[সন্মানিত পাঠকদের প্রতি বিনীত অনুরোধঃ এ বেলা ব্যস্ততা থাকলে নিবন্ধটা পড়া শুরু না করার জন্যে বিশেষ অনুরোধ রইলো। নিবন্ধটা অনেক বড়। বিশ্লেষনগুলোও কিছুটা সুক্ষ্ণ। কাজেই হাতে খানিকটা সময় নিয়েই নিবন্ধটা পড়া শুরু করার জন্যে সবিশেষ অনুরোধ রইলো।]
প্রথমেই পাঠকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আমার ইচ্ছাকৃত কিঞ্চিত অসততার জন্যে। কেননা, এই নিবন্ধটার আরও যথার্থ শিরোনাম হওয়া উচিত ছিল, ‘মডারেট ধার্মিক’। তবে আজ-কালকের বাজারে প্রচার মাধ্যমগুলোর বানিজ্যিক সফলতায় ‘মুসলিম’ শব্দটার গন্ধ থাকাটা এতটাই জরুরী ও অপরিহার্য হয়ে পড়েছে যে, আমি নিজেও শব্দটার ব্যবহারে লোভ সামলাতে পারলাম না। যাহোক, এবার লেখার মূল বক্তব্যে ফিরে আসি। আমার এক বন্ধু কথা প্রসঙ্গে আমাকে একবার বলেছিল, “মডারেট মুসলিম বলে আসলে কারো অস্তিত্ব নেই। এটা মুসলমানদেরকে ডিভাইড করার জন্যে পশ্চিমা দেশগুলোর এক ধরনের চক্রান্ত। কোর’আন একটাই। মুসলমানও একরকম। কোর’আন যে মানে, সে মুসলমান; আর যে মানেনা সে না। ব্যাপারটা দিনের আলোর মত পরিষ্কার। ‘রেডিক্যাল মুসলিম’, ‘মডারেট মুসলিম’ ইত্যাদি গ্রুপে ভাগ করে ওরা মূলত মুসলিম উম্মাহকে ডিভাইড করতে চায় আমাদেরকে দূর্বল করার জন্যে। বুঝলি দোস্ত, এ সবই ঐ শালা পশ্চিমাদের চক্রান্ত”। খুবই জ্ঞানের কথা। বিষয়টা আমাকে রীতিমত ভাবিয়ে তুললো।
ক’দিন আগে ‘অতিরিক্ত ধর্মীয় জোশ ও গোঁড়ামী চরমপন্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে’ (Exessive Religious Zeal and Conservatism May Lead to Extremism) শিরোনামে লিখিত আমার একটা প্রবন্ধ সমসাময়িক বেশ কতগুলো ই-ফোরামে (বাংলা ব্লগে) প্রকাশিত হয়েছিল। এরমধ্যে একটা ছিল ‘মুক্তমনা’, যেখানে বাংলা ভাষাভাষি সনাতনি বা প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মে সংশয়বাদী ও অবিশ্বাসী লেখকদের সর্বাধিক সমাগম বলে সর্বজনবিদিত (no offense to the agnostic or the aetheist school of thought, ধর্মে সংশয়বাদী বা অবিশ্বাসীদের প্রতি ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনো বিরূপ মনোভাব নেই; ধর্মে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস করা একজন মানুষের একেবারেই নিজস্ব অধিকার বলে আমি মনে করি)। লেখাটার মূল বিষয়বস্তু ছিল সমসাময়িক কোনো কোনো ধর্মে রেডিক্যাল তথা প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাবের সাম্প্রতিক উত্থান এবং উদাহরন হিসেবে হিন্দু, মুসলমান এবং খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বী কিছু মানুষের কিম্বা গ্রুপের প্রতিক্রিয়াশীল মনোভাবের উত্থানের ওপর আমি আলোকপাত করার চেষ্টা করেছিলাম। লেখার ধারাবাহিকতায় কেবল কথাপ্রসঙ্গেই এটা উঠে এসেছিল যে, আমি একজন ধার্মিক মুসলমান যা খুব স্পষ্টভাবে কিম্বা বড় গলায় দাবী করা হয়নি ঐ লেখায়।
অবাক হওয়ার ব্যাপার ছিল, প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে অর্ধেকের বেশী মন্তব্যকারী আমার প্রায় ৩,১০০ শব্দ সম্বলিত (৮”X১১” সাইজের কাগজের প্রায় ছয় পাতা) সুবিশাল নিবন্ধের বিষয়বস্তু বা আমার প্রদত্ত তথ্যের ওপর তেমন কোনো মন্তব্য না করে আমাকে ‘ধরি মাছ না-ছুঁই পানি জাতীয় চালাক’, ‘মুখোষধারী’, ‘সুবিধাবাদী’, ‘দুই নৌকায় পা রাখি’, ‘ভন্ড’, ‘জ্ঞানপাপী’, ‘ফান্ডামেন্টালিষ্ট’, ইত্যাদি সুশ্রাব্য এবং সুমধুর অসংখ্য বিশেষনে অভিহিত করে এমনভাবে ছেঁকে ধরলেন যেন একজন বিশ্বাসী মুসলমান হয়ে ধর্মের রেডিক্যালিজম নিয়ে একটা প্রবন্ধ লেখাই আমার জন্যে গুরুতর অপরাধ হয়ে গেছে। ভাগ্যিস মুক্তমনা এ্যাড্মিন সরাসরি এসে হস্তক্ষেপ করেছিল ত্রানকর্তা হিসেবে; নইলে গালাগালির চোটে আমার একেবারে ছ্যাড়াবেড়া অবস্থা হয়ে যেত। আমার ওপর ওনাদের এত রাগের কারন আজো আমার কাছে রহস্যই রয়ে গেছে।
অবশ্য বিশেষনে ভরা মন্তব্যগুলো থেকে ওনাদের সুনির্দিষ্ট একটা argument বা যুক্তি মোটামুটি স্পষ্টভাবেই উঠে এসেছিল যা হলো, ‘মডারেট মুসলিম’ বলে আসলে কোনো মুসলমানের অস্তিত্ব নেই; হয় চরমপন্থী মুসলমান (বাহ্যিকভাবে প্রকাশকারী কিম্বা গোপনকারী) আর নাহয় ধর্মত্যাগী প্রাক্তন মুসলমান। পরিষ্কারভাবে ০ (শূন্য) অথবা ১০০; ৫০-৫০ বলে কিছু থাকার সুযোগ নেই। সে অনুসারে, মুসলমানদের মধ্যে যারাই নিজেদেরকে ‘মডারেট মুসলিম’ ভাবেন, তারাও সবাই প্রকারান্তরে আমার মতই উপরোক্ত সুশ্রাব্য এবং সুমধুর বিশেষনগুলোয় ভূষিত হওয়ার যোগ্য। আমার বুঝায় ভুল হতে পারে; কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছিল, আমার রেডিক্যাল বন্ধুটার অসহনশীল মনোভাবের সাথে আক্রমনাত্মক মন্তব্যকারী ঐ পাঠকদের মনোভাবের কোথায় যেন খুব সুক্ষ্ণ, অচেনা একটা মিল রয়ে গেছে যদিও প্ল্যাটফর্ম দু’টো নিঃসন্দেহেই পরষ্পরবিরোধী!
যাহোক মূল আলোচনায় ফিরে আসি। ‘মডারেট মুসলিম’ বলে সত্যিই কি কারো অস্তিত্ব আছে? শুনে হয়ত আমাদের অনেকের কাছে খারাপ লাগবে, কিন্তু তত্ত্বগতভাবে আসলেই নেই। অন্তত আমার ব্যক্তিগত অভিমত সেটাই। সে অর্থে আমার বন্ধুর দাবী অংশবিশেষে যেমন সত্যি, ঠিক তেমনই সত্যি আক্রমনাত্বক মন্তব্যকারী পাঠকদেরও। তবে কথা একখানা অবশ্য আছে এখানে। আর সে কারনেই আমার আজকের এই লেখার অবতারনা। সত্যি বলতে কি, মুক্তমনায় খানিকটা গালাগালি খেয়েই আমার মাথায় এসেছিল এই সুক্ষ্ণ বিষয়টা নিয়ে নিবন্ধটা লেখার। কাজেই, on a second thought (দ্বিতীয় মতে), গালাগালি সবসময় বোধহয় খারাপ নয়।
কোর’আনে কি বিধর্মীদের হত্যা করার আয়াত আছে? তৎকালীন ধর্মীয় ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, অস্তিত্বের লড়াই, ঘটনাচক্রের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রয়োজনীয়তা, আগের ও পরের আয়াতসমুহের ব্যাখ্যা, ইত্যাদি যত যুক্তিই আমরা খাঁড়া করিনা কেন, bottom line বা মোদ্দা কথা হলো, ‘আছে’। কেন আছে তা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে হাজারো মতভেদ এবং লাখো তর্ক-বিতর্ক থাকলেও সেদিকে যাওয়া আমার আজকের লেখার উদ্দেশ্য নয়। তবে একজন ধর্মে অবিশ্বাসী কিম্বা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের জুতায় পা রেখে যদি আমি কোর’আন কে দেখি, তাহলে এককথায় সহজ ও পরিষ্কার উত্তর হলো, ‘আছে’; তা যেভাবেই থাকনা কেন। অনুরূপভাবে, জিউসদের Old Testament বা পুরনো বাইবেলে এবং এবং খ্রীষ্টানদের New Testament বা নতুন বাইবেলেও এমন অনেক ভার্স (আয়াত) আছে যেখানে একইভাবে বিধর্মীদেরকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হত্যা করতে বলা হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, সাম্প্রতিককালের ধর্মীয় সন্ত্রাসের উত্থানের পটভূমিতে কোর’আন কেন আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে কিন্তু সেই একই দোষে দূষ্ট হয়েও পুরনো বা নতুন বাইবেল কেন আসেনি, তা অনেক তর্ক-বিতর্কের ব্যাপার এবং সেটাও আমার আজকের লেখার বিষয়বস্তু নয়। সাথে এটাও উল্লেখ্য যে, আব্রাহামিক ধর্মগ্রন্থগুলো ছাড়া সমসাময়িক অন্যান্য ধর্মের (যেমন হিন্দু বা বৌদ্ধ ধর্মের) ধর্মগ্রন্থগুলোর ‘কন্টেন্ট’ (অন্তর্ভূক্ত বিষয়) সম্পর্কে আমার জ্ঞান প্রায় শূন্যের কোঠায় হওয়ায় সেগুলোর বিষয়ে স্বভাবতই কিছু উল্লেখ করা এখানে সম্ভব হচ্ছেনা।
ধর্মবিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য একটা অংশ হলো ধর্মগ্রন্থে বিশ্বাস করা এবং সে অর্থে প্রকারান্তরে ধর্মগ্রন্থের সব বিষয়কে মৌলিক অবস্থান থেকে মেনে নেয়া। সে অর্থে শুধু ধর্মে বিশ্বাস করার কারনেই (তা জন্মসুত্রেই হোক কিম্বা স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েই হোক) একজন জিউস, খ্রীষ্টান কিম্বা মুসলমান ‘বাই ডিফল্ট্’ (by default) বিধর্মীদের হত্যা করার হিংসাত্বক ভার্সগুলোকে মৌলিক অবস্থান থেকে তত্ত্বগতভাবে মেনে নিচ্ছেন। যদিও ‘মেনে নেয়া’ এবং ‘সমর্থন করা’ ব্যাপার দু’টোর মাঝে মৌলিক একটা সুক্ষ্ণ পার্থক্য আছে, কিন্তু তত্ত্বগত দিক দিয়ে কেউ যদি argue (তর্ক) করেন যে, ধর্মে বিশ্বাসীদের সংগা মূলত একটাই যা ‘ধার্মিক’ কেননা by the end of the day (দিনশেষে) মানুষটা কোনো না কোনো ধর্মীয় পরিচয়ে পরিচিত এবং সেখানে রেডিক্যাল বা মডারেট বলে তত্ত্বগত কোনো বিভাজন নেই, তবে যুক্তি দিয়ে তা খন্ডন করা বেশ কঠিন। কেননা নগন্য কিছু সংখ্যক ধর্মীয় সন্ত্রাসী ধর্মগ্রন্থের হিংসাত্বক ভার্সগুলোর চুড়ান্ত অপপ্রয়োগ করলেও দিনশেষে একজন নিরীহ ধর্মপালনকারীর এবং তেমন একজন সন্ত্রাসীর ধর্মীয় পরিচয় কিন্তু একটাই, তা হলো- সে একজন জিউস, খ্রীষ্টান কিম্বা মুসলমান। এটা একটা প্রচলিত ‘স্কুল অব থট্’ (school of thought) এবং ধর্মে সংশয়বাদী বা অবিশ্বাসীদের বড় একটা অংশের argument বা যুক্তি সাধারনত এটাই। পৃথিবীতে কোনো argument-ই যেহেতু চুড়ান্ত বা absolute নয় এবং যে কেউই যে কোনো argument-এর ব্যাপারে দ্বিমত পোষন করতে পারেন, সে কারনে আমার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গী হলো, প্রতিটা ‘স্কুল অব থট্’-এর অস্তিত্বকেই স্বীকার করে নেয়ার মানসিকতা থাকা উচিত এবং দ্বিমত পোষন করলেও সেটাকে একটা ‘স্কুল অব থট্’ হিসেবেই সন্মান করতে শেখা উচিত।
মজার ব্যাপার হলো, তত্ত্বগতভাবে যাদের অস্তিত্বকে যুক্তি-তর্কে প্রায় ‘নেই’ বলে অস্বীকার করেন একটা ‘স্কুল অব থট্’, মডারেট মনোভাবসম্পন্ন তারাই বাস্তবে প্রতিটা ধর্মের সবচেয়ে বড় এবং প্রধানতম অংশ। মডারেট মনোভাবসম্পন্ন এই সুবিশাল দলটা প্রতিটা ধর্মেই সবসময় ছিল, আছে এবং থাকবে যদিও ধর্মচর্চার ক্ষেত্রে এদের রিলেটিভ (আপেক্ষিক) অবস্থান সুদূর পরিব্যাপ্ত যা কোনো একটা ‘শতক অংকিত স্কেল’-এ দেখলে সম্ভবত ০ (শূন্য) থেকে ১০০ পর্যন্ত বিস্তৃত । অর্থাৎ, একদম ধর্মচর্চাহীন থেকে শুরু করে খুব ধর্মপরায়ন- সব ধরনের মানুষই রয়ে গেছেন এই সুবিশাল গ্রুপটাতে। এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এদের সবচেয়ে বড় অংশটার ধর্মপালন শুধুমাত্র ধর্মীয় ও সামাজিক রীতি-নীতি ও আচার-আচরণ মানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। ধর্ম এদের প্রাত্যহিক ও দৈনন্দিন জীবন-যাপনে কেবল ছোট-খাট ধর্মীয়, সামাজিক ও পারিবারিক কিছু ব্যাপার-স্যাপার নিয়ন্ত্রন করলেও তাদের চরিত্রগত ও পেশাগত বড় বড় মৌলিক বিষয়গুলোতে অধিকাংশ সময়ই কোনো নিয়ন্ত্রন স্থাপন করতে সমর্থ হয়না। সে কারনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা স্বধর্ম বা ভিন্ন ধর্মগুলোর প্রতি তথা সামগ্রিকভাবে পুরো ধর্ম ব্যাপারটার প্রতিই একধরনের মডারেট ও indifferent (নিঃস্পৃহ) মনোভাব পোষন করেন।
ব্যাপারটা আরেকটু ভালভাবে ব্যাখ্যা করার জন্যে উদাহরন হিসেবে বাংলাদেশের কোনো একটা রাজনৈতিক দলের কথাই ধরি। যেমন ধরুন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ’। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নিজস্ব একটা লিখিত কন্সটিটিউশন বা নীতিমালা আছে। (তর্কের খাতিরে দলটার নীতিমালাকে ধর্মগ্রন্থের অনুকরনে একটা ‘রাজনৈতিক গ্রন্থ’ হিসেবে ধরে নিই)। এমন অনেক আওয়ামীলীগার আছেন যারা বংশানুক্রমে পারিবারিকভাবে আওয়ামীলীগ করে আসছেন অথচ যাদের অনেকে আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক গ্রন্থে কি কি আছে তা হয়ত আদোতেই জানেননা। আবার অনেকে ছাত্রজীবনে সমসাময়িক দলগুলোর ভাসা ভাসা কর্মকান্ড প্রত্যক্ষ করে একটু একটু করে আওয়ামীলীগ সমর্থন করা শুরু করেছেন। এছাড়া আওয়ামীলীগে এমন মানুষ থাকাও অসম্ভব নয় যিনি সথ্যিকার অর্থেই সমসাময়িক দলগুলোর প্রত্যেকটার রাজনৈতিক গ্রন্থ পুংখানুপুংখরূপে যাচাই-বাছাই করে কেবল তারপরেই আওয়ামীলীগ সমর্থন করা শুরু করেছেন। একইভাবে প্রয়োগের ক্ষেত্রেও কেউ হয়ত শুধু ভোট দিয়েই ক্ষ্যান্ত থাকেন, কেউবা মিছিলে খুব পেছনের দিকে চুপচাপ অংশগ্রহন করেন, কেউবা আবার মিছিলের একেবারে সামনে ‘আগুন জ্বালো’ বলে হুংকার দেন, এবং কেউ এমনও আছেন যিনি আওয়ামীলীগ সমর্থন করলেও স্রেফ আলসেমীর কারনে ভোটটা পর্যন্ত দিতে যাননা ভোটকেন্দ্রে। যুক্তিবাদের তত্ত্বে এরা সবাই কিন্তু ‘আওয়ামীলীগার’ তা যে যেভাবেই আওয়ামীলীগে এসে ঢুকে থাকুননা কেন এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহনে (তথা আওয়ামী ধর্মপালনে) একটা ‘শতক অংকিত স্কেল’-এ ০ (শূন্য) থেকে ১০০-এর মধ্যে পরষ্পরের রিলেটিভ অবস্থান যেখানেই হোকনা কেন। আওয়ামী সন্ত্রাসী, জয়নাল হাজারীও একজন আওয়ামীলীগার এবং নিরীহ মৌন সমর্থনকারী আব্দুর রহমান আবিদও একজন আওয়ামীলীগার যার বেশীরভাগ বন্ধু-বান্ধবই একসময়ের ছাত্রদল, জাসদ বা ছাত্র ইউনিয়নের সমর্থক। এখন, বিএনপি’র সা.কা. চৌধুরীর (সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী) জুতায় পা রেখে আওয়ামীলীগারদের দেখলে জয়নাল হাজারী এবং আব্দুর রহমান আবিদ দু’জনই কিন্তু সমানভাবে আওয়ামীলীগার এবং তত্ত্বগতভাবে দু’জনের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই কেননা দুজনই তার প্রতিপক্ষ। আবার, একজন ইসলাম পালনকারী হওয়া সত্বেও ‘সেক্যুলার’ নীতিমালার আওয়ামীলীগকে মৌলিক অবস্থান থেকে আমি কিভাবে সমর্থন করি তা তত্ত্বগতভাবে ব্যাখ্যা না করতে পারার কারনে কিম্বা পুরোপুরি বোধগম্য না হওয়ার কারনে সা.কা. চৌধুরীর কাছে আব্দুর রহমান আবিদকে হয়ত বিভ্রান্ত বলে মনে হতে পারে। কিম্বা আরও এক ধাপ এগিয়ে মনে হতে পারে ভন্ড, সুবিধাবাদী, মুখোষধারী। আমি আওয়ামীলীগার হওয়া সত্বেও সন্ত্রাসী জয়নাল হাজারীকে সমর্থন করি কি করিনা, তার তোয়াক্কা না করেই সা.কা. চৌধুরী কেবল জয়নাল হাজারীকে মাথায় রেখে আমার প্রসংগে যদি দাবী করেন “হয় তুমি আওয়ামীলীগার, আর না হয় আওয়ামীলীগার না”, তবে তত্ত্বগতভাবে তার দাবীটা হয়ত সত্যি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আওয়ামীলীগের প্ল্যাটফর্মে এসে দাঁড়ালে কিম্বা নিরপেক্ষ মাঝামাঝি একটা অবস্থান থেকে দেখলে, জয়নাল হাজারীর সাথে আব্দুর রহমান আবিদের সুস্পষ্ট পার্থক্যটা সত্যিকারের যুক্তিবাদী ও মুক্তমনের একজন মানুষের চোখে হয়ত সহজেই ধরা পড়বে। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, আওয়ামীলীগে নিরীহ ‘আওয়ামী ধর্মপালনকারী’ আব্দুর রহমান আবিদের মত কিম্বা তার কাছাকাছি মনোভাবসম্পন্ন মানুষের সংখ্যাই সম্ভবত সবচেয়ে বেশী।
