ভূমিকাঃ কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর প্রতি সবার এত আগ্রহ দেখার পরে সিদ্ধান্ত নিলাম যে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর একদম বেসিক জিনিষ নিয়ে এর পরের লেখাটা লিখব। সে জন্য আমি এই লেখাটা তরঙ্গ কণা দ্বৈততা নিয়ে লিখছি। আমি চেষ্টা করেছি টেকনিকাল জিনিষ যতটা সম্ভব বাদ দিতে। তবে উচ্চ মাধ্যমিক লেভেল এর পদার্থ বিজ্ঞানের উপর জ্ঞান থাকলে এই লেখা বুঝতে কিছুটা সুবিধা হবে।
নিউটনঃ আলো অবশ্যই কণা দিয়ে তৈরি।
হাইগেনঃ হতেই পারে না, আমি বলছি আলো এক প্রকার তরঙ্গ
ম্যাক্সওয়েলঃ ঠিক, আলো তরঙ্গই বটে, তবে হাইগেন সাহেব কিছু ভুল বলেছিলেন, আলো আসলে ইলেক্ট্রম্যাগনেটিক তরঙ্গ।
ম্যাক্স প্লাঙ্কঃ আপনারাই ঠিক মনে হয়, কিন্তু আমি যে দেখলাম আলো একটু কণার মতও আচরণ করে।
আইন্সটাইনঃ আলো কণা এবং তরঙ্গ, দুইটাই।
এই রকম ‘কথাবার্তা’র মধ্যে দিয়েই কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর জন্ম হয়। আলো কি? আমরা অনেক জায়গায় আলো ‘দেখি’। দিনের বেলা জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে আলো দেখতে পাবেন। রাতের বেলা ইলেক্ট্রিক বাতির সুইচ অন করলেও আলো দেখতে পাবেন। কিন্তু আমরা কি আসলেই আলো ‘দেখতে’ পাই? না, আসলে আমরা আলো দেখি না। আলো যে বস্তুর উপরে পরে, আমারা সেই বস্তু দেখতে পাই। যেখানে আলোর পরিমাণ যত বাড়ানো হয়, সেখানে কোন বস্তুকে আমরা তত বেশি উজ্জ্বল দেখি। সেই জন্যওই হয়ত আমাদের মনে হয় যে আমরা আলো দেখছি। আসলে কোন আলোর উৎস থেকে আলো বের হয়ে এসে তা কোন বস্তুর উপরে পরে, সেখান থেকে আলো প্রোতিফলত হয়ে এসে আমাদের চোখে পরলে আমরা সেই বস্তু দেখতে পাই। কিন্তু এই আলোটা আসলে কি? এটা কি দিয়ে তৈরি? এটা কিভাবে চলাচল করে? এইসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য বিজ্ঞানীরা কিছু তত্ত্ব দিলেন। কেউ বললেন যে আলো তরঙ্গ, কেউ বললেন যে আলো কণা। বিজ্ঞানীরা অনেক পরীক্ষা নীরিক্ষার ফলফল দেখে মোটামুটি নিশ্চীত হলেন যে আলো তরঙ্গ। তারা মনে করেছিলেন যে সমদ্রের উপর দিয়ে যেভাবে ঢেউ সঞ্চালিত হয়, তেমনি আলো ইথার নামক এক কাল্পনিক মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে চলে। এ সময় ইয়ং তার বিখ্যাত দ্বি চির পরিক্ষাটি করেন। এ পরীক্ষায় একটি পর্দার মাঝখানে ২টি চির কাটা হয়। এর এক পাশে একটি আলোক উৎস থাকে। এরফলে পর্দার অন্য পাশে আলো ও আধারের ডোরাকাটা দাগ দেখা যায়।
এই ঘটনা এত অল্প জায়গায় ব্যাখা করা কঠিন। তবে এটা একটা দৈনিক উদাহরণ দেওয়ার চেষ্টা করে দেখতে পারি। ধরুন, আপনি একটি স্থির পুকুরে একটি ঢিল ফেললেন, তাহলে ঢিলটি পরার জায়গা থেকে বৃত্তাকারে চারিদিকে স্রোত ছড়িয়ে যাবে। এখন যদি আপনি খুব কাছাকাছি ২টি ঢিল একই সময়ে ফেলেন, তাহলে পুকুরের অপর প্রান্তে কোন কোন জায়গায় ২ই স্রোতের চূড়া একই সাথে পৌছাবে ফলে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হবে, আবার কোথাও কোথাও কিছুই থাকবে না। এখানে দেওয়া ছবিটা দেখে ঘটনাটা অনুমান করতে পারেন।
