লীনা রহমানের “শুনেছি মুক্তির গান” ব্লগে কিছু মন্তব্য সম্পূর্ণ অন্যদিকে ধাবিত হয়ে প্রায় এক নতুন ব্লগ সৃষ্টি করেছে। আমার কিছু প্রতিমন্তব্য দিতে গিয়ে দেখলাম অনেকের (ফরিদ, ব্রাইট স্মাইল, আকাশ মালিক, তামান্না ঝুমু প্রমুখ) মন্তব্যেরই উল্লেখ করতে হয় আর মূল ব্লগের বিষয় থেকে অনেক দূরে সরে আসতে হচ্ছে, কলেবরও মন্তব্যের জন্য একটু বড় হয়ে যাচ্ছে। সব মিলে তাই এক নতুন ব্লগ লেখাই সমীচীন হবে মনে করে এই লেখা।
প্রকারণ (Variation) প্রকৃতির অবিচ্ছ্যেদ্দ্য অংগ। মানব (নর+নারী) স্বভাবের প্রকারণও প্রাকৃতিক। আমরা প্রায়ই বলি হাতের পাঁচ আঙ্গুল সমান না। একই সুত্র মেনে কারখানায় উৎপাদিত সামগ্রীর কোন কোনটার মধ্যে তারতম্য দেখা যায়। মানের বা আকৃতির হেরফের হয় অবশ্যম্ভাবীরূপে। প্রকারণ মেয়েদের মধ্যেও হয় (এক মেয়ের সাথে অন্য মেয়ের) , ছেলেদের মধ্যেও হয় (এক ছেলের সাথে অন্য ছেলের) আবার এক ছেলের সাথে অন্য মেয়ের মধ্যেও হয়। আবার ছেলেদের গড় স্বভাবের সাথে মেয়েদের গড় স্বভাবের মধ্যেও প্রকারণ হতে পারে। দুটো প্রকারণযুক্ত সমষ্টি (Set with Variation) এর একটা বৈশিষ্ট্য হল যে যে গুণ বা মানের ভিত্তিতে প্রকারণ ঘটছে, তার ভিত্তিতে এক সমষ্টির কোন সদস্য “ক” আর অন্য সমষ্টির কোন সদস্য ‘খ” পাওয়া সম্ভব যাতে “ক” এর সেই গুণ বা মান “খ” এর চাইতে বেশী। আবার অন্য দুই সদস্যও পাওয়া সম্ভব যেখানে “ক” এর সেই গুণ বা মান “খ” এর চাইতে কম। যাহোক ছেলেদের গড় স্বভাবের সাথে মেয়েদের গড় স্বভাবের মধ্যের প্রকারণ এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। এই বিতর্কে মেয়দের মধ্যকার প্রকারণটাই প্রাসঙ্গিক। তবে ছেলেদের গড় স্বভাব যে মেয়েদের গড় স্বভাবকে প্রভাবিত করতে পারে সেটা বলা যায়। এ প্রসঙ্গে পরে আসব।
এই মেয়েদের মধ্যকার প্রকারণ মেনে নিলে এটা বলা যায় না যে “সব মেয়েই এরকম” বা “কোন মেয়েই ওরকম নয়”। এ দুটো উক্তিই অতিসামান্যীকরণ দোষে (Over Generalization/Stereotyping) দুষ্ট। দুটোই লিঙ্গবাদী উক্তি। যে কোন লিঙ্গের ব্যাপারে ঢালাও কোন উক্তি (তা সে মন্দ ইঙ্গিতসূচকই হোক বা ভাল ইঙ্গিতসূচকই হোক) মাত্রই লিঙ্গবাদী । এখানে যে স্বভাব বা গুণের প্রকারণ নিয়ে এই তর্ক হচ্ছে সেটা হল মেয়েদের পরজীবিতার প্রতি আসক্তি। সব “মেয়েরাই পরজীবিতার প্রতি আসক্ত” বা “কোন মেয়েই পরজীবিতার প্রতি আসক্ত নয়” বলাটা হবে লিঙ্গবাদী এবং ভুল। ফরিদ বলছেন কোন/অনেক মেয়েরাই পরজীবিতার প্রতি আসক্ত। আর ব্রাইট স্মাইল বলছেন যে যে সব মেয়েরা “পরজীবিতার প্রতি আসক্ত” তারা পুরুষদের নিয়ন্ত্রণের কারণেই “পরজীবিতার প্রতি আসক্ত” হতে বাধ্য হয় । অর্থাৎ বলতে চাইছেন যে যেসব মেয়েরা “পরজীবিতার প্রতি আসক্ত” তারা আসলে পরজীবিতার প্রতি আসক্ত নয়, তারা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মগজ ধোলাইয়ের কারণে পরজীবিতার প্রতি আসক্ত হতে বাধ্য হচ্ছে। প্রকারান্তরে ব্রাইট স্মাইল বা তাঁর সাথে একমতদের এটাই বক্তব্য যে কোন মেয়েই প্রকৃতপক্ষে স্বেচ্ছায় পরজীবিতার প্রতি আসক্ত নয় (“কোন মেয়েই ওরকম নয়” দ্রঃ উপরে)। এটা স্পষ্টতই লিঙ্গবাদী এবং বাস্তবতার তথা বিবর্তনের পরিপন্থী। আবার ফরিদের মন্তব্য লিঙ্গবাদী না হলেও অতিসামান্যীকরণ দোষে দুষ্ট। কারণ তাঁর উক্তি হল সব অভিজাত গৃহিণীরা পরজীবী। অভিজাত গৃহিণী একটা সমষ্টি। এই সমষ্টির সবাই যে একই মনোবৃত্তির হতে হবে এমন কথা নেই। মেয়েদের মধ্যে যে অংশ পরজীবিতার প্রতি আসক্ত সেই অংশ মেয়েদের সব সমষ্টির (অভিজাত/নীচু শ্রেনী) মধ্য ছড়ান বা বন্টিত। শুধু অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে তা সীমিত (বা নীচু শ্রেণীর মধ্যে) বললে তা স্পষ্টতই অতিসামান্যীকরণ। বিবর্তনজনিত মানব বৈষিষ্ট্য কোন বিষেশ গোষ্ঠির মধ্যে সীমিত নয়। মানব বৈষিষ্ট্য কোন বিশেষ গোষ্ঠির একচেটিয়া নয়। সে গোষ্ঠি লিঙ্গই হোক,বা জাতিই হোক, বা ধর্মই হোক। অনেক সময় কোন বিশেষ গোষ্ঠী মানব স্বভাবের কোন বিশেষ বৈষিষ্ট্য বা গুণের বহিঃপ্রকাশের জন্য সহায়ক হতে পারে ঠিকই, কিন্তু বৈশিষ্ট্যের অস্তিত্ব আর বহিঃপ্রকাশ/পরিস্ফুটন এক জিনিষ নয়। বৈষিষ্ট্য অনেক ক্ষেত্রে প্রচ্ছন্ন থাকে। উপযুক্ত পরিবেশ পেলে তা প্রকাশ পায়।
এখন আসি ব্রাইট স্মাইলের সেই দাবীর কথায় যে মেয়েদের সব নেতিবাচক গুণাবলীই পুরুষদের কারণে প্ররোচিত/আরোপিত/অণুপ্রাণিত। এধরণের একই অভিমত দিয়েছিলেন ব্লগ সদস্যা একা (আফরোজা আলম) তাঁর “নারীর শত্রু শুধু পুরুষ নয়” লেখায়। ঐ লেখার উত্তরে আমি এক প্রতিমন্তব্য দিয়েছিলাম, যার সাথে ব্রাইট স্মাইল একমত হয়েছিলেন। কাজেই আশা করছি এবারও আমার এই বিশ্লেষণের সাথে একমত হবেন তিনি। কারণ আমার বর্তমান অভিমত আগের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। ব্রাইট স্মাইল অভিজাত গৃহিণীদের মধ্যে যারা পরজীবী তাদের ব্যতিক্রম বলছেন। আর ফরিদ তাদের ব্যতিক্রম বলে বিবেচনা করছেন না। আসলে কত পার্সেন্ট হলে ব্যতিক্রম বলা সঙ্গত হবে সেটাও প্রব্লেম্যাটিক। আর পার্সেন্ট টা নির্ভুল ভাবে নির্ণয় করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। যাহোক যে কোন বৈশিষ্ট্যকে তার বিপরীত বৈশিষ্ট্যি এর বিচারে ব্যতিক্রম বলা যায়। ফরিদও বলতে পারেন বাধ্য হয়ে পরজীবী হওয়া অভিজাত নারীও ব্যতিক্রম। এই ব্যতিক্রমের বিতর্কের কোন সুরাহা নেই। যেটা নিশ্চিত বলা যায় সেটা হল দুটোই ঘটে। কোনটা ব্যতিক্রম আর কোনটা নিয়ম হিসেবে ঘটে সেটা অবান্তর এবং সবিকল্প। নারীদের মধ্যে কিছু অংশের মধ্যে কর্মজীবী না হবার বা পরজীবী হবার আসক্তির কথা প্রখ্যাত ফরাসী দার্শনিক ( নাকি দার্শনিকা?) ও সমাজবিজ্ঞানী Simon De Beauvoir এর ১৯৭৫ সালের এক উক্তিতে পাওয়া যায়।
“No women should be authorized to stay at home to raise her children, women should not have that choice, precisely because if there is such a choice, too many women will make that choice.”