এতক্ষণ যা বললাম তা সবই আসলে তত্ত্বকথা। গাল-কপচানো এসব তত্ত্বকথা অনেক পাঠকই আবার আজকাল খেতে চান না। কাজেই মনে হলো, একটা বাস্তব ঘটনার উদাহরন দিই।
রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ থেকে এইচ.এস.সি. পাশ করে এযাবৎকাল বের হওয়া প্রাক্তন ক্যাডেটদের সংখ্যা আনুমানিক ২,০০০ জন এবং এরা সবাই অধিকারসূত্রে ‘অরকা’র (ORCA, Old Rajshahi Cadets Association) সদস্য। সে হিসেবে আমিও অরকা’র একজন আজীবন সদস্য। আমাদের একটা গ্রুপ ইমেইল আছে যেখানে অরকা’র সাংগঠনিক বিষয়সহ বিভিন্ন মানবিক ও সামাজিক প্রকল্পের বিষয়ে সদস্যদের মাঝে তথ্যের আদান-প্রদান হয়। এবং অবধারিতভাবে মাঝে মধ্যেই সেখানে রাজনীতির আলোচনা চলে আসে (যা বাঙ্গালীর মজ্জাগত স্বভাব বোধহয়)। ধর্মের ব্যাপারটা সাধারনত খুব একটা আসে না। তবে একবার এলো এবং তুলকালাম কান্ড বেঁধে গেল। প্রায় ২,০০০ সদস্য সমৃদ্ধ অরকা’তে সংখ্যালঘু সদস্য সংখ্যা হাতে গোনা চার-পাঁচ জন। এক-আধজন বেশীও হতে পারে। বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীতে এবং ক্যাডেট কলেজগুলোতে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কেন এত কম তা যেহেতু আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু নয়, কাজেই আমি সেদিকে যাচ্ছিনা।
আজ থেকে প্রায় সোয়া তিন, সাড়ে তিন বছর আগের ঘটনা। ২০০৭-এর শুরুর দিকে। আমার চেয়ে বছর কয়েকের সিনিয়র এবং রিটায়ার্ড সামরিক অফিসার এক বড়ভাই সম্ভবত কোনো এক অরকা সদস্যের আকস্মিক অকাল মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি সবাইকে যার যার নিজের মৃত্যুর ব্যাপারে স্মরন করিয়ে দেয়ার জন্যে কোর’আনের গোটা কয়েক আয়াত সম্বলিত একটা ইমেইলে পাঠিয়েছিলেন অরকা’র গ্রুপ মেইলে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট সদস্যদের একটা গ্রুপ মেইলে এহেন শোকাবহ একটা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আবেগতাড়িত হয়ে কেউ একজন এরকম একটা ইমেইল পাঠাতেই পারেন যা বোধগম্য না হওয়ার কোনো কারন নেই। কাজেই কেউ আপত্তি তোলেননি। উত্তরে আরেক সিনিয়র ভাইও প্রথমোক্ত ভাইয়ের মেইলের প্রতি সমর্থন জানিয়ে কিছু ওয়াজ-নসিহত করেন সবাইকে। সেটাও অনেকে হজম করে নেন। কিন্তু এরপর অনেকটা “ডমিনো ইফেক্ট’ (domino effect)-এর মত একই বিষয়ের উপর ওনারা দু’জন আরও গোটা তিন-চার মেইল চালাচালি করলে স্বভাবতই আপত্তি ওঠে অরকা’র সেক্যুলার অবস্থানের বিষয়টা বিবেচনা করে এবং আপত্তিকারী উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্যদের মাঝে দু’একজন সংখ্যালঘূ সদস্যসহ আমি নিজেও ছিলাম। উল্লেখ্য, আমরা নিজেরা নিজেরা বলেই অরকা’র গ্রুপ মেইলে দু’একজন মডারেটর থাকলেও তথাকথিত কোনো মডারেশন সিস্টেম নেই। আমার লিখিত প্রতিবাদী ইমেইলটা ছিল নিম্নরূপঃ
[ercc] Discussion of religious topic in this forum!
Tuesday, January 30, 2007 1:41 PM
From: “Md. Abdur Rahman”
To: “ORCA”
It often happens to me. I composed a mail on the ongoing issue and before I sent it, Wasi sent a mail to this group that contains part of the things that I was trying to say and it will sound repetitive if I send my mail now. However, on the other hand, it’s hard for me to afford that much time to compose another mail or change the current contents of my mail to avoid the repetitive parts. So, I find it worthwhile to send the mail as is.
——————————————————————————————-
Dear brothers:
Our national policymakers deliberately set laws that prevented the minority from entering Cadet Colleges which brought down the admittance ratio to nearly zero for them if compared with the number of Muslim student’s admittance. Pity for us and we should already be much ashamed of what our national policymakers have set forth.
Lucky us that we still got Manish bhai, Shusim bhai, Otin bhai, Shadhon and Kyalyan among us as our own brothers despite the heinous communal efforts of our national policymakers. And yet, we are now emerging as neo-conservative Muslims in a brotherhood forum like ORCA to overthrow these few non-Muslim brothers by making overzealous religious preaching type of comments.
All these years, we sent greetings for Eid and Ramadan in ORCA forum and these non-Muslim brothers equally shared the greetings with us without ever telling us that they belonged to another faith. At least, I don’t remember if any of us ever sent a message to this forum greeting these brothers on any of their holidays. Yet, they never complained about it knowing that most of the members were Muslims. I wish, at least, I greeted them during their holidays/festivals.
I would only say to Manish bhai, Shusim bhai, Otin bhai, Shadhon and Kyalyan that the broadness of your heart that you already have shown for all these years, please retain to it during this awkward situation and please withdraw your appeals to unsubscribe you from this forum lest the victory will go to the communal ideology.
Despite blaming the so-called ‘conspiracy of the west’ alone, the Muslims have already started learning to respect the people of other faith and show dignity for other’s religion in a hard way these days all over the world. The same way they would learn, in this forum, to write rational mails in future through making public apology for which Asad (23/1263) already called on and I’m in support of Sarwar bhai’s stand that there shouldn’t be any form of censorship, whatsoever, on any mail sent by a member to this forum and let him bear the responsibility alone for what he writes. Besides, it helps us learn too and rectify our mistakes.
LET’S PROSPER TOGETHER as brothers. wassalam.
Abid
17/921
[বঙ্গানুবাদঃ আমার ক্ষেত্রে প্রায় এটা ঘটে। প্রচলিত ইস্যুটার ওপর আমি যখন একটা ইমেইল লিখেছি এবং তা পাঠাতে যাবো, তার ঠিক আগে আগেই দেখি ওয়াসী গ্রুপের সবার কাছে একটা ইমেইল পাঠিয়েছে যেখানে আমি যা যা বলতে চেয়েছি, তার অংশবিশেষ বলা হয়ে গেছে এবং এমতাবস্থায় আমি মেইলটা পাঠালে কিছু কিছু বিষয়কে পুনরাবৃত্তি বলে মনে হতে পারে। আবার অপরপক্ষে আমার পক্ষে সময় বের করা এতটাই কঠিন যে, নতুন করে আরেকটা মেইল লেখা কিম্বা মেইলের পুনরাবৃত্ত অংশগুলোকে পরিবর্তন করা খুব কঠিন। কাজেই হুবহু অবিকৃত অবস্থায় মেইলটা পাঠিয়ে দেয়াই আমার কাছে যথাযথ বলে মনে হলো।
——————————————————————————————–
প্রিয় ভায়েরাঃ
আমাদের জাতীয় নীতিপ্রনেতাগণ স্বেচ্ছাকৃতভাবে এমন সব আইন জারি করে গেছেন যা সংখ্যালঘুদেরকে ক্যাডেট কলেজে ভর্তিতে বাধাগ্রস্থ করেছে যা মুসলমান ছাত্রদের তুলনায় সংখ্যালঘু ছাত্রদের সংখ্যানুপাতকে প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে নিয়ে এসেছে। ব্যাপারটা খুবই দুঃখজনক এবং আমাদের জাতীয় নীতিপ্রনেতাগণ যেসব আইন জারি করে গেছেন তার জন্যে আমাদের ইতিমধ্যেই অত্যন্ত লজ্জিত হওয়া উচিত।
তারপরেও আমরা খুব ভাগ্যবান যে, আমাদের জাতীয় নীতিপ্রনেতাগণের সাম্প্রদায়িক দূরভিসন্ধির প্রচেষ্টা সত্বেও আমরা আমাদের মাঝে মনিশ ভাই, সুসীম ভাই, ওতিন ভাই (উপজাতি ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এই তিনজন আপন সহোদর), স্বাধন এবং কল্যানকে পেয়েছি। অথচ ধর্মীয় জোশের সব বাণী শুনিয়ে আজ আমরা নব্য-গোঁড়া মুসলমান হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছি অরকা’র মত ভাতৃত্ববোধের একটা ফোরাম থেকে এই নগন্য সংখ্যক সংখ্যালঘূ ভাইদেরকে উচ্ছেদ করার জন্যে।
এতগুলো বছর ধরে আমরা ঈদ এবং রোজাতে অরকা ফোরামে একে-অন্যকে শুভেচ্ছা পাঠিয়েছি এবং আমাদের সংখ্যালঘূ ভাইয়েরাও আমাদের সাথে তা বিনিময় করেছেন কখনও এটা না বলে যে, তারা অন্য ধর্মে বিশ্বাসী। আমি অন্ততপক্ষে মনে করতে পারিনা যে, আমরা কেউ কখনও এই ফোরামে তাদের কোনো পুজা-পার্বনে তাদেরকে শুভেচ্ছা পাঠিয়েছি কিনা। অথচ তারা এটা নিয়ে কখনও নালিশ করেননি এটা জেনে যে, এই ফোরামটার অধিকাংশ সদস্যই মুসলমান। আমার একান্ত ইচ্ছে হয়, অন্তত আমি যদি তাদের পুজা-পার্বনে তাদেরকে শুভেচ্ছা পাঠাতাম!
মনিশ ভাই, সুসীম ভাই, ওতিন ভাই, স্বাধন এবং কল্যানকে আমি শুধু এটুকুই বলবো যে, হৃদয়ের যে বিশালতা এতগুলো বছর ধরে আপনারা দেখিয়ে এসেছেন, আজকের এই সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতেও সেটাকে আপনারা ধরে রাখুন এবং ফোরাম থেকে আপনাদের সদস্যপদ বাতিলের অনুরোধকে প্রত্যাহার করুন নতুবা আজকের বিজয় চলে যাবে সাম্প্রদায়িক আদর্শের হাতে।
সবকিছুকে এককভাবে ‘পশ্চিমাদের চক্রান্ত’ বলে নালিশ করলেও মুসলমানরা অন্যান্য ধর্ম ও ধর্মাবলম্বীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সন্মান দেখাতে শিখছে বিশ্বব্যাপী এবং তা শিখছে কঠিন পথ ধরেই। সেই একইভাবে এই ফোরামেও তারা জনসমক্ষে ক্ষমার চাওয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যতে মননশীল ইমেইল লেখা শিখবে যে দাবী আসাদ (২৩/১২৬৩) ইতিমধ্যেই জানিয়েছে এবং আমিও সরোয়ার ভাইয়ের সাথে একমত পোষন করি যে, সদস্যদের পাঠানো ইমেইলে কোনো সেন্সরশীপ থাকা ঠিক না এবং মেইলদাতা নিজেই বহন করবেন মেইলে লিখিত বক্তব্যের সমস্ত দায়-দায়ীত্ব। কেননা এর মাধ্যমেই আমরা শিখি এবং আমাদের ভুলগুলোকে শোধরাই।
ভাতৃত্ববোধের জয় হোক। সবার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।
আবিদ
১৭/৯২১ (১৭তম ব্যাচ/ক্যাডেট নং-৯২১)]
[নোটঃ ইংরেজীতে কিছু লেখা নিঃসন্দেহে কঠিন। বাংলায় গুছিয়ে কিছু লেখাও খানিকটা কঠিন। আর ইংরেজী থেকে বাংলা করা?- ওয়াও! ধারনার বাইরে কঠিন। অন্তত আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা সেটাই। কাজেই দূর্বল বঙ্গানুবাদের জন্যে পাঠকদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী]
অসংখ্য সদস্যের প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মের আলোচনার উত্থাপনকারী ঐ দু’জন বড়ভাই অরকা ফোরামে পাব্লিক্লি (জনসমক্ষে) সংখ্যালঘূ ভাইদের কাছে ক্ষমা চান এবং বিষয়টার মোটামুটি একটা নিষ্পত্তি ঘটে। যেমনটা আমি আগেই উল্লেখ করেছি, আপত্তিকারী সদস্যদের মধ্যে দু’একজন সংখ্যালঘূ সদস্যও ছিলেন। এরমধ্যে একজন ছিলেন আমেরিকাপ্রবাসী সুসীম ভাই, যিনি আমার চেয়ে অনেক অনেক সিনিয়র। ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে ধর্মের ইস্যুটা মোটামুটি যখন মিটমাট হয়েই গেছে, তখন আমার চেয়ে বেশ কয়েক বছরের সিনিয়র আরেক বড়ভাই অরকার’র বিবিধ কার্যক্রমে সুসীম ভাইয়ের অনিয়মিত উপস্থিতির অভিযোগ তুলে ফোরামে সুসীম ভাইকে ব্যক্তিগত আক্রমন করেন (বয়সে বড় সুসীম ভাইকে মি. সুসীম বলে সম্বোধন করাসহ) এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট এমন একটা ফোরামে ধর্মের প্রচারধর্মী আলোচনা বন্ধের পক্ষে দাবী ওঠায় এবং অমুসলিম ভাইদের কাছে ঐ দুই মুসলিম সদস্যের ক্ষমা চাওয়ায় প্রকারান্তরে বিস্ময় প্রকাশ করেন। ওনার যুক্তি ছিল, “কেউ এহেন আলোচনা পছন্দ না করলে সেসব ইমেইল মুছে ফেললেই তো হলো, লাইন-বাই-লাইন পড়ার দরকার কি? কেউ তা পড়লে বুঝতে হবে তার মনে উল্টোপাল্টা (আরেক কথায় অসৎ) কোনো উদ্দেশ্য আছে নিশ্চয়”। বলাবাহুল্য, মৌমাছির চাকের মত অসংখ্য প্রতিবাদী কন্ঠ ওনাকে ছেঁকে ধরলে ভদ্রলোক স্বভাবতই পিছু হঠেন। তবে উনি পাব্লিক্লি সুসীম ভাইয়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন কিনা তা অবশ্য এতদিন পরে এসে আমার মনে নেই। অসংখ্য প্রতিবাদকারীর মধ্যে আমিও ছিলাম একজন এবং এ দফায় আমার লিখিত প্রতিবাদী ইমেইলটা ছিল নিম্নরূপঃ
Re: [ercc] Religious discussion
Thursday, February 1, 2007 11:08 AM
From: “Md. Abdur Rahman”
To: [email protected]
I don’t know if we are going in circles. I thought it was over after ***** bhai and ***** bhai (names deleted) clarified the things, asked for apology to the non-Muslim brothers and Dipok bhai concluded the entire thing with a mail from the desk of the moderator.
ORCA is like a family and we are like ‘mirrors’ to each other. We learn from each other’s mistakes and there is nothing to be ashamed of making mistakes. Making public apology to the non-Muslim brothers rather dignified the morality of ***** bhai and ***** bhai (names deleted) and it even made them more respected and beloved to us including our non-Muslim brothers, I believe.
Having said that let me take the opportunity to ask the respected forum members to imagine a situation in this forum. Let’s say, Shadhon wrote a mail to ORCA forum that unless every soul believes in ‘Krishna’, takes ‘Ganga Snan’, visits the birthplace of ‘Ram’, etc., that soul will only enter the Hell (Norok) and as a true believer in Hinduism it’s his holy and noble responsibility to convey this preaching message to the non-believers (which would be the Muslims in that case) in ORCA forum. Then Kalyan was overwhelmed with this message and he wrote similar mails in support of Shadhon (I apologize to Shadhon and Kalyan if these are not some of the important rituals in your religion about which my knowledge is nearly zero. I wish I knew more about other religions).
Now, if Shusim bhai says that I should ignore what Shadhon or Kalyan wrote in their mails or simply delete those mails lest I must have an interest or motif otherwise, I don’t think I will let Shusim bhai go so easily with this sort of logic or let Shadhon or Kalyan continue writing these kinds of insensitive and uncourteous mails in this forum.
