আগেই স্বীকার করে নিচ্ছি, আমি কোন পদার্থবিদ নই, মূলতঃ শখের বিজ্ঞান লেখক। বিজ্ঞানের প্রান্তিক বিষয় নিয়ে আমার আগ্রহ অনেকদিনের। ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ সহ কিছু ছাইপাঁশ বইপত্র লেখার কারণেই হোক, আর ব্লগে বিজ্ঞান আর দর্শনের অন্তিম রহস্য নিয়ে লেখালিখি করার অপচেষ্টার কারণেই হোক, সম্প্রতি সার্নের একটি পরীক্ষায় আলোর চেয়ে বেশি বেগে গতিশীল কণার ভ্রমণ সংক্রান্ত খবরটি মিডিয়ায় আলোড়ন তোলার পর আমাকে অনেকেই অনুরোধ করেছিলেন এই বিষয়টি নিয়ে লিখতে। বন্যার সার্জারি সহ ব্যক্তিগত কিছু ঝুট ঝামেলার কারণে তখন এ নিয়ে লেখার সময় পাইনি। এর বাইরে আরও একটি বড় ব্যাপারও ছিল আমার নীরবতার কারণ। যেখানে পৃথিবীর ঝানু ঝানু পদার্থবিজ্ঞানীরাই এ নিয়ে দ্বিধা দ্বন্দ্ব আর অনিশ্চয়তায় ভুগছেন, সেখানে আমার মত একজন শখের বিজ্ঞান লেখকের অভিমত কতটা উপযোগিতা দিবে, সেটাও ছিল একটি প্রশ্ন। তারপরেও এখন মনে হচ্ছে এ নিয়ে লেখাটা জরুরী, অন্ততঃ এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের অভিমতগুলো বাঙালি পাঠকেরা যদি জানতে পারেন, তাতেই বা মন্দ কী। এ ভাবনা থেকেই লেখাটির সূচনা। তবে এ নিয়ে আমার আগের সাবধান বাণী থাকছেই। ব্লগে অনেক হাতে কলমে কাজ করা পদার্থবিদ আছেন যারা এ বিষয়ে আমার চেয়ে ভাল ধারনা রাখেন। আমার তথ্যে কিংবা উপস্থাপনায় কোন ভুলভ্রান্তি থাকলে তারা সংশোধন করে দেবেন বলে আশা করছি। আমার লেখাটি কেবল আলোচনার সূচনা, আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের যোগান মন্তব্য থেকে আশা করছি।
:line:
বিজ্ঞানে কোন কিছুই স্থির নয়। সেজন্যই বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের একটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে -এটিতে ভুল প্রমাণের সুযোগ থাকতে হবে, যেটাকে আমরা বলি ‘বাতিল-যোগ্যতা’ বা ফলসিফায়াবিলিটি। সোজা কথায়, ‘scientific theories must be falsifiable’, না হলে সেটি তত্ত্ব হয়ে উঠে না[1]। নতুন নতুন পর্যবেক্ষণলব্ধ জ্ঞানের সাপেক্ষে বিজ্ঞানের পুরনো তত্ত্ব বাতিল কিংবা বদলে ফেলার দৃষ্টান্ত বিজ্ঞানে আছে বহু। পরীক্ষা নিরীক্ষা পর্যবেক্ষণের সাথে মেলেনি বলেই টলেমির ভূ-কেন্দ্রিক তত্ত্ব বাতিল হয়ে গিয়েছিলো, কোপার্নিকাস আর গ্যালিলিওর পর্যবেক্ষণের ধাক্কায়। অতীতে ভূকেন্দ্রিক তত্ত্ব,ফ্লোগিস্টন তত্ত্ব, ইথার তত্ত্ব, ল্যামার্কের তত্ত্ব, প্যাঞ্জিয়াম তত্ত্ব, আলো চলাচলের জন্য নিউটনের কর্পাস্কুলার তত্ত্ব সবই একসময় ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আমরা পেরেছি পুরাতনকে বর্জন করে নতুন ‘আলোকেরই ঝর্ণাধারায়’ নিজেদের সিক্ত করতে। সেজন্যই কিন্তু বিজ্ঞান ‘ডায়নামিক’, ধর্ম কিংবা ডগমার মত স্থবির কিছু নয়। বিজ্ঞানে কোন কিছুই পাথরে খোদাই করে লেখা হয়নি, লেখা হয় না। বিজ্ঞানে ‘হিরো’ আছে, কিন্তু নেই কোন প্রফেট বা পয়গম্বর। আর এই হিরোদের অবদান নিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ হয় বিজ্ঞানের জগতে – তা তিনি নিউটনই হোন, ডারউইনই হোন কিংবা হোননা তিনি জগদ্বিখ্যাত প্রতিভা আলবার্ট আইনস্টাইন।
কিন্তু তারপরেও বিজ্ঞানের কিছু কিছু তত্ত্ব পর্যবেক্ষণ দিয়ে এতোটাই সমর্থিত হয়ে উঠে যে, সেই তত্ত্বের উপর আস্থা প্রকাশ করে যান বিজ্ঞানীরা অনেকটাই নির্ভয়ে। এমনি একটি আস্থা ছিল আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব এর থেকে পাওয়া অনুসিদ্ধান্তগুলোকে ঘিরে। ১৯০৫ সালের পর থেকে একটি ব্যাপারে পদার্থবিদরা নিশ্চিত ছিলেন -আলোর গতি এক সেকেণ্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল (বা ২৯৯,৭৯২,৪৫৮ মিটার), আর আলোর চেয়ে বেশি বেগে কোন পদার্থের পক্ষে ভ্রমণ করা সম্ভব নয়। আলোর চেয়ে বেশি বেগে কারো পক্ষে ভ্রমণ করা সম্ভব না – এটি বিজ্ঞানীদের কাছে আস্থার প্রতীক, হয়ে উঠেছিলো অনেকটা আগামীকাল পূর্বদিকে সূর্য ওঠার মতোই ধ্রুব সত্য। অবশ্য এই ধরনের আস্থার কারণও সহজেই বোধগম্য। আমাদের আধুনিক টেকনোলজি – জিপিএস, ট্রাঞ্জিস্টর, কম্পিউটার, ইন্টারনেট সহ যে অবদানগুলোর প্রতি নির্ভয়ে অহর্নিশি আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি – সেগুলো আইনস্টাইনের তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই নির্মিত। তার চেয়েও বড় কথা সার্নের এই ফলাফলের আগে কোন পরীক্ষালব্ধ ফলাফলই আইনস্টাইনের তত্ত্বকে কখনো প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারেনি। আইনস্টাইন তার তত্ত্ব দেবার পর আক্ষরিক অর্থেই অন্ততঃ হাজার খানেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে তার তত্ত্বকে ঘিরে। প্রতিবারই এটি অতি সফলভাবে বাধা বিপত্তি আর সংশয়ের দেওয়ালকে অতিক্রম করতে পেরেছে[2]।
আমাদের গাড়ির কিংবা আইফোনের জিপিএস সিস্টেমের কথাই ধরা যাক। এই জিপিএস সিস্টেমের বদৌলতে পৃথিবীতে আমাদের অবস্থান এমনকি কয়েক ফুটের পরিসীমায়ও আমরা এখন সূক্ষ্মভাবে বলে দিতে সক্ষম। অথচ জিপিএস ঠিকমতো কাজই করতো না যদি না আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা থেকে পাওয়া ‘সংশোধনীগুলো’ গোনায় না নেওয়া হত। আমাদের মতো আমজনতার কথা না হয় বাদ দেই, আমেরিকার পেন্টাগনের জেনারেলদেরও নাকি এখন পদার্থবিদদের কাছ থেকে প্রতিনিয়ত ‘আপেক্ষিকতার সবক’ নিতে হচ্ছে, কারণ শত্রুদের অবস্থান স্যাটেলাইট কিংবা জিপিএসের মাধ্যমে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানার জন্য এ ছাড়া গতি নেই[3]। তারা বুঝতে পেরেছে বেগ বাড়ার সাথে সাথে পৃথিবীর উপরে অবস্থিত জিপিএস এর ঘড়ির সময় বদলে যায় খাপে খাপ মতো আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের গণনা অনুসরণ করে।
কাজেই আইনস্টাইনকে বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডল থেকে হটানো ‘মামার হাতের মোয়া’ টাইপের কোন সহজ ব্যাপার নয়। তারপরেও, আইনস্টাইনকে ভুল প্রমাণ করার প্রচেষ্টা অতীতে বৈজ্ঞানিকভাবে যেমন হয়েছে, ঠিক তেমনি হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়েও। আইনস্টাইন আপেক্ষিক তত্ত্ব প্রদান করার পর, ব্যাপারটা ‘মার্ক্সিজমের সাথে সংগতিপূর্ণ’ মনে না করায় ‘সোভিয়েত এনসাইক্লোপিডিয়া’ প্রকাশ করা হয় রিলেটিভিটিকে ‘নস্যাৎ’ করে। রাশিয়ার একজন বিখ্যাত মার্ক্সবাদী দার্শনিক তার তখনকার লেখায় বলেছিলেন[4] – ‘‘Einstein’s theory of relativity cannot be considered accepted since it was not accepted by the proletariats’’. আবার অন্যদিকে নাৎসি জার্মানি থেকে আইনস্টাইনের সমালোচনা করে একটি বই প্রকাশ করা হয়েছিলো ১৯৩০ সালে ‘একশ জন বিশেষজ্ঞের আপেক্ষিকতাকে অস্বীকার’ (100 Authorities Denounce Relativity) শিরোনামে। আইনস্টাইন সেটা জানতে পেরে বলেছিলেন, কোন তত্ত্ব ভুল প্রমাণ করতে একশ জন বিশেষজ্ঞের অভিমত’ লাগে না, কেবল একটিমাত্র পরীক্ষালব্ধ প্রমাণই কিন্তু যথেষ্ট[5]।
বলা বাহুল্য, আইনস্টাইন কথিত এ ধরণের পরীক্ষালব্ধ প্রমাণের হদিস কখনোই পাওয়া যায়নি। উমম্ … যায়নি বললাম বটে, তবে সঠিকভাবে বললে বলা উচিৎ – যায়নি , কেবলমাত্র অতি সাম্প্রতিক সময়ের একটি পরীক্ষা ছাড়া। সুইজারল্যাণ্ডের জগদ্বিখ্যাত সার্ণ ল্যাবে তাদের নিউট্রিনো উৎপাদক যন্ত্র দিয়ে বিজ্ঞানীরা নানা ধরণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন। এর মধ্যে একটি প্রজেক্টের নাম ছিল “অপেরা” [OPERA (Oscillating Project with Emulsion-tRacking Apparatus)]। সেই প্রজেক্টের বিজ্ঞানীরা সেখানে তাদের যন্ত্রের মাধ্যমে নিউট্রিনো (এগুলো এক অদ্ভুতরে কণা যারা সবচেয়ে বেশী ঘনত্বের বস্তুকেও অবলীলায় ভেদ করে যেতে পারে) প্রক্ষিপ্ত করছিলেন। এই প্রজেক্টের আরেকটি অংশ ছিল আবার ইটালিতে। সেখানে মাটির প্রায় ১৪০০ মিটার গভীরে গ্রান সাসো ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে বসে আরেকদল বিজ্ঞানী সার্ণ থেকে ছুঁড়ে দেয়া নিউট্রিনো বিমগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টায় ছিলেন। প্রায় ৭৩০ কিলোমিটার (প্রায় ৪৫৪ মাইল) পথ পাড়ি দিয়ে ইতালিতে পৌঁছুনো প্রায় ১৫০০০ নিউট্রিনোগুলোকে তাদের সংবেদনশীল ডিটেক্টর যন্ত্র দিয়ে মেপে দেখলেন সেগুলো আলোর চেয়ে তাড়াতাড়ি এসে পৌঁছুচ্ছে। কিন্তু কতটা তাড়াতাড়ি? সে প্রায় আলোর গতির তুলনায় ৬০ ন্যানো-সেকেন্ড মানে এক সেকেণ্ডের ৬০ বিলিয়ন ভাগের একভাগ কম সময়ে।
হু…এক সেকেণ্ডের ৬০ বিলিয়ন ভাগের একভাগ সময়! এটা একটা বিষয় হল? এই সময় কম লাগলো না বেশি লাগলো তা নিয়ে আমাদের মত ছা-পোষা মানুষদের হয়তো কিছু যায় আসে না, কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানীদের আক্ষরিক অর্থেই মাথায় বাজ পড়ার উপক্রম হল এই খবরটা পেয়ে। কারণ খবরটা সত্য হলে, মানে কোন কণা আলোর চেয়ে একচুল বেশি বেগে গেলে আইনস্টাইনের তত্ত্বের মূল ভিত্তিটাই ধ্বসে পড়ে! আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্ব অনুযায়ী, আপনার বেগ যত বাড়তে থাকবে, তত আপনার জন্য সময় ‘ধীরে’ চলবে, আপনার ভর বাড়তে থাকবে, আর দৈর্ঘ্য সঙ্কুচিত হতে থাকবে (বলা নিষ্প্রয়োজন যে, প্রতিটি অনুসিদ্ধান্তই কিন্তু ল্যাবে পরীক্ষা করে যাচাই করা হয়েছে)। এখন আপনার বেগ যদি আলোর বেগকে অতিক্রম করে যায়, মানে আপনি আলোর চেয়ে বেশি বেগে ভ্রমণ করতে থাকলে নানা ধরণের অস্বাভাবিক ব্যাপার স্যাপার ঘটতে থাকবে। আপনার জন্য সময়ের চাকা সামনে না চলে পেছনের দিকে চলতে থাকবে, আপনার ভর অসীমতার স্তর পার হয়ে, হয়ে যাবে কাল্পনিক, এবং আপনার দৈর্ঘ্য হয়ে যাবে ঋণাত্মক। সামগ্রিকভাবে এ ব্যাপারগুলো যুক্তি বহির্ভূত কেবল নয়, হাস্যকরও। সেজন্যই আইনস্টাইনের যৌক্তিক সিদ্ধান্ত ছিল কোন বস্তুকণার পক্ষেই আলোর গতিবেগকে অতিক্রম করা সম্ভব নয়।
এই ফলাফলে সার্নের বিজ্ঞানীরা এতোটাই অবাক হয়েছিলেন যে, তারা প্রায় ছয় মাস ধরে বারবার নিজেদের পরীক্ষার ভুল বের করার চেষ্টা করেছেন। কেননা, তারা জানতেন যে, এই ফলাফল প্রকাশ পেলে অপদস্থ হবার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু বার বার করে সবকিছু দেখে শুনেও কোন ভুল না পেয়ে অবশেষে তাঁরা এই ফলাফল প্রকাশ করে দেন[6], [7]। কিন্তু তারা তাদের গবেষণাপত্রে এই ফলাফলের কোন ব্যাখ্যা দেননি। তাদের পাওয়া ফলাফল কেবল তারা সততার সাথে বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলে পেশ করেছেন, এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীদের পরীক্ষাটি পুনর্বার করার আহবান জানিয়েছেন। তারা মনে করেছেন বিজ্ঞানীদের সমবেত প্রচেষ্টাই ভবিষ্যতে এই অস্বাভাবিকতার একটি বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা প্রদান করতে সমর্থ হবে। এ প্রসঙ্গে শোনা যাক প্রকল্পের সাথে যুক্ত প্রোফেসর এন্টনিয়ো এরিডিটাটোর বক্তব্য –
httpv://www.youtube.com/watch?v=HS2wE6hkbPY
সম্প্রতি সার্নের ২য় আরেকটি পরীক্ষাতেও একই ফলাফল পাওয়া গেছে[8]। এই অবিশ্বাস্য ফলাফল প্রকাশের পর সাধারণ মিডিয়ায় তো বটেই এমনকি খ্যাতিমান বিজ্ঞানীদের মধ্যেও নানাদিক থেকে নানা রকম সাড়া পরে গেল সাথে সাথেই। কেউ কেউ মহা উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন। কারণ এর মাধ্যমে পদার্থবিজ্ঞানের নতুন দ্বার উন্মোচনের আভাস মিললো, আর নতুন দ্বার উন্মোচন মানেই নতুন নতুন গবেষকদের জন্য নোবেল প্রাইজ প্রাপ্তির সম্ভাবনা। আরেকদল বিজ্ঞানীদের মধ্যে আবার বয়ে গেল ভয়ের শীতল স্রোত। কারণ গবেষণার ফলাফল সত্য হলে পুরো পদার্থবিজ্ঞানের ভিত্তিটাই নতুন করে সাজাতে হবে তা হলে। প্রতিটি পাঠ্যপুস্তক নতুন করে লিখতে হবে। প্রতিটি পরীক্ষণ নতুন করে রি-ক্যালিব্রেট করতে হবে।
শুধু যন্ত্রপাতি নয়, পুরো মহাবিশ্বের চেহারাটাই যাবে আমূল বদলে। পৃথিবী থেকে নক্ষত্ররাজি আর নিহারিকার দূরত্ব থেকে শুরু করে মহাবিশ্বের বয়স (যা আমরা ১৩.৭ বিলিয়ন বলে জানি) পর্যন্ত সব কিছুই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে পড়বে। এমনকি মহাবিশ্বের প্রসারণ, মহা বিস্ফোরণ, কৃষ্ণগহবর সহ সবকিছুই নতুনভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে, করতে হবে পুনঃ পরীক্ষণ।
নানা সমস্যা হবে নিউক্লিয়-পদার্থবিদদের জন্যও, কারণ তাদের অর্জিত এতোদিনকার জ্ঞান হয়ে পড়বে অপাংক্তেয়। এখন একজন স্কুলের বাচ্চাও আইনস্টাইনের সেই বিখ্যাত সমীকরণটির কথা জানে – E=mc2। তারা জানে সামান্য পরিমাণ ভর থেকে কী বিপুল শক্তি আহরণ করা যায়। কারণ এখানে c বা আলোর বেগের বর্গ করলে যে বিশাল সংখ্যাটা পাওয়া যায় সেটার সাথেই প্রদত্ত ভরকে গুন করতে হয়। এখন আলোর বেগ যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে তবে, পুরো নিউক্লিয় পদার্থবিজ্ঞানই ঢেলে সাজাতে হবে। পারমানবিক অস্ত্র, পারমানবিক চিকিৎসা, রেডিও অ্যাকটিভ ডেটিং – সব কিছুই থয়ে যাবে প্রশ্নের সম্মুখীন। কারণ নিউক্লিয়ার রিয়েক্টরের মধ্যে ঘটা সকল রাসায়নিক বিক্রিয়াই মূলতঃ আইনস্টাইনের ভর শক্তির এই বিখ্যাত সমীকরণের উপর প্রবলভাবে নির্ভরশীল। এপ্রসঙ্গে বিখ্যাত পদার্থবিদ মিচিও কাকুর উদ্ধৃতি এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য[9] –
‘ … এতকিছুও যদি আপনার কাছে খারাপ বলে না মনে হয়, তবে শুনে রাখুন – এর মানে দাঁড়াবে পদার্থবিজ্ঞানের মূলনীতিগুলোই সংকটাপন্ন। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান দুটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে – একটি হল আপেক্ষিকতা অন্যটি হল কোয়ান্টাম বলবিদ্যা। কাজেই পদার্থবিজ্ঞানের অর্ধেকটাই নতুন ধারণা দিয়ে বদলাতে হবে। আমার নিজের ক্ষেত্র – স্ট্রিং তত্ত্বও এর ব্যতিক্রম নয়। ব্যক্তিগতভাবে আমার নিজেরই সমস্ত তত্ত্বকে পরিসংশোধন করতে হবে, কেননা স্ট্রিং-তত্ত্ব একদম শুরু থেকেই আপেক্ষিকতার উপর নির্ভর করে রচিত।’
মিচিও কাকুর নিজস্ব অভিমত হল, সার্নের এই ফলাফল আসলে একটি ‘ফলস অ্যালার্ম’। এই প্রকল্পের সাথে যুক্ত বিজ্ঞানীদের পরীক্ষার মধ্যে কোথাও না কোথাও কিছু ত্রুটি লুকিয়ে আছে, যা সাদা চোখে ধরা পড়ছে না। সামনের পরীক্ষায় পড়বে। একটি সেমিনারে তাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি যে জবাব দিয়েছিলেন তা হয়তো পাঠকদের আগ্রহ জাগাবে –
httpv://www.youtube.com/watch?v=fyWbNNnn7-Y
একই ধরণের সংশয়ী মনোভাব ব্যক্ত করেছেন নোবেল বিজয়ী প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিভেন ওয়েইনবার্গ, মার্টিন রিস এবং লরেন্স ক্রাউস সহ অনেক বিজ্ঞানীই। তাদের মন্তব্য প্রকাশিত হয়েছে সায়েন্টিফিক আমেরিকান ম্যাগাজিনে[10] (অনলাইনে তা পড়া যাবে এখান থেকে)। যেমন, অ্যারিজোনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী লরেন্স ক্রাউস গবেষণার ফলাফল নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে খুব স্পষ্টভাবেই বলেন –
‘এটা আসলে লজ্জাজনক। কোন পরীক্ষার ফলাফল ব্যাখ্যা ছাড়া কোন গবেষণা-নিবন্ধ দাখিল করা অযৌক্তিক কিছু নয়, কিন্তু এমন একটি ফলাফলের উপর প্রেস-কনফারেন্স করা – যেটা ভুল হবার সম্ভাবনাই আসলে বেশি, এমনকি পেপারটি কোথাও রেফার করার আগেই – খুবই দুর্ভাগ্যজনক – শুধু সার্নের জন্যই নয়, বিজ্ঞানের জন্যও। ভুল প্রমাণিত হলে সবাই তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়। নিউট্রিনো পরীক্ষা এমনিতেই খুব কঠিন। বিভাজনের সীমায় নিয়মানুগ ত্রুটি থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। অধিকন্তু, মনে হচ্ছে পরীক্ষাটি লোরেন্সের বিবর্তভেদমান (Lorentz invariance) কে লঙ্ঘন করে যা ‘হার্ট অব ফিজিক্স’ হিসেবে স্বীকৃত। কাজেই এই ফলাফলের প্রতি সংশয়বাদী হবার পেছনে যথেষ্ট কারণই আছে। সংশয়বাদী হবার পেছনে আর বড় একটি কারণ হচ্ছে ১৯৮৭ সালের সুপারনোভা (SN 1987A) থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের সাথে এর অসঙ্গতি…’
