এসো, এদিকটায়।
এই এখানটায় ছিলো নারকেল গাছের গুড়িটি। হারানি নানি এখানটায় বসে রোদ পোহাতো। দৃষ্টি থাকতো ভর দুপুরের চিক চিক করা অনির্ণীয় রঙ্গের জল আর রোদ্দুরের গর্বিত সংগমে। কি অত ভাবতো কে জানে! যে সব হারিয়েছে তার ভাবনায় কি থাকতে পারে আমার অজানা।
আমার হাত ধরো।
আজ তোমায় সমস্ত পুকুর ধারটি ঘুরে দেখাব।
তোমার ক্ষুদে পা যেখানটায় সেখানে কৃষ্ণচূড়া গাছের একটি ডাল নুয়ে থাকত।
সে ডাল ধরে মাতামাতি হতো আমাদের ক্ষুদে হাতের।
দেখছ না যে!
ছ’জন বসে খাবার জন্যে ভীষণ দামী এ ডাইনীং টেবিলটার শেষ প্রান্তে – ঘাটের প্রথম ধাপ।
মাত্র ছ’জন মানুষকে একসাথে ধারণ করার ক্ষমতা।
অথচ –
এই এক ঘাটে পুরো বাড়ির সব ছেলেপুলে ধরেও জায়গা রইতো।
আমার হাত ধরো।
ঘাটের শেষ ধাপটি সব সময় থাকতো পিচ্ছিল।
আমার হাত শক্ত করে ধরো।
একবার সেজদি ও জায়গায় পড়ে গিয়েছিল।
মায়ের সে কি বকুনী।
পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা দামের রাজকীয় চেয়ারটা দেখছ?
ওখানটায় একবার দাদা তার হাতে বানানো
ভেলা বেঁধে রেখেছিলো।
আরেকটু যাই?
এখনো ঘাটের ধাপে আছি। কি অদ্ভুত সুখময় জলের স্পর্শ!
এ-ই শুরু পুকুরতলার মাটির।
ওভাবে ঝুঁকে পড়ে কি দেখছে আমার সোনামনি?
ওগুলো সব ছোট মাছ।
এই পুকুর, নারকেল গাছ, কৃষ্ণচূড়ার ছায়া আর
বহু পুরনো ঘাটের মতন ওরাও তোমার আপন।
ওহ! বহুমূল্যে আমদানী কৃত কার্পেটের নকশা।
পায়ের তলায় কি ঠেকল?
মুন্নার সেই লাল জামা বাঁশের কঞ্চির সাথে এখনো লেগে।
মুন্নার লাল জামা, লাল রং-এর মখমলের সোফা।
আরেকটু যাই?
বাঁ পাশে জংলায় দেখো।
ওখানে মাছরাঙ্গা তার সভাবশীতল রঙ্গে আচরণে
এখনো অনড়। ওর গায়ের রং-এ নীল ছাওয়া।
নীল আকাশের রং।
এ জল আকাশকে বুকে ধরে রাখে। দেখো।
আকাশ শুয়ে আছে জলের বুকে। পুকুরের বুকে।
আবার সংঘর্ষ ছাদ আর দৃষ্টিতে। দৃষ্টি আর মেঝেতে।
আকাশের আর জলের যেখানে ছিল ছড়াছড়ি
এখন সেখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ আকাশ ক্রয় বিক্রয়।
যত কম আকাশ আর জল দেয়া যায় মানুষ নামের প্রানীগুলোকে।
সব জমা রাখতে হবে। কেন কেউ জানে না।
এক মুঠো আকাশের দাম, এক ব্যালকনি আকাশের দাম- একটি পুকুর।
মাছরাঙ্গা দেখো মামণী। কি অকৃত্রিম সুন্দর!
মাছরাঙ্গা নয়? তবে কি?
বাঁ পাশের জংলায় তবে কি ওটা?
জংলায় জায়গা করেছে আশি হাজার টাকার মোনালিসার হাসি।
কি হয় এতো রহস্যভরা হাসি নিয়ে?
যে হাসির স্রষ্টা ডুব সাঁতার-ই জানলো না
তাকে কি রহস্য মানায়?