হয়ত তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন ঘরের আয়েশী পরিবেশে বাচ্চা মানুষ করা কর্মজীবী হয়ে জীবিকা নির্বাহ করার চেয়ে কম কষ্টকর বলে অনেক নারীরা সেটাই বেছে নেবে, বাছার স্বাধীনতা দিলে।
নারীরা যে পরজীবী হতে পারে সেটা নারীরাই স্বীকার করেছেন। যারীকটা উদাহরণ উপরে দিলাম। তাঁরা কেউ একথা জুড়ে দেননি যে পরজীবিতাটা চাপান বা স্বেচ্ছাকৃত নয়। কেউ কেউ বলতে পারেন সেই নারীরা (যারা স্বীকার করেন যে নারীরা স্বেচ্ছায় পরজীবী হতে পারে) তাঁদের মতও পুরুষতন্ন্ত্রের দ্বারা পক্ষপাতদুষ্ট। এইরকম যুক্তি একটা অসীম পিচ্ছিল ধাপের দিকে ঠেলে দেবে। কারণ তাহলে এটাও বলা যেতে পারে যে নারীরা বলেন যে যে নারীরা স্বীকার করেন যে নারীরা স্বেচ্ছায় পরজীবী হতে পারে তারা পুরুষতন্তের দ্বারা পক্ষপাতদুষ্ট, সেই নারীদের কথাও পুরুষতন্তের দ্বারা পক্ষপাতদুষ্ট। এই অসীম চক্রের শেষ নেই। নারীরা (কেউ কেউ বা অনেকে) যে স্বকীয়ভাবে নিজ কর্ম বা মত বেছে নিতে পারে পুরুষ দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে সেই স্বীকৃতি দেয়াটা আবশ্যক।
এটা ঠিক যে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের বাইরে কাজ করাকে পুরুষেরা গড়ে নিরুৎসাহিত করে। আর পুরুষদের সেই গড় মনোবৃত্তিএর জন্য মেয়েদের জন্য গড়ে কর্মজীবী হওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। আবার তারই পরিণতিতে গড়ে মেয়েদের মধ্যে পরজীবী হবার আসক্তি দেখা দেয়(বাধ্য হয়ে পরজীবী হওয়া)। কিন্তু এটাও ঠিক যে কিছু নারী আছে তারা পরজীবী হয়ে বিনা কষ্টে আরাম আয়েশ পেতে উৎসাহী স্বকীয়ভাবে। কর্মজীবী হতে বাধা না থাকলেও তারা পুরুষের ঘাড়ে চড়ে (স্বামী বা প্রেমিক) বিষয় সম্পদের সর্বোচ্চ সুখ লাভ করা যায় সেটার প্রতি তাদের উৎসাহ। অভিজাত গৃহিণীর স্বামীরা বিত্তশালী বলেই অনেক অভিজাত গৃহিণীর পক্ষে এই আসক্তির (যেসব অভিজাত গৃহিণীর মধ্যে এই আসক্তি বিদ্যমান) বহিঃপ্রকাশ ঘটান সম্ভব। এমন নয় যে এটা অভিজাত গৃহিণীদের আলাদা কোন গোষ্ঠীগত বৈশিষ্ট্য যেটা ফরিদ ইঙ্গিত করছিলেন। আবার এমন অনেক বিত্তশালী স্বামীর অভিজাত স্ত্রীও আছে পরজীবিতা যাদেরঁ কাছে অপমানিত্বের ব্যাপার এবং পারলে কর্মজীবী হয়ে নিজের উপার্জনের টাকায় বিলাসিতা করাকে প্রাধান্য দেয়। কর্মজীবী হতে না পারলে তারা স্বামীর টাকায় যত কম বিলাসিতা করা যায় সে ব্যাপারে সচেতন থাকে। কাজেই যেটা বলছিলাম দুটোই সম্ভব। আবার এমন কিছু নারীও আছে যারা ভোগের জন্য পরজীবী হবার বাসনাকে গড় পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার দোহাই দিয়ে জাস্টিফাই করেন । অর্থাৎ তারা স্বেচ্ছায় পরজীবী হবার আসক্তিকে চাপিয়ে দেয়া আসক্তি বলে চালাতে চায় গড় পুরুষদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গীকে কারণ দেখিয়ে। এটা মানুষের ফাকি দিয়ে সুবিধা আদায়ের এক স্বভাবিক প্রবৃত্তির প্রকাশ। আয়াস ছাড়াই আয়েশ করা কারো কারো প্রবৃত্তিগত। বর্ণবৈষম্যের কারণে অনেক কৃষ্ণাংগই সামাজিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছিল বা হচ্ছে সত্যি। কিন্তু আবার কিছু অলস কৃষ্ণাংগ সেটাকে শিক্ষা লাভ বা চাকুরী না করার অজুহাত হিসেবে দেখিয়ে বিনা শ্রমে সামাজিক সুবিধা পেতে চায়। বা উপযুক্ত পরিশ্রম না করেই পরীক্ষায় ভাল ফল বা ভাল চাকুরী না পাওয়ার কারণ হিসেবে ঐ সিস্টেমিক বৈষম্যকে দায়ী করে। কিছু নারীদের মধ্যেও এই প্রবণতা আছে। এ দুটোকেই শিকার মনোবৃত্তি বলে (Vicitm Mentality) একটা উদাহরণ দেয়া যাক।
নারী পুরুষের সমধিকার প্রতিষ্ঠা হলে নারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার (যেমন পরজীবী হবার) অবসান ঘটবে। আর নারীরা সব ক্ষেত্রেই কর্মজীবী হতে বাধ্য হবে। ঠিক এই কারণেই অনেক নারীই সম অধিকার বিল পাস হলে প্রচলিত শ্রম আইনে নারীরা যে বিশেষ সুবিধা ও আশ্রয় পায় সেটা হারাবার ভয়ে এই বিলের বিরোধিতা করেন। উচু পেশায় নিয়োজিত এবং উচ্চশিক্ষিত নারীরা এর সমর্থক হলেও নিম্নজীবী, বিশেষ করে নারী শ্রমিক ইউনিয়নের বিরোধিতার কারণে এটা আটকে থাকছে। কারণ আরেকটা কারণে অনেক নারীরা এটার বিরোধিতা করে সেটা হল যে এটা পাস হলে মেয়েরাও ছেলেদের মত সশস্ত্রবাহিনীতে বলপূর্বক নিয়োগ (Draft) করা হবে ও সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণে বাধ্য করা হবে। একজন নারী রাজনৈতিক কর্মী ফিলিস শ্ল্যাফ্লী (Phyllis Schlafly) এই কারণেই ই.আর.এ থামাও নামে এক সংগঠন গড়ে তোলেন। তিনি তাঁর বই “The Power of Positive Woman” (যথার্থ নারীর শক্তি) এ এই যুক্তি দেন যে নারীরা পুরুষের সমান শক্তিধর নয়, তারা পুরুষদের সমান দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত নয়, এবং শ্রম আইনে তাদের জন্য রক্ষামূলক বিধানগুলি হারানর সমর্থ তাদের নেই, যা কিনা ই.আর.এ পাস হলে ঘটবে। আরেকটা পরিহাসের বিষয় হল, ১৯২০ সালের নারী ভোটাধিকার সংশোধনী(যা পাস হয়) এর সক্রিয় বিরোধিতা একজন নারী করেছিলেন, যার নাম Phyllis Bissell, যদিও তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক ও বক্তা।
আরেকটা উদাহরণ দেই একটু ভিন্ন ধরণের।
নিউজউইক পত্রিকার ১৪ই ফেব্রুয়ারি ২০০৫ সংখ্যার পাঠকদের চিঠির কলামে প্রকাশিত এক চিঠিঃ “I AM TIRED OF HEARING WOMEN IN THE sciences whine, I am a Ph.D precandidate in atmospheric oceanic and space sciences fully funded with tuition and a stipend at the University of Michigan, while my husband is struggling financially to acquire his master’s degree in mechanical engineering, course by course, because no one will fund him. I am the one being handed opportunities, in part because I am a woman. Many women who feel victimized by sexism in the sciences could use my circumstances as evidence that some women are given a break in order to get ahead, But by this rationale, my credibility will be challenged by those who assume I receive funding because I am a woman, not because of any measure of intelligence. I have worked. very hard to get where I am, and am continuing to work harder than I ever thought I could as I proceed with my research and work toward my goal of achieving tenure at a prominent unversity. I do not find and have not ever found my gender to be a reason to whine. “ – Emily Mae Chistianson,Ann Arbor,Michigan
