গত সপ্তাহের সংবাদ অনুযায়ী জ্যোতির্বিদরা পর্যবেক্ষিত বা অবলোকিত গ্যালাক্সীদের মধ্যে সবচেয়ে দূরতম গ্যালাক্সীটি খুঁজে পেয়েছেন। এই গ্যালাক্সীটি আমাদের মহাবিশ্ব সৃষ্টির আদি মূহুর্ত বিগ ব্যাংএর মাত্র ৬০০ মিলিয়ন (৬০ কোটি) বছরের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছিল। বিগ ব্যাংএ সৃষ্ট হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস থেকে ক্রমঃশীতল মহাবিশ্বের প্রথম নক্ষত্ররা হয়তো এই গ্যালাক্সীর অধিবাসী। এই গ্যালাক্সী থেকে যে আলো আমরা এই বছর অবলোকন করছি তা প্রায় ১৩.১২ বিলিয়ন (বা এক হাজার তিন শো বারো কোটি) বছর আগে রওনা দিয়েছিল। [খেয়াল করবেন আমি এই আলোর উৎসদের ১৩ বিলিয়ন বা ১৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত বলছি না, কারণ স্থানের (বা দেশের) প্রসারণের জন্য মহাকাশবিদ্যায় দূরবর্তী গ্যালাক্সীদের দূরত্ব নির্ধারণ করা তুলমামূলকভাবে জটিল।] গ্যালাক্সীটি যদি “আজও” বেঁচে থাকে, তবে তার বয়স মহাবিশ্বের কাছাকাছিই হবে, কিন্তু তাকে আমরা যে অবস্থায় দেখছি সেটা তার শিশু অবস্থায়, সে বোধহয় সবে জন্মগ্রহণ করেছে। মহাবিশ্বের বয়স যদি এখন হয় ১০০, তখন মহাবিশ্বের বয়স সবে ৪.৪ (বা বর্তমান বয়সের ৪.৪%)। তখন এই গ্যালাক্সী থেকে যে আলো বিকিরিত হয়েছিল আজ আমরা তা দেখতে পারছি। সেই সময় পৃথিবীর জন্মগ্রহণ হয় নি।
শক্তিশালী দূরবিন দিয়ে বিজ্ঞানীরা দেশ-কালের চরম প্রান্তে প্রথম নক্ষত্র বা প্রথম গ্যালাক্সীর খোঁজ করছেন। তাহলে আমরা কি মহাবিশ্বের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছে গেছি? আমরা কি তাহলে ঐ গ্যালাক্সীর থেকে দূরবর্তী কোন বস্তু এর আগে অবলোকন করি নি? এর উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ! করেছি। প্রায় ৪৫ বছর আগে প্রথমবারের মত আমরা মহাবিশ্বের প্রায় শেষ প্রান্ত থেকে আগত আলো কিছুটা কাকতালীয় ভাবে হলেও প্রথম বারের মত পর্যবেক্ষণ করেছি, এখনও করে যাচ্ছি। সেই আলো গ্যালাক্সীর মত কোন একক বস্তু থেকে আসছে না, সে আলো আসছে আমাদের চারপাশ ঘিরে মহাবিশ্বের যে সীমানা সেইখান থেকে। সেই আলো অবশ্য চোখে দেখা যায় না, তার তরঙ্গ দৈর্ঘ মাইক্রো-ওয়েভ এলাকায়। এই পর্যবেক্ষণের পর জ্যোতির্বিজ্ঞান পুরোপুরি বদলে গেছে।
১৯৬৫ সালে নিউ জার্সীতে বেল ল্যাবরেটরীর দুজন বিজ্ঞানী প্রায় হঠাৎ করেই একটা বড় রেডিও এন্টেনার মাধ্যমে এই মাইক্রো-ওয়েভ তরঙ্গের সন্ধান পেয়েছিলেন, যে তরঙ্গ মনে হল আকাশের সব দিক থেকেই আসছে, দিনে ও রাতে। তাকে বলা হল কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড বা সিএমবি (CMB)। উইকিপিডিয়ার বাঙ্গালীরা দেখলাম এটার নাম দিয়েছেন মহাবিশ্ব অণুতরঙ্গ পটভূমি বিকিরণ। যাইহোক, সিএমবি দেখা গেল বহু কোটি বছর আগে ঘটিত বিগ ব্যাংএর বিস্ফোরণে সৃষ্ট শক্তির অবশেষ। সিএমবি আবিষ্কারকদের নোবেল পুরস্কার দেয়া হল, যদিও এই বিকিরণের ভাবীকথন অনেক তাত্ত্বিক বিজ্ঞানীরা আগেই করেছিলেন। সেই আবিষ্কারের পর বহু দশক কেটে গেছে। ইতিমধ্যে সিএমবিকে কৃত্রিম উপগ্রহ ও বেলুনে বসানো যন্ত্র দিয়ে আরো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অবলোকন করা হয়েছে। ১৯৯০এর দশকে COBE উপগ্রহ সিএমবির মধ্যে ঔজ্জ্বল্যের ওঠানামার ওপর ভিত্তি করে মহাজাগতিক বস্তুর আদি ঘনত্বের বিতরণকে কিছুটা নির্ধারণ করতে পারলো। তার জন্যেও আর একটি নোবেল পুরস্কার দেয়া হল। তার দশ বছর পর WMAP নামে আর একটি উপগ্রহ-যন্ত্র আরো যথার্থতা সহকারে সিএমবি মেপে দেখালো যে আমাদের মহাবিশ্বের স্থান (বা দেশের) মেট্রিক সমতল (বক্র নয়), অর্থাৎ একটি আলোর রেখা মহাবিশ্বে প্রায় সরলরেখায় ভ্রমণ করবে।
কিন্তু সিএমবি শুধুমাত্র বিগ ব্যাংএর অবশেষ নয়। আমাদের দ্বারা নিরূপিত প্রতিটি সিএমবি ফোটন মহাবিশ্বের একদম শেষ প্রান্ত থেকে আসছে। বিগ ব্যাংএর পরে বস্তুর ঘনত্ব ধীরে ধীরে হাল্কা হয়ে আসছিল। কিন্তু তার মধ্যেও আলোর কণিকা বা ফোটন ইলেকট্রনের মেঘের মধ্যে আটকে পড়েছিল। বিগ ব্যাংএ সৃষ্ট ফোটন কণাসমূহ ইলেকট্রনের সাথে ক্রমাগত আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে আবদ্ধ ছিল। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা ঠাণ্ডা হয়ে আসলে ইলেকট্রন প্রোটনের কক্ষপথে আবদ্ধ হয়ে সৃষ্টি করল হাইড্রোজেন পরমাণুর, ফোটনের সাথে তার বিক্রিয়ার পরিমাণও সেই সাথে কমে গেল। বিগ ব্যাংএর প্রায় ৩৫০,০০০ বছর পরে ফোটন মুক্ত হল, সেই ফোটনই প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর পরে আজ আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। এর মধ্যে মহাবিশ্বের ক্রমাগত সম্প্রসারণের ফলে এই সিএমবি ফোটনের তাপমাত্রা তাদের আদি ৩০০০ কেলভিন (বা প্রায় ৩০০০ সেলসিয়াস) থেকে ২.৭ কেলভিনে নেমে এসেছে। বলা যায় সিএমবি’র প্রতিটি ফোটন মহাশূন্যের শেষ প্রান্ত থেকে এসেছে। কিন্তু তারা মুক্তি পেয়েছে বিগ ব্যাংএর ৩৫০,০০০ বছর পরে, তার মানে আমরা যাই করি না কেন আমরা সেই সাড়ে তিন লক্ষ বছরের দেয়াল পার হতে পারবো না, অর্থাৎ বিগ ব্যাংএর ৩৫০,০০০ বছরের মধ্যে কি হয়েছিল তার কোন সম্যক ছবি আমরা পাবো না (যদিও নিউট্রিনো পটভূমি বলে একটা জিনিস আছে যার সূত্রপাত হয়েছে বিগ ব্যাংএর প্রথম ১০ সেকেন্ডের মধ্যে, সেই আদি নিউট্রিনোর সন্ধান এখনও পাওয়া যায় নি)।
