(১) টেলিকম নিউক্লিয়ার উইন্টার / ২০০১-২০০৩
আমেরিকাতে “রিশেসন” টার্মটার ব্যাবহার লোকের মুখে মুখে। সব কিছুর কনভার্জড উত্তর-রিশেসন ম্যান রিশেসন। এটি কোন এক্সপেশন না-প্রত্যেকটি খেটে খাওয়া আমেরিকানদের উপলদ্ধি থেকে উঠে আসা গভীর “বোধ”।
আমার আমেরিকাতে পদার্পন ২০০১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে। ন্যাসডাক তখনো সাড়ে তিন হাজারে দাঁড়িয়ে-প্রতিদিনই প্রায় শ খানেক করে নামছে। ব্যাঙ্করাপ্সি ফাইলিং নিত্য অভিজ্ঞতা। আর যেসব ভারতীয়রা জলের মতন আমেরিকাতে ঢুকে ছিল ভাগ্যের সন্ধানে, অনেকেই তাদের নতুন কেনা গাড়িটিকে সানফ্রান্সিকো এয়ার পোর্টে চিরতরে পার্ক করে দেশে ফিরে গেছে!
আমেরিকাতে টেলিকমের সব থেকে দুর্দিনে টেলিকম স্টার্টআপে চাকরি দিয়ে আমার পেশাদার জীবন শুরু। তবে তখনো মন্দার গোলমরিচ রোদ গায়ে লাগে নি। তার আগের বছর অপটিক্যাল নেটওয়ার্কে প্রায় ছ বিলিয়ান ডলার ঢালা হয়েছিল নানা স্টার্ট আপে। অধিকাংশ কোম্পানীতেই ঠিক ঠাক লোক ছিল না, শুধু টাকা ছিল। আমাদের ম্যানেজমেন্ট ছিল লুসেন্ট এর অবসরপ্রাপ্ত লোকেরা। সুতরাং সেই অর্থে বরং আমি ভাগ্যবান যে ঠিক ঠাক লোকেদের সাথেই ছিলাম এবং যার জন্যে পথে বসতে হয় নি। অন্য অনেক ভারতীয়দের কপালে সেই সোভাগ্যটুকুও ছিল না। ফেব্রুয়ারী মাসে আমার সাথে অনেকেই যারা এসেছে, তাদের বেশ কিছু লোক এখানে এসে দেখে তাদের চাকরী নেই। ভাল কোম্পানী হলে রিটার্ন টিকিট দিয়ে দিয়েছে-আর অধিকাংশের ভাগ্যে সেটাও জোটে নি।
তবে সেই শীতে নিউজার্সি তখনো আপবিট। আমার সঙ্গীরা যেহেতু সবাই লুসেন্টের প্রাত্তনী-এদের অনেকেই রিয়ারমেন্টের টাকা লুসেন্টের স্টকেই ঢেলে ছিলেন। প্রায় সবার রিটারমেন্ট বেনিফিট আমার সামনেই সাফ হয়েছে। তবে এরা এক সময় আমেরিকাতে অনেক কামিয়েছেন-বাড়ির লোন শোধ করা হয়ে গিয়েছিল। তাই তাদেরকে খুব বেশী চিন্তা করতে দেখিনি। শুধু ওরা হেঁসে বলত প্রতি ছমাসে ওদের রিটারমেন্ট সঞ্চয়ে একটা করে শুন্য কমছে! তবে সেই সোভাগ্যত আর ভারত থেকে আসা সদ্য সফটওয়ার কর্মীদের ছিল না। তাদের অবস্থা এত খারাপ হয় আপার্টমেন্ট থেকে মল সর্বত্র ভারতীয় দেখলেই জিজ্ঞেস করত ” দাদা আপনাদের কোম্পানীতে কর্মখালী আছে? আমরা সব পারি-জাভা, ডটনেট-যা বলবেন সব কিছু। একটু দেখুন প্লিজ -গত ছমাস বেঞ্চে বসে আছি”।
আমি যে আপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে থাকতাম-সেখানে প্রায় সবাই লুসেন্টের হোমডেল ভবনে চাকরী করত। আমি যখন আসি, তখন দুমাস বাদে এপার্টমেন্ট পেয়েছিলাম। তারপরে জুন মাসের মধ্যে কমপ্লেক্স খালি হতে শুরু করে। লুসেন্টে তখন প্রতি ১৫ দিনে তিন চার হাজার করে ছাঁটাই হচ্ছে। আমি শুধু দেখছি পার্কিং লটে গাড়ির সংখ্যা কমছে। আগে জম জমাট থাকত সুইমিং পুল টেনিস কোর্ট- আস্তে আস্তে সেখানেও লোক কমছে। ২০০২ সালের মধ্যে ওই কমপ্লেক্সে লুসেন্টের একটি বন্ধুও রইল না। সবাই ছিটকে গেল নানা কোনে। আমাদের ঘনিষ্ঠ পরিবার যিনি লুসেন্টের খুব বিখ্যাত গবেষক ছিলেন-কোপ তার ওপর ও পড়ল! কেও বাদ রইল না! আই আই টি, প্রিন্সটনের ডিগ্রি, বছরে ২০ টি করে পেপার-কিছুই তাকে বাঁচাতে পারল না! আমার সেই বন্ধুটি যিনি এখন কম্পুটার সায়েন্সের একজন বিখ্যাত অধ্যাপক-তিনিও বেকার ছিলেন প্রায় একবছর।
২০০১ সালের আগষ্ট মাসে মন্দার প্রথম উত্তাপ টের পেলাম। তখন কোম্পানীতে ছিল ৭০ জন। হঠাৎ একদিন দেখি আমার পাশের ঘরের ছেলেটি নেই। ভাবলাম ছুটি নিয়েছে। লাঞ্চের সময় জানলাম কোম্পানী ১০ জনকে লে অফ করেছে। মাইল্ড শক। সি ই ও ইমেল করে জানালো দ্বিতীয় দফার ফান্ডিং এখন আসতে দেরী আছে-তাই ক্যাশ বাঁচাতে এই সিদ্ধান্ত।
খেয়াল রাখতে হবে আমেরিকার স্টার্টআপ কালচারে আমি যখন ঢুকেছি-আমার সহকর্মীদের অনেকেই মিলিয়ানার। স্টার্ট আপ করেই। আমি ওই কোম্পানীর প্রথম দশজন কর্মীর একজন ছিলাম-আমাকেও প্রচুর স্টক দেওয়া হয়েছিল। আশে পাশের মিলিয়ানারদের দেখে যারা বেঞ্জ বা বি এম ডব্লু তে করে আসতেন এবং প্রাসাদসম বাড়িতে থাকতেন-আমার ও ধারনা হল, আগামী তিন চার বছরের মধ্যে আমিও মিলিয়নার হতে চলেছি। উচ্ছাসে ভাবী স্ত্রীকে জানিয়ে দিলাম-চিন্তা করোনা, আমাদের পঞ্চম বিবাহবার্ষিকীকে তোমাকে একটা বেঞ্জ উপহার দিচ্ছি!! কারন আমাকে এর বেশী স্টক দেওয়া হয়েছে, আই পি ও হওয়ার পর, আমি বেশ কয়েক মিলিয়ানডলারের মালিক হতে চলেছি। সেই আশাতেই সবাই সপ্তাহে সাত দিন কাজ করত। তবে কাজ করে মজা ছিল-শেখার ছিল অনেক কিছু-শিক্ষকরাও ছিলেন সেরা-তাই বাজে লাগে নি। দরকার হলে রাত দুটো তিনটে অব্দি কাজ করতাম। ভাবটা ছিল-মোটে তিন চার বছরের ব্যাপার। তারপরে মিলিয়নার হয়ে দেশে ফিরে বাকী জীবন স্ফূর্তি করব।
“আশা” বস্তুটি এতই নিরেট-নিরাশাকে সে মানতে চাইত না। ২০০২ সালের গ্রিষ্মেও যখন সেকন্ড রাউন্ড ফান্ডিং এলো না, সবার মাইনে কমানো হল, চাকরী গেল ৩০ জনের। চোখের সামনে এতজনকে ফায়ারড হতে দেখে, রাতে ঠিক ঠাক ঘুম হত না। আমদের পরিশ্রম আরো বাড়ল। তখনো হাল ছাড়ার প্রশ্ন নেই। প্রোডাক্ট প্রায় রেডি। ভারিজন ট্রায়াল নেবে-এবং ট্রায়ালে সফল মানে টাকা অনেক আসবেই!
হায়রে ধণতন্ত্র! আমাদের ক্ষুদে টিমটা যে আপটিক্যাল ট্রান্সপোর্ট প্ল্যাটফর্ম তখন বানিয়েছিল-সেটি সময়ের থেকে অনেক এগিয়েছিল। ভারিজনের ট্রায়াল সফল হল। কিন্ত টাকা এলো না। কারন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কাররা অপটিক্যাল নেটোয়ার্কে এত টাকা হারিয়েছে, কেও এক ডলার ও দেবে না। ২০০৩ সালে ছাঁটাই করতে করতে কোম্পানী যখন মোটে ১২ জনে দাঁড়িয়েছে, সিই ও বললেন এবার ফুলস্টপ!
তার পরের দিনটা ভুলতে পারব না। সবাই যে যা পারছে খুলে নিয়ে যাচ্ছে। ল্যাবে তখন প্রায় ত্রিশ কোটি টাকার ওপরে বাক্স টাক্স আছে। সেগুলোর মার্কেট ভ্যালু একদিনে শুন্য। ফাইবার এম্পিফায়ার ইত্যাদি দামি বেশ কিছু জিনিস আমিও খুলে নিই যা পরে মাদ্রাস আই আই টিতে ছাত্রদের জন্য পাঠিয়ে দিই। যার জন্যে এত লড়াই, এত মারামারি, এত ঘাম, এত বিনিদ্র রজনী-একদিনে শেষ! আমাদের আড়াই বছরের সবার পরিশ্রম শুন্যে এসে ঠেকল। কারন মার্কেট আমাদের চাইছে না। বিশ্বাস করতেও চাইছে না। মার্কেটই আমাকে আমেরিকাতে এনেছে-সন্মান অর্থ সবই দিয়েছে-আবার সেই মার্কেটই আমাদের জীবনের তিনটে বছর মুছে দিল। আমাদের বড় বড় রথী মহারথিরা চাকরী না পেয়ে সরকারি কেরানীর চাকরি নিলেন। আর আমাদের মতন তরুনদের ভাগ্যে পড়ে রইল কঠিন জীবন সংগ্রাম।
এর পরবর্তীতে তিন মাসে আমি প্রায় ১৯ টি ইন্টারভিউ দিই চাকরির জন্যে। এর মধ্যে ১৭ টি ছিল আমার নিজের ফিল্ডে। বাকী দুটি অন্য এলাকাতে যাতে আমার জ্ঞান ছিল ভাসা ভাসা। সেই ১৭ টি ইন্টারভিউ এর একটিতেও চাকরি হল না নিজের ফিল্ডে-কারন তখন ইন্টারভিউ ও প্রহসন বা ভবিষ্যতের জন্যে। বাকী যে দুটো ফিল্ডে চাকরি পেলাম, সেটি আমার দুনিয়া না-অভিজ্ঞতাও ছিল না। তবে ভাসাভাসা জ্ঞান ছিল।
আরেকবার প্রনাম করলাম বাজার সরকারকে। কি অপূর্ব তার মহিমা। তিন বছর আগে, আমি যখন পি এই চ ডি শেষ করছি , কিন্ত অভিজ্ঞতা অল্প, আমার বাজার দর উঠেছে চর চর করে। কারন ন্যাসডাক বিলিয়ানস অব ডলার ঢেলেছে টেলিকম শিল্পে। ১৯৯৭-২০০০ ছিল টেকনোইউটোপিয়ার যুগ। প্রযুক্তিই একমাত্র সমৃদ্ধি আনবে এই বিশ্বাসে প্রতিটা আমেরিকান জীবনের সঞ্চয় খুইয়ে সর্বশ্রান্ত হয়েছে। বলা যায় তাদের টাকার জোরেই শুধু আমেরিকাতে থেকেই তিনটি চাকরি পেয়েছিলাম ভারতে পি এই চ ডি শেষ করার আগেই এবং দুটিতে স্যালারি ছিল ছয় অঙ্কের ওপরে। থিসিস জমা দেওয়ার পরের দিনই আমি আমেরিকা আসি এবং তার পরের দিন থেকেই কার্যত কাজে। কারন তখন অপটিক্যাল ট্রান্সমিশনে এক্সপার্ট লোক প্রায় ছিল না। আর তিন বছর বাদে- বাজারই আমাকে তুলেছিল-আবার যথাস্থানে নামিয়েও দিল। তখন আমার আট বছরের অর্জিত অভিজ্ঞতার কোন মূল্য নেই। আমি ত ছার। আমার বসের মতন লোকেরা যিনি এম আই টির প্রাত্তন অধ্যাপক এবং ত্রিশ বছরের অভিজ্ঞতা -তার ও দুর্দিন গেছে।
এর নাম বাজার। জীবনের শুরুতেই এর যে অপূর্ব মহিমা আমি দেখেছি-তারপরে ধনতন্ত্রের প্রতি আস্থা আমার উবে গেছে।
এর মানে এই নয় যে লেনিনিজমে বা সমাজতন্ত্রে আমার বিশ্বাস এসেছে-বরং আমার চিন্তাধারা সিস্টেম এগনস্টিক হয়েছে।
আমি পর্যবেক্ষক মাত্র। খুব অদ্ভুত এই বাজার। এখানে যুক্তির স্থান নেই-সবাই লাস ভেগাসের স্লট মেশিনের মতন ফাটকা খেলছে। প্রথমে বিশ্বাস করতে কষ্ট হত-আস্তে আস্তে নিজেকে বোঝাকে সমর্থ হয়েছি ধনতান্ত্রিক এই প্রক্রিয়াতে জ্ঞান এবং কোন সাবজেক্টের প্রতি ডেডিকেশনের কোন মূল্য নেই-শেষ কথা ডলার। বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতেও এই ভাইরাস এখন সংক্রামিত। সব প্রফেসরটা চাকরি টেকাতে যেভাবে টাকা আনার পেছনে ছুটছে বড় বাজারের মারোয়ারীরা ওদের দুহাত তুলে প্রনাম করবে।
রিশেসনের আরেকটা গল্প না বললে এই অধ্যায় শেষ হবে না। আমার কোম্পানীতে বাহাত্তর বছরের এক বৃদ্ধ রবার্ট হাউসেন ছিল আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
রেড ব্যাঙ্ক নদীতে ও আমাকে সেইলিং করতে শিখিয়েছিল। হার্ভাড ইলেক্ট্রিক্যালের পি এচ ডি এবং টি ওয়ান প্রযুক্তি যা পৃথিবীর প্রথম ব্রডব্যান্ড প্রযুক্তি- তার আবিস্কারক এই হাউসন সাহেব। ২০০২ সালে তার ক্যান্সার ধরা পরে। প্রস্টেট ক্যান্সার। আমি বল্লাম তুমি রেস্ট নাও। ও বললো তাহলে আমার চিকিৎসা কে করবে? রিয়ারমেন্টের সব টাকা, পেটেন্টের সব টাকা টিস্যু পেপার এখন!
ওর মতন একজন কৃতবিদ্য লোককে শুধু মেডিক্যাল ইন্সোরেন্সের জন্যে ক্যান্সার নিয়ে প্রতিদিন অফিসে আসতে হচ্ছে-আমার খারাপ লাগত। ও বলত এই বেশ ভাল আছি। আর কদিনই বাঁচাবো! বরং কাজ করেই বাঁচি। হাউসন আমার বাবার সম বয়সী। আমার বাবা গ্রামের হাইস্কুলের শিক্ষক ছিলেন-তার ও পেনসেন আছে। তিনি অবসর জীবন নিশ্চিন্তেই কাটাচ্ছেন। আর হাউসন সাহেবের মতন একজন বিখ্যাত প্রযুক্তিবিদ ধনতন্ত্রের জাঁতাকলে চিরকারই তেল বার করে গেলেন! কে জানে-এই মানবিকতাটুকু নেই বলেই হয়ত ধনতন্ত্র কাজ করে-সমাজতান্ত্রিক দেশগুলিতে লালবাতি জ্বলছে!