(আমি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে মেয়েদের অনুযোগ শুনতে শুনতে ক্লান্ত । আমি মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পূর্ণ অর্থায়নে বেতন ও স্টাইপেন্ড ভোগী আবহাওয়া, সমুদ্র ও মহাকাশ বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রীর একজন প্রি ক্যান্ডিডেট, আর ওদিকে আমার স্বামী যন্ত্রপ্রকৌশলে মাস্টারস্ ডিগ্রী করার জন্য আর্থিকভাবে সংগ্রাম করে যাচ্ছে, একের পর এক পাঠ নিয়ে, কারণ কেউ তাকে আর্থিক সহায়তা দেবে না। আমাকেই সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে, এর এক কারণ হল আমি নারী। অনেক মেয়েরা, যারা বিজ্ঞানে লিংগবাদের শিকার হয়েছে বলে মনে করছে, তারা আমার অভিজ্ঞতাকে সাক্ষ্য করে এটা প্রমাণ করতে পারবে যে কিছু মেয়েদেরকে সুবিধা দেয়া হয় যাতে তারা এগিয়ে যেতে পারে। কিন্তু এই যুক্তিতে যারা ধরে নিয়েছে যে আমি আর্থিক সাহায্য পাচ্ছি কারণ আমি মেয়ে, আমার বুদ্ধিমত্তার জন্য নয়, তারা আমার বিশ্বাসযোগ্যতাকে চ্যালেঞ্জ করবে। কিন্তু আমি অনেক খেটেছি, অনেক খাটা খাটুনির পরেই আজ যেখানে আছি সে পর্যন্ত আসতে পেরেছি, এবং আরও খেটে যাচ্ছি আমার গবেষণায় এগিয়ে যাবার জন্য, যাতে এক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়িত্ব (টেনিওর) পাওয়ার লক্ষ্য অর্জন করতে পারি। আমি কখনই আমার লিংগকে অভিযোগ করার কারণ হিসেবে দেখিনি এবং দেখিনা)
কাজেই উপসংহারে আমরা এটা বলতে পারি যে নারীদের মধ্যে তিনটা গোষ্ঠী আছে। (১) যারা পুরুষতান্ত্রিক সক্রিয় বাধার কারণে আন্তরিক ইচ্ছা সত্বেও কর্মজীবী হতে পারছে না। (২) যারা পুরুষতান্ত্রিক সামাজিক মূল্যবোধের কারণে (সক্রিয় বাধা নয়) মানসিক ইনহিবিশানের জন্য কর্মজীবী হতে সাহসী হচ্ছেন না। (৩) যারা স্বেচ্ছায় সানন্দে পরজীবী জীবন বেছে নিচ্ছে সক্রিয় বা প্রচ্ছন্ন বাধার সম্মুখীন না হয়েও। (৩) এর একটা অবশ্রেণী (SubClass) হিসেবে আমরা আর এক গোষ্ঠীর (৩ক) কথা বলতে পারি যারা সানন্দে পরজীবী জীবন বেছে নেয় কিন্ত সেটাকে পুরুষতন্ত্রের দোহাই দিয়ে চাপিয়ে দেয়া পরজীবিতা বলে চালাতে চায়। (১) এর জন্য পুরুষতন্ত্র ১০০% দায়ী। (২) এর জন্য ৫০% আর (৩) এর জন্য ০%। পুরুষতন্ত্রে জন্য কি দায়ী। কেউ বলবে ধর্ম আর কেউ বলবে বিবর্তন। দুটোই ঠিক। বিবর্তন —> ধর্ম —-> পুরুষতন্ত্র। তবে ধর্মকে পুরুষতন্ত্রের একমাত্র কারণ হিসেবে দেখাটা ঠিক নয়। তবে এক জোরাল কারণ বটে। আবার ধর্মের মধ্যেও কোনটা আবার পুরুষতন্ত্রের জন্য বেশী দায়ী। যাই হোক ধর্মীয় গোড়ামীর অবসান ঘটলে তা পুরুষতন্ত্রের অবসানের জন্য এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। অনেকে বলবে ধর্ম (বা ধর্মীয় গোড়ামী) যদি বিবর্তনেরর কারণেই ঘটে তাহলে ধর্মীয় গোড়ামীর অবসান কেমন করে ঘটাবে মানুষ। এটা মনে রাখা দরকার যে ধর্মীয় গোড়ামী বিবর্তনের একমাত্র ফসল নয়। ধর্মনিরপেক্ষতাও বিবর্তনের এক ফসল। কাজেই ধর্মীয় গোড়ামী থেকে ধর্মনিরপেক্ষতায় উত্তরন বা পুরুষতন্ত্র থেকে লিংগনিরপেক্ষতায় উত্তরণ সম্ভব। বিবর্তন চাইলেই (অর্থাৎ প্রাকৃতিক কারণে ) বিবর্তনই মানুষের মধ্যে অধিক হারে পুরুষতন্ত্র বিরোধী মনোভাব সৃষ্টি করবে (যার কারণে আমি পুরুষতন্ত্রের ঘোর বিরোধী) আর ধীরে ধীরে সমাজ পুরুষতন্ত্র থেক লিংগনিরপেক্ষতায় দিকে পরিবর্তিত হতে থাকবে, যেমনটি অন্যান্য সমাজে কম বেশি ঘটেছে বা ঘটছে। মরুকেন্দ্রিক আরব সমাজে এই পরিবর্তন আসতে অনেক সময় লাগবে, যদি কখনো আসেই। সময়ই তা বলে দেবে।
লেখাটাইয় সাবলীলতার অভাব চোখে পড়েছে আমার। অনেক ক্ষেত্রেই ভাষার আড়ষ্টতার কারণে বুঝতে সমস্যা হয়েছে তবে পোস্টের বিশ্লেষণ ও মন্তব্য প্রতিমন্তব্য বেশ থটফুল।
নারীদের মধ্যে তিনটি গোষ্ঠী নাকি পরজীবী নারীদের মধ্যে? কারণ ওভারঅল নারীদের কথা বলতে গেলে এই গোষ্ঠীগুলো কিভাবে বাদ যায় যারা-
# পরিবার বা সমাজ ও পারিপার্শ্বিকতার বাধা সত্ত্বেও স্বাবলম্বী হবার চেষ্টা করছে
# পরিবার ও পারিপার্শ্বিকতার সাহায্য পেয়ে স্বাবলম্বী ইত্যাদি ইত্যাদি…
@লীনা রহমান,
আপনি ঠিকই ধরেছেন নারীদের মধ্যে না বলে পরজীবী নারীদের মধ্যে বলা উচিৎ ছিল। ধন্যবাদ ভুল (বা ঢিলামী) ধরিয়ে দেবার জন্য।
অসাধারণ লেখা। খুব সুন্দরভাবেই বিশ্লেষণ করেছেন আপনি।
অথ এর মানে কি? এবং প্রকারণ (যদিও ইংরেজিতে বলা হয়েছে, তো ইংরেজি না-জানাদের) এর অর্থ বুঝিনি। লেখাটা পড়তে গিয়ে শেষ করতে পারলাম না। মন্তব্যগুলো পড়ে অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা। ব্যর্থ।
@স্বপন মাঝি,
অথ মানে অতঃপর, তারপর। এই ব্লগটা “শুনেছি মুক্তির গান” ব্লগ থেকে সৃষ্ট হয় কাজেই তাই “শুনেছি মুক্তির গান” এর অতঃপর এই ব্লগ। আর প্রকারণ মানে প্রকারভেদ, রকমফের। আপনি যদি সার্বক্ষণিক ইন্টার্নেটের সুবিধা পেয়ে থাকেন তাহলে http://dsal.uchicago.edu/dictionaries/biswas-bengali/ থেকে যে কোন সময় ক্লিক করে বাংলা–>ইংরেজী বা ইংরেজী –> বাংলা অর্থ পেয়ে যাবেন।
খুবই সুন্দর পোস্ট। অসাধারন বিশ্লেষন। ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।
আজকের দিনে মানুষের অধিকাংশ কাজেরই ইকনোমিক একাউনটিং করা সম্ভব। পশ্চিমের দেশগুলোতে তো হোমমেকার (গৃহিনী) দের ইকনোমিক কনট্রিবিউশনের হিসাব, আইন এবং অর্থনীতি দুই ক্ষেত্রেই বেশ পরিষ্কার। সুতরাং হোমমেকারদের পুরো পরজীবি বলাটা অশোভনই শুধু নয়, আপত্তিকর।
তবে যে চাকরী থেকে ছাটাই এর সম্ভাবনা নেই (কিংবা খুবই কম), সে চাকরীকে ঠিক চাকরী বলা যায় কিনা সে ব্যাপারে আমার রিজার্ভেশন আছে। হোমমেকিং যত কনট্রিবিউটই করে থাকুক না কেনো, চাকরী কিংবা ব্যবসা (যেখানে ব্যর্থতার ভয় রয়েছে সবসময়ে) র ইকনোমিক অ্যাক্টিভিটি হয়ত বলা উচিৎ হবে না।
@সফিক,
“চাকরি” বলা নিয়ে তো প্রশ্ন না। ইকনমিক অ্যাক্টিভিটি কেন বলা যাবে না? Tenured Professor দের চাকরি হারানোর সম্ভাবনা, আমি সুনিশ্চিত, ডিভোর্সের হারের চেয়ে কম। জাপানে এককালে (এখন বোধহয় পরিবর্তন হয়েছে) চাকরি-টাকরি যেত না শুনেছি (সামুরাই কোডের প্রভাব)। তাহলে?