এই “দেয়াল”টা কি সত্যি একটা কিছু? এর উত্তরটা মহাজাগতিক অনেক কিছুর মতই একটু জটিল। এটা সবই নির্ভর করে সময়ের সাথে আমাদের অবস্থানের ওপর। আমরা সবাই জানি সারা মহাবিশ্বের জন্য কোন “এখনই” মূহুর্ত নেই। কিন্তু সারা বিশ্বের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময়কে আমরা কেমন করে নির্ধারণ করবো? একটা খুব সহজ উদাহরণ দিয়ে শুরু করা যাক। আমাদের সূর্য। সূর্যের যে ছবিটা আমরা পাই তার সৃষ্টি হয়েছে সূর্য পৃষ্ঠে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড আগে। কাজেই আমাদের ও সূর্যের জন্য “এখনই” বলে একটা সময় আমরা সৃষ্টি করতে পারি যদি আমরা এই মূহুর্তে (সময় = ০) একটা পৃথিবী পৃষ্ঠেরর ছবি তুলি, তারপর ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড (সময় = ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড) অপেক্ষা করি এবং সূর্যের একটা ছবি তুলি। এই দুটো ছবি পাশাপাশি রেখে আমরা দাবী করতে পারি আমরা আমাদের সংলগ্ন পৃথিবী পৃষ্ঠের ও সূর্যের “এখনই” বলে একটা বাস্তবতার সৃষ্টি করেছি। এই যুক্তি অনুযায়ী, আমরা ৪.৩৬ বছর অপেক্ষা করে নিকট তারা আলফা সেন্টাউরির (সময় = ৪.৩৬ বছর) ছবি তুলে তাকে আমাদের তথাকথিত “এখনই” মূহুর্তের অন্তর্ভূক্ত করতে পারি। আমাদের ২.৫ মিলিয়ন (২৫ লক্ষ) বছর অপেক্ষা করতে হবে নিকটবর্তী বড় গ্যালাক্সী অ্যান্ড্রোমিডাকে “এখনই” মূহুর্তের অ্যালবামে ভর্তি করতে।
ওপরের এই নকশা অনুযায়ী আমাদের ১৪ বিলিয়ন বছর অপেক্ষা করতে হবে আমাদের তথাকথিত সিএমবি দেয়ালকে “এখনই” মুহূর্তের সঙ্গী করতে। কিরকম হবে তখন সেই “এখনই” দেয়াল? ১৪ বিলিয়ন বছর পরে, আমরা (বা অন্য কোন বুদ্ধিমান প্রাণী) হয়তো দেখব সেই “দেয়ালের” অবস্থানে অবস্থিত আমাদের মতই এক মহাবিশ্ব, আমাদের চারপাশের সাধারণ যেরকম গ্যালাক্সী সেরকম গ্যালাক্সীতে ভরপূর। আর সেখানে যদি আমাদের মত “বুদ্ধিমান” প্রাণী থেকে থাকে, তারাও হ্য়তো দূরবিন লাগিয়ে আমাদের দেখছে, কিন্তু আমাদের গ্যালাক্সীর বদলে তারা দেখছে সেই সিএমবি “দেয়াল”। যতদিনে তারা জানবে “ছায়াপথ” গ্যালাক্সীর কথা, ততদিনে আরো ১৪ বিলিয়ন বছর চলে গেছে। এই নকশা অনুযায়ী, মহাবিশ্বে কোন বিশেষ অবস্থান নেই, প্রতিটি দর্শক তার নিজস্ব মহাবিশ্বের “কেন্দ্রে” দাঁড়িয়ে আছে। আর “সিএমবি” দেয়াল? সে কোথায় থাকবে তখন? এই গ্যালাক্সীতে তখন কোন বুদ্ধিমান প্রাণী বেঁচে থাকলে তার দেখবে এমন একটি “দেয়াল” যার ফোটনেরা প্রায় ২৮ (১৪ + ১৪) বিলিয়ন বছর আগে তাদের যাত্রা শুরু করেছিল।
দৃশ্যমান মহাবিশ্ব হচ্ছে আমাদের পর্যবেক্ষণের আওতাধীন মহাবিশ্ব, শুধুমাত্র গত ১৩ বা ১৪ বিলিয়ন বছরের মধ্যে যে আলো আমাদের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে, সেই আলো অবলোকনের মাধ্যমে এই মহাবিশ্বের সীমানা রচিত হয়। আমাদের পর্যবেক্ষণ একটা “দেয়াল” দ্বারা আবদ্ধ। আমরা যাই করি না কেন, যতই শক্তিশালী দূরবিন ব্যবহার করি না কেন, আমরা সেই “দেয়াল” ভেদ করতে পারব না। এই দৃশ্যমান মহাবিশ্ব সমগ্র মহাবিশ্বের একটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ হতে পারে। সমগ্র মহাবিশ্ব কত বড় সেই সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণাই নেই।
ফিরে আসি আপাততঃ দূরতম গ্যালাক্সীর পর্যবেক্ষণে। জ্যোতির্বিদরা চিলির ইউরোপিয়ান সাদার্ন অবজারভেটরীর VLT (ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ) দিয়ে ১৩.১২ বিলিয়ন বছর আগের এই গ্যালাক্সীটি দেখেছেন। তাদের এই নিরীক্ষণ ২০০৯ সালের অক্টোবর মাসে সৃষ্ট দূরতম একক মহাজাগতিক বস্তুর রেকর্ড ভেঙ্গে দিল। ঐ মাসে জ্যোতির্বিদরা আবিষ্কার করেছিলেন একটি গামা-রে বার্স্ট যা কিনা বিস্ফোরিত হয়েছিল ১৩.০৯ বিলিয়ন বছর আগে। এর আগের রেকর্ড ছিল একটি গ্যালাক্সী, যেখান থেকে আলো ১২.৯৩ বিলিয়ন বছর আগে রওনা দিয়েছিল। একটার পর একটা রেকর্ড ভাঙ্গছে, আমরা ধীরে ধীরে প্রথম সৃষ্ট গ্যালাক্সীটির সন্ধান করছি। দেখা যাচ্ছে বিগ ব্যাংএর কয়েকশো মিলিয়ন বছরের মধ্যেই প্রথম নক্ষত্র ও প্রথম গ্যালাক্সীগুলো তৈরি হয়েছিল। তাদের আলো চারপাশের হাইড্রোজেন গ্যাসকে আয়নিত করেছিল, এই নিউট্রাল হাইড্রোজেন দৃশ্যমান আলোকে আটকে রাখতো। বলা হয়ে থাকে বিগ ব্যাংএর পরে যে অন্ধকার যুগ শুরু হয়েছিল এই আয়নায়নের মাধ্যমে সে যুগের অবসান হল।
