পাঠ প্রতিক্রিয়া

অবিশ্বাসের দর্শন
অভিজিৎ রায় ও রায়হান আবীর
প্রথম প্রকাশঃ ২০১১
প্রকাশকঃ শুদ্ধস্বর, ঢাকা, বাংলাদেশ
পৃষ্ঠাসংখ্যাঃ ৩১১
মূল্যঃ ৫০০ টাকা


অভিজিৎ রায় ও রায়হান আবীরের ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ প্রকাশিত হয়েছে গত বছরের একুশে বইমেলায়। কিন্তু আমার হাতে এসেছে তার এক বছর পরে। লেখাগুলোর বেশিরভাগই মুক্তমনা ব্লগে পড়েছিলাম আগে। কিন্তু ব্লগ আর বইয়ের মধ্যে পার্থক্য অনেক। বইয়ের তুলনায় ব্লগ অনেকটাই তাৎক্ষণিক। ব্লগে সংস্কার চলতে পারে খুব দ্রুত – কিন্তু বই অনেকটাই স্থায়ী। একবার প্রকাশিত হয়ে গেলে পরের সংস্করণের আগে কোন কিছুর পরিবর্তন সম্ভব নয় বইয়ের ক্ষেত্রে। তাই স্বাভাবিকভাবেই জানা ছিল যে “অবিশ্বাসের দর্শন” ব্লগে প্রকাশিত প্রবন্ধগুলোর নিছক সংকলন নয়। বইটা পড়তে পড়তে লক্ষ্য করলাম সত্যিই তাই – লেখকদ্বয় অনেক যত্ন করে পান্ডুলিপি তৈরি করেছেন। বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। আমার আলোচনা প্রথম সংস্করণকে ঘিরেই।

পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ প্রচলিত ব্যবস্থার সাথে নিজেকে খাপখাইয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু খুব সামান্য সংখ্যক কিছু ব্যতিক্রমী মানুষ আছেন যাঁরা পৃথিবীটাকেই বদলে ফেলার চেষ্টা করেন। দিনের পর দিন নিরলস সংগ্রাম চেষ্টা পরিশ্রম অধ্যবসায় দিয়ে পৃথিবীটাকে একটু একটু করে ঠিকই বদলে ফেলেন এই ব্যতিক্রমী মানুষেরা। অথচ তার সুফল ভোগ করেন সবাই যাদের মধ্যে তাঁরাও আছেন যাঁরা ক’দিন আগেও এ পরিবর্তনের ঘোর বিরোধীতা করেছিলেন। ধর্মবাদীদের সাথে মুক্তমনাদের পার্থক্য এখানেই যে ধর্মবাদীরা বড় বেশি বিভাজনপটু। ধর্মবাদীরা তাঁদের নিজস্ব ধর্মের অনুশাসনগুলোর প্রতি কেউ প্রশ্ন তুললেই সেটাকে ব্যক্তিগত শত্রুতার পর্যায়ে নিয়ে যেতেও দ্বিধা করেন না অনেক সময়। বৈজ্ঞানিক-দার্শনিক যুক্তিতে টিকে থাকতে না পারলে পেশীশক্তি ব্যবহার করেন ধর্মবাদীরা। মধ্যযুগে ধর্মের প্রসার ঘটেছে তলোয়ারের আস্ফালনে, বর্তমানেও ধর্মবাদীদের মূল অস্ত্র আর যাই হোক – যুক্তি নয়। অথচ সারা পৃথিবীতে একজনও যুক্তিবাদী মুক্তমনা পাওয়া যাবে না যিনি যুক্তির বদলে শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করার পক্ষপাতী। যুক্তির শক্তি যে কত প্রবল তা আরো একবার বুঝতে পারলাম অভিজিৎ রায় ও রায়হান আবীরের ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ পড়তে পড়তে।

