————————–
[Yoga] আপনি কেন ইয়োগা চর্চা করবেন…|
————————–
–রণদীপম বসু
———–
.
জীবনের বহু বহু ব্যস্ততার মধ্যে আমাদের সময়ই হয় না নিজেকে একটু একান্ত করে দেখার। আমি কে, কী, কেন, কোথায়, কিভাবে, এ প্রশ্নগুলো করার। অথচ সামান্য এ ক’টা প্রশ্নের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে আমাদের সবটুকু রহস্য, ঠিকানা, পরিচয় এবং অস্তিত্বের অনিবার্য শর্তগুলোও। প্রশ্নের এই স্বচ্ছ আয়নায় নিয়ত বদলে যাওয়া জীবনের জলছবিগুলোই আমাদের প্রতিটা যাপন-মুহূর্ত, চলমান জীবন। অসংখ্য সমস্যার গেরোয় জট পাকিয়ে যাওয়া আমাদের জটিল জীবনযাত্রার জট খোলার চাবিটাও যে রয়ে গেছে সেখানেই, কেউ কেউ ঠিকই জানেন, আর অনেকেই তার খোঁজ রাখি না আমরা। এই প্রশ্নের সূত্র ধরেই এগুতে এগুতে অন্তর্ভেদী দার্শনিক ব্যক্তি যাঁরা, একসময় পৌঁছে যান ঠিকই জীবন ছাড়িয়ে মহাজীবনের বিপুল রহস্যের উজ্জ্বলতম দোরগোড়ায় এক অভূতপূর্ব বিস্ময় নিয়ে ! কিন্তু আমরা যারা অতি সাধারণ জন, খুব সাধারণ দেখার চোখ নিয়েও তারা কি পারি না এই অগুনতি যাপনের ভিড়ে শুধু একটিবার নিজের দিকে ফিরে তাকাতে ? যে আমাকে নিয়ে আমি নিত্যদিনের কর্মশালায় খাচ্ছি-দাচ্ছি-হাসছি-খেলছি-ঘুরছি আর মগ্ন হচ্ছি চিন্তায় বা দুঃশ্চিন্তায়, আমাদের সে ‘আমি’টা দেখতে কেমন, তা কি জানি আমরা ?
আপনি কি জানেন, ঠিক এ মুহূর্তে আপনি কেমন আছেন ? কিংবা কেমন দেখাচ্ছে আপনাকে ? আসুন না, নিজস্ব আয়নাটার সামনে খুব একান্তে দাঁড়াই একটু ! এবার নিজেকে উন্মোচিত করুন। কেমন দেখাচ্ছে আপনাকে ? ওই আয়নায় যেটা দেখছেন, সেটা আপনার দৈহিক অবয়ব। এই দেহই আমাদের ধারক, বাহক, এবং চালক। এই দেহকে ঘিরে, দেহের মাধ্যমে, এবং দেহের জন্যই আমাদের সমস্ত কর্মকাণ্ড। মন বলে যে বিমূর্ত ধারণাপিণ্ড কল্পনা করি আমরা, তাও এই দেহনির্ভর। দেহ ছাড়া মন বিকৃত, অসম্পূর্ণ, অচল। দেহের বিনাশ ঘটলে মনের আর কোন অস্তিত্ব নেই, থাকে না। এ জন্যেই প্রাচীন যোগশাস্ত্রেও উক্ত হয়- ‘শরীরমাদ্যং খলু ধর্ম সাধনম’। আপনি যা কিছুই সাধন করতে চান না কেন, এই দেহ ছাড়া গতি নেই, উপায়ও নেই। দৃশ্যমান এই দেহের অস্তিত্ব মানেই বাস্তবে আপনার অস্তিত্ব। দেহ নেই, আপনি নেই। দেহ ছাড়া কেউ থাকে না। দেহত্যাগের পরেও আপনার যে নামটা থেকে যাবে কিছুকাল আপেক্ষিক সময় জুড়ে, তাও এই দেহেরই অবদান। এই দেহ ধারণ করে দেহের মাধ্যমে করে যাওয়া কৃতকর্মই তার আপেক্ষিক স্থায়িত্বের মাধ্যমে আপনার অবর্তমানে আপনার নামটাকে বাঁচিয়ে সম্ভাব্য আপেক্ষিক স্থায়িত্ব দিতে পারে। অতএব, ভালো করে দেখুন- যে দেহটা এ মুহূর্তে ধারণ করে আছেন আপনি।
