ভূমিকম্প, ভূমিধ্বস, মহামারি
বাচবেতো ঢাকা
বিখ্যাত ঐতিহাসিক আরনল্ড টয়েনবি বলেছিলেন, শহরকে কেউ হত্যা করে না। শহর নিজেই আত্মহননে ধ্বংস হয়ে যায়। আমরা মনে রাখি না সিন্ধু সভ্যতার মহেনজোদাড়ো নগরী ছেড়ে মানুষ কেন চলে গিয়েছিল। রোমান নগরী ধ্বংসের একমাত্র কারণ শুধু ভূমিকম্প নয়, লাগামহীন ভোগ ও স্বেচ্ছাচারও বটে। গত ৪০ বছরের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা, স্বল্প সময়ে ধনী হওয়ার প্রক্রিয়ার কারণে সেরকম পরিস্থিতির মধ্যে চলে গেছে ঢাকা। সম্প্র্রতি (২০১০ এর ১০ আগস্ট) আধা ঘন্টা পরপর ভূমিকম্পের ধাক্কা বিশষত ঢাকা শহরের মানুষকে ভূমিকম্পের আতঙ্কের মানসিক রোগিতে পরিণত করেছে। ২০০৮ আগস্ট এর পর্যায় ক্রমিক ১৫/১৬ বার ভূমিকম্প সে খবরটিকে স্পষ্টভাবে জানান দিচ্ছে। আর তাহলো নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ধাবমান ঢাকা নগরী। এক রাতের বৃষ্টিতে পানির জমার পরিমাণ আর নিয়মিত যানজট বলে দিচ্ছে ঢাকার প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ও রক্ষাণাবেক্ষণ কত দূর্বল হয়ে পড়েছে! ঢাকা শহরকে মূলত ভুমিকম্প, ভূমিধস এবং ওয়াসার পানি বাহিত ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনে মহামারির আশঙ্কা ঘিরে ফেলেছে। গ্যাস ও ওয়াসার লাইনের মধ্যে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তাতে ঢাকা একটা বিস্ফোরকে রূপান্তরিত হয়ে থাকলেও অবাক হবার কিছু থাকবে না।
৪০০ বছর কেটে যাওয়া ঢাকার ভবিষ্যত নিয়ে পরিকল্পকরা বুঝতেই পারছেন না, আগামী ৪০০ বছর নয় সামনের দশ বছরের ভবিষ্যদ্বাণী করাও অসম্ভব। পরিহাসের বিষয় হচ্ছে ভূমিকম্পের চেয়ে মানবসৃষ্ট বিপর্যয়ে ঢাকা শহর শুধু ধ্বংসস্তুপ নয় মহামৃত্যুর নগরীতে পরিণত করবে। এই কারণে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০টি ভূমিকম্পে ঝুকিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। ঝুকির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জনবহুলতা। অতএব দ্রুত বিকেন্দ্রীকরণের ব্যবস্থা না নিলে এক বেদনাদায়ক উপখ্যানে পরিণত হবে ঢাকা। সম্ভবত ভয়াবহ যানজটের অস্থির পরিস্থিতি থেকে বাচার জন্যই মোবাইল ব্যবহার মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছছে। যা আমাদের শরীরবৃত্তীয় চক্রকেই নষ্ট করে দিয়েছে। এক ধরনের মনোবৈকল্যের দিকে নিয়ে গেছে।
সম্প্রতি ৫টি দেশসহ বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৩। ভূমিকম্পন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী বলেন, ‘ইন্দো-বার্মা-হিমালয়ান টেকটোনিক প্লেটের সঞ্চলনের কারণে বাংলাদেশ ভূমিকম্পন বলয়ে আছে।’ আর প্লেটের ফাটলের কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট এই তিন অঞ্চলে আরও বড় ধরনের ঝুকির মধ্যে পড়ে গেছে। এদিকে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ঢাকার অভ্যন্তর ও চারিপাশ দিয়ে যে খালবিল নদীনালা (৩৪ খাল ও ৭ নদী) রক্তনালীর মতো প্রবাহিত হতো তা সমূলে গত ৪০ বছরে একের এক দখল, স্থাপনা নির্মাণের মাধ্যমে ভরাট করে চিহ্নমাত্র মুছে ফেলেছে। ঢাকাকে যে রমনা ছায়া শীতলতা দিয়ে ঘিরে রেখেছিল তাকে ছিন্নভিন্ন করে গড়ে উঠেছে নতুন ঢাকা। কোনো নিয়মকানুনকে তোয়াক্কা করে নি কেউ। নানাভাবে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন অব্যহত আছে এবং তা ক্রমশ বাড়ছে। যেমন ১৯৯৮ সালে ডিপ টিউবয়েলের সংখ্যা ছিল ২৩৪ টি। বর্তমানে (২০০৭ সালে) তা বেড়ে দাড়িয়েছে ৪০০তে। ফলে ভূত্বকের নিচে একটি স্তর ফাঁকা হয়ে গেছে। ফলে ঢাকা শহরের ভূগর্ভস্থ পানির স্বাভাবিক অবস্থা থেকে ৬১.১৮ মিটার বা ১৮৬ ফুট নেমে গেছে। বিএডিসি বা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন সংস্থা থেকে জানা গেছে, গত ১১ বছরেই নেমেছে ৩৫ মিটার এবং প্রতি বছরই তা বাড়ছে। গড়ে প্রায় ৩ মিটার বা ৯ ফুট করে নেমে যাচ্ছে। কারণ ঢাকার সমস্ত মাটি কংক্রিটে ঢেকে যাওয়ায় এ আর পানি শোষণ করতে পারে না বা জমিয়ে রাখা যাচ্ছে না।
এমন কি ১৯৯৮ সালে দেশে যখন বন্যায় ৮৫ শতাংশ অঞ্চল ডুবে গিয়েছিল তখনও ঢাকার পানির স্তর নামা অব্যহত রেখেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অনেক নিুাঞ্চল ভরাট করা হয়েছে পলিথিন, প্লাস্টিক জাতীয় পদার্থে। নদীতেও তা ফেলার কারণে নদীর তল প্লাস্টিকের আবরণে ঢেকে গেছে। ফলে পানি শোষণ করার হার কমিয়ে দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. এসএম মাকসুদ কামাল তার এক গবেষণায় জানিয়েছেন, ‘নগরীর পশ্চিম পাশে যেসব আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে, সেখানে মাটির পুরুত্ব ২৫ ফুটের বেশি নয়। আবার নগরীর পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নেমে যাওয়ার ফলে ভূমিধসের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ ফলে স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্প বা ভূমিধসেও ঢাকা শহর দেবে যেতে পারে।
ছবি: এই কংক্রিটের জঙ্গল যেকোনো সময় দেবে যেতে পারে
ঢাকা মহানগর ও আশপাশ এলাকার ভূমির গঠন অস্থিতিশীল এবং ভূ-আলোড়নজনিত। মহানগরের পাশেই রয়েছে বেশ কয়েকটি অস্থিতিশীল ভূ-তাত্ত্বিক অঞ্চল। উত্তরে সিলেট অববাহিকা বেশ দ্রুত ভূ-অভ্যন্তরে ঢুকে যাচ্ছে। কয়েক দশকে ওই অঞ্চলটি ১১ মিলিমিটারের মতো দেবে গেছে। পশ্চিমে যমুনা উপত্যকা অঞ্চলটি ক্রমেই ধাক্কা দিচ্ছে। দক্ষিণে বৃহত্তর ঢাকা সাম্প্র্রতিক বছরগুলোয় ১.৮২ মিলিলিটার হারে দেবে যাচ্ছে। এসব অস্থিতিশীল ভূ-তাত্ত্বিক অঞ্চলের প্রভাব মহানগরের ওপর গিয়ে পড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই। আরও ভয়াবহ তথ্য, নগরীর বেশিরভাগ স্থাপনা নরম মাটি বা বর্জ্য পদার্থের ওপর। মূলত এইসব নিুাঞ্চল, জলাশয়, প্যালিও চ্যানেল যে মাটি দিয়ে ভরাট করে নগরায়ন করা হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে সেই মাটির গুণাগুণ অত্যন্ত খারাপ। মোহাম্মদপুর ও মিরপুরের কিছু অংশ, কার্জন হলের কিছূ অংশ বাদ দিয়ে, পুরাতন ক্যান্টনমেন্ট, পুরাতন বিমান বন্দর, পূর্ব বাসাবো এবং আরও কিছু খন্ডিত