ঢাকা শিকাগো
পর্বঃ প্রথমার্ধ
মালিবাগ মোড়ের একটু আগে, ঠিক টুইন টাওয়াররের সামনে। ভাবুনতো কি হ’তে পারে? কি আর হবে? এই জায়গাটাতে একটা জিনিসইতো হওয়া সম্ভব। জ্যামের মধ্যে আটকা পড়ে রিক্সায় ব’সে থাকা। ব্যস্ত ঢাকা শহরের ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত মানুষগুলো ফুটপাতের ভীড় সরিয়ে যত দ্রুত সম্ভব ঘরে ফেরার চেষ্টা করছে। ঘর, ছোট্র ঘর; পানি নেই, গ্যাস নেই, বিদ্যুৎ নেই; তবু কিছু আছে, আছে ভালোবাসা; তার টানেই সব পাখি ঘরে ফিরে, সব মানুষ ঘরে ফিরে, জীবনের সব লেনদেন ফুরিয়ে দিয়ে, মিটিয়ে দিয়ে। সন্ধ্যার একটু আগে, দিনের আলো তখনো পুরোপুরি মিলিয়ে যায়নি। রাস্তার একপাশ থেকে উস্কোখুস্কো চেহারার কয়েকটা ছেলে থেমে থাকা বাসের সামনে দিয়ে রাস্তার অন্যপাশে যাচ্ছে। যেমন করে অন্য আর আট-দশটা মানুষ প্রতিনিয়ত ঢাকা শহরের রাস্তা পার হয়, তারাও তেমন করে পার হ’য়ে যাচ্ছে। আমার রিক্সার সামনে এসে একটা ছেলে পিছন ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে দেখলো। মুহূর্তের মধ্যে দুইটা ছেলে আমার ঠিক সামনের সিএনজি’র দুইপাশে উঠে গেলো। থেমে আছে সিএনজি। প্রকাশ্যে আরেকজন ধারালো ছুরি নিয়ে ড্রাইভারের পাশের দরজায় দাঁড়িয়ে থাকলো। সিএনজির ভিতর থেকে শুধু শুনতে পাচ্ছি, কেউ একজন ভয়ে কাতরাচ্ছে; আতঙ্কের এক তীব্র যাতনা যেন বের হয়ে আসছে মৃত্যুপথযাত্রী কোন মুমূর্ষু রোগীর ভিতর থেকে।
আমাকে যদি স্বাভাবিক সময়ে জিজ্ঞেস করা হ’তো, এমন পরিস্থিতিতে আমি কি করবো। আমি অবশ্যই বলতাম, যে-করেই হোক সাহায্য করবার চেষ্টা করবো, চিৎকার করে আশপাশের লোকজনকে জানাতে চেষ্টা করব। কিন্তু বাস্তবতা একদমই ভিন্ন। কেন জানি নিজেকে খুব অসহায় মনে হলো।ঘটনার আকস্মিকতায় নিজেও হতবাক হয়ে যাই। অস্ত্রের মুখে হয়তো কোন যুক্তিই কাজ করে না। বুঝতে পারি আমার ভিতরে ভয় কাজ করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে রিক্সা, বাস, সিএনজি সব কিছুই আগের মত করে চলতে শুরু করলো। কেউ জানতেও পারলো না, এই একটু সময়ের মাঝেই কত বড় এক অপরাধ হয়ে গেলো। হয়তো একটু পরেই সেই একই ছিনতাইকারীর দল, একই জায়গায় একই ঘটনা ঘটাবে, নয়তো একটু দূরে গিয়ে ঘটাবে। ঘটনার বেশ কিছুক্ষণ পরও আমি আমার ভেতরকার অস্বস্তি কাটিয়ে উঠতে পারিনি। অন্যদিকে, ভুক্তভোগীরতো আসল যন্ত্রণা শুরু হয় ঘটনার পর। ভুক্তভোগী ব্যাক্তি খুব ভালো করেই জানে, কিছুই করবার নেই। কোথাও থেকে কোনো সাহায্য পাবার আশা নেই। পুলিশি সহায়তা পাবার আশা করাটাতো হাস্যকর। তাই ব্যর্থতা আর অসহায়ত্ত্বের গ্লানি বুকে নিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষজন ফিরে যায় ঘরে, ঢাকা শহরের বুকে তাদের ছোট্ট বাসায়। পানি ছিল না, গ্যাস ছিল না, বিদ্যুৎ ছিল না; তবু কিছু ছিল, ছিল ভালোবাসা। এমন গ্লানি আর কষ্টকর সব অভিজ্ঞতায় তিক্ত হয়ে উঠে সে অবশিষ্ট ভালোবাসাটুকুও ।