Apart from Hamid bhai and Dipok bhai, I believe Wasi and Asad are the two folks who hardly miss any of the ORCA-USA programs held in the U.S. On the other hand, I’m one of the most unfortunate persons who hardly can attend the ORCA-USA programs. Now, I said something or wrote something in ORCA forum which Wasi liked and he supported ‘Abid bhai’ for his writing whereas the same message wasn’t liked by Asad. Now Asad started addressing me as ‘Mr. Abid’ instead of ‘Abid bhai’ (how preposterous!) in his mails and rejected my opinion publicly telling that I deserve such rejection since I do not participate or show-up in ORCA-USA programs like many other ORCA-USA members.
I only wish we could see things by putting our feet into other’s shoes.
This is for my self-teaching and I would sincerely apologize if my mail has hurt the feelings of any of my respected and beloved senior or junior brothers. wassalam.
Abid
17/921
[বঙ্গানুবাদঃ আমি জানিনা আমরা গোলক ধাঁধাঁর ভেতর ঘুরছি কিনা। আমার ধারনা হয়েছিল বিষয়টার পরিসমাপ্তি ঘটেছে যখন ***** ভাই এবং ***** ভাই (নাম দুটো মুছে দেয়া হয়েছে) ব্যাপারগুলো ব্যাখ্যা করলেন, অমুসলিম ভাইদের কাছে ক্ষমা চাইলেন এবং দীপক ভাই মডারেটরের ডেস্ক থেকে একটা ইমেইল পাঠিয়ে পুরো বিষয়টার পরিসমাপ্তি টানলেন।
অরকা একটা পরিবারের মত যেখানে আমরা একজন আরেকজনের জন্যে অনেকটা আয়নার মত। আমরা একে অন্যের ভুল করা থেকে শিখি এবং ভুল করায় লজ্জিত হওয়ার কোনো কারন নেই। আমি বিশ্বাস করি, জনসমক্ষে অমুসলিম ভাইদের কাছে ক্ষমা চাওয়ায় ***** ভাই এবং ***** ভাইয়ের (নাম দুটো মুছে দেয়া হয়েছে) আত্মমর্যাদা বরং বেড়েছে এবং আমাদের অমুসলিম ভাইদেরসহ আমাদের সবার কাছে ওনাদের মর্যাদাবোধ ও ওনাদের প্রতি আমাদের ভালবাসাকে আরও বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে।
এটা বলে ফোরামের সন্মানিত সদস্যদেরকে আমি অনুরোধ করবো আমাদের ফোরামে কল্পিত একটা পরিস্থিতিকে মনে মনে কল্পনা করার জন্যে। ধরে নিই, স্বাধন অরকা ফোরামে একটা মেইল পাঠালো যে, যতক্ষণ পর্যন্ত না প্রতিটা মানবাত্মা ভগবান কৃষ্ণকে বিশ্বাস করবে, গঙ্গা স্নান করবে এবং রামের জন্মস্থান দর্শন করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ঐ সকল মানবাত্মা সোজা নরকে প্রবেশ করবে এবং হিন্দুধর্মের একজন একান্ত বিশ্বাসী হিসেবে এটা তার পবিত্র ও নৈতিক দায়ীত্ব অরকা ফোরামের প্রতিটা অবিশ্বাসী সদস্যের কাছে (এক্ষেত্রে মুসলিমরা হবে অবিশ্বাসী) হিন্দু ধর্মের এই মহান বাণীকে পৌঁছে দেয়া। কল্যান এই মেসেজ পড়ে এতটাই অভিভূত ও আবেগতাড়িত হলো যে, সেও স্বাধনের সমর্থনে ফোরামে অনুরূপ ইমেইল পাঠানো শুরু করলো (আমি স্বাধন এবং কল্যানের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি যদি এগুলো তোমাদের ধর্মের গুরুত্বপূর্ণ রিচুয়াল বা আচার-আচরন না হয়ে থাকে, যে বিষয়ে আমার জ্ঞান প্রায় শূন্যের কোঠায়। আমার ইচ্ছে হয়, আমি যদি অন্যান্য ধর্মগুলোর বিষয়ে আরও বেশী জানতাম!)।
এখন যদি সুসীম ভাই আমাকে বলেন যে, স্বাধন বা কল্যান তাদের ইমেইলে কি লিখলো তা আমার উপেক্ষা করা উচিত অথবা মেইলগুলো আমার স্রেফ মুছে ফেলা উচিত; নতুবা বুঝতে হবে আমার মনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য বা কু-মতলব আছে। আমার মনে হয়না সুসীম ভাইকে আমি অত সহজে এমন খোঁড়া যুক্তির বদৌলতে পার পেতে দেবো কিম্বা স্বাধন বা কল্যানকে এ ধরনের অসাড় ও অসৌজন্যমূলক ইমেইল ফোরামে পাঠানো চালিয়ে যেতে দেবো।
হামিদ ভাই এবং দীপক ভাই ছাড়া আমার ধারনা ওয়াসী এবং আসাদ আর দুইজন মানুষ যারা খুব কমই আমেরিকায় অনুষ্ঠিত অরকা-ইউএসএ-এর কোনো প্রোগ্রাম বাদ দেয়। অপরপক্ষে, আমি বোধহয় সেই হতভাগ্যদের একজন যারা খুব কমই অরকা-ইউএসএ-এর প্রোগ্রামগুলোতে অংশগ্রহন করতে পারে। এখন ধরে নিই, আমি অরকা ফোরামে কিছু লিখলাম যা ওয়াসীর মনঃপূত হলো এবং সে ‘আবিদ ভাই’কে তার বক্তব্যের জন্যে সমর্থন করলো, যদিও সেই একই বক্তব্য আসাদের মনঃপূত হলোনা। এখন আসাদ তার লিখিত ইমেইলে আমাকে ‘আবিদ ভাই’ বলে সম্বোধন করার পরিবর্তে ‘মি. আবিদ’ বলে সম্বোধন করা শুরু করলো (কি অবিশ্বাস্য!) এবং জনসমক্ষে আমার অভিমতকে এই বলে প্রত্যাখ্যান করলো যে, আমার বক্তব্য প্রত্যাখ্যাত হওয়ারই যোগ্য যেহেতু আমি অন্যান্য অনেক অরকা সদস্যের মত অরকা-ইউএসএ-এর প্রোগ্রামগুলোতে তেমন অংশগ্রহন করিনা।
আমার শুধু এটুকুই ইচ্ছে হয়, আমরা যদি অন্যের জুতায় পা ঢুকিয়ে বিষয়গুলোকে দেখতে পারতাম!
যা বললাম তা নিতান্তই আমার নিজের শিক্ষার জন্যে এবং আমি অন্তঃপ্রাণে ক্ষমা চাচ্ছি যদি আমার ইমেইল আমার শ্রদ্ধেয় ও স্নেহের বড়ভাই বা ছোটভাইদের কারো মনে সামান্যও আঘাত দিয়ে থাকে। সবার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।
আবিদ
১৭/৯২১]
আমি মডারেট মুসলিম কিনা জানিনা তবে এটুকু অন্তত জানি যে, আমি একজন মডারেট মানুষ। ইমেইলে ভাষা ব্যবহারেও আমি সাধারনত মধ্যপন্থা অবলম্বন করি যেন প্রতিপক্ষের মানুষটাকে যতদূর সম্ভব অসন্মান না করা হয় বা তিনি যেন মনে কষ্ট না পান। এতবড় একটা ফোরামে রক্ত-গরম সদস্যের সংখ্যা যে নেহায়েত কম থাকার নয়, তা যে কেউই বুঝতে পারবেন। কাজেই পাঠকরা এ থেকেই বুঝে নিতে পারবেন যে, ফোরামে ধর্মের আলোচনার উদ্যোক্তা ও সমর্থনকারী ঐ তিনজন বড়ভাইয়ের ওপর দিয়ে কেমন ঝড় বয়ে গিয়েছিল সমালোচনার।
প্রতিবাদী অরকা সদস্যদের অনেককেই আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। ধর্মপালনের স্কেলে ওনাদের পারষ্পরিক রিলেটিভ অবস্থান একেকজনের একেকরকম হলেও আমার জানামতে ওনারা কেউই ধর্মে অবিশ্বাসী নন। রহস্যটা সেখানেই। বিশ্বাসী মুসলমান অধ্যুষিত একটা ফোরামে সাম্প্রদায়িকতা ও রেডিক্যালিজম-এর উত্থানকে শক্ত হাতে প্রতিহত ও নিদারুন পরাজিত করলেন যারা তারা নিজেরাও একদল বিশ্বাসী মুসলমান। পৃথিবীর আর কেউ জানলো না, কোনো মিডিয়াতে এর প্রচার হলোনা, কেউ এদেরকে বাহবাও দিলনা। অথচ, সবার চোখের আড়ালে, সবার জানার বাইরে একদল বিশ্বাসী মানুষ কিভাবে আন্দোলন গড়ে তুললেন মানবতার পক্ষে, অসাম্প্রদায়িকতার পক্ষে, ধর্মের উপরে উঠে ভাতৃত্বের পক্ষে এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলে কিভাবে পরাভূত করলেন মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা ও রেডিক্যালিজম কে! This is a power which is out there among the Muslim believers and all the believers in general, whether or not we are aware of it! (এটা একটা শক্তি যা আমাদের জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে মুসলিম বিশ্বাসীরাসহ সাধারনভাবে সকল বিশ্বাসীদের মধ্যেই রয়ে গেছে)!
‘অর্থই সকল অনর্থের মূল’-এর মতই ‘ধর্মই সকল অধর্মের মূল’ও একটা প্রচলিত থিওরী বা তত্ত্ব। পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছেন যারা এই তত্ত্বে বিশ্বাসী এবং স্বভাবতই সনাতনি বা প্রাতিষ্ঠানিক সকল ধর্মের বিরুদ্ধাচারণ করেন তারা। সে সুত্র ধরে তাদের অবস্থান সাধারনভাবে যে কোনো ধর্মবিশ্বাসেরই বিরুদ্ধে। তারা কম-বেশী প্রতিটা ধর্মের বিরুদ্ধেই লেখেন এবং ‘পলিটিকালি কারেক্ট’ (রাজনৈতিকভাবে শুদ্ধ) হওয়ার তোয়াক্কা করেননা। তুলনামূলক সংখ্যানুপাতে তাদের সংখ্যা কম বা বেশী যাই হোকনা কেন বাস্তবতা হলো, এটা একটা ‘স্কুল অব থট্’ যা আধূনিক সভ্যতার প্রায় শুরু থেকেই ছিল, আছে এবং থাকবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের মতাদর্শের সাথে সহমত নাকি দ্বিমত পোষন করি সেটা বড় কথা নয়, তবে আমার আজকের এই লেখা তাদেরকে উদ্দেশ্য করে নয়।
আরেকটা ‘স্কুল অব থট্’ আছে যারা নিজেরা ধর্মে সংশয়বাদী বা অবিশ্বাসী হলেও ধর্মের আবির্ভাবকে মানব সভ্যতার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দেখেন এবং মানুষের ধর্মবিশ্বাসকে বিশ্বাস হিসেবেই সন্মান করেন। তারা ধর্মের রাজনীতিকরন ও রাজনৈতিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন (যা ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান ও বৃদ্ধির অন্যতম মূখ্য প্রভাবক) এবং একইসাথে সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা ও রেডিক্যালিজম কে প্রতিহত ও পরাভূত করতে চান। আমার আজকের লেখা মূলত তাদেরকে উদ্দেশ্য করেই। পৃথিবীর কোনো কিছুই সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। সে অর্থে সমসাময়িক ধর্মগুলোও নয়। ধর্মে সমালোচনার সুযোগ আছে বলেই হিন্দু ধর্ম থেকে সতীদাহ প্রথার মত অমানবিক একটা প্রথাকে একসময় তুলে দেয়া সম্ভব হয়েছে। ধর্মে সমালোচনার সুযোগ আছে বলেই ইসলাম ধর্মের ‘মুতা বিয়ে’, ‘হিলা বিয়ে’র মত অযৌক্তিক বা অপপ্রয়োগের বিষয়গুলোর ক্রমে বিলুপ্তি সাধন ঘটছে। তবে কোনো বিষয়ের গঠনমূলক সমালোচনা এক জিনিষ আর সমালোচনার নামে কোনো ধর্মের বা ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানো আরেক জিনিষ। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা ও রেডিক্যালিজম-এর বিরুদ্ধে সোচ্চার ও দৃঢ়পদ মানুষদের মাঝে ধর্মে বিশ্বাসীদের কত সুবিশাল একটা দল রয়েছে, তার প্রমান আমি উপরেই দেখিয়েছি। ধর্মের সমালোচনা করতে গিয়ে ধর্মের, ধর্মগ্রন্থগুলোর, এবং ধর্মীয় মহাপুরুষদের বিরুদ্ধে সীমারেখার বাইরে কটূক্তি করলে তাদেরকে কতখানি শত্রু বানাবেন জানিনা, তবে মিত্র যে বানাতে পারবেন না তা বোধহয় অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। অথচ ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতা ও রেডিক্যালিজম-এর বিরুদ্ধে আপনার প্রতিনিয়ত যুদ্ধে এই মানুষগুলোও হয়ত হতে পারতো আপনার সহযোদ্ধা।
আবার গোড়াতে ফিরে আসি মূলত যা নিয়ে আজকের লেখা শুরু করেছিলাম। ‘মডারেট ধার্মিক’ বলে পৃথিবীতে কি কারো অস্তিত্ব আছে? Well, to me, it really depends on what ‘school of thought’ you belong to and/or from where you are looking at (আমার ব্যক্তিগত অভিমত অনুযায়ী, তা অনেকখানিই নির্ভর করে আপনি আসলে কোন ‘স্কুল অব থট্’-এর অন্তর্ভূক্ত কিম্বা ঠিক কোথায় দাঁড়িয়ে বিষয়টা দেখছেন)।
এতক্ষণ ধরে অনেক ভারী ভারী কথা বললাম। আবহাওয়া কিছুটা হালকা করার জন্যে পাঠকদেরকে এবার একটু হাসানোর চেষ্টা করা যাক। নীচে একটা সত্যি গল্প বলবো। তবে গল্পটা থেকে ‘নেগেটিভ’ কিছু conclude না করার জন্যে (নেগেটিভ কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত না হওয়ার জন্যে) পাঠকদের প্রতি বিনীত অনুরোধ রইলো। কেননা পাঠকদেরকে স্রেফ হাসানোর উদ্দেশ্যেই গল্পটা এখানে বলা।
স্থানীয় গ্রোসারী স্টোর, সুপার ওয়াল-মার্টে (Super Wal-mart) গেছি স্বপরিবারে টুকটাক বাজার করার জন্যে। আমার শালীও রয়েছে আমাদের সাথে। ওর দুইটা বাচ্চা। আমার ভায়রা (ও-ও বুয়েটের এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ার) ওদের ছোট বাচ্চাটাকে দোকানের বাইরে নিয়ে গেছে কান্না থামানোর জন্যে। আমি ক্যাশিয়ারে দাম দেয়ার জন্যে দাঁড়িয়েছি এবং আমার স্ত্রী আর শালী বাচ্চাগুলোকে নিয়ে একটু দূরে আমার জন্যে অপেক্ষা করছে। দুজনই বোরকা পরা (ওদের পারিবারিক প্রথাগত ও ধর্মীয় রক্ষনশীলতার কারনে)। ক্যাশিয়ারে মাঝবয়েসী এক সাদা ভদ্রমহিলা দাঁড়ানো। আমাকে দেখে চোখেমুখে একধরনের সুস্পষ্ট তাচ্ছিল্যভাব ফূঁটিয়ে তুলে জিজ্ঞেস করলেন,
ভদ্রমহিলাঃ Are you a Muslim (তুমি কি মুসলমান)?
আমিঃ (খুব বিনীতভাবে) Yes (জ্বি)।
ভদ্রমহিলাঃ (আমার স্ত্রী আর শালীর দিকে ঈশারায় ইঙ্গিত করে, সাথে গলা কিঞ্চিত খাটো করে এবং চোখেমুখে ততোধিক তাচ্ছিল্যভাব ফূঁটিয়ে তুলে সবজান্তার ভঙ্গীতে) Are both of them your wives (ওরা দুজনই কি তোমার বউ)?