আরেকটু যাই।
তুমি ওখানটায় থাকো।
ওখান থেকে মায়ের সাঁতার দেখতে পাবে। যেমনটি আমি দেখেছিলাম এক সন্ধ্যেয়।
বড়দির আঁচল আর জল যখন অবিচ্ছেদ্য।
বড়দির ছলকে ওঠা হাসির ঝংকার।তার সাথে
ওপারে টিম টিম করে কুঁড়ে ঘরের বেড়ার ফোঁকর দিয়ে হেসে আসা আলো।
বড়দিরা সবাই অনায়াসেই ওপারে চলে যেত। আমার কখনো হলো না।
আরেকটু যাই।
এই ব্যালকনির দরজা পর্যন্ত এলেই আমি ঠাঁই হারিয়ে ফেলতাম।
পায়ের তলার মাটি হারিয়ে ফেলতাম।
কতবার যে ব্যালকনি পার হবার দুঃসাহস যুগিয়েছিলাম। কিন্তু
ঠাঁই হারাবার পর ভীষণ ভয়!
চারপাশে কোন কিছুকে আঁকড়ে ধরার আকুল চেষ্টা।
নারকেলের শুকনো পাতা ভিজে পিচ্ছিল হয়ে মাছের পিঠের মতন হয়ে গেছে।
নাকি ওই ছিল বোয়াল মাছের পিঠ?
কত মাছ! ক্ষুদে ক্ষুদে মাছ কাঁচের বাক্স ভরতি।
উনিশ হাজার টাকা দিয়ে কেনা চৌকনা বাক্সের ভেতরে একবার ওদিক আরেকবার এদিক করছে,
প্লাস্টিকের গাছের গায়ে লেজের ডগা ছুঁইয়ে দিয়ে।
পাড়ে দাঁড়িয়ে চুল শুকোচ্ছে জ্যাঠিমা।
দাদার কলা্র ভেলা ওই ভাসছে।
ভেলাটা একটু ধরবার জন্যে শরীরের সমস্ত অক্সিজেন ব্যয় করে আঁকুপাঁকু করছিলাম।
চলে এসেছি ব্যালকনিতে।
যেখানটায় ছিল তিনটে বাঁশ পোঁতা –ঠাঁই বোঝার জন্যে।
আর একটু গেলেই আবার ওপারে যাবার যাত্রা। একটু পা বাড়ালেই। সেই ছোটবেলায় ঠাঁই
হারাতাম। এখন নিশ্চয়ই পারব।
ওই টিম টিম আলো। সাঁতরে ক্লান্ত হয়ে ডুবতে গেলে সেই ভেলা। সেই পাড়ে দাঁড়ানো জ্যাঠিমা ঝাঁপিয়ে পড়া।
এক পা মাত্র…
“কার সাথে কথা বলছ রীনু?”
“আমার মেয়ের সাথে”
“আচ্ছা? ব্যালকনির পাশ হতে সরে এসো, আমিও শুনি কি কথা হচ্ছিলো”
“না”
“লক্ষীটি, তোমার শরী্রের এ অবস্থায় ব্যালকনির অত কাছে যেতে হয় না। সরে এসো। আমাদের অনাগত সন্তানের সাথে আমিও কথা বলি তোমার মাতৃ জঠরের পাশে বসে।“
“আজ আমি সমস্ত পুকুর ধার তাকে ঘুরিয়ে দেখিয়েছি।“
“বেশ তো।“
“দাদার বানানো ভেলা, সেই কৃষ্ণচূড়া, সেই বাঁ পাশের জংলা। ঘাটের প্রথম ধাপের শেষ, শেষ ধাপের শুরু সব দেখেছে ও!”
