প্রাচীন প্রায় সকল সভ্যতায় দাস প্রথা প্রচলিত ছিল, মিসর, মেসোপটেমিয়া, ভারত ও চীনে দাসদেরকে গৃহসেবা, নির্মাণ, কৃষি, ও যৌন কাজে ব্যবহার প্রচলিত ছিল। আমেরিকা, ইনকা ও মায়া সভ্যতায় দাসদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা হত। ইসলামেও এ প্রথা গৃহীত হয়েছিল পুর্বে প্রচলিত সমাজ ব্যবাস্থা থেকেই, যদিও ইসলাম আরব সমাজে একটি নৈতিক ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছিল, তবুও মানবতার জন্য চরম অবমাননাকর এ প্রথাকে বিলুপ্ত করেনি।
তাত্তিক ভাবে ইসলামে দাস প্রথা এখন বৈধ, তবে সকল মুসলিম রাস্ট্রে দাস প্রথা সেকুলার আইনে নিষিদ্ধ। যুদ্ধ ও বংশগতভাবে প্রাপ্ত মানুষকে ইসলামী আইনে দাস হিসেবে গ্রহন করার অনুমতি আছে এবং দাসদের ব্যবহার ইসলাম পুর্বেকার সমাজে প্রচলিত ব্যবহার থেকে কিছুটা ভিন্নতা এনেছে মাত্র।
সন্দেহ নেই যে ইসলাম দাসদের অবস্থা উন্নত করেছিল নানা ভাবে, দাসদের অধীকার রক্ষায় ছিল নানা রকম আইন, দাস মুক্তির জন্য ছিল নানা ব্যবস্থা, দাসদের সাথে ব্যবহার ছিল পশ্চিমা সভ্যতা থেকে অনেক বেশী মানবিক। যাকাত থেকেও দাসদের মুক্তির লক্ষ্যে অর্থের যোগান দেয়ার ব্যবস্থা ছিল।
তারপরও আজকের যুগের নৈতিক মানদন্ডে সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ এ ব্যবস্থা বিলোপে মুসলিম রাস্ট্রগুলোর অবদান প্রথম সারিতে অবস্থান নিতে পারেনি। ১৮৩৩ সালে ব্রিটেন দাস ব্যবসা বিলোপ আইন পাস করে। মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে ১৮৬৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর দাসপ্রথা বিলোপ করা হয়। উপনিবেশিক প্রভাবাধীন মুসলিম রাস্ট্রগুল উনিশ শতকের শুরুর দিকে এ প্রথা বিলোপ করলেও অনেক মুসলিম দেশে এ প্রথা বিলোপ হয় ১৯৫০ এর পর। এ তালিকায় সৌদি আরব সহ প্রথম সারির মুসলিম দেশগুল রয়েছে।
প্রতিবছর ২ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দাসমুক্তি দিবস পালন করা হয়। ক্ষুধা, দারিদ্রতা দূর করে মানুষের মাঝে শান্তি, সমঝতা ও সমতা তৈরী করতে মানব সভ্যতার সামনে এখন বিশাল কাজ পড়ে রয়েছে। কোন নির্দিস্ট মতবাদ প্রতিষ্ঠা নয়, মানবতাবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য যুগের প্রয়োজনে নৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। মুসলিম সম্প্রদায় বিষয়টি যত দেরীতে উপলব্ধি করবে তাদের উন্নয়ন ততই দীর্ঘায়িত হবে।
তথ্য সূত্রঃ
http://www.bbc.co.uk/religion/religions/islam/history/slavery_1.shtml
http://en.wikipedia.org/wiki/Abolition_of_slavery_timeline
আনাস,
আপনার এই কথার প্রেক্ষিতে সূরা ৪৭, ৪র্থ আয়াতটির কথা বলতে চাই। এতে বলা হয়েছেঃ
দেখা যাচ্ছে বলা আছে, যুদ্ধ শেষ হবার সাথে সাথে যুদ্ধ-বন্দীকে ছেড়ে দিতে হবে মুক্তি-পণের মাধ্যমে অথবা দয়া বা উদারতা দেখিয়ে। তৃতীয় কোন পন্হার কথা বলা হয়নি।
যখন একজন স্কলার, মওদুদীকে এই আয়াতটি দেখিয়ে যুদ্ধ-বন্দীদের দাস হিসেবে ব্যবহার করা যাবেনা বা গনিমাতের মাল হিসেবে ধরা যাবেনা বিষয়টি দেখিয়ে দেয়, তখন মওদুদীর উত্তর ছিলঃ “The error of this man lies in that he relies on the Quran to form his opinion.” (Tafhimat 2:292)
মওদুদী এখানে কি বলতে চায়?
@আইভি,
ঃ এর একটিই মানে হয়-মওদুদী্ মনে করেন কোরানের মাত্র একটিই ব্যাখ্যা আছেন, যা তিনি জানেন! বাস্তব হচ্ছে মওদুদী আসলেই আরবের ৭ শতাব্দিতে উটের দুধ খেয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন-তাই তার কোরানের ব্যাখ্যাটাও তার মনের মতন। অজান্তেই নিজের সত্যটা উনি বলেফেলেছেন।
@বিপ্লব পাল,
আপনার মূল অভিযোগ সত্য। মনে কোরানে ধরে অক্ষরে অক্ষরে সমাজ চালাতে গেলে আরবের ৭ম শতাব্দীতে ফেরা না গেলেও তালেবানী সমাজে ফিরে যেতে হবে এতে কোন ভুল নেই।
তবে মৌদুদীকে অন্তত তার সময় পর্যন্ত কোরানের আধুনিক ব্যাখ্যাকারী হিসেবে অনেকে মনে করেন। এই লোক কিছু আলেমের কাছে এত জনপ্রিয় কেন তা খুজতে গিয়ে এটা আমি পেয়েছি। যদিও তিনি অনেক স্থায়ী বিষবাষ্পের জন্ম দিয়ে গেছেন।
@আইভি,
ইসলামী আইন প্রণয়নে কোন বিষয়কে অবৈধ করতে দলিল লাগে (কুরান হাদিস অথবা সাহাবাদের কোন কাজ) তৃতীয় কোন পন্থার কথা বলা হয়নি এর মানে এই না যে দাস হিসেবে ব্যবহার করা হারাম, দুট পথ-ই খোলা আছে, ইসলামের ইতিহাস ঘেটে দেখেন যুদ্ধবন্দী নারীদের সাথে কি ব্যবহার করা হয়েছে।
আপনি যে অনুবাদটি দিয়েছেন, একি আয়াতের আরেক ধরনের অনুবাদ আরেকজনের কাছে আছে, কোন অনুবাদটি ঠিক তা নির্ধারন করবে কে? আমি বা আমরাই যদি নির্ধারন করি এ কাজটি করতে কুরানের কেন প্রয়োজন হবে?
