এইমাত্র দুঃসংবাদটা পেলাম।
মীজান ভাই আর নেই। যারা মীজান ভাইকে চেনেন না, তাদের জন্য বলি – মীজান রহমান ছিলেন পেশায় গণিতবিদ। শুধু গণিতবিদ বললে ভুল হবে, বাংলাদেশের যে কয়জন একাডেমিয়ার সাথে যুক্ত শিক্ষাবিদ আন্তর্জাতিক খ্যাতি পেয়েছেন, বাংলাদেশকে পরিচিত করতে পেরেছেন দর্পভরে বিশ্বের অঙ্গনে, তার মধ্যে মীজান রহমান ছিলেন অন্যতম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছিলেন তিনি, এরপর পড়েছিলেন ইংল্যান্ডের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং কানাডার ব্রান্সউইকে। তারপর সেই ১৯৬৫ সালে কানাডার অটোয়াস্থ কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যোগ দিয়েছিলেন, সেখানে একটানা প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের গণিতের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে সেরা শিক্ষকের সম্মান সহ বহু সম্মানেই তিনি ভূষিত হয়েছেন। শুধু শিক্ষক হিসেবে তিনি খ্যাতিমান তা নন, শিক্ষায়তনে সাফল্য পেতে হলে যা যা দরকার, সবই তাঁর ঝুলিতে ছিল। গণিতের বিখ্যাত জার্নালগুলোতে খুঁজলেই যে কেউ পাবেন তাঁর অসংখ্য গবেষণাপত্রের হদিস, পাশাপাশি কিছুদিন আগে গণিত শাস্ত্রের পণ্ডিত জর্জ গ্যাসপারের সাথে লিখেছেন মহামূল্যবান একটি পাঠ্যপুস্তক ‘বেসিক হাইপারজিওমেট্রিক সিরিজ’ (১৯৯০) শিরোনামে, যেটা প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়েই গণিতের ছাত্রদের জন্য অবশ্যপঠিত পুস্তক হিসেবে বিবেচিত। তিনি বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা অধ্যাপক প্রফেসর আলবার্তো গ্রুনবাম এবং নেদারল্যাণ্ডের গণিতবিদ এরিখ কোয়েলিংক প্রমুখের সাথেও গণিত বিষয়ক বহু গবেষণা করেছেন। গণিতে তার অবদান এতটাই বিস্তৃত ছিল যে ১৯৯৮ সালে কানাডার ওই বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নেওয়ার পরেও তাঁকে ‘এমিরিটাস অধ্যাপক’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। যারা ‘এমিরিটাস’ শব্দার্থটির সাথে পরিচিত নন, তাদের জানাই – এমিরিটাস অধ্যাপক হবার ব্যাপারটি খুব বিরল সম্মানের, যে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্যই। এঁরা অবসর নেবার পরেও যে কোন জায়গায় নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসেবে পরিচিত করতে পারেন, আজীবন ধরেই। পরে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘Distinguished Research Professor’-ও হয়েছিলেন। গণিত বিষয়ে বাংলাদেশের কিংবদন্তির তালিকা কেউ কোনদিন বানাতে বসলে মীজান রহমানকে বাদ দিয়ে সেটা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।
কিন্তু গণিতের কাঠখোট্টা জগতের বাইরেও তার আরেকটা পরিচিতি ছিল। তিনি ছিলেন সুসাহিত্যিক। তার প্রথমদিককার উপন্যাস ‘লাল নদী’ (২০০১) পড়ে আমি বিস্মিত হয়েছিলাম, আলোড়িত হয়েছিলাম, সহসা আবিষ্কার করেছিলাম এক সমাজ সচেতন প্রগতিশীল সুলেখকের প্রতিচ্ছবিকে। পরে জেনেছি এই নিভৃতচারী লেখকের এই একটি নয়, একগাদা ভাল ভাল বই আছে। তার মধ্যে রয়েছে ‘তীর্থ আমার গ্রাম, ‘প্রসঙ্গ নারী’, ‘অ্যালবাম’, ‘অনন্যা আমার দেশ’, ‘আনন্দ নিকেতন’, ‘দুর্যোগের পূর্বাভাষ’, ভাবনার আত্মকথন’, ‘শুধু মাটি নয়’ প্রভৃতি। সে সময় লজ্জিতই হয়েছিলাম তার বইয়ের সাথে আগে পরিচিত না হওয়ায়। এর পরে যখনই সুযোগ পেয়েছি মীজান রহমানকে পড়বার চেষ্টা করেছি, নিজ উদ্যোগেই। এক ধরণের দায়িত্ববোধ থেকেই। বলা বাহুল্য, তাঁর লেখা পড়ে কখনোই হতাশ হইনি, বরং আলোকিত হয়েছি নানাভাবে। ভাল লাগা আরো বেড়েছে পরবর্তীতে যখন জানলাম তিনি একজন ধর্মমোহমুক্ত সত্যিকার মুক্তমনা মানুষ, একজন মানবতাবাদী। শুধু তাই নয়, দর্শনের জগতে আমরা যাদের ‘স্কেপ্টিক’ বলি, মীজান রহমান সেই গোত্রভুক্ত ছিলেন। সে অনুভূতি আমার আরো দৃঢ় হয়েছে পরবর্তীতে তার মুক্তমনা ব্লগে প্রকাশিত লেখাগুলো পড়ে। তিনি ধর্মগ্রন্থের বানীগুলোকে কেবল নিনির্মেষ স্তব করতেন না, বরং সময় সময় প্রকৃত অনুসন্ধিৎসু বিজ্ঞানীদের মতো ক্রিটিকালি দেখতে চাইতেন। তাই তিনি শমশের আলী আর জাকির নায়েকদের মত কোরানের আয়াতে বিগ ব্যাং খুঁজে পাননি, বরং ঈশ্বর নির্দেশিত ধর্মগ্রন্থগুলোতে আবিষ্কার করেছেন অপবিজ্ঞান, কুসংস্কার, অসাম্য আর নিপীড়নের দীর্ঘদেহী করাল ছায়া। মুক্তমনা সাইটে রাখা তাঁর ব্লগের ‘ইনশাল্লাহ’, ‘কোথায় স্বাধীনতা’, ‘হতবুদ্ধি, হতবাক’ কিংবা ‘আউট অব্ কন্টেক্সট’ শিরোনামের প্রবন্ধগুলো পড়লেই মীজান রহমানের প্রগতিশীল দার্শনিক অভিজ্ঞার সন্ধান পাবেন পাঠকেরা। অদৃশ্য স্বর্গ-নরকে বিশ্বাস ছিল না তাঁর। তিনি প্রায়ই বলতেন, “আমার স্বর্গ এখানেই“। স্বর্গের হুরপরী নিয়ে কখনো চিন্তা ছিলো না বলে তিনি আগে থেকেই মরণোত্তর দেহ দান করে যাবার কথা বলে গেছেন।
তাঁর শূন্য বইটির রিভিউ করেছিলাম একসময়। রিভিউটি মুক্তমনায় প্রকাশিত হয়েছিল, প্রকাশিত হয়েছিল বইয়ের জগৎ পত্রিকাতেও। সেটি পড়তে গিয়ে এবং রিভিউ করতে গিয়ে বুঝেছিলাম যুগপৎ বিজ্ঞান এবং বাংলা সাহিত্যে এমন বই দুর্লভ। তিনি বোধ করি ছিলেন বাংলা ব্লগ-জগতের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্লগার। চিরতরুণ মীজান ভাই ছাড়া ৮২ বছর বয়সে আর কেউ কি এভাবে বাংলায় ব্লগ করে গেছেন? [মুক্তমনায় তার ব্লগের ঠিকানা এখানে এবং এখানে] ।
বয়সে আমার বাবার থেকেও বড়। কিন্তু আমাদের কাছে উনি সব সময়েই ছিলেন ‘মীজান ভাই’ হিসেবে। আমার স্ত্রী বন্যা অবশ্য আরো অনেক আগে থেকেই তাঁকে চিনতেন। তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন কানাডার সকল মুক্তমনা এবং প্রগিতিশীল তরুণ-তরুণীদের কাছে একেবারে ছায়ার মতোন। একটু আগে মণিকাকে ফোন করলাম। কাঁদছেন। অনেককেই এভাবে কাঁদিয়ে গেলেন মীজান ভাই। মাথার উপর থেকে হঠাৎ ছাদ সরে গেলে কার না কান্না হয়। এ লেখাটা লিখতে গিয়ে আমারো কি গলাটা আটকে আসছে না? কান্না আমিও থামাতে পারছি কই?
আমার সাথে একটা বই লেখার কথা ছিল তাঁর। তার মত সফল একাডেমিয়ান এবং সুসাহিত্যিকের আমার মতো ছাপোষা কারো সাথে কিছু লেখার কথা নয়। কিন্তু লিখলেন। বিপুল উৎসাহে প্রায় পাঁচশ পৃষ্ঠার একটা বই। শূন্য থেকে মহাবিশ্ব। বইটা নিয়ে দারুণ উচ্চাশা ছিল তাঁর। বইটি নিয়ে কথা হইলেই শিশুর মতো উৎফুল্ল হয়ে উঠতেন তিনি। পাণ্ডুলিপি গত বছরই জমা দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বইটি দেখে যেতে পারলেন না। শুদ্ধস্বরের প্রকাশক টুটুলকে প্রায়ই ইমেইল করতেন বইটার ব্যাপারে। কিন্তু দেখে আর যেতে পারলেন কই? ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’র পাণ্ডুলিপি জমা দিয়ে… শূন্যেই হারিয়ে গেলেন প্রিয় মীজান ভাই।
গুড বাই ড. মীজান রহমান, গুড বাই।
:line:
আপডেট: মীজান রহমানের কিছু দিক ছিল যা হয়তো এমনকি তার কাছের মানুষেরাও অবহিত নন। তিনি সম্ভবত ছিলেন কানাডার প্রথম বাংলাদেশি অধ্যাপক। তিনি শুধু গণিতবিদই ছিলেন না, মুক্তিযুদ্ধের সময়টিতে সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠিত করেছিলেন, তাদের দিয়ে তহবিল গঠন করে কোলকাতায় বাংলাদেশের হাইকমিশনারের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করতেন। প্রবাসে জনমত গঠন, বাংলাদেশে পাকিস্তানি গণহত্যার সঠিক চিত্র তুলে ধরে পশ্চিমা দেশগুলোর সরকারকে চিঠি পাঠানোসহ স্বাধীনতা যুদ্ধে পরোক্ষভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন তিনি। তাঁর লেখালেখিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা ছিল স্পষ্ট। এমনকি মুক্তমনায় যে লেখাগুলো পোস্ট করতেন, সেগুলো তিনি শেষ করতেন ‘মুক্তিসন’ উল্লেখ করে।
তিনি ভালো রান্না করতেন। তবে সেটা যত না শখে, তার চেয়েও বেশি বোধ করি ‘জীবনের প্রয়োজনে’। অনেকেই হয়তো জানেন না, মীজান রহমানের স্ত্রী মারা যাবার আগে দীর্ঘদিন পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থায় শয্যাশায়ী ছিলেন। মীজান রহমান তখন একা হাতে সংসার সামলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করিয়েছেন, বাসায় ফিরে এসে রান্না করেছেন, স্ত্রীকে খাইয়েছেন, তাঁর যাবতীয় পরিচর্যা করেছেন। শুধু তাই নয়, তাঁর ছোট দুই ছেলেকে একা হাতে মানুষ করেছেন। তাঁর দু’ছেলে, বাবু এবং রাজা, বলা যায় মীজান রহমানের হাতেই মানুষ হয়ে বাড়ির গণ্ডি ছেড়েছেন। এ ধরনের অনুপম দৃষ্টান্ত বাঙালি সমাজে খুব বেশি দেখা যায় না।
ছিলেন মনে-প্রাণে আমূল নারীবাদী। প্রথাগত জেন্ডার-রোলে বিশ্বাস ছিল না তাঁর। রান্না করা, বাচ্চা মানুষ করা যারা মেয়েদের কাজ মনে করতেন, মীজান রহমান কেবল তত্ত্বে নয়, ব্যবহারিক প্রয়োগেও এই সমস্ত আপ্তবাক্য ভুল প্রমাণ করে গেছেন। তাঁর সামনে নারীদের অপমানসূচক কোনো কথা বলা যেত না, তা যতই হাস্যরসে বলা হোক না কেন। …
এ ধরণের বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আমার একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে বিডিনিউজ২৪ পত্রিকায়:
অধ্যাপক মীজান রহমান: এক নক্ষত্রের মহাপ্রয়াণ >> বিডিনিউজ২৪ (মতামত বিশ্লেষণ)
তবে যে কোন কারণেই হোক, বিডিনিউজে সবগুলো ছবি যায়নি; সকল ছবিসহ আমার সম্পূর্ণ লেখাটি আপলোড করে রেখেছেন শফিউল ইসলাম এখানে।
শ্রদ্ধা নিবেদন করছি মীজান রহমানের প্রতি। আশা করছি “শুন্য থেকে মহাবিশ্ব” বইটি এবারের বইমেলায় পাবো।
মীজান রহমানের কিছু দিক ছিল যা হয়তো এমনকি তার কাছের মানুষেরাও অবহিত নন। তিনি সম্ভবত ছিলেন কানাডার প্রথম বাংলাদেশি অধ্যাপক। তিনি শুধু গণিতবিদই ছিলেন না, মুক্তিযুদ্ধের সময়টিতে সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠিত করেছিলেন, তাদের দিয়ে তহবিল গঠন করে কোলকাতায় বাংলাদেশের হাইকমিশনারের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করতেন। প্রবাসে জনমত গঠন, বাংলাদেশে পাকিস্তানি গণহত্যার সঠিক চিত্র তুলে ধরে পশ্চিমা দেশগুলোর সরকারকে চিঠি পাঠানোসহ স্বাধীনতা যুদ্ধে পরোক্ষভাবে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন তিনি। তাঁর লেখালেখিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা ছিল স্পষ্ট। এমনকি মুক্তমনায় যে লেখাগুলো পোস্ট করতেন, সেগুলো তিনি শেষ করতেন ‘মুক্তিসন’ উল্লেখ করে।
তিনি ভালো রান্না করতেন। তবে সেটা যত না শখে, তার চেয়েও বেশি বোধ করি ‘জীবনের প্রয়োজনে’। অনেকেই হয়তো জানেন না, মীজান রহমানের স্ত্রী মারা যাবার আগে দীর্ঘদিন পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থায় শয্যাশায়ী ছিলেন। মীজান রহমান তখন একা হাতে সংসার সামলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করিয়েছেন, বাসায় ফিরে এসে রান্না করেছেন, স্ত্রীকে খাইয়েছেন, তাঁর যাবতীয় পরিচর্যা করেছেন। শুধু তাই নয়, তাঁর ছোট দুই ছেলেকে একা হাতে মানুষ করেছেন। তাঁর দু’ছেলে, বাবু এবং রাজা, বলা যায় মীজান রহমানের হাতেই মানুষ হয়ে বাড়ির গণ্ডি ছেড়েছেন। এ ধরনের অনুপম দৃষ্টান্ত বাঙালি সমাজে খুব বেশি দেখা যায় না।
ছিলেন মনে-প্রাণে আমূল নারীবাদী। প্রথাগত জেন্ডার-রোলে বিশ্বাস ছিল না তাঁর। রান্না করা, বাচ্চা মানুষ করা যারা মেয়েদের কাজ মনে করতেন, মীজান রহমান কেবল তত্ত্বে নয়, ব্যবহারিক প্রয়োগেও এই সমস্ত আপ্তবাক্য ভুল প্রমাণ করে গেছেন। তাঁর সামনে নারীদের অপমানসূচক কোনো কথা বলা যেত না, তা যতই হাস্যরসে বলা হোক না কেন। …
এ সব বহু বিষয় মনে হয় মীজান ভাইয়ের কথা ভাবতে গেলে। তার এই দিকগুলো নিয়ে একটি লেখা লিখেছি বিডিনিউজ২৪ পত্রিকায়, পাঠকেরা দেখে নিতে পারেন –
অধ্যাপক মীজান রহমান: এক নক্ষত্রের মহাপ্রয়াণ
আর সবগুলো ছবি সহ আপলোড করা আছে এখানে।
আপনজনের মৃত্যু হলে মানুষ শোকে অভিভূত হয় – আবার এই পৃথিবীতে কিছু কিছু মানুষ জন্মায় যাঁরা প্রচলিত অর্থে আপন না হয়েও তাঁরা অনেক মানুষেরই আপন হয়ে যায় ! এই সকল মানুষেরা আপন না হয়েও আপনজনের মতই তাঁদের চিরবিদায়ের মধ্য দিয়ে বহু মানুষকে কাঁদায় ! অধ্যাপক মীজান রহমান ছিলেন এমনি একজন আপনজন ! তাঁর এই চির বিদায়ে বহু মানুষ শোকে আচ্ছন্ন ! বহু মানুষ তাঁর চলে যাওয়ায় অঝোরে কাঁদছে ! মীজান ভাইয়ের বয়স হয়েছিল ৮২ বৎসর ! মানুষের আয়ুষ্কালের বিবেচনায় এটি যথেষ্ট বয়স মনে হলেও – সময়ের বিবেচনায় তা আর তেমন কি বয়স !! এমন মানুষদের আরো অনেক অনেকদিন বেঁচে থাকা দরকার ! ড: মীজান রহমানের মত মানুষ ১০০ বা তারও বেশি ১২৫ বা ১৫০ বৎসর পর্যন্ত বেঁচে থাকলে পৃথিবীর কি এমন ক্ষতি হত ? বরং আরো লাভই হত অনেক অনেক বেশি – কারণ এমন মানুষেরা দীর্ঘদিন বেঁচে থাকলেও তাঁরা এই পৃথিবী থেকে নেয় খুবই সামান্য – তাঁরা যতটুকু নেয় তার বিনিময়ে পৃথিবীকে তাঁরা দেয় আরো অনেক অনেক বেশি !!!
মানবতাবাদী প্রফেসর মীজান রহমান ছিলেন একজন আলোকিত মানুষ ! এই একবিংশ শতাব্দীতেও পৃথিবীর আনাচে-কানাচে যখন ঘুট ঘুটে অন্ধকার তখন এমন একজন দীপ্যমান নক্ষত্রের আরো অনেক অনেক দিন বেঁচে থাকার বড় বেশি প্রয়োজন ছিল ! তবে তিনি তাঁর ৮২ বৎসরের জীবনে যে আলো ছড়িয়ে গেছেন তার কিছুটাও যদি আমরা আত্মস্থ করতে পারি তবে আমাদের অনেকেরই জীবনের অনেকটা অন্ধকারই যে দূরীভূত হয়ে যাবে তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই !
এই “মানব ধর্মের” পূজারী মীজান ভাইয়ের স্মৃতির প্রতি রইলো আমার গভীর প্রণতি!!!!!!!!!
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। বিদায় মীজান রহমান। :candle:
বইমেলায় দেখা হয়েছিলো। আমি শূন্যবইটা দরদাম করছি। পাশে উনি দাঁড়িয়ে। তখনো চিনি না। পরিচিত হতেই অমায়িক হাসলেন। নিভৃতেই কত কিছু করে গেছেন উনি। আমরা একজন প্রকৃত মুক্তমনাকে হারালাম। আফসোস তিনি শূন্য থেকে মহাবিশ্ব বইটা দেখে যেতে পারলেন না।
বইমেলায় দেখা হয়েছিল তার কাছে, কি অমায়িক, বিনয়ী একজন মানুষ! শূন্য বইটাতো বাংলায় গণিত/বিজ্ঞানের সেরা বইয়ের একটা। অন্তর থেকে শ্রদ্ধা থাকলো :candle: ।
উনার লেখাগুলি ভাল লাগত খুব। শ্রদ্ধা :candle:
@অর্ফিউস,
অনেকদিন পর আপনাকে দেখলাম।
২০১৩ তে চলে গিয়েছিলেন জাফর ভাই। আর ২০১৫ ভাল করে শুরু না হতেই বিদায় নিলেন মীজান ভাই। মুক্তমনায় যে কজনের লেখা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তাম, তাদের অন্যতম ছিলেন মীজান ভাই। তাই স্বভাবতই খুব খারাপ লাগছে!
আর দেখে যেতে না পারলেও অভিজিৎদার সঙ্গে লেখা তার ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ নিশ্চয়ই বেরুবে এই বইমেলায়; আর পাঠকরা বইটি পাঠের সময় মাঝে মাঝেই অসীম শূন্যতায় হারিয়ে যেতে চাইবে, অবশ্য চিন চিন করে এক শূন্য স্রোত ঠিকই বইবে তাদের অন্তরকোনে!
উনি পাক্ষিক অনন্যায় শিল্পী আকরাম খানকে নিয়ে দীর্ঘ একটা গদ্য লিখেছিলেন। সেটি আমার প্রকাশ করার সৌভাগ্য হয়েছে। গণিতবিদ হলেও ভালো গদ্যের হাত ছিল তাঁর। শ্রদ্ধা তাঁর প্রতি।
এমন একজন বহুমাত্রীক আলোকিত মানুষের মৃত্যুতে শুধু বাঙালী কমিউনিটি নয়, সারা পৃথিবীর অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। তবে তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন, থাকবেন তার কর্মে, চিন্তায় আর বিশ্বাসে।
তার মত এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের মৃত্যু সংবাদ ছাপানো হয় পত্রিকার ৪ নং পাতায়। লজ্জা রাখি কোথায়? মীজান রহমানের মৃত্যু হয়নি। তিনি আমাদের মাঝে চিরকাল বেঁচে রইবেন। আচ্ছা, তার কি শুধুই দুই ছেলে নাকি একটি মেয়েও আছে?
মুক্তমনায় যাদেরকে শিক্ষকের মর্যাদা দিয়ে এসেছি তাদের মধ্যে মীজান স্যার অন্যতম। মুক্তমনায় প্রকাশিত তার কোনো লেখা মিস করিনি। এখন তার লেখা পড়া থেকে বঞ্চিত হবো ভাবতে কষ্ট লাগে।
না ফেরার দেশে তিনি চলে গেলেন তিনি। তার প্রতি র’ল অজস্র শ্রদ্ধা।
মিজান ভাইয়ের প্রতি বিনম্র শ্রোদ্ধা!
অনেক দিন ধরেই মাঝে মাঝে শুনতাম উনি অসুস্থ থাকছেন।
কখনো ব্যাক্তিগতভাবে পরিচিত হবার সুযোগ ঘটেনি, যা কিছু পরিচয় তার লেখালেখির মাধ্যমেই। মিজান ভাই এর লেখা দেখলেই সব কিছুর আগে পড়তাম। জটিল জটিল বিষয় এত চমতকার ভাষায় সরল করে লেখার আর্ট আর কয়জনায় জানে? ব্যাক্তিগত পরিচয় না থাকলেও বুঝতাম মানুষ হিসেবেও উনি কতটা বড় মনের, নিরহংকারী। এ ধরনের মানুষের সংস্পর্শে আসলে আপনা থেকেই মনে এক ধরনের শান্তি ভাব চলে আসে। সব লেখার নীচে মুক্তিসন লিখতেন, বোধকরি ধর্মীয় সংকীর্নতার জগত থেকে মুক্তির হিসেব রাখতেন।
আমাদের সমাজের একটি অন্যতম মৌলিক সমস্যা শিক্ষিত মানুষের মধ্যে শিক্ষার প্রকৃত যে গুনাবলি শিক্ষার মাধ্যমে আসার কথা তার বিকাশ না হওয়া। শতকরা ৫ ভাগ শিক্ষিত মানুষের মাঝেও মিজান ভাই এর মত অকপটে সত্য কথা বলার প্রবনতা থাকলে হয়ত সমাজের স্থবিরতা অনেকটা কেটে যেত।
অফুরন্ত শ্রদ্ধা !
ডঃ মীজান রহমানের সাথে আমার প্রথম পরিচয় তাঁর ছোট ভাইরের মাধ্যমে। পরে মুক্তমনাতে তাঁর লেখা পড়ে। আমি সব সময়ে তাঁর সব লেখা ভালো করে পড়তাম। আমার মতে তিনি এক অসাধারণ লেখক ছিলেন। তাঁর অভাব আর কাউকে দিয়ে পূরণ হবে না।
তাঁর প্রয়ান বাঙালীদের একটা বড় ক্ষতি। এই বিদায় মেনে নিতে কষ্ট হয়। তাঁর লেখার ভিতর দিয়ে তাঁর সাথে আমার পরিচয়। বস্তুগত পৃথিবী থেকে তাঁর অন্তর্ধান ঘটলেও, তিনি বেঁচে থাকবেন তাঁর কীর্তিতে। এমন আলোকিত মানুষ সত্যিই বিরল।
:candle:
:candle: তাঁর প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা
বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে গেলাম। (F)
অভিজিৎ দা, খবর টি শুনে খুব মর্মাহত হলাম। লেখা পড়তে পড়তে একটা মানসিক সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছিল। উনার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা রইল। পরিবারের প্রতি গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করছি।
সত্যিই মীজান রহমান চলে গেলেন ? কখনো পরিচয় হয় নি, তবুও পরিচিত ছিলেন খুব। খুবই আপন লাগতো। মুক্তমনের অধিকারী ছিলেন। কাছাকাছি বয়সের নয়, তবুও মনে হতো সমবয়সী সাথী। দারুণ লিখতেন।
অভিজিৎ রায়ের সাথে একটা বই বেরুনোর কথা এই বছরের বইমেলায়। কিন্তু ওনার তর সইলো না, চলে গেলেন!
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তমনায় লিখেছিলেন, “না, তারা যাবে না কোথাও”। লিখেছিলেন,
আপনিও কোথায়ও যান নি, মীজান রহমান। আমাদের মাঝেই আছেন, থাকবেন। মুক্তমনাদের দিশারী হয়ে।
দুই বাংলাতেই ভাল গণিতবিদ খুব কম জন্মেছেন। মিজান ভাই কে নিয়ে একটি পূর্নাঙ্গ লেখা পাওয়া যাবে?
পত্রিকায় দেখে বিশ্বাসই হচ্ছিলনা উনি আমাদের মিজান ভাই। মুক্তমনা আজ একজন অভিভাবক হারালো। কী বলবো, ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। মিজান ভাই মুক্তমনার পাঠকের মনে চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
@আকাশ মালিক,
ধন্যবাদ আপনাকে লিঙ্কটি শেয়ারের জন্য। কিন্তু মীজান ভাইয়ের নামের বানানটি ভুল আছে। মীজান ভাই তার নাম ‘মীজান রহমান’ লিখতেন, ‘মিজান রহমান’ নয়। তার সব বইপত্রেও দীর্ঘ-ইকারযোগেই তাঁর নাম আছে। অথচ প্রথম আলো সব সময়ই তাঁকে ‘মিজান রহমান’ হিসেবে লিখেছে। বছর কয়েক আগে হাসান ফেরদৌসের একটা লেখা প্রকাশিত হয়েছিল প্রথম আলোতে ড.মীজান রহমানের ওপর। সেখানেও দেখেছিলাম ভুল বানানে গিয়েছিল। এর কারণ আমি সত্যই জানিনা।
@অভিজিৎ,
মন্তব্য লেখার সময় বিষয়টা আমারও খেয়াল হয়েছিল, দু-টানায় ছিলাম। শুনেছিলাম নিয়ম নাকি হয়ে গেছে যে, বিদেশী শব্দে দ্বীর্ঘ-ইকার থাকবেনা। মীজান ভাই যেহেতু দ্বীর্ঘ-ইকার দিয়েই লিখতেন সেভাবেই থাকাটা উচিৎ। হতে পারে নামের বেলা সেই নিয়ম প্রযোজ্য নয়। যাক মীজান ভাই নাই, কথাটা যেন কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিনা। একজন নিখাদ অভিভাবকের মত, আঁধারের যাত্রীর হাতে আলোটা ধরিয়ে দিয়ে কেমন তার শেষ সতর্কবাণী শুনিয়ে গেলেন-
যাত্রীরা হুঁশিয়ার
[img]https://encrypted-tbn3.gstatic.com/images?q=tbn:ANd9GcRWaYPLLWusOETE_E6tBtJm7m3KT0YurSVYbnSM5_ohNwzfY0-P5A[/img]
@অভিজিৎ,
আমার জানা মতে, বাংলাভাষীদের মাঝে আামাদের মীজান ভাই-ই একমাত্র লেখক যিনি সঠিকভাবে উনার নাম ‘মীজান’ লিখতেন যা মূল নামের উচ্চারণের (مِيْزَان) সবচেয়ে কাছাকাছি বাংলা বর্ণায়ণ। গনিতের মত উনি বানানের ক্ষেত্রেও যথাসম্ভব নিপুন থাকার চেষ্টা করতেন।
@সংশপ্তক,
অনেকদিন পরে মুক্তমনায় এলেন। নিয়মিত লিখলে খুশি হব।
কী লিখবো জানি না। বইমেলায় একবার দেখা হয়েছিলো, অত্যন্ত অমায়িক একজন মানুষ ছিলেন তিনি। উনি চলে গেলেও তার কর্ম অনেকদিন থাকবে। বিদায় মীজান ভাই।
বিদায় মিজান রহমান।
এই মাত্র অত্যন্ত দুঃখজনক খবরটা পত্রিকায় দেখেই এখানে এলাম! আমার আন্তরিক শ্রদ্ধাবোধ সেই সাথে তাঁর পরিবার ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি সমবেদনা রইলো। খুব কষ্ট হচ্ছে তাঁর এই হঠাৎ বিদায়ে।
মীজান ভাই’এর প্রতি রইল শ্রদ্ধাঞ্জলি।
প্রিয় মীজান ভাই’এর চলে যাওয়া মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে খুব