অনেক বছর আগে প্রথমবার প্রবীর ঘোষের ‘অলৌকিক নয় লৌকিক’ পড়ে মনে হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে যুক্তিবাদী আন্দোলন যেভাবে গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে – বাংলাদেশে হয়তো কখনোই সম্ভব হবে না সেরকম কোন আন্দোলন। এরকম ঋণাত্মক চিন্তার পেছনে যেসব যুক্তি কাজ করেছিলো তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছিল ব্যক্তিগতভাবে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার শিকার হওয়ার একাধিক ঘটনা। মার্ক্‌স লেনিন নিয়ে জমাট যুক্তিতক্কে ঝড় তুলতে পারা ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের মধ্যেও দেখেছি ব্যক্তিগত ধর্মের গায়ে সামান্য আঘাত লাগলেই কেমন যেন ফুঁসে উঠে। যুক্তির সোপানগুলো ধাপে ধাপে পার হতে গিয়ে যেই সৃষ্টিকর্তার প্রসঙ্গ আসে তখনই যুক্তিগুলো হঠাৎ থেমে গিয়ে কতগুলো অন্ধবিশ্বাস এসে বসে যায় যুক্তির জায়গায়। ধর্মীয় ভিন্নমতের অসহিষ্ণুতা এত প্রকট যেদেশে বুঝতে পারছিলাম না কীভাবে সেখানে ঈশ্বরবিহীন মৌলিক দর্শনের চর্চা সম্ভব। আসলে বদলে দেয়ার স্বপ্ন দেখার জন্য যে সাহস লাগে তা আমার ছিল না। কিন্তু মুক্তমনার সাথে পরিচয়ের পর আমার সে ঋণাত্মক ধারণা ক্রমশ বদলে যেতে শুরু করে। ঝকঝকে নতুন চিন্তার একদল যুক্তিবাদী মানুষ একটা প্লাটফরমে এসে তর্ক করছেন, বিজ্ঞান চর্চা করছেন, রচনা করছেন আগামী দিনের দর্শন যার ভিত্তি কোন অলৌকিক অন্ধ সংস্কার নয়, বরং আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাম্প্রতিকতম তত্ত্ব ও তথ্য; এসব দেখে যে কোন যুক্তিবাদী মনই উজ্জীবিত হয়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। মুক্তমনা ব্লগের সাথে যাঁদেরই পরিচয় হয়েছে তাঁরাই কোন না কোন ভাবে উজ্জ্বীবিত হয়েছেন। প্রগতিশীল মননতো বটেই – রক্ষণশীল গোঁড়া মননও বাধ্য হয়েছেন চিন্তার গোঁড়ায় নতুন করে সার-জল দিতে।

বাংলাদেশে মুক্তমনা আন্দোলনে তুমুল হাওয়া লেগেছে ধরতে গেলে যাঁদের লেখার মধ্য দিয়ে তাঁদের অন্যতম ড. অভিজিৎ রায়। মুক্তমনায় তাঁর লেখা যাঁরা পড়েছেন তারাই মুগ্ধ হয়েছেন। কাঠমোল্লারাও স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন যে যুক্তি প্রয়োগে ও যুক্তি খন্ডনে অভিজিৎ রায়ের জুড়ি নেই। বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান রচনায় অভিজিৎ রায় ইতোমধ্যেই তাঁর স্বকীয়তার উজ্জ্বল ছাপ রেখেছেন “আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী”, “মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে”, “সমকামিতা- একটি বৈজ্ঞানিক ও সমাজ-মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ”, “ভালবাসা কারে কয়” প্রভৃতি বইতে। এবার অভিজিৎ রায়ের সাথে যুক্ত হয়েছেন আরেকজন তরুণ মুক্তমনা রায়হান আবীর যিনি ইতোমধ্যেই বাংলা ব্লগে নিজের জায়গা করে নিয়েছেন যৌক্তিক প্রতিভার স্বকীয়তায়। এঁদের দুজনের যৌথ প্রয়াস “অবিশ্বাসের দর্শন”।

একদম একটানা একনিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মত বই নয় ‘অবিশ্বাসের দর্শন’। যদি তাই হতো তাহলে এর আবেদন এতটা গভীর হতো না, এটা হয়ে পড়তো শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের উপন্যাসের মতো। ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ আধুনিক বৈজ্ঞানিক দর্শনের বই যা পড়তে পড়তে থামতে হয়, ভাবতে হয়, উপলব্ধি করতে হয় এবং মাঝে মাঝে নিজের সাথে কিছুটা বোঝাপড়াও করে নিতে হয়। কারণ ঠিকমত উপলব্ধি করতে পারলে এ’বই নাড়িয়ে দিতে সক্ষম আমাদের আজন্ম লালিত কুসংস্কার ও ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত। তাই যেমন এর নামকরণ হয়েছে ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ তেমনি লেখকদের কথামতো ‘অবিশ্বাসের বিজ্ঞান’ বা ‘প্রান্তিক বিজ্ঞান’ও হতে পারতো (পৃঃ ৯, ভূমিকা)। যে অবিশ্বাসের কথা বলা হচ্ছে তা প্রথাগত ঈশ্বরে অবিশ্বাস, অলৌকিকত্বে অবিশ্বাস, গোঁজামিলে ভর্তি ধর্মগ্রন্থে অবিশ্বাস, কিন্তু বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণে বিশ্বাস, কঠিন ও বাস্তব ইহলৌকিক জীবনের ওপর সুদৃঢ় বিশ্বাস এবং একটা সুন্দর প্রগতিশীল সমাজ গঠনের গভীর আত্মবিশ্বাস।

