিখে ফেলতে সক্ষম হয়েছেন, এই বিষয়টি নিশ্চয়ই তিনি উপভোগ করছেন! না হলে, জাফর ইকবাল স্যার কি কি অসত্য, অপযুক্তি, কুতর্ক ও বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন, তা তিনি পয়েন্ট আকারে আমাদের বলতে পারতেন এবং বোঝাতে পারতেন!
@গুবরে ফড়িং,
প্রথমে লেখাটি পড়ে মন্তব্যের ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু দেখলাম অনেকে এই লেখা শেয়ার দিচ্ছে, যেখানে লেখক নিজেই তাঁর লেখার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলো এড়িয়ে যাচ্ছেন। উনাকে পোস্টে নিয়ে আসতে কমেন্ট গুলো করা। উনার লেখার যে বিষয়গুলো নিয়ে আপনি প্রশ্ন তুলেছেন, সেগুলোর জবাব উনি এখনো দেন নাই। উনার লেখায় যে ব্যক্তি-বিদ্বেষ বিষয়ক প্রশ্ন উঠেছে, সেই বিষয়েও দেখলাম উনি নিশ্চুপ। আবার কয়েকজন দেখলাম এসে আরও বিদ্বেষ ছড়িয়ে উৎসাহও দিয়ে গেছে।
@ গুবরে ফড়িং এবং তারিক,
আমার বলার সবগুলো কথা আপনারা জানলেন ক্যামনে? অনেকদূর এ পর্যন্ত এসে কিছু বিষয়ে আমার ধারণাও পাল্টে গেছে। আমি এখন আর মনে করিনা লেখক নিছক জাফর ইকবালের প্রতি ব্যক্তি বিদ্বেষ বা আওয়ামী বিদ্বেষ থেকে লেখাটি সাজিয়েছেন। প্রথমে কিন্তু তেমনটাই মনে হয়েছিল। বঙ্কিম আর রবির উক্তি দিয়ে শুরু দেখে আমি হুক্কা ছিলিম নিয়ে বসেছিলাম একটি সুলেখা পড়ার আশায়। সে আশা্র গুড়ে কিছুটা বালি পড়লেও স্বীকার করি লেখকের লেখার হাত ভাল, মন্তব্যে এসে তার ধৈর্য-সহিষ্ণুতার পরিচয়ও পেলাম। তর্ক চলুক ব্যক্তি বিদ্বেষহীন ভাবে। সফিক সাহেবের অপ্রাসঙ্গীক কুৎসিত মন্তব্যে মাথাটা বিগড়ে গেছে, তাই আর কিছু লেখার মুড নাই।
দেরীতে হলেও সকলের প্রতি বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা রইলো-
[img]https://encrypted-tbn2.gstatic.com/images?q=tbn:ANd9GcQrrfd045NJ7ksopiIpAM6PwMPyMmxBVLuh29EWgjBb63KUBpgiDg[/img]
জয় বাংলা।
@কেশব কুমার অধিকারী,
শাহবাগ জেগেছিল, তবে তাকে মেরে ফেলেছে আমাদের অপরাজনীতি। তাই নয় কি? তাহলে ‘নতুন ভাবনা এখানে জন্ম নিচ্ছে, কিন্তু সেগুলো হালে পানি পাচ্ছে না বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও শ্রেণির বাধায় তার প্রমাণ পাওয়া গেল কি?
আপনি বলেছেন, “আমাদের রাজনৈতিক বাস্তবতায় এই দুই নেত্রীর আবির্ভাব এবং সহাবস্থান যে অবস্যম্ভাবী এবিষয়ে আশাকরি কারোরই কোন দ্বিমত নেই। আমি বিষয়টিকে নিছক পরিবারতন্ত্র বলতে নারাজ। আমি মনে করি এর কারণ (অর্থাৎ এই দুই নেত্রীর নেতৃত্ত্ব) যথাযথ বিকল্পের অনুপস্থিতি” – সেটি আপনার ভাষ্য, তাতে আমার দ্বিমত আছে, এবং আমার ধারণা বাংলাদেশে আমি একা নই এই ব্যাপারে।
আগেই বলেছি, বাংলাদেশ নিয়ে আশাবাদী হওয়ার ব্যাপার নিয়ে আমার আপত্তি নয়, আপত্তি অন্য কিছু নিয়ে। কাজেই আপনি যে উদাহরণগুলি দিয়েছেন, সেগুলি সবই বেশ ভাল ভাল আইডিয়ার উদাহরণ, তাতে আমার দ্বিমত পোষণ করার কিছু নেই। আমার আপত্তিগুলো আমি আবার বলি – এক, যেহেতু জিয়া হায়দার রহমান একজন বিদেশী, এবং তার দেশে রাজা-রানী-প্রিন্স-প্রিন্সেস আছে, সেহেতু তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে কোন সবক দিলে মুহম্মদ জাফর ইকবাল কৌতুক অনুভব করেন। আরো একটা হল প্রবাসীদের ব্যাপারে একটা অহেতুক সাধারণীকরণ করা, মূল লেখার সাথে যা প্রাসঙ্গিক মনে হয় নি। আমি তার শিরোনামে সততা নেই বলেছি। আরো বলেছি, তিনি জিয়া হায়দারের একটা বাক্যের গৌণ বিষয়কে সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে সেই বাক্যের মূল বিষয়কে এড়িয়ে গেছেন কিম্বা আড়াল করেছেন – ‘মৃত ব্যক্তিদের ছায়াকে পুঁজি করে দুই নারী বাংলাদেশের রাজনীতিতে আধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছেন’ এই বাক্যে ‘দুই নারী’ প্রধান ইস্যু নয়, প্রধান ইস্যু অন্য কিছু। আপনি যে বলেছেন, এই দুই নেতা আমাদের বাস্তবতায় অপরিহার্য্য, অন্তত এখন পর্যন্ত, মুহম্মদ জাফর ইকবাল কিন্তু সে দিকে হাঁটেন নি, তিনি জিয়া হায়দারকে নারীবিদ্বেষী বানিয়েছেন, ইকোনোমিস্টের দোসর বানিয়েছেন।
মুহম্মদ জাফর ইকবাল কি শুনে ধাক্কা খেয়েছিলেন, তা পরিষ্কারঃ তাকে কোট করছিঃ
“আমার মনে হল, আমার আশেপাশে যারা থাকে তাদেরকে এত কঠিন একটা কথা বলার আগে আমার সম্ভবত বিষয়টা আরেকটু তলিয়ে দেখা দরকার। তখন আমাকে পুরানো পত্রিকার (ডিসেম্বর, ২০১৪, ‘ডেইলি স্টার) খুঁজে বিখ্যাত তরুণ লেখক জিয়া হায়দার রহমানের আসল বক্তব্যগুলো পড়তে হল। প্রথমে আমি ছোট একটা ধাক্কা খেলাম। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছেন দুজন মহিলা, নিজেদের যোগ্যতায় নয়, মৃত ব্যক্তিদের ছায়ায়! (যে দেশে রাজা-রানি, রাজপুত্র-রাজকন্যা থাকে, সেই দেশের মানুষ যখন এ রকম কথা বলেন, তখন আমি কৌতুক অনুভব করি। যাই হোক, সেটা ভিন্ন কথা।)”
প্রবাসীদেরকে নিয়ে মুহম্মদ জাফর ইকবালের যে মনোভাব এই লেখাতে প্রকাশ পেয়েছে, তার ব্যাপারে বিডিনিউজ২৪ ওয়েবসাইটে শাগুফতা শারমীন তানিয়া কি লিখেছে শুনুনঃ
“ডক্টর মুহম্মদ জাফর ইকবাল লিখেছেন, যে আঠার বছর তিনি দেশের বাইরে ছিলেন, তিনি দেশের কোনো সমালোচনা করেননি। কারণ তিনি বিশ্বাস করেছেন যে, দেশের বাইরে নিশ্চিন্ত নিরাপদ আরামে থেকে দেশের সমালোচনা করবার অধিকার তাঁর নেই। যখন তিনি দেশে ফিরেছেন কেবল তখনি তাঁর নিজদেশের সমালোচনা করবার অধিকার হয়েছে। এই অংশটি পড়ে আমি বিব্রতবোধ করি, কারণ দেশের বাইরে সবাই নিরাপদ-নিশ্চিন্ত আরামে আছে বললে সে বলার ভিতরে একরকমের অসূয়া কাজ করে- সে বলার ভিতরে একরকমের অন্ধত্ব কাজ করে যা দেশের বাইরের হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক-ছাত্র-কর্মজীবীর বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলবার অধিকারকে খাক করে দেয়, যাদের ঘাম-রক্ত-মৃত্যুর সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চাকার চালিকাশক্তির বিশাল যোগ আছে। আমার কাছে অনেকবার মনে হয়েছে বাংলাদেশে যাঁরা থাকেন, তাঁরা দেশত্যাগকে একরকমের ট্রিজন হিসেবে দেখেন, প্রবাসীদের একরকমের ফুটো জাহাজ থেকে নিজপ্রাণ নিয়ে পালানো স্বার্থপর অভিযাত্রী হিসেবে দেখেন, প্রবাসীর দেশপ্রেম-দেশচিন্তা-দেশের ভালমন্দে অংশগ্রহণ সবই বাঁকা চোখে দেখেন। মুহম্মদ জাফর ইকবালও এভাবে ভাবতে পারেন সেটা দেখে আমি যারপরনাই অবাক হয়েছি।”
