The more the Universe seems comprehensible, the more it also seems pointless – Nobel Laureate Physicist Steven Weinberg
বিখ্যাত জ্যোতির্পদার্থবিদ লরেন্স ক্রাউস একটি চমৎকার বই লিখেছেন সম্প্রতি – ‘A Universe from Nothing: Why There Is Something Rather than Nothing’ শিরোনামে[1]। বাংলা করলে বলতে পারি – ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব – কেন কোনো কিছু না থাকার বদলে কিছু আছে?’ বইটিতে পদার্থবিদ ক্রাউস পদার্থবিদের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেছেন কীভাবে শূন্য থেকে আমাদের চীরচেনা বিপুল মহাবিশ্ব উদ্ভূত হতে পারে একেবারেই প্রাকৃতিক উপায়ে। যারা লরেন্স ক্রাউসের ব্যাপারে জানেন না, তাদের জন্য দু লাইন বলি। অধ্যাপক লরেন্স ক্রাউস বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সুপরিচিত জ্যোতির্পদার্থবিদ, পিএইচডি করেছিলেন এমআইটি থেকে ১৯৮২ সালে এবং বর্তমানে অ্যারিজোনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অরিজিন’ নামের একটা বিদঘুটে প্রজেক্টের কর্নধর। এই প্রজেক্টে মহাবিশ্বের উৎপত্তি, পদার্থের উৎপত্তি থেকে প্রাণের উৎপত্তি সহ নানা ধরণের প্রান্তিক বিষয় আশয় নিয়ে তার তত্ত্বাবধানে গবেষণা করা হয়।
শূন্য থেকে মহাবিশ্বের উদ্ভবের ব্যাপারটি নিয়ে আমি আগে বহুবারই লিখেছি। আমি আমার প্রথম বই ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ (২০০৫) বইটিতে তথাকথিত শূন্য থেকে কিভাবে জড় কণিকা উৎপত্তি হয় তা নিয়ে বিশদভাবে বাঙ্গালী পাঠকদের জন্য আলোচনা করেছিলাম[2]। বছর কয়েক আগে সায়েন্স ওয়ার্ল্ডের জন্য একটি লেখা লিখতে গিয়ে আরেকটু বিস্তৃতভাবে লিখেছিলাম ‘স্ফীতি তত্ত্ব ও মহাবিশ্বের উদ্ভব’ শিরোনামে। সম্প্রতি আবারো উল্লেখ করতে হয়েছে স্টিফেন হকিং এর ‘গ্র্যান্ড ডিজাইন’ বইটি নিয়ে রিভিউ করতে গিয়েও (এখানে এবং এখানে )। কাজেই শূন্য থেকে মহাবিশ্বের ধারণাটি আমার কাছে নতুন কিছু ছিল না। সেদিক থেকে ক্রাউসের বইটি নিয়ে আমার না লিখলেও চলতো।
কিন্তু লিখতে হলই। কারণ, বইটির যে ব্যাপারটিতে নতুনত্ব খুঁজে পেয়েছি আমি, তা হল – বইটিতে আলোচিত হয়েছে দর্শনের সবচেয়ে প্রগাঢ় সমস্যাটি – আমাদের অস্তিত্বের একদম গোঁড়ার সমস্যা –কেনইবা একেবারে কিছু না থাকার বদলে গ্যালাক্সি, তারকাপুঞ্জ, সৌরজগত, পৃথিবী, জীবজগৎ সহ এতকিছুর অস্তিত্ব রয়েছে আমাদের চারপাশ জুড়ে। এত কিছু থাকার বদলে নিঃসীম আঁধার থাকলেই বা কি ক্ষতি ছিল?
বইটি বেরিয়েছে এ বছর, অর্থাৎ ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। আমি তখন বাংলাদেশের বইমেলায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার দুইজন প্রিয় ব্লগ লেখক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী এবং পৃথ্বীর জন্য দুই কপি বগলে নিয়ে প্লেনে উঠে পড়লাম এবং প্লেনের দীর্ঘ যাত্রায় পড়ে ফেলি পুরো বইটা। পড়তে গিয়ে পৃষ্ঠায় ভাঁজ ফেলা বইটা শেষ পর্যন্ত কাকে গছিয়েছিলাম – ফারসীমকে না পৃথ্বীকে এখন অবশ্য মনে নেই। মনে হয় ফারসীমই হইবো!
ক্রাউসের বইটির মুখবন্ধে বিজ্ঞানী রিচার্ড ডকিন্স বলেছেন, ‘জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ডারউইনের অরিজিন অব স্পিশিজ যেমনি, জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ক্রাউসের শূন্য থেকে মহাবিশ্বও তেমনি’। ডারউইনের বইয়ে বর্ণিত বিবর্তন তত্ত্ব যেমন জীবজগতের ক্ষেত্রে কোন অপ্রাকৃত সত্ত্বা থাকার অনুকল্পকে বাতিল করে দিয়েছে, ক্রাউসের বইও জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অর্থাৎ, মহাবিশ্বের অস্তিত্বের পেছনে কোন অপ্রাকৃত বা অপার্থিব সত্ত্বার অস্তিত্ব থাকার সকল দাবীকে বাতিল করে দিয়েছে। তবে লরেন্স ক্রাউসের বইটিতে যাবার আগে চলুন আমাদের অস্তিত্বের সমস্যাটি নিয়ে কিছু হাল্কা আলোচনা সেরে নেয়া যাক।
কেন কোনো কিছু না থাকার বদলে কিছু আছে? – প্রথম কবে এ প্রশ্নটির মুখোমুখি হয়েছিলাম তা আজ আমার মনে নেই। সম্ভবত: জঁ-পল সাত্রের (১৯০৫- ১৯৮০) অস্তিত্ববাদী দর্শন ‘বিয়িং এণ্ড নাথিংনেস’ কিংবা মার্টিন হাইডেগারের (১৮৮৯- ১৯৭৬) অধিপদার্থবিদ্যা বিষয়ক বই ‘ইন্ট্রোডাকশন টু মেটাফিজিক্স’ পড়তে গিয়ে। শেষোক্ত বইটির প্রথম লাইনটিই বোধ করি ছিল – ‘হোয়াই দেয়ার ইজ সামথিং র্যাদার দেন নাথিং?’। তারপর থেকে বহু বইয়ে, অসংখ্য জায়গাতেই এর উপস্থিতি টের পেয়েছি। দার্শনিক উইলিয়াম জেমস (১৮৪২ – ১৯১০) তার ‘সাম প্রবলেমস অব ফিলসফি’ গ্রন্থে এ প্রশ্নটিকে চিহ্নিত করেছিলেন ‘অন্ধকারতম দর্শন’ হিসেবে। জ্যোতির্পদার্থবিদ স্যার আর্থার বার্নার্ড লোভেল (১৯১৩ – ২০১২) একে দেখেছেন ‘ব্যক্তির মনকে ছিন্ন ভিন্ন করা’ প্রশ্ন হিসেবে। এ বিষয়ে আমার পড়া এখন পর্যন্ত সর্বশেষ বই জিম জোল্টের ‘হোয়াই ডাস দ্য ওয়ার্ল্ড এক্সিস্ট’ (২০১২)। সেখানে লেখক রসিকতা করে বলেছেন –‘সাইকিয়াট্রিক রোগীরা এই প্রশ্ন দিয়ে বরাবরই আচ্ছন্ন থাকে’!
দার্শনিকদের পাশাপাশি আছেন ধার্মিক বিরিঞ্চিবাবারাও। কিছুদিন আগ পর্যন্ত এ প্রশ্নটি ধর্মবেত্তাদের প্রিয় একটি প্রশ্ন হিসেবে বিরাজ করেছিল। বিজ্ঞানীদের মুখে কুলুপ আঁটাতে এ প্রশ্নটি উচ্ছ্বাসভরে ব্যবহার করা হত। হ্যাঁ, ‘হোয়াই দেয়ার ইস সামথিং র্যাদার দ্যান নাথিং’ – এ প্রশ্নটি সত্যই ছিল বিজ্ঞানীদের প্রতি বড় সড় চ্যালেঞ্জ; প্যালের ঘড়ি, হয়েলের বোয়িং, কিংবা হাল আমলের হুমায়ুনের নাইকন ক্যামেরা যেমন ধার্মিকদের তৃপ্তির ঢেকুর উৎপাদন করতো, এই প্রশ্নটিও অনেকটা বিজ্ঞান-ধর্মের বিতর্কে বিজ্ঞানের কফিনে শেষ পেরেক পোতার মতোই হয়ে উঠেছিল যেন অনেকের কাছে। মূল ধারার বিজ্ঞানীরা এতদিন ধরে এর উত্তর প্রদানে অনীহ এবং নিশ্চুপই ছিলেন বলা যায়। অনেকে আবার এ ধরণের প্রশ্ন বিজ্ঞানের বিষয় নয় বলে পাশ কাটিয়ে যেতেন। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে পরিস্থিতি অনেক বদলেছে। এখন অনেক বিজ্ঞানীই আস্থার সাথে অভিমত দিচ্ছেন যে তারা এর উত্তর জানেন। প্রশ্নের নিশ্চিত উত্তর নিয়ে হাল্কা বিতর্ক থাকলেও ধর্ম এবং দর্শনের বলয়ে পড়ে থাকা এ প্রশ্নটিতে পদার্থবিজ্ঞানীরা যে নাক গলাতে শুরু করেছেন, এবং এ নিয়ে একটা অবস্থানে পৌঁছুতে চাইছেন সেটি এখন মোটামুটি নিশ্চিত। সেজন্য বেশ ক’বছর ধরেই দেখছি পদার্থবিজ্ঞানীদের লেখা বইগুলোতে বিষয়টি আলোচনায় উঠে আসতে। আমি পদার্থবিদ ভিক্টর স্টেঙ্গরের ‘গড দ্য ফেইল্ড হাইপোথিসিস’ শীর্ষক গ্রন্থে উল্লেখ এবং ব্যাখ্যা দেখেছি, দেখেছি বিজ্ঞানী হকিং-ম্লোডিনোর ‘গ্র্যান্ড ডিজাইন’ বইয়ে, এবং অবশ্যই পদার্থবিদ লরেন্স ক্রাউসের ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব – কেন কোনো কিছু না থাকার বদলে কিছু আছে?’ বইটিতেও, যেটি আজকের প্রবন্ধের অন্যতম আলোচ্য বই হিসেবে নিয়েছি। পাঠকেরা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন ক্রাউসের বইটির শিরোনামটিই কেন্দ্রীভূত হয়েছে ধার্মিকদের ছুঁড়ে দেয়া প্রিয় এ প্রশ্নকে উপজীব্য করে। বলা বাহুল্য যে সমস্ত মূলধারার পদার্থবিদের কথা আমি উল্লেখ করেছি আমার লেখায়, তারা সবাই বিজ্ঞানের চোখ দিয়েই সমস্যাটি মোকাবেলা করেছেন এবং সমাধানে পৌঁছাতে চেষ্টা করেছেন, ধর্মবেত্তা কিংবা দার্শনিকদের মত নানা পদের ত্যানা না পেঁচিয়ে। যেমন, ক্রাউস তার বইয়ে বলেছেন (‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’, পৃষ্ঠা ১৪৩) –
‘আমাদের মহাবিশ্বের আধুনিক বিজ্ঞানের ছবি, এর ইতিহাস, সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ, এবং সর্বোপরি শূন্য বলতে আসলে কী বোঝায় তা অনুধাবন এবং পর্যালোচনা করে আমরা এটুকু বলতে পারি যে, এখন এ প্রশ্নটিকে মোকাবেলা করার জন্য সবচেয়ে ভাল অবস্থায় আছি’।
লরেন্স ক্রাউস কোন অতিশয়োক্তি করেননি। একটা সময় ভাবা হত ‘নাথিং’ ব্যাপারটা হচ্ছে বস্তুর কিংবা জগতের জন্য স্বাভাবিক অবস্থা, আর ‘সামথিং’ ব্যাপারটা আরোপিত। যেমন জার্মান গণিতবিদ লিবনিৎস তার ১৬৯৭ সালে লেখা ‘অন আল্টিমেট অরিজিন অব থিংস’ নামক একটি প্রবন্ধে এ বিষয়ে অভিমত দেন এই বলে যে, ‘নাথিং’ ব্যাপারটা স্বতঃস্ফূর্ত, কিন্তু অন্যদিকে ‘সামথিং’ ব্যাপারটা অর্জন করতে কাজ করতে হয়[3]। আর এমনি এমনি নাথিং থেকে সামথিং এ উত্তরণ ঘটেনা বাইরের কোন কিছুর হস্তক্ষেপ ছাড়া। লিবনীৎসের কাছে এর সমাধান ছিল যথারীতি ‘ঈশ্বর’।
তারপর থেকে এভাবেই আমাদের দিন গেছে। ‘কেন কোন কিছু না থাকার বদলে কিছু আছে?’ উত্তর খুব সোজা – কারণ হলেন ঈশ্বর। আসলে স্টিফেন হকিং এবং তার সমসাময়িক অন্যান্য ট্যাটনা বিজ্ঞানীদের হাতে সত্তরের দশকে ‘কোয়ান্টাম কসমোলজির’ জন্ম হবার আগ পর্যন্ত বিজ্ঞান এর বিপরীতে সফল উত্তর দিতে পারেনি, ঠিক যেমনি ডারউইন আসার আগ পর্যন্ত আমরা প্যালের ডিজাইন আর্গুমেন্টকে ঠিকমতো দলাই মলাই করার উপকরণ খুঁজে পেতামনা। তারপরেও কিছু ঘার ত্যাড়া দার্শনিক যে ছিলেন না তা নয়। তারা এ ধরণের ‘হোয়াই দেয়ার ইজ সামথিং র্যাদার দেন নাথিং’ মার্কা প্রশ্ন মুচকি হেসে বলতেন, তা যদি ‘নাথিং’ ব্যাপারটা স্বাভাবিক আর স্বতঃস্ফূর্ত হয়, তাহলে ঈশ্বরেরই বা থাকার দরকার কি ছিল? Why there is God rather than nothing?[4] ‘নাথিং’ বাবাজিকে প্রতিহত করতে অদৃশ্য অপ্রমাণিত ঈশ্বরকে সাক্ষীগোপাল হিসেবে দেখানো যাবে, কিন্তু বাস্তব যে মহাবিশ্বটা আমরা চোখের সামনে হরহামেশা দেখছি সেটাকে নয়, এ ব্যাপারটা একটু হাস্যকর হয়ে যাচ্ছে না? এমনকি অন্তিম প্রশ্নগুলোর উত্তর হিসেবে ঈশ্বরকে সাক্ষীগোপাল করে হাজির করার ব্যাপারটা যে আসলে কোন উত্তর নয়, তা কৃষক দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বরের মাথায়ও এসেছিল। এ জন্যই ‘সত্যের সন্ধান’ বইয়ে তিনি প্রশ্ন করেছেন – ‘ঈশ্বর সময়কে সৃষ্টি করেছেন কোন সময়ে?’ কিংবা ‘স্থানকে সৃষ্টি করা হলো কোন স্থানে থেকে?’ কিংবা ‘শক্তি সৃষ্টি করা হলো কোন শক্তি দ্বারা?’[5]। ধার্মিকেরা এই ধরণের প্রত্যুত্তরে খুব একটা ভাল উত্তর কখনোই দিতে পারেননি। বরং গোসসা করেছেন। এক দুর্মুখ নাস্তিক একবার খ্রিষ্টীয় ধর্মবেত্তা সেন্ট অগাস্টিনকে জিজ্ঞাসা করেছিল – ‘ফাদার, এই মহাবিশ্ব বানানোর আগে ঈশ্বর বাবাজি কী করছিলেন বলুনতো?’ অগাস্টিন রাগে ক্ষেপচুরিয়াস হয়ে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘তোদের মত লোক, যারা এ ধরণের প্রশ্ন করে, তাদের জন্য জাহান্নাম তৈরি করছিলেন ঈশ্বর’!