আমিঃ (যথেষ্ট গাত্রদাহ হলেও চোখেমুখে অর্থপূর্ণ একধরনের হাসি হাসি ভাব ফুঁটিয়ে তুলে) Not really, it’s more like “buy one, get one free” (ঠিক তা না, এটা অনেকটা “একটা কিনলে আরেকটা ফ্রি পাওয়ার মত”)।
ভদ্রমহিলার হতভম্ব চেহারা আর ছানাবড়া চোখের সামনে তার হাত থেকে রিসিট্টা নিয়ে ওয়ালেট্টা পকেটে ঢুকোতে ঢুকোতে মুচকি হাসি দিয়ে অপেক্ষমান স্ত্রী-পরিবারের দিকে হাঁটা শুরু করলাম আমি।
সবাই ভাল থাকুন।
আব্দুর রহমান আবিদ
রচনাকালঃ মে, ২০১০
আমার সুদীর্ঘ নিবন্ধটা কষ্ট করে পড়ার জন্যে এবং মন্তব্য ও প্রতিমন্তব্য করার জন্যে সবাইকে আবারও অসংখ্য ধন্যবাদ।
সবাই ভাল থাকুন।
:yes:
ভাই আবিদ,
আপনার মনের দুঃখ বুঝি। বিষয়টা কি জানেন আপনি যে বাইবেলের হিংসাত্মক ভার্সের কথা বলছেন তার ব্যবহারিক রূপ আমরা মধ্য যুগে অবলোকন করেছি ইউরোপে যা রেনেসা আন্দোলনের মাধ্যমে চারশ বছর আগেই শেষ হয়ে ন গেছে। অর্থাৎ তা এখন মৃত। আমরা মৃত বস্তুকে নিয়ে টানাটানি করতে তেমন আগ্রহী নই। কিন্তু ইসলামের মৌলবাদিতা প্রচন্ড হুংকার ছেড়ে গোটা দুনিয়া দাপিয়ে বেড়ানোর পায়তারা করছে অর্থাৎ দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রত্যেকেই তা দেখছি, কেউ না কেউ তার শিকারও হচ্ছি। একই সাথে বিস্মিত হচ্ছি এই ভেবে একটা জাতিগোষ্ঠি কেন হঠাৎ সময়ের স্রোতের পিছন দিকে হাটতে চায়। যেখানে পৃথিবীতে টিকে থাকতে হলে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই সেখানে কেন তারা বিপরীত দিকে যেতে চায়? আর এই বিপরীত দিকের স্রোতে যারা আমাদেরকে টেনে নিয়ে যেতে চায় তাদের মধ্যে খালি যে কাঠ মোল্লা শ্রেনীর মত কিছু লোক আছে তা ভাবলে কিন্তু ভীষণ ভুল করা হবে। আবুল কাসেম ভাই যেমন বলেছেন , আমেরিকার টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর উগ্রবাদী মুসলমানরা যেমন আনন্দ উল্লাস প্রকাশ করেছে, তেমনি আপনাদের মত মডারেট মুসলিম নাম ধারীরাও ভিতরে ভিতরে কম উল্লসিত হয়নি যা আপনি আমি সবাই লক্ষ্য করেছি। তারা উপরে উপরে বলেছে যে তারা সব ধরনের সন্ত্রাসের বিরোধী কিন্তু ভিতরে ভিতরে খুশীই হয়েছে। এ ধরনের মানসিকতা আসে কিভাবে? আসে মৌলবাদীতার প্রতি মৌন সমর্থন থেকে। অর্থাৎ উপরে মডারেট ভিতরে মৌলবাদী। সেজন্যেই আমরা মডারেট নামধারীদেরকে সন্দেহের চোখে দেখি। আর এসবের মূলে হলো- ইসলাম, কোরান, হাদিস, মোহাম্মদ এসব। যাইহোক, ইসলামী মৌলবাদিতার ভয়াবহতা আমরা প্রতিনিয়ত লক্ষ্য করছি বলেই এ বিষয়ে মানুষের প্রতিক্রিয়া বেশী। আর খৃষ্টীয় মৌলবাদ যা মৃত তার জন্যে কোন খৃষ্টান গায়ে বোমা বেধে বা অন্য কায়দায় আত্মঘাতী হামলা চালাতে যাবে না, তেমনি যাবে না কোন হিন্দু বা বৌদ্ধ। আর সেকারনেই আপনি অন্য ধর্মের মধ্যে হিংসাশ্রয়ী বক্তব্য থাকলেও তা যেহেতু বর্তমানে অকার্যকর , সেহেতু আপনি সেসব উল্লেখ করলে তার প্রতি সমর্থন দানকারী মানুষ পাওয়া আপনার জন্যে মুস্কিল ই হবে। মানুষ তো বর্তমান কালে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হবে সেটা নিয়েই বেশী ব্যস্ত থাকবে তাই না ? সুতরাং মনোকষ্ট না নিয়ে বরং লিখে যান, একজন ধার্মিক ব্যক্তি হিসাবে ইসলামকে কিভাবে মৌলবাদিতা থেকে উদ্ধার করা যায় , সেটা নিয়ে ভাবুন, নইলে কিন্তু গোটা মুসলমান জাতির জন্য খুব খারাপ পরিনতিই অপেক্ষা করছে বলে আমার ধারনা। উগ্রবাদী মুসলমানের যেমন ধৈর্য্য কম, কাফের দের ধৈর্য্য কিন্ত সীমাহীন না, ওরা যখন পাল্টা আঘাত হানবে তখন কিন্তু কেয়ামত হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এটা মধ্যযুগের ক্রুসেড না, যে যুদ্ধ ক্ষেত্রে কিছু সংখ্যক সৈন্যদের হতাহতের মধ্যেই ক্ষয়ক্ষতি সীমিত থাকবে। দুই একজন তথাকথিত বিজ্ঞানী বিপুল পেট্রোডলার এর বিনিময়ে কোরানের পক্ষে কি সাফাই গাইল অথবা কিছু ভন্ড ইসলামি পন্ডিত সাধারন মানুষের কোরান হাদিস সম্পর্কে সীমাবদ্ধ জ্ঞানের সুযোগে কোরানে কি সব বিজ্ঞানের সূত্র আবিস্কার করল তাতে উল্লসিত বা প্রতারিত না হয়ে বরং মুসলমানদের বাস্তব জগতে এই মাটির পৃথিবীতে ফিরে আসার আহ্বান জানাব মনে প্রানে।
@ভবঘুরে,
আপনার লেখাতে আমি প্রায়ই একটা আশংকার দেখা পাই। মুসলমানরা না শুধরালে অন্য ধর্মের লোকেদের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে যাবে। অতঃপর কেয়ামত হয়ে যাবে।
এখানে মুসলমানরা বলতে সুনিদৃষ্ট ভাবে কাদেরকে বোঝাচ্ছেন এবং কাফের বলতেই বা কারা ? ভাল হয়ে যাওয়া বলতে গায়ে বোমা বাঁধতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু কেউ যখন গায়ে বোমা বাঁধে তখন তার অন্য সব পরিচয় বিলীনহয়ে কেবল মুসলমান পরিচয়টুকুই কেন অবশিষ্ট থাকে ? সবাই দখলদারদের সাথে লড়াই করতে পারে, কেবল ফিলিস্তিনীরা পারে না, কারন তারা মুসলমান, ইরাকিরা পারেনা, কারন তারাও মুসলমান। যেহেতু তারা মুসলমান তাই তাদের কোন দেশ থাকতে পারেনা, দেশাত্ত্ববোধ থাকতে পারেন।
ইসরাইলিরা লেবাননের এলাকা দখল করলে সেটা সন্ত্রাস হয় না। কিন্তু এই দখল মুক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য হিজবুল্লাহ হয়ে যায় সন্ত্রাসী সংগঠন।
২য় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইউরোপীয় ইহূদীদের দ্বারা ফিলিস্তিনীদের প্রতি যে লাগাতার অন্যায় করা হয়েছে তার কি প্রতিকার করেছে বিশ্ব সম্প্রদায় ? নাকি যেহেতু মুসলমানদের শহীদ হবার প্রতি সহজাত আবেগ রয়েছে ফলে তাদেরকে সাধারন নীতিবোধের বাইরে বিবেচনা করতে হবে ?
লক্ষ্য করুন পাশ্চাত্যের প্রধান প্রতিনিধী আমেরিকার রয়েছে আস্ত্র শিল্পে বিপুল বিনীয়োগ। স্নায়ূযুদ্ধউত্তর বিশ্বে তার দরকার হয় নতুন শত্রুর। যতটানা যুদ্ধ করার জন্য তার চাইওতে বেশী অস্ত্র শিল্পের বিনীয়োগের পিছনে নৈতিক সমর্থনের জন্য। আরবের তেল না থাকলে পাশ্চাত্যের শত্রু হবার জন্য আরব বিবেচনায় আসতোনা, এটা আমি জোরের সাথেই বলছি।
ইরানের রেজা শাহ এর পতনের পর থেকেই মূলত মুসলমানরা সভ্যতার শত্রুতে পরিনত হয়। কারন তখন তারাই ছিল তেলের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী। আর ইরানীরা শাহ্ এর পতনের সাথে সাথে তেলের উপরে নীজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। সেই সাথে তেলের দাম প্রথমবারের মত কয়েক গুন বেড়ে যায়।
এখন এই সব কিছুকে আড়াল করে মিডিয়া দৈত্যের কল্যানে এমন কিছুই কেবল আমাদের সামনে আসছে যাতে করে আরবদের প্রতিবাদের ভাষাকেই আমরা মনে করি সন্ত্রাস। আমরা ভুলে যাচ্ছি কারা আক্রান্ত। আক্রান্ত ব্যাক্তি যতই বলছে আমি ফিলিস্তিনী, আমি ইরাকি, পাশ্চাত্য তত জোরের সাথে বলছে তুমি মুসলমান। প্রায় ৪০ টি জাতি আর ৮০ কোটি মানুষের আবহমান কালের সংস্কৃতি, ভাষা , আবেগ সব কিছুকে সংকুচিৎ করে ইসলাম আর মুসলামানের লেবেল এটে দেয়া হচ্ছে। আর যেহেতু মুসলমানরা সভ্যতার শত্রু তাই তাদের প্রতিবাদ করার কোন অধিকার থাকতে পারে না। এভাবে প্রতিবাদের সমস্ত ন্যায্য আধিকার মুসলমানদের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হচ্ছে। এরপরে বোমা হামলার পরে সবাই দেখ্ছে মুসলমানরা কত খারাপ। নিরপরাধ জনগনকে এদের পক্ষেই মারা সম্ভব। কিন্তু ইসরাইল যখন রিফুজি ক্যাম্প, হাসপাতাল, শিশুদের বিদ্যালইয়ে বোমা মারে তখন কেউ এর সাথে ইহূদীবাদকে জড়ায় না। এটা সোভন না, এটা কেবল মুসলমান্দের জন্যই সংরক্ষিত।
আমাদের দেশের অনেক লোক স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রান দিয়েছেন। তারা বেশীরভাগই মৃত্যুর সময় অবধি নীজেদেরকে মুসল্মান মনে করতেন। তাতে তাদের দেশপ্রেমে কোন ঘাটতি হয়নি। তারা পুরোপুরি মানবিকবোধ সম্পন্নছিলেন। মানে মুসলমান হলেই মানবিকবোধ সবসময় বিলিন হয়ে যায়না। এটা অন্য সম্পদায়ের বেলায় যেমন সত্য মুসলমান্দের বেলায়ও সত্য।
তাই মুসলমানদের কে এই সরল সাধারনীকরন করে কেউ যদি কেয়ামত ঘটাতে চায় সেটা হবে অন্যায়। আর কোন অন্যায়ই বীনা চ্যালেঞ্জে পার পায় না।
বরং আমাদের উচিৎ ধর্মের অসারতা তুলে ধরার সাথে সাথে সাম্রাজ্যবাদের মুখোস উম্মচন করা। কারন এখন দুটোই মানবতার শত্রু। তবে ধর্ম হচ্ছে বৃদ্ধ দৈত্য। এর দাঁত, নখে আগের সেই শক্তি নেই। এখণ লাদেনকে সিলেটে দেখা গেছে বলেই; আমেরিকা আজকেই ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে বাংলাদেশের উপরে। প্রমানের কোন দরকার নেই। আমেরিকা যদি মনে করে লাদেন সিলেটে আছে তবে হামলার জন্য সেটাই যথেষ্ট। এক্ষেত্রে আমাদের মত দূর্বল দেশের ভরষা কেবলমাত্র আমেরিকার সদাচার। তবে এযাবৎকার নজির কেবল আমেরিকার সদাচারকেই তুলে ধরে না। কিন্তু কোন ধর্ম আজকে আমাদের উপরে এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার ক্ষমতা রাখে না।
আমার ছোটবেলায় আমি একদিন মনিষীদের জীবনি পড়ছিলাম। বাবা এসে জানতে চেয়েছিল কার জীবনি পড়ছি। বললাম, শ্রীরাম কৃষ্ণের। বাবা জানতে চেয়েছিলেন কে ইনি ? আমি বলেছিলাম, উনি বলেছেন, যাত মত তত পথ। বাবার উচ্ছসিত চোখের কথা আমার এখণো মনে আছে। বাবা বলেছিল, খুব সুন্দর কথাতো। আমৃত্য আমার বাবা নীজেকে মুসলমানই মনে করতেন। তারপরও তিনি মানুষকে, মানুষকে হিসাবেই ভালবাসতেন। ৪৭ এর দাঙ্গার সময় বাবা ৫ম শ্রেনীতে পড়তেন। তিনি প্রায়ই বলতেন ঔসময়ে মানুষ আর পশুতে পার্থক্য ছিলো কেবল একটি লেজের।
আমার আসে- পাশে আমার বাবার মত অসংখ্য মানুষ আমি চিনি। বরং এরাই সংখ্যায় বাশী। এখণ কেবল মুসলমান হওয়ার জন্য কেউ যদি এদের উপরে কেয়ামত নাজিল করে সেটা হবে অন্যায়। আর একজন মানবতাবাদী হয়ে আমি এই অন্যায়ের প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ করবো। আর এই জন্যই মুক্ত বিবেকের চর্চা করি।
@আতিক রাঢ়ী,
এটা হয়তো অন্য ধর্মের বেলায় খাঁটে, কিন্তু ইসলাম ধর্মের বেলায় নয়। এই ধর্ম এখন গোটা দুনিয়ায় একটা নব্য দৈত্য হিসাবে বিরাজ করছে। এর দাঁত, নখ এখন আগের থেকেও বেশী শক্তি ধারন করে।
@আতিক রাঢ়ী, সুন্দর যুক্তিপূর্ন লেখা। :yes:
@আতিক রাঢ়ী,
আপনার লেখার প্রতিফলন ভিন্নমতে প্রকাশিত আমার পুরনো কিছু লেখায় ছিল। ভাল লাগলো আপনার দৃষ্টিভঙ্গী এবং যুক্তিবোধ। আমিও ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ধর্মের অমানবিক বিষয়গুলোর গঠনমূলক সমালোচনা করার পাশাপাশি মানবতার শত্রু, সাম্রাজ্যবাদের মুখোশ উম্মোচন করা উচিত।
@আতিক রাঢ়ী,
ভাই,
আপনি আমার বক্তব্যের মর্মার্থ বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন দেখে হতাশ হলাম। ইরাক আক্রান্ত হয়েছে তাই ইরাকীদের অধিকার আছে তার বিরুদ্ধে রুখে দাড়ানোর, আফগানিস্তান বা ফিলিস্তিনীদের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। এ ক্ষেত্রে বিষয়টা আসে দেশ প্রেমের, স্বাধীনতা প্রাপ্তির যা আমরা নিজেরাও করেছি ১৯৭১ সালে। কিন্তু যখন স্বাধীন বাংলাদেশে ৬৪ জেলায় এক সাথে বোমা বিস্ফোরিত হয়, আদালতে আত্মঘাতী বোমা দিয়ে বিচারক মারা হয়, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে টাইম বোমা ফাটিয়ে নিরীহ মানুষ মেরে ফেলা হয়, নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার ধ্বংস করা হয়, লন্ডনের রাস্তায় বাসে আত্মঘাতী বোমা চালান হয়, মস্কোর পাতাল রেলে আক্রমন চালানো হয়, সেখানে কি দেশ প্রেম কাজ করে নাকি ? বাংলাদেশে যারা করেছিল তারা কি পরাধীন নাকি? নিউইয়র্কে যারা করেছিল তারা কি পরাধীন ছিল নাকি ? বা লন্ডনে? এসব যায়গাতে কাজ করেছে ইসলামী জিহাদী জোশ যা কোরান আর হাদিসের পাতায় পাতায় লেখা আছে। আত্মঘাতী হামলাকারীরা সেখান থেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে আত্মঘাতী হামলায় অংশ নিয়েছে। তারা দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করেছে এ হামলায় মারা গেলে সাথে সাথেই সে বেহেস্তে চলে যাবে আর ৭০ টা তর তাজা হুর নিয়ে ফুর্তি করবে। পার্থিব কোন বিষয়ই এখানে তাদেরকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। আপনি ভাই পরাধীনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও ইসলামের আদর্শে জিহাদ দুটো কে এক করে ফেলেছেন । এখানেই আপনার আর আমার সাথে দৃষ্টি ভঙ্গির তফাৎ হচ্ছে। তামিল টাইগাররা তো কত আত্মঘাতী বোমা হামলা করেছে, কই সেসব নিয়ে তো আন্তর্জাতিক বিশ্বে এত দুশ্চিন্তার কারন ঘটে নি। কেন ? কারন সেটা ছিল স্বাধিকারের যুদ্ধ তার সাথে ধর্মীয় চেতনার কোন সম্পর্ক ছিল না আর তা সীমিত ছিল শ্রীলংকা দ্বীপের মধ্যেই। তাই তা নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বে মাথা ব্যথার কোন কারন ঘটে নি। বড়জোর ভারতের একটু সমস্যা ছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে কারন তারা টাইগারদের বিরুদ্ধে সেনা পাঠিয়েছিল। রাজীব গান্ধী সে কারনেই নিহত হন। বর্তমানে মুসলমানরা যেটা দেশে দেশে করতে চাচ্ছে তা কোন স্বাধীনতার যুদ্ধ না , তা হলো ইসলামী জোশে জিহাদী যুদ্ধ। আর এ ধরনের জেহাদি যুদ্ধ শুধুমাত্র একটি দেশে সীমাবদ্ধ না। সারা দুনিয়া ব্যপী, আর সেটাই আমাদের আশংকার একমাত্র কারন। ইসলামী চিন্তাবিদরাও ঠিক এই কাজটি করে সাধারন মানুষকে ধোকা দেয় , তারা স্বাধীনতার যুদ্ধ আর জিহাদী যুদ্ধকে এক করে মানুষকে প্রতারনা করে। যাহোক, মুসলমানরা অমুসলিম দেশ সমুহে জীবনের মায়া ত্যাগ করে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালিয়ে তাদের দেশের শান্তি শৃংখলা নষ্ট করে অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়ার পায়তারা করবে, আর ওরা বসে বসে আঙ্গুল চুষবে তা নিশ্চয়ই আপনি আশা করতে পারেন না। ফলাফল কি হবে? ফলাফল্ হবে এক সময় ঐ সব দেশ সমূহ তাদের দেশে যে গনতান্ত্রিক সুবিধা সমূহ আছে তা বন্দ করে দিতে থাকবে, যা আমরা ইতোমধ্যেই লক্ষ্য করছি। ফ্রান্সে বোরখা পরা নিষিদ্ধ ঘোষিত হতে যাচ্ছে, বেলজিয়ামে নিষিদ্ধ হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই , অপেক্ষা করুন, আরও দেশ এ ধরনের পদক্ষেপ নিতে থাকবে। বিভিন্ন দেশে যে সকল মুসলিম ইমিগ্রান্ট আছে তাদেরকে কোন রকম আইন বিরোধী কাজে লিপ্ত প্রমান পেলেই সোজা তাদের মাতৃভুমিতে চালান করে দেবে, যা ইতোমধ্যে ঘটছে, এ নিয়ে আমেরিকাতে আইন করার প্রচেষ্টা চলছে, এর পরে হয়ত এমনও দিন আসতে পারে যখন তারা মনে করবে খোদ মুসলিম জাতি গোষ্ঠি টাই সভ্যতার জন্য এক বিরাট হুমকি, তখন তারা গোটা মুসলমান জাতি গোষ্ঠিকেই দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না। আমি ভাই একটু আগ বাড়িয়ে চিন্তা করি যা আমি খেয়াল করেছি অনেকেই সম্যক বুঝে উঠতে পারেন না। আর সেই কারনেই আমি মুসলিম জাতি গোষ্ঠির অস্তিত্বের স্বার্থেই কিছু কঠিন বাক্য উচ্চারন করি। আর যেটাকে অনেকেই ঘৃনার বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন।আসলে বিষয়টা তা নয়। হয়ত আমার প্রকাশ ভঙ্গিটা একটু কঠিন। কিন্তু ওটাই আমার স্টাইল। সবার সেটা ভাল নাও লাগতে পারে। তবে খেয়াল করেছি খুব অল্প সংখ্যক পাঠক আমার বক্তব্যের গুঢ় অর্থ ধরতে পারেন। তার মধ্যে আবুল কাসেম ও একা অন্যতম।আমি তাদের ধন্যবাদ দেই। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
@ভবঘুরে,
আমিও হতাশ হলাম। পাশ্চাত্যের চোখে ইসলাম ও মুসলমান ঠিক আপনি যেভাবে দেখছেন এমণই, যেটাকে ভুল বসত আপনার দূরদৃষ্টি মনে হচ্ছে।
সমস্তবোমা হামলার এই যে সাধারনীকরন এই ধারনাটাই ভুল। দূর্নীতিতে লাগাতার চ্যাম্পিয়ন হওয়া ও সীমাহীন দারিদ্র, বেকারত্ত্ব থেকে মুক্তির বিকল্প পথ হিসাবে এসেছে বাংলাদেশের ঘটনা। আমেরিকা ও বৃটেনের বোমা হামলার সাথে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে এই দেশ দুটির ভূমিকা। রাশিয়ার সাথে চেচেন সমস্যা। কিন্তু ফিরে ফিরে আসে কেবলি কোরান+ জিহাদ প্রসংগ।মুহাম্মদ গনিমতের মাল বিলি না করলে সেই আমলেই জিহাদের জন্য লোক পাওয়া মুসকিল ছিল। সুলতান মাহমুদ বা তৈ্মুর লং ভারত আক্রমন করেছিল সম্পদের জন্য। জিহাদ করার জন্য না। স্বর্গ প্রাপ্তির অনিশ্চিৎ ভবিষ্যতের চাইতে নগদ প্রাপ্তি মানুষকে বরাবরই বাশী টানে।
আসলে আমি বলতে চেয়েছিলাম, মুসলমানরাও দেশের জন্য জীবন দিতে পারে, ভাষার জন্য জীবন দিতে পারে। আসলে তারা মানুষই। ধর্মযুদ্ধ ও দেশের জন্য যুদ্ধকে এক করে দেখানোর জন্য আমি আমাদের ৭১ এর শহীদ দের কথা বলিনি। এখানেও আপনাকে বোঝাতে না পেরে অরেকবার হতাশ হলাম।
@ভবঘুরে,
মুক্তমনাই বলেন বা অন্ধ ধার্মিক বলেন , প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে দুজনেরি অস্ত্রের কোন পার্থক্য নেই। একজন পেট্রোডলারকে দুষেন , অন্যজন ইহুদী নাসারাদের ডলারকে। কবে যে আমাদের এই মানসিকতার পরিবর্তন হবে।
@ফারুক,
এই জায়গাতে আপনি অতি সরলীকরন করে ফেললেন। দুই পক্ষের বক্তব্যই মানুষ জানবে ও শুনবে তবে পরিশেষে যেটা বেশী যুক্তি যুক্ত সেটাই মানুষ গ্রহন করবে। যেমন- মরিস বুকাই বলে এক চিকিৎসক সৌদি বাদশার চিকিৎসা করতে করতে একটা বই লিখে ফেলল বইটার নাম- কোরান, বাইবেল ও বিজ্ঞান। বইটি আমিও কিনেছিলাম । তো পড়ে দেখি তাতে মূলত কোরান যে বাইবেলের চাইতে বেশী নিখুত সেটাই মূলত আসল বক্তব্য। বিজ্ঞানের ছিটে ফোটা কিছু বক্তব্য সেখানে ছিল। যাহোক , একজন চিকিৎসক বইটি লিখে বিপুল সাড়া ফেলে দিল আর সে কোরানের মাঝে বিজ্ঞানের অনেক কিছুই পেয়ে গেল। তার মানে ধরে নিতে হবে- কোরান যে আল্লাহর কিতাব তা সে প্রতিষ্ঠিত করল। এর পর মরিস বুকাইয়ের পক্ষে আর অমুসলিম থাকা সম্ভব? কারন কেউ যদি সত্যি জিনিস সত্যিই আবিষ্কার করে বসে সে কি সেটা বর্জন করবে? কিন্তু অদ্ভুত ব্যপার হলো, মরিস কিন্তু ইসলাম গ্রহন করে নি। এ থেকে কি বোঝা যায়? একটাই জিনিস বোঝা যায় সে সৌদি বাদশার কাছ থেকে বিপুল অর্থ নিয়ে কাজটা করেছে, এটা কিন্তু সাধারন যুক্তিতেই বলে, কি বলেন ? সুতরাং এভাবেই আপনাকে বুঝতে হবে কারা সত্যি কথা বলছে আর কারা মানুষকে প্রতারনা করছে।
ধর্মীয় পরিচয়টাই গন্ডোগলের মূলে। পাগল এবং নির্বোধ ছাড়া কেও কি দাবী করবে একজন মুসলিম মা, হিন্দু মায়ের থেকে তার ছেলেকে বেশী ভালোবাসে? বা একজন হিন্দু বাবা, মুসলমান বাবার থেকে ছেলেকে বেশী ভালোবাসে?
