স্বপ্নাদের সাথে সাথে স্বপ্নরাও হারিয়ে যায়
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ভূমিকা ছিল অনন্যসাধারণ। এই বেতার কেন্দ্র থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বাড়ানোর জন্য অসংখ্য অবিস্মরণী গান সৃষ্টি করা হয়েছে। সেই সব গান এখনো আমাদের মুখে মুখে ফেরে। আমার মতে ওই সব অবিস্মরণী গানের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ গানটি হচ্ছে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে। গানটি গেয়েছিলেন স্বপ্না রায়। কুমিল্লার মেয়ে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মাত্র একুশ বা বাইশ বছরের তরুণী ছিলেন তিনি।
আমার কেন যেন যে কোন গানই প্রথমবার রেকর্ড করা প্রথম শিল্পীরটাই সবচেয়ে ভাল লাগে। ওই গান পরে আরো বড় কোন শিল্পী গাইলেও আর ভাল লাগে না। এমনকি সেই শিল্পী নিজে গাইলেও না। সাবিনা ইয়াসমিন তার বেশ কিছু জনপ্রিয় গান আবার গেয়ে একটা সিডি বের করেছেন। আমার মোটেও ভাল লাগেনি। তার প্রথমবার গাওয়া গানগুলোই আমার বেশি পছন্দের।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে গানটার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। স্বপ্না রায়ের পর অসংখ্য শিল্পী এই গানটি গেয়েছেন। কিন্তু আর কারো কন্ঠেই আমি স্বপ্না রায়ের সেই আবেগ খুঁজে পাইনি। হয়তো সময় একটা বিশাল ফ্যাক্টর। আবেগ হয়তো সময়ের উপর বিপুলভাবে নির্ভরশীল।
গোবিন্দ হালদার নামের কলকাতা আয়কর দপ্তরের এক কর্মী, যিনি ছিলেন একজন গীতিকবি, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে একগাদা অসাধারণ গান লিখে দিয়েছিলেন। আমরা কত কত আলতু ফালতু লোককে সম্মাননা দিয়েছি। অথচ এই সাদাসিধে মানুষটিকে সম্মান জানাতে পারিনি, দিতে পারিনি তার প্রাপ্য মর্যাদাটুকু।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে গানটির সুর দিয়েছিলেন আপেল মাহমুদ। রেকর্ডিং এর সময় গায়ে ১০৪ ডিগ্রি জ্বর নিয়ে গানটি গেয়েছিলেন স্বপ্না রায়।
কেউ কি জানেন স্বপ্না রায় এখন কোথায়? কোথায় হারিয়ে গেলেন তিনি? বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন? স্বপ্না রায়ের কোন হদিস এখন পর্যন্ত আমি পাইনি। কী আশ্চর্য তাই না। এরকম অবিস্মরণীয় একটি গানে যিনি কণ্ঠ দিলেন, তিনি কোন স্বপ্নের মাঝে হারিয়ে হারিয়ে গেলেন তার কিছুই আমরা জানি না।
অবশ্য জেনেই বা কী হবে আমরাতো সবকিছুই ভুলতে চলেছি। যে মুক্তিযোদ্ধারা একদিন জানপ্রাণ দিয়ে যুদ্ধ করে আমাদের একটা স্বাধীন দেশ দিয়ে গেছে তাদেরকেই ভুলতে চলেছি আমরা। ক’দিন পরে হয়তো ভিনদেশী পরম বীর চক্রদেরকেই মাথায় নিয়ে নাচবো আমরা। তারা না থাকলে কী আর স্বাধীন হতাম আমরা?
