০১. সারা পৃথিবীতে ‘টারজান’ চরিত্রটি কমিক্স বই, উপন্যাস, সিনেমা ও কার্টুন ছবিতে প্রায় একশ বছর ধরে দাপটের সঙ্গে নিজস্ব জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে। ছোট বেলায় ’টারজান’ বা তার প্রেমিকা ’জেন’ হতে চায়নি, এমন বালক-বালিকা খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
টারজান একটি কাল্পনিক চরিত্র। এডগার রাইজ বারোজ এই কমিক্স চরিত্রের নির্মাতা। ’টারজান’ কথাটির অর্থ ‘শাদা মানুষ’। ‘টারজান অব দা এপস’ উপন্যাসে টারজান চরিত্রটি প্রথমে জনপ্রিয়তা পায়। মূল গল্পে দেখা যায়, দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সভ্য জগত থেকে একটি পশ্চিমা শিশু আফ্রিকার গহিন অরণ্যে গোরিলাদের (এপ) খপ্পরে পড়ে। এক গোরিলা মাতা তাকে স্তন্যদান করে এবং এপ শাবক হিসেবে যতেœ বড় করে তোলে। ক্রমেই শক্তি, বুদ্ধি মত্তায় টারজান গোরিলাকূলের তো বটেই অরণ্যের সমস্ত বন্য প্রাণীর রাজা হিসেবে ঘোষিত হয়। আফ্রিকার হিংস্র ‘জংলি’ কালো মানুষরাও তাকে প্রভু হিসেবে মেনে নেন।
টারজানের বিপরীত পাঠ বলছে, এডভেঞ্চার, বীরত্ব, প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীর প্রতি দুর্বার আকর্ষনের ছদ্মবেশে ‘টারজান’ আসলে শিশু মনো জগতে সাদা মানুষের নয়া উপনিবেশ। এই চরিত্রটি শিশুমনে প্রছন্নভাবে এই ধারণা বদ্ধমূল করে, সাদা মানুষেরাই সর্ব শ্রেষ্ঠ, সভ্য জগতে তো বটেই, এমনকি বনে-জঙ্গলে, পশু-পাখির জগতে এবং ‘জংলি, নরখাদক, অসভ্য, আদিম’ কালো মানুষদের চেয়ে সর্বদাই সাদা মানুষ শ্রেষ্ঠতর। টারজান হচ্ছে তারই প্রতীক। আবার নারীবাদিরা টারজানের একক পুরুষোচিত শৌর্য-বীর্য জাহির করা নিয়ে সমালোচনায় মুখর।
০২. ইউরোপীয় সাদা চামড়ার এই জাত্যাভিমান কি এক আশ্চর্য মিথস্ক্রিয়ায় আমাদের বাঙালি জাতীয়তাবাদী মগজে হানা দিয়ে পাহাড়, বনে-বাঁদাড়ে বসবাসকারী ভাষাগত সংখ্যালঘু আদিবাসী মানুষদের বামন সংস্কৃতিতে দেখার চোখ তৈরি করে। পর্যটক থেকে শুরু করে শিশু মাত্রই মনছবিতে এই ধারণা নিয়ে বড়ো হয়, আদিবাসী মানেই ‘জংলি, অসভ্য, নরখাদক’ বা খুব বেশী হলে ‘মদ-শুকর-সাপ-ব্যাঙ খেকো’।
উন্নয়ন ও তথা কথিত সভ্যতা থেকে পিছিয়ে পড়া আদিবাসীদের দেখার ক্ষেত্রে সংখ্যাগুরু বাঙালি এই জাত্যাভিমান সাধারণের মনে এক বৈপরিত্যের সহাবস্থানে লোভাতুর চোখও তৈরি করে। দৃষ্টি সুখের মোহটি বিশেষভাবে প্রকট আদিবাসী মেয়েদেরকে ‘রোমান্টিক’ বা ‘প্রেম কাতর’ হিসেবে বাঙালি মনছবিতে দেখায়। এর একটি কারণ বোধহয়, আদিবাসী মেয়েরা প্রকৃতির মতোই সরল, সুন্দর ও সাবলীল [রাঙামাটির রঙে, চোখ জুড়ালো, সাম্পান মাঝির গানে, মন ভরালো…]।
কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি বড়োই নির্মম। যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত এই সেদিনের আদিবাসী অধ্যুষিত পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাস পর্যলোচনা করলে দেখা যায়– পাহাড়, অরণ্য, ঝর্ণা ধারায় নয়নাভিরাম পার্বত্যাঞ্চলের ইতিহাস হচ্ছে গণহত্যা, গণধর্ষণ, শোষণ আর বঞ্চনার ইতিহাস। সেনা সন্ত্রাসে দেড় দশক আগে নিখোঁজ নারী নেত্রী কল্পনা চাকমার শেষ পরিনতি কি — তা সহজেই অনুমেয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতল কি পাহাড়ে — আদিবাসী অধ্যুষিত অন্যান্য এলাকার চিত্রও কি প্রায় একই রকম নয়? জমি কেড়ে নিয়ে, ভাষা কেড়ে নিয়ে, ধর্ম নষ্ট করে, মেয়েদের নষ্ট করে, গলা টিপে ক্ষুদ্র জাতিসমূহকে ধ্বংস করার এক নিরব সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা কি সর্বত্রই বাস্তবায়িত হয়ে চলছে না?