@রৌরব, স্যরি, আসলে চাকরী যাওয়া এবং চাকরী পাওয়ার নার্ভাসনেস এর মধ্যে থাকতে থাকতে হোমমেকার দের প্রতি ইর্ষা বশত বেফাসে কথাটা বলে ফেলেছি। হোমমেকারদের ইকনোমিক কন্ট্রিবিউশন অবশ্যই আছে এবং তা যেকোন দেশের টোটাল ইকনোমিক আউটপুটের এক বড়ো অংশ।
@সফিক,
হে হে 🙁 । Tenured Professor রা তো আপনার দুচোখের বিষ হওয়া উচিত তাহলে :-s 😀
নারীর একটা দিক ত এড়িয়ে গেলে ত চলবে না, তা হোল নারী গর্ভ ধারন করে, পুরুষ করে না। হয়ত বিজ্ঞান ভবিষ্যৎ এ এর সুরাহা করতে পারে,পুরুষ ও গর্ভ ধারন করতে পারে। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত নারীর এই দিকটি ত এড়িয়ে গেলে চলবে না। মজার ব্যাপার হোল নারীরা এটা উল্লেখ করেন না। কারন হতে পারে এই প্রাকিতিক ব্যাপারটি তাদের দুর্বলতা প্রকাশ করতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি গর্ভধারণ এর কারনেই ত মানব জাতি টিকে আছে,সভ্যতা টিকে আছে। তাহলে এমনিতেই ত নারী সব বিষয়েই স্বয়ংক্রিয় ভাবে বেশী সুবিধা পাবার দাবীদার।কারন মনে রাখা জরুরী যে গর্ভধারণ যে শুধুমাত্র নয় মাসের কস্ট তা নয়, এক্ষেত্রে অনেক নারী মৃত্যু মুখে পতিত হন এবং অনেকে চরম শারীরিক কষ্ট ভোগ করেন, অনেকে আবার অনুরবরতার কারনে সার্জারি সহ অনেক প্রকার যাতনার শিকার হন। এর বিনিময়ে নারী কি পান?। কিছুই পান না। নারী হয়ে জন্মানর জন্যই তাদের কিছু অগ্রাধিকার থাকা উচিত,আল্প নয় অনেক বেশী। নারীর মনোজগতেও এটা থাকা উচিৎ তারা নারী/পুরুশের মাঝে শ্রেষ্ঠ , কারন তারা গর্ভ ধারন করেন। আর কিছু না করলেও ত চলে।
@সপ্তক,
যিনি গান লেখেন, ভালো কোন চলচিত্র নির্মান করেন, একজন লেখক, একজন আঁকিয়ে এঁদের সবাইকে অনেক অনেক সম্মান দেয়া হয়। অস্কার, নোবল, আন্তর্জাতিক, জাতীয় পুরুষ্কার ইত্যাদি।
মুক্তমনায় যারা ভালো লেখেন এবং মন্তব্য করেন তাদের প্রতি আমাদের সম্মান স্বাভাবিক ভাবেই বেড়ে যায়। কারন এই মানুষেরা সবাই কিছু না কিছুর জন্ম দেন।
আর একজন নারী যিনি জন্ম দেন স্বয়ং মানুষের তাকে প্রতিনিয়ত আমরা দাঁড় করাই বিচারের কাঠগড়ায়, তাকে পাল্লা দিয়ে রোজ মাপা হয় সে পুরুষ অব্দি পৌঁছতে পেরেছে কিনা। হায়রে মানুষ!
আপনার মন্তব্য অত্যন্ত ভালো লেগেছে। ঠিক এমন একটি কথা শুনেছিলাম একজন স্বল্পশিক্ষিত, ধার্মিক পাকিস্তানি তরুনের মুখে, (তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, ধর্মীয় বিশ্বাস আর জাতীয়তা উল্লকেহ যিনি আমার করা “আপনাদের পাকিস্তানে নারীদের হাল দেখেছেন?” এ প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন “কেন কিছু কিছু মেয়েরা সমান অধিকারের জন্য লড়ছে? তোমরা কি জাননা কোন দৃষ্টিতে তোমাদের দেখা হয়? তোমরা পুরুষদের চেয়ে অনেক উপরে, সব মেয়েরাই একটি নাজুক ফুল…” । রাগ বেড়ে গেল আমার। চীৎকার করে বললাম এরকম ফিল্মি ভাবে পেয়েদের পুতুপুতু নজরে দেখ বলেই আজ পৃথিবীতে মেয়েদের এই হাল”। সে শান্ত ভাবেই বললো – “তুমি যেভাবে ইচ্ছে নিতে পার, কিন্তু শুধুমাত্র একটি কারনে নারীজাতকে আমি পুরুষের চাইতেও শ্রেষ্ঠ ভেবে তাদেরকে সম্মান দেখাতে পারি আর তা হচ্ছে তাদের জনম দেবার ক্ষমতা।” আমি কিছু বলতে পারিনি আর।
(তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, ধর্মীয় বিশ্বাস আর জাতীয়তা কেন উল্লেখ করলাম তা নিশ্চয়ই স্পষ্ট)।
জানি সবাই আপনার এবং ঐ ব্যক্তির মতন ভাবেন না। Then It would have been a perfect world.
আপনার মন্তব্যের/দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতি ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম। অনেক অনেক… 🙂
@সপ্তক,
নারীরা যদি এটা উল্লেখ করেন তাহলে পুরুষ শাসিত সমাজের জন্য তা হবে সোনায় সোহাগা। কারন ধর্ম বা সমাজ বলেন অথবা বিবর্তনের সারভাইবেল অফ ফিটেষ্ট যেটাই বলুন না কেন তারাতো এটাই চায় যে, “নারী তুমি তোমার বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ না ঘটিয়ে সন্তান জন্ম দিয়ে যাও (কারন প্রকৃতিগতভাবেই সন্তান জম্ম দানের জন্য তোমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে) আর বাহিরের পৃথিবীতে প্রবেশ না করে মনোযোগ দিয়ে সংসার ধর্ম পালন করে যাও। চিন্তা করোনা এইসবের দোহাই দিয়ে তোমার সম্মান বারবার উল্লেখ করতে আমরা দ্বিধা করবোনা।”
@ব্রাইট স্মাইল্,
“চিন্তা করোনা এইসবের দোহাই দিয়ে তোমার সম্মান বারবার উল্লেখ করতে আমরা দ্বিধা করবোনা।””
হাঁ সম্মান দেয়া হয়েছে বটে। কুমারী মাতার গর্ভে গড এর সন্তান জন্মালেও জারজ শব্দ টি কিন্তু অভিধান থেকে মুছে যায়নি,মা’র পায়ের নীচে বেহেশত বললেও ভারী কাপড় দিয়ে যে মা’কে ঢেকে দেয়া হয়েছে তা আজও সরানো যায়নি,মা দুর্গাকে সারাদিন পুজা করলেও দিন শেষে বিসর্জন ই ত দেয়া হয়। আমি নারীবাদী শব্দটিকে ঘৃণা করি। কিছু পুরুষ সতিদাহ,বিধবা বিবাহ এগুলর সমাধান করেছেন কিন্তু আসল জায়গায় কেউ হাত দেন নাই। তা হোল নারীর খমতায়ন এবং অর্থনৈতিক অধিকার। আর এটা কেউ দেবেন ও না। পশ্চিমে এমন অনেক নারী আমি দেখেছি যারা গর্ভ ধারন করেন না সচেতন ভাবেই। সময় এসেছে নারীর উচ্চ কন্ঠে ঘোষণা করারঃ
আমি আর গর্ভ ধারন করব না
তোমাদের এ অসভ্য সভ্যতাকে
আর আমি বহন করতে পারব না।
নারীর পায়ে লুটিয়ে পড়বে এ সভ্যতা
বলবে,” হে নারী তুমি ই আমার বিধাতা।”
এটা একটি ভালো পয়েন্ট। সমীকরণ মিলাতে গেলে কর্মজীবি বলতে কি বুঝি সেটা পরিস্কার করা দরকার।
কারন বিতর্কটা ছিলো, কেউ বলছেন ‘উচ্চবিত্ত নারীরা অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বি হতে গেলে কষ্ট করতে হবে তাই নিজেদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ বজায় রাখতে তারা স্বামীর বিত্তের মাধ্যমে পরনির্ভরশীল হতে পছন্দ করেন’, আর কারো ধারনা ‘সুখ-স্বাচ্ছন্দ বজায় রাখাটাই সবসময় কারন নয়, উচ্চবিত্ত নারীদের অর্থনৈতিক আয়-ইনকাম না করার পিছনে অন্য আরও কারন বিদ্যমান আছে।’ কর্মজীবি বলতে এখানে যে মন্তব্য আমি করেছি তার পুরোটাই অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বি ব্যাপারটি মাথায় নিয়ে করেছি বলেই বোধ হচ্ছে, আপনার পয়েন্টটি তখন আমার মনে কাজ করেনি।