যাদের সাধারন জ্ঞানটুকু এখনো লোপ পায় নি-তারা খুব সহজেই বুঝতে পারবে ধর্মীয় পরিচয়ের সীমারেখাটুকু-সেটা হিন্দু, মুসলিম, উগ্রমুসলিম যাইহোকনা কেন কৃত্রিম।
অথচ এই মুক্তমোনাতে এক মোল্লাকে [ ফুয়াদ] এই কথা যখন বলেছিলাম, সে খুব দৃঢ় ভাবে জানিয়েছিল, সে মনে করে মুসলিমরা আলাদা! তাদের যে পারিবারিক সংস্কৃতি, ভা আরো ঘুরিয়ে বললে একজন মুসলিম বাবা পিতৃত্বের দ্বায়িত্ব অন্য ধর্মের লোকদের থেকে বেশী দ্বায়িত্ববান। ফুয়াদের তাও নাই শিক্ষাদীক্ষা ছিলনা-একবার এক হিন্দুত্ববাদিও সেই একই দাবী করে বসল-মুসলিম বাবা, মারা মোটেও ছেলে পিলেদের অতটা ভালোবাসে না-কারন তারা ধর্মের নামে ছেলেকে শহীদ হতে পাঠায়। এই মালটা আবার আমেরিকাতে সফটোয়ার ইঞ্জিনিয়ার।
মাঝে মাঝে ভাবি, কতশত নির্বোধ আর অবোঝে মধ্যে আমাদের বাস করতে হয়। নইলে এই সামান্য প্রশ্নটুকুও কেও নিজেকে করে না?
আমার নিবন্ধটা পড়ে যাযাবর তার মন্তব্যে দাবী করেছিলেন, বাইবেলে ‘অন্য ধর্মের’ (যা আসলে বিধর্মীদের) বিরুদ্ধে একটা সহিংস ভার্সও আমি নাকি দেখাতে পারবো না কেননা তা নেই। আমি মনে মনে আশা করেছিলাম, মুক্তমনা লেখক/পাঠকদের কেউ না কেউ এগিয়ে এসে এমন blatantly ভুল একটা তথ্য দেয়ায় যাযাবরের মন্তব্যের বিরুদ্ধে কিছুটা হলেও আপত্তি করবেন কেননা এটা মুক্তমনা প্ল্যাটফর্ম এবং তত্ত্বগতভাবে এখানে কোনো ধর্মের প্রতিই বাড়তি বিরোধিতা কিম্বা পক্ষপাতিত্ব থাকা ঠিকনা। অথচ, কেউ তা করেননি। এরপর আমি পুরনো বাইবেল থেকে কতগুলো হিংস্বাত্মক ভার্স আমার প্রতিমন্তব্যে তুলে দিয়ে এবং সাথে বাইবেলের সহিংস ভার্সগুলোর সম্পর্কে আরো তথ্য জানার জন্যে যাযাবরকে একটা আর্টিকল পড়ে দেখার অনুরোধ করলে যাযাবর তার প্রতিমন্তব্যে দাবী করলেন, “বাইবেলের সহিংস ভার্সের প্রয়োগ ছিলনা এবং এখনো নেই”। অথচ, খ্রীষ্ট ধর্মের রক্তাত্ত ইতিহাসের কাহিনী কমবেশী আমরা সবাই জানি। মুক্তমনার লেখক/পাঠকরা এটা জানবেন না তা বিশ্বাস করা কঠিন কেননা ভিন্নমত বা মুক্তমনাতেই সম্ভবত অভিজিৎ রায়ের লিখিত দু’চারটে পুরনো নিবন্ধে ভবঘুরের উল্লেখিত খ্রীষ্ট ধর্মের রক্তাত্ত ইতিহাসের অনেকটা অবিকল হুবহু বিবরন আমি নিজেই পড়েছি। আমি যার-পর-নাই অবাক হলাম যখন দেখলাম যাযাবরের করা এমন blatantly তর্কসাপেক্ষ একটা দাবী কেমন অবলীলায় unnoticed পার পেয়ে গেল মুক্তমনায় এবং কেউ এর বিরুদ্ধে সামান্য আপত্তিও জানালেন না! কারনটা কি এটাই যে যাযাবর স্বপক্ষীয়? অথচ, আমার করা একটা মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামী মৌলবাদের উত্থানের উদাহরন দিতে গিয়ে (যা আমার নিবন্ধের মূল বিষয়বস্তুর সাথে প্রাসঙ্গিকও নয়) ভবঘুরে কত সহজে খ্রীষ্ট ধর্মের রক্তাত্ত ইতিহাসের প্রসঙ্গটা টেনে আনলেন! (যদিও খ্রীষ্ট ধর্মের রক্তাত্ত ইতিহাসের পেছনে বাইবেলের ভার্সগুলোর সংশ্লিষ্টতা সরাসরি প্রয়োগ নাকি অপপ্রয়োগ তা বিতর্কের বিষয়)। ধর্মমনাই বলেন আর মুক্তমনাই বলেন, যাকে আমরা প্রতিপক্ষ ধরে নিই, তার বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার প্রবনতা আমাদের ভেতর এতটাই প্রবলভাবে কাজ করে যে, আমরা প্রতিপক্ষের লেখার প্রতিটা শব্দকে মাইক্রোসকোপের নীচে রেখে শকুনের চোখ দিয়ে পরখ করি তত্ত্বে-তথ্যে-যুক্তিতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভুল ধরার জন্যে। কিছু পেলে- বিপ্লব রহমানের ভাষায় “কাছা খুলে ঝাঁপিয়ে পড়ি” লেখককে তুলোধূনো করতে। বিদ্বেষপূর্ণ মন্তুব্যের বন্যা বইয়ে দিই। একইসাথে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যগুলোর অংশবিশেষকে কোটেশন আকারে উদ্ধৃত করে হাততালি দিতে ফেউ জুটে যায়। প্রতিপক্ষের লেখকের যৌক্তিক কোনো একটা কথাও অধিকাংশ সময়ই হজম করার জন্যে পাকস্থলীকে সামান্যও তৈরী রাখিনে আমরা। অথচ, স্বপক্ষীয় কারো প্রদত্ত চরম ভুল তথ্য কিম্বা অযৌক্তিক বা বিতর্কিত দাবীকেও কত অবলীলায় ওভারলুক করি আমরা! আমাদের তথাকথিত শিক্ষিত মানুষদের মাঝেই যখন এহেন মানসিকতার এমন প্রাবল্য, তখন আমি-আপনি কি করে অশিক্ষিত, স্বল্প-শিক্ষিত ধর্মীয় মৌলবাদীদের কাছ থেকে ভাল কিছু আশা করি?
@আব্দুর রহমান আবিদ,
আপনার অনুভূতি আমি বুঝতে পারছি। আসলে আমরা যে বিশেষণ প্রয়োগ না করে তর্ক করতে পারি না তা বোধ হয় আমাদের মজ্জাগত। আর সব কিছুতেই খুব খারাপভাবে ঝগড়া ঝাটিতে জড়িয়ে পড়ি। এই দেখুন না, এভারেস্ট জয় করলেন মূসা, অথচ সেটা নিয়েও ক্যাচালের শেষ নেই। আসলে কে কি বলল, তা নিয়ে না ভেবে আপনি যেটা ঠিক মনে করেন সেটা লিখে যান।
আমি আসলে ইদানিং খুব সতর্কতার সাথে ধর্মকেন্দ্রিক পোস্টগুলো এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করি। কারণ এগুলো কোন গন্তব্যে আমাদের (অন্ততঃ আমাকে) নেয় না। কে মডারেট মুসলিম আর কে নয় , তা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। তার চেয়ে বিজ্ঞানের নতুন নতুন আলোচনা, আবিস্কারের কাহিনী আমাকে ঢের বেশি আনন্দ দেয়। কিন্তু আমার রুচিটাই যে সার্বজনীন তা তো নয়। যে সদস্যরা ধর্ম নিয়ে আলোচনা করতে কিংবা লিখতে চান, তারা মুক্তভাবেই তা করতে পারেন অবশ্য।
যা হোক মূল কথায় আসি। আপনার সাথে যাযাবরের যে বিষয় নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে সেটা নিয়ে আমার কোন অভিমত নেই, এই বিতর্কে ঢুকার ইচ্ছেও আমার নেই। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি সব ধর্মের ইতিহাসই কম বেশি রক্তাক্ত। আমি নিজেই হিন্দু ধর্মের অসংখ্য বৈষম্য আর সহিংসতার উল্লেখ করেছি বিভিন্ন লেখায় আর আলোচনায়। কোন ধর্ম বেশি ভায়োলেন্ট আর কোন ধর্ম একটু কম – তা নিক্তি পাল্লা দিয়ে আমি পরিমাপও করতে যাব না, সেটা করাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
আপনি বোধ হয় খেয়াল করে দেখেছেন মুক্তমনা ব্লগারদের বড় একটা অংশই এই ফালতু ধর্ম নিয়ে বিতর্কে যায় না, অনেকেই বিজ্ঞান বা দর্শন নিয়েই শুধু লেখালিখি করেন। কাজেই সব লেখায় সবার সমর্থন পাবেন এটা বোধ হয় ঠিক নয়। আর তা ছাড়া আমরা নিজেরাও আপনারই মতো রক্তাক্ত হই (এখনো) অনেক জায়গাতেই। অনেক সাইটেই চোদ্দগুষ্টি তুলে আমাদের গালাগালি করা হয়। সে সাইটগুলোতে আপনি গর্বভরেই লেখা প্রেরণ করেন, বই বেরুলে সবার আগে সেই সাইটের নাম উল্লেখ করেন। আমিও তো ভাবতে পারি – নির্বিচারে যখন আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা হয়, আপনাকে কিন্তু আমাদের পক্ষে পাওয়া যায় না। পাওয়া না গেলেও আপনি সেই কর্মকান্ড সমর্থন করেন – এটা ভাবলে ভুল সিদ্ধান্তে পৌছানো হবে, তাই না? হয়তো আপনি সময় পান না, পড়েনই না সেই লেখাগুলো, কিংবা হয়তো তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। আসলে সত্যি বলতে কি নিজের লেখা বোধ হয় শেষ পর্যন্ত নিজেকেই ডিফেন্ড করতে হয়। কে সাপোর্টে আসলো আর কে আসলো না সেটা চিন্তা করে খুব বেশি লাভ নেই। তারপরেও মুক্তমনা থেকে আতীক রাঢ়ী, ফরিদ ভাই এবং আমিও (আসলে প্রথম লেখায় এডমিনের নোটটা আমারই ছিলো, যদিও সেটা এখানে অপ্রাসঙ্গিক) প্রতিবাদ করেছি যখন আপনার প্রতি ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হয়েছে। পৃথিবী লিখেছে ‘সমালোচনা যখন বিদ্বেষ হয়ে যায়’ এর মত প্রবন্ধ। এগুলো সবই মুক্তমনাতেই হয়েছে। কিন্তু আপনার সব লেখার সাথে কিংবা সব যুক্তির সাথে সবাই সব সময় একমত হবেন, এটা ভাবা বোধ হয় ঠিক হবে না।
আপনার এই লেখাটার অনেক কিছুর সাথেই আমি একমত নই। কিন্তু সে নিয়ে তর্কে যাবারো আমার কোন ইচ্ছে নেই। আপনার অনুভূতির প্রতি সম্মান জানাচ্ছি। আর চাইবো ব্লগাররা যেন ব্যক্তিগত আক্রমণ পরিহার করে তর্ক করেন।
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ, অভিজিৎ।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
অভিজিৎ দা যা বলেছেন আমি একমত। সবার কাছে সব বিষয় সমান গুরুত্ত্ববহন করে না। তাই আগ্রহের বাহিরের বিষয় গুলো সেভাবে খেয়ালকরা হয়ে উঠে না। আপনাকেও বলবো সব প্রশ্নের সমান গুরুত্ত্ব না দেয়ার জন্য।
মানে, প্রশ্নের মেধা বিবেচনা করে গুরুত্ত্ব নির্নয় করলে ভাল করবেন।
সমালোচনা ও বিদ্বেষ এর সীমারেখা নিয়ে মুক্তমনাতে হাল আমলেই বিস্তর কথা হচ্ছে। ভিন্নমতে্র অস্তিত্ত্ব আছে, থাকবে। যতক্ষন আপনি আমি যুক্তিবোধের গ্রহনযোগ্য সীমা ছাড়িয়ে না যাচ্ছি ততক্ষন সবাই তা শুনবে।
যে বা যারা গালিবাজি বা গলাবাজি করবেন সবাই তাদেরকেও দেখবে।
সুতরাং লিখে যান।
@আতিক রাঢ়ী,
ধন্যবাদ, আতিক।
কেউ যদি বলে কোরান হল ধর্মীয় মৌলবাদের কারণ তাহলে কি করবেন?
আবিদ ভাই, আপনাকে কি একটা অনুরোধ জানাতে পারি? আনি কি একটা পোস্ট লিখতে পারেন কষ্ট করে যেই পোস্টে থাকবে মোটামুটি কোরানের একটি সারাংশ এবং ততসংশ্লিষ্ট আলোচনা কেন কোরান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠধর্ম। এবং আমরা যারা মডারেট মুসলিম তারা কি করে এক্সট্রিম মুসলিম যারা বোম ফুটায় তাদের কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতে পারি বলে আপনি মনে করেন?