অংশ বাদে ঢাকা শহর গড়ে উঠেছে মূলত এইসব নিুাঞ্চল, জলাশয়, প্যালিও চ্যানেল ভরাট করার মাধ্যমে। ভুমিকম্প হলে লালমাটির তুলনায় পলিমাটি ও জলাশয় ও নিুাঞ্চলের মাটিতে অবস্থিত যেকোন অবকাঠামো ধসে পড়বে তাড়াতাড়ি। এ শহরের অবকাঠামো যেভাবে গড়ে উঠেছে তাতে ভূমিকম্প হলে উদ্ধার কাজ অসম্ভব হয়ে পড়বে। আর সেই ধরনের দক্ষ মানবশক্তি ও টেকনিক্যাল সাপোর্ট এর ব্যবস্থা একদম এখানে নেই। একটা বিল্ডিং ধ্বসে পড়লে, আগুণ লেগে গেলে, লঞ্চ ডুবে গেলেও তা উদ্ধারে দিনে পর দিন লাগে। সম্প্রতি ৬২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক তৈরির কথা সরকার বলছেন। যে গতিতে এগোচ্ছে তা কাজে লাগার আগেই ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
ঢাকার বিভিন্ন অলিগলিতে ওয়াসা ও স্যুয়ারেজের লাইন জড়াজড়ি করে গিয়েছে। স্যূয়ারেজ বা পয়প্রণালী ও ওয়াসার পানির লাইনে বিভিন্ন জায়গায় লিকেজ বা ছিদ্র থাকার কারণে মানুষের পরিত্যাগ করা মলমূত্রের সঙ্গে ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি প্রতিটি বাসাবাড়ীতে মাঝে মধ্যে ঢুকে পড়ছে। বর্তমানে আমরা যে মাছগুলো খাই সেগুলোর বেশিরভাগের পেটে থাকে নীলাভ সবুজ শৈবাল। আর এই শৈবালে থাকে কনিফার্ম নামের ব্যাকটেরিয়া। মাঝে মাঝে যে তাপদাহ শুরু হয় তাতে এই ধরনের ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা অনেক বেড়ে যায় এবং প্রবলভাবে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। এরফলে কখনো কখনো কলেরা, রক্ত আমশা, পেটের পীড়াবাহিত রোগ – যেমন ডাইরিয়া, হেপাটাইটিস ‘এ’, টাইফেড জীবাণু এবং ভাইরাসের কারণে জন্ডিস মারাত্মভাবে মানবজীবনে ওপর আঘাত হানে। পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে যে, এ বছর কলেরা, ডায়রিয়ার হার সর্বোচ্চ বেশি। আমরা কি সব ব্যাকটেরিয়া সম্পর্কে জানি? এছাড়াও ঢাকা শহরে এখন প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ বসবাস করে। আর ৬৫ লাখ লোক এখানে কাজকর্ম সেরে আবার ফিরে যায়। পয়-প্রণালী নিষ্কাশনের ব্যবস্থা আছে মাত্র ২০ লাখ মানুষের। তাহলে বাকী অংশ যায় কোথায়? এ সমস্ত তথ্য ইঙ্গিত দেয় যেকোনো সময় অসনাক্তকরণ ভাইরাস, ব্যকটেরিয়া ছড়িয়ে পড়তে পারে, ঘটিয়ে দিতে পারে মহামারির আকারে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন। ফলে আমাদের থেকে বের হওয়া বর্জ্য আর ওয়াশার লাইনগুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ বিভৎসমৃত্যুর এক ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দাড়িয়ে থাকবে প্রাণহীন সুউচ্চ ভবনগুলো।
ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতারের মতে, ডাওকি ফল্টে ভূ-কম্পনের পর অতিবাহিত হয়েছে ১১২ বছর, মধুপুর ফল্টে ১২৪ বছর এবং টেকনাফ সাবডাক ফল্টে ২৪৭ বছর। একই জায়গা আবার একটি বড় ধরনের ভুমিকম্প হতে সময় লাগে গড় হিসেবে ১০০ থেকে ৫০০ বছর। সে অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বড় ধরনের ভূমিকম্পের দ্বার প্রান্তে। বিখ্যাত হাইড্রোলজিস্ট ড. কাজী মতিনের মতে, অত্যন্ত দেরিতে হলেও অপ্রতুল ভূমিকম্পন ডাটা ও মাটির গুণাগুণ বিবেচনা করে সরকার ১৯৯৭ সালে প্রস্তাবিত বিল্ডিং কোড বিধিমালা আইন পাশ করে ২০০৬ সালে। কিন্তু ভূমিকম্পন ডাটা ও প্রকৃতির পরিবর্তনের সাথে সাথে পরবর্তিতে এই বিধিমালা প্রয়োগ করা হয়নি। ভারত প্লেট এবং দেশের পশ্চিম-দক্ষিণ সীমান্ত ঘেষে গেছে বার্মা প্লেটের মাঝে অবস্থিত বাংলাদেশ বিশেষ করে রাজধানী শহর ঢাকা অত্যন্ত ঝুকির মধ্যে আছে। ফলে রিখটার স্কেলে ৭-৮ মাত্রার ভূমিকম্পনে (মডিফায়েড মারকারি স্কেলে) হবে ৮-১২ ঢাকা শহরকে সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত করার জন্য যথেষ্ট।
ঢাকা শহরে যে অবকাঠামোর ওপর দাড়িয়ে আছে তাতে সহসাই পরিবর্তন ঘটানো প্রায় অসম্ভব। অতএব শিল্পকারখানাসহ বিভিন্ন সেক্টরগুলোকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থাপন না করলে কোনোভাবেই ৪০/৫০ লাখ মানুষের মৃত্যু ঠেকানো যাবে না।
তথ্যসূত্র: ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ঐতিহাসিক অৎহড়ষফ ঞড়ুববহনর বলেছিলেন ঈরারষরুধঃরড়হ ফরব ভৎড়স ংঁপরবফ ঘড়ঃ নু সঁৎফবৎ
ডিসকাশর প্রজেক্ট
অসাধারন একটি তথ্যপূর্ন লেখা। আতিকের মত আমারো একই অনুভূতি। যে শহরের সাথে জীবনের শৈশব কৈশোরের বহু স্মৃতি মিশে আছে সেই শহরের চোখের সামনে এমন তিলে তিলে মৃত্যু নীরব দর্শকের মত দেখা খুবই পীড়াদায়ক।
তবে এই মৃত্যু স্বাভাবিক কোন মৃত্যু নয়, পরিষ্কার পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। মানুষের স্বার্থপরতা ও দায়িত্বহীনতার জ্বলন্ত উদাহরন।
দায়িত্ববান জাতি আমরা কোনদিনই ছিলাম না, তবে ঢাকার ক্ষেত্রে এই সমস্যা জনসংখ্যার আধিক্যের আগে প্রকট হয়নি এই যা।
বিকেন্দ্রীকরন করা ছাড়া কোন গতি নেই, সাথে সাথে দরকার শক্ত বিল্ডিং কোড, এনভায়রনমেন্টাল কোডের প্রয়োগ।
বিপ্লবের কথা সত্য যে ঢাকা বালি ও পলিমাটির কারনে অনেক ভাগ্যবান (আমার ধারনা নয়ত ভূমিকম্প ছাড়াই আরো অনেক বাড়ি দেবে যাওয়া বা ফাটল জনিত কারনে ধ্বসে যাওয়া দেখি না)। তবে সেই সুবিধেকে অনেকটাই ম্লান করে দেয় অত্যন্ত দূর্বল নির্মান সামগ্রী ও নানান রকম ম্যানিপুলেশন। আর বছর বছর গ্রাউন্ড ওয়াটার নেমে যাওয়ায় যে ভয়েড ভূ-গর্ভে সৃষ্টি হচ্ছে তা খুবই ভীতিকর। এই ভয়েডের কারনে মাটির নানান রকম ইঞ্জিনিয়ারিং প্যারামিটার বদলে দিচ্ছে, যার কারনে যে বাড়ি হয়ত ২০ বছর আগে যথাযথ ভাবে ডিজাইন ও নির্মান করা হয়েছিল তা আজকের পরিবর্তিত অবস্থায় আর যথাযথ নয়।
@আদিল মাহমুদ,
@আদিল মাহমুদ, আপনার শেষের কথাগুলো অনেক যেৌক্তিক ও অভিজ্ঞতার সাপেক্ষে বলা। জানি না আপনি কীভাবে চিন্তা করেছেন? তবে সব সেৌভাগ্যের সীমা আছে। আমার ভালো লেগেছে মন্তব্যটি। এই লেখাটা মূলত আমার ঢাকা দ্য ডেড সিটি বইয়ের একটা আরম্ভের অঙশ। এটি খুব তাড়াতাড়ি প্রকাশিত হবে। অতএব আপনাদের এই মন্তব্যগুলো বইটির শেষ করার ক্ষেত্রে অনেক সহায়তা করবে।
যদিও খুব ভয়াবহ। তবে ঢাকা শহরের অবস্থা সত্যিই খুব কেৌতুহল উদ্দীপক!
