পূর্ববর্তী পর্ব – ক্যান্সার : আমিই বা নই কেন?
ক্যান্সার নিয়ে লিখতে বসে কেন জানি বারবার নাসিরুদ্দিন হোজ্জার চাবি হারানোর গল্প মনে পড়ে যাচ্ছে। হোজ্জা একবার তার বাড়ির চাবি হারিয়ে ফেললেন। রাতের বেলা আলোকিত ল্যাম্প পোষ্টের চারদিকে হন্যে হয়ে তিনি চাবিটা খুঁজছিলেন। বাড়ির পাশ দিয়ে এক লোক যাচ্ছিলেন। হোজ্জাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি খুঁজছেন ? হোজ্জা বললেন, ‘চাবি’। ভদ্রলোকও হোজ্জাকে সাহায্য করার জন্য তার সাথে মিলে ল্যাম্পপোস্টের চারিদিকে মাটিতে চাবি খুঁজতে লাগলেন। অনেকক্ষণ ধরে চেষ্টার পরেও চাবিটা না পেয়ে ভদ্রলোক হোজ্জাকে জিজ্ঞেসা করলেন, ‘ভাই চাবিটা কি ঠিক এখানেই হারিয়েছিল?’ উত্তরে হোজ্জা বললেন, ‘নাহ, চাবি তো হারিয়েছে বাগানে’! সেই ব্যক্তি তখন অবাক হয়ে জানতে চাইলেন তাহলে হোজ্জা বাগান থেকে এত দূরে এসে ল্যাম্পপোস্টের নীচে এসে চাবিটা খুঁজছেন কেন? উত্তরে হোজ্জা বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘আরে গাধা নাকি! দেখছেন না, বাগানটা কীরকম ঘুটঘুটে অন্ধকার, সেখানে খুঁজে লাভ কি? যেখানে আলো আছে, সেখানেই তো খুঁজব’।
অনেকটা এরকমই ছিল ক্যান্সারের গবেষণার অবস্থা বিংশ শতাব্দীর বেশীর ভাগ সময়টা ধরেই। ক্যান্সার একটি বংশগতিয় রোগ, কিন্তু বলতে গেলে সত্তর দশকের আগ পর্যন্ত ক্যান্সারের গবেষণাগুলো জেনেটিক্সের আলো থেকে বহুদূরে অবস্থান করছিল। তবে সেটাকে বড্ড বেশী দোষের চোখে দেখাও বোধ হয় ঠিক হবে না। ঘোড়ার আগে তো আর গাড়ি জোতা সম্ভব নয়। জেনেটিক্সের ঘোড়ার নাগাল পাওয়ার কাহিনি কিন্তু খুব বেশী দিনের নয়। জেনেটিক্সের ভিত্তি স্থাপনকারী বিভিন্ন মৌলিক আবিষ্কারগুলো যে কত সাম্প্রতিক তা দেখলেও অবাক হতে হয়। এই তো সেদিনের কথা, ১৮৩৮ সালে প্রথমবারের মত আমরা জানতে পারি যে সব জীব ‘কোষ’ দিয়ে তৈরি, এর আগে আমরা জানতামই না যে আমাদের দেহ কোষ বলে এক মৌলিক বিল্ডিং ব্লক দিয়ে তৈরি। ১৮৬০ সালে মেন্ডেল জিন আবিষ্কার করলেও ১৯০৫ সাল পর্যন্ত আমরা গবেষণাটি সম্পর্কে জানতেই পারিনি। ১৮৭৯ সালে ফ্লেমিং প্রথম ক্রোমোজোমের নামকরণ করেন। ১৯১৫ সালে মরগ্যান আরেক ধাপ এগিয়ে বলেন যে মেন্ডেলের জিনগুলো আসলে ক্রোমোজোমের মাধ্যমে বাহিত হয় আর কোষ বিভাজনের সময় এই ক্রোমোজোমগুলোর ভিতর দিয়েই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে জিনের সঞ্চালন ঘটে। সেই কোষ তত্ত্ব থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে ক্রিক এবং ওয়াটসনের ডিএনএর গঠন আবিষ্কার বা মনোডের জিনের মধ্যে আরএনএ কপি চিহ্নিত করা পর্যন্ত কোষের ভিতরের আভ্যন্তরীণ কাঠামো এবং কাজকর্ম সম্পর্কে কিছু কথা জানতে পারলেও ক্যান্সার কোষের গঠন সম্পর্কে আমাদের জ্ঞান কিন্তু শূন্যের কোঠায়ই ছিল বলা যায়।
১৯৫০ সালের প্রথম দিকেও পোলিও বা গুটি বসন্ত রোগের মতই ক্যান্সার হওয়ার পিছনেও ভাইরাসই দায়ী বলে মনে করা হত। ১৯১০ সালে পেটন রুস নামক একজন সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ (ভিরুলজিস্ট) মুরগিতে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী রুস সারকোমা ভাইরাস আবিষ্কার করেন আর তারপর থেকেই শুরু হয় ল্যাম্প পোষ্টের আলোর নীচে ক্যান্সারের চাবি খোঁজার দীর্ঘ অথচ ভুল প্রক্রিয়া। তিনটি প্রধান ক্যাম্পে ভাগ হয়ে যায় ক্যান্সারের গবেষণা। এদের মধ্যে রুসের এই দলই সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন যারা ক্যান্সারের একমাত্র কারণ হিসেবে ভাইরাসকে দায়ী করতেন। ওদিকে ছিলেন এপিডেমিওলজিস্টরা যারা দাবী করতেন যে আমাদের চারপাশের নানা ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যগুলোই ক্যান্সারের মূল কারণ। আর এদের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে ছিলেন থিওডর বোভারির দল যারা সেই ১৯১৪ সাল থেকেই খুব বেশী কোন তথ্য প্রমাণ ছাড়াই মিনমিন করে বলার চেষ্টা করে আসছিলেন যে আমাদের কোষের ভিতরের জিনগুলোর মধ্যেই আসলে লুকিয়ে আছে ক্যান্সারের মূল কারণ। কিন্তু যথেষ্ট তথ্য প্রমাণের অভাবে বোভারির দল তেমন কোন পাত্তাও পাচ্ছিলেননা এই লড়াইয়ে। অর্ধ দশকেরও বেশী সময় ধরে এই টানাপড়েনের মধ্যে দিয়েই চলতে থাকে ক্যান্সারের গবেষণা। মুরগীতে এক ধরণের ক্যান্সারের জন্য দায়ী রুস ভাইরাস বা মানুষে সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের জন্য দায়ী এইচপিভি ভাইরাসের মত দুই একটা দুর্লভ ভাইরাসের দেখা মিললেও ক্যান্সার যে মূলত একটি সংক্রামক ব্যাধি নয় তা আমরা বুঝতে শুরু করেছি খুব সাম্প্রতিক সময়ে। ক্যান্সারের গবেষণা যতদিন ভাইরাসের আলোর নীচে সীমাবদ্ধ থেকেছে ততদিন পর্যন্ত আমরা ল্যাম্প পোষ্ট ছেড়ে আর বেশিদূর এগুতে পারিনি।
ক্যান্সার গবেষণার ইতিহাস নিয়ে তো অনেক কথা হল, এবার তাহলে আসুন ক্যান্সারের ‘বিজ্ঞান’ একটু নিয়ে কথা বলা যাক। একবিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানের আলোয় দেখা যাক ক্যান্সার আসলেই কি, সে কীভাবে কাজ করে, কীভাবে ছড়ায় আর কেনইবা আমরা এখনো এর ভয়াবহতার সামনে এতটাই অসহায়। গত তিন দশকে প্রথমবারের মত আমরা কোষের বিভাজন এবং পুনর্জননের ইতিবৃত্ত বুঝতে শুরু করেছি। হ্যা শুধু ক্যান্সার কোষই নয়, সুস্থ কোষের পুনর্জননের ব্যাপারগুলোও আমরা এতদিন খুব ভালো করে বুঝতাম না। ক্যান্সারের বিভীষিকা এবং রহস্যময়তা বুঝতে হলে আমাদের বিবর্তন এবং কোষ চক্রের (সেল সাইকেল) মূল কিন্তু সূক্ষ্ম কিছু ব্যাপার বুঝতে হবে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি যে আমরা খুব ইদানিং কালে কোষচক্রের খুঁটিনাটি বুঝতে শুরু করেছি, গত তিন দশকের গবেষণাগুলো ধীরে ধীরে আমাদের সামনে স্বাভাবিক কোষচক্র এবং সেই সাথে ক্যান্সারের কোষ চক্রের ধাঁধাগুলো উন্মোচন করতে শুরু করেছে।
ক্যান্সার আমাদের বিবর্তনীয় পথেরই সাথী, একদিক থেকে চিন্তা করলে একে বহুকোষী জীবের বিবর্তন এবং অভিযোজনের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া বললেও ভুল হবে না। প্রায় সত্তর কোটি বছর আগে বিবর্তনের ধারায় বহুকোষী প্রাণীদের উন্মেষ ঘটে। এককোষী প্রাণীদের কোষ বিভাজনের পদ্ধতিটা বেশ সরল, পার্শ্ববর্তী পরিবেশে পুষ্টির লভ্যতাই অনেকাংশে তাদের বৃদ্ধির প্রক্রিয়াটাকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু বহুকোষী প্রাণীতে, বোধগম্য কারণেই, এই কোষ বিভাজনের প্রক্রিয়াটা অনেক বেশী সূক্ষ্ম এবং জটিল। এখানে শুধু কোষ বিভাজন হলেই হচ্ছে না, তাদের স্পেশালাইজড বা সুনির্দিষ্ট কলা এবং অঙ্গগুলোর সঠিকভাবে পরিবর্ধন এবং বিন্যস্ত করার ব্যাপারটাও চলে আসছে। এজন্য কোষ বিভাজনের প্রক্রিয়ার সাথে সাথে সেটাকে সঠিক জায়গায় এবং সময়ে থামিয়ে দিতে পারা, ত্রুটিপূর্ণ ডিএনএর মেরামত ও নবায়ন করা এবং সঠিক কারণে কোষের মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য বেশ জটিল কিছু ব্যবস্থারও বিবর্তন ঘটতে হয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনকে ঠেকানোর জন্য কোষ চক্রের ভিতরে এবং বাইরে যেন লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা রাগী সব দারোয়ান নিয়োগ করা হয়েছে। কোষচক্রের অভ্যন্তরে কড়া নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির আওতায় থেকে নির্দিষ্ট স্তরে একদল প্রোটিনের মধ্যে যে মিথষ্ক্রিয়া চলে সেগুলোই আমাদের কোষবিভাজনের সঠিকতা নিয়ন্ত্রণ করে। আর এই জটিল প্রক্রিয়াটার ভিতরে মিউটেশনের ফলে যখন এই সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণগুলো একের পর এক খসে পড়ে তখনই শুরু হয় কোষের দরজায় ক্যান্সারের আনাগোনা। তখন কোষ চক্রের এই প্রোটিনগুলো সঠিকভাবে আর বিভাজনের প্রক্রিয়াটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা, ক্যান্সারের কোষগুলো বাঁধাহীনভাবে শুধু বাড়তেই থাকে। তবে ক্যান্সারকে ঠিক এর উল্টোভাবেও কিন্তু দেখা যেতে পারে। ক্যান্সার হয় তখনই যখন কোন কোষ বিশুদ্ধ এক কোষ বিভাজনের প্রক্রিয়া তৈরি করে ফেলতে সক্ষম হয়, যেখানে কোন নিয়ন্ত্রণ নেই, কোষচক্রের চোখ রাঙানী নেই, আছে শুধু বিভাজনের রামরাজত্ব। এভাবে কোন নিয়ন্ত্রণ ছাড়া বিভাজিত হতে থাকলে অকল্পনীয় এক গতিতে কোষের সংখ্যা বেড়ে টিউমার তৈরি হয়ে যেতে পারে। একতি কোষে দিনে যদি একবার কোষ বিভাজন ঘটে তবে ১০ দিনে তা বেড়ে এক হাজার কোষে, ২০ দিনে এক মিলিয়ন কোষে পরিণত হতে পারে, আর পৃথিবীর চেয়ে বহুগুন বড় কোন একটা প্রাণীতে পরিণত হতে বা তত বর একটা টিউমার তৈরি করতে তার কিন্তু একবছরেরও অনেক কম সময় লাগবে। সে কারণেই যে কোন বহুকোষী প্রাণীর ক্ষেত্রে কোষের বৃদ্ধি এবং নবায়নটা যতখানি প্রয়োজনীয় কোষচক্রকে সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় নিয়ন্ত্রণ করতে পারাটাও ততখানি অপরিহার্য। আর এজন্যই সব ইউক্যারিওটিক কোষেই এত শক্তভাবে নিয়ন্ত্রি্ত এক জটিল কোষচক্রের বিবর্তন ঘটেছে।
তাহলে দেখা যাচ্ছে ক্যান্সার কেন হয় তা বুঝতে হলে কোষচক্রের কিছু মৌলিক ব্যাপার না বুঝলেই নয়। চলুন সোজা বাংলায় এবং খুব সংক্ষেপে স্বাভাবিক এবং ক্যান্সা্রে আক্রান্ত কোষচক্রের জটিল কাজকর্মগুলোর একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর চেষ্টা করা যাক।
স্তন্যপায়ী প্রাণীদের কোষ বিভাজনের উদাহরণটিই দেখা যাক। প্রত্যেকটি কোষচক্রে মূলত দুটি প্রধাণ ঘটনা ঘটে, প্রথমে ডিএনএর সিন্থেসিস বা ক্রোমোজোমের বিভাজন (S স্তর) এবং তারপর ঘটে নিউক্লিয়ার বিভাজন বা মাইটোসিস (M স্তর)। ভ্রূণের প্রাথমিক অবস্থায় অকল্পনীয় গতিতে এই কোষ বিভাজন ঘটতে থাকে। তখন কোষচক্র এই দুটি প্রধাণ স্তরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। S স্তরে CDK২ (সাইক্লিং ডিপেন্ডেন্ট কিনেস ) প্রোটিনের নির্দেশে ডিএনএর বিভাজন ঘটে আর তার পরপরই CDK১ এর নির্দেশে মাইটোসিস ঘটে যায়। কিন্তু পরবর্তী ধাপে যখন জটিলতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে তখন কোষগুলোর মধ্যে অত্যন্ত কঠোর এক ‘আমলাতান্ত্রিক’ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা তৈরি হয়। এই S এবং M স্তরের মাঝখানে দুটো গ্যাপ স্তরের অবির্ভাব ঘটে, যাদেরকে গ্যাপ১ (G1) এবং গ্যাপ২ (G2) নামে অভিহিত করা হয়। G1 স্তর দেখা দেয় নিউক্লিয়ার বিভাজন এবং পরবর্তী ডিএনএ সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার সূচনার মাঝখানে। এই পর্যায়ে কোষচক্রে নিয়োজিত প্রোটিন এবং অন্যান্য উপাদানগুলোর ক্রিয়াকর্ম নির্ভর করে কোষের আভ্যন্তরীণ এবং বাইরের বিভিন্ন সঙ্কেতের উপর। বৃদ্ধি, টিকে থাকা, মৃত্যু, বিপাকক্রিয়া, ডিএনএর ক্ষয়ক্ষতি, আভ্যন্তরীণ রাসায়নিক চাপ বা পীড়ন, কোষের চারদিকের পরিবেশ ইত্যাদির মত বিভিন্ন ধরণের ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক সংকেতগুলোর উপর নির্ভর করে কোষটি বিভাজন বা নবায়নের দিকে এগিয়ে যাবে নাকি আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হবে। আমাদের দেহে ত্বক বা ক্ষুদ্রান্তের মত কিছু অঙ্গ বাদ দিলে বেশীর ভাগ পরিণত অঙ্গেই কিন্তু আর সেভাবে কোষ বিভাজন ঘটেনা। তখন এই কোষগুলো G1 স্তরের ভিতরেই এক নিষ্ক্রিয় অবস্থায় (G0 স্তর) বিরাজ করতে থাকে।
ছবি-১: সরল এবং জটিল কোষচক্র। (১)
