জাপানের অধিকাংশ লোকেই ধর্মের ধার ধারে না, নাৎসুমির পরিবারও তাই। ‘সেন্টার ফর জাপানিজ ল্যাঙ্গুয়েজ এন্ড কালচার’এর সব বিদেশি ছাত্রদেরকে পড়াশুনায় টুকটাক সাহায্য করার জন্য ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন করে জাপানি ছাত্র ঠিক করে দেওয়া হয়, এদেরকে ডাকা হয় টিউটর বলে। আমার টিউটর ছিল নাৎসুমি। দেশে টিউটর শব্দটার মাঝে কেমন যেন একটা শিক্ষক-শিক্ষক ভাব চলে আসে। গৃহশিক্ষকরা বয়সে হয়তো তেমন বড় না হলেও, ‘ভাইয়া’ বা ‘আপু’ না ডেকে ‘স্যার’ বলে ডাকার প্রচলনই বেশি। জাপানে টিউটর শব্দটার ভাবার্থ আলাদা। সমবয়সী হওয়ায় নাৎসুমির সাথে আমার আলাপচারিতাগুলো হত বন্ধুত্বের পর্যায়েই। ওর মাঝে একটা বাচ্চাবাচ্চা ভাব ছিল। পরে অবশ্য বুঝতে পেরেছিলাম, বেশিরভাগ জাপানি মেয়েরাই এরকম।
নাৎসুমি ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছে নিধার্মিক পরিবেশে, এখন সে একজন প্রোটেস্ট্যান্ট খৃস্টান। কেন খৃস্টান হল, জিজ্ঞেস করেছিলাম একদিন। আমার দুর্বল জাপানিজ দিয়ে যা বুঝেছিলাম তা হল, সে তার কিছু খৃস্টান বন্ধুবান্ধবের সাথে এমনিতেই কয়েকদিন চার্চে যাওয়া-আসা করেছিল। সেখান থেকে খৃস্টানিটি সম্পর্কে জানতে পারে সে। ঈশ্বরের অস্তিত্বের কথা আগে শুনে থাকলেও, অশরীরী অস্তিত্বের মতোই এটা তার কাছে ছিল ভয়ের ব্যাপার। চার্চে গিয়ে সে জানতে পারে, ঈশ্বর ভীতিকর কেউ নন, বরং তিনি নাৎসুমিকে ভালবাসেন। ঈশ্বরের ভালবাসার বাণী ভাল লাগে নাৎসুমির। ওর ব্যাপ্টাইজেশন হয়েছে, এক বছর হয়ে গেল।
এক বিকেলের আলাপচারিতায় প্রসঙ্গক্রমে ধর্মের ব্যাপারটা চলে এল। নাৎসুমিকে জিজ্ঞেস করলাম, প্রোটেস্ট্যান্ট আর ক্যাথলিকদের পার্থক্য কি? বলল, ‘প্রোটেস্ট্যান্ট চার্চের বিশপরা বিয়ে করতে পারে, ক্যাথলিক চার্চের বিশপের বিয়ে করা নিষেধ। আরো কি কি জানি আছে? আমি অত ভাল জানি না।’ আমি একটু অবাক হলাম, বিশপদের বিয়ের অধিকারের জন্যই কি প্রোটেস্ট্যান্টরা প্রোটেস্ট করেছিল! বললাম, ‘কেউ বিয়ে করতে চায় কি না চায়, সেটা তো তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু বিয়ে করার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও বাধা দেওয়াটা কি মানুষের সামাজিক অধিকারের লঙ্ঘন নয়?’ ‘ঠিক’, বলল ও, ‘নিয়মটা একটু আজব।’ ভাবছিলাম, শুধু খৃস্টধর্ম নয়, অন্যান্য ধর্মেও তো শ্রেণিভেদ কম নয় – যেমন ইসলাম ধর্মে শিয়া, সুন্নি। এদের থেকে সৃষ্টি হয়েছে আরো কিছু গোত্র, উপগোত্র। ভি. এস. নাইপলের ‘অ্যামোং দ্য বিলিভার্স’ বইটাতে পড়েছিলাম, ইরানি শিয়াদের মধ্য থেকে উৎপন্ন হয়েছিল বাহা’ই গোত্র। এদিকে ভারতবর্ষে সুন্নিদের একদল হয়ে গেল আহম্মদী বা ক্বাদিয়ানী; পাকিস্তানে আবার জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে আইন করে এদেরকে অমুসলিম ঘোষণা করেছিলেন। এছাড়াও চার মাযহাবের ব্যাপারটাওতো বেশ গোলমেলে। হাইস্কুলে পড়ার সময় ধর্মশিক্ষার এক শিক্ষককে জিজ্ঞেস করেছিলাম; বলেছিলেন, চার মাযহাবই নাকি সঠিক। একই সাথে কীভাবে বামে এবং ডানে যাওয়া যায়, সেটা বোধগম্য হয়ে ওঠে নি।
নাৎসুমিকে বললাম, ‘তুমি তো প্রোটেস্ট্যান্ট। সে হিসেবে ক্যাথলিকদের মতবাদকে কি ভুল মনে কর না?’ সে বলল, ‘সব মানুষ তো আর একরকম না, তাই তাদের চিন্তাচেতনাও এক হবে না। ক্যাথলিকরাও বাইবেল পড়ে। বাইবেল পড়ে ঈশ্বরের বাণীকে ওরা যেভাবে বুঝেছে, সেভাবে চলছে। ওদের বোঝাটাকেও তো আমরা সরাসরি ভুল বলে দিতে পারি না।’
‘তাহলে বলছ, ক্যাথলিকরা প্রোটেস্ট্যান্টদের থেকে আলাদা হলেও দুইদলেরই স্বর্গপ্রাপ্তিতে কোন বাধা নেই?’
‘মনে হয় না।’, নাৎসুমির কণ্ঠে দ্বিধা বাজে, লুকানো।
আমি বলে চলি, ‘কিন্তু, একজন মানুষের বিয়ে করা উচিত না অনুচিত, সে বিষয়ে মতভেদ তৈরি হয় কীভাবে? বাইবেলে যদি এবিষয়ে কোথাও বলা হয়ে থাকে, তাহলে তো সেটা সোজা ভাষাতেই, হয় ‘বিয়ে কর’ নয় ‘বিয়ে কর না’, এভাবে বলা হয়ে থাকার কথা, ঠিক না? সেখান থেকে তো আর ভিন্নমত সৃষ্টির অবকাশ থাকে না।’
নাৎসুমি বলল, বাইবেলে কোথাও এবিষয়ে লেখা আছে কিনা, সে জানে না। ‘আরেকটা ব্যাপার’, আমি বলতে লাগলাম, ‘তোমার কথামত ধরে নিলাম, মানুষের চিন্তাচেতনা যেহেতু এক নয়, তাই, কেউ বাইবেল পড়ে প্রচলিত ধারণার থেকে অন্য কিছু বুঝে থাকলেও, তাকে ঠিক বলেই ধরে নেয়া যায়। খৃস্টানদের মাঝেই একটা ভাগ আছে, যাদের বলে ইউনিটারিয়ান বা সোসিনিয়ান। তারা তোমাদের কিংবা ক্যাথলিকদের মত ট্রিনিট্রিতে নয়, বরং ঈশ্বরের একটিমাত্র রূপে বিশ্বাস করে। অথচ তারাও কিন্তু বাইবেল পড়ে এবং নিজেদের খৃস্টান বলে দাবি করে। আবার মুসলিমদের দাবিও কিন্তু প্রায় একই, তারাও জেসাসের ঈশ্বরেই বিশ্বাসী, জেসাসকে মনে করে ঈশ্বরের বার্তাবাহক। তোমার কি মনে হয়, ইউনিটারিয়ান এবং মুসলিমদেরও স্বর্গে যাওয়ার সুযোগ আছে?’