যাই হোক, আবারো বলি, বাংলাদেশ নিয়ে আমি নিজে অত্যন্ত আশাবাদী, তবে কেউ আমার/আমাদের ন্যায্য সমালোচনা করলে শুধু দেশপ্রেমের খাতিরে বা আশা-জাগানিয়া স্টেটমেন্ট দেওয়ার খাতিরে অথবা অযৌক্তিক অযুহাতে (যেমন, সমালোচক বিদেশী, তার দেশে রাজতন্ত্র আছে, ইত্যাদি) সেই সমালোচনাকে আমি বাতিলের খাতায় ফেলে দিতে রাজী নই।
ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
@আশরাফুল আলম,
আমি অভিজিৎ রায়ের দেওয়া সেগুফতা শারমীন তানীয়ার লেখাটা পড়েছি, আপনার জবাব সহ লিখবো তবে একটু সময় নিতে হচ্চে, কারণ ছেলেদের রেজাল্ট দিতে হবে। কিন্ত আপনি আমার প্রশ্ন গুলো এড়িয়ে গেলেন মনে হয়। যাইহোক ভালো থাকুন ততক্ষন।
দুঃখিত, অনেক মন্তব্য এসেছে কিন্তু আমি ব্যস্ততার কারণে কোন জবাব দিতে পারিনি। আত্নপক্ষ সমর্থন করা জরুরী মনে করছি।
শুরুতেই পরিস্কার করি, মুহম্মদ জাফর ইকবালের ব্যাপারে আমি কোন জেনারেলাইজেশান করি নি। যা বলেছি তার সবটাই তার সাম্প্রতিক লেখা নিয়ে। এর আগে এসব বিষয় তার লেখাতে আমার চোখে পড়ে নি।
দুই, মুহম্মদ জাফর ইকবালের সাথে আমার দ্বিমত মোটেও তার আশাবাদ নিয়ে নয়। বাংলাদেশ নিয়ে আমিও আশাবাদী। তবে তার ব্যবহৃত কিছু যুক্তি নিয়ে আমার আপত্তি আছে – এর একটা হল, যেহেতু জিয়া হায়দার রহমান একজন বিদেশী, এবং তার দেশে রাজা-রানী-প্রিন্স-প্রিন্সেস আছে, সেহেতু তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে কোন সবক দিলে মুহম্মদ জাফর ইকবাল কৌতুক অনুভব করেন। আরো একটা হল প্রবাসীদের ব্যাপারে একটা অহেতুক সাধারণীকরণ করা, মূল লেখার সাথে যা প্রাসঙ্গিক মনে হয় নি। এরকম আরো দু’একটা ব্যাপার আছে, যা আমি লিখেছি। জিয়া হায়দার রহমান বাংলাদেশকে বন্ধ্যা বলেন নি, কিম্বা বাংলার মানুষকেও মৃত বলেন নি। তিনি বন্ধ্যা বলেছেন বাংলাদেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে, অপরাজনীতিকে, পরিবারতন্ত্রকে – জিয়া হায়দার রহমানের পুরো বক্তব্যকে আমলে নিলে তা মোটামুটি স্পষ্ট। কাজেই, জিয়া হায়দার রহমানকে যখন উদ্ধৃত করছে ডেইলি স্টার এভাবেঃ Haider, who came to Dhaka last month to attend the Hay Festival, was also critical of the dominance of Bangladeshi politics by two ladies who according to him “stand in the shadow of the dead” and rely on their dead relatives to legitimise their moral authority to rule the country, তখন মুহম্মদ জাফর ইকবাল এই কথা শুনে ধাক্কা খেলেন কেন, সে প্রশ্ন তোলাই যায়। আমি কোন ধাক্কা খাই নি, বরং আমার মনের কথাটা বলার জন্য বক্তাকে মনে মনে ধন্যবাদ দিয়েছিলাম। আমরা অনেকেই হরহামেশা দুই নারীর ব্যাপারে এই কথা বলি, এবং তা সত্যও বটে – তাদের চেয়ে যোগ্য রাজনীতিবিদ এই দেশে গত দুই/আড়াই দশকে আর পয়দা হয় নি, সে কথা আমি বিশ্বাস করি না। সেখানে আসল কথা ফেলে রেখে মুহম্মদ জাফর ইকবাল ‘দুই নারী’ শব্দগুচ্ছটিকেই বেছে নিয়েছেন সমালোচনার বিষয় হিসেবে (পরিবারতন্ত্রের ব্যাপারে তিনি ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের খোঁটা দিয়েই সেটাকে উড়িয়ে দিয়েছেন), এবং পশ্চিমা মিডিয়া/ইকোনোমিস্টের নাম উল্লেখ করে একটা অহেতুক ষড়যন্ত্র বানিয়ে বসেছেন। সুতরাং, তিনি প্রকারান্তরে পরিবারতন্ত্রের পক্ষে ব্যাট করেছেন এমনটা মনে হয়েছে আমার।
তিন, আমি তার শিরোনামে সততা নেই বলেছি, এবং তাতে সবাই একমত নাও হতে পারেন। যার যার দেখার চোখ আলাদা, আর সেটাই স্বাভাবিক।
আবারো বলি, মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা এদেশের মানুষকে প্রভাবিত করে, এবং তিনি সেটা জানেন। সেই কারণেই তার দায়িত্ববোধের মাত্রাটা বেশি হওয়া উচিত – তার কাছ থেকে আমরা শামীম ওসমান – সেলিনা হায়াত আইভী বা মীর্জা ফখরুল – সৈয়দ আশরাফুল মানের বিতর্ক আশা করি না। দেশের তরুন সমাজের কাছে এই যে তার ব্যাপক গ্রহনযোগ্যতা, তা যেমন তার শক্তি, ঠিক তেমনি এটা তার (এবং আমাদের সবার) দূর্বলতাতেও পরিণত হতে পারে। ইতিমধ্যেই আমি রাজাকার গালি খেয়েছি তার সমালোচনা করার জন্য, যা আমাকে আহত করে নি, শঙ্কিত করেছে। আমরা যদি সমালোচনার ব্যাপারে এত অসহিষ্ণু হই, তাহলে সেটা আমাদের সুস্থ ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যায় কি? সেই সমালোচনা মুহম্মদ জাফর ইকবাল, শেখ হাসিনা, আমাদের পরিবারতন্ত্র বা অন্য যা কিছু নিয়েই হোক না কেন।
@আশরাফুল আলম,
আপনার লেখার পয়েন্টগুলি আমার কাছে বেশ যৌক্তিক মনে হয়েছে। এবং এই লেখাটা শুধু জাফর ইকবালের একটি লেখাকে নিয়ে, এখানে আমি কোনো বিদ্বেষও দেখছি না।
@তামান্না ঝুমু,
যদিও একজন নগন্য পাঠক হিসেবে আমার কাছে মোটেও যৌক্তিক মনে হয়নি, তবু আপনার মত ও মত প্রকাশের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে শুধু একটি প্রশ্ন করতে চাইঃ লেখকের নীচের লাইনটিও কি আপনার কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে? যদি হয়, তাহলে কেন যৌক্তিক মনে হয়েছে, তা খুলে বলবেন আমাদের? আর আপনার কি মনে হয়, নীচের উদ্ধৃত লাইনটি জাফর ইকবাল স্যারের একটি লেখাকে কেন্দ্র করেই চয়ন করেছেন লেখক? নাকি এটি জাফর ইকবাল স্যারের সার্বিক মূল্যায়ন লেখক কর্তৃক?
@গুবরে ফড়িং,
ভাষাটা ও বলার ভঙ্গিটা অন্যরকম হতে পারতো নিশ্চয়। তবে একজনের সব কথা ও বলার ভঙ্গি অন্যের কাছে পুঙ্খানুপুঙ্খ সঠিক মনে হবে, তাও ত নয়।
লেখাটির জন্য অভিনন্দন গ্রহণ করুন। আমি জাফর ইকবালের লেখার প্রচণ্ড ভক্ত। তার প্রতি অসীম শ্রদ্ধা আছে আমার। কিন্তু তারও চিন্তায় সমস্যা থাকতে পারে, থাকতে পারে সীমাবদ্ধতাও। সেগুলো উল্লেখ করা, তার বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা অন্যায় নয়। বরং এটাই কাংক্ষিত।
উপরে একজনের কমেন্টে দেখলাম ‘মুক্তমনা’ নামের জন্য তিনি নাকি লজ্জিত। আরেকজন দেখলাম বলছেন – ‘বাংলাদেশ মৃতদের দেশ’ এবং ‘বাংলাদেশ হচ্ছে মৃত চিন্তাভাবনার দেশ’ এই দুটি কথার মধ্যে নাকি কোন পার্থক্য নেই, অথচ একটিতে পরিস্কারভাবে ধারণার সমালোচনা করা হচ্ছে, আরেকটিতে মানুষদের ‘মরা’ বলা হচ্ছে। ধারণার সমালোচনা কোন বিচারেই নিষিদ্ধ কিছু নয়, কিন্তু জাতিগতভাবে কাউকে গালানো রেসিজমের পর্যায়ে যায় বহুক্ষেত্রেই। সোজা কথায় – people may deserve respect or rights, ideas do not.