তবে কিছু “জেন” উপলদ্ধিও হয়েছে ওই তিন বছর। আমেরিকা কেন উদ্ভাবন করে , আর বাকীদের গবেষনা কেন ল্যাবেরাটরীতেই পড়ে থাকে, সেই সমীকরণ পরিস্কার হয়েছে। জীবনত একটাই-আমি কৃতজ্ঞ যে ধনতন্ত্রের হৃদপিন্ডতে বসে তাকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। যেদিন দেখলাম চ্যাসিগুলো থেকে সবাই যেযার মতন দামী দামী আম্পলিফায়ার খুলে নিয়ে যাচ্ছে -নিজেকে বোঝালাম আমি বাজারের ক্রীতদাস। বাজার মহারাজ যা চাইবে-আমি তার বাইরে একচুল কিছু করার সামর্থ্য রাখি না।
(২) মিডিয়া রিশেসন-২০০৭ এবং পরবর্তী
নিউজার্সিতে স্টার্টআপ গেমে এত মগ্ন ছিলাম-ক্যালিফোর্নিয়াতে নতুন চাকরিতে জয়েন করার পর, ঠিক করলাম -অনেক হয়েছে। এবের খাব স্ফূর্তি করব -আর ঘুরবো। এটা ছিল জার্মান কোম্পানীর রিসার্স এন্ড ডেভেলেপমেন্টের কাজ। ইউরোপে প্রায় ৪৫ দিন লোকে ছুটি পায়। ওদের সাথে কাজ করতে হত বলে, আমেরিকাতে কাজের চাপ ছিল অনেক কম। তাছারা ইউরোপিয়ানরা ব্যাবসা এবং শিল্পের ব্যাপারে রক্ষনশীল। ওদের কাজের প্রতি একটা এটাচমেন্ট আছে-যা আমেরিকানদের নেই। যেমন আমাদের এন্ড্রেস হাউসার মোটামুটি ৮০ বছর ধরে ইনস্ট্রুমেন্টেশন শিল্পেই ছিল। ওরা ওটাই করে-এবং তাতেই বিশ্বসেরা। আর কোন ব্যাবসা তারা করে না। আমেরিকাতে এবং তার দেখাদেখি ভারতে, কারুরই প্রায় শিল্পের প্রতি সেই টান নেই। সবাই ফরেদার। একটা ব্যাবসাতে সফল হলে রিয়াল এস্টেট থেকে প্লেইন কেনা সব কিছুই করে বসে। যার জন্যে আমেরিকানরা উদ্ভাবনে সফল হলেও ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাবসার ব্রান্ডিং এ জার্মানী থেকে পিছিয়ে। আমার অবাক লাগত ওখানে সবাই ১৫-২৫ বছর ধরে চাকরি করছে। ওরা হায়ার ও খুব বেশী করে না-ফায়ার ও করে নি। আস্তে আস্তে সর্বোৎকৃষ্ট প্রযুক্তি বানাতে থাকে।
একটা ফিল্ডে বহুদিন কাজ না করলে, উৎকর্ষতা আসে না। আমেরিকানরা অবশ্য উৎকর্ষতা, প্রযুক্তির প্রতি প্যাশন এসব নিয়ে চিন্তিত না-তাদের কাছে বোতলে জল ভরে ব্যাবসা করা আর ন্যানোটেকনোলজিতে কাজ করা -সব কিছু মাপার একটাই নিমকাঠি- ডলার।
যাইহোক এখানে দুর্দান্ত তিনটে বছর কাটালাম। এই বছরগুলি আমেরিকানদের জন্যেও বেশ ভাল-রিয়াল এস্টেটে সবাই টাকা বানাচ্ছে। কাজের চাপ নেই। আমেরিকা ঘুরতে হত কাজের জন্য। ইউরোপিয়ান কোম্পানীগুলিতে খানা পিনা ঘোরা এসব বেশী হয়। লেখার অবসর ছিল-লেখক হিসাবে আত্মপ্রকাশ এখান থেকেই। মোটামুটি ভাবে বড়লোক হব সেই স্বপ্নও নেই-তাই দৌড়ঝাঁপ ও নেই। টাকার পেছনে না দৌঁড়ালে জীবনটা অনেক সহজ । এন্ড্রেস হাউসারে অধিকাংশ কর্মী সারাজীবন কাজ করে ওখানেই রিটায়ার করে। মোটামুটি নচিকেতার এই বেশ ভাল আছি গেয়ে আর লেখালেখি করে কাটিয়ে দিচ্ছি-এমন সময় একটা অপ্রত্যাশিত ফোনকলে আবার জ়ীবনের ধারা বদলে গেল।
হলিউড থেকে এক ভদ্রলোক ফোন করে জানাল সে আমার সাথে কথা বলতে চাইছে। আমি তখন স্টার্টাআপের প্রতি এত বীতশ্রদ্ধ আর একটা ভালো কোম্পানীতে এত আরামে আছি-ওই ভদ্রলোকের স্টার্টাআপে জয়েন করার প্রশ্নই আসে না। উনি বললেন একবার হলিউডে আমার কোম্পানীতে এসে ঘুরে যাও-আমার কিছু প্রশ্ন আছে-তোমার রেজুমে দেখে মনে হল, এর উত্তর তুমি দিতে পারবে। আমি কোন প্রযুক্তিবিদ না-গায়ক। এখন এই কোম্পানীটা খুলেছি। আমার ধারনা মিডিয়া এখন প্রযুক্তির হাতে-শিল্পীদের হাতে আর নেই।
ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হল। জীবনত একটাই-দেখাই যাক আরেক বার স্টার্টআপ স্লট মেশিনে কয়েন ফেলে। যদি শিকে ছেঁড়ে। তাছারা আমি যা মাইনে চাইলাম -উনি আমাকে তার দেড়গুন দিলেন। ফলে না বলার আর উপায় থাকলো না। তাছারা তদ্দিনে আমি আমেরিকার স্থায়ী বাসিন্দা-তাই নতুন চাকরি পেতে অসুবিধা হবে না জেনে, এবার জীবনে দ্বিতীয়বারের মতন ঝাঁপালাম।
২০০৭ সালে আমেরিকান মিডিয়াতে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠে গেছে। মূল কারন সোশ্যাল মিডিয়া, ব্লগ, ইউটিউব এবং ক্রেগ লিস্ট। লোক্যাল প্রিন্ট মিডিয়ার সব থেকে বড় ইনকাম সোর্স ক্ল্যাসিফায়েড বিজ্ঞাপন। ক্রেগলিস্ট বিনা পয়সাতে সে সুযোগ দেওয়াতে আমেরিকাতে লোক্যাল নিউজ পেপার বলে কিছু থাকল না। সাংবাদিকদের আঁতুর ঘরই ধ্বংশ তখন। হলিউড এবং টিভি মিডিয়া ইউ টিউবের চাপে দিশে হারা। সব সিনেমা, সব ডিভিডি পাইরেটেড হয়ে ইউ টিউবে দেখা যাচ্ছে। হলিউডের পর্ণ শিল্পও ২০০৬ সালেই শেষ-পাইরেসি এবং হোম মেড পর্নের কৃপায় লোকে আর টাকা দিয়ে নগ্নতা কিনছে না! এমন দুর্দিনে আমার হলিউডে পদার্পন। আমার কলিগরা এক সময় প্রচুর টাকা কামাত। কিন্ত ২০০৫ সাল থেকে ওরা প্রায় বেকার বসে আছে। আসলে হলিউডে দুটো ক্লাস আছে-যার একদম ওপরে তারা ডিজনি বা ফক্সে কাজ করে। হলিউডের অধিকাংশ জীবিকা সংস্থান হয় সফট পর্ন নির্ভর বি গ্রেড সিনেমাগুলিতে।
মিডিয়ার শোবিজনেসে আসলে সবাই নানা প্রকৃতির ম্যাজিশিয়ান। বাস্তবতা থেকে ইনারা অনেক দূরে থাকতে ভালোবাসেন-স্বপ্ন তৈরী করাই তাদের কাজ। সেটা করতে গিয়ে বাস্তবটাকে এরা বেমালুম ভুলে যায়। ফলে ২০০৪-৫ সালে যারা বছরে মিলিয়ান ডলার রোজগার করত, তাদের উপায় যখন শুন্যে গিয়ে ঠেকল-তারা বুঝতে পারছিল না ব্যাপারটা কি! এটা বুঝতে পারছিল, মিডিয়া আস্তে আস্তে প্রযুক্তির হাতে চলে যাচ্ছে।ফলে অনেকেই আমাদের কোম্পানীতে টাকা ঢালতে লাগলো -এবং এখানে লোকের প্রত্যাশাটাও সিনেমাতে টাকা লাগানোর মতন। হলিউডের ছোট সিনেমাগুলোতে ছোট ছোট ইনভেস্টররা টাকা খাটায়-এই ভাবেই তারা এতদিন করে খাচ্ছিল। ইউ টিউব সহ ভিডিও শেয়ারিং সাইটের জন্যে দুর্দিন তাদের সামনেও। তারাও এবার টেক স্টার্টআপে টাকা ঢালা শুরু করল। এবং এই ধরনের প্রত্যাশা থাকলে যা হয়, তাই হল। সেই হাজারটা নতুন প্রজেক্ট শুরু করে-কোনটাই শেষ না করার জন্যে লালবাতি জ্বলা শুরু হল।
হলিউড সত্যই এক অদ্ভুত সৃষ্টি- অনেক লোকের পকেটে এক পয়সা নেই-অধিকাংশ নায়ক নায়িকাই বেকার-অড জব করে দিন কাটে-এদিকে তাদের দেখাতে হবে তারা বড়সর অভিনেতা। ফলে একাধিক নায়ক নায়িকা একসাথে বেভারলি হিলসে মাত্র একটা ঘর ভাড়া করে-লোককে দেখানোর জন্যে। পোষ্টাল এড্রেসের জন্যে। নিজেরা থাকে বারব্যাঙ্কের বস্তিতে।
হয়ত ম্যাকডোনাল্ডে কাজ করে-দু একটা টিভি সিরিয়ালে মুখ দেখিয়েছে-কিন্ত পেপারে বা টিভিতে ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় এমন ম্যাজিক ক্রিয়েট করবে যেন মনে হবে এ বোধ হয় সত্যই বেভারলি হিলসে থাকা কেও কেটা অভিনেতা।
আগে ছোট খাট লো বাজেটের সিনেমা অনেক হত হলিউড থেকে-ক্রমশ ইউটিউব আর টরেন্টের পাইরেসির দৌঁড়াত্বে তা কমতে থাকে-ফলে এদের হতাশাও ক্রমশ আরো বাড়তে থাকে। সাথে সাথে টাউটগিরি এবং ঠকানোর প্রবনতাও।
সবাই মিডিয়া ম্যাজিক সৃষ্টি করতে গিয়ে, নিজেরাই ম্যাজিকের শিকার হয়। এই ব্যাপারে সাংবাদিকদের নিয়েও দুকথা বলা দরকার। আমেরিকাতে সাংবাদিক পেশাকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়, এই চাকরির সৌজন্যে। এর আগে অব্দি সাংবাদিকদের প্রতি আমার বিশাল শ্রদ্ধা ছিল। আস্তে আস্তে বুঝলাম এরা ওই ম্যাজিকে ম্যাজিকশিয়ানদের জাদুদন্ড। এবং অধিকাংশই নিজেদের পাতা মাইনে আহত সৈনিক। সিনেমা জগতের অধিকাংশ সংবাদই টাকা দিয়ে তৈরী হয়-সুতরাং নিরেপেক্ষ সাংবাদিকতা বলতে কিছু নেই-সব খবরই টাকার কাছে নাকখঁত দিয়ে বসে আছে। কর্পরেট জগতের বিরুদ্ধে কিছু লিখলে, সম্পাদক মোটেও সেটি ছাপাবেন না-কারন বিজ্ঞাপন বিভাগ সম্পাদকের চাকরি খাবে। বেসিক্যালি সংবাদ বলতে যেটি আমাদের পরিবেশন করা হয়-সেটি সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন দাতা ও রাজনৈতিক লবির দাদাদের সেন্সর করা একটি রসগোল্লা। যেকারনে সোশ্যাল মিডিয়া আসার সাথে সাথে মূলধারার সংবাদ পত্রগুলি একদম শুয়ে পড়েছে। এই ধরনের ধাপ্পাবাজি আর কদিন জনগণ মেনে নেবে? ফলে আমেরিকাতে প্রায় ৯০% সাংবাদিকই বেকার। সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্লগ লিখে দুপয়সা রোজগার করছে। ভারতে এই দিন এখনো আসে নি-কারন ইন্টারনেটের ব্যাপক প্রচলন এখনো হয় নি। আস্তে আস্তে সেটা আসছে-এবং আগামী দশ বছরের মধ্যে ভারতেও সাংবাদিকরা বেকার ঘুরবে। ওটা কোন পেশা বলেই গণ্য হবে না। ব্লগার বলে একটা নতুন পেশার জন্ম হবে। সাংবাদিক পেশাটাকে যেটুকু কাছ থেকে দেখেছি-এটিকে একধরনের বুদ্ধিজীবি বেশ্যাবৃত্তি বলেই গণ্য করব।
(৩) সাবপ্রাইম ক্রাইসিস -২০০৮-২০১০ (!)
আমেরিকার সাবপ্রাইম সংকট যেভাবে গোটা বিশ্বর অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দিল-তাতে নিশ্চয় আজকাল আর কেও অবাক হবে না। বাড়ির দামের এত অযৌত্বিক বৃদ্ধি আমি দেখেছি-এতে কোন সন্দেহই নেই ব্যাঙ্কের ঢালা টাকায় খুব সুপরিকল্পিত ভাবে এই বাজার নিয়ন্ত্রিত হয়। ২০০৪ সালে যখন ক্যালিফোর্নিয়াতে পৌঁছালাম, তখন এনাহেমের মতন শহরে যেখানে লোকেদের গড় উপায় ৪৪ হাজার ডলারের কম-অধিকাংশই মেক্সিকানদের বাস-সেখানেও একটা তিন বেডরুমের বাড়ির দাম ৭০০ হাজার ডলার। এনাহেম ডিজনিল্যান্ডের জন্যে খ্যাত। তার পাশেই থেকেছি তিন বছর। যে জিনিসটা অবাক করেছে-ঐ এলাকাতে ডিজনিকে কেন্দ্র করে বছরে দু বিলিয়ান ডলারের ব্যাবসা হয়-অথচ ডিজনির এলাকা বাদ দিলে শহরটাতে বস্তির সংখ্যাই বেশী। এই শহরের অধিকাংশ কর্মীই ছিল ডিজনিল্যান্ডের -যারা ঘণ্টায় ১৪-২০ ডলার রোজে কাজ করে। বা হোটেলে কাজ করে। কিন্ত এই দুই বিলিয়ান ডলার যাদের হাতে পৌঁছাত, তারা থাকত বিলাস বহুল নিউপোর্ট বিচে বা আরভাইনের মতন বড়লোকদের শহরে। এই ধনতান্ত্রিক সমাজে অর্থনৈতিক উন্নতির বৈষম্য দেখতে হলে দক্ষিন ক্যালিফোর্নিয়াতে আসুন। কোন জায়গায় শিল্প স্থাপন হলেই যে সেই শহরটির ভাল কিছু হবে-এই ধরনের অতি সরল অর্থনৈতিক ধারনা, আনাহেমে থাকলে উড়ে যাবে।
এবার ভাবুন এমন এক বস্তিময় শহরে যদি বাড়ির দাম ৭০০ হাজার ডলার হয়-তাহলে বাকী ভালো জায়গা গুলোর কি অবস্থা ছিল? আরভাইন, ডেনা পয়েন্ট, হানটিংটন বিচের মতন শহর গুলিতে বাড়ির দাম ছিল আরো বেশী। এমন নয় ক্যালিফোর্নিয়াতে সরকারি চাকুরেররা ভাল মাইনা পায়। বরং উলটো। ক্যালিফোর্নিয়ার স্কুলে ৪০% শিক্ষক নেই। সেসব নিয়ে এখানের লোকের মাথা ব্যাথা খুব দেখি নি। সবাই বাড়ি বেচাকেনা করে পয়সা করতে দৌঁড়াচ্ছে। বাড়ি বেচা কেনা করে সবাই নাকি মিলিয়নার হয়েছে। ধণতন্ত্রের অদ্ভুত সৃষ্টি এই দক্ষিন ক্যালিফোর্নিয়া।
সাবক্রাইম ক্রাইসিসের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই অঞ্চল। বাড়ির দাম এত বাড়ছিল ২০০১ সাল থেকে। শহর থেকে অনেক দূরে, ১০০ মাইল দূরের ছোট ছোট মরূশহর গুলিতে লোকে অবাধে বাড়ি বানাচ্ছিল-এবং তার থেকে কখনো দ্বিগুন, কখনো চারগুন লাভ করেছে। কিন্ত এই এলাকাতে লোকের ইনকাম বলতে শুধু হলিউড, কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প আর পর্যটন। তার ওপর ভিত্তি করে এত বড় অর্থনীতি আর বাড়ির দাম কি করে সম্ভভ? হলিউডে খুব বেশী হলে ১৫০,০০০ লোকের কর্ম সংস্থান হয়। পর্যটন শিল্পে ২০০,০০০। আর ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে ধরে নিচ্ছি খুব বেশী হলে ৩০০,০০০ এর মতন। এদিকে লোকের সংখ্যা প্রায় এক কোটি চল্লিশ লক্ষ। যাদের অধিকাংশ কর্মরত ছিল গৃহশিল্পে। ফলে সাবক্রাইম ক্রাইসিস ২০০৮ সালে শুরু হলেও ২০০৫ সাল থেকেই এখানে বাড়ির দাম পড়তে শুরু করে। অসংখ্য বেকার দেখেছি ওই তিন বছর যারা এই নির্মান শিল্পের সাথে জড়িয়ে ছিল। কোন কোন পাড়াতে ১০ টি বাড়ির মধ্যে সব কটিই ফোরক্লোজারে গেছে-সেটাও দেখেছি। নতুন নির্মিত শহরে এই প্রাদুর্ভাব ছিল অনেক বেশী। মর্টগেজ দিতে না পারার জন্যে বাড়ি ছেরে লোকে গাড়ি শুয়ে জীবন কাটাচ্ছে এই দৃশ্যও বিরল ছিল না সান বার্নেডেনোর মতন গরীব এলাকাতে। দক্ষিন ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতি সত্যই আমার কাছে মিরাকল! লোকের মাইনা যেখানে অতি সাধারন, সেখানে কি করে বাড়ির দাম এত উঠতে পারে ব্যাঙ্কের দুর্নীতি ছারা?
এই একই ভয় পাচ্ছি কোলকাতা রিয়াল এস্টেট নিয়ে। কোলকাতাতে লোকের মাইনার মিডিয়ান খুব বেশী না-বাড়ির দাম এদিকে আকাশ ছোঁয়া। কোন না কোন দিন এই বাবল বার্স্ট হবেই। প্রবাসীরা অধিকাংশ বাড়ির মালিক বলে, হয়ত খুব শিঘ্রী এখানে ফাটকাবাজি ফাটবে না। কিন্ত ব্যাপার হচ্ছে বাড়ি বিক্রি করার টেন্ডডেন্সি শুরু হলেই, কয়েক মাসের মধ্য সহজেই বোঝা যেত যে শহরের উপায় এত কম, সেখানে বেশী বাড়ির দাম ফাটকাবাজি ছারা কিছু না।
নিজেকে এই ব্যাপারে সৌভাগ্যবানই ভাবি। ২০০৫ সালে কোম্পানী লোন দিতে চেয়েছিল বাড়ি কেনার জন্যে। আমি অনেক বাড়ি দেখে এবং মোটামুটি সাধারন বুদ্ধি লাগিয়ে বুঝেছিলাম, মার্কেট সম্পূর্ন বাস্পের ওপর। বার্স্ট হল বলে। ফলে আরো দু বছর দেখার সিদ্ধান্ত নিই। এবং সেটা না করলে আজকে বিশাল দেনার দায়ে ডুবে যেতাম। ওখানে অধিকাংশ এলাকাতে বাড়ির দাম কমেছে ৫০% করে। ৭০% দাম কমতেও দেখেছি। আসলে ব্যাঙ্কের ঋন সাপ্লাই এ দাম বেড়েছিল এত। আসলে ত অধিকাংশ লোক কাজ করে ঘন্টায় ২০ ডলার রোজে-তাদের পক্ষে সম্ভব না ওই মর্টগেজ দেওয়া। তবুও তারা বাড়ি কিনেছিল-কারন ব্যাঙ্ক টাকা ধার দিচ্ছিল-প্রথম বছর শুধু ইন্টারেস্ট দিতে হবে। আর এক বছর বাড়ি রাখতে পারলেই শুধু একটা বাড়ি থেকেই ১০০-২০০,০০০ ডলার লাভ হচ্ছিল। ফলে এক বছর বা ছমাস বাদে বেচে দিয়ে অনেকেই অনেক লাভ করে বেড়িয়ে গেছে। এবং সেই লাভের টাকায় আরো বেশী যখন ইনভেস্ট করতে গেছে, সম্পূর্ন ডুবে গেছে।
কিন্ত প্রশ্ন হচ্ছে ব্যাঙ্ক ত এসব কিছুই জানত। এনালিস্টরা সাবধান করে নি কিন্ত। পরে তাদের কাছ থেকেই জেনেছি ম্যানেজাররা তাদের রিপোর্ট চেপে যেত বলত। কারন তা না হলে বিশাল বোনাস হারানোর ভয়। অর্থাৎ পরিস্কার ভাষায় প্রতিটা ব্যাঙ্কের কতৃপক্ষ ডাকাতি করেছে। কোটি কোটি আমেরিকানকে দেনার দায়ে ডুবিয়েছে। এবং পরে সরকারি টাকায় নিজেদের উদ্ধার করেছে। ডাকাতি করার জন্যে সরকারি পুরস্কার। এটা এই সমাজ ব্যাবস্থাতেই সম্ভব। আবার এটাও ঠিক ফি বছর আমেরিকাতে যতজন সি ই ও জেলে ঢোকে-কোলকাতা পুলিশ সারা বছর ততজন ডাকাত ধরতে পারে কি না সন্দেহ।
(৪) আমেরিকান অভিজ্ঞতা
এবার আমেরিকানদের অভিজ্ঞতা নিয়ে কিছু বলা দরকার।
আমেরিকানরা ছোটবেলা থেকেই পুতুল প্রিয়। গাড়ি, ভিডিও গেমস-গ্যাজেট-বিপুল খাওয়া দাওয়া। বাচ্চারা যেমন নিজেদের ছোটবৃত্তের মধ্যে পুতুল নিয়ে খুশী-আমেরিকানরাও তাই। প্রায় সবাই অর্থনীতি এবং রাজনীতির ব্যাপারে বিগ বেবী। আমি রাজনীতিতে নেই-জীবনটা উপভোগ করে কাটাব-চার্বাক দর্শনে বিশ্বাসী। এবার তাদের ওপর যখন মন্দার খাঁড়া নেমে আসে, প্রায় সবাইকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় দেখি। আমার অনেক কলীগকে চোখের সামনে ফায়ারড হতে দেখেছি। একবারের জন্যেও এরা রাজনৈতিক সিস্টেমকে গালাগাল দিয়েছে দেখিনি-সবাই কোম্পানী ম্যানেজমেন্টকে গাল পেড়ে নতুন চাকরি খুঁজতে নামে। অবস্থা যখন নিদারুন কঠিন-এক বছর চাকরি না পেয়ে বেকারভাতায় বসে আছে-তখন বাজারকে গালাগাল দেয়। আমার এক কলীগ আমার কোম্পানীতেই তিন বার ফায়ারড হয়েছে-আবার হায়ারড ও হয়েছে।তার কোন হোলদোল দেখি না। বড়জোর ইঞ্জিনিয়ারিং পেশাকে গালাগাল দিয়ে ছেলেকে ডাক্তারী পড়াতে চাইছে। আমেরিকান জীবনের মিউজিক্যাল চেয়ার তার কাছে স্বাভাবিক।
তবে সবার সব কিছু স্বাভাবিক যায় না। লস এঞ্জেলেসে এক মেকানিকের কথা মনে পড়ল-সারাদিন একা একা ক্যাফেটেরিয়াতে কাটাত। একদিন আলাপে বুঝলাম, সদ্য ডিভোর্সী। তার বৌ নাকি খুব সুন্দরী ছিল। তিনমাস চাকরি না থাকায়, দারিদ্র সহ্য করতে না পেরে পালিয়েছে।” নো হানি উইথদাউট মানি”-কথাটা বিরবিড় করে সারাদিন বকত। মন্দার কোপে ডিভোর্স আরো প্রচুর দেখেছি। ছাঁটাই এর জন্যে মর্টগেজ দিতে পারে নি-ফলে দশ বছরের বসত বাড়ি ছেড়ে যেতে হয়েছে-এমন দৃশ্যও আমেরিকানদের মধ্যে অনেক। আসলে ভারতীয়রা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভাল পারফর্মার বলে, মন্দার আঁচ, খুব একটা এখানকার ভারতীয় কমিউনিটির গায়ে লাগে না। বড়জোর অজান্তে কাজের চাপ বাড়তে থাকে।
নিউজার্সির সেই প্রবল রিশেসনে একবার এক আমেরিকান ট্যাক্সিড্রাইভারের সাথে কথা বলছিলাম। সফটোয়ার থেকে ছাঁটাই হয়ে ট্যাক্সি চালাচ্ছে। ওকে জিজ্ঞেস করলাম নিউ জার্সির এই অবস্থার জন্যে ম্যাকগ্রিভি ( তৎকালীন গভর্নর) দায়ী?