হতে পারেন আপনি নারী বা পুরুষ, এবার বলুন তো, আয়নায় আপনার যে মানবদেহের অবয়ব দেখছেন, তা কি যেমনটা হওয়ার বা থাকার কথা তেমনই আছে ? চোখ, মুখ, নাক, কান, মুখমণ্ডল, গলা, কাঁধ, বাহু, হাত, বুক, পেট, পিঠ, কোমর, উরু, পা, আঙুল, নিতম্ব, জঙ্ঘা, জননেন্দ্রিয় তথা গোটা দেহকাঠামো সম্পূর্ণ, সুঠাম, সুস্থ, সবল, নিরোগ, অবিকৃত, নিখুঁত, স্বাভাবিক সুন্দর, সক্রিয় ও সাবলীল ? এবার অন্তর্চক্ষু উন্মিলিত করুন। কল্পনা করুন আপনার দেহের ভেতরে অবস্থিত আভ্যন্তরীন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ-তন্ত্রিগুলোর কথা। মস্তিষ্ক, স্নায়ুরজ্জু, বিবিধ হরমোন গ্রন্থি, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, ধমনী, শিরা-উপশিরা, পাকস্থলি, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদন্ত্র, মাংস-পেশী-অস্থি-মজ্জা-মেরুদণ্ড, স্নায়ুতন্ত্র, শ্বাসতন্ত্র, রক্তসংবহনতন্ত্র, প্রজননতন্ত্র, বিপাকক্রিয়াদিসহ ইত্যাদি সমূহ সিস্টেম বা প্রক্রিয়া কি সুস্থ, স্বাভাবিক, সক্রিয় ও সাবলীল আছে ? আরো আছে আপনার স্বপ্ন-কল্পনা-ভাবনার বিস্ময়কর বিমূর্ত সেই জগত, যেখানে গ্রন্থিত হয় সৃজনের অবিরল স্রোত। সেও কি শারীরিক ও মানসিক বাধামুক্ত সতেজ উদ্যমে গতিমান ? এসবের উত্তর যদি ‘হাঁ’ হয়, শুধু আমি নই, প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে সবাই আপনাকে স্যলুট বা অভিবাদন জানাবে। উত্তর যদি হয় ‘না’, তাহলে দেরি নয়, এখনই ভাবুন, এক অসম্পূর্ণ অপভ্রংশ দৈহিক ও মানসিক অস্তিত্ব নিয়ে কতদূর যেতে পারেন আপনি ? আর আপনার এ চলার পথই বা কতোটা নিরাপদ, উদ্বেগহীন, ইচ্ছা-স্বাধীন ?
কথায় বলে- সুস্থ দেহ সুন্দর মন। কথাটা সর্বাংশেই সত্য। দৈহিক সুস্থতার কোন বিকল্প নেই। একটা নিরোগ সুস্থ-সুঠাম সতেজ কর্মঠ দেহের সাথে মানসিক ভ্রান্তিহীন চাপ নিরপেক্ষ সুডোল মনের রাখীবন্ধন ঘটলেই কেবল কাঙ্ক্ষিত সুন্দর পরিচ্ছন্ন জীবনের নিশ্চয়তা মেলে। কিন্তু আমাদের জীবন-বাস্তবতায় তা কতোটা অর্জন সম্ভব ?