কিন্তু আমরা যখন সেই প্রথম গ্যালাক্সিটি আবিষ্কার করবো, তখন কি হবে? (এমনও হতে পারে আমরা প্রথম সৃষ্ট তারাটি আবিষ্কার করতে পারি যদি সেটি গামা-রে বার্স্ট হিসেবে বিস্ফোরিত হয়।) দূরতম গ্যালাক্সিটি যখন আবিষ্কার হবে, জ্যোতির্বিদরা তখন কি করবেন? তারা কি ডাকটিকিট সংগ্রহের মত দৃশ্যমান মহাবিশ্বের প্রতিটি গ্যালাক্সীকে নথিবদ্ধ করবেন? অথবা খোঁজ করবেন আর একটি সৌর জগতের (এর মধ্যে এমনতর ৫০০টি সৌর মণ্ডলের সন্ধান পাওয়া গেছে)? অথবা আর একটি সুন্দর মহাকর্ষ লেন্স মাধ্যমে একটি গ্যালাক্সীর বহু প্রতিচ্ছায়া মাধ্যমে খোঁজ করবেন ডার্ক ম্যাটারের। আমরা এখন জানি মহাবিশ্বের বেশীর ভাগ বস্তুই আমাদের কাছে দৃশ্যমান নয় (ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি)। কিন্তু যে সমস্ত জিনিস আমরা চোখে দেখি, যাদের অত্যাশ্চার্য ছবি আমাদের জ্যোতির্বিদ্যায় আকৃষ্ট করেছিল, তাদের ভাগ্য বোধহয় শুধুমাত্র বড় বড় ক্যাটালগে নথিভুক্ত হওয়া।
জ্যোতির্বিদ্যা নিশ্চয় প্রাচীনতম বিজ্ঞানসমূহের মধ্যে একটি। যদি আগুনের আবিষ্কার ও রন্ধনবিদ্যাকে রসায়ন শাস্ত্রের অন্তর্গত ধরা হয়, তবে রসায়ন একটি প্রাচীন বিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যাও নিশ্চয়ই সেই ধরণের প্রাচীনত্ব দাবী করতে পারে। প্রাচীন মানুষ, আফ্রিকার সাভানা থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার সময় তাদের ক্যাম্পের আগুণের স্ফুলিঙ্গকে অনুসরণ করে নিশ্চয়ই নিচ্ছিদ্র কালো আকাশের স্ফটিকসম বিন্দুদের চরিত্র নিয়ে ভেবেছিল। তারা তখনকার পাঁচটি দৃশ্যমান গ্রহের পদচারণাকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে নিরীক্ষণ করেছিল, তাদের বলেছিল ভ্রমণকারী। তারা পৃথিবীর কিংবদন্তী কালো আকাশে স্থাপন করেছিল। তার হাজার হাজার বছর পরে, আজ আমরা বলছি মহাকাশকে আমরা যতটুকু দেখার তা প্রায় দেখে ফেলেছি। তবু আমাদের সংশয়বাদী বন্ধুরা বলবেন, আমরা এখানে এর আগেও ছিলাম। ঊণবিংশ শতাব্দীর শেষে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানীরা ভেবেছিলেন প্রকৃতির সব রহস্যের সমাধান হয়ে গেছে, এখন শুধু পৃথিবীর বা মহাবিশ্বের শ্রেণীবিন্যাস বাকি যা কিনা বোটানী বা ডাক-টিকিট সংগ্রাহকের অনুশীলনের মতই। এর কিছু পরেই আপেক্ষিকতা ও কোয়ান্টাম তত্ত্ব জগত সম্বন্ধে আমাদের বোধের আমূল পরিবর্তন করল। জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে আমরা কি আবার সেই জায়গায় ফিরে আসে নি? ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জী কি নতুন বিজ্ঞানের দিশা দিচ্ছে না? অবশ্যই। কিন্তু পর্যবেক্ষণ জ্যোতির্বিদ্যা (astronomy) ও জ্যোতির্পদার্থবিদ্যার (astrophysics) মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। পৃথিবীতে নতুন একটা দ্বীপ আবিষ্কার করা (যা কিনা এখন কার্যতঃ প্রায় অসম্ভব) এবং দ্বীপ গঠনের প্রক্রিয়াকে অধ্যয়ন করার মধ্যে যে পার্থক্য এই পার্থক্যটা মূলতঃ তাই। কসমিক স্ট্রিং বা ওয়ার্ম হোলের মত কুহেলিকাময় Holy Grailএর সন্ধানের আশা জ্যোতির্বিদ্যা হয়তো রাখতে পারে, কিন্তু মহাবিশ্বের স্বরূপ উদঘাটন একমাত্র জ্যোতির্পদার্থবিদ্যাই করতে পারে। মহাবিশ্বের শেষ প্রান্তে পৌঁছে পর্যবেক্ষণ জ্যোতির্বিদ্যার দিন হয়তো শেষ হয়ে আসছে।
লেখাটা অনেক ভালো লাগলো। এরকম লেখা আরও চাই।
জ্যাতির্বিদ্যা নিয়ে আমার প্রচুর আগ্রহ। আর আমার এ আগ্রহের জন্যই হয়তবা আপনার লেখাটা অনেকটুকু বুঝেছি। এর জন্য এক কোটি বার আপনার পা সেলাম করলেও তার প্রতিদান হবেনা। এমন লেখা আরো চাই যাতে নিজেকে একটু বোর্ড বই থেকে মুখ তুলে আকাশটাকে দেখতে পারি। অসংখ্য ধন্যবাদ।
অসাধারণ লেখা! অনেক অনেক ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
কত সহজেই কী চমতকার সব লেখা পড়তে পারি। বেচারা আইনস্টাইনদের জন্য দুঃখ হয়। ইন্টারনেট ছিলো না তাদের। 🙁
ডার্ক এনার্জি-ডার্ক ম্যাটেরিয়াল এগুলো নিয়ে প্রচণ্ড কৌতুহল বোধ করি। এই জীবনে এদের সলুক-সন্ধান হবে কি না কে জানে।
প্রবন্ধটি তিনবার পড়লাম। দীপেন ভট্টাচার্যের লেখাটি Intermediate Levelএ কোন বাংলা সংকলনে স্থান পাওয়ার যোগ্য।
১৯৬৮ সালে বাংলা সঙ্কলনে পাঠ্য ছিল, “বুড়ো পৃথিবীটা কত বুড়ো” লেখক সম্ভবত আব্দুল্লাহ আল-মূতী শরফুদ্দীন। এই প্রবন্ধই মহাকাশ সমন্ধে আমার হাতেখড়ি। তার পরে থেকেই মহাকাশ সমন্ধে লেখা দেখলেই বুঝার চেষ্টা করি।
@নৃপেন্দ্র সরকার, লজ্জা দিলেন দাদা :-)। আপনার confidenceএর জন্য ধন্যবাদ। পরে এই নিয়ে আরো আলোচনা হবে আশা করি।
লেখা ভালো লাগলো খুবই। মহাশূণ্যবিদ্যা নিয়ে আরও লিখুন আমাদের জন্য। তবে এই অংশটা
ঠিক বুঝতে পারিনি। মহাশূণ্যের ব্যস কি ১৪x২ বিলিয়ন আলোকবছর?