@আল্লাচালাইনা,
প্রত্যেকটা মা-ই মনে করেন তার সন্তানই পৃথিবীর সুন্দরতম শিশু। তা মনে না করলে, নিজের সন্তানের প্রতিই হয়ত অবহেলা এসে যেত, যা হয়ে যেত প্রকৃতিবিরুদ্ধ। “আমার ধর্মই শ্রেষ্ঠ” কিম্বা “আমার ধর্মগ্রন্থই শ্রেষ্ঠ”- এহেন কন্সেপ্টটা না থাকলে পৃথিবীতে কোনো ধর্মই সম্ভবত টিকে থাকতোনা এবং মানুষ স্ব স্ব ধর্ম পালনও করতো না। যতক্ষণ না এটা অন্যের উপর ক্ষমতাবলে চাপিয়ে দেয়ার মনোভাব জন্মায়, ততক্ষণ পর্যন্ত এহেন মানসিকতা ঠিক আছে এবং ধর্মের অস্তিত্বের প্রয়োজনে এর দরকারও আছে ধর্মে বিশ্বাসীদের জন্যে। আমার ব্যক্তিগত দর্শন এবং অবস্থান এই চাপিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধেই।
নারে ভাই, কোরানের সারাংশ লেখা আমার ক্ষমতার বাইরে। আমার তো ধারনা, আমার কোরান জ্ঞান মুক্তমনায় কোরানের সমালোচনাকারী লেখকদের কোরান জ্ঞানের তুলনায় নস্যি। বরং ওনাদের কাউকে অনুরোধ করলে তাতে বরং কাজ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থানের কারন আগে বুঝতে হবে। এরপর সামাজিক এবং রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তুলে মৌলবাদকে প্রতিহত করতে হবে শক্ত হাতে। আমার ব্যক্তিগত দর্শন সেটাই। তার মানে এই না, সবাইকে এটার সাথে সহমত প্রকাশ করতে হবে।
মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
ভাই আবিদ, ধর্মীয় মৌলবাদের উৎস হলো সেই ধর্মের তথাকথিত ঐশি কিতাব সমূহ। দেড় হাজার বছর আগে যখন গোটা ইউরোপে খৃষ্টান ধর্মীয় মৌলবাদিতা গোটা ইউরোপকে আচ্ছন করে অন্ধকার জগতে নিয়ে গেছিল, যার পরিসমাপ্তি ঘটেছিল রেনেসা বিপ্লবের মাধ্যমে। তো তখন কেন খৃষ্টীয় মৌলবাদিতার উদ্ভব ঘটেছিল? শুধুমাত্র বাইবেলের কারনেই সেটা ঘটেছিল। তখন পাদ্রীদের ফতোয়া ছিল যে, বাইবেলের মধ্যে সব জ্ঞান আছে, তাই বাইবেলের বাইরে অন্য কিছু জানার দরকার নেই। তখন একে একে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্দ হয়ে যায়, যা কিছু চালু ছিল সেখানে বাইবেল বিরোধী কোন কিছু পড়ানো হতো না। আর সেকালেরই বলি ছিল- কোপার্নিকাস, ব্র“নো, গ্যালিলিও ইত্যাদি মনিষীরা। আর বর্তমানে যে ইসলামী মৌলবাদিতার উদ্ভব ঘটেছে তার ভিত্তিটা কি ? ভিত্তিটা হলো- কোরান আর হাদিস। হয়ত সাম্রাজ্যবাদী শক্তি বিভিন্ন সময়ে তাদের স্বার্থে মুসলমানদেরকে ব্যবহার করেছে তাদেরকে মুজাহিদীন ,তালেবান বানিয়েছে। কিন্তু সেই মুজাহিদীন আর তালেবান বানানোর তরিকাটি কি ছিল? নিশ্চয়ই কোরান আর হাদিস। কারন পাশ্চাত্য শক্তি খুব ভাল করেই জানত- মুসলমানদেরকে একটা ড্রাগের নেশা দিয়ে ভালই বুদ করে রাখা যায় আর তা হলো ইসলাম। যেটা করেছিল বৃটিশরা তাদের ভারতীয় উপমহাদেশের উপনিবেশে। হিন্দুরা যখন ব্যপকভাবে ইংরেজী শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছিল তখন তারা মুসলমানদের জন্য তৈরী করে মাদ্রাসা, মসজিদ , মক্তব ইত্যাদি। ফলাফল, হিন্দুরা অতিদ্রুত উপরের দিকে উঠতে লাগল আর মুসলমানরা কোরান হাদিস , নামাজ রোজা এসব নিয়ে পড়ে থাকল আর একটা পশ্চাৎপদ জাতি হিসেবে পরিগনিত হলো। বৃটিশদেরই এ কৌশল পরে আমেরিকা কাজে লাগায় আফগানিস্তানে, পাকিস্তানে। ফলাফলও কিন্তু হাতে নাতে। এখন গোটা মুসলিম জাতি ১৪০০ বছর আগের আধা সভ্য সমাজের রীতি নীতি চালু করার জন্য আদা জল খেয়ে লেগেছে। আর তার যাবতীয় উপাদান ও উদ্দীপনা আসছে কোরান ও হাদিস থেকে। আমি বুঝি না, নিজের ঘরের মধ্যেই ঘরের শত্র“ বিভীষণ রেখে কেন মুসলমানরা অন্যদেরকে বিশ্বাসঘাতক বলতে যায়? কেন মুসলমানরা বোঝে না যে, তারা যে ধর্মীয় উন্মাদনা শুরু করেছে এটার প্রধানতম কারন হলো-কোরান, হাদিস আর মোহাম্মদ। এতদিন কোরান হাদিস ছাই চাপা আগুনের মত লুকিয়ে ছিল, অনুকুল পরিবেশ পেয়ে এখন আগুন হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছে আর আশে পাশের সব কিছু পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়ার উন্মত্ততায় মেতেছে। কিন্তু মুসলমানদের একটা কথা খুব ভাল করে মনে রাখা দরকার যে, এটা ১৪০০ বছর আগেকার দুনিয়া নয়, এটা একবিংশ শতাব্দী। যে আগুন দিয়ে তারা অন্যদেরকে পুড়িয়ে মারতে চায়, সে আগুনে তাদের নিজেদেরই পুড়ে শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই অধিক। আর সেটা মুসলমানরা যত তাড়াতাড়ি বুঝবে ততই মঙ্গল। সুতরাং, ভাইি আবিদ, মুসলমানদের মৌলবাদিতার মূল কারন হলো- ইসলাম তথা কোরান ও হাদিস, যাকে পাশ্চাত্যশক্তি একটু উস্কে দিয়েছে মাত্র তাদেরই স্বার্থে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
@ভবঘুরে,
খ্রীষ্ট ও ইসলাম ধর্মের অপপ্রয়োগের ক্ষেত্রে আপনার বেশীর ভাগ পর্যবেক্ষণই সঠিক এবং আমার দ্বিমত পোষনের কোনো সুযোগ নেই। তবে আপনি কারন হিসেবে যেটাকে মৌলিক সমস্যা মনে করেন, আমি সেটা করিনা। পার্থক্যটা সেখানেই। আপনি কোন্ জিনিষকে মৌলিক সমস্যা মনে করেন, সেটা এই মন্তব্যেই আপনি মোটামুটি তুলে ধরেছেন। আমার এই নিবন্ধে আমি এ বিষয়ে কিছু লিখিনি। লক্ষ্য করেছেন হয়ত, আমার করা কোনো মন্তব্যেও আমি ‘কি কারন’ সে বিষয়ে তেমন কিছু বলিনি। কেননা আমার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গীতে এই সমস্যাটার পরিধি অনেক বড় এবং স্বল্প পরিসরে আমার অবস্থান থেকে এটা ব্যাখ্যা করা কঠিন। একটা ‘স্কুল অব থট্’ আছে যারা সুনির্দিষ্ট কিছু কিছু বিষয়কে মৌলবাদের উত্থানের অন্যতম প্রধান কারন বলে মনে করে এবং আমিও খানিকটা তাদের মতই দৃষ্টিভঙ্গী পোষন করি। তার মানে এইনা যে, সবাইকে সেটা গ্রহন করতে হবে। অনেক আগে ‘ভিন্নমত’-এ প্রকাশিত কিছু কিছু লেখায় আমি টুকটাক লেখার চেষ্টা করেছি এ বিষয়ে। ভবিষ্যতে আরও লেখার ইচ্ছে আছে।
মন্তব্য করার জন্যে ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
আমরা আশা করব মৌলবাদের আসল কারন সম্পর্কে আপনি একটা বিস্তারিত প্রবন্ধ লিখবেন যাতে করে আমরা সবাই সে বিষয়ে অবহিত হতে পারি। আপনি যতক্ষন সেটা না করবেন ততক্ষন পর্যন্ত আপনি আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন তবে সেটা মানানসই হবে না , কারন দ্বিমত পোষণ করার সাথে সাথে আপনার নিজের মতটাও প্রকাশ করা আবশ্যক। তাহলেই আপনার দ্বিমতের গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করি।
আবিদ সাহেবের আগের লেখাতেও খেয়াল করেছিলাম। এবারও দেখতে পাচ্ছি যে কেউ কেউ মতামত জানাতে গিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন। এরকম আক্রমণ হলেতো নাস্তিক লোকজন ছাড়া আর কেউই মুক্তমনায় লিখতে আগ্রহী হবে না।
আবিদ সাহেবের লেখার শক্তিশালী বা অশক্তিশালী দিক, যুক্তি বা অযুক্তিগুলো তুলে ধরে আলোচনা হতেই পারে, এতে আমি কোন বাধা দেখি না। তিনি নিজেও এতে কোন আপত্তি করেন নি। সক্রিয়ভাবেই আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। আলোচনা-সমালোচনা থেকে পাঠকেরাও উপকৃত হচ্ছেন। কাজেই, ব্যক্তি আক্রমণের কোন প্রয়োজনীয়তাতো আমি দেখতে পাচ্ছি না।
মুক্তমনার সদস্যরা এ বিষয়ে আরেকটু সহনশীল হবেন সে প্রত্যাশা রইলো।
@ফরিদ আহমেদ, একমত পোষণ করছি। ad hominem আক্রমণের প্রয়োজন কি?
@ফরিদ আহমেদ,
ধন্যবাদ, ফরিদ ভাই।
“মিঃ আবিদের লেখাটা একটা কুযুক্তির সুন্দর উপস্থাপনা ছাড়া আর কিছু না |”
একেবারে ঠিক কথা। উনি একুশে ফেব্রুয়ারীর গান শুনলে পালায় আসেন, দুই বুরখাওয়ালী জেনানা নিয়া শপিং করতে যান, হাটু পর্যন্ত তালিবানী পোষাক পড়ে কাফের দের দেশে চলা ফেরা করে্ন, হালাল মাংস ভক্ষণ করেন, আর অবসর সময়ে এসে কাফিরগনের বানানো ইন্টারনেট ব্যহার করিয়া হালাল উপায়ে মডারেট মুসলিমদের নিয়ে ব্লগ পোস্ট করেন। এই না হইলে মডারেট মুসলিম।
আল্লাহ বেহেস্তে আপনার জন্য স্থান পাকা করিয়া রাখুন। আমীন।
মিঃ আবিদের লেখাটা একটা কুযুক্তির সুন্দর উপস্থাপনা ছাড়া আর কিছু না |শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কি বুঝাতে চেয়েছেন ? ক, খ গ, আর গ, খ,ক ,,,
সেই কথাই “তালেবান ” খারাপ , “কুরআন” ভাল | তালেবান কিন্তু কুরআন-
থেকেই সব কিছু করেছে হুবহু | তথাকথিত “মডারেট- মুসলমান”-এর এই সমস্যা !!!!
বাংলাদেশ কারিগরি মাদ্রাসা ( পড়ুন বুয়েট )-র ” বিজ্ঞ”- শিক্ষকদের “মডারেট- মুসলমান”-ছাত্র-ই বটেন মিঃ আবিদ !
আপনার আল্লাহ আপনাকে বেহেস্ত নসিব করুন , এক নাস্তিক নাদান বান্দার এ মিনতি!!!!!!!!!!!!!!
লেখাটায় আদর্শবাদ আর লিবারালিজমের যথেষ্ট মশলা আছে। এসব লেখা পড়তে বা লেকচার শুনতে ভাল লাগে। কিন্তু
হওয়ার কারণটা বোধগম্য হলনা।
সাদা (White) হওয়া ছাড়া মহিলাটির আর কোন দোষ খোঁজে পেলাম না। এদেশে সাদা হওয়া অনেক অপরাধ। সাদারা Assistantship দেয় না। দিলেও কাজ করিয়ে টাকা উসুল (বানান) করে নেয়। ভাল গ্রেড দেয় না। চাকুরী দেয় না। দিলেও বেতন কম।
নিবন্ধটির শেষে এসে একটা হোচট খেলাম। আমি খেলাম নাকি লেখক খেলেন তাও বুঝতে পারলাম না।
আমার সুদীর্ঘ লেখাটা এতটা সময় ব্যয় করে কষ্ট করে পড়ে মন্তব্য করার জন্যে সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সবাই ভাল থাকুন।
আরেকটা ছোট মন্তব্য। জিউ হবে, জিউস নয়, জিউস বহুবচন। এটা তুলতাম না, কিন্তু পড়তে গিয়ে বারবার গ্রীক দেবতা জিউস-এর সাথে গুলিয়ে ফেলে সেকেন্ড খানেকের জন্য বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছিলাম।
@রৌরব,
শোধরানোর জন্যে ধন্যবাদ।
দারুণ লেখা, শেষাংশের গল্পটিতে লেখকের wit এর পরিচয় পাওয়া গেল।
ধর্মীয় মডারেশনের সমস্যা হল, একে ধর্মের ভেতর থেকে তত্বগতভাবে সমর্থন করা কঠিন। অর্থাৎ ধর্মীয় মধ্যপন্থা একটা আচরণবিধি, বলিষ্ঠ দর্শন নয়, এবং এর ফলে সবসময়ই কিছুটা দুর্বল। কিন্তু এমনটা (উদাহরণস্বরূপ) অর্থনৈতিক মধ্যপন্থার ক্ষেত্রে বলা যাবে না।
লেখককে ধন্যবাদ। ভাল লেগেছে আপনার লেখা, আপনার যুক্তিবোধ। আসলে একটা মানুষের অনেকগুলো পরিচয়ের মধ্যে একটা হচ্ছে ধর্ম যা ঐ নিদৃষ্ট মানুষটিকে কখনই পুরোপুরি ধারন করতে পারেনা। কিন্তু ইদানিং মুসলমানদেরকে তাদের হাজারো ভিন্নতা, বহু ভাষা , অনেক সংস্কৃতিকে সংকুচিত করে ইসলাম = মুসলমান= সন্ত্রাসীতে এনে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।
যেন বিবর্তন অন্য ধর্মের বেলায় হতে পরে কেবল মুসলমানরা ছাড়া। অথচ ইসলাম অন্য ধর্মের মতই একটা বিমূর্ত ধারনা। এর এক শাখা অপর শাখাকে মেনে নেয় না। কোনটা প্রকৃ্ত ইসলাম, কোনটা প্রকৃ্ত খৃষ্ট এসব নিয়ে বিরোধ প্রতিটা ধর্মের শুরু থেকেই আছে। ধর্ম পালকারীরা কেউ ধীরে ধীরে গোড়া হন আবার কেউ ধীরে ধীরে উদার হন। এগুলো খুব সাধারন সত্য ব্যাপার। কেবল মুসলমানদেরকেই হয় সন্ত্রাসী হতে হবে অথবা ধর্ম ত্যাগ করতে হবে।
যেন এরা বায়ু গ্রহন ও বর্জনকারী বাক্স বিশেষ। পরিবর্তন এদের ক্ষেত্রে সম্ভব না। ইদানিং আর শোনা যাচ্ছে মুসলমানরা জ্ঞান বি্মূখ। ভুলে যাওয়া হচ্ছে এলজাবরা, ক্যামিস্ট্রী ও চিকিৎসা শাস্ত্রে এদের অবদানের কথা। সক্রেটিস, প্লেটোর জ্ঞান ভান্ডার এরাই সংরক্ষন করে রেখেছিলো। কেবল বলা হচ্ছে না কেন সত্তুরের দশকের পর থেকে হঠাৎ করেই নতুন করে রক্ত লোলুপ হয়ে উঠলো মুসলমানরা। ইরানের শাহ্ এর পতন, সবচেয়ে বড় তেলের যোগানের উপরে স্থানীয়দের অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়া, তেলের আকর্ষিক মূল্য বৃ্দ্ধী, ইসরাইলের ভূমিকা, স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের ফলে সামরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক জগৎএ পাশ্চাত্যার প্রতিনিধীত্ত্বকারী একদল মানষের জন্য প্রতিপক্ষের শূন্যতা।
আমার উপরে বলা কথা গুলোর কোনটাই ইসলামের সীমাবদ্ধতা, যুক্তিহীনতা গুলোকে অস্বীকার করার জন্য না। বরং কন্ঠে কন্ঠ মেলাবার আগে আমাদেরকে ভাবতে হবে আমি যার সাথে কন্ঠ মেলাচ্ছি বা তার ‘স্কুল আফ থট’ কি?
@আতিক রাঢ়ী,
মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ। আপনার অবজারভেশনগুলোও খুব থট্ফুল এবং সুক্ষ্ণ। মুক্তমনায় আমার সাম্প্রতিক আনাগোনা খুব বেশীদিন আগেনা। হয়ত আপনি নিয়মিতই লেখেন যা কোনোভাবে আমি মিস করেছি। আপনার কাছ থেকে এসব সুক্ষ্ণ বিষয় নিয়ে বিশ্লেষনাত্মক লেখা আশা করছি।
েকোরান:৭৬:১৬: আমি সেই দিন “রূপার তৈরি স্ফটিক স্বচ্ছ” গ্লাসে পানীয় পরিবেশন করব।
“সোনার পাথর বাটি”….হ্যা…তাহলে “মডারেট মুসলিম” কেন নয়?