G1 স্তরে সবগুলো পরীক্ষা পাশ করলে তবেই S স্তরে ঢোকার প্রশ্ন আসে আর না করলে কোষ চক্রে তখনকার মত বিরতি ঘোষণা করা হয়। আরেক গ্যাপ স্তর G2 দেখা দেয় S স্তর বা ডিএনএ সংশ্লেষণের পরপর। এখানে ডিএনএ বিভাজনের সম্ভাব্য ত্রুটি খতিয়ে দেখা হয়, মাইটোসিসের মাধ্যমের চূড়ান্ত কোষ বিভাজনের জন্য সব কিছু ঠিকঠাক আছে কিনা তার পরীক্ষা চলে। বিভাজনে ত্রুটি বা ডিএনএর ক্ষয় জাতীয় ব্যাপারগুলো কোষের অখণ্ডতা বা শুদ্ধতা রক্ষায় চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়। আর এই হুমকিগুলোকে সামাল দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকে কোষের ভিতরের প্রোটিনের পাহারাদার বাহিনী। এই উল্টোপাল্টা ক্ষয়ক্ষতিগুলো মেরামত না হওয়া পর্যন্ত ওরা লাঠি হাতে বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, কোষ চক্রকে G1 বা G2 স্তর থেকে বেরিয়ে বিভাজনের পথে এগিয়ে যেতে বাঁধা দেয়। যদি পরিস্থিতি একেবারেই মেরামতের অযোগ্য হয়ে দাঁড়ায় তাহলে তাদেরকে এপপ্টেসিসের মাধ্যমে মৃত্যুর দিকে পরিচালিত হতে বাধ্য করে। আর এই জটিল প্রক্রিয়াটাতে যখন নির্দিষ্ট স্থানে এবং অনুক্রমে মিউটেশন ঘটে তখনই শুরু হয় ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা (১)।
এ তো গেল স্বাভাবিক কোষচক্র এবার আসি ক্যান্সারের কোষ চক্রে। কোষচক্র কোষবৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে আর কোন কোষ ক্যান্সারাক্রান্ত হয় যখন কোষচক্রের কঠিন নিয়মকানুনগুলো আর অটুট থাকে না। ক্যান্সারের প্রসংগ আসলেই আমরা বেশীরভাগ সময়েই একইসাথে অনকোজিনের কথাও শুনে থাকি। কিন্তু এই অনকোজিনগুলো আসলে কি? তারা কীভাবে কাজ করে? এই অনকোজিনগুলো আর কিছু নয়, তারা কোষবৃদ্ধির কাজে নিয়োজিত প্রোটো-অনকোজিনগুলোর মিউট্যান্ট বা পরিবর্তিত রূপ। সাধারণ অবস্থায় প্রোটো-অনকোজিনেরা কোষ বিভাজনের প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে, তারা কোষের বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দায়ী প্রোটিনগুলোকে কোড করে। এই জিনগুলোতে মিউটেশন ঘটলে অনেক সময় তারা সদা-সক্রিয় হয়ে অনকোজিনে (অনকোজিন কথাটাও এসেছে সেই গ্রীক শব্দ onkos থেকে যার অর্থ টিউমার বা mass) বা ক্যান্সারের জিনে পরিণত হয়। তখন তারা কোষচক্রের কোন চোখ রাঙ্গানী তোয়াক্কা না করে যখন বা যেখানে বৃদ্ধি পাওয়ার করার কথা নয় সেখানেও মনের সুখে কোষ বিভাজনের প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে তোলার চেষ্টা করে (নীচের ছবিতে দেখুন)। শুধু তাইই নয় কখনও কখনো এই অনকোজিনগুলো কোষকে অবধারিত মৃত্যুর (এপপ্টেসিস) হাত থেকেও বাঁচিয়ে দিতে পারে। অনেকেই ক্যান্সার কোষগুলোর এই যথেচ্ছ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে দ্রুত গতিতে ছুটতে থাকা গাড়ির সাথে তুলনা করেন। ধরুন, আপনি অত্যন্ত দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন কোথাও। আপনার পা গাড়ির এক্সেলারেটার বা গ্যাস প্যাডেলটি চেপে ধরে আছে। গতি কমানোর জন্য পা’টা উঠাতেই বুঝতে পারলেন যে এক্সেলারেটরটি আটকে গেছে, উপরে য়ার উঠে আসছে না। এই অবস্থায় আপনি পা তুলে নিলেও গাড়ির গতি কিন্তু আর কমবে না, গাড়িটি দ্রুতগতিতে ছুটে চলতেই থাকবে। চলন্ত গাড়িতে অকস্মাৎ গ্যাস প্যাডেল আটকে যাওয়ার মতই অনকোজিনগুলোও কোষচক্রকে চালিয়ে নিইয়ে যেতে সচেষ্ট হয়। তারা এমন সব প্রোটিন কোড করতে শুরু করে যারা কোষচক্রকে সদা উদ্দীপিত করে রাখে, সাধারণ নিয়মানুযায়ী G স্তরগুলোতে এসে কোষের বিভাজন আর থেমে থাকে না। কোষগুলো যেন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলতে থাকা বিভাজনের অবিরাম-চক্রে নিজেদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে।
বেশ কয়েক ধরণের মিউটেশনের ফলে প্রোটো-অনকোজিনগুলো অনকোজিনে পরিণত হতে পারে। যেমন ধরুন, রাস(Ras) প্রোটিনগুলো সাধারণ অবস্থায় এক ধরণের আণবিক সুইচ হিসেবে কাজ করে। ‘অন’ অবস্থায় তারা কোষ বিভাজনের সঙ্কেত প্রদান করে, ‘অফ’ অবস্থায় নিষ্ক্রিয় থাকে। কখনও কখনো মিউটেশনের ফলে এরা সদা ‘অন’ বা সক্রিয় হয়ে পড়ে। কোষের বাইরের বা ভিতরের সঙ্কেতগুলো কোষ বিভাজনের বিপক্ষে রায় দিলেও তারা কিন্তু সক্রিয় অবস্থাতেই বিরাজ করতে থাকে। ক্রোমোজোমের ট্রান্সলোকেশন ঘটেও আবার আরেক ধরণের মিউটেশন ঘটতে পারে। এর ফলে দুটি ভাঙ্গা ক্রোমোজোম একে অপরের সাথে উল্টাপাল্টা ভাবে জোড়া লেগে যায়। একধরণের লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সারে BCR/ABL ক্রোমোজোম ট্রান্সলোকেশন দেখা যায় যেখানে Bcr আর Abl এর দুই প্রান্ত জোড়া লেগে একীভূত হয়ে যায়। এর ফলে যে একীভূত বা ফিউশন প্রোটিনটি তৈরি হয় তা সদা-সক্রিয় হয়ে ওঠে। অনেক সময় আবার বিদ্যমান প্রোটো-অনকোজিনগুলোতে কোন রকমের পরিবর্তন না করেও অনকোজিন তৈরি হয়ে যেতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে নিজেদের অনেকগুলো কপি তৈরির মাধ্যমে জিনের এক্সপ্রেশন এমপ্লিফাইড হয়ে যেতে পারে (২)।
৭০ এর দশকে এসে কয়েকটি অনকোজিনের ক্লোনিং এর মাধ্যমে শুরু হয় প্রথম ক্যান্সারের বুহ্যভেদ করার প্রক্রিয়া। প্রথমবারের মত আধুনিক আণবিক যুগের সূচনা ঘটে ক্যান্সারের গবেষণায়। ল্যাম্পপোস্টের চারদিকের ক্ষুদ্র এলাকা ছাড়িয়ে আলো ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে দূর থেকে দূরান্তরে, সঠিক জায়গাগুলোতে। তারপর ৮০র দশকে আমরা বেশ কয়েকটি টিউমার সাপ্রেসর বা টিউমার দমনকারী (নীচের ছবিতে দেখুন) জিনের ক্লোনিং করতে সক্ষম হই। উপরে কোষচক্র নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে পাহারাদারি ব্যবস্থার কথা শুনেছিলাম সেই কাজেই নিয়োজিত থাকে এই টিউমার দমনকারী জিনগুলো। সীমান্তের প্রহরীর মত কোষচক্রের বিভিন্ন চেকপয়েন্টগুলোতে পাহারা দেয় তারা। তাদের ক্ষমতা অসীম, বিভাজনের প্রক্রিয়ায় ভুল ত্রুটি দেখলে বিভিন্ন চেকপয়েন্টের ডাকে সাড়া দিয়ে তারা কোষ চক্রকে থামিয়ে দিতে পারে। বিবর্তনের প্রক্রিয়ায় কোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি ঠেকাতে, অর্থাৎ আমাদের দেহে ক্যান্সার বা টিউমার ঠেকাতে, যে পদ্ধতিগুলোর বিবর্তন ঘটেছে তাদের মধ্যে এই টিউমার দমনকারী জিনগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ জিনগুলোর আবিষ্কার ক্যান্সারের গবেষণার মাইলফলক হিসেবে কাজ করেছে, এ থেকেই আমরা ক্যান্সারের জিনগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে শুরু করেছি। অনকোজিনগুলোর সক্রিয় হয়ে উঠতে বা কোষের বিভাজনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ধনাত্মক নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে এই জিনগুলোর একটি আ্যলেলে মিউটেশনই যথেষ্ট। কিন্তু অন্যদিকে কোষবৃদ্ধিতে বাঁধাপ্রদানকারী টিউমার দমনকারী জিনগুলোর কাজকে ঋণাত্মক নিয়ন্ত্রণপদ্ধতি হিসেবে গণ্য করা হয়। এদের অ্যালেলেগুলো সাধারণত রিসেসিভ হয়, তাই এদের ক্যান্সারাক্রান্ত জিনে পরিণত হতে দুটো অ্যালেলেই মিউটেশন ঘটা অপরিহার্য (এর কিছু ব্যতিক্রম আছে, যেমন TP53 নামক টিউমার সাপ্রেসর জিনে, কোন কোন ক্ষেত্রে, একটা অ্যালেলে মিউটেশন ঘটলে তারা আরেকটি অ্যালেলকেও নিষ্ক্রিয় করে দিতে পারে) (৩)।
ছবি-২: এখানে কোষচক্রের বিভিন্ন স্তরে পাহারার বিভিন্ন চেকপয়েন্টগুলো দেখানো হয়েছে লাল মোটা দাড়ি দিয়ে। অনকোজিনগুলো (কালো রেখা দিয়ে দেখানো হয়েছে) চেকপয়েন্টগুলো উপেক্ষা করে কোষ চক্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে আর ওদিকে টিউমার সাপ্রেসর জিনগুলো (তীর চিহ্ন দিয়ে দেখানো হয়েছে) সীমান্তের প্রহরীর মত চেকপয়েন্টগুলো আগলে রাখে যাতে করে সঠিক সময় না আসা পর্যন্ত কোষের বিভাজন ঘটতে না পারে (২)।
এই টিউমার দমনকারী জিনগুলো সঠিক সঙ্কেত না পাওয়া পর্যন্ত কোষ চক্রকে S স্তরে আটকে রাখে। শুধু তাই নয় এরা আবার কখনও কখনো দরকার পড়লে এপপ্টসিসের (বহুকোষী প্রাণীতে কোষের প্রোগ্রাম করা মৃত্যু এপপ্টসিস বলে) মাধ্যমে কোষকে আত্মহত্যা করতেও বাধ্য করে। আমরা যদি আবার সেই গাড়ির তুলনায় ফেরত যাই তাহলে দেখবো যে এরা আসলে গাড়ির ব্রেক হিসেবে কাজ করে। উপরের উদাহরণ অনুযায়ী গাড়ি চালাতে চালাতে আপনি যদি দেখেন যে এক্সেলারেটরটা আটকে গেছে তখন আপনি কি করবেন? প্রথমেই নিশ্চয় মনের অজান্তেই আপনার পা চলে যাবে ব্রেকের উপর। কিন্তু তখন দুঃস্বপ্ন সত্যি হওয়ার মত যদি দেখেন যে ব্রেকটাও কাজ করছে না? যত জোরেই চাপ দিন না কেন গাড়ি তো থামছেই না, গতিও কমছে না কিছুতেই। এ যেন ঢাকা-আরিচা সড়কে ব্রেক ফেল করে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা সেই গাড়িটি! আর ঠিক একই অবস্থা ঘটে ক্যান্সার কোষগুলোতেও। শুধু প্রোটো-অনকোজিনগুলোতে মিউটেশন ঘটলে কোষের ব্রেক বা টিউমার দমনকারী জিনগুলো শেষ রক্ষা করতে এগিয়ে আসতে পারে। কিন্তু তাদের মধ্যেও যদি মিউটেশন ঘটে যায় তাহলে তো আর কোন কথা বাকি থাকেনা। তখন আমাদের দেহে কোষের জন্ম এবং মৃত্যুর মধ্যে সামঞ্জস্য ধরে রাখা সম্ভব হয় না, শুরু হয় নিয়ন্ত্রণহীনভাবে কোষ বিভাজনের খেলা যেখান থেকে ক্যান্সারের উৎপত্তি ঘটতে পারে। উপরের ছবিতে যে pRb প্রোটিনটি (রেটিনোব্লাস্টোমা প্রোটিন) দেখানো হয়েছে সেটির কোডের জন্য দায়ী এক ধরণের টিউমার দমনকারী জিন RB1। এই pRb প্রোটিনটি কোষের S স্তরে ঢোকার জন্য যে জিনগুলো দরকার তাদের এক্সপ্রেশন বন্ধ করে দিয়ে কোষচক্রকে G1 স্তরে আটকে রাখে। কিন্তু এই ধরণের জিনগুলোতে মিউটেশন ঘটলে কোষের এই ঋণাত্মক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিটি ভেঙ্গে পড়ে।
ছবিতে যে TP53 জিনটি দেখানো হয়েছে সেটিও আরেক ধরণের টিউমার দমনকারী জিন, আমাদের ক্যান্সার কোষে প্রায়শই এদের মধ্যে মিউটেশন ঘটতে দেখা যায়। কোষ বিভাজনের সময় ডিএনএ তে কোন খুঁত বা ক্ষয়ক্ষতি দেখলে তারা হয় কোষ চক্র বন্ধ করে দেয় অথবা কোষটিকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়। এই জিনে মিউটেশন হলে বা অন্য কোন জিনে মিউটেশনের ফলে এই জিনটির কাজ বাধাপ্রাপ্ত হলে সুস্থ কোষ চক্রের নিয়ম ভঙ্গ করে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া ডিএনএসহই কোষগুলো বৃদ্ধি পেতে থাকে। ক্যান্সারের গবেষকেরা প্রথমে শুধু অনকোজিন এবং কোষচক্রকে আটকানোর কাজে টিউমার দমনকারী জিনগুলো নিয়ে কাজ করলেও আশির দশকের শেষের দিকে এসে তারা বুঝতে শুরু করেন যে বহু ক্যান্সারের জিন ডিএনএর মেরামত এবং ক্রোমোজোমের সুস্থিতি রক্ষায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। এই জিনগুলোতে মিউটেশন হলে পয়েন্ট মিউটেশনের হার বেড়ে যায়, কোষে ক্রোমোজোম হারিয়ে যায় বা তাদের বহু প্রতিলিপি তৈরির হার বেড়ে যেতে শুরু করে বা ক্রোমোজোম স্থিতিশীলতা (হোমিওস্ট্যাসিস) বিঘ্নিত হয় (৩)। আধুনিক গবেষণা থেকে এটা পরিষ্কার হয়ে উঠতে শুরু করেছে যে বেশীরভাগ ক্যান্সারেই ডিএনএর মেরামত এবং ক্রোমোজোমের স্থিতাবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। ডঃ বার্ট ভোগেলস্টাইন ক্যান্সারের জিনোম গবেষণার রাজ্যে এক অতি পরিচিত নাম। তিনিই প্রথম আশির দশকের শেষে, ক্যান্সার কোষে TP53 এর সঠিক ভূমিকা ব্যাখ্যা করেন। এর পরের পর্বে এই অতি গুরুত্বপূর্ণ TP53 জিনটির বিবর্তন, মিউটেশন এবং ক্যান্সার রোধে এর ভূমিকা নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করার ইচ্ছে রইলো ।
বেশীরভাগ ক্যান্সারেই ( লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়ার মত দুই একটি ক্যান্সার এর ব্যতিক্রম, যেখানে মাত্র ৫-১০ টি মিউটেশন দেখা যায়) শ’খানেকের বেশী মিউটেশন চোখে পড়ে। কোলন বা মলাশয় ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সারে গড়ে প্রায় ৫০-৮০টি মিউটেশন দেখা যায়, অগ্নাশয়ের ক্যান্সারে ৫০-৬০ টি, ব্রেন ক্যান্সারে (যা সাধারণত অনেক কম বয়সে ঘটতে দেখা যায়, আর তাতে করে এই কোষগুলোতে মিউটেশন ঘটার জন্য অনেক কম সময় পাওয়া যায়) ৪০-৫০ টি মিউটেশন ঘটতে দেখা যায় (৪)। ডঃ ভোগেলস্টাইন এই মিউটেশনগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করতে পছন্দ করেন। ক্যান্সার কোষের মধ্যে কিছু মিউটেশন সরাসরি ক্যান্সারের গঠনে কোন ভূমিকা বা সরাসরি কোন ভূমিকা পালন করেনা, এদেরকে তিনি প্যাসেঞ্জার মিউটেশন বলেন। আর অন্যদিকে যে মিউটেশনগুলো সরাসরি কোন কোষকে ক্যান্সারাক্রান্ত করে তুলতে ভূমিকা রাখে তাদের বলা হয় ড্রাইভার মিউটেশন। কোন ক্যান্সার কোষে বেশীরভাগ মিউটেশনই প্যান্সেঞ্জারের মত নিষ্ক্রিয় থাকে। আর ড্রাইভার মিউটেশনগুলো সক্রিয়ভাবে আক্রমণ করে আমাদের পূর্ব পরিচিত অনকোজিন বা টিউমার দমনকারী জিনগুলোকে। তবে এখানে আরেকটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে প্রতিটি ক্যান্সার জিনোম অনন্য, যে কোন দুটি স্তন ক্যান্সার বা ফুসফুসের ক্যান্সারের জিনোমের মধ্যে পার্থক্য অকল্পনীয়-রকম বেশী । ক্যান্সার জিনোম সিকোয়েন্সিং শুরু করার পর গবেষকেরা অবাক হয়ে দেখতে পান যে, সুস্থ দুটি কোষের গঠনের মধ্যে প্রায় হুবহু মিল দেখা গেলেও দুটি ক্যান্সারাক্রান্ত কোষের মধ্যে অমিলের পরিমাণ চোখে পড়ার মতই। ডঃ ভোগেলস্টাইন ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, ক্যান্সার জিনোম সিকোয়েন্সিং আমাদের এত বছরের চিকিৎসার পর্যবেক্ষণকেই বৈধতা দিতে শুরু করেছে। প্রত্যেকটা রোগীর ক্যান্সারই আলাদা কারণ তাদের প্রত্যেকের ক্যান্সার জিনোম অনন্য (৪)।
আশা করি, এখন পাঠকেরা বুঝতে পারছেন কেন ক্যান্সারের ব্যাপারস্যাপারগুলো বুঝতে হলে কোষচক্র কীভাবে কাজ করে তা বোঝাটা একান্ত জরুরী হয়ে দাঁড়ায়। কোষচক্রের ভাষায় ব্যাখ্যা করতে না পারলে ক্যান্সার নিয়ে কোন গভীর জীববিজ্ঞানীয় আলোচনাই সম্ভব নয়। আর কোষচক্রের ভাষায় বলতে গেলে ক্যান্সারের সংজ্ঞাটাও কিন্তু বেশ সরল। সোমাটিক বা দেহকোষে মিউটেশনের ফলশ্রুতিতে কোষচক্রের নিয়ন্ত্রণকারী বিধিনিষেধগুলো যখন ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে তখনই ক্যান্সারের সম্ভাবনা দেখা দেয়। কোষের বিভাজন, বৃদ্ধি এবং মৃত্যু নিয়ন্ত্রণের জন্য যে বিশেষ পদ্ধতিগুলো বিবর্তিত হয়েছে তাতে কিছু নির্দিষ্ট মিউটেশন ঘটলে কোষগুলো যথেচ্ছা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। উপরের আলোচনায় দেখেছি যে, একটি মিউটেশনের মাধ্যমে অনকোজিন তৈরি হলেই কিন্তু কোন কোষ ক্যান্সারাক্রান্ত হয়ে পড়ে না, সেই সাথে টিউমার দমনকারী প্রক্রিয়া এবং ডিএনএ মেরামতের প্রক্রিয়াগুলোসহ কোষচক্রের একাধিক প্রক্রিয়াগুলোও ভেঙ্গে পড়তে হবে। অর্থাৎ কোন কোষের ক্যান্সারাক্রান্ত হতে হলে তাকে নির্দিষ্ট অনুক্রমে বেশ কিছু মিউটেশনের মধ্য দিয়ে যেতে হয় এবং সেটা ঘটার হার খুব কম বললেই চলে। আমরা এও দেখেছি যে একটি মাত্র মিউটেশন থেকে কখনওই ক্যান্সার হয় না, তা জার্মলাইন বা জনন কোষ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়াই হোক বা অন্যান্য দেহকোষ থেকে ঘটা স্বতঃস্ফূর্ত মিউটেশনই হোক। আর এখানেই সূচিত হয় অন্যান্য বংশগতিয় রোগের সাথে ক্যান্সারের পার্থক্যটা। মাস্কিউলার ডিস্ট্রফির মত বংশগতিয় অসুখ বংশ পরম্পরায় বাবা মার থেকে ছেলেমেয়েতে বাহিত হতে পারে, কিন্তু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। বাবা মা থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া মিউটেশনের ফলে পরবর্তীকালে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়লেও তা থেকে সরাসরি ক্যান্সার হয় না, তার উপর বহুদিন ধরে আরও বেশ কিছু সংখ্যক নির্দিষ্ট মিউটেশনের বোঝা চাপলে তবেই সেখান থেকে ক্যান্সারের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। তাহলে প্রশ্ন করতে হয়, আমাদের চারদিকে এত (আগের পর্বে এই পরিসংখ্যানগুলো দিয়েছিলাম) মানুষের মধ্যে ক্যান্সার দেখা যায় কেন? এর কারণটাও বেশ সহজবোধ্য। আমাদের দেহে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কোষে যদি সাধারণ হারেও মিউটেশন ঘটতে থাকে তাহলে ৬০-৭০-৮০ বছরের জীবনে অন্ততপক্ষে একটি কোষের ক্যান্সারাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তেমন কম নয় বললেই কিন্তু চলে। আর এ কারণেই বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়তে থাকে।
ছবি-৩: বিনাইন টিউমার এবং ম্যালিগিন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার। সৌজন্যঃ ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউট (www.cancer.gov)
কিন্তু সব টিউমারই কি ক্যান্সার? নাহ, টিউমার মাত্রই যেমন ক্যান্সার নয় তেমনি টিউমারের সাইজ বড় হলেই তাকে ক্যান্সার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়না। পার্থক্যটা নির্ভর করে টিউমারের কোষগুলোর বিস্তৃতির ক্ষমতার উপর। যে টিউমারগুলো তাদের মূল বা প্রাথমিক অঙ্গের ভিতরেই সীমাবদ্ধ থাকে, সেখান থেকে শরীরের অন্য কোথাও ছড়িয়ে পড়তে পারে না তাদেরকে বলে বিনাইন টিউমার। আর ওদিকে টিউমারের যে কোষগুলো মেটাস্টেসিসের মাধ্যমে (আগের পর্বে এ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করেছিলাম) তাদের প্রাথমিক অঙ্গ থেকে লিম্ফ নোড বা রক্তনালীর মাধ্যমে অন্যান্য অঙ্গেও ছড়িয়ে পড়ে নতুন নতুন উপনিবেশ স্থাপন করতে সক্ষম তাদের বলে ম্যালিগন্যান্ট টিউমার বা ক্যান্সার। কিন্তু এই বাঁধনহীনভাবে বেড়ে চলা কোষগুলো শুধু যে বেয়ারা প্রকৃতির তাইই নয় যথেষ্ট চতুরও বটে। বিন্ধ্যপর্বতের মত অবিরাম গতিতে বেড়ে চলার জন্য তাদের যে অক্সিজেন বা অতিরিক্ত পুষ্টির দরকার হবে তার যোগান দেওয়ার ব্যবস্থাও করে ফেলতে জানে তারা। একসময় আশেপাশের রক্তনালীগুলোকেও তারা চাকরীতে নিয়োজিত করে ফেলে এই কাজ করার জন্য। আর তারপরই শুরু হয় তাদের বাঁধনহীনভাবে বেড়ে চলার খেলা, তারা রক্তস্রোতকে কাবু করে শরীরের অন্যান্য কলা এবং অঙ্গকে আক্রমণ করতে শুরু করে। প্রতিটা অঙ্গের নতুন পরিবেশে নতুন করে গড়ে তোলে তাদের উপনিবেশ। আগের পর্বে উল্লেখ করেছিলাম যে, এভাবে মূল অঙ্গ থেকে ছড়িয়ে গিয়ে অন্যান্য কলা এবং অঙ্গে ছড়িয়ে পড়াকেই মেটাস্টেসিস বলে। ত্বকের ক্যান্সারের কোষগুলো যদি মেটাস্টিসাইজড হয়ে যকৃত বা মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়ে তখন তাকে ত্বকের ক্যান্সার হিসেবেই অভিহিত করা হবে, যকৃত ক্যান্সার নয়। বিনাইন টিউমারগুলো সাধারণত ক্ষতিকর হয়না, আবার মূল অঙ্গের বাইরে ছড়িয়ে না পড়া পর্যন্ত ক্যান্সারের চিকিৎসা বেশ সহজ। কিন্তু মেটাস্টেসিস শুরু হলেই তা ক্রমশ: আমাদের বর্তমান চিকিৎসা ক্ষমতার আওতার বাইরে চলে যেতে শুরু করে।
পরবর্তী পর্বে কিমোথেরাপী, রেডিয়েশন এবং টার্গেটেড থেরাপী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার ইচ্ছে রইলো।
তথ্যসূত্রঃ
১) Massague, J. G1 Cell –Cylce control and Cancer. Nature 432. ( 2004) doi:10.1038/nature03094)
২) Chow, A. Y. (2010), Cell Cycle Control by Oncogenes and Tumor Suppressors: Driving the Transformation of Normal Cells into Cancerous Cells. Nature Education 3(9):7।
৩) Steven A. F (2012). Dynamics of Cancer, Inicidence, Inheritence and Evolution of Cancer. Prometheus books. 69-70.
4) Mukharjee, S (2010) The Emperor of All Melodies, A Biography of Cancer. Scribner. 450-453.
httpv://www.youtube.com/watch?v=mRekUmggp-I&feature=related
@ফারুক,
এই লোকটা কে? কেন তার ভিডিওকে গ্রহণযোগ্য সোর্স বলে গণ্য করা হবে সেটা কি একটু দয়া করে বলবেন? আপনি কী ভিডিওর নীচে দেওয়া তার ওয়েবসাইটের লিঙ্কটাতে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন?
@বন্যা আহমেদ, এই লোকটা কে , তা জানি না। ইন ফ্যাক্ট অন্য এক ফোরামে ক্যান্সার বিষয়ক আলোচনা পড়তে গিয়ে ভিডিওর লিঙ্কটি গতকালি পেয়েছিলাম। আমার কাছে ভাল লেগেছে এবং এতে ভাবনার খোরাক আছে বলেই শেয়ার করেছি।
তার ভিডিওকে গ্রহণযোগ্য সোর্স বলে গণ্য করতে তো বলিনি , ভাবতে বলেছি। অর্থাৎ , আপনার বিচার বুদ্ধিকে প্রয়োগ করতে বলেছি।
এখনো পর্যন্ত সে চেষ্টা করিনি বা করার ইচ্ছাও নেই।
@ফারুক,
আপনি এই ব্লগে নিজেকে আর কত হাস্যকর করে তুলবেন? যাক গিয়ে, শোনেন, আর কীভাবে বললে আপনি ‘ভাবতে ভাবতে’ বুঝতেও শিখবেন তা জানি না, তবে শেষবারের মত বলি, বিজ্ঞানের লেখাগুলোতে কে বা কি এবং কেনর উত্তর দিতে না পারলে অর্থহীন স্প্যামিং বা শিক্ষানবিসের ভাষায় ‘ল্যাদাবেন’ না। আমি চিলে কান নিয়ে গেল বললেই মাথা ঠুকে ঠুকে ভাবতে বসার ভান করি না, যেসব ব্লগে করলে পাত্তা পাবেন সেখানে যান। আজকের ক্যান্সারের চিকিৎসা এবং কিমোথেরাপির লিমিটেশন নিয়ে বৈজ্ঞানিক বহু গবেষণা আছে, পরের কোন এক পর্বে সেটা নিয়ে যখন লিখবো তখন ‘ভাবার’ এবং নিজের মন্তব্যকে ডিফেন্ড করার ক্ষমতা থাকলে ফেরত আইসেন।
@বন্যা আহমেদ, কার হাসি কে হাসে? ল্যাদানোটা আপেক্ষিক ব্যাপার। যারা সব বুঝে ফেলেছে , তাদের কাছেই ভিন্ন মত ল্যাদানো মনে হয়। এখন দেখা যাক কে ল্যাদাচ্ছে?
কি বুঝলাম? ক্যান্সার একটি বংশগতিয় রোগ এবং এর পিছনে ভাইরাসের কোন ভুমিকা নেই। নাসিরুদ্দিন হোজ্জার চাবি হারানোর গল্পটি পড়ার পরে আমার মতো লোক যারা ভাবতে পছন্দ করে , তাদের কাছে এমনটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক।
এর পরে আমার মন্তব্যের উত্তরে কি বল্লেন?
তাহলেই বুঝুন কেমন সুন্দর ডিফেন্ড করেছেন!!
ভিডিওর বক্তব্যগুলো সম্পর্কে আপনার কি কোন বক্তব্য বা জবাব আছে? জানি কোন সদুত্তর দিতে পারবেন না। এ কারনেই মাছ না পেয়ে ছিপে কামড় দিয়েছেন , অর্থাৎ কে বলেছে , কোথায় বলেছে , কখন বলেছে , এই সকল অবান্তর বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন। হ্যাডম থাকে তো ভিডিওর বক্তব্যকে খন্ডন করুন।
অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করি। “ক্যান্সার একটি বংশগতিয় রোগ” বা অন্যদের মতো “স্ট্রোকের রোগীকে ওপেন হার্ট সার্জারি করে সুস্থ করে তোলা হয়” , এমন কথা বলে লোক না হাসানোই ভাল। “ক্যান্সার একটি বংশগতিয় রোগ” , এটি অনেক কারনের মাঝে একটি কারন হতে পারে, তবে ক্যান্সারের সঠিক কারন এখনো জানা যায় নি , এটাই বাস্তবতা।
(এটাই এই পোস্টে আমার শেষ বক্তব্য। পারলে ভিডিওতে করা বক্তব্যের জবাব দেন , নইলে অফ যান। ব্যাক্তিগত আক্রমন কাম্য নয়।)
@ফারুক
দেখুন তো লেখায় এটা বলা আছে কীনা…।
এবার আসি আসল কথায়। বিজ্ঞানের সামান্য ভিত্তি না থাকলে তো হুদাহুদাই বিতর্ক করে লাভ নেই।
বলুনতো বংশগতিয় বা জিনগত রোগ বলতে কী বোঝায়? আর এও বলুন সাধারণভাবে আমরা যাদের ভাইরাল সংক্রামক ব্যাধি বলে থাকি তার সাথে ক্যান্সারে ভাইরাসের ভূমিকার পার্থক্য কী?
