পাঠ প্রতিক্রিয়া
অবিশ্বাসের দর্শন
অভিজিৎ রায় ও রায়হান আবীর
প্রথম প্রকাশঃ ২০১১
প্রকাশকঃ শুদ্ধস্বর, ঢাকা, বাংলাদেশ
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৩১১
মূল্যঃ ৫০০ টাকা
অভিজিৎ রায় ও রায়হান আবীরের ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ প্রকাশিত হয়েছে গত বছরের একুশে বইমেলায়। কিন্তু আমার হাতে এসেছে তার এক বছর পরে। লেখাগুলোর বেশিরভাগই মুক্তমনা ব্লগে পড়েছিলাম আগে। কিন্তু ব্লগ আর বইয়ের মধ্যে পার্থক্য অনেক। বইয়ের তুলনায় ব্লগ অনেকটাই তাৎক্ষণিক। ব্লগে সংস্কার চলতে পারে খুব দ্রুত – কিন্তু বই অনেকটাই স্থায়ী। একবার প্রকাশিত হয়ে গেলে পরের সংস্করণের আগে কোন কিছুর পরিবর্তন সম্ভব নয় বইয়ের ক্ষেত্রে। তাই স্বাভাবিকভাবেই জানা ছিল যে “অবিশ্বাসের দর্শন” ব্লগে প্রকাশিত প্রবন্ধগুলোর নিছক সংকলন নয়। বইটা পড়তে পড়তে লক্ষ্য করলাম সত্যিই তাই – লেখকদ্বয় অনেক যত্ন করে পান্ডুলিপি তৈরি করেছেন। বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। আমার আলোচনা প্রথম সংস্করণকে ঘিরেই।
পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ প্রচলিত ব্যবস্থার সাথে নিজেকে খাপখাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু খুব সামান্য সংখ্যক কিছু ব্যতিক্রমী মানুষ আছেন যাঁরা পৃথিবীটাকেই বদলে ফেলার চেষ্টা করেন। দিনের পর দিন নিরলস সংগ্রাম চেষ্টা পরিশ্রম অধ্যবসায় দিয়ে পৃথিবীটাকে একটু একটু করে ঠিকই বদলে ফেলেন এই ব্যতিক্রমী মানুষেরা। অথচ তার সুফল ভোগ করেন সবাই যাদের মধ্যে তাঁরাও আছেন যাঁরা ক’দিন আগেও এ পরিবর্তনের ঘোর বিরোধীতা করেছিলেন। ধর্মবাদীদের সাথে মুক্তমনাদের পার্থক্য এখানেই যে ধর্মবাদীরা বড় বেশি বিভাজনপটু। ধর্মবাদীরা তাঁদের নিজস্ব ধর্মের অনুশাসনগুলোর প্রতি কেউ প্রশ্ন তুললেই সেটাকে ব্যক্তিগত শত্রুতার পর্যায়ে নিয়ে যেতেও দ্বিধা করেন না অনেক সময়। বৈজ্ঞানিক-দার্শনিক যুক্তিতে টিকে থাকতে না পারলে পেশীশক্তি ব্যবহার করেন ধর্মবাদীরা। মধ্যযুগে ধর্মের প্রসার ঘটেছে তলোয়ারের আস্ফালনে, বর্তমানেও ধর্মবাদীদের মূল অস্ত্র আর যাই হোক – যুক্তি নয়। অথচ সারা পৃথিবীতে একজনও যুক্তিবাদী মুক্তমনা পাওয়া যাবে না যিনি যুক্তির বদলে শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করার পক্ষপাতী। যুক্তির শক্তি যে কত প্রবল তা আরো একবার বুঝতে পারলাম অভিজিৎ রায় ও রায়হান আবীরের ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ পড়তে পড়তে।
অনেক বছর আগে প্রথমবার প্রবীর ঘোষের ‘অলৌকিক নয় লৌকিক’ পড়ে মনে হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে যুক্তিবাদী আন্দোলন যেভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে – বাংলাদেশে হয়তো কখনোই সম্ভব হবে না সেরকম কোন আন্দোলন। এরকম ঋণাত্মক চিন্তার পেছনে যেসব যুক্তি কাজ করেছিলো তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল ব্যক্তিগতভাবে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার শিকার হওয়ার একাধিক ঘটনা। মার্ক্স লেনিন নিয়ে জমাট যুক্তিতক্কে ঝড় তুলতে পারা ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যেও দেখেছি ব্যক্তিগত ধর্মের গায়ে সামান্য আঘাত লাগলেই কেমন যেন ফুঁসে উঠে। যুক্তির সোপানগুলো ধাপে ধাপে পার হতে গিয়ে যেই সৃষ্টিকর্তার প্রসঙ্গ আসে তখনই যুক্তিগুলো হঠাৎ থেমে গিয়ে কতগুলো অন্ধবিশ্বাস এসে বসে যায় যুক্তির জায়গায়। ধর্মীয় ভিন্নমতের অসহিষ্ণুতা এত প্রকট যেদেশে বুঝতে পারছিলাম না কীভাবে সেখানে ঈশ্বরবিহীন মৌলিক দর্শনের চর্চা সম্ভব। আসলে বদলে দেয়ার স্বপ্ন দেখার জন্য যে সাহস লাগে তা আমার ছিল না। কিন্তু মুক্তমনার সাথে পরিচয়ের পর আমার সে ঋণাত্মক ধারণা ক্রমশ বদলে যেতে শুরু করে। ঝকঝকে নতুন চিন্তার একদল যুক্তিবাদী মানুষ একটা প্লাটফরমে এসে তর্ক করছেন, বিজ্ঞান চর্চা করছেন, রচনা করছেন আগামী দিনের দর্শন যার ভিত্তি কোন অলৌকিক অন্ধ সংস্কার নয়, বরং আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাম্প্রতিকতম তত্ত্ব ও তথ্য; এসব দেখে যে কোন যুক্তিবাদী মনই উজ্জীবিত হয়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। মুক্তমনা ব্লগের সাথে যাঁদেরই পরিচয় হয়েছে তাঁরাই কোন না কোন ভাবে উজ্জ্বীবিত হয়েছেন। প্রগতিশীল মননতো বটেই – রক্ষণশীল গোঁড়া মননও বাধ্য হয়েছেন চিন্তার গোঁড়ায় নতুন করে সার-জল দিতে।
বাংলাদেশে মুক্তমনা আন্দোলনে তুমুল হাওয়া লেগেছে ধরতে গেলে যাঁদের লেখার মধ্য দিয়ে তাঁদের অন্যতম ড. অভিজিৎ রায়। মুক্তমনায় তাঁর লেখা যাঁরা পড়েছেন তারাই মুগ্ধ হয়েছেন। কাঠমোল্লারাও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে যুক্তি প্রয়োগে ও যুক্তি খন্ডনে অভিজিৎ রায়ের জুড়ি নেই। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান রচনায় অভিজিৎ রায় ইতোমধ্যেই তাঁর স্বকীয়তার উজ্জ্বল ছাপ রেখেছেন “আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী”, “মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে”, “সমকামিতা- একটি বৈজ্ঞানিক ও সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ”, “ভালবাসা কারে কয়” প্রভৃতি বইতে। এবার অভিজিৎ রায়ের সাথে যুক্ত হয়েছেন আরেকজন তরুণ মুক্তমনা রায়হান আবীর যিনি ইতোমধ্যেই বাংলা ব্লগে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন যৌক্তিক প্রতিভার স্বকীয়তায়। এঁদের দুজনের যৌথ প্রয়াস “অবিশ্বাসের দর্শন”।
একদম একটানা একনিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মত বই নয় ‘অবিশ্বাসের দর্শন’। যদি তাই হতো তাহলে এর আবেদন এতটা গভীর হতো না, এটা হয়ে পড়তো শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের উপন্যাসের মতো। ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ আধুনিক বৈজ্ঞানিক দর্শনের বই যা পড়তে পড়তে থামতে হয়, ভাবতে হয়, উপলব্ধি করতে হয় এবং মাঝে মাঝে নিজের সাথে কিছুটা বোঝাপড়াও করে নিতে হয়। কারণ ঠিকমত উপলব্ধি করতে পারলে এ’বই নাড়িয়ে দিতে সক্ষম আমাদের আজন্ম লালিত কুসংস্কার ও ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত। তাই যেমন এর নামকরণ হয়েছে ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ তেমনি লেখকদের কথামতো ‘অবিশ্বাসের বিজ্ঞান’ বা ‘প্রান্তিক বিজ্ঞান’ও হতে পারতো (পৃঃ ৯, ভূমিকা)। যে অবিশ্বাসের কথা বলা হচ্ছে তা প্রথাগত ঈশ্বরে অবিশ্বাস, অলৌকিকত্বে অবিশ্বাস, গোঁজামিলে ভর্তি ধর্মগ্রন্থে অবিশ্বাস, কিন্তু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণে বিশ্বাস, কঠিন ও বাস্তব ইহলৌকিক জীবনের ওপর সুদৃঢ় বিশ্বাস এবং একটা সুন্দর প্রগতিশীল সমাজ গঠনের গভীর আত্মবিশ্বাস।