ও পরিস্কার বললো -কে ম্যাকগ্রিভি? আমি রাজনীতির মধ্যে নেই। বুঝুন ঠেলা। এই ছেলেটার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা নিউ জার্সিতেই। ভাবুন আমাদের কোলকাতায় কোন বাঙালী সফটোয়ার ইঞ্জিনিয়ার বুদ্ধর নাম শোনে নি। এটা আমেরিকাতে সম্ভব। ছোটবেলা থেকে গাড়ি আর গার্লফ্রেন্ডের বাইরে এরা কিছু জানে না।
তবুও এর মধ্যে পরিবর্তন আসছে। সেই নিউজার্সিতেই এ বছর স্কুলের ছাত্ররা স্কুলের মাস্টারমশাইদের ছাঁটাই এর প্রতিবাদে বনধ করেছে। ফেসবুকে এই স্ট্রাইক অর্গানাইজ করেছিল ষোল বছরের এক কিশোরী। মাত্র তিনদিনের ডাকে হাজার হাজার ছাত্ররা পথে নেমেছিল।
কি অবস্থা এই আমেরিকার রাজনীতির। স্কুলের কলেজের শিক্ষকদের মাইনে দিতে পারে না। আমার অধ্যাপক বন্ধুদের প্রায় ফার্লো ( মানে বিনাবেতনে কয়েকদিন চাকরি) নিতে বাধ্য করাচ্ছে-আর ইরাকে আফগানিস্থানের পেছনে বছরে দেদারসে টাকা ঢালছে। ক্যালিফোর্নিয়াতে ৪০% স্কুলের শিক্ষকদের ছাঁটাই হয়েছে। যদিও সাময়িক-তবুও প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের কষ্টার্জিত ট্যাক্সের টাকা যদি আমাদের ছেলেমেয়ের শিক্ষার জন্যে ব্যয় না হয়ে-ইরাকে আমেরিকান কনট্রাক্টরদের উদরপূর্তিতে যায়-নিশ্চিত ভাবেই বলা চলে, আমেরিকান রাজনৈতিক সিস্টেম একটি বিকল ব্যাবস্থা।
তবুও মন্দার ভাল দিকটাও দেখছি। মন্দার ধাক্কায় আমার বিগত এক দশকের অভিজ্ঞতায় এই প্রথম আমেরিকানরা জিজ্ঞাসা করছে কেন এই মন্দা? রাজনৈতিক সিস্টেমের সমস্যাটা কোথায়। যদিও সি এন এন এবং ফক্স নিউজ, আপ্রান চেষ্টা করছে আসল সমস্যাটাকে ঢেকে সন্ত্রাসবাদ থেকে ভূতবাদ ইত্যাদি জেনোফোবিয়া ছড়িয়ে মানুষের মনকে ঘুরিয়ে দিতে- এই স্যোশাল মিডিয়ার যুগে-তা প্রায় অচল।
বিপ্লব’দা বা অন্য কেউ
আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচন ও তার ফলাফল নিয়ে কোন লেখা কি দেওয়া যায়?
অমর বোস ও ভানু বোস দুজনেই কিন্তু খাঁটি আমেরিকান শিক্ষাব্যবস্থায় মানুষ হয়েছেন। ননীগোপাল বোস আলিপুরের বোমার মামলায় ফেঁসে এদেশে পা না রাখলে মনে হয়না তারা ভারতে থেকে বোস স্পিকার বানাতে পারতেন।
@দিগন্ত,
আমি তাদের আমেরিকান হিসাবেই ধরেছি তোমাকে দেখানোর জন্যে আমেরিকার সেরা ছেলেরা স্টার্টাআপে যায় বা বানায়। মৌলিক গবেষনা এখানকার সেরা ছেলেদের ফার্সট প্রেফারেন্স না।
তাদের ইন্ডিয়ান হিসাবে ধরে এটা পোষ্ট দিই নি।
আলোচনার ভেতর বউ দের প্রসঙ্গ আসলো বলে আবার একটু নাক গলাচ্ছি। মেয়েরা USA থেকে আসতে চায়না তার একটা বড় কারন হল বাচ্চাদের সুস্থতার কথা বিবেচনা করা। টাটকা খাবার আর একটা ভাল দুষন মুক্ত পরিবেশে বাচ্চাদের বেড়ে ওঠা দেখতে যে কোন মা ই স্বস্তি বোধ করবে।
@সাধারণ মেয়ে,
সহমত। আসলে যুক্তি দিয়ে বিবেচনা করলে মায়দের অবস্থান তাঁদের দিক থেকে অযৌক্তিক কখনই নয়। প্রায় সব দিক দিয়েই তো পাশ্চাত্যের জীবন ব্যবস্থা অনেক উন্নত। বরং দেশে ফিরে যাওয়ার পেছনেই শক্ত কোন যুক্তি নেই, শুধু আবেগ ছাড়া 😥 ।
@সাধারণ মেয়ে,
ভাল পয়েন্ট। কিন্ত এদেশে শিক্ষার ত বারোটা বেজে গেছে। এদের ভবিষ্যত কি হবে? সেটা ভাববে না?
@ স্বাধীন, ভবঘুরে,
আমেরিকা, চীন আরথোনিতি-রাজনিতি নিয়ে কতগুলো লিঙ্ক। এমন অনেক আছে।
http://www.youtube.com/watch?v=4mq9FKAm9qs&feature=player_embedded
http://www.youtube.com/watch?v=rPBp3e6t7Ik&feature=related
http://fora.tv/2010/07/28/Niall_Ferguson_Empires_on_the_Edge_of_Chaos
http://www.youtube.com/watch?v=8Laie6uI3a4&feature=related
@Truthseeker,
আপনি দেখছি ইদানিং মন্তব্যে প্রচুর বানান ভুল করছেন। এর রহস্য কি? 🙂
আমরা নিজেরাই যদি অবহেলা করে এভাবে বানান ভুল করা শুরু করি তবে বাংলা ভাষাটার কি হাল হবে ভেবে দেখেছেন? আরো সমস্যার বিষয় হলো – বানান ভুলকে মুক্ত-মনায় খুবই নিরুৎসাহিত করা হয় এবং ভুল বানান যুক্ত মন্তব্য গ্রহণ নাও করা হতে পারে। ভাল থাকবেন। :rose:
@Truthseeker,
লিঙ্কগুলোর জন্য ধন্যবাদ :rose2: । সময় করে দেখবো।
তবে আমি চাই মুক্তমনার সদস্যদের কেউ এই ব্যাপারে কিছু লিখুক ।
মন্তব্য সমূহ ব্যবচ্ছেদ করলে একটা গুরুত্বপূর্ন তথ্য বেরিয়ে আসে। তা হলো- ভারতীয়দের মাঝে বিদেশ দেশে ফিরে যাওয়ার প্রবনতা বেশী। কথাটা সত্য। কিন্তু এর অন্যতম প্রধান কারন বোধ হয় দেশপ্রেম যেটা অনেকেই উল্লেখ করতে ভুলে গেছেন মনে হয়। তাদের মধ্যে এ তাগিদটা কাজ করে যে দেশে গিয়ে দেশ গঠনে সাহায্য করে নিজ দেশকেই বরং একটু বসবাসযোগ্য করে তোলা যাক। যেটা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে তেমন কাজ করে না। কেন করে না সেটা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। আমি অনেক ক্ষেত্রেই দেখেছি- যারা বিদেশে গিয়ে সেটল করেছে তারা অনেক সময় বাংলাদেশে বসবাসকারীদের একটু হীন চোখেও দেখে থাকে আর নিজেদেরকে ভাগ্যবান মনে করে। দেশের প্রতি মমত্ববোধ, দেশপ্রেম এসব না থাকলে একটা দেশ কিভাবে উন্নত হতে পারে তা আমার বোধগম্য নয়। এ প্রসংগে দক্ষিন কোরিয়ার কথা বলা যায়। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে তখনকার কোরিয়ার চেয়ে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের অবস্থা অনেকাংশে ভাল ছিল। তখন কোরিয়ার বহু লোক ইউরোপ আমেরিকাতে পড়তে ও কাজ করতে গেছিল। কিন্তু ষাটের দশকের শেষে ও সত্তর দশকে তাদের অধিকাংশ দেশে ফেরত যায়। আর তারা নিজেদের দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করে। যার ফলাফল সবাই দেখতে পাচ্ছে এখন। ভারতকে যদি পাকিস্তানের সাথে ফালতু প্রক্সি ওয়ার দিতে না হতো, কাশ্মীর ও পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সমূহে অযথা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মোকাবেলা করতে না হতো- তাহলে আজকের ভারত মনে হয় বাস্তবেই আমেরিকাকে টেক্কা দিতে পারত, চীন পড়ে থাকত অনেক অনেক পিছনে। পাকিস্তান প্রক্সি ওয়ার চালাতে গিয়ে ভারতের অগ্রযাত্রাকে ব্যপকভাবে ব্যহত করেছে, আর নিজেরা হয়েছে সর্বশান্ত। তারপরও ধর্মীয় জোশে তাদেরকে সেটাই করতে হবে মৃত্যূ পর্যন্ত। কি সর্বনাশা আদর্শ।
@ভবঘুরে,
আপনার কথা আসলে সর্বাশে সত্য বলেই মনে করি। আসলেই ভারতীয়দের দেশপ্রেমের কথা না বললে তাদের প্রতি অন্যায় হয়, অর্থনৈতিক শক্ত অবস্থান একমাত্র কারন নয়। আমাদের মাঝে যে কোন কারনেই হোক দেশপ্রেমের মাত্রা কম বলেই আমারো মনে হয়েছে। তবে কথা হল, এই ব্যাপারটা আবেগের হলেও কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হয় নিয়মটা এখানেও খাটে।
বাংলাদেশীদের দেশ ছাড়ার প্রবনতা কিন্তু খুব বেশীদিন আগের নয় মোটেই। মাত্র এই সেদিনের। সে তূলনায় ভারতীয়দের মাঝে এই প্রবনতা বহু আগের। ৭০ এর দশকেও কেউ বিদেশ যাচ্ছেন চিরস্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্য শোনা ছিল অতি বিরল ব্যাপার। কে বিশ্বাস করবে যে ৮২ সাল পর্যন্ত কানাডায় যেতে ভিসা লাগত না?
আমরা হঠাত দেশ ছাড়তে দিওয়ানা হয়ে উঠলাম কেন? দেশে চাকরি নেই বলে? সেটা কারন হতে পারে। তবে সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতি তো দিনে দিনে উন্নতিই লাভ করছে। আমার মনে হয় যে অনিশ্চয়তা ব্যাপারটা আমাদের দেশে প্রকট সমস্যা। আমেরিকায় হয়ত সেটা চাকরির, আমাদের দেশে সোশাল সিকিউরিটিতে। যার কারনে অতি ধনীরাও বিদেশে ইমিগ্রেশন নিয়ে রাখে।
@ভবঘুরে,
আমি যেখানে কাজ করি শেখানে দুজন বাংলাদেশি কাজ করে। দুজনেরই Ph.D. degree আছে। তাদের একজনের মতামত হল, যারা বিদেশে success পায়নি এবং failure case, কেবল তারাই বাংলাদেশে ফিরে যায়। আরেকজনের মতামত হল, আমেরিকা বাংলাদেশের থেকে ভাল দেশ, তাই আমেরিকাতে থাকাই ভাল। এরকম মা্নসিকতা থাকলে দেশের উন্নতি হওয়া খুব কঠিন।
বিপ্লব’দা
এই লেখার কথা তো বলেছি, তবে আমি আপনার কাছে থেকে আরো কয়েকটি লেখা চাই আমেরিকা বা চীনের অর্থনীতি নিয়ে। অর্থনীতি বুঝার চেষ্টা করছি। অর্থনীতি সম্পর্কে জ্ঞান খুবই কম। কিন্তু যেটি বুঝি তা হল একটি দেশের চালিকা শক্তি এই অর্থনীতি। দেশের মানুষের মাঝে পরিবর্তন যদি আনতে হয় তবে অর্থনৈতিক পরবর্তনের মাঝে দিয়েই আনতে হবে। আপনি কি কিছুটা আলোকপাত করতে পারেন ম্যাক্রো অর্থনীতির কিছু বেসিক নিয়ে। একটি দেশের অর্থনীতি কিভাবে চলে, কিভাবে চীন এভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, আমেরিকা কেন পেছাচ্ছে। কিভাবে বাংলাদেশের মত জনবহুল দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বাড়ানো সম্ভব বা মানুষের গড় আয় বাড়ানো সম্ভব বা জীবন যাত্রার মান বাড়ানো সম্ভব। কেউ চাইলেই তো আর সেটা সম্ভব না, তাই না? বাঁধা কোথায়? কেন কোন দেশ পারছে আবার কোন দেশ পারছে না। আমাদের দেশের টাকার মান কেন এভাবে দিনের পর দিন কমে যাচ্ছে? এর শেষ কোথায়? এই সব গুলো বিষয় নিয়ে এক/একাধিক লেখা দিতে পারেন। খান একাডেমি ইদানিং এই সব বিষয় নিয়ে বেশ কিছু লেকচার ছেরেছে ইউটিউবে। আমি দেখেছি, তারপরেও মনে হয়েছে আপনি আরো বিস্তারিত লিখতে পারবেন। লেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
@স্বাধীন,
আমি অর্থনীতিবিদ না। তাই এই অনধিকার চর্চা করবো না। এর জন্যে এই ফোরামেই অনেক অর্থনীতিবিদ আছেন। তারাই লিখবেন।
আমি বহুদিন থেকেই বলে আসছি মুক্তমনাতে ধর্মকে যেভাবে অধিকাংশ লোক দেখে সেটা ভুল। ধর্মকে সমাজ বিজ্ঞানের অংশ হিসাবেই দেখতে শিখতে হবে। তাছারা বাংলাদেশের ব্লগ গুলোতে রাজনীতি বিজ্ঞান [ যেটা হয় সেটা রাজনৈতিক দলাদলির কিছু লেখা] এবং অর্থনীতির চর্চাও খুব কম হয়। এটা পশ্চিম বঙ্গের দিকের ফোরামগুলোতে অনেক বেশী হয়। এই ব্যাপারে মুক্তমনা অগ্রনী হলে খুব ভাল হয়। অনেকেই ধর্মের প্রতি রাগে মুক্তমনাকে আল্লার হেগো পোঁদ পরিস্কার করার টিস্যুপেপার বানাতে চাই-এই ধরনের প্রবণতা থেকে মুক্ত হতে গেলে আরো বেশী সমাজবিজ্ঞান নির্ভর চর্চা চাই। তাই এখানে আমি আরো বেশী অর্থনীতির এবং রাজনীতির লেখা দেখতে চাই।
@বিপ্লব পাল, :yes: :yes: :yes:
ধর্ম নিয়া এক তরফা গালিগালাজ করা এখন এমন কোন ব্যাপার নয়, খুব বেশী কিছু নুতন আর বলার নেইও।
অর্থনীতি আসলেই খুব গুরুত্বপূর্ন বিষয়। আমিও এ নিয়ে সোজা কথায় নন-এক্সপার্ট কিন্তু যারা অভিজ্ঞতা থেকে কিছুটা বোঝেন তাদের কথা শুনতে চাই। আমিও ভাল জানি আপনি এ কাজটা ভালই পারবেন। অন্তত কেন আমেরিকার পতন হচ্ছে বা চীন ভারত এগুচ্ছে এসব ভাল ব্যাখ্যা করতে পারবেন।
আমেরিকার অর্থনীতির এই বিশাল পতনের ব্যাপারে দেশের এত এত ডাকসাইটে অর্থনীতিবিদেরা কি করেছিলেন? তাদের ভুমিকা নিয়ে যদি কিছু বলেন…আমার তো সরল মনে মাঝে মাঝে মনে হয় যে অর্থনীতিবিদেরা আসলে কাগুজে বাঘ ছাড়া তেমন কিছু ননঃ)।
@আদিল মাহমুদ,
অর্থনীতি একটি এম্পিরিক্যাল মডেলিং এর বিজ্ঞান। এবং এই সাবজেক্টটি যে খুব বেশী কার্যকর তা আমি মনে করি না-ঠিক আপনি যেকারনে বলেছেন সেই কারনেই। আসলে ফাইনান্সিয়াল মার্কেটের বুমের জন্যে এটাকে গুরুত্বপূর্ন করা হচ্ছে -কিন্ত সেই শুভঙ্করের ফাঁকি অব্যাহত।
@বিপ্লব পাল,
অভিযোগ তো দেখি খুবই মারাত্মক, যেখানে আপনি প্রায় আমার কথায় সায় দিচ্ছেন।
অর্থনীতিবিদেরা মনে হয় অন্য বস্তুগত বিজ্ঞানীদের মত কিছু আবিষ্কার করেন না যা কাজে লাগিয়ে নুতন বা উন্নত প্রোডাক্ট বানানো হয়। এই ফিল্ড কাজ করেই মনে হয় ভিন্ন ভাবে।
কোন দেশ অর্থনীতিতে উন্নতি করছে মানে মনে হয় না অবধারিতভাবে সে দেশে বড় বড় অর্থনীতিবিদ আছে, এবং তারাই তত্ত্ব দিয়ে দেশকে উন্নত করছে।
অর্থনীতিবিদেরা দূঃখজনক ভাবেই সারা জীবন দেখে এসেছি ঘটনা ঘটে যাবার পরে মাঠে নামেন 🙂 ।
@বিপ্লব পাল,
অর্থনীতি নিয়ে লিখতে হলে অর্থনীতিবিদ হতে হবে নাকি :-Y । তাহলে তো বিবর্তন নিয়ে লিখতে গেলে বিবর্তনবিজ্ঞানীও হতে হবে, আর ধর্ম নিয়ে লিখতে গেলে আগে মোল্লা হতে হবে 😀 ।
না পিছলাইয়া লিখেন। আপনার যা জ্ঞান আছে সেটা দিয়ে খুব সহজেই কয়েকটা লেখা নামিয়ে দিতে পারবেন। আর এই ফোরমে অর্থনীতিবিদ কারা আছেন :-/ ? আমি তো জানি না। কেউ থাকলে আওয়াজ দিন, দয়া করে 😥 ।
@স্বাধীন,
নারে ভাই। আমাদের দিকের ফোরামে এত সব বড় বড় অর্থনীতিবিদ আছে আমি লিখতে ভয় পায়-যদিও দুচারটে মনের কথা আছে। তার থেকে দর্শনই ভাল। যেকেও পড়ে শিখতে পারে। বিবর্তন নিয়ে সিরিয়াস প্রবন্ধ আমি কখনো লিখি নি। তাই অই ব্যাপারে বলতে পারব না। প্রকৃতি বিজ্ঞান, রাষ্ট্রনীতি বিজ্ঞান ও সাহিত্যের বাইরে আমার জ্ঞান খুব সীমাবদ্ধ। তাই আর বেশী অনধিকার চর্চা করে লাভ নেই।
@বিপ্লব পাল,
আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন না আসলেই সিরিয়াস বুঝতে পারছি না 😀 । আপনার কথা শুনে পাশের বিষয় বিভাগ থেকে “অর্থনীতি” বিভাগ পাতা খুলে দেখলাম। সেখানে লেখক বলতে আপনি, আমি, রণ’দা। কিন্তু কোনটাই মূল অর্থনীতি নিয়ে নয়। তাহলে এই ফোরামে বড় বড় অর্থনীতিবিদের লেখাগুলো কই। লেখা কয়েকটার লিঙ্ক দিন, আমি না হয় ওনাদেরকেই চেপে ধরি 😀 । আমি তো মুক্তমনায় যোগদানের পর কারোর লেখা পড়েছি বলে মনে পরে না।
ডঃ বিপ্লব পালের শক্ত হাতের শক্ত লেখা। পড়তে বেশ ভাল লাগে।
বিভাগঃ “আন্তর্জাতিক”।
এজাতীয় লেখায় সহমত বা ভিন্নমতের প্রচুর সুযোগ থাকে। লেখাটি আমার কাছে হতাশাব্যাঞ্জক মনে হয়েছে। অনেক ব্যাপারেই আমি একমত পোষণ করতে পারি না কারণ ব্যক্তিগত ভাবে আমি কম হতাশগ্রস্ত লোক।
তবে এটা দারূণ বলেছেন
ধনতন্ত্রই আমেরিকার এত জৌলুস এনেছে। তারই লোভে দেশ ছেড়ে এদেশে ঘর বেঁধেছি। এখানকার হাইওয়েতে যখন গাড়ী চালাই তখন মনে হয় বিলিয়ন ডলারের পুরো হাইওয়েটাই আমার। বিল গেইটস নিজে বিলিয়নিয়ার হয়েছেন। হাজার লোককে মিলিয়নার বানিয়েছেন। দেশে বিদেশে হাজার হাজার লোক ভাল ভাল চাকুরী পেয়েছে। ঘরে ঘরে কমপিউটার পৌঁছে গেছে।
ধনতন্ত্রই জ্ঞান-বিজ্ঞান, প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও বিকাশ ঘটিয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার গুনগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে। আমেরিকা নতুন পন্য উদ্ভাবনের পেছনে লেগে থাকে। বিশ্বের বাজারে বিক্রি করে অর্থ আয় করে। বাকী বিশ্বের ক্রয় ক্ষমতা না থাকলে আয় বাড়ে না। তাই নিজের ব্যবসায়িক তাগিদেই বাকী বিশ্বকে ঋণ দিয়ে হলেও উন্নত করার দরকার হয়।
গত দশকে আমেরিকায় নতুন উদ্ভাবন তেমন চোখে পড়ে না সেলফোন ছাড়া। সেলফোন টাকা কামাচ্ছে। লোকে চাকুরী পাচ্ছে। সেলফোন টেকনোলোজী অন্যের হাতে যাওয়ার আগেই আমেরিকার দরকার নতুন অন্য কিছু উদ্ভাবন। নতুন উদ্ভাবনটা কী তা আমি জানি না। IBMও জানত না পৃথিবীতে একদিন পাঁচটির বেশী কমপিউটার থাকবে। পনের বছর আগে ভাবতে পারিনি সবার হাতে সেলফোন থাকবে।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
🙂
বড় আশা করেছিলাম এত হতাশার মাঝে কেউ এমন কিছু বলবেন। যত যাইই বলি না কেন, আমেরিকার মায়া ত্যাগ করা বড়ই কঠিন। কারন খুবই সোজা। সবাই চায় ভাল থাকতে। আবেগের কারন বাদ দিলে একটি চাকরি হাতে থাকলে আমেরিকার মত দেশ আর আছে কিনা আমার সন্দেহ আছে।
একই মেন্টালিটি মনে হয় সব মানুষের মাঝেই কাজ করে, চরম পন্থী মোল্লা আর আমরা সবাই এক্ষেত্রে একই দলের 🙂 ।
@আদিল মাহমুদ, :yes:
@আদিল মাহমুদ,
বাংলা ব্লগে আমেরিকার পক্ষে নিরপেক্ষ ওকালতি করার মতো সাহস নৃপেন্দ্র সরকারের আছে :yes: , তাই বলে আর কারো হবে এমন আশা করা বৃথা। 🙁
@ব্রাইট স্মাইল্,
আমি আরো আগেই করেছি দেখেন।
আমেরিকা আমেরিকাই।
@আদিল মাহমুদ,
২০০৩ সালে আমার স্ত্রী এই দেশে না থাকতে চাইলে, আমি ফিরেই যেতাম-নিজের আই আই টিতে অধ্যাপক হয়ে ফেরার পথ তৈরীই ছিল। মেট্রো জীবনে আমেরিকা আরামের কিন্ত ভারতে, বিশেষত আই আই টির দিনগুলিই আমার অনেক বেশী ভাল লেগেছে। ওখানেও ট্রাফিক কিছু ছিল না-খুব ভাল নেটোয়াক কানেকশন ছিল-পরিস্কার জায়গা, দুর্দান্ত সব রেস্টুরেন্ট এবং দারুন লাইব্রেরী।
আমার অনেক বন্ধুই ফিরে গেছে এবং তারা ভারতে ভালোই আছে। আমেরিকার কিছু জিনিস নিশ্চয় মিস করছে আবার দেশের কিছু কিছু জিনিস ও পাচ্ছে। আমাদের বৌরা দেশে ফিরতে চাই না-নইলে আমি সহ আমার আরো অনেক বা অধিকাংশ বন্ধুই ফিরত। আমিও ফিরব আর কয়েক বছরের মধ্যেই।
আমেরিকাতে প্রাপ্তি বলতে অভিজ্ঞতা-কিভাবে প্রযুক্তি এবং ব্যাবসার মেলবন্ধন সম্ভব। নতুন আইডিয়াকে কিভাবে ব্যাবসাতে পরিণত করতে হয়। আর বেশ কিছু ভালো জায়গাতে ঘোরা। ক্যালিফোর্নিয়াতে চার বছর ছিলাম-গোটা রাজ্যটা ইঞ্চি ইঞ্চিতে ঘুরেছি। ওটা দারুন জায়গা-তবে নিউজার্সি, নিউয়ার্ক বা ডিসিতে একই অভিজ্ঞতা না।
@বিপ্লব পাল,
দেশ না বিদেশ এটা আসলে জটিল প্রশ্ন। কার কাছে কোন ব্যালেন্সে কোনটা বড় মনে হয় পুরোপুরী ব্যাক্তিগত। অভিজ্ঞতা থেকেই দেখেছি যে ভারতীয়দের মাঝে ফিরে যাবার হার আমাদের বাংলাদেশীদের থেকে অনেক বেশী হয়। তাতে অবাক হবারও কিছু নেই। আমি ভারতে যাইনি কখনো, তবে বাংলাদেশে অন্তত ফিরে যাবার ভাবনা মনে কখনো চিন্তাও করি না; দূঃখজনক হলেও সত্য।
আমার কাছে বিদেশ ভাল লাগে পরিছন্ন জীবনের জন্য, পদে পদে মিথ্যা কথা দুই নম্বরীর আশ্রয় নিতে হয় না, মামা ধরতে হয় না মূলত এইজন্য। আর মোটামুটিভাবে সব মানুষকে অবিশ্বাসের থেকে বিশ্বাসই করা যায় বেশী। আমাদের অঞ্চলে টাকা থাকলে হয়ত সুখে থাকা যায় তবে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে হয় একটা খুব সীমাবদ্ধ শেলের ভেতর।
@আদিল মাহমুদ, :yes: :yes:
@আদিল মাহমুদ,
হয়ত ঠিক। ভারতের বেতনকাঠামো খুবই ভাল। আমেরিকাতে আমাদের ধারে চলতে হয়। আর ভারতে আমার তো মনে হয় বেতনের টাকা খরচ করে শেষ করতে পারে না।
তারপরেও কথা আছে। আমি ছোট্ট কমিউনিটিতে বাস করি। চার ভারতীয় দেশ প্রেমে গদগদ হয়ে দেশে যেয়ে আবার ফেরত এসেছেন। আর একজন কখনও আসবেন না ভেবে ক্রেডিট কার্ডে ঝামেলা করে দেশে গেছিলেন। অনেক চেষ্টা করেছেন। আসতে পারেন নি। যারা ফেরত এসেছেন তাদের দুজন অবসরে আছেন। আমেরিকার কোন একটা জিনিষ ভাল তাদের কাছে এ পর্যন্ত শুনিনি। অবসর ভাতা নিয়ে দেশে থাকতে পারতেন। কিন্তু তা করছেন না। আমেরিকার পিন্ডি চটকাচ্ছেন প্রতিটি সামাজিক আড্ডায়।
@নৃপেন্দ্র সরকার, আপনার মত অভিজ্ঞতা আমি এখনও পাইনি, তবে পেলে অবাক হবনা। ভারতীয়রা আমেরিকায় এসে আমেরিকার পিন্ডি চটকাতে খুবই অভ্যস্ত।
@দিগন্ত,
তাহলে কি করা উচিত ছিল? কৃতজ্ঞতায় আমেরিকার সব কুকর্ম মেনে নিতে হবে?