@বন্যা আহমেদ, কথা কিন্তু ফারুক সত্যি বলছে; হ্যাডম থাকলে ভিডিও বাবা ফারুকের ভিডিওযুক্তি খন্ডন করুন। ভাইনবার্গ ক্যান্সার বায়োলজি সেকেন্ড এডিশন সম্পুর্ণ মুখস্ত করে বসে থাকলেও কোন লাভ হবেনা যদি কিনা ভিডিওবাবার যুক্তির কাছে হ্যাডমের পরিচয় দিতে ব্যার্থ হন আপনি 😀 । এর আগেও ফারুকের বস ভিডিওবাবার যুক্তি আপনি খন্ডন করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। ঐ ভিডিওবাবাটি অবশ্য ফারুকের চেয়ে এককাঠি বেশী সরেশ ছিলো, এক এক পোস্টে তেরোটা কইরা ভিডিও দিতো সে।
@আল্লাচালাইনা,
এইরে, দিলেন তো! ফারুক মোটে গুগুলবাবার স্ক্যাম ভিডিওগুলো খুলে জেনেটিক রোগের সংজ্ঞা শিখতে গেছিলেন, দিলেন তো ওনাকে কনফিউজ করে ভাইনবার্গের (ফারুক, দেখেন তো নামটার বানান করতে পারেন নাকি!) নামটা নিয়ে :)) । একবার তো উনি বিবর্তনের মডেল খুঁজতে গিয়ে সেই যে উধাও হলেন আর ফিরেই এলেন না! হ্যাডম তো কোন ছাড়, হ্যাডমের বাপদাদা চৌদ্দগুষ্টি দিয়েও কুনু লাভ হবে বলে মনে কয় না।
@ফারুক,
ইন্টারনেটে এরকম অনেক প্রকারের ভিডিওই পাওয়া যায়। তাদের সব দাবীতে বিশ্বাস করতে হবে এমন কোন কথা নাই।
আপনি breatharianism লেখে google এ সার্চ দেন দেখবেন কিছু মানুষ দাবী করে বসে আছে তার নাকি শুধু বাতাস খেয়ে বেচে আছে।
বৈজ্ঞানিক জার্নালগুলোতে প্রকাশিত তথ্যগুলোতে আস্থা রাখা যেতে পারে কারন সেগুলো অনেকের দ্বার যাচাই হয়ে তবে প্রকাশিত হয়।
@রনবীর সরকার, ইন্টারনেটে এরকম অনেক প্রকারের ভিডিওই পাওয়া যায় , জানি । তাদের সব দাবীতে বিশ্বাস করতে হবে এমন কোন কথা নাই , সেটা ও সত্য। তবে আমি আপনাকে বিশ্বাস তো করতে বলিনি , ভাবতে বলেছি।
দেখুন ও ভাবুন-
httpv://youtu.be/mRekUmggp-I
ক্যান্সার। সেই ১৯৮২ সাল থেকে শুনে আসছি আগামি ১০ বছরের ভিতরে ক্যান্সারের কারন জানা যাবে ও নিরাময় পদ্ধতি আবিষ্কৃত হবে। একে একে ৩০ বছর পার হলো। খুব বেশি অগ্রগতি চোখে পড়ে না। একেবারেই যে অগ্রগতি নেই সেটা বলা ভুল। ক্যান্সার নিরাময়ের কথা আর কেউ বলে না। ক্যান্সার চিকিৎসার সাফল্য মাপা হয় life expectency দিয়ে। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর বেচে থাকার সময় কিছুটা বেড়েছে , এটা সত্য।
১৯৯৬ সালে পূর্ব ইউরোপের এক রিটায়ার্ড মেডিকেল কলেজের প্রফেসরের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল। উনি আমাকে একটি ব্যাবসায়িক প্রস্তাব দিয়েছিলেন। উনার বক্তব্য অনুযায়ী – উনি ক্যান্সারের কারন ও ঔষধ আবিষ্কার করেছেন। কারন হিসাবে উনি ভাইরাসের কথা বলেছিলেন। তবে সকল ধরনের ক্যান্সারের ঔষধ তিনি আবিষ্কার করেছেন , নাকি কোন বিশেষ ধরনের ক্যান্সারের ঔষধ আবিষ্কার করেছেন , সেটা আর জিজ্ঞাসা করা হয় নি।
গতকাল BBC তে Dr Serena Nik-Zaidal এর সাক্ষাৎকার শুনছিলাম। ক্যান্সার সেলের মিউটেশন ও জেনেটিক প্যাটার্নের পরিবর্তনের সাথে এ্যপোবেট নামের একটা এনজাইমের সংশ্লিষ্ঠতা নিয়ে স্পেকুলেশন বা অনুমান করা হচ্ছে। এই এনজাইমটির আবার ভাইরাস প্রতিরোধের সাথে যোগসুত্র আছে। সেকারনে আমার অনুমান- ক্যান্সার সেলের মিউটেশন ও জেনেটিক প্যাটার্নের পরিবর্তনের সাথে ভাইরাসের যোগসুত্র থাকলে ও থাকতে পারে।
http://www.bbc.co.uk/iplayer/console/p00rknwg
@ফারুক, কোন কোন ভাইরাস তো ক্যান্সারের কারন হতেই পারে। এখন পর্যন্ত জানা তথ্যানুযায়ী ১৫-২০% ক্যান্সারের (সারভিকাল, গ্যাস্ট্রিক, লিভার ক্যান্সার) পিছনে ভাইরাসের ভূমিকা আছে বলে জানা যায়। এখানে সাম্প্রতিক একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা বা পরিসংখ্যানের এবস্ট্রাক্ট দেখতে পারেন।
আজকাল চারিদিকে উত্স কোষ(stem cell) -এর জয় জয়কার .. অনেক রোগ যেমন বহুমূত্র, হৃদরোগ এসব ক্ষেত্রে উত্স কোষই চিকিত্শাক্ষেত্রে যক্ষের ধন(holly grail) .. এইসব কোষ যেখানে থাকে তার পারিপার্শিক কোষের মত কোষ সৃষ্টি করে এবং এরা রক্তনালী তৈরী করে রক্তপ্রবাহ অক্ষত রাখে .. এদের কাজ অনেকটা কর্কট(cancer) কোষএর মতই ..
কথা বলতে পারার আগে থেকেই বাবার হৃদরোগ দেখে আমি অনেকবার জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার হব ভেবেছিলাম .. শেষ পর্যন্ত কম্পিউটার নিয়ে পরতে হলো ..
খুবই চমৎকার লেখা। আমি এ বিষয়ে একেবারে অজ্ঞ-মূর্খ ছিলাম। ক্যান্সার বিষয়ক গবেষণাকে কেন অঙ্কোলজি বলা হয় সেটাই জানতাম না। আজকে বুঝলাম। প্রাক-অঙ্কোজিন আর অঙ্কোজিন নাম দুটাও এই প্রথম শুনলাম। ইংরেজি উচ্চারণ হিসেবে লিখলে অঙ্কোজিন হয় না? নাকি অনকোজিন? আমার কাছে অঙ্কোজিন বেশি ভাল লাগছে…
মন্তব্যে দেখলাম জেনেটিক এর বাংলা হিসেবে ‘জিনগত’ ব্যবহার করার কথা হয়েছে। আমি এটার সাথে একমত। জিনগতই বলা উচিত।
মন্তব্য পড়ে যা বুঝলাম এক লাইনের সংজ্ঞার অভাব বোধ করেছেন অনেকে। আমারও মনে হয়েছে কিছু বিষয়ের এক লাইনের সংজ্ঞা দিলে ভাল হতো। তবে কিছু বিষয়ের সংজ্ঞা আবার নিজে থেকেও পাঠকের বুঝে নেয়া উচিত। যেমন, প্রাক-অঙ্কোজিন যে কোষবৃদ্ধির জন্য দায়ী প্রোটিনগুলোকে কোড করে সেটা একেবারে প্রথম দিকেই বলে দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে আমার কোন সমস্যা হয়নি।
কিন্তু কোষচক্রের একটা সংজ্ঞা দেয়া যেতো। কোষ বিভাজন এবং প্রতিলিপি তৈরির ক্রমান্বয়িক ঘটনাসমষ্টির নামই যে কোষচক্র সেটা লেখা পড়লেই বোঝা যায়, কিন্তু শুরুতে এটা বলে শুরু করলে বোধহয় আরও ভাল হতো।
আর আমার তো মনে হচ্ছে এবিসি টু ক্যান্সার হিসেবে এই লেখাটা একেবারে অনন্য। ক্যান্সার কী কেউ এই প্রশ্ন করলে এরপর থেকে এই লেখার লিংক দিয়ে দিব।
ক্যান্সার আর এ জাতীয় ভয়াবহ রোগের নাম শুনলেই কেমন একটা আঘাত লাগে। ছোটেবেলায় আমার এক ফুপাতো ভাই মারা গিয়েছেন ক্যান্সারে,খুব ছোটো ছিলাম বলে কিছু বুঝিনি। কলেজে থাকতে মারা গেলো আমার এক ক্লাসফ্রেন্ড যে আমাকে প্রথম প্রোগ্রামিং করতে উতসাহ দিয়েছিলো। ভার্সিটিতে উঠে ব্লগে দেখলাম একটা ফুটফুটে বাচ্চার ক্যান্সারের জন্য টাকা দরকার, ফোন নাম্বার জোগাড় করে সামান্য কিছু সাহায্য করে আসলাম,কিছুদিন পর খোজ নিয়ে দেখি বাচ্চাটা মারা গিয়েছে। কয়েকমাস আগে ডিপার্টমেন্টের বড় ভাইয়ের টিবি হলো,তাকে নিয়ে মুক্তমনাতে পোস্টও দিয়েছিলাম, কয়েকদিন আগে তিনিও মারা গেলেন। এ ধরণের রোগে শুধু রোগী মারা যায় তাই না,পরিবার শেষ সম্বলটা শেষ হয়ে যায়,এর থেকে গুলি খেয়ে ১ মিনিটে মারা যাওয়া মনে হয় অনেক ভালো।
কোনো পরিসংখ্যান না দেখলেও আমার ধারণা বাংলাদেশে ক্যান্সারের হার অনেক বেড়ে গিয়েছে। প্রতিদিন ভার্সটি এলাকায় দেখা যায় কিছু ছেলেমেয়ে রাস্তায় নেমেছে ক্যান্সার আক্রান্ত আত্মীয়কে বাচাতে টাকা সংগ্রহ করতে। খুবই অসহায় আর খারাপ লাগে এ দৃশ্য দেখলে,প্রায়ই চিন্তা করি কিভাবে এই কষ্ট দূর করা যায়,কোনো কিছু মাথায় আসেনা, ২০-৫০ টাকা সাহায্য করলেইতো সমস্যা সমাধান হচ্ছেনা।
ভ্যাজাল খাবারের সাথে ক্যান্সারের সম্পর্ক কতখানি? দেশে সব খাবারে বিষ,এটা কি ক্যান্সারের একটা কারণ? এ ব্যাপারে লেখালেখি করা যায়না?
বন্যা আপুর লেখার ব্যাপারে কিছু বলার নেই,সবাই এখন জানে উনি কোন মাপের লেখক। আর লেখার ব্যাপারে কিছু বলার মতো টেকনিক্যাল জ্ঞানও আমার নাই।
@রামগড়ুড়ের ছানা,
কি ধরনের উপাদান বা ‘বিষ’ বাংলাদশে ভ্যাজাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় ? তবে গবেষণার দৃষ্টিকোন থেকে একটা উপাদানের সাথে ক্যান্সারের মত জটিল অবস্থার সরাসরি সম্পর্ক প্রতিষ্টা করা ‘বৈজ্ঞানিকভাবে’ সহজ কাজ নয়। রাজনৈতিক , সামাজিক কর্মী কিংবা সাংবাদিকদের জন্য এটা অনেক সহজ এবং তারা এটা নিয়মিত করে যাচ্ছেন।
একটা সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ‘ভেজাল’ খাওয়ানের পর পর্যবেক্ষনে রাখতে হবে অনেকদিন ক্যান্সার হয়েছে কিনা বোঝার জন্য। কিন্তু ইতিমধ্যেই ক্যান্সার রোগী – এমন ব্যক্তিদের মধ্যে জরীপ করে যে গবেষণা হয় , সেগুলো কতটা বৈজ্ঞানিক সে সম্পর্কে অনেক বিতর্ক করা যায়। পরিসংখ্যান বিজ্ঞান নয় – শুনতে খারাপ লাগলেও।
@সংশপ্তক,
কিন্তু বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের প্রেক্ষিতে কোষের মিউটেশনের হার কি পর্যবেক্ষনযোগ্য? বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্যের উপস্থিতিতে কোষ বিভাজনে ভুলের পরিমানের উপর কি কোন ধরনের পরীক্ষা করা হয়েছে?
আর শুনেছি প্রাণীজ প্রোটিন অতি মাত্রায় গ্রহন, ধূমপান, মাদক এগুলার সাথে ক্যান্সারের সম্পর্ক আছে। এর সব গুলোই কি জরিপ থেকে পাওয়া গেছে?
@রনবীর সরকার,
প্রথমেই বলে রাখা দরকার যে , জীবন্ত মানুষের উপর মিউটেশন নিয়ে গবেষণাকে ‘অনৈতিক’ হিসেবে গন্য করা হয়। অর্থ্যাৎ , কেউ যদি একটা জীবন্ত মানুষের দেহে ডি এন এ মিউটেশন ঘটিয়ে এর ফলাফল পর্যবেক্ষণ করতে চান , সেটা অবৈধ হবে এবং গবেষকে আইনগত বিষয়সহ অন্যান্য অনেক সমস্যায় পড়তে হতে পারে। এজন্য এজাতীয় গবেষণাগুলি কিছু বাছাইকৃত প্রানীর দেহে করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। সব দেশেই এই নীতিমালা মেনে চলা হয়।
মানুষের শরীরে ডি এন এ – তে মিউটেশন যে কোন কারনেই ঘটতে পারে তা সে বাহ্যিক বা আভ্যন্তরীন যে কোন উৎস হোক না কেন। এখন মানুষের শরীরের কোষচক্রে অকার্যকর কিংবা ক্ষতিগ্রস্হ কোষগুলোর মৃত্য ঘটে নতুন কোষের জন্ম হয় একটা স্বাভাবিক প্র্রক্রিয়া যাকে বলা হয় ‘প্রোগ্রামড সেল ডেথ’। এই প্রক্রিয়া সব মানুষের দেহে সমানভাবে কাজ করে না। কারও কারও দেহে এই প্রক্রিয়ায় সমস্যা থাকে এবং তখন ঐ ত্রুটিপূর্ন কোষকে মরে যাওয়ার বদলে বাড়তে দেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয় যার পরিনতি ক্যান্সার কোষ। এসব কারনে ধুমপায়ী কিংবা আমিষভোজী মাত্রই ক্যান্সার রোগী নয়।
‘প্রোগ্রামড সেল ডেথ’ প্রক্রিয়ায় সমস্যা থাকলে সেই দেহে ক্যান্সার হওয়াটা সময়ের ব্যপার মাত্র – সে ধুমপায়ী কিংবা তৃনভোযী অথবা যে কোন মানুয হোক না কেন।
@সংশপ্তক,
এই ত্রুটিটা যেমন জন্মগত হতে পারে ঠিক তেমনি কারসিনোজেন থেকে ঘটা মিউটেশন বা অন্য কোন মিউটেশন থেকেও ঘটতে পারে। ক্যান্সার হতে হলে ক্রমান্বয়িকভাবে বেশ কতগুলো মিউটেশন ঘটতে হয়। এর মধ্যে ‘প্রোগ্রামড সেল ডেথ’ ও একটি।
@বন্যা আহমেদ,
শুধু ধুমপান নয় , অন্য যে কোন ‘জনপ্রিয়’ কার্সিনোজেন থেকে ক্যান্সার কোষের প্রকাশ, বিকাশ এবং বিস্তার ঘটবে না যদি :
– শরীরের মেটাবলিজম যদি মিউটাজেন সমূহের মেটাবলিজমকে নন-মিউটাজেন মেটাবলিজমে পরিণত করে।
– জেনোটক্সিক কার্সিনোজেন গুলি যদি ডি এন এ ছেড়ে দিয়ে প্রোটিন অথবা গ্লুটাথিয়োনের মত অন্য কোন উপাদানের সাথে বন্ধন গঠন করে।
– ডি এন এ মেরামতকারী ব্যবস্থা ডি এন এ -র প্রতিলিপি তৈরীর আগেই ত্রুটিগুলো মেরামত করে দেয়।
– ক্ষতিগ্রস্হ ডি এন এ -র প্রতিলিপি তৈরীর আগেই ঐ কোষের মৃত্যু ঘটে।
– নব্যপ্রকাশিত কোষকে শরীরের সাধারণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়।
@সংশপ্তক, আপনার এই মন্তব্যটা আগে দেখিনি, আজকে দেখলাম। মন্তব্যটা থেকে একটু ভুল বোঝার স্কোপ থাকতে পারে, মনে হতে পারে আপনি যে ৫ টি প্রক্রিয়ার কথা বললেন সেগুলো যদি কারও শরীরে ঠিক বা শক্তিশালী থাকে তবে তার কখনো ক্যান্সার হবে না। হ্যা, এটা ঠিক যে তার শরীরে ক্যান্সার প্রতিরোধ করার শক্তি বেশী থাকবে, তবে র্যান্ডম মিউটেশনের ফলে এই ফাংশনগুলোর জন্য দায়ী জিন বা জিনগুলোতেই তো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই সবগুলো ফাংশন ঠিক থাকার পরেও কারও শরীরে কয়েক দশক ধরে জমতে থাকা র্যন্ডম মিউটেশনগুলোর ফলশ্রুতিতে ক্যান্সার দেখা দিতে পারে। এ কারণেই তো বয়স বাড়ার সাথে সাথে ক্যান্সারের ইন্সিডেন্স এক্সিলারেন্স ঘটতে থাকে।
@রনবীর সরকার, ধুমপান, নিউক্লিয়ার তেজষ্ক্রিয়তা, এক্স-রে, সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি, এসবেস্টস ইত্যাদি যে ক্যান্সারের কারণ হিসেবে কাজ করতে পারে তা মোটামুটি এখন প্রতিষ্ঠিত। তবে এগুলোর কোন কিছুর সংস্পর্শে আসলেই যে ক্যান্সার হবে এমনো কোন কথা নেই। এগুলোর কারণে যদি কোষে কিছু নির্দিষ্ট মিউটেশন ঘটে তবেই ক্যান্সার হবে। অনেক সময় কারও দেহে কোন একটা কারসিনোজেন(ক্যান্সারোৎপাদক ফ্যাক্টরগুলো) থেকে প্রাথমিক কোন মিউটেশন ঘটতে পারে, কিন্তু ক্যান্সার হওয়ার জন্য তারপরেও আরও অনেকগুলো মিউটেশনের দরকার হতে পারে। এতগুলো মিউটেশন হওয়ার আগেই হয়তো সে অন্য কোন রোগে মারা যাবে। ধুমপান নিয়ে বহু দশকের গবেষণা এবং পরিসংখ্যান আছে। এখানে আমেরিকার ন্যাশনাল ক্যান্সার ইন্সটিটিউটের একটা পরিসংখ্যান দিচ্ছিঃ
Tobacco Facts
Tobacco use is the leading cause of preventable illness and death in the United States. It causes many different cancers as well as chronic lung diseases, such as emphysema and bronchitis, and heart disease.