নাৎসুমি একটু থামে। তারপর বলে, ‘যেতে পারে, এ ব্যাপারে আমার তেমন ধারণা নেই। তবে মুসলিমরা তো বাইবেল মানে না।’
‘হ্যাঁ, তা ঠিক। কিন্তু তারা কিন্তু বলে না, বাইবেল পুরোটাই মিথ্যে। বরং এটা বলে যে, বাইবেল বিভিন্নজনের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় তা আর ঈশ্বরের বাণীরূপে মেনে চলার যোগ্য নয়। তারা তাদের নিজেদের ধর্মগ্রন্থ কোরানকে ঈশ্বরের অবিকৃত বাণী বলে মনে করে এবং সেকারণে তা মেনে চলে।’
‘বাইবেল যদি কারো মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়েই থাকে, তাহলে কোরানও যে পরিবর্তিত হয় নি, তার নিশ্চয়তা কি?’, প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় নাৎসুমি।
বললাম, ‘তা ঠিক। আমি কিন্তু এটা বলতে চাচ্ছি না যে, মুসলিমদের মতবাদটাই সঠিক। আমি শুধু তোমার কথার প্রেক্ষিতে জিজ্ঞেস করলাম মাত্র। জেসাস যে ঈশ্বরের কথা বলে গেছেন, মুসলিমেরা সেই একই ঈশ্বরে বিশ্বাস করে, একই ঈশ্বরের কৃপার আশায় প্রার্থনা করে। পার্থক্য যা আছে, তা তোমার ওই দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্যের সীমারেখাতেই পড়ে যায়। তারা তাদের নিজেদের মত করে তোমার ঈশ্বরকেই তো খুঁজে পেয়েছে, তাও কি তারা ঈশ্বরের অনুগ্রহ থেকে বঞ্চিত হবে?’
‘কি জানি? আমি ওই পর্যন্ত বলতে পারি না।’, অসহায় শোনায় ওকে।
‘ঠিক আছে। আরেকটা ব্যাপার, বাইবেল যে সম্পূর্ণ নির্ভুল তা কি তুমি দাবি করতে পার?’, ধর্মের সাথে বিজ্ঞানের সংঘাতে নাৎসুমি কী বলে, জানতে চাচ্ছিলাম আমি।
‘কেন? তোমার কি মনে হয়, কোথাও সমস্যা আছে?’ এবারে একটু বিরক্ত হয়ে ওঠে সে। ‘তুমি কি এটা জানো যে, বাইবেলের কথানুযায়ী, পৃথিবী এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বয়স ছয় হাজার বছরের কাছাকাছি?’, জিজ্ঞেস করলাম আমি। অবাক হয় নাৎসুমি, ‘এটা বাইবেলে তুমি কোথায় পেলে?’ । আধুনিক বিজ্ঞানের মতে পৃথিবীর বয়স কত হতে পারে, সে ব্যাপারে ওর ধারণা কাছাকাছিই ছিল; এর আগে আরেকদিনের কথাবার্তায় বুঝেছিলাম আমি। বললাম, ‘বাইবেলে সরাসরি একথা লেখা নেই। কিন্তু বাইবেল গবেষকরাই এতে বর্ণিত পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে বিভিন্ন ঘটনাবলির ক্রমধারা আর ঘটনকাল হিসেব করে এতথ্য বের করেছে।’
‘হয়তো ওইসব ঘটনাগুলোর মাঝে অনেক সময়ের ফাঁক ছিল, যেগুলো হিসেবে আনা হয় নি।’ ওর কণ্ঠস্বরে বেজে ওঠা রক্ষণাত্মক সুরটি অপরিচিত লাগল না।
‘হতে পারে। আমি তো আর নিজে গবেষণা করে দেখি নি। তবে অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তির রেফারেন্সেই এতথ্যটা পেয়েছিলাম। উইকিপিডিয়াতে খুঁজে দেখলাম। ওরাও তো মোটামুটি একই কথা বলল। তাই ঠিক বলেই ধরে নিয়েছি। যাকগে, তুমি তো বিবর্তন সম্পর্কে জান।’ এর আগে মানবজিন, বিবর্তন নিয়েও একদিন কথা হয়েছিল ওর সাথে। বললাম, ‘বিবর্তন তো ঈশ্বর কর্তৃক মানুষ সৃষ্টির তত্ত্ব একেবারে বাতিল করে দেয়।’