এরকম ঘটনা শুধুমাত্র তরঙ্গের ক্ষেত্রেই ঘটা সম্ভব, কোন কণার পক্ষে কোন ভাবেই ঘটা সম্ভব না। শুধুমাত্র তরঙ্গই পারে এভাবে ডোরাকাটা প্যাটার্ন সৃষ্টি করতে পারে। নিশ্চয় একটা দেওয়ালের মধ্যে পাশাপাশি ২টা লম্বা গর্ত করে তার মধ্য দিয়ে মেশিনগান দিয়ে গুলি করলে দেওয়ালের অন্য পাশে গুলির দাক ডোরাকাটা প্যাটার্ন তৈরি করবে না। সে যাই হোক, ঊনবিংশ শতাব্দীতে জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল দেখান যে আলো আসলে ইলেক্ট্রম্যাগনেটিক তরঙ্গ, তবে সে যাই হক, আলো যে এক প্রকার তরঙ্গ, সে ব্যাপারে কার কোন সন্দেহ ছিল না।কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে বিজ্ঞানীরা এমন কিছু আবিষ্কার করলেন যা থেকে কোন ভাবেই মনে হবে না যে আলো এক প্রকার তরঙ্গ। যেমন, আলো ইলেক্ট্রনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে পারে, একাজ কণা ছাড়া সম্ভব না। এরকম আরও কিছু অবজার্ভেশন ব্যাখা আলোর তরঙ্গ তত্ত্ব কোন ভাবেই দিতে পারে না। আবার প্রতিফলন, প্রতিসরণ, ব্যাতিচার ইত্যাদি তরঙ্গ ছাড়া ব্যাখা করা যায় না। এসময় আইন্সটাইন তার নোবেল বিজয়ী ধারণা পেশ করলেন যে আলো একই সাথে কণা এবং তরঙ্গ ২টাই। এটা অনেকে মেনে নিলেন, অনেকে আবার প্রতিবাদ করলেন, কিন্তু আইন্সটাইন এর যুক্তিতে কোন ভুল ছিল না। এসময় ডি ব্রগলী (উচ্চারণ http://en.wikipedia.org/wiki/Media:De_Broglie.ogg) ভাবলেন যদি আলো, যাকে আমরা এতদিন তরঙ্গ ভাবতাম, সেটা কণার মত আচরণ করে, তাহলে যেটাকে আমরা এতদিন কণা ভেবেছি সেটাও হয়ত কিছুটা তরঙ্গের মত কাজ করতে পারে। তিনি এই চিন্তা মাথায় রেখে হাইড্রজেন পরমাণুর ভিতরে ইলেক্টনকে অনেক সুন্দর ভাবে ব্যাখা করতে পেরেছিলেন। তখনও বিজ্ঞানীরা এই ধারণার গুরুত্ত্ব বুঝতে পারেননি। এরপর ইলেক্ট্রন এর তরঙ্গ ধর্ম দেখার জন্য ইলেক্ট্রন (আসলে বিটা রশ্মি) দিয়ে ইয়ং এর দ্বি চির পরীক্ষাটি করা হল। ইলেক্ট্রন যে মেশিনগান এর বুলেটের মত একটি কণা, সে বিষয়ে তো কারোই সন্দেহ নাই। ইলেক্ট্রন তো সাধারণ পদার্থের একটি উপাদান, তার উপর এর ভর আছে। তাহলে বলাই যায় যে ইলেক্ট্রন দিয়ে ইয়ং এর দ্বি চির পরীক্ষা করা আর মেশিনগান দিয়ে করা একই কথা। কিন্তু এ পরীক্ষা করে দেখা গেল যে পর্দার অন্য পাশে ইলেক্ট্রন ডোরাকাটা প্যাটার্ণ সৃষ্টি করছে। এমনকি যখন ইলেক্ট্রন গান থেকে মাত্র একটা একটা করে ইলেক্ট্রন ফায়ার করা হল তখনও একই প্যাটার্ণ দেখা গেল। কেউ যদি সেই গর্তয়ালা দেয়ালের মধ্য দিয়ে একটি মেশিন গান নিয়ে একটা একটা করে গুলি করে তাহলে সে নিশ্চ্য় অন্য পাশে দেখবে না যে গুলি গুলা প্যাটার্ণ সৃষ্টি করছে। কিন্তু ইলেক্ট্রন নিয়ে পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা হুবুহু সেটাই দেখলেন, তারা দেখলেন যে ইলেক্ট্রনও আলোর মত প্যাটার্ণ সৃষ্টি করে।