১৫ই মার্চ, ২০১০, শিকাগো। বিকাল ৫টার ক্লাস করবার জন্য আমি বাসা থেকে বের হয়ে ইউনিভার্সিটি যাচ্ছি। ঢাকা শহরে সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে আমরা অন্ধকার রাস্তা হয়তো এড়িয়ে চলি, ছিনতাই এর ভয় থাকে বলে। কিন্তু গ্যাংস্টারদের জন্য বিশ্ববিখ্যাত বা কুখ্যাত অ্যামেরিকার শিকাগো শহর এখনো পুরোনো অভ্যাস থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। ক্রাইম অর্থাৎ অপরাধ সংঘটিত হবার জন্য এখানে দিন-রাত কিংবা আলো-অন্ধকার ব্যাপার নয়। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ তার ‘লালসালু’তে লিখেছিলেন, ‘শস্যের চেয়ে টুপি বেশি’। শিকাগো শহরে থাকলে হয়তো তিনি লিখতেন, ‘মানুষের চেয়ে পুলিশ বেশি’। আমেরিকার অন্য শহরগুলোর মত এখানেও বেশিরভাগ অপরাধের কেন্দ্রবিন্দুতে তথাকথিত ‘ব্ল্যাক’ মানুষগুলো। এখানকার বাঙ্গালিরা এখন আর এদেরকে ‘কালো’ কিংবা ‘ব্ল্যাক’ বলে না। কারণ তারা ইতিমধ্যে এই শব্দগুলো শিখে ফেলেছে। ব্ল্যাক এর বাংলা এখন ‘শ্যামল’। তাই যখন শুনবেন, ‘শ্যামলকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেলো’ –তখন চিন্তিত হবার কোন কারণ নেই। কারণ এই শ্যামল আপনার দেশের সহজ সরল ভদ্র ছেলেটি নয়, ব্ল্যাকদের মধ্যকার কোন এক গর্বিত মানুষ।
গর্বিত ব্ল্যাক বলবার কারণ আছে; কথিত আছে যে, এখানকার প্রতি চার জন ‘ব্ল্যাক’ এর মাঝে তিনজনই জীবনের কোন না কোন সময় কয়েদখানায় কাটিয়েছে। জীবনের কোন একটা সময় কয়েদখানায় না কাটালে সমাজে তাদের মাথা হেঁট হয়ে যায়; অনেকে ঠাট্টা করে বলেন, তারা বিয়ের জন্য পাত্রীও খুঁজে পায় না।কি-জানি, সবাই হয়তো ভাবে, ক্রাইম করতে না পারলে সংসার চালাবে কি করে? তবে যেহেতু একটা বিশেষ বর্ণের মানুষকে নিয়ে লিখছি -যদিও আমি লিখতে চাই বা না চাই এ-সত্য এড়ানো সম্ভব নয় -তাই এখানে আমি শ্রদ্ধার সাথে ব্ল্যাকদের মধ্যকার সে-সমস্ত মানুষের কথা স্মরণ করছি, যাদের কাছে সমস্ত মানবজাতিই ঋণী। বস্তুত গায়ের রঙের মাঝে কিংবা একটা বিশেষ গোত্র বা বর্ণ দিয়ে ভালো-খারাপ বিচার করা যায় না। কিন্তু আমি এখানে যা বলছি সেটা কেবলমাত্র পরিসংখ্যানের বিচারে।
আমার বাসার পাশের স্কুলের সামনে মহামান্যদের মধ্যকার তিনজন হাঁটাচলা করছে। পুলিশকে দেয়া আমার পরবর্তী বর্ণনা অনুযায়ীই আনুমানিক একজনের বয়স ২২, আরেকজনের ১৮ এবং অবিশ্বাস্যভাবে একজনের বয়স ১২। ১২ বছরের এক বালককে দেখে আমার ভাববার যথেষ্ট কারণ ছিলো যে, এই স্কুলছাত্রকে বাসায় নিয়ে যাবার জন্য তার অভিভাবকদের কেউই এখানে এসেছে। কিন্তু সেটা ছিলো একটা বিভ্রান্ত করবার কৌশল মাত্র। স্কুলছাত্র হলে শুধুমাত্র