‘কিন্তু, বিবর্তন তো কোন একজন মানুষেরই মতামত, তাই না?’ একটু বিদ্রূপের রেখা যেন ফুটে ওঠে ওর ঠোঁটে।
আমি বললাম, ‘তুমি এভাবে বলতে পার না। তুমি যদি ঈশ্বর সম্পর্কে বলতে চাও, অনেক কথাই বলতে পারবে, কিন্তু প্রমাণ কি একটাও দেখাতে পারবে? বিজ্ঞান সেরকম নয়, বিজ্ঞান যা বলে তা প্রমাণসহকারেই বলে। বিবর্তনও কিন্তু তার ব্যতিক্রম নয়। প্রমাণ আছে বলেই, বিবর্তন একটি প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব।’
‘তাহলে তুমি বিবর্তন বিশ্বাস কর?’ পালটা প্রশ্ন করলো ও।
উত্তরে বলি, ‘উহু, আমি বিবর্তন বিশ্বাস করি না, আমি বিবর্তন জানি।’ কথাটার শেষ শব্দগুলোয় জোর দিতে গিয়ে অজান্তেই মনে হয় আমার চেহারায় কিছু পরিবর্তন এসে গিয়েছিল। সে পিছু হেলে গিয়ে একেবারে হো করে ওঠল। বলল, ‘তোমার চাহনিটা যা ছিল না …’। কথায় অকারণ নাটকীয়তা এসে যাওয়ায় আমি একটু লজ্জা পেয়ে গেলাম।
শেষ করে ওঠার সময় বলছিলাম, ‘আমার কিছু কিছু কথা হয়তো তোমার খারাপ লাগতে পারে, তার জন্য দুঃখিত।’
‘কয়েক জায়গায় অবশ্য খারাপ লেগেছিল। তবে মানুষ হিসেবে তোমার তো ভিন্ন মতামত থাকতেই পারে। তাই কিছু মনে করিনি’, বলল সে।
‘আমি শুধু এটাই বোঝাতে চাচ্ছিলাম যে, যা কিছু সঠিক বলে ধারণা করছ, তা ঠিকমতো ভেবেচিন্তেই করছ কিনা?’, বললাম আমি। নাৎসুমির উত্তর ছিল, ‘সে ব্যাপারে তোমার চিন্তা করতে হবে না। আমি তো বোকা নই।’
আরে ভাই নৎসুমি উচ্চারন করা কঠিন। তাই না?
এটাকে শুধো সুমি বললে আমাদের সহজ হত ।
হা হা হা …….
একটু বাঙ্গালী গন্ধ থাকতো।
@আসরাফ, ভাল বলেছেন। 😛
জাপানে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের ইতিহাস বেশ নতুন হওয়ায় ওদের সংস্কৃতি আর দশটা দেশের থেকে অনেকাংশেই ভিন্ন। আমি জাপানের animation(ওরা যাকে বলে anime) শিল্পের ভক্ত, তাই ওদের সংস্কৃতি সম্পর্কে হালকা ধারণা আছে। একটা জিনিস দেখেছি- ওরা যৌনতার ব্যাপারে খুবই উদার, আমেরিকানরাও ওদের এই ঔদাসীন্য দেখে রীতিমত ভয় পেয়ে যায়! সমকামীতা ওদেরকে মোটেই বিচলিত করে না। তবে ধর্ম থেকে মুক্ত হলেও ওদের দেশে লৈঙ্গিক রাজনীতি ধার্মিক দেশগুলার মতই প্রকট(anime দেখে এই ধারণাই পেয়েছি), ওরা জেন্ডার রোল নিয়ে বেশ কিছু গৎবাঁধা ধারণা পোষণ করে। Anime গুলোতে নারী চরিত্রগুলোকে সবসময় শিশুসুলভ ও দুর্বল হিসেবে দেখানো হয়, চরিত্রগুলোর আচার-আচরণ দেখলে অনেকটা ফ্রয়েডের শিশ্নাসূয়াগ্রস্ত নারীর কথা মনে পড়ে যায়।
ওদের এনিমেশন শিল্প দিয়ে ওদের সংস্কৃতি বিচার করা অবশ্য বুদ্ধিমানের কাজ না, তবে এই শিল্পটা একদিক দিয়ে ওদের সংস্কৃতিরই প্রতিনিধিত্ব করে।
জাপান যাইতে মঞ্চায়, কিন্তু নতুন ভাষা শিখতে ইচ্ছে করে না। তার উপর আমি আবার মৌলবাদী মাংসাশী, মাছ-সবজী একদম সহ্য করতে পারি না!
@পৃথিবী,
ওই বেয়াদ্দপ!! তুই ফ্রয়েডও পড়ছস!!! আবার এনিম ও দেখস!!! :-X :guli:
পরীক্ষাটা শেষ কইরা তারপর ফাল পার!!