তবে ধার্মিকেরা গোস্বা করলেও দার্শনিকেরা এভাবে সবসময়ই লিবলীৎসের উপসংহারকে প্রশ্নবিদ্ধ করে গেছেন নানা দৃষ্টিকোণ থেকে। আগেও করেছেন, এখনো করছেন। যেমন, এই সেদিন দেখলাম জার্মান দার্শনিক এডলফ গ্রুনবোমের একটি সমালোচনা – ‘দ্য পভার্টি অব থিইস্টিক কসমোলজি’ নামে[6]। প্রবন্ধটিতে পদ্ধতিগত-ভাবে লিবনীৎসের উপসংহারের সমালোচনা হাজির করেছেন, এই সময়ের প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী শন ক্যারল সেটা তার একটি ব্লগে উল্লেখ করেছেন এখানে।
তবে সনাতন দার্শনিকেরা উত্তর দিতে পারলেও আমার মতে সেগুলো ছিল মোটা দাগে স্রেফ ‘পিছলামী কথার প্যাঁচ-ঘোচ’, বৈজ্ঞানিক কোন সমাধান নয়। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হল – লিবনীৎসের সময়কালে কোয়ান্টাম বলবিদ্যা এবং এ সংক্রান্ত অগ্রগতি সম্বন্ধে বিজ্ঞানীদের কোন ধারনাই ছিল না। চোখের সামনে দেখা বিশ্বজগতের জন্য যে নিয়ম প্রযোজ্য, সেটার ভিত্তিতেই তারা এবং তাদের মত দার্শনিকেরা সিদ্ধান্ত নিতেন। তারা জানতেন না যে, তাদের দৃশ্যমান জগতের বাইরে বিশাল একটা জগৎ আছে; এই সেই আন্তঃআণবিক জগৎ, যে জগতের নিয়মগুলো অনেকটা হ্যারি পটারের গল্পের ‘হগওয়ার্টস স্কুল’-এর নিয়ম কানুনের মতোই অদ্ভুত। আমাদের দৃশ্যমান জগতে আমরা শূন্য থেকে কিছু তৈরি হতে দেখি না, কিংবা আমরা আমাদের বাড়ীর ইটের দেয়াল দেয়াল ভেদ করে হেঁটে ওপারে চলে যেতে পারি না। কিন্তু কোয়ান্টাম জগত যেন ভিন্ন, এখানে কণা আর প্রতি-কণারা রীতি মত শূন্য থেকে উদ্ভূত হয়, নিশ্চিত অবস্থান নেয়ার বদলে সম্ভাবনার বলয়ে থাকতে পছন্দ করে, আর মাঝে মধ্যেই তারা ‘কোয়ান্টাম টানেলিং’ এর মাধ্যমে দুর্লঙ্ঘ্য বাধার প্রাচীর গলে চলে যায় অশরীরী সত্তার মতোই। কোয়ান্টাম জগতের নিয়ম কানুনগুলোকে অবাস্তব ভাবলে কিন্তু ভুল হবে। এটা আমার এই প্রবন্ধের মতোই নিখাদ বাস্তব। যারা ইলেকট্রনিক্সের যন্ত্রপাতি নিয়ে নাড়াচাড়া করেন তারা সবাই টানেল ডায়োড এবং জোসেফসন জাংশনের কথা জানেন[7], এগুলো কিন্তু কোয়ান্টাম রাজ্যের হ্যারি পটারের সেই ‘হগওয়ার্টস স্কুল’-এর মতো নিয়ম কানুনের উপর ভর করেই চলে। এমনকি আমাদের পরিচিত সূয্যি মামার ভেতরে অনবরত যে হাইড্রোজেনের ফিউশন ঘটে চলছে বলে আমরা জানি, সেটাও কিন্তু কোয়ান্টাম জগতের নীতি মেনেই হচ্ছে[8]।
বিগত সত্তর এবং আশির দশকে বিজ্ঞানীরা কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখলেন, কোয়ান্টাম জগতে ‘নাথিং’ ব্যাপারটি ডিফল্ট কিছু নয়, বরং ‘সামথিং’ ব্যাপারটাই বরং সেখানে ‘ডিফল্ট’। নাথিং ব্যাপারটা সেখানে মোটা দাগে ‘আনস্টেবল’ বা অস্থিতিশীল। শূন্যতা অস্থিতিশীল বলেই ওটা কখনো শান্ত সমাহিত ভাবে পড়ে থাকতে পারে না, সেখানে অনবরত ভাবে তৈরি হতে থাকে অসদ কণিকা, অহর্নিশি চলতে থাকে ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশনের রহস্যময় খেলা। এরিস্টটল বহু আগে প্রকৃতিজগৎ দেখে মন্তব্য করেছিলেন, ‘প্রকৃতি শূন্যতাকে একদম পছন্দ করে না’। এরিস্টটল কোয়ান্টাম জগতকে দেখে যাওয়ার সুযোগ পাননি, কিন্তু তার এই উচ্চারণ কোয়ান্টাম জগতের জন্য যেন হাড়ে হাড়ে সত্য হয়ে গেছে[9]।
‘নাথিং’ ব্যাপারটা যে অস্থিত এবং নড়বড়ে টাইপের কিছু, তা আমি প্রথম জানতে পারি নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক উইলজেক এর একটি প্রবন্ধের মাধ্যমে[10]। সায়েন্টিফিক আমেরিকানে ১৯৮০ সালে প্রকাশিত প্রবন্ধটির শিরোনাম ছিল ‘The Cosmic Asymmetry Between Matter and Antimatter ’ । মহাবিশ্বের উৎপত্তির ঊষালগ্নে পদার্থ এবং প্রতিপদার্থ যখন উদ্ভূত হয়েছিল এক রহস্যময় কারণে প্রকৃতি প্রতিপদার্থের তুলনায় পদার্থের প্রতি খুব সামান্য হলেও পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছিল। এই পক্ষপাতিত্বের ব্যাপারটা যদি না ঘটতো, তাহলে আজ আমরা এখানে বসে বসে নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে এই আঁতেলেকচুয়াল প্রশ্ন করার সুযোগ পেতাম না। ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটার একে অপরকে আলিঙ্গন করে ধ্বংস করে দিত, আর আমাদের সামনে তখন চেনা জানা পদার্থ, জীবজগত নক্ষত্ররাজির বদলে থাকত কেবল তেজস্ক্রিয়তায় পরিপূর্ণ অবারিত এক শূন্যতা। আমাদের এই পার্থিব প্রাণ-চাঞ্চল্যের বদলে বিরাজ করতো একেবারে কবরের নিস্তব্ধতা। তবে একটি বিষয় এখানে উল্লেখ্য। কোন ‘অলৌকিক’ কোন কারণে এই পক্ষপাতিত্ব ঘটেনি। আর এমনও নয় যে প্রকৃতিকে বিশাল কোন পক্ষপাতিত্ব দেখাতে হয়েছিল এর জন্য। বরং বিজ্ঞানীরা গণনা করে দেখেছেন সূচনা লগ্নে পদার্থ-প্রতিপদার্থের মধ্যে এক বিলিয়নের এক ভাগ মাত্র অসমতাই খুলে দিতে পারতো আমাদের এই চেনা জানা মহাবিশ্ব তৈরি হবার দুয়ার। আর সত্য বলতে কি – ঠিক তাই সম্ভবত হয়েছে। আজকের মহাজাগতিক পশ্চাৎপট বিকিরণ বা কসমিক ব্যাকগ্রাউন্ড রেডিয়েশন বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা ঠিক তেমনটিই দেখছেন, যা তারা তাত্ত্বিকভাবে গণনা করে পেয়েছিলেন[11]। ফ্রাঙ্ক উইলজেক তার সেই প্রবন্ধে ব্যাখ্যা করেছিলেন কীভাবে অলৌকিক নয়, বরং নিতান্ত প্রাকৃতিক উপায়ে প্রতিসাম্যতার ভাঙনের মাধ্যমে শুরুতে পদার্থ এবং প্রতিপদার্থের মধ্যকার অসমতা তৈরি হয়েছিল, এবং তার পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ ছিল – হ্যাঁ, যে কথাটা আগে আমি বলেছি – ‘শূন্য ব্যাপারটা অস্থিতিশীল’। ব্যাপারটা তিনি তার পেপারে লিখেছিলেন এভাবে[12] –
‘ধারণা করা যায় যে, মহাবিশ্বের সূচনা হয়েছিল যতদূর সম্ভব সর্বোচ্চ প্রতিসম দশার (symmetrical state) মধ্য দিয়ে, এবং এ দশায় কোন পদার্থের অস্তিত্ব ছিল না, মহাবিশ্ব ছিল একটি ভ্যাকুয়াম। দ্বিতীয় দশায় পদার্থ এলো। এই দশায় প্রতিসাম্যতা ছিল কিছুটা কম, কিন্তু শক্তিও ছিল কম। শেষ পর্যন্ত অপেক্ষাকৃত কম প্রতিসম দশা এসে সেটি বেড়ে গেল খুব দ্রুত। এই অবস্থান্তরের ফলে যে শক্তি নির্গত হল সেটা কণা তৈরি করল। এই ঘটনা মহাবিস্ফোরণ বা বিগব্যাং হিসেবে চিহ্নিত করা যায় … কাজেই “কেন কিছু না থাকার বদলে কিছু আছে?” – প্রাচীন এ প্রশ্নটির যথার্থ উত্তর হল – ‘নাথিং’ ব্যাপারটা অস্থিতিশীল’[13]।
জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞানদের দেয়া সর্বাধুনিক তত্ত্ব থেকে আমরা এখন জানি যে, আমাদের এই মহাবিশ্ব একটি ‘কোয়ান্টাম ইভেন্ট’ হিসেবেই একসময় আত্মপ্রকাশ করেছিল[14]। কাজেই কোয়ান্টাম বলবিদ্যার মূল সূত্রগুলো মহাবিশ্বের উৎপত্তির সময়ও একইভাবে প্রযোজ্য হবে সে আর নতুন কি! এটা বললাম বটে, কিন্তু সেটা করতে গিয়েই বিজ্ঞানীরা দেখলেন শূন্য থেকে মহাবিশ্বের আবির্ভাব কেবল সম্ভব তাই নয়, রীতিমত অবশ্যম্ভাবী। সেজন্যই ‘গ্র্যান্ড ডিজাইন’ বইয়ে স্টিফেন হকিং বলেছেন তার বহুল পঠিত এই উক্তিতে [15]–
‘মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সূত্রের মতো পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন সূত্র কার্যকর রয়েছে, তাই একদম শূন্যতা থেকেও মহাবিশ্বের উৎপত্তি সম্ভব এবং সেটি অবশ্যম্ভাবী। ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎপত্তি’ হওয়ার কারণেই ‘দেয়ার ইজ সামথিং, র্যাদার দ্যান নাথিং’, সে কারণেই মহাবিশ্বের অস্তিত্ব রয়েছে, অস্তিত্ব রয়েছে আমাদের। মহাবিশ্ব উৎপত্তির সময় বাতি জ্বালানোর জন্য ঈশ্বরের কোন প্রয়োজন নেই।’
আসলে কোয়ান্টাম শূন্যতা অস্থিতিশীল বলেই সেখানে ‘স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎপত্তি’র মাধ্যমে বস্তু কণার উদ্ভব অবশ্যম্ভাবী। ব্যাপারটি খোলাসা করেছেন লরেন্স ক্রাউসও তার সাম্প্রতিক ‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’ বইয়ে (‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’, পৃষ্ঠা ১৬৯) :
‘কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটির ক্ষেত্রে মহাবিশ্ব শূন্য থেকে উদ্ভূত হতে পারে, এবং হবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে। সে সমস্ত মহাবিশ্ব ফাঁকা হবার দরকার নেই, তাতে পদার্থ এবং শক্তি থাকতে পারে যতক্ষণ পর্যন্ত না এর মাধ্যাকর্ষণের সাথে যুক্ত ঋণাত্মক শক্তি সহ এর সর্বমোট শক্তি শূন্য হবে’।
এবং বইয়ে ক্রাউসের সুচিন্তিত উপসংহার ছিলো এরকমের (‘শূন্য থেকে মহাবিশ্ব’, পৃষ্ঠা ১৭০) –
‘ব্যাপারটা খুব পরিষ্কার। কোয়ান্টাম মাধ্যাকর্ষণ কেবল মহাবিশ্বকে শূন্য থেকে উদ্ভূত হতে কেবল অনুমতি দিয়েই ক্ষান্ত হয় না, একেবারে অবশ্যম্ভাবী করে তুলে। কারণ, স্থান কালের অবর্তমানে যে শূন্যাবস্থার কথা আমরা বলছি সেটা একেবারেই আনস্টেবল বা অস্থিতিশীল ।
এর পরেও ব্যাপারটা আমি পরিষ্কার করতে না পারলে সেটাকে আমার অক্ষমতা বলেই ধরে নেব। কথার প্যাচপ্যাচানি না বাড়িয়ে ভিডিও বাবার উপর ভরসা রাখি বরং। ইউটিউবের একটা লিঙ্ক হয়ত এ ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে, তবে মোল্লাদের তাণ্ডবে সরকার ইউটিউব বন্ধ করে দিয়েছে, কাজেই ভিডিও এম্বেডেড না করে লিঙ্কায়িত করে দিলাম ।
যা হোক, একই বক্তব্যের প্রতিফলন আমরা দেখি পদার্থবিদ ভিক্টর স্টেঙ্গরের এই প্রবন্ধে এবং আরেকটু বিস্তৃতভাবে এখানে। অধ্যাপক স্টেঙ্গারও তার প্রবন্ধ দুটি শেষ করেছেন নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক উইলজেকের পেপার থেকে উদ্ধৃতিটি হাজির করে, যেখানে তিনি অভিমত দিয়েছেন কোয়ান্টাম স্তরে ‘নাথিং’ ব্যাপারটা অস্থিতিশীল’।
স্কেপ্টিকস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সংশয়বাদী দার্শনিক মাইকেল শারমার সম্প্রতি ‘সায়েন্টিফিক আমেরিকান’[16] এবং তার সম্পাদিত ‘স্কেপ্টিক’[17] পত্রিকায় এ বিষয়টি নিয়ে দু’ দুটি প্রবন্ধ লিখেছেন। স্কেপ্টিক পত্রিকায় প্রকাশিত দ্বিতীয় প্রবন্ধটিতে কেন কিছু না থাকার বদলে কিছু আছে – এই রহস্যের সমাধান করতে গিয়ে অন্ততঃ বারোটি সমাধান হাজির করেছেন। তার মধ্যে ধার্মিকদের ‘ঈশ্বর অনুকল্প’টি বাদ দিলে শারমার আরো যে এগারোটি সমাধান হাজির করেছেন তার সবগুলোই আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানীদের দেওয়া বৈজ্ঞানিক সমাধান, যেগুলোতে অপার্থিব এবং অলৌকিক কোন সত্তা আমদানি না করেই ব্যাপারটিকে মোকাবেলা করা যায়। এর মধ্যে লরেন্স ক্রাউসের সমাধানটি সর্বশেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক সমাধান বলে মত দিয়েছেন শারমার – ‘শূন্যতা অস্থিতিশীল’ ।
এবং এটাই ‘বিজ্ঞানের চোখে’ আমাদের অস্তিত্বের মূল কারণ। এই জন্যই কিছু একদম না থাকার বদলে কিছু আছে বলে আমরা জানি। অন্ততঃ আধুনিক বিজ্ঞানের চোখ দিয়ে দেখলে সেটাই এর এখন পর্যন্ত পাওয়া সর্বশেষ উত্তর ।
:line:
তথ্যসূত্র –
[1] Lawrence M. Krauss, A Universe from Nothing: Why There Is Something Rather than Nothing, Free Press, 2012.
[2] অভিজিৎ রায়, আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী (অঙ্কুর প্রকাশনী, ২০০৫, পুনর্মূদ্রণ ২০০৬) ; মূল বইয়ের সপ্তম অধ্যায় দ্রষ্টব্য।
[3] Leibniz, “On the Ultimate Origination of the Universe”, 1697
[4] Victor Stenger, God: The Failed Hypothesis: How Science Shows That God Does Not Exist, Prometheus Books, 2007
[5] আরজ আলী মাতুব্বর রচনা সমগ্র, পাঠক সমাবেশ।
[6] Grunbaum, Adolf. “The Poverty of Theistic Cosmology” in Brit. J. Phil. Sci. 55, 4, 2004.
[7] লিও এসাকি, ইভার গিয়াভার এবং ব্রায়ান জোসেফসন ১৯৭৩ সালে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরষ্কার পান। এসাকি টানেল ডায়োড আবিষ্কার করেছিলেন, এবং ব্রায়ান জোসেফসন আবিষ্কার করেছিলেন জোসেফসন জাংশন। এ দুটো যন্ত্রই কোয়ান্টাম টানেলিং এর মাধ্যমে কাজ করে।
[8] বিজ্ঞানী হ্যান্স বিথে ১৯৬৭ সালে নোবেল পুরষ্কার পান তারার ভিতরকার ফিউশন প্রক্রিয়া সফলভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য।
[9] Frank Close, Nothing: A Very Short Introduction, Oxford University Press, 2009
[10] Frank Wilczek, “The Cosmic Asymmetry Between Matter and Antimatter,” Scientific American 243, no. 6, 82-90, 1980
[11] Lawrence M. Krauss, A Universe from Nothing: Why There Is Something Rather than Nothing, Free Press, 2012
[12] Frank Wilczek, পূর্বোক্ত।
[13] বোল্ড করা অংশটির মূল ইংরেজী পেপারে ছিল এরকম – “The answer to the ancient question ‘Why is there something rather than nothing?’ would then be that ‘nothing’ is unstable.”
[14] এ প্রসঙ্গে স্টিফেন হকিং তার গ্র্যন্ড ডিজাইন বইয়ের ষষ্ঠ অধ্যায়ে লিখেছেন (অনুবাদ তানভীরুল ইসলাম) – “যদিও আমরা এখনো কোয়ান্টাম মহাকর্ষের কোনো পূর্ণাঙ্গ তত্ত্ব পাইনি তারপরও আমরা জানি মহাবিশ্বের সূচনা একটি কোয়ান্টাম ঘটনা। ফলে, আমরা যেভাবে কোয়ান্টাম তত্ব এবং সাধারণ আপেক্ষিকতাকে বিশেষভাবে মিলিয়ে মহাস্ফিতির তত্ত্ব নিরূপণ করেছি, সেভাবে যদি আরো অতীতে যাই এবং মহাবিশ্বের সূচনা সম্পর্কেই জানতে চাই, তাহলেও অবশ্যই সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব সম্পর্কে আমর যা কিছু জানি তার সাথে কোয়ান্টাম তত্ত্বকে মেলাতে হবে।”।
[15] Stephen Hawking & Leonard Mlodinow, The Grand Design, Bantam, 2010
[16] Michael Shermer, Much Ado about Nothing, Scientific American, April 27, 2012.
[17] Michael Shermer, Nothing is Negligible: Why There is Something Rather than Nothing, Skeptic, Vol 17, No. 3, 2012.