নয়টি অধ্যায়ে বিভক্ত তিন শতাধিক পৃষ্ঠার বই ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ এর প্রথম অধ্যায় ‘বিজ্ঞান এর গান’। ‘বিজ্ঞান কি অতিপ্রাকৃত বিষয় নিয়ে অভিমত দিতে অক্ষম?’, ‘বিজ্ঞানও কি বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত?’, ‘আমরা কি আমাদের মনকে বিশ্বাস করতে পারি?’ ‘বিজ্ঞান ও ধর্ম কি সাংঘর্ষিক নয়?’, ‘বিজ্ঞান কি ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব মিথ্যা প্রমাণ করতে সক্ষম?’ ইত্যাদি সর্বজনীন মৌলিক প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে এ অধ্যায়ে। লেখকদ্বয় আধুনিক বিজ্ঞানের দর্শন প্রয়োগে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে থ্রি-ও (অমনিসায়েন্ট, অমনিবেনেভোলেন্ট, অমনিপোটেন্ট) মার্কা গড বা সর্বজ্ঞ-পরম করুণাময়-সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আসলে একটা অসম্ভব হাঁসজারু কিংবা বকচ্ছপ জাতীয় কল্পনা। ধর্মীয় সংগঠনগুলো শত শত কোটি ডলার খরচ করে ধর্মকে বিজ্ঞানের মোড়কে পরিবেশনের যে চেষ্টা করছেন সে প্রসঙ্গও তথ্য-প্রমাণ সহ উঠে এসেছে এ অধ্যায়ে।

ধর্মীয় ঈশ্বরে বিশ্বাসীরা যুক্তির সহজ পাঠ ঠিক ততদূর পর্যন্ত মেনে চলেন যতদূর পর্যন্ত গেলে তাঁদের প্রচলিত ঈশ্বর নিরাপদ থাকেন। উদাহরণ দেয়া যেতে পারে এভাবে- মাধ্যাকর্ষণ বল সম্পর্কে ধারণা আছে যাদের তাঁদের যদি প্রশ্ন করা হয়- কোন কিছু উপরে ছুড়ে দিলে তা নিচে নেমে আসে কেন? তাঁরা ঠিকই উত্তর দেবেন – মাধ্যাকর্ষণের কারণে। তাঁরা কিন্তু কিছুতেই বলবেন না যে “আল্লাহ্‌র হুকুমে” বা “ঈশ্বরের ইচ্ছায়”। ম্যালেরিয়া কেন হয়? তার উত্তরেও মানুষ ঈশ্বরকে টেনে আনেন না। আসলে বিজ্ঞান বা ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্কে অজ্ঞানতা যেখান থেকে শুরু – ঐশ্বরিক দর্শনও খেলা দেখাতে শুরু করে সেখান থেকে। ৪১ পৃষ্ঠায় আঁকা কার্টুনটি মাত্র কয়েকটি রেখার টানেই দেখাতে সক্ষম হয়েছে স্বাভাবিক যুক্তি আর ধর্মীয় যুক্তির মধ্যে পার্থক্য কোথায়। অজ্ঞানতার কারণে অলৌকিক অসারতায় বিশ্বাস ক্ষতিকর বটে, তবে জ্ঞানের আলোয় সে ক্ষতি পুষিয়ে দেয়া সম্ভব যদি জ্ঞানের ফলে অবসান ঘটে অলৌকিকত্বের। কিন্তু প্রচন্ড ক্ষতি হয় তখন যখন মানুষ বিজ্ঞানের জ্ঞানকে গায়ের জোরে অস্বীকার করতে চায়, ধর্মের নেশায় বুঁদ হয়ে অলৌকিক ঈশ্বরের মহিমা প্রচার করতে গিয়ে বিজ্ঞানের সাধারণ সূত্রকেও মানতে চায় না।