এখন আপনার পয়েন্টে আসছি, নারীরা অর্থনৈতিক ভাবে পরনির্ভরশীল হয়ে যদি পরিশ্রমী হয় সেই পরিশ্রমের আউটপুট নির্নয় করার উপায়টা কি? যেহেতু পরিশ্রমটি সরাসরি অর্থনৈতিক কোন বেনিফিট দিচ্ছেনা, সেহেতু পরিশ্রমের ফলাফলটির কৃতিত্ব সমাজ তাকে দিতে নারাজ, তা না হলে এই বিতর্কটির আদৌ কোন প্রয়োজন ছিলোনা। কারন সমাজের বিচার-বিবেচনা প্রধানতঃ অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবিত, আর কে না জানে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতাই ক্ষমতার মুল উৎস।
আমার মতে মানুষ মাত্রই একটি রিসোর্স। সে যেখানেই থাকুক, যে পরিবেশেই থাকুক, যে অবস্থানেই থাকুক, যতক্ষন তার ব্রেইন ও শক্তি থাকে, বুদ্ধি ও বিবেচনা বোধ কাজ করে ততক্ষন সে কোন না কোনভাবে দেশ, সমাজ, পরিবারের উপকারে আসছে। আপাতঃ দৃষ্টিতে যাকে মনে হচ্ছে অর্থনৈতিক ভাবে পরনির্ভরশীল, কেউ কি নিশ্চিত করে বলতে পারে যে তার দ্বারা পরোক্ষভাবে অন্য কোন উপায়ে মানব সমাজের উপকার সাধিত হচ্ছেনা। এখন আমরা যদি অর্থনৈতিক উপার্জনেই পরিবারে একমাত্র উপকার হয় বলে ধরে নেই, তা হলে সেটা কি ঠিক হলো?
জানিনা আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলাম কিনা। না পারলে আমার অক্ষমতা। 🙁
@ব্রাইট স্মাইল্,
যেহেতু পরিশ্রমটি সরাসরি অর্থনৈতিক কোন বেনিফিট দিচ্ছেনা, সেহেতু পরিশ্রমের ফলাফলটির কৃতিত্ব সমাজ তাকে দিতে নারাজ, তা না হলে এই বিতর্কটির আদৌ কোন প্রয়োজন ছিলোনা।
(বোল্ডকরণ আমার)
হুঁ। তাহলে, নারীরা ঠিক পুরুষের সমসংখ্যায় পদার্থবিদ বা ব্যবসাদার না হলে আপনার আপত্তি নেই, যদি গৃহিনীরা তাদের কর্মের উপযুক্ত সামাজিক মর্যাদা এবং অর্থনৈতিক সুবিধা ভোগ করা শুরু করেন (যেমন ধরুন, গৃহিনীরা স্বামীদের উপার্জনের একটি গ্রহণযোগ্য অংশ পাওয়া শুরু করলেন)? আমি অবশ্য ধরে নিচ্ছি মেয়েদের পদার্থবিদ বা ব্যবসাদার হওয়ার পথে কেউ বাধা দিচ্ছে না বা গৃহিনী হতে কেউ চাপাচাপি করছে না।
প্রশ্নগুলি বিশেষত বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে একটু hypothetical, সেটা স্বীকার করছি। তারপরও কৌতুহলী।
@রৌরব,
‘নারীরা ঠিক পুরুষের সমসংখ্যায়’ বা ‘পুরুষরা ঠিক নারীর সমসংখ্যায়’ পদার্থবিদ বা রসায়নবিদ হতে পারছে কি পারছেনা বা হতে পারলে আমার আপত্তি আছে কি নেই, সেটা এই আলোচনায় অপ্রাসংগিক মনে হচ্ছে। কি হলে কি হতো বা কি হতে পারতো বা কি হবে সেটা সমাধানের ইংগিত দেয়, সমস্যার নয়। এর উত্তর ‘হ্যা’ বা ‘না’ যে কোন একটা হলেও যা ঘটছে তা কি পালটে যাবে?
“বিতর্কটির আদৌ কোন প্রয়োজন ছিলোনা” আপনার এই বোল্ড অংশটুকু বলেছি এই কারনে যে, যে পরিশ্রমটা সরাসরি অর্থনৈতিক কোন বেনিফিট দেয়না সেটা লোক চক্ষুর অন্তরালে থেকে যায় ফলে সেটা আর ধর্তব্যের মধ্যে পড়েনা বিধায় অব্জার্ভেশনটা অনেক সময় সঠিক নাও হতে পারে। তবে হ্যা স্বীকার করছি “আদৌ” -এর বদলে “হয়তো” বলা উচিৎ ছিলো।
গৃহিনীরা কোন কাজ করা ছাড়াই স্বামীদের উপার্জনের একটি অংশের অংশীদার হবেন কি করে? স্বামীর এমপ্লোয়ার নিশ্চয়ই স্বামীদের উপার্জনের একটি অংশ বসে থাকা গৃহিনীদের মধ্যে ভাগ করে দেয়না। এমন নিয়ম আছে কি? হতে পারে স্বামীর নিজের একটা ব্যবসা আছে, গৃহিনী সেখানে অংশীদার অথবা স্বামীর ব্যবসায় একজন এমপ্লোয়ী।
যাই হউক, এই রকম ক্ষেত্রে অনেক সিনারিও কাজ করতে পারে। দেখুন, আমি সমাজ সংস্কারক নই, সমাজবিদও নই, সোস্যাল সাইন্স আমার বিষয় নয়, আপনার কৌতুহল নিবৃত্ত করার উপযুক্ত প্রার্থী আমি নই এটা নিশ্চিত জানবেন। বরং এই মুক্তমনায় অনেক বিজ্ঞ ব্যাক্তি আছেন যাঁরা এই সব প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করলে আমরা উপকৃত হই।
@ব্রাইট স্মাইল্,
এটা যে মূল আলোচনার বিষয় নয়, আপনার এই মন্তব্যে আমি একমত।
না তা পাল্টাবেনা, তবে আমাদের কোন আলোচনাতেই কিছু না পাল্টানোর সম্ভাবনা খুউব বেশি, তাই না?
আমার কৌতুহলটা আপনার মতামতের বিষয়েই ছিল, অন্য সোস্যাল সায়েন্টিস্ট প্রভৃতির মত বিষয়ে নয়। তবে এ ব্যাপারে আপনি মত জানাবেন কিনা সেটা অবশ্যই আপনার ব্যাপার।
@রৌরব,
দেখুন আমি এতোটা রিজিড নই যে লোকজনকে মতামত জানাতে আপত্তি করব বা অসুবিধা থাকবে। বরং সত্যি বলতে গেলে কেউ আমার মতামত জানতে চেয়েছে এতে ভালো লাগছে, আর জানাতে পারলে বরং সুখীই হব। চুপি চুপি বলছি আমি আসলে টাইপিংয়ে খুব অলস তাই কথা প্রসঙ্গে কথা বাড়ে বলে ওই পথ মাড়াইনি। 🙁
আর আপনি ই তো বললেন
আরে ভাই, আসল প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা নেই, আর আপনার hypothetical। বড় যন্ত্রনায় আছি। :-X
@ব্রাইট স্মাইল্,
এমন অনেক গৃহিনী আছে স্বামীর রোজগারের পুরোটি তাদের হাতে তুলে দেয়ার পরেও তাদের অভিযোগ ও চাহিদার কোন শেষ থাকেনা।
কেউ কেউ বলে থাকে বাইরে কাজ করে এসে ঘর সামলানো সম্ভব নয়। যেমন বাচ্চাদের পড়াশোনা করানো,বাসার অন্যান্য যাবতীয় কাজ ক্লান্ত শরীরে কষ্টকর হতে পারে। কোন গৃহিনী যদি বাইরে চাকরী না করে ঘরের কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করে থাকে তাহলে তাকে স্বামীর অর্থ সেভের সহায়ক বলা যায়। কিন্তু দেখা যায় ব্যাপার উল্টো। তারা চাকরীও করবেনা, ঘরোয়া কোন কাজও করবেনা। অপ্রয়োজনীয়ভাবে একজনের জায়গায় কয়েকজন কাজের লোক রাখবে। অন্যের রোজগারের কী শত্রুতামূলক অপচয়!উচ্চবিত্ত ও উচ্চ মধ্যবিত্তদের মধ্যে আজকাল দেখা যায় বাচ্চাদের জন্য যতটা বিষয় ততজন প্রইভেট শিক্ষক রাখা হয়। তাহলে অচাকরীজীবী উচ্চ শিক্ষিত মায়েরা কি তাদের সন্তানদের পড়াশোনায় কোন সাহায্য করছে? প্রাইমারি স্কুলের একজন বাচ্চাকেও যদি তার শিক্ষিত মা পড়াতে না পারে তাহলে মায়ের উচ্চ শিক্ষার মানেইবা কি, মূল্যইবা কি? কাজের লোক ও শিক্ষকের দায়িত্ব যদি হয় ঘর দেখাশোনা করা ও বাচ্চা পড়ানো তাহলে বাসায় থেকে ঘর দেখা এবং বাচ্চা পড়ানোর অজুহাতটি কতটুকু যক্তিযুক্ত?