আমার আরও একটা আগ্রহের বিষয় আছে, স্টেলার নিউক্লিওসিন্থসিস। কতোটুকু শক্তি লাগে ভারী পরমানু বানাতে, সেই শক্তি কোথা থেকে আসে, প্রকট পরিবেশে ওই বিশালাকৃতির পরমানুগুলোর ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় না কেনো, কি করে ঐ নতুন পরমানু সারা মহাশূণ্যময় ছড়িয়ে পড়ে, এই বিষয়গুলো নিয়ে ভবিষ্যতে কখনও লিখবেন আশা রাখি।
@আল্লাচালাইনা,
Stellar nucleosythesis এই ভিডিও ক্লিপটি দেখেছিলামঃ
http://www.youtube.com/watch?v=neMEo8ZrwuI&NR=1
@আল্লাচালাইনা, রৌরবের প্রশ্নের উত্তরে আপনার প্রশ্নের কিছু আলোচনা আছে, দেখে নেবেন। এই মুহূর্তে দৃশ্যমান মহাবিশ্বের “ব্যাস” ৪২ x ২ = ৮৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ বা তার থেকে একটু বড় হতে পারে। প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ।
@দীপেন ভট্টাচার্য,
আপনাকে ধন্যবাদ এমন একটি লিখা উপহার দেয়ার জন্যে। মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের কৌতুহল আনেক। এ ধরনের লিখা বেশি বেশি হলে আমারা এ ব্যাপারে অনেক তথ্য জানতে পারবো।
আমার প্রশ্ন হলো, zero time (বিগ ব্যাং মুহুর্ত) থেকে এই ৩৫০,০০০ বছর, অর্থাৎ Event Horizon এর ভিতরের সময় এবং তার বাহিরের সময় -এর মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কিনা। proper time জিনিস টা আসলে কি।
@গোলাপ, সিএমবি তল বা দেয়ালকে ঠিক ইভেন্ট হরাইজন বলা যাবে না, আমাদের কাছে এই দেয়াল অস্বচ্ছ কারণ সেখানে থেকে আলো বের হতে পারে না বলে। বিগ ব্যাং থেকে পরবর্তী ৩৫০,০০০ বছরের সময় আর তার পরের সময়ের মাঝে চারিত্রিক কোন তফাৎ নেই (সাধারণ ও বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব দুটো ক্ষেত্রেই সময়ের প্রবাহের ওপর প্রভাব রাখবে)। আর proper time এর ব্যাখ্যাটা আপাততঃ থাকুক, তাকে ব্যবহার না করেও এই আলোচনা চলতে পারে। শুভেচ্ছা।
তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
লেখার শেষ বাক্যটা বেশ অর্থবহ মনে হলো আমার কাছে। জ্যোতির্বিদ্যা আর জোতির্পদার্থবিদ্যার মাঝে পার্থক্যটা বেশ ভালো করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু শুধু তাই নয়, আমার মনে হচ্ছে আরো অনেক ট্র্যাডিশনাল বিদ্যার দিনও শেষ হয়ে আসছে। হকিন্স যেমন তাঁর ‘গ্র্যান্ড ডিজাইনে’ দর্শনবিদ্যার অকার্যকারিতা নিয়ে মন্তব্য করেছেন।
@ইরতিশাদ, আপনার মন্তব্যর জন্য ধন্যবাদ। দর্শনবিদ্যা নিয়ে যা বলেছেন সেটা ইন্টারেস্টিং, আমি এটা নিয়ে বিশেষ কিছু জানি না, তবে মনে হয় মানুষের জাগতিক উদ্বিগ্নতা সব সময়ই মানুষকে কোন না কোন ধরণের দার্শনিক করে রাখবে। 🙂 তবে সব পদার্থবিদই বলে দর্শনবিদ্যার ব্যবহারিক প্রয়োগ অনেক ক্ষেত্রেই বিজ্ঞানের ক্ষতি করেছে। ভাল থাকবেন।
@দীপেন ভট্টাচার্য,
দর্শনবিদ্যার সমস্যাটাতো সেখানেই, উদ্বিগ্নতাই হচ্ছে দার্শনিকতার প্রাণভোমরা।
দর্শনবিদ্যার সাথে পদার্থবিদ্যার সম্পর্কটা সাংঘর্ষিক হতে বাধ্য।
ধন্যবাদ জবাবের জন্য।
বাহ ! বেশ প্রয়োজনীয় একটি লেখা। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
@মোজাফফর হোসেন, আপনাকেও ধন্যবাদ। ভাল থাকুন।
চমৎকার একটি লেখা। অনেক ধন্যবাদ দীপেনদা’কে লেখাটা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। :yes: :yes:
@সাইফুল ইসলাম, পড়ে ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগল। অনেক ধন্যবাদ।
এটা ৩৭৯,০০০ বছর হবে। আরেকটা কথা বলে দেওয়া ভাল-ফোটনের জন্ম হয় প্রথম সেকেন্ডেই-কিন্ত যতদিন না হাইড্রোজেন পরমানু না তৈরী হয়েছে, সে আবদ্ধ থেকেছে ম্যাটারের মধ্যে।
@বিপ্লব পাল,
ভাবছিলাম আপনি ২৭৯,০০০ সংখ্যাটা কোনখান থেকে পেলেন। 🙂 তারপর দেখলাম উইকিপিডিয়াতে এই নম্বরটা দেয়া আছে, কিন্তু তারা রেফারেন্স দিয়েছে হাইডেন প্ল্যানেটারিয়ামের একটা প্রকাশনার (refereed paper নয়)। আসলে এই সংখ্যার সুনির্দিষ্ট মান নির্ধারিত হয় নি, এটা অনেক কিছুর মতই মডেল নির্ভর। ইলেকট্রন রিকম্বিনেশন ও ফোটন ডিকাপলিং কোন এক মূহুর্তের ঘটনা নয়। পুরোপুরি আয়নিত অবস্থা থেকে নিউট্রাল হাইড্রোজেনে আসতে ৭০,০০০ বছরের ওপর সময় লাগবে। ইলেকট্রনের সাথে ফোটনের স্ক্যাটারিংএর হার ও মহাবিশ্বের স্ফীতির হার (হাবল প্যারামিটার দিয়ে নির্ণীত) যখন এক হবে তখনই ফোটন মুক্ত হবে। কিন্তু সেই মুক্তি এক দিনে হবে না, হাজার হাজার বছর ধরে হবে। আধুনিক সব কসমোলজী পাঠ্যপুস্তকই এই মুক্তির সময় আনুমানিক লাল সরণ বা redshift = ১১০০ ধরে যখন কিনা মহাবিশ্বের বয়েস ছিল ৩৫০,০০০ বছর। কিন্তু এই সংখ্যাটা এতটাই অনিশ্চিত (এমন কি ৫০,০০০ বছরের অনিশ্চয়তা থাকতে পারে) যে অন্য যে কোন নির্দিষ্ট সংখ্যারও (যেমন ৩৭৯,০০০ বছর) কোন যথার্থ নিশ্চয়তা নেই, এমন কি সেটা উইকিপিডিয়াতে থাকলেও।
আপনি বোধহয় লেখাটার নিম্নোক্ত অংশটি পড়েন নি –
“কিন্তু সিএমবি শুধুমাত্র বিগ ব্যাংএর অবশেষ নয়। আমাদের দ্বারা নিরূপিত প্রতিটি সিএমবি ফোটন মহাবিশ্বের একদম শেষ প্রান্ত থেকে আসছে। বিগ ব্যাংএর পরে বস্তুর ঘনত্ব ধীরে ধীরে হাল্কা হয়ে আসছিল। কিন্তু তার মধ্যেও আলোর কণিকা বা ফোটন ইলেকট্রনের মেঘের মধ্যে আটকে পড়েছিল। বিগ ব্যাংএ সৃষ্ট ফোটন কণাসমূহ ইলেকট্রনের সাথে ক্রমাগত আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে আবদ্ধ ছিল। ধীরে ধীরে তাপমাত্রা ঠাণ্ডা হয়ে আসলে ইলেকট্রন প্রোটনের কক্ষপথে আবদ্ধ হয়ে সৃষ্টি করল হাইড্রোজেন পরমাণুর, ফোটনের সাথে তার বিক্রিয়ার পরিমাণও সেই সাথে কমে গেল। বিগ ব্যাংএর প্রায় ৩৫০,০০০ বছর পরে ফোটন মুক্ত হল, সেই ফোটনই প্রায় ১৪ বিলিয়ন বছর পরে আজ আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।”
ভাল থাকুন।
প্রথম লাইনটি হবে
ভাবছিলাম আপনি ৩৭৯,০০০ সংখ্যাটা কোনখান থেকে পেলেন।
(২৭৯,০০০ নয়)
অস্পষ্ট ধারনা ছিল। অনেকটা পরিস্কার হয়েছে।ধন্যবাদ দীপেনদাকে
@বোকাবলাকা, অনেক ধন্যবাদ।
আমি যতটুকু বুঝি, মহাবিশ্বের সীমা তো থাকার কথা। যদি বিগ ব্যাং ১৪০০ কোটি বছর আগে হয়ে থাকে ও তার পর থেকে মহাবিশ্ব প্রসারিত হতে থাকে, তাহলে প্রসারণের গতিবেগ মহাবিশ্বের সীমাকে চিহ্নিত করবে। এই প্রসারণ গতির upper limit হল আলোর গতি। সুতরাং মহাবিশ্বের সর্বোচ্চ ব্যাসার্ধ ১৪০০ কোটি আলোকবর্ষের চেয়ে বেশি হবে না।
@FZ, আশা করি অন্যান্য পাঠকের সাথে কথোপকথনে আপনার এই প্রশ্নের উত্তর নিহিত আছে। বিগ ব্যাং যদি একটি বিন্দুতে সংঘটিত হত, তবে আপনি যা বলেছেন তাই ঠিক হত। যতদূর মনে হয় বিগ ব্যাং হবার ঘটনা আমরা যা মনে করি তার থেকে একটু জটিল, একটি নির্দিষ্ট বিন্দুতে সেটা হয়েছে এই ধারণা করলে পর্যবেক্ষিত মহাবিশ্বকে ব্যাখ্যা করা যাবে না।
আর একটি ব্যাপার হচ্ছে, যদিও মহাবিশ্বের বয়স ১৪ বিলিয়ন বছর, সিএমবি ফোটনকে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরত্ব পার হতে হয় আমাদের কাছে পৌঁছতে। শুভেচ্ছান্তে।
@দীপেন ভট্টাচার্য,
মহাবিশ্ব কতটুকু সম্প্রসারিত হয়েছে এতদিনে? উপরের বিবরণ শুনে মনে হচ্ছে উত্তরটি ৩ হতে পারে, কিন্তু নিশ্চয়ই আমার ভুল হচ্ছে কোথাও। সম্প্রসারণ বিষয়ে আরেকটি প্রশ্ন, সম্প্রসারণ কিসের প্রেক্ষিতে হচ্ছে? আপনার আগের বিবরণে মনে হয়েছে, সম্প্রসারণ আর কিছুই না, মহাবিশ্বের মেট্রিক স্পেসটি stretched হয়ে চলেছে অবিরত। এটা আগেও কিভাবে যেন শুনেছিলাম। প্রশ্নটি হল, কার সাপেক্ষে stretched হচ্ছে?