ল্যনীয়, ৬০ দশক থেকে এ পর্যন্ত চলে আসা বাংলা — হিন্দী সিনেমা, এমন কি টিভি নাটকে কি হেয় ভাবেই না উপস্থাপন করা হয় আদিবাসীদের — বিশেষ করে আদিবাসী মেয়েদের। এই সব গণমাধ্যম ছোট-বড় সবার মনছবিতে প্রচ্ছন্নভাবে এই ধারণাটি প্রকট করে তোলে যে, আদিবাসী মানেই ‘জংলি, অসভ্য, বর্বর ও নরমাংসভোজী’।
সেইসব বাজারী সিনেমা বা নাটকে দেখা যায়, শহর থেকে পরদেশী বাঙালি বাবু সাহেব গেছেন পাহাড়ে কি অরণ্যে বেড়াতে বা শিকারে বা কর্মসূত্রে। ছমক ছমক নৃত্যগীতি-ঢোল-বর্শা-মদ্যপানে প্রেম হলো তার জংলী রাণীর সঙ্গে। এতেই ক্ষেপে গেলো ‘পরদেশী বাবু’র ওপর পুরো অরণ্যচারী জনপদ– ইত্যাদি ইত্যাদি [তুই দূর পাহাড়ের দেশে যা, রাঙামাটির দেশে যা, হেথায় তোরে মানাইছে না রে, হেথায় তোরে ইক্কেবারে মানাইছে না রে…]।
একই উগ্র জাতীয়তাবাদী দর্শন বলে শিশুতোষ পাঠ্য থেকে শুরু করে উচ্চতর শিক্ষা ও নানা গবেষনাপত্রেও আদিবাসী সর্ম্পকে জনমনে হেয় ও ভ্রান্ত ধারণা তৈরি করে চলেছে।
০৩. এই বাজারী দর্শনের সূত্রে বেশ কিছুদিন ধরে টেলিভিশনে প্রদর্শিত হচ্ছে গ্রামীণ ফোনের ‘আমন্ত্রণ প্যাকেজ’এর একটি কুৎসিত বর্ণবাদী বিজ্ঞাপন। সেখানে দেখা যাবে, অদ্ভুদ সাজ-পোষাকে রং মেখে কিম্ভুদ-কদাকার ‘জংলি’রা বন্দী করেছে এক শহুরে বাঙালি বাবুকে। হঠাৎ বন্দীকে চিনে ফেললো জংলি-রাজা। এর পর চাকভূম ঢোলের তালে তালে চললো উদ্দাম নৃত্যগীত। পত্রিকাতেও প্রকাশিত বিজ্ঞাপনটির স্থির চিত্রে বাঙালি বাবুর সঙ্গে ‘জংলি রাজা’র হাস্যোজল যুগল ছবি দেখা যায়।
এই বিজ্ঞাপন চিত্রটি নিয়ে এরই মধ্যে ফেবু’র একাধিক আদিবাসী বিষয়ক গ্রুপে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। ব্লগে ব্লগে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভ। করপোরেট গ্রুপ গ্রামীণ ফোনকে আন্তর্জাতিকভাবে কালো তালিকাভূক্ত করার দাবি উঠেছে। আদিবাসী তরুণ বুদ্ধিজীবীরা বিজ্ঞাপনটির বিরুদ্ধে জোট বাঁধতে শুরু করেছেন। দাবি উঠেছে, সব কয়েকটি আদিবাসী দল ও সংগঠনের প থেকে এর বিরুদ্ধে গণস্বার সংগ্রহ করার, জনমত গড়ে তোলার ও সম্মিলিতভাবে তীব্র প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তোলার।
গ্রামীণ ফোনের ‘আমন্ত্রণ প্যাকেজের’ বিজ্ঞাপন চিত্রটির আরেকটি বড়ো বিপদ পার্বত্য চট্ট্রগ্রামের পাহাড়ি আদিবাসীদের জন্য। এই বিজ্ঞাপনের অন্তরজাত দর্শন বলে সংখ্যাগুরু বাঙালিরা মনে করতেই পারেন, পাহাড়িরা যেহেতু এখনো ইউরোপিয় মানের তো বটেই, এমনকি বাঙালি মানেও ‘আধুনিক’ হয়ে ওঠেনি, ‘জংলি ও অসভ্য’ রয়ে গেছে, সেহেতু সেখানে প্রায় চার দশক ধরে সেনা মোতায়েন, তথা সেনা শাসন বজায় রাখা খুবই যৌক্তিক। অন্যথায় পাহাড়ে জঙ্গলের আইন কায়েম হওয়ার খুবই আশঙ্কা রয়েছে [বেতাল, অরণ্যের প্রহরী]।
০৪. বিজ্ঞাপনের এই বর্ণবাদী/ উগ্র সাম্প্রদায়িক/জাত্যাভিমানী দর্শনের বিপরীতে সভ্যতা, পর্যটন বিষয়ক বিপরীত পাঠে নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে এক বর্ষিয়ান আদিবাসী নেতাকে উদ্ধৃত করা যাক। খাসি নেতা অনিল ইয়াং উইম সম্ভব তার জনগোষ্ঠির মধ্যে একমাত্র, যিনি এখনো ধর্মান্তরিত হননি, পুরো খাসি জনগোষ্ঠি অনেক আগেই খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত হলেও তিনি এখনো প্রকৃতি পূজারি আদি ধর্মেই রয়ে গেছেন।
কয়েক বছর আগে কুলাউড়ার খাসিয়া পাহাড় গর্জে উঠেছিলো ইকো-পার্ক ঠেকাও আন্দোলনে। একই আন্দোলনে সে সময় প্রাণ দেন মধুপুরে পিরেন স্নাল। এক-এগারোর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় চলেশ রিছিল।
সে সময় খাসি নেতা অনিল ইয়াং ইউম এই লেখককে বলেছিলেন:
যে পর্যটন আমার গ্রাম ধ্বংস করবে, নষ্ট করবে গাছবাঁশ, পানের বরজ, পাহাড়ি ছড়া, আর আমার মেয়েদের, আমি নেতা হিসেবে নয়, এই পাহাড়ের সন্তান হিসেবে বলছি, যে কোনো মূল্যে সেই পর্যটন আমরা রুখে দেবো। আমি শহর চাই না, দালান চাই না, রাস্তা চাই না, বিদ্যুত, টিভি, সিনেমা — এসব কিছুই চাই না। আমার অরণ্যে যুগ যুগ ধরে আমার মতো করেই আমি বাঁচতে চাই!