– Cigarette smoking causes an estimated 443,000 deaths each year, including approximately 49,400 deaths due to exposure to secondhand smoke.
– Lung cancer is the leading cause of cancer death among both men and women in the United States, and 90 percent of lung cancer deaths among men and approximately 80 percent of lung cancer deaths among women are due to smoking.
– Smoking causes many other types of cancer, including cancers of the throat, mouth, nasal cavity, esophagus, stomach, pancreas, kidney, bladder, and cervix, and acute myeloid leukemia.
– People who smoke are up to six times more likely to suffer a heart attack than nonsmokers, and the risk increases with the number of cigarettes smoked. Smoking also causes most cases of chronic lung disease
বেশি জোশ লাগল লেখাটা। যারা বলছেন সাধারন মানুষের জন্য কঠিন হয়ে গেছে তারা দয়া করে একটু বলেন বায়োলজির জ্ঞ্যান যাদের একেবারেই নাই তাদেরকে আসলে কীভাবে ক্যান্সারের ব্যাপারটা বোঝানো সম্ভব। শুধুমাত্র কোষবিভাজন বোঝাতেই(একেবারেই সল্প পরিসরে) এইরকম অন্তত দুটো লেখা লাগবে। আমার কাছে অন্তত মনে হয় না বায়োলজির জ্ঞ্যান যাদের একেবারেই নাই তাদের জন্য লেখাটা। বা যদিও হয় হয়ত ঝাপসা একটা আইডিয়া দেওয়া সম্ভব। কিন্তু একথা মানতেই হবে লেখাটা পুরোটা বুঝতে হলে বায়োলজির বেসিক জ্ঞ্যানটা লাগবে। না হলে পড়ে আসলেই কোন লাভ নাই।
বন্যা আপা, একটা প্রশ্ন। একটা অঙ্গে ক্যান্সার আক্রান্ত হবার পরে কোষবিভাজন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রনাধীন থাকে না বুঝলাম। এটা অনেক আগে থেকেই জানি। কিন্তু আমার মনে যেটা ঝামেলা করছে বহুদিন যাবত সেটা হল, অন্তহীনভাবে কোষবিভাজনটা আসলে সমস্যা বা চিন্তার বিষয় কেন? মানে বুঝলাম প্রচন্ডভাবে বাড়ছে কিন্তু তাতে করে দেহের সমস্যাটা কী হয়? যদি এমন হয় যে পর্যাপ্ত পুষ্টি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে সেই ক্ষেত্রে কী হবে?
@সাইফুল ইসলাম, আপনাকে উত্তরটা দেওয়ার সময়ই পাচ্ছি না, এর পরের কোন পর্বে এটা যোগ করে দিচ্ছি। ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন, এটা একটা গুরুত্ব্বপূর্ণ প্রশ্ন, আমার মাথায়ই আসেনি যে এটা সাধারণ জ্ঞানে কারও জানার কথা না।
@সাইফুল ইসলাম,
অন্তহীন কোষ বিভাজন কোন সমস্যা নয়। শরীরের পুরোনো কোষগুলি যদি ভদ্রভাবে নতুন কোষের আবির্ভাবে বিদায় নেয় , কোন সমস্যা নেই। প্রতিটা কোষ জানে তাদের কি করতে হয়। বিভিন্ন ধরনের কোষ নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করে কাজ করে। আপদটা শুরু হয় যখন কিছু কোষ ‘সাম্রাজ্যনাদী’ এবং ‘সম্প্রসারনবাদী’ আচরন শুরু করে অন্য কোষের অন্ন কেড়ে নেয়, জমি দখল করে , এমনকি সংবিধাম পর্যন্ত বদলে দেয়। এতে করে কোষ সমাজে অরাজকতা তৈরী হয় এবং যেভাবে শরীর কাজ করার কথা তা আর করতে পারে না এই ‘সাম্রাজ্যনাদী’ এবং ‘সম্প্রসারনবাদী’ কোষগুলোর মাস্তানীতে।
পড়ে মুগ্ধ হলাম। ক্যান্সার সম্পর্কিত বৈজ্ঞানিক কোন বই এর চেয়ে সহজ হয়ে গেলে তা অতি সরলীকরণ হয়ে যাবে। আর ক্যান্সার সম্পর্কে গভীরভাবে জানতে হলে জীববিজ্ঞানের ভাষাও শিখতে হবে বৈকি। সুতরাং আমি এক্ষেত্রে আইনস্টাইনের শিক্ষানীতিতে বিশ্বাস করি – “everything should be as simple as possible, but not simpler”।
খুবই শিক্ষনীয় তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। আর যেটা খুব আশ্চর্যজনক ভালো লেগেছে তা হলো আপনার কম কথায় ক্যান্সারের ইতিহাসে আলো ফেলা। টেলোমিয়ারের ভূমিকা সম্পর্কে সামান্য আলোচনা থাকার দরকার ছিল বলে আমিও মনে করি। এ সংক্রান্ত কাজের জন্য মেডিসিন ও ফিজিওলজিতে ২০০৯ সালে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছে।
যদিও আপনি এরই মধ্যে বলেছেন যে, আপনি শিক্ষিকা নন, তবে আমি কিন্তু কিছু শিখতেই এসেছিলাম আজকালের ব্যস্ততার মধ্যেও কিছুটা সময় বের করে। কিছু জানা জিনিস পরিষ্কার হলো, আবার কিছু নতুন তথ্যও জানা হলো। বেশ তথ্যবহুল একটা পর্ব লিখলেন। ক্যান্সারের মতো জটিল জিনিসকে মোটামুটি সহজ ভাষাতেই লিখেছেন এখানে। তবে আপনার কাছে চাওয়াটা আরেকটু বেশি কিনা। বেশ আকর্ষণীয় শুরুর পর মাঝের দিকে এসে নানান রকম বৈজ্ঞানিক শব্দ আর প্রতীকের আধিক্য চলে আসায় গতি কিছুটা কমে গেছে বলে মনে হলো। জানি, কোষচক্রের মতো জিনিস সাধারণ ভাষায় প্রকাশ খুবই কঠিন কাজ, তবে মানুষটা আপনি বলেই মনে হয়, ভাষাকে আরো গতিময় করা সম্ভব। কিছু মনে না করলে, যেসব জায়গায় আমার পড়ার গতি ধীর হয়ে গেছে এবং কীভাবে বললে সেই গতি হয়তো ততটা ধীর হতো সেই বিষয়ে বলি।
বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক শব্দ হুটহাট চলে এসেছে, কিন্তু এদের অর্থ পরিষ্কার নয় সাধারণের কাছে। যেমনঃ অন্কোজিন। শুরুতেই বললেন-
সাধারণের কাছে অবশ্যম্ভাবী প্রশ্ন – প্রোটো-অন্কোজিনই বা কি? এরপর যা যা বলেছেন, তাতে অন্কোজিন যে বিশেষ গুরুত্বের জিন তা বুঝা গেলেও, তার অর্থ পরিষ্কার হয়নি পুরো পর্বে। এমনও হতে পারে যে, আমি ধরতে পারিনি, সেক্ষেত্রে দুঃখিত। তবে আমার মতো সাধারণ মানুষ যাদের ইংরেজি শব্দের ভান্ডার সীমিত, তাদের জন্য “অন্কোজিন হলো সেই জিন, যা ক্যান্সার সৃষ্টি করার শক্তি রাখে” – এমন একটা লাইন খুব কার্যকর হতো। হয়তো এর সাথে যদু-মধু জিনের সাথে পার্থক্য নিয়ে আরো দুয়েকটা লাইন থাকতে পারে। আমি নিশ্চিত, আপনি আরো সুন্দর করে বলতে পারবেন।
এছাড়া, ক্যান্সার বুঝার ক্ষেত্রে এপোপ্টোসিস কি সেটা বুঝা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যথারীতি আপনার লেখাতেও তা এসেছে। তবে, এটা কি তা উল্লেখ করার আগেই শুরুর দিকের দুই জায়গায় এর কথা এসে গেছে [“তাদেরকে এপপ্টেসিসের মাধ্যমে মৃত্যুর দিকে পরিচালিত হতে বাধ্য করে”, “অনকোজিনগুলো কোষকে অবধারিত মৃত্যুর (এপপ্টেসিস) হাত থেকেও বাঁচিয়ে দিতে পারে”], যা ধরতে পাঠকের সমস্যা হওয়ার কথা। এরপর বন্ধনীর ভিতর এক জায়গায় “বহুকোষী প্রাণীতে কোষের প্রোগ্রাম করা মৃত্যু এপপ্টসিস বলে” বললেও, তাতে পুরো ব্যাপারটা ধরা যায় কি? এপোপ্টোসিস জিনিসটা কি সেটা শুরুর দিকেই আরেকটু সহজভাবে ব্যাখ্যা করলে হয়তো আরো ভাল হতো।
আরেকটা বৈজ্ঞানিক শব্দ – অ্যালেল। এর কোন ব্যাখ্যা দিতেই ভুলে গেছেন। আগের পর্বে এর কথা বলেছিলেন কিনা মনে পড়ছে না, একবার দ্রুত চোখ বুলিয়েছি, চোখে পড়েনি। যেহেতু অ্যালেল কি তাই জানা নেই, তাই অ্যালেলের রিসেসিভনেস কিংবা একটা আর দুটা অ্যালেলে মিউটেশনের মধ্যে পার্থক্য পরিষ্কার হতে চায় না।
এছাড়া জিন এক্সপ্রেশন, বিভাজন ত্রুটি এসবের কথা আগেই বলেছেন নীল রোদ্দুর।
এরকম একটা-একটা শব্দের উদাহরণ দেয়াটা একটু বেশিই হয়ে গেলো হয়তো। তবে, মূলতঃ এই ব্যাপারগুলোই সাধারণ পাঠকের জন্য সমস্যাজনক বলে বললাম। এই উদাহরণগুলো হয়তো বইয়ের জন্য সহজ করে লিখতে সাহায্য করবে আপনাকে।
আরেকটা ব্যাপার, আপনি লিখার মাঝে M স্তর, S স্তর, G1 স্তর, G2 স্তর এইসব প্রতীক এনেছেন। আসলে, বাংলা শব্দ পড়তে পাঠক যতখানি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, ইংরেজি শব্দ কিংবা প্রতীক পড়তে ততখানি করে না। এরকম প্রতীকের ব্যবহার কম করলে গতি বাড়বে বলে বিশ্বাস। বোধ করি, ছবির সাথে লেখার মিল রাখতেই এরকম প্রতীকগুলো চলে এসেছে। তবে, ছবিগুলোকেও বাংলায় অনুবাদ করা যায় না কি? ছবির টেক্সট বাংলায় হলে তা বুঝতেও সহজ হয়। শিক্ষানবিসের লেখায় বাংলায় অনুবাদকৃত ছবি দেখা যায়। মুক্তমনার মাধ্যমে জেনেছি, আপনারা দুজন মিলে বই লিখছেন। এ ব্যাপারে উনি হয়তো ভালো পরামর্শ দিতে পারবেন।
ভাল কথা, এমন ভাবনেন না যে, লেখা ভাল লাগেনি। বরং বেশি ভাল লাগার প্রত্যাশা থেকে এসব বললাম। আগ্রহের সাথে পরের পর্বের অপেক্ষায় আছি কিন্তু। 🙂
(F)
@প্রতিফলন, ধন্যবাদ সময় নিয়ে মন্তব্য করার জন্য। অনেক কিছুই নীল রদ্দুরকে বলেছি তাই আবার রিপিট করছি না এখানে। তবে লেখাটাতে কিছু ব্যাপার আরেকটু সোজা করে ব্যাখ্যা করা যায় কীনা সেটা দেখছি, সেই সাথে এপপ্টসিস বা অ্যালেলের মত কয়েকটা শব্দের ব্যাখ্যাটাও যোগ করে দিব। তবে আপনি এখানে অনকোজিন নিয়ে যা বলেছেন তা কিন্তু বুঝলাম না। আপনি এখানে যে লাইনটি তুলে দিয়েছেন তার পরেই কিন্তু পুরো প্যারাগ্রাফ জুড়ে প্রোটো অনকোজিন আর অনকোজিনের কথাই বলছি গাড়ির গ্যাস প্যাডেল এর তুলনা দিয়ে। আর আমি ব্যাক্তিগতভাবে কোষচক্রের স্তরগুলোকে ইংরেজিতে রাখার পক্ষপাতি। ‘এম’ লেখার চেয়ে ‘M’ লিখলেই বেশী সহজবোধ্য লাগে আমার কাছে।
@বন্যা আহমেদ,
আসলে অনকোজিন সম্বন্ধে ১ম লাইনেই যা বলেছেন তা মাথায় গেঁথে যায়, আমার গেছে আর কি, এরপর সেটা থেকে বের হতে পারিনি বোধ হয়। আসলে অনকোজিন একটা ইংরেজি শব্দ, এর বাংলা প্রতিশব্দ কিংবা বাংলায় এর ব্যাখ্যা শুরুতে (এর সম্বন্ধে অন্য কিছু বলার আগে) বললে বুঝতে সুবিধা হয়, সেটাই বলার চেষ্টা করছিলাম। আমি যা বলছিলাম তার ইংরেজি রূপ – An oncogene is a gene that has the potential to cause cancer. (উইকি থেকে নেয়া)
আর ‘M’ বা ‘এম’ স্তর বা এরকম কোন প্রতীকের চাইতে অর্থপূর্ণ শব্দ (যেমনঃ ‘মাইটোসিস’ স্তর) বুঝতে সহজ লাগে আমার। এক্ষেত্রে M থেকে ‘মাইটোসিস’-এর হিডেন ট্রান্সলেশনটা দরকার হয় না। এটা অবশ্য একান্তই ব্যক্তিগত মত।
আরেকটা কথা বলবো ভেবেও ভুলে গিয়েছিলাম। প্রত্যেকটা ক্যান্সারের জিনোম আলাদা – এই তথ্যের সাথে পার্সোনালাইজ্ড্ মেডিসিনের জনপ্রিয় হতে শুরু হওয়ার কথা বললে পাঠক আরো আগ্রহ পাবে।
বন্যা আপু,
লেখাটা পড়লাম, বেশ সময় নিয়ে… ইদানিং আমার অভ্যাস হয়ে গেছে, বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ যখন পড়তে বসি, তখন ধীরে ধীরে আগের লাইনটা বুঝে তারপর পরের লাইনে যাওয়া। আমি মলিকুলার বায়োলজীর কোর নলেজ জানিনা, অভার অল বায়োলজী বুঝি, আর আমার ফিল্ডের কাজগুলো (সেনসরী ফিজিওলজি) ওগুলোর চেয়ে একটু ভালো করে বুঝি এই আরকি। তবে সত্যটা হল, যে একদম কিছু জানে না মলিকুলার বায়োলজি সম্পর্কে, আমার চেয়েও কম তার আসলেই কষ্ট হবে এই লেখা পড়তে, শুরুতে না হলেও পরে হবে। যে মলিকুলার বায়োলজী বুঝে, জানে, তার হয়ত একটুও কঠিন মনে হবে না।
পুরো লেখাটাই জায়গায় জায়গায় যেখানে বাংলায় তুলনা দিয়ে ব্যাখ্যা করেছেন, সেখানে খুব প্রাঞ্জল সহজ লেগেছে। কিন্তু বুঝতে সমস্যা হয়েছে যেখানে একটা আইডিয়া থেকে আরেকটা আইডিয়াতে জাম্প করেছেন। যেমন, এস স্তর, এম স্তর এবং এরপর বহুকোষীর কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রণের ফ্যাক্টরগুলো জি১, জি২ এইপর্যন্ত সহজ লেগেছে, কিন্তু এরপরেই মনে হয়েছে, বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণকারী ফ্যাক্টরগুলো স্কিপ করে গেলেন, যেগুলো বিস্তারিত লিখলে বুঝতে সুবিধা হত, লেখার ফ্লোতে মিশে যাওয়া যেত। মানে আসলে বলছি, যেহেতু জিনিসটা জীববিজ্ঞান, তখন হয় ফ্যাক্টরগুলো বলবেন, নাহয় একেবারেই বলবেন না, বা খুব হাল্কাভাবে বলবেন যাতে পাঠক মনে করে, কিছু ফ্যাক্ট আছে, কি কি ফ্যাক্টর তা না জানলেও চলবে আপাতত, আগে বাড়ি।
প্রটো অঙ্কোজিনের কথা বলেছেন, এরা অঙ্কোজিনে রুপান্তরিত হতে পারে, যদি তাতে মিউটেশন ঘটে যায়। কিন্তু এখানে আপনি মিউটশনের কথাটা না বলে রাস প্রোটিন, আনবিক সুইচ, এই টার্মগুলো বলেছেন, তারপর মিউটেশনের কথা বলেছেন। ভালো হত, যদি, প্রোটো অনকোজিনের মিউটেশনের ফলে অঙ্কোজিনে পরিণত হওয়ার কথা বলে, বলতেন মিউটেশনের ফলে কোষের আনবিক সুইচ গুলো সদা অন হয়ে যেতে পারে, সেইসাথে আনবিক সুইচ, ব্যাপারটা কি, কিভাবে কাজ করে সেটা বললে। আনবিক সুইচ একটা টার্ম, যেটা প্রথম শুনলে ভিজুয়ালাইজ করা যায় না, ব্যাপারটা কি?