লরেন্স ক্রাউস অবশ্য ভুল কিছু বলেননি। আলোর বেগের চাইতে বেশী বেগ সম্পন্ন মানে ‘সুপারলুমিন্যাল নিউট্রিনো’ দেখবার ব্যাপারটি এর আগেও মিডিয়ায় এসেছিল। যেমন, ১৯৮৭ আলে সুপারনোভা পর্যবেক্ষণের সময় বিজ্ঞানীরা দেখেন নিউট্রিনোগুলো আলোর তিন ঘণ্টা আগে পৃথিবীতে এসে পৌঁছাচ্ছে। আলোক কণার আগে এসে পৌঁছানোর কারণে পর্যবেক্ষকদের অনেকে এগুলোকে প্রাথমিকভাবে ‘সুপারলুমিন্যাল নিউট্রিনো’ মনে করলেও পরবর্তীকালে সেই দাবী যে ভুল তা বোঝা গেছে। কারণ সুপারনোভার কার্যপ্রণালী ভালোভাবে অধ্যয়ন করে বিজ্ঞানীরা দেখেন, নিউট্রিনো প্রক্ষিপ্ত হয়েছিলো নক্ষত্রের অন্তঃস্থল বিধ্বস্ত হবার সাথে সাথেই। তার যাত্রাপথ শুরু হয়েছিলো আলোর কণা উদ্ভূত হবার তিন ঘণ্টা আগেই। যতক্ষণ না অভিঘাতী তরঙ্গ (shock wave) প্রত্যাঘাত করতে পেরেছিলো, ততক্ষণ আলোর কণা তৈরি হতে পারেনি। ‘সুপারলুমিন্যাল নিউট্রিনো’ হবার কারণে নয়, বরং আলোর কণা যাত্রা করার তিন ঘণ্টা আগে নিউট্রিনোগুলো যাত্রা করার কারণেই সেগুলো তিন ঘণ্টা আগে পৃথিবীতে এসে পৌঁছেছিলো। আরও বড় ব্যাপার হল, যদি সার্ণের এই ফলাফল সত্য হয়, তবে নিউট্রিনোর গতিবেগ আলোর চেয়ে প্রায় ৭.১৪গুন বেশি। এই মান ধরে হিসেব করলে ১৯৮৭ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি তারিখে সুপারনোভা যে নিউট্রিনোগুলোর দেখা পাওয়া গেছে সেগুলো পৃথিবীতে আসার কথা ছিল তার থেকে চার বছর আগে[11]। কিন্তু এ ধরনের কোন ঘটনাই ঘটেনি। চার বছর আগে (মানে ১৯৮২ সালের শেষ দিক থেকে শুরু করে ১৯৮৩ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত) কোন নিউট্রিনোই পাওয়া যায়নি।
অসঙ্গতি আছে আরও অনেক ক্ষেত্রেই। নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী সেলডন গ্ল্যাশো এবং এণ্ড্রু কোহেন তাদের একটি সাম্প্রতিক গবেষণাপত্রে দেখিয়েছেন, আলোর চেয়ে বেশি বেগে নিউট্রিনো ভ্রমণ করলে ‘চেরেনকভ এফেক্ট’ (vacuum Cherenkov effects)-এর কারণে সুপারলুমিন্যাল নিউট্রিনোগুলো ইলেকট্রন এবং পজিট্রন বিকিরণ করে শক্তি ক্ষয় করে ফেলার কথা। কিন্তু এমন কোন কিছুই সার্নের ফলাফলে পাওয়া যায়নি[12]। এই ব্যাপারটি সার্নের ফলাফলের প্রতি একটি শক্তিশালী চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তারপরেও কোন কোন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী আবার এই ঘটনার তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা হাজির করতে প্রয়াসী হয়েছেন। যেমন, লণ্ডনের কিংস কলেজের পদার্থবিদ গিয়াকোমো ক্যাক্কিয়াপাগ্লিয়া ধারনা করেন, নিউট্রিনোগুলো স্ট্রিং তত্ত্ব বর্ণিত অতিরিক্ত মাত্রার ফোঁকর গলে ডিটেক্টরে পৌঁছেছে, সেজন্যই সম্ভবতঃ নিউট্রিনোগুলোর কোন শক্তি-ক্ষয় ঘটেনি[13]।
কিন্তু এই সব অতিরিক্ত মাত্রা ফাত্রা এনে ব্যাখ্যা করার প্রয়াস দেখে অন্য বিজ্ঞানীরা আবার ভুরু কুঁচকেছেন। বিজ্ঞানী এবং জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক প্রয়াত কার্ল স্যাগান প্রায়ই বলতেন, ভং চং করলে হবে না – ‘অসাধারণ দাবী প্রতিষ্ঠার জন্য অসাধারণ প্রমাণ লাগবে’। অতিরিক্ত মাত্রার ফোঁকর গলে ডিটেক্টরে পৌঁছেছে বললেই তো হল না, এর পেছনে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে কই? বলা বাহুল্য, এমন কোন প্রমাণই কিন্তু পাওয়া যায়নি। তাই অধিকাংশ বিজ্ঞানীদের সন্দেহের তীর এখনো মূলতঃ সার্ণের পরীক্ষায় পাওয়া অস্বাভাবিক ফলাফলের দিকেই। আর পরীক্ষায় অসতর্কতার কারণে ভুল সিদ্ধান্তে যাওয়ার উদাহরণ কিন্তু আমাদের অল্প হলেও আছে। যেমন, ১৯৬০ সালে একদল পদার্থবিদ আলোক রশ্মির উপর মাধ্যাকর্ষণের ছোট খাট প্রভাব পরিমাপ করতে বসেছিলেন। তাদের একটি পরীক্ষার ফলাফলে পাওয়া গেল যে, আলোর বেগ পরিবর্তনশীল – দিন আর রাতে উঠা নামা করে! অনুসন্ধান কয়রে দেখা গেলো তাদের পরীক্ষণ-যন্ত্র যেহেতু ল্যাবের বাইরে স্থাপন করা হয়েছিলো, এর সেন্সর দিনের আলো এবং আনুষঙ্গিক তাপমাত্রা দিয়ে প্রভাবিত হয়েছিলো, তাই এই অস্বাভাবিক ফল। সার্নের পরীক্ষাতেও এই ধরণের অসতর্ক ভুল লুকিয়ে থাকতে পারে। সেটার সম্ভাবনাই বেশি।
জানা গেছে শিকাগোর বাইরে ফার্মি ল্যাবের বিজ্ঞানীরাও সার্ণ -গ্রান সাসো ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির এই ‘অপেরা পরীক্ষা’টি পুনরায় নিজেরা করবেন। এর ফলাফলও আমরা জানবো শিগগিরই। এভাবে আরও কয়েক দফা পুনঃ পরীক্ষণ চলবে, চলবে ক্রস-চেকিং। বিজ্ঞান এভাবেই কাজ করে। কিন্তু আসলেই যদি সার্ণের এই ‘অপেরা পরীক্ষায়’ যদি শেষ পর্যন্ত কোন ভুল না পাওয়া যায়? অর্থাৎ, সার্নের ফলাফল যদি সত্য হিসেবে বেরিয়ে আসে, তবে? তাহলেই যে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে তা নয়, অন্ততঃ অনেক বিজ্ঞানীই তা মনে করেন না। পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক ভিক্টর স্টেঙ্গর সম্প্রতি একটি কৌতূহলোদ্দীপক ব্যাখ্যা হাজির করেছেন –আইনস্টাইনের তত্ত্ব লঙ্ঘন না করেই কীভাবে পুরো ব্যাপারটির একটি যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব। ভিক্টর স্টেঙ্গর সংশয়বাদী পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে সুবিদিত এবং সম্প্রতি ‘গড দ্য ফেইল্ড হাইপোথিসিস’ সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় বইয়ের প্রণেতা। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে অধ্যাপক স্টেঙ্গর নিউট্রিনো নিয়ে প্রায় ত্রিশ বছর ধরে একাডেমিয়ায় কাজ করেছেন। কাজেই সার্নের এই নিউট্রিনো পরীক্ষার ব্যাপারে তার অভিমত অনেকের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ মনে হবে। এ বিষয়ে ভিক্টর স্টেঙ্গর যে প্রবন্ধটি লিখেছেন তা থেকে আমি দু চার কথা আলোচনায় আনব। তার প্রবন্ধটি হাফিংটন পোস্টের ব্লগে দেওয়া হয়েছে দুই ভাগে – প্রথম পর্বটি আছে এখানে এবং ২য়টি এখানে। অন্য অনেক বিজ্ঞানীদের মতো ভিক্টর স্টেঙ্গরও মনে করেন, সার্ণের এই পরীক্ষার মধ্যে কোথাও না কোথাও ঘাপলা আছে, এবং তা হয়ত সামনে বেরিয়ে আসবে, সেজন্যই তিনি প্রবন্ধটির প্রথমেই বলে নিয়েছেন –
‘পৃথিবী থেকে ১৬৮, ০০০ আলোকবর্ষ দূরে এক জায়গায় এক সুপারনোভা বিস্ফোরণের কথা আমরা জানি। এটাকে প্রথম পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিলো ১৯৮৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। দৃশ্যমান আলো পৃথিবীতে পৌঁছানোর তিন ঘণ্টা আগে বেশ কিছু সংখ্যক নিউট্রিনোর পৃথিবীতে পৌঁছুনোর ব্যাপারটি সনাক্ত করা হয়েছিল তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ভূ-গর্ভস্থ ডিটেক্টরের সাহায্যে সনাক্ত করা গিয়েছিল। সার্নের এই পরীক্ষার ফলাফল যদি সঠিক হয় তবে তাদের আসা উচিৎ ছিল ১৯৮২ সালে। কাজেই আমি যদি বাজি খেলতাম, তবে বলতাম এই প্রভাব একটা সময় পর চলে যেতে বাধ্য, কারণ এমন এক ভুল পরীক্ষাটির ভিতর লুকিয়ে আছে যা এখনো কারো চোখে পড়েনি।’
ভিক্টর স্টেঙ্গর তার প্রবন্ধটিতে আরো যা বলেছেন তা হল, আইনস্টাইনের তত্ত্ব আলোর চেয়ে বেশি বেগে চলমান কণার অস্তিত্ব কখনোই বাতিল করে দেয় না, বরং তাদের জন্যও এক ধরণের সীমা বেঁধে দেয় যে, তারা কখনোই আলোর সমান বা তার চেয়ে কম বেগে চলতে পারবে না। তাদের চলতে হবে আলোর চেয়ে বেশি বেগে সব সময়ই (অনেকটা নীচের ছবির মতো)। এধরণের কণার কোন বাস্তব অস্তিত্ব আবিষ্কৃত না হলেও গণিতের মাধ্যমে এ কণাকে প্রকাশ করা হয়েছে অনেক আগেই। এদের আমরা ট্যাকিয়ন নামে চিনি।
ভিক্টর স্টেঙ্গরের অভিমত অনুযায়ী, আলোর চেয়ে গতিসম্পন্ন কণার বাস্তব অস্তিত্ব থাকলে তা কার্য-কারণ বা ‘Cause and Effect’ এর উপর প্রভাব ফেলবে, আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার উপর নয়[14]। কার্য কারণের ব্যাপারটি আমাদের কাছে এতটাই স্বতঃসিদ্ধ বলে মনে হয় যে, আমরা এ নিয়ে কোন প্রশ্ন করি না। ভাবি যে, ব্যাপারটা হয়তো সব সময়ের জন্যই কিংবা সর্বত্রই একই রকমভাবে প্রযোজ্য। কিন্তু ব্যাপারটা তো তা নাও হতে পারে।
‘ব্যাপারটা যে সেরকম নাও হতে পারে’ – মানে, আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে প্রাপ্ত সিদ্ধান্তগুলোই সবসময় স্বতঃসিদ্ধ নাও হতে পারে – ঠিক এই অভিমতটাই প্রায় একশ বছর আগে যৌক্তিকভাবে উত্থাপন করেছিলেন দার্শনিক ডেভিড হিউম (১৭১১-১৭৭৬)। আমাদের অভিজ্ঞতার সাপেক্ষে কোন একটি ঘটনা ঘটার পূর্বে আরেকটি ঘটনা ঘটলে, তার মানে সব সময় এই নয় যে, প্রথম ঘটনাটি দ্বিতীয় ঘটনার কারণ। অন্ততঃ সব ক্ষেত্রে তা নয়।
রসায়নের জগতে আমরা এমন অনেক বিক্রিয়ার সাথেই পরিচিত যে বিক্রিয়াগুলোকে সামনে থেকে পেছনে চালানো যায়, কিংবা পেছন থেকে সামনে। দেখে বোঝার উপায় নেই কোনটা থেকে কোনটা ঘটছে। আমরা সেগুলোকে অভিহিত করি পরাবর্তী (Reversible) বিক্রিয়া বলে। যেমন, কার্বন পরমাণু আর অক্সিজেন অণু বিক্রিয়া করে আমরা কার্বন ডাই অক্সাইড এবং শক্তি পাই। উল্টোভাবে কার্বন ডাই অক্সাইডের সাথে শক্তি যোগ করেও আমরা কার্বন পরমাণু এবং অক্সিজেন অণু পেতে পারি।
এ ধরণের ব্যাপার শুধু রসায়নেই নয়, পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও সত্য হতে পারে। যেমন, প্রখ্যাত বিজ্ঞানী রিচার্ড ফেইনম্যান একবার বলেছিলেন, কোন এন্টি-ইলেকট্রন কণিকার (পজিট্রন) সময়ের সাথে সাথে সামনে অগ্রসর হওয়া আর কোন ইলেকট্রনের সময়ের বিপরীত দিকে চলার মাঝে কারো পক্ষে পার্থক্য করা অসম্ভব ব্যাপারই হবে।
এবারে মূল বিষয়ে আসা যাক। ধরা যাক উপরের ছবিতে কোন পার্থিব বস্তু কণা পয়েন্ট A থেকে পয়েন্ট B এর দিকে যাচ্ছে। যাত্রাপথটিকে লাল দিয়ে দেখানো হয়েছে। আর ট্যাকিয়নের গতিপথকে দেখানো হয়েছে সবুজ দিয়ে। লাল দাগের বাঁ দিকে ট্যাকিয়ন যতক্ষণ থাকবে, ততক্ষণ সে বস্তুটিকে A থেকে B এর দিকে যেতে থাকবে সত্যি, কিন্তু ওই লাল দাগকে অতিক্রম করে গেলে ট্যাকিয়ন বস্তুকণাটিকে উলটো দিকে যেতে দেখবে, অর্থাৎ এর যাত্রাপথ তখন তার চোখে হবে – B থেকে A এর দিকে। আমি বিস্তৃত ব্যাখ্যায় এখানে যাচ্ছি না, পাঠকেরা ব্যাখ্যা পেতে চাইলে সরাসরি অধ্যাপক স্টেঙ্গরের প্রবন্ধের ২য় পর্বটি পড়ে নিতে পারেন[15])। কাজেই কার্যকারণ সম্পর্ক কিংবা আদি কারণের ব্যাপারগুলো (অন্ততঃ ট্যাকিয়নের কাছে) আর সেভাবে সত্য থাকছে না।
অবশ্য কার্যকারণকে প্রশ্নবিদ্ধ না করেও সুপারলুমিন্যাল নিউট্রিনোর অস্তিত্বকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। সেটা করেছেন বিজ্ঞানী শন ক্যারল তার একটি ব্লগ-প্রবন্ধে[16]। তিনিও সার্নের এই ফলাফলে সংশয় প্রকাশ করেছেন, কারণ সার্ণের ফলাফল সত্য হলে Supernova 1987A তে দেখতে পাওয়া নিউট্রিনোগুলো বছর খানেক আগেই দেখতে পাবার কথা ছিল। তবে একটি প্রয়োজনীয় ব্যাপার তিনি উল্লেখ করেছেন SN 87A এর ক্ষেত্রে নিউট্রিনোগুলো ছিল ইলেকট্রন নিউট্রিনো, মিউয়ন নিউট্রিনো নয়, ফলে তাদের শক্তিস্তর তুলনামূলক-ভাবে অনেক কম ছিল। আর যদি সার্ণের পরীক্ষার ফলাফল সত্য হয়, তবে সেটকেও বিজ্ঞানের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা অসম্ভব কিছু হবে না। ইতোমধ্যেই কীভাবে লোরেন্স ইনভ্যারিয়েন্স লঙ্ঘন করে নিউট্রিনো আলোর বেগের পরিসীমা অতিক্রম করতে পারে, তা নিয়ে বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক পেপার প্রকাশিত হয়েছে[17], আরও বেশ কিছু রিভিউ পেপার ইতোমধ্যেই জমা পড়েছে[18]। উইকিতেও এ নিয়ে আলাদা পাতা আছে।
যাহোক, সার্ণ এবং গ্রান সাসো ন্যাশনাল ল্যাবরেটরির অপেরা প্রকল্প নতুনভাবে বিজ্ঞানের অমিত শক্তিকে আমাদের সামনে তুলে ধরেছে। এটা বোধ হয় বলে দেওয়ার দরকার নেই যে, বিজ্ঞানে তত্ত্বের ভাঙ্গা চোরা চলে নিয়ত, হয় পুরনো তত্ত্বের পতন, কিংবা নতুন তত্ত্বের উত্থান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিজয়মাল্য যায় বিজ্ঞানের গলাতেই। প্রবন্ধের শুরুতেই বলেছি, বিজ্ঞানে কোন কিছুই পাথরে খোদাই করে লেখা হয় না। বরং বিজ্ঞান নির্দয়ভাবে সংশয়ের তীর হানতে থাকে সর্বক্ষণ তা যে রথী মহারথীর তত্ত্বই হোক না কেন। বিজ্ঞানের এই সংশয়, এই পরিবর্তনশীলতাই বিজ্ঞানের এগিয়ে চলার শক্তি। অনেকেই সেটার মর্ম না বুঝে একে ধর্মবিশ্বাস কিংবা রাজনৈতিক বিশ্বাসের মতোই এক ধরণের বিশ্বাস বলে মনে করেন। এটি সত্য নয়। গার্ডিয়ান পত্রিকায় ২৮ শে সেপ্টেম্বর একটি ব্যতিক্রমী নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে ‘Faster than light story highlights the difference between science and religion’ শিরোনামে। সেখানে লেখক স্পষ্ট করেছেন, বিজ্ঞান কখনোই কোন কিছুকে ‘বিশ্বাস’ করে বসে থাকে না, বরং পুনঃ পুনঃ পরীক্ষার মাধ্যমে অর্জিত ‘জ্ঞান’ এর আলোয় নিজেকে আলোকিত করে এগিয়ে যেতে চায়। বিজ্ঞান স্থবির নয়, প্রগতিশীল। আজ আইনস্টাইনের তত্ত্বের ভুল পাওয়া গেলে সেই তত্ত্ব প্রত্যাখ্যাত হতে সময় লাগবে না। প্রাচীন কালের কোন পয়গম্বরের কিংবা দেবদূতের বাণীর মতো আঁকড়ে ধরে ফুল চন্দন যোগে পুজো চলতে থাকবে না নিঃসন্দেহে। বিজ্ঞানে ‘পবিত্র তত্ত্ব’ বলে কিছু নেই। এখনে ‘একশ জন বিশেষজ্ঞের’ অভিমতের মূল্য নগণ্য। বরং নিগুঢ় এবং নির্ভুল পরীক্ষণ, এবং সেই পরীক্ষণ থেকে প্রাপ্ত ফলাফল, যা আবার অন্যদের দ্বারা পুনঃ-পরীক্ষিত এবং সমর্থিত হবে – সেটাই ‘বিজ্ঞানের রায়’ বলে বিবেচিত। তাই আমাদের আস্থা থাকবে শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানের প্রক্রিয়ার প্রতি, সেখান থেকে পাওয়া নির্মোহ রায়ের উপরেই।
তথ্যসূত্র:
[1] একটি ব্যাপার এখানে পরিস্কার করা দরকার। ফলসিফায়েবল মানে ভুল প্রমাণেয়তা বা পরীক্ষার মাধ্যমে ভুল প্রমানের চেষ্টা করা, অর্থাৎ বাতিলযোগ্যতা। তত্ত্বটা ভুল তা কিন্তু নয়। ‘ফলসিফিফায়াবিলিটি’ বা ‘বাতিলযোগ্যতা’ একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের অন্যতম গুণ। এটা যে কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নির্মাণের অপরিহার্য শর্ত। মুলতঃ এই গুনটিই বিজ্ঞান থেকে অপবিজ্ঞানকে পার্থক্য করে দেয় পরিস্কারভাবে। একটা উদাহরণ দেয়া যাক। যেমন, ‘যুধিষ্ঠির স্বশরীরে স্বর্গে গেছেন’ – এটি এমন একটি বক্তব্য যেটা পরীক্ষা করে আমরা সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে পারি না। কাজেই এটি একটি টটোলজিকাল স্টেটমেন্ট – ফলসিফায়াবেল নয়। কারণ আমরা কোনভাবে পরীক্ষা করে এর যথার্থতা নির্ণয় করতে পারি না। কিন্তু ‘ইলেক্ট্রন প্রটোনের চেয়ে ভারী’ –এটি একটি ফলসিফায়েবল স্টেটমেন্ট। কারণ পরীক্ষা করে আমরা এর সত্যমিতথ্যা যাচাই করতে পারি। কার্ল পপার তার ‘দ্য লজিক অব সায়েন্টিফিক ডিস্কভারি’তে পরিস্কার করে বলেছেন – ‘A theory is scientific to a degree to which it is testable.’
[2] আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব কীভাবে কাজ করে তা এই প্রবন্ধের বিষয় নয়, আমি আমার আগের একটি লেখায় এ নিয়ে বিষদভাবে লিখেছিলাম। উৎসাহী পাঠকেরা মুক্তমনায় প্রকাশিত ‘এক পেটেন্ট ক্লার্কের অসাধারণ মানস পরীক্ষণের কাহিনী’ প্রবন্ধটি দেখে নিতে পারেন।
[3] Michio Kaku, Physics of the Impossible: A Scientific Exploration into the World of Phasers, Force Fields, Teleportation, and Time Trave, Doubleday; 2008
[4] John Grant, Corrupted Science: Fraud, Ideology and Politics in Science, Facts, Figures & Fun, 2007
[5] Michio Kaku, Has a Speeding Neutrino Really Overturned Einstein? The Wall Street Journal, September, 2011
[6] T. Adam et al. OPERA collaboration, Measurement of the neutrino velocity with the OPERA detector in the CNGS beam, 22 September, 2011.
[7] Edwin Cartlidge, “Faster-Than-Light Neutrinos: OPERA Confirms and Submits Results, But Unease Remains”. Science, 17 November 2011.
[8] Alok Jha, Neutrinos still faster than light in latest version of experiment, The Guardian, 17 November 2011
[9] Michio Kaku, Has a Speeding Neutrino Really Overturned Einstein? The Wall Street Journal, September, 2011
[10] John Matson, Faster-Than-Light Neutrinos? Physics Luminaries Voice Doubts, Scientific American, September 26, 2011
[11] D. Fargion, D. D’Armiento, Inconsistence of super-luminal Opera neutrino speed with SN1987A neutrinos burst and with flavor neutrino mixing, arXiv:1109.5368v5 [astro-ph.HE]
[12] Andrew G. Cohen and Sheldon L. Glashow , Pair Creation Constrains Superluminal Neutrino Propagation”. Physical Review Letters 107 (18): 181803, 2011.
[13] Eugenie Samuel Reich, Finding puts brakes on faster-than-light neutrinos, Nature, 20 October 2011.
