আবুল কাশেম
এপ্রিল ২, ২০১১
৫ম পর্বের পর।
স্বামী দ্বারা স্ত্রীকে তালাক দেওয়া (বিবাহ বিচ্ছেদ)
ইসলামে বিবাহ বিচ্ছেদ খুবই মামুলী ব্যাপার—বিশেষত: বিবাহ বিচ্ছেদ যদি স্বামী দ্বারা হয়। দু’জন সাক্ষীর সামনে স্বামীকে শুধু বলতে হবে ‘তোমাকে তালাক দিয়ে দিলাম’। ব্যাস, সেই মুহূর্ত থেকেই স্ত্রী স্বামীর জন্য হারাম হয়ে যাবে। এই তালাক মৌখিক অথবা লিখিত ভাবেও হতে পারে। আজকাল মুঠোফোনেও ইসলামী তালাক দেওয়া জায়েজ হচ্ছে—অনেক ইসলামী দেশেই—হয়ত বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এই ভাবেই, অতি সহজে, অতি অল্প পয়সা খরচ করে এক নিমেষের মাঝে একজন স্বামী পারবে তার স্ত্রীকে দূর করে দিতে। শুধু শর্ত হল এই যে ইদ্দতের (তালাক প্রাপ্ত স্ত্রী গর্ভবতী কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হবার জন্য) সময় পর্যন্ত তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীকে ঘরে ভরণপোষণ দিয়ে রাখতে হবে—তাও যদি তালাক এক অথবা দুই হয়। তার মানে হল এই ইদ্দতের সময় স্বামী চাইলে স্ত্রীকে ফেরত নিতে পারে। কি মারাত্মক ব্যাপার! এক নারীর জীবনের ভার আল্লাহ পাক সম্পূর্ণভাবে তুলে দিয়েছেন এক পাষণ্ড স্বামীর হাতে। স্বামীর দয়া, ইচ্ছা, করুণার উপর নির্ভর করছে এক নারীর অস্তিত্ব। এ চিন্তা করলে যে ইসলামী সভ্যতা নিয়ে যারা বড়াই করেন তাদের মুখে থুথু দিতে ইচ্ছে করে। এ ব্যাপারে আমি আগেই লিখেছি যে স্বামী যদি স্থায়ী তালাক দেয় (অর্থাৎ তিন তালাক) তবে স্ত্রীকে এক কাপড়ে ঐ মুহূর্তে স্বামীর ঘর ত্যাগ করতে হবে। কি নিষ্ঠুর! কি অমানবিক! কি অসভ্য এই ইসলামী আইন যা আল্লার আইন হিসাবে পরিচিত।
দেখা যাক আল্লাহ পাক বলেছেন তালাকের ব্যাপারে।
কোরান সুরা বাকারা আয়াত ২২৮ (২:২২৮):
আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। আর যদি সে আল্লাহ্র প্রতি এবং আখেরাত দিবসের উপর ঈমানদার হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ্ যা তার জরায়ুতে সৃষ্টি করেছেন তা লুকিয়ে রাখা জায়েজ নয়। আর যদি সদ্ভাব রেখে চলতে চায়, তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়ার অধিকার তাদের স্বামীরা সংরক্ষন করে। আর পুরুষদের যেমন সস্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনি ভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম অনুযায়ী। আর নারীরদের উপর পুরুষদের স্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ্ হচ্ছে পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ।
ইসলামের এহেন বর্বরোচিত নিয়ম ঢাকার জন্য অনেক ইসলামী পণ্ডিত বলে থাকেন যে আল্লাহ পাকের নিকট তালাক নাকি সবচাইতে অপ্রীতিকর শব্দ। তাই স্বামীর উচিত হবে তালাক একেবারে শেষ অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করা। অর্থাৎ স্ত্রী একান্তই অবাধ্য ও অপ্রীতিকর কর্ম না করলে তাকে তালাক না দেওয়া ভাল। কিন্তু এই ধরণের কথা কোরানের কোথাও লেখা নাই। সুনান আবু দাউদে এই ব্যাপারে দুটো হাদিস দেখা যায়। পড়া যাক এই হাদিসগুলো।
সুনান আবু দাউদ, বই ১২ হাদিস ২১৭২
মুহারিব বর্ণনা করলেন:
নবী বলেছেন (দঃ): আল্লাহ্র আইনগত বিধানের মধ্যে তাঁর কাছে সবচাইতে জঘন্য হচ্ছে তালাক।
সুনান আবু দাউদ, বই ১২ হাদিস ২১৭৩
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর বর্ণনা করেছে:
নবী (দঃ) বলেছেন: ‘আইনসম্মত কার্য্যকলাপের মধ্যে আল্লাহ্র কাছে সবচাইতে অপ্রীতিকর কর্ম হচ্ছে তালাক”।
এই হাদিসগুলো যে পরিষ্কার ভাবে কোরান লঙ্ঘন করেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এ ছাড়াও, এই হাদিস শুধু হাস্যকরই নয়—এই হাদিসে আল্লাহ্র মতিগতি এবং প্রকৃতিস্থতা নিয়ে সন্দেহ হয়। আল্লাহ্ কি পাগল, না মাথাখারাপ? যে কর্মকে আল্লাহ্ সবচাইতে জঘন্য বলেছেন সেই কর্মকেই আল্লাহ্ আইনসম্মত করে দিয়েছেন। চিন্তা করুন: খুন করা যদি সবচাইতে ঘৃণিত কাজ হয় এবং তা সত্যেও কোন দেশে যদি খুন করা আইনসম্মত করা হয় তবে আমরা সেই দেশের আইনকে কি বলবো?