দৈহিক সুস্থতার জন্যে প্রয়োজন সুষম খাবার গ্রহণের পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রম। কিন্তু পরিশ্রম পরিকল্পিত না হলে দৈহিক সৌন্দর্য ও সুস্থতা নিশ্চিত হয় না। দেহের প্রতিটা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পরিমিত সঞ্চালন ও সক্রিয়তা না হলে দেহবিন্যাস সুষম ও সুগঠিত হতে পারে না। এজন্যেই দেহের জন্য দরকার হয়ে পড়ে পরিকল্পিত শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের। আমাদের এ নাগরিক সভ্যতায় মাঠ-ঘাট-খোলা জায়গা এখন যেভাবে ধীরে ধীরে কল্পজগতের বস্তু হয়ে ওঠছে তাতে করে শরীরচর্চার পরিসর ক্রমেই সীমিত হয়ে আসছে। কিন্তু দেহের প্রতিটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ পেশী হাড় অস্থিসন্ধি ও রক্তসংবহনতন্ত্রের পরিমিত সঞ্চালন ও সক্রিয়তা রক্ষার অনন্য মাধ্যম হিসেবে ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়াম এখানে তুলনাহীন। যোগ-ব্যায়ামের বিভিন্ন আসনগুলো চর্চার জন্য আপনার ঘরের স্বল্পপরিসর মেঝে বা আপনার বিছানাটাই এক্ষেত্রে যথেষ্ট।
দেহের জ্বালানী হলো খাদ্য। তা পেলেই দেহ তার অভ্যন্তরস্থ বিশেষ বিশেষ দেহযন্ত্রের মাধ্যমে পরিবহন পরিবর্তন রূপান্তর করে নিজেকে সচল ও সবুজ সতেজ বৃক্ষের মতো পল্লবিত করে তোলে। কিন্তু খাওয়ার নামে প্রতিনিয়ত যা গিলছি আমরা তা কি আদৌ খাদ্য ? বিষাক্ত ভেজালের যুগে এই নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে বলে মনে হয় না আর। অতএব আমাদের দেহযন্ত্রের কারখানায় বিষ থেকে অমৃত সৃজনের প্রযুক্তি যতকাল রপ্ত না হবে, ততকাল ক্রমে ক্রমে নিঃসার হয়ে আসা দেহগহ্বরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোকে সচল ও সক্রিয় রাখতে বিশেষ ব্যবস্থা না নিয়ে কোন উপায় আছে কি ? তার শ্রেষ্ঠ উপায়ই হচ্ছে ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়াম। স্নায়ু গ্রন্থি রক্তনালী শিরা-উপশিরা ও দেহের অভ্যন্তরস্থ প্রতিটা দেহযন্ত্রের যথাযথ ব্যায়ামের মধ্য দিয়ে এগুলোকে পরিপূর্ণ সতেজ ও কার্যকর রাখতে ইয়োগাই অনন্য মাধ্যম। এ ক্ষেত্রে যোগাসনগুলো ছাড়াও বিভিন্ন মুদ্রাগুলোর সমকক্ষ কোন পদ্ধতি একমাত্র ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়াম ছাড়া অন্য কোন ব্যায়ামে এখনো আবিষ্কৃত হয় নি। যেভাবে হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুসের সক্রিয় সুস্থতা রক্ষার একমাত্র উপায়ই হচ্ছে ইয়োগার শ্বাস-ব্যায়াম প্রাণায়াম। এমনকি অত্যাবশ্যকীয় ইন্দ্রিয়গুলোর কার্য়কর সুরক্ষার জন্যেও ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়াম অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
খাবার গ্রহণ করলেই দেহের কাজ শেষ হয়ে যায় না। এই খাদ্য থেকে বিপাক ক্রিয়ার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় খাদ্য-উপাদান ও খাদ্যরস সংগ্রহ শেষে পরিত্যক্ত খাদ্যবর্জ্যগুলো মল-মূত্র ঘাম বা কফ হিসেবে শরীর থেকে বের করে দিতে হয়। এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হলেও শরীর অসুস্থ হয়ে পড়তে বাধ্য। এই প্রক্রিয়াটাকে সুস্থ সচল রাখতে অন্য সাধারণ ব্যায়ামে কোন উপায় না থাকলেও ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়ামে প্রয়োজনীয় ধৌতিগুলো খুবই কার্যকর উপায়।