“তোমার শরীর এখন সুস্থ নয়। গর্ভবতী নারীদের এ সময়ে হরমোন ইমব্যালেন্স হতেই পারে। যার কারনে মানসিক ভাবে তুমি সুস্থ নও। বিছানায় শোবে চলো।“
“না। আর এক পা এগুলেই ওপারে যাবার সাঁতার। মামণি আমার ওপার দেখেনি। কারণ দেখিনি কখনো আমি। ওপাড়ের কোন মায়াময়, ছোট্ট একটি বাড়ি যা আমার বয়সের কারনে মনে হত রহস্যভরা? সাঁঝবেলা বাতি জালিয়ে সে কি ভাবত? আমাদের জলের দাপাদাপি শুনতে পেত? চাইতো কি এপাড়ের কলরবমুখর দৃশ্যের অংশীদার হতে? আমায় জানতে হবে রঞ্জু, জানতে হবে আমার মেয়েকে জানাতে।“
“সে কাল হোক? আজ তো ও সব-ই দেখেছে।আমাদের ছোট্টমনি ছোটবেলা হতেই সবুজ আর নীল চিনলো। শুধু পুকুরের ওপাড় বাকি। সে কাল হবে? ফিরে এসো রীনু।“
“সব দেখেছে? বাঁ পাশে ওটা কি রঞ্জু?”
“কি আবার? যেখানটায় মাছরাঙ্গা ঠাঁয় বসে থাকে তার খাবারের প্রতীক্ষায়।“
“উপরে আর নিচে তাকালে কি দেখা যায়?”
“দেখা যায় নীল চাদরে সাদা তুলির কাজ। পুকুর জলে আকাশ ছাড়া আর কি ডুবে থাকবে?”
“বাঁ পাশের জংলায় মাছরাঙ্গা নয় – মোনালিসার হাসি। উপরে তাকালে আকাশ নয় কংক্রিটের ছাদ দৃষ্টিকে চড় দিয়ে নিচে ধাবিত করে। হরমোন ইমব্যালেন্স আমার রঞ্জু, তোমার তো নয়।“
“তুমি স্বাভাবিক নেই। একটু শুয়ে থাকলে ভাল লাগবে।“
“আমার কন্যাকে গাছের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া অস্বাভাবিকতা। যে প্রকৃতির কারনে সে শ্বাস নেবে, সে সবুজের কাছে যাওয়া মানসিক অসুস্থতা। আমি, আমরা মেনে নিয়েছি এক ব্যালকনি আকাশ। তাকেও মেনে নিতে হবে শৈশব দিয়ে কৃত এ ন’তলা ভবন। তাকে মেনে নিতে হবে সাথীহারা, বন্ধুহারা এক কৈশর। যে কৈশরে তার সময় কাটবে যন্ত্রের মাধ্যমে একাকিত্ত ঘোচাতে না পারার অস্থিরতায়।“
“তোমার শরীরের এ অবস্থায় এসব ভাবতে হয়না রীনু। বিশ্রাম নেবে চলো।“
“কবে ভাবব বলতে পার? কবে আমাদের সন্তানেরা তাদের অস্তি্ত্বে প্রকৃতির প্রবেশ টের পাবে? জীবনের ব্যস্ততায় কবে বোধ করবে একটি গাছের অবদানের প্রতি সে কৃতজ্ঞ নয়? একটি নদীর গভীরতায় সে মুগ্ধ নয়?”
“আজ এসব থাক। তুমি আগে একটু সুস্থ হয়ে ওঠো। আমরা প্রতি মাসে গ্রামে বেড়াতে যাব আমাদের সন্তানকে নিয়ে। সঠিক বয়শে ও শিখবে প্রকৃতির মূল্য।“
“প্রকৃতির সৌন্দর্য, গভীরতা, তার অনুদান আমাদের বসবার ঘরের দামী show piece-এর মতন প্রদর্শনীয় বস্তু নয়! এ ভেতরে লালন করার এক প্রশান্তি। প্রকৃতির একাংশ হয়ে বাস করার অহংকার!”