আরেকটা কথা, আপনার শালীকে বলে দিবেন, পর পুরুষের সংগে শপিংএ যাওয়া সারাসার হারাম।আপনি মডারেট মুসলিম হতে পারেন, উনিত নন।
@ফরহাদ,
:laugh:
মডারেট মুসলিম – এর বাংলা কী? মধ্যপন্থী মুসলমান? এক্ষেত্রে মধ্যপন্থী মানে কী? নিজের সুবিধেমতো ইসলাম ধর্মের কিছুটা মানি, বাকিটা মানি না? আল্লাহকে যথাসম্ভব কম চটিয়ে ইহকালের যাবতীয় সুখলাভের পাশাপাশি পরকালের সুখ না হারানোর অভিলাষ? “ধর্মেও আছি, জিরাফেও আছি” ধরনের? খুব সুবিধাবাদী অবস্থান মনে হয় না এটাকে? তাহলে কী দাঁড়াচ্ছে: মডারেট মুসলিম মানে কি “কিছুটা মুসলিম”? “কিছুটা অন্তঃসত্ত্বা”-র মতো? আমার ধারণা, গভীরভাবে ভেবে দেখলে “মডারেট মুসলিম” শব্দবন্ধটি অযৌক্তিক ও হাস্যোদ্রেককারী মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক।
একান্তই আমার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি জানালাম। এতে ভিন্নমত জ্ঞাপনের অধিকার যে কারুরই আছে, তবে বিতর্কে জড়াবার বাসনা আমার একেবারেই নেই।
@একজন নির্ধর্মী,
:yes:
কিছু মন্তব্য করতে চাই। এক – লেখক দাবী করেছেন খ্রীষ্ঠান ও ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থেও কুরাণের মত অন্য ধর্মের প্রতি সহিংস আয়াত আছে। আমি লেখককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম ঐ আয়াত/verse এর উদ্ধৃতি দেয়ার থকন্য। আগেই বলে দেই উনি পারবেনা। ইসলামের বিরুদ্ধ তো নেইই কারণ ইসলাম এই দুই ধর্মের অনেক পরে আসা। বৌদ্ধ বা হিন্দু ধর্মের বিরুদ্ধে লেখা থাকলে উদ্ধৃত করুন। এরকম ভুল তথ্য দিয়ে মাইলেজ হাসিল করার চেষ্টা ইসলাম পন্থীদের জন্য নতুন কিছু নয়।
দুই – আওয়ামী লীগারদের সঙ্গে উপমাটা ভুল। আওয়ামী লীগ এর শাসনতন্ত্র কুরানের মত আল্লাহ প্রেরিত নয় বা এটা ১০০% মেনে না চল্লে আওয়ামী কাফের হয়ে যাবে এমন ঘোষণাও দেয়া হয় নি কোথাও। ইসলাম/কুরান ছাড়া যে কোন বিষয়ে ঢিলা দেয়া যায়।
আর মডারেট মুসলিম আছে কি না এই নিয়ে সরল ব্যাপারকে জটিল করে কথার জাল বুনে ধূম্রজাল সৃষ্টি করার দরকার কি? মডারেট মুসলিম বাস্তবে আছেন, কিন্তু তাত্বিকভাবে থাকতে পারেনা। যারা মডারেট মুসলিম তাঁরা ইসলামের নিরীখে ভন্ড, মানবতার নিরীখে ইসলামিস্টদের চেয়ে অনেক ভাল। সাধা সিধে কথা।
@যাযাবর,
:yes:
@যাযাবর,
আবিদ ভাই এর প্রথম লেখায় বিতর্কের ঝড়ে আমার মূল আর্গুমেন্ট ছিল এটাই। এখানে থেকে প্রথাগত ধার্মিক মানেই ভন্ড কিনা এই জটিল আলোচনা শুরু হয়।
– এটাও সত্য। মডারেট মুসলমান যাদের বলা হয় (যদিও কোন ধরাবাধা সংজ্ঞা নাই) তাদের মধ্যে যেহেতু সংস্কারবাদী প্রচেষ্টা থাকে সেহেতু তারা সনাতন বা কট্টরপন্থীদের তীব্র রোষের মধ্যে পড়েন। কট্টরপন্থীদের মতে এনারা ইসলাম জানেন না বা ইসলামের শত্রু ইত্যাদী।
আসলেই এই সহজ ব্যাপার নিয়ে এত বিতর্ক কথামালার তেমন মানে নেই। কে মডারেট কে আসল এই প্রশ্নের কোন ধরাবাধা গাইড লাইন নেই, এটা পুরোপুরিই আপেক্ষিক। আবিদ ভাই অনেকের চোখে মডারেট হবেন, আবার অনেকের চোখে উনি কট্টর হবেন। এটাই স্বাভাবিক।
@আদিল মাহমুদ,
(অফটপিক): আদিল, তোমার কোনো একটা মন্তব্যে পড়েছিলাম তুমি বুয়েটের ৯০ ব্যাচ। আমার ভায়রা আশরাফও সিভিলের। ৯০ ব্যাচ। সাউথ ডাকোটা থেকে কম্পিউটারে এম.এস. করে পরে আবার এ্যারিজোনার এ.এস.ইউ. থেকে সিভিলে এম.এস. করেছে। এখন ট্রান্সপোর্টেশন-এ একটা প্রাইভেট কোম্পানীতে কাজ করে। তুমি চেনো নাকি ওকে?
@আব্দুর রহমান আবিদ,
ভায়রা ভাইকে বেশ ভাল করেই চিনিঃ)। তার সাথে ঢাকা কলেজেও পড়েছি।
সে অবশ্য আমাকে আদিল নামে চেনালে আরেক আদিল কে বুঝবে, কারন আদিল নামটা ভূয়া 🙂 ।
আপনাকে তো এখন থেকে দূলাভাই বলে ডাকা যায় দেখি। যদিও বাংলা ভাষার এই সম্বোধন আমার পছন্দ নয়।
@আদিল মাহমুদ,
সম্বোধনটা তোমার পছন্দ না হয়ে বরং ভালই হয়েছে। এমনকি আশরাফ নিজেও আমাকে আবিদ ভাই ডাকে। কেননা ভায়রার চেয়েও আমাদের বড় পরিচয় ‘বুয়েটিয়ান’ বলে বোধহয়।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
আপনি বেশ ধার্মিক প্রকৃতির হলেও আশা করি মুক্তমনায় আমার নাফরমানি মার্কা কথাবার্তা সিরিয়াসলি নেবেন না। আমি আল্লাহয় বিশ্বাসী হলেও সনাতন ধর্মগুলিতে বিশ্বাস অনেকটাই চলে গেছে।
বুয়েটিয়ান ভাইকে শুধু বলবেন যে আমি ফ্লোরিডায় ওর কোম্পানীতেই আগে কাজ করতাম, এখন টরন্টোতে আছি। এই বললেই নিমেষে চিনে ফেলবে। কিছুদিন আগে আমাকে ফোন করেছিল। আশা করি আমার ধর্মীয় দর্শন ওকে বলতে যাবেন না, ও এখন শুনি বেশ পরহেজগার বান্দা (সারা জীবনই তাই ছিল, তবে এখন মনে হয় মোটামুটি তব্লীগ)। আমার দর্শন সহজভাবে হজম করা বেশ শক্ত হবে।
ফিনিক্সে আমাদের শুভ্রা-শামীম স্যার, ফয়সাল এরাও আছে। ইলেক্ট্রিক্যালেরও বড় একটা গ্রুপ আছে।
সবাই মনে হয় এই ভাই-বন্ধু-দুলাভাই সদালাপে সহসাই বিরক্ত বোধ করবেন।
@আদিল মাহমুদ,
আদিল, ইচ্ছে করেই একটু দেরি করলাম লেখাটা দ্বিতীয় পাতায় যাওয়ার জন্যে যেন attention কমে। এখন মনে হয় আমরা ইচ্ছেমত ভাই-বন্ধু-দুলাভাই সদালাপ করতে পারি।
হ্যাঁ, তোমাদের ব্যাচের বেশ বড় একটা গ্রুপই ফিনিক্সে আছে। তোমার কথা আশরাফকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তোমার ability সম্পর্কে ও খুব উচুঁ ধারনা পোষন করে। বললো, তোমরা ভাল বন্ধু ছিলে।
তোমাদের ব্যাচের লিমা মানে লিমা ভাবীকেও আমরা খুব ভাল চিনি। আমি জাপানে মাষ্টার্স করার সময় আলাউদ্দিন ভাই পিএইচডি করছিলেন জাপানে। লিমা ভাবী তখনো বোধহয় বুয়েটেই ছিলেন। প্রতি সেমিষ্টারের পর চলে আসতেন জাপানে। আমার ওয়াইফের সাথে খুব ভাল সম্পর্ক ছিল লিমা ভাবীর। আমরা ২০০৭-এর সামারে কানাডা বেড়াতে গিয়ে ওনাদের টরোন্টো’র বাসায় দাওয়াতও খেয়েছি।
এখানে আসার আগে আমি ঢাকার SWMC তে ছিলাম। তোমাদের ব্যাচের সাদেক, টিটো, মঞ্জুর, আইয়্যুব, শাহেদ এরা সবাই আমার কলিগ ছিল। তোমাদের ব্যাচের অনেককেই আমি খুব ভাল চিনি।
ভাল থেকো।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
আশরাফের সাথে কলেজে ভাল বন্ধুত্ব ছিল, সোজা সরল মানুষ, ভাল না লাগার কোন কারন নাই। বুয়েটে দুই সেকশনে যাবার পর কিছুটা বিচ্ছেদ হয়। এরপর শুনেছিলাম কম্পিঊটড়ে সুইচ করা আরো অনেকের মতই ওও শুনেছিলাম বহুদিন বেশ সমস্যায় ছিল। এখন সেটল করেছে শুনে ভাল লাগে।
ভাই রে, আপনি তো আমাকে বিপদে ফেলে দিবেন দেখি 🙂 । লিমার বাসায় কিছুদিন আগে এখানে গেছিলাম। ওও এখন বেশ পরহেজগার মহিলা। অনেক হেদায়েত করে, আমি এখন কি জিনিস ভাগ্য ভাল টের পায় নাই। পেলে মনে হয় হেদায়েত করার সময় আর নষ্ট করত না।
সারফেস ওয়াটারে আমাদের ব্যাচের বড় এক গ্রুপ ঢুকেছিল। এদের মাঝে সাদেক আমার খুব ক্লোজ ছিল। ওদের সাথে টেক্সাস থাকার সময় অনেক যোগাযোগ ছিল।
এদের সাথে আমার প্রসংগ আলোচনায় কখনো আশা করি মুক্তমনায় আমার লেখা আলোচনা করবেন না, ধর্মবিশ্বাসের কারনে পুরনো বন্ধু বিচ্ছেদ খুবই বেদনাদায়ক হবে।
আপনার লেখা শুধু এখন না, আরো আগেই পড়েছি। পৃথিবী ঘোরে না সূর্য না ঘোরে প্রসংগে অভিজিত আর আপনার ডিবেট মনে হয় গোটা ইন্টারনেট জগতে একটা চমতকার উদাহরন। কিভাবে ভিন্ন বিশ্বাসের হয়েও পরস্পরকে শ্রদ্ধা করে যুক্তিপূর্ন বিতর্ক করা যায় তা সবারই এখানে থেকে শেখার আছে।
কখনো ফিনিক্স গেলে অবশ্যই আপনার সাথে দেখা করার আশা রাখি।
@আদিল মাহমুদ,
আদিল, ফিনিক্স-এ যখন খুশী চলে আসতে পারো। আমি, আশরাফ তো আছিই। মোষ্ট ওয়েলকাম। আমার লেখা অনেক আগেই পড়েছো জেনে খুশী হলাম। ভাল থেকো।
@যাযাবর,
আমি আমার নিবন্ধেই স্বীকার করেছি যে, হিন্দু বা বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে আমার জ্ঞান শূন্যের কোঠায়। পুরনো এবং নতুন বাইবেলে অসংখ্য ভার্স আছে যা cruel কিম্বা violent। তবে, আদর্শগত কারনে এবং মৌলিক অবস্থান থেকে ভিন্ন ধর্মের কোনো ধর্মগ্রন্থ থেকে হিংসাত্বক ভার্স quote করা আমার স্বভাববিরুদ্ধ। একটু কষ্ট করে Google Search-এ গিয়ে ‘cruel verses in the Bible’, ‘violent verses in the Old Testament’, ‘cruelty and violence in the Bible/Old Testament’, ‘Which is more violent: Bible or Koran’, ইত্যাদি বাক্যগুলো লিখে সার্চ করলেই অসংখ্য ওয়েব লিংক পাবেন যেখানে এমন শত শত হিংসাত্বক (cruel and/or violent) ভার্সকে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে।
[মডেরাটরকে – আমার আগের জবাবটার পরিবর্তে এই জবাব টা পোস্ট করুন দয়া করে। আগের জবাবে শেষের অংশ কোন কারণে মুছে গিয়েছিল। ধন্যবাদ]
@আব্দুর রহমান আবিদ,
বাইবেলে অন্য ধর্ম সম্পর্কে সহিংস আয়াত আছে আপনার এই দাবী করার জন্য আপনাকে হিন্দু বা বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে জানতে হবে না, জানতে হবে বাইবেল সম্পর্কে । কাজেই আপনার উপরের উক্তি যে অবান্তর সেটা আপনার না বোঝার কথা নয়। অবান্তর উক্তির একমাত্র উদ্দেশ্য হল যুক্তিকে পাশ কাটান, ধুম্ম্রজাল সৃষ্টি করা। ঈংরেজীতে যাকে Red Herring বলে । এটা বৌদ্ধিক অসততার একটা উদাহরণ। আর ভিন্ন ধর্মের কোনো ধর্মগ্রন্থ থেকে হিংসাত্বক ভার্স quote করা আপনার স্বভাববিরুদ্ধ বলছেন, অথচ সেই ভিন্ন ধর্মের ধর্মগ্রন্থে অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে সহিংস আয়াত আছে এই দাবী করাটা আপনার স্বভাববিরুদ্ধ নয়। চমৎকার। খুবই সুবিধাবাদী অবস্থান। ঐ ভার্স quote করা যখন অসম্ভব (কারণ তা নেই) তখন তা quote করা স্বভাববিরুদ্ধ বলাটা তো খুবই সুবিধাজনক। মনে করিয়ে দেই প্রসঙ্গটা ছিল অন্য ধর্মের প্রতি সহিংস ভার্স, কেবল সহিংস ভার্স নয়। নিজেদের মধ্যে সহ্নিংসতা থাকাটাও যে ভাল তা নয়, কিন্তু সেটা বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে বিদ্বেষের জন্ম দেয় না। আপনার দাবী/অভিযোগ ছিল বাইবেলে অন্য ধর্মাবলম্বীর প্রতি সহিংস ভার্স আছে। সেটাই আপনাকে প্রমাণ করতে আহবান করছি। এটা একটা গুরুতর দাবী/অভিযোগ । ইসলামের সমালোচকেরা কুরানের ব্যাপারে কোন দাবী বা অভিযোগ করলে তার সপক্ষে যথাযথ উদ্ধৃতি দেন। প্রমাণ সাক্ষ্য না দেয়াটাই স্বভাববিরুদ্ধ হবার কথা।
দ্বিতীয়ত বাইবেলের (ওল্ড টেস্টামেন্টে বা তাউরাতের) সহিংস ভার্স গুলি তো আল্লাহরই কথা । কারণ কুরানে আল্লাহ তো দাবী করেছেনই যে তাউরাত তাঁর প্রেরিত বই।
@যাযাবর,
ভাই যাযাবর, আপনি দেখি গায়ে পড়ে ঝগড়া করার চেষ্টা করছেন। আমি আপনাকে Google Search-এ গিয়ে একটু কষ্ট করে কতগুলো ইংরেজী শব্দগুচ্ছ টাইপ করে সার্চ দিতে অনুরোধ করেছিলাম। সেটা করলেই আপনি বাইবেলের হিংসাত্বক ভার্সগুলো পেয়ে যেতেন। কিন্তু আপনি সেটা না করে পুরনো কথাগুলোই ক্রমশ ঝাঁঝের মাত্রা বাড়িয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলছেন। এতে কিন্তু দুজনেরই সময় নষ্ট হচ্ছে। আমারতো মনে হয় মুক্তমনাতেই কখনও-সখনও দু’একটা আর্টিকল আমি পড়েছি (অনেকদিন আগে অবশ্য) যেখানে বাইবেলের হিংসাত্বক ভার্সগুলোর কোনো কোনোটা দু’এক জন লেখক সম্ভবত দেখিয়েছিলেন। মুক্তমনার আর্কাইভ ঘাঁটাঘাঁটি করলে হয়ত আজও খুঁজে পাওয়া যেতে পারে আর্টিকলগুলো। অবশ্য স্বীকার করতে অসুবিধে নেই যে, আপনি যদি দাবী করেন প্রসংগটা যেহেতু আমিই উঠিয়েছি সেক্ষেত্রে প্রমান করার দায়ীত্বও আমার; আপনি অযথা কেন Google Search ঘাঁটাঘঁটি করবেন, তবে তা যুক্তির কথাই।
অবশ্য আপনার মন্তব্য পড়ে আমার এখন মনে হচ্ছে, শুধু হিংসাত্বক ভার্স দেখালে আপনার সন্তুষ্টি আসবেনা; সুনির্দিষ্টভাবে ‘অন্য ধর্মের’ বিরুদ্ধে হিংসাত্বক ভার্স দেখাতে হবে। এ যেন, “স্বধর্মের শিশু, নারী বা সাধারনভাবে মানুষ হত্যার ভার্স থাকলে সেটা ব্যাপার না। কিন্তু ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের হত্যার ভার্স থাকলে তা সমস্যা”। যেহেতু আমি আমার নিবন্ধে ‘বিধর্মী’ শব্দটা উল্লেখ করেছি কাজেই যুক্তিবাদের তত্ত্বে আপনি ‘অন্য ধর্ম’ প্রসঙ্গে এ দাবী করতে পারেন, কিন্তু মানবতার নিরিখে আপনার এমনটা দেখতে চাওয়া কিন্তু শুধু অমননশীলই নয়, খানিকটা অমানবিকও। তারপরেও চেষ্টা করে দেখি, আপনাকে কিছুটা সন্তুষ্ট করা যায় কিনা।
দেখা যাক আমি আমার নিবন্ধে আসলে কি লিখেছিলাম। “অনুরূপভাবে, জিউসদের Old Testament বা পুরনো বাইবেলে এবং এবং খ্রীষ্টানদের New Testament বা নতুন বাইবেলেও এমন অনেক ভার্স (আয়াত) আছে যেখানে একইভাবে বিধর্মীদেরকে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হত্যা করতে বলা হয়েছে”।
‘বিধর্মী’ শব্দটার অর্থ ও প্রয়োগ কিছুটা ব্যাপক। এটা স্রেফ ‘অন্য ধর্ম’ নয়। ‘বিধর্মী’ শব্দটার বেশ কয়েকটা ইংরেজী প্রতিশব্দের মধ্যে আধুনিককালে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত শব্দটা হলো, ‘infidel’। এটার definition-এর কয়েকটা হলো,
১: an unbeliever with respect to a particular religion
২: one who acknowledges no religious belief
৩: a disbeliever in something specified or understood
সে অর্থে কোনো একটা সুনির্দিষ্ট ধর্মের ও ধর্মগ্রন্থের আবির্ভাবের সময় সে ধর্মের বিরুদ্ধাচারী সবাই ‘বিধর্মী’, তা তারা অন্য কোনো ধর্মে বিশ্বাসী হোক, ধর্মহীন হোক কিম্বা কোনো কারনে স্রেফ বিরুদ্ধাচারী হোক। যাহোক, ‘বিধর্মী’ তথা বিরুদ্ধাচারীদের বিষয়ে আদিষ্ট পুরনো বাইবেলের কিছু ভার্সের উল্লেখ করছি নীচেঃ
Ezekiel 9:6 “Slay utterly old and young, both maids, and little children, and women . . . ”
Isaiah 13:16 “Their children also shall be dashed to pieces before their eyes; their houses shall be spoiled, and their wives ravished.”