জীবন যাপনের চলমান বাস্তবতায় যে সমাজ রাজনীতি অর্থনীতি রাষ্ট্র পরিবেশ ও পরিস্থিতি উদ্ভুত স্ট্রেস বা মনো-দৈহিক চাপের মধ্য দিয়ে প্রতিটা মুহূর্ত পার করতে হয় আমাদের, তা থেকে পরিত্রাণের যে ছটফটানি, এটা আমাদের ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে প্রতিনিয়ত ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলে যাচ্ছে। সেই দুঃসহ চাপের উৎস পরিবর্তনের সুযোগ বা সামর্থ হয়তো আমাদের নেই। কিন্তু সেই অসহনীয় চাপ সফলভাবে মোকাবেলা করতে না পারলে স্নায়ুরোগসহ যে মনো-দৈহিক সমস্যা বা রোগের বিস্তার ঘটে, প্রয়োজনীয় শিথিলায়ন ও প্রয়োজনীয় নিরাময়ের ব্যবস্থা না নিলে আমাদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়ে যাবে। এই মনো-দৈহিক সমস্যা উত্তরণে অনন্যোপায় আমাদেরকে এ জন্যেও ইয়োগার আশ্রয়ই নিতে হবে।
প্রিয় পাঠক, চিন্তা বা ধারণা স্বচ্ছ না হলে আয়নায় নিজের অবয়ব দেখেও স্পষ্ট করে বুঝার উপায় নেই যে, বস্তুত যা হওয়ার কথা, নিজের সাথে তার কোথায় কেন কিভাবে কতটুকু তফাৎ বা পার্থক্য পরিদৃষ্ট হচ্ছে এবং কিভাবে তার উত্তরণ ঘটানো সম্ভব। সেজন্যই আমাদের জানার আগ্রহটাকে উন্মুক্ত করে দিতে হবে। দেহ-মনের সার্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা করে সুস্থ-সুন্দর জীবন-যাপনের এ যাবৎ শ্রেষ্ঠ উপায় যেহেতু ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়াম চর্চা, তাই প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি জানার সাথে সাথে পরিপূর্ণভাবে অভ্যাসের সুবিধার্থে ইয়োগা দর্শনটাকেও জানা আবশ্যক বিবেচনা করি। আমি কেন ইয়োগা চর্চা করবো তা যেমন বুঝতে হবে, তেমনি জানতে হবে ইয়োগা কী বা এর ইতিহাস, আধুনিক ইয়োগার জনক হিসেবে চিহ্ণিত গুরু পতঞ্জলি কেন তাঁর অভ্রান্ত অষ্টাঙ্গযোগ মানব সভ্যতাকে উপহার দিয়েছেন এবং সম্পূর্ণ প্রায়োগিক ও মনো-দৈহিক স্বাস্থ্য দর্শন হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই এটাকে ধর্মীয় আধ্যাত্মিক দর্শন ভেবে ভুল করে ফেলেন কেন ? কিসের ভিত্তিতে আমরা ইয়োগা অনুশীলন করবো এবং অন্য ব্যায়ামের সাথে এর মৌলিক ভিন্নতা কোথায় তা যেমন জানতে হবে, তেমনি এর জ্ঞাতব্য বিষয়গুলোও মনোযোগ সহকারে ধারণ করে নিতে হবে। এসব বিষয় আগ্রহে বিশ্বাসে অনুধাবন করে নিজের প্রতি আস্থা ফিরে পেলেই কেবল নিজেকে ইয়োগা চর্চায় প্রস্তুত বলে গণ্য করতে হবে। এবং এ জন্য আপনাকে প্রতিদিন কেবল নিজের জন্য তিরিশটি মিনিট ব্যয় করতে প্রতিজ্ঞ হতে হবে।
ইয়োগা একটি পরিপূর্ণ দর্শন। অমিত ধৈর্য্য, প্রয়োজনীয অনুশীলন ও ধাপে ধাপে উত্তরণের মধ্য দিয়ে মনো-দৈহিক স্বাস্থ্য ও সামর্থ অর্জনের মাধ্যমে পরিপূর্ণ মানবসত্তার চরম উৎকর্ষতা অর্জনের উপায়ই এই দর্শনের অভীষ্টতা। ব্যক্তি তার চেষ্টা ও সামর্থ্য অনুযায়ী ফললাভ করে থাকেন। সাধক যোগী পুরুষ যেমন প্রয়োজনীয় তপস্যার মাধ্যমে নিজেকে আধ্যাত্মিক শিখরে আরোহন করতে পারেন, তেমনি ব্যক্তি-সাধারণের দৈহিক সুস্থতা ও সামর্থ অর্জনের জন্য এখানে উল্লেখ রয়েছে প্রচুর আসন, মুদ্রা, প্রাণায়াম ও ধৌতি অভ্যাসের। যোগশাস্ত্রিরা এগুলোর প্রতিটার কার্য-কারণ, সতর্কতা ও ফললাভের ব্যাখ্যাও দিয়েছেন সুন্দরভাবে। এমনকি প্রচলিত রোগ-বালাই নিরাময় কিংবা তা থেকে মুক্ত থাকার উপায়ও বাৎলে দিয়েছেন। দেহগঠন, বয়স কিংবা রোগ বিবেচনায় নিজ প্রয়োজনে ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যচর্চা নির্বাচনের কৌশলও বর্ণিত হয়েছে এতে। একমাত্র ইয়োগা ছাড়া মানবদেহ ও মনের এমন পরিপূর্ণ স্বাস্থ্য দর্শন আদৌ আর আছে কিনা জানা নেই।
যদি আমরা আমাদের অবিকল্প এই দেহটিকে সকল কর্মকাণ্ডের কার্য ও কারণ বলে বিশ্বাস করতে সক্ষম হই, তাকে সুস্থ সবল সক্রিয় ও সুন্দর রাখতে উদ্ভুত প্রশ্নটি ‘আপনি কেন ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়াম চর্চা করবেন’ এভাবে না হয়ে হওয়া উচিৎ- আপনি কেন ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়াম চর্চা করবেন না !