“লক্ষী আমার, কিছুক্ষন পর আমাদের বন্ধুরা আসবে, অনেক আগ্রহ করে কেনা আমাদের সন্তানের জন্যে দামী সব উপহার নিয়ে। তুমি একটু বিশ্রাম নাও…”
“দামী উপহার! একটি গাছের চাইতেও দামী? বাতাসে গাছের পাতার হাসি আর নৃত্যের চাইতে? একা্ত্ববোধ শেখার চাইতেও? তবুও আমি সব উপহার হাসি মুখে বিনয়ী হয়ে গ্রহন করব। তার আগে, দামী উপহারের আগে আমার সন্তানকে জলের যে দাম হয়না সেটা বুঝতে দাও। শৈশব যে বিক্রীর নয় তা অনুভব করতে দাও। ছোট্ট একটি বেড়ার ঘরে কি করে এক পরিবারের সাতজন সদস্য অফুরন্ত হাসিতে দিন কাটায় সে মমতার মর্মার্থ বুঝতে দাও। রাতের বেলার টিমটিমে আলো পুকুরের এ পাড়ের ছোট্ট একটি মেয়েকে কিভাবে হাতছানি দিয়ে ডাকে সে তাকে নিজ হতে আবিস্কারের আনন্দটুকু পেতে দাও! আমায় যেতে দাও।“
“রীনু! আর এক পা এগুলে কি হবে বুঝতে পারছ? আর এক পাও সামনে দেবে না তুমি!”
“শুধু এক পা এগুলেই রঞ্জু, ওপারে যাবার যাত্রা। যা এ শতাব্দীর সবার কাছে ভীষণ রোমান্টিক আর সাপ্নিক – অথচ এই হবার কথা ছিলো ভীষণ বাস্তব সমস্ত মনুষ্য জাতির। এক পা এগুলেই আকাশের বুকে, যে শুয়ে আছে পুকুরের মধ্যিখানে জলের টলমলে বুকে। সেই পুকুর যার কাছে ভীড় করে আসা মানুষগুলো ছিল পুকুরের চারপাশের মতনই সবুজ, গহীন, আর আলো আঁধারে ভরপুর। সেই পুকুরের দাম এখন ন’তলা ভবন, সেই পুকুরের দাম অনেকের শৈশব আর তারুণ্য। এক পা এগুলেই রঞ্জু…”
রীনুর ওপার যাত্রা শুরুর এক পা দেবার আগেই রঞ্জু ছুটে গিয়ে তাকে ধরে ফেলে। গভীর ভালবাসায় আঁকড়ে ধরে তাকে বিছানায় এনে শুইয়ে দেয়।
রঞ্জু ও রীনুর গভীরতর ভালবাসা হতে সৃষ্ট তাদের অনাগত সন্তান ও মায়ের শারীরিক এবং মানসিক সাস্থ্যের কথা ভেবে পরিবারের সবাই রীনুকে নিয়ে যায় একটি পর্যটন স্থলে। যেখানে আছে ভীষণ সুন্দর নদী, পরিস্কার আকাশ, পাখির কথা, চারপাশে উচ্ছল বাতাস আর গাছের চঞ্চল মাতামাতি।
বেশ কিছুদিন কেটে গেল।
একদিন ভীষণ প্রশান্তিতে চারপাশে তাকাতে গিয়ে অবাক হয়ে রীনু বুঝতে পারে সেও প্রতিক্ষায় আছে কবে নাগাদ এখানটায় হবে একটি ঝলমলে shopping mall, অথবা একটি বহুতলা ভবন যেখান হতে আবার কোন মা অন্য একটি শ্বাস নেবার ও দেবার জায়গা খুঁজে বেড়াবে। প্রতিক্ষা নাকি আতংক?
