অভিব্যাক্তিবাদ ডারউইন এর পূর্বে ও পরে
তানবীরা তালুকদার
বিশ্বের সবচেয়ে বির্তকিত কিংবা বহুল আলোচিত বৈজ্ঞানিক তত্ব কোনটি জানতে চাইলে চোখ বন্ধ করে এক কথায় বলা যায় “বিবর্তনবাদ” বা ডারউইনিজম। যার কারনে বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের নাম সবার মুখে মুখে। মজার ব্যাপার হলো The theory of evolution বা “অভিব্যাক্তিবাদ” চার্লস ডারউইনের নিজের মৌলিক কোন আবিস্কার নয়। ষোলশ শতাব্দী থেকেই এই বিষয়টি নিয়ে ইউরোপের বিজ্ঞানীরা নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। তাহলে কেন এ প্রসংগ আসলেই ডারউইনের নাম আসে? কারন, কি করে বিবর্তনের ধারা অনুসরনের মাধ্যমে বংশ পরম্পরায় টিকে থাকে প্রানী ও উদ্ভিদ এর যৌক্তিক ব্যাখা দিয়েছেন ডারউইন। ব্যাখা আরো অনেক বৈজ্ঞানিকই করেছেন কিন্তু ডারউইনই প্রথম প্রত্যেকটি পদক্ষেপ ব্যাখা করার জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরন করেছেন। প্রাচীন গ্রীক ইতিহাসেও জীবজগতে ক্রমবিকাশের ধারা নিয়ে আলোচনা ও চর্চার সন্ধান পাওয়া যায়। ষোলশ বিশ সালে প্রকাশিত ফ্রান্সিস বেকনের “নোভাম অরগানাম” বইটির কথা এ প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই বইটিতে ফ্রান্সিস বিভিন্ন প্রানীর প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে স্বাভাবিক পরিবর্তন সম্পর্কে লিখেছেন। তিনি তার লেখায় বর্ননা করেছেন, বংশ পরম্পরায় প্রানী ও উদ্ভিদের এই যে প্রাকৃতিক পরিবর্তন, ব্রিডাররা (যারা বংশবৃদ্ধি ঘটিয়ে থাকেন) এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে অনেক দুর্লভ এবং অদ্ভূদ নতুন কিছুর আবির্ভাব ঘটাতে পারেন। ফ্রান্সিস যে ভুল কিছু বলেননি তা আজ আমরা সবাই চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। নানা ধরনের নতুন সব্জি, ফুল, ফল, ক্লোন মানব সবই এর উপহার। ব্রিডিং মানব সভ্যতার এক উজ্জল এবং বৈপ্লবিক ধাপ।
জার্মানীর গটফ্রায়েড উইলহেম লেইবনিজকে সবাই একজন গনিতজ্ঞ হিসেবেই জানতেন। গনিত বাদে যা তাকে আকর্ষিত করেছিল সেটা হলো, বিলুপ্ত জীবের সাথে জীবিত বংশধরদের সম্ভাব্য সর্ম্পক। তিনি লক্ষ্য করলেন, জীব জগতের ভবিষ্যত বংশধরদের মধ্যে যে পার্থক্য বা পরিবর্তন আসে তার মূলে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশের প্রভাব। পূর্ব পুরুষেরা যে পরিবেশে বাস করে গেছেন, পরবর্তী বংশধরেরা পরিবর্তিত ভিন্ন পরিবেশে বাস করেন বলে, তারা আকৃতি ও প্রকৃতির দিক দিয়ে বদলে যান। লেইবনিজ তার গবেষনায় লিখে যান, এটা বিশ্বাসযোগ্য যে, পরিবেশগত বিরাট পরিবর্তনের কারনে প্রানীজগতে বিভিন্ন প্রজাতির মাঝে প্রায়ই পরিবর্তন ঘটে থাকে। তবে তিনি “বিবর্তন” শব্দটি ব্যবহার করেন নি কখনও। আধুনিক জীব বিজ্ঞানের অনুষংগ হিসেবে রবার্ট জেমসসন “বিবর্তন” শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত করেন আঠারোশ ছাব্বিশ সালে। আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাবের কারনে বিভিন্ন মহাদেশে একই প্রানীর আকার, বর্ন, স্বভাব ও খাদ্যাভাস ভিন্ন হয়ে থাকে। বির্বতন এই বৈচিত্র্যের জন্মদাতা। সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতাব্দীতে অন্যান্য বিজ্ঞানীরাও তার সপক্ষে প্রমান দাড় করিয়েছেন। জর্জেস লুইস লেক্লার্ক, কমতি দ্য বাফন ভৌগলিক কারনে প্রানীদের পরিবর্তন নিয়ে কাজ করেন। দেখা যায় একই প্রানী অথচ পরিবেশের ভিন্নতার কারনে তাদের চেহারা হয় ভিন্ন ভিন্ন। উত্তর আমেরিকার বাইসন এসেছে ভিন্ন জাতের ষাড় থেকে। ভিন্ন জায়গায় এবং ভিন্ন আবহাওয়ায় খাপ খাওয়াতে খাওয়াতে তারা এক সময় বাইসনে রুপান্তরিত হয়ে গেছে। এই ধারনাটি থেকে জীব জগতের বিবর্তন সম্পর্কে একটা পরোক্ষ মতবাদতৈরী হয়েছে “প্রানী ও উদ্ভিদের বিবর্তন ঘটে পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য”।
ডারউইনের দাদা এরাসমাস ডারউইন বিবর্তন নিয়ে বেশ ভাবতেন। চিকিৎসক হিসেবে তার যথেষ্ঠ সুনাম ছিল। তিনি ব্রিটেনের রাজা তৃতীয় জর্জের কাছ থেকে তার ব্যাক্তিগত চিকিৎসক হিসেবে যোগদানের আমন্ত্রন পান। রাজকবি হওয়ার আমন্ত্রনও পেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি ছিলেন প্রকৃতি প্রেমিক। প্রকৃতি বিজ্ঞানী হিসেবে রয়েল সোসাইটির ফেলো হন। বিবর্তনবাদ নিয়ে সুদীর্ঘ একটি কবিতা রয়েছে তার, “দি বোটানিক গার্ডেন”। প্রকৃতি নিয়ে তার ছিল অগাধ জ্ঞান। সতেরশ চুরানব্বই আর সতেরশ ছিয়ানব্বই সালে তার লেখা “জুনোমিয়া” নামের বই এর দুটো ভলিউম বের হয়। বিবর্তনের গুরুত্বটা বুঝেছিলেন এরা সমাস। তবে তার চিন্তাটা ভুল ছিল। তিনি ভেবেছিলেন, একটা প্রজাতির প্রতিটি সদস্য তার জীবদ্দশায় আলাদা বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়, পরবর্তী সময়ে এই গুনাবলী চলে যায় ভবিষ্যত বংশধরদের মধ্যে। ছবির মাধ্যমে তিনি এর উদাহরন আকেন। তিনি দেখান, একটা হরিন যদি শিকারীর কবল থেকে বাচার জন্য প্রানপন ছুটতে থাকে, তাহলে তার শরীরটা ধীরে ধীরে ভালোভাবে দৌড়ানোর উপযোগী হবে। সেখানে ইচ্ছাশক্তি কাজ করবে কম বেশী। পরবর্তী সময়ে এই হরিনের যে বাচ্চা হবে, উত্তরাধিকারসূত্রে তার দৌড়ানোর উপযোগী গুনটা থাকবে আরো বেশী। সেই সঙ্গে সে নিজেও রপ্ত করবে বেশী করে দৌড়ানোর কৌশল। এভাবে বংশ পরম্পরায় বারবার একই পদ্ধতি পুনরাবৃত্তির ফলে আজকের হরিনগুলো দৌড়ে এতো পটু।
কিন্তু এরাসমাস ডারউইনের তত্বটি এখন অন্য নামে পৃথিবীতে পরিচিত, তার নিজের নামে নয়। এখানে একটি ব্যাপার ঘটে যায়। ডারউইন “বিবর্তনবাদের” যে মতবাদ প্রকাশ করেন, ফ্রান্সের জ্যা – ব্যাপ্টিষ্ট ল্যামার্কও আঠারশো এক সালে একই মতবাদ প্রকাশ করেন। কিন্তু তিনি তার মত প্রকাশ করেন সম্পূর্ন স্বাধীনভাবে। এরাসমাসের সাথে তার কোন যোগাযোগ ছিল না। ল্যামার্ক ছিলেন প্যারিসের মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রির প্রানীবিদ্যার