@রৌরব, আপনি ঠিকই ধরেছেন। এই ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৩। আলো যতদিনে আমাদের কাছে আসে, ততদিনে সম্প্রসারণের জন্য উৎসটি দূরে সড়ে যেতে থাকে। কতদূরে সেটা যাবে তাও মডেলের ওপর নির্ভর করে। সিএমবি ফোটন ১৪ বিলিয়ন বছর ধরে ভ্রমণ করছে, তার মানে এই নয় যে সিএমবি দেয়াল ১৪ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। আসলে যখন এই ফোটন তার যাত্রা শুরু করেছিল সেই ফোটনের উৎস আমাদের খুব কাছাকাছি ছিল, মহাবিশ্ব তখন এখনকার তুলনায় ১০০০ গুণ ছোট ছিল। আর “এখন” সিএমবি তল বা দেয়াল আমাদের থেকে প্রায় ৪২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। যদিও স্থানীয় ভাবে সেই ফোটন আলোর গতিবেগ আলোর চাইতে বেশী হবে না, কিন্তু স্থানের সামগ্রিক প্রসারণের ফলে ১৪ বিলিয়ন বছরে সিএমবি দিগন্ত আমাদের থেকে ৪২ বিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে থাকবে। [দূরত্বটা শুধু (আলোর গতিবেগ x সময়) নয়, এর সঙ্গে একটা (সময়)^(২/৩) স্কেল ফ্যাক্টর আছে।]
আর সম্প্রসারণ কিসের প্রেক্ষিতে হচ্ছে সেটা ভাবতে হলে স্থানীয় ফ্রেম ঠিক করতে হবে। সম্প্রসারণকে দুটি দূরবর্তী গ্যালাক্সীর অন্তর্বর্তী দূরত্ব বৃদ্ধি হিসেবে দেখা যেতে পারে। এখানে দূরত্বের স্কেল ফ্যাক্টরের ধারণাটা কাজে লাগে। আমাদের মহাবিশ্বের দৈর্ঘ্য বা ব্যাস এখন ১ হলে, যখন তার দৈর্ঘ্য এখনকার তুলনায় অর্ধেক ছিল, তখন স্কেল ফ্যাক্টর হবে ১/২। কোন এক সময়ে স্কেল ফ্যাক্টর ছিল ১/১০০০, তখনই সিএমবির বিকিরণ হয়েছে।
এই নিয়ে পরে আরো আলোচনা করা যাবে। শুভেচ্ছান্তে।
অনেক ধন্যবাদ লেখাটার জন্য। আশা করি, আপনার কাছ থেকে আরও ঘন ঘন এরকম চমৎকার সব লেখা পাবো। একটা প্রশ্ন ছিল,
এই দুটি বক্তব্য কি পরস্পরবিরোধী হয়ে যাচ্ছে না, নাকি আমি ভুল বুঝলাম?
@বন্যা আহমেদ, ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার জন্য।
রৌরবের একই প্রশ্ন ছিল। আমি উত্তর দিয়েছি
গ্যালাক্সীটি যদি “আজও” বেঁচে থাকে, তবে তার বয়স মহাবিশ্বের কাছাকাছিই হবে, কিন্তু তাকে আমরা যে অবস্থায় দেখছি সেটা তার শিশু অবস্থায়, সে বোধহয় সবে জন্মগ্রহণ করেছে। হয়তো আমার বলা উচিত ছিল – মহাবিশ্বের বয়স যখন সবে ৪.৪ (বা বর্তমান বয়সের ৪.৪%) তখন এই গ্যালাক্সী থেকে যে আলো বিকিরিত হয়েছিল আজ আমরা তা দেখতে পারছি।
আশা করি এটা বোঝা যাচ্ছে।
চমৎকার লেখা। আপনার কাছে থেকে এই বিষয়ের উপর আরো আরো লেখা চাই।
@স্বাধীন, অনেক ধন্যবাদ লেখাটা পড়ার ও সহৃদয় মন্তব্যর জন্য।
আমার মাথায় অনেকদিন ধরেই কিছু প্রশ্ন ঘোরে। আশা করি আমার প্রশ্নগুলো শুনে হাসবেন না। আমার জ্যোতির্বিদ্যার জ্ঞান পত্র পত্রিকা ও ডিসকভারি চ্যানেল পর্যন্ত।
প্রথমেই সম্ভাব্য একটি ভুলের কথা বলি। ১৩.১২ বিলিয়ন মনে হয় ১হাজার ৩শত বার কোটি বছর হবে।
আমাদের পৃথিবী যদি মহাবিশ্বের কেন্দ্রে না হয়ে থাকে , তাহলে একেক দিকের সীমানার দুরত্ব তো ভিন্ন হওয়া উচিৎ। কিন্তু কখনো শুনি না সবচেয়ে কাছের সীমানার দুরত্ব কত, কেন? এই ১৩.১২ বিলিয়ন সময়ে মহাবিশ্বের প্রসারন ঘটেছে , তাহলে ঠিক কোথায় বা কতদুরে এই মুহুর্তে মহাবিশ্বের শেষ সীমা? শেষ সীমার ওপাশে কি কিছু আছে? থাকলে বা না থাকলে তার সীমা কতটা?
নক্ষত্রের আলো তো সকল দিকেই যাওয়ার কথা। তাহলে সবচেয়ে দুরের নক্ষত্রের আলো যেমন আমাদের দিকে ১৩.১২ বিলিয়ন বছর আগে রওনা হয়েছিল , তেমনি উল্টা দিকেও তো রওনা হয়েছিল। তাহলে সীমা কেমনে নির্ধারন করব?
@ফারুক,
ভাল প্রশ্ন।
@ফারুক,
ঠিকই বলেছেন। ১ বিলিয়ন = ১০০০ মিলিয়ন = ১০০ কোটি, কাজেই ১৩ বিলিয়ন = ১ হাজার ৩ শো কোটি। সংশোধনের জন্য ধন্যবাদ।
WMAP ইত্যাদি পর্যবেক্ষণের পর মনে হচ্ছে মহাবিশ্ব অসীম হতে পারে। কিন্তু কোন cosmologist এই কথাটা জোর গলায় বলছেন না, তারা আরও কিছু প্রমাণের অপেক্ষায় আছেন।
১.তাহলে অসীম মহাবিশ্বের “দৃশ্যমান” সীমানা কেমন করে থাকতে পারে? সেটা লেখার মধ্যে দ্বিতীয় চিত্র দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেছি। প্রথমতঃ আমরা “আসল” মহাবিশ্বের কেন্দ্রে না থাকতে পারি, কিন্তু আমরা আমাদের “দৃশ্যমান” মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থিত। চিন্তা করুন, আপনি খোলা সমুদ্রে জাহাজে আছেন। আপনার চারদিকের দিগন্তের তুলনায় আপনি সেই সমুদ্রের কেন্দ্রে অবস্থিত, কারণ দিগন্তের ঐ পারে কি আছে সেটা আপনি দেখতে পারছেন না। মহাবিশ্বের জন্য “দিগন্ত” হচ্ছে “সিএমবি” দেয়াল। আপনি যত দিগন্তের দিকে যাবেন তত আপনার দিগন্ত রেখা বদলাবে, আপনি সেই সমুদ্রের যেখানেই থাকুন না কেন, আপনার দৃশ্যমান সমুদ্র জগতের কেন্দ্রে আপনিই অবস্থিত থাকবেন। তাই “সমগ্র” মহাবিশ্বের প্রতিটি গ্যালাক্সী তার “নিজস্ব দৃশ্যমান মহাজগতের” কেন্দ্রে অবস্থিত। এখানে “সীমা” বলতে একটা “কৃত্রিম দৃশ্যমান” সীমানার কথা বলা হচ্ছে। আসলে হয়তো কোন সীমানা নেই!