আমরা বরাবরই বলে এসেছি মুক্তমনা হওয়ার অর্থ কেবল ধর্মের সমালোচনা নয়, বরং মহাপুরুষদের অমহাপুরুষসুলভ বিভিন্ন কাজের আলোচনা কিংবা সমালোচনা করাটাও কিন্তু মুক্তমনাদের ‘ক্রিটিকাল থিংকিং’ এর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। হুমায়ুন আজাদ তার ‘নারী’ গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের নারী ভাবনার তীব্র সমালোচনা করেছেন। আহমদ শরীফ তার বইয়ে কাঙ্গাল হরিনাথের উপর ঠাকুর বাড়ির প্রবল আক্রোশের কথা সুনিপুণ শিল্পীর মতো তুলে ধরেছেন। প্রবীর ঘোষ তার অলৌকিক নয়, লৌকিক গ্রন্থে অনুকূল চন্দ্র সহ ভারতবর্ষের সব সম্মানিত পুরুষদের অযৌক্তিক ধ্যান ধারনার উল্লেখ করেছেন। প্রয়াত মুক্তমনা লেখক ক্রিস্টোফার হিচেন্স তার বইয়ে এবং প্রবন্ধে মাদার তেরেসার অন্ধকার দিকগুলো তুলে ধরেছেন – কিভাবে তেরেসা কালোবাজারির সাথে সম্পর্ক রেখেছিলেন, কিভাবে তিনি দারিদ্র্য নিয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করেছেন, কিভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণ, কণ্ডম ব্যাবহার প্রভৃতিতে বাঁধা দিয়েছেন তেরেসা, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উঠে এসেছে তার যৌক্তিক বিশ্লেষণে। এগুলোতে দোষের কিছু নেই; মহাপুরুষদের পূজার আসনে বসিয়ে নিরন্তর স্তব নয়, বরং তাঁদের কাজের নির্মোহ বিশ্লেষণই কেবল আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। সেজন্যই ধর্মীয় সমালোচনার পাশাপাশি মুক্তমনা লেখকেরা আগে রবীন্দ্রনাথ, স্বামী বিবেকানন্দ, রোকেয়া, বায়েজিদ বোস্তামী, সম্রাট অশোক সহ অনেকের কাজেরই নির্মোহ বিশ্লেষণ হাজির করেছেন, সেগুলো রাখা আছে আমাদের সাইটের ‘নির্মোহ এবং সংশয়ী দৃষ্টি : মুক্তমনের আলোয়’ বিভাগে। অধ্যাপক জাফর ইকবালের কিছু অভিমতের সমালোচনা আগেও মুক্তমনায় হয়েছে (দেখুন এখানে, কিংবা এখানে)। কাজেই ভয়ের কিছু নেই। নির্ভয়ে লিখুন।
আর আমার ধারণা ড. জাফর ইকবাল যথার্থ সমালোচনা পেলে খুশিই হবেন।
@অভিজিৎদা,
খুব সুন্দর কথা! এই দর্শন হউক আমাদের সবার জীবন দর্শন।
জাফর ইকবালের সমালোচনা করা যাবে না, সে কথা কেউ বলছে না। কিন্তু সেই সমালোচনা যথার্থ হতে হবে।
আলোচ্য সমালোচনাটির ‘যথার্থ’ দিকগুলো নিয়ে সামান্য আলোকপাত করা সম্ভব? কিছু বিষয় তুলে ধরা হয়েছিল, কিন্তু লেখক আগ্রহ বোধ করেননি বিধায় আপনার কাছেই হাত পাততে হচ্ছে।
এইখানেই মুক্তমনার অনন্যতা। আপনাকে আবারো ধন্যবাদ একজন নবীন লেখককে এমন সাহস দেয়ার জন্য।
তবে, অভিজিৎদা, লেখককে এমনিতেই যথেষ্ট সাহসী বলে মনে হচ্ছে। জাফর ইকবাল স্যারকে খন্ডন করে লিখতে উনি ভয় পাননি। কিন্তু স্যারকে নিয়ে সমালোচনা করতে গেলে স্বভাবতই অনেক মন্তব্য আসবে, লেখককে সেগুলোর মুখোমুখি হওয়ার সাহসও অর্জন করতে হবে বৈকি!
‘বাংলাদেশের মানুষ এখনো পেছনের দিকে হাটছেন’, ‘দুইটি বড় দল দুইজন মৃত নেতাকে নিয়েই মেতে রয়েছেন’, বাংলাদেশের মানুষের এই অতীতমুখী মানসিকতা, যার সমালোচনা দেশের এক শ্রেনীর ‘অতি-প্রগতিশীল’ লোক করে থাকেন এবং যার সাথে সুর মেলান ইকোমিস্ট, অ্যামেনেস্টি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন, জিয়া হায়দার তারই প্রতিধ্বনি করেছেন মাত্র, জাফর ইকবাল স্যারও জিয়ার সঠিক বার্তাই পড়েছেন, সুতরাং, কেন শব্দ নিয়ে কনফিউশন তৈরী করা হচ্ছে?
@গুবরে ফড়িং,
প্রথমেই বলি জিয়া হায়দারের অনেক কথার সাথেই আমি একমত নই, কিন্তু তাঁকে কাউন্টার দিতে গিয়ে জাফর ইকবালের লেখাটা একটু বেশি দেশপ্রেমমূলক মনে হয়েছে। দেশপ্রেমে আমার খুব বেশি সমস্যা নেই, যদি বাস্তবতা বিবর্জিত না হয়ে ওঠে। দেশের পরিস্থিতি বিগত দশ বিশ বছরে বেশ খারাপই হয়েছে, এটা অস্বীকার করা বোকামি। একটা সময় আশি কিংবা নব্বইয়ের দশকে – আহমদ শরীফের মতো মুক্তচিন্তকেরা রাস্তায় হেঁটে বেড়াতেন, নাস্তিকতা নিয়ে আড্ডা দিতেন তার ছাত্র-ছাত্রী আর কলিগদের সাথে, কেউ হামলা করেনি। কিন্তু ক্রমিক ইসলামাইজেশনের পর থেকে হুমায়ুন আজাদ, রাজিব হায়দার, আসিফ মহিউদ্দীনদের উপর হামলা, পাশাপাশি সুব্রত শুভ, বিপ্লব, রাসেল সহ প্রগতিশীল ব্লগারদের রাষ্ট্রীয় আইনে জেলে ঢোকানো, ৫৭ ধারা ইত্যাদি – কোন আশাব্যঞ্জক বানী শোনায় না।
জাফর ইকবাল মাঝে সাঝে খুব সরলীকরণও করে ফেলেন। যেমন বিবর্তন এবং ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইনের মধ্যে কিছু ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে ‘অক্টোপাসের চোখ’ সহ কিছু গল্পে। রাজনীতির ক্ষেত্রেও এটা সত্য। যেমন, কিছুদিন আগে মিডিয়ায় খুব গুরুত্ব পেয়েছিল তার একটি কথা। তার কাছে একটি জিনিসই গুরুত্বপূর্ণ – মুক্তিযুদ্ধ। ওটা একটা ফিল্টার। তার মধ্যে দিয়ে কিছু পাস করে গেলে তা ঠিক আছে, আটকে গেলে নেই। কিন্তু এই ফিল্টার কি সত্যই সার্বজনীন? তার ফিল্টারের মধ্যে দিয়ে হয়তো কাদের সিদ্দিকী, সৈয়দ আলী আহসান কিংবা এমনকি খন্দকার মোশতাকও বেরিয়ে যেতে পারেন, মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট আছে বলে। আর এর মধ্যে পৃথিবীও এগিয়েছে অনেক, একজন সমকামী এক্টিভিস্ট, কিংবা এ ধরণের সংখ্যালঘু যৌনপ্রবৃত্তির আন্দোলনকর্মীরা হয়তো তার ফিল্টারের ধারের কাছেও আসতে পারবেন না (বিশেষ করে সমকামিতা, শয়তানের পুজা সব এক কাতারে ফেলে দেবার ট্রেন্ড তাঁর এবং তাঁর ভাই প্রয়াত হূমায়ুন আহমেদ – উভয়ের মধ্যেই আছে, পথিকের যে লেখাটির লিঙ্ক আগের মন্তব্যে দিয়েছিলাম তা দেখতে পারেন)।
হয়তো আপনার কথা সত্য। কিন্তু উপরে সহেল এবং নীচে আশরাফ সাহেব বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট সামনে এনেছেন। কাজেই আলোচনার প্রেক্ষাপট বন্ধ করা উচিৎ হবে না। দৃষ্টিভঙ্গিতে ভিন্নতা থাকবেই। আর মুক্তমনার মত প্লাটফর্মে তো আরো বেশি করে তা থাকা উচিৎ।
@অভিজিৎ দা,
আমার মনে হয় সমস্যাটা সমালোচনায় না, জাফর ইকবাল স্যারের সমালোচনা ১০০বার করা যেতে পারে, সমস্যাটা তখনই যখন সমালোচনায় বিদ্বেষ প্রকাশ পায়। ধর্ম নিয়ে যেমন দারুণ যুক্তিপূর্ণ লেখা মুক্তমনায় আছে তেমনি আছে ইসলাম ধর্ম আর মুসলমানদের প্রতি চরম বিদ্বেষ নিয়ে লেখা যেগুলোর প্রতি আপত্তি তুলেছি আপনি, আমি সহ আরো অনেকেই।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
তোমার কথা সত্য। কিন্তু বিদ্বেষের ব্যাপারটা একপাক্ষিক নয়। দুই পক্ষ থেকেই হয়। মুসলিমদের বিরুদ্ধে যেমন হয়, তেমনি হয় অন্য পক্ষের বিরুদ্ধেও। মালালা নোবেল বিজয়ের পর রক্ষণশীলদের পাশাপাশি প্রগতিশীলদের বিদ্বেষও আমি দেখেছি।
আর জাফর ইকবালের প্রতি বিদ্বেষের অভিযোগ যদি এ লেখায় আনা হয়, তবে কেউ হয়তো জাফর ইকবালের লেখাতেও জিয়া হায়দারের বিরুদ্ধে বিদ্বেষের আলামত পেতে পারেন।
লেখাটার কিছু পয়েন্ট আআর বেশ শক্তিশালীই মনে হয়েছে। তোমার আপত্তিটাও আমি বুঝতে পারছি, কিন্তু এ ধরণের আলোচনা বন্ধ করা উচিৎ নয়। বন্ধ হলে সেটা একঘেয়ে হয়ে যাবে। চলুক না, আলোচনা। কি আছে! জাফর ইকবাল এর চেয়ে বড় বড় প্রাচীর পার হয়েছেন, এটা তাঁর মতো মানুষের জন্য কিছুই না।
@অভিজিৎদা,
কোন পয়েন্টগুলি?