নতুন দিনের নাস্তিক বিজ্ঞানীদের বিভিন্ন বই ও গবেষণাপত্র থেকে উদ্ধ্বৃতি নিঃসন্দেহে সমৃদ্ধ করেছে এ অধ্যায়ের আলোচনা। তবে ২২ পৃষ্ঠায় ভিক্টর স্টেঙ্গরের যে কথাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে একই কথা আবার ২৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে ইংরেজিতে। ‘অক্কামের ক্ষুর’ অনুসরণ করে এই দ্বিরুক্তি এড়ানো যেতো।

সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী মাত্রেই সৃষ্টিতত্ত্বে বিশ্বাসী; বিবর্তনে তাঁদের কোন বিশ্বাস নেই। বিবর্তন মিথ্যা প্রমাণ করতে না পেরে- ‘এটা নিছক তত্ত্ব’ জাতীয় কথার পালেও বাতাস লাগছে না দেখে ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন আমদানি করতে সচেষ্ট হয়েছে সৃষ্টিবাদীরা। তাঁদের যুক্তি হিসেবে বহু ব্যবহারে জীর্ণ হয়ে গেছে প্যালের ঘড়ি (কিংবা হুমায়ূন আহমেদের নিকন ক্যামেরা), হয়েলের বোয়িং ৭৪৭, বিহের হ্রাস অযোগ্য জটিলতা ইত্যাদি। বিবর্তনের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ সহ ইন্টেলিজেন্ট ডিজাইন যে মোটেও ইন্টেলিজেন্ট নয় তা সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে বইয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় অধ্যায়ে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে প্রাসঙ্গিক ভাবেই এসেছে চোখের বিবর্তনের সচিত্র বিবরণ। মাইকেল বিহে’র ইঁদুর মারা কল যাঁদের কাছে হ্রাস অযোগ্য জটিল বস্তু – তাঁরা হতাশ হবেন এই দেখে যে ইঁদুর মারা কলের উদাহরণ যুক্তির বৈঠকে কল্কে পাওয়ার যোগ্যতা হারিয়েছে।

মানুষের শরীরের মন্দ নকশা’র চিত্র যা ২০০১ সালে সায়েন্টিফিক আমেরিকানে প্রকাশিত হয়েছিল তা এখানে যথোপযুক্তভাবে ব্যবহৃত হয়েছে (পৃঃ৭২-৭৩)। মন্দ নকশা কীভাবে সংশোধন করা যায় তাও দেয়া আছে। কিন্তু তথাকথিত ঈশ্বরের তো সাধ্য নেই তা প্রয়োগ করার! প্রসঙ্গক্রমে এসেছে নুহের নৌকার কথা। এ সংক্রান্ত আজগুবি বন্যার কথা অনেকেই বিশ্বাস করেন – এটাই আশ্চর্যের। নুহের নৌকা ও মহাপ্লাবন সংক্রান্ত মিথের জন্ম খ্রিস্টের জন্মেরও ২৮০০ বছর আগের। সুমুরিয়ান পুরাণে এরকম ঘটনার উল্লেখ আছে (পৃঃ৭৯)। পরে এটা বিবর্তিত হয়ে বাইবেলে স্থান পেয়েছে। সেখান থেকে আরেক বিবর্তনে কোরানে। এই যে গল্প থেকে গল্পের বিবর্তন – সেখানেও নাকি ঈশ্বরের হাত আছে। আচ্ছা কেউ কি জানে ঈশ্বরের জন্ম কখন?