২. এখন মনে করুন বিগ ব্যাং ১৪ বিলিয়ন বছর আগে সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু বিগ ব্যাং কোন একটি বিন্দুতে হয় নি (৩ নং চিত্র দেখুন)। এটা হয়েছে এমন একটা “উপাদানে” যা কিনা আমাদের বোধে তিনটি মাত্রায় অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত (অথবা বিশাল দূরত্ব পর্যন্ত বিস্তৃত, আমরা এখনও জানি না)। মনে করুন এই “উপাদান” রাবারের মত, তাকে x, y, z এই তিনটি মাত্রায় stretch করা যায়। প্রতিটি বিন্দুতে আদি “উপাদান” বিশাল একটা ঘনত্ব (বা শক্তি) নিয়ে বসেছিল, বিগ ব্যাংএর পরে তা হাল্কা হতে শুরু করে। রাবারের পরমাণুগুলি যেমন এই stretchএর ফলে একে অপরের কাছ থেকে দূরে সরে যাবে তেমনই মহাবিশ্বের বস্তু সমূহ একে অপরের কাছ থেকে সড়ে যাচ্ছে। বিগ ব্যাংএর ফলে যে সিএমবি সৃষ্টি হয়েছিল তার সময় লাগবে সেই প্রসারণশীল রাবারের বিভিন্ন অংশে পৌঁছাতে। মনে করুন আপনি একটি পুকুরের বিভিন্ন জায়গায় একই সময়ে ঢিল ছুঁড়েছেন। প্রতিটি ঢিল থেকে একটা তরঙ্গ সাড়ি ছড়িয়ে পড়বে, পুকুরের এক কোণায় যে ঢিলটা পড়েছিল, সেখানে অন্য কোণা থেকে তরঙ্গ আসতে সময় লাগবে।
আমরা এখন ১৪ বিলিয়ন দূরের সিএমবি দেখছি, আর ১ বিলিয়ন বছর অপেক্ষা করলে ১৫ বিলিয়ন দূরের সিএমবি (আসলে যত অপেক্ষা করব সিএমবি দেখা তত দূরুহ হবে)। কিন্তু আমরা যদি “এখনই” ১৪ বিলিয়ন আলোকবছর (এই নম্বরটা আসলে ঠিক নয়) দূরে যেতে পারতাম তাহলে হয়তো দেখতাম সেখানে সিএমবি দেয়ালের বদলে আমাদের মতই একটা গ্যালাক্সী।
আমি ঠিক বোঝাতে পারলাম কিন জানি না, কিন্তু আপনি যদি শুরুতে মহাবিশ্বকে অসীম ধরে নেন, তাহলে এই চিত্রটা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে। জানাবেন।
ধন্যবাদ।
@দীপেন ভট্টাচার্য,আগেই আপনাকে ধন্যবাদ জানাই , আমার কৌতুহল নিবৃত্ব করতে আপনি কষ্টকরে যে সময় ব্যায় করেছেন , তার জন্য। কিন্তু কৌতুহল কমার বদলে আরো বেড়ে গেল।
১)
তাহলে তো দেখি বাইবেলের দাবী সত্য হতে চল্লো!! আমরা কি আবার পিছনের দিকে ছুটছি?
২)
এটা মনে হয় নুতন শুনলাম। অনেকগুলো বিগব্যাং ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় হয়েছিল?
আপ্নি পোস্টে বলেছেন এই মহা বিশ্ব ফ্লাট। তাহলে তো দিগন্ত থাকার কথা নয়। প্রতিটি গ্যালাক্সি থেকেই যদি সীমা ১৩ বিলিয়ন আলোক বর্ষ দুরে হয় , তাহলে তো সীমাই খুজে পাওয়া যাবে না। তাছাড়া ফ্লাট বিশ্বে সকলের থেকে সকলের একি সাথে দুরে সরা সম্ভব না। একের সাথে অন্যের সংঘর্ষ অনিবার্য হয়ে পড়ে বলেই আমার সাধারন জ্ঞানে বলে। রাবারের বেলুনের মতো হলে না হয় মেনে নেয়া যায় সদা সম্প্রসারিত মহা বিশ্বের গ্যালাক্সি গুলো একে অপরের থেকে দুরে সরে যাচ্ছে এবং যে যত দুরে আছে সে আরো দ্রুত সরে যাচ্ছে। সেই হিসাবে একটা কেন্দ্র থাকার কথা এবং কেন্দ্র স্থীর থাকার কথা। যতদুর জানি এই মহাবিশ্বের সবকিছুই ছুটছে , তাহলে তো কেন্দ্র এই মহাবিশ্বের বাইরে হওয়ার কথা , নয় কি?
@ফারুক,
না, আমরা by default দৃশ্যমান মহাবিশ্বের কেন্দ্রে, সেজন্যই আমি সমুদ্রে জাহাজের উদাহরণ দিয়েছিলাম। যেমন by default আপনি আপনার জীবনের কেন্দ্রে, আপনি যখন চারদিকে তাকিয়ে দেখেন আপনার দৃষ্টি একটা পরিসীমা রচনা করে যার কেন্দ্রে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন। সেই ক্ষেত্রে মহাবিশ্বের প্রতিটি বিন্দু তার জন্য মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থিত। তার মানে কি আসলেই সে মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থিত? তা অবশ্যই নয়।
হ্যাঁ, এটা কিছুটা নতুন কথাই বটে। আসলে এটা “অ্যাড-হক” একটা ব্যাখ্যা, হাইপথেসিস মাত্র। আপনি যদি মহাবিশ্বকে শুরুতে “অসীম” ভাবেন তাহলে অনেক সমস্যা দূর হয়ে যায়। তার প্রতিটি বিন্দুতে বিগ ব্যাং সংঘটিত হলে প্রতিটি বিন্দুই প্রসারিত হয়েছে (অনেক গুলি বিগ ব্যাংগ ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় নয়, ভাবতে হবে প্রতিটি বিন্দুতে বিগ ব্যাংগ)। আপনি যে বেলুনের উদাহরণ দিয়েছেন তাকে ত্রি-মাত্রায় নিয়ে বলতে পারেন একটা ময়দার গোলাকে bake করছেন। তাহলে তো গোলাটা সব দিক দিয়ে ফুলে-ফেঁপে উঠবে, তার কোন অংশ কি অন্য কোন অংশের সংগে সংঘর্ষ করবে? করবে না। এখন মনে করুন আপনি বিশাল একটা ময়দার গোলাকে bake করছেন। প্রতিটি অংশ ফুলবে, আপনি যদি সেই ময়দার একটা পরমাণু হন এবং baking যদি সব জায়গায় একই সময়ে শুরু হয় সেই bakingএর সংবাদটা কাছের পরমাণু থেকে আগে আসবে, দূরের পরমাণু থেকে পরে আসবে। এই সংবাদ আসাটা আলোর গতির ওপর নির্ভর করে। baking শুরুর সংবাদটা হচ্ছে সিএমবি ফোটন।
এই ধরণের মহাবিশ্বের কোন সীমানা নেই। আমি যে সীমার কথা বলছি তাহল আপাতঃ দৃষ্টিতে সীমার কথা, কারণ ১৪ বিলিয়ন আলোক বছরের মধ্যে যা আছে আমরা শুধু তাই দেখব – এর মূল কারণ আলোর সীমিত গতি ৩০০,০০০ কিমি প্রতি সেকেন্ডে এবং অস্বচ্ছ সিএমবি দেয়াল। আলোর গতি যদি অসীম হত আমরা মূহুর্তে সারা মহাবিশ্ব দেখে ফেলতাম যদি সেই সিএমবি দেয়াল না থাকত।
জিনিসটা ঠিকমত বলা গেল না। নিশ্চয় এই নিয়ে আরো আলোচনা হবে। ভাল থাকবেন।
@দীপেন ভট্টাচার্য, যেটা বুঝলাম, আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যাল্যাক্সি আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বের কেন্দ্রে অবস্থিত। ধরে নিলাম আমাদের ডানদিকে ১৩.১২ বিলিয়ন আলোকবষ দুরে শেষ সীমায় যে গ্যালাক্সি আছে তার নাম ‘A’ আর বাম দিকে শেষ সীমার গ্যালাক্সি ‘B’। এখন ‘A’ গ্যালাক্সিতে যদি কোন আমাদের মতোই বুদ্ধিমান কোন প্রাণী থেকে থাকে তারাও নিজেদেরকে তাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্বের কেন্দ্রে দেখবে। যেহেতু প্রতি বিন্দুতে বিগব্যাঙ হয়েছিল , সেহেতু আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যাল্যাক্সিতেও অস্বচ্ছ সিএমবি দেয়ালের সৃষ্টি হবে। অর্থাৎ ‘A’ র বাসিন্দারা আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যাল্যাক্সির পরে আর কিছু বা ‘B’ গ্যালাক্সিকে দেখতে পাবেনা অস্বচ্ছ সিএমবি দেয়ালের কারনে। কিন্তু ‘B’ গ্যালাক্সি যে আছে এটা তো সত্য। আমাদের কিন্তু অস্বচ্ছ সিএমবি দেয়াল কোন বাধার সৃষ্টি করতে পারছেনা ‘B’ গ্যালাক্সিকে দেখতে যেমনটা ‘A’ র বাসিন্দাদের করছে। এর থেকে দুটো উপসংহারে আসা যায় –
১) অস্বচ্ছ সিএমবি দেয়ালের কোন অস্তিত্ব নেই
২) শেষ সীমা বলে কিছু নেই এটাও আপেক্ষিক ( ‘A’ র বাসিন্দাদের জন্য শেষ সীমা আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যাল্যাক্সি , আমাদের জন্য ‘B’ গ্যালাক্সি)।
আপনি কি বলেন?