বন্ধ করার কথা কেউ কষ্মিনকালেও ভাবেনি, বলেওনি। মুক্তমনার এখানেই অনন্যতা। বরং, আমরা তো চাইছি আলোচনা চলুক। কিন্তু লেখক কি তা চাইছেন? অবশ্য লেখক বাধ্য নন প্রতিমন্তব্য করতে।
নতুন লেখকের আস্পর্ধা কতো, কদিন যেতে না যেতেই মহানবী হযরত জাফর ইকবাল স্যারকে আক্রমন করে বসেছে। এই লেখককে আরো লাই দিলে সামনের দিনে স্বয়ং মুজিবেশ্বরকে আক্রমন করে লেখা দিয়ে দিতে পারে। মুক্তমনার পবিত্র মন্চে এই ধরনের ব্লাসফেমী কেমন করে সহ্য করা হয়?
হযরত জাফর ইকবাল স্যার গনতন্ত্র বিরোধী হতে পারেন, মুক্তচিন্তা বিরোধী হতে পারেন, একমুখী বিচারের সমর্থক হতে পারেন তবুও তিনি হলেন আমাদের চেতনার আবেগের প্রাণপুরুষ। আদালত কতৃক স্বীকৃত এই ‘পবিত্র আবেগ’ গুলিকে সম্মান করতে হলে হযরত জাফর ইকবাল স্যার এর সম্মানও অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।
আমাদের মনোজগতে এই মহাপুরুষের অবদান নিয়ে কয়েকটি লেখার লিংক।
১/ http://alalodulal.org/2013/09/03/the-unenlighteneds/
২/ http://nuraldeen.com/2014/03/29/%E0%A6%AB%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A6%A8%E0%A6%BE-%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%81/
৩/ http://nuraldeen.com/2013/11/09/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B9%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%A6-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%AB%E0%A6%B0-%E0%A6%87%E0%A6%95%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%8F%E0%A6%87-%E0%A6%A6%E0%A6%B6%E0%A6%95/
@সফিক,
আমি আপনার দেওযা সব গুলো লিংক পড়েছি। অধ্যাপক জাফরের লেখাগুলোতে দেখছি তিনি তাঁর মতামত তুলে ধরেছেন মাত্র! আর সেই মতামতের কোথাও বঙ্গবন্ধুকে মুজিবেশ্বর হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে বলে তো মনে হলো না। অথচ আপনার এতোটা ক্ষোভের তো কোন কারণ দেখছি না কোথাও। নিরপেক্ষ, এর আদৌ কোন অস্তিত্ত্ব কি আছে? যা আমাদের চেতনায় ধারনযোগ্য, আমাদের সমাজপ্রগতিতে ও স্থিতিশীলতায় ইতিবাচক সেটুকু তো গ্রহনযোগ্য হতেই পারে। অধ্যাপক জাফর ইকবালকে এখানে কেউ হযরত হিসেবে দেখছে না আপনি ব্যতিরেকে। নাকি তিনি প্রগতিশীল (অবশ্যই প্রতিক্রিয়াশীল বলা সঙ্গত হবে না) ধারার একটা পক্ষে তাঁর মতামত যুক্তি তুলে ধরেছেন মাত্র! এই বাক স্বাধীনতা তাঁর আছে বৈকি! আর এই স্বাধীনতার দ্বারা তিনি সমাজের কোন অংশকে উগ্র হতে বা সমাজের ক্ষুদ্রতম কোন অংশে সামান্যতমও অসহিষ্ণু হতে আহ্বান কিংবা উৎসাহ দিচ্ছেন বলে তো মনে হলো না। কিন্তু যে সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের পক্ষে আপনি ওকালতি করলেন তিনি পক্ষান্তরে কি করেছেন, আজ কি সেটা স্পষ্ট নয়? শাহবাগের গনজাগরণ থেকে শুরু করে বিগত নির্বাচন পর্যন্ত যে প্রাণ গুলো ঝড়েছে তার মধ্যে কতোজন বি এন পি আছে? পরিসংখ্যান কি আছে? প্রাণ গুলো গিয়েছে সাধারনের আর কিছু হেফাজতী-জামাতের। চাবি ঘুড়ালো কে আর গোলা কাদের মাথায় ফাটলো? বাগাডুলী খেলেছেন? অধ্যাপক জাফর অন্ততঃ সেই বাগাডুলী খেলার চেষ্টা করেন নি এখনো পর্যন্ত এইটুকু নিশ্চিন্তে বলতে পারি।
@সফিক,
মহানবী হযরত, মুক্তমনার পবিত্র মঞ্চ, ব্ল্যাসফেমী- এই শব্দ কিংবা বিশেষণগুলির প্রতি আপত্তি জানাচ্ছি।
মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা থেকে যে পয়েন্টগুলি আপনি বের করেছেন ও তার যুক্তি খণ্ডন করেছেন তা আমার কাছে ভাল লেগেছে। উনার মত একজন বুদ্ধিজীবীর কাছে বাসন মাজার কাজ কেমন করে অমর্যাদাকর হতে পারে এবং তা নিয়ে তিনি হেয় করে লিখতেও পারেন, ভাবলে হতবাক লাগে।
@তামান্না ঝুমু,
দেখা যাক কী লিখেছেন তিনি-
এখানে ডঃ জাফর ইকবাল বাসন মাজার কাজ কেমন অমর্যাদাকর সেটা দেখাবার চেষ্টা করেছেন বলে আমার মনে হয় না। তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন বাংলাদেশ থেকে আগত ছাত্ররা মা-বাবার কিছু পয়সা বাঁচাবার জন্যে পার্ট টাইম বেইসে অবসর সময়ে হোম ওয়ার্কের ফাঁকে ফাঁকে নাইটক্লাবে সিনেমায় পার্কে ঘোরাঘুরি করে সময় নষ্ট না করে কত কষ্টে দু পয়সা কামাতে চায়। আমি নিজেও দেখছি বিগত চল্লিশ বছর যাবত। সবাই তো আর মন্ত্রী মিনিষ্টারের সন্তান না, গরিবেরাও বিদেশে পড়তে আসে বাংলাদেশে সেই সুযোগ না থাকায়। কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা, দক্ষতা বা এক্সপেরিয়েন্স ছাড়া ভাল বেতনের সহজলভ্য কাজ এটি। আমার ব্যবসায় প্রতি বছরই কোন না কোন বাংলাদেশী ছাত্র থাকেন যারা সেই কাজ করে্ন। তাদের সুখ দুঃখের কাহিনি আমি দেখেছি শুনেছি। এখানে কাজকে অমার্যাদা করা বা হেয় করা উদ্দেশ্য নয় বরং ছাত্রদের প্রতি সহানুভুতি ও স্বদেশের অপারগতা বা ব্যর্থতার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে।
@তামান্না ঝুমু,
“আমি যাদের সঙ্গে সময় কাটাই, তারা প্রতি মূহূর্তে নূতন নূতন চিন্তা-ভাবনা করে, এখন তাহলে কি আমার তাদেরকে বলতে হবে তোমাদের চিন্তা-ভাবনা মৃত? তোমরা বন্ধ্যা দেশের নিস্ফল কারিগর? তোমরা এই দেশ পরিত্যাগ করে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা কর, সেই সব দেশে গিয়ে হোটেলে বাসন ধোয়ার ফাঁকে ফাঁকে বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা কর। কারণ, এই দেশে বুদ্ধিবৃত্তির কোনো স্থান নেই? চিন্তা-ভাবনার কোনো অস্তিত্ব নেই?”