একজন স্কুলছাত্র থাকতো না। কিছুক্ষণ গলির মধ্যে হাঁটবার পরই, ১৮ বছরের ছেলেটি পিছন থেকে দৌড়ে এসে আমার সামনে। ক্ষণিকের জন্য আমার মনে হলো, কি ব্যাপার কানা-মাছি খেলা শুরু হয়ে গেলো না কি। কিছু বুঝে উঠবার আগেই তার ছোট্ট পিস্তলটি আমার সামনে ধরে কি সব যে বলতে শুরু করলো। এদের ভাষা কিছুটা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিশেষ কিছু এলাকার আঞ্চলিক ভাষার মত। ওদের মধ্যকার কেউ না হলে বুঝাটা কষ্টকর। কিন্তু তাতে কি, বিশ্বজুড়ে অস্ত্রের ভাষাতো একটাই।
প্রথমে পিস্তলের দিকে তাকিয়ে দেখে নিলাম খেলনা কি-না, বাংলা সিনেমায় অনেক সময় দেখেছি পিস্তলের ট্রিগার চাপ দিলে লাইটারের কাজ করছে, আর মহানায়ক সেটা দিয়ে সিগারেট ধরাচ্ছে। ইদানিংতো আবার দেখি পিস্তলের ট্রিগার চাপলো, আর সাথে সাথে বের হয়ে আসলো ‘কাঁটা… লাগা…’, এমপিথ্রি প্লেয়ার। কিন্তু সেটা হবার কোন কারণ নেই, এখানে অনলাইনে পিস্তলের বিজ্ঞাপণ দেখেছি, মাত্র ২৫ ডলার। অতএব চালাকি করবার চিন্তা করাটাই বোকামি। খুব দ্রুত চিন্তা করে বের করার চেষ্টা করলাম, এমন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ কি করণীয় হতে পারে। চিন্তা ভাবনা করে বীরপুরুষের মত তাকে বললাম, ‘সবকিছু দিয়ে দিচ্ছি, একেবারেই কোন সমস্যা নেই, শুধু আমার আইডি গুলো নেবার দরকার নেই।’ বারবার বললাম, ‘তোমার কোন সমস্যাই নেই, আমি কোন ধরণের সমস্যাই সৃষ্টি করবো না’। আসলে সত্যিকারের অনুবাদ করলে কোনভাবেই বাক্যটা ‘তোমার কোন সমস্যাই নেই’ হবে না, বাক্যটা হবে ‘মহারাজ, আপনার কোন সমস্যাই নেই, সব নিয়ে যান, চাইলে আমি আপনার বাসায়ও দিয়ে আসতে পারি।’ অত্যন্ত উচ্চবংশীয় এবং কাণ্ডজ্ঞানসম্পন্ন এই মহান ছিনতাইকারী আমার মানিব্যাগ থেকে খুঁজে শুধু ৩৭ ডলার নিয়ে নিলো। সে পকেটে খুঁজে দেখবার আগেই আমি কিন্ডার গার্টেনের বালকের মত আমার নিজের মোবাইল সেট খানা হুজুরের নিকট সমর্পণ করলাম। মনে পড়ে গেল, আমার পরিচত এক বড়ভাইকে উস্কো খুস্কো চেহারার এক যুবক গ্রিন রোডের ফুটপাথে জিজ্ঞেস করেছিলো, “ভাই, কয়টা বাজে?” সেই বুদ্ধিমান বড়ভাই কথা না বাড়িয়ে, কালক্ষেপণ না করে, নিজ হাতে ঘড়ি খুলে সেই যুবকের হাতে তুলে দিয়ে বলল, ‘ধরেন নিয়ে যান’। সেই যুবক কিছুই বুঝতে না পেরে শুধু বোকার মত তাকিয়ে থেকেছিলো। কারণটা কিছুই নয়; এই বড়ভাই আরো বেশ কয়েকবার ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলো যার প্রতিটা ঘটনার শুরুই, ‘ভাই কয়টা বাজে’ দিয়ে।