সত্যি বলতে কি ইমাম গাজ্জালী লিখেছেন কোন কারণ ছাড়াই স্বামী পারবে স্ত্রীকে তালাক দিতে।
এহিয়া উলুম আল দীন, ভলুম ১, পৃঃ ২৩৪):
স্বামী তার স্ত্রীর ব্যাপার স্যাপার কারও কাছে ফাঁস করবে না—তা বিবাহ অবস্থায় হউক অথবা বিবাহ বিচ্ছেদই হউক। এই ব্যাপারে বেশ কিছু বর্ণনা আছে যে স্ত্রীর গোপন ব্যাপারে কারও সাথে আলাপ আলোচনা বিপদজনক হতে পারে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে একদা এক ব্যক্তি জানালো যে সে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চায়। প্রশ্ন করা হল কি কারণ। সে বলল: “একজন সুস্থ মস্তিষ্কের ব্যক্তি তার স্ত্রী সংক্রান্ত গোপন ব্যাপার কাউকে বলে না”। সে যখন তালাকের কাজ সম্পন্ন করল তখন জিজ্ঞাসা করা হল: “তুমি কি কারণে স্ত্রীকে তালাক দিলে?” সে উত্তর দিল: “আমার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী অথবা অন্য কোন নারীর ব্যাপারে কাউকে কিছু বলার অধিকার আমার নাই”।
এ ব্যাপারে শারিয়া বিশেষজ্ঞ আবদুর রহমান ডোইয়ের বক্তব্য হল হানাফি আইন অনুযায়ী স্ত্রীকে তালাক দেবার জন্য কোন কারণের দরকার নেই (ডোই, পৃঃ ১৭৩)।
মালিকের মুয়াত্তা হাদিসে লিখা হয়েছে যে তালাক হচ্ছে পুরুষের হাতে আর মেয়েদের জন্য আছে ইদ্দত।
দেখুন মালিক মুয়াত্তা হাদিস ২৯.২৪.৭০:
ইয়াহিয়া—মালিক—ইয়াহিয়া ইবনে সাইদ—ইয়াজিদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে কুসায়ত আল লাইথ থেকে বললেন যে সা’দ ইবনে আল মুসায়েব থেকে বর্ণনা করেছেন: উমর আল খাত্তাব বলেছেন: ‘কোন স্ত্রীর তালাক হল। তার পর সেই মহিলার দুই অথবা তিন স্রাব হল। এর পর স্রাব বন্ধ থাকল। এমন অবস্থা হলে সেই মহিলাকে নয় মাস অপেক্ষা করতে হবে। এর থেকে বুঝে নিতে হবে যে স্ত্রীলোকটি গর্ভবতী। নয় মাস পার হয়ে যাবার পর আবার তাকে তিন মাসের ইদ্দত করতে হবে। এর পর সে পুনরায় বিবাহে বসতে পারবে’।ইয়াহিয়া—মালিক—ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ ইবনে মুসায়েব থেকে বলেছেন: “তালাক হচ্ছে পুরুষের হাতে, আর স্ত্রীর জন্যে রয়েছে ইদ্দত”।
মালিকের মুয়াত্তাতে আরও লিখা হয়েছে যে স্বামী যদি স্ত্রীকে বলে যে সে (স্ত্রী) তার জন্য হারাম তখন তা তিন তালাক (অর্থাৎ স্থায়ী তালাক) হিসাবে গণ্য হবে।
পড়া যাক মালিকের মুয়াত্তা ২৯.১.৬:
মালিক ইয়াহিয়া থেকে বললেন তিনি শুনেছেন যে আলী বলতেন যে কোন স্বামী তার স্ত্রীকে যদি বলে: “তুমি আমার জন্যে হারাম”, তবে সেটাকে তিন তালাকের ঘোষণা হিসেবে ধরা হবে।
এই সব কিছুর অর্থ হচ্ছে যে এক মুসলিম পুরুষ যে কোন মুহূর্তে তার খেয়াল খুশী মত তার হারেমের রদবদল করতে পারবে। সে এক অধিবেশনেই তার চার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে ঘর থেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারবে এবং একই সাথে আরও নতুন চারজন স্ত্রী দ্বারা তার হারেম পূর্ণ করে নিতে পারবে।
তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর ভাতা ব্যাপারে অনেকেই ইসলামের মাহাত্ম্য দেখাতে চান। এ বিষয়ে আগেই বেশ কিছু লিখা হয়েছে। মোদ্দা কথা হল অস্থায়ী তালাককে ইদ্দতের সময় ছাড়া অন্য কোন স্থায়ী তালাকে স্ত্রী স্বামীর কাছ হতে এক কড়ি কণাও পাবে না। এ ব্যাপারে আরও কিছু হাদিস এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন অনুভব করছি।
সহিহ্ মুসলিম বই ৯, হাদিস ৩৫১৪:
ফাতেমা বিনতে কায়েস অভিযোগ করলেন যে তার স্বামী আল মাখযুলমী তাকে তালাক দিয়েছে কিন্তু কোন খোরপোষ দিতে অস্বীকার করেছে। ফাতেমা আল্লাহর রসুলের কাছে এ বিষয়ে বলল। আল্লাহর রসুল বললেন, “তোমার জন্য কোন ভাতা নাই। তোমার জন্যে ভাল হবে ইবন আল মাখতুমের ঘরে থাকা। সে অন্ধ, তাই তার অবস্থিতিতে তুমি তোমার পোশাক খুলতে পারবে। (অর্থাৎ তার সামনে পর্দা অবলম্বনে তোমার কোন অসুবিধা হবে না।)
সহিহ্ মুসলিম বই ৯, হাদিস ৩৫৩০:
ফাতেমা বিনতে কায়েস বললেন: আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দিল। আল্লাহর রসুল আমার জন্য কোন প্রকার থাকা খাওয়ার ভাতার ব্যবস্থা করলেন না।
এর পরেও কি আমরা বলতে পারি যে ইসলামে তালাকপ্রাপ্তা মহিলাদের উপর ন্যায়বিচার করা হচ্ছে?
স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দেবার অধিকার
ইসলামীরা প্রায়শ: গলা ফাটিয়ে বলেন যে ইসলাম নারীকে দিয়েছে তালাকের অধিকার। কি নিদারুণ মিথ্যায়ই না তাঁরা প্রচার করে যাচ্ছেন। কথা হচ্ছে, এক মুসলিম স্ত্রী কোন ভাবেই তার স্বামীকে তালাক দিতে পারবে না যে ভাবে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দেয়। অর্থাৎ একজন স্ত্রী ইচ্ছে করলেই তার অপব্যবহারমূলক স্বামীর হাত থেকে উদ্ধার পাবে না। তার মুক্তি নির্ভর করবে তার স্বামীর মেজাজের উপর। একজন স্ত্রী তার কুলাঙ্গার স্বামীকে হাতে পায়ে ধরে অথবা ইসলামী আদালতে গিয়ে টাকা পয়সা দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। এই ব্যবস্থাকে খুল বলা হয়, তালাক নয়। অন্যায় হচ্ছে এই যে, যে স্থানে স্বামীর অবাধ অধিকার আছে স্ত্রীকে কোন কারণ ছাড়াই যে কোন মুহূর্তে তালাক দিতে পারে। স্ত্রী তা পারবে না। এখন কোন স্বামী যদি স্ত্রীকে বেদম পিটায় তবুও স্ত্রী পারবে না ঐ অত্যাচারী, বদমেজাজি স্বামীর হাত থেকে মুক্তি পেতে। এমতাবস্থায় পীড়িত স্ত্রীকে ইসলামী আদালতে গিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে তার স্বামী তাকে যেমন ভাবে পিটিয়েছে তা ইসলামী পিট্টির বাইরে পড়ে। অর্থাৎ পিটানো হয়েছে এমনভাবে যে মহিলাটির হাড় ভেঙ্গে গেছে অথবা প্রচুর রক্তপাত ঘটেছে। এমতাবস্থায় আদালত চাইলে তাদের বিবাহ ভেঙ্গে দিতে পারে কিন্তু শর্ত হবে এই যে মহিলাকে তার স্বামী যা দিয়েছে (মোহরানা) তা ফেরত দিতে হবে।