Deuteronomy 13:15 “Thou shalt surely smite the inhabitants of that city with the edge of the sword, destroying it utterly . . . ”
Leviticus 20:9 “For every one that curseth his father or his mother shall be surely put to death . . . ”
Exodus 32:27 “. . . Thus saith the LORD God of Israel, Put every man his sword by his side, and go in and out from gate to gate throughout the camp, and slay every man his brother, and every man his companion, and every man his neighbour.”
Deut 21:10-12 “When thou goest forth to war against thine enemies, and the LORD thy God hath delivered them into thine hands, and thou hast taken them captive, And seest among the captives a beautiful woman, and hast a desire unto her, that thou wouldest have her to thy wife; Then thou shalt bring her home to thine house, and she shall shave her head, and pare her nails; ”
Exodus 31:15 ” . . . whosoever doeth any work in the sabbath day, he shall surely be put to death.”
Deut 21:21 “And all the men of his city shall stone him with stones, that he die . . . ”
এছাড়া ‘the Boston Globe’-এ প্রকাশিত Philip Jenkins-এর লিখিত “Dark passages: Does the harsh language in the Koran explain Islamic violence? Don’t answer till you’ve taken a look inside the Bible” নিবন্ধটা কষ্ট করে একটু পড়ে নিয়েন যদি ইন্টারনেটের সার্চ ইঞ্জিনগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করার অভ্যাস থাকে। জায়গার সংকুলান হলে আমি নিজেই এখানে তুলে দিতাম যেন আপনাকে কষ্ট করে খুঁজে বের করতে না হয়।
আর হ্যাঁ, ‘গাছ বললে হবেনা, আম গাছই হতে হবে”- এমনটা আবদার করলে তা রক্ষা করা আমার পক্ষে আর সম্ভব নাও হতে পারে। আফটার অল, “সময়ের মূল্য” রচনাখানা আমরা কমবেশী সবাই কিন্তু ছোটবেলায় পড়েছি।
ভাল থাকবেন। সময় দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
গায়ে পড়ে? আমি আপনার মন্তব্যের পালটা যুক্তি দিয়ে সমালোচনা করেছি মাত্র আর আপনিও তার পালটা জবাব দিয়েছেন। গায়ে পড়েটা কোথায় দেখলেন? আপনি কি মনে করেন যে ব্লগে আপনার লেখার কোন সমালোচনা বা পালটা যুক্তি দেয়া উচিত না? তাহলেত ব্লগে না লিখাই ভাল। ইংরেজীতে একটা কথা আছে রান্না ঘরের তাপ সহ্য করতে না পারলে রান্না ঘরে যাওয়া উচিত নয়। যাহোক এবার মূল বক্তব্যে আসি। আপনার মূল লেখায় আপনার বক্তব্য ছিল যে কুরানে সহিংস আয়াত আছে, কিন্তু কুরান তো এ ব্যাপারে একা নয়। বাইবেলেও ত তা আছে। কাজেই সব সমান, এটাই বোঝাতে চাচ্ছিলেন। আমার বক্তব্য হল কুরানের সহিংসতা আর বাইবেলের সহিংসতা সমতুল্য নয়। সমান বলে কুরানে বিশ্বাসী মুসলিমেরা সান্তনা পাওয়ার একটা পথ খুঁজে পান। কুরান ও বাইবেলের মূল পার্থক্যটা হল (আমি পৃথিবীর জবাবে এসব নিয়ে লিখেছিলাম)
১। কুরানের সহিংসতয়ায় নাম উল্লেখ করে ইহুদী, খ্রীষ্টান, পৌত্তলিক (অর্থাৎ হিন্দু) এদের বিরুদ্ধে উস্কিয়ে দেয়া হয়েছে। এর কারণেই ইসলামী জঙ্গীবাদ পৃথিবীময় এক বিরাট সমস্যা। তারা কুরানের বানীকেই মনে রেখেই বিধর্মীর বিরুদ্ধে জিহাদ করছে। বাইবেলে সেরকম অপর ধর্মের প্রতি অসহনশীল আয়াত নেই। সহিংস আয়াতগুলি ইহুদীদেরই মধ্যেই যারা বিধান মেনে চলেনা তাদের প্রতি লক্ষ্য করে বলা। এতে হিন্দু বা মুসলমানদের সমস্যা কোথায়? এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ তফাত। কুরাণের সহিংসতার ব্যবহারিক প্রয়োগ ছিল, আর থাকবে। বাইবেলের সহিংস ভার্সের প্রয়োগ ছিলনা, এবং এখনো নেই।
২। মুসলমানদের জন্য কুরান পুরোটা মেনে চলা আবশ্যিক। কুরাণ দাবী করে এটা আল্লাহর নিজের কথা। বাইবেল বা খ্রীষ্টানরা দাবী করে না যে এটা সরাসরি ইশ্বর দ্বারা লিখিত বা প্রেরিত। খ্রীষ্টান হতে হলে বাইবেলের সবটাই মানতে হবে এমন কথা কোথাও লেখা নেই ব দাবীও করেনা খ্রীষ্টানেরা। খ্রীষ্টানদের অধিকাংসই ওল্ড টেস্টামেন্ট মানে না, তারা শুধু New Testament এ বর্ণিত যীশুর বানী সম্বলিত অধ্যায়গুলিতে বিশ্বাস করে। আর সামান্য কজন যারা ওল্ড টেস্টামেন্টে বিশ্বাস করেও তারা ওল্ড টেস্টামেনন্টের সবটাই বিশ্বাস করেন না, সেই সহিংস ভার্সগুলিত নয়ই।
৩। ওল্ড টেস্টামেন্ট বা তাওরাত আল্লাহরই দ্বারা প্রেরিত সেটা কুরাণে দাবী করা হয়েছে। আর ওল্ড টেস্টামেন্টের সহিংস বাণীর বিরুদ্ধেও কুরাণে কিছু বলা হয় নি। কাজেঈ এগুলিকে কনফার্ম করা হয়েছে কুরানে। তার বেলা? তাহলে তো ওল্ড টেস্টামেন্টর সহিংস বানীর দায়িত্ব খোদ আল্লাহকেই নিতে হয়।
@যাযাবর,
আপনার মন্তব্যটা যথাসময়ে পড়লেও ইচ্ছে করেই কিছুটা দেরী করেছি প্রতিমন্তব্য করার ক্ষেত্রে। কেন দেরী করেছি সেটা বলার আগে আপনার তথাকথিত রান্নাঘরের তাপ সহ্য করার উপমার ব্যাপারে আগে একটু বলে নিই। জামাতীদের কোনো ফোরামে গিয়ে আপনি নাস্তিকতার সপক্ষে একটা প্রবন্ধ লিখবেন আর তাপ সহ্য করার জন্যে তৈরী থাকবেন না- এমনটা আশা তো পাগলেও করবে নারে ভাই। এখানেও ব্যাপারটা কি খানিকটা সেরকম না? তবে হ্যাঁ, ইলেক্ট্রিক স্টোভের তাপ আশা করে সেখানে লাকড়ির চুলার তাপ পেলে স্বভাবতই খানিকটা অস্বস্তি হওয়ার কথা। যাক, এসব অহেতুক উপমা টেনে মন্তব্যের কলেবর বাড়ানো আমার-আপনার কারোরই বোধহয় কাম্য হওয়া উচিত নয়।
“বাইবেলের সহিংস ভার্সের প্রয়োগ ছিলনা এবং এখনো নেই””।
আশ্চর্য, আপনার দেখছি খ্রীষ্ট ধর্মের রক্তাত্ত ইতিহাস সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা নেই; নাহলে এমন একটা স্টেটমেন্ট আপনি কিছুতেই লিখতে পারতেননা। আমি ইচ্ছে করে আপনার মন্তব্যের উত্তর দিতে দেরী করেছি এই আশায় যে, এটা এমনই সর্বজনবিদিত একটা বিষয় যে, মুক্তমনা লেখকদেরই কেউ না কেউ হয়ত আমার পক্ষ হয়ে আপনার উক্তিটার প্রত্যুত্তর দিয়ে দেবেন যেহেতু তত্ত্বগতভাবে কোনো ধর্মের প্রতিই ওনাদের পক্ষপাতিত্ব থাকার কথা না। আমি অবাক হলাম যখন কাউকেই এ বিষয়ে প্রতিমন্তব্য করতে দেখলাম না। যাহোক, ইন্টারনেট একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলেই খ্রীষ্ট ধর্মের রক্তাত্ত ইতিহাসের অসংখ্য কাহিনী আপনি নিজেই জানতে পারবেন। আমি আপনাকে এ বিষয়ে অনেক তথ্য দিতে পারি। তবে আপনি কতখানি তা গ্রহন করবেন, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কাজেই নীচে ভবঘুরের প্রতিমন্তব্যের অংশবিশেষ তুলে ধরছি, যিনি আপনারই প্ল্যাটফর্মের একজন লেখক। আশা করি এতে তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহনযোগ্যতা আপনার কাছে অনেক বাড়বে। ভবঘুরে খ্রীষ্ট ধর্মের রক্তাত্ত ইতিহাসের জন্যে বাইবেলকে যেভাবে দায়ী করেছেন, সেটা বাইবেলের সরাসরি প্রয়োগ, নাকি অপপ্রয়োগ তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু সেখানে বাইবেলের সংশ্লিষ্টতাকে কেউ সরাসরি অস্বীকার করতে পারবেনা। ভবিষ্যতে আরেকটু হোম-ওয়ার্ক না করে এমন উল্টোপাল্টা স্টেটমেন্ট দেয়া থেকে বিরত থাকবেন আশা করি।
@আব্দুর রহমান আবিদ,
আমার বক্তব্য টু দ্য পয়েন্ট ও স্পষ্ট। আমার মূল বক্তব্য ছিল ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহিংসতার ব্যাপারে কুরানের আয়াত ও অন্যান্য ধর্মের আয়াতের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে। আপনার দ্বাবী ছিল সবই সমান। আমি ঢালাওভাবে এক ধর্ম ভাল, অন্য ধর্ম খারাপ, বা এক ধর্ম সম্পূর্ণ শান্তিপ্রিয়, আর অন্য ধর্ম পুরোপুরি সহিংস, এমন সাদা কালো ও সরলীকৃত রায় দেই নি, যেটা আপনি আমার উপর চাপাতে চাচ্ছেন, তাতে আপনার সুবিধার হয়। এটা করা কুযুক্তিরই একটা কৌশল। আমি আবারও পয়েন্টে থেকে সরে না গিয়েই বলছিঃ (১) খ্রীষ্টান ধর্মগ্রন্থে এমন কোন আয়াত নেই যার দ্বারা প্রত্যক্ষ্যভাবে অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহিংসতাকে জাস্টিফাই করা যায়, যেমন্টা যায় কুরানের আয়াত দ্বারা। (২) খ্রীষ্টান চার্চ দ্বারা সঙ্ঘটিত মধ্যযুগের নিপীড়ন/রক্তপাত ওল্ড টেস্টামেন্টের আয়াতে বর্ণিত যে সহিংসতা সেটা নয়। তাই ওল্ড টেস্টামেন্টের আয়াতের দ্বারা মধ্যযুগের চার্চের নিপীড়ন যে প্রভাবিত সেটা বলা যাবে না। (৩) খ্রীষ্টানের নিউ টেস্টামেন্ট তথা যীশু খ্রীষ্টকে মানে, ওল্ড টেস্টামেন্টকে নয়। নিউ টেস্টামেন্টেত কোন সহিংস বাণীই নেই। সেই কারণেও মধ্যযুগের খ্রীষ্টান চার্চের নির্যাতনকে বাইবেলের (ওল্ড এবং নিউ) ব্যবহারিক প্রয়োগ কোনভাবেই বলা যায় না। (৪) কুরাণে ওল্ড টেস্টামেন্টকে আল্লাহরই প্রেরিত বই বলা হয়েছে। তাই ওল্ড টেস্টামেন্টএর কোন আয়াতের কারণে কোন সহিংসতা ঘটলে তার জন্য কুরানের লেখক আল্লাহকেই দায়ী করতে হবে।
আমি আবারো একটা ব্যাপারের উপর জোর দিতে চাই আর সেটা হল ওল্ড টেস্টামেন্টের সহিংস আয়াত গুলি ছিল ইস্রাইলীদের গড (ইয়াওয়েহ) এর বাণী, যারা সেই গডের দৃষ্টিতে পাপিষ্ঠ তাদের বিরুদ্ধে। আর এ সবই ছিল বিশেষ সময়ের, বিশেষ স্থানের, বিশেষ কারোর কাছে বিশেষ কারোর বিরুদ্ধে লক্ষ্য করে। এটা সর্ব কালের, সর্ব স্থানের জন্য ছিল না। কুরাণের আয়াত অপরপক্ষে সর্বকালের, সব মানবগোষ্ঠীর জন্য। আর কুরাণে ইহুদী, খ্রীষ্টান ও পৌত্তিলিকেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে যতক্ষণ পর্যুন্ত না তারা ইসলামের কাছে নতি স্বীকার করে জিজিয়া কর দেয়। ওল্ড টেস্টামেন্টের বানীকে খ্রীষ্টানেরা বা ইহুদীরা ইশ্বরের অলঙ্ঘনীয় নির্দেশ বলে দাবীও করেনা। যেটা কুরানের ব্যাপারে সব মুসলিমরাই করে। দুটোর তুলনা কেমন করে হয়?
এখন নিশ্চয় আপনার বোঝা উচিত যে খ্রীষ্ঠ ধর্মের রক্তাত্ত ইতিহাস নয়, এটাকে মধ্যযুগীয় খ্রীষ্টান চার্চ এর রক্তাত্ত ইতিহাস বলা উচিত। সেই মধ্যযুগের খ্রীষ্টান চার্চকে এখনকার সব খ্রীষ্টান চার্চই প্রত্যাখ্যান করে। আমার ইতিহাস জ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন না তুলে সঠিক যুক্তি দেয়ার উপরেই আপনার বেশি জোর দেয়া উচিত বলে আমার মনে হয়।
ধর্ম ব্যাপারটা আমাদের সমাজে নৃতাত্বিক কারনে এসেছিল বটে-তবে বর্তমানে ধর্ম গুলো কেন টিকে থাকবে, তার কোন সদুত্তোর নেই। অনেকেই মাথা ঠান্ডা রাখা বা সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যে ধর্মের দড়জা নাড়তে পারে-তবে তাতে হিতে বিপরীত হবে। জীবন এবং সমাজ থেকে ধর্মকে যত দূরে সরানো যায় ততই মানবজাতির মঙ্গল অধিকতর সাধিত হবে। এটা অবশ্য আমাদের সৌভাগ্য যে সাধারনত আমাদের পশ্চিম বঙ্গে বামপন্থী ভাবধারর অধিক বিকাশের জন্যে, একটি বিশাল অংশই ধর্মবিমূখ ( কিন্ত কিন্ত একই সাথে সাম্প্রদায়িক-হিন্দুত্বটা সেখানে পরিচয়) -কিন্ত সেই ধর্ম বিহীন , ধর্মের পরিচয় বিহীন জীবন যাত্রা বোধ হয় খুব বেশী দূরে নেই। সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশী আমি ইন্টারনেটে দেখেছি-ব্যাক্তিগত জীবনে দেখিনী। বরং সেই দিক দিয়ে হিন্দুরাই অনেক বেশী সাম্প্রদায়িক-তবে সেটাও মুসলমান বিদ্বেশ থেকেই এসেছে। আসলে আইন দিয়ে জনগনকে শাসনে বাঁধার সেই দিন আর নেই।
তবে আমাদের রাজনীতিতে যে ভাবে নির্লজ্জ্ তোষন চলে ইসলামের এবং হিন্দুত্বের তাতে দক্ষিন এশিয়া শুধুই পেছনে দিকে যাচ্ছে। আজকেই পড়লাম দারুল উলেমা-এই উপমহাদেশের সব থেকে বড় মোল্লাগোষ্ঠিরা ভারতে ফতেয়া দিয়েছে, মুসলিম মেয়েরা পুরুষ অধ্যশিত স্থানে চাকরি করতে পারবে না। কোথায় এই সব মোল্লাদের ধরে পাইকেরি হারে জেলে ঢোকানো উচিত-তার বদলে রাজনৈতিক দলগুলি মুসলিমদের নিজেদের ব্যাপার বলে পাশ কাটাচ্ছে।
@বিপ্লব পাল,
আর এইসব মোল্লাগোষ্ঠিকে মৌনভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে কারা? সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সমর্থন ছাড়া আমার মনে হয়না মোল্লারা এইরকম একটা জঘন্য ফতোয়া দিতে সাহস পায়। বাংলাদেশের বেলায়ও একই কথা খাঁটে।
@বিপ্লব পাল,
বুদ্ধিদীপ্ত অবজারভেশন। ভাল লাগলো। ধন্যবাদ।
তথাস্তু এবং শিরোধার্য। নীতিমালাটা আমি জানতামনা। ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি উদ্ভব হওয়ার আগেই মুক্তমনা এ্যাডমিন-এর সাথে যোগাযোগ করে নেবো আশা করি।
জনাব আবিদ,
একই লেখা আপনি অন্য ব্লগেও দিয়েছেন। মুক্তমনা এ ব্যাপারে এখনো কঠোর না হলেও ভবিষ্যতে আপনার আছ থেকে মৌলিক লেখা আশা করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে আমাদের নীতিমালাদ্রষ্টব্যঃ