.
(C) কপিরাইট:
। ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত ও ব্যবহৃত যাবতীয় ছবির নিজ নিজ উৎসের স্বীকৃত স্বত্ব কৃতজ্ঞতার সাথে বহাল রেখে- এই হাইপার-লিঙ্কড পাণ্ডুলিপির সর্বস্বত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত ।
বাংলা ব্যাকরনের ক্লাসটা ভালই হল। এভাবে চলতে থাকলে ভাষা দুষনের মাত্রা কমবে বলে আশা করি।
প্রথমেই আমি আমার জানার সীমাবদ্ধতাটুকু স্বীকার করে এবং মন্তব্যকারীদের প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলছি, বাংলাভাষার প্রতি আমার টান একেবারে নাড়িছোঁয়া। তার পরেও এখানে আমি খুব সচেতনভাবে ইয়োগা শব্দটা ব্যবহার করার পেছনে ভুল হোক শুদ্ধ হোক নিজের কিছু যুক্তি রয়েছে।
এখানে বিভাগের নামটা খেয়াল করে দেখবেন- দর্শন। যদিও দর্শন বিষয়ক আলোচনা এখানে খুব সামান্যই আছে, তবু এটা যে একটা দর্শন তা নিয়ে সামান্য একটু রেখাপাত করা হয়েছে আর্টিক্যাল অংশে।
ইয়োগাকে যে যোগ-ব্যায়ামই বলা হয় স্বাভাবিকভাবে তাও ঠিক আছে। কিন্তু তা কেবল ইয়োগার ব্যায়াম অংশটুকুকে। আধুনিক ইয়োগার জনক হিসেবে স্বীকৃত পতঞ্জলির অষ্টাঙ্গ যোগে যে আটটি অঙ্গ রয়েছে, তার মধ্যে খুব জোর আসন,মুদ্রা ও প্রাণাযাম অংশটিকেই আমরা যোগ-ব্যায়াম বলে চালিয়ে দিতে পারি। কিন্তু আলোচনাটায় যদি তার দর্শনটা চলে আসে, তখন কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ধারণায় আমি মনে করি যে, দর্শন হিসেবে এর মূল উৎস সংস্কৃতকে প্রাধান্য দিলে আমাদেরকে ইয়োগা-ই বলতে হয। হয়তো ‘যোগ’ বলতে পারি, কিন্তু আলোচনার ক্ষেত্রে বাংলা ‘যোগ’ শব্দটার পারিভাষিক অর্থ তপস্যা বা সাধনা এসে দর্শনটাকে হটিয়ে বক্তব্যের টোনে কিছুটা বাধার সৃষ্টি করে। হতে পারে তা আমার বুঝাতে না পারার সীমাবদ্ধতা, কিন্তু আমি এখানে ইয়োগা অর্থে শুধু যোগ-ব্যায়ামই বুঝাই নি, আরো কিছু বুঝানোর অশিক্ষিত চেষ্টা করেছি।
অবশ্য এই যুক্তিও বাতিল হয়ে যায়, বক্ষ্যমান পোস্টে কোথাও কোথাও ইয়োগা বা যোগ-ব্যায়াম উল্লেখ করায়। তাও কিন্তু করেছি এ ধরনের কিছু প্রশ্ন আসতে পারে আগাম ধারণা করেই।
তবে সবচাইতে বড় কথা হলো ব্যবহারিক স্বাস্থ্য দর্শন হিসেবে ইয়োগার প্রয়োগযোগ্যতাকেই আমি গুরুত্ব দিয়েছি এবং প্রধান অনুষঙ্গ হিসেবে যোগ-ব্যায়ামগুলো সাথে পত্রস্থ করেছি। এতে করে শব্দের ব্যবহারজনিত ত্রুটি বা ভ্রান্তি খোঁজা গেলেও দেহ-মনে সুস্থ থাকার উৎকৃষ্ট উপায় বা মাধ্যম হিসেবে আসন বা যোগ-ব্যায়ামগুলো আশা করি দুটোমাত্র ক্লিকের নৈকট্যে এনে বাংলা-যোগাপ্রেমীদেরকে কিঞ্চিৎ সহায়তা করতে পারবে।
যাঁরা সুস্থ থাকার আপাত ইচ্ছা পোষণ করেন তাঁরা ব্যবহারিক অংশে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় চর্চার সুযোগ পাবেন। আর যাঁরা এর তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করতে আগ্রহী তাঁরা আর্টিক্যাল অংশে ক্লিক করে সচেষ্ট হতে পারেন। তবে অভ্যাস বা চর্চার করার আগে আর্টিক্যাল অংশটুকু পড়ে নেয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ করবো। মূলত এই পোস্টের বক্তব্যটাও তাই।