আমাদের হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন স্বপ্না রায়। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যারা আমাদের স্বাধীনতা এনেছেন আমরা তাদেরকে কোনদিন ভুলবো না। সেই প্রতিশ্রুতি থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি আমরা। আমরা শুধু ভুলিইনি। এখন কোমর বেধে মাঠে নেমেছি তাদেরকে অপমান করার জন্য। স্বাধীনতার সূর্যকে বন্দী করার জন্য একদিন যারা জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিল, আজ তাদেরকেই শুনতে হচ্ছে ভারতীয় বীরদের বীরত্বগাঁথার কথা।
হোসেন ফরিদ নামের একজন নৌ-কমান্ডো দ্বিতীয় অপারেশন জ্যাকপটের সময় চট্টগ্রামে ধরা পড়েছিলেন পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে। পাকিস্তানীরা তার অর্ধেক শরীর ম্যানহোলের মধ্যে ঢুকিয়ে বাকী অর্ধেকে উলটো দিকে চাপ দিয়ে মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়ে তাকে হত্যা করেছিল নির্মমভাবে। কোন জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী তারা এটা করেছিল কে জানে?
ভারতীয়রা যখন তাদের লোকক্ষয় হবার ভয়ে পাকিস্তানীদের আত্মসমর্পণ করানোর ফন্দিফিকির খুঁজছিল, তোমরা তখন অকুতোভয়ে জানবাজি রেখে প্রস্তুত হচ্ছিলে নিয়াজীর সদরদপ্তর আক্রমণ করার জন্য। ধূর্ত ভারতীয় জেনারেল শুধু মাথামোটা পাকিস্তানী জেনারেলকেই ব্লাকমেইল করেনি তোমাদের ভয় দেখিয়ে, তোমাদেরকেও ধাপ্পাবাজি দিয়ে আক্রমণ থেকে বিরত রেখেছিল। নইলে যে তোমাদের সাজানো মঞ্চে দাঁড়িয়ে গলায় ফুলের মালা পরা যেত না। বন্ধু ভেবে তোমরা যাকে নিয়ে এসেছিলে বিয়ের বরযাত্রীতে, সেই বন্ধুই তোমাদের ঠেলে সরিয়ে দিয়ে নির্লজ্জ্বের মত মাথায় পাগড়ী পরে কনের পাশে গিয়ে বসে পড়েছে আকর্ণ বিস্তৃত হাসি নিয়ে।
এই মুক্তমনার প্রথম পাতাতেই উইকিযুদ্ধ নামে একটা প্রবন্ধ আছে। উইকিতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মহাযজ্ঞ শুরু করার কথা বলা হয়েছে। অনেকেই দেখলাম সেখানে তাদের জানপ্রাণ দিয়ে দিতে চেয়েছেন। অথচ মুক্তমনায় যখন মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় অবদান স্বীকার করার নামে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করা হয়, ভারতীয়দের হাইলাইট করার মাধ্যমে আমাদের বীরত্বগাঁথাকে বুঝে অথবা না বুঝে খাটো করা হয়, তখন কাউকে পাওয়া যায় না এক লাইনের একটা প্রতিবাদ জানাতেও।
হোসেন ফরিদসহ অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ক্ষমা চাওয়া ছাড়া আমার আর কিছু নেই। তোমাদের কথা দিয়েছিলাম কোনদিন ভুলবো না, কিন্তু সেই কথা রাখতে পারিনি আমরা। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আর কখনো কিছু লিখবো কিনা সে বিষয়েও গভীরভাবে চিন্তা করছি আমি। হৃদয়ে এত রক্তক্ষরণ আর সহ্য হয় না। একা একা আত্মহত্যা করা যায়, যুদ্ধ করা যায় না।
স্বপ্না রায়ের মত আমাদের স্বপ্নগুলোও যে হারিয়ে গেছে তেপান্তরের মাঠে।