[14] Victor Stenger, No Cause to Dispute Einstein; huffingtonpost
[15] Victor Stenger, No Cause to Dispute Einstein Part-2, huffingtonpost
[16] Sean Caroll, Faster-Than-Light Neutrinos?, Discover Magazine Blog
[17] John Ellis, Nicholas Harries, Anselmo Meregaglia, Andre Rubbia, Alexander Sakharov, Probes of Lorentz Violation in Neutrino Propagation, http://arxiv.org/abs/0805.0253
[18] Alan Kostelecky, Matthew Mewes, Lorentz and CPT Violation in the Neutrino Sector, Submitted on 28 Aug 2003 (v1), last revised 22 Jun 2004, http://arxiv.org/abs/hep-ph/0308300
অনেক আগের একটি পোস্ট দেখে কিছু লিখতে ইচ্ছা করলো তাই কমেন্ট করলাম। আমি নিয়মিত লেখক বা পাঠক কোনটিই নই।
যদি আমরা মহাবিশ্বের মূল উপাদানগুলোর কথা ভাবি, (ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, ব্যোম) সেক্ষেত্রে নিউট্রিনো গুলোর আলোর অধিক গতি সম্পন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। এরিস্টোটল এর কিছু তত্ত্বও পরবর্তীতে বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। সেক্ষেত্রে আইনস্টাইনের এই তত্ত্বটিও ভুল প্রমাণিত হলে বিশেষ অবাক হওয়ার কিছু নেই বলে মনে করি। মহাবিশ্বের সমস্ত উপাদানই উপর্যুক্ত পাঁচটি উপাদানে বিশ্লেষণ করা সম্ভব। কথাটি আপাত দৃষ্টিতে হাস্যকর শোনালেও ‘শক্তির নিত্যতা’ সূত্র তার প্রমাণ দেবে। কারণ, দৃশ্যমান বা অদৃশ্য সমস্ত বস্তু ও বস্তুকণাই কোন না কোন শক্তি থেকে উদ্ভুত এবং কোন না কোন শক্তিতে রূপান্তরিত হওয়ার মাধ্যমে তার চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। নিউট্রিনো সমূহ যদি বাস্তব বস্তু (এনটিটি) হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আলোর অধিক গতি সম্পন্ন হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। মিশরীয়, গ্রীক, ভারতীয় পৌরাণিক গ্রন্থসমূহে এমন অনেক যানের উল্লেখ আছে যা মন অপেক্ষা দ্রুতগামী। যদি বিষয়টি নেহাত কাল্পনিক মনে হয়, তাহলে মঙ্গলগ্রহ বা চন্দ্রে অভিযান বাতুলতা বলে মনে হবে। এমন হতে পারে এই নিউট্রিনো সমূহ সেই সমস্ত শক্তিমান বস্তুকণার অংশ, যা প্রকৃত পক্ষে আলো অপেক্ষা দ্রুত গতিতে চলবার ক্ষমতা রাখে।
আবার সার্নের পরীক্ষার বিপক্ষে যেটি বলার সেটি হচ্ছে, আমাদের এই মহাবিশ্ব অগণিত দৃশ্য ও অদৃশ্যমান বস্তু কণায় পরিপূর্ণ। মি. অভিজিৎ এর নিবন্ধে, সার্ন থেকে উৎক্ষিপ্ত নিউট্রিনোগুলোই যে ইতালিতে সংগ্রহ করা নিউট্রিনো তার কোন সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই। কারন, ঐ নিউট্রিনোগুলো চিহ্নিত কিনা তা উল্লেখ করা হয় নি। যেহেতু মহাবিশ্ব অগণিত দৃশ্য-অদৃশ্য বস্তুকণায় পরিপূর্ণ সেহেতু একই চেহারা ও চরিত্রের একাধিক বস্তু কণা থাকাটা বিচিত্র কিছু নয়। বরং না থাকাটাই অস্বাভাবিক।
maaf korben bandhura, ami bangla type korte pari na!! sampurno aprasongik bisoy niye lekha post kor6i…………..! ami subject hisabe Physics niye porasuno suru kore6ilam..kintu bises ki6ui kore uthte pari ni….tar annotamo karon holo english e amar durbalatar karone!!!! amader ekhane Physics er je sob boi amra portam segulo sobi english e lekha fole bodh r buddhir modhhe ekta suspasto farak amar belay toiri hoye ge6e!!! ebong amar ei durbalata amay khub kasto dey!! ami ajjo mone kori shikkha i alo ebong jiboner mokkho…..ebong ami ekhono andhokarei achhi!! ami ekta uddesso niye ei post ti kor6i………..amar dharona apnader deshe banglay lekha Physics, Philosophy of Physics saho aro nana bisayer boi thaka uchit!!! antato e byapare Bangladeshi bandhuder upor nirbhor kora chhara upay o dekhi na!! ami ekhon tution porai……….ekta chakri pelei ami B.D te asbo(BD amar pitribhumi o bote!) ei boi gulo collect korte……….!!!! r ei byapare amay Muktop-Mona r sadosso chara r ke i ba sahajjo korte pare??
sutorang plz hoy amake ekhane dhukte din, bandhuder sathe alap korte din na hole amay ekta list pathan jekhane pure Physics theke suru kore Moon ke Mukto kore emon ki6u boi(jegulo banglay lekha…..) er naaam thakbe!!!! plzzzz
আপেক্ষিকতার তত্ত্ব নিয়ে দু’টো বিষয় আমি বুঝতে পারি না।
১. ধরা যাক আমি সূর্য থেকে দেড় লক্ষ্য কিলোমিটার/সেকেন্ড বেগে রওনা দিলাম (পৃথিবী এবং সূর্যকে স্থির ধরে)। তিন লক্ষ্য কিলোমিটার/সেকেন্ড বেগে আমার সাথে আলো রওনা দিল। এখন আমার সাপেক্ষে আলোর বেগ তিন লক্ষ্য কিলোমিটার/সেকেন্ড আবার সূর্য কিংবা পৃথিবীর সাপেক্ষেও তিন লক্ষ্য কিলোমিটার/সেকেন্ড যদিও পৃথিবী বা সূর্যের সাপেক্ষে আমি গতিশীল। এটা কি করে সম্ভব?
২. মিউওন আলোর ৯৯.৮% গতিতে যখন পৃথিবীর দিকে আসে তখন তার ভর প্রায় সাড়ে বাইশ গুন হয়ে যায়। এত বেশি ভরেও সে কি করে তার আগের গতিবেগ ধরে রাখে?
বিষয়গুলো ব্যখ্যা করলে খুশি হব।
আর আপনার লেখাটি সত্যিই অসাধারণ হয়েছে। যদিও অনেকদিন পরে পড়লাম, তবুও নতুন অনেককিছুই জানতে পেরেছি। ধন্যবাদ। (Y)
@ক্লান্ত কালবৈশাখি,
যদি একই স্থানে (সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন কিন্ত স্হানিকভাবে অবিচ্ছিন্ন) পর্যায়ক্রমে দু’টি ঘটনা ঘটে এবং একটি ঘটনা আরেকটির কারণ হিসেবে কাজ করে–তাহলে যেকোন প্রসঙ্গ-কাঠামোতেই এই পারম্পর্যটি বজায় থাকবে। এই বিষয়টিকে বলা হয় কজালিটি। কার্য সর্বদাই কারণকে অনুসরণ করে। এখন ধরা যাক, দু’টি ঘটনা স্থানের দু’টি ভিন্ন বিন্দুতে ঘটে থাকে এবং তাদের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক বিদ্যমান। উদাহরণস্বরূপ, ক বিন্দু থেকে গুলি ছোড়া হল এবং খ বিন্দুতে একটি পাখি গুলিবিদ্ধ হল–যেখানে ক এবং খ বিন্দুদ্বয় স্থানিকভাবে বিচ্ছিন্ন। স্থানিকভাবে বিচ্ছি্ন্ন দুইটি ঘটনার পারম্পর্য আপেক্ষিক–যদিনা একটি হতে বস্তু বা শক্তি প্রবাহিত হয়ে অপরটিকে ঘটিয়ে থাকে (এবং এই প্রবাহ তাৎক্ষণিক নয়–ঘটনাদ্বয় সাময়িকভাবেও বিচ্ছিন্ন)। অর্থাৎ,স্থানিকভাবে বিচ্ছি্ন্ন দুইটি ঘটনার সিকুয়েন্স দুইটি ভিন্ন প্রসঙ্গ কাঠামো থেকে ভিন্ন ভিন্ন দেখা সম্ভব। ক বিন্দু থেকে গুলি যদি আলোর বেগের চাইতে বেশী বেগে গিয়ে পাখিটিকে বিদ্ধ করে তাহলে অন্য আরেকটি প্রসঙ্গ-কাঠামোর অস্তিত্ব থাকবে যেটিতে খ বিন্দুতে পাখিটি গুলিবিদ্ধ হবার পর ক বিন্দুতে বন্দুকের ট্রিগার টেপা হবে। শুণ্য মাধ্যমে আলোর গতির সর্বোচ্চ সীমা এ ধরণের অসম্ভবতাকে অসম্ভব করে।
আপনার সাপেক্ষে ক গতিবেগে চলমান কোন গাড়ী থেকে যদি C বেগে (গাড়ীটির সাপেক্ষে) আলোর কণিকা ছোড়া হয় (ধরুণ একটি টর্চ বাতি জ্বালানোর মাধ্যমে) তাহলে সাধারণ কান্ডজ্ঞানে আপনার সাপেক্ষে সেটির গতিবেগ হওয়া উচিৎ ক+C অর্থাৎ আপনার সাপেক্ষে আলোর গতিবেগ এর সর্বোচ্চ সীমাকে অতিক্রম করে–যেটি, কজালিটি ভায়োলেশানের জন্য সম্ভব না। এই, যে গতিবেগ সংযোজনের সূত্র–সেটিকে গ্যালিলিয়ান ভেলোসিটি এ্যাডিশান রুল বলা হয়। বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বানুসারে একটি প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে যদি আরেকটি প্রসঙ্গ কাঠামো ক গতিবেগে চলে তাহলে দ্বিতীয় প্রসঙ্গ কাঠামোটির সাপেক্ষে একটি বস্তু খ গতিবেগে চললে–প্রথমটির সাপেক্ষে সেটি চলবে এটি ক+খ এর পরিবর্তে ক+খ/1+ক*খ/C^2 গতিবেগে। কাজেই, উপর্যুক্ত ক্ষেত্রে খ=C বসালে উভয় প্রসঙ্গ কাঠামোতেই আলোর গতিবেগ সমান হবে। স্পষ্টত:ই গ্যালিলিয়ান ভেলোসিটি এ্যাডিশান রুলটি আলোর বেগের চাইতে খুবই কম বেগে চলমান বস্তুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যা আমাদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতার সাথে সাজু্য্যপূর্ণ। ক+খ/1+ক*খ/C^2 রাশিটির হরের খ-যুক্ত রাশিটি সেক্ষেত্রে বাদ দেওয়া সম্ভব।
আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব বা স্পেশাল থিওরী অব রিলেটিভিটি স্থান এবং কালের ধারণাকে একীভূত করেছে। আপনি ট্রেনের কোন কামরাতে বসে কোন বইয়ের পাতা উল্টোচ্ছেন। আপনার সাপেক্ষে পাতা নম্বর এক এবং পাতা নম্বর দুইয়ের ভেতর স্থানগত কোন পার্থক্য নেই-কামরার একই স্থানে আপনার কোলের ওপর রেখে বইটির পাতা উল্টোচ্ছেন আপনি। পার্থক্য অবশ্য সময়ের দিক থেকে আছে: পাতা নম্বর এক থেকে পাতা নম্বর দুইয়ে যেতে আপনার দেড় মিনিট সময় লেগেছে। প্লাটফর্মে দাড়িয়ে থাকা ভদ্রলোকটির সাপেক্ষে কিন্ত পাতা দুইটির স্থানগত পার্থক্য স্পষ্ট। রেললাইনের দুইটি পৃথক বিন্দুতে আপনি পাতাগুলো উল্টিয়েছেন। এবার আরেকটি ঘটনার কথা বলা যাক।ধরুন, আপনার সিটটি ট্রেনের ঠিক মধ্যিখানে। আপনি এবং প্লাটফর্মের ভদ্রলোক যে মুহুর্তে পরস্পরকে অতিক্রম করলেন ঠিক সেসময় ট্রেনের কেন্দ্র থেকে একটি ফ্ল্যাশ-লাইট জ্বালানো হল। আপনার সাপেক্ষে ট্রেনটির দুই প্রান্তের দূরত্ব একই হওয়াতে আপনি দেখবেন যে আলো একই সময় দু’জায়গাতে পৌঁছে গেছে। কিন্ত প্লাটফর্মের ভদ্রলোক কি দেখবেন? তিনি দেখবেন ট্রেনের এক প্রান্ত আলোর উৎসের দিকে এগোচ্ছে–অন্যপ্রান্ত সরে যাচ্ছে। আর সেজন্য তিনি দেখবেন যে আলো দুইটি ভিন্ন সময় প্রান্তদুইটিতে পৌঁছেছে।তাহলে এর অর্থ কি দাড়াল? সময় এবং স্থানের পার্থক্য পর্যবেক্ষকের ওপর নির্ভরশীল—এরা মিশ্রিত হয়; নিউটনের “পরম” সময় বলে কিছু নেই। সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুসারে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো পরস্পরের সাপেক্ষে সমবেগে চলমান সমস্ত প্রসঙ্গ কাঠামোতে সমানভাবে প্রযোজ্য–সমস্ত কাঠামোতেই তাদের রুপ অভিন্ন। পদার্থবিজ্ঞানের আইনগুলো সমস্ত জাড্য প্রসঙ্গ কাঠামো বা ইনর্শিয়াল রেফারেন্স ফ্রেমে সমভাবে প্রযোজ্য আর শূণ্যমাধ্যমে আলোর গতি সর্বোচ্চ গতিবেগ–কোন বস্তুর গতিই এর চাইতে বেশী হতে পারেনা । সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের আরেকটি অপরিহার্য এবং বিস্ময়কর ফলাফল হল এই যে: কোন বস্ত স্থির কি গতিশীল সে সম্পর্কে চূড়ান্তভাবে কোন কিছু বলা অর্থহীণ এবং অসম্ভব।
২. মিউওন আলোর ৯৯.৮% গতিতে যখন পৃথিবীর দিকে আসে তখন তার ভর প্রায় সাড়ে বাইশ গুন হয়ে যায়। এত বেশি ভরেও সে কি করে তার আগের গতিবেগ ধরে রাখে?
মিউওনের ভর বাড়েনা-এর গতিশক্তি স্থিরাবস্হা থেকে বৃদ্ধি পায়।
এই লেখা ও অন্য অনেক লেখা থেকে উৎসাহ পেয়ে আমাদের ব্লগে একটি লেখা লিখেছিলো সঞ্চারী, (এখনো আপডেট করা হয়নি) সেটার লিঙ্ক এখানে
আমরা ইতিমধ্যে মুক্ত-মনার নিয়মিত পাঠক হয়ে পড়েছি, ভবিষ্যৎ এই যোগাযোগ আরও বাড়াবে আশা রাখি… 🙂
CERN এ গতকালকে অনুষ্টিত পরীক্ষায় দেখা গেছে যে , নিউট্রিনো আলোর গতিকে স্পর্শ করেছে কিন্তু অতিক্রম করেনি। পরীক্ষাটির উপর গবেষণাটি এখানে পড়া যাবে।
ঘটনা ক্রমেই রোমাঞ্চকর হয়ে উঠছে। দেখা যাক এর প্রত্যুত্তরে ICARUS টিমের পরবর্তী পরীক্ষা থেকে কি বেড়িয়ে আসে ।
খবরটা রেডিওতে শুনেছি। হয়ত আরো পদ্ধতিত্রুটি পাওয়া যাবে।
আহ … অবশেষে জানা গেল যে সার্ণের ফলাফলে কেন অস্বাভাবিকতা পাওয়া গিয়েছিলো। জিপিএস ইউনিটের সাথে কম্পিউটার কানেকশনের ঝামেলা 🙂 … দেখুন এখানে, কিংবা এখানে। এই ধরণের কোন না কোন ভুল যে পাওয়া যাবে আমার লেখায় তার আলামত ছিলো 🙂
ব্যাপারটা সত্য হলে সার্ণ নয় আইনস্টাইনই সঠিক ছিলেন।
@অভিজিৎ,
ব্যাপারটা সত্য হলে দুটো সরাসরি সম্ভাবনা থাকে :
ক) নিউট্রিনোর প্রকৃত গতি রেকর্ডকৃত গতির চাইতে আরো বেশী ছিল।
খ) নিউট্রিনো গতি আলোর গতিকে অতিক্রম করেনি।
যা আগামী মে মাসে অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষা থেকে পরিস্কার হবে। তবে ফলাফল যাই হোক , এখানে বিজ্ঞানই জয়ী থাকছে।
অভিজিৎ দা, খুব ভাল লাগলো লেখাটা পড়ে।
তবে আইনস্টাইনের কথা মত, কোন বস্তু কণা যদি আলোর চেয়ে বেশি গতিতে চলতে থাকে তবে নানা অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ঘটবে, এগুলোর সবই বুঝলাম। শুধু একটা জিনিস আমার বোধগম্য হয়নি তা হল কিভাবে দৈর্ঘ্য হয়ে যাবে ঋণাত্মক? আর হলেও সেটা কতখানি? যদি সার্নের গবেষণা সত্যি হয়ে যায় তবে এগুলো হবার কথা। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে টাইম মেশিন সম্পর্কে পড়েছি, সাথে নানা আজগুবি জিনিস। কিন্তু দৈর্ঘ্য হয়ে যাবে ঋণাত্মক হলে কি হতে পারে ধারনা নেই।হলে কত টুকু হবে? ধরুন ৬ ফুট লম্বা একজন মানুষের দশা শেষ পর্যন্ত কি হতে পারে যদি সে আলোর চেয়ে বেশি গতি সম্পন্ন যানে ভ্রমন করে? একটু পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বলবেন কি? আমি বিজ্ঞানের ছাত্র না। (যদিও বিজ্ঞান নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহী ) কাজেই একটু বুঝিয়ে বললে কৃতজ্ঞ থাকব। আপনার লেখাটি, আর সার্নের গবেষণা, আমাকে যথেষ্ট কৌতূহলী করে তুলেছে।
ধন্যবাদ।
Relativity er onek kichu jante parlam…
অসাধারন এই পোস্টের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনেক ভালো লাগল তাই fb & G+ এ
@ইকরাম,
আগে মন্তব্যটি দেখিনি। জবাব দিতে দেরী হল।
লেখাটি শেয়ারের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
অসাধারন এই পোস্টের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনেক ভালো লাগল তাই fb & G+ এ শেয়ার করলাম
========================================================
মুক্তমনায় এটা আমার প্রথম কমেন্ট। এখানে আমি একটি অপ্রাসঙ্গিক একটি বিষয় বলতে চাচ্ছি,,ব্যাপারটি অন্যভাবে না নেয়ার জন্য মুক্তমনার লেখক ও পাঠকদের অনুরোধ করছি—
এই সাইটে পোস্টের কোন আর্কাইভ লিস্ট নাই। মুক্তমনার অনেক পোস্টই আমার অনেক উপকারে এসছে। কিন্তু কখনো একটি বিষয় নিয়ে জানতে চাই। যেমন: কম্পিউটার,ধর্ম,বিজ্ঞান। কিন্তু পোস্ট গুলো আলাদা পাওয়া যায় না। নতুন পোস্ট খোজার ক্ষেত্রে আমি inurl:mukto-mona.com লিখে সার্চ করে সময় নির্ধারন করে দেই। উল্লেখ্য আমি নিয়মিত পাঠক নই। তবে কোন কোন দিন পুরো দিনটাই এই সাইটে কাটিয়ে দেই। পাঠকদের সুবিধার্থে পেজের একপাশে একটি প্যানেল জোগ করার জন্য লেখকের মাধ্যমে এডমিন কে অনুরোধ করছি।
@ইকরাম হোসেন,
আপনাদের মতো পাঠকদের জন্যই লেখাটা সার্থক মনে হয়। হ্যা, কিছু ক্যাটাগরি আছে, তবে যেভাবে আর্কাইভের কথাটা বলেছেন সে ব্যাপারটা মাথায় থাকলো। দেখি কতদূর কী করা যায়।
আপনিও মুক্তমনার আলোচনায় নিয়মিত হবেন আশা করছি।
@অভিজিৎ,
feedback এর জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
### “আপনিও মুক্তমনার আলোচনায় নিয়মিত হবেন আশা করছি” । আমি শুধু বৈজ্ঞানিক খবর পড়ার জন্যই বিভিন্ন সাইটে ঘুরে বেড়াই। এই সাইট থেকে খুজে বের করতে অনেক ঝামেলা। সাম্প্রতিকে রাজনৈতিক/ দেশপ্রেম বিষয়ক পোস্ট-ই বেশি পাওয়া যায়।ব্যাপরটি তাড়াতাড়ি মিমাংশা করলে উপকৃত হতাম। ক্যাটাগরি ওয়াইজ হলে অবশ্যই নিয়মিত হব। ইনশাল্লাহ !
সম্প্রতি আপনার এই লেখাটি বিডি আর্টসেও প্রকাশ করেছেন। আমার একটি ক্ষুদ্র প্রশ্ন ছিল সেটি নিয়ে। এর ফলে লেখাটি আরো অনেক পাঠকের কাছে পৌছানো গেল কথা সত্য, কিন্তু এর মাধ্যমে কি বিডি আর্টস বা বিডি নিউজ নিজেদের আখের গুছাচ্ছে না? সম্প্রতি তারা সচলায়তন এবং মুক্তমনা থেকে অনেক ভালো ভালো ব্লগারের লেখাই প্রকাশ করেছে যে গুলো আমি মনে করি সচল এবং মুক্তমনাতে প্রকাশ হলে এই দুই ব্লগের জন্যে আরো ভালো হতো। আপনি কি বলেন?
@স্বাধীন,
আমার লেখা যে কেউ চাইলে প্রকাশ করতে পারে। এটা কিন্তু জানা কথাই – আমি মূলতঃ মুক্তমনাতেই লিখি। আমার প্রবন্ধ সবসময়ই মুক্তমনাতেই আগে প্রকাশিত হয়। পরে কোন লেখা কেউ কোন পেপারের জন্য বা অন্য কোথাও প্রকাশ করতে চাইলে এর প্রেক্ষিত বিবেচনা করে হয়ত অনুমতি দেই। মনে হয়না আমার মূল্যহীন দু একটা লেখা অন্য কোথাও প্রকাশিত হলে এতে কারো আখের গোছানোর ব্যাপার ঘটবে।
সচলেও অনেক ভাল ভাল লেখক আছেন। একটা সময়ে সচলেও লিখতাম। এখন লিখি না। তার কারণ বহুবিধ। কিছুটা হয়তো আপনিও জানেন। এখন আমার প্ল্যাটফর্ম কেবল মুক্তমনাই। তবে আপনি যদি সচল এবং মুক্তমনার জন্য যোগসূত্রের কাজ করেন, আমার তাতে কোনই অসুবিধা নেই।
@অভিজিৎ,
মুক্তমনাতে আপনি না লিখলে আর কে লিখবে :)) ? সেটা ভেবেই আমি উপরের মন্তব্যটি করেছি। পেপারে প্রকাশ করা নিয়ে আমার সমস্যা নেই, কিন্তু বিডিনিউজের কলামগুলো অনেকটা ব্লগ ধাঁচেরই এবং তাদের টার্গেট অডিয়েন্স এবং মুক্তমনা বা যে কোন ব্লগের টার্গেট অডিয়েন্স একই। তাই একই টার্গেট অডিয়েন্সের জন্যে লেখা প্রকাশের অনুমতি দেওয়ার আগে চিন্তা করা দরকার আরেকবার। তার উপর কিছু হিসেবে বিডিনিউজ বা প্রথম আলো এগিয়ে আছে তা হলো তারা শুধু ব্লগ নির্ভর নয় তারা সংবাদ নির্ভর। অর্থাৎ তারা প্রথমে সংবাদ পত্র, ব্লগ কেবল সহায়ক একটি অংশ। আরেকটি দিকে এগিয়ে রয়েছে তা হচ্ছে তারা বিজ্ঞাপন নির্ভর। সুতরাং তাদের একটি নির্দিষ্ট ইনকাম আছে যা দিয়ে তারা পেইড সম্পাদক, মডারেটর রাখতে পারে। সচল বা মুক্তমনা বা আরো অনেক ব্লগ এখনো টিকে আছে বিজ্ঞাপন ছাড়া কারণ ব্লগারদের ডেডিকেশন এবং ভালো ভালো ব্লগারেরা এখনো এই সব ব্লগে লিখেন বলেই। কিন্তু এই ভালো ব্লগারেরা যদি সে সব স্থানেও লেখা শুরু করেন তখন আমি সচল/মুক্তমনা ব্লগগুলোর ক্ষতিই কেবল দেখি। আমি কোন ভাবে দেখি না এর ফলে সচল/মুক্তমনার কোন লাভ হচ্ছে বা তাদের প্রচার হচ্ছে। সেই সাথে আরেকটা ব্যাপার যুক্ত করি। আবুল এখন তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ে, এবং এই আবুলেরা যে কোন দিন যে ব্লগের ব্যাপারে কোন নীতিমালায় হাত দিবে না, তার কোন গ্যারান্টি নেই। তখন কিন্তু সবার আগে কোপ পড়বে মুক্তমনার উপর। বিডিনিউজ বা আর্টস এরা কিন্তু ঠিকই টিকে যাবে যেহেতু তারা শুধু ব্লগ নয়, সংবাদ ও পরিবেশন করে। আশা করি বুঝতে পারছেন আমি কি বলতে চাচ্ছি।
না আমি সেভাবে যোগসূত্র হিসেবে কাজ করছি না। আমি নিজে মূলত এই দু’ব্লগেই লিখি ও পড়ি। যদিও মুক্তমনাতে অনেক দিন লিখছি না, কিন্তু প্রতিদিনই আসি, সময় থাকলে কমেন্ট করি, না হলে পড়ে চলে যাই। তাই আমার চেষ্টা থাকে এই দুই ব্লগের ভালো দেখা, যেটা আমার স্বভাবের একটা অংশ।
@স্বাধীন,
তাই কি? বিডিনিউজ অন লাইন পত্রিকা হলেও আমার ধারণা সেখানকার পাঠকদের অনেকেই মুক্তমনায় এসে আমাদের আর্টিকেল পড়েন না। রবীন্দ্রনাথের উপর লেখা আমার আর ফরিদ ভাইয়ের প্রবন্ধটি বিডি আর্টসে প্রকাশিত হওয়ার পর বেশ কিছু ব্যতিক্রমী উত্তর পেয়েছি পাঠকদের কাছ থেকে। মুক্তমনায় বিতর্ককারী দুইজনের মন্তব্য বাদ দিলে অন্যান্য পাঠকদের মন্তব্যের ধরণ দেখে বুঝতে পেরেছি যে সেখানকার পাঠকশ্রেনী আসলেই আলাদা। ব্যাপারটি আইনস্টাইনের লেখার জন্যও খাটে।
এটা খুব একটা ভুল বলেন নি। আমি কিন্তু আগেই বলেছি, আমার সব লেখা নিয়মিতভাবে এবং সবার প্রথমে মুক্তমনাতেই প্রকাশিত হয়। অন্য জায়গায় বড় জোর দু’একটা। কাজেই আমি সে রকম ক্ষতির কোন কারণ দেখি না। বরং লেখাটা বিডি আর্টসে প্রকাশের পর দেখেছি অনেকে ফেসবুকে ম্যাসেজ রেখেছেন, তারা উৎসাহী হয়য়ে মুক্তমনাতে ঢু মেরেছেন, আমার আর ফরিদ ভাইয়ের অন্য লেখাগুলো পড়তে। এই লাভটুকুর কথাও কিন্তু মাথায় রাখতে হবে। আমরা যত যাই বলি, মুক্তমনার উদ্দেশ্যের কারণেই এবং ভিন্নধর্মী লেখালিখির কারণেই এটা কিন্তু মেইনস্ট্রিম ব্লগ নয়। আমাদের দু’একটি লেখা ভিন্ন জায়গায় প্রকাশিত হলে যদি মেইনস্ট্রিম পাঠকদের একটা অংশ এখানে আসেন, মন্তব্য করেন, এবং পরিশেষে লেখক হন, এটাও বড় পাওয়া।
তবে আপনাকে আশ্বস্ত করতে চাই – আমি নিজে খুব আইলসা টাইপের। খুব যেচে অনুরোধ না করলে আমার অন্য জায়গায় লেখা পাঠানো হয় না। 🙂
তবে একটা ভাল জিনিস। ব্লগকে আপনি যেভাবে মেইনস্ট্রিম পেপার বা মিডিয়া থেকে আলাদা করছেন, কিছুদিন পরে হয়তো এই ব্যবধান আর থাকবে না। আমি জানি না, আপনি আজকের কালের কণ্ঠ দেখেছেন কিনা। সেখানে নিউট্রনের এই পরীক্ষা এবং পদার্থবিদ্যার ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, আমার নাম উল্লেখ করে আমার এবং মুক্তমনার কথাও আলাদা ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে –
নিউট্রিনো ছুটছে…কী হবে পদার্থবিজ্ঞানের? (কালের কণ্ঠ)
যদিও রিপোর্টটির মান নিয়ে আমি খুব একটা সন্তুষ্ট নই, কিন্তু তবে ব্লগের লেখা যে এখন রেগুলার মিডিয়ায় আগ্রহ তৈরি করছে, অনেক সময় ব্লগের লেখাকে ভিত্তি করেই মিডিয়ার রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে সেটা অনেক বড় পাওনা। ভবিষ্যতের পরিবর্তনের ছাপ কিন্তু এখানই অনেক স্পষ্ট। তাই না?