নয়টি অধ্যায়ে বিভক্ত তিন শতাধিক পৃষ্ঠার বই ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ এর প্রথম অধ্যায় ‘বিজ্ঞান এর গান’। ‘বিজ্ঞান কি অতিপ্রাকৃত বিষয় নিয়ে অভিমত দিতে অক্ষম?’, ‘বিজ্ঞানও কি বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত?’, ‘আমরা কি আমাদের মনকে বিশ্বাস করতে পারি?’ ‘বিজ্ঞান ও ধর্ম কি সাংঘর্ষিক নয়?’, ‘বিজ্ঞান কি ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব মিথ্যা প্রমাণ করতে সক্ষম?’ ইত্যাদি সর্বজনীন মৌলিক প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে এ অধ্যায়ে। লেখকদ্বয় আধুনিক বিজ্ঞানের দর্শন প্রয়োগে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে থ্রি-ও (অমনিসায়েন্ট, অমনিবেনেভোলেন্ট, অমনিপোটেন্ট) মার্কা গড বা সর্বজ্ঞ-পরম করুণাময়-সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আসলে একটা অসম্ভব হাঁসজারু কিংবা বকচ্ছপ জাতীয় কল্পনা। ধর্মীয় সংগঠনগুলো শত শত কোটি ডলার খরচ করে ধর্মকে বিজ্ঞানের মোড়কে পরিবেশনের যে চেষ্টা করছেন সে প্রসঙ্গও তথ্য-প্রমাণ সহ উঠে এসেছে এ অধ্যায়ে।
ধর্মীয় ঈশ্বরে বিশ্বাসীরা যুক্তির সহজ পাঠ ঠিক ততদূর পর্যন্ত মেনে চলেন যতদূর পর্যন্ত গেলে তাঁদের প্রচলিত ঈশ্বর নিরাপদ থাকেন। উদাহরণ দেয়া যেতে পারে এভাবে- মাধ্যাকর্ষণ বল সম্পর্কে ধারণা আছে যাদের তাঁদের যদি প্রশ্ন করা হয়- কোন কিছু উপরে ছুড়ে দিলে তা নিচে নেমে আসে কেন? তাঁরা ঠিকই উত্তর দেবেন – মাধ্যাকর্ষণের কারণে। তাঁরা কিন্তু কিছুতেই বলবেন না যে “আল্লাহ্র হুকুমে” বা “ঈশ্বরের ইচ্ছায়”। ম্যালেরিয়া কেন হয়? তার উত্তরেও মানুষ ঈশ্বরকে টেনে আনেন না। আসলে বিজ্ঞান বা ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্কে অজ্ঞানতা যেখান থেকে শুরু – ঐশ্বরিক দর্শনও খেলা দেখাতে শুরু করে সেখান থেকে। ৪১ পৃষ্ঠায় আঁকা কার্টুনটি মাত্র কয়েকটি রেখার টানেই দেখাতে সক্ষম হয়েছে স্বাভাবিক যুক্তি আর ধর্মীয় যুক্তির মধ্যে পার্থক্য কোথায়। অজ্ঞানতার কারণে অলৌকিক অসারতায় বিশ্বাস ক্ষতিকর বটে, তবে জ্ঞানের আলোয় সে ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া সম্ভব যদি জ্ঞানের ফলে অবসান ঘটে অলৌকিকত্বের। কিন্তু প্রচন্ড ক্ষতি হয় তখন যখন মানুষ বিজ্ঞানের জ্ঞানকে গায়ের জোরে অস্বীকার করতে চায়, ধর্মের নেশায় বুঁদ হয়ে অলৌকিক ঈশ্বরের মহিমা প্রচার করতে গিয়ে বিজ্ঞানের সাধারণ সূত্রকেও মানতে চায় না।
নতুন দিনের নাস্তিক বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন বই ও গবেষণাপত্র থেকে উদ্ধ্বৃতি নিঃসন্দেহে সমৃদ্ধ করেছে এ অধ্যায়ের আলোচনা। তবে ২২ পৃষ্ঠায় ভিক্টর স্টেঙ্গরের যে কথাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে একই কথা আবার ২৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ইংরেজিতে। ‘অক্কামের ক্ষুর’ অনুসরণ করে এই দ্বিরুক্তি এড়ানো যেতো।
সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী মাত্রেই সৃষ্টিতত্ত্বে বিশ্বাসী; বিবর্তনে তাঁদের কোন বিশ্বাস নেই। বিবর্তন মিথ্যা প্রমাণ করতে না পেরে- ‘এটা নিছক তত্ত্ব’ জাতীয় কথার পালেও বাতাস লাগছে না দেখে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন আমদানি করতে সচেষ্ট হয়েছে সৃষ্টিবাদীরা। তাঁদের যুক্তি হিসেবে বহু ব্যবহারে জীর্ণ হয়ে গেছে প্যালের ঘড়ি (কিংবা হুমায়ূন আহমেদের নিকন ক্যামেরা), হয়েলের বোয়িং ৭৪৭, বিহের হ্রাস অযোগ্য জটিলতা ইত্যাদি। বিবর্তনের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সহ ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন যে মোটেও ইন্টেলিজেন্ট নয় তা সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে বইয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধ্যায়ে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে প্রাসঙ্গিক ভাবেই এসেছে চোখের বিবর্তনের সচিত্র বিবরণ। মাইকেল বিহে’র ইঁদুর মারা কল যাঁদের কাছে হ্রাস অযোগ্য জটিল বস্তু – তাঁরা হতাশ হবেন এই দেখে যে ইঁদুর মারা কলের উদাহরণ যুক্তির বৈঠকে কল্কে পাওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছে।
মানুষের শরীরের মন্দ নকশা’র চিত্র যা ২০০১ সালে সায়েন্টিফিক আমেরিকানে প্রকাশিত হয়েছিল তা এখানে যথোপযুক্তভাবে ব্যবহৃত হয়েছে (পৃঃ৭২-৭৩)। মন্দ নকশা কীভাবে সংশোধন করা যায় তাও দেয়া আছে। কিন্তু তথাকথিত ঈশ্বরের তো সাধ্য নেই তা প্রয়োগ করার! প্রসঙ্গক্রমে এসেছে নুহের নৌকার কথা। এ সংক্রান্ত আজগুবি বন্যার কথা অনেকেই বিশ্বাস করেন – এটাই আশ্চর্যের। নুহের নৌকা ও মহাপ্লাবন সংক্রান্ত মিথের জন্ম খ্রিস্টের জন্মেরও ২৮০০ বছর আগের। সুমুরিয়ান পুরাণে এরকম ঘটনার উল্লেখ আছে (পৃঃ৭৯)। পরে এটা বিবর্তিত হয়ে বাইবেলে স্থান পেয়েছে। সেখান থেকে আরেক বিবর্তনে কোরানে। এই যে গল্প থেকে গল্পের বিবর্তন – সেখানেও নাকি ঈশ্বরের হাত আছে। আচ্ছা কেউ কি জানে ঈশ্বরের জন্ম কখন?
দ্বিতীয় অধ্যায়ে সামান্য কিছু দুর্বলতা চোখে পড়েছে আমার। এ অধ্যায়টা ব্লগ থেকে বইয়ের জন্য সম্পাদনা করার সময় লেখক তাঁর সহ-লেখকের কথা ভুলে গিয়েছিলেন বলেই অধ্যায়ের বিভিন্ন জায়গায় “আমার খুবই প্রিয়” (পৃঃ ৬০), “আমার এক বন্ধুকে” (পৃঃ ৬৬), “আমার তত্ত্বাবধায়ক স্যার”, “আমাকে দায়িত্ব দিলেন”, “আমি মোটামুটি” (পৃঃ৬৮) ইত্যাদি এক বচন উত্তম পুরুষ ব্যবহৃত হয়েছে। লেখকের লেখার স্টাইলের সাথে যাঁরা পরিচিত তাঁরা হয়তো বুঝতে পারবেন অধ্যায়টা কার রচনা – কিন্তু যৌথ লেখায় যেহেতু কোন্অধ্যায় কার রচনা তা উল্লেখ করা হয়নি – ‘আমি’র বদলে ‘আমরা’ হলে বেশি গ্রহণযোগ্য হতো। ৬০ পৃষ্ঠায় ছক্কার উদাহরণ দেয়া হয়েছে – কিন্তু বলা হয়েছে কার্ডের উদাহরণ। ৮৪ পৃষ্ঠায় ইলেকট্রনের ডাবল স্পাইরাল প্যাটার্ন তৈরি করার জন্য যে পরীক্ষার বর্ণনা দেয়া হয়েছে তা খুব একটা পরিষ্কার নয়। বলা হচ্ছে “প্রথমে আমরা একটা ইলেকট্রন নেই (নিই)”। শুধুমাত্র একটা ইলেকট্রন আলাদা ভাবে নেয়া খুব সহজ নয়। “এবার একে একটা টেবিলে স্থাপন করি” – ইলেকট্রন! টেবিলে স্থাপন!! কীভাবে? তারপর বলা হচ্ছে ইলেকট্রনকে কেন্দ্র করে একটা বৃত্ত আঁকতে। পরীক্ষাটাকে একটু সহজভাবে বাস্তবসম্মতভাবে উপস্থাপন করা জরুরি। নয়তো ধর্মবাদীরা এটাকে নিয়েই ফেনাবে।
হয়েলের বোয়িং ৭৪৭ ফ্যালাসি ব্যাখ্যা করা হয়েছে তৃতীয় অধ্যায়ে। প্রসঙ্গক্রমে সরল চোখ থেকে জটিল চোখের বিবর্তনের বর্ণনা এসেছে। বর্ণিত হয়েছে অজৈব যৌগ থেকে জৈব যৌগের উৎপত্তির বিভিন্ন ধাপ। অভিজিৎ রায় ও ফরিদ আহমেদের ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’ বইতে আরো বিস্তারিত আছে এ প্রসঙ্গ। বিবর্তনের প্রাকৃতিক নির্বাচন ও বিক্ষিপ্ত মিউটেশনের বর্ণনায় বানরের শেক্সপিয়ারের হ্যামলেট টাইপ করার উদাহরণটি খুবই চমকপ্রদ। অধ্যায়ের শুরুতে ফ্রেডরিক হয়েলের এত বড় একটা ছবি ছাপিয়ে হয়েলকে কি একটু বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়ে গেলো না?