|
@Truthseeker
এখানে কারো চাওয়া না চাওয়ার ব্যাপার না, বাস্তবের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ভবিষ্যতে উচ্চ প্রযুক্তিবিদ্যার কারনেই রাষ্ট্রের অস্তিত্ব লোপ পাবার কথা।
বিপ্লব পালের মতো আমারো বিশ্বাস,
@ব্রাইট স্মাইল,
আশার কথা। ভাল লাগল শুনে।
অসাধারণ লেখা ফরিদ ভাই।
এর আগে মনে হয় একবার বলেছিলাম, আবারো বলছি নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানোর একটা খুব ভাল পদ্ধতি হতে পারে খুব ভাল মানের অন্তত একটি কম্পিউটার গেমস তৈরি করা। ২য় বিশ্বযুদ্বের উপর অনেক গেমস আছে, ৭১ এর উপর কেন নয়? তবে লক্ষ্য রাখতে হবে সে গেমস যেন মুক্তিযুদ্ধের অবমাননা না করে।
ফরিদ ভাই, গান বিষয়ক পোস্ট – ভালো তো আমার লাগবেই! তার ওপর স্বপ্না রায়ের ভিডিওটা উপরি পাওনা 🙂
কিন্তু, আদিল মাহমুদের পোস্টে আমার একটা মন্তব্য থেকেই খুব সম্ভবত বিতর্কটা শুরু হয়েছিলো, সেই হিসেবে আপনার বক্রোক্তি উদ্দিষ্টদের মধ্যে বোধহয় আমিও একজন। আর ঐ পোস্টে আর মন্তব্য করবেন না বলে লিখলেও, দেখাই যাচ্ছে আপনি একই বিষয়ে অন্য পোস্টে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন, অতএব আমিও আমার বক্তব্য জানাচ্ছি।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপনার আবেগ বা নিরাবেগ থাকতেই পারে – কিন্তু –
এই কথাটায় খুব স্পষ্ট করেই দ্বিমত জানাচ্ছি। আদিল মাহমুদ তার একাধিক মন্তব্যে বলেছেন, আর নিজের কথা তো আমি জানিই – মুক্তিযোদ্ধাদের “সুকৌশলে” ছোট করার কোন অভিপ্রায় এখানে কীভাবে বোঝা গেল, বুঝতে পারলাম না!
বহুদিন আগে সচলায়তনে এক কুখ্যাত রাজাকারকে এলাকাবাসীর কবর দিতে বাধা দেয়া বিষয়ক আপনার একটা পোস্ট ছিলো যেটা পরে মুছে ফেলা হয়। আপনার বক্তব্য কী ছিলো আমার মনে আছে। কিন্তু, ঐ সময় যদি আপনাকে বলা হতো আপনি “সুকৌশলে” যুদ্ধাপরাধী বা রাজাকারদের প্রতি সমবেদনা ছড়িয়ে দিতে চাইছেন, সেটা ঠিক হতো কি?
(যুদ্ধাপরাধী ছাড়া) কোন বাংলাদেশী সুস্থ মস্তিষ্কে মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান বেশি, বা বাংলাদেশের অবদান কম, এটা মনে করে না। ভারতের সব নীতি যথাযথ ছিলো সেটা কেউ বলেনি। বা, বাংলাদেশকে তারা স্বর্গের দেবদূতদের মতো বিনা স্বার্থে সাহায্য করতে ছুটে এসেছিলো, সেটাও কেউ বলে নি। কিন্তু যে যুদ্ধ নিয়ে এতো আবেগের কথা বলি, সেই যুদ্ধ করতে এসে (সম্পূর্ণ কূটনৈতিক বা অর্থনৈতিক কারণেই যদি হয়ও) অন্য দেশের যারা প্রাণ দিলো, তাদের কথা জানতে পেরে আমি আবারও কৃতজ্ঞ বোধ করছি! আজকে আপনি আমি তো ঠিকই বেঁচে আছি, ব্লগ লিখছি আর আবেগ প্রকাশ করছি – কিন্তু তারা নেই!
আমাদের দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে যৎসামান্য যতটুকুই জানি, ভিনধেশী এদের নিয়ে কিছুই জানতাম না, আদিল মাহমুদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সেটাই ছিলো মূল কারণ। সাধারণ এই কথাটার যে এতো ওজন, কে জানতো!