@আনাস/আইভি,
আসলে কোরানের আয়াত ধরে আইন কানুন প্রনয়নের চেষ্টা শুরু হলে কোন নির্দিষ্ট সমাধানে পৌছাবার কোন সম্ভাবনা নেই। এক একজনে এক এক সিদ্ধান্তে পৌছাতে বাধ্য। অনেকে আবার এর মাঝে শয়তানের ষড়যন্ত্রও খুজে পাবেন।
কোরানে তো এও আছে, “হত্যা কর তাদের যেখানেই পাও, বিশেষ মাস ছাড়া” এ আয়াতটি (হুবহু মনে নেই); যেটি মনে হয় অবিশ্বাসীরা ওয়াদা ভংগ করলে প্রযোজ্য বলে সেই আয়াত অনুযায়ী মনে হয়। ঈমান আনলে এবং সাথে মুক্তিপণ দিলে তবেই শুধু মুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এ আয়াতকে সাধরনভাবে যুদ্ধের নিয়ম বলেই তো অনেকে ধরে নিতে পারে।
কোরানে দাসত্ব তোমদের জন্য ভ্যালিড এমন কথা নেই, তবে দাসত্বের স্বীকৃতি সূলভ অনেক আয়াতই আছে। তা তো অস্বীকার করা যাবে না।
কোরান নিয়ে হয়ত নিজের পছন্দের আয়াতের পছন্দের ব্যাখ্যা দিয়ে এড়ানো যেতে পারে, কিন্তু মোহাম্মদের আমলেই যে যুদ্ধবন্দীদের দাস হিসেবে ব্যাবহার করা হত তার ঐতিহাসিক বিবরন আছে।
বানু কোরাইজার যুদ্ববন্দী নারী ও শিশুদের দাস হিসেবে ব্যাবহার করা হয় বলে জানা যায়। “The Banu Qurayza eventually surrendered and all the men, apart from a few who converted to Islam, were beheaded, while the women and children were enslaved.” http://en.wikipedia.org/wiki/Banu_Qurayza
সন্দেহ নেই যে যুদ্ধবন্দীদের ব্যাপারে ইসলাম বা ইসলামী নেতাগন অনেক সেকালের পরিপ্রেক্ষিতে অনেক উন্নত মানবিক কিছু ব্যাবস্থা নিয়েছিলেন তবে তার মানে এই না যে দাসত্বের কোন ব্যাবস্থা ছিল না। এটা ঠিক যে ইসলামী আইনে যুদ্ধবন্দীদের মুক্তি দেওয়াকে কাজে কলমে উতসাহিত করা হয়েছে, তবে বলতে হবে যে এটা আইন করা হয়নি। আবার অপশন ও রাখা হয়েছে মুক্তিপন আদায় করার, দাস বানাবার।
এমনকি যুদ্ধবন্দী নারী শিশুদেরও দাস বানাবার বিধান আছে।
Muslim scholars hold that women and children prisoners of war cannot be killed under any circumstances, regardless of their faith,[19] but that they may be enslaved, freed or ransomed. Women who are neither freed nor ransomed by their people were to be kept in bondage and referred to as ma malakat aymanukum (slaves)।
এখানে বিস্তারিত আছে।
অন্থীন তর্ক করাই যায়, চলছেও, তবে সেক্ষেত্রে বলা যায় যা কোরানিক আইনের দূর্বলতা স্বীকার করে নেওয়া ভাল।
@আইভি,
Shabbir Ahmed তার The Criminals of Islam বইতে আপনার উক্ত আয়াতের উল্লেখ করে বলেছেনঃ ‘An important reminder: The Quran (47:4) ordains that prisoners of war are to be freed either for ransom or as an act of kindness. There is no third option. How could the prophet (S) and and his noble companions enslave human beings?’
তার মতে মুহাম্মদ (সাঃ) একজন কোরানের সর্বোচ্চ অনুসারী হিসাবে বন্দীকে দাস হিসাবে ব্যাবহারের প্রশ্নই উঠেনা। তিনি মনে করেন কিছু ‘ক্রিমিনাল’ মুহাম্মদ(সাঃ) এর মৃত্যুর পর এই সব বিকৃতি ঘটিয়েছেন। এর মধ্যে সহীহ বুখারী শরিফের সংকলক হিসাবে খ্যাত ইমাম বুখারীও একজন। একই ভাবে ইমাম মুসলিমকেউ একই ভাবে ‘ক্রিমিনাল’ আখ্যা দিয়েছেন।
আপনি কারবালার ইতিহাস বিকৃতির যে ঘটনা বর্ননা করেছেন এটিই সেই পর্যায়েরই ঘটনা। বিপ্লব পাল যেমন বলেছিলেন যে মুহাম্মদের মৃত্যুর পর তার অনুসারীরা তার স্বপ্ন ভর্তা করে ফেলেছে, সেই রকম আর কি।
@আদিল মাহমুদ,
খৃষ্টপূর্ব ৫০০ অব্দে প্রতিষ্টিত ভারতের এই সমৃদ্ধ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ তলা লাইব্রেরী বখতিয়ার খিলিজি আগুন লাগিয়ে পুড়িয়েছিলেন।কয়েক মাস পর্যন্ত এই বিশাল পাঠাগার আগুনে জ্বলছিলো।
এতবছর আগেও নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমকলীন জ্ঞান বিজ্ঞানের সকল শাখাসহ ”লিবারেল আর্টস” ”লিবারেল এডুকেশন” সাবজেক্ট পড়ানো হতো।
শুধু বই নয়,শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এর সাথে সংশ্লিষ্ট হাজার হাজর মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে,তলোয়ার দিয়ে শিরচ্ছেদ করে, শেষ করে দিয়ে বখতিয়ার ভারতে ইসলাম রূপন করে ইসলামের ইতিহাসে খ্যাতি লাভ করেন।আমাদের স্কুলের ছেলে মেয়েদের ইতিহাস বইয়ে এগুলো কেও লিখে না। কেনো লিখে না,তাও আপনি জানেন।
হিটলার বন বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরীর ৪৫ লক্ষ বই পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়ি দিয়েছিলেন।কারণ হিটলার জানতেন বই পড়লে কেও তার কথা শুনবে না।
আদিল ভাই,
আমাদের নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় আর জার্মানের বন বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে ধ্বংস করে দেয়ার মধ্যে পার্থক্য কোথায়!