অধ্যাপক এবং একজন পেশাবিদ বিজ্ঞানী। তিনি তার মতবাদের বেশ প্রচার ও উন্নয়ন ঘটিয়েছিলেন, সেজন্যই এ মতবাদটি আর পৃথিবীজুড়ে “ল্যামার্কিজম” নামে পরিচিত। ল্যামার্ক আর এরাসমাস উভয়েই বলেছেন, বিবর্তনের ধারায় শারীরিক পরিবর্তন যদি কোন প্রজাতির ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, তাহলে ধীরে ধীরে সে প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটে এবং বিলুপ্ত প্রানীর জায়গায় একই প্রজাতি আসে তবে ভিন্নরুপে। কিন্তু এই পরিবর্তিত নতুন রূপটি নতুন পরিবেশের উপযোগী থাকে। ল্যামার্কের মন্তব্যটিকে নিয়ে গভীরভাবে গবেষনা ও কাজ করেন তার ছাত্র এটিয়েন জিওফ্রেয় সেইন্ট হিলেইর। তিনি শুধু এই তত্বটি নিয়ে কাজ করেননি, এটিকে আরো সামনে নিয়ে যান। যোগ্য প্রানীর টিকে থাকার ব্যাপারটি যা আজ “সারভাইভাল অফ দি ফিটেষ্ট” নামে পরিচিত তত্বটির জন্ম দেন। কিন্তু প্রানীর বংশধরদের মাঝে সর্ম্পকের ব্যাপারটি নিয়ে ভুল ধারনা ছিল জিওফ্রেয় সেইন্ট হিলেইয়ের। তিনি প্রমান করতে চেষ্টা করেন, একটা অমেরুদন্ডী ও একটা মেরুদন্ডী প্রানীর শারীরিক গঠন একই প্রকারের। তার এই একটি ভ্রান্ত চেষ্টার কারনে “ল্যামার্কিজম” আর কদর পায়নি। তাই আর এটি গুরুত্বপূর্ন মতবাদ বলে বিজ্ঞানে স্থান পায় না।
আর একজন প্রকৃতিবিদের কথা না উল্লেখ করলেই নয়। তিনি হলেন আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস। তিনি ডারউইনের সমসাময়িক বিজ্ঞানী। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান থেকে নানা জিনিসের নমুনা সংগ্রহ করে শৌখীন ধনী বিজ্ঞানীদের বিক্রি করতেন তিনি। ডারউইন তার “ন্যাচারাল সিলেকশন” মতবাদটি প্রতিষ্ঠার জন্য যে পন্থায় কাজ করেছেন, ওয়ালেসও ঠিক একই পন্থা অবলম্বন করেছিলেন। তার গবেষনার ক্ষেত্র ছিল গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের প্রকৃতি। ডারউইনের মতো ওয়েলসও তার গবেষনার জন্য ম্যালথাসের তত্বকেও দৃষ্টিতে রাখেন। ডারউইন আর ওয়েলসের মধ্যে চিঠিপত্রের আদান প্রদানও হতো। কিন্তু ওয়েলস প্রানীকুলের জন্মদাতা হিসেবে ইশ্বরকেই সমর্থন করতেন। তবে একই গোত্রের বিভিন্ন প্রানীর মূল রূপ থেকে অনিশ্চিতভাবে ভিন্নরূপে আত্মপ্রকাশের প্রবনতা নিয়ে ভাবনাটিতে দুজনের কাকতালীয় মিল পাওয়া যায়। তাদের দুজনেরই একসাথে এ বিষয়ে লিনিয়ান সোসাইটির সভায় জয়েন্ট পেপার উপস্থাপনের কথা ছিল যা বিভিন্ন কারনে পরে আর হয়ে ওঠেনি। যদিও বিবর্তনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে চিঠির মাধ্যমে তাদের মধ্যে নিয়মিত মতের আদান প্রদান হতো।
অনেক বিজ্ঞ পন্ডিত বছরের পর বছর “বিবর্তন” নিয়ে ভাবনা চিন্তা করেছেন। যুগান্তকারী সব নতুন আবিস্কার করেছেন। ফ্রান্সে সে সময় ঈর্ষনীয়ভাবে বিবর্তনবাদ নিয়ে উল্লেখযোগ্য বহু বহু কাজ হয়েছে। তারপরও “বিবর্তন” শব্দটি উচ্চারিত হলেই কেনো চার্লস ডারউইনের কথা আসে? ডারউইনের ক্ষেত্রে জোরালোভাবে যে জিনিসটি এসেছে তাহলো, তিনি হলেন হাতে কলমে শিক্ষা নেয়া প্রকৃতিবিদ। পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া ফলাফলের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে এসেছেন, জড় ভাবনায় মগ্ন হয়ে নয়। আমরা তার বিভিন্ন কাজগুলোতে সামান্য আলো ফেললেই এ কথাটি অনুধাবন করতে পারি।
ডারউইন চিকিৎসাবিদ্যা অধ্যয়ন বাদ দিয়ে, যাজক হওয়ার চিন্তা ছেড়ে বীগল জাহাজে করে মানচিত্র তৈরীতে সাহায্য করতে বেরিয়ে গেলেন তিনি। যদিও এর আগে তিনি তার গ্র্যাজুয়েশন বেশ ভালোভাবেই শেষ করেন। তার সবচেয়ে পছন্দের বিষয় ছিল উদ্ভিদবিজ্ঞান আর জীবতত্ব। দক্ষিন আমেরিকায় থাকার সময় তিনি তার পরীক্ষা নিরীক্ষা শুধু জীবিত উদ্ভিদ – প্রানীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি সেখানকার ভুতত্ত্ব এবং ফসিলের ধ্বংসাবশেষ নিয়েও গবেষনা করেছেন। বিভিন্ন পাথরের নমুনা, ভূতাত্ত্বিক নানা উপাদান, জ়ীবাশ্মের ধ্বংসাবশেষ ও বিভিন্ন প্রানীর নমুনা ও তথ্য সংগ্রহ করেন। যা থেকে পৃথিবীর আদি গঠন কেমন ছিল এবং জীবনযাত্রা কেমন ছিল, ধীরগতির ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের ধারা কিভাবে পৃথিবীর আদলকে বদলে দিচ্ছে সে সম্বন্ধে পরিস্কার ধারনা পাওয়া যায়। এই বিষয়ে লেখা সে সময়ে তার বইটি বিরাট সাফল্য পেয়েছিল। এরপর প্রবাল প্রাচীর নিয়ে আরো একটি একাডেমিক বই লিখেন তিনি। সেখানে ডারউইন বর্ননা করেন, প্রবালের মাধ্যমে কিভাবে উচু হয়ে গড়ে ওঠে প্রবাল দ্বীপ। দ্বীপের চূড়ো থেকে ক্রমশ সাগরজলের নেমে যাওয়া প্রবালের বিস্তারিত বর্ননা দেন তিনি। তার সেই ব্যাখা আজো সমস্ত কিছুতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এই সিরিজের পরবর্তী বইটি ছিল বরফযুগের উপর। এতো সমস্ত কিছু লেখার মধ্যেও যে বিষয়টি তার মনকে আন্দোলিত করে যাচ্ছিলে, সেটি হচ্ছ বিবর্তন। টমাস ম্যালথাসের “দি প্রিন্সিপল অফ পপুলেশন” তত্ত্বটির নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেন ডারউইন। এ থেকে যোগ্যতম প্রানীর বংশানুক্রমে টিকে থাকার ব্যাপারটি নিয়ে ধারনাটা আরো স্বচ্ছ হয়। তারফলে নিজের বিবর্তন সম্পর্কে মতবাদের ব্যাপক উন্নতি সাধন করেন তিনি।
এরপর তিনি লিখে চললেন, যোগ্যতম প্রানীর বংশানুক্রমিক ধারা এবং কৃত্রিমভাবে উন্নতি ঘটানো বিভিন্ন প্রানীর বংশানুক্রমিক ধারার মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষন। এখানে কৃত্রিম উন্নতি বলতে ব্রিডারের কাজটিকে বোঝানো হয়েছে, কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে বানানো উন্নত প্রজাতির চাল, গম কিংবা গরু – ঘোড়া। আঠারোশ উনচল্লিশ সালের শুরুতে ডারউইন আবিস্কার করেন, প্রকৃতি বংশানুক্রমে টিকে থাকার জন্য কোন প্রজাতির বিভিন্ন সদস্যের ভিন্নতা যাচাই করে না। কে সেরা সেটা প্রকৃতির বিচার্য বিষয় নয়। যে সেরা সে নিজেই প্রমান করবে যে সে সেরা। উদাহরনস্বরূপঃ পাখিদের কোন কোন প্রজাতির ঠোট অন্য প্রজাতির চেয়ে লম্বা। এর কারনে হয়তো সে বেশী খাবার খেতে পারে। তাহলে স্বাভাবিকভাবে এই পাখিটির স্বাস্থ্য ভালো থাকবে, এবং বংশ বৃদ্ধি ও বেচে থাকার দৌড়ে সে আগে থাকবে। এবং খানিকটা ঠোট বড় হওয়ার প্রবনতা চলে যাবে পরবর্তী বংশধরদের মাঝে। ডারউইন এ সম্পর্কে আরো বেশী তথ্য লাভের জন্য চলে যান পিজিয়ন ব্রিডিং সোসাইটিতে। কবুতরের বংশবৃদ্ধি ঘটানো এদের কাজ। সেখানে গিয়ে ডারউইন জানতে পারলেন, প্রানীরা বংশানুক্রমিকভাবে কিভাবে পূর্বপুরুষদের গুনাগুন বয়ে বেড়ায়। এবং আরো নিশ্চিত হলেন যে, একই রকম মূল শারীরিক পরিকল্পনার ওপর ভিন্ন ভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্য কিভাবে নির্বাচন করেন ব্রিডাররা। পূর্বপুরুষদের সব বৈশিষ্ট্য স্বাভাবিকভাবে পায় না পরবর্তীরা পায় না ফলে ভবিষ্যত বংশধরদের মাঝে বৈচিত্র্যের সম্ভাবনা থাকে সবসময়। এটিকে পরবর্তীতে তিনি “ন্যাচারাল সিলেকশন” নাম দিয়েছেন। যেখানে যোগ্য প্রানীর বংশানুক্রমে টিকে থাকার ব্যাপারটি ব্যাখা করা হয়েছে। “সারভাইভাল অফ দি ফিটেষ্ট” নামে যা পরিচিত।
আমরা অনেকেই ডারউইনের মতবাদকে বলে থাকি, “দি থিওরি অফ দি ইভলিউশন”। কিন্তু আসল ব্যাপারটা তা নয়। বিবর্তন একটা ঘটনা মাত্র। তার পেছনে রয়েছে বংশানুক্রমিক ধারা। এইজন্য এই তত্ত্বের নাম হবে “ দি থিওরি অফ ইভিউলিশন বাই ন্যাচারাল সিলেকশন” কিংবা সংক্ষেপে “দি থিওরি অফ ন্যাচারল সিলেকশন”। যার মোদ্দা কথা হলো, মানবজীবনসহ পৃথিবীর তাবৎ প্রানীর উদ্ভব ঘটেছে একই পদ্ধতিতে , একটিমাত্র পূর্বপুরুষ থেকে। কাজেই মানুষ হচ্ছে প্রানীকুলের অনেক প্রজাতিরই একটি, ঈশ্বরের বাছাই করা বা বিশেষ কোন আলাদা সৃষ্টি নয়। কিন্তু বৈজ্ঞানিক পৃথিবীতে শেষ কথা বলে বা চির স্থায়ী সত্য বলে কিছুই নেই। জীবের সৃষ্টি নিয়ে যখন ডারউইন তত্ত্বের চেয়ে ভালো কোন তত্ত্ব এসে যাবে তখন এটিও ভুল বলে প্রমানিত হবে। কিন্তু সেই তত্ত্বকেও অবশ্যই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরন করে প্রমানিত হতে হবে। গত দেড়শো বছর ধরে বৈজ্ঞানিকরা এই তত্ত্বটি নিয়ে গবেষনা করে আসছেন। এনিয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধও আছে। প্রাকৃতিক নির্বাচনই যে একমাত্র প্রক্রিয়া তা নিয়ে সবাই একমত। কিন্তু অতি সূক্ষ প্রানীর মধ্যে সে প্রক্রিয়া কিভাবে কাজ করে এর উপর তারা এখন কাজ করছেন। জেনেটিক সাইন্স, মেডিকেল সাইন্সের অনেক বিষয়ই আজ এই তত্ত্বের উপর নির্ভরকরে নিজেদেরকে দিনে দিনে উন্নত করছে।
কৃতজ্ঞতা : উইকিপিডিয়া, আমার ব্লগ, ইন্টারনেট
বাংলায় অনুলিখন : তানবীরা
১১.০২.০৯
মন্তব্য…দু, একটা প্রমাণ উপস্থাপন করলে ভাল হতোনা! যতদূর জেনেছি বিবর্তনবাদের স্বপক্খের সকল যুক্তিই রিযেক্টেড। আপনার কাছে গ্রহণযোগ্য কোন প্রমাণ থাকলে উপস্থাপন করুন।
প্রাকৃতিক হোক আর কৃএিম হোক উদ্ভিদ / প্রাণীর ক্রোমোসোম নাম্বার কি পরিবর্তনশীল?
তানবীরা, অনেক সহজ কথায় সুন্দর করে সব কিছু লিখেছ। অনেক ধন্যবাদ।
তবে কিছু জিনিস আরেকটু পরিস্কার করা দরকার ছিলো। যেমন, ডারউইনের দাদা কিংবা ল্যামার্ক বিবর্তনের উপর কাজ করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু তারা যেভাবে বিবর্তন হয় বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন সেটা কিন্তু ভুল ছিলো। ল্যামার্ক বিশেষ করে ভাবতেন পরিবেশের প্রভাবে অর্জিত বৈশিষ্ট পরবর্তি প্রজন্মে স্থানান্তরিত হয়। এটা কিন্তু একেবারেই ভুল। আমার লাইসেঙ্কোইজম প্রবন্ধটিতে আমি এটি ব্যাখ্যা করেছি। এছাড়া এবারে কিশোরকে দেয়া আমার উত্তরটিও দেখতে পারো।
মোদ্দাকথা হল, জীবদেহে পরিবেশ দ্বারা উৎপন্ন প্রভাব বংশানুসৃত হয় না। জ়েনেটিক ট্রেইট না থাকলে মানুষ যতই চেষ্টা করুক না কেন হরিণ বা চিতাবাঘের মত দৌড়াতে পারবে না। ল্যামার্ক এ জায়গাতেই ভুল করেছিলেন। এমনকি ডারউইনও ব্যাপারটা ঠিক্মত বুঝতে পারেননি। ব্যাপারটার সমাধান এসেছিলো গ্রেগর মেন্ডেলের হাত দিয়ে। পরে বিবর্তনের সংশ্লেষনী তত্ত্বে ডারউইন এবং মেন্দেলের মেলবন্ধন ঘটে। বন্যার এই লেখাটাতে এর উল্লেখ পাবে।
@অভিজিৎ, অভি ভাইয়া, আপনার মন্তব্য পেয়ে অনেক খুশী হলাম। সময়ের জন্য কিছু জিনিস পাশ কাটিয়ে গেছি যেগুলোকে ভবিষ্যতে আরো একটু বিস্তারিত করব ভেবেছি। আবার এটাও ভেবেছি আকার অনেক বড় হলে হয়তো অনেকেই পড়তে চাইবে না। তবে আপনার লিঙ্কগুলো থেকে নিঃসন্দেহে আমি সহ মুক্তমনার পাঠকরা উপকৃত হবে।
ধন্যবাদ।
Well done my dear Tanbira.
Carry on.
@Nuruzzaman Manik, হুমম ধন্যবাদ :evilgrin:
চমৎকার এই লিখার জন্য তানবীরাকে অনেক ধন্যবাদ।
কোন পরিবর্তন, তা যে কোন ক্ষেত্রেই হোকনা কেন, কখনোই সহজ ছিল না। ভিন্ন মতবাদ গ্রহন করার ক্ষমতা আমাদের সমাজে কখনোই তেমন ছিল না। এই ভিন্ন মতালম্বিদের প্রতিও বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সাধারন মানুষদের আচরন ছিল অসমর্থনপুর্ন। আর সবচেয়ে মজার ব্যপারটা হচ্ছে, সেই গূহা সভ্যতা থেকে সভ্যতার যে স্তরে আজকে আমরা পৌছেছি, এর সম্পুর্ন কৃতিত্ত ওই ভিন্ন মতালম্মিদের, যারা ফ্রেমের বাইরে চিন্তা করতে পেরেছিল।
@Mamun, ভালো জিনিসের কদর সব সময় দেরীতে হয় কিন্তু তা চিরস্থায়ী হয় সেটাই সান্ত্বনা।