এই ডোরাকাটা দাগের পুরুত্ব দেখে কোন তরঙ্গের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বলে দেওয়া যায়। বিজ্ঞানীরা হিসেব করে দেখলেন যে এই তরঙ্গদৈর্ঘ্য ডি ব্রগলীর হিসাবের সাথে মিলে যায়। ডি ব্রগলী এই তরঙ্গের নাম দিলেন matter wave বা পদার্থ তরঙ্গ। তার মতে সব বস্তুই এক প্রকার তরঙ্গ। সব বস্তুই তরঙ্গের মত আচরণ করে। তার মতে তরঙ্গ ও কণা অভিন্ন নয়, একই জ়িনিষ। কিন্তু আমাদের আশেপাশের দৈনিক সকল বস্তুর আকার এবং ভর এত বেশি যে তাদের তরঙ্গের আচরণ দেখা বা বুঝা সম্ভব না। এই যুক্তির পিছে আরও অনেক পরীক্ষা ও অবজার্ভেশন ছিল। এখন কোনও বিজ্ঞানীর মধ্যে এই তত্ত্ব নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। বর্তমানে শুধু ইলেক্ট্রন প্রোটন নয়, অণু নিয়েও এ পরীক্ষা করে ডোরাকাটা প্যাটার্ণ পাওয়া গেছে। এই পদার্থের তরঙ্গের ন্যায় আচরণ আর তরঙ্গের কণার মত আচরণ, এটাকে বলা হয় wave particle duality বা তরঙ্গ কণা দ্বৈততা। এই তত্ত্ব দিয়েই কোয়ান্টাম মেকানিক্সের যাত্রা শুরু। কোয়ন্টাম মেকানিক্স এভাবেই আরও অনেক তত্ত্ব দিয়ে গেছে, যা আমাদের মনে হয় অদ্ভুত, অসম্ভব এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সাইন্স ফিকশন এর থেকেও বেশি আজগুবি, কিন্তু প্রতি বারই পরীক্ষা করে দেখা যায় যে কোয়ান্টাম মেকানিক্স ঠিক ছিল। আসলেই কোয়ান্টাম মেকানিক্স সঠিক বলেই আমরা মডার্ণ ইলেক্ট্রনিক্স, এম আর আই, লেজার, ট্রান্সিস্টর, কম্পিউটার এবং আরো হাজার হাজার উপহার পেয়েছি। আমাদের আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন এমনকি জীব বিজ্ঞানের সব জ্ঞানের ভিত্তি প্রস্থরও এই কোয়ান্টাম মেকানিক্স। এজন্যই কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর এত দাম।
বিজ্ঞান নিয়ে যত লেখা। অামি পড়ি সবার অাগে কিন্তু মন্তব্য করি পরে।
সবার মন্তব্য পড়ার পর বুঝতে অারো সহজ হয়।
সকল সমালোচনা সত্তেও লেখা চালিয়ে যাবেন বলে অাশা রাখি।
অাপনার পরবর্তি লেখা পড়ার অপেক্ষায় অাছি।
বিজ্ঞান নিয়ে যত লেখা হয় ততই ভাল, সেই জন্য লেখককে ধন্যবাদ। লেখা নিয়ে বেশ কয়েকটি মন্তব্য এসেছে, লেখক সেগুলো ভাল ভাবেই গ্রহণ করেছেন। আমার মনে হয় প্রথমবার তাঁর লেখাটা পড়লে বেশ কয়েকটা জায়গায় খটকা লাগে, দ্বিতীয় পাঠে মনে হয় ভুল বলেন নি (এটা তাঁর “বল” নিয়ে লেখার জন্যও প্রযোজ্য)। আমার দুটি মন্তব্যঃ
আমার মনে হয় না আইনস্টাইন কখনো সরাসরি তরঙ্গ ও কনা দ্বৈততা নিয়ে ধনাত্মক মন্তব্য প্রকাশ করেছেন। আইনস্টাইনের ফটোইলেকট্রিক প্রক্রিয়া আলোকে একটা কোয়ান্টাম বা একক শক্তির আধার হিসেবে বর্ণনা করেছে, কিন্তু আলোক-কণার তরঙ্গকে তার ভরবেগের ফাংশান হিসেবে দেখানোটা ডি-ব্রগলিই করেছিলেন। আর শেষাবধি আলোর যে আসলেই কণা-প্রকৃতি আছে সেটা ১৯২৩ সালের আর্থার কম্পটনের ইলেক্ট্রনের সাথে উচ্চ শক্তির ফোটনের স্ক্যাটারিং পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় (আর একটি নোবেল পুরষ্কার)।