@সালাম,
কোন পার্থক্য নেই।
বখতিয়ার খিলজী যে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন, মেরে ফেলেছিলেন সংশিলষ্ট সকলকে এটাও আমার জানা ছিল না। জানার সোজা উপায়ও আসলে তেমন ছিল না। যদিও নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা আমাদের স্কুলের নীচু ক্লাসেই পড়ানো হয়।
আমাদের ধারনা দেওয়া হয় যে ইসলামের আগমনের সাথে ভারতের আর্থ সামাজিক ব্যাবস্থায় ব্যাপক উন্নতি হয়। বিশেষ করে আমার নিজের এখনো ধারনা আছে যে ইসলামে হিন্দু ধর্মের মত নগ্ন শ্রেনীভাগ নেই বলে নিম্নবর্ণের হিন্দুরা বিপুল পরিমানে ইসলাম গ্রহন করে স্বস্থির নিশ্বাস ফেলেছিল। যদিও কেউ কেউ বলেন এটা তলোয়ারের জোরে হয়েছিল।
@আদিল মাহমুদ,
হাঁ,বিজয়ের ইতিহাস ওভাবেই পড়ানো হয়। পৃথিবীর সর্বত্র।
আমেরিকায় কলম্বাসের ইতিহাসটাই ধরুন,সেখানে স্কুলের শিশুদেরকে কি পড়ানো হয়। কলম্বাস আগমনের সাথে সাথে আমেরিকার আর্থসামাজিক ব্যবস্হায় ব্যাপক উন্নতি হয়।কলম্বাস আমেরিকাকে সভ্য করেন।
কলম্বাসের তলোয়ারে হাজার হাজার ইন্ডিজেনাস আরক নারী ও পুরুষকে কচুকাটার কথা আমেরিকারন ইতিহাসে নাই।
বিজয়ী বীরের সবকিছুই গৌরবের হয়।
আলেকজেন্ডার হিটলারের মত পরাজিত হলে কেমন হতো তারঁ ইতিহাস!
বা,হিটলার আলেকজান্ডারের মতো জয়ী হলে কেমন হতো তার ইতিহাস। আজকে আমি ‘তার’ ওপর চন্দ্রবিন্দু না দিয়ে কি পারতাম।তার নিজ হাতে ৪৫ লক্ষ বই জ্বালানোর কথা কি ইতিহাস হতো!
@সালাম,
বখতিয়ার খলজি সেনাপতি ছিলেন একজন ধর্ম প্রচারক ছিলেননা। মুসলিম মাত্রই ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে এমন ধারনা ঠিক নয়। যেমন ভাবে হিটলার খৃষ্টানদের প্রতিনিধিত্ব করেনা। বখতিয়ার খলজি ও হিটলার দুজনই সাম্রাজ্যবাদী ছিলেন যেমন ছিলেন চেঙ্গিস খান। হালাকু খান কিন্তু ধর্মবিরোধী বা নাস্তিকদের প্রতিনিধি করেনা তার পরও বাগদাদের সমৃদ্ধ লাইব্রেরী তার হাতেই ধ্বংস হয়েছিল। সাম্প্রতিককালে আমেরিকানদের হাতে বাগদাদের জাদুঘর লুটতরাজের স্বীকার হয়। এখানে কোন বিশেষ ধর্ম এমনকি নাস্তিক্যবাদও নয় সাম্রাজ্যবাদই দায়ী।
এই পার্থক্যটি গুলিয়ে ফেললে হবেনা।
@shamim,
বিশাল লাইব্রেরীতে আগুন লাগানোর আগে বখতিয়ার খলজি প্রশ্ন করেছিলেন,কোরানের কোন কপি আছে কিন।
খলজি ইসলামিক না হলে এমন প্রশ্ন করতেন কি!
হাঁ শামিম ভাই,
অনেক সাম্রাজ্যবাদীরা তার নিজ ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।
ম্যাকিয়াভেলি পন্হা।
@সালাম,
আপনি ঠিক বোলেছেন। খিলজি জিঘাশা কোরেছিলো
লাইব্রারইতে কোরান আছে কি না?