@বিপ্লব পাল, ফেয়ার এনালিসিস করা উচিত, অর্থাৎ দেশের খারাপ ও বিদেশের খারাপ দুইই বলা উচিত।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
হ্যা, তেমন কেসও প্রচুর আছে। এক পর্যায়ে অনেকেরই দেশপ্রেম তীব্র হয়ে ওঠে, বীরের মত সব ছেড়ে বুক ফুলিয়ে চলে যান,এবং কিছুদিন পর অনেকে আবার ব্যাক টু দ্যা প্যাভিলিয়ন।
তবে তারপরেও আমার দৃঢ় বিশ্বাস ভারতীয়দের দেশে ফেরার হার আমাদের থেকে অনেক বেশী। অবাক হবারও কিছু নেই। একে শক্তিশালী অর্থনীতি,তার উপর সোশাল সিকিউরিটি আমাদের থেকে অনেক ভাল। চাকরির বাজার খুবই ভাল, চিকিতসা, শিক্ষা, এসব কিছুই অতি উচ্চমানের। আমাদের দেশে আজকাল যারই সামর্থ্য আছে কানাডায় ইমিগেশন নিয়ে রাখছে, বাবা মা হয়ত থাকবে না। শুধু সন্তানদের ভবিষ্যত ভেবে এই পথ বেছে নেওয়া। মা হয়ত ছেলেমেয়ে নিয়ে এখানে থাকেন, বাবা দেশে। ধনী পরিবার, তাও দেশের অনিশ্চয়তা ভীতি তীব্রভাবে আছে। এমন পরিবারের সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে।
ভারতে নাকি শুনেছি আজকাল ছেলে বিদেশে থাকে শুনলে ভদ্র ঘরের লোকে মেয়ে দেয় না 🙂 , সত্য কিনা জানি না।
@আদিল মাহমুদ,
এটা খুব সত্য। ভারতে এত ভাল চাকরীর বাজার, আর আমেরিকাতে এত অনিশ্চয়তা, ছেলে আমেরিকাতে চাকরী করছে শুনলে মেয়ের বাবারা আর পাত্তা দিচ্ছে না। আমার অনেক বড় বড় চাকুরীরত বন্ধু অনেক কষ্টে দেশে বিয়ে করতে পেরেছে। আমেরিকাতে চাকুরীরত ভারতীয়দের বিয়ের বাজারে এখন দেশে আর কেও পাত্তা দেয় না।
এই সুযোগে তাহলে একটা ছোট্ট ঘটনা বলি। আমার এক বন্ধু-এদেশে কম্পুটার সায়েন্সে পি এই চ ডি করে-বেশ একটা বড় বিখ্যাত কোম্পানীতে চাকরিতে ঢোকে। তার বাবা মায়ের ধারনা ছেলে অনেক কেঊ কেটা হয়েছে-বিজ্ঞাপন দিলেই অনেক মেয়ের বাবারা আসবে। সুতরাং বাজার দর না বুঝেই তার বাবা মা সুন্দরী এবং ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার মেয়ের জন্যে বিজ্ঞাপন দিলেন। কেও এলো না। তার পরের বিজ্ঞাপনে লিখল, সুন্দরী হলেই চলবে। তাতে কিছু মেয়ে এল-কিন্ত ছেলের দেশে ফেরার প্ল্যান নেই জেনে, তারাও কাটিয়ে দিল। এই ভাবে তার জীবনে পাঁচটা বছর বেড়িয়ে গেল। শেষ মেস তার এক পিশী সম্মন্ধ করে মেয়ে দেখে দেয়। এটা আমার দেখা চাক্ষুশ দূরাবস্থা।
@বিপ্লব পাল,
আমাদের অবস্থা এখনো এতটা গুরুতর হয়নি 🙂 । তবে বিয়ের বাজারে প্রবাসী ছেলের দর আর আগের মত আর ক্রেজ পর্যায়ে নেই এটা ঠিক। তবে তার জন্য আমেরিকার অনিশ্চয়তা বা মন্দা এসব কোনভাবেই দায়ী নয়।
তার জন্য মূলত দায়ী বেশ কিছু ক্ষেত্রে পাত্র পক্ষের অসততা। বহু মেয়ে বিয়ের পর বিদেশ এসে আবিষ্কার করে যে তার ইঞ্জিনিয়ার বলে দাবীদার স্বামী আসলে ম্যাকডোনাল্ডস এ কাজ করে। সাবমেরিন ইঞ্জিনিয়ারের কাহিনী তো ক্লাসিকের মত।
এই কারনে সামগ্রিকভাবে প্রবাসী পাত্র শুনলে মানুষ অনেক দেখে শুনে আগায়।
ভারতের ইমিগ্রেশন পাবার কোন উপায় আছে???
@আদিল মাহমুদ,
“ভারতে নাকি শুনেছি আজকাল ছেলে বিদেশে থাকে শুনলে ভদ্র ঘরের লোকে মেয়ে দেয় না”
– ঘটনা সত্য। দেখেন এ জন্যই আমার বৌ বাংলাদেশের।
@দিগন্ত, :laugh:
বাংলাদেশী শ্বশুড় টের পায় নাই 🙂 ।
@বিপ্লব পাল, মেয়েরা কেন দেশে ফিরতে চায় না এ নিয়ে কিছু লিখুন। এটা একটা কমন সমস্যা এ দেশে।
ব্যবসা ব্যাপারটা আমেরিকানরা ভাল বোঝে, এ বিষয়ে শ্রদ্ধা জানানো উচিত। আসলে অর্থনীতিটাই এমন এ দেশে, জিনিস বিক্রি না করতে পারলে উঠে যাও।
@দিগন্ত,
আমার মনে হয় মহিলারা বেশী বিচক্ষন তাই 🙂 ।
তবে ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা বলে যে কারনগুলি হল বিদেশের জীবনে মহিলা হিসেবে প্রায় পুরুষের সমান স্বাধীনতা, মাথার ওপর শ্বশুরকূলের ছড়ি ঘোরানোর হাত থেকে রেহাই পাওয়া……
@দিগন্ত,
তাই কি? তাহলে আস্তে আস্তে সব আমেরিকান ব্যাবসা ভারতীয়দের হাতে এখানে চলে যাচ্ছে কেন? আমি এই ব্যাপারে সহমত না।
আমেরিকানরা মার্কেটিং খুব ভাল জানে। জল বেচতে একমাত্র আমেরিকানরাই পারে।
@বিপ্লব পাল, আপনি বলুন তো কতটা কি ব্যবসা ভারতীয়-চিনা-এশিয়ানদের হাতে গেছে?
@দিগন্ত,
[১]
হলিউডে অনিল আম্বানীর রিয়ায়েন্স এন্টারটেইনমেন্ট এবং সুব্রত রায় এর কোম্পানী সাহারা মিডিয়া বিরাট টাকায় স্টুডিও কিনছে-সিনেমা চেন কিনছে।
হলিউডের মালিকানার বিরাট অংশ ভারতীয়দের হচ্ছে বা হয়ে যাবে
[২] এখানে হোটেল মালিকদের ৫০% এর বেশী গুজরাতি
[৩] স্টিল শিল্পে গোটা বিশ্বেই এখন একাধিপত্য মিত্তল আর টাটাদের
[৪] অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ম্যানেজমেন্টের বিশাল অংশ ভারতীয়-সে ইনটেলই হোক বা সিসকোই হোক।
লিস্ট অনেক লম্বা হতে পারে।
@বিপ্লব পাল,
১) আমেরিকার (বা বিশ্বের) মেজর সিক্স (টাইম ওয়ার্নার, ভায়াকম, নিউস কর্প, সোনি, ওয়াল্ট ডিসনি ও জিই) স্টুডিওর কেউই ভারতীয় মালিকানায় নেই।
২) একইভাবে আমেরিকার (বা বিশ্বের) দশটি মেজর হোটেল চেনের কোনোটিও ভারতীয়দের নয়।
৩) স্টিল শিল্পের রমরমার একটা বড় কারণ ভারতে আকরিক লোহার (বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম সঞ্চয়) প্রাপ্যতা। তাছাড়া এই দেশে লেবার ল’ পেরিয়ে স্টিল শিল্প চালানো দুষ্কর, যে কারণে টেক্সটাইল বা গারমেন্টস শিল্প আমেরিকায় বা উন্নত বিশ্বে নেই, সেকারণেই ইস্পাত শিল্পও উন্নত বিশ্ব থেকে সরে যাবে আস্তে আস্তে। এটা ভারতীয়দের ব্যবসা বুদ্ধির জন্য নয়, সে ধরলে আরবদেরও ভাল ব্যবসায়ী বলতে হয়।
৪) অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বলতে আপনি কি বুঝছেন সেটা আমি বুঝলাম না। নোবেল নমিনেশনের লিস্টে এখনও স্বল্প কিছু ভারতীয়র নামও দেখি না। এপ্ল্যায়েড দিকে তবু কিছু ভাল কাজ ভারতীয়রা করেছে, কিন্তু মৌলিক গবেষণা?
@দিগন্ত,
১) আমেরিকার (বা বিশ্বের) মেজর সিক্স (টাইম ওয়ার্নার, ভায়াকম, নিউস কর্প, সোনি, ওয়াল্ট ডিসনি ও জিই) স্টুডিওর কেউই ভারতীয় মালিকানায় নেই।
ঃ
হলিউডে ভারতীয় বিনিয়োগ নিয়ে এটা পড়ে নাও। উপরোক্ত সব মিডিয়া কোম্পানী গুলিই ধুঁকছে এবং বিনিয়োগের জন্যে ভারত আর চীনের দিকে তাকিয়ে গত দুবছর।
-মানে? হোটেল চেন গুলি চলে ফ্রাঞ্চাইজিতে। সেগুলো চালাচ্ছে কারা?
এখানে দেখ সংখ্যাটা পাবে। 42% আমেরিকান হোটেল বিসনেস ভারতীয়দের।৩)
ঃ এটাও ভুল তথ্য। মিত্তল দের স্টিলের ১০% ও ভারত থেকে আসে না।
ওদের ৬০% পূর্ব ইউরোপের। সুতরাং এই যুক্তি ভিত্তিহীন।
আমরা বিতর্ক করছি ব্যাবসা নিয়ে-মৌলিক গবেষনা নিয়ে না।
এবং ফোর্বস ম্যাগাজিনের মতে উদ্ভাবনি প্রযুক্তি স্বর্গরাজ্য সিলিকন ভ্যালীতে আমেরিকান ভারতীয়রাই রাজত্ব করছে-ওখানে ভারতীয়দের অবদান প্রায় ২৭০ বিলিয়ান ডলারের নতুন শিল্প সৃষ্টি।
@বিপ্লব পাল,
১) বিনিয়োগের জন্য অবশ্যই ঝুঁকবে (আগেই বলেছি আরবদের দিকেও একই কারণে ঝোঁকে)। টাকার কি জাত হয়? টাকা যেখানে বিনিয়োগ সেখান থেকেই আসবে। সি-ই-ও সহ টপ ম্যানেজমেন্টে ভারতীয় কতজন সেটাই প্রশ্ন।
২) টাইমসে এর আগে প্রবাসী ভারতীয়দের নিয়ে এরকম একটা আর্টিকেল দেওয়া হয়েছিল যা সম্পূর্ণ ভুল ছিল। সুতরাং সূত্রবিহীন এরকম কিছু আমি মানছি না আপাতত। তবে ফ্র্যাঞ্চাইসিতে গুজরাটিরা ইনভেস্ট করে খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ করেছে বলে মনে হয় না। আমেরিকার হোটেল ব্যবসায় ওভারসাপ্লাই বড় সমস্যা।
৩) অবশ্যই পূর্ব-ইউরোপের তুলনায় ব্যবসায় ভারতীয়রা এগিয়ে। সুতরাং আমেরিকা-পশ্চিম ইউরোপের ব্যবসা নয়, পূর্ব-ইউরোপের ব্যবসা কিনেছে।
৪) আমি যেটা জানি সেটা হল – “7% of valley hi-tech firms are led by Indian CEOs.” (রাজত্ব হল না ঠিক) এবং এই ৭% এর মধ্যে বড় কোম্পানীর সংখ্যা খুবই কম। এবার ভাবুন, ভারতের ক্রিম ছাত্ররা (এর পরে এরা আমেরিকান এডুকেশনও নেয়) এসে এখানে পাল্লা দিচ্ছে আমেরিকার গড়ের সাথে, অর্থাৎ এই ছাত্ররা ভারতের টপ ১ পার্সেন্টাইলের মধ্যে আসে। এখন যদি আমি আমেরিকার টপ ১ পার্সেন্টাইল বনাম ভারতের টপ ১ পার্সেন্টাইলের মুখোমুখী তুলনা করি তবেই তা দুই দেশের শিক্ষাব্যবস্থার তুলনার জন্য কার্যকর হবে। এখন সমস্যা হল আমেরিকার টপ ১ পারসেন্টাইলের মধ্যে খুব কম ছাত্রই সফটওয়ারে যেতে ইচ্ছুক, টপ ৫ পারর্সেন্টালের মধ্যেও কতজন যেতে চায় তাও সন্দেহ আছে। তারা যেতে চায় মৌলিক গবেষণায় বা নিজস্ব ব্যবসায় (বা ডাক্তারীতে)। তাহলে শিক্ষাব্যবস্থার তুলনা এই দিয়ে কিভাবে হতে পারে?