মাথাটা ঝিমঝিম করছে। দারুণ হয়েছে লেখাটা :guru: :guru: :guru:
ইতোমধ্যেই অনেক কথা বলা হয়ে গেছে ফাইন-টিউনিং প্রসঙ্গে। অপার্থিব বলেছেন, আমিও বলেছি। নতুন কিছু আর বলার নেই। তাও একটি মন্তব্য করছি আমার বক্তব্যের সারমর্ম জানিয়ে। প্রথমত, বলি এই ‘ফাইন টিউন’ শব্দার্থটি নিয়ে। আমি তানভীর হানিফের প্রত্যুত্তরে বলেছিলাম এটাকে ‘ফাইন-টিউনিং’ না বলে ‘চান্স টিউনিং’ বললে সম্ভবত: বিতর্ক হত না। রৌরবও অপার্থিবকে বলেছেন, “ফাইন টিউনিং” না বলে “ঙরাচু” বললেও চলত। অপার্থিব প্রত্যুত্তরে স্বীকারও করেছেন যে, ‘ফিগার অফ স্পীচ’। কাজেই পুরো বিতর্কটাই শব্দার্থ নিয়ে বিতর্ক হয়ে উঠেছে মনে হচ্ছে।
এর বাইরে একটা বড় ব্যাপার আছে যেটা সংশপ্তক সহ অনেকের মন্তব্যে উঠে এসেছে। সেটা হল, ‘ফাইন টিউনিং’ এর দাবীদার পদার্থবিজ্ঞানীরা যেভাবে মহাবিশ্বকে দেখেন, জীবজগতকেও একটা সময় ‘ফাইন-টিউন্ড’ হিসেবে দেখা হত। কিন্তু বিবর্তন সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞান যতটা বেড়েছে তত আমরা বুঝেছি, জীবজগত ‘ফাইন টিউণ্ড’ নয়, বরং উল্টোটাই সত্য। কিন্তু বিবর্তন পুরোপুরি না বুঝে উপর থেকে দেখলে অনেক কিছুকে ফাইন টিউন্ড, কিংবা ‘পার্ফেক্টলি ডিজাইন্ড’ বলে মনে হতে পারে। যেমন আমার মনে আছে, হারুন ইয়াহিয়া একটি কোষের ভিতরকার কলকব্জা নিয়ে বিমোহিত হয়ে একটা প্রবন্ধ লিখেছিলেন ‘মিরাকেল অব ডিজাইন ইন দ্য সেল’, কে যেন সেটা আবার ফরোয়ার্ড করেছিলেন মুক্তমনায়। লেখক দাবী করেছিলেন কোষের উপাদানগুলো ঠিক যে জায়গায় আছে, সে জায়গায় না থাকলে একচুল এদিক ওদিক হলে কোষ ঠিকমত কাজ করত না। কিন্তু বিবর্তন জানা লোকজন তার ভুলটি ঠিকই ধরিয়ে দিয়েছিলেন। আসলে বিবর্তনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে ‘ইম্পারফেকশন’। সেজন্যই আমাদের চোখে ব্লাইন্ড স্পট আছে, এছাড়া আছে পুরুষের স্তনবৃন্তের মতো বিলুপ্তপ্রায় নিষ্ক্রিয় অঙ্গ।মেয়েদের আছে ‘একটোপিক প্রেগন্যান্সি’র ভয় ইত্যাদি। এগুলো জীববিজ্ঞানের ফাইন টিউনিং এর বিপরীতেই সাক্ষ্য দেয়। কাজেই পুরো ব্যাপারটা সার্বিকভাবে না দেখে কেবল একটি কোষের দিকে তাকিয়ে থাকলে (যেটা হারুন ইয়াহিয়ারা প্রায়শঃই করেন), অন্ধের হস্তিদর্শনের মতোই হবে।
ব্যাপারটা কেবল জীববিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নয়, সার্বিকভাবে মহাবিশ্বের জন্যও প্রযোজ্য। এ ব্যাপারটাই বলেছেন স্কেপ্টিক ম্যাগাজিনে এভিটাল পিলপেল, তার ‘কসমস এণ্ড কোইন্সিডেন্স’ প্রবন্ধে। এটা প্রযোজ্য বলেই অপার্থিব যে বিজ্ঞানীদের উদ্ধৃতি দিয়েছেন (লি স্মোলিন ছাড়া) সবাই মাল্টিভার্সের ধারনাকে সমর্থন করেন (এমনকি স্মোলিনেরও মহাবিশ্বের নেচারাল সিলেকশন তত্ত্ব আছে, যা প্রকারান্তরে ডারউইনীয় দৃষ্টিভঙ্গিকেই তুলে ধরে)। মাল্টিভার্সের ধারণানুযায়ী বহু মহাবিশ্বেই জীবনোপযোগী পরিবেশের বিকাশ ঘটেনি, বরং জীবন বিকাশের প্রতি থেকেছে বিরূপ – এটা হওয়াই স্বাভাবিক। ঠিক যেমন, জীব জগতের ক্ষেত্রে আমরা জানি হাজার হাজার মিউটেশন থেকে আমরা প্রার্থিত ফলাফল পাইনা, যেগুলো থেকে পাই, সেগুলোর দিকে তাকিয়ে ‘মিরাকল’ , ‘ফাইন টিউন্ড’, ‘ডিজাইন্ড’ ইত্যাদি দাবী করলে সেটা এক ধরনের ‘টানেল ভিউ’ তৈরি করবে। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে জীবজগতের ক্ষেত্রে পারলেও পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনেকেই এই টানেল ভিউ থেকে বেরুতে পারছেন না। আর, ‘ফাইন টিউনিং আছে বলেই তো এর ব্যাখ্যার এত চেষ্টা’ – এভাবে সবসময় দেখা কি ঠিক হবে? এর উত্তরে বলা যায়, বিবর্তনবাদী বিজ্ঞানীরাও জীবজগতের তথাকথিত ‘ডিজাইন’কে ব্যাখ্যা করেন বিবর্তনের পটভূমিকায়। কাজেই ব্যাখ্যা করলেই সেটা সত্য হবে এমন কোন কথা নেই। যে কেউ বলতে পারে, ‘ডিজাইন আছে বলেই তো এর ব্যাখ্যার এতো চেষ্টা’। কিন্তু এটা সত্য নয়, বরং সত্য উল্টোটাই।
আগেই বলেছি, যারা ফাইন টিউনের সম্ভাবনার গণিত নিয়ে বিস্মিত হচ্ছেন, তারা দুর্ভাগ্যক্রমে এই একটা মহাবিশ্বই দেখেছেন, এবং তারা থেকেছেন এমন একটা গ্রহে যেখানে প্রাণের বিকাশ হয়েছে। এটা ‘বায়াসড’ স্যাম্পল। একাধিক স্যাম্পল নিয়ে কাজ না করে সম্ভাবনার নিরিখে “আর কোন ভাবে প্রাণের বিকাশ ঘটতো না’ বলে দিলে সেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এমন কোন কথা নেই। সেটা হয়ওনি। এমনকি এই একটি মহাবিশ্বের ক্ষেত্রেও আসলে ব্যাপারগুলো কতটুকু ‘ফাইন টিউনড’ তাও প্রশ্নাতীত নয়। যেমন, স্টিভেন ওয়েনবার্গ পোলকিন্থ্রোনের সাথে এই আলোচনায় বলেন –
ওয়েনবার্গ তার ‘লিভিং ইন মাল্টিভার্স’ প্রবন্ধেও ব্যাপারটা নিয়ে টেকনিকাল আলোচনা করেছেন। কারো ইচ্ছে হলে দেখে নিতে পারেন।
এর বাইরে, আমি আমার এই মন্তব্যে নেচার জার্নালে প্রকাশিত Mario Livioর পেপার (“The Anthropic Significance of the Existence of an Excited State of C12) সহ বেশ কয়েকটি পেপারেরই উল্লেখ করেছিলাম যেখানে সনাতন ফাইনটিউনিংকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে, কিংবা দেখানো হয়েছে যে ফাইনটিউনিং এর রেঞ্জটা তাদের দাবীমতো আসলে ততটা সূক্ষ্ম নয়, বরং এর পরিসর যথেষ্টই বড়। এমনকি যে ভাবে প্রোবাবিলিটি গণনা করে ‘ফাইন টিউন’ বলা হয়েছে সেটাও নানা গবেষকদের কাছ থেকে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে (যেমন এলিয়ট সবার দেখিয়েছেন তার গবেষণায়)। এইটুকুই আজ।
সবাইকে ধন্যবাদ।
অভিজিৎ রায়ের মন্তব্যের সাথে আরো একটা বিষয় যোগ করতে চাই :
আমার মন্তব্য ফাইন টিউনিং নিয়ে অভিজিতের সাথে যে মন্তব্য বিনিময় চলছে (অক্টোবর ৩, ২০১২ at ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ) তারই ধারাবাহিকতায় লেখা। অভিজিতের সিদ্ধান্ত হল ফাইন টিউনিংএর অস্তিত্ব বিতর্কিত। কেউ এটা আছে বলেন, আবার কেউ বলেন নেই। যারা বলেন নেই তারা নাকি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন কেন নেই। কিন্তু আসলে প্রায় সব পদার্থবিজ্ঞানীই টিউনিংএর অস্তিত্ব স্বীকার তো করেনই, চুড়ান্ত ব্যাখ্যা যে এখনো নেই সে ব্যাপারেও একমত। ফাইন টিউনিং আছে বলেই তো এর ব্যাখ্যার এত চেষ্টা। ফাইন টিউনিং না থাকলে তো এর ব্যাখ্যারই প্রয়োজন হত না। এখন পর্যন্ত শুধু একটা সম্ভাব্য (চুড়ান্ত নয়) “ব্যাখ্যা” দেয়া হয় বহুমহাবিশ্ব বা মাল্টিভার্স এর ধারণা দিয়ে। এটা যে সর্বোত্তম বা চূড়ান্ত ব্যাখ্যা নয় সেটাও মূল ধারা এই পদার্থবিজ্ঞানীদের মত। মাল্টিভার্সের কোন তত্বই এখনও পদার্থবিজ্ঞানের মূল ধারায় সুপ্রতিষ্ঠিত নয় যেমনটি স্ফীতিতত্ব ও প্রমিত মডেল। মাল্টিভার্সের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে ঘোষণা করা হচ্ছে। এটা একটা মাত্র একটা পর্যবেক্ষণ। এটাতে শুধু বুদ্বুদ মহাবিশ্বের সঙ্ঘাত এর সম্ভাব্য আলামত আছে বলে দাবী করা হচ্ছে। এটা যে সন্দেহাহাতীভাবে প্রমাণিত সেটাও বলা হচ্ছে না। যেমন নীচের মন্তব্য পড়লে বোঝা যাবেঃ
http://phys.org/news/2010-12-scientists-evidence-universes.html#jCp থেকেঃ
[Still, the scientists acknowledge that it is rather easy to find a variety of statistically unlikely properties in a large dataset like the CMB. The researchers emphasize that more work is needed to confirm this claim, which could come in short time from the Planck satellite, which has a resolution three times better than that of WMAP (where the current data comes from), as well as an order of magnitude greater sensitivity. Nevertheless, they hope that the search for bubble collisions could provide some insight into the history of our universe, whether or not the collisions turn out to be real.]
তাই বহুমহাবিশ্বের অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছে বলাটা এখন প্রিম্যাচিউরই হবে। ভবিষ্যতে আরো সম্ভাবনার দ্বার খোলা থাকল।
যাই হোক ফাইন টিউনিং এর অস্তিত্ব/সত্যতা নিয়ে (যেটা আমার মূল বক্যতব্য) ছয়জন শীর্ষ পদার্থবিজ্ঞানীরা কি বলেন সেটা দেখা যাক। এরা সবাই টপনচ পদার্থবিজ্ঞানী, একজন নোবেল বিজয়ীও (Wilczek)। ফাইন টিউনিং এর অস্তিত্ব মূল ধারার পদার্থবিজ্ঞানের একটা প্যারাডাইম । কোন যুগান্তজারী নতুন তত্ত্ব বা পর্যবেক্ষন লাগবে প্যারাডাইম শিফট্এর জন্য। যুগান্তজারী নতুন তত্ত্ব বা পর্যবেক্ষন ঘটলে এদের ছয়জনই তা এতদিনে ঘোষনা দিতেন। কম্পিউটার সিমুলেশন বা মডেলিং দিয়ে পদাথবিজ্ঞানে প্যারাডাইম শিফট্ হয় না। ফ্রেড অ্যাডামসের পেপার ২০০৮ সালে লেখা, কম্পিটার মডেলিং দ্বারা শুধু নক্ষত্র সৃষ্টির (প্রাণ সৃষ্টির) জন্য প্রয়োজনীয় ধ্রুবকগুলির (সছয়টি নয়) তারতম্য হতে পারে দাবী করেছিলেন। এই পেপারের সমালোচনা যে হয়নি তাও নয়, এবং এটার বিষয় গোটা ফাইন-টিইউনিং নয়ে নয় শুধু নক্ষত্র সৃষ্টির প্রক্রিয়া নিয়ে। ২০০৮ সালে লেখা ঐ পেপার ২০১০ এ লেখা হকিং এর গ্র্যান্ড ডিজাইন বইএ কোন স্থানই পায় নি। এতে অবাক হবার কিছু নেই। এখন পর্যন্ত এমন কিছু ঘটেনি যার জন্য এই ছয়জন শীর্ষ পদার্থবিজ্ঞানীদের নীচে উদ্ধৃত কথায় আমূল পরিবর্তন ঘটতে পারে।
Wilczek:
1. http://www.frankwilczek.com/Wilczek_Easy_Pieces/391_Enlightment_Knowledge_Ignorance_Temptation.pdf
[Life appears to depend upon delicate coincidences that we have not been able to explain. The broad outlines of that situation have been apparent for many decades. When less was known, it seemed reasonable to hope that better understanding of symmetry and dynamics would clear things up. Now that hope seems much less reasonable. The happy coincidences between life’s requirements and nature’s choices of parameter values might be just a series of flukes, but one could be forgiven for beginning to suspect that something deeper is at work.]
2. Hawking (Grand Design থেকে)
http://blog.mukto-mona.com/?p=12644
[দেখা যাচ্ছে, সম্ভাব্য মহাবিশ্বসমূহের এক বিশাল চারণভূমি রয়েছে। অবশ্য, আমরা পরের অধ্যায়েই দেখবো, এদের মধ্যে যেসব মহাবিশ্বে আমাদের মত জীবনের অস্তিত্ব সম্ভব তারা রীতিমত দূর্লভ। আমরা এমন এক মহাবিশ্বে বাস করি যেখানে জীবন সম্ভব হয়েছে, কিন্তু এটা যদি একটু সূক্ষ্ম ভাবেও আলাদা হতো, তাহলেও আমাদের মত স্বত্তা এখানে টিকতো না।]
[There seems to be a vast landscape of possible universes. However, as we’ll see in the next chapter, universes in which life like us can exist are rare. We live in one in which life is possible, but if the universe were only slightly different, beings like us could not exist. What are we to make of this fine-tuning?]
http://blog.mukto-mona.com/?p=12828:
এভাবে দেখা যায় শুধু যে শক্তিশালী নিউক্লিয় বল আর তড়িৎচৌম্বক বলের মানই আমাদের অস্তিত্বকে সম্ভব করতে সূক্ষ্মসন্নিবেশ করা হয়েছে তা-ই নয়, বেশিরভাগ মৌলিক ধ্রুবকও এমন ভাবে সূক্ষ্মসন্নিবিষ্ট যে তাদেরকে যদি একটুখানি বদলানো হয় তাহলেও মহাবিশ্বের গুণগত পরিবর্তন ঘটে যাবে। এবং অনেকসময় এটা জীবনের বিকাশের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
[Most of the fundamental constants in our theories appear fine-tuned in the sense that if they were altered by only modest amounts, the universe would be qualitatively different, and in many cases unsuitable for the development of life.]
…
এইসব জটিল সংগঠন যেগুলো বুদ্ধিমান পর্যবেক্ষকের উদ্ভব ঘটিয়েছে, তাদের বিকাশ খুবই ভঙ্গুর পরিস্থতিতিতে হয়েছে বলে মনে হয়। আর প্রকৃতির নিয়মগুলো দেখে মনে হয় এগুলো খুব যত্ন করে এমন ভাবে সূক্ষ্মসন্নিবেশ করা, যেন জীবন বিকাশের সম্ভাবনা বিনাশ না করে এর খুব কমই পাল্টানো সম্ভব হয়। ভৌত নিয়মসমূহের খুটিনাটিতে এইসব ধারাবাহিক এবং চমকপ্রদ সব দৈব মিল না থাকলে, মানুষ বা এধরণের জীবের অস্থিত্বই সম্ভব হতো না
[ The emergence of the complex structures capable of supporting intelligent observers seems to be very fragile. The laws of nature form a system that is extremely fine-tuned, and very little in physical law can be altered without destroying the possibility of the development of life as we know it.]
3. আন্দ্রে লিন্ড এর পেপার থেকে ( http://arxiv.org/abs/0705.0164 ) :
“the existence of an amazingly strong correlation between our own properties and the values of many parameters of our world, such as the masses and charges of electron and proton, the value of the gravitational constant, the amplitude of spontaneous symmetry breaking in the electroweak theory, the value of the vacuum energy, and the dimensionality of our world, is an experimental fact requiring an explanation.”
4. Leonard Susskind, The Cosmic Landscape থেকেঃ
( http://articles.latimes.com/2006/jan/15/books/bk-kirsch15 )
[Our own universe is an extraordinary place that appears to be fantastically well designed for our own existence. This specialness is not something that we can attribute to lucky accidents, which is far too unlikely. The apparent coincidences cry out for an explanation.]
5. Alan Guth এর পেপার থেকে ( http://arxiv.org/pdf/hep-th/0702178v1.pdf )
“in the multiverse, life will evolve only in very rare regions where the local laws of physics just happen to have the properties needed for life, giving a simple explanation for why the observed universe appears to have just the right properties for the evolution of life. The incredibly small value of the cosmological constant is a telling example of a feature that seems to be needed for life, but for which an explanation from fundamental physics is painfully lacking.”
6. Lee Smolin ( http://arxiv.org/pdf/hep-th/0407213v3.pdf )
[But if the anthropic principle cannot provide a scientific explanation, what are we to make of the claim that the universe is friendly to life? It is essential here to distinguish the different versions of the anthropic principle from what I would like to call the anthropic observation. This observation states:
” The anthropic observation: Our universe is much more complex than most universes with the same laws but different values of the parameters of those laws. In particular, it has a complex astrophysics, including galaxies and long lived stars, and a complex chemistry, including carbon chemistry, These necessary conditions for life are present in our universe as a consequence of the complexity which is made possible by the special values of the parameters.”
I will describe this more specically below. There is good evidence that the anthropic observation is true[2, 3, 4, 9]. Why it is true is a puzzle that science must solve.”]
ফাইন টিউনিং যে একটা ফ্যাক্ট সেটা মুক্তমনার ড: তানভীর হানিফ (তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি) ও বলেছেন।
@অপার্থিব,
“ফাইন টিউনিং” যদি স্রেফ $latex \alpha = 137$ (এবং অনুরূপ ধ্রুবকের মানের) এর প্রতিশব্দ হত তাহলে সেটিকে ফ্যাক্ট বলা যেত। তাহলে তাকে “ফাইন টিউনিং” না বলে “ঙরাচু” বললেও চলত। “ফাইন টিউনিং” নামটাই এই বিশেষ ভ্যালুগুলির ব্যাপারে subjective বিস্ময়বোধটি তুলে ধরে। এটি কোন অর্থে ফ্যাক্ট হতে পারে সেটি স্পষ্ট নয়।
@রৌরব,
“ফাইন টিউনিং” একটা ফিগার অফ স্পীচ। উয়পরের উদ্ধৃত পদার্থবিজ্ঞানীরা যা বলছেন সেটাকেই অনেকে “ফাইন টিউনিং” বলেন। “ফাইন টিউনিং” না বলে অন্য কিছুও বলা যায়। Smolin “ফাইন টিউনিং একটা ফ্যাক্ট’ না বলে anthropic observation is true বলছেন। একই কথা অন্যভাবে বলা। (anthropic observation Fine-Tuning)
আচ্ছা শূন্য থেকে যদি নিজে নিজে এই বিশাল মহা বিশ্ব হয়, তাহলে এই বিশাল মহাবিশ্ব থেকে নিজে নিজে আরও বিশাল মহাবিশ্ব হচ্ছে না কেন? যেমন ধরেন আমি যদি ব্যাংকে ১,০০,০০০ টাকা রাখি তাহলে ১০ বছর পর ২,০০,০০০ টাকা বা তার যে কোন বেশি একটা এ্যামাউন্ট পাওয়া যাবে। কিন্তু ব্যাংকে শূণ্য টাকা রাখলে কোন টাকাই দিবে না।
অামাদের এই পৃথিবীথেকে আরেকটা পৃথিবী হচ্ছে না কেন?
এই অবস্থান্তরের ফলে কিভাবে শক্তি নির্গত হল এবং কিভাবে সেটা কণা তৈরি করল। যেহেতু আমরা জানি কোনো কর্তা ছাড়া ক্রিয়া সম্পাদন হয় না। যেমন কেউ যদি আমাদের এসে বলে আমি দেখে এসেছি নিজে নিজে পদ্মা সেতু হয়ে গিয়েছে তাহলে কি আমরা বিশ্বাস করব? কারন নিজে নিজে কোন কিছু হওয়াটাতো কোন সময়ের ভিতরে সীমাবদ্ধ নয়। এটাতো যে কোন সময়ই হতে পারে।
আমরা জানি, সবকিছু ধ্বংসশীল। অর্থাৎ সবকিছুই ধ্বংস হচ্ছে এবং একসময় ধ্বংস হয়ে যাবে। এসব ধ্বংসটাযেহেতু নিজে নিজে হচ্ছে তাহলে এটাকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না কেন? যেহেতু জন্ম মৃত্যু এটা নিজে নিজে হচ্ছে আমরা ইচ্ছে করলেই মুত্যুকে ঠেকিয়ে অমরত্ন লাভ করতে পারি। কারণ এটার কোন মালিক নেই, এটার কোন নিয়ন্ত্রক নেই।
যদি কোন কিছুর নিয়ন্ত্রক না থাকে তাহলে তো সেটাকে আমরা ইচ্ছা করলেই নিয়ন্ত্রনে নিতে পারি। যেমন ধরেন অনেক খাস জমি কোন মালিক না থাকার কারনে অনেক পাওয়ারফুল লিডাররা এগুলো দখল করে নেয়। আবার ধরুন বাংলাদেশ একটা দুর্বল দেশ। এখন যে কোন শক্তিশালী দেশ বাংলাদেশকে দখল নিতে পারে।কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র একটা শক্তিশালী দেশ । যে কেউ চাইলেই একে দখল করতে পারবে না। আমি বুঝাতে চাচ্ছি চন্দ্র, সূর্য এগুলোর যেহেতু কোন শক্তিশালী বা দুর্বল কোন নিয়ন্ত্রক নেই তো এগুলো আমরা নিয়ন্ত্রনে নিচ্ছিনা কেন?
নিউটনের একটা সূত্র রয়েছে ঃস্থির বস্তু চিরকাল স্থির যদি বাহ্যিক বল প্রয়োগ করা না হয়। আবার চলমান বস্তু চিরকাল চলমান যদি কোন বাধা না দেওয়া হয়।
তাহলে চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, এগুলো চলমান হলো কি করে কোন বাহ্যিক বল প্রয়োগ না করা ছাড়া।
বাতাস এটা সব সময় চলছে এটা চলমান হলো কি করে?