দ্বিতীয় অধ্যায়ে সামান্য কিছু দুর্বলতা চোখে পড়েছে আমার। এ অধ্যায়টা ব্লগ থেকে বইয়ের জন্য সম্পাদনা করার সময় লেখক তাঁর সহ-লেখকের কথা ভুলে গিয়েছিলেন বলেই অধ্যায়ের বিভিন্ন জায়গায় “আমার খুবই প্রিয়” (পৃঃ ৬০), “আমার এক বন্ধুকে” (পৃঃ ৬৬), “আমার তত্ত্বাবধায়ক স্যার”, “আমাকে দায়িত্ব দিলেন”, “আমি মোটামুটি” (পৃঃ৬৮) ইত্যাদি এক বচন উত্তম পুরুষ ব্যবহৃত হয়েছে। লেখকের লেখার স্টাইলের সাথে যাঁরা পরিচিত তাঁরা হয়তো বুঝতে পারবেন অধ্যায়টা কার রচনা – কিন্তু যৌথ লেখায় যেহেতু কোন্‌অধ্যায় কার রচনা তা উল্লেখ করা হয়নি – ‘আমি’র বদলে ‘আমরা’ হলে বেশি গ্রহণযোগ্য হতো। ৬০ পৃষ্ঠায় ছক্কার উদাহরণ দেয়া হয়েছে – কিন্তু বলা হয়েছে কার্ডের উদাহরণ। ৮৪ পৃষ্ঠায় ইলেকট্রনের ডাবল স্পাইরাল প্যাটার্ন তৈরি করার জন্য যে পরীক্ষার বর্ণনা দেয়া হয়েছে তা খুব একটা পরিষ্কার নয়। বলা হচ্ছে “প্রথমে আমরা একটা ইলেকট্রন নেই (নিই)”। শুধুমাত্র একটা ইলেকট্রন আলাদা ভাবে নেয়া খুব সহজ নয়। “এবার একে একটা টেবিলে স্থাপন করি” – ইলেকট্রন! টেবিলে স্থাপন!! কীভাবে? তারপর বলা হচ্ছে ইলেকট্রনকে কেন্দ্র করে একটা বৃত্ত আঁকতে। পরীক্ষাটাকে একটু সহজভাবে বাস্তবসম্মতভাবে উপস্থাপন করা জরুরি। নয়তো ধর্মবাদীরা এটাকে নিয়েই ফেনাবে।

হয়েলের বোয়িং ৭৪৭ ফ্যালাসি ব্যাখ্যা করা হয়েছে তৃতীয় অধ্যায়ে। প্রসঙ্গক্রমে সরল চোখ থেকে জটিল চোখের বিবর্তনের বর্ণনা এসেছে। বর্ণিত হয়েছে অজৈব যৌগ থেকে জৈব যৌগের উৎপত্তির বিভিন্ন ধাপ। অভিজিৎ রায় ও ফরিদ আহমেদের ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’ বইতে আরো বিস্তারিত আছে এ প্রসঙ্গ। বিবর্তনের প্রাকৃতিক নির্বাচন ও বিক্ষিপ্ত মিউটেশনের বর্ণনায় বানরের শেক্‌সপিয়ারের হ্যামলেট টাইপ করার উদাহরণটি খুবই চমকপ্রদ। অধ্যায়ের শুরুতে ফ্রেডরিক হয়েলের এত বড় একটা ছবি ছাপিয়ে হয়েলকে কি একটু বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়ে গেলো না?

শুরুতে? – এই সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছে চতুর্থ অধ্যায়। খুব কম কথায় সহজ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে মহাবিশ্বের উৎপত্তির কথা। অলৌকিকত্ব ছাড়াই কীভাবে পদার্থের উৎপত্তি, ভরের উৎপত্তি, শক্তির উৎপত্তি। বিগব্যাং এর মাধ্যমে মহাবিশ্বের সূচনার পর কীভাবে বেড়ে চলেছে এর এনট্রপির পরিমাণ- কীভাবে বেড়ে চলেছে মহাবিশ্বের আয়তন প্রাকৃতিক পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মেই- খুবই টানটান প্রাঞ্জল বর্ণনা। মহাবিশ্বের উৎপত্তির জন্য যে কোন অদৃশ্য সৃষ্টিকর্তার আদৌ প্রয়োজন নেই তা এ অধ্যায়টি পড়লেই প্রতীয়মান হবে।