শুরুতে? – এই সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছে চতুর্থ অধ্যায়। খুব কম কথায় সহজ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে মহাবিশ্বের উৎপত্তির কথা। অলৌকিকত্ব ছাড়াই কীভাবে পদার্থের উৎপত্তি, ভরের উৎপত্তি, শক্তির উৎপত্তি। বিগব্যাং এর মাধ্যমে মহাবিশ্বের সূচনার পর কীভাবে বেড়ে চলেছে এর এনট্রপির পরিমাণ- কীভাবে বেড়ে চলেছে মহাবিশ্বের আয়তন প্রাকৃতিক পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মেই- খুবই টানটান প্রাঞ্জল বর্ণনা। মহাবিশ্বের উৎপত্তির জন্য যে কোন অদৃশ্য সৃষ্টিকর্তার আদৌ প্রয়োজন নেই তা এ অধ্যায়টি পড়লেই প্রতীয়মান হবে।
ভাববাদী দার্শনিকদের চিন্তার একটা বিরাট অংশ জুড়ে থাকে ‘আত্মা’। কত রকমের ব্যাখ্যা-অপব্যাখ্যা যে আছে আত্মাকে ঘিরে। বাংলা ভাষায় অনেক শব্দ ও শব্দাংশ প্রচলিত আছে ‘আত্মা’কে নিয়ে। মানুষ মরলেও আত্মা নাকি মরে না। মৃত্যুর পর আত্মার শান্তির জন্য কত রকমের অনুষ্ঠানের অনুশাসন প্রচলিত। অবিশ্বাসের দর্শনের পঞ্চম অধ্যায় “আত্মা নিয়ে ইতং বিতং” এক কথায় প্রচলিত আত্মার মৃত্যুবাণ। আত্মা সংক্রান্ত কোন মানসিক ঝামেলায় পড়লে “আত্মা নিয়ে ইতং বিতং” পড়ে নিন, ঝামেলা কেটে যাবে। (তবে ‘ইতং বিতং’ শব্দের অর্থ কী আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না, আমি বলতে পারবো না। ‘আত্মা’ শব্দটি যদি মেনে নিতে পারেন, ‘ইতং বিতং’ এ সমস্যা হবার কথা নয়।) মৃত্যু ও মৃত্যুর সংজ্ঞা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে এ অধ্যায়ে। আত্মার অসারতা, আত্মার নানারকম গল্প, বিজ্ঞানের চোখে আত্মা ও অমরত্ব, আত্মা নিয়ে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার সন্নিবেশে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে এ অধ্যায়। এ অধ্যায়ে ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’ বই থেকে বেশ কয়েক পৃষ্ঠা (পৃঃ ১৪ – ২০) হুবহু উদ্ধৃত হয়েছে প্রাসঙ্গিক ভাবেই। এ অধ্যায়ের শেষাংশে মৃত্যুর পর চোখ সহ দেহের অন্যান্য অংশ বা পুরো দেহটিই মেডিকেল কলেজে দান করার আহ্বানটি খুবই দরকারি এবং মানবিক অর্থবহ। দেশের বাইরে (আমার জানামতে অস্ট্রেলিয়ায়) আত্মায় বিশ্বাসীরাও দেহ বা প্রত্যঙ্গ দান করার অঙ্গীকার করেন। মেডিকেল কলেজে তিন বছর ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও ব্যবচ্ছেদের পর দেহগুলো যার যার পরিবারের কাছে স্থানান্তর করার ব্যবস্থা থাকে যদি পরিবার চায়।
পৃথিবীর বেশিরভাগ আস্তিক মানুষের ধর্ম উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত। জন্মসূত্রে যে ধর্ম কাঁধের ওপর চেপে বসে তার ইমেজ রক্ষা করার দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নেন ধর্মপরায়ন মানুষ। নিজের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার জন্য নানারকম ছলচাতুরি করতেও বাধে না তাদের। বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার ও প্রযুক্তির সহজ লভ্যতার কারণে ধর্মের ঐশ্বরিক আবেদন এখন ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু। উন্নত বিশ্বে তো বটেই – উন্নয়নশীল দেশেও এখন মোবাইল ফোন ফেস-বুকের ব্যবহার মন্দির-মসজিদ-গির্জার ব্যবহারের চেয়ে অনেক বেশি। এ অবস্থায় ধর্মবাদীরা ঐশ্বরিক কিতাবে বিজ্ঞান খুঁজে পাবার দাবি করছেন। ব্যাপারটা হাস্যকর, কিন্তু বিপজ্জনকও বটে। কারণ এদের দলে কিছু কিছু শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানীও দেখা যায় মাঝে মাঝে। পারলৌকিক প্রাপ্তির লোভ তো বটেই – ইহলৌকিক নগদ প্রাপ্তিও তাদের কম নয়। তাই এখন নাকি কোরানে ‘বিগ-ব্যাং’ এর আয়াত পাওয়া যাচ্ছে। বেদও পিছিয়ে নেই – সেখানেও বিগ-বিগব্যাং হাজির মৃণাল দাসগুপ্ত নামক বিজ্ঞানীদের কল্যাণে। যে রামায়ণের হনুমান সূর্যকে বগলের নিচে রেখে দিতে পারে- সেখানেও হয়তো ক’দিন পরে বিজ্ঞান খুঁজে পাওয়া যাবে। কোরান টেম্পারিং করে নাইন্টিনের ‘মিরাকল’ ঘটিয়ে ফেলছেন রাশাদ খলিফা ও তাঁর ধ্বজাধারীরা। এসব বিজ্ঞানময় কিতাবের মুখোশ খুলে দিয়েছেন অভিজিৎ রায়হান অবিশ্বাসের দর্শনের ষষ্ঠ অধ্যায়ে।
দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অরাজকতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে শুরু করে নৈতিকতার সব রকমের অবক্ষয় ঘটেছে যেসব দেশে – সেসব দেশে আশ্চর্যজনক ভাবে ধর্মের ব্যবহার অনেক বেশি। তার মানে কী দাঁড়ালো? ধর্মের সাথে নৈতিকতার সম্পর্ক যদি থাকে তা কীরকম? স্বাভাবিক সরল যুক্তিতে তো বলতে হয় ধর্ম নৈতিকতার বিপ্রতীপ। কিন্তু আসলে তা নয়। নৈতিকতা আসলে ধর্ম নিরপেক্ষ- অর্থাৎ নৈতিকতার সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। সপ্তম অধ্যায় “ধর্মীয় নৈতিকতা”য় লেখকদ্বয় বিভিন্ন ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থ এবং তাদের অনুসারীদের আচার-আচরণ ব্যাখ্যা করে বাস্তব উদাহরণ ও উপাত্তের সাহায্যে দেখিয়েছেন কীভাবে ‘ধর্ম-মুক্ত’ দেশে নৈতিকতার উৎকর্ষ ঘটেছে। কীভাবে মানুষ ধর্মহীন হয়েও কতটা সুখে আছে। নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন ওয়াইনবার্গের উদ্ধৃতি এখানে সার্থকভাবে প্রযোজ্যঃ “ধর্ম মানবতার জন্য এক নির্মম পরিহাস। ধর্ম মানুক বা নাই মানুক, সবসময়ই এমন অবস্থা থাকবে যে ভাল মানুষেরা ভাল কাজ করছে, আর খারাপ মানুষেরা খারাপ কাজ করছে। কিন্তু ভাল মানুষকে দিয়ে খারাপ কাজ করানোর ক্ষেত্রে ধর্মের জুড়ি নেই” (পৃঃ ১৯৮)।
