প্রাচীন প্রায় সকল সভ্যতায় দাস প্রথা প্রচলিত ছিল, মিসর, মেসোপটেমিয়া, ভারত ও চীনে দাসদেরকে গৃহসেবা, নির্মাণ, কৃষি, ও যৌন কাজে ব্যবহার প্রচলিত ছিল। আমেরিকা, ইনকা ও মায়া সভ্যতায় দাসদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করা হত। ইসলামেও এ প্রথা গৃহীত হয়েছিল পুর্বে প্রচলিত সমাজ ব্যবাস্থা থেকেই, যদিও ইসলাম আরব সমাজে একটি নৈতিক ব্যবস্থা প্রণয়ন করেছিল, তবুও মানবতার জন্য চরম অবমাননাকর এ প্রথাকে বিলুপ্ত করেনি।

তাত্তিক ভাবে ইসলামে দাস প্রথা এখন বৈধ, তবে সকল মুসলিম রাস্ট্রে দাস প্রথা সেকুলার আইনে নিষিদ্ধ। যুদ্ধ ও বংশগতভাবে প্রাপ্ত মানুষকে ইসলামী আইনে দাস হিসেবে গ্রহন করার অনুমতি আছে এবং দাসদের ব্যবহার ইসলাম পুর্বেকার সমাজে প্রচলিত ব্যবহার থেকে কিছুটা ভিন্নতা এনেছে মাত্র।

সন্দেহ নেই যে ইসলাম দাসদের অবস্থা উন্নত করেছিল নানা ভাবে, দাসদের অধীকার রক্ষায় ছিল নানা রকম আইন, দাস মুক্তির জন্য ছিল নানা ব্যবস্থা, দাসদের সাথে ব্যবহার ছিল পশ্চিমা সভ্যতা থেকে অনেক বেশী মানবিক। যাকাত থেকেও দাসদের মুক্তির লক্ষ্যে অর্থের যোগান দেয়ার ব্যবস্থা ছিল।

তারপরও আজকের যুগের নৈতিক মানদন্ডে সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ এ ব্যবস্থা বিলোপে মুসলিম রাস্ট্রগুলোর অবদান প্রথম সারিতে অবস্থান নিতে পারেনি। ১৮৩৩ সালে ব্রিটেন দাস ব্যবসা বিলোপ আইন পাস করে। মার্কিন যুক্তরাস্ট্রে ১৮৬৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর দাসপ্রথা বিলোপ করা হয়। উপনিবেশিক প্রভাবাধীন মুসলিম রাস্ট্রগুল উনিশ শতকের শুরুর দিকে এ প্রথা বিলোপ করলেও অনেক মুসলিম দেশে এ প্রথা বিলোপ হয় ১৯৫০ এর পর। এ তালিকায় সৌদি আরব সহ প্রথম সারির মুসলিম দেশগুল রয়েছে।

প্রতিবছর ২ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দাসমুক্তি দিবস পালন করা হয়। ক্ষুধা, দারিদ্রতা দূর করে মানুষের মাঝে শান্তি, সমঝতা ও সমতা তৈরী করতে মানব সভ্যতার সামনে এখন বিশাল কাজ পড়ে রয়েছে। কোন নির্দিস্ট মতবাদ প্রতিষ্ঠা নয়, মানবতাবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য যুগের প্রয়োজনে নৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। মুসলিম সম্প্রদায় বিষয়টি যত দেরীতে উপলব্ধি করবে তাদের উন্নয়ন ততই দীর্ঘায়িত হবে।

তথ্য সূত্রঃ

http://www.bbc.co.uk/religion/religions/islam/history/slavery_1.shtml

http://en.wikipedia.org/wiki/Abolition_of_slavery_timeline