@দিগন্ত,
সবাই ফ্রন্ট ফেসিং এর জন্যে আমেরিকান সিইও রাখে-পেছনে তারা থাকে।
আমি যত স্টার্টা আপে কাজ করেছি-ভারতীয়দের শেয়ার ছিল বেশী কিন্ত্ সি ই ও ছিল আমেরিকান। সুতরাং সি ই ওর সংখ্যা দিয়ে এই হিসাব করা উচি্ত না। যদিও ইন্দ্র নুই বা বিক্রম পন্ডিতের মতন ভারতীয় সেলিব্রিটি সি ই ও আছে। এই মাপটা হওয়া উচিত কজন “ফাউন্ডার” স্টাটাস পাচ্ছে বা
অংশীদ্বারিত্ব পাচ্ছে। অংশীদ্বারত্বের হিসাবে আমার জানা সংখ্যাটা ৩০% এর বেশী্। আর ফাউন্ডার সংখায় ২০-২৩ এর কাছে।
আর একথা মানতে রাজী না, যে স্টার্ট আপে আমেরিকার সেরা ছাত্ররা যায় না। এম আই ্টি বা হার্ভাডের সেরা ছাত্ররা স্টার্ট আপেই যায়। পদার্থবিদ্যায় বা মৌলিক গবেষনাতে এখানকার সেরা ছাত্ররা যায় সেটা কোথায় পেলে? আমি যদ্দুর জানি এদেশের ছাত্রদের মধ্যে
ফিজিক্স পড়াটা ১৭ তম চয়েসে আসে।
আমার অভিজ্ঞতা বলছে স্টার্ট আপই সেরা ছাত্রদের আসল যুদ্ধ ক্ষেত্র।
মৌলিক গবেষনা না। একমাত্র স্টার্ট আপেই একসাথে মেধা,
বুদ্ধি, ধৈর্য্য, পরিশ্রম, ভিশন ইত্যাদি সকল গুনগুলির কঠিন পরীক্ষা হয়।
বোস স্পিকারের অমর বোসের ছেলে (ভানু বোস) এম আই টিতে পি এই চডি করার পর বাবার বিলিয়ান কোম্পানিতে না কাজ করে নিজের গবেষনা থেকে
নিজে কোম্পানী বানিয়েছে। যার জন্যে হার্ভাডে বা এম আই টিতে
ছাত্রদের স্টাটাস হচ্ছে কার আবিস্কার সফল ব্যাবসার জন্ম দিতে পেরেছে।
খুব ভাল ব্যাপার, এটা আস্তে আস্তে আই আই টি, আই আই এমের ছাত্রদের মধ্যেও ঢুকছে। আই আই টিআন দের
মধ্যে বিশ্বের সেরা ৫০০ কো্ম্পানীতে উচ্চপদে আসীন এত এত ছাত্র্র
আছে, এগুলো কোন স্টাটাসই না। আমি আই আই টি এলুমিনি মিটে গেলে
চারি দিকে বড় বড় কোম্পানীর ডিরেক্টর, ভিপি ইত্যাদি দেখি এবং তার
পাশেই অনেকে অনেকে আছে যারা নিজেদের কোম্পানী দাঁড় করিয়েছে।
আস্তে আস্তে দ্বিতীয় শ্রেনী্র সন্মান এবং সেন্স অব এচিভমেন্ট অনেক বেশী
বলে আমরা ধরে নিচ্ছি-কারন কর্পরেটে হাই পজিশন বেসিক বুলশিট ছারা
কিছু না-এটা আর কারুর জানা বাকী নেই।
@দিগন্ত,
লেখার কি আছে। এখানে অনেক বেশী স্বাধীনতা-সমাজকে মানার প্রশ্ন নেই। তারা এই স্বাধীনতাকে উপভোগ করে।
@বিপ্লব পাল,
সহমত। মেয়েরা/বৌয়েরা দেশের নানান ঝামেলার কথা চিন্তা করেই এদেশে থাকতে চায়। এখানে যে পরিমান ব্যক্তি স্বাধীনতা পায় দেশে সেরকম হয়তো পাবে না সেটা চিন্তা করে। আমার নিজের পিএইচডি শেষের পথে। বুয়েটের চাকুরী আছে, যে কোন সময়ে ফিরে যেতে পারি। আমার একান্ত ইচ্ছে চলে যাবার। বুয়েটের ছাত্র জীবন, চাকুরী জীবন সব সময় উপভোগ করেছি। এতো আরামের জীবন কোথাও পাওয়া যাবে না বলে মানি। এই দেশে অনেক কিছুওই আছে, কিন্তু সকল কিছুর জন্য পরিশ্রমও আছে। সারাদিনই খেটে যাচ্ছি। চাকুরী, বাচ্চাদের সময় দেওয়া, দাওয়াতে সময় দেওয়া সব মিলিয়ে নিজের জন্য সময় খুঁজে পাইনা বলে মনে হয়।
নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। সিদ্ধান্ত নেওয়া বড় কঠিন কাজ যখন সংসার থাকে। একা থাকতাম, চোখ বন্ধ করে চলে যেতাম। এখন সবার জন্য চিন্তা করতে হয়। বৌয়ের না যাওয়ার চাপ তো আছেই। খুবই একটি ঝামেলার কাজ এই সিদ্ধান্ত নেওয়া। জীবন তো আবার একটাই :-X । দু’তিনটে হলে কতই না আরাম হতো 😀 । এক জীবনে ব্যাচেলর হিসেবে পার করতাম, আরেক জীবনে বিয়ে করে। এক জীবনে দেশে থেকে পার করতাম আরেক জীবনে বিদেশে। এক জীবনে শুধু খেলাধুলাকে পেশা হিসেবে নিতাম, আরেক জীবনে মাস্টারী 😀 । সাথে কি আর বেহেস্তের লোভে সবাই দৌড়ায় 😛 ।
@স্বাধীন,
প্লানিং এবং এক্সিকিউট করার মত কমান্ড-কন্ট্রোল থাকলে আপনি যেরকম চাচ্ছেন তা অনেকাংশে সম্ভব। সবার আগে আপনাকে স্থির করতে হবে আপনি কি চান এবং আপনার কন্সট্রাক্ট করা থিয়েটার প্লানিংয়ে আপনার অবস্থানটা ঠিক কিরকম ও কোথায়। ১৯৭৮ সালে বিদেশে পারি দেবার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে গিয়েছি ৪ বার। কিন্তু এক জায়গায় না থেকে নিজেকে মোবালাইজ করেছি ট্টান্স-আটলান্টিকের বিভিন্ন লোকেশনে এবং এই স্ট্রাটেজী এখন পর্যন্ত অপারেশনাল ও ট্যাকটিকাল লেভেলে বলবৎ আছে। তবে, এখন পর্যন্ত ‘জীবিত’ থাকায় মিশন কন্ট্রোল অনেকটা সহজ যে হয়েছে তা স্বীকার করতেই হয়।
@সংশপ্তক,
আসল কথাটি বললেন সবার শেষে এসে 😀 । জীবিত থাকলে অনেক কিছুওই করতে পারতাম এটা ঠিক। কিন্তু ওই যে আমি বলেছি এক সময় জীবিত থাকতে থাকতেও অনীহা চলে আসবে। জিনগত যে তাড়না আছে সেটাই আপনাকে বুঝাবে যে জীবনটা তোমার অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে, তাড়াতাড়ি মৃত হও। তাই আসলে এক জীবনে সব পাওয়া সম্ভব নয়, সে ধরনের চিন্তাও করা উচিত নয়, এটা যত তাড়াতাড়াই উপলব্ধি করা যায় ততই ভালো 😛 ।
@স্বাধীন,
যেতে চাইলে আগেই চলে যান, কাফের নাসারার দেশের মোহময় মায়ার জালে ভুলবেন না 🙂 । একবার গেড়ে বসলেই সারা জীবনের জন্য ফেঁসে যাবেন। খুব সাবধান।
@স্বাধীন,
জীবনটাত এক্সিডেন্ট। একাধিক জীবন বা দীর্ঘ জীবন থাকলে অনেক কিছু করা যেত। তবে সে খেদ নেই। জীবনে না পাওয়াটাই আসল বোধিবৃক্ষ।
@বিপ্লব পাল,
এটা ঠিক যে ভারত উন্নতি করছে, কিন্তু শুধু সফটওয়্যার টেকনোলজি আর কিছু সফল ব্যবসা বানিজ্য দিয়ে গোটা দেশের ক্ষুধা, দারিদ্র, করাপশন, বুরুক্রেসি দুর করে, অপর্য্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার আমুল পরিবর্তন করে সমাজের লিভিং স্টেনডার্ডকে আমেরিকার সমকক্ষে নিয়ে আসা এখনও সুদুর প্রসারী ব্যাপার বলে মনে হয়।
@ব্রাইট স্মাইল্,
খুবই সত্য কথা। একই কারনে চীনও যতই ইকোনমিক টাইগার হোক তাদের নিয়েও অন্তত আমি আমার জীবদ্দশায় মনে হয় না খুব ফ্যাসিনেটেড হব। চীনের মানবাধিকারের অবস্থা খুবই খারাপ। যে কোন পশ্চীমের দেশে মাইগ্র্যান্টদের সবচেয়ে বড় অংশ চীনারা। এত ভাল অর্থনীতির দেশ থেকে কেন লোকে এভাবে পলায়মান থাকে তার ভাল ব্যাখ্যা দরকার।
চীনারা যত ঝুকি নিয়ে বিচিত্র কায়দায় পালিয়ে দেশত্যাগ করে তা আমাদেরও হার মানায়।
@ব্রাইট স্মাইল্, ভারতের লিভিং স্ট্যান্ডার্ড আমেরিকার কাছে না এলেও তার এক দশমাংশের কাছাকাছি এলেই ভারত অর্থনৈতিক শক্তি হিসাবে আমেরিকার থেকে এগিয়ে যাবে, কারণ ভারতের জনসংখ্যা অনেক বেশী। তার থেকেও বড় কথা, ভারতের উচ্চ-মধ্যবিত্তরা আমেরিকার নিম্ন-মধ্যবিত্তদের থেকে উন্নততর জীবনযাপণ করবে।
তবে সফটওয়ার ও সার্ভিসেস খাতে যদি সত্যিই উন্নতি করা যায় তাহলে জীবনযাত্রার উন্নতি করা সম্ভব। এখন ভারত গ্লোবাল সার্ভিসেস ইন্ডাস্ট্রির মাত্র ২% -এর অংশীদার, এটা ১৪% (ভারতের জনসংখ্যা পৃথিবীর জনসংখ্যার ১৪%) নিয়ে গেলে এই ইন্ডাস্ট্রিকে ২০৩০ সালের মধ্যে দশগুণ হতে হবে। সেই ক্ষেত্রে ভারতের রপ্তানী আয়ের সবথেকে বড় অংশ আসবে এই খাত থেকে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও জারি থাকবে। আর এভাবে যে জীবনযাত্রার উন্নতি করা যায় তা জাপান, তাইওয়ান ও কোরিয়া আগেই দেখিয়ে দিয়েছে। ভারতের কাজটা অতটা সহজ হবে না, কারণ এই দেশগুলো আকারে ছোটো ও হোমজিনিয়াস হওয়ায় এদের সুবিধাও আছে।
চিকিৎসা, বুরোক্রেসী ও দুর্নীতি সরাসরি ভাবে টেকনলজির সাথে জড়িত। তাই হাইটেক রাস্তায় প্রবৃদ্ধি হলে এগুলো আপনা থেকেই উন্নত হয়ে যাবে, যেমনটা হয়েছে জাপানে বা কোরিয়াতে। এই দেশগুলোর মত অত দ্রুতগতিতে না হলেও আগামী পঞ্চাশ বছরের মধ্যে বড় কোনো অঘটন না ঘটলে দেশে আমূল পরিবর্তন আসতে চলেছে। অনেকটা এই কারণেই প্রবাসীদের দেশে ফেরার তাড়া দেখা যাচ্ছে।
@দিগন্ত,
দেখুন আপনার বর্নিত উপায়ে আমেরিকার সমকক্ষ হতে হলে ভারতের পঞ্চাশ বছর, বাংলাদেশের হয়তো একশ বছর লেগে যাবে (পাঠক দয়া করে হাসবেন না)। সেটাকে সুদুর পরাহতই বলা যায়। ৫০/১০০ বছর পরে দেশ উন্নত হয়ে যাবে এই ধারনার বশবর্তি হয়ে প্রবাসীরা দেশে ফিরে যাচ্ছে এটা বোধ হয় সর্বাংশে সত্যি নয়।
যেসব প্রবাসীরা প্রবাসে সেটেলড হবে বলে মনস্থির করে আসে তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার বিভিন্ন কারন থাকতে পারে, তবে আমি মনে করি প্রধানতম কারন সপ্ন ভংগ। প্রচন্ড রকমের উচ্চাকাংক্ষা বা অন্য কোন কারনে যখন চাওয়া এবং পাওয়ার মধ্যে সামঞ্জস্যতা থাকেনা তখন দেশ ও প্রবাসের একটা তুলনামুলক চিত্র কল্পনা করে প্রবাসে থাকাটা খুব অর্থবহ হয়ে উঠেনা।
@ব্রাইট স্মাইল্, আপনি মনে হচ্ছে মিস করে গেছেন আমি কি বলছি। পয়েন্ট দিয়ে বলি –
১) ভারতের বড়লোকরা এখন আমেরিকার মধ্যবিত্তদের থেকে ভাল জীবনযাত্রা পায়। খুব বড়লোকেরা আমেরিকার বড়লোকদের তুল্য জীবনযাত্রা।
২) আরও পঞ্চাশ বছর পরে ভারতীয় উচ্চ-মধ্যবিত্তরাও আমেরিকার সাধারণ মধ্যবিত্তদের থেকে ভাল জীবনযাত্রা পাবে।
৩) ভারতে যে প্রবাসীরা ফেরে তারা দেশে উচ্চ-মধ্যবিত্ত বা বড়লোক শ্রেণীতেই থাকবে। কিন্তু আমেরিকায় জীবনযাত্রার বিশেষ পরিবর্তন হবে না। যদিও সামগ্রিক গড়ে তখনও আমেরিকা ভারতের দশগুণ ভাল থাকবে।
৪) ফেরা প্রবাসীদের জীবনযাত্রা আমেরিকায় তুল্যদের চেয়ে আরো পনের-কুড়ি বছরের মধ্যে ভাল হয়ে যাবে। আগে ফিরলে আখের গোছানোর সুযোগ বেশী।
৫) এর সাথে আছে কাজের স্বাধীনতা, নিজস্ব কালচারের মধ্যে বাস করার স্বাধীনতা আর কাজের লোক পাওয়ার সুবিধা (এটা আমেরিকায় দুর্লভ)।
বুঝলেন কেন ফেরার কথা হয়?
@দিগন্ত,
মানতে রাজী না। এখনই ভারতের উচ্চ মধ্যবিত্তারা এদেশের মধ্যবিত্তর চেয়ে ভাল।
আমার ফ্যামিলি ইনকাম, এই দেশের ৮৮-৯১ পার্সেন্টাইলে-সেই হিসাবে আমি মধ্যবিত্ত আর উচ্চমধ্যবিত্তের মাঝামাঝি আমেরিকাতে। এখানে বাড়ির যা দাম-ছেলের পেছনে যা খরচ হয়-আমার বন্ধুরা যারা ভারতে উচ্চ মধ্যবিত্ত-তাদের এক্সস্পেন্ডিবল ইনকাম বেশী। এফোর্ডিবিলিটিও বেশী।
আমি আমেরিকার সব কটা এক্সপেন্সিভ জোনে ( নিউজার্সি, সিলিকন ভ্যালি, স্যার্দান ক্যালিফোর্নিয়া এখন হাওয়ার্ডকাউন্টি) থেকেছি-এখানে মধ্যবিত্তদের জীবন খুব ভাল না-যদিও একই ইনকামে অন্যত্র থাকলে অনেক বেশী ভাল থাকা যেত।
@বিপ্লব পাল, জীবনযাত্রা আপনি কি কি প্যারামিটার দিয়ে মাপছেন বলুন আগে। আমি ব্রাজিলে পরের বিশ্বকাপ খেলা দেখতে যেতে চাই – আমি আমেরিকায় থাকলে এটা কোনো সমস্যাই না, কিন্তু ভারতে ফিরে গেলে হয়ত সম্ভব হবে না। বাড়ির দাম এখন ভারতেও কম কিছু না, মুরগীর খাঁচার মত তিন বেডরুমের ফ্ল্যাট কোলকাতার মত পশ্চাদমুখী শহরে চল্লিশ লাখ টাকায় (মানে প্রায় এক লাখ ডলার) বিকোচ্ছে। এইবারে এই দুটোকে যদি আপনি এক স্কেলে মাপেন তাহলে আমি কি করে বলি। তার পরে আমেরিকার তুলনায় ভারতে গৃহঋণে সুদের হার দ্বিগুণ। আমেরিকার কিছু কিছু স্টেটে বাড়ির দাম বাবলের ফলে বেড়ে গেছে, সেটা বাজার আপনা থেকেই কারেকশন করে নেবে। আমার ধারণা দাম আরও ২০% পড়বে।
@নৃপেন্দ্র সরকার,
আমি কিন্ত প্রবন্ধে এই নিয়ে দ্বিমত করি নি। আমার ভাষা্টা ছিলঃ
এটাও ঠিক না। শ্যোসাল মিডিয়া, ব্লগ, নতুন নতুন সোলার এবং উইন্ড সেল, জেনেটিক ড্রাগ-অনেক কিছুই আমেরিকা দিয়েছে এই দশকে। সমস্যা হচ্ছে এসবের ডেভেলপমেন্ট ও এখন ভারতে চলে যাচ্ছে। অবশ্য তাতে আমার না খুশী হওয়ার কিছু নেই। আমি ত ভারতীয় নাগরিক!
@বিপ্লব পাল,
কাজগুলো আমেরিকার বাইরে চলে গেছে আর যাছছে বলে আমরা আমেরিকাতে জে ভাল চাকরী আর পাছছী না। দেশে যে অনেক বেশি crowd, pollution, corruption, hassles in daily life. আমার আমেরিকান নাগরিক (originally indian born) বন্ধু আমেরিকাতে চাকরি হারিয়ে ভারতে চাকরি করতে গেছে।
@বিপ্লব পাল, :yes:
@বিপ্লব পাল, কাজের ঠিক কতটা ভারতে যাচ্ছে তা নিয়ে আমার সংশয় আছে। এখানে কিন্তু কোয়ালিফায়েড লোক পাওয়াও দুষ্কর।
@দিগন্ত,
আমার মনে হয় তুমিও কালের শব্দ শুনতে পাচ্ছ না। আস্তে আস্তে সব কাজই ভারতে চলে যাচ্ছে। শুধু সময়ের অপেক্ষা। আগে শুধু টেস্টিং যেত-আস্তে আস্তে ডেভেলপমেন্ট-তারপর সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং-সব কিছুই যাবে।
@বিপ্লব পাল,
কানাডায় টিডি ব্যাংক একটা বড় ব্যাংক। এই ব্যাংক এ আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধু ডেভেলপমেন্ট এ কাজ করত। তাদের গ্রুপের ১৯টা পোজিশনের মধ্যে ১৭টাই ভারতে চলে গেছিল, টিকে ছিল তারা দুইজন। অবশেষে সে নিজেই ব্যাংক ছেড়ে চলে যায়।
@বিপ্লব পাল, নতুন আইডিয়া আর তা থেকে কোম্পানী খোলা – এই ব্যাপারে প্রশাসনিক জটিলতা এত বেশী ভারতে যে ওটা ছাড়া বাকি সব কাজই ভারতে চলে যেতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও মূল আইডিয়া ইনকিউবেশন এ দেশেই হবে। সে কারণে কোম্পানীর মেজরিটি মালিকানা এখানেই থেকে যায়।
@দিগন্ত,
কি করে জানলে? কটা কোম্পানী খুলেছ ওখানে?
আমি তিনটে খুলেছি। একটা ভালোই চলছে। কোন সমস্যা নেই এখন।
আইডিয়া না-সমস্যা হচ্ছে আপ্লিকেশন জ্ঞানে ভারতীয়রা অনেক পিছিয়ে। এপ্লিকেশন না জানলে নতুন সিস্টেমের চিন্তা আসে না। কিন্ত তা সত্ত্বেও ভেঞ্চার ফান্ডগুলো এখন ভারতে ভালো বিনিয়োগ করছে। ২০০৪ সালে যাছিল ১ বিলিয়ান ডলার-এখন তা প্রায় ৪ এর কাছাকাছি। প্রতিটা আই আই টিতে প্রচুর স্টার্ট আপ খুলছে। আমি এদের অনেকেরই আনপেড উপদেশদাতা। এদের উদ্যোম আমার ভাল লাগে-এদের থেকেই নতুন ভারত বর্ষ বেড়বে। আমরাত শুধু লিখে আর গিলে খালাস।
@বিপ্লব পাল, আমার প্রথম চাকরী ভারতে একটা স্টার্ট-আপে। তারা এখন কোলকাতায় বড় কোম্পানী হয়ে গেছে, অর্থাৎ সাকসেসফুল। কিন্তু প্রথম দিকে প্রতিটা ডলার ভারতে আনতে যা কাঠখড় পোড়াতে হত তা দেখার মত। টাকা আমেরিকায় পড়ে আছে, সরকারী লাল ফিতের জন্য দেশে আসতে পারছে না।
আপনি প্রবাসী, আপনার পক্ষে আনা সুবিধা, একজন আমেরিকানের পক্ষে ভারতে ইনভেস্ট করা এখনও চোখে সর্ষেফুল দেখার মত অবস্থা।
@দিগন্ত,
এখন এসব কোন সমস্যাই না।
@বিপ্লব পাল, হলে অবশ্যই আমি খুশী হব। আমারও পরিকল্পনা আছে এখানে পাকা থাকার ব্যবস্থা হলেই এই কাজে নেমে পড়ার।
চীন বিজ্ঞান আর প্রজুক্তি গবেশনাতে অনেক টাকা invest করেছে। ওরা ধিরে ধিরে তার ফল পাওআ শুরু করবে। কিন্তু আমেরিকা জদি বিদেশ থেকে আশা মেধাবী ছাত্র গবেশকদের আমেরিকাতে ধরে রাখতে পারে, তাহলে আমেরিকার জন্ন ভাল। কিন্তু আমেরিকার অরথোনিতির যা দুরবস্থা তাতে মানুশ জদি আমেরিকাতে এশে চাকরী না পায়, তাহলে আর কতদিন আমেরিকাতে থাকবে। আর এশিয়ায় নিজের দেশে জদি মটামুটি ভাল চাকরি পায় তাহলে আর আমেরিকাতে থাকবে কেনো। পরে শময় পেলে কিছু লিঙ্ক পাঠাতে পারি।
:guli: :yes:
বেশ ভাল লেখা হয়েছে বিপ্লব!