@shamim,
আমাদের ইতিহাসে বখতিয়ার খিলজীর বাংলা জয়কে এ গুরুত্ত্বপূর্ণ করে পড়ানো হয় তার মুসলমানি ব্যাকগ্রাউন্ডের কারনেই, এটা অস্বীকার করা যাবে না। ফলাও করে পড়ানো হত কিভাবে শেষ “হিন্দু” রাজা লক্ষন শেষ খিড়কী দরজা দিয়ে মাত্র ১৭ জন অশ্বারোহী মোসলমান সেনার ভয়ে পালিয়ে গেছিল। বেচারা নাকি দুপুরের ভাত খেতে বসেছিল, খাওয়া ফেলে রেখেই পালিয়ে গেছিল।
আমার মনে পড়ে আমি ছেলেবেলায় মুসলিম সেনাপতির এহেন বীরত্বে কি দারুনভাবে উজ্জীবিত হয়েছিলাম। বন্ধুরা হিন্দু রাজার এই কাপুরুষের মতন পলায়নে কি নিদারুন শিহরন উপভোগ করতাম।
কাজেই বখতিয়ার খিলজীর বাংলা জয় স্রেফ কোন রাজার রাজ্য জয় নয়।
একইভাবে তখনকার টিভিতে দেখানো হত হাজ্জাজ বিন ইউসুফ কিভাবে হিন্দু রাজা দাহিরকে দাবড়িয়ে সিন্ধু জয় করছে এসব। এসবে ধর্মীয় কোন ছাপ ছিল না? পুরোটাই ছিল রিলিজিয়াস সুপ্রিমেসী প্রতিষ্ঠার প্রয়াস।
@সালাম,
আমাদের ইতিহাস বইতে একটা অংশ ছিল বখতিয়ার খিলজীকে নিয়ে। বখতিয়ার খিলজীর বাংলা বিজয়। সেখানে এমনভাবে বর্ণনা থাকতো যেটা পড়ে আমরা মনে করতাম যে বখতিয়ার খিলজীই হচ্ছে আমাদের লোক, আমাদের ত্রাতা। ঘোড়ায় করে এসেছে আমাদেরকে উদ্ধার করতে। এই লোক যে বিদেশী এক দস্যু সেই সম্পর্কে আমাদের কোন ধারনাই ছিল না। বখতিয়ার খিলজীর ভয়ে ভীত রাজা লক্ষণ সেনের খিড়কী দিয়ে পলায়নের দৃশ্য পড়ে মনে তুমুল আনন্দ পেতাম আমরা তখন।
এখন ভাবি যে, এই রকম ইতিহাসবিদ বাংলাদেশে আসলে কারা ছিল?
@ফরিদ আহমেদ,
বিজয়ীরাই সবসময় ইতিহাস রচনা করে। হিটলার যদি দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধে বিজয়ি হতো তাহলে ইতিহাস ভিন্ন রকম হতো। মানব রচিত কোন ইতিহাস নিরেপেক্ষ হতে পারেনা। তাই বাংলাদেশের নয় সব দেশের ইতিহাসবিদ নিয়েই সন্দেহ থাকা উত্তম।
@shamim,
এটা তত্ত্বীয়ভাবে ঠিক যে বিজয়ীরাই ইতিহাস রচণা করে।
তবে মাত্রায় পার্থক্য আছে। বিজয়ীরা ১০০% তাদের খুশীমত ইতিহাস রচণা করলে আমেরিকার ইতিহাসে নেটিভ আমেরিকানদের উপর কি অত্যাচার হয়েছে তার কোন উল্লেখ আমেরিকার ইতিহাসে থাকত না। জার্মানদের শেখানো হত হিটলার কত মহান, কিভাবে ঘৃণ্য ইহুদীবাদের ষড়যন্ত্রে এই মহান নেতাকে নাকাল হতে হয়েছে। যেমনটা পাকিস্তানীদের শেখানো হয় আর কি, তাদের কোন দোষ নেই, ভারতীয়দের হিন্দু ষড়যন্ত্রেই গাদ্দার বাঙ্গালীরা পাকিস্তান ভেঙ্গেছে। এখানেই আমাদের অঞ্চলের ইতিহাসবিদদের সাথে অন্যদের বেশ কিছুটা পার্থক্য আছে।
@ফরিদ আহমেদ,
শৈশবে আপনার মতো আমরাও আনন্দ পেতাম।
আমাদের মতো আজকের শিশুরাও আনন্দ পাচ্ছে।
কারণ তাদেরকেও একই ইতিহাস পড়ানো হচ্ছে।
তাছাড়া,এমনকি আজো বাঙলা কবিতায় কেও কেও বিদেশী দস্যুর স্তুতিতে মুখরিত!!!
আনাস ভাইকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন মুক্তমনায় প্রথম লেখাটির জন্য। :rose2:
আনাস ভাইয়ের লেখা থেকে এটাই বোঝা যায় যে – ইসলাম সর্বকালের জন্য সেরা আদর্শ হতে পারে না। আর সর্বকালের সেরা আদর্শ বলতে কিছু নেই। ধর্মগুলো এজন্যই পরিত্যাজ্য, অন্তত বর্তমান সময়ে। আর আরেকটি বিষয় এখানে পরিষ্কার হলো- সেক্যুলার আইন দিয়েই বরং আমাদের অগ্রযাত্রা সম্ভব।
দাসদের প্রতি ভালো ব্যবহারের ইসলামি নির্দেশ বরং দাস প্রথাকে উৎসাহিত করে এবং দীর্ঘস্থায়ী করতে সাহায্য করে। মানবতার মধ্যে দাসপ্রথার স্থান হতে পারে না।
ইসলাম যেকোন সময়েই দাসপ্রথাকে ফিরিয়ে আনতে পারে যেহেতু ধর্মে এর অনুমোদন রয়েছে।
যেকোন ধর্মই তার সম সাময়িক ইতিহাস এবং ভূগোলকে অস্বীকার করতে পারে না।
ইসলাম ৭০০ শতকে চলে আসে একেশ্বরবাদি ধারনাগুলোকে আরো সঙ্ঘবদ্ধ করে-কিন্ত তৎকালীন চলে আসা সংস্কৃতিকে অস্বীকার করার ক্ষমতা তার ছিল না। যেমন জানা যায় যুদ্ধে অধীকৃত মেয়েদের ভোগ করার ব্যাপারে প্রথমে মহম্মদের আপত্তি ছিল। কিন্ত তার সাগরেদরা জানান-এটাহলে তাদের যুদ্ধ করার ইচ্ছাটাই কমে যাবে। তাছারা এটা বহুবছর ধরে চলে আসা প্রথা। ফলে গনিমতের মাল ইসলামেও ঢুকল। তৎকালে এটা নিশ্চয় দৃষ্টিকটু ছিল না। কিন্ত ইসলামে সংস্কার না হওয়ায়, এইসব আদিম আইন নিয়ে আজকেও ভাবতে হয়।
সব ধর্ম দাস প্রথাকে স্বকৃতি দিয়েছে এটা ভাবা ভুল। হিন্দু-ইসলাম-জিউ-খ্রীষ্ঠানরা দিয়েছে। বৌদ্ধ বা জৈন ধর্মে এর স্বীকৃতি ছিল না। সম্রাট অশোক দাশপ্রথা ভারতে নিশিদ্ধ করেছিলেন। বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব দূর হওয়ার সাথে সাথে ভারতেও দাসপ্রথা বাড়তে থাকে এবং ইসলামের আগমনের সাথে সাথে তা বহুগুনে বৃদ্ধি পায়। হিন্দু ধর্মেত শুদ্র বলে ভারতীয়দের একটা বড় অংশকেই দাস বানানো হয়েছিল-যা অমানবিকতার ইতিহাসে সত্যই অভূতপূর্ব।
বৌদ্ধ ধর্ম সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা অনেক বেশী উন্নত মানবিক ধর্ম ছিল। যা আর কোন ধর্ম সম্মন্ধেই বলা যায় না। কিন্ত বর্তমানে আসলে কোন ধর্মেরই দরকার নেই।
@বিপ্লব পাল,
” বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাব দূর হওয়ার সাথে সাথে ভারতেও দাসপ্রথা বাড়তে থাকে এবং ইসলামের আগমনের সাথে সাথে তা বহুগুনে বৃদ্ধি পায়।”
এর কি কোন ঐতিহাসিক সূত্র আছে, নাকি আপনার নিজের সিদ্ধান্ত?
