আবুল কাশেম
এপ্রিল ২, ২০১১

৫ম পর্বের পর।

স্বামী দ্বারা স্ত্রীকে তালাক দেওয়া (বিবাহ বিচ্ছেদ)

ইসলামে বিবাহ বিচ্ছেদ খুবই মামুলী ব্যাপার—বিশেষত: বিবাহ বিচ্ছেদ যদি স্বামী দ্বারা হয়। দু’জন সাক্ষীর সামনে স্বামীকে শুধু বলতে হবে ‘তোমাকে তালাক দিয়ে দিলাম’। ব্যাস, সেই মুহূর্ত থেকেই স্ত্রী স্বামীর জন্য হারাম হয়ে যাবে। এই তালাক মৌখিক অথবা লিখিত ভাবেও হতে পারে। আজকাল মুঠোফোনেও ইসলামী তালাক দেওয়া জায়েজ হচ্ছে—অনেক ইসলামী দেশেই—হয়ত বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এই ভাবেই, অতি সহজে, অতি অল্প পয়সা খরচ করে এক নিমেষের মাঝে একজন স্বামী পারবে তার স্ত্রীকে দূর করে দিতে। শুধু শর্ত হল এই যে ইদ্দতের (তালাক প্রাপ্ত স্ত্রী গর্ভবতী কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হবার জন্য) সময় পর্যন্ত তালাক প্রাপ্ত স্ত্রীকে ঘরে ভরণপোষণ দিয়ে রাখতে হবে—তাও যদি তালাক এক অথবা দুই হয়। তার মানে হল এই ইদ্দতের সময় স্বামী চাইলে স্ত্রীকে ফেরত নিতে পারে। কি মারাত্মক ব্যাপার! এক নারীর জীবনের ভার আল্লাহ পাক সম্পূর্ণভাবে তুলে দিয়েছেন এক পাষণ্ড স্বামীর হাতে। স্বামীর দয়া, ইচ্ছা, করুণার উপর নির্ভর করছে এক নারীর অস্তিত্ব। এ চিন্তা করলে যে ইসলামী সভ্যতা নিয়ে যারা বড়াই করেন তাদের মুখে থুথু দিতে ইচ্ছে করে। এ ব্যাপারে আমি আগেই লিখেছি যে স্বামী যদি স্থায়ী তালাক দেয় (অর্থাৎ তিন তালাক) তবে স্ত্রীকে এক কাপড়ে ঐ মুহূর্তে স্বামীর ঘর ত্যাগ করতে হবে। কি নিষ্ঠুর! কি অমানবিক! কি অসভ্য এই ইসলামী আইন যা আল্লার আইন হিসাবে পরিচিত।

দেখা যাক আল্লাহ পাক বলেছেন তালাকের ব্যাপারে।

কোরান সুরা বাকারা আয়াত ২২৮ (২:২২৮):
আর তালাকপ্রাপ্তা নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন হায়েয পর্যন্ত। আর যদি সে আল্লাহ্‌র প্রতি এবং আখেরাত দিবসের উপর ঈমানদার হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ্‌ যা তার জরায়ুতে সৃষ্টি করেছেন তা লুকিয়ে রাখা জায়েজ নয়। আর যদি সদ্ভাব রেখে চলতে চায়, তাহলে তাদেরকে ফিরিয়ে নেয়ার অধিকার তাদের স্বামীরা সংরক্ষন করে। আর পুরুষদের যেমন সস্ত্রীদের উপর অধিকার রয়েছে, তেমনি ভাবে স্ত্রীদেরও অধিকার রয়েছে পুরুষদের উপর নিয়ম অনুযায়ী। আর নারীরদের উপর পুরুষদের স্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। আর আল্লাহ্‌ হচ্ছে পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ।