@অভিজিৎ,
বিডিনিউজ কোন দিকে এগুচ্ছে সেটা খুবই পরিষ্কার। । সচলে বিডিনিউজের সেই লেখার প্রতিবাদে আলোচনাও চলছে মিডিয়াহাউসের মিডিয়াহাউশ। মুক্তমনারও উচিত হবে ব্লগের কন্ঠরোধের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হওয়া।
@স্বাধীন,
হয়তো আপনার কাছে পরিস্কার, আমার কাছে নয়। বিডি আর্টস লেখা ছাপাতে চেয়েছে, সেজন্যই দেয়া হয়েছে। খুব সিম্পল। একজন লেখকের স্বাধীনতা আছে কোথায় লেখা ছাপানো হবে তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার। এমনকি সচল-এর শুভাশীষ দাস সহ অনেকের লেখাই আমি বিডি আর্টস এ দেখেছি। তাতে কি হল? বিডি আর্টসে লেখা যাওয়াতে আমি আলাদা কোন সুবিধাও পাইনি, আমার এতদিনের স্ট্যাণ্ড-ও বদলে যায়নি। তারা আমার লেখায় কোন কাঁচিও চালায়নি।
আর একটা কথা বলি – যে ভদ্রলোক “মিডিয়াহাউসের মিডিয়াহাউশ” লিখছেন, কিংবা যেখানে লিখছেন, সেখানে আমিও এক সময় লিখতাম। উনাদের ‘হাউস’-ও যে খুব একটা ভাল তা বোধ হয়নি। বহু ভাল লেখককেই সচলিয় হাউসামির পাল্লায় পড়ে অতীতে বিদায় নিতে হয়েছে, সেটাও দেখেছি। তারাও একটি পরিচিত ছকেই চলেন, এবং সেই ছকের বাইরে পা ফেললেই যাবতীয় সমস্যা হয়। ওখানকার মডারেটরদের মধ্যে মাহাবুব মুর্শেদ বাদে আর কারো আচরণেই ঔদার্যের ছাপ পাইনি। সরি স্বাধীন, এ কথা গুলো বলতেই হল। ফরিদ ভাইয়েরও খুব তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। অথচ মজার ব্যাপার কি জানেন, বাংলাদেশ থেকে যখন সচল ব্লক করা হয়েছিল, তখন আমি আর ফরিদ ভাইই দাঁড়িয়েছিলাম তাঁদের পাশে মুক্তমনাকে সাথে নিয়ে। আর সেটার ‘অসামান্য’ প্রতিদান পরে পেয়েছি মিডিয়াহাউশের লেখকের কাছ থেকে। এগুলো নিয়ে বললে অনর্থক কাদাখঁচাখুঁচি হবে, নীরব থাকাকেই শ্রেয় মনে করেছি আমি। সেটাই বরং থাকি।
আপনার যেখানে ভাল লাগে লিখুন। আমিও।
আরো একটি দুর্দান্ত অভিজিতীয় লেখা। এরকম একটা জটিল বিষয়ের এমন সাবলিল ব্যাখ্যা অভিজিতের পক্ষেই সম্ভব। “কিছু কিছু নিউট্রিনো শূন্য মাধ্যমে আলোর দ্রুতির চেয়ে বেশি দ্রুতিতে চলে” – এরকম সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসতে আরো কতদিন লাগবে কিংবা আদৌ আসা যাবে কি না তা এখন বলা সম্ভব নয়। আর যদি তা হয়ও তাহলেও আপেক্ষিকতার তত্ত্বের ভিত ধ্বসে পড়বে না, কেবল কিছু ধ্রুবকের মান পরিবর্তিত হবে। পদার্থবিজ্ঞানের জগতে অনেক ‘স্থির’ ধ্রুবকের মান ‘অস্থির’ প্রমাণিত হয়েছে ইতোমধ্যেই। অনেক ধন্যবাদ অভিজিৎ।
@প্রদীপ দেব,
আপনাকেও ধন্যবাদ। এ ধরণের টপিকে পদার্থবিদদের কাছ থেকে সব সময়ই ফিডব্যাক আশা করি। যাক, দেরীতে হলেও তা পাওয়া গেছে।
ধন্যবাদ প্রদীপ!
@প্রদীপ দেব,
<blockquoteআর যদি তা হয়ও তাহলেও আপেক্ষিকতার তত্ত্বের ভিত ধ্বসে পড়বে না, কেবল কিছু ধ্রুবকের মান পরিবর্তিত হবে।
আপনার এই পর্যবেক্ষনটা আমার কাছে বেশ যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে। যদি লরেন্টজ ফ্যাক্টরের c এর মান আলোর গতিবেগ না ধরে বিশ্বের সর্বোচ্চ গতিবেগ ধরা হয়, তাহলে আপেক্ষিকতা তত্ত্বের কোন সমীকরণ পরিবর্তন করতে হয়না (তবে পরমাণু পদার্থবিদ্যার বহু তত্ত্ব এবং সমীকরণকে ঢেলে সাজাতে হতে পারে)। তখন আপেক্ষিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছেনা, আলোর গতিবেগই বিশ্বের সর্বোচ্চ গতিবেগ এই ধারনাটাই প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এ ব্যাপারে আপনি, অভিজিত এবং অন্যান্যদের মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকলাম।
আপনার লেখা মানেই অসাধারণ কিছু তথ্যের সম্ভার, অনবদ্য লেখনি, প্রাঞ্জল ভাষা, চমৎকার উপস্থাপন ভঙ্গি এক কথায় অনন্য অসাধারণ। এবারো তার সামান্য ব্যতিক্রম হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে পদার্থ বিজ্ঞানের ক্রেজ নিয়ে লেখাটা পাঠক হৃদয় যে কতখানি ছুঁয়ে গেছে তা মন্তব্য ও পঠন সংখ্যা দ্বারা প্রমাণিত। :guru:
আপনি শুধু বিজ্ঞান জানাতে লেখেন না; বিজ্ঞানের প্রতি পাঠকের মনে ভালবাসা তৈরি করা, বিজ্ঞান দর্শনে পাঠককে শিক্ষিত করা এবং সর্বোপরি বিজ্ঞানকে জয়ী করা- এই উদ্দেশ্যগুলো যে আপনার ভেতর বেশ কাজ করে, তা আপনার লেখা পড়লেই বোঝা যায় এবং এই লেখাটিও তার ব্যতিক্রম নয়।
তবে আমি বিজ্ঞানের ছাত্র নই বলে আপনার এত সহজ লেখাটিরও কয়েকটা জায়গা পুরোপুরি বুঝতে পারিনি। বিশেষ করে ‘সুপারলুমিন্যাল নিউট্রিনো’, ‘চেরেনকভ এফেক্ট’, ‘লোরেন্সের বিবর্তভেদমান’ বা ‘হার্ট অব ফিজিক্স’- এগুলোর মানে বুঝতে গিয়ে তো মাথার চুল ছেঁড়ার মত অবস্থা। তাছাড়া আরও কয়েকটি জায়গায় মনে প্রশ্নের উদয় করেছে। যেমন:
এর মানে কি এই যে, পদার্থবিজ্ঞানীদের গবেষণার ক্ষেত্র ছোট হয়ে আসছিল? অথচ আমি কোথাও পড়েছিলাম, বিজ্ঞান অজানার ক্ষেত্রকে সংকুচিত করে না; বরং ক্রমশ বিস্তৃত করে।
কেন প্রশ্নের সম্মুখীন হবে, বুঝতে পারলাম না অভিজিত-দা।
অথচ এই লেখাতেই আগে পেয়েছি যে, নিউট্রিনোগুলো চার বছর আগে দেখতে পাবার কথা ভিক্টর স্টেঙ্গরের মতানুযায়ী।
অনেক ধন্যবাদ, অভিজিৎ-দা। (F)
@কাজি মামুন,
ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য। মন্তব্যটির উত্তর আরো আগে দেয়া উচিৎ ছিলো। কিন্তু সময় কয়রে না উঠতে পারায় উত্তর দেয়া হয়নি।
সুপারলুমিন্যাল মানে আলোর চেয়ে বেশি বেগে গতিশীল; কাজেই ‘সুপারলুমিন্যাল নিউট্রিনো’ মানে আলোর চেয়ে বেশি বেগে পরিভ্রমণরত নিউট্রিনো। লেখার শিরোনামের দীর্ঘ বাক্যটিকে ছোট করে ফেললে ‘সুপারলুমিন্যাল নিউট্রিনো’ লেখা যায়। তাই দীর্ঘ বাক্যের হাঙ্গামা এড়াতে এই শব্দটি ব্যবহার করেছি প্রবন্ধের কিছু জায়গায়।
আর খুব সহজ কথায় ‘চেরেনকভ এফেক্ট’ হচ্ছে – কোন উচ্চশক্তির কণা (High energy particle) যখন কোন মাধ্যমের ভিতর দিয়ে চলাচল কয়রে তখন শক্তিক্ষয় করার কথা। যদিও নিউট্রিনো কোন চার্জযুক্ত কণিকা নয়, তবে এদের খুব ছোট চুম্বকীয় ভ্রামক (magnatic moment) আছে। গ্লাসো এবং কোহেন তাদের পেপারে দেখিয়েছেন যে, নিউট্রিনো গুলো আলোর চেয়ে বেশি বেগে চলাচল করলে সেগুলো ইলেকট্রন-পজিট্রন যুগলে ভাগ হয়ে যাবে, অনেকটা এরকমভাবে –
[img]http://profmattstrassler.files.wordpress.com/2011/10/cerenkovvscg.png[/img]
অপেরার পরীক্ষায় সেধরণের কিছু ধরা পড়েনি।
লোরেঞ্জ বিভেদমান Lorentz invariance এর বাংলা। নিয়ে আপনি আরো জানতে চাইলে আপনি উইকিতে দিয়ে শুরু করতে পারেন। আইনস্টাইনের আপেক্ষিক্তার তত্ত্বই দাঁড়িয়ে আছে লোরেন্স ইনভেরিয়েন্স এবং লোরেন্স ট্রান্সফরমেশন এর উপর ভিত্তি করে। কোন কণা আলোর চেয়ে বেশি বেগে পরিভ্রমন করলে লোরেঞ্জ বিভেদমান ভেঙ্গে পড়ে বলে বহু বিজ্ঞানী মনে করেন, যদিও কিছু বিজ্ঞানী এ নিয়ে দ্বিমতও করেন। এ নিয়ে নানা ব্যাখ্যা প্রতিব্যাখ্যা আছে। আলোচনা করতে গেলে জটিল হোয়ে যাবে। আর আমিও যে সব বুঝি তা নয়।
আমি যেটা বলতে চাচ্ছিলাম নতুন গবেষণার ক্ষেত্র উন্মোচন হওয়া সব সময়ই বিজ্ঞানীদের জন্য আনন্দদায়ক। নতুন গবেষণা মানেই নতুন কয়রে চিন্তা ভাবনা, আরো উৎসাহ পাওয়া, পাশাপাশি রিসার্চের জন্য ফাণ্ড পাওয়া থেকে শুরু করে নোবেল পুরস্কারের হাতছানি সবই সামনে রয়েছে।
কারণ, আইনস্টাইনের সেই বিখ্যাত সমীকরণটির কথা জানে – E=mc^2। এখানে c হচ্ছে আলোর বেগ। এখন আলোর চেয়ে বেশি বেগের কণা পাওয়া গেলে, কিংবা আলোর বেগ প্রশ্নবিদ্ধ হলে সম্ভবতঃ নিউক্লিয় পদার্থবিজ্ঞানের সব সমীকরণগুলোকে ঢেলে সাজাতে ভতে পারে। অন্ততঃ অধ্যাপক মিচিও কাকু তাই মনে করেন; যদিও এ নিয়ে মতভেদ আছে।
হ্যা চার বছরই। তবে প্রবন্ধের একটি জায়গায় যে ‘বছর খানেক’ বলা হয়েছে সেটা চার বছর অর্থেই।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
একটা ব্যপার হঠাৎ মনে পড়ল। নিউট্রিনো যতদুর জানি ভরহীন কণিকা। আইনস্টাইনের তত্ত্ব মোতাবেক – ভরযুক্ত কণিকা যদি আলোর গতির কাছাকাছি গতিতে চলে তাহলে তার ভর বেড়ে যাবে। কেন কোন ভরযুক্ত কণিকা আলোর গতিতে চলতে পারবে না তার ব্যখ্যাও এখানে পাওয়া যাবে। তা হলো – আলোর গতিতে কোন ভরযুক্ত কণিকা ভ্রমণ করলে তার ভর হয়ে যাবে অসীম। ফলে উক্ত অসীম ভরই একসময় কণিকার গতি আলোর গতির নীচে নামিয়ে দেবে। তো নিউট্রিনো যদি ভরহীন কণিকা হয় তাহলে তো তার ক্ষেত্রে আইনস্টাইনের এ তত্ত্ব কাজ করার কথা নয়। সে ক্ষেত্রে তো নিউট্রিনো কণিকা আলোর গতির বহুগুন গতিতে এমনকি অসীম গতিতেও চলমান হলে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
আর একটা ব্যপার টাইম মেশিনের ব্যপারে। সেটা হলো – যদি বাস্তবে কোনদিন টাইম মেশিন তৈরী হয়ও আর তাতে মানুষ অতীত বা ভবিষ্যতে চলাচল করতে পারলেও তারা ইতিহাসের ওপর কোন প্রভাব ফেলতে পারবে বলে মনে হয় না। তারা ভার্চুয়ালি ভ্রমণ করতে পারবে বলে মনে হয় যেখান থেকে বাস্তব ইতিহাসে প্রভাব বিস্তার সম্ভব নয়, তাই তাদের পক্ষে সম্ভব নয় ইতিহাস পাল্টানো।এমনও হতে পারে টাইম মেশিনে ভ্রমণ কারী ব্যাক্তি অতীতে গিয়ে তার পূর্ব পুরুষকে পর্যবেক্ষন করছে কিন্তু তার পক্ষে সম্ভব নয় তাদের সাথে যোগাযোগ করা কারন ভার্চুয়াল কালে অবস্থান করে বাস্তব কালের কারো সাথে যোগাযোগ সম্ভব নয়। এ কারণেই সম্ভবত আমরা ভবিষ্যত কালের কোন ভ্রমণকারীর সাক্ষাত পাই না। বাস্তব কালে এ ভ্রমণ সম্ভব নয় কোনমতেই, সেটা হলে ভ্রমণকারী ব্যক্তির কাছে বাস্তব ইতিহাসের অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যত কাল বলে আলাদা কিছু থাকবে না, সব কালই তার কাছে হয়ে যাবে বর্তমান কাল. যা প্রকারান্তরে আমাদের চারমাত্রিক জগতের প্রকৃতির লংঘন। এটার একটা বড় প্রমাণ হলো- টাইম মেশিন তৈরী সম্ভব হলে দুর ভবিষ্যতের মানুষ তা নিশ্চয়ই তৈরী করবে আর তারা হর হামেশা অতীতে এসে তাদের ভবিষ্যত পরিবর্তন করে ফেলত আর তা মানুষ ইতিহাসের যে কালেই থাকুক না কেন সেখানে থেকেই হরহামেশা দেখতে পেত। অর্থাৎ টাইম মেশিন তৈরী সম্ভব হলেও সময়ে পরিভ্রমণকারী ভবিষ্যতের কোন মানুষকে আমাদের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। তবে এটা খুবই সম্ভব যে – ভবিষ্যতের মানুষ অহরহ আমাদের কালে ভ্রমণ করে, আমাদের আহাম্মকি কাজ কারবার দেখে হাসাহাসি করছে, অথচ আমরা দেখছি না।
@ভবঘুরে,
হ… হা… এরাই মনে হয় যাদেরকে আমাদের কন্সেপ্টে ‘ভুত’ বলা হয় তারা। যারা এখনো জন্মগ্রহন করেনি বা আমাদের ডাইমেনশনে যাদের কোন অস্তিত্বই নেই সেইসব অশরিরী জীব আমাদের চারপাশে কখনও ঘোরাঘুরি করে এরকম চিন্তায় কিছুটা ভয়ই পাচ্ছি। ভুতের ভয় আর কি!
@ভবঘুরে, ঠিক বুঝলামনা ,মানুষ যখন টাইম মেশিনে অতিতে গেল তখন এটা তো বাস্তব কল্পনার কিছু নয় আর অতিতটাও তখন বাস্তব নাকি?তাহলে কেন তাকে দেখা যাবে না বা ঐ লোক কোন কিছু ছুতে পারবে না ,মহা ঝামেলায় পরলাম কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না :-s :-X :-Y
@ভবঘুরে,
– আসলে যুগটাই এমন যে, বিরিঞ্চি বাবা থেকে শুরু করে কেউ অতীত বা ভবিষ্যতের মানুষ দাবী করলেই ত আমরা তাকে পাগলা গারদে ঢুকিয়ে দেই, কে চায় অতীতের পাগলা গারদে জীবন নষ্ট করতে ? তাই ভবিষ্যতের মানুষ রা হয়ত এসে ঘুরে চুপি চুপি চলে যাচ্ছে, আফসোস্ 🙂 lol আমরা এ যাবৎ যত মানুষ পাগলা গারদে পাঠিয়েছি, কে জানে, দু একটা ভবিষ্যতের মানুষও হয়ত আছে এর মধ্যে। 😀
@ভবঘুরে,
ভবঘুরের মন্তব্যের দ্বিতীয় অংশটুকু টাইম মেশিনে ভার্চুয়ালি ত্রিকাল ভ্রমণের ধারণাটাকেই অধিকতর যুক্তিসংগত মনে হয় । পদার্থবিজ্ঞান তো আসলে প্রকৃতির অন্তর্নিহিত শৃঙ্খলার সূত্রটাকেই আবিষ্কার করে, প্রাকৃতিক শৃঙ্খলার কোন পরিবর্তন করে না বা করতে পারে না। একই সময়ে দুই বা ততোধিক কালে অবস্থান ভার্চুয়ালিই সম্ভব হতে পারে, বাস্তবে নয়। নাহলে তো কেউ কারো গ্র্যান্ডফাদার থাকতো না বা সে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়তো মানে একটা হযবরল অবস্থা হয়ে যেতো বলে মনে হয়।
নিশ্চিতভাবেই এটা মানব অস্তিত্বের প্রশ্ন। কেননা একইসাথে বিবর্তনীয় ধারণাটায়ও শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে যেতে পারতো বা একটা লাবড়াখিচুরি ব্যাপার ঘটে যেতো। থিউরীটিক্যালি সেটার সম্ভাবনা তো দেখা যাচ্ছে না ! অবশ্য থিউরীটা কী, প্রশ্ন করলে তাও বলতে পারবো না। তবুও যুক্তির শৃঙ্খলায় এরকমই মনে হচ্ছে।
ভুত নিয়েও একটা সম্পুরক মন্তব্য দেখলাম ! আসলেই এবার হয়তো বিজ্ঞানবাদীরা এটা নিয়েও গবেষণা শুরু করে দিতে পারেন যে ওটা কি আদতে কোন ভার্চুয়াল পরিব্রাজক কিনা ! হা হা হা !!
@ভবঘুরে,
এটা নিয়ে কিছুটা মতান্তর আছে। সনাতন মডেলে নিউট্রিনোকে ভরহীন কণিকা ধরা হলেও সাম্প্রতিক বেশ কিছু পরীক্ষায় নিউট্রিনোর ভর পাওয়ার ব্যাপারটা উঠে এসেছে (Fukuda, Y., et al (1998), T. Araki et al. (KamLAND Collaboration) (2005), Fermilab, MINOS experiment 30 March 2006. ইত্যাদি)। যদিও ভরের স্কেলটি এখনো অজানা। সার্নের ২০১০ সালের পরীক্ষাতেও নিউট্রিনোর ভর থাকার ব্যাপারটা কনফার্ম করা হয়েছে। নিউট্রিনোর সবচেয়ে রহস্যময় ব্যাপার হল এটাই এক্মাত্র কণিকা যার কেবল এন্টি ক্লকওয়াইজ স্পিন পাওয়া গেছে, রাইট হ্যান্ডেড নিউট্রিনো পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন হয়তো মহাবিশ্বের ডার্ক ম্যাটারের সাথে হয়তো এই রাইট হ্যান্ডেড নিউট্রিনোর সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে।
@ভবঘুরে,
ধরা যাক, এখন আমরা টাইম মেশিনে করে ভবিষ্যতে গিয়ে দেখতে পেলাম, মানুষ কোন নতুন প্রযুক্তি বের করেছে; আমরা হয়ত কথা বলে সেই প্রযুক্তির খুঁটিনাটি জানতে পারব না; কিন্তু একটা ধারনা তো পাব আর তাকে কাজে লাগিয়ে ‘ভবিষ্যৎ ইতিহাস’কে কিছুটা প্রভাবিত করতেই পারব, তাই না?