বড়জোর ১৮বছরের বালক এমনসব করছে, আমার কিছুটা হাসিই পেল। সে আমার সবগুলো পকেট, আমার ব্যাগের ভিতরে সব কিছু খুঁজে দেখলো। বাকী দু’জন সামনেই আসলো না। পুরো ঘটনার পর, তিনজন মহান ছিনতাইকারী বীরের মত হেঁটে চলে যাচ্ছিলো। যাওয়ার সময় আমি শুধু বললাম, ‘সেল ফোনটা তোমাদের কোন কাজে আসবে না, সেটা কি দিয়ে দেয়া যায়’। বিনিময়ে তারা ‘এফ’ দিয়ে শুরু বিখ্যাত সেই চার অক্ষরের ইংরেজী শব্দটা দিয়ে হরেক রকমের বাক্য রচনা করে আমাকে উপহার দিতে লাগল। তারা যাচ্ছে আমি পিছন থেকে তাকিয়ে আছি, কিছুক্ষণ পর দেখলাম ১২ বছরের বালক শুধু পিছনে ফিরে তাকালো, কি ছিলো তার মনে? কি সে ভাবলো? শৈশব পার হতে না হতেই তার ক্রাইমের সাথে জড়িয়ে পড়া। অপরদিকে এই তিনজন জানতেও পারলো না, ঘটনার পর-পরই অনাবিল আনন্দে আমার মন ভরে গেলো। কারণ প্রতিদিন আমার ব্যাগে ল্যাপটপ থাকলেও সেদিন বাসা থেকে বের হবার সময় নিব নিব করেও ব্যাগে করে ল্যাপটপটা নেওয়া হয়নি। দ্বিতীয়ত, ব্যাগের ভিতরে থাকা ছোট পকেটে সনি ডিজিটাল ক্যামেরা সমস্ত ব্যাগ খুঁজেও মহান অন্ধ ছিনতাইকারী পায় নি। অবধারিতভাবেই পরবর্তী পদক্ষেপই হচ্ছে ৯১১-এ কল করা, পুলিশি সাহায্য চাওয়া, যেটা বাংলাদেশে নেই।
আমি হিসেব করে দেখলাম সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ কি করে আরো কমানো যায়। পুলিশকে ডাকা মানে আমার ক্লাসটা মিস্। ক্লাস মিস্ করা কোন ঘটনা না, বরং আমার অন্যতম প্রিয় শখগুলোর মধ্যে একটি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আমি ৬০% সময় ক্লাস করে নষ্ট করেছি। এ ভুল যত পারা যায় কম করা উচিৎ। ক্লাসটা আবার আমার পিএইচডি তত্ত্বাবধায়কের। যেই প্রফেসরের তত্ত্বাবধানে আমি পিএইচডি করবার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছি। তিনি নিজে পিএইচডি সম্পন্ন করেন আমার জন্মেরও দশ বছর আগে। জোর সম্ভাবনা আছে আমার পিএইচডি সম্পন্ন হবার আগেই তিনি ইহলোক ত্যাগ করবেন। এখানকার একদল সিনিয়র ঠাট্টা করে বলেন, আমার নাকি পিএইচডি’র একটা ইন্স্যুরেন্স করিয়ে রাখা উচিৎ, কখন তিনি নাই হয়ে যান। কিন্তু অন্যদল আবার মনে করেন যেহেতু চাইনিজ লোকজনের কই মাছের প্রাণ সেহেতু বরং সম্ভাবনা আছে তাঁর আগে আমার ইহলোক ত্যাগ করবার। কে কখন ইহলোক ত্যাগ করি, সেই আশংকায় আমার ক্লাসটা মিস্ করতে ইচ্ছে হলো না।
ভদ্রলোক প্রফেসর ক্লাসে এসে বোর্ডের এপাশ থেকে ওপাশে লিখতে শুরু করেন; আমাদের কাজ হচ্ছে সেগুলো খাতায় তুলে খাতা ভরিয়ে ফেলা। ক্লাস শেষ করে আমার ভিয়েতনামী বন্ধু ‘অ্যান হুই বুই’, এর কাছ থেকে সেল ফোনটা নিলাম। তারপর ৯১১ কল করে ঘটনার হালকা বর্ণনা আর নিজের অবস্থান জানানো। ক্ষণিকেই দেখি, বিকালের শান্ত-সৌম্য পরিবেশটা নস্যাৎ করে দিয়ে, লাল-নীল বাতির নাচন তুলে, আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে, চতুর্দিকের সব রাস্তার সমস্ত গাড়ী দাঁড় করিয়ে দিয়ে, তারা আসছে …আসছে সমস্ত অ্যামেরিকার বিখ্যাত ‘শিকাগো পুলিশ’।
(চলবে…)
April 09, 2010
সুন্দর লেখা, আমাদের এখানে (ফিনল্যান্ডে) এইরকম ঘটনা চিন্তাও করা যায় না।