ভারতবর্ষে ইসলামের আবির্ভাব ওভারঅল কি পজিটিভ ছিল নাকি নেগেটিভ বলে আপনি মনে করেন? এটা নিয়ে সম্পূর্ণ দুই ধরনের কথা শুনি।
@আদিল মাহমুদ,
সভ্যতার অগ্রগতির ইতিহাসটাই সিন্থেসিস। সভ্যতা বলতে বস্তুবাদি সভ্যতা বুঝলে, ইসলাম কিছু দিয়েছে-সেটা হচ্ছে বিচার ব্যাবস্থা, জমি জরিপের ব্যাবস্থা, ভাল খানা পিনা, কিছু নতুন আর্কিটেকচার।
কিন্ত সভ্যতার পরিমাপ যদি মানবিকতার দৃষ্টিতে মাপা যায়, ভারতের বৌদ্ধ সভ্যতা জ্ঞান বিজ্ঞান মানবিকতায় অনেক উন্নত ছিল। তারা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করে ( নালন্দা সহ আরো অনেক কিছু) জ্ঞান বিজ্ঞানের পীঠস্থান হয়ে উঠেছিল। কোন মুসলিম সম্রাট নালন্দার ন্যায় বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি গড়ার চেষ্টা করেন নি-ওসব দিক দিয়ে ইসলাম অনেক পিছিয়েই ছিল।
আসলে ভারতে হিন্দু এবং মুসলিম এত বেশী আমরা ভাবি ভারতীয় সভ্যতা মানে হিন্দু বা মুসলমান সভ্যতা। আসলে ভারতীয় বিজ্ঞান বা জ্ঞান বলতে যা বোঝায় -আদি গণিত, আয়ুর্ভেদিক চিকিৎসা এসব কিছু বৌদ্ধ ভারতের দান। কিন্তু হিন্দুরা আত্মস্থ করে ভেদিক জ্ঞান বিজ্ঞান বলে চালায়। ভারতীয় হিন্দুরা সভ্যতার দিক দিয়ে সব থেকে অনুন্নত ছিল। তাদের না ছিল জ্ঞান বিজ্ঞান, না বস্তুবাদি সভ্যতা। এমন কি উপনিষদটাও বৌদ্ধদের থামানোর জন্যে জ্ঞানের দিশারী হিসাবে এসেছে। গীতা খুব সম্ভবত ৪০০-৫০০ সালে রচিত যখন বৌদ্ধ দের সাথে টেক্কা দিতে হিন্দু দর্শন ও অনেক উন্নত হয়েছে।
সেই দিক দিয়ে বিচার করলে ইসলামিক সভ্যতা বস্তুবাদি বিচারে হিন্দু দের চেয়ে উন্নতই ছিল।
কিন্ত সম্রাট অশোক যে বৌদ্ধ সভ্যতার জন্ম দিয়েছিলেন যা ছিল জ্ঞান বিজ্ঞান এবং অহিংসার বানীর ওপর প্রতিষ্ঠিত, তা শুধু ইসলাম না, বর্তমান কালের সব বস্তুবাদি সভ্যতা-বৃটিশ বা আমেরিকানদের ও লজ্জা দেবে। তাই আমার নিজস্ব বিচারে ইসলাম হিন্দু সভ্যতার সভ্যতার চেয়ে বস্তবাদি দিক দিয়ে উন্নত হলেও, ভারতের আদি বৌদ্ধ সভ্যতার চেয়ে তারা অনেক অনেক পিছিয়েছিল। আজও আছে। বর্তমান ভারতীয় সভ্যতাও মানবিকতা এবং পরিবেশ বান্ধবতার বিচারে সম্রাট অশোকের ধর্মরাজ্যকে অতিক্রম করতে পারবে না।
@বিপ্লব পাল,
ধণ্যবাদ।
আরো ধণ্যবাদ আমার কিছু ভুল ধারনা ভাঙ্গায়। আমার ধারনা ছিল প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার যে গর্ব করা হয় সেটা হিন্দু দর্শনের অবদান। সেটা যে আসলে বৌদ্ধ দর্শন থেকে ছিনতাই করা তা জানা ছিল না।
আমার এক ভারতীয় কোলিগের সাথে আমার মাঝে মাঝে অনেক বিষয়ে আলোচনা হত। ধর্ম আলোচনাও হত। সে নিজেকে দাবী করত কোন ধর্ম মানে না বলে। সে যাই হোক, আমি একদিন তাকে বলেছিলাম যে হিন্দু ধর্মের সবচেয়ে বাজে দিক হল মানুষে মানুষে শ্রেনী ভাগ করা। সে আমাকে জবাবে একটা কথা বলে বেশ চমকে দেয়। সে বলে, দেখ; তুমি আমি চাই বা না চাই মানুষে মানুষে শ্রেনীবিভাগ আমাদের চারদিকেই আছে। এটা প্রাকৃতিক ব্যাপারের মতই একটা সরক সত্য।
একই চিন্তার জের ধরে প্রশ্ন আসে, দাস প্রথা বলতে আমরা কি বুঝি, বা আজকের বিশ্বে কি দাস প্রথা নেই?