@আসিফ,
আমি শেষে যা বলেছি তা মোটামুটি পেশাগত থিয়োরীটিক্যাল জ্ঞান ও নির্মান শিল্পের বাস্তব অভিজ্ঞতার কম্বিনেশন। আমাদের নির্মান ক্ষেত্র মনে হয় পুকুর চুরির একটি বড় অংশ দাবী করতে পারে। আমি এক বাড়িতে এও শুনেছি যে রডের যায়গায় কিছু মুলি বাশ ব্যাবহার করা হয়েছে।
নির্মানের আগে কোন যায়গার বিভিন্ন গভীরতা থেকে মাটি তুলে ইঞ্জিনিইয়ারিং টেষ্ট করা হয় তার বিভিন্ন ডিজাইন প্যারামিটার নির্ধারন করার জন্য। সেই মাটির একটি নির্দিষ্ট পরিমান ময়েশ্চার থাকে (যা সামগ্রিকভাবে গ্রাউন্ড ওয়াটারের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ), থাকে এয়ার ভয়েড (মানে সলিড মাটি ও পানি বাদে ফাঁপা অংশ। মাটির সামগ্রিক গুনাগুনের উপর এইগুলির বড় ধরনের ভূমিকা আছে। এখন আপনি যদি একটি নির্দিষ্ট পরিমান পানি ও বাতাস ওয়ালা মাটির একরকম রেজাল্ট আজকে পান, আবার একই পরিমান মাটির পানি ও বাতাসে পরিমান পরিবর্তন করে রেজাল্ট নেন তবে দেখবেন যে ডিজাইন প্যারামিটার ভিন্ন আসছে। আশা করি বুঝতে পারছেন সমস্যাটা কোথায় হতে পারে। এই ছবিটা দেখলে আরেকটু পরিষ্কার হবে। স্বভাবতই যদি আপনি মাটিতে পানি কমিয়ে বাতাস বাড়িয়ে দেন তবে সেই মাটি তাড়াতাড়ি বসে যাবে।
গ্রাউন্ড ওয়াটার নেমে যাওয়া আর্সেনিক সমস্যারও একটি কারন।
আপনার বই এর অপেক্ষায় থাকলাম।
@আদিল মাহমুদ, আপনার বিশ্লেষণটি আমি সম্পূর্ণ সঙগতিপূর্ণ করছি। ঢাকা শিক্ষিত জনগোষ্ঠি বুঝতে পারছে না ঢাকার সমস্যা ভূমিকম্প নয়। বরঙ মানবসৃষ্ট বিপর্যয়। এটা এত বড়ো বিপর্যয় যা আমাদের চিন্তারও অতীত। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে সম্প্রতি যে ভূমিকম্প মানুষকে আতংকিত করেছে তা আদেৌ ভূমিকম্প কীনা। এটা এক ধরনের কোইনসিডেন্স নয়তো। কারণে ভূমিকম্পের যে উতসগুলোর কথা বলছে আর যে গভীরতার কথা বলছে সেখানে প্লেট থাকে না. নরম বা তরল পলি থাকে। আমার মনে হচ্ছে ভূমিকম্প অন্য জায়গা হয়েছে ঠিকই কিন্তু ঢাকায় হয়েছে অন্য ব্যাপার। এখনি বলতে চাচ্ছি না। এটা যদি সত্যি হয় তাহলে এই বাঙলাদেশের গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলো মতামতগুলো ভয়াবহ বিভ্রান্তিকর। আপনাকে ধন্যবাদ
ভূমিকম্পের সমস্যা না থাকলেও এশিয়ার অনেক শহরের অবস্থাই তো বেশ খারাপ। শুনেছি ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাপ এবং তাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্ল্যানিং এবং ব্যবস্থাদির অভাবে ঢাকার মত মুম্বাই, চেন্নাই, বেইজিং, ব্যংককসহ অনেক শহরেরই অবস্থা নিদারুণ অবস্থায় পৌঁছেছে, যে কোন সময় বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
ঢাকা ক্লে বেডের ওপর আছে-তাই এখানে ভয়াবহ ভূমিকম্প হবে না।
তবে সব শহরই মুমুর্ষ। আই টির ব্যাপক প্রচলন করে অফিসে যাওয়া , ডাক্তার ভিজিট এসব কমাতে হবে।
এ কথা ভাবলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে!
