সে এসেছে। এই মাত্র খবর পেলাম সে এসেছে। খবরটা শুনে আমি আনন্দে লাফাতে শুরু করেছি। লাফাতে শুরু করেছে আমার ঘরের প্রতিটা আসবাবপত্র। সে এক অদ্ভুদ নৃত্য! পৃথিবীতে আর কোন ছোট লোক থাকবে না, অসহায় থাকবে না, থাকবে না কোন দরিদ্র। মানুষের প্রতিটা চাওয়া গুণে গুণে পূরণ করা হবে। শ্রেণীবৈশম্য চিরকালের জন্য বিলীন হবে সময়ের অতল গহববরে। আর কোনদিন কার্ল মার্কসের জন্ম হবে না, হবার প্রয়োজন হবে না আর কি। সে এসেছে। এখন সাম্যবাদের গান রচিত হবে ঘরে ঘরে। আমার আনন্দ যেন আর ধরছে না কিছুতেই!
চারিদিকে এখন স্বর্গীয় সুবাস। পাখিদের আনন্দ গীতে মূখর প্রকৃতি। আমি হাঁটছি। পাখির খসে পড়া পালকের ন্যায় হেলে দুলে হাঁটছি আমি। কখনো বা ফুটপাত ধরে কখনো বা রাজপথের মাঝখান দিয়ে- কোন যানজট নেই, নেই কোন ফেরিওয়ালার পিচ্ছিল কণ্ঠস্বর, টোকাইদের স্বপ্ন ভাঙ্গার গান। আমি হাঁটছি। অদ্ভূদ ছন্দে হাঁটছি আমি। চারিদিকে নেই কোন উঁচু-নিচু বিল্ডিং, কোথাও নেই কোন অনিয়ম। সে এসেছে। আমি একেক লাফে আকাশ ছুঁয়ে আসছি।
নদীর মাঝপথ ধরে হাঁটছি আমি। সহসা কার হাত যেন আমার কাধ ছুঁয়ে গেল। অমনি আমার সমস্ত শরীর তারকার মত জ্বলে উঠল। আমি অনুভব করলাম, আমি স্বর্গের সবচেয়ে উঁচু স্থানটিতে। আমার চারপাশ ঘীরে আছে অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতের অসংখ্য ভালো মানুষ। সুবিধা ভোগীদের মধ্যে আছে বস্তির ছিচকে চোর এমনকি যে মেয়েটি মায়ের চিকিৎসার জন্য দেহ বিক্রি করেছিল সেও। অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত বিলীন হয়েছে মহাকালের আদিম স্রোতে। অথচ আমি বেঁচে আছি। আমি শ্বাস নিচ্ছি রজনীগন্ধ্যার। আমার রক্তে আশ্রয় নিয়েছে কোটি কোটি দেবদূত। বিশ্বাস-ই হচ্ছে না আমার পাশে পাশে হাঁটছে সে। চিমটি কাটতে কাটতে রক্ত বের করে ফেলেছি শরীর থেকে তবুও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
আমরা হেঁটে চলেছি। পিছন দিকে তাকাবার অবসর আর নেই। আমার চোখের প্রতিটা পলকে পলকে তৈরি হচ্ছে বিস্ময়। আমরা হেঁটে চলেছি নতুন এক পৃথিবীর মাঝখান দিয়ে; যেখানে ছেলের সামনে মা, পিতার সামনে কন্যা ধর্ষিত হয় না। যেখানে মায়ের সাথে ঝলসে যায় না সদ্য জন্ম নেওয়া কোন শিশু। অভাবের তাড়নায় নীতিকে বিক্রি করে না কোন মানুষ। জৌতুকের লালসায় স্বামী খুন করে না স্ত্রীকে। আমি এখন এমন এক পৃথিবীর বাসিন্দা যেখানে নেই কোন ক্ষমতার লোভ, নেই ঘাতক ব্যধির মরন ছোবল।
আমি হাঁটছি। আমি হাঁটছি এখন বরফে ঢাকা মরুভূমিতে। আমি অনুভব করছি, আমি জমে যাচ্ছি ক্রমশঃ। আমার শ্বাস-প্রশ্বাস থেমে থেমে যাচ্ছে- সহসা ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার। সমস্ত শরীর ঘেমে একাকার। ভিজে গেছে বিছানা, ভিজে গেছে মেঝে, আসবাবপত্রের পায়া। তাহলে কি আসেনি সে?! আমি বাইরে বেরিয়ে আসি : প্রতিদিনকার মত দানবাকৃতির বিল্ডিংগুলোর ফাক ফোকর দিয়ে সূর্য ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়ে আছে রাস্তার উদোম হাড্ডিসার শিশুটির দিকে। মুখ তুলে তাকায় আকাশের দিকে : সৃষ্টিকর্তা, কবে আসবে তুমি? আর কত রক্ত তোমার প্রয়োজন? তোমাকে আনতে হলে আর কত অশ্রু ঝরাতে হবে আমাদের?