তারপর জিনের এক্সপ্রেশন অ্যামপ্লিফাইয়ের কথা বলেছেন, প্রশ্ন হল, জিনের এক্সপ্রেশন কি জিনিস? আর সেটা অ্যামপ্লিফাই মানেই বা কি? মলিকুলার বায়োলজী জানা লোকের জন্য ইটস অলরাইট। আমি জানি এগুলো কি। কিন্তু যার কাছে এই টার্মগুলো ই নতুন, তারপক্ষে আগেবাড়া সম্ভব নয়। আমি বলব, যে জানে, তারজন্য চমৎকার একটি সুখপাঠ্য লেখা, কিন্তু যে জানেনা, তারজন্য কঠিন, কারণ এইখানে বৈজ্ঞানিক টার্মগুলো আছে, তার ডেফিনেশন নেই।
কয়েকটি শব্দের/বাক্যের কথা বলি, বিভাজন ত্রুটি (রেপ্লিকেশন এরর) বা ডিএন এর ক্ষয়, এইজিনিসটা বুঝতে মাথা খাটাতে হয়, একবার পড়ে এই শব্দের অর্থ ধরা সম্ভব নয়। (আমার কনফিউশনের কথা বলি, রেপ্লিকেশন এরর আর ডি এন এর ত্রুটি কি এক জিনিস? আমি জানিনা, সন্দিহান।)
অনুক্রমে মিউটেশন—> শব্দটা দিয়ে ঠিক কি বুঝিয়েছেন, আমি পরিষ্কার বুঝিনি, আমি ধারনা করতে পারি একটি জেনেটিক সিকোয়েন্সে মিউটেশন ঘটেছে… কিন্তু জেনেটিক সিকোয়েন্সে মিউটেশন কেই আপনি অনুক্রমে মিউটেশন বুঝিয়েছেন কিনা, নিশ্চিত না।
কোষীয় মৃত্যু–> আমার কাছে ইন্টারেস্টিং লাগে জিনিসটা, কিন্তু কখন কোষীয় মৃত্যু হবে আর কখন ক্যান্সারের দিকে এগুবে, এই মেসেজটা একটু ধোয়াশা লেগেছে।
এরপর বিনাইন, ম্যালিগন্যান্ট অংশটা সহজ লেগেছে।
আপু, আপনি কোষ বিভাজন, কোষবিভাজনের নিয়ন্ত্রণ, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ক্যান্সারের পথে হাটা, বেনাইন ম্যালিগন্যান্ট সবকিছু একটা লেখায় দেখাতে গিয়ে বেশ তাড়াহুড়া লেগে গেছে, ভালো হয়, যদি একটা একটা করে অংশ ধরে, সেইটাকে ক্লিয়ার করেন একটা পর্বে, এরপর আরেকটা কে অংশ আরেক পর্বে দেখান। আমার মনে হয়েছে, এই ব্লগটা তিনটা পর্বে লিখলে, ভালো হত, একটা একটা করে কনসেপ্ট ক্লিয়ার করে, সব একসাথে এসে কনসেপ্ট আগের চেয়ে আমার বাড়লেও ধোয়াশা আমার যায়নি, মনে হচ্ছে প্যাচ লেগে গেছে।
আর সবশেষ বলব, এতোসব ধোয়াশার মধ্যেও চমৎকার একটা প্রাঞ্জলতা আছে, মলিকুলার বায়োলজী সম্পর্কে কিছু জানা মানুষদের জন্য সুখপাঠ্য একটা লেখা, আমার জন্য একটু কঠিন হলেও সহজ অংশটা আসলেই খুব মনে ধরেছে, মন নিজেই এগিয়ে গেছে পড়ার জন্য, তবে বিগিনারদের জন্য, হোজ্জার গল্পের কিছুটা দূর পরেই বাতি নিভে গেছে।
@নীল রোদ্দুর, ধন্যবাদ এত সময় নিয়ে পড়ার এবং মন্তব্য করার জন্য। এই লেখাটায় যে জিনিসটা সমস্যা হয়ে গেছে যে, এত জটিল একটা বিষয় নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জায়গায় জায়গায় থেমে সংগা দিতে হলে লেখাটা আর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম না। মানব বিবর্তনের বইটাতে জেনেটিক্সের বেসিক্স নিয়ে একটা পুরো চ্যাপ্টার লেখার ইচ্ছে আছে, কিন্তু সেগুলো এতই বেসিক যে লিখতে বসতেই ইচ্ছে করে না। সেখানে তুমি বা প্রতিফলন যে টার্মগুলোর কথা বলেছো তার অনেক কিছুই আসবে, ওই লেখাগুলো আগে লিখলে হয়তো কিছুটা সমস্যা এড়ানো যেত। আর লেখাটা বেশী বড় হওয়া নিয়ে আমার একটু ভিন্নমত আছে, এই পুরো লেখাটাই আসলে একটা ধারণার উপরই লেখা এবং সেটা হল কোষ লেভেলে ক্যান্সার হলে কী ঘটে। এই ব্যাপারটা এক সাথেই উপস্থাপণ করা উচিত। তবে আরো সহজভাবে সেটা উপস্থাপণ করা যায় কীনা সেটা দেখছি। লেখাটায় কয়েক জায়গায় কিছু পরিবর্তন করা চেষ্টা করবো এই উইকেন্ডে।
রেপ্লিকেশন এরর হচ্ছে বিভাজনের সময় বা প্রক্রিয়ায় যে ত্রুটিগুলো ঘটে থাকে। কিন্তু ডিএনএর ক্ষয় বা ড্যামেজ বিভাজনের সময় ছাড়া অন্য সময়েও ঘটতে পারে। যেমন, বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর রাষায়নিক পদার্থ, সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট আলো, ধুমপান, নিউক্লিয়ার তেজষ্ক্রিয়তার মত অনেক কিছুই ডিএনএর ক্ষয় ঘটাতে পারে।
হ্যা সিকোয়েন্সের কথাই বলছিলাম।
আচ্ছা, দেখছি এই জায়গাটা আরেকটু পরিষ্কার করা যায় কীনা।
একজন সাধারণ পাঠক হিসাবে লেখকের কাছে প্রশ্নঃ
আপনার এ লেখার পাঠক কারা?
আর একটু পরিষ্কার করে বলিঃ যারা সব খোঁজ-খবর রাখেন, তারা? নাকি না-জানা সেই বিপুল সংখ্যক মানুষ?
আপনার লেখায় বিভিন্ন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে প্রশ্নটা না করে পারলাম না বলে, দুঃখিত।
@স্বপন মাঝি, আমার তো মনে হয় যে কেউ এই লেখার পাঠক হতে পারেন, এখানে অনেকেই মন্তব্য করেছেন যাদের জীববিজ্ঞানের তেমন কোন ব্যাকগ্রাউন্ডই নেই। তবে লেখক হিসেবে আমি একটা কাজ প্রায়শঃই করি, সেটা হল পাঠককে পরবর্তি স্তরে নিয়ে যাওয়া চেষ্টা। আমি আশা করি, আমার বিজ্ঞানের লেখায় এমন কিছু থাকবে যা নিয়ে এর আগে আলোচনা হয়নি, প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক জার্নালের পাতা থেকে যে ব্যাপারগুলো বাংলা ভাষাভাষি পাঠকদের কাছে এখনো পৌছুয়নি। সেটা কত সহজভাবে বা কার্যকরীভাবে করতে পারলাম সেটা অবশ্য অন্য আলোচনা। আরও আশা করি যে টেকনিকাল দুই একটা জিনিস না বুঝলে তারা একটু কষ্ট করে গুগুল করে নেবেন (আমি নিজে সেভাবেই পড়ি)। তবে, একথা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে যাদের বিজ্ঞান বা ‘মানুষ কিভাবে এলো না এলো’ নিয়ে আগ্রহ নেই লেখাটা তাদের জন্য নয় 🙁 ।
বন্যাপা, একটানে লেখাটা পড়ার সময় বার বারই মনে হচ্ছিলো ক্যান্সারের মতো একটা বিষয় নিয়ে এমন চমৎকার সাবলীল বর্ননা বন্যাপার পক্ষেই দেওয়া সম্ভব। একেবারে সুরুৎ করে পড়ে ফেললাম। লেখাটা আসলেই কেবল ‘তথ্য সমৃদ্ধ’ নয়। তবে পরীক্ষার জন্য ফিজিওলজি, এনাটমি, প্যাথলজি পড়ার কারণে বেশ কিছু টার্ম আগে থেকে জানা থাকায় একটু অ্যাডভান্টেজ পেয়েছি যদিও 🙂
জালিশ ভাইয়ের মতো মন্তব্য করার সামর্থ নাই, তাই এক গাদা ভালো লাগা জানিয়ে গ্লাম 😀
লেখাটি তথ্যগত ভাবে ভীষন সমৃদ্ধ। তবে ভাষাটা আরো সরল করা যেত সাধারনের জন্যে। এটা পাঠয়পুস্তকে এর সাবেকী ভাষাতে লেখা-বিজ্ঞানের প্রবন্ধে আরো প্রাঞ্জল এবং সরল ভাষা কাম্য।
@বিপ্লব, একটা বাংলা বিজ্ঞানের পাঠ্য বই দেখাও তো এই ভাষায় লেখা 🙂 ।
@বন্যা আহমেদ,
নীল আর প্রতিফলনের বক্তব্যটা দেখ,ভাষা নিয়ে। আমি ঠিক ওদের কথাটাই বলেছি-ওরা আরো বিস্তারিত ভাবে সেই একই অভিযোগ করেছে।
@বিপ্লব পাল,
লেখাটাকে আমার পাঠ্যপুস্তকের সাবেকী ভাষা লেখা বলে মনে হয়নি একেবারেই। বিজ্ঞানের প্রবন্ধ এমনই হওয়া উচিত।
আসলেই অবিশ্বাস্য। মাত্র গত ত্রিশ বছরের গবেষণায় আমরা জানতে পারছি একটু একটু করে ক্যান্সার সম্পর্কে। ক্যান্সারের রহস্য উন্মোচিত হতে শুরু করেছে মাত্র গত শতকের সত্তর-আশি দশক থেকে।
এর কারণ মেডিক্যাল গবেষণায় ধনীদেশগুলোর অর্থ বিনিয়োগে অনীহা। অথচ এরা বিলিয়ন-ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করছে যুদ্ধাস্ত্র তৈরির জন্যে। যুদ্ধবিদ্যায় এদের অগ্রগতি সায়েন্স ফিকশনকেও হার মানায়। এই পৃথিবীটাকে এক বিকেলের মধ্যে কয়েকবার ধ্বংস করার ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছে তারা। ভাবতে আসলেই অবাক লাগে মানুষ মারার কায়দা আবিষ্কারের জন্য যত ব্যয় তারা করে তার একটা ক্ষুদ্রাংশও চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য বরাদ্দ করা হয় না। যদি করতো আমি নিশ্চিত আমরা আজ যা জানি, ক্যান্সার সম্পর্কে তার চেয়ে অনেক বেশি জানা যেত।
এর কারণ রাজনৈতিক। দুঃখিত, বন্যা আহমেদের এই লেখায় রাজনীতিকে নিয়ে আসার জন্য।
লেখাটা অত্যন্ত প্রাঞ্জল হয়েছে। বিষয়টা সহজ নয়। আমার মতো সাধারণ পাঠকদের কথা মাথায় রেখে বন্যাকে লিখতে হয়েছে। এধরনের লেখা লিখতে প্রচুর সময় লাগে। সেই সময়টা বন্যা আমাদের দিয়েছেন, পাঠকদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।
@ইরতিশাদ,
আপনার মন্তব্যটি তথ্যগত ভাবে ভুল। আমেরিকাতে গবেষণার দুটি ফান্ড- এন এস এফ আর এন আই এউচ। এর মধ্যে এন এস ফ হচ্ছে অঙ্ক, কম্পুটার সায়েন্স, পদার্থবিদ্যা, রসায়ান-সব গবেষণার জন্যে ফান্ড। এর জন্যে সরকারের খরচ ৯ বিলিয়ান ডলার। আর এন আই এইচ, যা হচ্ছে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গবেষণা, তার পেছনে খরচ ২৮ বিলিয়ান ডলার। এর অধিকাংশই যায় ক্যান্সার রিসার্চে।
সুতরাং ক্যান্সার রিসার্চে আমেরিকা যা খরচ করে সমস্ত বিজ্ঞান গবেষণার দুইগুনের বেশী। আমি থাকি এইন আই এইচের হেড কোয়ার্টারের কাছে। আমাদের এই মেরিল্যান্ডে এমন একজন বাঙালী গবেষক পাওয়া যাবে না যে ক্যান্সার রিসার্চে নেই। যে আগে পদার্থবিদ্যা বা গণিত বা রসায়নে কাজ করত-ফান্ডের জন্যে সেও ক্যান্সার রিসার্চে কিছু করছে! এই হচ্ছে অবস্থা। আমি এদের অনেকেই জিজ্ঞেস করেছি-আর কদ্দুর। সবাই দেখি তাতে কদুই দেখাচ্ছে। বন্যা লিখছে বটে অনেক কিছু আবিস্কারের কথা-তবে গবেষকদের নিজেদের গবেষণালদ্ধ ফলেই খুব বেশী কনফিডেন্স নেই।
@বিপ্লব পাল,
একটু ধীরে বিপ্লব, দম নাও একটু। আমি কিন্তু একবারও বলিনি যে ক্যান্সারের চিকিৎসার গবেষণায় বিশাল কোন বিপ্লব ঘটে গেছে, খেয়াল করে দেখ, আমি কিন্তু ক্যান্সারের মলিকিউলার সাইডটার কথাই বলে যাচ্ছি এখনো। বারবার বলছি যে, প্রাথমিক অবস্থার পরে, মেটাস্টিসাইজ করতে শুরু করলেই বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা আর তার চিকিৎসা করতে পারি না। সেজন্যই একটা পুরো পর্ব রেখেছি কিমোর ব্যার্থতা আর টারগেটেড থেরাপির অপ্রতুলতা নিয়ে কথা বলার জন্য। তত্ত্বগতভাবে কিছু বোঝা মানেই তা চিকিৎসাবিদ্যায় ট্র্যান্সলেটেড হয়ে যাওয়া না।
@বিপ্লব পাল,
কোথায় ভুল হলো বুঝতে পারছি না। হয়তো যা বলতে চেয়েছি তা বলা হয় নি। আমার মন্তব্যে তথ্য ছিল শুধু একটাই –
আমি বলতে চেয়েছিলাম তথাকথিত ‘প্রতিরক্ষা’ খাতে ধনী রাষ্ট্রগুলো যা খরচ করে তার তুলনায় চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণায় বরাদ্দ যৎসামান্য।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাজেট বছরে প্রায় ৬১৪ বিলিয়ন ডলার।
“President Barack Obama today sent to Congress a proposed defense budget of $613.9 billion for fiscal 2013. The request for the Department of Defense (DoD) includes $525.4 billion in discretionary budget authority to fund base defense programs and $88.5 billion to support Overseas Contingency Operations (OCO), primarily in Afghanistan.”
সূত্রঃ http://www.defense.gov/releases/release.aspx?releaseid=15056
আমার কথাটার স্বপক্ষে তথ্য আপনার মন্তব্যেই রয়েছে। আপনার দেয়া তথ্য অনুযায়ী এন এস এফ আর এন আই এইচ মিলিয়ে বার্ষিক ব্যয়বরাদ্দ ৩৭ বিলিয়ন ডলার।
এবারে হিসাব করুন – ৩৭ বিলিয়ন হচ্ছে ৬১৪ – র ৬% (শতকরা ছয় ভাগ)। একে প্রতিরক্ষা ব্যয়ের একটা ক্ষুদ্রাংশ বলেছি – ভুল বলেছি কি?