আপনার লেখার ধরণটা গবেষণা পত্রের মত। তবে খুবই ভাল । একটু সাধারন ভাষায় যদি পরবর্তীতে লেখেন তা হলে আমার মত সাধারন পাঠকদের পড়ে বুঝতে সুবিধে হত। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ চমৎকার একটি লেখার জন্যে।
@মন্দ,
আপনার কমেন্ট তো মন্দ নয়, নামটা ‘মন্দ’ রাখলেন কেন? 🙂
Speed faster than light has been already doubted and rejected. Please read news here: (http://www.bbc.co.uk/news/science-environment-15830844, or here http://www.newstrackindia.com/newsdetails/251302). Einstein’s is still standing tall.
@Syed K. Mirza,
হ্যা ও দুটো ICARUS টিমের একটা পরীক্ষা সংক্রান্ত নিউজ যেটার কথা আমি লেখায় বলেছি। তাদের ফলাফল গবেষণা সার্ণের পরীক্ষার সাথে কন্ট্রাডিক্ট করছে। তবে ICARUS টিমের এপ্রোচ ছিলো ভিন্ন, তাদের ফলাফল নিউট্রিনোর শক্তিক্ষয়ের উপর নির্ভর করে।
এ ব্যাপারটি যেমন নিউজে এসেছে, ঠিক তেমনি আবার সার্নের পরীক্ষার ফলাফলকে সমর্থন করেও কিছু নিউজ এসেছে, এসেছে ২য় পরীক্ষায় একই রকম ফলাফল পাওয়ার কথা –
Neutrinos still faster than light in latest version of experiment
কিংবা,
Faster-than-light neutrinos pass test
আমার মতে এখনো জুরি ইজ স্টিল আউট! যদিও অস্বীকার করছি না – সার্নের ফলাফল ভুল হবার সম্ভাবনাই বেশি ভবিষ্যতে।
@অভিজিৎ,
ভুল হবার সম্ভাবনা কেন বেশি ধরা হচ্ছে বুঝতে পারছিনা। পরীক্ষার ফলাফলকে কন্ট্রাডিক্ট করে যেমন সংবাদ আছে তেমনি একই রকম ফলাফল পাওয়া গেছে এই সংবাদও বিদ্যমান। এখনকার কনটেক্টে যেটা অসম্ভব মনে হচ্ছে সেটা সম্ভব হতে কতক্ষন? পৃথিবীর ইতিহাসে এমন প্রচুর উদাহরন আছে। বোধ হচ্ছে গ্যালেলিওর সময়কাল থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের আরও সময় লাগবে।
@ব্রাইট স্মাইল্,
এটার কারণ, কোন বস্তু আলোর গতিকে অতিক্রম করতে পারবে না – এই অনুসিদ্ধান্ত রিলেটিভিটির তথা আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের অনেকটা ভিত্তিমূল বলে বিবেচিত। এটি বহু পরীক্ষায় নিরীক্ষায় এখন পর্যন্ত উত্তীর্ণ হয়েছে (আমার লেখার প্রথম অনেশেই এ নিয়ে বিস্তারিত আছে)। আর সার্নের আগে কোন পরীক্ষাতেই এরকম ব্যতিক্রমী ফলাফল পাওয়া যায়নি। এই ফলাফল সত্য হলে আগের নিউট্রিনো নিয়ে পরীক্ষাগুলোর ফলাফলের সাথে ( যেমন আগের ICARUS টিমের কিংবা SN 87A স্টাডি ইত্যাদি) এটি কন্ট্রাডিকক্ট করছে কেন সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আর তা ছাড়া আইনস্টাইনের তত্ত্বকে এতো সহজে প্রশ্নবিদ্ধ করার আগে মনে রাখা দরকার – জিপিএস, ট্রাঞ্জিস্টর, কম্পিউটার ইত্যাদি ঠিকমতো কাজই করতো না আইনস্টাইনের তত্ত্ব একচুল হের ফের হলে। মূলতঃ পদার্থবিজ্ঞানীদের কাছে মহাবিশ্বের গতির সীমা নির্ধারিত হয় আলোর বেগ দিয়ে, এখনো । সেজন্যই অনেক বিজ্ঞানী মনে করছেন – সার্নের ফলাফল সঠিক হলে বিশ্ব প্রকৃতিকেই হয়তো নতুন করে ব্যাখ্যা করতে হবে। সেটাতে অবশ্য কোন সমস্যা নেই। অতীতে অনেক ধারণাই আমরা পাল্টেছি। এটাও পাল্টাতে পারে বৈকি। তবে তার আগে সকল ধরণের সংশয়ের মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ হওয়া লাগবে তো।
@অভিজিৎ,
তার মানে আইনস্টাইনের তত্ত্ব দিয়ে জিপিএস, ট্রাঞ্জিস্টর, কম্পিউটার ইত্যাদি ঠিকমতো কাজ করার পরেও সার্নের ফলাফল সঠিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
@ব্রাইট স্মাইল্,
হতে পারে হয়তো। কিন্তু আমার কাছে আইনস্টাইনের তত্ত্ব সঠিক হওয়া আর সার্নের ফলাফল সঠিক হওয়া – যুগপৎ একসাথে সঠিক হওয়াটাকে কেন যেন ‘বিবাহিত ব্যাচলর’ হওয়ার মতো শোনাচ্ছে। 🙂
@অভিজিৎ,
সন্দেহ নেই! 🙂
সত্যিই সহজ সরল অসাধরন
ধন্যবাদ
অভিজিৎ দা,
– চরম একটা স্টেটমেন্ট, খুবই ভাল লাগল। এই স্টেটমেন্ট টাকে কোটেশন হিসেবে প্রচার করা যায়।
@এমরান এইচ,
একমত।
অবশেষে অপেক্ষার সমাপ্তি ঘটল এবং হলাম তৃপ্ত (F) (F) (F)
লেখাটির অপেক্ষায় ছিলাম। চমৎকার হয়েছে।
(Y)
জটিল বৈজ্ঞানিক বিষয়টিকে বাংলায় সহজ করে বুঝিয়ে দেবার জন্য অভিজিৎকে ধন্যবাদ। এখন অপেক্ষা এই তত্ত্বটি আরো জোরালো পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে পাকাপোক্তভাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া। তবে মজার ব্যাপার হলো এই তত্ত্বটি প্রমানিত হলে সময় পরিভ্রমনের ব্যাপারটি আরও এক ধাপ সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাবে। ভবিষ্যতে ব্যাক্ টু দ্যা ফিউচার মুভিটির যে সার্থক রুপায়ন হবেনা কে বলতে পারে? (F)
@ব্রাইট স্মাইল্,
অপেক্ষা অবশ্য বেশিদিন করতে হবে না। তবে, পাকাপোক্তভাবে এই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা পাবার বদলে পা হড়কে এর উষ্ঠা খাবার সম্ভাবনাই বেশি। বিজ্ঞানীরাও বলিউডের বালিকাদের মত বখে গিয়েছে। তারাও আজকাল উথালপাথাল প্রচার চায়। সে কারণেই সত্য-মিথ্যা যাচাই হবার আগেই সার্নের বিজ্ঞানীরা মিডিয়ার সাথে মিষ্টিমিষ্টি মোহাব্বত শুরু করে দিয়েছে।
এ রকম লিখা পাব এ আশায় মুক্ত-মনা য় ক্লিক করি। ইংরেজিতে পড়তে গেলে মাথায় খুব চাপ পড়ে। ধন্যবাদ লেখক কে। কেমন আছেন এখন বন্যা?।লেখক ত জানালেন না।
@সপ্তক,
আপনাকেও ধন্যবাদ পড়ার জন্য। বন্যা ভালই আছে সার্জারির পর। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যেই মুক্তমনায় নিয়মিত হবে।
ধন্যবাদ অভিজিৎদা এই বিষয়টা নিয়ে লেখার জন্য।
আমি পরে আরো ভালভাবে পড়ে মন্তব্য করব।(এখন আসলে খুব ব্যস্ত তাই সময় নিয়ে পড়তে পারছি না , তবে এরকম একটা লেখায় মন্তব্য না করে পারলাম না)
এখন দুটো প্রশ্ন:
উপরের লিংকে দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞানীদের একটি আন্তর্জাতিক দলের পরীক্ষায় প্রমানিত হয়েছে সার্নের দাবিটি ভুল ছিল। এটা কি সত্য?
দ্বিতীয়ত, যদি নিউট্রিনো আলোর চেয়ে দ্রুতগতিতে চলে তবে কি তাত্বিকভাবে টাইমমেশিন সম্ভব?
@রনবীর সরকার,
এরকমভাবে আসল কেন?
@রনবীর সরকার,
আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তর দেই। আপনার লিঙ্ক দেখলাম। ব্যাপারটা বিডি আর্টসে যেভাবে বলা হয়েছে সেরকম নয়। আসলে ICARUS টিমের একটা পরীক্ষা ছিলো একই রকমভাবে নিউট্রিনো নিয়ে। তাদের ফলাফল গবেষণা সার্ণের পরীক্ষার সাথে কন্ট্রাডিক্ট করছে। তবে ICARUS টিমের এপ্রোচ ছিলো ভিন্ন। তাদের অভিমত অনুযায়ী নিউট্রিনোগুলো আলোর চেয়ে বেশি বেগে চলাচল করতে পারলে তাদের যে পরিমাণ শক্তি ক্ষয় করার কথা ছিল (এটা হয় ‘চেরেনকভ এফেক্ট’ এর মাধ্যমে -ইলেকট্রন এবং পজিট্রন বিকিরণ করে শক্তি ক্ষয় করে ফেলা), সেটা পাওয়া যায়নি। অধিকন্তু তাদের রিপোর্ট বলছে তারা শক্তিস্তর মেপে দেখেছেন যে, এগুলোর শক্তিস্তর ঠিক সেরকমই পাওয়া গেছে যেটা পাওয়া যাওয়া উচিৎ আলোর সমান বা সামান্য কম বেগে নিউট্রিনো চলাচল করলে যা পাওয়া যাবার কথা। এই হচ্ছে সারবস্তু। তবে ফার্মি ল্যাব সহ আরো বেশ কিছু জায়গায় পরীক্ষা করলে এ সম্বন্ধে আমরা জানতে পারব। এ ব্যাপারে আমার মতে ‘জুরি ইজ স্টিল আউট অন দিস’।
আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে অনেক কিছু ব্যাখ্যা করতে হবে। আলোর চেয়ে বেশি বেগে চলাচল করতে পারলে তো তাত্ত্বিকভাবে টাইম মেশিন সম্ভব বটেই, এমন কি আরোর কম বেগে চললেও কিছু ক্ষেত্রে টাইম মেশিনের বাস্তবতা হয়তো সম্ভব। এমনি একটি ব্যাপার হচ্ছে কিপ থোর্ন বর্ণিত ট্র্যান্সভার্সিবল ওয়ার্মহোল, যেটা নিয়ে আমি একটা সায়েন্স ফিকশন লিখেছি সম্প্রতি। যদিও আমি শাহানার টাইম মেশিনে করে ভিন্ন সময়ে পাড়ি দেবার কথা বলিনি, কিন্তু এই কন্সেপ্টের উপর যে তাইম মেশিন অন্ততঃ তাত্ত্বিকভাবে বানানো সম্ভব হতে পারে (আমাদের সময়ে না হলেও হয়ত হাজার বছর পরে), সেটা ভুল নয়। ট্র্যান্সভার্সিবল ওয়ার্মহোল-এর কন্সেপ্ট গড়ে উঠেছে নেগেটিভ এনার্জির উপর ভর করে, যেটা আসলে কোন ফিকশন নয়, বরং সরল বাস্তবতা। কাশিমিরের এফেক্ট বলা হয় এটিকে, যেটা ১৯৯৬ সালে স্টিভেন লেমোরাক্স সহ অন্যান্য বিজ্ঞানীদের পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে। মুশকিল হল ওয়ার্মহোল বানানোর জন্য যে পরিমাণ নেগেটিভ এনার্জি লাগবে তা আহরণ করা দুঃসাধ্য। এর বাইরে ‘স্পিনিং উইনিভার্স কন্সেপ্ট থেকে কার্ট গোডেল, কিংবা দুটো স্ট্রিং এর কলাপ্স থেকে রিচার্ড গট কিছু মডেল হাজির করেছেন টাইম মেশিনের জন্য – কিন্তু সেগুলো স্রেফ তত্ত্ব কথাই।
তার চেয়েও বড় কথা হল সেই গ্র্যান্ড ফাদার প্যরাডক্স – যদি আপনি টাইম মেশিন করে অতীতে গিয়ে আপনার জন্মের আগেই আপনার বাবা কিংবা ঠাকুর দাদাকে তাদের ছোটবেলায় খুন করে আসেন – তবে ভবিষ্যতে আপনার অস্তিত্ব নিয়ে একটি প্যারাডক্স তৈরি করবে। সেজন্যই স্টিভেন হকিং একসময় ‘ক্রনোলজি প্রোজেকশন কনজেকচর’ নামের এক নীতি প্রস্তাব করেছিলেন যেটা তিনি মনে করেছিলেন টাইম ট্রাভেলারকে সময় পরিভ্রমণ করে আনুষঙ্গিক ইতিহাস পরিবর্তনে বাধা দেবে। কিন্তু বেশ ক’ বছর হল স্টিফেন হকিং সেই প্রস্তাব থেকে সরে এসেছেন, কারণ কয়েকজন বিজ্ঞানী ইতোমধ্যেই তার প্রস্তাবের ভুল দেখিয়েছেন, এবং বলেছেন পদার্থবিজ্ঞানের কোন জানা সূত্রই ‘ক্রনোলজি প্রোজেকশন কনজেকচর’ সমর্থন করে না। তার মানে পদার্থবিজ্ঞানের নীতিগুলো টাইম মেশিনকে একেবারে অবাস্তব বলছে না, যদিও সেটা বানানোর টেকনোলজি এখনো সুদূরপরাহত।
এখন গ্র্যান্ড ফাদার প্যরাডক্স কীভাবে এড়ানো সম্ভব সেটা এক মজার বিষয়। এর মধ্যে তিনটি প্রস্তাবের কথা আমি জানি। এ নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে ভবিষ্যতে। আপনার মন্তব্য আমার আগ্রহ বাড়ালো আরো।
@অভিজিৎ,
বিষয়টি ইন্টারেষ্টিং, ভবিষ্যতের এই লেখাটি নিয়ে আগ্রহ রইলো।
অসাধারন পোস্ট। খবরটি শোনার পর থেকেই অনেক রকম চিন্তা মাথায় আসছিল। আপেক্ষিকতা এত বিভিন্ন এবং বৈচিত্রময় পরীক্ষা, বা প্রযুক্তিগত ব্যবহার দিয়ে বারবার সঠিক প্রমাণ হয়ে আসছিল যে হঠাত এরকম কিছু আশা করি নি। আমি খুবই আগ্রহের সাথে অপেক্ষা করছি ফার্মী ল্যাবের পরীক্ষার ফলাফলের জন্যে। সার্নের কাছাকাছি রিসোর্সেস তো তাদেরই আছে বলে আমার ধারনা। অনেক ধন্যবাদ এই পোস্টের জন্যে।
@আরিফুল হোসেন,
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
চমৎকার আলোচনা। বিষয়টা বেশ স্পষ্ট হলো আমার কাছে। অনেক ধন্যবাদ। (Y)
পদার্থ বিদ্যার একটা উত্তেজনাকর সময় চলছে, সেদিন একটা সম্পাদকীয়তে পড়ছিলাম,
তিনটি গুরুত্বপুর্ন পর্যবেক্ষনের কথা সেখানে ছিল, নিউট্রিনোদের আলোর গতির চেয়ে ৬০ ন্যানোসেকেন্ড দ্রুত চলা, মেসন কনাদের তাদের কাউন্টারপার্ট অ্যান্টিমেসনদের তুলনায় ভিন্ন হারে ক্ষয় হবার হার ( যা প্রমান করবে কেন অ্যান্টিম্যাটারের চেয়ে ম্যাটার বেশী), আর একসময়ের প্রায় অবিশ্বাস্য ধারনা মাল্টিভার্স এর স্বপক্ষে সমর্থন( এর প্রোপোনেন্টরা বলছেন যার সংখ্যা প্রায় অসীম (একটা পুরোনো এস্টিমেট ১০০ টু দি পাওয়ার ৫০০) ।
আশা করছি মুক্তমনায় মাল্টিভার্স নিয়েও একটা লেখা পাবো। 🙂
@কাজী মাহবুব হাসান,
পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনার দেওয়া তথ্যগুলোও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
আমার আগেকার একটা লেখা আছে এখানে। দেখতে পারেন! 🙂
@অভিজিৎ, অনেক ধন্যবাদ আপনার লেখাটার লিঙ্কটার জন্য। 🙂
একদম তাই। (Y)
এমন পরিশ্রমলব্ধ লেখাটি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য (F) শুভেচ্ছা থাকল।
সান ল্যাবরেটরীর নিউট্রিনোর উপর সাম্প্রতিক গবেষনার বিস্তারিত ফলাফল জানবার ইচ্ছা ছিল। আপনার এ প্রবন্ধে মনের সে খোরাক যুগিয়েছে। এজন্য ধন্যবাদ।
রিলেটিভিটির একটি প্রশ্নের উত্তর দিবেন কি ?
এতে বলা হয়েছে আলোর গতিতে কেহ পৃথিবীর বর্তমান চলতি সময়ের ২৫ বৎসর সময় নিয়ে চল্লেও তার তার বয়স সেখানেই স্থির থাকিবে।
আমি একটা উদাহরন দিচ্ছি। বিজ্ঞানের যে ভাবে অগ্রগতি হচ্ছে, তাতে ধরুন এখন থেকে ৫০ বৎসর পরে বিজ্ঞানীরা আলোর এই গতি রকেট ও মানুষের উপর প্রয়োগ
করার কলা কৌশল উদ্ভাবন করে ফেল্ল।
ধরুন তখন একজন ৩০ বৎসর বয়সী বিজ্ঞানী ২ টি রকেট তৈরী করিয়া তার ৩০ বৎসর বয়সী ২ বন্ধুকে ২ রকেটে বসাইলেন। এর পর ১টি রকেটে আলোর গতিবেগ ও অন্য রকেটটিতে আলোর কম গতিবেগ দিয়া পৃথিবীকে ২৫ বৎসরের জন্য প্রদক্ষিন করিতে ছাড়িয়া দিলেন।
পৃথিবীতে ঠিক ২৫ বৎসর অতিক্রম করার পর বিজ্ঞানী তার ২ বন্ধুকে রকেট সহ নামিয়ে আনলেন।
তাহলে এখন যা দেখা যাবে তা হল বিজ্ঞানীর বয়স ও আলোর কম গতি সম্পন্ন রকেটে অবস্থান কারী বন্ধুর বয়স পৃথিবীর চলমান সময়ের সংগে সমান গতিতে অগ্রসর হতে হতে বেড়ে (৩০+২৫=)৫৫ বৎসর হয়ে গিয়েছে।
এবং অন্য বন্ধু যিনি আলোর গতি সম্পন্ন রকেটে অবস্থান করেছিলেন তার বয়স না বাড়িয়া (৩০+০=)৩০ ই রয়ে গিয়েছে।
তাই নয় কি ? এরকম ই কি ঘটিবে ?
কিছু কিছু ধর্ম জ্ঞানীরা নবীর স্ব শরীরে মেরাজ ভ্রমন প্রমান করার জন্য আইনষটাইনের এই তত্বের উপর রীতিমত ভর করিয়া বসিয়াছেন। কিন্তু তারা এই ব্যাখ্যায় যাননা যে তাহলে কেন নবীর মেরাজ ভ্রমনের সময় পৃথিবীতে রেখে যাওয়া স্ত্রীদের ও ছাহাবাদের বয়স নবীর বয়সের চাইতে ২৫ বৎসর না বাড়িয়া একই রহিল।
ধন্যবাদ
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
আপেক্ষিক তত্ত্বানুসারে বয়স স্থির থাকা সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ, সময়ের গতি হ্রাস করা সম্ভব। কারণ কোনো বস্তু যদি আলোর গতিবেগে চলে তাহলে আপেক্ষিকতার অনুসিদ্ধান্ত অনুসারে তার ভর হবে অসীম, দৈর্ঘ্য হবে শুন্য! এজন্যই আসলে বলা যায় যে (এতোদিন বলা হয়েছে, সামনেও হয়ত বলা হবে) মহাবিশ্বে আলোর বেগই সর্বোচ্চ, একে অতিক্রম করা সম্ভব নয়।
আগেই বলেছি আলোর গতিবেগে রকেট যেতে পারবে না (পারবে যদি একেবারে ভরশুন্য কোনো রকেট কেও বানাতে পারে!), তাই প্রথম বন্ধুর কথা বাদ। দ্বিতীয় বন্ধুর ব্যাপারটা সম্ভব।
না,এমন ঘটবে না। আসলে লরেঞ্জ ট্রান্সফরমেশান থেকে বিষয়টা বোঝা যায়। যে বিজ্ঞানী পৃথিবীতে আছেন ২৫ বছর,তিনি আছেন স্থির প্রসঙ্গ কাঠামোয়,তার বয়স সাধারণভাবেই বাড়বে। আর যে রকেটে আছে গতিশীল প্রসঙ্গ কাঠামোয় তার বেগও সাধারণভাবেই বাড়বে তার নিজের কাঠামোর সাপেক্ষে-তবে স্থির বিজ্ঞানীর মনে হবে তার বয়স কম বাড়ছে।
ধরা যাক, পৃথিবীর বিজ্ঞানী ২৫ বছর পর রকেটকে ফিরিয়ে আনলেন। এখন ধরি রকেট চলেছে আলোর বেগের ০.৯ গুণ বেগে। তখন সময় সংকোচন সূত্র থেকে হিসেব করেই বের করতে পারব যে রকেটে থাকা বন্ধুর বয়স আসলে বেড়েছে ১০.৯ বছর। তখন বিজ্ঞানীর বয়স হবে (৩০+২৫)=৫৫ বছর, আর রকেটের বন্ধুটির বয়স হবে (৩০+১০.৯)= ৪০.৯ বছর।
বিষয়টি যে সম্পূর্ণ ভুল,বরং আপেক্ষিকতার অনুসিদ্ধান্তের একেবারে উলটো কথা বলে তা তারা জানে না। এই লেখাটি পড়ে দেখুন। এখানে বিস্তারিত আছে।
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
আপনার মন্তব্যের শেষ অংশের সাথে আমার আরেকটু বিভ্রান্তিও যোগ করি।
ধর্মবাদীদের এই ব্যাখ্যার কথা আমিও অনেক প্রযুক্তিজীবী-ধর্মবিজ্ঞানী ব্যক্তিদের কাছে শুনেছি। কিন্তু তাদের ব্যাখ্যাটা কি উল্টো হয়ে যায় না ? হযরত মুহাম্মদ মেরাজ ভ্রমণ শেষে যখন ফিরে আসেন তখনও তার অযুর পানি গড়িয়ে যাচ্ছে কিংবা দরজার হুড়কো-চেইনটা দুলছে তখনো। অর্থাৎ পৃথিবীর সময়ের হিসেবে মাত্র কয়েক সেকেন্ড পেরিয়েছে কেবল ! অর্থাৎ টাইম মেশিনের কল্পবিজ্ঞানকেও সত্যি ধরে নিলে আপনার মন্তব্য অনুসারে পৃথিবীতে বিরাট একটা সময় পেরিয়ে যাবার কথা। বিপরীত অবস্থা কি তাত্ত্বিকভাবেও সম্ভব ?
অর্থাৎ এটা কেবল স্বপ্নবিজ্ঞানের থিওরীতেই ব্যাখ্যা সম্ভব। গোটা রাত ধরে দুর্গম-দুর্ভেদ্য বিশাল থ্রিলযুক্ত মারাত্মক দীর্ঘ স্বপ্নভ্রমণের বাস্তব ফলাফল হলো আমাদের মস্তিষ্কের সামান্য কিছু মুহূর্তের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার অভিক্ষেপ মাত্র ! আমাদের মহান ধর্মবাদীরা যে উদ্ভট কল্পনার মধ্যে বিজ্ঞানের থিউরী বসাতে গিয়ে মানুষের মাথাকে ঘাড় থেকে নামিয়ে পাছায় আটকে দিচ্ছে, সে বোধও তাদের নেই।
এজন্যেই বলা হয়, ছাগল হওয়ার বিশাল সুবিধা হলো ছাগলামি করতে আগে থেকে কোন প্রমাণপত্র পেশ করতে হয় না। হা হা হা !