স্বপ্ন দেখা ছাড়া আর কোন পথ বোধ হয় আমাদের
সামনে আর নেই!
দেশের শীর্ষস্থানীয়দের তো সব স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তাই ওঁরা
আমাদের মত স্বপ্ন দেখেন না!
লেখাটা ভাল লাগল!
@লাইজু নাহার, খুবই সত্যি কথা। ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
লেখাটা খুব ভালো লাগল। ধন্যবাদ এ ধরনের একটা লেখা উপহার দেয়ার জন্য।
@ফালগুন, ধন্যবাদ।
@মোজাফফর হোসেন,
তারা অপেক্ষায় থাকে ‘ভরসা’ নিয়ে।
খুব ভা্ল লাগলো।
@গোলাপ, ধন্যবাদ।
আসলেই যদি সমাজটা আপনার লেখার মতো সাম্যবাদী হয়ে যেত। লেখাটি ভাল লাগল। আপনার কাছ থেকে আরও লেখা আসা করব।ধন্যবাদ।
@সুমিত দেবনাথ, ধন্যবাদ। নিশ্চয় চেষ্টা চালিয়ে যাব।
ভাল লাগল।
এটা নিয়ে একটা স্টান্ড আপ কমেডি নামাও ভায়া।
সৃষ্টিকর্তা হচ্ছে সব থেকে বড় আফিম। সেই যে ছোট বেলায় বাবা মায়েরা মাথায় ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে এই আফিং না খেলে, তোমার ক্ষতি হতে পারে ( মারা যেত পার-গরীব হয়ে যেতে পার-আরো কত কি) সেই আফিং খেয়ে গোটা পৃথিবীতে লোকেদের জ্বালাতন সহ্য করতে হয়। মদ্যপায়ীকে মদ্যপ বলে সমাজ গালাগাল দেয়-কিন্ত ধার্মিককে সন্মান জানায়!
নিৎসে যারা পড়েছেন, তারা বিলক্ষন জানেন আমাদের নির্মানের ভিত্তি হচ্ছে ভয়-যা মাথায় ঢুকে আছে। ভগবান, বৌ, সমাজ, বস-কত কিছুকে ভয় করে আমাদের নির্মান। ভাবলেই অবাক লাগে।
@বিপ্লব পাল,
আহারে বিপ্লব তোমার জীবনটা তো দেখি বড়ই কষ্টের, ইশস, তোমার মত দুঃখী মানুষ আর আছে নাকি
ভবিষ্যতে তোমার জীবনের কষ্ট যেন লাঘব হয় তার জন্য দোয়া চেয়ে মুক্তমনার তরফ থেকে একটা দুম্বা ছদকা দেওয়ার আহবান জানাই।
@বিপ্লব পাল, কার্ল মার্কসও বিষয়টিকে একই ভাবে দেখেছিলেন। নিৎসের দর্শনের সাথে অস্তিত্ববাদের কিছু দিক নিয়ে আমার একটি লেখা আছে, পরবর্তী কোন এক সময় পোস্ট করবো একটু দেখবেন প্লিজ।
আর একটা কথা, এই মাদকের কিন্তু প্রয়োজনের দিকও আছে। এটা না থাকলে রাতারাতি পৃথিবীতে মহা প্রলয় শুরু হয়ে যেত–কোটি কোটি মানুষ আত্মহত্যা করতো, কোটি কোটি নারী স্বামী-সংসার ছেড়ে নেমে পড়তো রাস্তায়, শ্রমজীবিরা কোদাল ফেলে তুলে নিত অধিকার আদায়েত অস্ত্র। আমাদের মত সুবিধাভোগীরা প্রান্তসীমায় চলে যেত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এটা হলে কি বড় কোন ক্ষতি হয়ে যেত ? আমরা যারা নিজেদেরকে প্রগতিশীল–সাম্যবাদের বলিষ্ঠ কণ্ঠ বলে মনে করি, তারা আসলে কি চায়–একটু ভেবে দেখা দরকার।