আমেরিকার সমস্যা কেবল একটি না বহু। আমেরিকানরাও আমাদের মতোই হুজুগে কাজ করে। বাড়ি কেনা বেচা করে মিলিয়নিয়ার হবার উদাহরণটা বিপ্লব যে লেখায় দিয়েছে সেটা তারই প্রমাণ। সাম্প্রতিক ওয়াল স্ট্রিট মুভিটা দেখলেও কিছু নমুনা পাওয়া যাবে। যে দেশের ৪০% মুনাফাই আসে (কিংবা একসময় আসতো) কেবল শেয়ার মার্কেটে কেনা ব্যাচার মাধ্যমে, আর যেখানে কেবল গুজব রটিয়ে দিয়েই কোম্পানির স্টকের ধ্বস নামিয়ে দেয়া হয় (অনেক সময় ওয়াল স্ট্রিটের ভেতরকার লোকজনই এর সাথে জরিত থাকে), যেখানে মর্গেজ সংক্রান্ত ব্যাপারে ব্যাঙ্কের লোন দেয়া, বাসার দাম নির্ধারণ, ক্রেডিট চেকিং সব কিছুতেই আনপ্রফেশনালিজমের আলামত ছিল কিছুদিনে আগেও (এখন বহু মানুষের বাড়ি ফরক্লোজার হবার পর ব্যাঙ্কগুলোর টনক নড়েছে), সে দেশের অর্থনীতি সব সময়ই কেবল শীর্ষে থাকতে পারে না। চীন যে এখন বিরাটা একটা অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে আমেরিকান মিডিয়ায় ভীতির কারন তৈরি করেছে তা এমনি এমনি নয়।
লেখাটা সত্যই আমেরিকার বাস্তব চিত্র এখন।
@অভিজিৎ,
আমি চাইছিলাম সবাই তাদের আমেরিকান অভিজ্ঞতা এখানে শেয়ার করুক। বন্যা এখনো কিছু লেখে নি-যদিও ওর অভিজ্ঞতাও এই ব্যাপারে কিছু কম না। আসলে আমেরিকা বলতে যে মিথটা তৃতীয় বিশ্বের ছাত্রদের সামনে ঝোলানো হয়-সেটা ভাঙা দরকার। এই লেখাটার এটা ছিল একটা উদ্দেশ্য। আমেরিকান মিথ টা কে বার্স্ট করাতে হবে। সবাই তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখলে, সেটা করতে অনেক সুবিধা হত।
চীন আমেরিকাতে ধরতে পারবে কি না সেটা এখনো পরিস্কার না। চীনের শিক্ষা উন্নত-আমেরিকা থেকে অনেক বেশী উন্নত। আবার আমেরিকার সুবিধা হচ্ছে পৃথিবীর সব দেশের মেধাবীরা এখানে আসতে চাইছে। হাউসিং বাবল চীনেও প্রবল ভাবেই ঢুকেছে এখন। তবে আগামী দিনে সেটা দেখার বিষয়। আবার এটাও ঠিক আস্তে আস্তে অনেক আমেরিকান ব্যাবসা ভারতীয়রা কিনে নিচ্ছে। হলিউড প্রায় বলিউডের দখলে চলে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। এল্যুমিনিয়ান, স্টিল ব্যাবসাতেও ভারতীয় ম্যানেজমেন্ট এখন। সফটোয়ারের ব্যাবসা, হোটেল ব্যাবসা বহুদিন থেকেই ভারতীয় দের হাতে এখানে। সুতরাং আমেরিকা + ভারত বনাম চীনের যৌথ প্রতিযোগিতা আমরা আস্তে আস্তে দেখব।
@বিপ্লব পাল,
এবং কিভাবে আপনি সেটা জানতে পারলেন শুনি? সায়েন্সওয়াচ যেটা কিনা টমসন রয়টার্সের প্রকাশনা, তার মতে তো দেখা যাচ্ছে ১৯৯৯ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশী ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর প্রাপ্ত বিশটি ইউনিভার্সিটির মধ্যে পনেরটাই আমেরিকার। ফুল লিস্ট এইখানে এবং এই লিস্ট সাইটেড, পিয়ার রিভিউকৃত গবেষণা সঙ্কলনে সাইটেড। বস্তুত অক্সফোর্ড, কেইম্ব্রিজ আর ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন ছাড়া এমনকি ইংল্যান্ডেরও আর একটা ইউনিভার্সিটি যেই তালিকায় নাই; ম্যাক্স প্লাঙ্ক ছাড়া জার্মানীরও একটা প্রতিষ্ঠান নাই; কোর্নেল, প্রিন্সটনের মতো আইভি লীগ প্রতিষ্ঠানও নাই; কিঙ্গস কলেজ, ইম্পেরিয়াল কলেজের মতো গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলভুক্ত প্রতিষ্ঠানও নাই, টোকিও ছাড়া এশিয়ার একটা প্রতিষ্ঠানও নাই; সেখানে আপনি জ্ঞান শিক্ষার জন্য সুদুর চীনে চলে গেলেন :laugh: ! btw ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর কি যদি না জেনে থাকেন, ইম্প্যাক্ট ফ্যাক্টর একটি সময়ে সবচেয়ে বেশী সাইটেশনপ্রাপ্ত ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা জার্নাল। বেশী সাইটেশন একটি প্রতিষ্ঠান পেয়েছে মানে সেই প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে সবচেয়ে বেশী সাইটেশনপ্রাপ্ত অর্থাৎ সবচেয়ে যোগ্য শিক্ষকগুলো, সেই প্রতিষ্ঠানেরই পাবলিকেশনগুলো সব নেইচার কিংবা সায়েন্সের মতো সঙ্কলনে অর্থাৎ সেই প্রতিষ্ঠানের গবেষণাগুলোই সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ, এবং সেই গবেষণাগুলোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেগুলোর খরচ সবচেয়ে বেশী, অর্থাৎ এই প্রতিষ্ঠাগুলোই সবচেয়ে বেশী ফান্ডিং পায়। আমেরিকা শিক্ষাখাতে কতো টাকা ঢালে সেটা আপনি আমেরিকা থাকেন আপনিই আমাকে জানান, তারপর আমরা তুলনা করি চীনের কয়গুন বেশী সেইটা? ড্রাগ পাইরেসিতে পৃথিবীর এক নম্বর দেশ চীনকে, পয়সা নাই কিনতে পারে না বলে যেখানে নকল ড্রাগ বানিয়ে বেঁচে থাকতে হয়, অর্থাৎ মানুষের মৌলিক চাহিদাই কিনা যেখানে এই মার্ক্সিস্ট কমিউনিস্ট দেশটি পূরণ করতে পারে না, সেখানে এই দেশের শিক্ষা আমেরিকার চেয়ে ভালো দাবী করাটা অ-নে-ক অ-নে-ক বড়সড় এটা দাবী হয়ে যায় বোধহয়।
চীনের শিক্ষা আমেরিকার চেয়ে অনেক অনেক বেশী উন্নত, নিজের ব্যক্তিগত ঘোষণা ছাড়া এই উক্তিটি আপনি আর কি কি এভিডেন্স দ্বারা সাস্টেইন করতে পারেন জানার জন্য আমি খুবই খুবই উদগ্রীব।
@আল্লাচালাইনা,
তোমার তথ্যগুলো বড্ড বেশী পুরাতন।
প্রথমে আসি স্কুল শিক্ষায়, এই লিংকে আমেরিকা বনাম চিনের বিজ্ঞান শিক্ষার পার্থক্য নিয়ে আলোচনা। শিক্ষার বিষয় সমান হলেও পরিস্কার ভাবে একজন চিনের ছাত্র অনেক বেশী দক্ষ এবং শিক্ষিত।
এবার উচ্চ শিক্ষায়। এখানে আমেরিকার এখনো এডভান্টেজ আছে বটে-রিপোর্ট এবং আমার অভিজ্ঞতা বলছে এখানেও আর এক দশকের মধ্যে চিন টেক্কা দেবে। Check BBC report. খেয়াল রাখতে হবে স্টান্ডফোর্ড, এম আই টির ৬০% ছাত্র ভারত আর চীন থেকে এখন।
দূর চিন ত দূরের কথা-আর দুই দশকের মধ্যে উচ্চ শিক্ষাতে ভারত ও অনেক ছাড়িয়ে যাবে আমেরিকার তুলনায়। আমি এখানে অনেক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রের ইন্টারভিউ নিয়েছি-প্রথম ১০-২০ টা ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হলে আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ারং গ্রাজুয়েটদের মান ভারতের রাজ্য কলেজ গুলো থেকেও বাজে। এর কারন রেগন পলিশি যার জন্যে আমেরিকাতে দরিদ্র মেধাবীরা উচ্চশিক্ষায় যেতে পারে না। এসবের পরেও আমেরিকাতে বছরে খুব বেশী হলে লাখ খানেক ইঞ্জিনিয়ার তৈরী হয়-যেখানে ভারতে সংখ্যাটা ৪ এবং চীনে ৫-৬।
আমেরিকার শিক্ষা ব্যাবস্থা গাধার ঘারে গেছে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয় গুলি সামরিক গবেষনা থেকে গ্রান্ট পায়-তারা সেই টাকার জোরে ভারত আর চীন থেকে মেধা এনে গবেষনা করছে। নিজেদের ছাত্র কোথায়?
@বিপ্লব পাল, “স্টান্ডফোর্ড, এম আই টির ৬০% ছাত্র ভারত আর চীন থেকে এখন। ” – এটার সূত্র কোথায়? এটা কি রিসার্চ স্তরে বলছেন?
যা হোক, এখানে লোকে অতটা রিসার্চমুখী নয়, বরং ব্যবসামুখী। আপনি আপনার ইন্টারভিউটা ব্যবসায় বা মার্কেট-সংক্রান্ত প্রশ্ন করলে মনে হয় অন্য চিত্র পেতেন।
আমেরিকায় দরিদ্র মেধাবীদের অবস্থা কি ভারতের দরিদ্র মেধাবীদের থেকে ভাল না খারাপ?
ভারতে সরকারী যে কোনো প্রতিষ্ঠানে (আই-আই-টি ধরে) পড়াশোনার যা নমুনা পেয়েছি তাতে মনে হয়না আমেরিকার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এদের থেকে খারাপ। তবে এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ভাল বা ততটা ডেডিকেটেড ছাত্র পায় না। চিনের সমস্যা আরো বেশী, ওখানে ইংরেজী শিখতেই একটা প্রজন্ম পেরিয়ে যাবে। এখন আপনি যদি রিসার্চ পেপারের সংখ্যা বা ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা ধরে হিসাব করেন তাহলে হয়ত ভারত বা চিন অনেক এগিয়ে থাকবে। কিন্তু আপনার এও মনে রাখা উচিত যে বিল গেটস, স্টিভ জবস বা ওয়ারেন বাফেটের মত আমেরিকানেরা কেউ তাদের ডিগ্রি ভাঙিয়ে খাচ্ছেন না (কারও ডিগ্রি নেইও) বা তাদের কোনো রিসার্চ পেপারও নেই। উল্টোদিকে, ভারত বা চিন থেকে বিজ্ঞানে নোবেল পাওয়া এখনও শুরু হয় নি (জাপান এই দৌড়ে কিন্তু সামিল হয়ে গেছে)। তাই উচ্চশিক্ষার রাশ এখনও আমেরিকানদের হাতেই আছে বলে মনে হয়।
আমি বরং আপনাকে অন্য একটা প্রশ্ন রাখি, কোনো দেশের উচ্চশিক্ষা কতটা উন্নত তা ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা বা রিসার্চ পেপারের সংখ্যায় মাপা কতটা যুক্তিসঙ্গত?
@দিগন্ত,
আমি এক সময় স্টানফোর্ড ক্যাম্পাসের কাছেই থাকতাম। ওখানে প্রচুর এশিয়ান দেখে মনে হয়েছিল তথ্য ঘাঁটি-তখন দেখেছিলাম ৬৬% গ্রাজুয়েট ছাত্র এশিয়ান । এটা ২০০৪ সালের কথা।
এই ধারনার উৎস কি? আমি যদ্দুর জানি তুমি সফটোয়ার শিল্পে সাথে জরিত। আমি কিন্ত একদম হার্ডকোর ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রচুর ইন্টারভিউ নেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। আর যদি আই আই টির প্রসঙ্গ আসে তাহলে আমেরিকাই বলছে আমেরিকান অর্থনীতিতে আই আই টিয়ান দের অবদান এবং কৃতিত্ব আই ভি লিগের ছাত্র দের থেকে বেশী –
যে কজন ভারতীয় এখানে ইঞ্জিনিয়ারিং উদ্ভাবন করেছে এবং পরে ভি সি হয়েছে তাদের ৯০% আই আই টি থেকে।
তুমি কজন আই আই টিয়ান দেখেছ জানি না, তবে আমি আই আই টিতে দশ বছর কাটিয়েছি। আমার কলিগদের মধ্যে এম আই টি, স্টানফোর্ড, হার্ভাড সবই আছে। আমি আই আই টির ছাত্রদের তাদের সাথেই রাখব, নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই। অনেক ক্ষেত্রেই আই আই টিয়ান রা বড় বড় কোর্পরেটে খুব ভাল কিছু করে না-হয়ত অনুপ্রেরণা পায় না। কিন্ত আই আই টিয়ান দের মধ্যে যারা স্টার্ট আপ বা ব্যাবসায় নেমেছে, তারা এদেশে খুবই সফল- আই ভি লিগের ছেলেদের চেয়েও সফল। আর হাইটেকের ব্যাবসায় সফল হলেই আসলে বোঝা যায় একজনের আসল মেধা কতটা-কর্পরেটের ব্যাকারন বাঁধা গতে কাজে আই আই টি বা অন্য ইঞ্জিনিয়ারদের মেধার পার্থক্য মাপার সুযোগ কোথায়?
@বিপ্লব পাল, আপনি শুধু আই-টি দেখে উচ্চশিক্ষা মাপলে কিভাবে চলে। আমি আমেরিকায় জন্মানো ভারতীয় কমিউনিটিতে যাদের ভাল ছাত্র হিসাবে জানি তাদের কাউকে সফটয়ার বা আই-টি সেক্টরে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করতে দেখিনি। বরং সবাই মৌলিক গবেষণা, পার্টিকল ফিজিক্স, জেনেটিক্স বা মহাকাশ-বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করতে চায়। ভারতীয় উচ্চশিক্ষায় এদের স্থান কতটা?
তারও পরে, গত দশ বছরে আইটি সেক্টরে যে দশটা সবথেকে ভাল স্টার্ট-আপ হয়েছে (যেমন ফেসবুক, টুইটার, ওয়ার্ডপ্রেস), তাদের কটার মালিকানা ভারতীয় (যেমন হটমেল)? এইখানে আমার শহরের স্টার্ট-আপের লিস্টিং আছে। আমি খুঁজে দেখলাম – এদের মধ্যে খুব কমই ভারতীয় নাম দেখি। ভারতীয়রা স্টার্ট-আপ বিসনেসে অন্তত একশো বছর পিছিয়ে আছে এখনও।
স্ট্যানফোর্ডের ১০% আন্তর্জাতিক ছাত্র, এশিয়ান বলতে ওরা আমেরিকান-এশিয়ানদের বোঝায় যারা অধিকাংশই আমেরিকার শিক্ষাব্যবস্থায় বড় হয়েছে।
@দিগন্ত,
লিস্টে সব নাম থাকে না কি? তাছারা ভারতীয়রা সার্ভিস শিল্পে বেশী
কোমপানী খোলে। যেমন ইনফো ইউসে-ভিনোদ গুপ্তার। এগুলোর নাম শুনবে না-কিন্ত এদের রেভিনিউ ফেসবুকের থেকে বেশী [যদিও দাম কম]
আসলে তুমি আই আই টি নেটোয়ার্কে নেই। আমার বন্ধু বান্ধব দের একটা বড় অংশই স্টার্ট আপ খুলছে বা সফল হচ্ছে।
তোমার এই খবরটা পড়া উচিত-এই সমীক্ষা মতে একেক জন আই আই টিয়ান নতুন ব্যাবসা সৃষ্টির মাধ্যমে গড়ে ১০০ টি করে চাকরি সৃষ্টী করেছে-সেই হিসাবে গত ৫০ বছ রে আই আই টিয়ান রা প্রায় দুকোটি চাকরি তৈরী করেছে।
@বিপ্লব পাল, ইনফো-ইউএসে র নাম অবশ্যই শুনেছি। আর অন্য সার্ভেটা বড়ই ভাসাভাসা। কারণ এটা এই ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত উদ্যোগের ফসল না আই-আই-টি তে তারা যা শিখেছে তার ফসল সে নিয়ে কোনো মতামত নেই।
@বিপ্লব পাল,
ভারতে প্রতি বছর ৪ লাখ ইঞ্জিনিয়ার বের হয়??? হতে পারে, আমার এক বন্ধুর থেকে শুনেছিলাম যে শুধু তামিলনাড়ু নাকি তেলেগুতেই ইনজিনিয়ারিং কলেজ আছে ১০০ এর মত।
এত ইঞ্জিনিয়ার যায় কই? কে এবজর্ব করে?
@আদিল মাহমুদ,
মহারাষ্ট্র ৬০,০০০+
তেলেগু ৫০,০০০+
তামিলনাডু ৫০,০০০+
পশ্চিম বঙ্গ ২২,০০০+
তারা কি করে? তাতেও ভারতেও আই টি চাহিদার সাপ্লাই দেওয়া যাচ্ছে না। আরো কলেজ হচ্ছে!!!
@আদিল মাহমুদ, ভারতে দুটো প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জানা সিভি নিয়ে দাঁড়ালেই এখনও চাকরী পাওয়া যায়।
কিছু উদাহরণ দিই – আই বি এম ভারতে হাজার পাঁচেক কর্মী ছিল ২০০২ সালে, এখন এক লাখ ত্রিশ হাজার। উইকি বলছে ভারতে আইটি এমপ্লয়ী পঁচিশ লাখের মত।
পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় আমি যখন ঢুকেছিলাম (১৯৯৭), তখন নেওয়া হত ১৮০০ ছাত্র-ছাত্রী। এখন নেওয়া হয় ৪০,০০০। এবং এদের প্রায় সবাই চাকরী পেয়ে যায়। আমি অন্তত এখনও কাউকে বেকার থাকতে দেখিনি। অসংখ্য নতুন কলেজ খোলা হয়েছে ও তাতে কিছু না পড়িয়েই ডিগ্রি পাওয়ার ব্যবস্থাও আছে। তাও তারা ইন্ডাস্ট্রীতে গিয়ে সব শিখে নেয়। এই সিস্টেমটা প্রায় আনবিটেবল। ইন্ডাস্ট্রী নিজের তাগিদেই কর্মীকে সব শিখিয়ে নেয়, কারণ দক্ষ কর্মী থেকে আয় অনেক বেশী। আর এক দক্ষ কর্মী আবার পাঁচজনকে ট্রেনিং নিতে সাহায্য করে। এই সাইকেলের জন্যই আমেরিকানদের চাকরী হারানোর আশঙ্কা।
এবার এই সব কোম্পানীর জন্য ব্যাঙ্কগুলোরও লাভ, তারা কর্মীও কোম্পানীর একাউন্ট দেখাশোনা করে। এই কারণে ভারতের সব থেকে বড় ব্যাঙ্ক একাই এ বছরে পয়ত্রিশ হাজার নতুন লোক নিচ্ছে। আরও অন্যান্য সেক্টরেও এর সুবিধা তুলছে।
@দিগন্ত,
আপনারা উত্তর আমেরিকার মত ইমিগ্রেশন দেওয়া শুরু করবেন কবে???
পশ্চীম বাংলার ৪০,০০০ কর্মীর মাখে আইটি/নন-আইটি ভাগাভাগি কেমন?
সামগ্রিকভাবে ৪ লাখ নুতন ইঞ্জিনিয়ারের মধ্যেই বা এই রেশিও কেমন হবে?
@আদিল মাহমুদ, আর বলেন না। আমার বৌ-এর জন্য একটা ওয়ার্ক পারমিট জোগাড় করতেই ঘাম ছুটে গেল। ভারতে ইমিগ্রেশন সম্ভব না। কোলকাতা সব ক্লিয়ারেন্স দিয়ে দেয় কিন্তু দিল্লী আটকে দেয়।
কর্মীদের প্রায় ৫০-৭০% আই-টিতেই আসে। তবে কনস্ট্রাকশন সেক্টরেও অনেকে যায়।
@দিগন্ত,
এই তথ্য কোথা থেকে পেলে? ভারতে বিদেশী আই টি কর্মীদের জন্যে ৭৫,০০০ ভিসা কোটা আছে বলে জানি। তোমার বৌর পারমিট কেন দরকার বুঝলাম না!! সরাসরি ভোটার লিস্টে ঢোকালেই ত ঝামেলা চুকে যেত!! যাইহোক বিবাহিতদের জন্যে আলাদা আইন বলেই জানি!!