___
ছবি: গ্রামীণ ফোনের বিজ্ঞাপন চিত্র।
বিপ্লব রহমান,
দাদা, আপনাকে এই লেখার আগে মেইলে জিজ্ঞেস করেছিলাম এই বিজ্ঞাপণ নিয়ে, কেন আপনি এটা নিয়ে জনমত তৈরি করতে চাইছেন, এটা তো নির্দোষ ফেন্টাসিও হতে পারে। আমি সরাসরি এর উদ্দেশ্যটা বুঝি নি। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে এই লেখাটা আসলেও। এটাকে সাময়িকভাবে নির্দোষ ফেন্টাসি হিসেবে উড়িয়ে দেওয়াই যায়, কারণ আসলে তো বাংলাদেশের কোন আদিবাসী নরখাদক না, তারা এরকম “জংলী” না, গুরুত্ব দেবার কিছু নেই, ইত্যাদি। কিন্তু বিজ্ঞাপণটি একটি টেলিকম নেটওয়ার্কের, তারা দেখাছে এই কোম্পানি বাংলাদেশের মধ্যে থেকে বাংলাদেশের কোন সত্যিকার মানব গোষ্ঠীকে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করছে! তাহলে এখানে ফেন্টাসিটা কোথায়! যেহেতু এরা বাঙ্গালী নয়, তাহলে নন-বাঙ্গালী বাংলাদেশি হবে। আমাকে ডিডাকশনের মাধ্যমেই এর সূক্ষ্ম প্রোপাগান্ডা বুঝতে হয়েছে। তাও আমি বেনিফিট অভ ডাউট দিতে চাই। যদি এটা উদ্দেশ্যমূলক না হয়, তবে গ্রামীনফোনের উঠিৎ হবে এই বিজ্ঞাপণ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরিয়ে ক্ষমা প্রার্থণা করা। শেইম অন দ্যাম।
@সুম সায়েদ,
এখানে আছে সেই বিতর্কিত বিজ্ঞাপন। এবার দেখা যাক কার মতামত কী?
@আকাশ মালিক,
আমার পূর্বের মত বহাল আছে।
টারজানের ব্যাপারেও মত একই থাকবে। টারজানের ভেতরে যে শ্বেতাঙ্গ-শ্রেষ্ঠত্ব প্রবণতাটা তা এখন সর্বজনবিদিত। কিন্তু তার জন্যে টারজান ব্যান করার কথা বললে হাসাহাসি পড়ে যাবে।
@আকাশ মালিক,
ভিডিও এর জন্য ধন্যবাদ, ছবিই দেখেছি শুধু এতদিন। হাই রেজিলেশনে চিন্তাহীন একটি এড্। টারজান টাইপ মুভ্যির জংলীগুলো এখন ক্লাসিক্যাল চরিত্রমাত্র। বর্তমান যুগের কোন চিত্রকার এই একই ভুল করার দুঃসাহসও করবে না। এই জন্যই জেমস ক্যামেরুন “আভাটার” মুভ্যি বানিয়েছেন, যেখানে “শ্বেতাঙ্গ-শ্রেষ্ঠত্ব” দেখানোর জন্য অন্য গ্রহে গিয়ে সেখানকার আদিবাসীদের রক্ষা করতে হয়। বাংলাদেশের এড্ নির্মাতারা হয়তো তালি পাবার জন্য ক্লাসিক্যাল জংলী চরিত্র চুরি করে নিয়ে এসেছে, কিন্তু এটাকে কোনভাবেই সমর্থন করার মানে নেই। যেখানে কেউ কেউ আমাদের দেশের আদিবাসীদের ছোট করে দেখানোর সুযোগ সবসময় খোঁজে, সেখানে এরকম প্রোপাগান্ডামূলক এড্ অনুৎসাহিত করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।
@আকাশ মালিক,
বিতর্কিত বিজ্ঞাপনটি সংযুক্ত করায় আপনাকে ধন্যবাদ। 🙂
@সুম সায়েদ,
ফেবু’র ইনবক্সের আলাপচারিতার সূত্র ধরে চলতি নোটের আলোচনায় আশাকরি গ্রামীণফোনের ওই ফ্যান্টাসি বিজ্ঞাপনের অন্তরদর্শনের বিপদটুকু এরই মধ্যে অনেকটাই পরিস্কার। এ নিয়ে অন্তর্জালের অসংখ্য পোস্টে প্রতিবাদের পর প্রতিবাদ চলছে, প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে পাহাড়ে ও সমতলের আদিবাসী সংগঠনগুলোর মধ্যেই।
নৈতিক সমর্থনের জন্য আবারো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। (Y)
এই ধরনের আলোচনা প্রয়োজনের বেশী সংবেদনশীলতার প্রদর্শন।
এর থেকে আরেকটা সহজ প্রশ্ন করলে ভাল হত- এই পাঠক পাঠিক বর্গের মধ্যে কজন উচ্চ শিক্ষিত আদিবাসীদের সাথে বিবাহ করতে রাজী আছেন?
তবে হ্যা, লোলুপ দৃষ্টিতে ক্ষতি কি? বাঙালী ভদ্র সমাজের মেয়েদের শরীরে মেদ এত বেশী মেদহীন, সুঠাম তন্বী আদিবাসি তরুনীদের প্রতি বাঙালী পুরুষ সমাজের লোভ বহুকালের। যখন আই আই টি তে ছিলাম, ওখানের অনতি দূরে টাংরার হাট বলে আদিবাসীদের একটা হাট বসত। আদিবাসী মেয়েরা সেজে গুজে এসে পুরুষদের মহুয়া খাওয়াত। আমাদের মধ্যের দু একজন কবি বসে যেত তাদের হাতে মহুয়া খেতে-প্রেম ট্রেম নিবেদন ও চলত। ওসব অঈ পর্যন্তই!!!