মারহাবা! এরই নাম হচ্ছে ইসলামী ন্যায় বিচার। যে ভুক্তভোগী তাকেই জরিমানা দিতে হবে। আর অপরাধী সম্পূর্ণ খালাস। শুধু তাই নয় সে পুরষ্কৃত হচ্ছে। কি অপূর্ব বিচার। এখন এর সাথে তুলনা করুন আধুনিক বিচার ব্যবস্থা।
দেখা যাক কিছু হাদিস এই খুল সম্পর্কে।
মালিকের মুয়াত্তা ২৯. ১০. ৩২:
ইয়াহিয়া—মালিক—নাফী—সাফিয়া বিনতে আবি ওবায়দের মাওলা থেকে। ইয়াহিয়া বললেন সাফিয়া বিনতে ওবায়েদ তাঁর যা কিছু ছিল সবই তাঁর স্বামীকে দিয়ে দিলেন। এ ছিল তাঁর স্বামী থেকে তালাক পাবার জন্যে ক্ষতিপূরণ বাবদ। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর এতে কোন আপত্তি জানালেন না।মালিক বলেছেন যে স্ত্রী নিজেকে স্বামীর কাছে জিম্মি করে রাখে সেই স্ত্রীর খুল অনুমোদন করা হয়। এ ব্যবস্থা তখনই নেওয়া হয় যখন প্রমাণিত হয় যে স্ত্রীর স্বামী তার জন্যে ক্ষতিকর এবং সে স্ত্রীর উপর অত্যাচার চালায়। এই সব ব্যাপার প্রমাণ হলেই স্বামীকে তার স্ত্রীর সম্পত্তি ফেরত দিতে হবে।
মালিক বললেন: এমতাবস্থায় স্ত্রী নিজেকে জিম্মি রেখে (অর্থাৎ স্বামীকে টাকা পয়সা দিয়ে) খুল করে নিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে স্ত্রী স্বামীর কাছে যা পেয়েছে তার চাইতেও বেশী দিতে পারবে।
সহজ কথায় ইসলামী আইনে বলা হচ্ছে যে স্ত্রী তার বেয়াড়া স্বামী হতে মুক্তি পেতে চাইলে সবচাইতে সহজ পথ হচ্ছে স্বামীকে প্রচুর টাকা পয়সা উৎকোচ দিয়ে তার থেকে তালাক দাবী করা।
এখন পড়া যাক আরও একটি হাদিস।
সুনান আবু দাউদ বই ১২, হাদিস ২২২০:
উম্মুল মুমিনিন আয়েশা বললেন:
সাহলের কন্যা হাবিবার স্বামী ছিল সাবিত ইবনে কায়েস শিম্মা। সে হাবিবাকে মারধোর করে তার হাড়গোড় ভেঙ্গে দিল। হাবিবা নবীজির (সাঃ) কাছে এ ব্যাপারে স্বামীর বিরুদ্ধে নালিশ করল। নবীজি সাবিত ইবনে কায়েসকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন: তুমি তোমার স্ত্রীর কিছু জমি জায়গা নিয়ে নাও এবং তার থেকে দূরে থাক। সাবিত বলল: এটা কি ন্যায় সঙ্গত হবে, আল্লাহর রসুল? নবীজি বললেন: হ্যাঁ, তা হবে। তখন সাবিত বলল: আমি স্ত্রীকে দু’টি বাগান দিয়েছি মোহরানা হিসাবে। এই দুই বাগান এখন তার অধিকারে। নবীজি (সা:) বললেন: তুমি ঐ বাগান দু’টি নিয়ে নাও ও তোমার স্ত্রী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাও।
কি অপূর্ব ন্যায় বিচারই না করলেন নবীজি। এর থেকে আমরা বুঝলাম যে স্বামীর অবাধ অধিকার থাকছে স্ত্রীকে তালাক দেবার। স্ত্রীর স্বামীকে তালাক দেবার কোন অবাধ অধিকার নাই—খুল কোন অধিকার নয়, খুল হচ্ছে একটি বিশেষ সুবিধা।
এই ব্যাপারে দেখা যাক কিছু শারিয়া আইন।
শারিয়া আইন এম ১১.৩ (উমদাত আল সালিক, পৃঃ ৫৪৬):
বিবাহ বিচ্ছেদের জন্যে স্ত্রীকে আদালতের বিচারকের শরণাপন্ন হতে হবে।
স্বামী যদি স্ত্রীর জন্য বাধ্য ভরণপোষণ বহন করতে না পারে তখন স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদের ব্যবস্থা নিতে পারে।
এমতাবস্থায় স্ত্রী চাইলে স্বামীর সাথে থাকতে পারে (স্ত্রী নিজের খরচ নিজেই বহন করবে)। স্ত্রী যা খরচ করবে তা স্বামীর দেনা হয়ে থাকবে। স্ত্রী যদি স্বামীর অস্বচ্ছলতা সইতে না পারে, তখনও সে নিজেই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারবে না। স্ত্রীকে ইসলামী আদালতে প্রমাণ করতে হবে যে তার স্বামী তার ভরণপোষণ দেয় না। ইসলামী বিচারক যদি স্ত্রীর প্রমাণ গ্রহণ করেন তখনই উনি বিবাহ বিচ্ছেদ (খুল) দিতে পারেন—কেননা এ ব্যাপারে বিচারকই একমাত্র সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। ইসলামী বিচারক না পাওয়া গেলে স্ত্রী তার বিষয়টা দুজন লোকের (অবশ্যই পুরুষ) হাতে তুলে দিতে পারে।
এখানে অনেক কিন্তু আছে—স্বামী যদি স্ত্রীকে তার মৌলিক খাবার, বাসস্থানের ব্যবস্থা দেয় তবে স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারবে না। এই আইনটি লিখা হয়েছে এই ভাবে।
শারিয়া আইন এম ১১.৪ (ঐ বই পৃঃ ৫৪৭):
স্বামী স্ত্রীকে মৌলিক খাবারের ব্যবস্থা দিয়ে থাকলে স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদের পথ নিতে পারবে না। স্বামী যদি প্রধান খাবার দিতে পারে কিন্তু অন্য আনুষঙ্গিক খাবার না দেয়, অথবা চাকর বাকর না দেয় তখনও স্ত্রী পারবেনা বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে। এই ব্যাপারটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে স্বামীর সচ্ছলতার উপর।
মজার ব্যাপার হচ্ছে ইসলামী আদালতে গেলে স্ত্রীর সাথে যৌন কর্মের ব্যাপারে আদালত স্বামীর ভাষ্য গ্রহণ করবে, স্ত্রীর ভাষ্য নয়।
শারিয়া আইন ১১.১১ (ঐ বই পৃঃ ৫৪৬):
আদালত যৌন সংগম উপভোগের ব্যাপারে স্বামীর সাক্ষ্য, প্রমাণ গ্রহণ করবে।
আদালতে যদি প্রমাণ না করা যায় যে স্বামী স্ত্রীর ভাতা দিতে ব্যর্থ—তখন স্ত্রী যা বলবে এই ব্যাপারে তাই গ্রহণ করা হবে। স্বামী স্ত্রী যদি যৌন উপভোগের ব্যাপারে একমত না হয় তখন স্বামী এ ব্যাপারে যাই বলবে আদালত তাই সত্য বলে মেনে নিবে। অর্থাৎ স্বামী যদি বলে যে স্ত্রী তার দেহদান করতে অপারগ, তখন স্বামীর ভাষ্যই সত্যি বলে গৃহীত হবে। এমন যদি হয় স্বামী স্বীকার করে নিলো যে প্রথমে স্ত্রী তার দেহদান করতে রাজী হল, কিন্তু পরে তার দেহ সমর্পণ করল না তখন স্বামীর ভাষ্য আদালত অগ্রাহ্য করতে পারে।
উপরের ঐ সব আজগুবি ইসলামী আইন থেকে আমরা সত্যি বলতে পারি যে একজন স্বামী বিবাহের মাধ্যমে কত সহজেই না নারীদের আর্থিকভাবে ব্যাবহার করতে পারে। বিয়ে করার পর স্বামী স্ত্রীর উপর অত্যাচার শুরু করল, মারধোর করল। যখন এসব অসহ্য হয়ে উঠলো তখন স্ত্রী স্বামীর পায়ে ধরল তালাকের জন্য—টাকা পয়সার বিনিময়ে। স্বামী টাকা নিলো এবং স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিল। কি চমৎকার ইসলামী ব্যবস্থা। এই ভাবে সেই স্বামী চালাতে থাকবে তার ব্যবসা। নারী দেহও উপভোগ হচ্ছে আবার টাকাও পাওয়া যাচ্ছে—এর চাইতে আর ভাল কি হতে পারে?