ওরা স্বামীগৃহে বিনা কাজে থাকছে, খাচ্ছে,পরছে,বিলাসবহুল জীবন যাপন করছে আবার উপার্যনের অংশ দাবী করে কোন যুক্তিতে?(যারা বাইরেও কাজ করেনা ঘরেও কাজ করেনা তাদের কথা বলছি)।
@তামান্না ঝুমু,
কিভাবে এবং কি উপায়ে স্ত্রী স্বামীর উপার্জনের অংশ দাবী করছে ব্যাপারটা পরিস্কার নয়। আপনি কি মনে করেন আইনী বিধান ছাড়া স্ত্রী স্বামীর বা স্বামী স্ত্রীর উপার্জনের অংশ দাবী করতে পারে? আর যদি দাবী করেও থাকে তা হলে কি মনে করেন যুক্তি সংগত কারন ছাড়া বা লাভ লোকসান বিবেচনায় না এনেই সে দাবী পুরন করা হয়? লোকজনকে এত বোকা ভাববেন না।
@ব্রাইট স্মাইল্,
আইনী বিধান আছে। তা হচ্ছে ধর্মীয় আইন। একজন পুরুষকে দেন মোহর দিয়ে বৌ কিনে নিতে হয়। এবং সেই কেনা বৌকে সারা জীবন ভরন-পোষন করতে হয়। অনেক মেয়েই তাদের বিক্রীত মূল্যকে(দেন মোহর) তাদের সম্মান মনে করে। কারো কাছে বিক্রয় হয়ে গিয়ে তার ঘরে আসবাব পত্রের মত জীবন যাপন করাকে যারা গৌরবের মনে করে তাদের বুদ্ধিমান নাকি বোকা বলা যায় আমার জানা নেই।
@ব্রাইট স্মাইল্,
আমার মনে হয় তামান্না ঝুমু শুধু বলতে চেয়েছেন উপার্জনের অংশের মৌখিক দাবীর কথা বোঝাতে চেয়েছেন। কিভাবে বা কি উপায়ের কথা ঠিক অর্থবহ নয় মৌখিক দাবী । আইনীভাবনে দাবী করতে পারে না ঠিকই, কিন্তু অনেক স্বামীই জানেন সেই দাবী না মেটালে কি সমূহ বিপদ ঘটে দাম্পত্য জীবনে। বিপ্লব পাল কোন এক পোস্টে লিখেছিলেন স্বামীর উপর স্ত্রীর নীরব ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের কথা। নীরব যেহেতু অনেক স্বামী এটা স্বীকার করতে দ্বিধা করেন। তিনি পারলে আবারো রেফেরেন্স দিতে পারেন যদি এই আলোচনা পড়ে থাকেন। যাহোক এই ডোমেন্সটিক ভায়োলেন্সে হয়ত একটা উপায় বা কিভাবে দাবী করা তার এক উদাহরণ। ঝামেলা এড়াতে অনেক স্বামী ঐ দাবী মিটিয়ে দেন। ডোমেন্সটিক ভায়োলেন্সে বলতে শারীরিক বোঝাচ্ছে না আবশ্যকভাবে। তবে উপরে তামান্না ঝুমু যে ধর্মীয় বিধানের কথা বলে ধর্মীয় বিধানে দাবী মেটানোর কথা বলেছেন সেটা আপনার প্রশ্নের প্রাসঙ্গিক উত্তর নয়। সেটা আরেক ব্যাপার। আর সেক্ষেত্রে আমি আমি স্ত্রীদের বোকা ইঙ্গিত না করে ধর্মের শিকার বলেই ভাবতে চাই।
@অপার্থিব,
একমত। এইক্ষেত্রে আপনি নিশ্চয়ই স্বামী বেচারার উপর পুরো দোষটা চাপিয়ে দিয়ে বলবেন না যে স্বামী কেন এসব ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স সহ্য করে স্ত্রীর সাথে দাম্পত্য জীবন যাপন করছে? অনেক কিছু করার ইচ্ছে থাকলেও পরিবেশ পরিস্থিতি অনেক সময় বাঁধ সাধে। আর এটাকেতো আপনি নীরব ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স হিসাবে আখ্যা দিচ্ছেন নীরবের জায়গায় যদি সরব হয় তাহলে বুঝতেই পারছেন অবস্থা কি দাঁড়ায় যেটা উলটো ক্ষেত্রে ঘটার সম্ভাবনা থাকে বেশী।
শুরু হতেই একটি এলোমেলো কথা/প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল, এখন রৌরবের মন্তব্য হতে তা বাক্যে পরিণত হলো।
শুরুতেই কর্মজীবি এবং পরজীবির সংজ্ঞা নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
একজন নারী বাহিরে গিয়ে কাজ না করলেই কি পরজীবি? আমি এমন একজন নারীকে জানি যিনি দিনে সত্তর জন মানুষের খাবার রান্না করেন। তার শশুর পক্ষ বিশাল খানদানী, গ্রামের ভীষণ ধনী। প্রতিদিন উঠোনে বিশাল আকৃতির হাঁড়িতে যেসব রান্না হয়, তার সবই করেন ঘরের নারীরা মিলেমিশে। ধান ভানা, সেদ্ধ করা, তিন চার মণ ধান বাহির হতে গোলায় তোলা সবই। তাদের স্বামীরা সম্পত্তি আর বাহিরের কাজ দেখাশোনা করেন। এক্ষেত্রে এই নারীরা কি পরজীবি? নাকি নিজের শরীরের শেষ শ্রমটুকু দিয়েও এক মুঠো ভাতকে তারা অর্জন করে নিচ্ছেন (আমার সেই আত্মীয়ার নিজ ভাষায়)।
খাঁটি পরজীবি আমার মতে তারাই যারা সংসারে কোন রকম আর্থিক, অথবা শারীরিক কন্ট্রিবিউশনেই নেই। আমাদের দেশে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে যারা বাবার হোটেলে খেয়ে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়াচ্ছে তারাই আসল পরজীবি।
তাই এখানে ফরিদ আহমেদের কথার সাথে আমার কথার মিল খুঁজে পাওয়া যাবে যে উচ্চবিত্ত পরিবারে পরজীবির মাত্রা একটু বেশি থাকতেই পারে। যেহেতু সত্তর জন মানুষের রান্না অথবা তাদের খাবার জোগাড়ের অর্থ (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) ঘরের গৃহিণীকে করতে হয়না।
ব্রাইট স্মাইলের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আমার একটা কথা মাথায় এল। সেটা এই, পুরো আলোচনায় একটা ডাইকোটমি ধরে নেয়া হচ্ছে সেটা হল: কর্মজীবি বনাম পরজীবি। এটা কি পুরো ঠিক? একজন নারী তো কর্মঠ (ঘরের কাজে) হয়েও পরনির্ভরশীল হতে পারে (পুরুষও পারে)। সেটা এই সমীকরণে কিভাবে ঢুকছে? অর্থাৎ, যে নারীরা স্বেচ্ছায় (বা অন্তত আপাত দৃষ্টিতে স্বেচ্ছায়) অর্থনৈতিক ভাবে পরনির্ভরশীল কিন্তু পরিশ্রমী Homemaker হতে চায়, তাদের অবস্থানটি কি? বিশেষ ভাবে ব্রাইট স্মাইলকে প্রশ্নটা করছি (অন্যরাও মন্তব্য করতে পারেন, অবশ্যই)।
@রৌরব, দুঃখিত আপনাকে এড্রেস করতে ভুলে গেছি। আপনার প্রতি মন্তব্যটা নিচে দেখে নিবেন। ধন্যবাদ।
@অপার্থিব,
আপনার লেখাটি চমৎকার লাগলো। লেখাটির অনেক যুক্তির সাথে একমত না হয়ে পারা যায়না। আপনার কথিত অন্য ব্লগ সদস্যের লেখাটির প্রতিমন্তব্যের সাথে আমি তখনও একমত ছিলাম এখনও আছি। প্রতিমন্তব্যটিতে আপনি বলেছিলেন,