ভাষার দিকে বেশী নজর দিতে গিয়ে গল্পটা একটু খাপছাড়া হয়ে গেল কি?বোঝার ভুলও হতে পারে, তবে আমি গল্পর চেয়ে এটাকে বিশেষ করে প্রথম অর্ধেকটা কবিতা হিসেবেই পড়েছি। 🙂
@সাইফুল ইসলাম,
(লিখাকে অলংকৃত করার জন্য) ভাষার দিকে আমার পক্ষ হতে বিশেষ কোন নজর আসলে দেয়া হয়না বললেই চলে। মনে আর মগজে যা আসে, যা থাকে, লিখে ফেলি।
আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
কোন একদিন কেউ একজন বলেছিলেন, কবিতা কখনোই খারাপ হয়না। কবিতা মাত্রই ভালো। যেহেতু কবিতা লিখার ক্ষমতা নেই, তাই আপনারা যারা কবিতা হিসেবে পড়েছেন তাদের মাধ্যমে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতন একটা ব্যাপার ঘটে গেল। 🙂
ঠিক তাই। গাছের চেয়ে অনেক দামী। তার দাম এতটাই যে, মানুষ নয়, প্রকৃতি সে ঋণ শোধ করতে গিয়ে, শ্মশানের দুয়ারে কড়া নাড়ছে।
তারপরও ভয় নেই। প্রযু্ক্তি সব ঠিকঠাক করে দেবে। কিভাবে মৃত নদী পাবে প্রাণ অথবা মাছেরা আবার ধানক্ষেতের অল্পজলে সাঁতারাতে চলে আসবে অথবা মরে যাওয়া মাটিই বা কিভাবে……..অথবা সমুদ্র।
ধন্যবাদ আপনাকে। যদিও ধন্যবাদ দিয়ে লাভ নেই। তবুও। ভাল থাকবেন, যদিও ভাল থাকবার দিন দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। তবুও।
@স্বপন মাঝি,
” একদিন হবু চন্দ্র রাজা তার গবু চন্দ্র মন্ত্রী
আকাশ নদী চলছে কেমন দেখতে পাঠান সন্ত্রী
ধরে আনতে বললে সেতো কশে বেঁধে আনে
কাজেই যা হবার হলো বলছি গানে গানে।
সে এক ভারী আজব দেশ, রাজা মত্রী আছেন বেশ…
আহা বেশ বেশ বেশ…
সেপাই বললো রাজার হুকুম, আজ তোমাদের ছুটি!
আকাশ বললো আমি তো রোজ সকাল সকাল উঠি
গাছের পাতায় আলো মাখাই, নদীকে দেই ঢেউ
সেপাই বললো আজ থেকে সব করবে অন্য কেউ!
নদী বললো হুজুর আমি গরিব লোকের ঘরে
কল্পনা দেই বিনে পয়সায় কি হবে এর পরে?
সেপাই বললো রাজার আদেশ, খুব যে বুকের পাটা!
খাল বিলেরা করবে সে কাজ তোমারো নাম কাটা!
সে এক ভারী আজব দেশ, রাজা মন্ত্রী আছেন বেশ…
আহা বেশ বেশ বেশ…
রা্মধনুদের ভিড়ের থেকে চারপাঁচ জন এসে
বললো, হ্যাঁগো সেপাই সাহেব আমরা মাটির দেশে
ছেলেমেয়ে রাঙ্গিয়ে তুলি কতরকম রঙ্গে
“দোকান থেকে আনবো কিনে” বললো রাজার ঢঙ্গে।
রোদেরা সব দাঁড়িয়ে ছিল, এসে বললো সেলাম,
আমরাও কি ওদের মত ছুটির নোটিশ পেলাম?
সেপাই বললো নুতন রানীর রঙ করেছ কালো,
তাইতো তিনি বেজায় চটে, চলে যাওয়াই ভালো।
সে এক ভারী আজব দেশ, রাজা মন্ত্রী আছেন বেশ…
আহা বেশ বেশ বেশ…
আকাশ নদি রামধনু রোদ চললো দিনের শেষে…
এসব যেন সত্যি না হয় সত্যি রাজার দেশে। ”
***লোপামুদ্রার গাওয়া গান। পারলে গানটি এখানে তুলে দিতাম। জানা নেই কিভাবে তাই গানের কথাগুলো তুলে ধরলাম। আমরা সত্যি রাজার দেশে পা দিয়ে ফেলেছি। লোপামুদ্রার কন্ঠে আকুল হয়ে গাওয়া আকাশ, নদী, রামধনু, রোদের জন্য শুধু প্রানটা পুড়ে।***
****আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।****
@ছিন্ন পাতা,
লোপামুদ্রা-র গান
httpv://search.yahoo.com/search;_ylt=AhnSju5rQVeKHAjdTiCDNi6bvZx4?p=youtube+Lopamudra+mitra+habu&toggle=1&cop=mss&ei=UTF-8&fr=yfp-t-469
মাখামাখি করা অনেকগুলো অদ্ভুত ছবি দেখলাম। লেখার এই আর্টটা দারুণ লাগলো। একটি মানবজীবন তৈরী হবার সময়কার মত জটিল একটি প্রক্রিয়া সময়ে মায়ের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা নিয়ে লেখাটা বুঝতে চেষ্টা করলাম। অন্যরকম ও জরুরী। প্রায় অনালোচিত বিষয়ে লেখা দেখে ভালো লাগলো। লেখাটাতে একটু খাদ মেশালে হয়ত অনেকের কাছে আরো সহজবোধ্য হত, কি বলেন?