লেখক কোন তারিখ উল্লেখ করেন নি। ইলেকট্রন দিয়ে কোয়ান্টাম ব্যতিচারের যে পরীক্ষাগুলির কথা বর্ণনা করেছেন, সেগুলির বাস্তবায়ন হয়েছে ডি. ব্রগলির অনেক পরে – ১৯৬১ সালে একসাথে বহু ইলেকট্রনের ব্যতিচার, আর ১৯৭৪ সনে একটি একটি করে ইলেকট্রনের ব্যতিচার পরীক্ষা করা হয়। ১৯২০-এর দশকে ইলেকট্রন দিয়ে এই পরীক্ষা করা কঠিন ছিল। যে পরীক্ষাটা ডি. ব্রগলির ভাবীকথনকে সমর্থন করে তাহল ১৯২৭ সালের ডেভিসন-গারমারের নিকেল-কেলাসের ওপর ইলেকট্রনের স্ক্যাটারিং (ডেভিসনের জন্য নোবেল), চেরা ফাটলের ব্যতিচার নয়।
কোয়ান্টাম ব্যতিচার পরীক্ষার ফলাফল নিসন্দেহে আমাদের দৈনন্দিন বাস্তবতা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যাবে না। এখানে ফোটন বা ইলেকট্রন বা অণু একেবারে শেষে পর্দার ওপর না পড়লে (বা অবলোকিত না হলে) তারা কণা রূপ পায় না (বা বাস্তবায়িত হয় না)। দুটি চেরা ফাটল দিয়ে যাবার সময় তাদের শুধুমাত্র এক ধরণের সম্ভাবনা তরঙ্গ দিয়ে বর্ণনা করা সম্ভব। যেখানে সম্ভাবনা তরঙ্গের এম্পলিটুড বেশী হবে সেখানে কোন এক “বন্ধ-করণ” প্রক্রিয়া মাধ্যমে “তরঙ্গ” থেকে “কণা” সৃষ্টি হয়। এই “সৃষ্টি” প্রক্রিয়ার কোন সঠিক ব্যাখ্যা নেই, আপাততঃ বিজ্ঞানীরা তরঙ্গ-ফাংশান বন্ধ-করণ (collapse) বলে একটা “কাজ-চালানো” শিরোনাম সৃষ্টি করেছেন। সেইক্ষেত্রে বলা সম্ভব প্রতিটি মূহুর্তে আমরা ক্রমাগত “বাস্তবায়িত” হচ্ছি। 🙂
এই জিনিস আমাকে কিছুটা পড়তে হয়েছে পাঠ্যে থাকার জন্য আর নিজের আগ্রহেও কিছু পড়াশোনা করেছি।ব্যাপারটা যতই মজাদার(অন্তত আমার কাছে তাই মনে হয়েছে) হোক না কেন অত্যন্ত কঠিন।আপনি খুবই কম পরিসরে অনেক সহজ ভাষায় তুলে ধরেছে।আপনাকে ধন্যবাদ।আশা করি সিরিজের পরবর্তী সংখ্যায় আরো ভালোভাবে তুলে ধরবেন।
লিখাটি পড়ে খুব ভাল লাগলো। এ পর্যন্ত বুঝতে কোনই অসুবিধা হয় নি। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মত এমন একটি কঠিন বিষয় সাধারন লোকের উপযোগী করে সহজ ভাষায় লিখা বেশ দুঃসাধ্য। তবে বেসিক থেকে শুরু করলে অনেক কঠিন বিষয় ও সাধারনের ‘ধারনার’ আওতায় আনা সম্ভব। পদার্থ বিজ্ঞানে আমাদের অনেকেরই প্রথাগত জ্ঞান উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের Basic concept জানতে আগ্রহী। আপনার লিখা পড়ে তা জানতে পারবো এ আশা রাখি।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
কোন তত্ত্ব দিয়ে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের যাত্রা শুরু হয় নি-কোন বিজ্ঞানের ও হয় না। আমি লেখককে হতাশ করতে চাইছি না। কিন্ত আগে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ইতিহাস পড়ে-এই লেখা লিখলে ভাল হয়। পুরো ইতিহাসএর সিকোয়েন্সটা লেখক এর ওর ঘারে চাপিয়ে গুলিয়েছেন। আগে ভাল করে পড়ে, বুঝে লিখুন। নইলে পড়ে যখন বুঝবেন, এই লেখা নিজের লজ্জার কারন হবে।