আসলে দাস প্রথা এখনো আছে, বলা যায় যে আজকের দিনের দাসদের মানব অধিকার অনেক বেশী যা আগেকার দিনে ছিল না। আজকের দিনে ক্রীতদাস বলে কোন কিছু নেই যা আগে ছিল। নবী মোহাম্মদের যুগেও দাস প্রথা ছিল বলে শোনা যায়। আমার প্রশ্ন এই দাসত্বের ধরনটা কেমন ছিল? দাস প্রথা ছিল মানেই যে অতি খারাপ কিছু তাতো নয়। সে হিসেবে আজো বাংলাদেশের ঘরে ঘরেই দাস আছে। ওনার যুগে কি ক্রীতদাস প্রথা বলবত ছিল, নাকি সে দাসপ্রথা এখনকার মতই অধিকতর মানবীয় গোছের কিছু?
যুদ্ধবন্দীদের দাস হিসেবে ব্যাবহার মনে হয় ইসলাম বৈধ বলে। ক্রীতদাস প্রথার ব্যাপারে কি বলে? নবীই বা এ সম্পর্কে কি বলেছেন? ওনার আমলে কি বাজারে ক্রীতদাস বেচাকেনা বৈধ ছিল?
ইসলাম অন্যান্য মতবাদের মত যুগের কিছু বিষয় সংস্কার করেছিল, অনুরুপে যুগের প্রয়োযনে আরো কিছু বিষয় পরিমার্জন বা সম্পুর্নরুপে বিলোপের প্রয়োজন হতে পারে, এ ক্ষেত্রে মুসলমানরা খুব বেশী কি সহনশীল এটাই বড় প্রশ্ন।
যেমন ইসলামের উত্তরাধীকার আইন অনেকটাই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার দৃষ্টি ভংগি থেকে আগত, এখানে নারীর অধীকারের ব্যপারে বলা হয়েছে যেহেতু নারীকে কোন দায়িত্ব দেয়া হয়নি তাই নারীর প্রাপ্যটাই দেয়া হয়েছে, ভাবুন তো এমন একজন নারীর কথা যে এতটাই স্বাবলম্বী যে সে তার পিতামাতা সহ তার ভাই এর দায়িত্ব নেবার ক্ষমতা রাখে, সে যদি তার পিতামাতার প্রতি একি রকম দায়িত্ব পালন করে তাহলেও কি সে সমান অধীকার পাবে? আমার সম্পদ আছে, আমি বাবার সম্পদ নিব না তা এক কথা এবং অধীকারে সমান অংশীদারিত্ব সেটা আরেক ব্যপার।
মুসলিম সমাজে দাসদের অবস্থা কি রকম ছিল তার একটি লিঙ্ক আমি দিয়েছি, সেটা দেখতে পারেন, আর নিম্মোক্ত হাদিসটি পড়ে দেখতে পারেন
বুখারি Volume:3 Book :34 (Sales and Trade)Number :363 (!)
http://darulislam.info/Hadith_Bukhari-index-action-viewcat-cat-34-page-9.html
এছারাও আরো কিছু হাদিস রয়েছে একি অধ্যায় থেকে। যে কথাটা আমার বার বার মনে হয়, এখন যদি সেই আদি যুগের আইন প্রচলিত করতে চাই, তাহলে আমরা কি সম্পদে সমান অধীকার দিব? এবং মানুষকে বেচাকেনার এরকম অনুমতি থাকার পরও দাস দাসী কিনে মহল ভরে দিবনা?
ইসলাম সে যুগের তুলনায় স্রেষ্ট ছিল, এবং অনেক কিছুই আছে গ্রহন করার মত, কিন্তু বর্জনের বিষয়গুলও তো আমলে নিতে হবে।
এটা মুলত ছিল একটি আলোচনা, যারা আল্লাহর আইন চাই স্লোগান দেন তাদের কাছে প্রশ্ন ছিল যে একটা বৈধ বিষয় আপ্নারা কিভাবে অবৈধ করবেন, এরকম অনেক আইন আছে, যা যুগের প্রয়োজনে পরিবর্তন প্রয়োজন, অনেক আচার আছে যেগুল এখন অর্থহীন, অনেক ব্যবহার আছে যেগুল এখন আশোভনীয়, আল্লাহর আইন যদি কোন আধুনিক জ্ঞানহীন হুজুরদের দারা প্রতিষ্ঠিত হয় তাহলে তাদেরকে কি এসব বুঝান যাবে? তারা তো আল্লাহর আইন বলতে অন্ধ, আর যারা সচেতন, তাদেরকেও এসব ক্ষেত্রে বিধান লঙ্ঘন করতে হবে। এ বিষয়গুল এখন অনুধাবন করতে দেরী করছে তারা সহ অনেক মুসলিম।
আরেকটি কারন ছিল দাস প্রথা নিয়ে বিস্তারিত কিছু মুক্তমনাতে দেখিনি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এ মাসে মানবতার মুক্তির জন্যে যেসব ঘটনা ঘটেছিল সেটিও সামনে আনার ইচ্ছা ছিল। খুব খারাপ লেখক বলে সেটা পারিনি।
”মুসলিম সমাজে দাস প্রথাঃ” পড়ে আমি যা উপলব্ধি করছি: ধর্ম যেখানে ব্যর্থ সেকুলার নীতি সেখানে সফল।তাই মুসলিম সম্প্রদায়কে উন্নয়নের স্বার্থে সেকুলার না হয়ে উপায় নেই।রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা করতেই হবে।
ইহুদি-খৃস্টান-হিন্দু-মুসলমান কারো গ্রন্হে দাস প্রথাকে অনৈতিক মনে করেনি।
কাজেই দাস প্রথা জিয়ে রেখে কোন ধর্মের কে দাসকে বিশী খাবার দিল সে প্রশ্ন আমার কাছে অবান্তর মনে হয়।কেনোনা,মানবতার মধ্যে দাসত্বের কোন স্হান নেই।আনাস সাহেব, ঠিক বলিনি?