পাথর ভাই এর তো দেখি জব্বর অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে। আদার সাইড অফ আমেরিকা। অনভিজ্ঞ হিসেবে দারুন হ্যান্ডল করেছেন বলতেই হবে। আমার এতদিনের বিদেশ বাসের অভিজ্ঞতায় এটা এখনো হয়নি। চলাফেরাও গাড়িতে। আমেরিকার কোন মেগা সিটিতে থাকিনি বলেই হয়ত। তবে নিউইয়র্কে/ডেট্রয়েটের লোকদের কাছে এগুলি ডাল ভাত। নিউইয়র্কের কাউলারা নাকি আবার বেজায় রসিক। তারা মাঝে মাঝে ছিনতাঈ ছাড়াও আমাদের মতন ভেতো বাংগালদের জুতমত পেলে আদর করে কিছু চড় থাপ্পড় দেয়। কে জানে, হয়ত অভ্যাস বজায় রাখে, উদ্দেশ্য তো খারাপ কিছু না।
তবে সবকিছুর পজ়িটিভ দিকও আছে। কাউলা বাহিনীর সাথে ভাব সাব রাখলে নাকি শস্তায় দারুন দাও মারা যায়। ধরেন, সনির হাজার ডলারের ক্যামকর্ডার ২০০ ডলারে পেয়ে গেলেন! মন্দ কি? শুনেছি কাষ্টম অর্ডার ও দিতে পারেন। মানে কোন ব্রান্ডের জিনিস, মডেল এসবও বলে দিলেন আগে থেকেই, তারপর সে অনুযায়ী ন্যায্যমূল্যে জিনিস পেয়ে যাবেন। শিপিং এন্ড হ্যান্ডলিং এ একটু সময় লাগতে পারে এই যা।
@আদিল মাহমুদ,
পাথর ভাই, নামটা খুব পরিচিত মনে হইতাছে………
@আতিক রাঢ়ী,
পাথর ভাই এর রহস্য জানেন না? আরে এইটা তো এই ভদ্রলোকের আগের ছদ্মনাম ছিল।
জানি না মনে আছে কিনা, ৯১ এর দিকে একবার ইত্যাদীতে হানিফ সংকেত পাথর শাহ নামক একজন অলৌকিক ক্ষমতাধর ব্যাক্তির পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। যিনি পাথর আর চা ছাড়া আর কিছুই খেতেন না। কোমরের কোচড়ে কুচি কুচি পাথর থাকত, ক্ষিদে পেলে বা কেউ অনুরোধ করলেই টুপটুপ করে গিলে খেতেন। নিজের চোখে দেখা।
@আদিল মাহমুদ,
ঐযে পেটে বাড়ি দিলে ঝনঝন শব্দ হতো ? উনিতো খুব কামেল আদমি ছিলেন। দেশছাড়ার সাথে সাথে দুবাইতে গিয়ে যেদিন থেকে আস্ত বকরি খাওয়া শুরু করলেন, সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম উনার কারামত আর বেশিদিন নাই।
@আতিক রাঢ়ী,
পরশপাথর নামে লিখতাম। পরে মুক্তমনার পুলিশ ফরিদ ভাইয়ের কাছে সব কিছু স্বীকার করে এখন আসল নামে লিখছি।
@মইনুল রাজু,
আকিকার খানাটা পাওনা থাকলো।
@আদিল মাহমুদ,
🙂 ভালো বুদ্ধি দিয়েছেন। দেখি ওদের সাথে ভাব জমাতে হবে।
ওরা যাতে রসিকতা করতে না পারে সে-জন্য সবসময় মানিব্যাগে কিছু ডলার ওদের জন্য আলাদা করে রেখে দেই। তারপরও যদি ওরা রসিকতা করবার লোভ সামলাতে না পারে, তাহলেতো আর কিছু করবার নাই।
ভালো থাকুন।
@মইনুল রাজু,
পারলে কাউলা এক্সেন্ট রপ্ত করেন। কামো ম্যান (Come on man) এই জাতীয়।
আমার এক বন্ধু একবার আটলান্টায় ৪ মাস গ্যাস ষ্টেশনে কাজ করার সময় স্থানীয় কাউলাদের সাথে ভাল ভাব হয়েছিল। সে তখনো টের পায় নাই এরা কি চীজ। একবার এক কাউলা এসে তাকে সে সময়ের হাই ফাই একটা ল্যাপ টপ দেখায়, কিনা নাকি? দাম মোটে ৩০০ ডলার, বাজার দাম যেখানে তখন দশগুনের বেশী।