চলবে (৭ম পর্বে)।
তাই কি আদিল সাহেব? আরেকটু গভীরে ভাবুন। মুসলিমদেশ গুলো পৃথিবীর সব থেকে বেশী কোরাপ্ট দেশ-মানে লোকদের মিথ্যাচার এবং মিথ্যে কথা বলার অভ্যেস বেশী। কোরানে কি মিথ্যাচারের আদেশ দেয়? না সৎ থাকতে বলে?
তাহলে অধিকাংশ মুসলমান অসৎ হওয়ার সময়, বিশ্বাসের ভয় পায় না?
কিন্ত তবুও ক্ষণিকে বস্তুবাদি লোভে তারা অসৎ হয়-কারন বস্তুবাদি লোভ আসলেই বিশ্বাসের থেকে অনেক বেশী দৃঢ়। বা তারা অসৎ হয় বাঁচার জন্যে-বাঁচার দায় ধর্মের থেকে বেশী।
অধিকাংশ লোকই আসলে ধার্মিক না। ধর্মের ভাবটা তাদের মুখোস সমাজে টেকার জন্যে। বেঁচে থাকার জন্যে অধিকাংশ লোকই ধর্মের বিরুদ্ধে সব কিছু করতেই রাজি আছে। এই সরল সত্যটা বুঝতে হবে।
@বিপ্লব পাল,
তবে এটাও সত্য যে বস্তুবাদি লাভের চিন্তায় অসৎভাবে বেঁচে থাকার জন্যে ধর্মটা তাদের পক্ষে একটি চমৎকার হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে। তাই অধিকাংশ লোকই ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু করতে বা বলতে নারাজ।
@বিপ্লব পাল, :clap
@বিপ্লব পাল,
– প্রথাগত ধর্মগুলি আসলে বাস্তবিক ক্ষেত্রে কি?
পূর্নাংগ জীবন ব্যাবস্থা বা এই জাতীয় বড় বড় যাইই দাবী করে থাকুক না কেন, আমার কাছে তো এসব ধর্মগুলি কিছু রিচ্যূয়াল পালন আর কিছু অন্ধ বিশ্বাসের সমাহার ছাড়া আর তেমন কিছুই মনে হয় না। এ কারনেই যারা ধার্মিক বলে নিজেদের দাবী করেন তারা জাগতিক ক্ষেত্রে ধর্মের পালন, অর্থাৎ সত জীবন যাপন থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ন মনে করেন নামাজ রোজা জাতীয় রিচ্যূয়াল, ও মুখে মুখে কে কত বড় আল্লাহ রসূল ভক্ত তা ঢাক ঢোল পিটিয়ে প্রচার করাকে (সরাসরই জিজ্ঞাসা করা হলে অবশ্য যথারীতি নানান কথার ত্যানা প্যাঁচাবেন)। এ জন্যই ধর্মের আতিশয্য ওয়ালা দেশগুলিতে দূর্নীতির প্রকোপ বেশী হতেই পারে। যারা দূর্নীতি করছে তারাও নিজেদেরই ধার্মিক বলেই মনে করছে, কার তার চোখে ধর্মের যা গুরুত্বপূর্ন অংশ অর্থাৎ রিচ্যূয়াল পালন ও গোঁয়ারের মত অন্ধবিশ্বাস আঁকড়ে থাকা তা সে পালন করে যাচ্ছে।
যার কারনে পূর্নাংগ জীবন ব্যাবস্থার দাবীদার আমাদের মুসলমান সমাজে নামাজ রোজা ছেড়ে দেওয়াকে ধরা হয় ধর্মচ্যূত হওয়া, ঘুষ খাওয়া চুরি চামারিকে নয়।
যে ধর্মে রিচ্যূয়ালের যত বেশী ছড়াছাড়ি সে ধর্মের লোকেদের ততই বেশী সচেতনা থাকে সেই রিচ্যুয়াল ও অন্ধবিশ্বাসের গোড়া রক্ষা করতে। মডারেট মুসলমান যারা, এমনকি সেসব ধার্মিক যারা সারা বছর ঈদের নামাজ ছাড়া মসজিদ মুখো হন না তারাও মানসিকভাবে এখনো সরাসরি ধর্মের সমালোচনা বা কোন দূর্বলতা আছে তা সচেতন ভাবেই স্বীকার করতে চান না। ধর্ম সংক্রান্ত এ জাতীয় সমস্যা দেখা দিলে তারা চেষ্টা করেন সমস্যা আসলে ধর্মে নয়, অল্প কিছু কাঠমোল্লা সমস্যা বানাচ্ছে এভাবে চিন্তা করতে। এটা আমাদের দেশে বাস করলে ভাল বুঝতেন।
@আদিল মাহমুদ,
একেবারে সহমত। (Y)
@বিপ্লব পাল,
নিজে মিথ্যা বলা আর রাষ্ট্রীয় ভাবে ইসলাম বিরোধি আইনে সমর্থন জানানো, এর মধ্যে মনস্তাত্বিক পার্থক্য আকাশ-পাতাল। মানুষ মিথ্যা কথা বলে নিজেকে অপরাধি মনে করে, মনে করে, একটা পাপ করলাম — আল্লাহ মাপ করে দেবেন। কোরঅান বিরোধি আইন পাশ মানে কোরআর ভুল বলে সুস্পষ্ট ঘোষনা দেয়া।
বাংলাদেশে কি শরীয়া আইন চালু আছে? বাংলাদেশে তালাক, খোরপোষ, স্ত্রী-পেটানো, অবিশ্বস্থতা এসব ক্ষেত্রে কি শরীয়া আইন চলে নাকি সিভিল আইন?
@সফিক,
আমি উত্তর দিলে আবুল কাশেম সাহেব নিঃসন্দেহে দ্বিমত করবেন। আর কোরান পড়া নেই বলে তা খন্ডানোর মত তথ্য ও যুক্তি আমার নেই। যদিও আমি উপরে বর্ণিত আমার জ্ঞানে আস্থাশীল। তবে স্ত্রী-পেটানোর ক্ষেত্রে যে বাংলাদেশে শারীয়া আইন মানা হয় না তা হলফ করে বলতে পারি। সদ্য পাশ হওয়া “পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১০ স্ত্রী-পেটানোর বিচারে প্রয়োগ করা হয়।
@সফিক,
দয়া করে আপনি বাংলাদেশের কোন পারিবারিক আইনজীবির সাথে যোগাযোগ করে জেনে নিন বাংলাদেশের মুসলিম পারিবারিক আইন কোন ভিত্তিতে হয়েছে। আমি বলে দি্তে পারি–নিজের অভিজ্ঞতা থেকে, যে বাংলাদেশের ্মুসলিম বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ আই্নের ভিত্তি হচ্ছে হানাফি আইন–‘হেদায়া’ র কপি। এই আইনই ব্রিটিশরা চালু করছিল–্মুসলিম ফেমিলি আইন হিসাবে।
আর হেদায়া হয়েছিল–ওয়ারেণ হেস্টিংসের সময়। এটার অনুবাদ ্করেছিলেন হামিল্টন সাহেব। এই আইনগুলি শুধু আমাদের দেশেই নয় এমন`কী ইংল্যাণ্ডের ব্যারিস্টারাঅরা পর্য্যন্ত ব্যাবহার করেন মুসলিম পারিবারিক আইনের জন্যে।
এছাড়া আপনি উপরে আমার উত্তর ্দেখতে পারেন। বাংলাদেশের শাষণতন্ত্রে আছে ইসলাম অফিসিআল ধর্ম–এর মানে কী? শারিয়া যে ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ তা কী বলে দিতে হবে?