শারীরিক অসুখের ভাইরাসের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানীদের নিরলস সংগ্রাম চলছে। কিন্তু ধর্মীয় বিশ্বাসের যে ভাইরাস সমাজে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে আছে – এবং পরিকল্পিতভাবে নিয়মিত ছড়ানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে যে পরিমাণ আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার তা কি গড়ে উঠছে? ধর্মীয় বিশ্বাসের ভাইরাসে কত মানুষের প্রাণ গেছে তার একটা ক্ষুদ্র তালিকা দেয়া হয়েছে ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ অধ্যায়ে (পৃঃ ২৩৭-২৪৫)। বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা, আফগানিস্তানে তালেবানি কাজ-কারবার, টুইন টাওয়ার ধ্বংস করে এতগুলো মানুষ মেরে ফেলা, ইরাক যুদ্ধ – সবই ধর্মীয় ভাইরাসের পরোক্ষ প্রভাব। সাথে অবশ্য বাস্তব অর্থনৈতিক ব্যাপারও আছে। যে আত্মঘাতী বোমারুরা শরীরে বোমা বেঁধে আল্লাহ্র নামে শহীদ হবার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ছেন – তাঁরা তার বিনিময়ে নিজের পরিবারের সারাজীবনের ভরণপোষণ ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাচ্ছেন। তা না হলে শুধুমাত্র বিশ্বাসের ভাইরাসের শক্তি হয়তো ততটা হতো না। কিন্তু এই ভাইরাস যে ভীষণ শক্তিশালী তা অনস্বীকার্য। ২৫৮ পৃষ্ঠার গ্রাফটা সরাসরি প্রমাণ করে দিচ্ছে যে ধর্মীয় প্রভাব-মুক্ত দেশের বেশিরভাগেরই জিডিপি ধর্মীয় ভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলোর চেয়ে বেশি। বাংলাদেশ, নাইজার, ইয়েমেনের মত দেশে শতকরা ৯৯ জন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ধর্মের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। অথচ এসব দেশে দারিদ্র্য মানুষের ধর্মের মতই নিত্যসঙ্গী (পৃঃ২৫৬)। বুদ্ধিমত্তার দিক থেকেও উদারপন্থীরা রক্ষণশীলদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। ২৫২ পৃষ্ঠার চিত্রদুটো তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ। তবে এটাও ঠিক যে ধর্মে বিশ্বাসীরা বেশ অলসও বটে। একটা দুটো ধর্মীয় পুস্তক আঁকড়ে ধরে বিশ্বজয় করার স্বপ্ন দেখে তারা – কুতর্ক করে একই যুক্তি বারবার দেয় একই বই থেকে। অথচ অবিশ্বাসীদের তিন শতাধিক রেফারেন্স বই ও গবেষণাপত্র আত্মস্থ করে ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ লিখতে হয়। সারা প্যালিন বা ক্রিস্টিন ওডেনেলের চেয়ে রিচার্ড ডকিন্স বা বিল মার যে অনেক বেশি স্মার্ট তা তো সবাই স্বীকার করবেন। ২৫৪ পৃষ্ঠায় এই চারজনের ছবি দেয়া হয়েছে। তবে কোন্জন কে তা ক্যাপশানে লিখে দিলে সুবিধে হতো।
নতুন দিনের নাস্তিকতাই যে আগামীদিনের ভাইরাসমুক্ত সমাজ গঠন করবে তা দৃঢ় যুক্তিতে ব্যক্ত করেছেন অভিজিৎ রায়হান তাঁদের বইয়ের শেষ অধ্যায়ে। বিশ্বাসের দীনতা, বিশ্বাসের উদ্ভব, ধর্মের কুফল, ধর্ম-নিরপেক্ষতা, ধর্মহীন সমাজ প্রসঙ্গে প্রাণবন্ত আলোচনা করেছেন লেখকদ্বয়। ধর্মহীন সমাজের উদাহরণ হিসেবে ডেনমার্কের সামাজিক প্রসঙ্গ এসেছে। সমাজবিজ্ঞানী ফিল জাকারম্যান ডেনমার্কে চৌদ্দমাস থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন এদেশের মানুষের সামাজিক জীবনযাপন। ধর্মহীন এ সমাজ প্রায় অপরাধহীন। ইউরোপের পাশাপাশি দেশ জার্মানি, ইতালি বা ফ্রান্সের দিকে তাকালেও ব্যাপারটা চোখে পড়বে। আমি নিজে মিউনিখে দেখেছি ট্রেন স্টেশনে কোন টিকেট-চেকার নেই, এমন কি কোন দরজাও নেই স্টেশনে ঢোকার মুখে। অথচ রোমে গিয়ে দেখলাম ডাবল-গেট দিয়ে ঠেকাতে হচ্ছে বিনা-টিকেটের যাত্রীদের। ভ্যাটিকানের এত কাছেই নৈতিকতার এত বড় বিপর্যয়!
বইয়ের ছাপা ও বাঁধাই চমৎকার। সামিয়া হোসেনের প্রচ্ছদ খুবই প্রাণবন্ত। বইতে ব্যবহৃত চিত্রগুলোর পরিস্ফুটন খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু সারা বইতে একটা চিত্রেরও নম্বর দেয়া হয়নি। ফলে মাঝে মাঝে বর্ণনার সাথে চিত্র মিলিয়ে নিতে কষ্ট হয়। যেমন চতুর্থ অধ্যায়ের পৃঃ১২০ ও পৃঃ১২১ এ চিত্র-২ ও চিত্র-১ এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু চিত্রে নম্বর না থাকাতে কোন্চিত্রের কথা বোঝানো হচ্ছে তা পরিষ্কার হয়নি। তাছাড়া ওই পৃষ্ঠাগুলোতে মাত্র একটি চিত্রই আছে। এ বইয়ের যদি কোন বড় দুর্বলতা থাকে তা হলো বানান বিভ্রাট। অনেকগুলো ভুল বানান চোখে পড়েছে – তার একটা তালিকা নিচে দেয়া হলো। ৩৭১ পৃষ্ঠার অফসেট বোর্ড বাঁধাই বইয়ের দাম পাঁচশ’ টাকা রাখার যুক্তি হয়তো আছে, তবে দাম আর একটু কম রাখা গেলে ভালো হতো।
বাংলাদেশে মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও মুক্তমনার আত্মপ্রকাশ নিয়ে আলোচনা এই বই থেকে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। বিশ্বাসের ভাইরাস আমাদের যেভাবে আতঙ্কিত করে – আগামীদিনের বিশ্বাস-মুক্তদের পদধ্বনি তেমনি আমাদের আশান্বিত করে। মুক্তমনার সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে, ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে আমাদের মুক্তচিন্তার ক্ষেত্র, সমৃদ্ধ ও শানিত হচ্ছে আমাদের যুক্তিবোধ। এই উত্তরণের পথে একটা বিরাট মাইলফলক হয়ে থাকবে “অবিশ্বাসের দর্শন”। সেজন্য অভিজিৎ রায় ও রায়হান আবীরের প্রতি সকল মুক্তমনার পক্ষ থেকে জানাচ্ছি কৃতজ্ঞতা।
বিষয়টা হাইপোথেটিক্যাল ছিলো। ধরি, আমরা একটা ইলেক্ট্রন নিলাম। ইলেক্ট্রনটি নিয়ে টেবিলের উপর রাখলাম। যদিও বাস্তবিক অর্থে এভাবে রাখা সম্ভব নয়, কিন্তু যদি রাখা হতো তাহলে ফলাফলটা ডাবল স্পাইরাল প্যার্টান তৈরি করতো।
আরেকটু ঠিক করে লিখতে হবে- পরের সংস্করণের জন্য বিষয়টা মাথায় রাখলাম।
প্রদীপ দা, খুব চমৎকার রিভিউ হয়েছে।
অভিজিৎদা, রায়হান আবীরের এই বইয়ের প্রথম সংস্করণের একবার প্রুফ দেখার দায়িত্বটা আমার উপরেই ছিল। তাই এই সংস্করণের ভুলভ্রান্তির দায় কিছুটা হলেও আমার উপর বর্তায়!
@অনন্ত বিজয় দাশ, কিছুটা মনে হয় আমার নিজের ওপরেও বর্তায়। কারণ মুক্তমনায় যখন লেখাগুলো প্রকাশিত হয় তখন বানানের ব্যাপারে আমি কিছুই বলিনি। মুক্তমনায় প্রকাশিত লেখাগুলোকে মুক্তমনার পাঠক যখন পড়েন – তখন সেটাকে এক ধরণের রিভিউ সিস্টেম বলে ধরে নিতে পারলে খুব ভালো হতো।
@অনন্ত দা,
যে স্বল্পতম সময়ে আপনি যতোটুকু করেছেন, তার জন্য আপনাকে অপরীসীম কৃতজ্ঞতা। এই বইটি ঠিকঠাকের জন্য আসলেই একবছর সময় দরকার, আপনি পেয়েছেন মোটে কয়েকদিন।
এক কথায় বরাবরের মত চমৎকার রিভিউ।
আপনার সাথে আমি পুরোপুরি একমত।
ক@প্রদীপ দেব
আপনি যদি ব্যকরণ মানেন!
তাহলে কেন শব্দটি অশুদ্ধ আমি কিন্ত্ত তা বর্ণনা করেছি।অপপ্রয়োগের ব্যবহার পুরো অভিধানে অজস্র।যাক , ভালো থাকুন।ধন্যবাদ।
@আহমেদ সায়েম, অনেক ধন্যবাদ ব্যাপারটা পরিষ্কার করে দেয়ার জন্য। অনন্তও হায়াৎ মামুদের বই থেকে দেখিয়েছেন যে ‘ইতিপূর্বে’ ভুল শব্দ। এখন থেকে ‘ইতিপূর্বে’ বা ‘ইতিমধ্যে’ শব্দদুটোর পরিবর্তে ‘ইতোমধ্যে’ বা ‘ইতোপূর্বে’ ব্যবহার করবো।
@ প্রদীপ দেব
আপনার পাঠ-পর্য়ালোচনা ভালো লেগেছে।
আপনি মন্তব্যের উত্তরে একটি বানান নিয়ে যা বলেছেন-
‘ইতোমধ্যে বা ইতিমধ্যে দুটোই সঠিক’
.