@বিপ্লব পাল, আপনি বোঝেন কিনা জানি না, তবে আপনি যে টোনে নতুন লেখকদের অভিনন্দন জানান তাতে করে মুক্তমনায় অনেকেই লেখার উৎসাহ হরিয়ে ফেলতে পারেন। এর আগেও বেশ কয়েকজনকেই আপনি খুব খারাপভাবে নিরুৎসাহিত করেছেন, একে তাকে অপরিণত বলে মন্তব্য করেছেন। কিছু মনে করবেন না, কিন্তু আপনার নিজের লেখাও তো খুব একটা পরিণত নয়, অজস্র্ বানান ভুল তো আছেই, মাঝে মাঝে শব্দ এবং বাক্য গঠনেও সমস্যা থাকে, আর থিমের কথা যদি বলেন তো বলতে হয় মাঝে মাঝে আপনার লেখা পড়ে মনে হয় কি বললেন তাই বুঝতে পারলাম না। আপনি হয়তো চাঁছাছোলাভাবে কথা বলতে বা শুনতে পছন্দ করেন, কিন্তু আপনার বুঝতে হবে যে এতে করে অনেকেই ভয় পেয়ে লেখা বন্ধ করে দিতে পারেন। নতুন লেখকদের ক্ষেত্রে আপনাকে আরেকটু সাবধান এবং আন্তরিক হতে অনুরোধ করবো।
@ফাহিম রেজা,
কোয়ান্টাম ফিজিক্সের কেন জন্ম হল-সেটার একটা ধারাবাহিক সুন্দর ইতিহাস আছে। এই লেখাটা সেই ইতিহাসকে ঠিক ভাবে ধরছে না। সুতরাং লেখককে সেটা জানানো আমার কর্তব্য। এই রকম লেখাকে ফালতু পিঠ চাপড়ালে লেখকেরই ক্ষতি করা হবে। আপনার যে মতই থাকুক না কেন- আমি মনে করি ভুল না ধরালে লেখকের ক্ষতি হয় বেশী।
কেও বানান বা অন্য কিছুর জন্যে সমালোচনা করলে করুক না। কেও মানা করছে না। লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি-লেখক হওয়ার বা লেখক পরিচিতির জন্যে লিখছি না-তাছাড়া লেখার জন্যে সময়ও হাতে খুব বেশী থাকে না। সময় না দিলে বাক্য বা বানানে ভুল হবেই। সেটা দুঃখজনক-কিন্ত বানানে ভুল হবে বলে না লিখলে, সেটা বোধ হয় আরো বড় ভুল হবে।
লেখার ব্যাপারে আমি ফালতু পিঠ চাপরানোতে বিশ্বাস করি না-সেরকম করলে সদালাপী হওয়াই ভাল।
@বিপ্লব পাল,
বিপ্লব দা, পিঠ চাপড়াতে তো কেউ বলেনি, কেবল সহজ হলেই হবে। মুক্তমনায় লিখতে হলে যদি সবকিছুতে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে আসতে হয়, তাইলে ত বিপদ। আর একটা জিনিস তো সহজেই বোঝা যায়, আমি ২৫ বছর বয়সে যা লিখব, আর ৪০ বছর বয়সে যা লিখব, তাতে অনেক পার্থক্য থাকবে। কিন্তু ৪০ এ গিয়ে বিশেষ পান্ডিত্য অর্জন করে লিখব বলে কি ২৫ এ লিখব না? আমি ভুল লিখলে ভুল ধরিয়ে দেয়ার জন্য আছেন আপনারা, মুক্তমনায় যারা লেখে, তারা মনে হয় কেউই ভুল ধরিয়ে দিলে মাইন্ড খেয়ে বসে থাকে না। কিন্তু
বলে বিব্রতকর অবস্থায় ফেললে খারাপ লাগতেই পারে। আপনি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ইতিহাস নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত বা পরিষ্কার তথ্য দেয়ার কথা বলতে পারতেন, অযাচিত ক্লেশটুকু না দিয়ে। 🙂
@বিপ্লব পাল,