আমরা কোন আলো জ্বালাতে হলে বিভিন্ন রকমের শক্তির প্রয়োজন। যেমন- বিদ্যুৎ , তেল ইত্যাদি। কিন্তু এই বিশাল সূর্যটা যে আমাদের আলো দিতেছে এটা কিভাবে আমাদের আলো দিতেছে। সে এতো শক্তি কোথা থেকে পায়। যেহেতু সামান্য বাতি আমরা নিজে নিজে জ্বালাতে পারছি না।
@অবুঝ বালক,
এটার উত্তর উপরে ইমরান হক সজীবের প্রশ্নে দেয়া হয়েছে কিন্তু। বলাই হয়েছে ভ্যাকউয়াম ফ্লাকচুয়েশনের ব্যাপারটা এম্পটি স্পেসে হয়। আমাদের বিশ্ব জগত এখন আর ‘এম্পটি’ নেই – ম্যাটার আর রেডিয়েশন রাজত্ব করছে। তবে আমাদের মহাবিশ্বের বাইরে কোন এম্পটি স্পেসে হয়ত এভাবে ফ্লাকচুয়েট করে মহাবিশ্ব তৈরি হচ্ছে , এবং মাল্টিভার্সের ধারণা তো বিজ্ঞানীদের আছেই। পরীক্ষালব্ধ প্রমাণও কিছু আসতে শুরু করেছে। আরো বিস্তৃতভাবে জানতে চাইলে আমার মাল্টিভার্সের উপর লেখাটা পড়ে নিতে পারেন।
আপনার অন্য প্রশ্নগুলোর (যেমন সূর্য চন্দ্র কিভাবে গতিশীল হল, বাতাস কিভাব বয়, বৃষ্টি কিভাবে পড়ে ইত্যাদি ) উত্তর স্কুলে কলেজের বইয়েই পাওয়া যায়। একটু কষ্ট করে গুগল সার্চ করলেও উত্তর পাবেন।
পপুলার সায়েন্সের বই পড়ে বৈজ্ঞানিক যুক্তি অনুধাবনের চেষ্টা পন্ডশ্রম। পপুলার সায়েন্স পাঠকের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধিৎসা পুরণ করে, যারা বিভিন্ন তথ্যে আপ টু ডেট থাকতে ভালোবাসে তাদের আড্ডার উপকরণ হিসেবে উঠে আসে, কেউ কেউ পপুলার সায়েন্সের বই পড়ে বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে কিন্তু আম-পাঠককে বিজ্ঞান শেখানোর দায়িত্ব পপুলার সায়েন্স লেখকের না
বিদ্যমান অগ্রগতি পর্যালোচনা করে এক ধরণের ফিল-গুড যৌক্তিক সমাধান দেওয়াটা পপুলার সায়েন্স লেখকের পবিত্র দায়িত্ব, সেখানে এই মুহূর্তে যত ধরণের মৃদু ও প্রবল বিতর্ক চলছে, যেসব বিষয়কে পপুলার সায়েন্স লেখক মীমাংসিত ধরে নিয়েছেন সেসব বিষয় সম্পর্কে অপরাপর ব্যক্তিদের যুক্তিগুলো উপস্থাপন করাটাও আসলে তার কাজ নয়।
এ মুহূর্তে সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য তত্ত্ব হলো ইনফ্লেশনারী মডেল অফ ইউনিভার্স। অন্য কোনো মডেল বিদ্যমান মহাবিশ্বকে এতটা বিস্তারে ব্যাখ্যা করতে পারে না, সেখানেও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, সেসব সীমাবদ্ধতা এখনও মীমাংসিত হয় নি বলে তারা এটাকে এখনও মডেলের বাইরে এসে ‘ল’ হিসেবে ঘোষণা দিচ্ছেন না। এই মডেলের একটা বৈশিষ্ঠ্য বিদ্যমান পদার্থের ভরকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা- যা গ্ল্যাশো-ওয়াইবার্গ-সালামের ইলোক্ট্রো-উইক ইউনিফিকেশন মডেল দিয়েই ব্যাখ্যা করা সম্ভব বলে তারা বিশ্বাস করেন।
গ্ল্যাশো-ওয়াইবার্গ-সালাম ইউনিফিকেশন স্কীমে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা ইলেক্ট্রন এবং অন্যান্য পদার্থের ভর উৎপদন, সেটা যেভাবে ভবিষ্যতবানী করেছে তাতে মহাবিশ্বের অস্তিত্ব সম্ভবপর না, সমান সংখ্যাক কণা ও প্রতি-কণা । তত্ত্বীয় ধারণা থেকে উৎপাদিত এইসব কণা-প্রতিকণা একে অন্যকে ধ্বংস না করে দিয়ে প্রায় ১২০০ থেকে ১৪০০ কোটি বছর কিভাবে মহাবিশ্বকে প্রসারিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে এটা একটা চলমাণ বিতর্ক এবং যারা বৈজ্ঞানিক জার্নালে লিখছেন তারা নিজের উপস্থাপিত মডেলে বলছেন তার অভিমত অনুসারে এই জার্নালটিতেই সবচেয়ে সঠিক ভাবে বিষয়টা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
@রাসেল,
ব্লগে পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা লোক পাওয়া দুর্লভ। আপনার মন্তব্য দেখে মনে হল সেরকম একজন পাওয়া গেছে। আমার লেখাটা পড়লে হয়তো দেখবেন এখানে ক্রাউসের বইটা নিয়ে কথা বলা শুরু হলেও মূলতঃ এতে ইনফ্লেশন তত্ত্বের অনুসিদ্ধান্তগুলো নিয়েই কথা বলা হয়েছে, যেটাকে আপনি ‘সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য তত্ত্ব’ বলে মত দিয়েছেন। ক্রাউসের উপসংহার মূলতঃ সেটার উপর ভিত্তি করেই। তবে ব্লগে লিখলে জনপ্রিয় ধারাতেই লিখতে হয়, কারণ বিভিন্ন সমীকরণ প্রয়োগ করে টেকনিকাল আলোচনার সুযোগ থাকে কম। তবে আপনি হয়তো দেখেছেন যে বিভিন্ন জনের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক বহু পেপারেরই রেফারেন্স উঠে এসেছে।
কণা আর প্রতিকনার অসাম্যের ব্যাপারটা ফ্রাঙ্ক উইলজেক আর সায়েন্টিফিক আমেরিকানের প্রবন্ধে ব্যাখ্যা করেছেন। কেউ চাইলে জার্নালে প্রকাশিত মূল পেপারটিও খুঁজে বের করতে পারবেন। আর এর বাইরে অনেক সমাধানই তো আছে। যেমন সেই ১৯৬৭ সালে সোভিয়েত বিজ্ঞানী শাখারভ প্রস্তাবিত ব্যারিওজেনেসিস এর সমাধান (Violation of CP invariance, C asymmetry, and baryon asymmetry of the universe. A. D. Sakharov. Sov. Phys. Usp. 34 (5), pp.392–393.)।
আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
এখানে একটি জিনিস বলা মনে হয় বাদ পড়ে গেছে। আলোর বেগও কিন্ত ফাইন টিউনড। তবে সাধারণভাবেই আলোচনায় কিছু স্ট্যাটিস্টিক্যাল কনসিডারেশন হয়ত পাঠকদের অনেককেই শেষাবধি কনফিউশানের মধ্যে রেখে দিয়েছে। আমি তাঁদেরকে অপেরা এক্সপেরিমেন্টে ফাস্টার দ্যান লাইট নিউট্রিনো এক্সপেরিমেন্টের মেজারমেন্ট প্রক্রিয়ার মূলনীতিটি বুঝতে অনুরোধ করব। পদার্থবিজ্ঞানে কি ধরণের সূক্ষ্মতা দাবী করা হয় এবং এটি বুঝতে না পারলে কি ধরণের এ্যামবিগুয়াস প্রশ্ন মনে আসতে পারে–সেটির উপলব্ধির জন্য এই এক্সারসাইসটি প্রয়োজণীয়।কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্বের তাত্ত্বিক ভবিষ্যদ্বানী এবং পরীক্ষণের ফলাফলের সাথে এর তুলনাটি একটু লক্ষ্য করুন: α= 137.035 999 084 (33) — Experimental.α= 137.035 999 084 (51) । অপেরা এক্সপেরিমেন্টে জেনেভা থেকে গ্রান সাসোতে নিউট্রিনো বিম পাঠানো হয়। দেখা যায় যে বিমটি আলোর চাইতে ১ সেকেন্ডের ৬০ বিলিয়ন ভাগের একভাগ আগে পৌছে যায়। এটা নিয়েই কিন্ত হৈচৈ পরে যায়। আমি এর বেশী আর কিছু আপাতত: বলছি না। ভবিষ্যতে হয়ত পদার্থবিজ্ঞানে মেজারমেন্ট এবং এতে পরিসংখ্যানিক পদ্ধতির প্রয়োগ নিয়ে কোন পোস্ট দোব।
@রূপম (ধ্রুব), @তানভীর হানিফ, @রৌরব,
মূল আলোচনা থেকে প্রব্যাবিলিটি, মেজার থিওরি, বরেল মেজার ইত্যাদি দিকে চলে গিয়েছে, সেটা ভাল, গণিতের অনেক সূক্ষ্ণ চিন্তার খোরাক জুগিয়েছে। কিন্তু বৃহত্তর প্রেক্ষিতটা যেন ভুলে না যাই। প্রব্যালিটির টার্মস্এ না বলেও এটা বলা যায় (যা সব পদার্থিবিজ্ঞানীরাই বলছেন) যে ছয়টি ধ্রুবকের মানের যদি কোন একটিরও সামান্য হেরফের হত তাহলে এই প্রাণময় বিশ্ব সৃষ্টি হত না। এটাতে বিস্মিত হওয়া বা না হওয়াটা ব্যক্তিগত রুচির ব্যাপার হতে পারে। কেউ বলতে পারে, এটা আবার কোন ব্যাপার না কি। আবার কেউ মন মনে একটা বিস্ময় বোধ করতে পারে (Feeling of Awe) । আমি দ্বিতীয় দলে। আইন্সটাইন Feeling of Awe বোধ করেছিলেন। সেটা বোধ না করেও তিনি আইন্সটাইনই থাকতেন । মার্টিন রীসের “Just Six Numbers” এর পৃষ্ঠা ১৪৯ থেকে একটা উদ্ধৃতি দেই।
suppose you are facing a firing squad. Fifty marksman take aim, but they all miss. If they hadn’t all missed, you wouldn’t have survived to ponder the matter. But you wouldn’t leave it at that – you’d still be baffled, and would seek some further reason for your good fortune
হ্যাঁ, মাটিভার্স দিয়ে ধ্রুবকের বিশেষ মানের এর একটা “ব্যাখ্যা” হয় ঠিকই। কিন্তু সেটাও এখনও একটা অনুমান নির্ভর ব্যাপার। অন্য বিশ্বে পঞ্চাশ জন মার্ক্স্ম্যানের একজন হয়ত টারগেট মিসস করবে না। তাতে এই বিশ্বের এই ঘটনার বিস্ময় একেবারে কমেও যাবে না। বিস্ময় বোধ করাটা বিজ্ঞানের মধ্যে পড়েনা ঠিকই, কিন্তু বিস্ময় বোধ করার মাধ্যমেই রহস্য সমাধানের প্রেরণা আসে। আস্তিকদের “আরে এগুলো সব ঈশ্বরের কুদরত” বা স্টেঙ্গারের মত কট্টর বাস্তববাদীর “আরে এটা কোন ব্যাপার নাকি, আমি কিছু সরল ধারণা দিয়ে এগুলো ডিরাইভ করতে পারি” এর কোনটাই বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে সহায়তা করে না। স্টেঙ্গার তাউ একজন এক্সপেরিমেন্টালিস্ট, তাত্ত্বিক নন।
@অপার্থিব,
এটা সবাই স্বীকার করলে লেঠা চুকে যেত। কোনটা বিজ্ঞান আর কোনটা বিজ্ঞানের সংস্কৃতি তার লাইনটা পরিষ্কার থাকা দরকার।
মহাজাগতিক ধ্রুবকের ব্যাপারে subjective বিস্ময়বোধ থেকে অসাধারণ বিজ্ঞানের উৎপত্তি হতেই পারে। শেক্সপিয়ারের সনেট পাঠ থেকেও হতে পারে। মানবমনের এসব জটিল রহস্য অব্শ্যই বিস্ময়কর ব্যাপার।
@অপার্থিব,
আরেকটি বিষয় আমি ওভারলুক করেছি। কোন নির্দিষ্ট মান পাবার সম্ভাবনা সেই মানের ওপর নির্ভরশীল–বিষয়টি সাধারণভাবে ভুল। আপনি হয়ত ছক্কার কথা বলতে পারেন। কিন্ত লক্ষ্য করবেন–ছক্কার ছয়টি তলে যদি আমি ১ থেকে ৬ ভিন্ন অন্য ছয়টি সংখ্যা লিখি তাহলেও এদের সম্ভাবনার সূত্র একই হবে।
@তানভীর হানিফ,
এবং যদি ছটা তলেই একই সংখ্যা লেখেন, তাহলে সেই সংখ্যাটির প্রবাবিলিট হয়ে গেল ১। এটাই হল পয়েন্ট, কোন একটা event বিস্ময়কর (অর্থাৎ low probability event) সেটা বলার জন্য প্রবাবিলিট স্পেইসটি কি, সেটা জানা দরকার।
@রৌরব,
এক্ষেত্রে অর্থাৎ ফাইন টিউনিং এর ক্ষেত্রে আমরা ছয় তলে একই সংখ্যা লিখছিনা। ধ্রুবকগুলোর মান যা খুশী তাই হতে পারে কিন্ত নির্দিষ্ট কিছু মানের জন্য আমাদের মহাবিশ্বে প্রাণের উৎপত্তি হয়েছে। এটাই হল মূল পয়েন্ট। একটি লটারি বক্সে কাগজে লেখা অসীম সংখ্যক বিন্যাস থাকলে এবং সেটির একটি মাত্র বিন্যাসের জন্য আপনি যদি লটারি প্রাইজ পান–তাহলে আপনার প্রাইজ পাবার সংখ্যা প্রায় শুণ্য। আমি গণিতবিদ নই। কাজেই আমার কথাকে অথারিটেটিভ না ধরতে চাইলে যেকোন গণিতজ্ঞকে জিজ্ঞাসা করে দেখুন–আমি ঠিক কি বেঠিক।
@তানভীর হানিফ,
এর মানে কি? এই কথাটাকে কনক্রীট করুন, দেখবেন যে এটা আসলে প্রবাবিলিটি ডিস্ট্রিউবিশনের উপর একটা assumption।
যদি প্রবাবিলিটি মেজারটি সেরকম হয়। এখানে লুকোনো assumption টি হল যে প্রত্যেকটা কাগজ আমার হাতে ওটার সম্ভাবনা সমান। কেন সেরকম? এরকম বহু প্রবাবিলিটি মেজার দেখানো যেতে পারে যেখানে আপনার প্রাইজ পাওয়ার সম্ভাবনা ০.২ বা ০.৫ বা ১। আপনার এই analogy গুলি বার বার ওই assumption টাই প্রকাশ করছে মহাজাগতিক ধ্রুবকের prior প্রবাবিলিটি ইউনিফর্ম (বা তার কাছাকাছি কিছু একটা)।
@তানভীর হানিফ,
🙂
@রৌরব,
আমি যেহেতু ভৌত বিজ্ঞান নিয়ে চর্চা করি সেহেতু এ্যাবস্ট্রাক্ট চিন্তা একটু কম করি। সেজন্য আমি আপনার কাছে একটি বাস্তব উদাহরণ চাইব: একটি লটারি বক্সে ১ থেকে ১ লক্ষ সংখ্যামানের ভেতর ৫০ হাজার র্যান্ডম সংখ্যা সংখ্যা লিখিত ৫০ হাজার কাগজ আছে এবং প্রতিটি সংখ্যাই আলাদা। ৩৫,৮৬৭ নম্বর লিখিত কাগজটি ৯০% সম্ভাবনায় কিভাবে তোলা যাবে? 🙂
@তানভীর হানিফ,
“বাস্তব” শব্দটাকে হাইলাইট করেছি আমি।
আমার একদম প্রথম মন্তব্যগুলি, যেখান থেকে এই আলোচনা শুরু হয়েছিল, সেদিকে আপনার সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। লক্ষ্য করবেন, আমি বলেছিলাম যে বাস্তবে (অর্থাৎ আমাদের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতায়) সংখ্যারা সাধারণত কিছু বিশেষ ডিসট্রিউবিশন নিয়ে দেখা দেয় — আমি আমের ঝাঁকা, মানুষের উচ্চতা, মানুষের চুলের সংখ্যা দিয়ে উদাহরণ দিয়েছিলাম। আপনার লটারীর উদাহরণটি ঠিক ওরকম উদাহরণ। আমার প্রথম প্রশ্নই ছিল — মহাজাগতিক কনস্ট্যান্টের মত একটা ফান্ডামেন্টাল ব্যাপার লটারীর টিকেট বা আমার চুলের মত ব্যবহার করবে কেন? তার ডিস্ট্রিবিউশনটি ওরকম কেন হবে? (আমার চুলের ডিস্ট্রিবিউশন সম্ভবত গাউসিয়ান, ইউনিফর্ম নয়, কিন্তু সে প্রসংগ বাদই দিলাম)
এখন আপনি বলতে পারেন — এটা একটা reasonable default assumption। অপার্থিব এই লাইন নিয়েছেন। সেটা আপনার position হয়, তা নিয়ে আলোচনা করব সেটা কতটা reasonable। কিন্তু এটা যে একটা assumption, আপনি যে prior probability নিয়ে একটা অনুমান করছেন, এব্যাপারে একমত হওয়া দরকার।
@রৌরব,
ফান্ডামেন্টাল মানেতো বাস্তবতার বাইরে কিছু নয়। আমের ঝাকা ব আপনার চুলের অস্তিত্বও মহাবিশ্বের ফাইন টিউনিং এর সাথে অসম্পর্কিত নয়। আমাদের জানা মহাবিশ্বের কয়েটিমাত্র ধ্রুবকের সুনির্দিষ্ট মানের বা মানের ন্যারো রেঞ্জের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে এতে প্রাণের উদ্ভব হয়েছে–এটা কোন এ্যাসাম্পশন না–পরীক্ষণ এবং পর্যবেক্ষণনির্ভর হার্ড ফ্যাক্ট। এটাকেই ফাইন টিউনিং বলা হচ্ছে। আপনার পছন্দ না হলে অন্য নামও ব্যবহার করতে পারেন।
আপনি কিন্ত আমার প্রশ্নটা এড়িয়ে গেছেন এবং পাল্টা প্রশ্ন করেছেন। আপনি ্যে এর ডিস্ট্রিবিউশন সে’র
মতন বলছেন সেটা কি অন্ধের হস্তীদর্শন জাতীয় কিছু নাকি সেটি আগে বুঝতে হবে। লেটস্ কনসেনট্রেট অন লটারি টিকেটস্। আপনি বলেছেন:এরকম বহু প্রবাবিলিটি মেজার দেখানো যেতে পারে যেখানে আপনার প্রাইজ পাওয়ার সম্ভাবনা ০.২ বা ০.৫ বা ১। সেটি কিভাবে তাই জানতে চাচ্ছি।
@তানভীর হানিফ,
“ন্যারো” মানেই apriori probability-র উপর assumption। আপনি যদি না জানেন সম্ভাব্য সেটের প্রকৃতি কি, তাহলে ন্যারো কথাটার কোন অর্থই থাকেনা।
“কিভাবে” বলতে একটা description চাচ্ছেন নাকি কিভাবে realize করা যায় জানতে চাচ্ছেন? ধরেন আপনার লটারির টিকেটের মান ৭।
Pro(7)= 1
Pro(x) = 0 for x not equals 7
এই যদি হয় distribution তাহলে ৭ ওঠার সম্ভাবনা ১।
@তানভীর হানিফ,
আরেক ভাবে…
কত কয়েক মাস ধরেই দেখছি, সকালে উঠে কিচেনে গেলে আমার দুই হাউসমেইট কফি খাচ্ছে। কোন দিন দেখলাম না, কিচেনে ৫ জন বা ৬ জন বসে গিটার বাজাচ্ছে। বেচারারা আঁতেল ও love life রহিত বলেই হয়ত এই অবস্থা।
আমার কিচেনে মানুষের সংখ্যা তাহলে কিনা একটি কনস্টান্ট, অর্থাৎ দুই সংখ্যাটার (empirical) সম্ভাবনা ১।
মহাজাগতিক কনস্ট্যান্ট আমার কিচেনের মত না হয়ে আপনার লটারীর বাক্সের মত কেন?