@ফারুক,
ঠিকই বলেছেন। হ্যাঁ, আমরা যদি প্রতিটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে পারতাম, তবে সিএমবি দেয়ালের অস্তিত্ব থাকতো না, যেমন সেই দেয়াল আমাদের এখানে নেই। কিন্তু যেহেতু মহাবিশ্বের কোন কিছুকেই তৎক্ষণাৎ দেখা সম্ভব নয় সেইজন্য পর্যবেক্ষণকে আমরা বাস্তব বলে গ্রহণ করে তার অস্তিত্বের সময়টা নির্দেশ করি।
আপনার দ্বিতীয় উপসংহারটাও ঠিক। শেষ সীমাটা আপেক্ষিক।
ধন্যবাদ।
@দীপেন ভট্টাচার্য,
বিষয়টির উপর স্বচ্ছ ধারণা আছে বিধায়ই সহজ করে লিখতে পেরেছেন। জ্যোতির্বিদ্যা এবং জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা আমার বিষয় নয়। তার পরেও সহজ করে লেখার জন্য বিষয়টি অনুমান করতে পারছি। অনেক ধন্যবাদ – শেয়ার করার জন্য।
এই গ্যালাক্সীটিই কেন শেষটি হবে। এর চেয়ে দূরে অন্য কোন দিকে (যেহেত সমগ্র মহাবিশ্বের কেন্দ্রে আমরা নাও হতে পারি) আর একটি থাকলে সেটির আলো আরও দেরীতে পৃথিবীতে আসবে। শেষ প্রান্তের খবর পেয়েছি ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না।
অসাধারণ লেখাটির জন্য শুধু ধন্যবাদ দিলে ছোটই করা হবে।
@নৃপেন্দ্র সরকার, প্রশ্নটির জন্য ধন্যবাদ। আসলে সিএমবি “দেয়াল” আপাতঃদৃষ্টিতে আমাদের দৃশ্যমান মহাবিশ্ব সৃষ্টি করে দিয়েছে। “সমগ্র” মহাবিশ্ব এর থেকে অনেক বড় হতে পারে। এই “দেয়ালে”র পর প্রথম গ্যালাক্সীগুলো সৃষ্টি হয়েছে, তাদের দেখে ফেললে এই মূহুর্তে দূরবর্তী আর কিছু দেখা সম্ভব নয়, সেই “দেয়ালের” জন্য। এটা ঠিকই সময়ের সাথে দেই দেয়াল আরো দূরে সরে যাবে এবং আমাদের নতুন শিশু গ্যালাক্সী দেখার সম্ভাবনা থাকবে, কিন্তু তার জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন বছর অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু যদি আমাদের মহাবিশ্ব ডার্ক এনার্জীর কারণে ত্বরণশীল হয়, তবে ভবিষ্যতে (কয়েক বিলিয়ন বছর পর) ঐ সমস্ত নতুন গ্যালাক্সীকে দেখাও মুশকিল হবে, তাদের আলো লাল সরণের (রেড সিফট) জন্য রেডিও তরঙ্গে রূপান্তরিত হবে এবং শেষাবধি সব গ্যালাক্সীই দৃষ্টি-দিগন্তের পারে হারিয়ে যাবে (একশো বিলিয়ন বছর পরে), সিএমবি দেয়ালও তখন আর দেখা যাবে না!
@দীপেন ভট্টাচার্য, ধন্যবাদ। মহাবিশ্ব সমন্ধে জানার দারূণ একটা কৌতুহলবোধ আছে। আপনার লেখাটি পড়ে ভাল একটা বিষয় জানতে পেরেছি বলে একটা প্রশান্তিভাব অনুভব করছি। বিলম্বে লিখলেও আশা করি নিয়মিত লিখবেন।
@ফারুক,
আপনার মন্তব্য থেকে আমার একটা বিষয় মনে হলো। তা হলো – বর্তমানে বিজ্ঞানীদের আবিস্কৃত তথ্য মোতাবেক পৃথিবী থেকে অন্তত ১৩.২ বিলিয়ন আলোক বর্ষ দুরের মধ্যে বেহেস্ত থাকার কোন সম্ভাবনা নাই। তা যদি থাকত তাহলে আলো বেহেস্তের পদার্থ ভেদ করে দুনিয়াতে আসত না। ১৩.২ বিলিয়ন আলোক বর্ষ মানে অত বছরে আলো যতটা দুরত্ব অতিক্রম করে। সূর্য থেকে নাকি আলো পৃথিবীতে আসতে মাত্র আট মিনিট সময় নেয়। তাহলে ১৩.২ বিলিয়ন তথা ১৩২০ কোটি বছরে আলো কি ভয়াবহ দুরত্ব অতিক্রম করবে তা আমাদের কল্পনারও বাইরে। তবে একটা অংক কষা যেতে পারে, সেটা এরকম-
১৩২০X১০০০০০০০X ৩৬৫X ২৪X৬০X৬০X১,৮৬,০০০ মাইল।
@ভবঘুরে,কানার যেমন দুই চোখের কথা , তেমনি আপনার ও বেহেস্তের কথা। কোরানের শিক্ষা অনুযায়ী , বেহেস্তের সৃষ্টি হবে ক্বেয়ামতের পরে।
তর্কের খাতিরে একটা প্রশ্ন করি , বেহেস্ত থাকার কোন সম্ভাবনা নেই বা আলো বেহেস্তের পদার্থ ভেদ করতে পারে না , এ তথ্য কোথায় পেলেন? আপনার এইস্বীদ্ধান্তের পিছনে আপনার বৈজ্ঞানিক যুক্তি কি?