ইতঃ+মধ্যে=ইতোমধ্যে
পূর্বপদের শেষে যদি অঃ (=অস্) থাকে এবং পর পদের প্রথমে যদি ম- ধ্বনি থাকে তবে সন্ধির ফলে অঃ রূপান্তরিত হয়ে ও ধ্বনি হয় এবং পূর্ববর্ণে যুক্ত হয়।
তাই এই সন্ধি জাত শব্দ গঠনে ইতোমধ্যে শব্দটিই শুদ্ধ,- ইতিমধ্যে কেবল তার চলিত রুপ , অশুদ্ধ্ও বলা চলে। এ জন্যে শুদ্ধটাই গ্রহণ করা উচিত। না হলে শুধু বানান বিভ্রাট,বিভ্রান্তিই ছড়াবে। ধন্যবাদ।
@আহমেদ সায়েম, অনেক ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধানের ১৩৮-১৩৯ পৃষ্ঠায় দেয়া আছে ‘ইতিমধ্যে’ বা ‘ইতিপূর্বে’ শব্দ দুটো অপপ্রয়োগ – কিন্তু অশুদ্ধ প্রয়োগ নয়।
@প্রদীপ দেব,
হায়াৎ মামুদের “বাংলা লেখার নিয়মকানুন” বইয়ে দেখেছি “ইতিমধ্যে” শব্দটি ভুল। শুদ্ধ হচ্ছে “ইতোমধ্যে”।
@অনন্ত বিজয় দাশ, অনেক ধন্যবাদ অনন্ত। ‘ইতিমধ্যে’ বা ‘ইতিপূর্বে’ আর লিখবো না।
http://blog.bdnews24.com/smartalien/79471
এই লেখাটাতে মুক্তমনার বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভি্যোগ দেখলাম। অযৌক্তিক ধর্মীয় আস্ফালন মূলক অভি্যোগ না। বেশ যৌক্তিক অভিযোগ। বিশেষত যেটা বেশ চোখে লাগল তা হল অনেকগুলি ভুল তথ্য ওয়ালা লেখা মুক্তমনায় বের হয়েছে যার সংশোধন করা হয়নি। আডমিনকে অনুরোধ এসব ভুলের দিকে নজর দেবার। একটা multidisciplinary Editorial Board থাকতে পারে যারা নিজ নিজ বিষয়ের লেখাগুলি সম্পাদনা করবে ব্লগে প্রকাশের আগে। after all মুক্তমনা হয়ে তো আর qualityর ব্যাপারে একচুল ছাড়ও দেয়া যায় না।
-অনীক সামীউর রহমান
@Anik Samiur Rahman,
আপনার কাছে মনিরুজ্জামান সজলের এই গার্বেজ ‘যৌক্তিক’ বলে মনে হলেও আমার কাছে মনে হয়নি। আমি এ নিয়ে কোন মন্তব্য করবো না ভাবছিলাম। ডক্টর মুশফিক নামে এক অর্ধোন্মাদ ব্যক্তি আছেন যিনি ইন্টারনেটে লিখে বেড়ান। এক সময় অনেক সাধ নিয়ে মুক্তমনা ব্লগে এসেছিলেন, তারপর বিভিন্ন জনের সাথে নানা প্যাচাপেচি, অসংলগ্ন কথাবার্তা আর কুৎসিত গালিগালাজের কারণে উনাকে আমাদের মডারেটর ফরিদ আহমদ ঘার ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিলেন। উনি ভেবেছিলেন এর পেছনে রয়েছি আমি। ইনফ্যাকট আমি তখন ছুটিতে ছিলাম। যাহোক, এর পর থেকেই উনি আমার পিছনে লেগে গেছেন। নানা রকমের ফিরিস্তি করে ব্লগ লিখছেন, নামে বেনামে।
এই মনিরুজ্জামান সজল আর কেউ নয়। এটা ‘ডক্টর’ মুশফিক ইমতিয়াজ চৌধুরীরই ছদ্মনাম। মুশফিকের মজার একটি ব্যাপার হল – মুক্তমনা থেকে বের করে দেয়া হলেও উনি নানা নাম নিয়ে চোরের মত মুক্তমনার আশে পাশে ঘুর ঘুর করেন। ঢাকার পাড়ায় নেড়ি কুকুর দেখা যায় না – লাঠির বাড়ি খেয়ে হলেও ভাতের আশায় বাড়ির চারিদিকে ঘুর ঘুর করে? মুশফিকও তেমনি। কয়েকদিন আগে দেখেছিলাম – আমার ফেসবুক আইডি ফেক করেও আরেকটি আইডি বানিয়েছিলেন এই মুশফিক, এবং সেই আইডি থেকে মুশফিকের লেখা শেয়ার করতেন। কি অবস্থা চিন্তা করুন – অভিজিতের একাউন্ট থেকে মুশফিকের সব ব্লগ আর্টিকেলে ‘লাইক’ দেয়া হচ্ছে, আর মুশফিকের লেখা শেয়ার করেছে। এটা কে করছেন সেটা বুঝতে কি কারো রকেট সায়েন্টিস্ট হওয়া লাগে? তারও আগে আমার ফেসবুক থেকে ছবি চুরি করে এক আবোল তাবোল ব্লগ লিখেছিলেন ‘আমার ব্লগ’ সাইটে গিয়ে, তার ফলশ্রুতিতে আমার ব্লগ থেকেও তাকে বের করে দেয়া হয়েছিলো। এই অর্ধোন্মাদ ব্যক্তি বুঝতেও পারেননা, উনি যত এগুলো কাজ করেন, তত তিনি মানুষের কাছে হাস্যাস্পদ হন। আসিফ মহীউদ্দিন একবার একটি লেখা লিখেছিলেন এই ভদ্রলোককে নিয়ে, দেখতে পারেন এখানে। মুশফিকের সহপাঠীরাই বলেন যে, পাকিস্তান ফেরত এই তিনি অসুস্থ যুবক কখনোই ডাক্তারি পাশ করতে পারেননি, অথচ নিজের নামের আগে দিব্যি ‘ডকটর’ লিখে নামে বেনামে হাজারটা লেখা লিখেন এই প্রতারক পুরুষ।
মুক্তমনা থেকে বের করে দেয়ার পরে তিনি লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে ফেসবুকেও স্প্যামিং করে যাচ্ছিলেন। নিজে তো করছিলেনই, আবার মনিরুজ্জামান সজল নামে আরেকটা আইডি বানিয়ে মুক্তমনা-ফেসবুকগ্রুপে স্প্যামিং শুরু করলেন। মুক্তমনারা উদার বিধায় তাকে বারণ টারণ কিছুই করা হয়নি। কিন্তু স্প্যামিং এর হার শেষ পর্যন্ত এতোই বেড়ে গিয়েছিলো যে, মুক্তমনা সদস্য সাইফুল এসে একদিন বললেন, ‘এই গ্রুপটারে মনিরুজ্জামান সজলের অফিশিয়াল গ্রুপ কেন বলা হইবনা এডমিন জবাব দেন’। ব্যাস আগুনে ঘি পড়লো। মনিরুজ্জামান সজলের মুখ বাঁচাতে এগিয়ে আসলেন মুশফিক ইমতিয়াজ (সাইফুল মনিরুজ্জামান সজলকে নিয়ে তামাসা করলে সেটা মুশফিকের গায়ে লাগলো কেন, সেটা একটা বড় প্রশ্ন, তবে দুইজনই একই ব্যক্তি হলে ফোস্কা পড়ারই কথা অবশ্য :)) ), এবং দুজনে মিলে সাইফুলের গুষ্টি উদ্ধার করতে লেগে গেলেন। তারপর একসময় রামগড়ুড়ের ছানা এসে দুটোকেই কান ধরে বের করে দেয়। মুশফিক ওরফে মনিরুজ্জামান সজল ভেবে নিলেন, এর পেছনেও রয়েছি আমি।
যা হোক মূল কথা হল, এই মুশফিককে আমি আসলে গোনাতেই ধরি না, ওর সমালোচনাকে পাত্তা দেয়া তো অনেক পরের কথা। এর মানসিক সুস্থতা নিয়েই আমি আসলে সন্দিহান। উনার ডাক্তারির নয়, বিজ্ঞানের কোন বেসিক জ্ঞানই নেই। আমার সমকামিতা বইয়ের নাকি ভুল ধরেছেন তিনি, কিন্তু এই অর্ধোন্মাদ ব্যক্তির লজিক এতোটাই দুর্বল যে সেগুলোর উত্তর দিতে গেলে আমার ঐ মুশফিকের পর্যায়ে নেমে যেতে হবে। উনি পায়ুপথের ব্যবচ্ছেদ করে আমাকে বোঝাতে চাইলেন পায়ুপথ ‘গে সেক্স’ এর জন্য নয়। এই পায়ু-ব্যবচ্ছেদ-কারী ‘ডক্টর’ মুশফিককে কে বোঝাবে যে আমাদের জিহ্বাও ওরাল সেক্সের জন্য তৈরি হয়নি, মনিকার সাথে ওরাল সেক্স করার সময় মুশফিক কি সেটা বিল ক্লিনটনকে গিয়ে বুঝিয়েছিলেন, এবং ওরাল সেক্সের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেবেন? বলেছিলাম না, মুশফিকের লজিক এতোটাই দুর্বল যে এটা নিয়ে কথা বলাও বোকামি। এই বিখ্যাত ডাক্তার জানে না যে, ১৯৭৩ সালের ১৫ই ডিসেম্বর আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন বিজ্ঞানসম্মত আলোচনার মাধ্যমে একমত হন যে সমকামিতা কোন নোংরা ব্যাপার নয়, নয় কোন মানসিক ব্যাধি। এ হল যৌনতার স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। ১৯৭৫ সালে আমেরিকান সাইকোলজিকাল এসোসিয়েশন