@বিপ্লব দা,
আদিবাসী তরুনীরা অবশ্যই নেচারালি খুবই সুন্দর, কিন্তু, একটা সামাজিক স্ট্যান্ডার্ড তৈরি না করলেই কি নয়! জেনেরাল ভাবে সব আদিবাসী মেয়েকে “মেদহীন, সুঠাম তন্বী” না বললেই মনে হয় ভাল। আমি আদিবাসী ভদ্র সমাজের মেয়েদের দেখেছি, যাদের “পিকচার পার্ফেক্ট” মেয়েদের ফিগার থেকে হয়তো মেদ বেশি, কিন্তু, সব আদিবাসী মেয়েদের মেদহীন হতে হবে ইত্যাদি সামাজিক স্ট্যান্ডার্ডের জন্য তাদের নানা সময় অতিরিক্ত অস্বস্তিকর মন্তব্যের স্বীকার হতে হয়। হয়তো বাঙ্গালী মেদযুক্ত কোন সাধারণ মেয়ের থেকে বেশিই কুমন্তব্য শুনতে হয়। জানি ওটা আপনার ক্ষোভের থেকে বক্তব্য, কিন্তু মেয়েদের শারিরীক গঠন নিয়ে বললেন, কিছু না বলেও পারলাম না। আপনার বক্তব্যটাই টানলাম, এ ধরণের আলোচনায় প্রয়োজনের বেশি সংবেধনশীলতার প্রদর্শন।
সুন্দরের প্রতি সবারই একটা আলাদা টান থাকে। বাঙ্গালী পুরুষ আরো বেশি করে আদিবাসী মেয়েদের দেখুক, কিন্তু সৌন্দর্য্যের সম্মানও করুক। লোলুপ দৃষ্টিতে শুধু নয়, প্রেমিকের দৃষ্টিতেই দেখুক। জানি না বাস্তবে কেন এমন হয় না! যে বাঙ্গালী পুরুষ আদিবাসী মেয়ের সাথে শুধু প্রেম নিবেদন করেই সারা, সে বাঙ্গালী কোন তথাকথিত অসুন্দর মেয়ের সাথে প্রেম নিবেদনও করবে না! এসব পুরুষদেরই ধিক্কার।
@সুম সায়েদ,
লোলুপ আর প্রেমিকের দৃষ্টি আলাদা এই ধরনের কাব্যিক অবৈজ্ঞানিক আলোচনার ভাগীদার হতে ইচ্ছুক না। কালিদাস থেকে রবীন্দ্রনাথ সবাই নারীর দেহরসে মজেছেন-আর বাকী সাধারন পুরুষরা কি দোষ করল?
আর পিকচার পারফেক্ট ফিগার রাখার চাপ যদি নারীর ওপর থাকে খারাপ কি? অন্ত্ত সেই জন্যেই জিমে যাবে বা হাঁটবে। একটু ঘাম ঝড়াবে। ফিগার রাখার ওই চাপ না থাকলে বরং খাবে আর চেয়ারে বসে আড্ডা মেরে মোটা হবে-তাতে শরীরে যাবতীয় রোগ দানা বাঁধবে। সুতরাং ফিগার রাখার চাপটা থাকাই ভাল।
আর সুন্দরীদের প্রতি আকর্ষন বিবর্তনের জন্য- বিবর্তনকে ধিক্কার দিয়ে কি হবে? আকাশে গুলি ছুড়ে লাভ আছে?
মুখশ্রীর থেকে ছেলেরা মূলতা আকৃষ্ট হয়ে মেয়েদের ফিগারে এবং পারসোনালিটিতে। শেষের দুটোই কিন্ত মেয়েটির নিজের হাতে।
@বিপ্লব পাল,
আমি সত্যি সত্যি একদিন বৌ দিকে বলে দেবো, আপনি মানুষটা বেশী সুবিধের না। এক কাজ করেন এই বিষয়টার উপর আপনি আলাদা একটা ব্লগ লিখে ফেলুন। এখানে আলোচনা অপ্রাসঙ্গীক হয়ে যাচ্ছে।
@আকাশ মালিক,
মালিক ভাই
আমি নেহাৎ ই সৎ পুরুষ, তাই সত্যকথনে বিশ্বাসী :-s বৌ এর চাপে মিথ্যেকথন আমার বা বৌ কারুর জন্যেই ভাল না :lotpot:
আর বর্ণবাদের আলোচনাতে বিবাহ এবং ডেটিং দুটোই প্রাসঙ্গিক। কারন সেখানেই বর্ণবাদের চূড়ান্ত প্রকাশ। ভেবে দেখুন-একটি “ভদ্র” সমাজের বাঙালী ছেলের আসলেই আদিবাসি রমনীকে গোলগাল বঙ্গতনয়াদের চেয়ে বেশী ভাল লাগলেও, সে বিয়ে করবে, সেই তার “ভদ্র” সমাজ থেকেই। এখানেই বর্ণবাদ সর্বাধিক বেশী প্রকট। এই আমেরিকাতেও একটা বাঙালী ছেলে কোন সাদা মেয়েকে বিয়ে করতে দুবার ভাববে না-কিন্ত কোন আফ্রিকান আমেরিকান মেয়েকে বিয়ে করতে হাজার বার ভাববে। আমি এখনো পর্যন্ত কোন বাঙালী ছেলে দেখি নি যার আফ্রিকান আমেরিকান গার্লফ্রেন্ড আছে।
এগুলিই আসল বর্ণবাদ।
@বিপ্লব পাল,