মোজাফফর হোসেন, অদ্ভুত এক ‘ভালো লাগা’র অনুভূতি হল লেখাটা পড়ে, আরো লিখুন আমাদের জন্য।
@বন্যা আহমেদ, অসম্ভব ভালো লাগলো আপনার ভালো লেগেছে জেনে। ধন্যবাদ।
আমি জানিনা এটাকে গল্প বলা যায় কিনা( আমার অপারগতা)। আমি এটাকে একটা অসাধারন কবিতা হিসেবেই দেখব। অসাধারন কবিতা।
@সাইফুল ইসলাম, আসলে এই লেখা কে আমি কোন ফর্মে ফেলতে চাচ্ছি না, কারণ লেখাটার আচরনটা কারও সাথে ঠিক মেলে না। ধন্যবাদ। আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।
এমন সুন্দর লেখাটি আমাদেরকে এত পরে কেন দেখালেন দাদা?
নাগরিক ব্লগে এবং সামু ব্লগে দিলেন ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১০, আর আমরা পেলাম ঠিক ছয় মাস পরে ২৯ অক্টোবর ২০১০। এ একটা কথা হলো?
@আকাশ মালিক, আপনি আমার লেখা পড়েন দাদা? অসম্ভব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ। anyway, আপনার যে কথা হয়নি বলার ইংরেজি অনুবাদ (Telling the Untold Truth) পড়ছি। আপনার লেখার বড় ভক্ত আমি। আপনার আরো লেখা পড়তে চাই। ভালো থাকবেন।
@মোজাফফর হোসেন, আর সত্যি বলতে, মুক্তমনায় লেখা পোস্ট করতে বেশ ভয় করে। এখানে প্রবন্ধ-আলোচনার কদর বেশি। আর তাছাড়া, অনেক ভালো ভালো লেখা এখানে পোস্ট করা হয়, আমি মুক্তমনার মানকে নিচে নামাতে চাই না। তাই, এখন থেকে সম্পূর্ণ পাঠক হিসাবেই এই ব্লগে থাকতে চাই। গল্প বা কবিতার বাইরে ভালো কিছু লিখতে পারলে সেটা মুক্তমনার জন্যই লিখবো। আবারো ধন্যবাদ দাদা।
@মোজাফফর হোসেন,
এটা কী ধরনের কথা হলো মোজাফফর? আপনার লেখার মান কী রকম সেটা আমরা জানি। খামোখা এ ধরনের অদ্ভুত ভাবনা ভেবে নিজেকে মুক্তমনা থেকে সরিয়ে নেবার হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না বলেই আশা করছি।
প্রবন্ধে আলোচনার সুযোগ থাকে বলেই আলোচনা বেশি হয়, কবিতা বা গল্পে সেই সুযোগটা থাকে সীমিত। এর মানে এই নয় যে মুক্তমনার পাঠকেরা গল্প, কবিতা পড়ে না বা পছন্দ করে না। আমার কাছেতো একটা ভালো কবিতার কদর একটা ভালো প্রবন্ধের চেয়েও বেশি। ইচ্ছে করলেই যে কেউ সামান্য একটু পরিশ্রম করে প্রবন্ধ লিখতে পারে, কিন্তু একটা কবিতা লেখা অতখানি সহজ কাজ নেই। এর জন্য জন্মগত কাব্য প্রতিভা দরকার, সৃষ্টিশীলতা দরকার, যেটা সবার থাকে না। আমার পেটেতো পারমানবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটালেও একটা কবিতা বের হবে না।