একইরকম অধ্যাদেশ প্রদান করে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন ১৯৮১ সালে সমকামিতাকে মানসিক রোগের তালিকা থেকে অব্যাহতি দেয়। আমেরিকান ল ইন্সটিটিউট তাদের মডেল পেনাল কোড সংশোধন করে উল্লেখ করে –‘ কারো ব্যক্তিগত যৌন আসক্তি এবং প্রবৃত্তিকে অপরাধের তালিকা হতে বাদ দেয়া হল’। আমেরিকান বার এসোসিয়েশন ১৯৭৪ সালে এই মডেল পেনাল কোডের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে সমকামিতাকে সামাজিকভাবে স্বীকৃতি প্রদান করে। এর ফলে সমকামীরা পায় অপরাধ-বোধ থেকে মুক্তি। আমেরিকান ১৯৯৪ সালে আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশন তাদের ‘স্টেটমেন্ট অন হোমোসেক্সুয়ালিটি’ শিরোনামের একটি ঘোষণাপত্রে সমকামিতাকে একটি স্বাভাবিক যৌন-প্রবৃত্তি হিসেবে উল্লেখ করে এবং কারো যৌন-প্রবৃত্তিকে পরিবর্তন করার যে কোন প্রচেষ্টাকে অনৈতিক বলে উল্লেখ করা হয়। আমেরিকান মেডিকেল এসোসিয়েশন ১৯৯৪ সালের একটি রিপোর্টে সমকামিতাকে স্বাভাবিক যৌন-প্রবৃত্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়, এবং অভিমত ব্যক্ত করে যে, সমকামীদের যৌনতার প্রবৃত্তি পরিবর্তনের চেষ্টা না করে বরং তারা যেন সমাজে ভালভাবে বেঁচে থাকতে পারে আমাদের সেই চেষ্টা করা উচিৎ। একাডেমি অব পেডিইয়াট্রিক্স এবং কাউন্সিল অব চাইল্ড এন্ড এডোলেসেন্ট হেলথ স্পষ্ট করেই বলে যে সমকামিতা কোন চয়েস বা পছন্দের ব্যাপার নয়, এবং এই প্রবৃত্তিকে পরিবর্তন করা যায় না। ১৯৯৮ সালে ম্যানহাটনে কনফারেন্সে সাইকোএনালিটিক এসোসিয়েসন তাদের পূর্ববর্তী হোমোফোবিক ব্যবহারের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে। ১৯৯৯ সালে আমেরিকান একাডেমী অব পেডিয়াট্রিক্স, আমেরিকান কাউন্সিলিং এসোসিয়েশন, আমেরিকান এসোসিয়েশন অব স্কুল এডমিনিস্ট্রেটরস, আমেরিকান ফেডারেশন অব টিচার্স, আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশন, আমেরিকান স্কুল হেলথ এসোসিয়েশন, ইন্টারফেইথ এলায়েন্স ফাউন্ডেশন, ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব স্কুল সাইকোলজিস্ট, ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব সোশাল ওয়ার্কার এবং ন্যাশনাল এডুকেশন এসোসিয়েশন একটি যৌথ বিবৃতিতে সমাকামিতাকে একটি স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হিসেবে উল্লেখ করে তাদের উপর যে কোন ধরণের আক্রমণ, আগ্রাসন এবং বৈষম্যের নিন্দা করেন। মুশফিক তার ডাক্তারি বিদ্যায় সমকামিতাকে ঘৃণ্য কিংবা ‘এইডস এর কারণ’ মনে করলেও পশ্চিমা বিশ্বে কোন আধুনিক চিকিৎসকই সমকামিতাকে এখন আর ‘রোগ’ বা বিকৃতি বলে আর চিহ্নিত করেন না, মনে করেননা এইডসের পেছনে সমকামিতাই দায়ী। এর পুঙ্খানুপুঙ্খ রেফারেন্স আমার বইয়েই দেয়া আছে। মুশফিকের দরকার সেগুলো সম্বন্ধে একটু ভাল করে জানা।
আমার ধারণা, এই মুশফিকের নিজেরই সমকামী হবার সম্ভাবনা বেশি। আমেরিকায় দেখা যায় চার্চের বহু পাদ্রীদের সমকামীদের বিরুদ্ধে লাগাতার ঘৃণা প্রকাশ করেন বছরের পর বছর ধরে, তারপর দেখা যায় নিজেই একদিন ঘোষণা দিয়ে বলেন ‘হ্যা আমি সমকামী ছিলাম’। সমাকিমতার প্রতি মুশফিকের এই লাগাতার জিহাদ দেখে সেই পাদ্রীগুলার কথা মনে পড়ে যায়। শস্যের মধ্যে ভুত থাকলে যেরকম আচরণ হওয়া উচিৎ, মুশফিকের আচরণ ঠিক তাই।
যে বানান-ভুলের কথা নিয়ে এতো তোলপাড় করছেন মুশফিক, সেগুলো বইটির দ্বিতীয় সংস্করণেই ঠিক করে দেয়া হয়েছে। সেটা প্রদীপের মন্তব্যেই বলেছি। এই মুশফিক আমার কোন বই আসলে পড়েননি। উনি আমার বিরুদ্ধে লেখেন ঘৃণা থেকে, আর ভাবেন আমার বিরুদ্ধে লিখলে উনি লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন বেশি। আমি যতই তাকে পাত্তা দেই না, উনার রাগ এক্সপোনেনশিয়ালি বাড়ে। সমকামিতা বইটির তথাকথিত ‘রিভিউ’ করেছেন মুশফিক, তাও মুক্তমনায় রাখা ইন্টারনেট ভার্শনের দুই চারটা চ্যাপ্টারের উপর ভিত্তি করে। অবিশ্বাসের দর্শনের ক্ষেত্রেও তাই। বানান নিয়ে কিছুক্ষণ প্যা প্যা করে একপ্রস্ত গালাগালি করে বিদায় হন। এটাই উনার স্ট্র্যাটিজি। অথচ যারা বইগুলো পড়েছেন, তারা জানেন, ইন্টারনেটের ভার্শনের সাথে মূল বইয়ের ভার্শনের যে বিরাট পার্থক্য আছে, এবং প্রায় সবকিছুই যে সংশোধন করে ফেলা হয়েছে পরবর্তী সংস্করণে। জানেননা কেবল স্বঘোষিত ডকটর উপাধিধারী মুশফিক। কারণ উনি জানতে চাননা, চান কেবল ঘোলা জলে মাছ শিকার করতে। তাতে ফায়দা হবে না মোটেই। পাঠকেরা বোকা নয় কিন্তু।
@অভিজিৎ,
এ দু’টোকে কান ধরে বের করে দেবার সিদ্ধান্তটা আমার। শাফায়েত শুধু এক্সিকিউট করেছে। এই ফেসবুক সাইটটা মুক্তমনার অফিসিয়াল সাইট। এখানে বর্জ্য বর্ষণ আমরা বরদাস্ত করবো না, এটাই স্বাভাবিক।
@ফরিদ আহমেদ,
এই মুশফিকের সমস্যাটা কি কন তো? নিজেরে ডাক্তার বলে বেড়ায়, আচার আচরণে তো পুরাই সাইকো। ভাগ্য ভাল যে ডাক্তারীটাও পাশ করতে পারে নাই। নাইলে যে রোগীদের কপালে কি ছিলো …
একটা জিনিস আমি ভালা বুঝছি। এই মুশফিক শকের ভক্ত নরমের যম। আপনে বার কয়েক এই মুশফিকরে ঘার ধাক্কা দিছেন, আপনেরে কিছু কয় না, আমি হেইডারে পাত্তা দেইনা বইলা যাত রাগ মনে হয় আমার উপর।
@অভিজিৎ, আমি জানি আপনার সময়ের কত দাম। স্বঘোষিত ডাক্তার বা দার্শনিকদের অন্তঃসারশূন্য বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে কেন এত সময় নষ্ট করেন? যে জিনিস মুক্তমনায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে তা বারবার প্রমাণ করার দরকার আছে কি? তার চেয়ে আমরা যে আপনার আরো অনেক অনেক নতুন লেখার জন্য অপেক্ষা করে আছি – আপনার সময়টা আমাদের দেন – যারা আরো যৌক্তিক হতে চাচ্ছি, বিজ্ঞান ও দর্শনের আরো অজানা ব্যাপার জানতে চাচ্ছি।