তাই তথাকথিত ধর্মের তথা কোরানের আইন দিয়ে আজকের মুসলিম জীবন-সমাজ-দেশ-জাতির সুখ-শান্তি-প্রগতির স্বপ্ন দেখা সম্ভব নয়। যুগের চাহিদা কেতাবে নেই,তাহা মুসলমানকে বুঝতে আর কত দেরী আনাস সাহেব?
সেকুলার-উদার আইন দ্বারাই মানবমুক্তি সম্ভব।
মোহাম্মদের দেশ সৌদি আরবই পৃথিবীর মধ্যে সর্বশেষ রাষ্ট্র যে,১৯৬৩ সানে দাস প্রথা বিলুপ্তির এই সেকুলার আইনটি পাশ করে।
আজো দীনের নবীর সৌদি সমাজে ইসলামই একমাত্র বৈধ ধর্ম। অন্যধর্ম বেআইনী।একবার চিন্তা করুন প্রিয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা, কেন শান্তি নাই আল্লার দুনিয়ায়।
আধুনিক সভ্যতার সুফল মুসলমান রাষ্ট্রগুলো দেরীতে গ্রহণ করার পেছনে যে বড় কারণ তাও আবার ধর্ম যাহা, মানুষকে সর্বদা পেছনে ধরে রাখে।তাই মুসলিম সম্প্রদায় সামনের কাতারে আসবে কেমনে!
হাঁ মানবতাবাদ প্রতিষ্টার জন্য যুগের প্রয়োজনে, মানুষকে সবকিছুর ঊর্ধে স্হান দিতে হবে। ধর্মের চশমা চোখ থেকে খুলে ফেলতে হবে। মানুষকে দেখতে হবে মানুষের চোখে।
আরো লিখুন।মানবতা ছড়িয়ে পড়ুক সবখানে।
ধন্যবাদ!
@সালাম,
ঠিক। ভিডিও লিনক ডেখো ।
http://www.charlierose.com/view/interview/1385
@সালাম,
একই ভাবে মিশরীয় সভ্যতা, গ্রীক সভ্যতা, কিংবা রোমান সভ্যতাও দাস প্রথাকে অনৈতিক মনে করেনি। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও শ্রমসংক্ষেপ করার যন্ত্র পাতি আবিস্কার না হলে আমাদের এখনকার সভ্যতাও যে দাসপ্রথাকে অনৈতিক মনে করত বলে মনে হয়না। আসলে সকল সভ্যতাই মানুষের স্বার্থের নিগড়ে বন্দি। স্বার্থের জন্য সকল সভ্যতাই নিচু কেন করতে পিছপা হয় না। ‘ষ্ট্র্যাটেজিক ইন্টারেষ্ট’ হাসিলের জন্য ইরাক, আফগানিস্থানের দখল ও লক্ষ লক্ষ নারি-পুরুষের হত্যা, মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোড়া ইসরাইলকে সমর্থন কিন্তু সেই রাষ্ট্রই করে যাচ্ছে যে কিনা দাস প্রথাকে উচ্ছেদ করেছিল।
আসলে একদল স্বার্থ লিপ্সু লোক ধর্ম বা রাষ্ট্রের দোহাই দিয়ে তাদের স্বীয় স্বার্থকে চরিতার্থ করে নিচ্ছে। এখানে কেবল ধর্মকে দায়ী করা মানে হচ্ছে যারা রাষ্ট্রের আবরনে একই কাজ করে চলছে তাদের ওয়াক ওভার দেয়া। আফ্রিকার যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশগুলিতে এখোনো বন্দিদের দাসের মতো ব্যাবহার করা হচ্ছে। আসলে প্রকৃত সমস্যার দিকে না তাকাতে হলে নিরেপেক্ষ দৃষ্টি নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত। খন্ড দৃষ্টি বা বিশেষ কোন সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃনা আমাদের বিভক্তই করে রাখবে।
সৌদি নিয়ে মাতামাতি করার কোন কারন দেখিনা। ইসলামে রাজতন্ত্র অস্বীকার করার পরও সৌদিতে রাজতন্ত্র বহাল তবিয়তে আছে। তাই সৌদিকে (মুহাম্মদের দেশ হবার পরও) ইসলামের ঠিকাদার ভাবা ঠিক না। প্রসঙ্গত বলা চলে ভ্যাটিকানেও কিন্তু খৃষ্টধর্ম ছাড়া অন্য ধর্ম নিষিদ্ধ।
ধর্মের বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা কেবল বিভক্তিই উস্কে দেয়। আমাদের টার্গেট হওয়া উচিত মানুষ। কোন ধর্ম নয়।
@shamim,
মনে রাখবেন, একটি অন্যায় অপর আরেকটি অন্যায়কে বৈধতা দিতে পারে না।
ইসলাম ধর্মকে যেহেতু আল্লাহ প্রদত্ত বলে দাবি করা হয় তাই এর সামান্য অযোগ্যতা বা দুর্বলতাই একে মিথ্যা প্রমাণ করে তোলে।
@সৈকত চৌধুরী, আসলে এখানে লেখক ইসলামের সত্যতা নিয়ে আলোচনা করেনননি তিনি দাস ব্যাবস্থার একটি ইতিহাস টেনে মুসলিম সমাজে দাস ব্যাবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। ইসলাম দাসপ্রথাকে উচ্ছেদ করেনি এটা আমি মেনি নিয়েই বলেছি পরবর্তিকালে মুসলিম সমাজ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে ধীরে ধীরে দাস প্রথা উঠে গেছে। এটি এখন অতিত। বরংচ যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশগুলিতে কিংবা আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক চক্রান্তের স্বীকার হয়ে এখোনো অনেকেই দাসত্ব (বাধ্যতা মূলক দেহ ব্যাবসা ইত্যাদি) বরন করছেন।