আসলেই সরকার সব জেনে শুনেই নীরোর মত বাশিঁ বাজাচ্ছে!
সব শেষ হলেই হয়ত ক্ষমতাবানদের টনক নড়বে!
লেখাটা বাস্তব অবস্থাই তুলে ধরেছে।
অনেক ধন্যবাদ!
আমি বুঝতেই পারি না , ঢাকা শহরে এখনই কিভাবে মানুষ বাস করে। যারা দেশ চালায় মানে মন্ত্রী , নেতা, সরকারী কর্মকর্তা- এরাও তো প্রতি নিয়ত ঢাকার হাজার রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়। তাহলে অন্তত তাদের নিজেদের সুবিধার কথা চিন্তা করলেও তো অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাওয়ার কথা। অদ্ভুত এক দেশ এই বাংলাদেশ। অনেকে তাই যখন বাংলাদেশ নিয়ে ফালতু আশাবাদ ব্যক্ত করে , আমি তখন নৈরাশ্যের অতলে তলিয়ে যাই।
@ভবঘুরে,
নিজেদের সমস্যা সমাধানতো করেই। আপনার-আমার মত এত সমস্যা ওদের নেই,আমাদের সমস্যায় ফেলে রেখে নিজেদেরটা সমাধান করে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী রাস্তা দিয়ে যাবার সময় আমাদের বাহন আটকে রাখে,এ সমস্যার কারণে কয়েকদিন ক্লাসের অ্যাটেনডেন্স মিস করেছি, ইচ্ছা হয় প্রধানমন্ত্রীকে বলি “আমার ক্লাসের অ্যাটেনডেন্স আপনিই দিয়ে দিন,প্রোগ্রামিং কনটেস্ট আপনিই করুন”।
@ভবঘুরে,
কিযে বলেন আপনি। তাদের কোন অসুবিধা আছে কি যে তাদেরকে আবার নিজেদের সুবিধার কথা চিন্তা করতে হবে। নিজেদের অফুরন্ত সুবিধাগুলোকে অনন্তকাল ধরে নিশ্চিত করতে দেশের জনগনের অসুবিধাগুলোকে অনন্তকাল ধরে বহাল রাখার ব্যবস্থা তাদেরকেই কষ্ট করে যেতে হচ্ছে।
ভয়াবহ একটা শহরে আমরা বাস করি। রাস্তায় এত সময় নষ্ট হয় যে ক্ষোভে মাথার চুল ছিড়তে ইচ্ছা করে মাঝে মাঝে। প্রতিদিন রাস্তায় ২-৩ ঘন্টা নষ্ট হলে মানুষ করে কিভাবে? যানজটের জন্য রাতে অতিরিক্ত জেগে কাজ করতে হয়,৩-৪ ঘন্টা ঘুমিয়ে সকালে আবার বের হতে হয়। এভাবে কতটা আন্তরিকভাবে কাজ করা যায়? অবাক হবার কিছু নেই যে আমরা ফাকিবাজ আর দুর্নীতিপরায়ণ। শুধু সরকারকে দোষ দিয়ে লাভ নেই,দায় আমাদের সবার,জগতের সব খারাপ গুণগুলো আমারা বাংলাদেশীরা কমবেশি রপ্ত করেছি।
আমার শৈশব, কৈশোর, তারুন্যার সাক্ষী ঢাকার আজকের এই পরিনতি কতটা কষ্টের তা ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা আমার নেই। চোখের সামনে দেখেছি একের পর এক খেলার মাঠগুলো বেদখল হয়ে যেতে। আর এখন দুই মাইল পথ পাড়ি দেয়ার চিন্তা মাথায় এলেই ক্লান্ত লাগে। ঘরের, অফিসের চার দেয়ালের মাঝে থেকে থেকে মনে হয় কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসি। কিন্তু কোথায় যাব এটা ঠিক করা আর হয় না।