যদি বুঝাতে পেরে থাকি নিজেকে কৃতার্থ মনে করবো, আর বুঝাতে ব্যর্থ হলে নিজস্ব সীমাবদ্ধতা হিসেবে নিজকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করবো। আর এই পোস্টের মাধ্যমে গোটা ইয়োগা-সমগ্র তুলে দেয়ার প্রেক্ষিতে একজনও যদি উপকৃত হন, আমার বিগত বহুদিনের টানা শ্রমটুকু সার্থক হয়েছে ধরে নেবো।
সবাইকে ধন্যবাদ এবং শুভকামনা।
@রণদীপম বসু, ইয়োগাটা কি জিনিস? সংস্কৃতে যোগ বলেই জানতাম। শব্দটাত তৎসম-সেটা আলাদা হবে কিভাবে?
@বিপ্লব পাল,
বিপ্লব দা, যোগ বললে আমার সীমাবদ্ধতার কারণে বক্তব্য প্রকাশে কী সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, সেটা কিন্তু মন্তব্যে উল্লেখ করেছিলাম।
এটাও আমার একটা সীমাবদ্ধতা যে, আমি বুঝাতে পারি নি। অন্তত নিজ গুণে আপনাদেরকে বুঝে নিতে হবে।
তাছাড়া, আমাদের বাংলা ভাষার ধারণক্ষমতা কি এতোটাই সীমাবদ্ধ হয়ে গেলো যে, একটা শব্দকে ধারণ করতে গেলে অন্য শব্দ উপচে পড়ে সাংঘাতিক কোন ক্ষতি হয়ে যাবে ? আর এই একটা শব্দ কি গোটা দৃষ্টিভঙ্গিকেই বাতিল করে দেয় ! মাফ করবেন বিপ্লব দা, আমি অন্তত তা মনে করি না।
(আমার জানায় কোন ভুল না থাকলে ‘মাফ’ শব্দটা যতটুকু জানি বিদেশি শব্দ। তাতে আপত্তি থাকলে ‘ক্ষমা’ দিয়ে প্রতিস্থাপিত করে নিতে হবে। হা হা হা ! বিপ্লব দা, আমি কিন্তু বাংলায় দুর্বল ! তাই আলোচনাটা বেশিদূর এগিয়ে নেয়ার ক্ষমতা বা যোগ্যতা কোনোটাই আমার নেই। আশা করি আমার কোন কথায় কষ্ট পাবেন না।)
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাই।
@রণদীপম বসু, আরে না না, আমি নিজেও ত প্রচুর ইংরেজী শব্দ ব্যাবহার করি। কিন্ত যেখান শন্দের উৎপতি সংস্কৃত-সেখানে আমাদের বাংলা ব্যাকারন বলে তিনটি পথ-তৎসম, তদ্ভব বা অর্ধতৎসম। ইয়োগা শব্দটি এর কোন রূপেই এসেছে বলেত জানি না। তাই জানতে চাইছি। তাছারা আমি আমেরিকাতে যোগ ই বলি। নিজেদের শব্দ আমেরিকান উচ্চারনে বলবো কি দুঃখে।
@রণদীপম বসু,
শাব্দিক মুল নিয়ে ধস্তাধস্তিতে মনে হয় মূল লেখাটাই আস্তে আস্তে গৌন হয়ে উঠছে।
লেখাটি এখনো পুরো পড়ে উঠতে পারিনি, তবে মনে হছে চমতকার একটা লেখা, অনেকেই উপকার পেতে পারেন।
আমি নিজেও এ সম্পর্কে ভাসা ভাসা জানতাম, অনেক কিছু পরিষ্কার হবে। আশা করি যোগব্যায়ামের নানা রকম আসন সম্পর্কে আলোকপাত করবেন।
ধণ্যবাদ।
এই “ইয়োগা”শব্দটি হলো over commercialisation এর ফল।বর্তমানে
যোগব্যায়াম পাশ্চাত্যসহ সারা বিশ্বেই তুমুল জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। মিডিয়াতেও সেটি “ইয়োগা” নামেই পরিচিত হচ্ছে। যার ফলে বাংলা প্রতিশব্দ থাকার পরও বিদেশীদের বিকৃত উচ্চারণেই আমরা বাংলায় “ইয়োগা” লিখছি। এ যেন ভাষার সাম্রাজ্যবাদ!