@সফিক,
লিখতে ভুলে গেছিলাম
আপনি ‘বিধিবদ্ধ আইন’ পড়ে নিতে পারেন। এই বই প্রকাশ হয়েছে বাংলদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে। আর ইসলামি ফাউন্ডেশন ত সরকারেরই।
আমি এই বই পড়ি নাই–পড়ার প্রয়োজনও নাই। কারণ এর চাইতেই ভাল শারিয়া (হানাফি, শাফি, ্মালিকি) আমার কাছে আছে। তবে এই ‘বিধিবদ্ধ আইন’ যে হানাফি আইনের অনুলিপি তাতে আমার কোন সন্দেহ নাই। শুনেছি এই বই অনেক খণ্ডে–সম্ভবতঃ দশ খণ্ডে। যতটুকু জানি এই বিশাল গ্রন্থের সম্পাদনায় ছিলেন/আছেন জনাব শাহ আবদুল হান্নান সাহেব। উনি আগে প্রায়শঃ মুক্তমনার ফোরামে শারিয়া কে রক্ষা করে অনেক কিছু বলে বেড়াতেন। আজকাল আর উনার শড়াশব্দ পাই না।
গীতাদি যতই মেয়েদের পক্ষে লিখুক না কেন- মেয়েদের বুদ্ধিসুদ্ধি একটু কমই আছে :-X
নইলে বাংলাদেশে মোল্লারা মেয়েদের সমানাধিকারের বিলের বিরুদ্ধে পথে নামছে, আর কোন মেয়েকে দেখা যাচ্ছে না, তাদের বিরুদ্ধে ঝাটা নিয়ে পথে নামতে 😛
কিছু মেয়ে মোল্লাদের ঝাটাপেটা করলেই, শরিয়া ভূত হয়ে যেত।
ছেলেদের কি দায় পড়েছে, মেয়েদের জন্যে পথে নামার। 😉
@বিপ্লব পাল,
এটা আসলে এতটা সরল নয়।
মেয়েদের একার কেন দোষ দেবেন? পুরুষেরাও কি সেভাবে প্রতিবাদ করেছে বা করছে? যারা মৌলবাদী টাইপের তাদের কথা না হয় বাদই দিলাম। আর যারা মডারেট তারাও এসব ব্যাপারে বড়জোর কানের কাছে চেঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে হলে “প্রতিবাদ করি।।এসব অল্প কিছু কাঠ মোল্লারাই ইসলামের ক্ষতি করেছে…” এই জাতীয় দুয়েকটি গত বাঁধা কথা বলেই দায় সেরে দেবেন। ধর্মের বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলবে কে? যে ঘোর মডারেট সেও মুখে কোনদিন স্বীকার করবে না যে কোরানের বেশ কিছু প্রাচীনপন্থী নিয়ম কানুন যুগের সাথেই বাতিল হয়ে গেছে। তারা চাইবে যাবতীয় দায় আমিনীদের ঘাড়ে ফেলে দুই কুলই রক্ষা করে চলতে।
সেখানে মহিলাদের কিভাবে দোষ দেবেন?
@আদিল মাহমুদ,
একেবারে সহমত।
যেখানে আমাদের দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবরা মেরুদণ্ডহীন–সেখানে আমাদের দেশের সাধারণ মহিলাদের কাছ থেকে শক্ত মেরুদণ্ড আশা করা অলীক কল্পনা। আসলে এই যুদ্ধ নারী পুরুষ উভয়কেই করতে হবে।
আর আমার মনেহয় নারীদের সর্বমূক্তি পুরুষদের স্বার্থেই। এক নারী যখন স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবে, স্বাধীনভাবে নিজের জীবন রচনা করতে পারবে, এক নারী যখন নিজের পা্যে দাঁড়াতে পারবে—অন্য কারও উপর বোঝা হবে না, তখন পুরুষও ত লাভবান হবে; তাকে আর কারও বোঝা বহন করতে হবে না–কারণ আমাদের দেশে নারীদের বোঝা হিসাবেই দেখা হয়।
আর এই বোঝার ভার আরও ভারী করেছে শারিয়া। আমি আগেও লিখেছি, শারিয়ায় একমাত্র সমস্যা নয়–তবে শারিয়াকে আমাদের নারীদের বুকে এক বিশাল পাথর হয়ে লেগে আছে। এটাকে আগে সরাতে হবে–তখন অন্যান্য সমস্যা সমাধান অনেক সহজ হবে।
তাই শারিয়ার নিরসনকেই আমি আমাদের তথা সমস্ত মুসলিম নারীদের স্বাধীনতার প্রথম পদক্ষেপ মনে করি।
@আবুল কাশেম,
বুদ্ধিজীবি আবার কে? সবাই বাজারজীবি। বাজারজীবি হতে গেলে ধর্মকে চটানো চলে না। কিন্ত একজন মেয়ে পথে নেমে আন্দোলন না করলে, তার ভাই তার দ্বিগুন সম্পত্তির অধিকারি হবে। সুতরাং বুদ্ধিজীবির কোন স্বার্থ নেই-নারীর আছে। তাই যুদ্ধটা নারীকেই করতে হবে।
মুক্তি বা স্বাধীনতা বলে কিছু নেই। আমরা সবাই কোন না কোন বৃত্তের অধীন। আসল প্রশ্ন শ্রমের বিভাজনে, উৎপাদন ব্যাবস্থায় উৎপাদকের অধিকারে। প্রশ্ন হচ্ছে এই উৎপাদন ব্যাবস্থায় মেয়েরা ন্যায্য মালিকানা পাচ্ছে কি না। সমস্যা হচ্ছে সেটা পুরুষ ও পায় না-কারন সেও একটা ধনতন্ত্রের সিস্টেমের জাঁতাকলে তেল বার করে-নারীর অবস্থাও তাই। সমস্যাটা আরো গভীরে। পুরুষই মুক্ত না যেখানে সেখানে নারীমুক্তি আরো অনেক দূরে।
@বিপ্লব পাল,
আপনি অনেকটা দার্শনিকের ্মত কথাবার্তা বলছেন।
কী বলব ভেবে পাচ্ছিনা।
চিন্তা করুন আপনার ছেলে মেয়ে উভয়ই আছে। তাহলে সম্পত্তি ভাগের ব্যাপারে আপনার কী অভিমত হবে জানতে ইচ্ছে করছে। আপনি কি ইসলামী আইন মানবেন–মানে ধরুণ আপনি একজন মুসলিম।
@আদিল মাহমুদ,
পুরুষেরাও কি সেভাবে প্রতিবাদ করেছে বা করছে?
পুরুষে কেন প্রতিবাদ করবে? ইসলামিক আইন মেনে উত্তরাধিকার হলে সে বোনেদের ভাগের ২ গুন পাবে। কেন সে আন্দোলন করবে যাতে সে এখন যা পাচ্ছে তার অর্ধেক পাবে? কি দায় পরেছে তার?