ইসলামের এহেন বর্বরোচিত নিয়ম ঢাকার জন্য অনেক ইসলামী পণ্ডিত বলে থাকেন যে আল্লাহ পাকের নিকট তালাক নাকি সবচাইতে অপ্রীতিকর শব্দ। তাই স্বামীর উচিত হবে তালাক একেবারে শেষ অস্ত্র হিসেবে ব্যাবহার করা। অর্থাৎ স্ত্রী একান্তই অবাধ্য ও অপ্রীতিকর কর্ম না করলে তাকে তালাক না দেওয়া ভাল। কিন্তু এই ধরণের কথা কোরানের কোথাও লেখা নাই। সুনান আবু দাউদে এই ব্যাপারে দুটো হাদিস দেখা যায়। পড়া যাক এই হাদিসগুলো।

সুনান আবু দাউদ, বই ১২ হাদিস ২১৭২
মুহারিব বর্ণনা করলেন:
নবী বলেছেন (দঃ): আল্লাহ্‌র আইনগত বিধানের মধ্যে তাঁর কাছে সবচাইতে জঘন্য হচ্ছে তালাক।

সুনান আবু দাউদ, বই ১২ হাদিস ২১৭৩
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর বর্ণনা করেছে:
নবী (দঃ) বলেছেন: ‘আইনসম্মত কার্য্যকলাপের মধ্যে আল্লাহ্‌র কাছে সবচাইতে অপ্রীতিকর কর্ম হচ্ছে তালাক”।

এই হাদিসগুলো যে পরিষ্কার ভাবে কোরান লঙ্ঘন করেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

এ ছাড়াও, এই হাদিস শুধু হাস্যকরই নয়—এই হাদিসে আল্লাহ্‌র মতিগতি এবং প্রকৃতিস্থতা নিয়ে সন্দেহ হয়। আল্লাহ্‌ কি পাগল, না মাথাখারাপ? যে কর্মকে আল্লাহ্‌ সবচাইতে জঘন্য বলেছেন সেই কর্মকেই আল্লাহ্‌ আইনসম্মত করে দিয়েছেন। চিন্তা করুন: খুন করা যদি সবচাইতে ঘৃণিত কাজ হয় এবং তা সত্যেও কোন দেশে যদি খুন করা আইনসম্মত করা হয় তবে আমরা সেই দেশের আইনকে কি বলবো?

সত্যি বলতে কি ইমাম গাজ্জালী লিখেছেন কোন কারণ ছাড়াই স্বামী পারবে স্ত্রীকে তালাক দিতে।

এহিয়া উলুম আল দীন, ভলুম ১, পৃঃ ২৩৪):
স্বামী তার স্ত্রীর ব্যাপার স্যাপার কারও কাছে ফাঁস করবে না—তা বিবাহ অবস্থায় হউক অথবা বিবাহ বিচ্ছেদই হউক। এই ব্যাপারে বেশ কিছু বর্ণনা আছে যে স্ত্রীর গোপন ব্যাপারে কারও সাথে আলাপ আলোচনা বিপদজনক হতে পারে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে একদা এক ব্যক্তি জানালো যে সে তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চায়। প্রশ্ন করা হল কি কারণ। সে বলল: “একজন সুস্থ মস্তিষ্কের ব্যক্তি তার স্ত্রী সংক্রান্ত গোপন ব্যাপার কাউকে বলে না”। সে যখন তালাকের কাজ সম্পন্ন করল তখন জিজ্ঞাসা করা হল: “তুমি কি কারণে স্ত্রীকে তালাক দিলে?” সে উত্তর দিল: “আমার তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী অথবা অন্য কোন নারীর ব্যাপারে কাউকে কিছু বলার অধিকার আমার নাই”।

এ ব্যাপারে শারিয়া বিশেষজ্ঞ আবদুর রহমান ডোইয়ের বক্তব্য হল হানাফি আইন অনুযায়ী স্ত্রীকে তালাক দেবার জন্য কোন কারণের দরকার নেই (ডোই, পৃঃ ১৭৩)।