আপনি লিখেছেন,
যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই যে, এন আই এইচ সব টাকা ক্যান্সারের পেছেনেই খরচ করে, তবুও আপনার পয়েন্টটা ধরতে পারলাম না। আমি তুলনা করছি যুদ্ধবিগ্রহের বাজেটের সাথে, আপনি তুলনা করছেন বিজ্ঞান খাতে বরাদ্দের সাথে। বুঝলাম না।
বন্যার শ্রমসাধ্য লেখার সমালোচনায় এধরনের একটা ঢালাও মন্তব্য অনভিপ্রেত। কার কনফিডেন্স নেই, কেন নেই, বছরে ত্রিশ বিলিয়ন ডলার খরচ করার পরেও পর্বত কেন মুষিক প্রসব করেই যাচ্ছে পারলে এ নিয়ে কিছু লিখুন।
@ইরতিশাদ,
আমেরিকার মিলিটারি বাজেট ৬১৪ বিলিয়ান ডলার মানে পুরোটাকাই মিলিটারির গবেষণাতে খরচ হয় না। মিলিটারি গবেষণার খরচ, আনুমানিক ৫৫ বিলিয়ান ডলারের কাছা কাছি।
আর এই আই এইচ একমাত্র সংস্থা না যে ক্যান্সার গবেষণাতে খরচ করে। অনেক ওষুধ কোম্পানীও করে। সব মিলিয়ে ক্যান্সার গবেষণার খরচ ৪০ বিলিয়ান ডলারের কাছাকাছি।
প্রশ্ন উঠতে পারে এই ৫৫ বিলিয়ান ডলার মিলিটারি গবেষণা অপচয় কি না। এই যে আজ ইন্টারনেট করছেন, সেটিও ওই ৫৫ বিলিয়ান ডলার পাই এর একটি প্রজেক্ট আরপানেট থেকে এসেছে। স্যাটেলাইট , জিপি এস রযুক্তি সহ অনেক যুগান্তকারী আবিস্কারই হয়েছে ডারপা গ্রান্ট থেকে।
সুতরাং আপনার বক্তব্য আবেগতাড়িত ছারা অন্য কিছু না।
আর বন্যার উদ্দেশ্যে ওই কথা লিখি নি। আমাদের এখানে যারা ক্যান্সার গবেষণাতে কাজ করে তাদের উদ্দেশ্যে লিখেছি। তাদের অধিকাংশই সাগর তটে নুড়ি কুড়ানোর উদাহরনই আমাকে দিয়ে থাকে।
@বিপ্লব পাল,
আমার প্রথম মন্তব্যে পরিষ্কার না হলেও পরের মন্তব্যে স্পষ্ট করে বলেছি, আমার তুলনাটা ছিল প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয়বরাদ্দের সাথে চিকিৎসা খাতের বাজেটের।
বাই দ্য ওয়ে, ডিওডি-র প্রকাশ্য আরএন্ডডি বাজেট হচ্ছে ৭৬ বিলিয়ন ডলার
The US spends nearly $76 billion annually on defense research and development, an amount that exceeds the total defense spending of any other country except China.
http://www.thebulletin.org/web-edition/features/restructuring-defense-rd
@ইরতিশাদ,
তাহলে চিকিৎসা খাতে ব্যায়ের পরিমান অনেকটাই বেশী। সংখ্যার হিসাবে ৪% বেশী। ডিফেন্সে যায় ১৯%, চিকিৎসাতে ২৩%।
http://en.wikipedia.org/wiki/File:U.S._Federal_Spending_-_FY_2011.png
আপনাকে তুলনা করতে হলে রিসার্চের সাথে রিসার্চের, সার্ভিসের সাথে সার্ভিসের তুলনা করতে হবে। আপেলের সাথে ত পেয়ারার তুলনা করতে পারেন না।
@ইরতিশাদ ভাই, প্রতিরক্ষা বাজেটের সমান না হলেও ক্যান্সার নিয়ে বিশ্বজুড়ে গবেষণার ফান্ডিং কিন্তু খুব কম না। ১৯৭১ সালে নিক্সন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার পর থেকে আমেরিকাতেই প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করা হচ্ছে। ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সমস্যাটা বোধ হয় ফান্ডিং না, এখানে সমস্যাটা এ ব্যাপারে আমাদের জ্ঞান এবং চিকিৎসাবিদ্যায় তাকে প্রয়োগ করার ক্ষমতা। আমাদের এখনকার জ্ঞান যেন একটা সিলিং হিট করে গেছে। কিন্তু ক্যান্সারের ব্যাপারগুলো খুব জটিল এবং এর পিছনের মলিকিউলার ব্যাপারগুলো বুঝতেই আমাদের জানটা বেরিয়ে যাচ্ছে। ক্যান্সারের মত কোন কিছু আমাদের চিকিৎসাবিদ্যা, বা মানব সভ্যতাই বলতে পারেন, হ্যান্ডেল করেছে বলে মনে হয় না। আমরা সাধারণভাবে মনে করি সব ক্যান্সার এক, কিন্তু প্রত্যেকটা ক্যান্সার আসলে একেকটা আলাদা আসুখ, এমনকি একই রকম ক্যান্সারের মধ্যেও প্রত্যেকটার মধ্যে বিভিন্ন রকমের শয়ে শয়ে মিউটেশন দেখা যায়। এখানে শুধু কোষের মিউটেশন বুঝলেই হচ্ছে না কোষের ভিতরের মিথষ্ক্রিয়া, সিগ্ন্যালিং, জিন এক্সপ্রেশান অনেক কিছুর ব্যাপার চলে আসছে যার অনেক কিছুই আমরা এখনো ঠিকমত বুঝি না। বৃদ্ধি পাওয়া যদি প্রাণের হলমার্ক হয় তাহলে বলতে হবে ক্যান্সার হচ্ছে সেই হল মার্ককে বিশুদ্ধ রূপ প্রদান করেছে। আপনি একে খুব নির্দিষ্টভাবে টার্গেট না করতে পারলে(যেটা করার মত জ্ঞান আমাদের এখনো সেভাবে নেই) আপনার নিজের কোষের বৃদ্ধিই বন্ধ হয়ে যাবে, আপনি যেন নিজের বিরুদ্ধে নিজেই যুদ্ধে নেমেছেন! আর সে জন্যই তো কিমো একটা পর্যায়ের পর আর কাজ করে না। এ নিয়ে এর পরে লেখার ইচ্ছা আছে।
@বন্যা,
আমি তোমার লেখা থেকে আরো জানার আশায় বসে রইলাম। আসলে আমার হতাশার কারণটা এখানে যে, কোটি কোটি ডলার মানুষের সাথে মানুষের যুদ্ধে ব্যয় করা হয়, অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র উৎপাদনের জন্য, আর ক্যান্সার সম্পর্কে আমাদের আধুনিক জ্ঞানার্জনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে মাত্র ত্রিশ বছর আগে। ধনী দেশগুলোর বাজেটের প্রায়রিটি নিয়েই আমার হতাশামিশ্রিত মন্তব্যটা ছিল।
ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা একটা জায়গায় এসে থেমে গেছে বলছো। কিন্তু সেই সিলিং অতিক্রম করতেতো আরো গবেষণার প্রয়োজন হবে, মানে আরো কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা লাগবে। কে দেবে টাকাটা?
প্রতিমন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
@ইরতিশাদ ভাই, না থেমে গেছে ঠিক মিন করিনি, বলতে চাচ্ছি যে তত্ত্বগতভাবে গবেষণা অনেক এগিয়েছে, কিন্তু বহু চেষ্টা করেও সেটার থেকে তেমন কার্যকরী চিকিৎসা বের করা যাচ্ছে না। জানি, সাধারণত ফান্ডিং এর সাথে জ্ঞানের একটা সরাসরি সম্পর্ক থাকে, কিন্তু এক্ষেত্রে ফান্ডিং দিয়েও সেটাকে ঘটানো যাচ্ছে না,। গ্লাস সিলিংটা বোধ হয় ফান্ডিং এর না, আমাদের বর্তমান জ্ঞানের। টার্গেটেড থেরাপির পর্বটাতে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার ইচ্ছে আছে। আজকে হাতে একদমই সময় নেই, তাই ইংরেজিতেই একটা কোট দিচ্ছি বোঝানোর জন্য, কলম্বিয়া ইউনির ক্যান্সার গবেষক এবং চিকিৎসক সিদ্ধার্থ মুখার্জির নিজস্ব অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০১০ সালে লেখা ‘এম্পেরর অফ অল মেলোডিস’ বইটা থেকে, ( প্রায় ৫০০ পৃষ্টা, কিন্তু দম বন্ধ করে পড়ে ফেলার মত একটা চমৎকার একটা বই),
‘Practicing cancer medicine had become like living inside a pressurized can – pushed, on one hand, by the increasing force of biological clarity about cancer, but then pressed against the wall of medical stagnation that seemed to have produced no real medicines out of this biological clarity.’
ভাগ্যিস যেখানে আলো আছে শুধু সেখানেই চাবি খুঁজতে যান নি। বেশীরভাগ মানুষই তাদের স্বাচ্ছ্যন্দ সীমা থেকে বেড়িয়ে আসতে ভয় পায়। লেখাটার শুরুতে বংশগতি গবেষণার যারা আদিপুরুষ যেমন মেন্ডেল , ক্রীক, ওয়াটসন প্রমুখদের নাম পাঠকদের জানিয়ে দেয়াটা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ । ক্যান্সার সম্পর্কে বেশীরভাগ মানুষের জ্ঞান সিনেমায় দেখা ছয় মাসের মৃ্ত্যু পথযাত্রী নায়ক নায়িকার গৎবাধা চিরপ্রস্থান কিংবা উইগ পড়া কাঁচা পাকা চিকিৎসক অভিনেতার বিজ্ঞানসমাজ সংলাপ। অথবা হটাৎ করে নিকটজনের শরীরে ক্যন্সার ধরা পরার পর কল্পিত মৃত্যর দিন গননা। এক কথায় ক্যান্সার বলতে বেশীরভাগ মানুষ সাক্ষ্যাৎ যমদূতকেি বোঝে। দরিদ্র দেশের অনেক মানুষ মরে যায় কিন্তু মৃতব্যক্তিসহ তাদের নিকটজনেরা জানতেও পারে না সে মৃত্যর কারণ। তারা এটাও জানতে পারে না যে তারাও একই জিন নিজ শরীরে বহন করে বেড়াচ্ছে।
এ লেখাটায় আপনি যত সহজে বিজ্ঞানের কারিগরী ভাষা পরিহার করে সাধারণ মানুষের ভাষায় লিখেছেন , ব্যপারটা আসলে তত সহজ নয়। কোষচক্রে নান দিক সহ প্রোটো- অনকোজিন থেকে অনকোনজিনের উত্থান যারা জানতো না , তারা আপনার এ লেখা থেকে জানতে পারলো। সবশেষে আবার সেই হোজ্জার গল্পে ফেরা যাক । আপনার লেখাটা আলোকের অভিযাত্রীদের জন্য যতটা , তার চেয়েও বরং বেশী উপযোগী সেসব একাগ্র অনুসন্ধিৎসু মানুষদের জন্য যারা অন্ধকারের সাথে মিতালী করে অন্ধকারকে জয় করে নেয়া।
@সংশপ্তক, ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। কই যাই বলেন তো? আপনি বললেন আমি সাধারণ মানুষের ভাষায় লিখেছি আর অন্যরা বললেন ভাষাটা মোটেও সাধারণ হয়নি!
ক্যান্সার নিয়ে লিখতে বসে বুঝলাম যে আণবিক জীববিজ্ঞানের ভাষায় ব্যাখ্যা না করলে ক্যান্সারের কোন অর্থই হয় না। কিন্তু এই পরিমাণ কাটিং এজ গবেষণাগুলোকে কীভাবে সহজ ভাষায় লিখবো তা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই কয়েক সপ্তাহ চলে গেছে :))। আণবিক জীববিজ্ঞানের গবেষণাগুলো যে কী পর্যায়ে চলে গেছে গত দুই এক দশকে সেটা দেখলেও শিহরিত হতে হয়। এতটা জানার পরেও আমরা যে এখনো ক্যান্সারের কার্যকরী টার্গেটেড চিকিৎসা বের করতে পারছি না সেটাও বেশ দুঃখজনক। ক্যান্সার হয়তো আমরা ঠেকিয়ে রাখতে পারবো আরও বুড়ো বয়স পর্যন্ত কিন্তু এর চিকিৎসা বের করতে পারবো কীনা সেটাই এখন দেখার বিষয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির ফলে যতই আমাদের আয়ু বাড়বে ততই তো আরও বেশী করে ক্যান্সারের কথা শোনা যাবে।
অসাধারণ, এক কথায় Too good. তবে ক্যান্সার আর টিউমারের আলাপে টেলোমারেজ আর টেলোমিয়ারের আলাপটা একটু থাকলে আরো ভালো হত বোধ করি। অনুমতি নিয়ে কিছু জিনিস যোগ করছি অন্য পাঠকদের জন্য।
৯০% টিউমারেই টেলোমারেজ সক্রিয় থাকে (যেখানে আমাদের দেহে ভাজক কোষ আর জনন কোষ ছাড়া আর কোথাও সে সাধারণ ক্ষেত্রে সক্রিয় না)। একটি কোষ যতবার বিভাজন করে, ততবার-ই তার টেলোমিয়ারের দৈর্ঘ্য ছোট হয়ে যায়। টেলোমারেজ এই ছাঁটাই হওয়া অংশকে পুনোরুদ্ধার করে। তাই টেলোমারেজ যেখানে সক্রিয়, সেখানে বিভাজন অবিরাম। এখান থেকেই টিউমারের Uncontrolled Growth and Division এর কথা বলা হয়।
মেটাস্টাসিসের আরো একটা মজার একটা ব্যাপার হলো, এরা পরবর্তীতে যেখানে মেটাস্টাসাইজ করবে, সেই এলাকায় যাবার আগেই সেখানকার পরিবেশ ওভাবে তৈরি করে রাখতে নির্দেশ পাঠায়।
আর p53 তো গার্ডিয়ান অব দ্য জিনোম খ্যাত। ওর কথা বলতে গেলে আরেকটা আলাদা পর্ব লাগবেই। একটা জিনিস যোগ করতে চাই, p53 শুধু বিভাজন নিয়ন্ত্রন-ই করেনা, সে কোষকে এপপ্টোসিসের দিকে ঠেলে দিয়ে মৃত্যুও ঘটায়, ক্যান্সার এলাকায়/ মেটাস্টাসিসের এলাকায় নতুন নালী তৈরি হওয়া ঠেকায় আরো অনেক অনেক কিছু করে।
@জালিশ,
এটার উপরে কি কোন বিশেষ গবেষনা হয়েছে ?
@সংশপ্তক, Shay JW, Bacchetti S (April 1997). “A survey of telomerase activity in human cancer”. Eur. J. Cancer 33 (5): 787–91.