সে দায় মেয়েদের এবং তাই সেই আন্দোলনের দায়ভার ও তাদেরই নিতে হবে। মোল্লা পেটানো শিখতে হবে তাদের।
@বিপ্লব পাল,
আপনি এখানেই ভুল্টা করছেন। আপত দৃষ্টিতে তেমন মনে হতে পারে, সেটা সেকেন্ডারি কারন ঠিক।
তবে প্রাইমারী কারন সম্পত্তির প্রতি লোভ লালসা নয়, বিশ্বাসের গোঁড়ায় হাত দেবার ভয়।
আমাদের দেশে নারীবাদি সংগঠন তো নেহায়েত কম নেই। তারা কেন মাঠে নামে না? তারা তো এসিড নিক্ষেপ, চাকরি বৈষম্য এ জাতীয় ইস্যুতে চট করে রাস্তায় নেমে যেতে পারে।
@বিপ্লব পাল,
একটু কম মানে? আরে নাই বললেই চলে। সহিহ হাদিসে আল্লাহর রাসুল ১৫শো বছর আগেই এই কথা বলে গেছেন।
একটু আস্তে মারেন দাদা, কোমল শরীরে যেন দাগ না পড়ে।
ঘরে একজন শিক্ষিত দাসী আর বিছানায় দক্ষ সেবিকার যে প্রয়োজন।
আপনি সেদিন নাকি গীতা দির এক লেখায় মন্তব্য করেছিলেন যে, পশ্চিমে মেয়েরা ঘরে তাদের পুরুষকে ফুটবলের মত উষ্টায়, আর উষ্টা-বিষ্টা খেয়েও পুরুষ লোকলজ্জার ভয়ে কিছু বলেনা, মনে করে মেয়েদের লাথি-গুতা খাওয়ার জন্যেই তাদের জন্ম হয়েছে?
দাদা বয়স তো অনেক হল, আমার ভয় হয় কোনদিন জানি বৌদি আপনাকে মক্কা শরিফ পাঠিয়ে দেন।
@আকাশ মালিক,
পাঠাবে কি? দেখছেন না নাস্তিকদের মক্কা শরীফ মুক্তমনাতে বসে আছি সংসার ছেরে! এরপরে অন্তত আমার ফুটবল তত্ত্বে একটু বিশ্বাস করুন 😀
@বিপ্লব পাল,
বিপ্লব বাবু,
মোল্লাদের মেরে তক্তা বানানো বৌদির কাছ থেকেই শিখে নেব। এটা আবার ঘরেও প্রয়োগ করতে পারব। 😉
আপনার এই চমতকার সিরিজটার প্রথম দুই পর্য পরার পর আর পড়া হয়নি। সবগুল পড়ে ফেলবো আগে। লেখা বরাবরের মতোই চমতকার! আপনাদের কল্যানে মুক্তমনায় ইসলাম বিষয়ে যথেষ্ট উনুতমানের লেখাই আসছে, যেটি কিনা একটি খুশীর খবর।
একটা কথা, আপনি কি একটা জিনিষ জানেন, আল্লাহপাক প্রেরীত সর্বশেষ রাসুল এবং সকল রাসুলগনের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম, পবিত্র আশমানী কিতাব ‘হয়রান শরীফ’ যার উপর নাযেল হয়, সেই পবিত্র মহাপবিত্র মহাপুরুষ হযরত মুহাম্মদ খাজাবাবা হয়রান (সঃ) যে আপনার সাথে বিতর্ক করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন? এই ব্যাপারে আপনার অনুভুতি জানতে চাই :lotpot: !
@আল্লাচালাইনা,
কস্কী মমিন? :hahahee:
@আল্লাচালাইনা,
বুঝতে পারছি আপনি কোন মহানবীর উল্লেখ করেছেন এখানে। এই মহানবী যে নবীজির চাইতে বেশী জানেন তা আর বলতে? আমি যতটুকু জানি উনি প্রায়শঃ ওহী পেয়ে থাকেন—সরাসরি আল্লাহ পাকের কাছ হতে। আজকাল আল্লহ পাকের অফিসে ই-মেল চালু হয়েছে। আল্লাহ পাক একটু লজ্জিত উনার বান্দারা উনার আগেই ই-মেল আবিষ্কার করে ফেলেছে। তাই আল্লাহ পাক হঠাৎ করে বলে উঠলেন ‘হয়ে যা’ অমনি হড় হড় করে ই-মেল বের হতে লাগ্`ল। এই সব ই-মেলের ই-মেলের মাধ্যমেই আল্লাহ পাক ওহী পাঠাচ্ছেন। জিব্রাইলের চাকুরী চলে গেছে। সেই সাথে আল্লহ পাক নবীজিকেও স্থানচ্যুত করে এক মহানবীকে স্থাপন করেছেন।
যাই হোক, লম্বা কথা বানিয়ে সময় অপচয় করতে চাই না। হ্যাঁ, এই মহানবী আমাকেও চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন বহুবার এবং আমি তাঁর চ্যালেঞ্জ অনেক ভাবেই মোকাবিলা করেছি গত ৭-৮ বছর যাবৎ। সর্বশেষে উনি বলেছেন–আল্লা পাকের থেকে নতুন ওহী পেলে আমাকে কুপোকাৎ করবেন। এতদিন প্রচার চালিয়ে মহানবী বড়ই ক্লান্ত–তাই বিশ্রামে আছেন।
এই ব্লগে কে যেনো বলেছিলেন ইসলাম তালাকেও অধিকার দিয়েছে শারিয়া আইনের কথা অনুযায়ী, তাকে এই পর্বটা পড়তে অনুরোধ করছি।
পাগল বা মাথাখারাপ, কোনটাই নয়, তিনি একজন মানুষ। তাই এমন উল্টাপাল্টা হয়।
একটি মানবিক সমাজ গড়ে তুলার জন্য নানামুখি আন্দোলন দরকার। আমাদের দেশে সে রকম গঠনমূলক কোন আন্দোলন হচ্ছে কি? পত্র-পত্রিকায় যা দেখতে পাচ্ছি, তাতে মনে হচ্ছে, আমিনীদের হুংকারের সামনে দাঁড়াবার মত কোন শক্তি বা সংগঠন দেশে নেই।
সরকারও কেমন মিনমিনিয়ে কথা বলছে, না বলে হয়তো উপায়ও নেই। ক্ষমতায় তো থাকতে হবে, আর ক্ষমতায় থাকতে হলে আপোষ তো করতেই হবে।
প্রগতিশীল শক্তির অনুপস্থিতি আমিনীদের চলার পথটাকে যেন আরো সহজ করে দিয়েছে।
@স্বপন মাঝি,
(Y)
@ স্বপন মাঝি,
হা হা অপেক্ষা করুন ঠিক বলেছেন আমিনীরাই দেশ চালাবে কদিন পরে। এতো কিছুর পরেও তারা হরতাল দিতে বদ্ধ পরিকর। এমনকি সরকারের সাথে কথা বলতে রাজী না। যতো ক্ষণ পর্যন্ত সরকার নারী বিষয়ক সেই আইন বাতিল না করে। এইবার কি হবে ধারণা করা যায়?