যদি বুয়েটে পড়স তুই, তোরে যদি একবার পাইসি!! র্যগ কাহাকে বলে, কত প্রকার (আমি নিজেও এখনো জানি না) সব শিখায়ে দিব! বাংলাদেশের যেই ভার্সিটিতেই যা, আমার হাত থেকে পার পাইবি না!! সব জায়গায় আমার পরিচিত পুলাপান আছে!
আর বিদেশ গেলেতো বাইচ্চাই গেলি! :-Y (নাহ ওই খানেও ব্যবস্থা করা যাইবো!)
(সিরিয়াসলি নিও না!! বুয়েটে আসলে ইকটু ইশপিশাল চা নাস্তা করাবো, এই আরকি!! 😀 )
তানভী ভাই কি বুয়েটে পড়েন নাকি? এজন্যই হয়তোবা চেহারাটা কোথাও দেখেছি দেখেছি বলে মনে হচ্ছিল। 😉
@তানভী, পরীক্ষা নিয়া চিন্তিত না, পরীক্ষার হলে সর্বসম্মতিক্রমে ওয়ারলেস নেটওয়ার্ক স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমগো ডাটা ট্রান্সফার রেট অবিশ্বাস্য, বিনামূল্যে কক্ষের এক মাথা থেইক্যা আরেক মাথায় সেবা দিয়ে থাকি 😎
আচ্ছা আপনে বুয়েটের কোন ডিপার্টমেনটের? ইনটারের পর তো আপনের কাছে কোচিং করা লাগব :-/
@পৃথিবী, জাপানের যৌনতা ব্যাপারে আপনার ধারণা মোটামুটি ঠিকই ধরে নেওয়া যায়। এব্যাপারে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠার মত দীর্ঘসময় এখনো অতিবাহিত হয় নি জাপানে আমার। তবে, আনিমেতেও এখন কিন্তু কিছু পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে, নারুতো দেখে থাকলে বুঝবেন(আমি এই একটা আনিমেই দেখেছি কিনা :-X ) সুনাদে, সাকুরা চরিত্রগুলো তেমন দুর্বলরূপে দেখানো হয় নি।
নতুন ভাষা শিখতে না চাইলে জাপানে না আসাই ভাল :-/ এদের ইংরেজি জ্ঞান যাচ্ছেতাই। তবে খাবার টেবিলে মাংসের অভাব হবে না। আমি যে মার্কেটে বাজার করি, ওখানে সব্জির চেয়ে মুরগির মাংস সস্তায় পাওয়া যায় 😀 ।
@জামান: লেখাটা অনেক সাবলীল হয়েছে। পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল দুজনকে চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। তবে একটা কথা না বললে মনে খুঁতখুঁত করতে থাকবে, সেটা হলো তোর লেখাগুলো অনেক নৈর্ব্যক্তিক। আমিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন। এটা কি ইচ্ছাকৃত?
@কিষান, ধন্যবাদ। 🙂 নৈর্ব্যক্তিক, আমিত্ব শব্দগুলো ঠিক কোন অর্থে ব্যবহার করলি, বুঝলাম না। 😕 আরেকটু খোলাসা করে বল।
@আনোয়ার জামান,
এই অর্থে নৈর্ব্যক্তিক বলেছি যা লেখাগুলো বর্ণনামূলক ধাঁচের। এর মধ্যে লেখকের ব্যক্তিসত্ত্বার প্রতিফলনের কিছুটা অনুপস্থিতি প্রতীয়মান হচ্ছে। জানি না, এটা আমার বোঝার ভুলও হতে পারে। I mean আপনার খুব বেশী লেখাতো পড়ি নি। তবে লেখার বক্তব্য যুক্তিগ্রাহ্য এবং শক্তিশালী, এজন্য অভিনন্দন :rose2:
@কিষান, এটার কারণ হতে পারে লেখার বিষয়বস্তু। আগের লেখাটা একটা খসড়া টাইপের লেখা ছিল, তথ্যের কংকালও বলা যায়। তার উপর আমার দৃষ্টিভংগির প্রলেপ তখনো দেই নি।
এই লেখাটির কেন্দ্র আমি নই, বরং একজন রূপান্তরিত বিশ্বাসীর দৃষ্টিভংগিই তুলে ধরতে চেয়েছি, অনেকটা সাক্ষাৎকারের আদলে। তবে কথার পরিমাণ হিসেব করলে আমার বক্তব্যের যোগফলই হয়তো বেশি হবে 😎 । তার মাঝে থেকে যদি আমিকে খুঁজে নেওয়া যায়, সেটা পাঠকের কৃতিত্ব। কি জানি, আমি নিজেই তো আমার আমিকে খুঁজে চলেছি অনবরত।
পড়ে ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ। :rose2:
@সৈকত চৌধুরী, আপনাকেও ধন্যবাদ।:rose2:
পূর্ব এশিয়ারে দেশগুলোতে অনেক আগে থেকেই ধর্মবোধ কমে এসেছে। প্রশ্নের করলে জাপানীরা বৌদ্ধ অথবা শিন্টু ধর্মের যেটি প্রথম মনে আসে সেটিই বলে দেয়। ফলে বৌদ্ধ ও শিন্টু ধর্মের লোক সংখ্যা যোগ করলে জাপানের জনসংখ্যা আসল জনসংখ্যার চেয়ে বেশী দাঁড়ায়।
জাপানে ১৯৪৭ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষা বাতিল করা হয়।
তিনটি কারণে community center গুলো ভাড়া পাওয়া যায় না।
১। ধর্ম বিষয়ক জনসমাগম
২। রাজনৈতিক জনসমাগম
৩। ব্যবসা বিষয়ক জনসমাগম
এ প্রসংগে আমার এক কোরিয়ান সহপাঠীর কথা মনে পড়ছে, “Sometimes I sink (thinkকে sink উচ্চারণ করত) I am a Buddist, sometimes I sink I am a Christian.” ওর স্ত্রী Christian হওয়ার কারণে নিজেকে কখনও Christian ভাবতে শুরু করেছে।
@নৃপেন্দ্র সরকার, একেবারে ঠিক বলেছেন। জাপানে ছিলেন নাকি কিংবা এখনো কি আছেন? জাপানিজরাও ‘থিঙ্ক’ বলতে পারে না, ‘সিঙ্ক’ বলে। তথ্যমূলক মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
@আনোয়ার জামান,
সে অনেক কাল আগের কথা। ১৯৮৩-৮৪ – International Visiting Researcher হিসেবে Univeristy of Tsukuba তে ছিলাম।
মুক্তমনায় স্বাগতম, এবং প্রথম লেখার জন্য অভিনন্দন রইলো।
@অভিজিৎদা, অসংখ্য ধন্যবাদ। 😀
বেশ খোলামেলা একটি লেখা। টিপিক্যাল একজন ধার্মিকের ধর্মীয় সত্ত্বার বহিঃপ্রকাশ; বাস্তবতার সাথে দ্বন্দ্ব, তার নিজস্ব ব্যাখ্যা যা কোন অবিশ্বাসীর কাছে জোড়তালিমূলক বলেই মনে হবে।
তবে জামান ভাই, আমিও মামুন ভাই এর মত বলতে চাই যে আপনার বেশ কিছু কথোকপথনে কোনটা কার বক্তব্য ধরা একটু কঠিন। এ সমস্যা অন্তত আমার কাছে মূল লেখার স্বাদ কিছুটা হলেও কমিয়ে দিয়েছে।
আশা করি ভবিষ্যতে যত্নবান হবেন। এইরকম লেখা আরো আশা করি।