প্রথমেই বলে রাখি আমি আপনার লেখা সাধারনত খুব পছন্দ করি। আপনার অধিকাংশ লেখাতেই একজন বিদগ্ধ, চিন্তাশীল মানুষকে দেখতে পাই। কিন্তু মাঝে মাঝে আপনার কিছু মন্তব্য আমাকে বেশ হতাশ করে। যেমন করেছে নিচের মন্তব্যগুলো।
কোয়ান্টাম মেকানিক্সের শুরু আর বিজ্ঞানের শুরু এক কথা নয়। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের শুরু বিজ্ঞানের এক পর্যায় থেকে আর বিজ্ঞানের শুরু প্রাকবিজ্ঞান থেকে। বিজ্ঞানের যে কোন পর্যায়কে কোন তত্ত্ব, ধারনা কিংবা আবিষ্কার দিয়ে চিহ্নিত করা যায়। তন্ময় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের শুরু হওয়ার পর্যায়কে তরঙ্গ-কণা দ্বৈততার তত্ত্ব দিয়ে চিহ্নিত করেছেন। আরো অন্যভাবেও করা যেত। কিন্তু আমার মনে হয় এটাই সঠিক চিহ্নিতকরণ। কারন এরপর থেকেই তরঙ্গ বলবিদ্যা আর কণা বলবিদ্যার সংশ্লেষন করে (এবং তার সাথে কোয়ান্টাইযেশনের ধারনাটাকে ভিত্তি করে) কোয়ান্টাম বলবিদ্যা তৈরী করা হয়। আর যদি আপনি বলতে চেয়ে থাকেন যে কোয়ান্টাম ফিজিক্স এর আগেই শুরু হয়েছে ম্যাক্স প্লাংকের রেডিয়েশন সূত্র এবং আইনস্টাইনের ফটোইলেক্ট্রিক এফেক্ট দিয়ে, তাহলে আমি আপনার সাথে আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত হব। কিন্তু যে তন্ময়ের যে মন্তব্যটার আপনি সমালোচনা করছেন, সেটাত কোয়ান্টাম মেকানিক্সের শুরু নিয়ে, কোয়ান্টাম ফিজিক্সের শুরু নিয়ে নয়।
কিন্তু একজন পাঠক আপনার মন্তব্যে বেশ হতাশ হয়েছে, এবং আরো পাঠকের হতাশ হওয়ার প্রচুর সম্ভাবনা আছে।
এই ধরনের উপদেশ অবান্ছিত। তন্ময় তার লেখায় কোথায় কি ভূল করেছেন, সেটা পরিস্কার করে দেখিয়ে দিলেই তার উপকার হত। আপনার মত
বিদ্বান লোকের কাছে মানুষ তাই আশা করে। অর্থহীন, অযাচিত উপদেশ আশা করেনা।
আপনি, আমি এবং তন্ময় এই তিনজনই পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলাম একসময়। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ইতিহাস পদার্থবিজ্ঞানের সব ছাত্রদেরই মোটামোটি জানা থাকার কথা। তন্ময় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ইতিহাস ঠিকমত জানেননা, এই ধারনাটা কিভাবে করলেন বুঝতে পারছিনা।
আমি একবার নোবেল বিজয়ী পদার্থবিদ ভিক্টর ওয়াইসকফের বক্তৃতা শুনেছিলাম। পদার্থবিজ্ঞানের ইতিহাসের উপর। মাত্র একঘন্টার মধ্যে উনি ডেমোক্রিটাস থেকে হাইযেনবার্গ পর্যন্ত পদার্থবিজ্ঞানের বিবর্তন অত্যন্ত সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দিলেন। তার বক্তৃতার একটা বড় অংশ ছিল কোয়ান্টাম মেকানিক্স। ওয়াইসকফের বর্ননা আর তন্ময়ের আলোচনার মধ্যে আমি কোন অসংগতি পাইনি।
তন্ময়কে বলব আপনি ভাল লিখেছেন। লেখা চালিয়ে যান।
বিপ্লব পালকে বলব আপনার মেধা আর পান্ডিত্যকে গঠনমূলক কাজে লাগান। বরাবরের মতই আমাদের ভাল ভাল লেখা উপহার দিতে থাকুন। অন্য লেখকদের তথ্য এবং যুক্তির ভিত্তিতে গঠনমূলক সমালোচনা করুন।