বলেছেন কথাটা অনেকটা সত্যি। আর অনেকটা সত্যির কিছুটা নিয়ে আমি গতকাল মন্তব্য করছিলাম। হ্যা, আপনি বলতে পারেন ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ কথাটাই মুখ্য, পুরুষ নয়। স্বীকার করছেন যে মেয়েদের জগতে একটা প্রতি-বন্ধকতা আছে, সেটা হলো ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রনের অভাব। সেটাকে আপনি যে নামই দিন না কেন তাতে কিছু যায় আসেনা, যেমন সমাজ?, পুরুষ?, নারী?, সামাজিক ব্যবস্থা?, ধর্ম? বা সব কিছুই একত্রে! কিন্তু সেটা হবে অন্য আলোচনা। বাস্তবতা হলো আমাদের সমাজ ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে ভারসাম্যহীন অবস্থায় আছে। আর ভারসাম্যহীনতার ফলাফল এক পক্ষকে ভোগ করতেই হবে।
তবে এই লেখার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা বলতে ইচ্ছা করলো…
ঘটনা ঘটাবার জন্য কে দায়ী সেটা তর্কের মুখ্য বিষয় ছিলোনা, অনুঘটক বা কারনগুলো কি সেটাই ছিলো আলোচনার বিষয়। কারা দায়ী একটি বিষয়, কারনগুলো কি বা কেন ঘটছে আরেকটি বিষয়, যদিও দুটি বিষয় একটির সাথে অন্যটি রিলেটেড।
আমি ঢালাওভাবে এমন কথা বলি নাই যে ১০০% “পরজীবিতার প্রতি আসক্ত” মেয়েরা পুরুষদের নিয়ন্ত্রণের কারণেই “পরজীবিতার প্রতি আসক্ত” হয়। বরং আমি এটাই বোঝাতে চাচ্ছিলাম যে পরজীবিতার প্রতি যে আসক্ত সে ছেলে হউক মেয়ে হউক পরজীবিকা তার কাম্য হবেই, আর সেটার মাত্রা বৃদ্ধি পাবে যদি পরিবেশ, পরিস্থিতি তাতে ইন্ধন যোগায়। এটা একটা সাধারন হিসাব।আমার ধারনা পরজীবিতার প্রতি যদি একান্তই কেঊ আসক্ত হয়, তো যে কোন একটা যৌক্তিক বা অযৌক্তিক কারন দেখিয়ে সে পরজীবি হবেই। আর মেয়েদের পরজীবি হওয়ার যৌক্তিক কারনগুলো ছেলেদের তুলনায় অনেক গুন বেশী বলেই মেয়েদের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। আর সেই অনেক গুন বেশী হওয়ার জন্য শুধু মেয়েরাই দায়ী একথা মানতে আমি নারাজ।
স্বীকৃতি দেয়াটা আবশ্যক বলবেন কেন? স্বকীয়ভাবে নিজ কর্ম বা মত বেছে নেওয়ার যোগ্যতা পুরুষ ও নারী দুপক্ষেরই সমান আছে। আর যদি সেটাই বিশ্বাস করা হয় বাস্তবে সেটা ঘটছে না কেন? এর পিছনের কারন গুলো কি? প্রশ্ন সেখানে।
এটাও একটি লিঙ্গবাদী ধারনা নয় কি? অন্য কারো ঘাড়ে চড়ে বিষয় সম্পদের সর্বোচ্চ সুখ লাভ করার প্রতি কিছু মানুষের উৎসাহ বা আগ্রহ থাকে। এটা ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আর কর্মজীবী হতে বাধা থাকলেতো কথাই নেই, সোনায় সোহাগা, মেয়েদের ক্ষেত্রে যেটা হচ্ছে। যেমন অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ধনী লোকের ছেলেরা কর্ম বিমুখ হয়, বাপের সম্পত্তি পায়ের উপর পা তুলে ভোগ করার একটা প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। এখানে বাবা যেমন ছেলেটিকে বসে বসে খাবার ইন্ধন যোগাচ্ছে তেমনি ছেলেটিও সে সুযোগের পুর্ন সদ্বব্যবহার করছে। এখানে কারনটা সহজে অনুমেয়, কিন্তু দোষটা কাদের? সেটা কিভাবে নির্নয় করা যাবে?
তাহলে দেখা যায় পুরুষদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গীতে এমন কিছু আছে যেটা সমাজে ওয়েল এষ্টাব্লিসড্ যা মেয়েরা যৌক্তিকভাবে সমাজের সামনে উপস্থাপনের চেষ্টা করে কৃতকার্য্য হয়। এখন বলা হবে যে, মেয়েদের সামাজিক প্রতিবন্ধক দৃষ্টিভঙ্গীগুলোর বদলাবার দায়িত্বতো মেয়েদের। কথা ঠিক, কিন্তু আমি মনে করি শুধু মেয়েদের একক চেষ্টায় কাজ হবেনা, দৃষ্টিভঙ্গীগুলোকে আইডেন্টিফাই করে সেগুলো যে সব কারনে ঘটছে, ছেলে অথবা মেয়ে যাদের কারনে ঘটছে, গোটা সমাজের মিলিত দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর মাধ্যমে সুষ্ঠ সমাধা্নের পথে এগোন সম্ভব।
একমত, যেহেতু এই প্রবৃত্তি ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে গোটা মানব জাতির। এটা শুধু মেয়ে জাতির আলাদা কোন বৈশিষ্ট নয়।
এর জন্য পুরুষতন্ত্র কত পারসেন্ট দায়ী এটা হয়তো জানা সম্ভব নয়, কিন্তু এর জন্য যদি ০% পুরুষতন্ত্র দায়ী হয় তাহলে ‘পুরুষতন্ত্র’ বলে কোন টার্ম থাকা উচিৎ নয়।
তাহলে পুরুষতন্ত্র টার্মটি জগতে আছে বলে মেনে নেয়া হচ্ছে, তবে সেটা কি কি ঘটনা ঘটাবার জন্য দায়ী সেটা রিডিফাইন করা উচিৎ বলে আমার মনে হয়, তা হলে আমরা যারা ভুল চিন্তা করছি তারা উপকৃত হবো।
পরিশেষে বলতে চাই, সমস্যা সমাধান কল্পে সমস্যা সৃষ্টির পিছনের কারনগুলো যদি আইডেন্টিফাই না করা যায় সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান সম্ভব কি? কিন্তু মুস্কিল হচ্ছে কারনগুলো ব্যখ্যা করতে গেলেই শোরগোল উঠে যে সমস্যার ভিক্টিমদের দোষ ধরা হচ্ছে না। সমস্যাগুলো যে কারনে সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলো বর্ণনা করার মানে কি নিজেদের দোষ অন্যের ঘারে চাপানো? এটা ঠিক যে যার যার কর্মের জন্য সে সে দায়ী এবং যে কর্ম করে ফলাফল তার উপর বর্তাবে। কিন্তু আজ যদি সমগ্র মেয়ে জাতি তাদের সব ব্যর্থতার জন্য নিজদেরকে দায়ী করার ঘোষনা দেয়, তার পরেও কি ব্যর্থতার কারন গুলো সমাজ থেকে দূ্রীভূত হবে? নিজেদের দোষ অন্যের ঘারে না চাপানোর অজুহাতে সত্য ও বাস্তবতা প্রকাশ করাও অপরাধ?