ঠিক বলেছেন। যদি দেখতেন ইংল্যান্ডের বাঙ্গালি মুসলমানদের অবস্থাটা। ঘর থেকে শিশুকালেই প্রতারণা, ভন্ডামী, বর্ণবাদ ও সাম্প্রদায়ীকতার শিক্ষা পেয়ে বড় হয়। আর বড় হয়ে দেখে জাকির নায়েক, আহমেদ দিদার, হারুন ইয়াহিয়ার মত ভন্ডদের। রাস্থার কর্ণারে কর্ণারে দল বেঁধে যে সকল ছেলেরা সাদা মেয়েদের নিয়ে গাঞ্জা, মদ টানলো, দু-একটা মেয়ের গর্ভে সন্তান দিল, তারা সবাই শুক্রবারে মসজিদে উপস্থিত। বাবারা খুশী। এই বখাটে ছেলেরাই আবার মসজিদ প্রতিষ্ঠার ক্যামপেইনে সকল আগে জিহাদী মুডে রাস্থায় খাড়া। মোল্লারা দেশ থেকে এসে মসজিদ ভর্তি মানুষ আর রাস্থায় হিজাব-বোরখা পরা নারী দেখে প্রশংসায় আত্ম্বহারা। কোত্থেকে টাকা আসে, কী তাদের জীবিকা কোন খবর নাই, লুট করো কাফির সরকারের পয়সা ওটা মুসলমানের পাওনা। ঘরে ট্রান্সমিটার সব সময় অন থাকে, মসজিদের আজান-ওয়াজ শুনার জন্যে। গত শুক্রবারের ক্রীষ্টমাসের ওয়াজ হলো- ‘আমাদের বাহিরে উদ্দেশ্য জীবিকা হলেও, ভিতরে নিয়ত হলো আমরা এ দেশে এসেছি আল্লাহর দ্বীন কায়েম ও প্রচার করার জন্যে। খৃষ্টানদের ধর্মীয় প্রতীক ‘টাই’ পরা হারাম। এটা নবি ঈসাকে ফাঁস লাগিয়ে মারার চিহ্ন’। আমার কর্মচারী ইংল্যান্ডে জন্ম নেয়া বিশ বছরের শিক্ষিত যুবক সেদিন আমার এক প্রশ্নের জবাবে আমাকেই প্রশ্ন করলো- চাচা, আপনার ভাইকে কেউ খুন করলে আপনি কী করবেন? আমি বললাম, প্রশ্নের কারণ? সে বললো- রামুর বৌদ্ধপাড়া আগুনে পোড়ানো মায়ানমারের মুসলমান হত্যার প্রতিশোধ।
বর্ণবাদ-সাম্প্রদায়ীকতা চাষাবাদে ধর্মেরও হাত আছে।
@বিপ্লব দা,
আপনার মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আপনি বোধহয় চলতি নোটে উল্লেখিত বহু বছরের জাতিগত আগ্রাসনের বাইরে বিচ্ছিন্ন করে “আদিবাসী প্রেম”কে দেখার চেষ্টা করছেন। যা মূল লেখার স্পিরিটটিকে নষ্ট করছে, আপনার বিবর্তনী ব্যাখ্যা সত্ত্বেও নোটের বক্তব্যকে বিকৃত করে ফেলছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম, তথা বাংলাদেশের আদিবাসী জাতিগোষ্ঠির সামাগ্রিক ইতিহাস বিচারে বর্ণবাদসহ সব ধরনের বৈষম্যকে দেখার বিনীত অনুরোধ জানাই।
অনেক ধন্যবাদ। (Y)
@বিপ্লব পাল,
সংবেদনশীলতা তো তাও ভালো জিনিস। কিন্তু বিজ্ঞাপন, গান, লেখা এসব প্রকাশের মাঝে বর্ণবাদ খুঁজে মামলা করতে চাওয়াটাতে তো সংবেদনশীলতা থাকেই না, বরং হয়ে যায় উল্টো। সমালোচনার পাশাপাশি মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখার চেষ্টাটাই বরং বেশি সংবেদনশীল হতো।
সুন্দর একটি লেখার জন্য লেখককে শুভকামনা। রাডইয়ার্ড কিপ্লিং মনে করতেন, আফ্রিকা এশিয়ার মানবদের সভ্য করার দায়িত্ব ঈশ্বর তাদেরকে দিয়েছেন। উপনিবেশ সমূহকে তিনি ‘শ্বেতকায়দের বোঝা’ বলে নিজের জাত্যাভিমান প্রতিষ্ঠা করেছেন।
পাহাড়ে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে নিজেদের থেকে কিছুটা ভিন্নতর ভাবি, আমরা যেমন গারো সাঁওতালদের জীবনাচরণ কে আধুনিক সভ্যতার থেকে বিচ্ছিন্ন ভাবি। আসলে আমরা কি জানি কোনটা সভ্যতা কোনটা সভ্যতা না! দুর্বলের প্রতি আমাদের মানসিকতা হয় তার সম্পদ গ্রাস করতে হবে, অথবা সে কথা বলতে জানে না।
———————————————————
@জটিল বাক্য,
আপনার স্পষ্ট উচ্চারণ ভালো লাগলো। মুক্তমনায় লেখার আহ্ববান জানাই। (Y)
আপনি সুযোগ দেবার আহ্বাণ জানাচ্ছেন, আমিও হয়তো মধ্যবিত্ত্য বাতাসে দুলতে দুলতে বলবো, তাই হোক। পাহাড়িরা হয়তো বলবে, ‘ভিক্ষা চাই না, কুত্তা সামলাও।’
আপনার মাধ্যমে সেই খাসি নেতাকে অভিনন্দন।
এবার একটা গল্প দিয়ে শেষ করছি। শহর থেকে এক ধনাঢ্য ব্যক্তি গিয়েছেন আদিবাসী এলাকায়। আদিবাসীরা মাছ ধরে এনে খেয়ে-দেয়ে বাকি সময়টা ঘুমিয়ে আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে দিতেন। এ দৃশ্য দেখার পর ধনাঢ্য ব্যক্তি আদিবাসীদের কাছে গিয়ে বললো, ‘তোমরা তো বেশ মাছ ধরতে পারো।’
তা পারি।
তো ঋণ নিয়ে বড় নৌকা কিনে তোমরা চাইলে অনেক মাছ ধরতে পারবে।
কেন, অনেক মাছ ধরতে হবে?
ঋণ শোধ করে ধনী হয়ে যাবে।
ধনী হলে?