@মোঃ হারুন উজ জামান, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে এভাবে ডিফেন্ড করার জন্য, কিন্তু আপনাকে আমি হতাশ করছি, আমি আসলে পদার্থ বিজ্ঞানের ছাত্র নই, পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে যা শিখি তা শখের বশেই শিখি। সেজন্য আমার লেখায় আসলেই অনেক ভুল থাকতে পারে। আপনাকে অনুরোধ করব আমার লেখায় কোন ভুল পেলে তা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। (তবে এই লেখাটিতে কি ভুল সেটা সম্পর্কে আমি এখনো নিশ্চিত না (তরঙ্গ কণা দ্বৈততা তত্ত্বের মধ্যে দিয়ে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর যাত্রা শুরু এটা বলে আমি আমি আসলে বুঝাতে চেয়েছিলাম যে এটাই প্রথম পুরোপুরি একটি কোয়ান্টাম ফিজিক্স এর তত্ত্ব))
@তন্ময়,
আগ্রহ আর ছাত্রত্ব তো আলাদা ব্যাপার। তাই না? আগ্রহ-এর বিষয়ের ছাত্র হতে পেরেছে, এমন ক’জন আছে বাংলাদেশে? লেখালেখি হল যেমন ইচ্ছা লেখার আমার কবিতার খাতা। :rotfl: আমার যদি আগ্রহের বশে স্পিরিট ল্যাম্প দিয়ে রান্না করতে ইচ্ছে হয়, করব না? মরে গেলে তো আর শখ পূরণের সুযোগই পাবো না। :((
@বিপ্লব পাল, ধন্যবাদ, আপনার মন্তবের জন্য। আসলে আপনি ঠিক বলেছেন, এই লেখায় আমার শব্দ চয়ন কিছুটা ভুলই হয়েছে। তবে আমি যে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর ইতিহাস জানি না, এটা ধরে নেওয়া উচিত হয়নি। হ্যা, কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর ইতিহাস অনেক সুন্দর, কিন্তু কোয়ান্টাম মেকানিক্স বা তার উৎপত্তি নিয়ে আমি এখানে কিছু লিখতে চাইনি, সেটা এই প্রবন্ধের উদ্দেশও ছিল না। তরঙ্গ কণা দ্বৈততা তত্ত্বের মধ্যে দিয়ে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর যাত্রা শুরু এটা বলে আমি আমি আসলে বুঝাতে চেয়েছিলাম যে এটাই প্রথম পুরোপুরি একটি কোয়ান্টাম ফিজিক্স এর তত্ত্ব। অন্তত আমার তাই ধারণা ছিল, আমি ভুল করলে দয়া করে শুধরিয়ে দিয়েন। (আমি ঊইকিপিডিয়ান এ লিঙ্কটাকে সোর্স হিসেবে ব্যবহার করেছি)
আর আসলে এই দীর্ঘ ইতিহাস আমি এর ওর ঘাড়ে চাপিয়েও দিতে চাইনি, আমি কঠিন একটি বিষয়কে সহজ এবং প্রাণবন্ত করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি আবিষ্কার করলাম যে স্টিফেন হকিং এবং ব্রাইয়ান গ্রীন এ কাজটি যত সহজে পারেন, কাজটি তত সহজ না। তথ্য ঠিক রাখতে গেলে লেখা কঠিন হয়ে যায়, আবার লেখা সহজ করলে তথ্য হারিয়ে যায়। আমার আসলে শুরুতে বলে নেয়া উচিত ছিল যে এই প্রবন্ধ কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর ইতিহাস নিয়ে নয়, বরং কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর ‘প্রথম তত্ত্ব’ নিয়ে। আমি চেষ্টা করব যেন পরবর্তীতে এরকম ভুল আর না হয়। এবং আপনাকে আপনার মন্তব্যের জন্য আবারো ধন্যবাদ।
লেখাটা বেশ সহজ হয়েছে।
বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা এরকম লেখা পড়তে পেলে ভাল হত!