@স্নিগ্ধা,
ভাগ্যিস আপনার মন্তব্যটা মডারেশন এ আটকে ছিল। নাহলেতো লোকে ভাবতো আমি আপনার ঝাড়ি খেয়ে শব্দটা সরিয়েছি। 🙂
@ফরিদ আহমেদ,
আহা – নাহয় কিছু কৃতিত্ব আমাকে দেয়াই হলো! আমারও কি আর (কু)খ্যাতির লোভ কিছু কম! 😀
এটা একটু বেশী আবেগপূর্ন কথা বার্তা হল। যেকোন ভদ্র এবং পেশাদার জেনারেলই চাইবেন, যুদ্ধে তার সেনা বাহিনীর কম ক্ষতি হৌক। যুদ্ধকে স্ট্রাটেজি দিয়ে কমাতে পারলে ক্ষতি কেন হবে? হিংসা কি আমাদের কাম্য? সেটাকে কমাতে কেও স্ট্রাটেজি লাগালে ক্ষতি কি?
বাংলাদেশে, ভারত এসবের অস্তিত্ব বেশী দিন আর নাই। তাই যথটা সম্ভব বস্তু নিষ্ট ভাবে মুক্তিযুদ্ধকে দেখে আদিল ভাই ঠিক ই করছেন। আদিল ভাই এর বস্তুনিষ্ঠ ইতিহাস ই ভবিষ্যত প্রজন্ম জানবে-কারন ইতিহাসকে দেখার সেটাই সঠিক পথ। আবেগ ইতিহাসের দ্বন্দকে প্রশমিত করে। তাই আবেগ পরিহার করে বস্তুনিষ্ঠ থাকায় ভাল। সত্যের স্থান দেশ এবং ব্যাক্তির ওপরে।
@বিপ্লব পাল,
তুমি কিভাবে ভারত বাংলাদেশ এর ভবিষ্যতবানী করছ? ভিত্তি
কি?
@Truthseeker,
যেকোন সমাজ বিজ্ঞানের তত্ত্বই বলে রাষ্ট্র বিলুপ্ত হবে। পৃথক রাষ্ট্রের অস্তিত্বের কোন যুক্তি নেই। শুধু মানুষে মানুষে ভেদ বাড়ানো। এটা সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
@বিপ্লব পাল,
সমাজতত্ত্ব আর বস্তব আলাদা।
economist-রা অর্থনীতি ভবিষ্যতবানী করতে পারেনি।
একটা বড় দেশ চাইবে ছোটো দেশ আকোমোডেট করতে। কিনতু একটা ছোটো দেশ ্চাইবে না বড় দেশে জোগ দিতে।
ভারত চাইবে বাংলাদেশ জোগ দিক। কিন্তু বাংলাদেশ তা চাইবে না। এটাই স্বাভাবিক। বিপ্লব তুমি মুক্তমনাদের জিজ্ঞাসা কর এই কথা। দেখ কি উত্তর পাও।
@ Truthseeker,
বিপ্লব পাল ঠিকই বলেছেন।
পৃথক রাষ্ট্রের উদাহরণ দিতে গিয়ে ভারত বাংলাদেশের নাম বিপল্লব উল্লেখ করেছেন।
আসলে কেও কারো সাথে যোগ দেয়া নয়, পৃথিবীর সকল পৃথক রাষ্ট্রের এই অদৃশ্য সীমানা প্রাচীরটা ‘সময়েই’ তোলে দিবে।
(বর্লিনের প্রাচীর ভেঙ্গে পূর্ব পশ্চিমের আনুষ্টানিক মিলনের মতো নয়।)
খেয়াল করে দেখুন,পৃথিবীর সমস্ত আয়োজন সেদিকেই ক্রমাগত এগুচ্ছে।
আজকের এই পৃথিবী নামক সমাজের বাসিন্দা শুধু আমাদের সন্তানেরাই হয়ে থাকবে যে তা নয়,আপনি-আমিও কার্যত অনেকটাই হয়ে যাচ্ছি।
‘মানব স্বভাব,বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিই’ এই পৃথক পৃথক রাষ্ট্রের বাস্তবতা বিলুপ্তিকরনের একমাত্র নিয়ামক(catalyst) হয়ে ওঠছে।
দেখুন, সমাজের গতি নদীর স্রোতের মত ধাবমান।
কিন্ত্ত অর্থনীতির গতি সর্বদা ফ্লাকচুয়েট করে, মানে আগায় পেছায়, আবার এগিয়ে যায়। (সকালের বাদশা বিকেলে ফকির!)
মানুষ যুক্তবাদী প্রাণী।তাই সে যৌক্তিক পথ ধরে চলতেই আরাম পায়।
আমিও বলি,”পৃথক রাষ্ট্রের অস্তিত্বের কোন যুক্তি নেই।
শুধু মানুষে মানুষে ভেদ বাড়ানো।এটা সময়ের আপেক্ষা মাত্র।”
কিছুটা ভীরু কণ্ঠে গাওয়া স্বপ্না রায়ের সেই গানটি ছিলো স্রেফ অসাধারণ। যদ্দূর মনে পড়ছে, হারমোনিয়ামও ছিলো ব্যবহৃত বাদ্যযন্ত্রের তালিকায়। মূল গানটি কি কোথাও পাওয়া যায় না?
বাংলা গানের ক্ষেত্রে একেবারেই আমারও মনের কথা। ক’দিন আগেই আপনি বলছিলেন, অসাধারণ কিছু গানের মূল রেকর্ডিং সহজলভ্য হলেও শ্রীকান্তের করা ফ্যাকাসে (শব্দটা আমি যোগ করলাম 😀 ) কাভার ভার্শন লোকে কেন শোনে, বুঝতে পারেন না। আমিও পারি না। আসলে পাবলিক-রুচির মতিগতি অনুমান বড়ো মুশকিল। মনে পড়ে, দেশে এক সময় হিন্দিতে গাওয়া রবীন্দ্রসঙ্গীত ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। বাংলা রবীন্দ্রসঙ্গীতের চেয়ে হিন্দি রবীন্দ্রসঙ্গীত বাঙালির কানে কেন বেশি শ্রুতিমধুর মনে হবে, সে এক রহস্য।
তবে গুটিকয় ইংরেজি গানের মূল রেকর্ডিং-এর চেয়ে রিমেইক অনেক ভালো লাগে আমার, এ কথা স্বীকার করতেই হচ্ছে 🙂
@একজন নির্ধর্মী,
এই যে স্বপ্না রায়ের গাওয়া মূল গানটি।
httpv://www.youtube.com/watch?v=8GXc1bJH0YY
জানিনা জানিনা কিচ্ছু জানিনা।
ফরিদ মামা, আপনি আপনার ভয়ানক আবেগের চরমটাই ব্যবহার করে ফেললেন।
শুধু কাঁদতে ইচ্ছা করছে ভয়ানক ভাবে!
ঠিক আছে এবার আমি আপনাকে খুশি করার চেষ্টা করব। আপনার পক্ষে দাড়াবো। পাকিস্তানীদের ভয়ানক অত্যাচারের কিছু পোস্ট আমি লিখবই।
তবে হ্যা এটা সত্যি যে ভারতীয় যোদ্ধাদের কথা বাদই দিলাম,তবুও তো ভারত( ভারতের সরকারের কথা না,জনগনের কথা বলছি) যে আমাদের প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিল সে জন্যও তাদের প্রাপ্য ধন্যবাদটুকু আমরা দেইনি। উলটো বাঙ্গালী জাতি এতই নির্লজ্জ যে যুদ্ধের পরে যখন আমাদের দেশে ভুট্টো সাহেব আবার এলেন তখন নাকি তাকে জনতা রাস্তার দুধারে হাত নেড়ে নেড়ে ফুল মেরে অভ্যর্থনা দিয়েছে!! (আমার কথা না, মুনতাসির মামুনের বইয়ে পড়া।)
আবার যে ভারতের কথা লিখলাম তাতে মন খারাপ করেন না।
আর মর্যাদা আমরা কাউকেই দিতে পারিনি,যারা নিয়েছে তারা জোর করে তাদের মত করে আদায় করেছে। সে দোষ আপনি জনগন কে দিতে পারেন না। জনগণকে বার বার বিভ্রান্ত করা হয়েছে। মুনতাসির মামুন স্যারের লেখায় পড়েছিলাম তিনি আক্ষেপ করেছেন নিজেদেরই দোষারোপ করছেন, যখন সব নষ্টদের অধিকারে যাচ্ছিল তখন তারা প্রতিবাদ করেন নি,এজন্য তিনি সব দোষ তার মত বুদ্ধিজীবী সমাজের ঘাড়েই তুলে নিয়েছেন। তাহলে আপনি কার দোষ দেবেন?