এই অংশটুকু পড়েই কি আপনার মনে হলো যে অধ্যাপক জাফর বাসন ধোয়াকে অসম্মানিত করেছেন? আমি যেখানে থাকি সেখানে ছাত্ররা ছাড়াও বাংলাদেশের অগনিত তরুণেরা আছেন যাঁরা বিভিন্ন শিল্প কারখানায়, রেস্তোরায় এবং অন্যত্র কাজ করছেন। অত্যন্ত কঠিন এবং অমানবিক কষ্টের কাজও করছেন অনেকে। এঁদের প্রায় সবাই আমাদের বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত জনবল! তারপরেও তাঁদের মাঝে যে সৃজনশীলতা, যে দেশ মমত্ত্ব, যে আবেগ দেখেছি আপনি চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না। আর এ কারণেই এখানে বাংলাদেশী তরুণদের একটা আলাদা মর্যাদাও আছে। আর এ কাজগুলো তাদের করতে হয় বাড়তি উপার্যনের জন্যেই। কারণ দেশে তার পরিবার পরিজন এ বাড়তি আয়ের উপড়েই নির্ভরশীল অনেক ক্ষেত্রে। হোটেল রেষ্টুরেন্ট এ বাসন ধোয়াতো অনেক সহজ কাজ! এখানকার স্হানীয় ছাত্র-ছাত্রীরা তো শীত-গ্রষ্মের ছুটিতে এই কাজেই ঢুকে পড়ে! অমর্যাদার প্রশ্নই উঠে না, যেখানে তিনি নিজেও দেড দশকেরও বেশী দেশের বাইরে কাটিয়েছেন। এটি একটি অতি সাধারন ধরনের বাড়তি কাজের একটি। অধ্যাপক জাফরের কথায় তো বরং মনে হলো তিনি নতুন প্রজন্মকে হতাশা থেকে মুক্ত করছেন এই বলে যে প্রবাসী হয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার বাইরেও আমাদের সৃজনশীলতায় একদিন আমরা ঘুড়ে দাঁড়াতে পারবোই। আমিওতো তাই বলি। বাসন ধোয়াকে তিনি খাটো করেন নি, বরং বলতে চেয়েছেন যে, আমাদের মাতৃভূমি চিন্তায় চেতনায় বন্ধ্যা নয়, আমাদের সৃজনশীলতা আর উদ্ভাবনী দিযে একদিন আমরা ঘুড়ে দাড়াবো। যা সম্পূর্ন বিপরিতার্থক জনাব সৈয়দ আবুল মকসুদের ভাষ্যে! এখানেই তাঁর ক্ষোভ!
@কেশব কুমার অধিকারী,
‘হোটেলে বাসন ধোয়ার ফাঁকে ফাঁকে বুদ্ধিবৃত্তির চর্চা কর’ কথাটি খুবই কটাক্ষমূলক ও শ্রমের প্রতি অমর্যাদামূলক নয় কি? তাছাড়া বিদেশে উচ্চশিক্ষা অর্জন বা শুধু অর্থ উপার্জনের জন্য যাওয়াও কি দোষের? একজন মানুষ বিদেশে যাওয়া মানে সে অন্তত কয়েকজন মানুষকে কিছুটা হলেও আর্থিক সহায়তা পাঠায় দেশে, এতে করে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসে, দেশও উপকৃত হয়।
@তামান্না ঝুমু,
না, কথাটির ভাবার্থে গিয়ে ভাবুন, সেখানে অন্যায় নেই। আমিও দেশের বাইরে আছি। আমার সেরকম মনে হয়নি। হতে পারে যে তিনি কথাটা আরো্ একটু অন্যভাবে বলতে পারতেন, হযতো তাতে কথার দ্যোতনা প্রকাশিত হতোনা। এর পরের কথা গুলোর সা্থে আমার কোন দ্বিমত নেই। অধ্যাপক জাফর তাঁর নিজস্ব ভাবনা থেকে যা লিখেছেন, সেখান থেকে এই পয়েন্টে তাঁকে সমালোচিত করা যায়না, কারণ শ্রমের ব্যপারে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী তাঁর পূর্বের অন্যান্য লেখা গুলো থেকে আমরা অবগত। সৈয়দ আবুল মকসুদ, জিয়া হায়দার প্রমুখের বক্তব্যের উদ্দ্যেশ্য কে প্রশ্ন করাই অধ্যাপক জাফরের উদ্দ্যেশ্য ছিলো। আর জনাব আশরাফুল আলম যে বিষয় তুলে এনেছেন সেগুলো হলো, অধ্যাপক জাফরের বক্তব্যে আছে সত্যের অপলাপ, ব্যাক্তি আক্রমন, অপ্রসঙ্গীক উদাহরণ। আমি দ্বিমত পোষন করেছি।
1) এখানে যখনই নতুন কোনো ধারণার প্রকাশ ঘটে, তখনই তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও শ্রেণির বাধায় নতুন চিন্তা-চেতনা, ধ্যানধারণা বিকশিত হতে পারে না।
2) মূলত দেশটা বিপুল ক্ষমতাধর ও অসামান্য সুযোগ-সুবিধাভোগীদের, তাঁরা তাঁদের ধ্যানধারণা নিচের স্তরের জনগণের ওপর চাপিয়ে দেন এবং সাধারণ মানুষও তাকে ‘হ্যাঁ’ বলে মেনে নেয়।
3) মৃত ব্যক্তিদের ছায়াকে পুঁজি করে টু লেডিজ—দুই নারী বাংলাদেশের রাজনীতিতে আধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছেন।
4) তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ছবিতে কোনো আলো দেখতে পাচ্ছেন না। দেশ এক বিপজ্জনক অবস্থায় চলে গেছে। এই অবস্থার সংস্কার করে বেরিয়ে আসা তরুণ প্রজন্মের জন্য খুবই কঠিনই হবে।
১) ২) ৩) পয়েন্টে কি কোনো ভুল আছে? এগুলোই জিয়া হায়দারের কথা। আপনারা কেউ কি ভুল ধরিয়ে দিবেন?
জাফর ইকবাল ৩) ও ৪) পয়েন্ট নিয়ে লিখেছেন। তার উচিত ছিল ১) ও ২) কে খন্ডন করাও। তিনি তা করেননি কারন ১) ২) ও ৩) অনেকাংশেই সত্যি।
এই ব্লগ লেখককে আমি ধন্যবাদ দেই তার এ লেখার জন্য – এ লেখার অনেক পয়েন্টই যথাযথ। জাফর ইকবাল আমাদেরকে আশা দিয়ে লিখেছেন, খুবই ভাল – কিন্তু ১৫ কোটি মানুষের দেশের ১৫ টা সাফল্য নিয়ে আমাদের গর্ব না করে বরং ভবিষ্যতে অনেক অর্জন করাই আমাদের ‘গোল’ হওয়া উচিত।
@সোহেল,
আপনি কি মনে করেন ১ ও ২ নম্বর পয়েন্ট অধ্যাপক জাফর জানেন না…? এদেশের কতিপয় মানুষ এখান থেকে উত্তরণের জন্যই নিরলস চেষ্টায় লিপ্ত। অধ্যাপক জাফর তাঁদেরই একজন। আর সেদিকে দেশ এগিয়ে চলেছে জন্যেই অধ্যাপক জাফরের এই প্রতিবাদ। জনপূঞ্জের চিন্তা চেতনার স্তর একটি ডাইনামিক বিষয়, থেমে থাকে না। সততঃ সঞ্চরমান। কালের সরল রৈখিক অগ্রযাত্রার সাথে বিভিন্ন জনপূঞ্জের নিজস্ব মনস্তত্ত্ব, ভাষা ও শিল্প সংস্কৃতির অগ্রগতি ধাবমান। এটি সমান্তরাল নাও হতে পারে তবে স্থির নয়। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই এর অগ্রযাত্রা তার পূর্বাপর অগ্রগতির একটা সামঞ্জস্যপূর্ণ বা অন্ততঃ সম্পর্কিত ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। অধ্যাপক জাফর ইকবাল সেটিই চান। এ লেখক যার সপক্ষে কথা গুলো বলেছেন, সেটি মেনে নিলে এই মৃত চিন্তার বিরান ভুমিতে আমাদের আত্মহননের বিকল্প আছে কি?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের এই লেখাটি থেকে ”নেগেটিভ কিছু” ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে হয় না ! আমি যেটা মনে করি, স্যারের বেশিরভাগ লেখা সবসময়ই খুব সাদাসিধে তরুণদের জন্যে। যারা দেশের জন্যে অনেক ভালোবাসা বুকের মধ্যে রাখে, কিন্তু কখনো কখনো হতাশ হয়ে পড়ে দেশের নানা সমস্যার কারণে। জাফর স্যারের লেখাগুলো পড়ে সত্যিকার অর্থেই এই হতাশাটা কেটে যায়। অনেক সমস্যার মধ্যে থেকেও মনে হয় ভাল কিছু আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে। এবং এই মনে হওয়াটা ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।
‘বাংলাদেশ মৃতদের দেশ’ কিংবা ‘মৃত চিন্তাভাবনার দেশ’,- যাই বলা হোক না কেন, সত্যিকার অর্থে গণিত অলিম্পিয়াডের এই মৌসুমে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রাতদিন চিন্তাভাবনা করে যাচ্ছে অসংখ্য সমস্যা সমাধানে ! যেগুলো নিশ্চয়ই মৃত নয়। 🙂
@মাজ্হার,