বলো কি, ধনী হলে তখন খেয়ে-অনেক সময় পাবে আড্ডা দিয়ে, ঘুমিয়ে, ঘুরে বেড়াবার।’
@স্বপন দা,
আপনার মন্তব্যে গুঢ় বাস্তবতাই লুকিয়ে আছে। আসলে কথিত সভ্যতার নাগরিক ধারণার বাইরে রাষ্ট্রের কর্তারা আদিবাসীদের নিজস্ব সভ্যতাকে মেনে নিতে নারাজ; আর তারাই বহু বছর ধরে সাধারণের ওপর সভ্যতার ধারণা চাপিয়ে আসছে, শোষকের সভ্যতার সঙ্গায় সাধারণকে ভাবতে বাধ্য করছে। চেতনার এই আমূল পরিবর্তন জরুরি।
আবারো সঙ্গে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
@বিপ্লব রহমান,
বিপ্লব দা, এই বিজ্ঞাপনদাতা ও বিজ্ঞাপনের আইডিয়া যাদের মাথা থেকে আসলো তাদের বিরোদ্ধে কোন মামলা হয় নি?
@আকাশ মালিক,
আমার জানা মতে এখনো এ নিয়ে মামলা হয়নি। তবে আদিবাসী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
@আকাশ মালিক,
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠির উপর রাষ্ট্র ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের যে সহিংসতা, শরীর ও সম্পদের উপর আক্রমণ, সেই অপরাধের বিচার ও বিহিতের দাবি করা আবশ্যক। কিন্তু একটা বিজ্ঞাপন, বা গান, বা লেখা, এসব কি সহিংসতার ক্যাটাগরিতে পরে? এটা কারো শরীর ও সম্পদে আক্রমণ করে না, অনুভূতিতে করতে পারে। এর বিপরীতে আমাদেরও সমালোচনার পথ খোলা আছে, বিপ্লব রহমান যেমনটি করলেন।
কিন্তু মামলা কীসের বেসিসে? মুক্তমন কি এখন অনুভূতিতে আঘাতকেও বিচারযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা শুরু করবে? মনে হয় না। না হলে মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত দেয়া নারী বইটাকে ব্যান করাও জায়েজ হয়ে যায়। নাকি কেবল ধর্মানুভূতিতে আঘাত করা যাবে, অন্যান্য অনুভূতিতে আঘাত মামলাযোগ্য অপরাধ? কোনো অনুভূতিতে আঘাতই সহিংসতা নয়, ফলে বিচারযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় না বলে মনে করি। তা না হলে সেটা অন্যায় ও অসঙ্গতিই তৈরি করবে (কোন অনুভূতি বিচারযোগ্য, কোনটা নয়, কোন অনুভূতি ফেইক, এগুলো অনির্ণেয়)। ফলে সমালোচনার পাশাপাশি মানুষের ভাব প্রকাশের স্বাধীনতাটা গিলে ফেলা হচ্ছে কিনা সেটাও লক্ষণীয়।
@রূপম (ধ্রুব),
বিপ্লব দার লেখাতে একটা লিংক আছে সেখানে মামলার কথা উল্লেখ আছে-
লেখক আরো বলেছেন-
আইনের চোখে ব্যাপারটা কি রকম জানিনা তবে প্রতিবাদ হওয়া উচিৎ।
@আকাশ মালিক,
রেফারেন্সটা দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ। যিনি লিখেছেন, তার তো মুক্তমনের পরোয়া নেই। 🙂
বাংলাদেশের সংবিধানে মানুষ চিন্তা, বিবেক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংরক্ষণ করে। সাথে শর্ত হলো
আগে শর্তটা আরো ছোট ছিলো, ধীরে ধীরে লম্বা হচ্ছে (বিদেশী রাষ্ট্রসমূহের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, শালীনতা ও নৈতিকতা এইসব কী?)। তারপরেও রাষ্ট্র নিজেই এইসব শর্ত এখন রেয়ার কেইসে ব্যবহার করে। কারণ নিশ্চিত ইম্প্লিকেশন ছাড়া এসব কোর্টে টেকে না, ফলে কথায় কথায় এগুলো ব্যবহারের তার গ্রাউন্ড থাকে না। এখানে কোনো নিরাপত্তা কিংবা জনস্বার্থ লঙ্ঘনের কোনো নিশ্চিত ইম্প্লিকেশনই নেই। আর আমাদের পক্ষ থেকে তো রাষ্ট্রকে এগুলোকে ব্যবহারের সুযোগ দেয়ার প্রশ্নই আসে না। রাষ্ট্রকে ডাকলে সে বগল বাজাতে বাজাতে আসবে তার নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ব্যবহার করতে। মনে রাখতে হবে, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠির বিপক্ষে মূল ভায়োলেন্সটা করে রাষ্ট্র। তার সাথে দোস্তি পাতিয়ে আরেক গোষ্ঠির চিন্তার প্রকাশকে আইন দ্বারা দণ্ড দিতে চাওয়াটা ন্যাক্কারজনক। সেটা যতোটা না ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠির বন্ধুতা, তার চেয়ে বেশি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র লম্বাকরণের দালালি।
@রূপম (ধ্রুব),
এই পর্যবেক্ষণটি জরুরি। অনেক ধন্যবাদ ভ্রাতা। (Y)
বিপ্লব রহমান,