:lotpot: :lotpot: :lotpot:
@রণদীপম বসু,
সমপূর্ণ একমত।
@রণদীপম বসু,
আপ্নে পারেনও রণদীপমদা! আপনের লেখা কিন্তু অনেকদিন ধরে মুক্তমনায় দেখি না। লেখা ছাড়েন।
@রণদীপম বসু,
কেন ভাই স্বর্গ নরক যদি আরব সাগরের পাড়েই হয় তাহলে সমস্যা কি?মুহাম্মদের মনে হয় না এক আলোকবর্ষ দুরত্বও কল্পনা করা সম্ভব ছিল। সে ভাবছে কাছাকাছি কোথাওই হবে। এইসব ভুং ভাং নিয়া গবেষণা করাই সময় নষ্ট। এই পুরাতন স্ক্রিপচার পড়লেই বুঝা যায় এইগুলা ভুয়া। এত গবেষণা করা লাগে না। 🙂 😀 😛
পরীক্ষার ফলাফল যে ভুল ছিল সেটা তো ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ……………….
@তাশাহরিয়ার,
না এ ধরণের কোন ঘোষণা দেয়া হয় নি। হলে অবধারিতভাবে আমার লেখায় সেটা আসতো। বরং ২য় আরেকটি স্টাডিতে পূর্ববর্তী পরীক্ষায় যে ভুল ছিলো না সেটা জানা গেছে (দেখুন এখানে কিংবা এখানে)। কেবল ICARUS টিমের একটি গবেষণা সার্ণের পরীক্ষার সাথে কন্ট্রাডিক্ট করছে (গবেষণাপত্রটি এখানে)।
সার্নের পরীক্ষা আরো বেশ কয়েক জায়গায় পরীক্ষা করা হবে, তার আগে ‘পরীক্ষার ফলাফল ভুল ছিল’ – এ ধরণের ঘোষণা দেয়ার প্রশ্নই আসে না।
বুদ্ধ বলেছিলেন;
“সংষ্কার জিনিস মাত্রই “অস্থায়ী/অনিত্য”,
তারা উৎপন্ন হয় এবং বিলিয়ে যায়, যা তাদের ধর্ম;
তারা জন্মায় এবং মরে যায়,
তাদের থেকে মুক্তিই উচ্চমার্গের সুখ (নির্বাণ) ।।”
[পালিঃ অনিচ্চা ভাটা সঙ্কারা -উপ্পাদ ভয় ধম্মিনো; উপ্পজ্জিটভা নিরুজ্জন্টি – টেসম ভূপসম সুখো – মহা-পরিনিব্বানা সুত্তা (ডিএন-১৬) ]
তিনি আরো বলেছিলেন;
“পঞ্চস্কন্ধই অনিত্য, যাকিছু অনিত্য সবই দূঃখ; যাকিছু দূঃখ সবকিছুই আত্মাহীন (অনাত্ম) । যা আত্মাহীন তা আমার নয়, আমি সে নই, সে আমার আত্মা নই । এভাবে জ্ঞান চক্ষু দিয়ে দেখতে হবে যে জগতের ধর্মটাই এমন । যিনি জ্ঞানের চক্ষু দিয়ে দেখেন, যা যেমনই, তিনি মন দ্বারা কুলশিত হন না, কোনকিছুতে তার আগলিয়ে থাকেন না, তিনি স্বাধীন; তিনিই মুক্তগামী ।” [ এসএন ২২.৪৫ ]
@সুখী একজন,
এখানে কি চর্চা হচ্ছে? একটু ঝেড়ে কাশুন, ধম্ম বইয়ের রেফারেন্স চলবে না কিন্তু, কেমন?
@কাজী রহমান,
অভিজিৎ দাদার ভাষায় বলি: ধর্ম শক্ত পাথরে অক্ষয় লেখা আর বিজ্ঞান তার বিপরীত, অতএব একটি দিয়ে আরেকটির অস্তিত্ব বা আপেক্ষিকতা নির্ধারণ করা যায় কিনা আমি জানতে চাই।
পড়ে বেশ ভাল লাগলো। কারন নিউজ পেপারে দুই রকম খবর পেয়েছিলাম।
“এখন আপনার বেগ যদি আলোর বেগকে অতিক্রম করে যায়, মানে আপনি আলোর চেয়ে বেশি বেগে ভ্রমণ করতে থাকলে নানা ধরণের অস্বাভাবিক ব্যাপার স্যাপার ঘটতে থাকবে। আপনার জন্য সময়ের চাকা সামনে না চলে পেছনের দিকে চলতে থাকবে, আপনার ভর অসীমতার স্তর পার হয়ে, হয়ে যাবে কাল্পনিক, এবং আপনার দৈর্ঘ্য হয়ে যাবে ঋণাত্মক। সামগ্রিকভাবে এ ব্যাপারগুলো যুক্তি বহির্ভূত কেবল নয়, হাস্যকরও”
এখানে একটা সংশোধনী আছে মনে হয়।শুধু ভর নয়,সময় এবং দৈর্ঘ্য ও তো কাল্পনিক হয়ে যাবার কথা সমীকরন অনুযায়ী।আর ব্যাপারটা হাস্যকর হবার কিছু নেই।এই সমীকরনটা এসেছে আলোর দ্রুতি সর্বোচ্চ,এই স্বীকার্যকে মেনে নিয়েই।যদি স্বীকার্যে সংশোধন আসে, তখন সমীকরনটাও পালটে যাবে।ব্যক্তিগত ভাবে আমার ধারনা আইনস্টাইন ই সঠিন প্রমানিত হবেন শেষ পর্যন্ত।
@রাহাত ইবনে মুশফিক,
প্রথাগত অর্থে ঠিক বলেছেন। বস্তু কণার বেগ আলোর বেগকে অতিক্রম করলে ভর, দৈর্ঘ্য এবং সময় সবই কাল্পনিক রাশি হয়ে যাবে। বেগ বাড়তে বাড়তে আলোর বেগকে স্পর্শ করার আগ পর্যন্ত ভর এবং সময় বাড়বে (increase in effective mass এবং Time Dilation ) কিন্তু দৈর্ঘ্য কমবে (Length Contraction)। আলোর বেগকে অতিক্রম করে গেলে সেগুলো সবই কাল্পনিক মানে চলে যাবে, কারন, লোরেন্স ফ্যাকটরটাই হোয়ে যাবে কাল্পনিক –
[img]http://upload.wikimedia.org/wikipedia/en/math/4/3/8/438b75898e68d25fdbec4b2bcaba580d.png[/img]
(if v> c, term will be imaginary)
কিন্তু কাল্পনিক রাশিমালা নিয়ে সমীকরণ সমাধান করা যায় বইকি, আমরা সেগুলো কলেজ জীবনে করেছি (i এনে)। যেমন, একটা গণনা এখানে দেখতে পারেন। কাল্পনিক রাশি গোনায় নিলে সময় পেছনের দিকে চলবে, তেমনি দৈর্ঘ্যও হতে পারে ঋণাত্মক (সমীকরণের কমপ্লেক্স কঞ্জুগেট সমাধান করে পাব)।
হয়তো। তবে মনে রাখতে হবে যে, শূন্য পথে আলোর যা গতিবেগ, কোন বস্তুর গতিবেগ যদি তার সমান বা বেশী হয়, তবে সমীকরণগুলো নিরর্থক হয়ে পড়ে (উপরের প্রথাগত দৃষ্টিকোন থেকে বলছি)। এ থেকে একটা সিদ্ধান্ত করা হয়েছে – কোন পদার্থই আলোর সমান গতিবেগ অর্জন করতে পারবে না। সেই থেকে মহাবিশ্বের গতির সীমা নির্ধারিত হয় আলোর বেগ দিয়ে। অন্ততঃসে সময় আইনস্টাইনের অনুমান ছিলো সেরকমই।
দেখা যাক গবেষণা কোন দিকে যায়।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।
চমৎকার আর সুখপাঠ্য লেখার জন্য ধন্যবাদ অভিজিৎ’দা।
নিউট্রিনোর সুপারলুমিনাল হয়ে যাবার খবরে প্রথম থেকেই ধারাবাহিকভাবে নজর রাখছিলাম, মোটামুটি খুশিই হয়েছিলাম বলা চলে, পদার্থবিজ্ঞানের নতুন একটা যুগের সূচনা দেখতে পাচ্ছি এই ভেবে। কিন্তু তারপর যখন জানতে পারলাম তারা জার্নালে পেপার দেবার আগেই সংবাদ সম্মেলন করে ফেলেছে, তখনই বিষয়টা নিয়ে আশাহত হয়ে পড়ি। যত যাই হোক, পিয়ার রিভিউ হয়ে প্রথম শ্রেণীর কোনও জার্নালে যদি প্রথমে প্রকাশিত না হয়, তাহলে গবেষণাকাজে জড়িত কজন মাত্র বিজ্ঞানীর দৃষ্টিকোণ ছাড়া অন্যদের দৃষ্টিকোণের সমষ্টি এখানে ঘটেনি এটা বোঝাই যায়, এবং এই অবস্থায় পুরো বিষয়টা যতটা দৃষ্টি পাবার বা আলোড়ন তোলার কথা ছিলো, অনুপযুক্ত পর্যায়ে থেকেই তার চেয়ে বেশি আলোচিত হয়ে ওঠে বলে দেখতে পাই।
এই পরীক্ষণগুলোর পরে, আপনার লেখনীতে আরও জানতে পারার দাবি রেখে যাচ্ছি। 🙂
পরীক্ষণ চলতে থাকুক, বিজ্ঞান এগিয়ে চলুক নিজের গতিতে।
@অন্যকেউ,
চমৎকার মন্তব্যের জন্য আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।
বেশ ডিটেইলস লিখেছেন। আমার মতো পাবলিকের জন্যে বুঝতে সুবিধে হয়। (Y)
ভালো লাগল।
চমৎকার গুছিয়ে ব্যাপারটা লেখার জন্যে ধন্যবাদ। আগের চেয়ে একটু কম বিস্তারিত হলো লেখার ধরনটা। আশা করি বন্যা আপা সেরে উঠছেন।
@রূপম (ধ্রুব),
আপনাকেও ধন্যবাদ। আপনার কাছ থেকে বিস্তারিত একটা আলোচনা আশা করছিলাম যদিও।
তাই? এতেই পাবলিক অভিযোগ করতেছে ‘গবেষণা পত্রের মত’ নাকি হইছে! আর আপনে বলেন ‘কম বিস্তারিত’। কই যে যাই!
আপাততঃ ভালই আছে, যদিও এটা দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা, আরো কিছু পর্যায় বাকি আছে। কালকে দেখালাম আপনার মন্তব্যটা – বললাম সবাই তোমার অবস্থা জিগায়, আর তুমি হাওয়া।
আশা করিছি বন্যা মুক্তমনায় নিয়মিত হবে কিছু দিনের মধ্যেই।
@অভিজিৎ,
পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে বিস্তারিত বলা আমার পক্ষে সম্ভব ভাবলেন কী করে? সব বুঝে ফেলায় আসলে সন্দেহ হচ্ছিলো, তাই এই কথা বলা। 😀 কিছু মনে নেবেন না।
তবে এটা বলতে পারি যে একজন ইন্সট্রুমেন্টালিস্ট কিন্তু বিষয়টা নিয়ে একজন সায়েন্টিফিক রিয়েলিস্টের চেয়ে কমই বিব্রত অথবা চিন্তিত হবে। নির্লিপ্ততাই বেশি থাকবে। পরীক্ষার শুদ্ধতাটা খুব খুঁটে খুঁটে দেখা দরকার। কিন্তু জিপিএস টিপিএস আধুনিক বিজ্ঞানের সকল প্রোডাক্ট আইনস্টাইনের সূত্র মেনে চলে বলে আইনস্টাইনের সূত্র অলঙ্ঘনীয় তেমনটা ভাবার দরকার কী? ধরা যাক আইনস্টাইনের সূত্র কিছু কিছু ক্ষেত্রে লঙ্ঘন হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও তো অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে আইনস্টাইনের সূত্র চমৎকারই কাজ করছে। কম্পিউটার তো ঠিকমতোই চলছে। তাহলে আর দুশ্চিন্তার কী? সমস্যাটা তাদের যারা বাস্তবতাকে ইউনিফর্মলি রেগুলার ভেবে নিয়েই বসে আছেন, একচুলও নড়বেন না। পদার্থবিজ্ঞানের বহু শাখায় সূত্রগুলো যেহেতু চুলচেরা নিশ্চয়তা দেয়, তাই এই বদ্ধমূল ধারণা। গবেষণার একাগ্রতার জন্যে এটা হয়তো বেশ ভালো প্রেরণাদায়ক। কিন্তু ধারণাটা কিন্তু ইন্ডিফেন্সিবল। কারণ বিজ্ঞান বাই ইটসেল্ফ বাস্তবতা সম্পর্কে কোনো স্বতঃসিদ্ধ ধারণা পোষণ করতে বাধ্য না।
আর কোয়ান্টাম ফিজিক্সের মতো এতো ধাঁধাঁময় শাখা থাকতে বাস্তবতা নিয়ে বিহ্বলিত হতে তো আর বেশি দূরে যাওয়া লাগে না। মাইন্ড বডি প্রবলেমের কথা বাদই দিলাম।
বন্যা আপাকে আমার শুভেচ্ছা জানাবেন।
@রূপম (ধ্রুব),
যাক এবারে তাহলে একটু আলোচনা করার সূত্রপাত হল। দেখা যাক কোথাকার জল কোথায় গড়ায়।
তাই কি? আমি কিছুটা ত্যানা প্যাঁচাতে চাই এ ব্যাপারে। দেখা যাক আপনি কি উত্তর দেন। 🙂 আমি যদি বলি প্রকৃতি আমাদের মধ্যে কিছু সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে, সেটা আপনি ‘বাস্তবতা’কে ইউনিফর্মলি রেগুলার ভাবুন, কিংবা স্পাইরাল ভাবুন – আপনি সেই সীমাকে অতিক্রম করতে পারবেন না। যেমন ধরেন, আপনাকে যদি বলা হয় আপনি কি বস্তুর তাপমাত্রা ইচ্ছামতো কমাতে পারবেন? একটা সময় আমরা ভাবতাম বস্তুর তাপমাত্রা বুঝি যত ইচ্ছে কমান যায়। পরে বড় হয়ে জানলাম যে, থার্মোডাইনামিক্স আমাদের শিখিয়েছে তাপমাত্রা কমাতে কমাতে বরফ গলার ২৭৩ ডিগ্রি নীচে নামলে আমরা পরম শূন্য তাপমাত্রায় পৌঁছে যাই। এর নীচে নীচে আপনি চেষ্টা করলেও তাপমাত্রা কমাতে পারবেন না। এর প্রমাণ আমরা পেয়েছি এন্ট্রপির ধারণা আর পদার্থের আভ্যন্তরীণ কণার ছুটোছুটির পরিমাপ থেকে, তাই না?
এখন আপনার কোন ছাত্র যদি আপনার কাছে এসে দাবী করে যে, সে এমন একটি যন্ত্র আবিস্কার করেছে যেটা দিয়ে বস্তুর তাপমাত্রা পরম শূন্যেরও বারো ডিগ্রী নীচে কমানো যেতে পারে। আপনি কি শিক্ষক হিসেবে সেই ফলাফল বিশ্বাস করবেন, অবিশ্বাস করবেন, নাকি সংশয় করবেন? নাকি বলবেন যে, হয়তো পরম শূন্যের ব্যাপারটা কিছু কিছু ক্ষেত্রে লঙ্ঘন হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও তো অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে চমৎকারই কাজ করছে? 🙂
এবার আরেকটা। থার্মোডায়নামিক্স পড়ে আমরা জানি যে ‘পারপেচুয়াল মোশন মেশিন’ বা অবিরাম গতিযন্ত্র বানানো সম্ভব নয়। অর্থাৎ কোন যন্ত্র কখনোই বানানো সম্ভব নয় যেটি কিনা কোন শক্তি সরবরাহ করা ছাড়াই অবিরাম কাজ করে যাবে। এখন আপনার কোন ছাত্র যদি আপনার কাছে এসে দাবী করে যে, সে এমন একটি যন্ত্র আবিস্কার করেছে যেটা চালাতে কোন শক্তি লাগে না। অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে। আপনি এবারেই বা কি করবেন? শিক্ষক হিসেবে সেই ফলাফল বিশ্বাস করবেন, নাকি সংশয় করবেন? নাকি বলবেন যে, শক্তির নিত্যতার ব্যাপারটা কিছু কিছু ক্ষেত্রে লঙ্ঘন হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও তো অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে চমৎকারই কাজ করছে? 🙂
আরো কিছু উদাহরণ দিতে পারতাম, কিন্তু আপাততঃ এ দুটোতেই সীমাবদ্ধ থাকুক। হয়তো উপরের দুটো উদাহরণ থেকে এবার বুঝতে পারছেন, আমি কী বলতে চাইছি। পরম শূন্য তাপমাত্রায় পৌঁছুনো এবং অবিরাম গতিযন্ত্র বানানোর মতোই পদার্থবিজ্ঞানীরা জানেন যে কোন বস্তুকণার পক্ষে আলোর গতিকে অতিক্রম করা সম্ভব নয়। এখন সার্নের পরীক্ষায় যদি পাওয়া যায় যে কোন কণা আলোর গতিকে অতিক্রম করছে, তবে সেই ফলাফল কি বিশ্বাস করা উচিৎ, নাকি সংশয় করা; নাকি আপনার মতোই বলা উচিৎ আইনস্টাইনের সূত্র হয়তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে লঙ্ঘন হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও তো অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে আইনস্টাইনের সূত্র চমৎকারই কাজ করছে? 🙂
@অভিজিৎ,
শুনলে অবাক হবেন কিনা জানি না, আমি তত্ত্বের ব্যাপারে বাড়তি প্রত্যয় অনুভব করি না। আমাকে স্কেপটিক বলুন আর যাই বলুন। তত্ত্ব পর্যবেক্ষণের কাছে নস্যি। অবশ্যই বড় দাবীওয়ালা পর্যবেক্ষণকে বড় সড় প্রমাণ সূক্ষ্মতা শুদ্ধতা নিয়েই হাজির হতে হবে। ফলত একটা পরীক্ষা সেটা যেই করে দেখাক, সেই পরীক্ষার শুদ্ধতাটা জানতে হবে। সেটা পুনরুৎপাদনযোগ্য হতে হবে। ব্যক্তিক যন্ত্র হলে হবে নাকো। ফলে সনাতন একজন বিজ্ঞানের শিক্ষক একটা বিতর্কিত পরীক্ষাকে হয়তো তত্ত্ব দিয়েই উড়িয়ে দিবেন। ওতে যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিশেষ করে ঠকবাজদের ঠেকানোর ক্ষেত্রে অনেক সময় বেঁচে যাবে তাতে কোনো সন্দেহও নেই। কিন্তু যখন বিজ্ঞানের পরীক্ষা নিরীক্ষায় সিদ্ধ লোকজন তাদের পরীক্ষায় একটা বিতর্কিত ফলাফল দাবী করবে, তখন আপনাকে আপনার মহান সূত্রসমগ্রকে খানিকক্ষণ স্থগিত রেখে পরীক্ষার খুঁটিনাটি কিছু জানতে চাইতে হবে বৈকি! বা সেটা নাও করতে পারেন। বলতে পারেন যে পরীক্ষার ফলাফলের সাথে একটা অসঙ্গতিমুক্ত তত্ত্ব বা ব্যাখ্যাও আগে দাও দেখি, তারপর নয় নড়ে চড়ে বসা যাবে। কিন্তু পরীক্ষা যদি পুনরুৎপাদনযোগ্য হয় আর অন্য কারও কারও কাছে যদি সেটা পুনরুৎপাদন করার যন্ত্রও হাতে থাকে, তখন পরীক্ষাটা পুনরুৎপাদন করাটা একরকম নিয়ম হয়ে যায় কিনা!