তাছাড়া আরো একটা ব্যাপার অনেকদিন থেকেই ভাবছি – তা হলো মুক্তমনার এগারো বছর বয়স হয়ে গেলো। মুক্তমনা আপনাদের মত নিবেদিত-প্রাণ কর্মী ও সংগঠকের হাতে এখন অনেকটাই বেড়ে উঠেছে। এখন মনে হয় এর পূর্ণ-সদস্যপদের ব্যাপারে একটু ফিল্টার করার সময় এসেছে। আমি কিছু একটা লিখলেই কি তা কোন বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশ করা সম্ভব? মুক্তমনা কিন্তু মানের দিক থেকে অনেক অনলাইন রেফারিড জার্নালের চেয়ে ভালো হতে পারে যদি সেখানে কিছু মানদন্ড থাকে যা পেরোবার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে লেখককে – এমনকি মন্তব্যও হতে হবে সেরকম। আর ছদ্মনামের ব্যাপারটা আমার কাছে কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ পরিচয় আড়াল করার প্রাথমিক ধাপটাই হলো এক ধরণের জালিয়াতি – আমি যা নই তাই বলে আমার পরিচয় দেয়া। অনেক প্রতিষ্ঠিত লেখক ছদ্মনামে লিখে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন – কিন্তু তাঁদের মূল পরিচয় কিন্তু গোপন থাকেনি। এ ব্যাপারে মুক্তমনা এডমিনের মনে হয় কিছু করা দরকার।
@প্রদীপ দেব,
একমত আপনার সাথে। এর একটা সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড বেঁধে দেবার সময় এসে গিয়েছে। যতই বলি না কেন যে লেখার দায়দায়িত্ব লেখকের, এখানে প্রকাশিত যে কোনো লেখার দায়দায়িত্ব সবশেষে মুক্তমনার ঘাড়ে এসেই পড়ে।
আমি খুব সহজভাবে একটা জিনিস বুঝি যে, লিখতে গিয়ে কাউকে যদি পরিচয় গোপন করতে হয়, তবে কোথাও না কোথাও তার ঘাপলা আছে।
@প্রদীপ দেব,
যিনি ছদ্মনামে লিখেন তার কাছে ব্যাপারটা শুধু অগ্রহণযোগ্যই নয়, বরং এক ধরনের নাইটমেয়ার। নিজের আসল নামে মনের ভাব প্রকাশ করতে না পারার বা কোন কিছুর সাথে দ্বিমত পোষণ করতে না পারার কী যাতনা তা শুধু তারাই বোধ হয় টের পান যারা ছদ্মনামে লিখেন। এর পেছনে অবশ্যই গ্রহণযোগ্য কারণ আছে, আর তা হলো সমাজ ও রাষ্ট্র কর্তৃক নিরাপত্তার অভাব। সে কারণেই হয়তো দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীল দর্পণ’ The Indigo Planting Mirror নাটকের অনুবাদে মাইকেল মধুসূদনের নাম নেই। এটাকে কি জালিয়াতি বলা যাবে? ইসলামের ধর্মগ্রন্থ কোরান ও এর লেখক মুহাম্মদের, যুক্তি ও প্রমাণ নির্ভর শ্রেষ্ট সমালোচকদের মধ্যে ‘Why I Am Not a Muslim’ বইয়ের লেখক ইবনে ওয়ারাক ( ছদ্মনাম) অন্যতম। স্বনামে হয়তো তিনি এতোকিছু লিখতে পারতেন না যা লিখে গেছেন।
নিজের নামটাই যেখানে নেই সেখানে প্রতিষ্ঠিত হবেন কে? স্বীকৃতি প্রাপ্তির বাসনা যেখানে নেই সেখানে সার্টিফিকেট গ্রহণ করবে কে? রাজমুকুট গ্রহণ করার তো কেউ নেই।
খুব একটা কিছু করা যাবে বলে তো মনে হয়না। আপনি প্রদীপ দেব যে আসল প্রদীপ দেব, এর আগে কোনদিন আপনার আর অন্য কোন নাম ছিলনা তা আমি বুঝবো কী ভাবে? প্রথম যে নামে রেজিষ্টারি করেছেন সেই নাম, আই পি এড্রেস ব্যস এর বেশী তো আর পেছনে যাওয়া যাবেনা। আমি যদি আমার মেয়ের কম্পিউটার থেকে তার নামে লেখালেখি করি, তার নামেই মন্তব্য করি তখন কী হবে? আমার নিজের কথাটাই বলি। অনেকে, বিশেষ করে সদালাপীরা মনে করেন, আমি প্রথম যখন মুক্তমনায় লেখালেখি শুরু করি তখন অন্য একটি নামে লিখতাম, সেটাই আমার আসল ও একমাত্র নাম। অভিজিত দা ভাল করেই জানেন, আই পি এড্রেসে অন্য আরেকটি নাম ছিল এবং সকল ই-মেইল যোগাযোগ ঐ নামে হতো। তাহলে নাম দাঁড়ালো তিনটা। মেট্রিকের সার্টিফিকেটে ও পাসপোর্টে একটা, মা-বাবার দেয়া গ্রামে পরিচিত একটা আর আমার গলা পিপাসু জিহাদী মাতাল কিছু মানুষের ছুরি-চাকুতে শান দেয়া দেখে আখেরাতে দোজখের আগুনে পুড়ার জন্যে একটা। লেখালেখির সাথে এই নামের চাওয়া পাওয়ার কিছুই নাই। একুশে বই মেলায় একজন ছদ্মনামে লেখকের বই প্রকাশ হলে তার নিজের আনন্দিত হওয়ার কী বা আছে? সে তো আর তার বইয়ে অটোগ্রাফ দিতে পারবেনা।
জীব বিজ্ঞান আর পদার্থ বিজ্ঞান দিয়ে আল্লাহকে নাই করে দিন কোন অসুবিধে নাই কিন্তু মুহাম্মদের সমালোচনায় মুখ খোললে আগে কাফন রেডি করে রাখতে হবে। সকল মানুষের তো আর রুশদী, তাসলিমা, হুমায়ুন আযাদ হওয়ার সাহস বুকে নাই, কিন্তু দ্বিমত ব্যক্ত করার আকুতিটাই তাকে বাধ্য করে ছদ্মনামে হলেও তা লিখে প্রকাশ করার।
তবে হ্যাঁ, অন্যান্য ব্লগে ডেইলি বেইসে নিক বদল করে যে নোংরামি চলে, নিজের লেখায় ভিন্ন ভিন্ন নিকে নিজেই মন্তব্য করে, শুধুমাত্র একে অন্যকে গালাগালি, অপমান করার উদ্দেশ্যে তা অবশ্যই অন্যায় এবং তা রোধ করা জরুরী।
@আকাশ মালিক,
অনেক পুরোনো একটা পদ্যের কথা মনে পড়ে গেলো। অংশ বিশেষ তুলে দিলাম এখানে।
নন্দ একদা হঠাৎ একটা কাগজ করিল বাহির-
গালি দিয়া সব গদ্যে-পদ্যে বিদ্যা করিল জাহির।
পড়িল ধন্য , দেশের জন্য নন্দ খাটিয়া খুন-
লেখে যত তার দ্বিগুণ ঘুমায়, খায় তার দশগুণ।
খাইতে ধরিল লুচি আর ছোঁকা, সন্দেশ থাল-থাল –
তখন সকলে কহিল, “বাহবা, বাহবা, নন্দলাল।
নন্দ একদা কাগজেতে এক সাহেবকে দেয় গালি;
সাহেব আসিয়া গলাটি তাহার টিপিয়া ধরিল খালি;
নন্দ বলিল, ‘আ-হা-হা! কর কি, কর কি! ছাড় না ছাই,
কি হবে দেশের, গলাটিপুনিতে আমি যদি মারা যাই?
বলো কি’ বিঘৎ নাকে দিব খত যা বলো করিব তাহা।’
তখন সকলে বলিল – ‘বাহবা বাহবা বাহবা বাহা!’
নন্দ বাড়ীর হত না বাহির , কোথা কী ঘটে কি জানি,
চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি।
নৌকা ফি-সন ডুবিছে ভীষণ, রেলে কলিশন হয়,
হাঁটিলে সর্প, কুক্কুর আর গাড়ি চাপা পড়া ভয়।
তাই শুয়ে শুয়ে কষ্টে বাঁচিয়া রহিল নন্দলাল-
সকলে বলিল, “ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক চির কাল
@ফরিদ আহমেদ,
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘নন্দলাল’ পদ্যটি ছোটবেলায় পড়েছিলাম। পদ্যের প্রথম অংশটুকু এখানে-
নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ –
স্বদেশের তরে, যা করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন।
সকলে বলিল, ‘আ-হা-হা কর কি, কর কি, নন্দলাল?’
নন্দ বলিল, ‘বসিয়া বসিয়া রহিব কি চিরকাল?
আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ?’
তখন সকলে বলিল- ‘বাহবা বাহবা বাহবা বেশ।’
নন্দর ভাই কলেরায় মরে, দেখিবে তারে কেবা!
সকলে বলিল, ‘যাও না নন্দ, করো না ভায়ের সেবা’
নন্দ বলিল, ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই-
না হয় দিলাম, -কিন্তু অভাগা দেশের হইবে কি?
বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারিদিক’
তখন সকলে বলিল- ‘হাঁ হাঁ হাঁ, তা বটে, তা বটে, ঠিক।’
তবে এখানে উল্লেখের প্রাসঙ্গীকতা ধরতে পারিনি, কারণ বোঝতে পারিনি ‘নন্দলাল’ কে বা কারা?