@ব্রাইট স্মাইল্,
ভাষার ব্যাপারে ঢিলেমী থাকলে বা সতর্ক না হলে পা পিছলে খাদে পড়ার যে সমূহ বিপদ আছে আপনার এই মন্তব্য তার জন্য একটা কড়া অনুস্মারক হয়ে থাকবে। আমি বলতে চেয়েছি যে যারা মনে করেন যে নারীরা স্বেচ্ছায়, স্বকীয়ভাবে, স্বপ্রণোদিত ভাবে পরজীবী (বা “X”) হতে পারেননা যদি না পুরুষেরা তাদেরকে তা হতে বাধ্য করে তাদের অন্তত মেনে নেয়া উচিৎ (স্বীকার এই মেনে নেয়া অর্থেই বলা হয়েছে) যে মেয়েরা স্বেচ্ছায়, স্বকীয়ভাবে, স্বপ্রণোদিত ভাবে তা করতে বা হতে পারে। ভাষার ঢিলেমী সত্বেও এটাই যে আমি মীন করেছিলাম সেটা কেন আপনি ধরতে পারলেন না তা বোধগম্য হল না।
যখন কোন লিঙ্গের সকল সদস্যের সমান বা একই গুণ বা বৈশিষ্ট্য আছে বলে দাবী করা হয় তখনই কেবল সেটা লিঙ্গবাদী ধারনার উদাহরণ হবে। আমি তো বলিনি যে সব নারীরাই কর্মজীবী হতে বাধা না থাকা সত্বেও তারা পুরুষের ঘাড়ে চড়ে (স্বামী বা প্রেমিক) বিষয় সম্পদের সর্বোচ্চ সুখ লাভ করায় উৎসাহী হয়। আমি এক বিশেষ নারী গোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করছিলাম ।
আপনার “এর জন্য যদি” তে “এর” টা কিন্তু সব কেস কে কভার করছে না। আমি শুধু (৩) এর জন্য ০% পুরুষতন্ত্র দায়ী বলেছিলাম। (৩) টা কোন কেস সেটা আবার ভাল করে দেখে নিন।
@অপার্থিব,
এক বিশেষ নারী গোষ্ঠীর কথা উল্লেখ করার মধ্যে আমি অযৌক্তিক কিছু দেখছিনা যতক্ষন না পর্য্যন্ত বিশেষ শ্রেনীটিকে আপনি আপনার নিজস্ব দৃষ্টিভংগী দিয়ে কোয়ান্টিফাই করে সেটাকে ধ্রুব সত্য ধরে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন। ব্যতিক্রম নারী-পুরুষ সব গোষ্ঠীতেই আছে বলাই বাহুল্য।
দুঃখিত, আপনি ঠিক বলেছেন, আমার বুঝার ভুল।
বিশ্লেষণধর্মী আলোচনাটি যৌক্তিক এবং উপভোগ্যও বটে। রৌরবের মন্তব্য, তার মন্তব্যের প্রতিত্তোরে লেখক ও ফরিদ আহমেদের মন্তব্য আমার দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্প্রসারিত করেছে বৈ কি।
ধন্যবাদ সবাইকে।
দারুন বিশ্লেষনমূলক লেখা। (Y)
যেমন, স্ক্যান্ডেনিভিয়ান দেশগুলি লিংগনিরপেক্ষতার দিকে পৃথিবীর অন্য অনেক দেশের তুলনায় আকাশছোঁয়া অবস্থায় চলে গেছে।
আপনার এই ধরনের সংশ্লেষী পোস্টগুলো সবসময়ই ভালো লাগে আমার। এটাও তার ব্যতিক্রম নয়।
বিতর্ক অনেকটা হাডুডু খেলার মত। খেলায় নামার পরে মাঝের রেখার অবস্থান জানা থাকার পরেও আপনাকে সরে থাকতে হয় নিজ সীমানার দূরবর্তী অংশে। নইলে প্রতিপক্ষের হাতে অকালে বধ হবার সমূহ সম্ভাবনা। এই বধিত হওয়াটা কারোরই পছন্দ হবার কথা নয়। তা সে যতই বন্ধুত্বপূর্ণ বিতর্ক হোক না কেন। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। কাজেই, তুমুল বিতর্কের পরে পার্শ্বরেখার বাইরে থেকে কেউ যখন মধ্যবর্তী রেখাটাকে ঔজ্জ্বল্য দেবার চেষ্টা করে, তখন তার সাথে দ্বিমতের আমি কোনো আপত্তি খুঁজে পাই না।
আপত্তি নেই, তবে দুই একটা বিষয়কে পরিষ্কার করার সমাহিত সুযোগ এখানে এসেছে। কাজেই সেগুলো বলে যাই। আমি উচ্চশিক্ষিত এবং উচ্চবিত্ত নারীদের পুরো শ্রেণীটাকে পরজীবী বলি নি। এই শ্রেণীতেও আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন অনেক নারী আছেন। যারা ঠিকই সারাদিন পরিশ্রম করছেন নিজের পেশার উন্নতির স্বার্থে। স্বাবলম্বী এরা। স্বামীর বিত্ত না হলেও তাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু, এই শ্রেণীর একটা বিরাট অংশেরই কর্মক্ষেত্রে যাবার সকল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র স্বামীর অঢেল সম্পদ আছে বলে বিলাসিতা এবং কর্মবিমুখতায় গা ভাসিয়ে দেয়। অন্য শ্রেণীগুলোর মধ্যেও কর্মচোরা নারী আছে। তবে তাদের মধ্যে ঘরের বাইরের কর্মক্ষেত্রে যাবার মত এতখানি যোগ্যতা উচ্চ শ্রেণীর নারীদের মত নেই। এছাড়া সামাজিক বাধাটাও উচ্চশ্রেণীর ক্ষেত্রে যতটা খর্ব, এদের ক্ষেত্রে ততটা নয়। উচ্চ শ্রেণীর নারীরা যে একেবারে ঘরে বসে থাকে তা কিন্তু নয়। এদের মধ্যে অনেকেই আবার শুধু গৃহিনী এই বিষয়টাকে সামাজিক অমর্যাদা হিসাবে দেখে থাকে। ফলে, কিন্ডারগার্টেন, স্কুল, কলেজ, বা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মত আরামদায়ক পেশা অথবা বাবা-ভাই, স্বামী বা স্বামীর বন্ধুদের কারো প্রতিষ্ঠানে বড়সড় কোনো কর্মহীন পদ জুটিয়ে নেয় তারা। সংজ্ঞাগতভাবে কর্মজীবী হবার পরেও এদেরকে আমি ওই পরজীবীর কাতারেই ফেলে দেই।
আমাদের নারীদের সবশ্রেণীর ক্ষেত্রেই পুরুষতন্ত্র প্রভাব বিস্তার করেছে। একথা অস্বীকার করতে চাই না আমি। কিন্তু, সবচেয়ে কম প্রভাব রয়েছে উচ্চশ্রেণীর নারীদের মধ্যে। এখানে পুরুষতন্ত্র বুড়িয়ে যাওয়া বাঘ। বা উল্টো করে বলা যেতে পারে যে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কঠিন বাহুপাশ থেকে মুক্ত হবার মত শক্তি উচ্চশ্রেণীর নারীদেরই শুধু রয়েছে। কিন্তু সেই শক্তিকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে তাদের অনীহা প্রবলভাবে দৃশ্যমান। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে যে, এরা কিন্তু কেউ পুরুষতন্ত্রের পক্ষে কখনোই সাফাই গায় না। সারাক্ষণই পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে গলাবাজি করে চলেছে তারা। সেই গলাবাজি করে কতখানি আরো বেশি দাবী দাওয়া আদায় করে নেওয়া যায় তার চেষ্টা ঠিকই করে চলেছে নিরন্তর। এগুলো করেই বিভ্রান্তিতে ভুগছে এই ভেবে যে তারা পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করছে। তাদের এই আন্দোলন অনেকটা কেন্দ্রের কাছ থেকে প্রদেশের আরো বেশি সুযোগসুবিধা আদায়ের প্রচেষ্টার মত। কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার আন্দোলন নয়।
আপনি যে এই অনুচ্ছেদে Equal Rights Amendment-র কথা বলছেন সেটা প্রথমে বোঝা যায়নি, তাছাড়া এই অত্যন্ত মার্কিন ইস্যুটি সবার নাও জানা থাকতে পারে। একটু পরিষ্কার করলে বোধহয় অনেকের সুবিধা হতে পারে।
এছাড়া, উদ্ধৃত বাক্যটি আমার কাছে স্পষ্ট নয়। কোন মেয়ে যদি স্বামীর টাকায় খেতে চায়, এবং তার স্বামীর এ ব্যাপারে কোন আপত্তি না থাকে, ERA তাকে কিভাবে ঠেকাবে?
@রৌরব,
ধন্যবাদ আমার ভুল (বা ঢিলেমী) ধরিয়ে দেয়ার জন্য। হ্যাঁ, আমি যে ERA কেই নির্দেশ করছিলাম সেটা
পরিস্কার করিনি। এটা আমার ভুল।
আর আপনি ঠিকই বলেছেন যে কোন মেয়ে যদি স্বামীর টাকায় খেতে চায়, এবং তার স্বামীর এ ব্যাপারে কোন আপত্তি না থাকে, ERA সেটা ঠেকাতে পারবে না। সমস্যা সেখানে নয়। সমস্যা হল ERA পাস হলে অনেক স্বামীই (বা প্রেমিক) স্ত্রীর(বা প্রেমিকার) পরজীবিতায় আপত্তি তুলতে পারে,যারা আগে সেটা তুলেনি। কারন ERA পাস হলে তো পরজীবিতার কোন নীতিগত ভিত্তি থাকে না।
@অপার্থিব,
গুড পয়েন্ট। লেখাটির জন্য ধন্যবাদ জানানো হয় নি (F)