@রৌরব,
আমার মনে হয় আপনি বলতে চাচ্ছেন মহাজাগতিক ধ্রুবকসমূহের সম্ভাব্যমানসমূহ খুবই সীমাবদ্ধ নয় কেন–অসীম কেন? প্রথমত: পদার্থবিজ্ঞানে একটি নিয়ম আছে: ওয়াটেভার ইজ নট ফর্বিডেন ইজ এ্যালাউড। দ্বিতীয়ত: হল মেজারমেন্ট প্রবলেম। সাধারণভাবে কোন কনটিউওয়াস রাশিকে মেজার করবার আগে এর আইগেনভ্যালুর মানের রেঞ্জ হল (-Infinity, Infinity)–য়দি না এতে বিভিন্ন প্রকার কনস্ট্রেইন্ট আরোপ করা হয়–যেগুলো আরবিট্রারি নয়। এটি স্ট্রিক্টলি কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও ধারনাটি আমরা বৃহৎবস্তুর জগতেও প্রয়োগ করতে পারি। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক: আপনার উচ্চতা। সেটির রেঞ্জ হল (০, Infinity)। মাপার পরই বোঝা যাবে সেটি কত? এখন যদি প্রশ্ন করেন আপনার উচ্চতা কেন আপনার কিচেনের আঁতেলদের সংখ্যার মতন কিছু নয়–তাহলে এর স্যাটিসফ্যাকটরি উত্তর কিভাবে দোব–বুঝতে পারছিনা।
@তানভীর হানিফ,
অর্থাৎ assumption করছেন ফান্ডামেন্টাল রাশি ওরকম ব্যবহার করে। এই assumption কোন “হার্ড ফ্যাক্ট” নয়।
কিভাবে জানলেন? রেঞ্জ মানে কি?
না পারারই কথা। এটা আমাদের কারোরই জানা নেই। ফান্ডামেন্টাল কনস্ট্যান্টের ডিসট্রিবিউশন কি, সেটাও আমাদের কারোরই জানা নেই। সেটা একটি ইনফিনিট সেটের ওপর ইউনিফর্ম মেজার, এটা একটা অনুমান মাত্র।
@রূপম (ধ্রুব)
আমি এক্ষেত্রে আপনার ৫০% এর হিসাবটা বুঝিয়েছি। সেটা কেন শুণ্যের কাছাকাছি হবে সে নিয়ে উপরে
আলোচনা করেছি। এখন দেখা যাক সূর্য ওঠার বা না ওঠার ক্ষেত্রে আপনার পদ্ধতিটি কিভাবে এ্যাপ্লাই করা যায়। ধরুন, সূর্য ওঠার মান কেবল (-0.৫,0.৫] এর মধ্যে যেকোনোটি হতে পারে ইউনিফর্মলি (সম সম্ভাব্যভাবে)। এবার ধরুন (১, ২] রেইন্জের প্রতিটি সংখ্যার জন্যে সূর্য ওঠা সম্ভব নয় । তবে যেহেতু (-0.৫,0.৫] রেইন্জের প্রতিটি সংখ্যার জন্যে সূর্য ওঠা সম্ভব , অতএব সূর্য না ওঠার সম্ভাবনা কিন্তু (0.৫-(-0.৫))/(২-১), বা ১০০% ।
আরেকটি বিষয়। ধ্রুবকের সাংখ্যিক মান কেন এর সেই মান/ মানসমূহ গ্রহণের সম্ভাবনা নির্ণয়ে প্রয়োজণ হতে পারে–সেটি কিছুতেই আমার বোধগম্য হলনা।
@তানভীর হানিফ,
এটা আমার বিশেষ কোনো পদ্ধতি ভাবছেন কেনো বুঝলাম না। Probability এর সমস্যা সমাধানের একটা খুব সনাতন উপায় প্রথমে এক্সপেরিমেন্টটা চিহ্ণিত করা। তারপর সেটাতে সকল সম্ভাব্য নমুনাগুলো নির্ণয় করা, যাদের সকলের টোটাল সম্ভাবনা ১। তারপর প্রতিটি নমুনায় সম্ভাবনা কীভাবে বিন্যস্ত (distributed) সেটা বের করার চেষ্টা করা। যেসব ক্ষেত্রে সেটা এম্পেরিকালি জানা নেই, সেখানে একটা apriori distribution ধরে আগানো। এই পদ্ধতি আমি আবিষ্কারও করি নি। উপরে এর চেয়ে ভিন্ন কিছুও করি নি।
এর অর্থ কী? সূর্য ওঠা বা না ওঠা দুইটি মাত্র নমুনা। এর নমুনাক্ষেত্র সসীম সেট। সূর্য ওঠার ঘটনা (-0.৫,0.৫], যাতে অসীম সংখ্যক সংখ্যা আছে, তার ভিতরের সকল মান নিবে কীভাবে? রান্ডম ভ্যারিয়েবল কিন্তু একটা ম্যাপ বা ফাংশন। সূর্য ওঠা মাত্র একটা নমুনা বিন্দু। এটাকে তো একাধিক মানে ম্যাপ করা যায় না।
এটারও বা মানে কী? আর তাছাড়া (০.৫, ১] এর মধ্যের সংখ্যাগুলোর কী হলো? এখানে স্যাম্পল স্পেস কতোটুকু?
এটা কোন সূত্র থেকে এলো?
প্রোবাবিলিটি মডেল চুরমার হয়ে গেলো যে?
এই অংক সারাতে অপার্থিব সাহায্য করবেন? আমি বললে তো উনি আবার বলবেন ওটা “আমার পদ্ধতি।”
@রূপম (ধ্রুব),
ধ্রুবকের সাংখ্যিক মান কিভাবে এবং কেন এর সেই মান/ মানসমূহ গ্রহণের সম্ভাবনা নির্ণয়ে প্রয়োজণ হতে পারে–সেটি কিছুতেই আমার বোধগম্য হলনা। এটা হল মূল পয়েন্ট।
@তানভীর হানিফ,
ধরুন আপনি ক্লেইম করছেন P(A) < 0.0001.
এখানে A কে বলা হবে একটা ইভেন্ট, যেটা স্যাম্পল স্পেসের একটা সাবসেট হতে হবে। এখন স্যাম্পল স্পেস যদি একটি কন্টিনিউয়াস বাউন্ডেড ইন্টার্ভাল হয়, আর ডিস্ট্রিবিউশন যদি ইউনিফর্ম হয়, A এর সম্ভাবনা বের করার জন্যে A এর ইন্টার্ভাল তো জানতেই হবে। A এর ইন্টার্ভাল যতো বড়ো হবে, তার সম্ভাবনা ততো বেশি হবে। এই অর্থে এর ইন্টার্ভাল জানতে হবে, বা সমতুল্য মেজার জানতে হবে।
কিন্তু আনবাউন্ডেড ইন্টার্ভালে ইউনিফর্ম ডিস্ট্রিবিউশন গঠনই সম্ভব না। কারণ, আনবাউন্ডেড ইন্টার্ভালে কন্সটান্টের ইন্টিগ্রেশন অসীম, যেটা কোনো ভ্যালিড প্রোবাবিলিটি মেজার তৈরি করে না। আনবাউন্ডেড ইন্টার্ভালে অন্যান্য ডিস্ট্রিবিউশন সম্ভব। যেমন, নরমাল ডিস্ট্রিবিউশন। সেক্ষেত্রে আবার একটা বাউন্ডেড ইন্টার্ভাল ইভেন্টের সম্ভাবনা সিগনিফিকেন্টলি হাই হতে পারে। যেমন, যদি X ~ N(0, 1) হয়, তাহলে X এর স্যাম্পল স্পেস কিন্তু (-অসীম, +অসীম)। কিন্তু, P(-1<X<1) প্রায় 0.682, যা more likely than not।
@রূপম (ধ্রুব),
ধরুন, ধ্রুবকগুলোর বিশিষ্ট ভ্যালু ০, ১,২,৩,৫,৬ (সেটের সংখ্যা=১) এবং সম্ভাব্য ভ্যালুর সেটের সংখ্যা সংখ্যা ১ বিলিয়ন। বিশিষ্ট ভ্যালুর সেটটি পাবার সম্ভাবনা হবে ১/১ বিলিয়ন। এটি কি সেটের সংখ্যাগুলোর
ভ্যালুর ওপর নির্ভরশীল? সম্ভাবনাটি বের করবার জন্য অন্যান্য ভ্যালুগুলো জানবার প্রয়োজণ পড়ছে কি?
যদি না পড়ে–তাহলে আপনি যেই সূত্রটি ব্যবহার করেছেন সেটি ভুল নয় কেন?
@তানভীর হানিফ,
কোন সূত্রের কথা বলছেন? ইউনিফর্ম ডিস্ট্রিবিউশনে সম্ভাবনা বের করাটা একটা খুব ট্রিভিয়াল ব্যাপার। আপনি নিজেই কোনো প্রোবাবিলিটির বই ঘেঁটে ঁমার সূত্রের ব্যবহারটা ঠিক আছে কিনা ভেরিভাই করতে পারেন। তবে যদি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন কোন সূত্রের কথা বলছেন, তাহলে সাহায্য করতে পারি।
@রূপম (ধ্রুব),
(0.5-0)/(1-0)=0.5 এটি।
@তানভীর হানিফ,
উপরের মন্তব্যটি দেখুন।
@রূপম (ধ্রুব),
আই মিন নীচের, বাট লিংক ফলো করলে হবে। 😛
@রূপম (ধ্রুব),
<(0.5-0)/(1-0)=0.5 এটি।
@তানভীর হানিফ,
কেবল যদি আপনি ইউনিফর্ম ডিস্ট্রিবিউশন অনুমান করেন।
আমি উপরেই বলেছি, যদি সংখ্যাটা না জানাতে চান, তাহলে অন্তত যেটার সম্ভাবনা বের করতে চাচ্ছেন, সেটা মেজারেবল সেট হতে হবে, মেজারটা জানতে হবে। ইভেন্টগুলো একসাথে সিগমা অ্যালজেব্রা গঠন করতে হবে।
আপনার উদাহরণটা আমার (০, ১] ইন্টার্ভালের ইউনিফর্ম ডিস্ট্রিবিউশনে নিলে বলা যায় যে (০, ১] ভেতরে সকল ০.৫ সাইজ ইন্টার্ভালের সম্ভাবনা সমান। যা কিনা ০.৫। যেমন, (০, ০.৫], [০.০৫, ০.৫৫], [০.১, ০.৬], [০.৫, ১] ইত্যাদি। এর জন্যে নির্দিষ্ট মানটা জানা লাগে না, সেটাও সত্য। তবে মেজারটা জানা লাগছে, যে ইন্টার্ভালটার সাইজ ০.৫। এটা জানা ছাড়া সম্ভাবনা গোনা সম্ভব নয়। তবে নির্দিষ্ট মানটা যদি জানা থাকে, তখন সেটা দোষের নয়। আমি নির্দিষ্ট একটা ইন্টার্ভালের উদাহরণ দিয়েছি (০, ০.৫] মেজারটা বের করার জন্যেই (০.৫-০) = ০.৫। তবে নির্দিষ্ট মানটা না জেনে শুধু মেজারটা জানলেও চলতো। কিন্তু মেজারও যদি না জানেন, সম্ভাবনা বের করা যাবে না।
আপনার উদাহরণেও একটা মেজার জানা লাগছেই (“সেটের সংখ্যা=১”), যেটা ছাড়া সম্ভাবনাটা গোনা যেতো না।
@রূপম (ধ্রুব),
আপনার সূত্রের হরে ১ থেকে শুণ্য বিয়োগ দিয়েছেন। সেই ১ টা কি আর ০ টা কি? আপনি যে মেজারের কথা বলছেন তার সংজ্ঞা কি? আমার সেটের সংখ্যা (১ বা ১ বিলিয়ন) আর আপনি যেটিকে মেজার বলছেন (০.৫) তারা এক হল কি করে??? তারা কোনভাবেই এক হতে পারেনা। আমার এখনও মনে হচ্ছে আপনি ভুল করছেন।
@তানভীর হানিফ,
এখানে এই এক আর শূন্য স্যাম্পল স্পেস (0, 1] থেকে এসেছে।
উইকিপিডিয়ায় চলুন।
ওখানে [x, x+d] সাব ইন্টার্ভালের প্রোবাবিলিটি বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে [a,b] স্যাম্পল স্পেসের ইউনিফর্ম ডিস্ট্রিবিউশনে।
উত্তর কী?
[img]http://upload.wikimedia.org/math/7/0/6/706f126a636a3d3f242cdcfc6e8478aa.png[/img]
তো আমার সাবইন্টার্ভাল ছিলো (0, 0.5] আর স্যাম্পল স্পেস ছিলো (0, 1]।
ফলে উপরের সূত্রে
x = 0,
d = 0.5
a = 0
b = 1
তাহলে আসে P(X in (0, 0.5]) = 0.5/(1-0) = 0.5।
এখন সূত্র ঠিক আছে কিনা নিশ্চিত করুন।
Measure
“In mathematical analysis, a measure on a set is a systematic way to assign a number to each suitable subset of that set, intuitively interpreted as its size.”
এক এ অর্থে যে তারা দুটোই উপরের সংজ্ঞার মেজার। তবে স্পেসিফিকালি, সেটের সংখ্যাটা counting measure
“In mathematics, the counting measure is an intuitive way to put a measure on any set: the “size” of a subset is taken to be the number of elements in the subset”
আর ০.৫ টা হলো Borel measure
counting measure আর Borel measure, উভয়েই উপরের মেজারের সংজ্ঞা সিদ্ধ।
এখন কী মনে হয়? 🙂
@রূপম (ধ্রুব),
আমার কনফিউশনের উৎসটা বুঝতে পেরেছি। গণিত প্রয়োগে কনটেক্সট আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার সূত্র সম্ভবত: ঠিক আছে–কিন্ত সেটির প্রয়োগ সঠিক হয়নি এবং সব কেসে বোরেল মেজার প্রয়োগও
করা যায় না (নীচে রৌরব ভাইকে করা মন্তব্যটি দেখুন)। যাই হোক, এখন সেটি আমার মূল দাবীকে
সমর্থন করছে দেখতে পাচ্ছি। 🙂
@তানভীর হানিফ,
কোন জায়গাটায়? জানালে উপকৃত হতাম।
@রূপম (ধ্রুব),
সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১২ at ৫:২৩ অপরাহ্ণ কমেন্টটিতে আপনার সূত্রের ভুল না ধরেও এর প্রয়োগের
ভুলটি ব্যাখ্যা করা হয়েছে । সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১২ at ৬:৫২ অপরাহ্ণ কমেন্টটিও পড়ুন। এরপর
সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১২ at ১:২০ পূর্বাহ্ণ কমেন্টের সমস্যাটিতে সূত্রটি প্রয়োগ করা যায় কিনা
সেটি বলবার অনুরোধ করছি। যদি না যায় তাহলে:এরকম বহু প্রবাবিলিটি মেজার
দেখানো যেতে পারে যেখানে আপনার প্রাইজ পাওয়ার সম্ভাবনা ০.২ বা ০.৫ বা ১।
দাবীটির সঠিকত্ব সম্পর্কে আপনার মতামত কি?
@তানভীর হানিফ,
সেখানে আপনি বলেছেন
কিন্তু সম্ভাব্য সমস্ত ভ্যালুর উপর মানে আনবাউন্ডেড ইনটার্ভালে ইউনিফর্ম ডিস্ট্রিবিউশনই তো হয় না। ফলে আমি তেমন ইন্টার্ভালে ওটা প্রয়োগও করি নি। একটা উদাহরণ মাত্র দেখিয়েছি, যেখানে সূত্রটা ঠিক মতো খাটে। তাহলে প্রয়োগ সঠিক হয় নি কোথায়?
সেখানে অপার্থিব আমার মন্তব্যটিকেই তো পুনরায় ব্যাখ্যা করলেন কোজ ইন্টার্ভালে। তবে উনি যে ভাবছিলেন হাফ ওপেন ইন্টার্ভাল জটিলতা সৃষ্টি করছে, সেটা কি ঠিক? (a, b] ও [a, b] উভয়ের বোরেল মেজার সমান।
তাহলে প্রয়োগ সঠিক হয় নি কোথায়?
আপনি আপনার দেয়া নতুন একটি সমস্যায় সূত্রটি প্রয়োগ করা যায় কিনা জানতে চেয়েছেন, যেটা আগ্রহোদ্দীপক। কিন্তু উপরে তো আপনি বললেন যে আমার করা প্রয়োগটি নাকি সঠিক হয় নি।
এর জন্যে আপনাকে স্পষ্ট করে দেখাতে হবে আমার এক্সাক্টলি কোন প্রয়োগটি সঠিক হয় নি। বোরেল মেজার অবশ্যই সবখানে প্রয়োগ করা যায় না। কিন্তু সেটা দেখানো এক জিনিস, আর আমি যেসব জায়গায় প্রয়োগ করেছি, তার কোনো একটা সঠিক হয় নি দাবি করা আরেক জিনিস।
আরো স্পষ্ট করে বলুন, কোন প্রয়োগটা সঠিক হয় নি?