ভাববাদী দার্শনিকদের চিন্তার একটা বিরাট অংশ জুড়ে থাকে ‘আত্মা’। কত রকমের ব্যাখ্যা-অপব্যাখ্যা যে আছে আত্মাকে ঘিরে। বাংলা ভাষায় অনেক শব্দ ও শব্দাংশ প্রচলিত আছে ‘আত্মা’কে নিয়ে। মানুষ মরলেও আত্মা নাকি মরে না। মৃত্যুর পর আত্মার শান্তির জন্য কত রকমের অনুষ্ঠানের অনুশাসন প্রচলিত। অবিশ্বাসের দর্শনের পঞ্চম অধ্যায় “আত্মা নিয়ে ইতং বিতং” এক কথায় প্রচলিত আত্মার মৃত্যুবাণ। আত্মা সংক্রান্ত কোন মানসিক ঝামেলায় পড়লে “আত্মা নিয়ে ইতং বিতং” পড়ে নিন, ঝামেলা কেটে যাবে। (তবে ‘ইতং বিতং’ শব্দের অর্থ কী আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না, আমি বলতে পারবো না। ‘আত্মা’ শব্দটি যদি মেনে নিতে পারেন, ‘ইতং বিতং’ এ সমস্যা হবার কথা নয়।) মৃত্যু ও মৃত্যুর সংজ্ঞা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয়েছে এ অধ্যায়ে। আত্মার অসারতা, আত্মার নানারকম গল্প, বিজ্ঞানের চোখে আত্মা ও অমরত্ব, আত্মা নিয়ে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার সন্নিবেশে প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে এ অধ্যায়। এ অধ্যায়ে ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’ বই থেকে বেশ কয়েক পৃষ্ঠা (পৃঃ ১৪ – ২০) হুবহু উদ্ধৃত হয়েছে প্রাসঙ্গিক ভাবেই। এ অধ্যায়ের শেষাংশে মৃত্যুর পর চোখ সহ দেহের অন্যান্য অংশ বা পুরো দেহটিই মেডিকেল কলেজে দান করার আহ্বানটি খুবই দরকারি এবং মানবিক অর্থবহ। দেশের বাইরে (আমার জানামতে অস্ট্রেলিয়ায়) আত্মায় বিশ্বাসীরাও দেহ বা প্রত্যঙ্গ দান করার অঙ্গীকার করেন। মেডিকেল কলেজে তিন বছর ধরে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও ব্যবচ্ছেদের পর দেহগুলো যার যার পরিবারের কাছে স্থানান্তর করার ব্যবস্থা থাকে যদি পরিবার চায়।

পৃথিবীর বেশিরভাগ আস্তিক মানুষের ধর্ম উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত। জন্মসূত্রে যে ধর্ম কাঁধের ওপর চেপে বসে তার ইমেজ রক্ষা করার দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নেন ধর্মপরায়ন মানুষ। নিজের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার জন্য নানারকম ছলচাতুরি করতেও বাধে না তাদের। বিজ্ঞানের ব্যাপক প্রসার ও প্রযুক্তির সহজ লভ্যতার কারণে ধর্মের ঐশ্বরিক আবেদন এখন ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু। উন্নত বিশ্বে তো বটেই – উন্নয়নশীল দেশেও এখন মোবাইল ফোন ফেস-বুকের ব্যবহার মন্দির-মসজিদ-গির্জার ব্যবহারের চেয়ে অনেক বেশি। এ অবস্থায় ধর্মবাদীরা ঐশ্বরিক কিতাবে বিজ্ঞান খুঁজে পাবার দাবি করছেন। ব্যাপারটা হাস্যকর, কিন্তু বিপজ্জনকও বটে। কারণ এদের দলে কিছু কিছু শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানীও দেখা যায় মাঝে মাঝে। পারলৌকিক প্রাপ্তির লোভ তো বটেই – ইহলৌকিক নগদ প্রাপ্তিও তাদের কম নয়। তাই এখন নাকি কোরানে ‘বিগ-ব্যাং’ এর আয়াত পাওয়া যাচ্ছে। বেদও পিছিয়ে নেই – সেখানেও বিগ-বিগব্যাং হাজির মৃণাল দাসগুপ্ত নামক বিজ্ঞানীদের কল্যাণে। যে রামায়ণের হনুমান সূর্যকে বগলের নিচে রেখে দিতে পারে- সেখানেও হয়তো ক’দিন পরে বিজ্ঞান খুঁজে পাওয়া যাবে। কোরান টেম্পারিং করে নাইন্টিনের ‘মিরাকল’ ঘটিয়ে ফেলছেন রাশাদ খলিফা ও তাঁর ধ্বজাধারীরা। এসব বিজ্ঞানময় কিতাবের মুখোশ খুলে দিয়েছেন অভিজিৎ রায়হান অবিশ্বাসের দর্শনের ষষ্ঠ অধ্যায়ে।

দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অরাজকতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে শুরু করে নৈতিকতার সব রকমের অবক্ষয় ঘটেছে যেসব দেশে – সেসব দেশে আশ্চর্যজনক ভাবে ধর্মের ব্যবহার অনেক বেশি। তার মানে কী দাঁড়ালো? ধর্মের সাথে নৈতিকতার সম্পর্ক যদি থাকে তা কীরকম? স্বাভাবিক সরল যুক্তিতে তো বলতে হয় ধর্ম নৈতিকতার বিপ্রতীপ। কিন্তু আসলে তা নয়। নৈতিকতা আসলে ধর্ম নিরপেক্ষ- অর্থাৎ নৈতিকতার সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। সপ্তম অধ্যায় “ধর্মীয় নৈতিকতা”য় লেখকদ্বয় বিভিন্ন ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থ এবং তাদের অনুসারীদের আচার-আচরণ ব্যাখ্যা করে বাস্তব উদাহরণ ও উপাত্তের সাহায্যে দেখিয়েছেন কীভাবে ‘ধর্ম-মুক্ত’ দেশে নৈতিকতার উৎকর্ষ ঘটেছে। কীভাবে মানুষ ধর্মহীন হয়েও কতটা সুখে আছে। নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন ওয়াইনবার্গের উদ্ধৃতি এখানে সার্থকভাবে প্রযোজ্যঃ “ধর্ম মানবতার জন্য এক নির্মম পরিহাস। ধর্ম মানুক বা নাই মানুক, সবসময়ই এমন অবস্থা থাকবে যে ভাল মানুষেরা ভাল কাজ করছে, আর খারাপ মানুষেরা খারাপ কাজ করছে। কিন্তু ভাল মানুষকে দিয়ে খারাপ কাজ করানোর ক্ষেত্রে ধর্মের জুড়ি নেই” (পৃঃ ১৯৮)।

শারীরিক অসুখের ভাইরাসের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানীদের নিরলস সংগ্রাম চলছে। কিন্তু ধর্মীয় বিশ্বাসের যে ভাইরাস সমাজে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে আছে – এবং পরিকল্পিতভাবে নিয়মিত ছড়ানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে যে পরিমাণ আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার তা কি গড়ে উঠছে? ধর্মীয় বিশ্বাসের ভাইরাসে কত মানুষের প্রাণ গেছে তার একটা ক্ষুদ্র তালিকা দেয়া হয়েছে ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ অধ্যায়ে (পৃঃ ২৩৭-২৪৫)। বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা, আফগানিস্তানে তালেবানি কাজ-কারবার, টুইন টাওয়ার ধ্বংস করে এতগুলো মানুষ মেরে ফেলা, ইরাক যুদ্ধ – সবই ধর্মীয় ভাইরাসের পরোক্ষ প্রভাব। সাথে অবশ্য বাস্তব অর্থনৈতিক ব্যাপারও আছে। যে আত্মঘাতী বোমারুরা শরীরে বোমা বেঁধে আল্লাহ্‌র নামে শহীদ হবার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ছেন – তাঁরা তার বিনিময়ে নিজের পরিবারের সারাজীবনের ভরণপোষণ ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাচ্ছেন। তা না হলে শুধুমাত্র বিশ্বাসের ভাইরাসের শক্তি হয়তো ততটা হতো না। কিন্তু এই ভাইরাস যে ভীষণ শক্তিশালী তা অনস্বীকার্য। ২৫৮ পৃষ্ঠার গ্রাফটা সরাসরি প্রমাণ করে দিচ্ছে যে ধর্মীয় প্রভাব-মুক্ত দেশের বেশিরভাগেরই জিডিপি ধর্মীয় ভাইরাসে আক্রান্ত দেশগুলোর চেয়ে বেশি। বাংলাদেশ, নাইজার, ইয়েমেনের মত দেশে শতকরা ৯৯ জন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ধর্মের প্রভাব সবচেয়ে বেশি। অথচ এসব দেশে দারিদ্র্য মানুষের ধর্মের মতই নিত্যসঙ্গী (পৃঃ২৫৬)। বুদ্ধিমত্তার দিক থেকেও উদারপন্থীরা রক্ষণশীলদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। ২৫২ পৃষ্ঠার চিত্রদুটো তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ। তবে এটাও ঠিক যে ধর্মে বিশ্বাসীরা বেশ অলসও বটে। একটা দুটো ধর্মীয় পুস্তক আঁকড়ে ধরে বিশ্বজয় করার স্বপ্ন দেখে তারা – কুতর্ক করে একই যুক্তি বারবার দেয় একই বই থেকে। অথচ অবিশ্বাসীদের তিন শতাধিক রেফারেন্স বই ও গবেষণাপত্র আত্মস্থ করে ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ লিখতে হয়। সারা প্যালিন বা ক্রিস্টিন ওডেনেলের চেয়ে রিচার্ড ডকিন্স বা বিল মার যে অনেক বেশি স্মার্ট তা তো সবাই স্বীকার করবেন। ২৫৪ পৃষ্ঠায় এই চারজনের ছবি দেয়া হয়েছে। তবে কোন্‌জন কে তা ক্যাপশানে লিখে দিলে সুবিধে হতো।