আর সুকৌশল বলে আপনি কেন কাউকে মিন করছেন? তিনি হয়তো শুধু আমাদের জানাতেই চেয়েছিলেন। এতে মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযোদ্ধাকে খাটো করার কি আছে?
মুক্তমনায় ধর্মবাদীদের লেখালেখি করাকে যদি আপনি মুক্তমনার জন্য অবমাননা বলে মনে করেন তবে সেটাকি আপনার “মুক্তমন” ধারনাকেই ছোট করা হয় না?
আমি জানি পাকিস্তানীদের ভয়াবহ নৃশংসতার তুলোনায় তাদের বিচার কিছুই হয়নি। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় আমরা ঘরের শত্রু কোলে রেখে বাইরের শত্রুর বিচারের দাবি জানাই কিভাবে?
আর আবেগ খুব ভয়ানক জিনিস( যদিও বাঙ্গালীর ভয়ানক আবেগের তোড়েই পাকিস্তানীরা ভেসে গেছে)। আবেগই মানুষকে ধর্মান্ধ বানায়, আবেগই মানুষকে তার চোখের সামনে জমে থাকা ভূল গুলো থেকে দূরে সরিয়ে দেয়,আরো দূরে সরিয়ে দেয় বাস্তবতা থেকে।
@তানভী,
ডিসেম্বর মাস শেষ হয়ে আসছে, দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই………।
প্রশ্নটির প্রাসঙ্গিকতা আছে বলে মনে হচ্ছে না।
@সৈকত চৌধুরী,
এভাবে বলাটা মনে হয় ঠিক না।
তানভী বাংলা উইকিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লেখা নিয়ে যথেষ্ট নিষ্ঠা নিয়ে সময় দিচ্ছে। আমাদের আগের প্রজন্ম আর আমরাও যা করতে পারিনি তা এই প্রজন্ম করছে। এদের অন্তত উতসাহ দেওয়া উচিত। নুতন প্রজন্মের অনেক কিছুই জেনারেশন গ্যাপের কারনে ঠিক মানতে পারিনি না, তবে এদের একটা ব্যাপারে আমি মনে করি এরা আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে আছে। আমাদের ছেলেবেলায় এমন কি যৌবনকালেও দেখতাম বন্ধুবান্ধবরা মুক্তিযুদ্ধে বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনায় তেমন উতসাহী না। বেশীরভাগেরই স্কুলের বই এর বাইরে জানার তেমন আগ্রহ নেই, ফলাফল যা হবার তাই; বিকৃত ইতিহাস ধারন করে সারাজীবন কাটছে। এখনো মুজিব ধরা দেন আর শহীদ জিয়ার ডাকে দেশ মক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে এই ধরনের ধারনা নিয়ে আছে। এই প্রজন্মকে আমি যতটুকু দেখছি এরা অনেক বেশী সিনসিয়ায়, এরা অন্তত প্রকৃত ইতিহাস জানতে চায়।
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দাবীদার বলে আমরা যদি নিজেদের মধ্যে খামোখা হাতাহাতি করি তাতে এরা তো হতাশ হবেই। আমি নিজে কতটুকু দায়ী জানি না, তবে অন্তত তানভীর মত ছেলেদের কাছে লজ্জিত।
@আদিল মাহমুদ, @তানভী,