অনেক ধন্যবাদ!
আপনার সাহস আছে বটে। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উপর সিরিজ শুরু করে দিয়েছেন। রিচার্ড ফাইনম্যান নাকি একবার বলেছিলেন – কোয়ান্টাম মেকানিক্স কেউ বোঝে বলে দাবী করলে – সেই আসলে বোঝেনা! 🙂
যা হোক, আপনি খুব সহজভাবে বেসিক থেকে শুরু করেছেন নিউটন থেকে শুরু করে হাইগেন, ম্যাক্স ওয়েল, ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক, আইনস্টাইন ডি ব্রগলী সবার কথাই নিয়ে এসেছেন জটিলতা এড়িয়ে। সাধারণ পাঠকদের জন্য অনেক উপকারে আসবে সিরিজটি।
মুক্তমনায় লেখা শুরু করার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। লিখতে থাকুন এভাবে।
অফ টপইক – লেখা প্রকাশের আগে প্রোফাইলে “ভিজুয়াল এডিটর বন্ধ রাখুন” অপশনে টিক মেরে রাখবেন। ফলে ফন্টের গোলমাল হবে না। আপনি সম্ভবতঃ ওয়ার্ড থেকে কপি করায় Vrinda ফন্টে পেস্ট হয়েছে। ফলে খুব ছোট ফন্টে লেখা পোস্ট হয়েছে। মুক্তমনায় সোলায়মানলিপি হচ্ছে ডিফল্ট ফন্ট।
@অভিজিৎ,
ফন্টটা এডমিনেরা একটু ঠিক করে দিলে পাঠকেরা আরাম পেতো।
@স্বাধীন,
মডারেটরের পক্ষ হতে ফন্ট ঠিক করে দেয়া হল, লেখকের প্রোফাইলেও “ভিজুয়াল এডিটর বন্ধ রাখুন” অপশনটায় টিকমার্ক দিয়ে রাখা হল, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের ঝামেলা এড়ানো যায়।
বেশ সহজ ভাষায় লেখা, বুঝতে সুবিধে হয়েছে। এরকম লেখা আরো বেশি বেশি আসুক :yes: ।
@স্বাধীন, ধন্যবাদ
এই ধারনা থেকেই কি আসলে স্ট্রিং থিওরির চিন্তাটা এসেছে?
আগেই জানা ছিল ব্যাপারগুলো কিন্তু তারপরেও সাবলীল বলে বেশ ভালো লাগল লেখাটা। কয়েকটা নাম মনে হয় আসেনি শেষের দিকে। ঠিক করে দিয়েন সময় মত।
ধন্যবাদ।
@সাইফুল ইসলাম, না, এখান থেকে স্ট্রিং থিওরি আসে নাই। স্ট্রিং থিওরি এসেছে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সাথে আপেক্ষিকতার সাধারণ মতবাদকে এক করার প্রচেষ্টায়। এই উক্তি বলছে যে সব বস্তুই কণারূপ আচরণ করে, আর স্ট্রিং থিওরি সফল হলে কার্ক এবং লেপটন এর গঠন বলতে পারবে।