একটা পুরো প্রজন্ম মুহম্মদ জাফর ইকবালকে রোল মডেল মনে করে। আমি/আমরা তার লেখা উপন্যাস, সায়েন্স ফিকশান পড়তে পড়তে বড় হলাম। সেই মুহম্মদ জাফর ইকবাল জাতির জন্য স্বপ্ন নিয়ে আসবেন, কেউ নেগেটিভ কিছু বললে তার সমালোচনা করবেন, তাতে দোষের কিছু দেখি না। তবে উনি তার সাম্প্রতিক লেখাটাতে যে কাজটি করেছেন, তা হলো এইঃ জিয়া হায়দার রহমানের দেশে রাজতন্ত্র আছে বলেই তার সম্ভবত আমাদের গণতন্ত্র/পরিবারতন্ত্র নিয়ে আঙ্গুল তোলার অধিকার নেই, এমন একটা ধারণা দেওয়া। এর পরে যখন কেউ আমাদের দূর্নীতির সমালোচনা করবে, গার্মেন্টস শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার না পাওয়া নিয়ে সমালোচনা করবে, সামাজিক ন্যায়বিচারের অনুপস্থিতি নিয়ে সমালোচনা করবে, তখনও আমরা দেশপ্রেমের বর্ম পরে সমালোচকের খুঁত ধরতে থাকবো, আত্নশুদ্ধির পথে আর হাঁটবো না। এ আমার আশঙ্কা। আমি যে দেশে থাকি, সেখানেও রাজতন্ত্র আছে, তবে শুধুই কাগজে আর রাজপ্রাসাদে। আমিও থালাবাসন মাজি। মুহম্মদ জাফর ইকবালের বক্তব্য অনুযায়ী বাংলাদেশকে সমালোচনা করার খুব একটা অধিকার হয়তো আমারও নেই। ‘বাংলাদেশ মৃতদের দেশ’ কিংবা ‘মৃত চিন্তাভাবনার দেশ’ কোনটাই এভাবে বলা হয় নি, বলা হয়েছে যে, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে মৃত চিন্তাভাবনার দেশ, যেখানে নতুন কোনো ধারণার প্রকাশ ঘটা মাত্রই তাকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও শ্রেণির বাধায় নতুন চিন্তা-চেতনা, ধ্যানধারণা বিকশিত হতে পারে না।’ ইংরেজী বাক্যটি এরকম ছিলঃ ‘Bangladesh is a land of dead ideas, where new concepts are throttled at birth and never get passed on because of social, political and class barriers.’ অর্থাত নতুন ভাবনা এখানে জন্ম নিচ্ছে, কিন্তু সেগুলো হালে পানি পাচ্ছে না বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও শ্রেণির বাধায়। দুই নারী বিষয়ে জিয়া হায়দার রহমানকে উদ্ধৃত করছে ডেইলি স্টার এভাবেঃ Haider, who came to Dhaka last month to attend the Hay Festival, was also critical of the dominance of Bangladeshi politics by two ladies who according to him “stand in the shadow of the dead” and rely on their dead relatives to legitimise their moral authority to rule the country. তার মানে, আমাদের সামাজিক-রাজনৈতিক নেতৃত্বের বন্ধ্যা পরিবেশই হয়তোবা নতুন ভাবনাগুলোর বাস্তবায়নের পথে আমাদের বাধা, এমন একটা ইঙ্গিত আছে জিয়া হায়দার রহমানের কথায়। আমি তার মূল্যায়ণকে সঠিক মনে করি।
@আশরাফুল আলম,
াআমি আপনাকে যখন বললাম জিয়া হায়দার রহমান বা সৈয়দ আবুল মকসুদের লেখা আসলে আমাদের চেতনার সাথে যায়না, বরং অধ্যাপক জাফর ইকবালের ইতিবাচক মনোভাবই আমাদের জন্যে পাথেয়, আপনি সায় দিয়ে বললেন তাতে আপনার আপত্তি নেই কিন্তু অধ্যাপক জাফর নাকি সৈয়দ আশরাফ মার্কা বক্তব্য দিয়েছে বলেই আপনার আপত্তি। আমি নিজেও সব বিষয়ে অধ্যাপক জাফরের সাথে একমত নই। কিন্তু, অধ্যাপক জাফরের যে লেখাটিকে কেন্দ্র করে এই বিতর্ক সেখানে আমি অধ্যাপক জাফরকেই সমর্থন করি এবং দ্ব্যার্থহীন ভাবে। একটা কুযুক্তি ও জাতিকে হেয় প্রতিপন্ন করে যে বক্তব্য/লেখার সুত্রপাত ঘটেছে জনাব জিয়া হায়দার রহমান এবং সৈয়দ আবুল মকসুদের মাধ্যমে, আমি মনে করি অধ্যাপক জাফরের প্রতিবাদ তার যথার্থ জবাব (হতে পারে সেখানে ভাষা ব্যবহারে উদাহরণে কটূক্তি ও সংক্ষুব্ধ মেজাজের প্রকাশ ঘটেছে অধ্যাপক জাফরের। এটি আতি স্বাভাবিক, সে জন্যেই বলেছি আমি নিজে যতটুকু সংক্ষুব্ধ হয়েছিলাম অত্যন্ত ভদ্রভাবে তার জবাব দিতে হলে অধ্যাপক জাফরের এই লেখাটি একটি যথার্থ উদাহরণ হতে পারে।
এবার আপনি জনাব মাজহারকে যা বলেছেন তার প্রেক্ষাপটে আসি।
অধ্যাপক জাফর উল্লেখিত লেখক দ্বয়ের আমাদের গনতন্ত্র বিষয়ের বক্তব্যের বিপরীতে কিছু বলেছেন বলে আমার মনে হয়নি, পাইওনি। যা বলেছেন সেটা পরিবারতন্ত্র বলে যা আপনি উল্লেখ করেছেন তার প্রেক্ষিতে। যেটাকে জনাব জিয়া হায়দার রহমান, সৈয়দ আবুল মকসুদ, আপনি ও আরোও অনেকে পরিবারতন্ত্র হিসেবে দেখেন, আমি তা দেখিনা। আপনাকে প্রশ্ন করেছিলাম, আমাদের দেশে বিএনপি ও আওয়ামীলীগ এ দুটি দলের বর্তমানের প্রক্ষাপটে অটুট থাকা এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে যাওয়াটা (তাদের আধুনীকায়নের সাথে সাথে) জরুরী। এ দুটি দলের হাল ধরে রাখার জন্যে এই দুই নেত্রীর বাইরে আর কে তাঁদের মতো বা তাঁদের চেয়ে যোগ্য আছেন (আপনি বলেছিলেন দেশে তাঁদের (শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া) চেয়েও যোগ্য ব্যক্তিবর্গ আছেন) জানান। আপনি এড়িয়ে গেলেন। আমি এও বলেছিলাম, আমাদের বাংলাদেশে প্রকৃতঅর্থে গনতন্ত্র কোনকালে ছিলোনা এখনো নেই। একটা নির্বাচন মানেই গনতন্ত্র নয়। এর অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। এসব আমি যেমন জানি তেমনি আপনিও জানেন বোধকরি সবাই বুঝেনও, জনাব জিয়া হায়দার রহমান এবং সৈয়দ আবুল মকসুদও জানেন, জানেন অধ্যাপক জাফর ইকবালও। এই যে আওয়ামীলীগের নেত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি-র খালেদা জিয়া দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক শক্তিকে নেতৃত্ত্ব দিচ্ছেন, যেখানে তঁদের নেতৃত্ত্বের বিকল্প এখনো দাঁড়ায়নি সেটাকে পরিবারতন্ত্র বলে কটাক্ষ করাটা কতোটা যৌক্তিক বলে আপনি মনে করেন? বাংলাদেশের আস্তিত্ত্বকে যদি স্বীকার করতে হয় তাহলে সেখানে অবধারিত ভাবে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক অবস্থানকে স্বীকৃতি দিতেই হবে। আমাদের জাতীয় রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রথম সামরিক স্বৈরতন্ত্রের আবির্ভাব ঘটিয়েছিলেন জিয়াউর রহমান। তার ধারাবাহিকতায় একটি দলের আবির্ভাব। দলটি দেশের রাজনীতিতে এখনো সক্রিয় মুল রাজনৈতিক একটি শক্তি। এ দলদুটির বর্তমান নেতৃত্ত্বের মেধার অপ্রতুলতা থাকতে পারে কিন্তু সাংগঠনিক দিক থেকে দল দুটির জন্যে তাঁরা অপরিহার্য্য নয়কি? এটিই আমাদের বাস্তবতা। েক্ষত্রে এমন কোন নতুন মহাতত্ত্বের আবির্ভাব হয়েছিলো যার গলা টিপে মেরে ফেলা হয়েছিলো? আমি যতটুকু মনে করতে পারি সেটা যথাক্রমে ওয়ান মাইনাস এবং পরে টু-মাইনাস! আর যতটুকু জানি সেটাও ছিলো একটা ষড়যন্ত্র! এর বাইরে আর কোন মহাতত্ত্বের পত্তন হয়েছিলো আশা করি জানাবেন। এরই প্রেক্ষিতে জনাব জাফর ইকবাল বৃটেনের রাজতন্ত্রের উদাহরণ টেনে থাকবেন। খুব ভুল কিছু কি? বৃটেনের রাজনীতিতে রাজপরিবারের ভূমিকা নেই? ঘড়োয়া রাজনীতিতে হয়তো অতোটা নেই, আইন প্রনয়নে ও অনুশীলনে রাজপরিবারের অনুমতি লাগেনা? অন্যদেশে সেনা অভিযানে রাজপরিবারের অনুমতি লাগেনা?