ভারতে বাংলাদেশের কর্মীদের বিরাট চাকরির সুযোগ ছিল। এই নিয়ে আমি ৫ বছর আগে থেকে লিখছি। সার্কের একটা ইসির মতন অর্থনৈতিক জোনের দরকার ছিল। কিন্ত বি এন পি সরকার “দেশপ্রেমের” নামে এত ভারত বিরোধি কাজ করেছে-এই ধরনের উদ্যোগ প্রায় অসম্ভব ছিল। এখন বর্তমানে হাসিনা সরকার আরো দুটো টার্ম থাকলে বোধ হয়, ভারত বাংলাদেশ অবাধ বানিজ্য চুক্তি সম্ভব হবে, যাতে সকল বাংলাদেশীরা ভারতে কাজের সুযোগ পাবে। কিছু না হলেও বাংলাদেশের আই টি কর্মীদের জন্যে ২০,০০০ কি ৫০,০০০ ভিসা দিলেও চলবে। বাংলাদেশের কর্মীরদের মান ভারতীয়দের থেকে বেশী ভালোই হবে। আমার ধারনা তাই বলে। মুশকিল হচ্ছে অবাধ বানিজ্যের আইন মানতে হবে। ভারতীয় সিনেমা দেখানো চলবে না-কিন্ত ভারতকে কাজের ভিসা দিতে হবে-এই দুটো একসাথে চলতে পারে না। তাহলে ভারতেও লোকেরা বলবে আমাদের চাকরীর বাজার অন্যদের দেব কেন?
@বিপ্লব পাল, আচ্ছা আমি আপনাকে নিয়মগুলো বলে দিই। আপনাকে অধিকাংশ নিয়মের রেফারেন্স দিতে পারব কিন্তু এখন খেটেখুটে সেগুলো জোগাড় করতে ইচ্ছা করছে না।
বিবাহিত হবার পরে সাত বছর ভারতে থাকলে তারপরে ভারতীয় নাগরিকত্ব মেলে, তাও বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বিসর্জন দিয়ে তবেই। ভারতে ডুয়াল সিটিজেনশিপ নেই। আর ওয়ার্ক পারমিট আলাদা। আমার বৌ দুবার এপ্লাই করেছিল, প্রথমবার বিয়ের আগে (পায়নি), পরেরবারে বিয়ের পরে। দ্বিতীয়বারে পাওয়া গেছে তাও দিল্লীতে সব অফিসে দরবার করে। তাও কেউ জানে না কোন ডিপার্টমেন্টে এপ্লাই করতে হয়। বিবাহিতদের ভারতে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার অন্য একটা উপায় আছে – পি-আই-ও (Person of Indian Origin)। এতে ভারতীয় বংশোদ্ভূত বা ভারতীয়দের বৌ-ছেলেমেয়েদের জন্য কোনো ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই কাজ করার সুযোগ থাকে। তবে এই সুবিধা পাকিস্তানী, চিনা, নেপালী, বাংলাদেশীদের জন্য নয়। আমার বৌ-ছেলে কেউই এই কারণে পি-আই-ও নয়।
এইবারে আসুক বিদেশীদের জন্য ভারতে কাজ করার ব্যবস্থা। এতে ন্যূনতম বছরে ১১ লাখ টাকা বেতনের চাকরি যোগাড় করতে হয়। তবে ওয়ার্ক ভিসা মেলে। যে কোম্পানী বা অর্গানাইজেশনে অফার থাকে তাদের ৫% এর কম ওয়ার্কফোর্স বিদেশী হলে তবেই তারা বিদেশীদের অফার দিতে পারেন। এটাও যথেষ্ট শক্ত কাজ। এসবের ওপরে আছে লাল ফিতের ফাঁস।
ভারত-বাংলাদেশ অবাধ বাণিজ্য সেভাবে সম্ভব নয় পণ্য বা চাকরির ক্ষেত্রে। তবে সার্কভুক্ত দেশগুলোর ক্ষেত্রে কয়েক হাজার ওয়ার্ক ভিসা দেওয়া যেতেই পারে। এটা না দেওয়ার কোনো কারণ দেখি না। ২০,০০০ দেওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই, ২০০০ হলেও খুশী। অন্তত ভারতে যে বাংলাদেশীরা পড়তে আসে তাদের অগ্রাধিকার দিয়ে দেশের চাকরিতে রেখে দিলে দেশের লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই – বিশেষত দেশে যেখানে দক্ষ কর্মীর অভাব রয়েছে।
@আল্লাচালাইনা,
এটা কালকের খবরঃ
An international study shows U.S. students continue to trail their peers.
Scores from exams taken last year rank American 15-year-olds 14th in reading, 17th in science and 25th in math — out of 34 countries.
China is at the top of the rankings.
Secretary of Education Arne Duncan said, “This is an absolute wake-up call for America. The results are extraordinarily challenging to us, and we have to deal with the brutal truth. We have to get much more serious about investing in education.”
http://www.13wham.com/news/local/story/U-S-Students-Lag-China-Leads-in-Math-Reading/m9vWTGlDn0qi2k1nhjzcPQ.cspx
বেশ একটা স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া গেল লেখাটা পড়ে। ভাষাটা সাবলীল। বিসয়বস্তু সমসাময়িক এবং ভেবে দেখার মত। লেখার আলোচনার মাঝে নিজের দু কথা না বলে পারছিনা। আমি নিজেই বেশ কিছুদিন আমেরিকা প্রবাসী ছিলাম, সেই সময় বাংলাদেশিদের ভিতর স্বজাতি সম্প্রীতির থেকে একে অপরের পিছনে লেগে থাকার প্রবনতা টা খুব মন খারাপ করে দিত। পরশ্রীকাতরতাও ছিল বেশ চোখে পড়ার মত।
@সাধারণ মেয়ে,
শুধু প্রবাসকে দোষ দিচ্ছেন কেন, এই ধরনের প্রবনতা দেশেই কি কম বলে আপনার মনে হয়? প্রবাসের এই বাংগালিরাইতো দেশে কিছুদিন আগে ছিল। রাতারাতি কি আর অভ্যাস পালটে যায়? এটাতে আসলে করার কিছু নেই, এই সকল প্রবনতা গরীব দেশে বাস করার ফসল। দেশে এই প্রবনতা আদৌ পাল্টাবে কিনা জানিনা তবে প্রবাসে পাল্টাতে সময় লাগবে অন্ততপক্ষে আরও এক জেনারেশন যখন প্রবাসে বাংগালীদের সংখ্যা আরও অনেক বৃদ্ধি পাবে।
@ব্রাইট স্মাইল্,
একমত। গরীব দেশের তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের নাগরিক হবার কারনেই মনে হয় মূল সমস্যা।
তবে এই প্রবনতা প্রবাসে অন্য আর কোন কমিউনিটিতে এত মারাত্মকভাবে আছে কিনা জানি না। ভারতীয়দের মাঝে তো প্রশ্নই ওঠে না। পাকিস্তানীদের মাঝেও আমাদের মত নেই।
এই প্রবনতা ব্যাক্তি জীবন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক সব খানেও দেখা যায়। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর আগমন কেন্দ্র করে নিউ-ইয়র্ক এয়ারপোর্টে দুদলে যেভাবে হাতাহাতি হল তাকে কর্তৃপক্ষ অভূতপূর্ব বলেছে।
@আদিল মাহমুদ,
আমার মনে হয় বাংলাদেশী কমিউনিটি ছোট বলে এধরনের সাপোর্ট গড়ে ওঠে নি। তবে এই ধরনের সাপোর্ট সিস্টেম আমি ইরানিয়ানদের মধ্যে দেখেছি। ভারতীয়দের মধ্যে থাকা না থাকা সমান। কারন এখন সফটোওয়ারের ৩০% কর্মী এখানে ভারতীয়। যদিও ভারতীয়রা ভারতীয়দের প্রেফারেন্স দেয় জাতিগত কারনে না-অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধারনা তাকে দিয়ে বেশী কাজ করিয়ে নেওয়া ্যাবে।
@বিপ্লব পাল,
বাংলাদেশী কমিউনিটি ছোট ঠিক, তবে তার মাঝেও যতটুকু ফেলো ফিলিং থাকার কথা ছিল সেটা নেই। আর এগ্রেসিভনেসের দিক থেকেও আমরা অনেক পেছনে।
ভারতীয়রা ভারতীয়দের প্রেফারেন্স দেয় সে নিয়ে আমি আসলে বলিনি। আমি বলতে চেয়েছি যে একজন ভারতীয়কে চাকরি পাওয়াতে দশজন সক্রিয়ভাবে কাজ করে, যে যেখানে যতজনকে চেনে রেজুম ফরোয়ার্ড করতে থাকে। এটা খুব বড় শক্তি, বিশেষ করে এই রকম দূঃসময়ে টিকে থাকার জন্য। আমি কানাডা আসার পর ভারতীয় সূত্রে বেশ কিছু রেজুম পেয়েছি আমেরিকায় লে-অফ হওয়া।
– এটা খুবই সত্য কথা। আমি নিজেই তার ভুক্তভোগী। কলকাতার এক মহিলার ফার্মে আমি প্রথম কাজ নেই, সে ছিল আমার জীবনের এক বড় ভুল। তাও ভাগ্য ভাল যে ৬ মাসের মধ্যেই পালাতে পারি। ছাত্র জীবনে সে ফন করে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে ভজিয়েছিল, আমিও কোন সন্দেহ করিনি। আরো বাংগালী বলে কথা। প্রথম সপ্তাহেই আবিষ্কার করলাম যে এমপ্লয়ি মানে তার কাছে মধ্যযুগীয় দাসের মত কোন কিছু।
তবে এটা মনে হয় মাইনরিটি সব কোমপানীই করে, শুধু ভারতীয় নয়। ইরানী কিছু লোকের কথাও শুনেছি আরো খচ্চর। বিদেশে আমার ওয়ার্নিং বেল হল থিসিস সুপারভাইজার বা কাজের সুপারভাইজার এরা কেউ মাইনরিটি হলে কপালে খারাবি থাকার সম্ভাবনা প্রবল।
@আদিল মাহমুদ,
একদম খাঁটি কথা। মাইনরিটি আর মাইনরিটিতে রিপাল্শন হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে।
@ব্রাইট স্মাইল্,
আমি অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যে এনারা সাধারনত সাদা আমেরিকানদের হুজুর হুজুর করেন, খালি আমাদের দূর্বলতা জানেন বলেই যত ঝাল আমাদের উপর ঝাড়েন।
একটানে পড়লাম। (মন্তব্যগুলো সহ) অসাধারন লাগল!
বিপ্লব,
লেখাটা খুব ভাল হয়েছে। এই শময়ে এরকম একটা লেখা খুব দরকার ছিল।
ধন্নবাদ।
আমার মনে হয় আমেরিকানরা আন্তর্জাতিক ব্যাপার নিয়ে
অত মাথা ঘামায়না!
মোটের ওপর ভোগবাদী!
সি এন এন দেখলে মনে পৃথিবীতে আমেরিকানরা ছাড়া আর
কেউ বাস করেনা।
যদিও সাদারা ইউরোপ থেকে ওখানে গিয়েছে।
মানসিকতায় এখন অনেক অমিল ইউরোপীয়ানদের সাথে।
কবে যেন টিভিতে দেখলাম ওখানে স্কুল সিলেবাস থেকে
“বির্বতন” বাদ দেয়ার দাবী উঠেছে।
অতিরিক্ত বন্দুকবাজী,কাউবয়,পৃথিবীজুড়ে অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে
সত্যিই আমেরিকার জুড়ি নেই!
ভেবেছিলাম Scholarship এর জন্য USA তে চেষ্টা করব।
আপনার পোষ্ট পড়ে ভালো লাগলো এবং মোহ কেটে গেল। একটা ব্যাপার জানতে চাচ্ছি; শ্রমিক শ্রেনীর উপর মন্দার প্রভাব কি খুব বেশী পড়েছে? আমার যেকজন পরিচিত লোক DV লটারি পেয়ে USA তে গিয়েছে তাদের কখনো বেকার থাকতে শুনিনি এবং কাজের অভাব হতেও শুনিনি।
এটা একটা কারন হতে পারে। আপনাকে ধন্যবাদ।
@ইমতিয়াজ,
আসলে আমেরিকাতে কর্মরত ইমিগ্রান্টরা তাদের দেশজ ভাইদের কাছে নিজেকে এত উঁচু রাখতে ইচ্ছুক ( সন্মানের আশায়) , এখানকার সমস্যা নিয়ে তারা ভুক্তভোগী হলেও নিজের ইগো এবং সন্মানের জন্যে কিছুই লিখবে না। বুয়েটের ইলেকট্রনিক্সের পাশ করা এক ইঞ্জিনিয়ার, যে এখানে এম এস করেছে-আমার ভাল বন্ধু এবং সে গত দশ বছরে তিন বার ছাঁটাই হয়েছে। আমার মনে হয় না, সে এগুলো নিয়ে দেশে আলোচনা করবে-বা করতে চাইবে। অনেকেই আসলে ছাঁটাই হওয়াটাকে স্কুলে ফেল করার সমকক্ষ ভাবে। আসলে তা কিন্ত না। এখানে ছাঁটাই হয় অর্থনৈতিক কারনে।
ইটালিতে বেশ কিছু বাংলাদেশী ভারতীয় ইমিগ্রান্টদের সাথে আমার পরিচয় হয়। ওরা খুব ছোট ঘরে দশ জন থাকত-রাতে ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। খুবই কষ্টের জীবন। কিন্ত দেশে যাবার সময় লাখ ডলারের আর্মিনি স্যুটে অনেক উপহার নিয়ে দেশে ফিরত-যাতে দেশের লোকে তাকে কেও কেটা মনে করে।
এটা সাইকোলজি। আবার এটাও ঠিক, সাধারনত পরিশ্রমী এবং মেধাবী বলে, ইমিগ্রান্টদের মধ্যে ছাঁটাই কম।
@ইমতিয়াজ,
কোম্পানী যখন লে-অফ করে তখন কোম্পানীর জন্য কার কি সার্ভিস, কে কত বড় মেধাবী এসব আসলে খুব একটা ম্যাটার করে না। এর উদাহরন এই লেখাতেও আছে। ভারতীয় মেধাবী কর্মী বলেই লে-অফ কম হবে এই ধারনায় আমি খুব একটা বিশ্বাসী নই। তবে ভারতীয়দের যেটা বিরাট সুবিধে দেখেছি যা এমনকি আমেরিকানরাও পায় না তা হল বিশাল নেটওয়ার্কিং এবং ফেলো ফিলিং। এর জোরে ভারতীয়দের আরেকটা কাজ জোটাতে খুব একটা সমস্যা হয় না।
আমেরিকায় এখন চাকরির বাজার খারাপ হওয়ায় স্কুলে যাবার হার বেড়েছে। ফলে স্কলারশীপ পাওয়াও কঠিন, আরো ফান্ডিং অনেক কমে গেছে। সবচেয়ে মুশকিলে পড়ছে যারা স্কুল থেকে সদ্য বেরিয়ে চাকরি খুজছে তারা। কারন বাজারে এত বেশী অভিজ্ঞ লোক বেকার আছে যে তারাই যেখানে যা পায় ধরে বসছে। আগে সরকারী চাকরিতে লোক পাওয়া যেত না, অসংখ্য পোজিশন থাকত সারা বছর খালি। এখন সরকারী চাকরি হয়েছে খুবই লোভনীয়, কারন বেতন কম হলেও এখানে লে-অফের ভয় কম।
শ্রমিক শ্রেনীর উপর প্রভাব অবশ্যই পড়েছে; বিশেষ করে নির্মান শিল্প, ম্যানুফ্যাকচারিং এসবের।
@আদিল মাহমুদ,
এটা বোধ হয় সবটা ঠিক না। সাধারনত বড় কোম্পানীতে স্ট্রাটেজিক লে অফ হয়-তখন মেধা ম্যাটার করে না। তবে ছোট কোম্পানীতে সার্ভিস মেধা এসব ম্যাটার করে। বড় কোম্পানীতে টিকে থাকার জন্যে মেধার থেকে কোম্পানী পলিটিক্স ইত্যাদি আগে বুঝতে হয়। ছোট কোম্পানীতে শুধু মেধার জোরেই টিকে থাকা যায়। আমি সারা জীবনে ৯ টা লে অফ দেখেছি-যদিও নিজে লে অফের শিকার হয় নি এখনো-কিন্ত খাঁড়া এদেশ সব সময় ঝুলছে।
তবে লে অফের খাঁড়ার সবটাই যে বাজে তা না। লে অফের ভয়, চাকরি অনিশ্চয়তার জন্যে অনেক মেধাবী কর্মীই এখানে ব্যাবসা বা নিজের কোম্পানী খোলে। জীবন নিশ্চিত হলে এসব করত না।
ভারতীয় হওয়া আমেরিকাতে সুবিধাজনক এটা স্বীকার করতে বাধা নেই। আমার নিজের অভিজ্ঞতা হচ্ছে এখানে ভারতীয় কর্মীদের একটা ব্রান্ড তৈরী হয়েছে-যা কাজে লাগে। এবং তা সম্ভব হয়েছে ভারতীয়দের দক্ষতা এবং কঠিন পরিশ্রমের জোরেই।
শ্রমিক শ্রেনীর অস্তিত্ব আমেরিকাতে আস্তে আস্তে হারিয়ে যাবে। শুধু ব্যাবসায়ীরাই থাকবে। আপাতত সেটাই দেখছি।
@বিপ্লব পাল,
হ্যা, ছোট কোম্পানীতে মেধা কাজ করে। তবে বড় কোম্পানীগুলিতে সাধারনত করপোরেট ডিসিশনের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক লোককে বিদায় দেওয়া হয়। এর মাঝে মেধাবী বা যার সার্ভিস রেকর্ড খুব ভাল সেও অনায়াসেই পড়তে পারে। আমেরিকায় লে-অফ যেভাবে করা হয় তা অনেক সময়ই রীতিমত অমানবিকই ঠেকে। টিস্যু পেপার ব্যাবহার করার পর যেমন ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয় তার সাথে তেমন তফাত থাকে না। বেশ কিছু বড় কোম্পানীতে রীতিমত সিকিউরিটি গার্ড ডেকে এসকর্ট করে বের করে দেওয়া হয়, ভাবখানা যেন চোর ধরা পড়েছে। আমি গত বছর যেদিন লে-অফ হলাম তার আগের দিনও রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করেছি। আমার গ্রুপের আরো কেউ কেউ ১২টা পর্যন্তও কাজ করেছে। আমাদের বেলা ১০টায় নোটিস দেবার পর পরিষ্কার বলে দেওয়া হল যে লাঞ্চের আগেই বহিষ্কার হও। মনে হয় কোম্পানীগুলি চায় না যে লে-অফ হওয়াদের প্রভাব টিকে যাওয়াদের মাঝে পড়ুক। এক চীনা ছিল ২০ বছরের পুরনো কর্মী, সেও বাদ যায়নি।
ভারতীয় প্রভাব আমেরিকায় অবশ্যই খুব প্রবল, মেধা, পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের জোরেই এটা সম্ভব হয়েছে আমিও ভাল জানি। সাথে সাথে ভারতীয়দের সোশাল নেটওয়ার্কিং ও ফেলো ফিলিং তাদের দিয়েছে খুবই শক্ত প্ল্যাটফর্ম, এই দিক দিয়ে আমরা বাংলাদেশীরা খুবই দূর্বল।
@আদিল মাহমুদ,
হ্যা। ছাঁটাই করার পর যেভাবে দুই ঘন্টার মধ্যে তাকে বার করে দেওয়া হয়, সেটা খুবই অপমানজনক। আমি নিজের চোখে এতবার দেখেছি, গা সয়ে গেছে। আর সেই জন্যেই কর্পজীবনে কোন উৎসাহ নিয়ে কোন কাজ করি না। কারন মুহুর্তের মধ্যেই তা অর্থহীন হয়ে যেতে পারে।
:yes: :yes:
কাজ থেকে ফিরে এসে, লেখাটা আবার পড়লাম। মন্তব্যগুলোও। সবাই বলছে চমৎকার, আমিও বলছি চমৎকার। এ ধরণের লেখা যত বেশি ছাপা হবে ততই মঙ্গল। মঙ্গল-প্রয়াসী মানুষেরা হয়তো আরো একটু উদ্বুদ্ধ হবে। বিপ্লবদা আপনার লেখাটা খুব বেশী ভালো লেগেছে বলে, আজ কাজে গিয়েও ঠিকঠাক মত দোকানদারি করতে পারছিলাম না। কেউ কেউ ভাবছেন, মন্দা কেটে যাবে। আবার সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। আর কেউ কেউ বলছেন, সে সম্ভাবনা আর নেই। তার ওপর ধেয়ে আসছে পরিবেশ বিপর্ষয়। মুক্ত-মনার লেখকদের কাছে আমার একটি অনুরোধ, অর্থনৈতিক মন্দা ও পরিবেশ বিপর্যয় ( সম্পর্কটা খুব গভীর, এক কথায় যমজ ) নিয়ে আরো লেখা্লেখি হোক। পরিবেশ
@স্বপন মাঝি,
পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্যে মন্দা আসবে ভারত বাংলাদেশে। এখানের পরিবেশ অতটা বিপর্যস্ত না। এটা ঠিক, মুক্তমনাতে সবাই ইসলাম নিয়ে যতটা চিন্তিত-পরিবেশের পতন নিয়ে ততটা না। কিন্ত পরিবেশ বোধ হয় আরো ভয়ংকর বিপর্যয় ডেকে আনছে। ধর্ম আমার ধারনা আস্তে আস্তে মারা যাচ্ছে। স্যোশাল মিডিয়ার যুগে গালগল্প দিয়ে বেশী দিন কেও টিকবে না।