@রূপম (ধ্রুব),
লক্ষ্য করবেন আমি আপনার সূত্রটির প্রয়োগকে ভুল বলেছি–সূত্রটিকে নয়। আপনি নিশ্চয়ই কারণ ছাড়া ০.৫ বোরেল মেজারের উদাহরণটি দেননি। আপনি দেখাতে চেয়েছেন যে উদাহরণটি ফাইন টিউনিং সমস্যার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।তবে যেহেতু (0, 0.5] রেইন্জের প্রতিটি সংখ্যার জন্যে প্রাণ তৈরি সম্ভব, অতএব প্রাণ তৈরি হবার সুযোগযুক্ত ধ্রুবক পাবার সম্ভাবনা কিন্তু (0.5-0)/(1-0), বা 0.5, অর্থাৎ প্রাণ তৈরি না হবার সম্ভাবনার সমান। সেজন্যই বলেছি আপনি আউট অব কনটেক্সট সূত্রটি প্রয়োগ করেছেন। এই আউট অব কনটেক্সট প্রয়োগকেই আমি বেঠিক প্রয়োগ বলেছি। নতুন সমস্যাটি নতুন নয়-মূল সমস্যাটিকেই ভিন্নভাবে প্রকাশ করেছি। এখন আশা করি অনেকের কাছেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। আপনাকে ধন্যবাদ, কারণ আপনার প্রশ্নগুলোর জন্যই আমি বিষয়ের আরও গভীরে ঢুকতে চেষ্টা করেছি।
@তানভীর হানিফ,
একটু যদি মনে করার চেষ্টা করেন, আমি উদাহরণটা দিয়েছিলাম যখন আপনি বলেছিলেন যে
অর্থাৎ ৬ টি ধ্রুবকের যতসংখ্যক কম্বিনেশনের জন্য প্রাণ সম্ভব নয় তার সংখ্যা অসীম হলেও যে প্রাণ সম্ভব হবার সম্ভাবনা বেশ উঁচু হতে পারে, তার উদাহরণ হিসেবে। যেমন, (0.5, 1] এর ভেতরে অসীম সংখ্যক সংখ্যা।
উদাহরণটা হুবহু ফাইন টিউনিং সমস্যায় না খাটার ব্যাপারেও তখন থেকেই চিন্তিত ছিলাম। যে কারণে উপরে বেশ কয়েকটার রিজার্ভেশনও রেখেছি যে বিষয়টা অসীম বা সেমি-অসীম ইন্টার্ভাল (0, অসীম) এর ক্ষেত্রে খাটবে না। কারণ এরকম স্যাম্পল স্পেইসে ইউনিফর্ম ডিস্ট্রিবিউশনঅলা ভ্যালিড প্রোবাবিলিটি স্পেইসই দাঁড় করানো সম্ভব নয়। এ কারণে বলে নিয়েছিলাম কিন্তু যে –
🙂
এই পেপারটা দেখুন। একই লাইনে এগিয়েছে যুক্তি। অসীম ইন্টার্ভালে যে equiprobable distribution খাটে না, সেখানে গিয়ে আটকে গেছে (non-normalization problem section-এ)। এরপর তেমন এগুতে পারে নি বলে মনে হলো। আমিও সেখানেই আটকে গেছি। আপনি পড়ে দেখতে পারেন। নতুন কিছু পেলে জানান। ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং বটে। 🙂
@রূপম (ধ্রুব),
পেপারের লিংকটা পুনরায়।
@রূপম (ধ্রুব),
* The normalizability problem section-এ
@রূপম (ধ্রুব),
এটা একটা চমৎকার পয়েন্ট ধরেছেন।
@তানভীর হানিফ,
প্রবাবিলিটি জানার জন্য শুধু সেটটা জানা থাকলে চলেনা, প্রবাবিলিট মেজারটা জানতে হয়। সংজ্ঞা দেখুন…
তিন নম্বরটা লক্ষ্য করুন। শুধু সেট, তার সাইজ বা তার বর্ণনা থেকে থেকে প্রবাবিলিটি জানা সম্ভব না।
আরেকটি জিনিস। বায়াসডনেস সম্পর্কে জানাটা সম্ভাবনা নির্ণয়ের জন্য জরুরী নয়। সম্ভাবনা নির্ণয়
করে বায়াসডনেস সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব। উদাহরণস্বরূপ, আমরা যদি একটি কয়েন ১০০০
ফেলি এবং ৯৯৯ বার হেড পাই–তাহলে হেড পাওয়ার নির্ণিত সম্ভাবনা হবে ১ এর কাছাকাছি। একটি
আনবায়াসড কয়েনের জন্য এটির ভ্যালু হল ০ .৫।
@তানভীর হানিফ,
হ্যাঁ ঠিকই তবে এখানে a priori vs. a posteriori probability এর পার্থক্যের ব্যাপারটা প্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। আপনার উদাহরণটা a posteriori probability (বা empirical probability) এর উদাহরণ । আর যদি আমরা “বায়াসড” কয়েনের গঠন Accurately জানি তাহলে নীতিগতভাবে (ব্যবহারিকভাব দুরূহ হতে পারে) পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র (মেক্যানিক্স) দিয়ে আগেই ভবিষ্যৎবাণী করতে পারব যে ১০০০ বার ছুঁড়লে ৯৯৯ বারই হেড হবে। সেটা হবে a priori probability এর একটা উদাহরণ। যদি পদার্থবিজ্ঞানের সার্বিক তত্ত্ব (যখন ও যদি তা জানা যায়) ছয়টি ধ্রুবকের মান নির্দিষ্ট করে দেয় তাহলে সেটিও a priori probability (ডিরাক ডেলটা ফাংশান) এর উদাহরণ হবে।
@অপার্থিব,
মজার বিষয় হল এখানে। এই ধ্রুবকগুলোর মান পদার্থবিজ্ঞানের কোন তত্ত্ব দিয়ে ভবিষ্যদ্বানী করা যায় না। সেজন্য আসলে এখানে প্রোবাবিলিটি ডিস্ট্রিবিউশন বিষয়টিকে ব্যবহার করাই অনুচিৎ। কোয়ান্টাম মেকানিক্স কি করে? স্বয়ং প্রোবাবিলিটি ডিস্ট্রিবিউশন ভবিষ্যদ্বানী করে। হিগস্ বোসোন কিভাবে খোঁজা হচ্ছে? স্ট্যান্ডার্ড মডেল কর্তৃক ভবিষ্যদ্বানীকৃত প্রোবাবিলিটি ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবহার করে–কারণ এই কণিকাটির ভর তত্ত্বটি ভবিষ্যদ্বানী করতে পারেনা (কোন নির্দিষ্ট কণিকা যে সেই নির্দিষ্ট কণিকা সেটি তার ভর কত না জানলে কিভাবে বলা সম্ভব?)। ডিস্ট্রিবিউশন হয় বহু সংখ্যক ড্যাটা নিয়ে। আর এই ড্যাটাগুলো হল সম্ভাবনার মান। কাজেই ডিস্ট্রিবিউশন না জানলে সম্ভাবনা জানা যাবেনা–কথাটি অবান্তর। তত্ত্বের ডিস্ট্রিবিউশন পরীক্ষণলব্ধ ডিস্ট্রিবিউশনের সাথে যখন প্রায় খাপে খাপে মিলে যাবে তখন আমরা বলব—ইউরেকা!!
আরেকটি বিষয় হল যদিও আমরা ডেল্টা-ফাংশন ডিস্ট্রিবিউশন কথাটি ব্যবহার করছি তথাপি কথাটা পুরোপুরি রিগোরাস নয়। মনে রাখতে হবে: ডিরাক-ডেল্টা ফাংশন কোন রিয়েল ফাংশন নয়। পদার্থবিজ্ঞানের কোন গণণার মধ্যবর্তী ধাপে সর্বদা এই ফাংশনটি থাকে–ফলাফলে কখনই নয়।
@তানভীর হানিফ, একটি রান্ডম ভ্যারিয়েবলের প্রবাব্লিটি ডিস্ট্রিবিউশন ফাঙ্কশন থাকে, ধ্রুবকের প্রবাব্লিটি ডিস্ট্রিবিউশন ফাঙ্কশন কথাটাতেই তো গলদ আছে। যার মান ধ্রুব তার আবার ডিস্ট্রিবিউশন কিসের?
আপনি যেহেতু আর্গু করছেন মহাবিশ্ব ফাইনটিউনড বলে তাই একটা প্রশ্ন করছি আপনাকে। আপনার একটি আর্গুমেন্ট একটি ধ্রুবকের মান সামান্য বিচ্যুত হলে কেমন হতো তা কেন্দ্র করে। এখন, ধ্রুবক পাচ্ছেন আপনি দুটি সমানুপাতী চলককে গ্রাফপেপারে ফেলে গ্রাডিয়েন্ট মেপে তাই না? যেমন- ক ও খ দুটি চলক সম্পর্কযুক্ত হলে খ কে ক এর বিপরীতে গ্রাফে ফেলে যেই স্ট্রেইট লাইন পাওয়া যাবে তার গ্রাডিয়েন্টকেই বলছেন আপনি এই দুই চলকে সম্পর্ক নির্ধারণকারী সমানুপাতি ধ্রুবক। এখন এই ধ্রুবক বিচ্যুত কিভাবে হতে পারে? আপনি যার মান গননা না করে নি র্ধারণ করতে পারেন না, তার মান ভিন্ন হতে হলে সেটি হতে হবে আরেকটি মহাবশ্বে যেই মহাবিশ্বের গণিত কিনা এই মহাবিশ্ব হতে ফান্ডামেন্টালি ভিন্ন। আপনি কল্পনা করতে পারেন অসীম সংখ্যক এইরুপ মহাবিশ্বের কথা, যাদের মধ্যে একটিতে কোন কার্বন পরমানু গঠিত হয়না। হাওএভার, আপনার স্যাম্পল সাইজ যেহেতু অসীম ইফেক্টিভলি, অন্য আরেকটি মহাবিশ্বে আপনি হয়তো পাবেন কার্বন পরমানু গঠিত হয়। হয়তোবা আমরা যেই মহাবিশ্বে বাস করি সেই মহাবিশ্বটাই ওই মহাবিশ্ব? এইটার জন্য কোন ফাইন টিউন ত দরকার হচ্ছে না।
@আল্লাচালাইনা,
তাহলে যার মান ধ্রুব, সে আবার অন্য মানও বা নেয় কীভাবে? ধ্রুবকটার মান এমন না হয়ে যদি অমন হতো কথাটাই তো একটা রান্ডম ভ্যারিয়েবল তৈরি করছে।
@রূপম (ধ্রুব), আপনার কথা তো সত্যি দেখা যাচ্ছে 😀 , অনেক গভীরে পেঁচিয়ে গিয়েছি আমরা। আমি কিন্তু ‘ধ্রুবকটার মান এমন না হয়ে যদি অমন হতো’ কথাটা বলতেই পছন্দ করতাম না, কেননা এইটা ধ্রুবকের সংজ্ঞার সাথে সংঘাতপুর্ণ।
@আল্লাচালাইনা,
আমিও না। সেটা একটা oxymoron. কিন্তু তানভীর ভাই উপরে বলেছেন যে বিশ্বের প্রাথমিক পর্যায়ে এই ধ্রুবকের মান ভিন্ন ছিলো, যাতে কার্বনজাত জিনিস গঠন সম্ভব ছিলো না।
@রূপম (ধ্রুব),
এটি দেখুন:
http://en.wikipedia.org/wiki/Coupling_constant#Running_coupling
@আল্লাচালাইনা,
ফাইন টিউনিং বিষয়টি এক ধরণের দ্ব্যর্থবোধকতা সৃষ্টি করে। আমার বক্তব্য হল ফাইন টিউনিং আছে। দ্যাট ইজ আ ফ্যাক্ট। কেউ ফাইন টিউনিং করেছে এটা আমার বক্তব্যের অংশ নয়। ফাইন টিউনিংকে ব্যাখ্যা করবার জন্য অসংখ্য মহাবিশ্ব হাইপোথেসাইজ করা হয়–সেটিকে খন্ডন করবার জন্য নয়। প্রাণ সৃষ্টির সম্ভাবনা বিরল–এই ফ্যাক্টটিকে কেউ ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে আর্গুমেন্ট হিসেবে ইউজ করে আবার কেউ সাইন্টিফিক এভিডেন্স ইউজ করে এর অনলৌকিকত্ব চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। কিন্ত কোন পক্ষই কি এই বিরলত্বকে অস্বীকার করে?
@তানভীর হানিফ,
আসলে করে কিন্তু। রেয়ার আর্থ হাইপোথিসিসের উল্টো হাইপোথিসিসও আছে। যারা আপনার বলা হাইপোথিসিসের বিরোধী তারা বলেন, আমাদের পৃথিবী চার বিলিয়ন বছরের পুরোন। এক বিলিয়ন বছর পেরুতে না পেরুতেই এখানে প্রাণের উদ্ভব ঘটেছে। প্রাণের উৎপত্তির সম্ভাবনা যদি এত বিরলই হত, তবে এত তাড়াতাড়ি এখানে প্রাণের উদ্ভব ঘটতো না। জ্যোতির্পদার্থবিদ কার্ল স্যাগান তার বহু লেখায় যুক্তি দিয়েছিলেন যে পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ অনেকটা অবশ্যম্ভাবী ছিল; অর্থাৎ, পর্যাপ্ত সময় পাওয়া গেলে প্রাণের উৎপত্তি ও বিবর্তন একটি ‘মহাজগতিক অবশ্যম্ভাবিতা’ । একই ধরণের মত প্রকাশ করেন নোবেল বিজয়ী প্রাণরসায়নবিদ খ্রীষ্টান দ্য দুভে ও। তিনি অনেকটা নিঃসংশয় হয়েই বলেন : ‘ জীবনের উৎপত্তি অবশ্যাম্ভাবী … যেখানেই প্রাণ সহায়ক পরিবেশ পাওয়া যাবে, যা আমাদের পৃথিবীতে প্রায় চারশ কোটি বছর আগে ছিল, সেখানেই প্রাণের বিকাশ ঘটবে’। আমি বলছি না তাদের কথাই ঠিক, কেবল বলছি বিরলত্বকে অস্বীকার করার মতোও অনেক বিজ্ঞানী আছেন।
@অভিজিৎ,
বিস্ময়টা সেখানে ছিল না। খ্রীষ্টান দ্য দুভে আর কার্ল স্যাগান যেটা বলছেন সেটা আদি অণু থেকে জীবের বিবর্তনের কথা, আর আদি অণুর সৃষ্টির উপযুক্ত পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা। বিস্ময়টা হল পদার্থবিজ্ঞানের ধ্রুবকএর প্রাণ সহায়ক হওয়ার বিরলতা। ছয়টি ধ্রুবকের বিশেষ মানের কথা, যার জন্য প্রাণ আদৌ সম্ভব এবং যে মানগুলি আসলেই এই মহাবিশ্বে আমরা দেখিছি। প্রাণ বিকাশের জন্য জন্য যে বিশেষ পরিবেশ প্রয়োজন এবং সেই পরিবেশ পেলে প্রাণ যে বিকশিত হবেই সেটা অন্য বিষয়। সে জন্যই মঙ্গল গ্রহে (বা অন্য অনেক সৌরজগতে) প্রাণের বিকাশ ঘটেনই, পৃথিবীতেই ঘটেছে যদিও মঙ্গলের বয়স পৃথিবীর সমতুল্য, এবং অন্য সৌরজগতে অনেক গ্রহহপি পাওয়া যাবে যেখানে প্রাণের বিকশ ঘটেনি, যদিও তাদের বয়স পৃথিবী থেকে বেশিও হতে পারে।
@অপার্থিব,
আক্ষরিক অর্থেই বৈজ্ঞানিক ফ্যাক্টের কথা যদি বলে আমি কেবল বলব – আমরা এমন একটা মহাবিশ্বের এমন একটা গ্রহে আছি যেখানে এক বিলিয়ন বছরের মধ্যে প্রাণের উৎপত্তি হয়ে এর নানা বিকাশ ঘটেছে। ফ্যাক্ট কেবল এই টুকুই। এখন মহাবিশ্বের প্যারামিটারগুলো অন্য রকম হলে কি হত আর কি হত না, এর অনেক কিছুই আমার কাছে ‘ফ্যাক্ট’ নয়, তা যতই বৈজ্ঞানিকভাবে উপস্থাপনের চেষ্টা হোক না কেন। সেই কেপলারের সময় থেকেই বিজ্ঞানীরা চিন্তা করেছেন কেন পৃথিবীতে প্রাণের উদ্ভব হল – এমন কোন নিয়ম নিশ্চয় আছে যার কারণে পৃথিবীটা এমন এক জায়গায় থাকবে যে প্রাণের অভুদয় ঘটার মত পরিস্থিতি তৈরি হবে। কিন্তু সে ধরণের কোন ‘মহাজাগতিক নিয়ম’ পাওয়া যায়নি, কেননা সে ধরণের কোন নিয়মই আসলে নেই। মূল কথা হল – সৌরজগতের অন্য সব গ্রহের মধ্যে সেই গ্রহেই প্রাণের উদ্ভব ঘটেছে যেখানে সূর্যের থেকে দূরত্ব, তাপ, চাপ, বায়ুমণ্ডল, আর্দ্রতা সব কিছু মিলিয়ে অনুকূল পরিবেশ ছিল। ড্রেক ইকোয়েশনের কনজারভেটিভ এস্টিমেশনেও য়ামাদের মহাবিশ্বে আরো এধরণের অসংখ্য গ্রহ আছে। এখন সেগুলোতে প্রাণ আছে কি নেই সেটা নিয়ে নানা বিতর্ক করা যাবে, কিন্তু সেগুলোকে ফ্যাক্ট বলা যাবে না। অনন্ত মহাবিশ্বের ক্ষেত্রেও তাই। বিস্মিত হবার ব্যাপারটি অনেক সময়ই বস্তুনিষ্ঠ হবার বদলে ব্যক্তিনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়ায়।
@অভিজিৎ,
ছয়টি ছয়টি ধ্রুবকের বিশেষ মানের জন্যই যে প্রাণের উদ্ভব সম্ভব, মানগুলির সামান্য হেরফের হলে প্রাণের উন্মেষ ঘটত না সেটা বৈজ্ঞানিক ফ্যাক্ট নয়, সেটা পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মের পরিণতি। ঠিক যেমন শূন্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টিও বৈজ্ঞানিক ফ্যাক্ট নয়, পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মের পরিণতি। বিগ ব্যাং, স্ফীতি কোনটাই বৈজ্ঞানিক ফ্যাক্ট নয়, পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মের পরিণতি। আপেল নীচে পড়ে সেটা ফ্যাক্ট, মাধ্যাকর্ষণের সূত্র ফ্যাক্ট নয়। এভাবে দেখলে ক্রাউস বা হকিং এর বইগুলিকে এত উচ্ছাসের সাথে রিভিঊ না করে বৈজ্ঞানিক ফ্যাক্ট নয় বলে উড়িয়ে দেয়াটাই বোধহয় বেশী যুক্তিসঙ্গত হত। আলোচনার ক্ষেত্র খুবই সীমিত হয়ে যাবে শুধু ফ্যাক্টেই সীমিত থাকলে। ফ্যাক্ট নিয় শুধু কথা বললে একটা একঘেঁয়েমিপূর্ণ কাজ হত, যান্ত্রিক বর্ণনা কেবল। বিজ্ঞানের কাজ শুধু ফ্যাক্ট সংকলন করে তালিকা তৈরী নয়। বিজ্ঞানের নিয়ম থেকে কি বিস্ময়কর সিদ্ধান্তে আসা যায় বা কি ভবিষৎবাণী করা যায় সেটাতেই বিজ্ঞানের (বা বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনার) প্রকৃত আকর্ষণ।
@অপার্থিব,
পরিনতি শব্দটা দ্ব্যর্থবোধক, এবং যেহেতু ‘ফ্যাক্ট’ নয় বলে স্বীকার করা হয়েছেই, তাই এতে যথেষ্টই ভিন্নমতের কিংবা আলোচনা, সমালোচনার অবকাশ আছে। যেহেতু ফ্যাক্ট নয়, বিভিন্ন জনের ইন্টারপ্রিটেশন কিংবা বিস্ময়বোধটাই মূখ্য, তাই বলাই বাহুল্য বহু বিজ্ঞানীদের ভিন্নমত আছে, বহু জার্নালেই এর উল্লেখ আছে, যেমন –
Stars in other universes: stellar structure with different fundamental constants, F.C. Adams, Journal of Cosmology and Astroparticle Physics, 2008
The Cold Big-Bang Cosmology as a Counter-example to Several Anthropic Arguments, Anthony Aguirre, Journal of Physical Rev, 2001
ইত্যাদি।
আর মাল্টিভার্সের উপর পেপারের সংখ্যা অসংখ্য (যেটা দিয়ে ফাইন টিউনিং কে সহজেই ব্যখ্যা করা যায়), দিতে থাকলে জায়গায় কুলাবে না।
নিউজার্সিতে লটারিতে বিজয়ী মহিলাও ভাবতে পারে লটারিতে বিজয় তার ‘গন্তব্য’ বা ‘পরিনতি’, একই কথা বলতে পারে দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া কোন সৌভাগ্যবান ব্যক্তিও। কিন্তু সবগুলোই মোটা দাগে নমুনাক্ষেত্র থেকে উঠে আসা সম্ভ্যাব্য ফলাফলের প্রকাশ।
সে দিক থেকে ঠিক আছে। আকর্ষণ আছে বলেই আলোচনা সমালোচনা সবই হবে, বিশেষত যে জায়গাগুলো বস্তুনিষ্ঠ না হয়ে ব্যক্তিনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়ায়, সেখানে তো বিতর্ক হবে আরো বেশি। 🙂