বন্ধু স্বভাবতই বেশ খুশী। জিজ্ঞাসা করে ওয়ারেন্টি ইনফো কেমন? কাউলা চুপ। এরপর সে আরেকটু ঘাটাঘাটি করে দেখে এমেরিকান এয়ারলাইন্সের সিল মারা নীচে।
@আদিল মাহমুদ,
ওদের এক্সেন্ট রপ্ত করতে পারলেতো আমি এখানকার সিনেটর-ই হয়ে যেতাম। এদের স্বভাব অদ্ভুত রকমের অস্বাভাবিক। কেনও যে বাচ্চা ছেলেগুলোও পারলে হাঁটুর কাছে বেল্ট লাগিয়ে জিন্স পরতে চায়, সেটাই আমি এখনো বুঝে উঠতে পারছি না। একটা এলাকা ধ্বংস হবার জন্য এরকম একটা গোষ্ঠি থাকলেই যথেষ্ট।
কিছুদিন আগে দেখলাম রাস্তার মধ্যে টানা-হেঁচড়া করে একটা মেয়ের কাছ থেকে ল্যাপটপ ছিনিয়ে নিল, তবে সেখানে কালোদের সাথে হোয়াইট একটা ছেলেও ছিল। তারপর গাড়িতে করে পালালো। মূলতঃ ইউএসএর ইকনোমি এখন আপত্তিকর রকমের খারাপ। দিন দিন ক্রাইম বেড়েই চলছে।
@মইনুল রাজু,
এইসব কিচ্ছা শুধুই শুনলাম, কয়দিন আগে এসে আপনিও কত কি দেখে ফেললেন, আমি এতদিন থেকেও কিছুই দেখলাম না! দূঃখ করছি ভাববেন না যেন আবার।
এল কাপনের শহরে থাকেন, সে হিসেবে তো কিছুই দেখেননি। আরো ৮০ বছর আগে এলে টেরটি পেতেন শিকাগো কাহাকে বলে 🙂 ।
খারাপ অর্থনীতিতে ক্রাইম অবশ্যই বেড়েছে, তবে অর্থনীতির স্বর্ণযুগেও এসব অপরাধের কোনই কমতি আমেরিকায় কোনদিন ছিল না।
আপনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন নাকি? আমি ভেবেছিলাম আন্ডারগ্র্যাডের জন্য ওখানে এপ্লাই করব, এখন মনে হচ্ছে অন্য রাস্তা মাপতে হবে :-/
@পৃথিবী,
আমি ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় অ্যাট শিকাগোতে (www.uic.edu)।
নির্দিষ্ট করে অপরাধ নিয়ে লিখছি, তাই আপনার কাছে এরকম মনে হচ্ছে। সব জায়গাতেই কিছু না কিছু অপরাধ হয়ে থাকে। পরিস্থিতি আসলে অতটা খারাপ নয়।
তাছাড়া, শিকাগো পুলিশের কাহিনীতো এখনো জানলেনই না। পরবর্তী পর্বে পাবেন।
রাজু,
কিন্তু বাংলাদেশে আসতো আরেকদল সন্ত্রাসী। পার্থক্যটা এখানেই।
দুই শহরের তুলনামূলক ঘটনা পড়ে ভাল লাগলো।
আরও নয়টি লেখা পড়ার আশায় রইলাম।
রাজু তো আবার সবই দশ পর্বের লিখে।
@গীতা দাস,
গীতা’দি,
আমি সাধারণত খুব কম লিখতে বসি। তাই কখনো লিখলে পর্ব করে লিখতে চেষ্টা করি। তাতে করে মনে হয়, একটা কাজ বাকী আছে, সেটা শেষ করতে হবে। কিছুটা রেগুলার হওয়া যায়।
কিন্তু হঠাৎ করে মনে হলো, আমিতো নিজের সাথে চালাকি করছি, এত পর্ব করাও ঠিক না। ইচ্ছে করলেও যেন আর লিখতে না পারি, তাই এবার আগে থেকেই পর্বের নাম দিলাম ‘প্রথমার্ধ’। অতএব, আর একটা পর্ব লিখে ফেললেই আমার দায়িত্ব শেষ। 🙂
১৩ই মে বাংলাদেশে যাচ্ছি, তিন মাসের জন্য। ভাবছি ‘পশ্চিম থেকে পূর্ব’ নামের কিছু লিখে আবার সবাইকে অত্যাচার করা শুরু করবো না কি। 🙂
ভালো থাকবেন।
@মইনুল রাজু,
লেখাটা ভালো লাগল.