খুব ভাল একটা লেখা পড়লাম। এবারের রিসেসন স্ট্যাবলতো হবে এক সময় কিন্তু তত দিনে বিশ্ব মোড়লের যায়গাটা হাতছাড়া হয়ে যাবে আমেরিকার। অর্থনৈ্তিক পরাশক্তি হিসাবে চীনের এক নম্বর পজিসনে চলে আসাটা এখন মনে হচ্ছে সময়ের ব্যাপার।
আমেরিকায় দুটি বড় মন্দা দেখারই দূর্ভাগ্য হয়েছে (২০০১ এবং ২০০৮)। ২০০১ সালের মন্দা যদিও ২০০৮ এর তূলনায় কিছুই নয়, সেবার আঁচ গেছিল শুধু হাইটেক এর উপর দিয়ে।
তবে ২০০৮ এর মন্দা খুব সম্ভবত গোটা আমেরিকান বিলাসী লাইফ ষ্টাইল পালটে দেবে। বেতন মনে হয় কমে যাবে, জীবন যাত্রা হবে এক্সপেন্সিভ। ষ্টেবিলিটি মনে হয় না ২০১৫ সালের আগে আসবে বলে।
আন্ডারলাইন লেসন হল মাত্রাতিরিক্ত কিছুই ভাল নয়। ধনতন্ত্রের চরমে পৌছেছিল দেশটি। সাথে দেশের সাধারন মানুষ শুধু নিজেদের বিলাসী জীবনের বাইরে তেমন কিছুই চিন্তা করেনি। তার অবশ্যম্ভাবী ফল হয়েছে আজকের অবস্থা। করোপরেট ওয়ার্ল্ড ধীরে ধীরে দেশ চুষেছে সবার চোখের সামনে, সরকারগুলি হয়েছে তাদের এজেন্ডার বাহক। মানুষ খুশী ছিল যতক্ষন চাকরি আছে। কারন চাকরি যতক্ষন আছে রীতিমত রাজা, চাকরি গেলেই সব ফক্কা, এমনকি মৌলিক চাহিদা চিকিতসাও নেই। সেই অবস্থায় গনহারে যাবার আগে টনক নড়েনি। এত স্বার্থপর কিছু মানুষ হতে পারে তা দেখা গেছে ওবামার হেলথ রিফর্ম এক্ট বিতর্কের সময়। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে অনেক মানুষ এই বিলের বিরোধীতা করেছে, তাদের মতে ওবামা দেশকে কমিউনিষ্ট বানিয়ে ফেলবে, তারা ইন্সুরেন্স পদ্ধুতিই ভাল মনে করে।
কানাডার অবস্থা এত খারাপ হয়নি মূলত এদের ব্যাংকিং ব্যাবস্থা অনেক কনজারভেটিভ বলে। মার্কিনীদের প্রধান বানিজ্যিক মিত্র বলে ম্যানুফ্যাকচারিং এর উপর দিয়ে ঝড় গেছে, তবে সামগ্রিকভাবে আতংক ছড়ায়নি। কানাডার ষ্টাইল অনেকটা আমেরিকান ধনতন্ত্র আর ইউরোপীয়ান সোশাল সিষ্টেমের মিশেল। এই সিষ্টেম তাদের জন্য যাদের মিলিওনিয়ার হবার খায়েশ নেই। এখানেও লে-অফ খুবই সাধারন ব্যাপার, তবে আমেরিকার মত এতটা ডালভাত নয়, অন্তত প্রফেশনালদের। কবছর আগে চাকরি না পেয়ে কানাডা থেকে আমেরিকা গেছিলাম, ভাগ্যের ফেরে একই কারনে আবার ফিরতে হল।
@আদিল মাহমুদ,
কানাডার অবস্থাও বেশ খারাপ বলেই মনে হল। কানাডার অর্থনীতি এতটাই আমেরিকা নির্ভর, আমেরিকার খারাপ অবস্থায় কানাডার ভাল থাকা সম্ভব না। কানাডায় জিনিস পত্রের দাম আমেরিকা থেকে অনেক বেশী-মাইনে কম। চাকরির সুযোগ ও কম।
রিশেসন মোটেও বেতন কমায় নি। বেতনের বৃদ্ধি হয়েছে-কিন্ত চাকরী কমেছে। অনেক কমেছে। এটা জবলেস রিকভারি।
@বিপ্লব পাল,
কানাডার অবস্থা খারাপ হয়েছে ঠিকই, খারাপ হওয়া থেকে বিশ্বের কেউই বাদ যায়নি, আর তারা তো আমেরিকার সবচেয়ে কাছের লোক। তবে আমেরিকায় যেমন ধ্বস নেমেছে এখানে তার কাছাকাছিও নয়, এমনকি গত বছর ফেডারেল সরকার রিসেশন চলে গেছে বলে ঘোষনাও দিয়েছে, যদিও সেটা প্রিম্যাচিউর ছিল।
এ সম্পর্কে আমার একটি তত্ত্ব আছে, ” ” নাই বাটপাড়ের ভয়। কানাডার অবস্থা এমনিতেই ভাল ছিল না কোনদিনই, তাই পড়ার মত খুব বেশী কিছু ছিল না। তবে এদের কনজারভেটিভ এবং সরকার নিয়ন্ত্রিত ব্যাবস্থা ভূমিধ্বস ঠেকাতে সাহায্য করেছে বলতেই হবে। ফিনানশিয়াল সেক্টরে আমেরিকার মত একের পর এক পতন হয়নি। ব্যাংকগুলি দিব্ব্যী ব্যাবসা করে যাচ্ছে। আমেরিকার সাথে সম্পর্কযুক্ত বলে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর (আমেরিকান কোম্পানীর কানাডিয়ান প্ল্যান্টগুলি), যেমন গাড়ি কোম্পানীগুলি। সরকারও দায়িত্বের পরিচয় দিয়েছে বেশী। ষ্টিমুলাসের টাকা আমেরিকার মত তেলা মাথায় তেলের জন্য দেয়নি, সব ডেভেলপমেন্ট কাজেই দেওয়া হয়েছে, ফলে চাকরির বাজারে ব্যাপক ধ্বস ঠেকানো গেছে।
কানাডার বেতন কিন্তু এখন আর খুব একটা কম নেই। ১০ বছর আগেও আমেরিকা আর কানাডার বেতনের পার্থক্য অনেক বেশী ছিল, এখন আর অতটা চোখে লাগে না। এলবার্টার তেল অর্থনীতিকে ভালই প্রান দিয়েছে। তবে হাইটেক ফীল্ড এ বেতনে বড় পার্থক্য আছে মানতেই হবে। এখানে লাইফ সাধারনভাবে আমেরিকার দেড়্গুন এক্সপেনসিভ বলেই আমার মনে হয়।
সাধারনভাবে এখানে মিলিওনিয়ার হওয়া অন্তত চাকরি করে সম্ভব নয়, তবে খুব বেশী উচ্চাভিলাস না থাকলে সামগ্রিকভাবে নিশ্চয়তা আমেরিকার থেকে অনেক বেশী।
রিসেশনে বেতন লং রানে কমবে বলে আমার ধারনা। বিশেষ করে আমরা যারা সরকারী ফান্ডেড প্রজেক্টের উপর নির্ভর করি তাদের জন্য খাটবে। আমাদের এখন যা হায়ার সেখানে হয় সব টেমপোরারী বেসিসে, কোনরকম বেনেফিট ছাড়া, এই টেন্ডেন্সী বেশীদিন চললে দীর্ঘমেয়াদী এফেক্ট পড়বেই। ক্যালিফোর্নিয়া সরকার যেমন সব কর্মচারীদের মাসে দুদিন বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়েছে বেতন কমাতে। আর ডলার ভ্যালু দিন দিন যেভাবে দূর্বল হচ্ছে তাতে বিপুল পরিমান আমদানী পন্যকে ধীরে ধীরে বেশী দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে জিনিসপত্রের দামও বাড়বে।
তবে যত যাইই বলি, আমেরিকাকে যতই গাল দেই; আমেরিকার মাটি খুবই নরম। একবার পাড়া দিলে সে মাটির মায়া ত্যাগ করা বড় শক্ত। সুযোগ পেলেই আবারো সেধিয়ে যাব 🙂 ।
লেখাটি বেশ তথ্যবহুল এবং বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। তবে আমেরিকার তুলনায় কানাডার ব্যবস্থা অনেক ভাল এবং স্ট্যাবল। যা কিছু ধাক্কা লেগেছে সেটা আমেরিকার জন্যই। এখানে একটু শীত বেশি, কিন্তু বিনিময়ে স্বস্থি অনেক। অন্তত মূল দু’জায়গা তারা ঠিক রেখেছে, চিকিৎসা এবং শিক্ষা। এদের ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধনতান্ত্রিক বলে মনে হয় না। আমার কাছে মিশ্র বলে মনে হয়। এদের টাকার সিংহভাগ ব্যয় হয় চিকিৎসাতে মনে হয়। পুরো দেশে চিকিৎসা ফ্রি, কোন ইন্সুরেন্স ছাড়াই।
লেখাটি অনেক ভাল লাগলো।
@স্বাধীন,
খুব একটা একমত না। আমি গত সপ্তাহে কানাডাতেই ছিলাম-প্রাত্তন নর্টেলের কর্মীরা বোধ হয়, তোমার সাথে একমত হবে না। চাকরিতে ছাঁটাই কানাডাতেও নিত্য ঘটনা।
@বিপ্লব পাল,
হাইটেক ফীল্ডের জন্য এখনো আমেরিকার ধারে কাছে কানাডা নয় এটা ঠিক।
ভাল লাগল। :yes:
কাজে যেতে দেরি হয়ে যাচ্ছে, তবুও লেখাটা শেষ না করে উঠতে পারলাম না।
লেখাটি পড়ে আমেরিকার বেশ কিছু বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পেলাম। আপনি বেশ কিছু বিষয় অনেক সুন্দর-সাবলিল ভাষায় উঠিয়ে এনেছেন এই লেখাটির মাধ্যামে। ধন্যবাদ।
অসম্ভব ভাল লাগল লেখাটা। আর দশজন মানুষের মত আমিও ভাবতাম বড় বড় ডিগ্রী থাকলে আমেরিকাতে সবই পাওয়া যায়, এই লেখাটা পড়ে মোহ ভাঙতে শুরু করেছে। আচ্ছা, মন্দা চিকিৎসাক্ষেত্রে কেমন প্রভাব ফেলেছে?
ব্লগ, ফেসবুকে যারা সাংবাদিকতা করে, তারা তো সেটা শখের বশেই করে। আমার মনে হয় না স্রেফ ব্যক্তিগত উদ্যমে সাংবাদিকতায় পেশাদারিতা অর্জন করা সম্ভব। তার উপর এই সোসাল মিডিয়াটাও যদি একটা “পেশা” হয়ে যায় এবং পুঁজিপতিরা যদি সোসাল মিডিয়াকে অর্থায়ন করা শুরু করে, তবে এর সাথে প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কি কোন পার্থক্য থাকবে?
@পৃথিবী,
স্যোশাল মিডিয়াতেও কর্পরেট প্রভাব ভালোই আছে। তবে মেইন স্ট্রিমের মতন, অতটা একাধিপত্য সম্ভব না।
চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে রিশেসন নেই। কিন্ত ফার্মাসিউটিক্যালে এখন দারুন রিশেসন। বায়োটেকের মার্কেট দুদিন আগেও ভাল ছিল। এখন বেশ খারাপ। একের পর এক পোষ্ট ডক্ট করার পরেও চাকরি পাচ্ছে না। প্রচুর দেখছি।
কখনোই তথাকথিত উন্নত, শিল্পপ্রধান, মুক্তবাজার অর্থনীতির দেশে বসবাসের সাধ জাগেনি। সুযোগ হয়নি, চেষ্টাও করিনি। কাজে গেছি। কাজ শেষ তো ফিরতি ফ্লাইট। লেখাটি পড়ে মনে হচ্ছে, সাধ না জেগে, সুযোগ না পেয়ে, চেষ্টাও না করে ভালই হয়েছে। হাউসনের মত অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হতে হয়নি।
হ্যাঁ, জীবনটাকে সহজ ও সরল ভাবে নিলেই শান্তি ও স্বস্তি পাওয়া যায়। আর
চমৎকার জীবন দর্শন।
উপরের দুটো উদাহরণের মত অনেক কিছুই গল্পের মত বলে জীবনকে অনেক জটিলতা থেকে মুক্ত থাকার কৌশল রপ্ত করার মন্ত্র রয়েছে আপনার লেখায়।
ধন্যবাদ বিপ্লব রহমানকে।
দুঃখিত বিপ্লব পাল।
আমার মন্তব্যে পাল না লিখে ভুলে রহমান লিখে ফেলেছি। ক্ষমা করবেন।
@গীতা দাস,
জীবনটা অভিজ্ঞতার জন্যে। সব ধরনের অভিজ্ঞতার আগুনেই মানুষ পরিণত হয়। তাই কোন নিষ্ঠুর অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় নি বলে নিজেকে ভাগ্যবান ভাবার কোন কারন নেই।
এমনিতে আমেরিকার কোয়ালিটি অব লাইফ অনেক ভাল। ধোঁয়া, ধুলো, জ্যাম বিশেষ নেই-নেই কষ্ট করে বাঁচা। কিন্ত এটা বাইরের খোলাস। ভেতরে ঢুকলেই দেখা যাবে মানুষগুলো নিঃস্ব।
:yes: :yes: :yes:
দারুন একটা বাস্তবধর্মী লেখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আমেরিকাতে যাই নি , তাই বাস্তব অভিজ্ঞতা নেই। ইউরোপ ঘুরেছি কয়বার, সেখানকার জীবনযাত্রা কিছুটা জানি। তা ছাড়া আমেরিকান কিছু চ্যাট ফ্রেন্ড ছিল। তাদের সাথে মত বিনিময় করে তাদের সম্পর্কে একটা ধারনা পাওয়ার চেষ্টা করেছি। সব মিলিয়ে আমেরিকার মানুষ সম্পর্কে যা ধারনা আমার গড়ে উঠেছিল হুবহু সেটাই আপনি সাবলীল ভাষায় বর্ননা করেছেন। আমার ধারনা ছিল – আমেরিকানরা মদ খাওয়া ও সেক্স এ দুটো নিয়েই ব্যস্ত , অন্য কিছু ভাবার বা জানার টাইম নেই তাদের। যে কারনে আমেরিকান সরকার অন্য দেশে দেদারসে আকাম কুকাম বা গণহত্যা চালিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও সাধারন মানুষের তা গায় লাগে না। আমেরিকানদের এ ধরনের অতি উদাসীনতার কারনেই ওখানে ধর্মীয় মৌলবাদীরা এরকম ঘাটি করে বসতে পেরেছে আর খোদ মার্কিনীদেরকেই মাথায় টোকা দেয়ার ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। তবে আশার কথা , অর্থনৈতিক মন্দার কারনে অনেক মানুষ এখন বেকার, তাই তারা এখন অন্য বিষয়ে তাকানোর সুযোগ পাচ্ছে , আর বুঝতে পারছে কোন অক্টোপাশ কিভাবে আমেরিকাকে আকড়ে ধরতে চাইছে। ইন্টারনেটের নানা ব্লগ সাইট, চ্যাট সাইট ইত্যাদি তার প্রমান। paltalk বলে একটা চ্যাট সার্ভার আছে সেখানে দুবছর আগেও কোনদিন ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন রুম দেখিনি, কিন্তু বর্তমানে এ বিষয়ে অনেকগুলো রুমই খালি খোলা হয় না , বরং দেখা যায় সেখানে রুম গুলো সব ভর্তি আর তারা ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের আলাপ আলোচনা করছে। এটা খুবই আশা ব্যঞ্জক একটা ঘটনা।
@ভবঘুরে,
এমন একটি উন্নত দেশের লোকজন মদ খাওয়া ও সেক্স এ দুটো নিয়েই ব্যস্ত থাকে? হতবাক করলেন আমাকে। 😕
@ব্রাইট স্মাইল্,
১৫ বছর হলো, কাজ করছি মুদির দোকানে। এখানে সব শ্রেণীর ক্রেতা-র আগমন। আমার অভিজ্ঞতাটা অনেকটা এইরকম, খুব ভদ্র গোছের ( যাদের সংখ্যা খুব-ই কম) দু’য়েকজন খদ্দের খুব বিজ্ঞের মত কথা বলবে আবহাওয়া অথবা কুকুর-বিড়াল নিয়ে। হঠাৎ কয়েক ফোঁটা বৃষ্টির মত দেখা যাবে, দু’য়েকজন খদ্দের কথা বলছে সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে। সংখ্যাগরিষ্ঠ খদ্দের মদ আর মেয়ে মানুষ নিয়ে কথা বলতে পাগল। আমার উৎসাহ না পেয়ে বলে বসে, মনে হয় তুমি খুব ধার্মিক। বিনীতভাবে উত্তর দেই, আমি আসলে নাস্তিক। এ কথা শুনে কারো কারো ধর্মবোধ চাঙ্গা হয়ে ওঠে। ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুণ, প্রার্থ্না করতে করতে চলে যায়। আবার অনেকেই মুহুর্তে খুব উদার হয়ে যায় – এটা তোমার ব্যাপার, আমি শুধু ফুর্তি করতে চাই।
হ্যাঁ,এত উন্নত দেশে-র ভদ্র ভাষা শুনতে হলে চলে আসুন যে কোন একটি মুদির দোকানে। এখানে সব শ্রেণীর খদ্দের পাবেন।
@স্বপন মাঝি,
আসলে নিজের ছেলেকে দেখছি। ছোটবেলা থেকে কিভাবে অর্থহীন এন্টারটেইনমেন্ট আর ভিডিও গেমস দিয়ে এদের অন্তর্মূখী করে দেয়। ছোট বেলা থেকে নানান বই না পড়লে মনের প্রসার হয় না। এখন সেখানে ছোটদেরকে ডিজনি বৃত্তের রূপকথায় আটকে রাখলে, সমাজ সচেতনতা আসবে কি করে? এরা ত আমেরিকান ইতিহাসই ভাল করে জানে না!
@স্বপন মাঝি,
ভাই, খাওয়া, পরা,বাসস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি বেসিক নিডস্গুলোর জন্য যদি চিন্তা ভাবনা করতে না হয় পরবর্তি চিন্তা ভাবনা করবার একটিই বিষয় থাকে তা হলো মদ আর সেক্স যা আবার টাকা পয়ষা বাড়ার সাথে সাথে প্রকট আকার ধারন করে।
এটা শুধু আমেরিকান জনগন নয়, আমাদের দেশের লোকজনদেরও যদি মৌলিক দরকারগুলোর জন্য মাথা ঘামাতে না হতো তা হলে দেখতেন সাধারন লোকজন ঐ একটি বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে। তাইতো সব পাওয়ার জায়গা বেহেস্তে মানুষের জন্য এত পানীয় ও হুরের ব্যবস্থা রাখা আছে।
আসলে হচ্ছে কি সেচুরেটেড পয়েন্টে চলে গেলে প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। যা চাই তা সহজে পেয়ে গেলে মানুষের চিন্তা ভাবনা করার পরিধিটা সীমিত হয়ে যায়। তাই জীবনে কিছু সমস্যা, কিছু প্রয়োজন থাকা মনে হয় ভালো।
@ব্রাইট স্মাইল্,
– এটাই আসল কথা। আপনি দুবলে ভাল খেলে আর জীবন মসৃনভাবে চললে শখ করে আর কার খবর করতে যাবেন? আমেরিকানরা মদ আর সেক্স বাদে আর কিছু জানে না খুবই ভুল কথা। বিশেষ করে মদের প্রাবল্য মনে হয় ইউরোপে আরো বেশী। মদ নারী বিষয়ক আলাপ অন্তত প্রফেশনাল ক্লাসের আমেরিকান আধা পরিচিত লোকের সাথে করবে না।
তাদের চিন্তাভাবনা কালচারাল কারনেই ভিন্ন। যেমন ৫০% সম্ভাবনা যেকোন আমেরিকানের সাথে আলোচনায় গাড়ি প্রসংগ চলে আসবে। নিঃসন্দেহে তারা আমাদের মত রাজনীতি সচেতন নয়। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বিষয়ে তারা খুবই অজ্ঞ।
@ভবঘুরে,
একটা সমগ্র জাতি শুধু মদ আর সেক্স নিয়ে ব্যস্ত থাকবে এটা একটু বেশী সরলীকরণ হয়ে গেল না? আমার কাছে তো সাধারণ আমেরিকানদের বেশ হার্ড ওয়ার্কিং মানুষ হিসেবেই মনে হয়। আমাদের মত দেশগুলোতে এ ধরণের স্টেরিওটাইপিং এর বোধ হয় শেষ নেই, এদেশের মানুষদের কাছ থেকে দেখলে বুঝবেন এটা কত বড় স্টেরিওটাইপিং। তবে তারা কেন সারা পৃথিবীর আকাম কুকাম গনহত্যা নিয়ে মাথা ঘামায়না এবং পৃথিবী সম্পর্কে এত অজ্ঞ থাকে তার কারণ বোধ হয় রাজনৈতিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। তারা বিশ্বজোড়া লুটপাটের বখরা পায়, তাই এদেশের জনগনও আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনকে সমর্থন করে। তারা পৃথিবী জোড়া ‘দাদাগিরীতে’ এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছে যে বাকি পৃথিবীর খোঁজ নেওয়ারো প্রয়োজন মনে করে না। এখানে স্বার্থটাই আসল কথা।