মুক্তমনার মান নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না, লিখতে থাকুন এবং মন্তব্য করতে থাকুন নিয়মিত। মান খারাপ হলে আমরাই আপনাকে বলবো। আমার মত ঠোঁটকাটা লোকের অভাব নেই এই ফোরামে।
@ফরিদ আহমেদ,
আপনাকে কুর্নিশ :guru: । এমন কথা বলেছেন মন জুড়িয়ে গেল।
@ফরিদ আহমেদ, না না, মুক্ত মনা থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি মুক্তমনার নিয়োমিত একজন হয়ে থাকতে চাই। মুক্ত মনায় এ কয়তিনে অনেক শিখেছি, আরো শিখতে চাই। আমার অনেক প্রিয় লেখক এখানে লেখেন। কিম্বা মুক্ত মনায় পড়ে অনেকের ভক্ত হয়ে গেছি। শুধু এটুকু বলবো, মুক্ত মনার যে মান আছে তা অক্ষুন্ন থাক সেটাই আমি কামনা করি। আমি অন্যান্য ব্লগে এত সময় কখনো দিই না যা মুক্ত মনায় দিই। আশা করবো, আপনি আমাকে বুঝতে পেরেছেন। ধন্যবাদ।
@মোজাফফর হোসেন,
হ্যাঁ, আমাদের জন্যেই লিখুন। এখানে শুধু বুড়ি আঙ্গুল উল্টায়ে উপরে নীচে উঠা নামা করা হয়না। লেখার মান, বিষয়বস্তু সবকিছুর উপর গঠণমূলক আলোচনা হয়।
কেউ বলেন বানান পুলিশ, কেউ মনে করেন খুঁত ধরা, আসলে এর কোনটাই নয় বরং সুন্দর লেখাটিকে নিখুঁত, নিষ্কলংক রাখার লক্ষ্যে ভুল বানানগুলো সংশোধনের অনুরোধ করি। আর তা করতে গিয় নিজের দূর্বলতাও প্রকাশ করে দেই। এতে লাভ হয়, আমার অর্জনের শুণ্য থলেতে কিছুটা সঞ্চয় হয়। সুতরাং নীচের বানানগুলোর প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
(শ্রেণীবৈশম্য, জৌতুকের, রজনীগন্ধ্যা)
@আকাশ মালিক, ধন্যবাদ। আসলে, বলতে দ্বিধা নেই, বানানে আমার প্রচন্ড দুর্বলতা আছে। কিছুতেই কাটাতে পারছি না। ইংরেজি বিভাগের ছাত্র হওয়াতে বোধহয় সমস্যাটা আরো প্রকট হচ্ছে। তবে এটাকে আমি অজুহাত হিসাবে নিচ্ছি না। আমার বোধহয় আরো পরিশ্রম করা উচিৎ।
@মোজাফফর হোসেন,
একমত। বুঝতে পারছি তোমার মনের কোনায় গভীর ক্ষত। বলার কিছু নেই। পাঠক হিসেবে থাকাই আমাদের দরকার। তবু কিছু লিখলে মুক্তমনায় দেবার জন্য হেঁদিয়ে মরি।এই ভালোবাসা ঠিক না।
@আফরোজা আলম, না না,ক্ষত হতে যাবে কেন ? আমি বরং বলতে চাচ্ছি মুক্ত মনা অন্যান্য ব্লগ থেকে যে কারণে আলাদা সেই কারণটার পরিচর্যা করা উচিৎ। ধন্যবাদ।
আমরা চাই সৃষ্টিকর্তা না আবার একজন কার্ল মার্কস আসুক আসবে আবার।
@bijon, হুম, কিন্ত কার্ল মার্কস আসার প্রয়োজনটাই যদি না থাকে ? ধন্যবাদ পড়ার জন্য।