ঢাকামুখি মানুষের স্রোত ঠেকাতে সবকিছু বিকেন্দ্রীকরনের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু কে বা কারা এটা করবে আমরা যানি না। কারন ক্ষমতা মানে হালুয়া রুটির ভাগাভাগি এটা আমরা মেনে নিয়েছি। তাদের অনন্ত ক্ষুধা শেষও হয় না আর দেশের সমস্যা নিয়ে ভাবার অবসরও হয় না।
আপনি যদি সোচ্চার হন তবে তাদের তরফ থেকে স্টেরিওটাইপ যা উত্তরটি পাবেন তা হল, রাতারাতি এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব না এবং সরকারের একার পক্ষে এসব সমস্যা সমাধান করা সম্ভব না। এই চক্র থেকে সম্ভবত আমাদেরকে মুক্তিদিতে পারে ৭-৮ মাত্রার একটা ভূমিকম্প। আমি তো আর কোন পথ দেখছিনা।
আসিফ ভাই কে অনেক ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। এমন লেখা আরো বেশি বেশি দরকার, যদি সরকার বাহাদুরের ঘুম ভাঙ্গে।
সচেতনতা মূলক লেখাটির জন্যে আসিফ কে ধন্যবাদ। মন্ত্রী এবং এম.পি. দের উচিৎ অন্ততঃ পক্ষে ঢাকার সাথে যার যার এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাটাকে উন্নত করা। প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরনের এটি পূর্ব শর্ত। জনাব আসিফের প্রস্তাব অনুযায়ী, আর সরকারের উচিৎ সারা দেশে পয়ঃনিষ্কাশন, জল সরবরাহ এবং বর্জ্য শোধনাগার এবং নিয়ন্ত্রনের সুব্যবস্থা সহ বেশ কিছু ইন্ডাষ্ট্রিয়াল জোন তৈরী করা। জলের জন্যে এ-ক্ষেত্রে ভূ-উপরিস্থিত জলসম্ভারকে কাজে লাগাতে হবে সন্দেহ নেই! এই জোনের বাইরে কোন শিল্প-কারখানার নির্মানের অনুমতি বাতিল করতে হবে। আমি অনেক আগেই শুনেছিলাম, ঢাকার উপরে যে ক্রমবর্ধমান চাপ, তা যেকোন মুহূর্তেই ঢাকাকে তার বিশাল জনসম্ভার সহ ভূতলে সমাধিস্থ করে ফেলতে পারে! গভীর নলকূপে জল উত্তোলন এই প্রকৃয়াকে আরো ত্বরান্বিত করবে।
তবে সব শেষে, আমার মনে হয় পরিস্থিতি সামলাতে হলে ঢাকা সহ আপামর দেশের মানুষকে প্রকৃতির সাথে ভদ্র আচোড়ন করতে হবে এবং নিজেদের ভদ্র হতে হবে!
খুবই সময়োপযোগী লেখা। লেখাটি পড়ে আতংকে মন ভরে উঠছে। কিভাবে এর থেকে পরিত্রান পাওয়া যাবে জানা নেই, শুধু একটাই আশা এমন যেন কখনো না হয়।
ঢাকা এখন মৃতপ্রায়। এতটুকু একটা স্থলভাগ কি করে প্রায় দুকোটি মানুষকে জায়গা দেবে? একটু বৃষ্টিপাতে সারা ঢাকার শহর সমুদ্রে পরিনত হয়। বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে যানজট। অসহনীয় অবস্থা।
বিকেন্দ্রীকরন ছাড়া মনে হয়না আর ভালো কোন উপায় আছে।
আসিফ ভাইকে অনেক ধন্যবাদ সময়োপযোগী এই লেখাটা দেয়ার জন্য।