@আকাশ মালিক,
পৃথিবীতে শুধু মুহাম্মদভক্তরাই থাকে না, অন্য লোকও থাকে। এবং তাদের সংখ্যা মুহাম্মদভক্তদের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। কাজেই, যতখানি এটাকে অনিরাপদ ভাবছেন, ততখানি অনিরাপদ এটি আসলে নয়। বাংলাদেশ বা মুসলিম বিশ্বের বাইরে থাকলেতো নিরাপত্তা সংক্রান্ত প্রশ্ন তোলাটাই উচিত না। ইসলাম, মুহাম্মদের সমালোচনা করে বহু লোকই দিব্যি বহাল তবিয়তে বেঁচে বর্তে আছে। কাজেই, কাফন রেডি রাখতে হবে, এই অহেতুক ভয়ে না ভুগলেও চলবে।
ছদ্মনামে লেখার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যে, এই কথাগুলো যিনি লিখছেন, বাস্তবজীবনে আদৌ তিনি এগুলোকে নিজের মধ্যে ধারণ করেন কিনা সেটা নিয়ে আস্থাহীনতা তৈরি হবার একটা সুযোগ তৈরি হয়ে যায়। ইসলামকে ধুয়ে দেওয়া ব্যক্তি হয়তো বাস্তব জীবনে কোন মসজিদের ইমাম, বালক-বালিকাদের কোরান পড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিংবা সমাজে ধার্মিক ব্যক্তি হিসাবে থেকে সম্মানজনক এবং গ্রহণযোগ্য দিন কাটাচ্ছেন। নিয়মিত মসজিদে যান, নামাজ-রোজা করেন, বউ, বাচ্চা-কাচ্চাদের ইসলামের ফজিলত বর্ণনা করেন। আর রাতের বেলা সবাই ঘুমোলে কম্পিউটারের সামনে আসল পরিচয়ের জামা খুলে ক্যাবার্ডে লুকিয়ে রাখা ছদ্ম পরিচয়ের পোশাকটা গায়ে চাপান। সারাদিন ধার্মিক সেজে থাকার রাগ-ক্ষোভ-ঘৃণা উগরে দেন অন্তর্জালে।
আপনারা যাঁরা অনেকদিন ধরে ছদ্মনামে লিখছেন, তাঁরা আমাদের কাছে শুধু একটা বায়বীয় নাম ছাড়া আর কিছুই নন। এটা খুব একটা সম্মানজনক কোনো বিষয় নয় আপনাদের জন্য। আপনারা দ্বিমত ব্যক্ত করার মনের আঁকুতিতে ভুগবেন, অথচ নিজেদেরকে সামনে আনা থেকে বিরত থাকবেন, এটাতো হয় না। আপনাদের লেখালেখি থেকে অনেক ছেলে-মেয়েই ধর্ম থেকে মুক্ত হচ্ছে, যুক্তিবাদী হচ্ছে। কিন্তু অনন্ত বা সাইফুলের মত সাহসী কেউ হচ্ছে না। তারাও আপনাদের মতই নিরাপত্তাহীনতার ধুয়ো তুলে পরিচয়হীনতার আড়ালেই লুকোতে ব্যস্ত। এতে করে অন্তর্জালে আমরা অসংখ্য যুক্তিবাদী নাস্তিক দেখছি ইদানিং, কিন্তু একই সাথে মসজিদের জমায়েতও দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতরই হচ্ছে। এর চেয়ে আগেই (আশি এবং নব্বই এর দশকে) বরং রাস্তা-ঘাটে, হাটে-মাঠে অনেক বেশি নাস্তিক দেখেছি। কাউকে ভয় পেয়ে পরিচয় লুকোতে দেখি নি তখন।
ছদ্মনাম ঝেড়ে ফেলুন, আসল নামে আত্মপ্রকাশ করুন। দেখবেন এই ভূমণ্ডল অতো ভয়ংকর কিছু নয়। ভয় পেলেই ভয়, না পেলেই কিছু নয়। নন্দ হয়ে নব্বই বছর বাঁচার চেয়ে, বীর হয়ে বাইশ বছর বাঁচাটাও অনেক বেশি বরণীয় এবং স্মরণীয়।
প্রথম সংস্করণ হাতে পাবার পর বানান ভুলের পরিমান দেখে বই মেলা চলাকালীন সময়েই একবার প্রুফ দেখা হয়েছিলো। পরে আরও দুইবার। দ্বিতীয় সংস্করণ এসে এই লজ্জার পরিমান অনেক কমেছে। বইয়ের মধ্যে বানান ভুল আসলে কিছুতেই মেনে নেওয়া যায়না।
চমৎকার একটা লেখার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। যদিও বইটা ছাপানোর আগে আমি ব্যক্তিগতভাবে ভেবেছিলাম কোনোদিন এই বিশাল এবং আঁতেলীয় বই কেউ পড়বেনা। এই ভাবনার পিছনে অবশ্য সামিয়াই দায়ী। ও ঘুমের ওষুধ হিসেবে এখনও এই বইটা ব্যবহার করে 😀
গত বছরের জুলাই মাসে শুদ্ধস্বরে প্রকাশক আহমেদুর রশীদ টুটুলের সাথে দেখা হয়েছিল, অবিশ্বাসের দর্শন – এর প্রথম সংস্করণ ততদিনে নিঃশেষ। হতাশ হয়ে ফিরে এসছিলাম বইটা পাই নি বলে। দ্বিতীয় সংস্করণটা যে করেই হোক যোগাড় করতে হবে। প্রদীপকে ধন্যবাদ দারুণ একটা রিভিউ-এর জন্য।
@ইরতিশাদ ভাই,
বই পাওয়ার জন্য এই লিংকটা দেখতে পারেন।
ধন্যবাদ জানাচ্ছি প্রদীপ দেবকে আমাদের বইটি নিয়ে চমৎকার একটি রিভিউ লেখার জন্য। ইনফ্যাক্ট আমার মনে হয় বইটার চেয়ে মনে হয় প্রদীপের রিভিউই বেশি ভালো হয়েছে।
আমার ধারণা প্রদীপ বইটির প্রথম সংস্করণটির উপর ভিত্তি করে তার রিভিউটি করেছেন। যে বানান বিভ্রাটগুলোর উদাহরণ তিনি দিয়েছেন, তার সবগুলো না হলেও অধিকাংশই ২য় সংস্করণে ঠিক করে ফেলা হয়েছে। আমি যদি জানতাম প্রদীপ এ বইটির রিভিউ করবেন, তাহলে আমি গাঁটের পয়সা খরচ করে তাকে দ্বিতীয় সংস্করণ পাঠাতাম। উনার রিভিউ দেখলেই আমি আনন্দিত হই, কিন্তু নিজের বইয়ের রিভিউ প্রদীপ দেবের হাতে হলে বিরাট ভয়ে থাকি। আমার ভয় যে অমূলক ছিলো না, তা এই চমৎকার এবং নির্মোহ রিভিউটিই জলজ্যান্ত প্রমাণা!
@অভিজিৎ,
বইটি যখন কিনি তখনো দ্বিতীয় সংস্করণ বের হয়নি। তাছাড়া শুধুমাত্র বানানের কারণে বইটার বক্তব্যে কোন ধরণের ব্যাখাত ঘটেনি। তাই আমি আলোচনায় বানান-বিভ্রাটগুলো উল্লেখ করেছি শুধুমাত্র পরের সংস্করণে কাজে লাগবে ভেবে।
অভিজিৎ ও রায়হান যে কত বড় একটা কাজ করেছেন তা তাঁরা নিজেরা হয়তো স্বীকার করতে চাইবেন না তাঁদের অতিরিক্ত বিনয়ের কারণে। কিন্তু এটা সত্য যে ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ পড়ে আমি যে আনন্দ পেয়েছি তা প্রবীর ঘোষ পড়েও পাইনি।
@প্রদীপ দেব,
কিন্তু এটা সত্য যে ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ পড়ে আমি যে আনন্দ পেয়েছি তা প্রবীর ঘোষ পড়েও পাইনি।
সম্পূর্ণ এক মত ,
@অভিজিৎ, ১০০% সহমত (Y)
প্রদীপ দেবের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতাটাই আলাদা। চমৎকার রিভিউ।
আচ্ছা নীচ শব্দ কি বিবর্তনের ধারায় নিচ হলো? রবীন্দ্রনাথের অনেক লেখায় তো দেখি নীচ লেখা আছে। আর ইতোমধ্যে বানান কি ইতিমধ্যে হবেনা? বাদুড় বানানটা তো ঠিকই আছে মনে হয়।
@আকাশ মালিক,
নীচ শব্দটি এখন তুচ্ছার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর নিচ ব্যবহৃত হচ্ছে অবস্থান বোঝাতে – যেমন উপর নিচ ইত্যাদি।
ইতোমধ্যে বা ইতিমধ্যে দুটোই সঠিক।
বাদুড় ঠিকই আছে, কিন্তু বাদুড়েরা – বাদুরেরা হয়ে গেছে বইতে।
@প্রদীপ দেব,
খুব খুব ভালো লাগল আপনার পুস্তক প্রতিক্রিয়া। এই বইটা ২১১ সালেই বইমেলায় আমই পাই মুক্তমনার মামুন ভাই আমাকে উপহার দিয়েছিলেন।
(Y)
পুস্তক পাঠ প্রতিক্রিয়ায় প্রদীপ দেবের অবস্থান পয়লা। :clap
@ফরিদ ভাই, আপনার উদারতার তুলনা নেই।