আপনার কথাটিই দেখুন, বাংলাদেশ মৃতদের দেশ’ কিংবা ‘মৃত চিন্তাভাবনার দেশ’ কোনটাই এভাবে বলা হয় নি, বলা হয়েছে যে, ‘বাংলাদেশ হচ্ছে মৃত চিন্তাভাবনার দেশ; কি পার্থ্যক্য হলো? জনাব জিয়া হায়দার এবং জনাব সৈয়দ আবুল মকসুদের এই কথা অত্যন্ত নেতিবাচক, যা একটি জাতির প্রতি ঘৃনা প্রকাশের নিমিত্তেই প্রদত্ত। জিয়া হায়দার রহমানের এই ধরনের বক্তব্যকে আপনি সমর্থন করেন বলেছেন। এবার আপনাকে আমার একটা জিজ্ঞাস্য আছে, আপনি দয়া করে বলুন দেশে সম্প্রতি কোন আইডিয়াকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে, যা কিনা পরিবারতন্ত্রের ক্ষত হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে?
এইযে দুটি মৃত মানুষের কথা বলা হলো, তার একটি হলো আমাদের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু আর অন্যটি জিয়াউর রহমান। অত্যন্ত সংগত কারণেই এখনো এই দুটি মানুষের অবয়ব রাজনীতিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। কারণ, যোগ্য নেতৃত্ত্বের সংকট। আর যাঁরা এখন নেতৃত্ত্ব দিচ্ছেন তাঁদেরও বিকল্প নেই! এই সংকট সৃষ্টি করেছেন জিয়াউর রহমান স্বয়ং তাঁর ১৯৭৫ পরবর্তীতে রাজনীতিকে জটীল করার কার্যক্রমের মধ্যমে। এর ফলে আজ আওয়ামীলীগ সহনশীল উদার ডান থেকে সরে এসেছে কট্টর ডানে আর জন্মলগ্ন থেকেই প্রতিক্রিয়াশীলদের ভারে নুব্জ্য বিএনপি এখন অতি প্রতিক্রিয়াশীলদের একটি সংগঠন। উভয় দলই এখন স্বার্থান্বেষী, লুটেরা, অকর্মন্য, মেধাহীন রাজনীতিকের আড্ডাখানা। শুধু এ দুটো দলই নয় দেশের অপরাপর রাজনৈতিক শক্তি গুলোরও একই বেহাল দশা। বিগত ৪০ বছরেরও বেশী সময় ধরে এই জঞ্জালে জড়িয়েছে আমাদের রাজনীতি। এর শুদ্ধিকরণ দরকার । সবাই সেটা জানে। এমনকি রাজনৈতিক দল গুলোও। কিন্তু রাতারাতি কি সম্ভব? আর এ নিযে দেশে, দল গুলোতে, সমাজে, নাগরিক মননে, শিক্ষাঙ্গনে বাভিন্ন মিডিয়ায় কোথায় না আলোচনা পর্যালোচনা, সমালোচনা, গবেষনা হচ্ছে? তার পরেও কি বলতে হবে দেশটি একটি মৃত চিন্তা ভাবনার দেশ? আমার ধারনা, অধ্যাপক জাফরের প্রতিবাদটি ঠিক এইখানেই।
আর তাই জনাব জিয়া হায়দার রহমান এবং সৈয়দ আবুল মকসুদের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর আমি তীব্র নিন্দা জানাই। আমি বিন্দুমাত্রও তাঁদের বক্তব্যের সাথে একমত নই।
বিদেশে গিয়ে অনেকেরই থালা বাসন ধুতে হতে পারে। ধরে নিলাম লেখক ও তাদের একজন। তবু এটা এত ব্যক্তিগত ভাবে নেবার কোন কারণ দেখলাম না। লেখাটা’র মূল বিষয় ছিল স্বপ্ন দেখা নিয়ে। আবার ভাবুন। আমাদের স্বপ্ন দেখার ‘স্বপ্ন’ বন্ধ করে দিবেন না দয়া করে।
@রুবেন,
আমার লেখাটি যদি আপনার কাছে এতটাই খারাপ লেগে থাকে, তাহলে আসুন, আলোচনা হোক। আপনি কিন্তু কোন মন্তব্য করেন নি, শুধুই অভিযোগ করেছেন। কোন ভুল করে থাকলে তা স্বীকার করতে আমার দ্বিধা নেই। মুহম্মদ জাফর ইকবালের আমিও একজন নিষ্ঠাবান পাঠক, এবং তাকে শ্রদ্ধা করি বলেই তার সমালোচনা করেছি – কোন ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে নয়। ধন্যবাদ।
“মুক্ত-মনা শব্দটি ইংরেজি ‘ফ্রিথিঙ্কার’ শব্দটির আভিধানিক বাঙলা। ‘মুক্ত-মনা’ সাইটটি জাহানারা ইমাম পুরস্কারপ্রাপ্ত ওয়েবসাইট, এবং বাঙালি ও দক্ষিণ এশীয় মুক্তচিন্তক, যুক্তিবাদী এবং মানবতাবাদীদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত অলাভজনক আলোচনা চক্র। আমরা আমাদের ব্লগে আলোচনা এবং লেখালিখির পাশাপাশি বিজ্ঞানমনস্ক, প্রগতিশীল এবং কুসংস্কারমুক্ত সমাজ তৈরির স্বপ্ন দেখি। আমাদের স্বপ্নিল ভুবনে স্বাগতম, হে স্বপ্নচারী …”
নিজেক একজন মুক্ত মনা’র পাঠক ভাবতে ভাল লাগত, এখন লজ্জা লাগছে। একটু অপমান ও লাগছে সাথে। প্রতারিত হবার অপমান। এই ব্লগে এই রকম কুতসিত লেখা আগে কখনও পড়িনি। চরম বাজে রূ্চি এবং কপটতায় ঠাসা জঘন্য একটা লেখা।
নিজেক একজন মুক্ত মনা’র পাঠক ভাবতে ভাল লাগত, এখন লজ্জা লাগছে। এই ব্লগে এই রকম কুতসিত লেখা আগে কখনও পড়িনি। চরম বাজে রূ্চি এবং কপটতায় ঠাসা জঘন্য একটা লেখা।
আশরাফুল আলম,
প্রথমেই আপনাকে স্বাগতম। আমি কিন্তু আগেও অধ্যাপক জাফর ইকবালের এই লেকা পড়েছি। পড়েছি আবুল মকসুদের লেখাটিও। আমি অধ্যাপক জাফরের বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ একমত। কারণ দ্বিমতের কোথাও কোন অবকাশ আছে বলে আমার মনে হয়নি। আমি দেশে থাকিনা, কিন্তু তার পরেও দেশের বিভিন্ন ঘটনায় মর্মাহত হই, সমালোচনা করি। কখনো কখনো মনে হয় আমার এই সব সমালোচনা বাঁচালতা, এমনকি উশৃঙ্খলতাও! তারপরেও তেমনটি করে ফেলি। অধ্যাপক জাফরকে সেদিক থেকে তেমনটি করতে কখনো দেখেছি বলে মনে পড়ে না। আপনি যা যা বললেন আমার মনে হয় আপনি অধ্যাপক জাফরের লেখা পড়ে ভুল বুঝেছেন। আমার মনে হচ্ছে না যে তিনি কোথাও কাউকে অসম্মান করেচেন বা করার চেষ্টা করেছেন। বরং সৈয়দ আবুল মকসুদ এর মতো লেখকের লেখায় যে হতাশার জন্ম হয়েছে সেটা যে আক্ষরিক অর্থেই ঠিক নয় সেটাই বেদনা বোধের সাথে উৎকীর্ণ হয়েছে। একটু পরিষ্কার করুন তো অধ্যাপ জাফর ইকবালের কোন কোন পয়েন্ট গুলো আপনার কাছে “অর্ধসত্য, অপযুক্তি ও বিদ্বেষের মিশেলে” বলে মনে হয়েছে।? আমাদের দেশ জুড়ে সবার মাঝে যে হতাশা বেদনা আছে তা অধ্যাপক জাফরের মাঝেও আছে। তিনি তা অস্বীকার কোথাও করেন নি। কিন্তু তাই বলে দেশের চিন্তা চেতনা বন্ধ্যা, নিষ্ফলা এগুলো কোন ভাবেই গ্রহন যোগ্য নয় বোধ হয়। আমি নুজেও একজন শিক্ষক, আমারো ছাত্র-ছাত্রীরা দেশে বিদেশে যে সৃজনী শক্তির প্রকাশ ঘটিয়ে চলেছে, খবর পেয়ে আমি নিজেই চমৎকৃত হই! না না জনাব আশরাফুল আলম, আপনার এই সমালোচনার কোন হেতু আমি খুঁজে পাচ্ছি না্ ….আবার ভাবুন।
@কেশব কুমার অধিকারী, সম্পূ্র্ন সহমত স্যার ।
@কেশব কুমার অধিকারীথ আপনার কথা ঠিক। কেননা সমালচনা করা বড়ই সহজ। কিন্তু আশা জাগানো ততধিক কঠিন। আর যে কাজটা জাফর স্যার করে আসছেন অনেক দিন থেকেই ।মকসুদ সাহেবরা গায়ে গান্দিজির পোশাক পরলেও, লেখার মাধ্যমে হতাশা ছাড়া আশা জাগাতে পারেন না। এটাই বাস্তবতা। আমরা আশাবাদী হতে চাই।
বিদেশী লোকজনের কথায় বাংলাদেশী মানুষের নাচানাচির অভ্যাস নতুন না! জিয়ারা হায় হায় করেই যাবে…. সমস্যা হলো এদের হায় হায় কেউ কানে তুলে না। হা…হা…
এইভাবেই পাশাপাশি দুইটি বাক্যে দ্বিচারিতার ছাপ রেখে শুরু হয় জাফর ইকবাল বধ পর্ব, যদিও প্রথম দিকের বঙ্কিম এবং রবীন্দ্রনাথ উপাখ্যানটি যথেষ্ট আকর্ষনীয় ছিল, তবে সেই উপাখ্যানের সঙ্গে জাফর ইকবালের সাম্প্রতিক লেখার এমনকি দূরতম কোন সম্পর্ক আছে কিনা, লেখাটির শেষ অবধি যেয়েও তা বোঝা সম্ভব হয়নি।
‘বাংলাদেশ মৃতদের দেশ’ এবং ‘বাংলাদেশ হচ্ছে মৃত চিন্তাভাবনার দেশ’ এই দুটি কথার মধ্যে যে তেমন কোন পার্থক্য নেই, সাহিত্যের এমনকি নবীন পাঠকেরও তা বোঝার কথা!