@কাজী রহমান,
ওই লাইনটার অর্থ কি? মানেটা ধরেও ধরতে পারিনি। (দুঃখিত)
**** কঠিন করে তো লিখিনি! আমার কোন লিখা কারো কাছে সহজ ভাবে পৌঁছুবে না এটা ভাবিনি। মনে আর মগজে যা এসেছিল তাই লিখা। এখন খারাপ লাগছে লিখাটা পোষ্ট করে। আমার যে বন্ধুর উৎসাহে এ কাজ করলাম তার খবর আছে।****
@ছিন্ন পাতা,
আরে কি মুসিবত, কমপ্লিমেন্ট দিতেও এত ঝক্কি! বললাম মৌলিক ও অন্যরকম ‘খাঁটি’ লেখা। খাঁটি সোনা দিয়ে অলংকার বানালে আকার বেঁকেচুরে যেতে পারে; তাই খাদ মেশাতে হয় গঠনটা শক্ত করে ধরে রাখতে। এইজন্যই ওটা বলা :))
মনের একেবারে গভীর থেকে লেখা উঠে আসলে ওটার আবেদন অন্যরকম হতে বাধ্য। এই লেখাটা সেই রকম হয়েছে। আপনার জায়গায় আমি হলে বন্ধুকে উপহার কিনে দিতাম।
@কাজী রহমান,
(কিছুটা ওরকমই ধরে নিয়েছিলাম। আবার ভাবলাম কবিদের কাব্যিক মন্তব্য। আমার মতন সাধারন মানুষ কি করে বুঝবে ব্যাখ্যা ছাড়া?)
উপহার বোধ হয় দুটো কিনতে হবে। একটি সেই বন্ধুর জন্য, আরেকটি আপনার সুন্দরভাবে মৌলিকতা খুঁজে পাবার জন্য। 🙂
@ছিন্ন পাতা,
হা হা হা পৃথিবী গ্রহে পয়সার আকালের দিনেও অতিরিক্ত উপহার………অবিরাম লিখে যান, লেখনি শুভেচ্ছা (D)
আপনার কবিতা মেশানো গল্পটা ভাল লেগেছে!
প্রকৃতিকে ছুয়েঁ দেখার আকুতি অনুভব করলাম!
@লাইজু নাহার,
আকুতি দিদি, ভীষণ আকুতি, মিনতি… শুধু প্রকৃতি যেন বেঁচে থাকে সে কামনায়।
****ধন্যবাদ****
প্রতিকী আর ব্যঞ্জনায় ভরপুর লেখাটি ভাল লেগেছে।
না, ছিন্নপাতা,এখন আরও কষ্টকর ঠাঁই পাওয়া — তল পাওয়া ।
যাহোক, বানানের প্রতি যত্ন নেবেন।
@গীতা দাস,
সারা জীবন বানান নিয়ে এত সাবধান হবার পর আজ আমার এই কথা শুনতে হলো! :-O
ছোটবেলা হতেই কারো বা নিজের বানান ভুল হলে খুব রাগ হতো। সব সময় চেষ্টায় থাকতাম শুদ্ধ (বানানটা কি ভুল?) ভাবে লিখতে সবকিছু।
এখন বাংলা কিবোর্ড আর টাইপিং এর উপর দোষটা চাপিয়ে দেয়া যায় কিনা ভাবছি :-s
(In future I will be extra careful, I promise).