তবে এসব অবস্থায় কেউ যেন না পরে।
ইউরোপে এরকম অতো ভাবা যায়না।
ঢাকায় খুব বেশিদিন থাকিনি।
তাই ওসব অভিজ্ঞতা নেই।
এরপর ওদের দেখলে উল্টো রাস্তা দিয়ে সোজা দৌড় দেবেন।
একবার এক ড্রাগিস্টের পাল্লায় পরেছিলাম।
সোজা দৌড় লাগিয়েছি।
ভাল থাকুন।
@লাইজু নাহার,
উল্টো রাস্তায়ওতো তারা, ওদের ছেড়ে পালানোর উপায় নেই। 🙂
ইউরোপের কোথায় থাকেন? ঢাকায় বেশিদিন থাকেন নি কেন?
আমাকে দেখেন, প্রতিদিন সবাই বলছে, বিদ্যুৎ নেই, গরমে সবাই মারা যাচ্ছে, তারপরও আমি পুরো সামার’টা ঢাকায় কাটাতে ছুটে যাচ্ছি। বেঁচে থাকলেই হয়।
ভালো থাকুন।
@মইনুল রাজু,
আপনিও দ্যাশে আইসা নাই নাইই করবেন। দেশের কান্ডকারবার দেইখা এই দেশের কিছুই হইবোনা কয়া কপাল চাপড়াইবেন!! কিন্তু পরে আবার সময় মত চান্স পাইলেই এই পোড়া দেশে আসার জন্যই দৌড় দিবেন!!
এই অংশটা পড়ে চেয়ার থেকে পইড়া যাবার দশা হইতে লাগসিল!! :hahahee:
@তানভী,
আমিতো মাত্র কয়দিন হলো দেশ ছেড়ে আসলাম। দেশে কি আছে কি নেই সবই জানি। সময়ের সাথে সাথে নিজের কি বা কতটুকু পরিবর্তন হয় জানি না। কিন্তু এখন অন্তত এইটুকু বলতে পারি, যত কষ্টেই থাকি না কেন নিজের দেশের থেকে বড় সুখের জায়গা আর কোথাও নেই।
@মইনুল রাজু,
নেদারল্যান্ডে থাকি।
উত্তরবঙ্গে বড় হওয়া ওখানেই পড়াশোনা তাই।
আশা করি ঢাকায় ভাল কাটবে!
@মইনুল রাজু,
মোটেই এরা নিরীহ না, আমার একবার নারায়ণগঞ্জ যাবার পথে ,এমন একি বয়সি ছেলে গাড়ীর কাঁচের ভেতরে (অল্প খোলা ছিল) হাত ঢুকিয়ে আমার ২ টা সোনার চেইন নেবার চেষ্টা করে।আমি হাত চেপে ধরায়, এক দৌড়ে পালিয়ে যায় , এদের বিরাট চক্র থাকে । ছেলেটাকে ধরা গেলেও চেইন পেতাম না ।
সুন্দর বিষয় নিয়ে লিখেছেন ।
@আফরোজা আলম,
ঠিকই বলেছেন, এদের চক্র অনেক বড়। আর চেইন যে পেতেন না সেটাও নিশ্চিত, চোখের পলকে হাওয়া করে দেবে।
অনেক ধন্যবাদ।