ফলে আপনার কোনো ছাত্র এসে একটা যন্ত্রের কথা বলা আর সার্নের পরীক্ষার দাবীর মধ্য পার্থক্য করাটা খুব অন্যায় হয় বলে মনে হয় না। তবে বিতর্কিত পরীক্ষাকে কেবলই তত্ত্ব দিয়ে বিতাড়ণ করাটা সেটাকে মোকাবিলা করার একমাত্র উপায় নয়। মূল উপায় কিন্তু এখনো রয়ে গেছে, আর সেটা হলো পরীক্ষার পদ্ধতিকে এমনভাবে লিপিবদ্ধ করা যাতে সেটার ফলাফল অন্য আরেকজনও পুনরুৎপাদন করতে পারে। ফলে বিজ্ঞানের শিক্ষক চাইলে তত্ত্বের কথাটা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাকে এও বলতে পারে যে পরীক্ষাটার পদ্ধতিটা বর্ণনা করো তো দেখি বাপু। এই যন্ত্র কি আরেকজন তৈরি করতে পারবে? তৈরি করলে সে কি একই ফল পাবে? এই প্রশ্ন দুটোর যেকোনো একটির উত্তর যেকোনো পর্যায়ে ‘না’ হলে তাকে বৈজ্ঞানিকভাবে বিদায় করে দিতে কিন্তু কোনো বাড়তি তত্ত্বই লাগবে না। ফলে আপনার ছাত্রের দাবীর কথা আপাতত তুলে রাখা যায়।
সার্নের পরীক্ষায় আসি। ওরা কিন্তু ওই প্রশ্ন দুটোর কোনোটাতেই না বলছে না। পুনরুৎপাদন করে একই ফলাফল পাওয়া গেলে আপনার হাতের সবচেয়ে প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বটি যদি সেটার টিকিটাও ধরতে না পারে, তাহলে দোষ কার? পর্যবেক্ষণের নয়, তত্ত্বের। পর্যববেক্ষণকে পূর্বাভাসযোগ্যভাবে ব্যাখ্যা করতে না পারলে সেটা আমাদের ব্যর্থতা। ব্যর্থতা নিয়ে বিচলিত হবার তেমন কিছু তো নেই। চিন্তার দুয়ারকে আরো প্রসারিত করলে মানানসই একটা তত্ত্ব নিশ্চয়ই এসে ধরা দেবে। তত্ত্ব আদৌ পাওয়া যাবেই না কখনো, অতোটা স্কেপটিক কিন্তু হয়ে উঠি নি। ঠিক যতোটা দরকার, ততোটা স্কেপটিসিজম ধারণ করছি। সার্নের পরীক্ষার ব্যাপারে যথেষ্ট স্কেপটিসিজম ইতোমধ্যেই দেখানো হয়ে গেছে (যেটা অত্যন্ত সঙ্গত বলে মনে করি) প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বের হেজামোনির পক্ষ থেকে। আমি তাই এখানে সংশয়ের অন্য পিঠটি দেখালাম। 🙂
@রূপম (ধ্রুব),
বলতে চেয়েছি –
*তত্ত্ব আদৌ পাওয়া যাবেই না কখনো, এমনটা বলার মতো স্কেপটিক কিন্তু নই।
তবে ওটা ঠিক স্কেপটিসিজমও নয়। ওটা একরকম ভিত্তিহীন নিরাশাবাদ।
@রূপম (ধ্রুব),
আরেকটা কথা না বললেই নয়। বিজ্ঞান কিন্তু কেবল পাঠেরই বিষয় নয়। আলোচনা, বাদানুবাদেরও বিষয়। সাধারণভাবে জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রেই হয়তো বিষয়টা প্রযোজ্য। ধারণা কেবল পাঠে আর চিন্তাতেই তৈরি হয় না, কথোপকথোনের যে দ্বন্দ্ব বিতর্ক আর সংঘাত, সেটা ধারণার বিকাশকে বেগবান করে। বাংলায় এটা করার সুযোগ বিরল বললে ভুল হবে না। মুক্তমনায় সেটা আজ পর্যন্ত যে পরিমাণ করেছি, সেরকম অন্য কোথায় করার সুযোগ পেয়েছি বলা যাবে না। আপনি যে যেচে পড়ে বিতর্ককে আহ্বান জানালেন, সেটাকে সাধুবাদ জানাই। অনেকে খালি একমুখীভাবে জ্ঞান বিতরন করেই নিরস্ত হয়। কাটিং এজ বিষয় নিয়ে লেখায় আলোচনা হওয়াই কাম্য। আজকাল বাংলায় বিজ্ঞান চর্চা করা যাবে যাবে না বলে একটা তর্ক উঠছে। শুধু লেখা নয়, বাংলায় বাদানুবাদও করা গেলে বিজ্ঞান ‘চর্চা’ বাংলায় খুব ভালোভাবেই সম্ভব হবে।
@রূপম (ধ্রুব),
একদম ঠিক কথা। বিজ্ঞানীদের বাদানুবাদ নিয়ে আপনাকে ফাহাম আব্দুস সালামের দুইটা লেখা দেই, পড়ে মজা পাবেন।
বেঁচে থাক শত্রুতা -১
বেঁচে থাক শত্রুতা -২
আপনাকেও ধন্যবাদ। বিতর্কে ডাকাতে যে আপনি ভালই প্রেরণা পেয়েছেন তা বুঝতে পারছি। এই প্রেরণাটুকু বেঁচে থাক।
এখন আলোচনা প্রসঙ্গে বলি – সার্নের পরীক্ষার ফলাফল যদি সঠিক হয়, তবে বলতে হবে আপেক্ষিক তত্ত্বের মাধ্যমে আমরা যে বাস্তবতাটা প্রকাশ করেছি এতোদিন ধরে, সেটা সম্ভবতঃ সেভাবে সঠিক নয়। ঠিক যেভাবে বলা যায় যে আপনার ছাত্র যদি পরম শূন্য তাপমাত্রার নীচে কোন তাপমাত্রা নিয়ে আপনাকে দেখাতে পারে – তবে পরম শূন্য কেন্দ্রিক বাস্তবতাটা যেটা আমরা এতদিন ধরে তাপগতীয়বিদ্যা দিয়ে ব্যাখ্যা করে আসছিলাম সেটা হয়ত সঠিক নয়। কিন্তু বাস্তবতাগুলোকে প্রশ্ন করার আগে (কারণ এই বাস্তবতাগুলো অতীতে আরো হাজারখানেক পরীক্ষা দিয়ে প্রমাণিত হয়ে ইতোমধ্যেই একটা দৃঢ় অবস্থানে চলে গেছে), বরং আপনার ছাত্রের ব্যতিক্রমী পরীক্ষার ব্যতিক্রমী ফলাফলটিকেই আগে প্রশ্ন করা কি আরো যৌক্তিক হবে না? 🙂 দেখুন, এর মধ্যেই কিন্তু সার্নের ফলাফলের সাথে ICARUS টিমের ফলাফল কন্ট্রাডিক্ট করছে।
তবে আপনার অবস্থানটা বুঝতে পারছি। এ নিয়ে বেশি বাদানুবাদ করে লাভ নেই। আপনি যে তত্ত্বের ব্যাপারে বাড়তি প্রত্যয় অনুভব করেন না, সেটা একটা দার্শনিক অবস্থান। অনেক বিজ্ঞানীই আছেন যারা আপনার মতো – মনে প্রাণে শতভাগ ব্যবহারিক, তত্ত্ব ফত্ত্ব নিয়ে খুব বেশি মাথা ব্যাথা তাদের নেই। ভিক্টর স্টেঙ্গর এমনি একজন। তিনি এমনকি পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলোকেও ‘হিউম্যান ইণ্টারপ্রিটেশন’ মনে করেন। এ নিয়ে অপার্থিবের সাথে আমার একটা দারুণ আলোচনা হয়েছিলো এখানে এবং এখানে।
@অভিজিৎ,
মানুষের নিকট আপতিত পর্যবেক্ষণ থেকে উদ্ধার করা তাত্বিক পাঠ তো মানুষের ইন্টারপ্রিটেশানই! দেখলেন তো, আমার কাছে এটা খুব স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। 🙂
আপনার দেয়া আলোচনার লিংকে গিয়ে পড়তেই মনে হচ্ছিল রৌরব মনে হয় একদম ঠিক উত্তরটাই দেবেন অপার্থিবকে, তখনই তিনি শুধালেন –
আমাদের কৈশোরিক পদার্থবিজ্ঞান পাঠ এই নান্দনিকতায় পূর্ণ ছিলো বলে একে প্রকৃত বাস্তবতা না মনে করাটা একেবারে অসম্ভব প্রায়। অনেকটা ঈশ্বরে বিশ্বাসের মতো। কিন্তু একটু তলিয়ে দেখতে গেলেই কিন্তু দেখবেন – বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণের পুনরুৎপাদনযোগ্য ও পূর্বাভাসক্ষম ব্যাখ্যা তৈরি করছে, এবং একদিন ভুল প্রমাণ হবার জন্য ও পুনরায়িত হবার জন্য অপেক্ষা করছে। বাস্তবতার সোনার হরিণ ধরিয়ে দেয়া কিন্তু দর্শনগতভাবে বিজ্ঞানের লক্ষ্য নয়। বাস্তবতা বিষয়টাই মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত মেটাফিজিক্যাল ক্যাটাগরির ধারণা। আত্মার মতো। ঈশ্বরের মতো। সেটার হদিস বিজ্ঞানকে পাইয়ে দিতে হবে কেনো? বিজ্ঞানের কাছে পর্যবেক্ষণের চেয়ে বেশি আর কীই বা আছে?
এ নিয়ে তর্ক শেষ হয় না কেনো জানেন? একবার যখন দর্শনের মৃত্যু হয়েছে কি হয় নি তর্ক হচ্ছিল, আমি বলেছিলাম যে বিজ্ঞানকে সংজ্ঞায়িতই তো করে দর্শন। আর আমরা কিন্তু এখন বিজ্ঞানের সংজ্ঞা নিয়েই আলোচনা করছি। ফলে আমরা দার্শনিক আলোচনা করছি। কেবলই দার্শনিক নয়। মেটাফিজিক্যাল। মানে পর্যবেক্ষণ অসংশ্লিষ্ট। পর্যবেক্ষণ থেকে পাওয়া তত্ত্ব বাস্তবতা নাকি না, সেটা কিন্তু পর্যবেক্ষণ দ্বারাই আর ভেরিফাই করা যাবে না। কারণ প্রশ্নটাই পর্যবেক্ষণের কোয়ালিটেটিভ প্রোপার্টি নিয়ে। এখানে বিজ্ঞানের চলাচল নেই। কিন্তু তার মানে এই না যে অন্য কোনো কিছু এর কিছু একটা সমাধান দিতে পারে। পর্যবেক্ষণ-অসংশ্লিষ্ট সকল যুক্তি ও গণিত অ্যাক্সিওমেটিক, এবং ফলে মেটাফিজিক্যাল তর্ক অমীমাংসাযোগ্য। কিন্তু তারপরেও যদি কিছু বলতেই হয়, তাহলে বার বার এটাই বলবো যে –
@রূপম (ধ্রুব),
সাথে আপনার একটা কথাও উদ্ধৃত করা দরকার।
এ কারণেই কেবল পর্যবেক্ষণরে পুজি। অদেখা আধিবিদ্যিক তত্ত্বরে না, কারণ আমরা সংশয়বাদী, নাস্তিক।
@রূপম (ধ্রুব),
আরেকটা ব্যাপার যেটা, বাংলা ভাষার বিজ্ঞান লেখকদের মাঝে তত্ত্বঅন্তপ্রাণ যতো যতো জন, পর্যবেক্ষণবাদী তার চেয়ে বেশ কম। আমি আসলে তেমন কাউকে জানিই না। হয়তো চিনি, কিন্তু জানি না যে তিনি পর্যবেক্ষণবাদী। এখন, এ সংখ্যা এতো অল্প হবার কারণটা অনেকগুলো হতে পারে। এক, আমাদের অঞ্চলের জ্ঞানচর্চা মূলতই আধ্যাত্মবাদ এবং ফলত তত্ত্বকেন্দ্রিক। আরেকটা যেটা হতে পারে যে আমাদের দেশে বিজ্ঞানভক্ত বলতেই পদার্থবিজ্ঞানে উৎসুক দেখা যায়। আর এই বিষয়ে তত্ত্বঅন্তপ্রাণরা তো পশ্চিমেই এখন রাজত্ব করছেন। ফলে পদার্থবিজ্ঞান দিয়ে যাদের বিজ্ঞানের সাথে পরিচয়, তারা ‘তত্ত্বই সত্য’ শিখেই তো বিজ্ঞান শিখবেন।
কিন্তু পশ্চিমে বিজ্ঞানের এনলাইটমেন্টের সবচেয়ে বড় নিয়ামক যে পর্যবেক্ষণবাদ, সেটা গভীরে প্রোথিত না হলে বিজ্ঞানের মূল মর্মটা বাঙালির ঘটে অধরা রয়ে যাবে বলেই আমি মনে করি। আর এতে কোনো সন্দেহ নেই যে পর্যবেক্ষণবাদী বলে খ্যাতি বাঙালির ছিলো না কোনোকালে।
@রূপম (ধ্রুব),
পর্যবেক্ষণবাদের আরেকটা শক্তির কথা লিখে রাখি।
ঈশ্বরের অস্তিত্বকে তত্ত্ব দিয়ে বিদায় করার স্ট্যাটাস কী? তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান দিয়ে অনেক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানান কায়দা করে হাওয়ায় হাওয়ায় নাই করা লাগছে ঈশ্বরের প্রয়োজনীয়তা। খুব সফল বলা যাবে না। অন্যদিকে, শুদ্ধ গণিত দিয়ে ঈশ্বরের অস্তিত্ব অনুসন্ধানের স্ট্যাটাস তো আরো খারাপ। স্বয়ং গোডেল সেখানে ঈশ্বরের অস্তিত্বের গাণিতিক প্রমাণ উদ্ধার করে বসে আছেন। যদিও সেটা অ্যাক্সিওম্যাটিক, ওয়েল কোন গাণিতিক প্রমাণ সেটা না?
কিন্তু পর্যবেক্ষণবাদে ঈশ্বরের স্ট্যাটাস কল্পনা করুন। দেখাই যায় না এরকম কিছু। সেই দেখা পুনরুৎপাদন তো দূরের কথা। পর্যবেক্ষণবাদে ফলে ঈশ্বরের প্রসঙ্গই অবৈজ্ঞানিক, অবান্তর।
@রূপম (ধ্রুব),
আপনার মন্তব্যের সাথে আমি সার্বিকভাবে একমত। আমি নিজেও ফলসিফায়াবিলিটি এবং পর্যবেক্ষণবাদের সবিশেষ ভক্ত। এই লেখাতেও আমি ফলসিফায়াবিলিটি বা বাতিলযোগ্যতার কথা উল্লেখ করেছি প্রথমেই – খেয়াল করেছেন নিশ্চয়। শুধু ঈশ্বর শুধু নয় – ফ্লাইং স্প্যাগেটি মনস্টার, ট্যাশ গরু, হাম্পটি ডাম্পটি, থর জিউস – যে কোন পগালামি ছাগলামিকেই পর্যবেক্ষণবাদের চাকু দিয়ে ফালা ফালা করে ফেলা যায়, কোন ধরণের তত্ত্ব ফত্ত্ব না আউরেই। সেজন্যই আমাদের কাছে পর্যবেক্ষণের গুরুত্ব এতটা।
কিন্তু তারপরেও মাঝে মধ্যে ভাবি – আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান এমন একটা জায়গায় চলে গেছে যার অনেক কিছুই এখন ট্যাশ গরুর মতোই বিমূর্ত – স্ট্রিং তত্ত্ব, মাল্টিভার্স, প্যারালাল ওয়ার্ল্ড, হিগস কণা, ডার্ক ম্যাটার, ডার্ক এনার্জি, হলোগ্রাফিক ইউনিভার্স, হিডেন ডাইমেনশন, টাইম ট্রাভেল … এমনতরো হাজারো জিনিস… কেবল পর্যবেক্ষণের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত টানতে গেলে আপনার একঘরে হয়ে যাবার সম্ভাবনা থেকে যাবে। এমনকি বিগ ব্যাং এর ধারণাও সরাসরি পর্যবেক্ষণ করে পাওয়া যায়নি। কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন সহ যে প্রমাণের কথা বলা হয় সেগুলোও কিন্তু পরোক্ষ প্রমাণ, এক ধরণের ইণ্টারপ্রিটেশনই। তারপর ধরুন – ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্বও গাণিতিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে আগে, পর্যবেক্ষণগত (সেটা যদি সে অর্থে আদৌ পর্যবেক্ষণ হয়ে থাকে) প্রমাণ পাওয়া গেছে অনেক পরে।
স্ট্রিং তাত্ত্বিক ব্রায়ান গ্রিন সম্প্রতি একটা বই লিখেছেন The Hidden Reality নামে। পড়ছিলাম আর ভাবছিলাম – কে জানে তার বর্ণিত রিয়ালিটির কতভাগ আসলে সত্যিকারের বাস্তবতা!
প্রচার আর তত্ত্ব কপচিয়ে যে গরুগুলো অলরেডি গাছে চড়ে বসেছে পর্যবেক্ষণবাদ দিয়ে তাদের কয়টাকে পর্যবেক্ষণবাদের কুঠারের আঘাতে আবার গাছ থেকে নামিয়ে ঘাস খাওয়ানো যাবে, তা হয়তো ভবিষ্যতই বলবে।
@অভিজিৎ,
এক ঘরে হবার ভয় তো অথোরিটির ভয়। এমনি তো এই সকল ট্যাশ গরুই মান্য হয় কেবল কারণ (অসরাসরি হলেও) পর্যবেক্ষণযোগ্য দুগ্ধ প্রদান করে দেখে।
তা ব্ল্যাক হোলের পর্যবেক্ষণগত প্রমাণ পাওয়া না গেলে ওটার অস্তিত্ব ব্যতিরেকেই যে আরেকটা অল্টার্নেটিভ গাণিতিক তত্ত্বের প্রমাণ খাঁড়া হয়ে যেতো, সেটা নিশ্চয়ই আঁচ করতে পারছেন। এমন কোনো তত্ত্ব নেই যেটা কখনোই ভুল হতে পারে না ধরনের মর্যাদাসম্পন্ন। এটাই তত্ত্বের মর্যাদাটা ঠিক কী, সেটা নির্দেশ করে। তাই তত্ত্বকে পর্যবেক্ষণে সিদ্ধ হবার জন্যে সাধনা করে যেতেই হবে।
যত দুর জানি সার্ন-এর মূল গবেষণার বিষয় ছিল বিশ্ব সৃষ্টির আদি কণা আবিষ্কার। তার কোন খবর নেই, খবর পাওয়া গেল অন্যটার। এটা অনেকটা – শিব গড়াতে গিয়ে বানর গড়ার মত। যাহোক, এমনও তো হতে পারে যে, আমাদের পরিচিত চার মাত্রিক জগতে আলোর গতি আইনষ্টাইনের সীমা মেনে চলে, কিন্তু পরীক্ষিত নিউট্রিনো গুলো কোন এক অদৃশ্য কারণে আমাদের পরিচিত চার মাত্রাকে অতিক্রম করে ভ্রমণ করছে, আর তাই তা আলোর গতির চেয়ে বেশী গতিতে ভ্রমণ করছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে। তবে কিছুদিন আগে কোন একটা খবরে দেখেছিলাম- বিজ্ঞানীরা পরে বলেছেন যে তাদের পরীক্ষায় কোথায় যেন একটা ত্রুটি ছিল তাই পূর্বে প্রদত্ত ফলাফল সঠিক নয়। পরিশেষে, নিউট্রিনো কণা যার ধর্ম কি সেটাই এখনো ঠিক মতো বার করতে পারেনি বিজ্ঞানীরা সেখানে সে কিরূপ আচরণ করবে সেটা বের করতে সময় তো একটু লাগবেই। দেখা যাক অবশেষে কি ঘটে। অপ্রাসঙ্গিক ভাবে বলে রাখি, ধর্মবাদীরা কিন্তু ইতিমধ্যেই এটা নিয়ে বেশ খুশীতে আটখানা হয়ে গেছে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মত কোন কিছু না বুঝেই। তারা ভুলে গেছে যে – ইতোমধ্যে তারা সৃষ্টিকর্তার নানা কিচ্ছা কাহিনী আপেক্ষিকতাবাদের তত্ত্ব মোতাবেক প্রদান করেছিল তারও মৃত্যু ঘটবে এটার সাথে সাথে। সেই সাথে তথাকথিত সৃষ্টিকর্তারও যে অপমৃত্যু ঘটবে – তা ঠিকমতে উপলব্ধি করতে পারছে না।
@ভবঘুরে,
<ধর্মবাদীরা কিন্তু ইতিমধ্যেই এটা নিয়ে বেশ খুশীতে আটখানা হয়ে গেছে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মত কোন কিছু না বুঝেই। তারা ভুলে গেছে যে – ইতোমধ্যে তারা সৃষ্টিকর্তার নানা কিচ্ছা কাহিনী আপেক্ষিকতাবাদের তত্ত্ব মোতাবেক প্রদান করেছিল তারও মৃত্যু ঘটবে এটার সাথে সাথে। সেই সাথে তথাকথিত সৃষ্টিকর্তারও যে অপমৃত্যু ঘটবে – তা ঠিকমতে উপলব্ধি করতে পারছে না।>
ভালো লাগলো
সুপার্ব
@অভিজিৎ দা,
অনেক অনেক ধন্যবাদ, এ বিশয়ের উপর লিখার জন্য। দেখা যাক তথ্য-প্রমানের ভিত্তিতে বিজ্ঞান কোন নতুন জ্ঞানের সন্ধান দেয় কিনা। আপনি বিজ্ঞানের অনেক কঠিন বিষয়ও সহজ ভাষায় লিখতে পারেন। বুঝতে কোনই অসুবিধা হয় না।
শুধু বিজ্ঞান নয়, জীবন-জগতের কোন কিছুই স্থবির নয়। সর্বদায় পরিবর্তনশীল।
ধর্ম-গ্রন্থের বানীই শুধু ব্যতিক্রম। (F) (Y)
অনেক অপেক্ষায় ছিলাম লেখাটার জন্য। অনেক ধন্যবাদ।
আরেক জায়গাতে পড়েছিলাম। সম্ভবত কোন রাশান বিজ্ঞানী। উনি বলছেন এ পরীক্ষায় টাইম হিসাব করার সময় আপেক্ষিকতাকে আমলে নেয়া হয় নি। এ ব্যাপারে কিছু জানেন?