নতুন দিনের নাস্তিকতাই যে আগামীদিনের ভাইরাসমুক্ত সমাজ গঠন করবে তা দৃঢ় যুক্তিতে ব্যক্ত করেছেন অভিজিৎ রায়হান তাঁদের বইয়ের শেষ অধ্যায়ে। বিশ্বাসের দীনতা, বিশ্বাসের উদ্ভব, ধর্মের কুফল, ধর্ম-নিরপেক্ষতা, ধর্মহীন সমাজ প্রসঙ্গে প্রাণবন্ত আলোচনা করেছেন লেখকদ্বয়। ধর্মহীন সমাজের উদাহরণ হিসেবে ডেনমার্কের সামাজিক প্রসঙ্গ এসেছে। সমাজবিজ্ঞানী ফিল জাকারম্যান ডেনমার্কে চৌদ্দমাস থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন এদেশের মানুষের সামাজিক জীবনযাপন। ধর্মহীন এ সমাজ প্রায় অপরাধহীন। ইউরোপের পাশাপাশি দেশ জার্মানি, ইতালি বা ফ্রান্সের দিকে তাকালেও ব্যাপারটা চোখে পড়বে। আমি নিজে মিউনিখে দেখেছি ট্রেন স্টেশনে কোন টিকেট-চেকার নেই, এমন কি কোন দরজাও নেই স্টেশনে ঢোকার মুখে। অথচ রোমে গিয়ে দেখলাম ডাবল-গেট দিয়ে ঠেকাতে হচ্ছে বিনা-টিকেটের যাত্রীদের। ভ্যাটিকানের এত কাছেই নৈতিকতার এত বড় বিপর্যয়!

বইয়ের ছাপা ও বাঁধাই চমৎকার। সামিয়া হোসেনের প্রচ্ছদ খুবই প্রাণবন্ত। বইতে ব্যবহৃত চিত্রগুলোর পরিস্ফুটন খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু সারা বইতে একটা চিত্রেরও নম্বর দেয়া হয়নি। ফলে মাঝে মাঝে বর্ণনার সাথে চিত্র মিলিয়ে নিতে কষ্ট হয়। যেমন চতুর্থ অধ্যায়ের পৃঃ১২০ ও পৃঃ১২১ এ চিত্র-২ ও চিত্র-১ এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু চিত্রে নম্বর না থাকাতে কোন্‌চিত্রের কথা বোঝানো হচ্ছে তা পরিষ্কার হয়নি। তাছাড়া ওই পৃষ্ঠাগুলোতে মাত্র একটি চিত্রই আছে। এ বইয়ের যদি কোন বড় দুর্বলতা থাকে তা হলো বানান বিভ্রাট। অনেকগুলো ভুল বানান চোখে পড়েছে – তার একটা তালিকা নিচে দেয়া হলো। ৩৭১ পৃষ্ঠার অফসেট বোর্ড বাঁধাই বইয়ের দাম পাঁচশ’ টাকা রাখার যুক্তি হয়তো আছে, তবে দাম আর একটু কম রাখা গেলে ভালো হতো।

বাংলাদেশে মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও মুক্তমনার আত্মপ্রকাশ নিয়ে আলোচনা এই বই থেকে আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। বিশ্বাসের ভাইরাস আমাদের যেভাবে আতঙ্কিত করে – আগামীদিনের বিশ্বাস-মুক্তদের পদধ্বনি তেমনি আমাদের আশান্বিত করে। মুক্তমনার সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়ছে, ক্রমশ প্রসারিত হচ্ছে আমাদের মুক্তচিন্তার ক্ষেত্র, সমৃদ্ধ ও শানিত হচ্ছে আমাদের যুক্তিবোধ। এই উত্তরণের পথে একটা বিরাট মাইলফলক হয়ে থাকবে “অবিশ্বাসের দর্শন”। সেজন্য অভিজিৎ রায় ও রায়হান আবীরের প্রতি সকল মুক্তমনার পক্ষ থেকে জানাচ্ছি কৃতজ্ঞতা।