****তা ঠিক, এখন আরো কষ্টকর ঠাঁই পাওয়া। অনেক অনেক ধন্যবাদ।****
গল্প না কবিতা এটি? গল্প ছাপিয়ে যেন কবিতার আমেজটাই বেশি পেলাম।
@ফরিদ আহমেদ,
কবিতা লিখতে পারিনা। 🙁
ভালো পাঠও করতে পারিনা।
(এই আক্ষেপ আজীবনের…)
চমৎকার লিখেছেন। ঠাঁই হারাবার পর ভীষণ ভয়!
@অরণ্য,
🙂
গল্পটার ভাষার বুনন চমৎকার। নি:সন্দেহে দক্ষ হাতে লেখা। কিন্তু আমার কিছু প্রশ্ন জেগে ওঠে এই “ডুবে যাওয়া জল” গল্পটা পড়ে। সেগুলো নিম্নরুপ-
১. মা তার সন্তানকে গল্প বলছে এখানে এই এই ছিলো এখন নেই কৃত্তিমতায় ভরে গেছে সব। বেশ ভালো। মায়ের মা হয়তো মা পেটে থাকার সময় ঐ একই জায়গা দেখিয়ে বলেছিলো এখনো অনেক বেশি সবুজ ছিলো, অনেক বেশি জংলা ছিলো, ছিলো ভূতুড়ে পরিবেশ তুমি দেখো এখন সেগুলোর অবস্হান। অনেক বেশি সবুজের বাড়াবাড়ি, জংলা গন্ধের সাথে হালকা সবুজ, হালকা জংলাকে আমি কিভাবে তুলনা করি। মানে এই হাহাকারটা চিরন্তন।
২. শিশুটাকে পৃথিবীতে আসার আগেই দেখানো হচ্ছে, বুঝানো হচ্ছে এক গাদা এই, ঐই, ব্ল্যা, ব্ল্যা।
তাকে সিলেবাসের চাপে, বইয়ের মোটা ভারী ব্যাগের চাপে পিষ্ট করছি। তারও যে বেছে নেবার ভিতর যে একটা আনন্দ বা ব্যাপার আছে তা আমরা ভুলে যাচ্ছি। আমরা এই এই পরিবেশ কে ভালো ভালো বলে আমার মতামত প্রকাশ করছে।
তারপরও বলবো এই প্রশ্নগুলো আমার জেগেছে এই গল্পটা পড়ে। অর্থাৎ গল্পটার একটা আবেদন আছে।
@এ.প্রামানিক,
আপনার পয়েন্ট আমি বুঝতে পেরেছি। কিন্তু এখানে হুবুহু যে মায়ের মতন সন্তানের অভিজ্ঞতা হবে সে আশা করা হয়নি। সে জন্যই বলা হয়েছে,-
লেখকের মতে প্রকৃতির কাছে থাকলেই সৃজনশীলতা গড়ে উঠবেই। মায়ের আবিস্কার একটি হলে সন্তানের হবে আরেকটি। প্রকৃতির কাছে কাউকে নিয়ে যাওয়া আদৌ কি সিলেবাস আর ব্যাগের চাপে পিষ্ট করা? প্রকৃতি নিজে যেখানে বিশালতায় উন্মুক্ত, সেখানে চাপাচাপি কি করে আসবে? প্রকৃতি বিনাশ করে শহর গড়ার ফলাফল দেখুন। এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন আমরা মানুষেরা দিন দিন অসহিষ্ণু হয়ে পড়ছি, অধৈর্য হয়ে পড়ছি আমাদের চারপাশে গাছপালা নেই বলে। গবেষণায় দেখা গেছে দিনে অন্তত দশ মিনিট একটি গাছের নিচে বসে থাকলে মানুষের ধৈর্য বাড়ে। হায়রে গবেষণা!