চমৎকার বিশ্লেষন। ধন্যবাদ। উপড়ে সাংবাদিকার মন্তব্য যথেষ্ট অর্থপূর্ণ বলে মনেকরি। আমি একটা ব্যপার বুঝতে অক্ষম যে এই একটা ছোট্ট দেশেও আমরা নিজেদের কিভাবে বিভক্ত করে তুলেছি! পাহাড়কে তার নিজস্ব ব্যপ্তিতেই ছেড়ে দেয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি। আমি মনেকরি পাহাড়ের সাথে আমাদের দৈনন্দিনতার যোগসুত্র কর্ম, লেন-দেন, শিক্ষা, চিকিৎসা সর্বপরি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের মধ্যেদিয়ে সমতলের সাথে প্রতিষ্ঠিত হবে। সেখানে বল প্রয়োগের বিশেষ কিছু আছে বলে আমি মনে করিনা। বরং সমতলের উচিৎ জাতি সত্ত্বার রূপবৈচিত্রকে প্রস্ফূটিত হবার সুযোগ তৈরী করে দেবার। সাংস্কৃতিক বলয়ে এবং সব ধরনের প্রচার মাধ্যমে এই প্রকারের বিভেদসৃষ্টিকারী বিকৃত মননের প্রচার-প্রকাশনা রোধ করা জরুরী।
কেনো, ঐসব এলাকা গুলোকে নৃজাতিগোষ্ঠির জন্যে সংরক্ষিত এবং বাউন্ডারী এলাকা গুলোকে সকল নাগরিক সুবিধার আওতায় এনে নিরাপত্তা সড়কের মাধ্যমে সমতলের সাথে ঐক্যতার সুত্রে কি বাঁধা যায়না? এতে করে এই এলাকাই আমাদের জন্যে হয়ে উঠতে পারে পৃথিবী খ্যাত পর্যটন এলাকা এমনকি নৃ-জাতি গোষ্ঠীকে নিয়ে সামাজিক-বৈজ্ঞানিক গবেষনা পর্যন্ত সম্ভব। সরকারের উচিৎ এসব এলাকায় সব ধরনের চাপিয়ে দেয়া ধর্ম-আচার বিচারের প্রসার রোধ করা। একেবারেই নিজস্ব নিয়মেই এদের সামাজিক বিকাশকে নিশ্চিত করার সুযোগ তৈরী করা।
বরং বর্তমান সরকারী পদক্ষেপে আমার কেনো যেন মনে হয় ঐ সব এলাকা গুলো আর এখানকার অধিবাসীরা দিনে দিনে আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চলেছে। আমাদের সমতলের আর পাহাড়ী মানসের অহেতুক সৃষ্ট সন্দেহ অবিশ্বাস আর সেই সাথে এই ধরনের বর্ণবাদী দৃষ্টিভঙ্গীর অবসান হোক।
@কেশব অধিকারী,
এ ক ম ত। প্রায় দুদশক রক্তক্ষয়ী বন্দুক যুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত পার্বত্য শান্তিচুক্তিতে এ রকম্ই একটি সমাধানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সরকারগুলোর সীমাহীন উদাসীনতায় শেষ পর্যন্ত এর গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোই বাস্তবায়িত হয়নি।
এখন শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নের জন্যও আবারো রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রাম করতে হয় কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
অনেক ধন্যবাদ।
আমার বড়ই অদ্ভুত লাগে যখন এই উপমাহাদেশের মানুষেরা অনেক ইউরোপীয়দের বর্ণবাদী বলে, যেখানে এই উপমহাদেশের অনেক অধিবাসী নিজেরাই চরম বর্ণবাদী !!!! পুরো উপমহাদেশের কথা বাদই দিলাম এই বাংলাদেশের বাঙালীদের কথাই ধরি…… বেশীরভাগই আফ্রিকা শুনলেই আঁতকে উঠে; তাছাড়া দেশের “জনসংখ্যায় কম নৃ-জাতিগোষ্ঠীর” (সংখ্যালঘু শব্দটি মনে হয় বাংলা ভাষায় ডিরোগেটরি/নেগেটিভ হয়ে গিয়েছে) বিরুদ্ধেও বাঙালীদের মনে হয় কারও কারও এই বর্ণবাদ ব্যাপার আছে।
তবে, জনসংখ্যায় কম নৃ-জাতিগোষ্ঠীর মধ্যও পারস্পরিক জাত্যভিমান অস্বীকার করা যাবেনা। অনেক চাকমা জাতিগোষ্ঠীর লোকের বিরুদ্ধে মারমাদের উপর বর্ণবাদ আচরণের ব্যাপার স্যাপার লক্ষ্য করা যায় এবং অভিযোগ শোনা যায়।
যাই হোক, সকল প্রকার বর্ণবাদিতা বর্জণীয়।
তবে আমি সঙ্গে সঙ্গে এ টাও লক্ষ্য রাখা উচিৎ,
“জনসংখ্যায় কম নৃ-জাতিগোষ্ঠী” এবং “আদিবাসী” এর মধ্য পার্থক্য যেন রাজনৈতিক ব্লেন্ডারে মিশিয়ে না ফেলি……. Minority এবং Aborigine এই দুটো শব্দ এক করে ফেলা এক ঐতিহাসিক faux pax এবং blunder……
বাংলাদেশের এই faux pas এবং blunder হতে দূরে থাকতে হবে……
ধন্যবাদ।
@সংবাদিকা,
অনেকটাই একমত। তবে এ দেশের উগ্র আগ্রাসী জাতীয়বাদ/ বর্ণবাদই লেখার ফোকাস পয়েন্ট, যার শিকার প্রধানত আদিবাসীরাই। এর বাইরে আপনি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠির ভেতরের যে “পারস্পরিক জাত্যাভিমান” এর কথা বলছেন, সেটি একতমই প্রধান নয়, আগ্রাসী তো নয়ই, এমন চলতি নোটের সঙ্গেও প্রাসঙ্গিক নয়।
মতামতের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
* টাইপো: একতমই= একদমই
@বিপ্লব রহমান,