@জালিশ,
উইকিপিডিয়ায় যেভাবে এই ~৯০% এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, মূল গবেষণাপত্রে কোথাও এমন দাবী করা হয় নি। তারা ৩৫০০ টি নমুনার উপর পরীক্ষা চালিয়ে ১০ টা টেবলে দেখানোর চেষ্টা করেছে যে, ঐ ৩৫০০ টি নমুনায় টেলমারেজের পজিটিভ এক্টিভিটি আছে কি নেই। পুরোটাই ইনডাক্টিভ রিজনিং।
@সংশপ্তক, ধন্যবাদ আপনি কষ্ট করে পেপারটা পড়েছেন। তবে আপনি যদি ঐ টেবিলের ফলাফলটুকুও দিয়ে দিতেন, তাহলে আমরা নাহয় একটু হিসেব করে নিতে পারতাম। যাহোক, আসল কথায় আসি। মলিকুলার বায়োলজি যারা বুঝে তারা সবাই জানে, টেলোমারেজের কাজ কী এবং কোথায় কোথায় সে কাজ করে। তাই, যেখানেই অনিয়ন্ত্রিত গ্রোথ হবে, সেখানেই টেলোমারেজের কাজ থাকবেই, এটা মোটামুটি বেসিক জ্ঞান। তাই আমি আরো জোর দিয়েছিলাম আর কি।
যাহোক,Oxford University Press থেকে প্রকাশিত Lauren Pecorino এর Molecular Biology of Cancer: Mechanisms, Targets, and Therapeutics ক্যান্সার শিক্ষায় একটি বিশ্বখ্যাত এবং অন্যতম সেরা পাঠ্যপুস্তক (আমাজনে রেটিং দেখতে পারেন, প্রতিটি রিভিউতে ৫ তারা পাওয়া)। এই বইটিতেও পরিষ্কারভাবে বলা আছে ৯০% ক্ষেত্রে টেলোমারেজ এক্টিভিটির কথা। (দ্বিতীয় এডিশনের পৃষ্ঠা ৬৩ দ্রষ্টব্য, অবশ্য বলার-ই কথা, কারণ ঐ যে আগে বললাম, এটা একদম কমন একটা রিজনিং )। রেফারেন্সের ক্ষেত্রে পেপারের থেকেও প্রতিষ্ঠিত বইয়ের ওজন অনেক বেশি। তাই আবারো জোর গলায়-ই “ইন্ডাক্টিভ রিজনিং” টা করছি।
@জালিশ,
ধন্যবাদ কষ্ট করে রেফারেন্স দেয়ায় , এত কষ্ট শুধু শুধু করতে গেলেন। তবে, আপনি যে আমাজন থেকে প্রচুর বই কেনেন এটা আমি নিশ্চিত । ‘ডিডাক্টিভ রিজনিং’, কি বলেন ? :))
@সংশপ্তক, আমাজনের ট্যাকা কই পামু? আমি সব নীলক্ষেত প্রিন্ট চালাই 😀
@জালিশ,
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। এ ধরণের কিছু গঠনমূলক আলোচনাই আশা করছিলাম। টেলোমিয়ার এবং টেলোমারেজ নিয়ে যা বলেছেন তার কিছু কিছু জানা থাকলেও এখানে উল্লেখ করিনি কারণ মনে হয়েছিল লেখাটায় আমি যেহেতু তার থেকেও আরেক ধাপ ভিতরে চলে গিয়ে এই কাজগুলো করার জন্য প্রয়োজনীয় জিন এবং প্রোটিনগুলো নিয়ে কথা বলছি তাই উপরের ধাপের এই কথাগুলো আর উল্লেখ না করলেও চলবে। বিষয়টি উল্লেখ করার জন্য ধন্যবাদ।
একটুখানি করেছিলাম এখানে, তবে এপপ্টোসিস কথাটা আগেই উল্লেখ করায় এখানে আর করিনি, এখন যোগ করে দিলাম।
“… (p53) কোষ বিভাজনের সময় ডিএনএ তে কোন খুঁত বা ক্ষয়ক্ষতি দেখলে তারা হয় কোষ চক্র বন্ধ করে দেয় অথবা কোষটিকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেয়।”
এই ব্যাপারটা নিয়ে আমার একটু কনফিউশান আছে। ধরে নিচ্ছি আপনি এখানে রক্তনালীর কথা বলছেন। মেটাস্টিসিসের এলাকায় কি নতুন রক্তনালী তৈরি হয় নাকি আশে পাশের রক্তনালীগুলোকে এরা রিক্রুট করে তাদের কাজে?
এটা ঠিক কীভাবে করে?
@বন্যা আহমেদ,
জ্বি, নতুন রক্ত নালী (পুরো সঠিকভাবে বলতে গেলে রক্তজালিকা বা ক্যাপিলারি;) তৈরি হয়, এ ঘটনাকে বলে Angiogenesis, যা ক্যান্সারের এবং টিউমারের অন্যতম হলমার্ক বৈশিষ্ট্য।
Pre-metastatic niche ব্যাপারটা নিয়ে একটু পড়াশোনা করে দেখবেন। এটা হচ্ছে সেই জায়গা যেখানে পরবর্তীতে মেটাস্টাসিস হবে।ক্যানসার কোষগুলো এমন কিছু ফ্যাক্টর নিঃসরণ করে যার প্রতি সংবেদনশীল হয়ে বোন ম্যারো কোষগুলো ঐ Pre-metastatic niche এ গিয়ে জমা হয়, যাতে পরবর্তীতে সেখানে টিউমার হবার জন্য দরকারী রক্তজালিকা (ক্যাপিলারি) তৈরি করতে পারে ও অন্যান্য সহনশীল পরিবর্তন করতে পারে। এ সম্পর্কে Oppenheimer (2006) এবং Kaplan et al (2006) এর পরীক্ষাগুলো পড়ে দেখতে পারেন।
আর p53 এর আরো দূটি কাজের কথা বলি।
১) এটি DNA repair এ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে (XPC জিনকে সক্রিয় করে, যা রিপেয়ারে ভূমিকা রাখে)।
২) এদের লেভেল যখন কম ও থাকে তখন anti-oxidant activity কে বাড়িয়ে DNA damage এর হার কমায়। (রি-এক্টিভ অক্সিজেন স্পিসিস বা ROS এর প্রভাবে দিনে মোটামুটি ২০,০০০ এর মত damage হতে পারে কোষে। p53 গ্লুটাথায়োন পারুক্সিডেজ ১ এবং সেস্ট্রিন নামের এনজাইমকে সক্রিয় করে যারা ক্ষতিকর H2O2 মেটাবোলাইজ করে নিষ্ক্রিয় করে। এওকল কারণেই ওকে গার্ডিয়ান অব দ্য জিনোম বলা হয়।)
আপনার বলা যে কথাগুলো আমি নিজে আবার কমেন্টে বলেছি, তার জন্য দুঃখিত। সব ব্যাপারগুলো খেয়াল ছিলনা।
@জালিশ, আবারো ধন্যবাদ উত্তরের জন্য। হ্যা, Angiogenesis এর কথা জানি, আপনি ‘নালী’ বলাতে একটু কনফিউসড হয়ে গিয়েছিলাম। তবে Pre-metastatic niche এর ব্যাপারটা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানতাম না। আর p53 ডিএনএ রিপেয়ারের ব্যাপারটা লেখা থেকে কীভাবে কোথায় বাদ পরে গেল বুঝলাম না। কালকে ঠিক করে দিব। আর p53 নিয়ে যে কত গবেষণা হয়েছে গত কয়েক দশকে সেটা দেখে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এর পরে টার্গেটেড থেরাপি নিয়ে না লিখে p53 নিয়েই লিখে ফেলবো নাকি ভাবছি।
@বন্যা আহমেদ, চালিয়ে যান। আর p53 কে গার্ডিয়ান অব জিনোম না বলে গড অব দ্য সেল বলতে আপত্তি নাই। আপনি চিন্তা করে দেখেন, এর থেকে বেশি ঝানু জিনিস আর আছে বলে মনে হয়না। আর নামগুলাও মজার মজার। যেমন, p21 কে বলা হয় “Slave of p53”, যার মাধ্যমে সে ডিএনএ রেপ্লিকেশন ঠেকায়। আপনি p53 নিয়ে একটা লেখেন আপু। তারপর থেরাপির দিকে যান (আমার মত)।
অসাধারণ একটা লেখা বন্যা আপার! গল্পে-চিত্রে-উপমায় বিজ্ঞানের দুরহ একটি বিষয়কে অসম্ভব সুখপাঠ্য করে তুলেছেন। শ্রমসাধ্য এই লেখাটির জন্য (F)
মাথা ঘুরতে থাকায় অর্ধেক পড়ে ছো্ট্ট একটা বিরতি নিলাম।
প্রবন্ধটি সহজ ভাবে হৃদয়ঙ্গম করতে গেলে, পাঠককে কিছুটা MOLECULAR BIOLOGY তে পূর্বজ্ঞ।ন থাকা আবশ্যক, যদিও লেখক এসব জটিল প্রকৃয়া গুলী অত্যন্ত সহজ ও সাবলীল ভাষায় তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন।
ধন্যবাদ
@আঃ হাকিম চাকলাদার, হ্যা, ঠিক বলেছেন, লেখাটা সম্পূর্ণভাবে বুঝতে হলে হলে বোধ হয় আণবিক জীববিজ্ঞানের সামান্য কিছু জ্ঞান থাকা আবশ্যক। সব লেখায় অ আ ক খ থেকে শুরু করলে পড়তে শেখা তো আর হয়ে উঠবে না। তাই হিসেব করেই এই রিস্কটা নিতে হয় কোন কোন লেখায়। দুঃখিত।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
বাহ্ ! ক্যান্সার সম্পর্কিত আমার সেই ছাত্রকালের প্রাথমিক ধারণা ছিলো- এবনরমাল গ্রোথ অফ টিস্যু। সেই থেকে এতটা বছরে আর এক কদমও এগোয়নি। আজ কিছুটা এগোল। নিশ্চয়ই পরের পর্বে আরেকটা আগাবে। সেই অপেক্ষায়…
(শোন রাফিদা, তুই কিসে মরবি আমি জানি না, তবে আমার মরণ যে তোর লেখা পড়ে দম আটকায়, খাবি খেতে খেতে হবে – সেই ব্যাপারে আমি প্রায় নিশ্চিত!! আরে বাবা, অসুখ হইসে ওষুধ খা, জায়নামাজ নিয়ে একটু বস, ট্যাকাপয়সাগুলা বন্ধুবান্ধবদের দিকে একটু ছুঁড়ে টুড়ে মার – তা না, তিনি বসলেন সেটা নিয়ে গবেষণা করতে!!!)
লেখার শুরুটা দারুণ! বাকিটাও ভাল, অর্থাৎ গতি বজায় আছে, কিন্তু অনেক অনেক ইনফর্মেশন। আমি জানি মুক্তমনা একটা বিজ্ঞানভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম, তবে সবার ফিল্ড/ব্যাকগ্রাউন্ড তো এক না। আরও ছোট ছোট করে দিবি নাকি?
@স্নিগ্ধা, কি বলিস? ছুট করেই তো দিলাম… :))
শোন, স্নিগ্ধা তোর জীবন দর্শন কী জানি না কিন্তু আমারটা হচ্ছে জীবনটা যেমন যায় যাক, মরার সময়টা যেন খুব সর্টকাট হয়। সব জায়গাতেই আমি সেই দর্শনে বিশ্বাসী, খামাখা ভেঙ্গে ভেঙ্গে দিয়ে তোকে কিস্তিতে কিস্তিতে কষ্ট দিয়ে কী লাভ! তোর মত বড় ‘সমাজবিজ্ঞানী’ এই লেখা পড়ে মরবেই যখন তখন একবারে ‘ম্যাসিভ ইনফর্মেশন উভারলুড’টা গলায় আটকায় ইন্সট্যান্টলিই মর। আর তাছাড়া কস্ট বেনিফিট এনালিসিস করলে এতে কিন্তু দুজনেরই লাভ! আমারও রোজ রোজ পয়সা খরচ করে দ্যাশে ফোন করে হাউমাউ শুনতে হচ্ছে না, আর তোরও মরতে কোন আলাদা কষ্ট করতে হচ্ছে না।
@বন্যা আহমেদ,
ওরে র্যাবের ক্রসফায়ারে দাও। ল্যাঠা চুকে যাবে। হাউকাউ বন্ধ।
আরে ফরিদ ভাই – ক্রসফায়ারেই তো আছি!! মুক্তমনায় মুখটা একটু খুলসি কি খুলি নাই, সাথে সাথে বেচারা ‘সমাজবিজ্ঞান’কে নিয়ে টানাটানি শুরু হয় 🙁 হাউকাউ তো দূরের কথা, দুই আহমেদ এবং এক রায় এর বিভীষণ সব বৈজ্ঞানিক লেখায় দুই একটা ভালো ভালো কথা যে বলবো – ওই সাহসটাও আর পাই না! কতদিন ধরে আমি লক্ষ্মী মেয়ের মতো মুখটা বুজে আছি, আপনিই বলেন?? ন্যান, তারচে’ একটু বিয়ার দিয়ে চা খান – (B) (C)
@স্নিগ্ধা,
দুই আহমেদ কই পাইলেন? এক আহমেদ বিজ্ঞানের যন্ত্রণায় তার সাথে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটায় ফেলছে বহু বছর আগেই। সেই এখন মোগল ইতিহাসের কানাগলির বাসিন্দা। আহ কী শান্তি!! 🙂
এইটাইতো সমস্যা। লক্ষ্ণী পেচা হইতে কে কইছে আপনেরে? চুপ থাকেন ক্যালা? ডরান নি বিজ্ঞানীগোরে? আসেন টিম আপ করি। আপনার মত একজন মুখরা রমণী আর আমার মত মাস্তান পোলা একসাথে জড়ো হইলে বিজ্ঞান পালায় কুল পাইবো না মুক্তমনা থেইকা। (H)
হোজ্জার গল্পটি ভালো লেগেছে! 🙂 এরপরের মেডিকেলের ক্লাসে পদে পদে হোঁচট! 🙁
@বিপ্লব রহমান, শুধু প্রথম প্যারাটিই তো আপনার জন্য লিখেছিলাম। এ কি? পরের প্যারাগুলো আপনি পড়তে গ্যালেন কেন? উপরে আপনের উদ্দেশ্যে দেওয়া ডিসক্লেইমারটা দেখেননি 🙂 ।
আছেন কেমন আপনি?
অসাধারণ বন্যা অহমেদ! আমি অভিভূত হয়ে পড়েছি। আবার আবার পড়বো। বুঝার আর শেখার বিশাল ভান্ডার দিয়েছেন। আপনি দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন, শিক্ষিকা হয়ে উঠুন!
@কেশব অধিকারী, আমি তো অসুস্থও নই, শিক্ষিকাও নই। দোষের মধ্যে এইটুকুই যে মাঝে মাঝে অকারণেই দুই একটা লেখা লিখে ফেলি ……
ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
প্রথমবার সব মাথার উপর দিয়ে গেল। আবার পড়তে হবে।
ধন্যবাদ প্রথম পর্বের পর দ্বিতীয় পর্ব দেওয়ার জন্য। আশা করছি পরের পর্বটিও পাব।
ক্যান্সার ব্যপারে কিছুটা ধারনা পেলাম। আবার পড়ে ভালভাবে বুঝতে পারব।
বন্যা দি, লেখাটা খুব আশা নিয়ে পড়তে বসলাম কিন্তু আমার কাছে খুব কঠিন মনে হলো । আপনার আগের লেখাটা খুব ভালো লেগেছিলো।
কোষের বিভাজন এর মত এত জটিল একটা প্রক্রিয়াকে আপনি কি করে যে এত সোজা বাংলা ভাষায় লিখে ফেলেন!! ক্যান্সার রিসার্চের ইতিহাস জানতাম না, ভালো লাগলো। ক্যান্সারের এত তথ্য এত অল্প কথায় পরিবেশন দেখে আরো মুগ্ধ হলাম। 🙂
একটা জায়গাতে প্রশ্ন ছিল।
ক্যান্সার একটি বংশগতিয় রোগ, বলতে কি বোঝাচ্ছেন যে ক্যান্সার hereditary? কিছু ক্যান্সার হে্রেডিট্যারি, অনেক ক্যান্সার এর মিউটেডেড জিন বংশানুক্রমে কেউ ইনহেরিট করতে পারে, এবং তার ক্যান্সার হবার অনেক বেশি সম্ভাবনা থাকে,কিন্তু জেনেরালি কি আমরা ক্যান্সারকে হেরেডিট্যারি বলতে পারব? আসলে আমার বংশগতিয় টার্মটা বুঝতে সমস্যা হচ্ছে।
@সুম সায়েদ, হ্যা ঠিক বলেছেন মনে হচ্ছে, এই পরিভাষাটা একটু সমস্যাজনকই বটে! আমি আসলে ‘জেনেটিক’ অর্থে বংশগতি শব্দটা ব্যবহার করে থাকি, এখন তো মনে হচ্ছে সেটা করাটা ঠিক হচ্ছে না, ‘হেরিডিটারি’ এবং ‘জেনেটিক’ এর মধ্যে গোলমাল লেগে যাচ্ছে। ক্যান্সার যে আসলে অন্যান্য অনেক অসুখের মত সরাসরি বাবা মা থেকে ছেলে মেয়েতে পরিচালিত হয় না তা নিয়ে কিছু আলোচনাও করেছি লেখাটায়। দেখি বংশগতির পরিবর্তে জিনগত বললেই বোধ হয় ঠিক হবে।
@সুম সায়েদ,
লেখার এই অংশটা খেয়াল করুন তাহলেই অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
বিজ্ঞান বিষয়ে বি-মূর্খ; এই আমি,আপনার লেখাটা পড়লাম, পড়তে গিয়ে থেমে যেতে হয়নি। বি বলতে গিয়ে,গ-কে মাঠে নামিয়ে পাঠকের মগজে কড়া নাড়ার দক্ষতা, চমৎকার। সবটুকু না বুঝলেও মোটামুটি একটা ধারণা হলো, এ-ও তো কম নয়। এই একটু একটু করে কেউ কেউ এগোয়, আমি তাদের একজন। ধন্যবাদ আমাদের মত পাঠকদের মাথায় রেখে লেখার জন্য।
প্রশংসনীয়।
দারুণ!! (Y)