@স্বপন মাঝি,
শাবাশ! (Y)
হ্যাঁ, ভাইজান, বাংলাদেশে এর ব্যতিক্রম। ১৯৬১ সালে আইয়ূব খান মুসলিম পারিবারিক আইনের যে সংশোধনী এনেছিলেন এতে এর ব্যতিক্রম রয়েছে।
স্বামী স্ত্রীকে তালাক দিতে কমপক্ষে ৯০ দিন সময় লাগে। নোটিশ লাগে। এখানেও একটি স্লোগান আছে—
‘মুখে মুখে তালাক দিলে
তালাক তাহা নয়
আইনে বলে তালাক দিলে
জানান দিতে হয়।’
১৯৬১ সালে আইয়ূব খান মুসলিম পারিবারিক আইনে শারীয়া আইনের বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছিলেন যা বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত।
মোল্লারা যে ফতোয়া দেয় তা অনেকেই চ্যালেঞ্জ করছে এবং ফতোয়া দেওয়ার পর কিন্তু মোল্লারা অদৃশ্য। কোথাও কোথাও ফতোয়া ঠেকানোও হচ্ছে। তবে আরও বেশী বেগে, গতিতে তা করতে হবে।
@গীতা দাস,
আপনি যা লিখেছেন তা সত্যি। কিন্তু এতে শারিয়া আইনের কী পরিবর্তন হয়েছে বলুন।
যেহেতু আইউব খান সামান্য কিছু পরিবর্তন এনেছেন সে জন্যই ত বাংলাদেশের ইসলামিরা বলছে বাংলদেশে প্রকৃত ইসলাম হচ্ছেনা।
ঐ মোল্লারা যা বলছে তাই প্রকৃত ইসলাম–এই ইসলামই তারা কায়েম করতে চায়।
আর মুঠোফনে তালাক দেওয়া বাংলদেশে যে প্রবর্তন হবেনা তা কেমন করে বলেন। আমি ত লিখেছিই বেশ কিছু ইসলামি দেশে — যতটুকু মনে পড়ে কুয়েত, মালয়েশিয়া, কাতার—এই সব দেশে এই ধরণের তালাক চালু হয়েছে। বাংলাদেশে ইসলামিরা ক্ষমতায় গেলে এই ব্যাবস্থা চালু হবেনা তার কি নিশ্চয়তা আছে?
আচ্ছা, এখন বলুন আইউব খানের এই সংস্কার কতটুকু পরিবর্তন এনেছে শারিয়া আইনে? আমি যা লিখেছি তা ইসলামি আইনের উৎস থেকে লিখেছি। এখানে কোথাও লেখা নাই যে ৯০ দিনের নোটিশ দিতে হবে বা না হবে। আরা নোটিশ্ দেওয়া হক বা না হোক তাতেই বা কি আশে যায়? তাই এই ত হচ্ছে মাছের বাজারের মত। যার যা খুশি তাই করছে।
বলুন, এই আইউব খানের ১৯৬১ সনের আইনের পর আমাদের দেশের মুসলিম নারীদের ভাগ্যের কতটুকু পরিবরতন হয়েছে? বলুন উত্তরাধিকার কোন আইন অনুযায়ী বন্টন হচ্ছে? কেন আমাদের সরকার এর সংস্কার করছে না?
@আবুল কাশেম,
আমি বিতর্কের জন্য তর্ক করতে চাই না। আমি শুধু বলতে চেয়েছি, মোল্লারা যা ই বলুক না কেন আইয়ূব খান ১৯৬১ সালে মুসলিম পারিবারিক আইনের যে সংশোধনী এনেছিলেন তা ইসলামী শারীয়া আইনেরই সংশোধন।
একটা আইন দিয়ে তো আর ভাগ্যের পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে আইয়ূব খান যা করে গেছেন তা পরে আর কেউ একটুও এগুনোর সাহস পায়নি। আর উনি উত্তরাধিকার আইনে বাবা জীবিত অবস্থায় ছেলে মারা গেলে ছেলের সন্তানদের জন্য সম্পত্তি লাভের সুযোগ করে দিয়ে গেছেন যা আগে ছিল না। এটাও তো শারীয়া আইনের সংশোধন। আইয়ূব খান যা করেছে আমি শুধু তা উল্লেখ করলাম।
সরকার কেন সংস্কার করছে না? সেটার উত্তর সরকার দেবে। আপাতত জাতীয় নারীনীতি বাস্তবায়ন ইস্যুতে মোল্লাদের সামলাতে ব্যস্ত।এ নিয়ে আমার “এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই” শিরোনামে লেখা আছে মুক্ত-মনার আর্কাইভে।লিংক দিতে পারছি না। ইচ্ছে হলে পড়ে দেখতে পারেন।
আমি তা বলিনি। আমি বলেছি এখন হচ্ছে না ( বর্তমান কাল)। কাল নিয়ে এমন হজপজ লাগালে আমি আর মন্তব্যের উত্তর দেব না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
@গীতা দাস,
বার বার ভুলে যাচ্ছি
কোন ক্রমেই এটা শারিয়া আইনের সংশোধন নয়। এই আইনের ভিত্তি হচ্ছে এক হাদিস। এক জিহাদি জিহাদে মারা গেল। জিহাদির আত্মীয় স্বজন তার সম্পত্তি নিয়ে নিল। জিহাদির বিধবা বিবি ও তার ছেলে মেয়েরা হইয়েএ পড়ল জিহাদির আত্মীয়দের উপর নির্ভরশীল। বিধবা নবীজির কাছে নালিশ করলে নবীজি জিহাদির আত্মীয়স্বজনকে বললেন জিহাদির সবকিছু তার বিধবা স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদেরকে ফেরত দিতে।
আমি হাদিসটা স্মৃতি থেকে বললাম। হাতের কাছে হাদিস বই নাই। পরে পেলে জানাব।
কাজেই আইউব সাহেব যা করেছেন তা ১০০% শারীয়া। উনি শারিয়া সংশোধন করন নাই।
তা আপনার মর্জি। উত্তর দিলে ভাল। উত্তর না দিলেও কোন অসুবিধা নাই।
@আবুল কাশেম,
আল্লাহর আইন পরিবর্তন করে এমন সাধ্য কার আছে তার একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যাবস্থায়?
@তামান্না ঝুমু,
যথার্থ লিখেছেন। আল্লাহ পাক ছাড়া শারিয়া আইন পরিবর্তন করার ক্ষমতা কারও নেই। দেখুন না বাংলাদেশে জিহাদিরা কি বলছে–শারিয়া আইনের পরিবর্তন না করার জন্য তারা জীবন দিতে প্রস্তুত। সমস্ত বিশ্ব ধুলোয় যাক, কিন্তু শারিয়া আইনকে বাঁচিয়া রাখতেই হবে।
আর শুধু বাংলাদেশই নয় সমস্ত ইসলামি বিশ্ব শারিয়া আইন তৈরী করেছে আলেম, মোল্লা, মাওলানা, হাফেজ, কামিল, মাদ্রসা, মক্তব, ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়—-এইসবের সাথে পরামর্শ করেই। বাংলাদেশ যে শারিয়া শাসিত–তাতে কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়, তা বি এন পি হক বা আওয়ামী লীগই হোক।
@গীতা দাস,
আমি একমত
@গীতা দাস,
আপনার লেখার লিংক-
এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাই
@আকাশ মালিক,
ধন্যবাদ প্রযুক্তিগত সহযোগিতার জন্য।
@আবুল কাশেম,
শারিয়া আইনের পরিবর্তন হলেই কি আর না হলেই কি, আইনের প্রয়োগ কোথায়? এখন সরকারতো মুফতী মৌলানাদের সাথে পরামর্শ করে আইন প্রনয়ন এবং প্রয়োগ করতে বদ্ধ পরিকর। দুর্ভাগ্যক্রমে আমাদের এই প্রগতিশীল বাংলাদেশে কোন সরকার কি শারিয়া আইনের পরিবর্তনে কোন পদক্ষেপ নিয়েছে, প্রয়োগতো দুরের কথা।
@ব্রাইট স্মাইল্,
এখন পরিষ্কার–বাংলাদেশের নারীদের কপালে কী আছে? যে দেশের প্রধাণমন্ত্রী নারী হয়েও শারিয়া আইনকে পুষে রাখতে চান—সে দেশের নারীদের যে কী দুর্ভাগ্য তা কী বলার অপেক্ষা রাখে?