আবারও একই কথা! ‘না, বাংলাদেশ মরে নি’ আর ‘না, বাংলাদেশ মৃত চিন্তাভাবনার দেশ নয়’ এর মধ্যে পার্থক্য খোঁজা!!! হায়রে!
কই? লেখক যদি ভাল করে জাফর স্যারের লেখাটি পড়ে থাকেন, তাহলে দেখবেন, সচেতনভাবেই জিয়া হায়দারকে ব্রিটিশ লেখক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন স্যার। জিয়া হায়দার যে ব্রিটিশ, এ বিষয়ে কুনো সন্দেহ আছে? জিয়া হায়দারকে জিজ্ঞাসা করুন না! আর ব্রিটিশরা যে আমাদের কথায় কথায় সদুপদেশ দিয়ে থাকেন আমরা মাথা পেতে মেনে নিব এই ধারণা মাথায় রেখে, এ কথার মাঝেও সন্দেহ আছে কোন?
‘দুই-তিনটি লাইনকে অনেক বড় করে ব্যাখ্যা করার জন্যে’…কথাটির মানে মকসুদকে নিয়ে লেখিয়ে নেয়া বোঝায়? মকসুদ যেহেতু জিয়াকে সমর্থন করছেন বা অনুরূপ ধারণা পোষন করছেন, তাই অমনি বলা যায়, বলা হয়, সাহিত্যে। রবীন্দ্রনাথকে দিয়ে শুরু এবং শেষ হয়েছে এই লেখা, অথচ এই লেখায় সাহিত্যের ভাষাকে একেবারেই না বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে আগাগোড়া!
বাহ্! চমৎকার! জাফর ইকবাল তার আলোচিত লেখায় পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন!
ব্রিটেনের রাজতন্ত্রের বিষ দাঁত ভোতা হতে শুরু করেছে বটে, কিন্তু সেই দাঁত পুরোই পোষাকী? কোন প্রভাব নেই তার? তাছাড়া, পরিবারতন্ত্র পশ্চিমাদেশগুলোতেই কি পুরোপুরি বিলীন হয়েছে?
জাফর ইকবাল স্যার তার মায়ের জীবন থেকে যে উদাহরণ দিয়েছেন, তা মহত্বের গল্প ফাঁদার সাথে তুলনীয়? জানি না, এরচেয়ে বড় অশ্রদ্ধা আর কিছু হতে পারে বলে আমার জানা নেই!
‘টু লেডিস’ আর ‘টু বেগম’ এর মাঝে পার্থক্য কি??? ‘টু লেডিস’ শব্দচয়নকে জাস্টিফাই করতে গিয়ে ‘টু প্রিন্স’ এর প্রসঙ্গ আনা হয়েছে জয় এবং তারেককে উত্তরাধীকার ধরে নিয়ে; অথচ হাসিনা এবং খালেদাকেও যে ‘টু প্রিন্সেস’ বলা যেত, তা মনে হয় লেখকের মাথায় আসেনি!
‘শেখ হাসিনা হ্যাটট্রিক করবেন’ এর অবধারিত মানে করা হল ‘আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব মানেই শেখ হাসিনা বা তার ছেলে’ বা জয়ের ক্ষমতায় আরোহন!!!
এই তো জায়গায় এসেছেন! লেখক যদি জাফর স্যারের লেখাটি ভাল করে অনুধাবন করতেন, তাহলে সেখানে সেক্সিজম, রেসিজম ইত্যাদি আবিষ্কার না করে এই জায়গায় পৌঁছুতেন। স্যারের মূল সমালোচনা জিয়া হায়দারের এই মনোভাবকে ঘিরেই, কেন জিয়া আলো দেখতে পাবেন না, কেন তরুন প্রজন্মের জন্য কঠিন হবে। আমাদের আলো নিয়ে আজ সারা বিশ্বে আলোচনা হচ্ছে, অথচ একজন ব্রিটিশ বংশোদ্ভুত বাংলাদেশী কোন আলোই দেখতে পাচ্ছেন না????
মকসুদ সাহেবের কথার শুধু একটাই জবাব দেয়া যেতে পারে, আর তা হলঃ সামাজিক সূচকে আমরা ভারতকেও হারিয়েছি, বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির ক্লাসগুলোতে এখন ‘বাংলাদেশ প্যারাডক্স’ বা ‘বাংলাদেশ মিরাকল’ নিয়ে আলোচনা হয়।
এই ধরনের বিদ্বেষ মুক্তমনার সাথে যায় কিনা, আমার জানা নেই!
@গুবরে ফড়িং,
পুরো মন্তব্যটার সাথেই একমত। আপনার মন্তব্যের সাথে একটা কথা যোগ করতে চাই। লেখক নিজেই লেখার মধ্যে বলেছেন:
আশা করি লেখক নিজের কথাটা থেকে নিজেই শিক্ষা নিবেন। যেভাবে জিলাপীর মত কথা পেচিয়ে জাফর স্যারকে সেক্সিস্ট, পরিবারতান্ত্রিক, অপযুক্তিবিদ, স্টেরিওটাইপিস্ট সহ আরো অনেক কিছু বানিয়ে দেয়া হলো তাতে লেখকের বিদ্বেষ ছাড়া আর কিছু প্রকাশ পাচ্ছে না।
সব মিলিয়ে গার্বেজ একটা লেখা।
@রামগড়ুড়ের ছানা, সম্পূ্র্ন সহমত।
লেখাটি যৌক্তিক, তবে আরও র্নিমোহ হতে পারতো।যেমন– “কথায় কথায় তিনি আঠারো বছর বিদেশে থাকার কথা বলেন”, এ ধরনের ব্যক্তিগত আক্রমণ না করলেই ভালো হতো।
@গীতা দাস,
মানছি। ধন্যবাদ।
আপনার এই লেখাটি রেখে প্রথম পৃষ্ঠা থেকে দ্বিতীয় লেখাটি সরি্যে নিলে আলোচনা করতে সুবিধে হবে। লেখার সাথে জাফর ইকবালের লেখাটার লিংক দিলে ভাল হতো।
না, বাংলাদেশ মারা যায়নি– জাফর ইকবাল।
সেই লেখার একজন পাঠকের সাথে আমি সহমত পোষণ করি বিধায় তার মন্তব্যটি এখানে তোলে দিলাম-
@আকাশ মালিক,
মুক্তমনায় নতুন। কিছু জিনিস শেখার চেষ্টা করছি, যেমন উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহার, লিঙ্ক দেওয়া, এসব। লেখাকে প্রথম পাতা থেকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারেও এখনো জানি না। সাহায্য পেলে উপকৃত হই। ধন্যবাদ।