মুক্তিযুদ্ধের বিতর্কিত ইতিহাস, বিকৃত ইতিহাস,অসম্পূর্ণ ইতিহাস,একপেশে ইতিহাস,আওয়ামী ইতিহাস,জাতীয়তাবাদী ইতিহাস,রাজাকার মার্কা ইতিহাস ইত্যাদি ইত্যাদি থেকে মুক্তিযু্দ্ধের ইতিহাসকে রক্ষা করার দায়ভার বাঙালি জাতির গ্রহণ করতে আরো সময় লাগবে মনে হচ্ছে।
ইতিহাস কারো বিপক্ষে যাবেই যাবে। বাঙালির মুক্তির ইতিহাস খুবই স্পর্শকাতর।সব জাতির মুক্তির ইতিহাসই আসলে স্পর্শকাতর।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখবেন তিনিই যিনি মানুষকে ভালোবাসেন।
লিখুন বাঙালির মুক্তির ইতিহাস।শুধু বাঙালি নয় পৃথিবীর মানুষে পড়বে সে ইতহাস।
আবেগ দিয়ে নয়,কোন মোহে নয়, নির্মোহ থেকে লিখে যান।
যে বা যারা বাঙালির মুক্তির বিরোধীতা করেছিলো তাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস যাবেই।
ধন্যবাদ!
@সালাম
সে আশাতেই তো আছি। দেখা যাক কত দূর পথ আছে।
@সৈকত চৌধুরী,
আরে ভাই ডিসেম্বর তো যুদ্ধের শেষকাল! সামনে যে মার্চ আসছে তার খবর আছে!!! যুদ্ধতো মাত্র শুরুর পথে!!
@তানভী,
লেখাটি আমার নিজস্ব আবেগের পরিপ্রেক্ষিতে লেখা। যে কারণে বেশ কিছু জ়ায়গাতেই যুক্তির অনেক দুর্বলতা আছে। মুক্তমনার সহৃদয় পাঠকেরা আমার প্রতি তাদের ভালবাসার কারণে সেগুলোকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছেন না এই যা। আমি সে কারণে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
সুকৌশলে শব্দটা আসলেই লেখা ঠিক হয়নি আমার। অতি আবেগে ভেসে তখন খেয়াল করা হয়নি। এখন নিজের কাছেই লজ্জ্বা লাগছে। আমি আন্তরিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি এই অযাচিত কঠোর শব্দটির জন্য। মূল লেখা থেকেও সরিয়ে নিচ্ছি শব্দটা।
আবারো বলছি, এটি আমার একেবারেই নিজস্ব অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। আদিল, বিপ্লব বা অন্য কারো ভিন্ন ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি থাকতেই পারে। আমি তাতে কোন দোষ দেখি না। আমার সাথে হয়তো সেগুলো মেলে না। মিলবে যে এমন কোন কথাও নেই। তারপরেও অকারণেই হয়তো আমি দুঃখ পাই মুক্তিযুদ্ধের প্রতি অতিরিক্ত আবেগপ্রবন সম্পর্কের কারণে।
@ফরিদ আহমেদ,
ফরিদ ভাই, আমার করা প্রথম মন্তব্যটা এখনও মডারেশনের আওতায় বিবেচনাধীন। ইতোমধ্যেই আপনি যখন ‘সুকৌশলে’ শব্দটা সরিয়ে ফেলছেন, তখন আমার মন্তব্যের প্রথম প্যারার পর বাকিটুকু উপেক্ষা করতে পারেন।
ফরিদ আহমেদ,
ঠিক দিনের কাজ শেষে আপনার লেখাটা পেয়ে আমি আপ্লুত! গানটির সহশিল্পীদের সবার খোঁজ আছেকি? আমাদের গর্বকে কোথায় কোন গর্তে ফেলে দেয়া হয়েছে তা এক এক করে খুঁজে বের করার এখনি সময়। মুক্তমনার পাতাই হতে পারে এই ধারাবাহিক স্বরলীপি লেখার অন্যতম পট। ধন্যবাদ পোষ্টটির জন্যে।