অথচ দেখুন, প্রকৃতিকে বাদ দিলেই কিন্তু এসে যাচ্ছে সিলেবাস আর ভারী ব্যাগ। সার্বিক অর্থে। প্রকৃতির কাছে থেকেছি বলেই আমরা ছোটবেলায় ইটের গুড়িকে বানাতাম ডাল, আর গাছের বড় বড় পাতাকে বানাতাম থালা অথবা রুটি। খেলতে খেলতে হারিয়ে যেতাম বিশাল সুপুরি বাগানে। পা কেটে যেত। সেই কাটা পা দেখে মা বকা দেবেন, তাই তাকে লুকোতে হবে। এই যে পুকুর জলে পা ধুয়ে ঘরে ফেরা এটা ছোট্ট বয়েশে সম্পূর্ণ নিজ আবিস্কার। গরু ভয় পেয়েও জনমানবশূন্য একটি মাঠে গরু হতে কিভাবে পালানো যায় তা নিজ বুদ্ধি দেয়েই করতে হয়। এসব কিছু হতে শুরু করে, পুকুরে পা ধুতে গিয়ে নানারকম মাছ, শ্যাওলা, জলের রঙ এসব দেখে মায়ের মনে এক ধরনের অনুভূতি হয়েছিলো, সন্তানের হবে অন্যরকম।
প্রকৃতি বিহীন জীবন দেখুন। গৎবাঁধা, সব নিয়ম মেনে। ব্যালকনির গ্রিল ধরে যে বাচ্চা শুধু যানবাহন চলাচল দেখছে, যে শুধু বসে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা ভিডিও গেম খেলে চলেছে তার মস্তিষ্কে কি ধরনের চাপ পড়ছে! চোখের কি ক্ষতি সেতো আমাদের সবারই জানা। তাইতো চারপাশে কচি কচি বাচ্চাদের চোখে মোটা মোটা চশমা। তারা প্রতিনিয়ত ঘরবন্দি বলে সৃজনশীলতা হাওয়া হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। এসির বাতাস আর প্রাকৃতিক বাতাসের পার্থ্যকও সবার কম বেশি জানা। এইসব প্রকৃতিহীন বাচ্চারা মানুষ দেখেনা আর মানুষের সাথে মেশেনা বলে মানুষের প্রতি মমত্ববোধ উবে যাচ্ছে।
তাই বলছিলাম শিশুটাকে পৃথিবীতে আসার আগেই গাদা গাদা যা দেখানো হচ্ছে, বোঝানো হচ্ছে সবই কিন্তু একটি জিনিস। প্রকৃতি। তাকে শুধু পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো। বাকি ভ্রমন টুকু সবটাই তার। ওই বিশাল প্রাকৃতিক জীবনে তার বেছে নেবার জিনিসের অভাবই হবার কথা নয়। আপনি বলছেন তার বেছে নেবার স্বাধীনতা থাকা দরকার। আমি একমত। কিন্তু আমি কখনোই একটি ভালো এর একটি খারাপ সামনে রেখে বলবোনা বেছে নিতে। মানুষ হিসেবে, সচেতন মানুষ হিসেবে, এবং মা হয়ে অবশ্যই আমি চাইব তাকে যেন ভালো আর ভালোর মাঝেই একটি বেছে নিতে হয়।
খুব বেশি বলে ফেলেছি। জানিনা যা বোঝাতে চেয়েছি তা পরিস্কার করতে পেরেছি কিনা।
আপনাদের মতন জ্ঞানী গুনী মানুষদের কাছে সামান্য কোন গল্প সামান্য আবেদন সৃষ্টি করলেও ভালো লাগার ব্যাপার। সত্যি… 🙂
****সময় নিয়ে সুন্দর মন্তব্য করেছেন। অনেক ধন্যবাদ। 🙂 ****
@ছিন্ন পাতা, আপনার জবাব টু দ্য পয়েন্ট। অনেকগুলো ভালোর মধ্যে থেকে বেছে নেবার কথাও বলেছেন। কিন্তু এখানে একটা কথা থেকে যায়- ভালো আর মন্দের ভিতর থেকে বেছে নেবার ক্ষমতার তার পরিচয় হয় না। সেও এক হারানোর হাহাকার।
আপনে বলেছেন, আপনে আমার কথার সেন্সটা বুঝেছেন এবং আমিও আপনারই মতো করে বলছি যে আমিও আপনার সেন্স বুঝেছি। শুধু একটু বেশি পরিষ্কার আইডিয়ার জন্য আমার বিরোধিতা করা।