ইয়োগো টি কি বস্তু? পেটে খাই না মুখে দেয়? য়ামি যোগা শুনেছি-বাংলায় লেখা প্রবন্ধে ইয়োগো কেন ব্যবহৃত হবে?
@বিপ্লব পাল,
তৃতীয় নয়ন ঠিকই বলেছেন। আপনাদের পশ্চীম বাংলার বাংলা উচ্চারনের হিন্দীর প্রভাব চিরকালই ছিল, এখন আরো অনেক অনেক বেশী। এভাবেই হয়ত বাংলা ভাষা আস্তে আস্তে স্বকীয়তা হারাবে।
@আদিল মাহমুদ, এই বাংলায় কেও ইয়াগো বলে জানা নেই। যোগ ব্যায়াম ই বলে। আর বাংলা এবং হিন্দি একই ভাষা ছিল এই ৪০০ বছর আগে। ফলে বাংলা ভাষা হিন্দির ঘনিষ্ঠতম কাজিন। এই মিলটা ঐতিহাসিক কারনে। এরপরে টিভিতে হিন্দি আনা হয়েছে তা সংস্কৃত নির্ভর হিন্দি-যাতে হিন্দি ভাষা সংস্কৃত নির্ভর বাংলার আরো কাছে এসেছে।
@বিপ্লব পাল,
বাংলা হিন্দী উর্দু এগুলির সবই আদি মূল সংষ্কৃত, তাই মিল অবশ্যই থাকবে। কিন্তু শ্রুতিকটূ শোনায় যখন মানুষ মানসিক দৈন্যতার কারনে অন্য ভাষার উচ্চারন ষ্টাইল ফলো করে তখন।
বাংলা ভাষায় আমরা কয়জনে চেয়ার না বলে কেদারা বলি বলতে পারেন? টেবিলের বাংলা কি তা আমিই এই মুহুর্তে মনে করতে পারছি না।
তবে যোগব্যায়ামকে ইয়োগা বলা আমার কাছেও শ্রুতিকটূ লাগে। কিন্তু বাশ্তবতা হল আমি প্রাত্যহিক জীবনে কাউকে বলতে শুনি না যে আমি যোগব্যায়াম করি বা শিখি, বরং সবসময়ই শুনি আমি “ঈয়োগা” করি। তবে এই ট্রেন্ড মনে হয় খুব বেশীদিনের নয়। ২০/২৫ বছর আগেও বেশীরভাগ মানুষ যোগব্যায়ামই মনে হয় বেশী ব্যাবহার করত।
@বিপ্লব পাল, যে শব্দের উৎপত্তি ইংল্যান্ড থেকে সেখানে ত ইংরেজী বলাই শ্রেয়। যেমন তৃতীয় নয়ন তড়িৎ প্রকৌশল কথাটা ব্যাবহার করল-আমরা ওটাকে সর্বদায় ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বলি। ভাষাত স্থিতিশীল না। সেখানে নতুন শব্দ ঢুকবেই। কিন্ত যোগ ব্য়ায়াম পুরানো শব্দ-েটাকে বদলে ইয়াগো দেখলে হাসব না কাঁদব-জানি না।