এখানে ইসলামের সত্যতা প্রমান করা আমার উদ্দেশ্য নয়। আমি লেখককে শুধু আহবান জানিয়েছি আরও বৃহত্তর পরিসরে সমস্যাটিকে অনুধাবন করার জন্য। ইসলাম মিথ্যা প্রমানিত হলেই বা মুসলিম সমাজ অতিতের কৃত অপরাধের জন্য কলংকিত হলেই সমস্যার সমাধান হবেনা।
আনাস,
কথা রেখেছেন, মুক্তমনাও ছাপিয়েছে। লেখা যদি মুক্তমনার নির্ধারিত নীতি বহির্ভুত না হয়, আশা রাখি তারা ছাপাবেন। প্রথম লেখার জন্যে গোলাপী শুভেচ্ছা- :rose2:
‘মুসলিম সমাজে দাস প্রথাঃ’- এই শিরোনামে রচনা পড়তে এসে হোচট খেয়েছি। আসলে লেখাটি শিরোনামের সাথে সামঞ্জস্য পূর্ন হয়নি।
উপোরোক্ত উক্তি দুটি আপাত ভাবে পরস্পর বিরোধী মনে হয়। লেখকের মতানুসার ‘তাত্বিক ভাবে’ অনুমোদন থাকার পরও সেকুলার আইনেই নিষিদ্ধ করায় ‘মুসলিম রাষ্ট্র’-গুলি অনেকদুর এগিয়ে গেছে বলে মনে হয়।
সভ্যতার নান যুগে একেক সমাজ অন্য সমাজের চেয়ে এগিয়ে থাকে এটাই স্বাভাবিক। যেমন মধ্যযুগে পশ্চিমা সমাজের চেয়ে মুসলিম সমাজ এগিয়ে ছিল। বর্তমানে পশ্চিমা সমাজ নেতৃত্ব দিচ্ছে। তবে সম্ভবতঃ এই নেতৃত্বও চিরস্থায়ী নয়।
আর এখানে মুসলিম রাষ্ট্র ব্যাপারটি স্পষ্ট নয়। লেখক কি ইসলামি রাষ্ট্র না মুসলিম সংখ্যাবহুল রাষ্ট্র বুঝাতে চেয়েছেন তা বুঝা যায় নি। তাছাড়া, মুসলিম রাষ্ট্র যদি প্রথম সারিতে না থাকতে পারে একই ভাবে অনেক আফ্রিকান অনেক ‘খৃষ্টান রাষ্ট্র’-এর অবস্থা খুব ভালো নয়। এসব আফ্রিকান অনেক দেশে এখনো বল পূর্বক শিশু সৈন্য নিয়োগ করা হয়। ঐ সকল শিশু সৈন্য বা যুদ্ধ-বিদ্ধস্ত এলাকায় সাধারন ভাবে বন্দি নারী শিশুদের অবস্থা কোন ভাবেই দাসদের চেয়ে ভালো নয়।
আসলে এসব ক্ষেত্রে মুসলিম বা খৃষ্টান এসব বড় নয় মানবতাই মূল কথা। লেখকের লেখায় আরো গভিরতা আশা করি।
@shamim,
আমার লিখার দারা সমাজের কোন পরিবর্ত্ন হবে সেটা আশা করি না, যদি আমি বা আমরা পরিবর্তনের উদ্যোগ না নেই তাহলে এসব আলোচনা করে লাভ নেই, মানুষ আতেল বলবে।
আর কারো খারাপ আমার খারাপের বৈধতার উৎস হতে পারে বলে আমি মনে করি না, আমেরিকানরা অনেক খারাপ করে, তাই বলে সেগুলকে আমার খারাপের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করব সেরকমটা ভেবে শান্তনা পেতে পারি মাত্র। যে কেউ একটি ভাল কাজ করল, সে কাজটি আমি আগে করতে পারতাম কিনা অথবা সে কাজটি দেখে তাকে অনুসরন করার মত মানসিকতা তৈরী হোক, সেটাই আমার কাম্য।
@আনাস,
কিন্তু আমি আশাকরি আপনার লেখার মাধ্যমেই সমাজের পরিবর্তন হতে পারে। তবে খেয়াল রাখবেন যাতে কোন বিশেষ কোন জনগোষ্ঠিকে ‘সিঙ্গেল আউট’ করা না হয়। দাস প্রথা টিকিয়ে রাখার জন্য প্রাচিন সব সভ্যতা দায়ী হবার পরও এখানে (অন্ততঃ শিরোনাম পড়ে) প্রকারন্তরে কেবল মুসলিম সমাজকে দায়ী করা হয়েছে। এভাবে আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হয়। ধর্মপ্রান সাধারন (যারা যুক্তি শুনতে চায়না) মানুষকে আঘাত করে নিশ্চই আপনি তাদেরকে সঠিক পথে আনতে পারবেননা।
অতিতের চেয়ে মুসলিম সমাজের অবস্থা এখন অনেক ভাল। কারন অন্যান্য সমাজের সাথে মুসলিম সমাজেরও বিবর্তন হয়েছে। সাধারন ভাবে একজন সাধারন মুসলিম দাস প্রথাকে ভালোবাসেনা। এই কথার স্বীকৃতি দিতে হবে এবং অন্যান্য যে সব পশ্চাদপদতা এখোনো আছে সে জন্য সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে। কিন্তু আমাদের মধ্যে দোষারোপ আর কাদা ছোড়াছুড়ির প্রবনতা বেশী। প্রথমে গালি দিয়ে যত ভাল কাজেরই ডাক দিন না কেন কেউ তাতে সাড়া দিবেনা।
তাই আসুন মুসলিম, হিন্দু, খৃষ্টান ইত্যাদি আলাদা ভাবে না ভেবে এক সাথে সবার সাথে কাজকরি।
@shamim,
এখানে ইসলাম নিয়ে বেশি মাতামাতির কারণ- এটাই এখানে প্রাসঙ্গিক।
মুক্তমনায় মনে হয় এটাই আপনার প্রথম লেখা।
ভালো লাগলো”””’চালিয়ে যান……