মালিকের মুয়াত্তা হাদিসে লিখা হয়েছে যে তালাক হচ্ছে পুরুষের হাতে আর মেয়েদের জন্য আছে ইদ্দত।

দেখুন মালিক মুয়াত্তা হাদিস ২৯.২৪.৭০:
ইয়াহিয়া—মালিক—ইয়াহিয়া ইবনে সাইদ—ইয়াজিদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে কুসায়ত আল লাইথ থেকে বললেন যে সা’দ ইবনে আল মুসায়েব থেকে বর্ণনা করেছেন: উমর আল খাত্তাব বলেছেন: ‘কোন স্ত্রীর তালাক হল। তার পর সেই মহিলার দুই অথবা তিন স্রাব হল। এর পর স্রাব বন্ধ থাকল। এমন অবস্থা হলে সেই মহিলাকে নয় মাস অপেক্ষা করতে হবে। এর থেকে বুঝে নিতে হবে যে স্ত্রীলোকটি গর্ভবতী। নয় মাস পার হয়ে যাবার পর আবার তাকে তিন মাসের ইদ্দত করতে হবে। এর পর সে পুনরায় বিবাহে বসতে পারবে’।

ইয়াহিয়া—মালিক—ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ ইবনে মুসায়েব থেকে বলেছেন: “তালাক হচ্ছে পুরুষের হাতে, আর স্ত্রীর জন্যে রয়েছে ইদ্দত”।

মালিকের মুয়াত্তাতে আরও লিখা হয়েছে যে স্বামী যদি স্ত্রীকে বলে যে সে (স্ত্রী) তার জন্য হারাম তখন তা তিন তালাক (অর্থাৎ স্থায়ী তালাক) হিসাবে গণ্য হবে।

পড়া যাক মালিকের মুয়াত্তা ২৯.১.৬:
মালিক ইয়াহিয়া থেকে বললেন তিনি শুনেছেন যে আলী বলতেন যে কোন স্বামী তার স্ত্রীকে যদি বলে: “তুমি আমার জন্যে হারাম”, তবে সেটাকে তিন তালাকের ঘোষণা হিসেবে ধরা হবে।

এই সব কিছুর অর্থ হচ্ছে যে এক মুসলিম পুরুষ যে কোন মুহূর্তে তার খেয়াল খুশী মত তার হারেমের রদবদল করতে পারবে। সে এক অধিবেশনেই তার চার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে ঘর থেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারবে এবং একই সাথে আরও নতুন চারজন স্ত্রী দ্বারা তার হারেম পূর্ণ করে নিতে পারবে।

তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর ভাতা ব্যাপারে অনেকেই ইসলামের মাহাত্ম্য দেখাতে চান। এ বিষয়ে আগেই বেশ কিছু লিখা হয়েছে। মোদ্দা কথা হল অস্থায়ী তালাককে ইদ্দতের সময় ছাড়া অন্য কোন স্থায়ী তালাকে স্ত্রী স্বামীর কাছ হতে এক কড়ি কণাও পাবে না। এ ব্যাপারে আরও কিছু হাদিস এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন অনুভব করছি।

সহিহ্‌ মুসলিম বই ৯, হাদিস ৩৫১৪:
ফাতেমা বিনতে কায়েস অভিযোগ করলেন যে তার স্বামী আল মাখযুলমী তাকে তালাক দিয়েছে কিন্তু কোন খোরপোষ দিতে অস্বীকার করেছে। ফাতেমা আল্লাহর রসুলের কাছে এ বিষয়ে বলল। আল্লাহর রসুল বললেন, “তোমার জন্য কোন ভাতা নাই। তোমার জন্যে ভাল হবে ইবন আল মাখতুমের ঘরে থাকা। সে অন্ধ, তাই তার অবস্থিতিতে তুমি তোমার পোশাক খুলতে পারবে। (অর্থাৎ তার সামনে পর্দা অবলম্বনে তোমার কোন অসুবিধা হবে না।)

সহিহ্‌ মুসলিম বই ৯, হাদিস ৩৫৩০:
ফাতেমা বিনতে কায়েস বললেন: আমার স্বামী আমাকে তিন তালাক দিল। আল্লাহর রসুল আমার জন্য কোন প্রকার থাকা খাওয়ার ভাতার ব্যবস্থা করলেন না।

এর পরেও কি আমরা বলতে পারি যে ইসলামে তালাকপ্রাপ্তা মহিলাদের উপর ন্যায়বিচার করা হচ্ছে?

স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে তালাক দেবার অধিকার

ইসলামীরা প্রায়শ: গলা ফাটিয়ে বলেন যে ইসলাম নারীকে দিয়েছে তালাকের অধিকার। কি নিদারুণ মিথ্যায়ই না তাঁরা প্রচার করে যাচ্ছেন। কথা হচ্ছে, এক মুসলিম স্ত্রী কোন ভাবেই তার স্বামীকে তালাক দিতে পারবে না যে ভাবে স্বামী তার স্ত্রীকে তালাক দেয়। অর্থাৎ একজন স্ত্রী ইচ্ছে করলেই তার অপব্যবহারমূলক স্বামীর হাত থেকে উদ্ধার পাবে না। তার মুক্তি নির্ভর করবে তার স্বামীর মেজাজের উপর। একজন স্ত্রী তার কুলাঙ্গার স্বামীকে হাতে পায়ে ধরে অথবা ইসলামী আদালতে গিয়ে টাকা পয়সা দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে। এই ব্যবস্থাকে খুল বলা হয়, তালাক নয়। অন্যায় হচ্ছে এই যে, যে স্থানে স্বামীর অবাধ অধিকার আছে স্ত্রীকে কোন কারণ ছাড়াই যে কোন মুহূর্তে তালাক দিতে পারে। স্ত্রী তা পারবে না। এখন কোন স্বামী যদি স্ত্রীকে বেদম পিটায় তবুও স্ত্রী পারবে না ঐ অত্যাচারী, বদমেজাজি স্বামীর হাত থেকে মুক্তি পেতে। এমতাবস্থায় পীড়িত স্ত্রীকে ইসলামী আদালতে গিয়ে প্রমাণ করতে হবে যে তার স্বামী তাকে যেমন ভাবে পিটিয়েছে তা ইসলামী পিট্টির বাইরে পড়ে। অর্থাৎ পিটানো হয়েছে এমনভাবে যে মহিলাটির হাড় ভেঙ্গে গেছে অথবা প্রচুর রক্তপাত ঘটেছে। এমতাবস্থায় আদালত চাইলে তাদের বিবাহ ভেঙ্গে দিতে পারে কিন্তু শর্ত হবে এই যে মহিলাকে তার স্বামী যা দিয়েছে (মোহরানা) তা ফেরত দিতে হবে।

মারহাবা! এরই নাম হচ্ছে ইসলামী ন্যায় বিচার। যে ভুক্তভোগী তাকেই জরিমানা দিতে হবে। আর অপরাধী সম্পূর্ণ খালাস। শুধু তাই নয় সে পুরষ্কৃত হচ্ছে। কি অপূর্ব বিচার। এখন এর সাথে তুলনা করুন আধুনিক বিচার ব্যবস্থা।

দেখা যাক কিছু হাদিস এই খুল সম্পর্কে।

মালিকের মুয়াত্তা ২৯. ১০. ৩২:
ইয়াহিয়া—মালিক—নাফী—সাফিয়া বিনতে আবি ওবায়দের মাওলা থেকে। ইয়াহিয়া বললেন সাফিয়া বিনতে ওবায়েদ তাঁর যা কিছু ছিল সবই তাঁর স্বামীকে দিয়ে দিলেন। এ ছিল তাঁর স্বামী থেকে তালাক পাবার জন্যে ক্ষতিপূরণ বাবদ। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর এতে কোন আপত্তি জানালেন না।

মালিক বলেছেন যে স্ত্রী নিজেকে স্বামীর কাছে জিম্মি করে রাখে সেই স্ত্রীর খুল অনুমোদন করা হয়। এ ব্যবস্থা তখনই নেওয়া হয় যখন প্রমাণিত হয় যে স্ত্রীর স্বামী তার জন্যে ক্ষতিকর এবং সে স্ত্রীর উপর অত্যাচার চালায়। এই সব ব্যাপার প্রমাণ হলেই স্বামীকে তার স্ত্রীর সম্পত্তি ফেরত দিতে হবে।

মালিক বললেন: এমতাবস্থায় স্ত্রী নিজেকে জিম্মি রেখে (অর্থাৎ স্বামীকে টাকা পয়সা দিয়ে) খুল করে নিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে স্ত্রী স্বামীর কাছে যা পেয়েছে তার চাইতেও বেশী দিতে পারবে।

সহজ কথায় ইসলামী আইনে বলা হচ্ছে যে স্ত্রী তার বেয়াড়া স্বামী হতে মুক্তি পেতে চাইলে সবচাইতে সহজ পথ হচ্ছে স্বামীকে প্রচুর টাকা পয়সা উৎকোচ দিয়ে তার থেকে তালাক দাবী করা।

এখন পড়া যাক আরও একটি হাদিস।

সুনান আবু দাউদ বই ১২, হাদিস ২২২০:
উম্মুল মুমিনিন আয়েশা বললেন:
সাহলের কন্যা হাবিবার স্বামী ছিল সাবিত ইবনে কায়েস শিম্মা। সে হাবিবাকে মারধোর করে তার হাড়গোড় ভেঙ্গে দিল। হাবিবা নবীজির (সাঃ) কাছে এ ব্যাপারে স্বামীর বিরুদ্ধে নালিশ করল। নবীজি সাবিত ইবনে কায়েসকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন: তুমি তোমার স্ত্রীর কিছু জমি জায়গা নিয়ে নাও এবং তার থেকে দূরে থাক। সাবিত বলল: এটা কি ন্যায় সঙ্গত হবে, আল্লাহর রসুল? নবীজি বললেন: হ্যাঁ, তা হবে। তখন সাবিত বলল: আমি স্ত্রীকে দু’টি বাগান দিয়েছি মোহরানা হিসাবে। এই দুই বাগান এখন তার অধিকারে। নবীজি (সা:) বললেন: তুমি ঐ বাগান দু’টি নিয়ে নাও ও তোমার স্ত্রী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাও।

কি অপূর্ব ন্যায় বিচারই না করলেন নবীজি। এর থেকে আমরা বুঝলাম যে স্বামীর অবাধ অধিকার থাকছে স্ত্রীকে তালাক দেবার। স্ত্রীর স্বামীকে তালাক দেবার কোন অবাধ অধিকার নাই—খুল কোন অধিকার নয়, খুল হচ্ছে একটি বিশেষ সুবিধা।

এই ব্যাপারে দেখা যাক কিছু শারিয়া আইন।

শারিয়া আইন এম ১১.৩ (উমদাত আল সালিক, পৃঃ ৫৪৬):
বিবাহ বিচ্ছেদের জন্যে স্ত্রীকে আদালতের বিচারকের শরণাপন্ন হতে হবে।
স্বামী যদি স্ত্রীর জন্য বাধ্য ভরণপোষণ বহন করতে না পারে তখন স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদের ব্যবস্থা নিতে পারে।
এমতাবস্থায় স্ত্রী চাইলে স্বামীর সাথে থাকতে পারে (স্ত্রী নিজের খরচ নিজেই বহন করবে)। স্ত্রী যা খরচ করবে তা স্বামীর দেনা হয়ে থাকবে। স্ত্রী যদি স্বামীর অস্বচ্ছলতা সইতে না পারে, তখনও সে নিজেই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারবে না। স্ত্রীকে ইসলামী আদালতে প্রমাণ করতে হবে যে তার স্বামী তার ভরণপোষণ দেয় না। ইসলামী বিচারক যদি স্ত্রীর প্রমাণ গ্রহণ করেন তখনই উনি বিবাহ বিচ্ছেদ (খুল) দিতে পারেন—কেননা এ ব্যাপারে বিচারকই একমাত্র সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। ইসলামী বিচারক না পাওয়া গেলে স্ত্রী তার বিষয়টা দুজন লোকের (অবশ্যই পুরুষ) হাতে তুলে দিতে পারে।

এখানে অনেক কিন্তু আছে—স্বামী যদি স্ত্রীকে তার মৌলিক খাবার, বাসস্থানের ব্যবস্থা দেয় তবে স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারবে না। এই আইনটি লিখা হয়েছে এই ভাবে।

শারিয়া আইন এম ১১.৪ (ঐ বই পৃঃ ৫৪৭):
স্বামী স্ত্রীকে মৌলিক খাবারের ব্যবস্থা দিয়ে থাকলে স্ত্রী বিবাহ বিচ্ছেদের পথ নিতে পারবে না। স্বামী যদি প্রধান খাবার দিতে পারে কিন্তু অন্য আনুষঙ্গিক খাবার না দেয়, অথবা চাকর বাকর না দেয় তখনও স্ত্রী পারবেনা বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে। এই ব্যাপারটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে স্বামীর সচ্ছলতার উপর।

মজার ব্যাপার হচ্ছে ইসলামী আদালতে গেলে স্ত্রীর সাথে যৌন কর্মের ব্যাপারে আদালত স্বামীর ভাষ্য গ্রহণ করবে, স্ত্রীর ভাষ্য নয়।

শারিয়া আইন ১১.১১ (ঐ বই পৃঃ ৫৪৬):
আদালত যৌন সংগম উপভোগের ব্যাপারে স্বামীর সাক্ষ্য, প্রমাণ গ্রহণ করবে।
আদালতে যদি প্রমাণ না করা যায় যে স্বামী স্ত্রীর ভাতা দিতে ব্যর্থ—তখন স্ত্রী যা বলবে এই ব্যাপারে তাই গ্রহণ করা হবে। স্বামী স্ত্রী যদি যৌন উপভোগের ব্যাপারে একমত না হয় তখন স্বামী এ ব্যাপারে যাই বলবে আদালত তাই সত্য বলে মেনে নিবে। অর্থাৎ স্বামী যদি বলে যে স্ত্রী তার দেহদান করতে অপারগ, তখন স্বামীর ভাষ্যই সত্যি বলে গৃহীত হবে। এমন যদি হয় স্বামী স্বীকার করে নিলো যে প্রথমে স্ত্রী তার দেহদান করতে রাজী হল, কিন্তু পরে তার দেহ সমর্পণ করল না তখন স্বামীর ভাষ্য আদালত অগ্রাহ্য করতে পারে।

উপরের ঐ সব আজগুবি ইসলামী আইন থেকে আমরা সত্যি বলতে পারি যে একজন স্বামী বিবাহের মাধ্যমে কত সহজেই না নারীদের আর্থিকভাবে ব্যাবহার করতে পারে। বিয়ে করার পর স্বামী স্ত্রীর উপর অত্যাচার শুরু করল, মারধোর করল। যখন এসব অসহ্য হয়ে উঠলো তখন স্ত্রী স্বামীর পায়ে ধরল তালাকের জন্য—টাকা পয়সার বিনিময়ে। স্বামী টাকা নিলো এবং স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিল। কি চমৎকার ইসলামী ব্যবস্থা। এই ভাবে সেই স্বামী চালাতে থাকবে তার ব্যবসা। নারী দেহও উপভোগ হচ্ছে আবার টাকাও পাওয়া যাচ্ছে—এর চাইতে আর ভাল কি হতে পারে?

চলবে (৭ম পর্বে)।