কোন বস্তুর ভর বাড়া কি সম্ভব? স্থান বিশেষে বস্তুর ওজনের তারতম্য হতে পারে কিন্তু ভরের তারতম্য কিকরে হবে?বাড়তি জিনিস কোত্থেকে আসবে? গতি বাড়লেই দৈর্ঘ্য কমবে কেন এবং কিভাবে? তত্ত্বগুলো বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরীক্ষালব্ধ। কিন্তু আমার বোধগম্য নয়। একটু সহজ ক’রে বুঝিয়ে বলা যাবে কি? Black hole এর ব্যাপারটাও ভাল বুঝতে পারিনা।
@তামান্না ঝুমু, আইন্সটাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের অসাধারণ তিনটি অনুসিদ্ধান্ত আছে,সেগুলো হলো- সময় প্রসারণ, দৈর্ঘ্য সংকোচন আর ভরের পরিবর্তন। আইনস্টাইনের প্রদত্ত স্বীকার্য থেকে যে গাণিতিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় কোনো বস্তুর ভর যদি বাড়তে থাকে তাহলে তার ভরও বাড়বে স্থির প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে( যদিও তার নিজের প্রসঙ্গ কাঠামোতে তার ভর একই থাকবে),এর জন্য এতে কোনো বাড়তি পদার্থ যোগ হবে না। তেমনিভাবে আরেকটি অনুসিদ্ধান্ত হলো, কোনো বস্তু যদি একটি স্থির কাঠামোর সাপেক্ষে আলোর বেগের কাছাকাছি বেগে গতিশীল হয় তাহলে স্থির কাঠামো থেকে আমরা দেখতে পাবো যে তার দৈর্ঘ্য কমে যাচ্ছে! যতোই আজব মনে হোক না কেন,এটাই সত্যি। এবং তা নানা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত।
আর ব্ল্যাক হোল জিনিসটা সাধারণ আপেক্ষিকতা’র সাথে সম্পর্কিত। ব্ল্যাক হোল জিনিসটা আসলে অন্য কিছুই না,এটা একটা বিশাল ভরের নক্ষত্র; যার মহাকর্ষ এতোই প্রবল যে এ থেকে আলোর কণাও ছুটে বের হতে পারে না। আর নক্ষত্রের বিশাল ভর স্থান-কালের চাদরকে সংকূচিত করে,সোজা কথায় স্থান-কালের চাদরে গর্ত করে ফেলে। এটাই ব্ল্যাক হোল। একটা টান টান করে রাখা চাদরে যদি কোনো ভারী বস্তু রাখি তাহলে চাদরে একটা গর্ত হবে,ব্যাপারটা অনেকটা ওরকম।
@নিটোল, আপনার টাইপে বোধ হয় একটু ভুল হয়েছে; “কোনো বস্তুর ভর যদি বাড়তে থাকে তাহলে তার ভরও বাড়বে স্থির প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে”। এখানে “ভর যদি বাড়তে থাকে” এর যায়গায় “বেগ যদি বাড়তে থাকে” হবে।
আপনার ব্যাখ্যামূলক মন্তব্যটি ভাল লাগল।
@zillur rahman, টাইপের ভুলটুকু ধরিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ।
@নিটোল,
ধন্যবাদ ব্যাখ্যার জন্য। ব্ল্যাক হোলের ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছি। তবে আপেক্ষিক তত্ত্ব এখনো বুদ্ধিসীমার বাইরেই রয়ে গেল।
@তামান্না ঝুমু,
দেখা যাক আমি কিছুটা সফল হই কিনা আপনাকে ব্যাখ্যা করতে।
আপনি সবার আগে আমার আগেকার এই প্রবন্ধটি পড়ে নিতে পারেন, হয়তো পুরো ব্যাপারটা বুঝতে সুবিধা হবে, তাইলে।
আপনি যে ব্যাপারটা বুঝতে পারছেন না, সেটা স্বাভাবিকই। কারণ আমরা নিউটনের ফ্রেম অফ রেফারেন্সে সবকিছু ভাবতে অভ্যস্থ। আমাদের জাগতিক বেগ আলোর বেগের তুলনায় নগন্য। এমনকি আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগামী প্লেন কিঙ্গাব ট্রেনে চড়েন না কেন, আপনি আলোর বেগের তুলনায় এতোটা পেছনে পড়ে রইবেন যে, ভর বাড়ছে কি কমছে সেটা আপনার মাথাতেই আসবে না। সেজন্য আমরা ভরের কোন রদব্দল দেখতে পাই না। কিন্তু আলোর বেগের কাছাকাছি বেগে গেলে হবে। আলোর বেগ একটা অদ্ভুত চিজ। মন মানতে চায় না; কারণ এই ব্যাপারটি বস্তুর বেগ সংক্রান্ত আমাদের সাধারণ পর্যবেক্ষণের একেবারেই বিরোধী। যেমন ধরা যাক, আপনি একটি রাস্তায় ৪০ কি.মি বেগে গাড়ী চালাচ্ছেন। আপনার বন্ধু ঠিক বিপরীত দিক থেকে আরেকটি গাড়ী নিয়ে ৪০ কি.মি বেগে আপনার দিকে ধেয়ে এল। আপনার কাছে কিন্তু মনে হবে আপনার বন্ধু আপনার দিকে ছুটে আসছে দ্বিগুন (৪০ + ৪০ = ৮০ কি.মি) বেগে। আলোর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা অন্যরকম। ধরা যাক, একজন পর্যবেক্ষক সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিলোমিটার বেগে আলোর উৎসের দিকে ছুটে চলেছে। আর উৎস থেকে আলো ছড়াচ্ছে তার নিজস্ব বেগে – অর্থাৎ সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কিলোমিটারে। এখন কথা হচ্ছে পর্যবেক্ষকের কাছে আলোর বেগ কত বলে মনে হওয়া উচিৎ? আগের উদাহরণ থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতা বলে – সেকেন্ডে (১ লক্ষ ৫০ হাজার + ৩ লক্ষ =) ৪ লক্ষ ৫০ হাজার কিলোমিটার। আসলে কিন্তু তা হবে না। পর্যবেক্ষক আলোকে সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার বেগেই তার দিকে আসতে দেখবে। ব্যাপারটা ব্যতিক্রমী সন্দেহ নেই, কিন্তু এ ব্যাপারটা না মানলে গ্যালিলিওর ‘প্রিন্সিপাল অব রিলেটিভিটি’র কোন অর্থ থাকে না। আইনস্টাইন তার তত্ত্বের সাহায্যে আরো দেখালেন, যদি কোন বস্তু কণার বেগ বাড়তে বাড়তে আলোর গতিবেগের কাছাকাছি চলে আসে, বস্তুটির ভর বেড়ে যাবে (mass increase) নাটকীয় ভাবে, দৈর্ঘ্য সঙ্কুচিত হয়ে যাবে (length contraction) এবং সময় ধীরে চলবে (time dialation)। সময়ের ব্যাপারটা সত্যই অদ্ভুত। বিজ্ঞানী-অবিজ্ঞানী বির্বিশেষে সবাই সময় ব্যাপারটিকে এতদিন একটা ‘পরম’ (absolute) কোন ধারণা হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন; সময় ব্যাপারটা রাম-শ্যাম-যদু-মধু সবার জন্যই ছিলো সমান, যেন মহাবিশ্বের কোথাও লুকিয়ে থাকা একটি পরম ঘড়ি অবিরাম মহাজাগতিক হৃৎস্পন্দনের তালে তালে স্পন্দিত হয়ে চলছে, টিক্, টিক্, টিক্, টিক্… … যার সাথে তুলনা করে পার্থিব ঘড়িগুলোর সময় নির্ধারণ করা হয়। কাজেই সময়ের ব্যাপারটা আক্ষরিক আর্থেই ছিল পরম, কোন ব্যক্তিবিশেষের উপর কোনভাবেই নির্ভরশীল নয়। কিন্তু আইনস্টাইন রঙ্গমঞ্চে হাজির হয়ে বললেন, সময় ব্যাপারটা কোন ভাবেই ‘পরম’ নয়, বরং আপেক্ষিক। আর সময়ের দৈর্ঘ্য মাপার আইনস্টাইনীয় স্কেলটা লোহার নয়, যেন রাবারের – ইচ্ছে করলেই টেনে লম্বা কিংবা খাটো করে ফেলা যায়! রামের কাছে সময়ের যে দৈর্ঘ্য তা রহিমের কাছে সমান মনে নাও হতে পারে। বিশেষতঃ রাম যদি দ্রুতগতিতে চলতে থাকে, রহিমের তুলনায় রামের ঘড়ি কিন্তু আস্তে চলবে! আরেকটা জিনিস বেরিয়ে আসল আইনস্টাইনের তত্ত্ব থেকে। শূন্য পথে আলোর যা গতিবেগ, কোন বস্তুর গতিবেগ যদি তার সমান বা বেশী হয়, তবে সমীকরণগুলো নিরর্থক হয়ে পড়ে। এ থেকে একটা সিদ্ধান্ত করা হয়েছে – কোন পদার্থই আলোর সমান গতিবেগ অর্জন করতে পারবে না। সেই থেকে মহাবিশ্বের গতির সীমা নির্ধারিত হয় আলোর বেগ দিয়ে।
আগেই বলেছি জাগতিক বাস্তব অভিজ্ঞতা দিয়ে mass increase, length contraction, কিংবা time dialation বোঝা সম্ভব হবে না, তবে আইনস্টাইন রিলেটিভিটির যে সমীকরণ গুলো আমাদের দিয়েছেন সেখান থেকে হয়তো কিছুটা ধারণা আপনি পেতে পারবেন।
যেমন, লেন্সথ কন্ট্রাকশনের ফরমুলা হচ্ছে –
[img]http://upload.wikimedia.org/wikipedia/en/math/c/a/e/cae3b3fc8d956b8718c280aafcb8a175.png[/img]
যেখানে L0 হচ্ছে স্থির বস্তুর দৈর্ঘ্য, আর L হচ্ছে গতিশীল বস্তুর দৈর্ঘ্য। যদি গতিশীল বস্তুকণার বেগ আলোর বেগের সাপেক্ষে খুব কম হয় v/c এই মানটা শুন্যের কাছাকাছি থাকবে। ফলে L = L0 পাবেন আপনি সবসময়ই। আমরা সেজন্যই প্রাত্যহিক জীবনের দৈর্ঘ্যের কোন রদবদল লক্ষ্য করি না।
কিন্তু যদি v = 0.8c হয়, এবং একটা ত্রিশ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্যের একটা কাঠিকে ([img]http://upload.wikimedia.org/wikipedia/en/math/6/a/c/6ac5dd92364666ddb1e1c02de090d006.png[/img] ) সমীকরণে ফেললে দেখা যাবে সেটা কমে ১৮ সেন্টিমিটার হোয়ে গেছে –
[img]http://upload.wikimedia.org/wikipedia/en/math/2/2/0/220dd49b0613375f75f638731cfc58eb.png[/img]
ভরের ব্যাপারটাও তেমনি। সমীকরণ হল –
[img]http://hyperphysics.phy-astr.gsu.edu/hbase/relativ/imgrel/mrele.gif[/img]
বেগ বাড়ার সাথে সাথে ভর বাড়তে থাকবে। v = 0.8c প্রবেশ করিয়ে দেখতে পারেন। । একই ভাবে টাইম ডায়ালেশনের ফরমুলাও বের করা হয়েছে। এই সাইটে আপনি সরাসরি ক্যালকুলেট করতে পারবেন ব্যাপারগুলো। বেগ বাড়ার সাথে সাথে ঘড়ি আস্তে চলবে! সত্যি!
আগেই বলেছি, আমরা প্রাত্যহিক জীবনে এই পরিস্থিতির সম্মুখিন হই না, কারন, আমাদের যানবাহনগুলোর বেগ আলোর বেগের তুলনায় খুবই কম। কিন্তু বেশি বেগের ক্ষেত্রে টাইম-ডায়ালেশঅন অবশ্যই একটি ফ্যাক্টর। এর প্রমাণ পাওয়া গেছে মিঊয়ন কণার চলাচলে। এটি টাইম ডায়ালেশনের একটি প্র্যাক্টিকাল প্রমাণ। এই মিউয়ন কনা পৃথিবীর ছয় কিলোমিটার বা আরো বশি উপরে বায়ুমন্ডলের পরমানূ নিউক্লিগুলোর সাথে মহাজাগতিক রশ্মির সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট হয়। মহাজাগতিক রশ্মির আগমনে যে মিউয়ন কণা সৃষ্টি হয় তাদের গতিবেগ আলোর গতিবেগের প্রায় সমান (0.998c)। দেখা গেছে এরা এক সেকেন্ডের দশ লাখ ভাগের একভাগ সময়ের (২ মাইক্রোসেকেন্ড) মধ্যেই পৃথিবীতে পৌঁছিয়ে ইলেক্ট্রন এবং পজিট্রনে পরিণত হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এক সেকেন্ডের দশ লাখ ভাগের একভাগ সময়ের মধ্যে তারা ছয় কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে কিভাবে? কারণ হিসেব করে দেখা গেছে মিউয়ন কণা যদি আলোর গতিবেগেও ছোটে তয়াহলে ওই সময়ে তার ছশ মিটার যাওয়ার কথা। তা হলে ছয় হাজার মিটার বা ৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে কিভাবে মিউয়নগুলো ভুপৃষ্ঠে পৌঁছয়? আসলে টাইম ডায়ালেশনের ফলেই এটা সম্ভব হয়। ভুপৃষ্ঠে আমাদের যে সময়ের মাপ, আলোর কাছাকাছি বেগে চলতে পারার কারণে মিউউওনের সময়ের মাপ তার থেকে আলাদা। মিউয়নগুলো আমাদের টাইমস্কেলে চলাচল করে না বলেই, আমাদের মাপা সময়ের আগেই পৃথিবীতে এসে পৌছুতে পারে।
আশা করি কিছুটা বোঝাতে পেরেছি , নাকি আরো কনফিউজড করলাম ? :-s
@অভিজিৎ, কিছু বুঝতে পেরেছি, মানে লেখাটা বিশ্বাস করে আর কি, বাস্তবে মিলিয়ে নেওয়ার উপায় ত আর নেই! বিশ্বাস করা ছাড়া আর উপায় কি! কিন্তু কনফিউশন ত একটা থেকেই গেল…
টাইম ডায়ালেশনের ফলেই যে ৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ২ মাইক্রোসেকেন্ডে মিউয়নগুলো ভুপৃষ্ঠে পৌঁছায়…একথাটা কিভাবে বলি?
মিউয়ন কণার গতিবেগ যে আলোর গতিবেগের চেয়ে অনেক গুন বেশী…এ সিদ্ধান্তে আসলে কি সমস্যা হয়?
@অভিজিৎ,
এ বিষয়ে আমার কলিগ ড. আরশাদ মোমেনের বক্তব্য নিম্নরূপ:
“বেগ বৃদ্ধির সাথে বস্তুর ভর বৃদ্ধি পায়–এটি একটি ভুল ইন্টারপ্রিটেশান। কণাপদার্থবিজ্ঞানের কোথাও m = m0/ \sqrt( 1 – v^2 / c^2 ) সমীকরণটি ব্যবহার করা হয়না। সঠিক সমীকরণটি হল: E^2 = p^2 c^2 + m^2 c^4। ভরকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়? এটি করা হয় F=ma সমীকরণটির মাধ্যমে যখন এটিকে কোভ্যারিয়্যান্টলি প্রকাশ করা হয় (অর্থাৎ এর উভয়পক্ষ লরেঞ্জ রূপান্তরের অধীণে একইভাবে পরিবর্তিত হয়)।F এবং a উভয়েই লরেঞ্জ রূপান্তরের অধীণে ৪-ভেক্টর– কাজে কাজেই m অবশ্যই একটি স্কেলার এবং এই রূপান্তরের অধীণে অপরিবর্তিত থাকতে বাধ্য। বাইজারের মতন তৃতীয় শ্রেণীর বই ই এ ধরণের ভুলের প্রচারের জন্য দায়ী। লরেঞ্জ রূপান্তরের অধীণে শক্তি বৃদ্ধি পায়–ভর নয়।”
@তানভীর হানিফ,
আপনি এবং আপনার কলিগ ড. আরশাদ মোমেন ঠিক বলেছেন। রিলেটিভিস্টিক ম্যাস বা আপেক্ষিক ভর আসলেই পুরনো কনসেপ্ট। এখন যেটা ব্যবহার করা হয় ইনভ্যারিয়েন্ট ম্যাস। আসলে আমি যেটা চেয়েছি যতটা সম্ভব সহজ করে পাঠকদের ব্যাপারটা বোঝাতে। আমি পেশাগতভাবে পদার্থবিদ নই। জনপ্রিয় ধারায় লিখতে গেলে অনেক সহজভাবে লিখতে হয় প্রায়শই, যেটা হয়ত বাস্তবতার সাথে সবসময় মেলে না। যেমন, আপনাকে স্টিফেন হকিং এর ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম থেকে উদ্ধৃতি দিতে পারি, উনি কি লিখেছেন –
Because of the equivalence of energy and mass, the energy which an object has due to its motion will add to its mass
কিংবা রিচার্ড ফাইনম্যানের ‘চ্যাপ্টার অব ফিজিকাল ল’ থেকে –
the energy associated with motion appears as an extra mass, so things get heavier when they move
আধুনিক ধারণা অনুযায়ী আসলে এই দুই বিজ্ঞানীদের করা দুটো উক্তিই ভুল, কিংবা নিদেনপক্ষে বলা যায় মিসলিডিং। কিন্তু জনপ্রিয় বইয়ের লেখার খাতিরে এটুকু বলা যায় যে পাঠকদের বোঝাতে গেলে কিছু ব্যাপার এভাবে হয়ত বোঝাতে হয়, কারণ এর পেছনের জটিল গণিত সবার পক্ষে বোধ করি বোঝা সম্ভব হয় না। আমিও জনপ্রিয় ধারায় লিখতে গিয়ে একই ভুল করেছি। ব্যাপারটা একটু অন্যভাবে বলা উচিৎ ছিল। ভরের মাধ্যমে নয়, বরং শক্তির মাধ্যমে। যত বস্তুর বেগ বাড়তে থাকে তার ইনারশিয়া বাড়তে থাকে। এক্ষেত্রে বস্তুকণা আলোর বেগের সমান হতে পারবে না, কারণ এর জন্য অসীম শক্তির দরকার হবে।
আপনার মতামতের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
বিষয়টিকে পরিষ্কার করবার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
অন্য একটি প্রসঙ্গে কিছু বলবার অনুমতি চাই। বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ফলসিফিয়েবিলিটি সম্পর্কে আপনি এক জায়গায় লিখেছেন। স্ট্রিং থিওরি ফলসিফিয়েবল কিনা সে সম্পর্কে আপনার কি কোন মতামত আছে? ধরুন কোন তত্ত্বের অসীম (১০^৫০০) সংখ্যক বৈধ সমাধান আছে। তাহলে আমরা পর্যবেক্ষণ বা পরীক্ষণের ফলাফল হিসেবে যাই পাই না কেন–কোন না কোন সমাধানের সাথে সেটি মিলে যাবে। সেক্ষেত্রে তত্ত্বটিকে ভুল প্রমাণের উপায় কি? আবার ধরুন, তত্ত্বটির গাণিতিক কনসিস্টেন্সি এক ধরণের বিশেষ প্রতিসাম্যকে অবশ্যম্ভাবী করে এবং সেটি সত্য হলে পরীক্ষাগারে বিশেষ ধরণের কণিকাসমূহ পাওয়া যাবে। সুতরাং, কেউ কেউ বলতে পারে যে এ ধরণের কণিকা পাওয়া গেলে তত্ত্বটি সঠিক প্রমাণিত হবে। কিন্ত প্রতিসাম্যটির সত্যতা তত্ত্বটির সত্যতা নিরপেক্ষ। বিপরীতটি সঠিক নয়। স্ট্রিং থিওরি ভবিষ্যদ্বানী করে যে সুপারসিমেট্রি পাওয়া যাবে–কিন্ত এর স্কেল সে নির্ধারণ করেনা– যে স্কেলে এ ধরণের কণিকা পাওয়া যাবে সেটি সম্পূর্ণভাবে এ্যাডজাস্টেবল। কাজেই, ১০^-১৭ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য স্কেলে যদি এর ভবিষ্যদ্বানীকৃত কণিকাসমূহ না পাওয়া যায় তাহলে তত্ত্বের ফ্রি প্যারামিটারগুলোকে (১০০ এর উপরে) এ্যাডজাস্ট করে আমরা সহজেই একে ১০^-১৯ সেন্টিমিটারে নিয়ে যেতে পারব। এই যদি হয় কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য তাহলে ফলসিফিয়েবিলিটির আলোকে আদৌ সেটিকে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বলা যায় কিনা?
আরেক জায়গাতে বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ (পরীক্ষণ নয়–দু’টির মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে) সম্পর্কে কিছু আলোচনা দেখলাম। পর্যবেক্ষণের ওপর কি আমরা সর্বাবস্থায় পুরোপুরি নির্ভর করতে পারি? উদাহরণস্বরূপ, মহাবিশ্ব স্থির নাকি প্রসারণশীল–সে সম্পর্কে পর্যবেক্ষণ সদাসর্বদা সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে অক্ষম হবে।
@তানভীর হানিফ,
আপনার উপরের মন্তব্য এবং নীচে ক্লান্ত কালবৈশাখিকে করা মন্তব্যগুলো দেখে মনে হচ্ছে আপনি পদার্থবিজ্ঞানের সাথে গভীরভাবে যুক্ত। আপনি কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. তানভীর হানিফ? আপনি যেভাবে আপনার কলিগ অধ্যাপক আরশাদ মোমেনের কথা বললেন, মনে হচ্ছে আমার অনুমান সঠিক। আরশাদ মোমেনের একটি লেখার উল্লেখ আমি করেছিলাম এখানে।
আমি আসলে হাতে কলমে কাজ করা পদার্থবিদ নই। আমার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন (হয়তো আপনার কলিগ কিংবা স্যার হবেন, আপনাদের অনেক আগে রিটায়ার করেছেন), সেই সূত্রে আমারও পদার্থবিজ্ঞানে আগ্রহ ছিল ছোটবেলা থেকেই। বাসায় বই টই নেড়ে চেড়ে যা পেয়েছি, তা থেকেই কিছু শিখতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কারণে পদার্থবিজ্ঞানের বিষয়গুলো কেবল ‘শখ’ হয়েই রয়ে গিয়েছিল আমার মধ্যে। আর এখন তো কাজ করি একেবারেই ভিন্ন ফিল্ডে। সেই জ্ঞান থেকে উত্তর দিলে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে তাতে আমিও সন্দিহান। আপনারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করেছেন, আমারই বরং আপনাকে প্রশ্ন করা উচিৎ। 🙂
স্ট্রিং তত্ত্বের এটা একটা সমস্যা। হ্যাঁ, আমি মনে করি এখনো সেটা ফলসিফায়েবল নয়। সেজন্য নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী গ্লাসো সহ অনেকেই সেটা বিজ্ঞান নয়, দর্শনের এখতিয়ারভুক্ত বলে মনে করেন। বলতে দ্বিধা নেই গ্লাসোর দলে অনেকেই আছেন। 🙂 তারপরেও বিজ্ঞানীদের কাজ এগুচ্ছে, হয়তো কিছু পরোক্ষ প্রমাণ আমরা পাব। যেমন, মাল্টিভার্স হাইপোথিসিসের কথা বলা যায় যার সমাধান স্ট্রিং তাত্ত্বিকদের দেয়া ১০^৫০০ সলিউশন থেকেই এসেছে। মাল্টিভার্সেরও পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ বা ফলসিফাবিলিটি দুর্লভ ছিল, যদিও কিছু পরোক্ষ প্রমাণ আসতে শুরু করেছে সম্প্রতি। আমি এ নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম এখানে (স্টিফেন ফিনীর পেপারটা নিয়েও কথা বলেছি ওখানে) –
মাল্টিভার্স : অনন্ত মহাবিশ্বের খোঁজে
যা হোক, মনে হচ্ছে আপনি অভ্র ভাল করেই ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যদি মুক্তমনায় নিয়মিত লেখেন খুব খুশি হব।
ভাল লাগল আলোচনা করে।
@অভিজিৎ,
জ্বি। অজয় স্যার আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক।
আমি আপনার বিশেষত: বিজ্ঞানসংক্রান্ত লেখাগুলো নিয়মিত পড়ি। আপনি সরাসরি এই ফিল্ডের সাথে
যুক্ত না হয়েও অনেক পরিষ্কার ধারণা রাখেন এবং বিজ্ঞানের জনপ্রিয়করণে আপনার প্রয়াসের জন্য
আপনাকে ধন্যবাদ দিলেও সেটি কম হয়ে যায়।
আপনাকে প্রশ্নগুলো করবার উদ্দেশ্য মূলত: আলোচনার সূত্রপাত ঘটানো এবং এর মাধ্যমে নিজেও কিছু শেখা (সেটি আমার ব্যক্তিগত স্বার্থ)। এর উত্তরগুলো সরাসরি বিজ্ঞানের টেকনিক্যাল বিষয়বস্তুর সাথে যুক্ত নয়–অনেকটাই এর দর্শনের সাথে সংশ্লিষ্ট। মুক্তমনায় অনেক আগ্রহী এবং বোদ্ধা পাঠক আছেন। আমারও কিছু টুকিটাকি লেখা আছে। অপবিজ্ঞান নিয়ে লেখাটি আপনাকে পাঠাচ্ছি।
@তানভীর হানিফ,
অনেক ধন্যবাদ আবারো।
সদস্যপদ পাওয়া সম্ভবতঃ আপনার জন্য সমস্যা নয়। হয়তো মডারেটরের কাছ থেকে ইমেইল পেয়ে থাকবেন। পেলে লগইন করে মন্তব্য করতে পারেন, আর নিজেই ব্লগে লেখা পোস্ট করে দিতে পারেন।
আপনার লেখার প্রত্যাশায় রইলাম।
@অভিজিৎদা,
একই দু:খ আমারও :'(
আচ্ছা, বর্তমানে কি এই নিউট্রিনো ঝামেলার কোন সমাধান এসেছে??
ঘরে ফিরেই লেখাটি দেখলাম। অনুরোধ রাখবার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ।
অভিজিৎদা,
আমি অপেক্ষা করতেছিলাম মুক্তমনায় কখন এ বিষয়টা নিয়ে লেখা আসবে। ধন্যবাদ সুন্দর লেখাটির জন্য। আরেকবার ভাল করে পড়ে মতামত জানাব।
@হেলাল,
অপেক্ষায় থাকলাম!
@হেলাল,
আপনি একা নন। বিষয়টি সম্পর্কে শোনার পর থেকে আমি অপেক্ষায় আছি কবে এখানে আলোর চেয়ে বেশী গতির কণা সম্পর্কে পড়ব। ধন্যবাদ অভিজতদা, এত সুন্দর একটা প্রবন্ধ লেখার জন্য। আশা করি বন্যাদি ভালো আছেন।
এখানে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল হবে নাকি ? ভূল হয়ে থাকলে সংশোধন করে দেওয়া যেতে পারে।
কেবল মাত্র পড়া আরম্ভ করেছি।
ধন্যবাদ
@আঃ হাকিম চাকলাদার,
ধন্যবাদ। ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইলই হবে। টাইপোটি ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। ধন্যবাদ পড়তে শুরু করার জন্যও।
নিউট্রিনো নিয়ে পরীক্ষাগুলো হয়তো সঠিক এবং একই সাথে আইনস্টাইনের বেধে দেয়া গতিসীমাও ভুল নয়। তবে, নিউট্রিনোগুলো হয়তো আলোর চেয়ে বেশী গতিতে ছুটছেনা কিন্তু অন্য ডাইমেনশনে ওয়ার্মহোল দিয়ে ‘শর্টকাট’ ধরে এগুচ্ছে। আগামী কয়েক মাসে সারা পৃথিবীতে এ বিষয়ে অন্তত আরো পাঁচটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে যেগুলো থেকে আমরা আরো তথ্য জানতে পারবো।
এ লেখাটার জন্য বিশেষ ধন্যবাদ আপনার প্রাপ্য।
@সংশপ্তক,
ধন্যবাদ চমৎকার মন্তব্যের জন্য।
হয়তো! কোন কিছুই এই মুহূর্তে নিশ্চিত কয়রে বলা যাচ্ছে না। নিউট্রিনোগুলো অন্য ডাইমেনশনে ওয়ার্মহোল দিয়ে ‘শর্টকাট’ ধরে এগুতে পারে, এবং এটি আমি আমার প্রবন্ধে উল্লেখও করেছি (লণ্ডনের কিংস কলেজের পদার্থবিদ গিয়াকোমো ক্যাক্কিয়াপাগ্লিয়া ধারনা করেন, নিউট্রিনোগুলো স্ট্রিং তত্ত্ব বর্ণিত অতিরিক্ত মাত্রার ফোঁকর গলে ডিটেক্টরে পৌঁছেছে, সেজন্যই সম্ভবতঃ নিউট্রিনোগুলোর কোন শক্তি-ক্ষয় ঘটেনি), শন ক্যারল তার ব্লগের প্রবন্ধেও এমন সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেননি। কিন্তু সেই ধারণাগুলোর পক্ষে কোন পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ পাওয়া যায়নি। স্ট্রিং তত্ত্বের অতিরিক্ত মাত্রার ব্যাপারটিই এখন পর্যন্ত পরীক্ষণযোগ্য হয়ে উঠেনি, তার মধ্যে অতিরিক্ত মাত্রার শর্টকাট দিয়ে আমাদের মাত্রায় পৌঁছানোর ব্যাপারটি পরীক্ষা করা হবে আরো দূরূহ। তবে –
ঠিক!