আপনার প্রবন্ধের মূল আর্গুমেন্টের সমর্থনে আলোচ্য এই ২ নং প্যারাটির পরিপ্রেক্ষিতেই আমার উপরোক্ত মন্তব্য করা। আমার এমন বলার মূল উদ্দেশ্য হল, বর্ণবাদিতা কিংবা বাহ্যিক “স্টেরিওটাইপ” কিংবা “জেনারেলাইজেশন” এটা পৃথিবীতে একটা বৃহৎ সামাজিক সমস্যা। নির্দিষ্ট কারও নয়। হয়ত কারও বেশী কিংবা কম। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, যে বিভিন্ন দিক দিয়ে যেই একটু শক্তিশালী অবস্থায় আছে তার দ্বারাই এটা হচ্ছে। এমনকি বিশ্বের সবচাইতে শান্তি প্রিয় হিসেবে পরিচিত স্ক্যান্ডীনোভিয়াতেও দীর্ঘদিন যাবত নরওয়েজীয়-সুইডিশ দের হাতে স্থানীয় অ্যাবোরিজিন “সামি” জনগোষ্ঠী অধিকার বঞ্চিত এবং হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে।
ধন্যবাদ।
@সংবাদিকা,
হুমম…। ধন্যবাদ।
@সংবাদিকা,
একমত। এমনকি মারমারা আবার বান্দরবান জেলায় চাক,ম্রু, ব্যুম বা তঞ্চৈঙ্গাদের উপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, সুযোগ পেলে সাংস্কৃতিক আধিপত্য খাটাচ্ছেও।আমার সশরীরে ও চাকরিক্ষেত্রের পর্যবেক্ষণ তা ই বলে।
@বিপ্লব রহমান,
বর্তমান নোটের সাথে প্রাসঙ্গিক না হলেও আমিও সংবাদিকার মত আপনার একটা লেখায় প্রাসঙ্গিকভাবেই সংবাদিকার মতই মন্তব্য করেছিলাম।
এ বিষয়ে একটা লেখা লেখার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি, কারণ, আপনিই এ বিষয়ে লেখার জন্য যথাযথ ব্যক্তিত্ব বলে আমার ধারণা।
@গীতা দি,
চলতি নোটের সঙ্গে অপ্রসঙ্গ হলেও ছোট্ট করে বলছি:
দেখা যাচ্ছে, সংবাদিকার পাহাড়িদের “পারস্পরিক জাত্যাভিমান” এর সঙ্গে আপনি একমত পোষন করেছেন। আগেই বলেছি, এটি আমার দীর্ঘতম পর্যবেক্ষণে কখনোই সাধারণের মনোভাব বলে মনে হয়নি, কোনো সমস্যা তো নয়ই, এমনকি আগ্রাসী নয় বলেই মনে হয়েছে।
আপনাদের দুজনের পর্যবেক্ষনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, আমার মনে হয়, কোনো জাতিগোষ্ঠির অন্তর্নিহিত মনোভাব বুঝতে নিবিড়ভাবে দীর্ঘতর পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন; এই পর্যবেক্ষণটি আবার প্রধানত পাহাড়ি গ্রামীণ জনপদ এবং পাহাড়ি দল ও সংগঠন ঘনিষ্ট হলে ভালো হয়। কারণ, পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রধানত রাজনৈতিক অঞ্চল; রাজনীতিই সেখানের সংস্কৃতির একটি প্রধানতম নিয়ন্ত্রা।
বিনীত অনুরোধ জানাই, আমরা যখন বিশেষ করে সংখ্যাগুরু বাঙালি জনগোষ্ঠির বর্ণবাদ/উগ্র জাত্যাভিমান/সাম্প্রদায়ীকতা নিয়ে কথা বলছি, তখন এসব অপ্রসঙ্গগুলো না টানলেই কি নয়? 😕
@বিপ্লব রহমান,
আমি শুধু বলতে চেয়েছিলাম যে, ছোটর চেয়েও ছোটরা সবখানে সবকালে সব পরিস্থিতিতে শোষণের— আধিপত্যের শিকার।
@গীতা দাস,
ক্ষমতা হাতে পেলে নির্যাতিত জাতিও একসময় নির্যাতনকারী হয়। গরীবের উপর ধনীর, দুর্বলের উপর সবলের, সংখ্যালঘুর উপর সংখ্যাগরিষ্ঠের প্রভাব অত্যাচার শোষণ আধিপত্য বিস্তারের প্রয়াস সবসময় ছিল, থাকবে। এ জন্যেই সরকার আর রাষ্ট্রীয় নীতির প্রয়োজন। অসাম্প্রদায়ীক স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের কোন জাত বা ধর্ম থাকার কথা ছিলনা। এ দেশ বাঙ্গালি-নন বাঙ্গালি, মুসলিম-অমুসলিম, সকল ধর্মের বর্ণের মানুষের দেশ হওয়ার কথা ছিল। আমরা তাকে সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিম দেশ বানিয়েছি। রাষ্ট্র সংখ্যাগুরু জনগোষ্ঠির জাত ও ধর্মের প্রভাবমুক্ত হতে পারেনি। তাই আমাদের সরকার দেশের সংখ্যালঘু নাগরিকের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হচ্ছে।
@ সংবাদিকা, @গীতা দি,
আপনার অবস্থান বুঝেছি। এ নিয়ে আগেও তো আমরা কথা বলেছি, তাই না? কিন্তু আপনি এবং সাংবাদিকা বোধহয় আমার এই কথাটি বুঝতে অক্ষম; নয়তো এটি আমারই ব্যর্থতা। :-Y
চলতি নোটের সঙ্গে একেবারে অপ্রসঙ্গ বিষয়টি নিয়ে আমার মন্তব্য-প্রতিমন্তব্য এখানে শেষ হলো।
আপনাদের আবারো ধন্যবাদ।
@গীতা দাস,
আসলে, এটা একটা ব্যাপক সামাজিক সমস্যা। কোন গোষ্ঠীর মাঝে ব্যাপকতা বেশী কিংবা কোনটির মধ্য কম, কিন্তু সবার মাঝেই বর্তমান। অন্য জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে স্টেরিওটাইপ – জেনারেলাইজেশন মনে হয় মানব সভ্যতার শুরু থেকেই হয়ে আসছে। এর থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই মানবতার জন্য মঙ্গল।
@সংবাদিকা,
নোটের প্রাসঙ্গিক বিষয়ে বিতর্কটি দীর্ঘ হলে ভালো হতো। যাই হোক, আপনার অবস্থান অনেক আগেই পরিস্কার। এ বিষয়ে ওপরে কয়েক দফায় বোল্ড হরফে মন্তব্য করেছি; আশাকরি নজরে আনবেন। ধন্যবাদ।