@আবুল কাশেম,
একদম সত্যি কথা বলেছেন। আসলে কোন নারী প্রধাণমন্ত্রী অথবা রাস্ট্রপতি হলেও এই সব নেতৃরা তাদের দেশের আপামর নারীদের ভাগ্যের উন্নতির জন্য কিছুই করেন নি। এই দেখুন না, খোদ অস্ট্রলিয়াতেই এখন চলছে এই দেশের প্রথম নারী প্রধাণমন্ত্রীর শাসন। কিন্তু তাতে কী? ভাগ্য ভাল যে এখানকার নারীদের সামগ্রীক অবস্থা বাংলাদেশের নারীদের চাইতে সহস্রগুণ ভাল। কিন্তু এই সব সংস্কার কোন নারী ক্ষমতায় যাবার জন্য হয়নি। বলা যায় এই সব সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে নারী-পুরুষ উভয়ের মিলিত প্রচেষ্টায়।
আমার নিজের অভিজ্ঞতা বলছে অনেক পুরুষই নারী অধিকার আদায়ের ব্যাপারে যত সংগ্রাম করছেন—কিন্তু তেমন কোন ক্ষমতাসীন নারী নেতৃ শুধু নারী অধিকারের ব্যাপারে মিনমিন করে দু’একঅটি কথাবার্তা বলেই দায় সারেন। এই সব ক্ষমতাসীন নারী নেতৃদের কোন সাহসই নাই যে উনারা শারিয়ার বিরুদ্ধে একটি শব্দ উচ্চারণ করবেন।
@গীতা দাস,
ভুলে গেছিলামঃ
আইউব খান যে ৯০ দিনের নোটিশের কথা বলেছেন তা তাঁর কোন অনুকম্পা নয়। উনি সোজাসুজি কোরানে যা আছে তারই পুনরাবৃত্তি করেছেন।
দেখুন উপরে আমি দিয়েছে আয়াত ২ঃ২২৮। ঐ আয়াতে পরিষ্কার লিখা আছে তিন ‘হায়েয’ যার মানে হচ্ছে তিন স্রাব। এই সময় সাধারণতঃ তিন মাস, যা প্রায় ৯০ দি্ন, তাই-ই হয়।
তাহলে দেখা যাচ্ছে আইউব খান আসলে কোরানে যা আছে তা থেকে বিন্দুমাত্র বাইরে যাননি। এই ৯০ দিনকেই ‘ইদ্দত’ বা অপেক্ষার দিন বলা হয়। এই সময়টা স্ত্রী ইচ্ছে করলে স্বামীর বাড়িতে কাটাতে পারে অথবা অন্য কোথাও গিয়ে ইদ্দত সমাধা করতে পারে। শুধুমাত্র এই সময়টুকু পর্য্যন্তই স্বামীকে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর দৈনিক ভাতা দিতে হবে।
তা বলুন, এই অবস্থায় কোন তালাকপ্রাপ্তা নারী চাইবে স্বামীর ঘরে ৯০ দিন থাকতে, যখন সে ভাল করেই জানে যে ৯০ দিন পর স্বামী চাইলে তাকে ঝেঁটিয়ে বাড়ি থেকে দূর করে দিতে পারে।
আপনি যত দলিলই আনুন না কেন দেখবেন সব দলিল একশত ভাগ ইসলামি আইন অনুযায়ী করা হয়েছে যার ভিত্তি হচ্ছে কোরান, হাদিস, সুন্না, এবং অন্যান্য ইসলামী উৎস। এই সব আইনই দেখবেন ‘হেদায়া’ বইতে আছে। বইটি পড়ুন তার পর আমাকে জানান।
@আবুল কাশেম,
গিয়েছেন। হিল্লা বিয়ে নিয়ে যুগান্তকারী সংশোধন এনেছিলেন।
একজন স্বামী একই স্ত্রীকে দুইবার পর্যন্ত তালাক দিয়ে হিল্লা বিয়ে ছাড়া তার সাথে ঘর করতে পারবেন। তৃতীয়বার নিয়ে ১৯৬১ সালের আইনে কিছু বলেনি। ধারণা করা হয় একই স্ত্রীকে তৃতীয়বার তালাক দেওয়ার মত ঘটনা হয়ত ঘটবে না অথবা ঘটলে হিল্লা বিয়ে লাগবে।
@গীতা দাস,
না, আইউব সাহেব কিছুই করেন নাই। এই ব্যাবস্থা কোরানেই আছে। কোরান বলছে এক, বা দুই তালাকের পর স্বামী চাইলে তার স্ত্রীকে ফেরত নিতে পারবে–অর্থাৎ তারা আবার স্বামী-স্ত্রী হিসাবে বসবাস করতে পারবে; নতুন বিবাহের কোন প্রয়োজন নাই।
হিলা বিবাহ শুধুমাত্র হবে যখন স্বামী তিন তালাক দিবে। তিন তালাককেই চুড়ান্ত তালাক ধরা হয়। দেখুন, কোরানে আল্লা পাক কি লিখেছেন
২:২২৯ তালাকে-‘রাজঈ’ হ’ল দুবার পর্যন্ত—তারপর হয় নিয়মানুযায়ী রাখবে, না হয় সহৃদয়তার সঙ্গে বর্জন করবে। আর নিজের দেয়া সম্পদ থেকে কিছু ফিরিয়ে নেয়া তোমাদের জন্য জায়েয নয় তাদের কাছ থেকে। কিন্তু যে ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই এ ব্যাপারে ভয় করে যে, তারা আল্লাহ্র নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, অতঃপর যদি তোমাদের ভ্য় হয় যে, তার ঊভয়েই আল্লাহ্র নির্দেশ বজায় রাখতে পারবে না, তাহলে সেক্ষেত্রে স্ত্রী যদি বিনিময় দিয়ে অব্যহতি নিয়ে নেয়, তবে উভয়ের মধ্যে কারোরই কোন পাপ নেই। এই হলো আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। কাজেই একে অতিক্রম করো না। বস্তুতঃ যারা আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা। বস্তুতঃ যারা আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করবে, তারাই হলো জালেম।
২:২৩০ তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয় বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করতে কোন পাপ নেই, যদি আল্লাহ্র হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ্ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা, যারা উপলদ্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়।
বাংলাদেশে এক বসায় তিন তালাক হতে পারে। তাকে তালাকি-ই বাইন বলা হয়। তাই হিলা বিবাহ তেমন বিরল নয়। আমি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।
তাই বলতে হয় আইউব খান কোন যুগান্তকারী পরিবর্তন আনেন নাই। উনি শারিয়া আইনের কোনই পরিবর্তন করেন নি। আর তা ছাড়া পাকিস্তানি শাসনতন্ত্রেই আছে সব আইনের ভিত্তি হবে ইসলাম–তথা কোরান, হাদিস, সুন্না—–
আর বাংলাদেশে বলা হচ্ছে ইসলামের বিরোধি কোন আইন হবে না।
আমি এখানে আমার কন মতামত দেইনি। যা কোরান, হাদিস, শারিয়াতে আছে তাই লিখেছি।
হিলা বিবাহ সম্পর্কে দীর্ঘ্ জানবেন আসছে পর্বে।
@গীতা দাস,
মুঠো ফোনে তালাক? :-O