দীপেনদা,
অবশেষে আপনার নিজের বিষয় জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে লিখলেন তাহলে। অসম্ভব সুন্দর হয়েছে লেখাটা। এরকম আরো লেখা চাই আপনার কাছ থেকে।
একটা জায়গায় বোধ হয় একটু সংশোধন করতে হবে –
‘৪.৩৬ আলোকবর্ষ অপেক্ষা করে’ ব্যাপারটা কনফিউজিং, কিংবা হয়তো সঠিক নয়। আলোকবর্ষ হচ্ছে দূরত্বের একক, সময়ের নয়। কাজেই ৪.৩৬ বছর অপেক্ষা করতে হবে বললে বোধ হয় যুক্তিযুক্ত হতো।
আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি চমৎকার লেখাটির জন্য।
@অভিজিৎ,
আলোকবর্ষ শব্দটি লেখক ভুলবশত লিখে ফেলেছেন। আলোকবর্ষ বাদ দিয়ে বছর পড়তে হবে।
@Imteaz, ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ, আপনার সহৃদয় উৎসাহ-ব্যঞ্জক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ভুলটি ধরিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ। টাইপো বটে, কিন্তু ভুল অবশ্যই। ৪.৩৬ বছর অপেক্ষা করতে হবে, ৪.৩৬ আলোকবর্ষ নয়:-)
এমন একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন যেখানে অজস্র প্রশ্ন লুকিয়ে থাকে। কী রহস্যময় ব্যাপার।
দারুণ :yes:
@আফরোজা আলম, ঠিকই বলেছেন। যদিও আমি বলতে চেয়েছিলাম প্রথম গ্যালাক্সীটি দেখার পর আমরা কি পর্যবেক্ষণ করব, কিন্তু আসলে প্রতিটি রহস্য উদ্ঘাটনের পর নিচে লুকানো পরের রহস্যটি আমাদের ব্যস্ত রাখবে।
অসাধারণ লেখাটির জন্য ধন্যবাদ।
প্রশ্ন
বুঝতে পারছি না। আগে যা বলেছেন, তাতে তো মনে হয় গ্যালাক্সীটির বয়স মহাবিশ্বের বয়সের কাছাকাছি।
ফোটনের ক্ষেত্রে “তাপমাত্রা” ধারণাটিকি অর্থবহ?
এটা কি আরেকটু ব্যাখ্যা করা যায় বা রেফারেন্স দেয়া যায়?
“এই নিউট্রাল হাইড্রোজেন” মানে কি আয়নায়ন-পূর্ব হাইড্রোজেন?
@রৌরব, খুব ভাল প্রশ্নগুলি।
গ্যালাক্সীটি যদি “আজও” বেঁচে থাকে, তবে তার বয়স মহাবিশ্বের কাছাকাছিই হবে, কিন্তু তাকে আমরা যে অবস্থায় দেখছি সেটা তার শিশু অবস্থায়, সে বোধহয় সবে জন্মগ্রহণ করেছে। হয়তো আমার বলা উচিত ছিল – মহাবিশ্বের বয়স যখন সবে ৪.৪ (বা বর্তমান বয়সের ৪.৪%) তখন এই গ্যালাক্সী থেকে যে আলো বিকিরিত হয়েছিল আজ আমরা তা দেখতে পারছি।
খুবই ভাল প্রশ্ন। ফোটনকে তাপমাত্রা দেয়াটা একটি উপযোগী (useful) ধারণা মাত্র। প্রথমতঃ এই তাপমাত্রার মান (T) সরাসরি ফোটনের শক্তি নির্দেশ করতে পারে। Tকে বোলটজমান ধ্রুবক (k) দিয়ে পূরণ করলে ফোটনের একটা গড় শক্তি পাওয়া যায়। কিন্তু একটি ফোটনের তাপমাত্রা বলে কিছু নেই, কোন উষ্ণ তলের তাপমাত্রার ওপর ভিত্তি করে অনেক ফোটনের একটা কৃষ্ণ বস্তু (Black Body) বিকিরণ বিতরণ পাওয়া যায়। এই বিতরণ অনুযায়ী ফোটন সমূহের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য একটা rangeএ বিস্তৃত থাকে। আদিতে সিএমবি ৩০০০ কেলভিনের একটা উষ্ণ তল থেকে বিকিরিত হয়েছিল। আজ মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের ফলে মনে হচ্ছে সেটি যেন ২.৭ কেলভিনের তল থেকে বিকিরিত হচ্ছে। এই বিতরণটি নিচের লিঙ্কে দেখে নিতে পারেন
http://en.wikipedia.org/wiki/File:Firas_spectrum.jpg
এটা খুব কঠিন প্রশ্ন। আমি যে এর সহজ উত্তর দিতে পারবো তা মনে হয় না। আপনি হয়তো জানেন আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা সূত্রের একটা ফ্রিডমান (Friedmann) সমাধান আছে। এই ফ্রিডমান সমাধানের (বা ফ্রিডমান মেট্রিকের) একটা টার্মে বক্রতা (k) একটা জিনিস আছে। k = +১ হলে মহাবিশ্ব বদ্ধ, k = ০ হলে মহাবিশ্ব সমতল ও k = -১ হলে উন্মুক্ত, ইত্যাদি। এর মধ্যে সমতল বিশ্বে একটি ত্রিকোণের তিনটি কোণের সমষ্টি ১৮০ ডিগ্রী। বিগ ব্যাং মডেল বলে সিএমবির আদি অসমসত্ত্বার (density fluctuation) পরিমাণ হবে ১ ডিগ্রী। আমরা যদি এর থেকে বেশী বা কম দেখি তবে স্থান হবে বক্র। WMAP সিএমবি পর্যবেক্ষণ করে দেখছে যে এই fluctuationএর পরিমাণ ১ ডিগ্রীই (সমস্ত অনিশ্চয়তা ধরে নিয়েও) । কাজেই স্থানীয় ভাবে মহাবিশ্বে বক্রতা থাকতে পারে, কিন্তু বিশাল স্কেলে মহাবিশ্ব ইউক্লিডিয় – সমতল। সেই ক্ষেত্রে মহাবিশ্বের অসীম হবার সম্ভাবনা রয়েছে।
http://map.gsfc.nasa.gov/universe/WMAP_Universe.pdf
হ্যাঁ। 🙂
আশা করি কিছু উত্তর দিতে পারলাম। জানাবেন। ধন্যবাদ।
@দীপেন ভট্টাচার্য,
অসংখ্য ধন্যবাদ!
এখন পুরোপুরি পরিষ্কার। তবে নিচে বন্যা আহমেদের মন্তব্যে মনে হচ্ছে বুঝতে অন্যদেরও সমস্যা হচ্ছে, হয়ত ব্যাপারটি একটু clarify করতে পারেন মূল প্রবন্ধে।
মনে হয় বুঝতে পারছি। একধরণের average entropy বলে মনে হচ্ছে।
মানে? আমি এসব জানমু কেন! আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচারের তীব্র প্রতিবাদ জানাই :guli:
😛 দাঁড়ান আপনার লিংক পইড়া দেখি কি বোঝা যায় কিনা। না গেলে আবার আসতেসি 🙂
অনেক দিন ধরে এ ধরনের লেখা দেখি না । মহাবিশ্ববিদ্যা আমার সবচাইতে প্রিয় বিষয়। ধন্যবাদ লেখক কে।
@ভবঘুরে, আপনার আন্তরিক মন্তব্যর জন্য অনেক ধন্যবাদ।
সিম্পলি সুপার্ব!! আপনার লেখার ভক্ত হয়ে যাচ্ছি দিন দিন।
@ফরিদ আহমেদ, আপনার প্রশংসায় “এম্ব্যারাসড” (ভাল অর্থে)। অনেক ধন্যবাদ। 🙂
এমন একটি পোস্টের জন্য অনেকদিন অপেক্ষায় ছিলাম। মুক্তমনায় বেশ কিছু দিন হলো জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে পোস্ট আসছে না। আপনার এই পোস্ট সব আশা পূরণ করেছে। জ্যোতিপদার্থবিদ্যা নিয়ে মুক্তমনায় আরো বেশি করে লিখবেন- আপনার লেখা পড়ার পর এটা আপনার প্রতি প্রত্যাশা নয়,বরং দাবি হয়ে দাড়িয়েছে।
@নিটোল,
:yes:
আমিও। পড়ে দারুন লাগল।
@সৈকত চৌধুরী, পড়ে ভাল লেগেছে জেনে ভাল লাগল। ধন্যবাদ, অবশ্যই।
@নিটোল, সহৃদয় মন্তব্যর জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনার অনুরোধ রাখার জন্য অবশ্যই চেষ্টা করব।