@আদিল মাহমুদ, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। লেখালেখিতে আমি নবীন, হাত কাঁচাই রয়ে গেছে। নিজের লেখা তো, তাই এব্যাপারটা পাঠকের জন্য অস্পষ্ট হতে পারে, তা বুঝতে পারি নি। মামুন ভাইকে বলেছিলাম, এলেখাটা অভিজ্ঞতা সঞ্ছয়ের লেখা, পরবর্তীর প্রস্তুতি।
আমি বয়সে আপনার থেকে বেশ ছোটই হব, তুমি করে বললেই খুশি হব। 🙂
@আনোয়ার জামান,
দুয়েকজন বাদে এখানে কেউই আমরা প্রফেশনাল লেখক নই। অমন ভুল ত্রুটি সবারই কিছু কিছু হয়। আমি তো অই ভয়েই মনে হয় বেশী লেখা পোষ্টই করি না 🙂 ।
লিখতে গেলে এই একই সমস্যা আমাকেও ভাবায়। দুজনের কথোপখন বার বার নাম উল্লেখ না করে সোজাভাবে বোঝানো একটু আর্টের ব্যাপার।
চলিয়ে যান। হয়ে যাবে। জাপানের মানুষজন নিয়ে আরো লিখেন। কারো কারো কাছে বদনাম শুনি জাপানীরা নাকি সবচেয়ে রেসিষ্ট প্রকৃতির হয়? সত্য নাকি? আমি তো বাইরে বাইরে দেখি ব্যাটারা বিনয়ের অবতার। পারলে মাটিতে মাথা ঠেকায়।
আমি মুরুব্বী মুরুবী ভাব নিলেও অত বুড়া মনে হয় এখনো না। তবে আণ্ডারগ্র্যাডের গন্ডি পেরিয়েছি এ যুগেরও বেশী হয়ে গেল।
@আদিল মাহমুদ, wordpressএ এটা আমার প্রথম পোস্ট। এখানে দেখছি প্যারার শুরুর স্পেসগুলো কেটে দিচ্ছে। নাম উল্লেখ না করে অন্য ব্যক্তির উক্তি শুরু করতে গেলে সেটা আলাদা প্যারা না হলেও, পরের লাইন থেকেই তো লেখে সবাই। প্রথম স্পেসগুলো থাকলে, বক্তার পরিবর্তনটাও চোখে ধরা পড়ে সহজে। যেমন, এজিনিসটা wordএ মূল লেখা লেখার সময় চোখে পড়ে নি, ধরতে পারি নি গুগলে আমার নিজস্ব ব্লগেও। এখানে দেখতে পারেন। তবে, মিথ্যে অজুহাত দেখাচ্ছি না, আমার লেখায় সীমাবদ্ধতা আছে তা জানি, একটা হাইপোথেসিস দাঁড় করালাম মাত্র।
জাপানিজদের রেসিজমটা এখনো বস্তুগতভাবে অনুভব করি নি। অপরিচিত মুখগড়ন দেখলে ওরা একটু অন্যভাবে তাকায়, যেন নতুন জিনিস দেখছে। এটাকে রেসিজম বলতে পারেন। তবে, ওদের বিনয়ে ঘাটতি নেই, আমি অন্তত পাই নি। আবার, আমিই যখন এশিয়ান চেপ্টা নাক আর টানা চোখের চেয়ে ইউরোপিয়ান চেহারার নিকোল কিডম্যানদের দেখে বেশি আকৃষ্ট বোধ করি, তখন নিজের মাঝেই রেসিজমের ভূতকে আবিষ্কার করি না কি?
জাপানিজ সংস্কৃতির কিছু দিক নিয়ে সামনে লেখার ইচ্ছে আছে। 😉
আপনি একেবারে জায়গা বুঝে আণ্ডারগ্র্যাড নিয়ে টান দিলেন কেন? ওটাই তো শুরু করতে পারলাম না এখনও, অথচ বুড়া হয়ে গেলাম। 😥
আনোয়ার জামান,
বিজ্ঞান ও ধর্মের তুমুল তুলনামূলক আলোচনাটি আপনার বন্ধু নাৎসুমির সাথে বেশ জমিয়েই তুলেছিলেন যার মাধ্যমে আমরা সাধারন পাঠকরা অনেক কিছু জানতে পেরেছি।
কিন্তু ‘উহু, আমি বিবর্তন বিশ্বাস করি না, আমি এটা জানি।’ 😕 এটা কি আপনার মন্তব্য না-কি———-বুঝি নাই ???
সব কিছুর পরে আপনার লেখা বেশ সাবলীল।
@মাহবুব সাঈদ মামুন, আপনার মন্তব্যের জন্য অশেষ ধন্যবাদ। হ্যাঁ, এটা আমারই কথা ছিল। অস্পষ্টতার জন্য দুঃখিত।
ছোটবেলায়, যদিও খুব বেশিদিন আগের কথা না, অল্পবিস্তর লেখার অভ্যাস ছিল – অবশ্যই এধরনের লেখা না। বাচ্চামো টাইপেরই লেখা। কেন জানি পৃথিবীর বৈষয়িকতার সাথে পরিচিত হওয়ার পরে অভ্যাসটা হারিয়ে গিয়েছিল। তাই ভাবলাম ক্রিকেটারদের প্রস্তুতি ম্যাচের মত নিজেও কিছু প্রস্তুতি লেখা লেখে নেই। এলেখাটি সেরকমই একটা লেখা। তাই, ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতেই দেখবেন বলে আশা করছি। আবারও ধন্যবাদ।
@আনোয়ার জামান,
‘তুমি এভাবে বলতে পার না। তুমি যদি ঈশ্বর সম্পর্কে বলতে চাও, অনেক কথাই বলতে পারবে, কিন্তু প্রমাণ কি একটাও দেখাতে পারবে? বিজ্ঞান সেরকম নয়, বিজ্ঞান যা বলে তা প্রমাণসহকারেই বলে। বিবর্তনও কিন্তু তার ব্যতিক্রম নয়। প্রমাণ আছে বলেই, বিবর্তন একটি প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব।’ :yes:
এ কথা আপনি আপনার বন্ধু নাৎসুমিকে বললেন।আর এই
উপরের বর্নিত লেখার সাথে আপনার শেষের মন্তব্যটি কি একদম বে-মানান বা সংঘাতপূর্ন নিজের সাথে নিজেরই নয় কি ???(উহু, আমি বিবর্তন বিশ্বাস করি না, আমি এটা জানি।’)
পৃথিবীর বৈষয়িকতার সাথে পরিচিত হওয়ার কারনেই কি এখন আর বিবর্তনের মতো বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ব কে আপনি নিজে জেনেও আর বিশ্বাস করেন না, না-কি ?
যেমন আপনার বন্ধু নিধার্মিক হলেও এখন প্রোটেস্টান ধর্ম কে আঁকড়ে ধরে তার জীবন পরিচালনা করছে !!!!!!!! এ রকম কি কিছু আপনার জীবনের বেলায়ও সত্য ?
@মাহবুব সাঈদ মামুন, আসলে এখানে একটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। :-Y আমি যেটা বলতে চেয়েছি তা হল, আমি বিবর্তনকে একটা প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক সত্য হিসেবে ‘জানি’। ‘বিশ্বাস করি’ বলার চেয়ে ‘আমি জানি’ বলার মাধ্যমে বিবর্তন সম্পর্কে আমার ধারণা যে বিশ্বাসেরও উপরে, তা বোঝাতে চেয়েছি। যেমন কেউ হয়ত ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে, কিন্তু তাই বলে কি সে ঈশ্বরের অস্তিত্ব বা প্রকৃত রূপ সম্পর্কে কখনো জানতে পারে? তার কল্পনার ঘুড়ি বিশ্বাসের আকাশেই উড়ে উড়ে গুত্তো খায়, কখনো বিজ্ঞানপূর্ণ অন্তরীক্ষ পানে চায় না। বিজ্ঞানকে আমি বিশ্বাস করার নয়, জানার জিনিস বলেই মনে করি। এটা শুধুই একটা শব্দের খেলা বলতে পারেন। মার্ক টোয়েইনের একটি উক্তি দিয়ে শেষ করি, ‘Faith is believing something you know ain’t true.’
আপনার প্রশ্নের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। 🙂
@আনোয়ার জামান,
যাক, ভূল বুঝাবুঝির অবসান হলো এবং এখন বুঝলাম আপনি দর্শনের দৃষ্টিতে কোন জায়গায় অবস্হান করেন।জাপান ও জাপানীজদের ব্যাপারে আমার একটি বিশেষ দূর্বলতা আছে তাহলো তাদের নমনীয়তা ও বন্ধুপরায়নতা।১৯৯০ সালে থাইল্যান্ডে কয়মাস থাকাকালীন আমার তখনকার এক বাংগালী ঘনিষ্টবন্ধু জাপানে থাকত।আমার বন্ধুটির এক জাপানীজ বন্ধু তখন থাইল্যান্ডে বেড়াতে আসলে আমার সাথে তার ২ সপ্তাহ থাকা হয়।তখন দেখেছি ও অনুভব করেছি তাদের (জাপানীজদের) বন্ধু ভাবাপন্ন মন – মানসিকতা কাকে বলে।অন্যদিকে জাপানের চেরি ফুল সহ তাদের গেইশা সংস্কৃতি ও প্রযুক্তি দেখা আমার অনেক দিনের শখ।যাবো যাবো করেও আর যাওয়া হলো না ।তবে এবার সময় সুযোগ করে জাপানে বেড়াতে যাওয়ার ইচ্ছে আছে।দেখা যাক।
আপনাকে আবারো অভিনন্দন এবং আপনার আরো অনেক অনেক লেখা মুক্ত-মনাতে চাই। ভালো থাকবেন।