ফরিদ ভাই,
ধণ্যবাদ এই গানের শিল্পীর সাথে পরিচয় করাবার জন্য। “জয় বাংলা বাংলার জয়” এই গানের আসল শিল্পীর পরিচয় জানার জন্যও আমি অনেকদিন ধরে খুজছি। জেনে থাকলে জানাবেন।
এই লেখায় বেশ কিছু কথা লিখেছেন যেগুলিতে খুব সম্ভবত আমার আগের একটি কমেন্টকে মন করেই লিখেছেন, নাও হতে পারে; না হলে ক্ষমা করে দেবেন। পরের লাইনগুলো পড়ার দরকার নেই।
যদি উদ্দেশ্য আমার বা আর কারো কোন লেখা হয় তাহলে সেখানে বলাই মনে হয় ভাল ছিল। সেখানে আর কোন কমেন্ট করবেন না বলে নুতন পোষ্ট শুরু করলে আমিও একইভাবে নুতন পোষ্টে জবাব দিতে পারি। এর কোন মানে হয় না। আর ভারতীয় বীরদের আমরা যথাযথ শ্রদ্ধা জানাতে পারিনি এ কথা আমি একা না, আরো অনেকেই বলেছেন। আমাদের বীরদের আমি হেয় করেছি এমন কথা মনে হয় কেউ বলেননি, বললেও আমি কিছুই মনে করব না, শুধু চাইব কোন কথায় তেমন মনে হল সে প্রসংগে যুক্তিতর্ক সহ আলোচনা করতে।
আপনার ব্যক্তিগত অনুভূতিতে আঘাত করার জন্য আমি একান্তই দূঃখিত যদিও আমি মনে করি না অন্তত জ্ঞানত আমি সেটা করেছি বলে। আমার জ্ঞান নিঃসন্দেহে সবচেয়ে বেশী নয়, অনেকের চাইতেই কম। তবে আমি যেকোন তথ্য ও যুক্তিভিত্তিক আলোচনায় রাজী আছি।
ভাল থাকবেন।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার লেখা অনেক যুক্তি পুরনো rational.
ফরিদ আহমেদ আবেগতারিত মানুষ। স্বপ্না রায়ের গানটা খুব ভালো।
মডারেটরদের দৃষ্টি আকর্ষন করছি
মডারেটরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি
একটি লেখা পরে ধাক্কা খেলাম। কিন্তু তা প্রমান করার মতো কোন উপাত্ত নেই। নিচে লিঙক দিলাম। আমার ধারনা জনাব অভিজিৎ রায় এর এ বিষয়ে লেখা থাকতে পারে।
http://shodalap.com/2009/11/22/quranic-discrepancies/
যে করেই হোক তার পরিপ্রেক্ষিতে একটা লেখা চাই।
@ashraf,
ভাই ওই সাইটের প্রতিবাদ করতে যাওয়ার চেয়ে দেয়ালে বাড়ি মেরে মাথা ভেঙে ফেলা অনে এ এক ভালো।
হুদাই গ্যাঞ্জাম।
চরম ফাউল একটা সাইট। অন্যসব লেখাগুলা ঘাটলেই বুঝবেন। আধাঘন্টার মধ্যে হয় আপনার চান্দি গরম হয়া যাবে নাইলে হাসতে হাসতে চেয়ার ছাইড়া পইরা যাবেন। বিজ্ঞান যেন তার হাতের কাদা। নিজের ইচ্ছা মত থিওরী বানায়।
@তানভী,
আমি কিন্তু আশরাফ ভাই এর অভিযোগ কি বুঝতে পারলাম না। ওনাকে মনে হয় আরেকটু স্পেসিফিক্যালী বলতে হবে ওনার আপত্তিটা কোথায়।
ইন্টারনেত জগতে ধর্মবিষয়ক বিতর্ক তো অনেকই আছে। মুক্তমণার লেখকদের নাম ধরে গালি দেওয়াটাও নুতন কিছু নয়।
@ashraf, এতো রায়হানের লেখা :laugh: :laugh: