(১)
সেটা ২০০৪। বাজপেয়ি সরকারের “আচ্ছে দিন” জনগণ খেলো না । বিজেপির গণেশ উল্টিয়ে কংগ্রেস ক্ষমতায়।
ভারতের ইনস্টিউটগুলোতে তখনো হিন্দুত্বের রেশ কাটেনি। বৈদিক গণিত, বৈদিক সমাজতন্ত্র, বৈদিক বিজ্ঞান থেকে বৈদিক রমণ এবং রমণীতে ভা্রতকে ভেজাবার তালটা সবে কাটছে।
সেই প্রথম আমি সিরিয়াস হয়ে ভাবলাম দেখি ঋকবেদে কি আছে। কেমন ছিল বৈদিক সমাজ। পাশেই ছিল দক্ষিন ক্যালিফোর্নিয়াতে ট্রাবুকো ক্যানিয়নে বেদান্ত সমাজের লাইব্রেরী।
ঋকবেদের ভাষা সংস্কৃত না -প্রোটো ইন্দোইউরোপিয়ান। অধিকাংশই মাথামুন্ডু বোঝা যায় না বলে অনেক স্তোত্রের একাধিক মানে সম্ভব। যা বুঝলাম পড়াশুনো করে তার মধ্যে বিজ্ঞান ভূগোল কিছুই নেই । আদিবাসীদের পূজো করার মন্ত্র-তাতে সাহিত্যের মতন রূপকের ব্যবহার আছে । বেসিক্যালি গোটা বইটা থেকে একটা আদিবাসী সমাজের চিত্র বেড়িয়ে আসে। যুদ্ধ, পুত্র, বৌ, সম্পতি ইত্যাদির জন্য যাগযজ্ঞ। শুধু প্রগ্রেসিভ দিক যেটা চোখে পড়েছিল-ঋকবেদে কিছু স্তোত্র মেয়েদের লেখা। সেখানে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে কিছুটা হলেও প্রতিবাদি ভাষা চোখে পড়ে। মুক্তমনা সাইটে সেটাই ছিল আমার প্রথম প্রবন্ধ ( MYTH OF VEDIC SOCIETY: BETWEEN REALITY, RELIGION AND POLITICS )
যাইহোক বৈদিক সমাজে প্লাস্টিক সার্জারি, টেস্ট টিউব বেবী, বিমানের অস্তিত্ব থাকাত দূরের কথা ঋকবেদ পড়লে এটাই পরিস্কার হয় সেই সমাজটা ছিল নমাডিক আদিবাসিদের। যারা ঘুরে ঘুরে নানান জায়গায় বসতি স্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছে স্থানীয় কালো দাশদের হারিয়ে। তাদের সোনা এবং স্ত্রীর হরন করা যে পবিত্রকাজ এটাও ঋকবেদে পাওয়া যাবে -তবে যেহেতু ভাষাটা প্রটো ইউরোপিয়ান, আসল মানে বোঝা কঠিন। আমি যেটুকু বুঝেছিলাম, সেটা বুঝে একটা গল্প লিখি-“পৌলমী” ( তবে এটা প্রথম লেখা ছিল-অনেক বানান ভুল আছে ) ।
(২)
রাজনৈতিক সিদ্ধির জন্য মিথকে কাজে লাগানো নতুন কিছু না ।
কমিনিউস্টরা বহুদিন সোভিয়েত ইউনিয়ানকে শ্রমিক শ্রেনী তথা সাম্যের স্বর্গরাজ্যে বলে চালানোর চেষ্টা করেছে। যদিও বাস্তবে আজ এটাই সত্য হিসাবে প্রমানিত লেনিন এবং স্টালিনের আমলে সোভিয়েত ইউনিয়ান ছিল কৃষক এবং শ্রমিকদের বধ্যভূমি [১]। সোভিয়েত ইউনিয়ানের মিথ ফাটার পর কমিনিউজমের পালে আর হাওয়া নেই ।
ইসলাম এবং খৃষ্টান ধর্মের রাজনীতিও সম্পূর্ন মিথের ওপর দাঁড়িয়ে।
ইসলামের ভিত্তি হচ্ছে হজরত মহম্মদের স্থাপিত স্বর্গরাজ্য। যেখানে নাকি ক্ষমা, ন্যায়, বিচার, সাম্য এমন “পারফেক্ট” ছিল, তেমনটা পৃথিবীর আর দেখেনি কোনদিন। কিন্ত সেখানেও একটু ঘাঁটতে গিয়ে দেখলাম হজরত মহম্মদ চরিত্রটাই কাল্পনিক [২] । আর যদি ধরেও নিই ওই চরিত্র ছিল, তাহলেও দেখা যাচ্ছে তিনি তার সাগরেদদের গণিমতের মাল দাসী হিসাবে ভোগ করার অনুমতি দিয়েছেন। আর সে এমন স্বর্গরাজ্য যে তিনি মারা যেতেই তার বৌ, শিষ্যদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়! এসব জানার পর , পড়ার পরেও অধিকাংশ মুসলমান মহম্মদ এবং তার স্বর্গরাজ্যে বিশ্বাস করে! অবশ্য হিন্দুরা যদি যদি বৈদিক বিমান, বৈদিক টেস্ট টিউব বেবী এবং প্লাস্টিক সার্জারীতে আস্থা রাখে, মুসলমানরাই বা কেন মহম্মদে আস্থাশীল হবে না ?
কারা বেশী মাথামোটা, সেটা নিয়ে তর্ক চলতেই পারে। তবে সমস্যা হচ্ছে এই সব মিথ এতই শক্তিশালী তা ভারত বাংলাদেশ পাকিস্তান সহ সব মুসলিম দেশের ভাগ্য নিয়ন্ত্রনের আসনে। এই সব মিথের জন্য এই সব দেশে উন্নয়নের রাজনীতি করা বেশ মুশকিল হচ্ছে আস্তে আস্তে।
খ্রীষ্টান ধর্মের মিথটা অদ্ভুত শক্তিশালী। সেটা হচ্ছে ভিক্টিমাইজেশনের । মানে আমাদের সবাই ধরে মারছে। আমরা নির্যাতিত। এ হচ্ছে পৃথিবীর সব নির্যাতিতদের একত্র করার মিথ।
(৩)
এমন ভাবার কারন নেই শুধু ফ্যাসিস্ট শক্তিগুলিই মিথের পূজারী।
গণতন্ত্রে সব শক্তিকেই কমবেশী মিথ তৈরী করতে হয়।
যেমন মমতা ব্যানার্জি নামে যে চরিত্রটাকে লোকে বিশ্বাস করে ভোট দেয়-সেটা মিথিক্যাল চরিত্র। আজ তাকে আনন্দবাজার সারদার প্রতীক চোরের রাণী বানাচ্ছে-কিন্ত সিপিএমকে তাড়াতে এই মহিলাকেই ” সততার প্রতীক” বানিয়েছিল বাংলার মিডিয়া। তার আগের চরিত্র জ্যোতিবসু সম্মন্ধেও মহান ত্যাগী কমিনিউস্ট নেতার একটা মিথ তৈরীর চেষ্টা পার্টির মধ্যে আছে। যদিও পার্টি কখনোই এ উত্তর দিতে পারে নি একজন “মহান” ত্যাগীর কমিনিউস্ট নেতার পুত্র কি করে এত সম্পতি করেন !! অথচ যে লোকটা সত্যই সাধারন সৎ জীবন কাটিয়েছেন-তিনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্য। তিনি এখন বাংলার রাজনীতিতে ব্রাত্য। কারন বুদ্ধদেবকে নিয়ে কোন মিথ তৈরী করার চেষ্টা হয় নি। বা তিনি করেন নি। ফলে তিনি ফেইল্ড!
আমেরিকাতে মিডিয়াগুলো এ ব্যপারে পেশাদার। এখানে ব্যক্তি কেন্দ্রিক মিথ তৈরীর ব্যপারে জোর দেওয়া হয়। তার জন্যে পেশাদার মার্কেটিং, ব্রান্ডিং এজেন্সি হায়ার করা হয়।
রাজনীতি মিথ বিহীন হবে এমন ভাবা অন্যায়। কিন্ত মিথের পরিমান যদি এমন হয় যে গল্পের গরু গাছে ওঠে, তাহলে উলটো ফলের সম্ভাবনা । যে গাধাগুলো বৈদিক প্লাস্টিক সার্জারিতে বিশ্বাস করে, তারা এমনিতেই বিজেপিকে ভোট দেবে। কিন্ত সায়েন্স কংগ্রেসে যেভাবে বৈদিক অপবিজ্ঞান চালানোর চেষ্টা হল, এতে বিজেপির ক্ষতি- লাভ নেই । এই স্যোশাল মিডিয়ার যুগে গরুকে আর গাছে তোলা যাবে না এটা তারা যত দ্রুত বোঝেন ভাল -না হলে এই যাত্রায় উলটো ফল হতে বাধ্য।
http://ganadabi.in/resources/ganadabi.htm এই টা পড়ুন
বিপ্লব দা, আপনার দেয়া তথ্যে কিছু ভুল আছে। মিঃ বোদাস বলেছেন, তিনি এটা পেয়েছেন ঋষি ভরদ্বাজ রচিত ” বৈমানিক প্রকরণ” নামক সংস্কৃত পুস্তক থেকে ঋক বেদ থেকে নয়। এই লিংকে একটু পড়ে দেখুন– http://www.mumbaimirror.com/mumbai/others/Indian-Science-Congress-organisers-slip-Vedic-mythology-about-aviation-into-programme-schedule/articleshow/45643060.cms
আপনি সমাজ বিজ্ঞানী অগাস্ট কোঁত এর সমাজ বিকাশের ৩টি স্তরের কথা হয়ত জেনে থাকবেন। সমাজ ৩টি স্তরে বিকিশিত হয়েছে– ১. ধর্ম তাত্ত্বিক, ২. দার্শনিক ও ৩. বৈজ্ঞানিক স্তর। ঋক বেদ হলো প্রথম ধাপের গ্রন্থ। আপনি লক্ষ্য করবেন ঋক বেদ এর শেষে অর্থাৎ ১০ম মন্ডলের সুক্তগুলোতে কিছু কিছু দার্শনিক কথাবার্তার আভাস পাওয়া যায়, পরে যজুর্বেদে বা অথর্ব বেদে গাদা গাদা দার্শনিক কথাবার্তা পাওয়া যায়। আর পরবর্তীতে উপনিষদসমূহে শুধু দার্শনিক আলোচনাই পাওয়া যায়। এর পর জ্যোতির্বেদে অনেক গ্রহ-নক্ষত্রের গতি ও অবস্থান নিয়ে আলোচনা, আয়ুর্বেদে ওষুধ ও সার্জারি নিয়ে আলোচনা, গান্ধর্ব্বেদে সংগীত ও শিল্পকলা নিয়ে আলোচনা, বাস্তুতন্ত্রে স্থাপত্য নিয়ে আলোচনা ক্রমে বিজ্ঞানের স্তরকেই তুলে ধরে। বৈজ্ঞানিক স্তরে এসে ধর্ম ও দর্শন বাতিল হয়ে গেছে, শুধু এগুলো এখন ঐতিহ্য হিসেবে টিকে আছে। তাই, ধর্ম বিশ্বাস অর্থাৎ ঈশ্বর বা আত্মায় বিশ্বাস বৈজ্ঞানিক স্তরে এসে বাতিল হাইপথেসিস মাত্র। কারণ এর পক্ষে কোন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রমাণ নেই।
@সন্তোষ হাল্লাজ,
প্রমাণ লাগে না।“তাদের” কাছে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদুর। বিশ্বজুড়ে তান্ডব দেখছেন না?
SCIENCE BE UPON US
বিপ্লবদা,
ঠিক বলেছেন। আজ পত্রিকায় দেখে আমি তাজ্জ্বব! ভারতের মতো একটা দেশের প্রযুক্তির এরকম এক উন্মেষের যুগে বিজ্ঞান কংগ্রেসে বিমান চালনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সাবেক প্রিন্সিপাল ক্যাপ্টেন আনন্দ্ বোদাস এমন কথা কি করে বলতে পারলেন! এতো রীতিমতো ঋকবেদে বুঁদ! হাঁসি চেপে রাখা সত্যিই দায়…..!