@অভিজিৎ,
সেটাতো সব কিছুর বেলায়ই প্রযোজ্য, শুন্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি, বিগ ব্যাং, পদার্থবিজ্ঞানের প্রমিত মডেল, ইত্যাদি। প্রাণ সৃষ্টির ক্ষেত্রে ছয় ধ্রুবকের বিশেষত্ব শূন্য থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি, বিগ ব্যাংএর চেয়ে কম বৈজ্ঞানিক ধারণা নয়। আমি যেটা বলছি যেটা সব পদার্থবিজ্ঞানীরাই বলেন (স্যর মার্টিন রীসের “Just Six Numbers” মূল কথা সেটাই) যে এই ছয়টি ধ্রুবকের মানের সামান্য হেরফের হলেই প্রাণ, ছায়াপথ কিছুই সৃষ্টি হত না। আজ পর্যন্ত কেউ বলেন নি যে, না সামান্য হেরফের হলেও প্রাণ সৃষ্টি হতে পারত। বল্লে সেটার রেফারেন্স আমি খুব উৎসাহের সঙ্গে চাইব। মূল বক্তব্য থেকে অনেক দূরে চলে গেছি। এখন আলোচনাকে আমি এই ভাবেই সীমিত রাখব যেঃ
১। ছয়টি ধ্রুবকের মানের সামান্য হেরফের হলেই প্রাণ সৃষ্টি হত না, যেটা সব পদার্থবিজ্ঞানীই স্বীকার করেন বলে আমি জানি, পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম প্রয়োগ করেই এই সিদ্ধান্তে তাঁরা উপনীত হয়েছেন।
২। ছয়টি ধ্রুবকের মানের সামান্য হেরফের হলেও প্রাণ সৃষ্টি হতে পারে/পারত যদি কেউ দাবী করেন তাহলে তার রেফারেন্স চাই।
৩। ছয়টি ধ্রুবকের যে মানের জন্য প্রাণ সৃষ্টি হতে পারে, আমাদের মহাবিশ্বে যে সেই মানটাই আমরা দেখতে পাই সেটা একটা ফ্যাক্ট। এটা ফ্যাক্ট নয় বল্লে তার রেফারেন্স চাই। এটাতে বিস্মিত না হবার কোন কারণ এখনো পাওয়া যায়নি (ব্যক্তিগত কারণ ছাড়া), কারণ পদার্থবিজ্ঞানের কোন বর্তমান তত্ত্বই এদের পরযবেক্ষিত মান সুনিশ্চিতভাবে বেঁধে দিতে পারে না। মাল্টিভার্স কোন অবিতর্কিত প্রমাণিত তত্ত্ব নয় যে সেটাকেই এই “ফাইন টিউনিং” (বা ছয়টি ধ্রুবকের মানের সামান্য হেরফের হলেই প্রাণ সৃষ্টি হত না এটাকে যেভাবেই বলা হোক না কেন) এর চূড়ান্ত বা সর্বোত্তম ব্যাখ্যা বলে ধরে নিতে হবে। সম্ভাব্য ব্যাখ্যা হতে পারে।
আমি উপরের ১-৩ এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাই। ১-৩ থেকে অসম্পর্কিত অন্য কোন প্রসঙ্গে আলাপে ইন্টেরস্টেড না এই থ্রেডে।
@অপার্থিব,
১) এখানে প্রমাণ করার তো বিশেষ কিছু নেই। যারা ফাইনটিউনিং এর দাবীদার, যারা মনে করেন ছয়টা প্যারামিটার একচুল এদিক ওদিক হলেই প্রাণের বিকাশ ঘটতো না, তারা কেবল এই একটা মহাবিশ্বই দেখেছেন, থেকেছেন এমন একটা গ্রহে যেখানে প্রাণের বিকাশ হয়েছে। এটা ‘বায়াসড’ স্যাম্পল। একাধিক স্যাম্পল নিয়ে কাজ না করে সম্ভাবনার নিরিখে “আর কোন ভাবে প্রাণের বিকাশ ঘটতো না’ বলে দিলে সেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে এমন কোন কথা নেই। সম্ভাবনার গণিতটাই যদি মুখ্য হয়, তাহলে মাল্টিভার্সের গণিত কি দোষ করল? অন্তত: তিনটি ক্ষেত্র – (স্ট্রিং তত্ত্ব, ইনফ্লেশন এবং ভ্যাকুয়াম এনার্জির নিম্নমান) মাল্টিভার্সের অস্তিত্বের দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করছে। এমনকি কিছু পরীক্ষালব্ধ প্রমাণও সম্প্রতি পাওয়া গেছে (Feeny et al 2010)। কাজেই সূক্ষ্ম সমন্বয় নিয়ে বিস্মিত হতে চাইলে হওয়া যায়, কিন্তু বিজ্ঞানীদের হাতে এর চেয়ে বলিষ্ঠ যুক্তি আছে।
২) তর্কের খাতিরে যদি মাল্টিভার্স বাদও দেই, ছয়টা প্যারামিটার ‘সামান্য হেরফের’ হলে প্রাণের সৃষ্টি হত না, সেই সামান্য হের ফের কতটুকু? সেই ‘হেরফের’ ব্যাপারটা যতটা ‘রিজিড’ (১০^৪০ ভাগের ১ ভাগ) ততটা নয় মোটেই। বেশ কিছু গবেষণাতেই দেখা গেছে, সেই রেঞ্জটা আসলে যথেষ্টই বড়; সত্যিকার ফাইন টিউনিং নয়। যেমন, ফ্রেড সি এডামের পেপারটার রেফারেন্স তো উপরেই দিয়েছিলাম –
Stars in other universes: stellar structure with different fundamental constants, F.C. Adams, Journal of Cosmology and Astroparticle Physics, 2008
উনি আন-কনভেনশনাল প্যারামিটার নিয়ে কাজ করে ‘জীবনোপযোগী মহাবিশ্ব’ সিমুলেশন করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তার পেপারে তিনি লিখেওছিলেন –
সনাতন ফাইনটিউনিং এবং এন্থ্রোপিক আর্গুমেন্টকে চ্যালেঞ্জ করা এ ধরণের অনেক পেপারই সাম্প্রতিক সময়ে জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, যেমন –
* Stars in other universes: stellar structure with different fundamental constants, F.C. Adams, Journal of Cosmology and Astroparticle Physics, 2008
* The Cold Big-Bang Cosmology as a Counter-example to Several Anthropic Arguments, Anthony Aguirre, Journal of Physical Rev, 2001
* A universe without weak interactions, Roni Harnik, Graham D. Kribs, Gilad Perez, Physical Rev,2006
* Jaffe, Robert L., Alejandro Jenkins, and Itamar Kimchi. “Quark masses: An environmental impact statement.” Physical Review 2009i
ইত্যাদি
৩) মার্টিন রীসের ছয়টা প্যারামিটারের রেঞ্জ যেভাবে বের করা হয়েছে সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বিভিন্ন গবেষকের পরবর্তী গবেষণায়। যেমন ‘নিউক্লিয়ার এফিশিয়েন্সি’ গণনায় তিনি কেবল এপসায়লন পরিবর্তন করে সিদ্ধান্তে আসেন এর মান 0.0006 থেকে 0.008 এর মধ্যে থাকতে হবে। কিন্তু পরবর্তী গবেষকেরা দেখিয়েছেন মহাবিশ্বের চলকগুলো একা কাজ করে না, এরা একে অপরের সাথে যুক্ত। এপসায়লনের পাশাপাশি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক স্ট্রেন্থ চলক হিসেবে নিয়ে সিমুলেশন করলে রেঞ্জ অনেক বেড়ে যায় বলে দেখা গেছে। এ ধরনের ব্যাপার আরো অন্য কয়েকটি প্যারামিটারের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
৪) কিছু কিছু ব্যাপারে ‘বিস্মিত’ না হয়ে এর পেছনের কারণটা খোঁজা জরুরী। যেমন, ইলেকট্রন এবং প্রোটনের অনুপাত প্রায় সমান কেন হল – এটার সহজ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে। চার্জ কঞ্জারভেশনের কারণেই এটা হতে পারে। তাই ‘কিভাবে হল’ না খুঁজে ‘কেন হল’ নিয়ে পড়ে থাকলে প্রশ্নটা ভুল দিকে চলে যেতে পারে, যেমন হয়েছিল কেপলারের ক্ষেত্রে। সূর্য থেকে পৃথিবী কেন ৯৩ মিলিয়ন দূরত্বে থাকবে – সেটার ‘প্রাকৃতিক সূত্র’ খুঁজতে চেষ্টা করেছিলেন তিনি। বলা বাহুল্য পাননি। কেননা এ ধরণের কোন প্রাকৃতিক সূত্র নেই। তার প্রশ্নটাই ভুল দিকে চলে গেছে। আজ আমরা জানি সৌরজগতের গ্রহগুলোর মধ্যে পৃথিবীর অবস্থান তুলনামূলকভাবে এমন একটা জায়গায় ছিল যা প্রাণের উদ্ভবের জন্য বৈরি ছিল না। সেজন্যই প্রাণ বিকশিত হতে পেরেছে, মহাবিশ্বে পৃথিবীতে প্রাণ পাঠানোর জন্য কোন প্রাকৃতিক সূত্র থাকার কারণে নয়।
৫) কিছু কিছু ব্যাপার প্রথমে সূক্ষ্মভাবে সমন্বিত মনে হলেও পরে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। যেমন ফ্রেড্রিক হয়েলের “এন্থ্রোপিক রিজোনিং”। তিনি ভেবেছিলেন হিলিয়াম থেকে কার্বন তৈরির ফিউশনে কার্বন নিউক্লিয়াসের শক্তিস্তর ৭.৭ MeV থাকতে হবে। তিনি ভেবেছিলেন এটা ফাইন টিউন্ড। কিন্তু পরে নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী ‘Living in the Multiverse’ নামের পেপারে এর পেছনে সত্যই কোন ফাইনটিউনিং আছে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। শুধু তাই নয়, তিনি এর সঠিক রেঞ্জ পরিমাপ করে এর একটা বৈজ্ঞানিক ব্যাখাও প্রদান করেন। দ্রঃ – Living in the Multiverse, published in Universe or Multiverse?, ed. B. Carr (Universe or Multiverse? Cambridge University Press).
পদার্থবিদ মারিও লিভো তার একটি পেপারে হয়েলের তথাকথিত “এন্থ্রোপিক রিজোনিং” এর ভ্রান্তি দেখিয়েছেন –
Mario Livio, et al., “The Anthropic Significance of the Existence of an Excited State of C12,” Nature 340 (1989): 281–86.
প্রসঙ্গত, জীববিজ্ঞানের জগতেও একটা সময় অনেক কিছু এরকম ফাইন টিউন্ড মনে করা হত, কিন্তু এখন দেখা গেছে মোটেই তা নয় (সংশপ্তকের মন্তব্য দ্রঃ)। কাজেই ফাইন টিউনকে এত স্বর্গীয় না ভাবলেও চলবে।
৬) ফাইনটিউনের ব্যাপারটা সর্বজন গ্রাহ্য এবং সর্বজন স্বীকৃতও নয়, একেকজন একেকভাবে একেক বিষয়কে ফাইনটিউনড মনে করেন, করতে পারেন। যেমন, মাইকেল আইকেদা এবং বিল জেফ্রি তাদের একটি পেপারে দেখিয়েছেন – এমনকি সূক্ষ্মভাবে দেখলে দেখা যাবে, জীববিজ্ঞানের ‘ফাইন টিউনার’রা যে ভাবে যুক্তি সাজিয়ে থাকেন, জ্যোতির্বিজ্ঞানের ফাইন টিউনাররা দেন ঠিক উল্টো যুক্তি। একই সাথে দুই বিপরীত মেরুর কথা তো সত্য হতে পারে না। এবং ফাইন টিউনিং কিংবা এন্থ্রোপিক প্রিন্সিপাল যাই বলি সেগুলো কোন সুপারন্যাচারালিজমকে সমর্থন করে না –
Michael Ikeda and William H. Jefferys, “The Anthropic Principle Does Not Support Supernaturalism,” in The Improbability of God, Michael Martin and Ricki Monnier, Editors, pp. 150-166. Amherst, N.Y.: Prometheus Press।
৭) যে ভাবে প্রোবাবিলিটি গণনা করে ফাইন টিউন বলা হয়েছে সেটাও নানা গবেষকদের কাছ থেকে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। যেমন, এলিয়ট সবার তার পেপারে ফাইন্টিউনিং আর্গুমেন্টের সম্ভাবনা গণনার কৌশলকে খণ্ডন করেছেন , এবং দেখিয়েছেন তাদের ভুল গুলো –
Elliott Sober, 2004. The Design Argument, in The Blackwell Guide to the Philosophy of Religion, W. E. Mann, Editor. Blackwell Publishing
আরো অনেক কিছু বলা যেত, কিন্তু আপাততঃ এখানেই রাখছি। পরে সময় আর সুযোগমত আবার এ নিয়ে আলোচনা করা যাবে।
হটাৎ ব্লগে এসে দেখি ‘ফাইন টিউনিং’ নিয়ে ফাটাফাটি চলছে। আমার প্রশ্নটা অন্য জায়গায়। অতিপারমানবিক পর্যায়ে যা কিছু ঘটে তা আনবিক পর্যায়কে প্রভাবিত করতে বাধ্য। আমাদের জীবজগতকে তো কোনভাবেই ‘ফাইন টিউনড’ বলা যাবে না- অন্তত আনবিক পর্যায়ে তো নয়ই। যে কারনে আমরা জীবের আনবিক পর্যায়ে প্রতিনিয়ত পরিব্যপ্তি সহ নানা রকমের অস্হিতিশীলতা পর্যবেক্ষন করি। সোজা আমাদের জীবজগৎ বিবিধ ত্রুটিতে ভরপুর যা আমরা অতি সম্প্রতি জানতে পারছি। এক সময় জীব জগতকেও ‘ফাইন টিউনড’ ধরা হত। কিন্তু এখন হাতে নাতে দেখানো যায় যে ব্যপারটা আসলে সেরকম নয়। আমাদের এই মহাবিশ্ব কি আসলেই ‘ফাইন টিউন্ড’ না এখানেও অসংখ্য ‘ভেস্টিজ’ আছে যা আমাদের প্রচলিত জ্ঞান এখনও সনাক্ত করতে পারে নি? অন্তত জীব জগতের ক্ষেত্রে তো আমরা এখন দেখছি যে জীবের আানবিক পর্যায় ‘ফাইন টিউনড’ নয়। তাহলে অতিপারমানবিক পর্যায় ( জীবের ক্ষেত্রে) এক্ষেত্রে কিভাবে ‘ফাইন টিউনড’ হয় ?
@সংশপ্তক, এইখানে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে, ফাইন টিউন বলতে এক্সাক্টলি ঠিক কি বোঝানো হচ্ছে সেইটার রিগরাস সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব না, দার্শনিক সংজ্ঞা হয়তো দেওয়া হচ্ছে যেইটা কিনা ইন্ট্রিঞ্জিকলি ধোঁয়াশাপুর্ণ। বা অপর কথায় বলতে গেলে এইটার সংজ্ঞার ব্যাপারে সুইজন ব্যক্তির একমত হওয়ার কোন উপায় নাই। তথাপিও বিভিন্ন জনের দেওয়া বিভিন্ন সংজ্ঞা দেখে আমার মনে হয় আল্টিমেটলি এটা ব্যেল ডাউন হয় সেই চিরাচরিত ‘কেনো’ প্রশ্নে।
এই প্রসঙ্গে রিচার্ড ফাইনম্যানের একটা বক্তব্য আছে অনেকটা এইরকম- একদা তিনি তার বাবাকে ইনার্শিয়া সংক্রান্ত একটা প্রশ্ন করেন যে কেনো গাড়ি এক্সিলারেট করলে আমাদের দেহ সিটের সাথে সেঁটে যায়? তার বাবা বলেছিলেন- এই প্রশ্নের উত্তর কেউ জানে না, সবাই শুধু জানে ইনার্শিয়া বলে একটা ব্যাপার আছে যে একটি বস্তুর রয়েছে নিজের মোমেন্টাম পরিবর্তিত রাখার ইচ্ছা। কিন্তু কেনো এইটা আছে, সেটা কেউ জানে না। এইটা বাস্তবতার একটা নিয়ম।’
অনেকে দেখছি বলছে আচ্ছা প্লাঙ্ক শ্রুবকের মান এতো না হয়ে এতো হলে কি হতো। ওয়েল এইক্ষেত্রে আমার টেইক হচ্ছে- একটি প্যারাডক্স উত্থাপন করতে হলে অবশ্যই তোমাকে মেকানিজম বিবৃত করতে হবে। বিজ্ঞানের সকল প্যারাডক্সই যেমন- শ্রডিঙ্গারস ক্যাট, ইপিআর প্যারাডক্স বা ম্যাক্সওয়েলস ডেইমন- ইত্যাদি হয়তো বলেছে আচ্ছা এই জিনিষটা ঘটলে দেখো আমরা একটা এনোমালাস ফল পাচ্ছি, মজার ব্যাপার হচ্ছে প্রত্যেকেই এরা বিবৃত করেছে কিভাবে তেমনটি ঘটা সম্ভব, যেমনটি ঘটলে কিনা এনোমালাস ফল পাওয়া যায়। ফলশ্রুতিতে কেউ যদি বলে প্লাঙ্ক ধ্রুবকের মান এতো না হয়ে এতো হলে কি হতো, তার কাছে আমি সবার এগেই জানতে চাবো মেকানিজম, যে- কিভাবে প্লাঙ্ক ধ্রুবকের মানের এমনটা না হয়ে তেমনটা হওয়া সম্ভব ছিলো। প্রশ্নটা অনেকটা এইরকম, দুইএ দুইএ চার না হয়ে পাঁচ হলে কি হতো? প্রশ্নটা সংজ্ঞাগতভাবেই আনআন্সারেবল কেননা এমন একটি জগত যেখানে কিনা ২+২=৫ হয়, সেই জগতের অন্যান্য আরও গানিতিক নিয়ম এবং যুক্তিগুলো জানার কোন উপায় আমাদের নেই।
হাওএভার এইটা ইটসেলফই একটা প্যারাডক্স যে- মানুষের রয়েছে অনয়ান্সারেবল প্রশ্নগুলো নিয়ে বেশী ঘাম ঝড়ানোর প্রবনতা, আন্সারেবল প্রশ্নগুলোর তুলনায়। আমার ধারণা এইটার কারণ হচ্ছে মানুষ ফ্যান্টাসী প্রছন্দ করে এবং আন্সারেবল প্রশ্নগুলোতে ফ্যান্টাসাইজ করার স্কোপ সীমিত। যেই ব্যক্তি প্লাঙ্ক ধ্রুবকের মান অন্যরকম হলে বাস্তবতা কেমন হতো এইটা ভাবতে ভাবতে একুশ পিঁপে নস্যি ফুরিয়ে ফেলছে তাকে যদি আপনি বলেন- ওয়েল ইউ সি দা হাঞ্চ ইজ হাইড্রোজেনের এটোমিক স্পেক্ট্রার বিভিন্ন পিকগুলো কোরেস্পন্ড করে এনার্জি স্টেইটের, ফলশ্রুতিএ এমন একটা স্টেইটফাঙ্কশন আমরা দাড়া করাতে পারি যার উপর হ্যামিল্টোনিয়ান অপারেট করা হলে কিনা আইগেনভ্যালু হিসেবে বেরিয়ে আসবে এনার্জি, চলো আমরা সচেষ্ট হই সেই ফাঙ্কশনটি গননা করতে- আপনি কিন্তু তার আগ্রহ দেখবেন খুবই কম। কারণ সে জানে এইখানে তার যা খুশী বলার, যা খুশী ভাবার স্বাধীনতা নাই; তার স্টেইটফাঙ্কশন যদি ব্যাখ্যা করতে অসমর্থ হয় বালমার সিরিজ তাহলে তার স্থান হবে ডাস্টবিনে। নিজের আইডিয়াকে মানুষ ডাস্টবিনে যেতে দেখতে পছন্দ করে না। আনয়ান্সারেবল প্রশ্নগুলোর উত্তর করতে সচেষ্ট হাইপথেসিস কখনই ডাস্টবিনে যায় না। এটাই বোধহয় কারণ মানুষের আনয়ান্সারেবল প্রশ্ন নিয়ে বেশী মাথা ঘামানোর।।
বরাবরের মতন দুর্দান্ত রিভিউ এবং সামথিং ফ্রম নাথিং বিষয়ে প্রগাঢ় উপস্থাপনা!
লরেন্স ক্রাউসের লেখার চাইতে তাঁর অনস্টেজ পার্ফরম্যান্স অধিকতর শ্রেয় – চমৎকার বাচনভংগী, সেন্স অব হিউমার এবং সর্বোপরী জ্ঞানের গভীরতা তাঁর প্রতিটি ভিডিও এ্যাপিয়ারেন্সকে অপ্রতিরোধ্য করে তোলে।
আগ্রহীরা বইটি পড়ার আগে রিচার্ড ডকিন্স ফাউন্ডেশন আয়োজিত ক্রাউসের ঘন্টাব্যাপী লেকচারটি দেখে নিতে পারেন – মোটামুটি পুরো বইটি ওই লেকচারে ঘনীভূত করা হয়েছে। এছাড়া ডকিন্স ও ক্রাউসের একটি চমৎকার ডায়ালগও সেশনও আছে (সম্ভবতঃ এ্যারীযোনা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত) একই বিষয়ে। ইউটিউব ব্লকড বিধায় কোনোটারই লিংক শেয়ার করা সম্ভবপর হচ্ছে না। 🙁
@ইনভারব্র্যাস,
আপনার মন্তব্যের উত্তর দিয়ে অনেক দেরী হয়ে গেল। অনেক ধন্যবাদ।
হ্যা রিচার্ড ডকিন্স ফাউন্ডেশন আয়োজিত ক্রাউসের ঘন্টাব্যাপী লেকচারটি (ইউনিভার্স ফ্রম নাথিং) (২০০৯)র উপর ভিত্তি করেই কিন্তু বইটি লেখা। অবশ্য যে লেকচার দেড় মিলিয়ন লোক ইতোমধ্যেই দেখেছে সেটা নিয়ে বই হবে না তো কোনটা নিয়ে হবে বলুন!
আর হ্যা অ্যারিজোনা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ডকিন্স- ক্রাউস কথোপকথনটাও (সামথিং ফ্রম নাথিং) হৃদয়গ্রাহী।
আমার অবশ্য ক্রাউসের লেখার চেয়ে লেকচারই খুব ভাল লাগে, আগেও বলেছি।
আপনার নতুন লেখার প্রতাশায়…
লরেন্স ক্রাউস বলেছেন,
আবার আপনি অন্যত্র লিখেছেন,
উপরের উদ্ধৃতি দুটো পড়ে ‘শূন্যতা’ শব্দ নিয়েই তো ধন্দে পড়ে গেলাম, অভিজিৎদা। আসলে শূন্যতা বলতে কি বোঝায়? শূন্যতা মানে কি? শূন্যতার অস্থিতিশীলতা কি জিনিস? কেন সে অস্থিতিশীল?
আপনার লেখার শিরোনাম দেখেই টানটান উত্তেজনা অনুভব করছিলাম, যেন বা কোন রহস্যপুরিরতে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। কিন্তু পুরোটা পড়ার পর নিজেকে সেই রহস্যপুরির বদ্ধ কপাটের সামনেই আবিষ্কার করলাম। বিজ্ঞানের ছাত্র না হবার যে কি যন্ত্রণা! এমন সব প্রশ্ন তাকে করতে হয়, যা হয়ত বিজ্ঞানের ছাত্রদের কাছে নিতান্তই হাস্যকর মনে হবে।
@কাজি মামুন,
প্রথম দুইটা মন্তব্য কন্ট্রাডিক্ট করে না। প্রথম মন্তব্যে যেটা বলা হচ্ছে, সেটা স্ফীতি তত্ত্ব থেকেই পাওয়া উপসংহার। ইনফ্লেশন বা স্ফীতিতত্ত্বের আবির্ভাবের পর আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান খুব পরিষ্কারভাবেই আমাদের দেখিয়েছে ‘ফ্ল্যাট'(কিংবা ক্লোজড) মহাবিশ্বে মোট শক্তির পরিমাণ শূন্য; মহাবিশ্বের মোট গতিশক্তি এবং মাধ্যাকর্ষণের ঋণাত্মক শক্তি পরস্পরকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এর মানে হচ্ছে মহাবিশ্ব ‘সৃষ্টি’র জন্য বাইরে থেকে আলাদা কোনো শক্তি আমদানি করার প্রয়োজন হয় নি। সহজ কথায়, ইনফ্লেশন ঘটাতে যদি শক্তির নীট ব্যয় যদি শূন্য হয়, তবে বাইরে থেকে কোনো শক্তি আমদানি করার প্রয়োজন পড়ে না। সেজন্যই বলা হয় মহাবিশ্ব শূন্য থেকে উদ্ভুত হয়েছে। স্টিফেন হকিং সেটা ব্যাখ্যা করেছেন ‘ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ গ্রন্থে এভাবে (A Brief History of Time: From the Big Bang to Black Holes, New York: Bantam, 1988, পৃষ্ঠা ১৩৬) –
আর ২য় মন্তব্যটার ব্যাখ্যা হচ্ছে ম্যাটার আর এন্টিম্যাটার সমপরমাণে উদ্ভুত হয়নি। আমরা জানি ম্যাটার আর এন্টি ম্যাটার এক সাথে হলে পরষ্পরকে ধ্বংস করে দেয়। তাই হত মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে যদি একদম ঠিক ঠাক একই রকম পরিমাণ ম্যাটার আর এন্টিম্যাটার তৈরি হত। তা হয়নি, বরং খুব কম পার্থক্যি তৈরি করতে পেরেছিল মহাবিশ্ব উদ্ভবের প্রেক্ষাপট।
হাঃ হাঃ, এটা লেখকের অক্ষমতার জন্যও হতে পারে। 🙂
একটু অন্য দিকে যাই
“মহাবিশ্বের উৎপত্তির ঊষালগ্নে পদার্থ এবং প্রতিপদার্থ যখন উদ্ভূত হয়েছিল এক রহস্যময় কারণে প্রকৃতি প্রতিপদার্থের তুলনায় পদার্থের প্রতি খুব সামান্য হলেও পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছিল। এই পক্ষপাতিত্বের ব্যাপারটা যদি না ঘটতো, তাহলে আজ আমরা এখানে বসে বসে নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে এই আঁতেলেকচুয়াল প্রশ্ন করার সুযোগ পেতাম না।”
মনে প্রশ্ন জাগে, কেনইবা এই পক্ষ্পাতিত্ব ? আবার এই প্রকৃতির অস্তিত্ব্টাই কি? সামথিং অর নাথিং ?
@সঞ্চয় রহমান,
এটাই কিন্তু ফ্রাঙ্ক উইলজেক ব্যাখ্যা করেছিলেন সায়েন্টিফিক আমেরিকানে ১৯৮০ সালে প্রকাশিত প্রবন্ধটিতে।
Answer to the Ultimate Question of Life, the Universe, and Everything
@রায়হান আবীর,
হাঃ হাঃ… উত্তর তো দেখি – ৪২!
@অভিজিৎ, 42=4+2=6= “C”…..;) হা হা হা হা!
রূপমের উত্তরে দিয়েছি, এইখানেও দেই। দার্শনিক প্যাচ একটা, সামথিং আর নাথিং নিয়া। জিম জোল্টের ‘হোয়াই ডাস দ্য ওয়ার্ড এক্সিস্ট’ বইটার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি আমি 🙂
মনে করেন দেয়ার ওয়্যার ‘নাথিং’। নাথিং মানে কিছু না, এমনকি কোন নিয়ম নীতি কিছুই নাই। কারন, নিয়ম থাকা মানেই কিছু একটা থাকা।
কোন নিয়ম না থাকার মানে, যে কোন কিছুই সেখানে সম্ভব (permitted)
যদি সবকিছুই পারমিটেড হয়, তাইলে নাথিং উইল বি ফরবিডেন!
তাই, ‘নাথিং’ বইলা কিছু থাকলে ‘নাথিং উইল বি ফরবিডেন’।
তাই নাথিং ব্যাপারটা তাইলে ‘সেলফ ফরবিডিং’।
দেয়ারফর, দেয়ার মাস্ট বি সামথিং।
@অভিজিৎ,
এইভাবে মুখের কথায় কিন্তু ঈশ্বরের অস্তিত্বও প্রমাণ করা যায়। 🙂
@রূপম (ধ্রুব),
হেঃ হেঃ …ভাল তো! শারমারের টেস্টেবল হাইপোথিসিসের তালিকায় আছে যখন… 🙂
@অভিজিৎ,
উঁহু। শারমারের লেখাটার সতর্ক পাঠে পাওয়া যায়
সবগুলোই testable hypotheses তা তো নয়। এটা কিন্তু উপরেই একবার উদ্ধৃত করেছি।
সতর্কতা নিশ্চয়ই “ধার্মিক” বটিকার অংশ নয়। তবে আশা করাটা অসমীচিন হলেও হতে পারে। 🙂
শূণ্যতার ধারনা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় আমাদের মহাবিশ্বে আসলে কোন শূণ্যস্থান নেই। মহাশূণ্য বলতে যা দেখি তা আসলে বিকিরন ও কসমিক কণিকায় ভর্তি। সেকারনেই আমাদের মহাবিশ্বের ভিতরে নতুন কোন শূণ্য বিন্দু থেকে শিশু মহাবিশ্ব সৃষ্টি হচ্ছে না। শূণ্যতার এ ধারনা এ ইঙ্গিত দেয় যে আমাদের মহাবিশ্বই একমাত্র মহাবিশ্ব নয়। অনাদি কাল থেকে শূণ্য বিন্দু থেকে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়ে চলেছে কোয়ান্টাম লেভেলের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া এবং কণিকা ও প্রতি কনিকার প্রতিসাম্যের মধ্যে সামান্য পার্থক্য সৃষ্টি হওয়ার কারনে। কিন্তু এটা আর একটা নুতন ধারনা বা সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। ধরা যাক, আমাদের মহাবিশ্ব যে কণিকা(পরা) দ্বারা গঠিত , আমাদের পার্শ্ববর্তী মহাবিশ্ব ঠিক তার বিপরীত কণিকা(অপরা) দ্বারা গঠিত হলো। সেক্ষেত্রে এ দুটি মহাবিশ্ব কাছাকাছি হলে ধ্বংস হয়ে যাবে না ? অথবা ঠিক একারনে বিভিন্ন মহাবিশ্ব এভাবে পরস্পর সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে না ? অবশ্য ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর যে শূণ্যস্থান সৃষ্টি হবে সেখান থেকে নতুন মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতে পারে সেটার ইঙ্গিতও দেয় এ ধারনা।
অপার্থিবের চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। প্রসঙ্গত বলি ডেভিড অল্পার্টের রিভিউটা পড়েছি, সেখানে ক্রাউসের প্রতি বিরাগটা প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছে, আবার এই ইন্টারভিউতে দেখলাম ক্রাউস অল্পার্টের নাম উল্লেখ না করে ‘মরোনিক ফিলোসফার’ হিসেবে অভিহিত করে লিখেছেন –
আরো দেখলাম সেটঙ্গরের কিছুটা সমর্থন পেয়েছেন ক্রাউস এই লেখায় – Nuthin’ to Explain
এতসব কাণ্ডকারখানা দেখে জিম জল্টের বইয়ের মজার অংশটা মনে পড়ে গেল।
“Professor Morgenbesser, why is there something rather than nothing?” a student asked him one day. To which Morgenbesser replied, “Oh, even if there was nothing, you still wouldn’t be satisfied.” 🙂
ডঃ তানভীর হানিফ সঠিক বিশ্লেষন করেছেন তাঁর প্রথম দুটো মন্তব্যে। দার্শনিকেরা বা আমরা অনেক সাধারণ মানুষ পরম শূন্য বলতে যা বুঝি আর কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম বা ভয়েড এক জিনিষ নয়। ক্রাউসের বইয়ের শিরোনাম বিভ্রান্তিকর। ক্রাউস যা বলতে চেয়েছেন এবং তা পদারত্থবিজ্ঞানীদের কাছে কয়েক দশক ধরেই জানা সেটা হল কোন্টাম ভয়েডের পরিবর্তে কণিকাময় মহাবিশ্ব কেন অস্তিমান সেই প্রশ্নের উত্তর। সেই উত্তর কোয়ান্টাম ক্ষেত্র দিয়েই দেয়া হয়। নতুন কিছু নয় ২০১২ সালের জন্য। এই বই ধার্মিকদের (বিশেষ করে আব্রাহামিক ধর্মের) দাবীকে তাক করে লেখা হয়েছে কোন সন্দেহ নেই। সাধারণ আস্তিকদের (বা নাস্তিকদেরো) পরম শূন্য আর কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়ামের পার্থক্য বোঝার কথা নয় । পরম শূন্য (তাপগতিবিদ্যার অ্যাবসলিউট জিরো নয়) দার্শনিকেরা বা সাধারণ মানুষ বলতে মহাবিশ্বের অনস্তিত্বের কথা বোঝায়। মহাবিশ্বের অনস্তিত্ব সব কিছুরই অনস্তিত্ব বোঝায়, কোয়ান্টাম তত্ব বা কোয়ান্টাম ক্ষেত্ররও অনস্তিত্ব। কোয়ান্টাম ক্ষেত্র থাকার মানেই মহাবিশ্ব আছে। আর কোয়ন্টাম ক্ষেত্রই হচ্ছে কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব বা কোয়ান্টাম বলবিদ্যার ভিত্তি যার উপর সব পদার্থবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দাঁড়িয়ে আছে। কাজেই যদি প্রশ্ন করা হয় কোয়ান্টাম ক্ষেত্র (কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম যার একটি বিশেষ দশা বা স্টেট) কিভাবে উদ্ভূত হল তার কোন উত্তর জানা নেই বা কোয়ান্টাম তত্ব দ্বারা তা দেয়া সম্ভব নয় (অর্থাৎ তা বর্তমান পদার্থবিজ্ঞান দ্বারা সম্ভব নয়)। শুধু তাই নয় বর্তমান পদার্থবিজ্ঞান হল কোয়ান্টাম ক্ষেত্রের (যা আসলে গণিতের একটা হিলবার্ট স্পেস) এক বিশেষ মাত্রা আর হ্যামিল্টনিয়ানের সমন্বয়ে নির্মিত। প্রশ্ন উঠতে পারে কেন এই বিশেষ মাত্রা বা বিশেষ হ্যামিল্টনিয়ান ? অন্য কোন গুনাবলী সম্পন্ন কোয়ান্টাম ক্ষেত্র বা হ্যামিল্টনিয়ান নয় কেন? এর উত্তরও কোয়ান্টাম তত্ব দিতে পারে না। এগুলি ব্রুট ফ্যক্ট হিসেবেই মেনে নিতে হয়। কাজেই দার্শনিকদের অন্তিম প্রশ্ন কোন কিছু নার (কিছুই নার মানে কোয়ান্টাম ক্ষেত্র নেই, পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়ম নেই) পরিবর্তে কেন কিছু আছে তা অমীমাংশিতই থাকছে এবং থাকবেই কারণ মানুষের বুদ্ধির একটা সীমাবদ্ধতা আছে এবং মহাবিশ্বের সৃষ্টি এই সীমার বাইরে। কোয়ান্টাম ক্ষেত্রের অস্তিত্বের কারণ অধিবিদ্যার মধ্যে পড়ে (অর্থাৎ অজান কে নিয়ে জল্পনা কল্পনা)। পদার্থবিজ্ঞানী (কোয়ান্টাম তত্ব পিএইচডি করা) ও বিজ্ঞানের দার্শনিক কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক ডেভিড অল্পার্ট ক্রাউসের বইয়ের বিরুদ্ধে এই সব যুক্তিই দিয়েছেন ও ক্রাউসের দাবীর ভ্রান্তিটা ( ক্রাউসের বৈজ্ঞানিক তথ্যের নয়) ধরিয়ে দিয়েছেন তাঁর নিঊ ইয়র্ক টাইমসের রিভিউতে। বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী ও মহাবিশ্ববিৎ শন ক্যারলও তারঁ ব্লগে এই বিভ্রান্তি নিয়ে কিছু লিখেছেন। সাধারণ পাঠকদের ডেভিড অল্পার্ট ও শন ক্যারলের লেখাগুলি পড়তে অনুরোধ করছি বিষয়টির সূক্ষ্ণ দিকটা বিচার করার জন্য। যারা কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্বের মুল ধারণার সাথে পরিচিত না তাঁদের একটু সতর্কতার সাথে এই বইয়ের শিরোনাম বিচার করতে হবে।
শন ক্যারলের ব্লগঃ
http://blogs.discovermagazine.com/cosmicvariance/2012/04/28/a-universe-from-nothing/ (Sean Carrol)
ডেভিড অল্পার্টের রিভিঊঃ
http://www.nytimes.com/2012/03/25/books/review/a-universe-from-nothing-by-lawrence-m-krauss.html
এছাড়া মুক্তমনা গ্রুপের সুপরিচিত মাসিমো পিগ্লিউচি আর জেরি কয়েনের ব্লগও প্রণিধানযোগ্যঃ
http://rationallyspeaking.blogspot.com/2012/04/lawrence-krauss-another-physicist-with.html
(মাসিমো পিগ্লিউচি)
http://whyevolutionistrue.wordpress.com/2012/04/02/david-albert-pans-lawrence-krausss-new-book/
(জেরি কয়েন)
@অপার্থিব,
একটা জিনিস পরিষ্কার হবার প্রয়োজণ আছে। ক্রাউস যে শুণ্যতার কথা বলেছেন সেটি কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম
অথবা কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্বের ভ্যাকুয়াম নয়–কারণ যেকোন কোয়ান্টাম ক্ষেত্রকারক স্থান-কালের অপেক্ষক।
@তানভীর হানিফ,
ধন্যবাদ আরেকটু পরিস্কার করার জন্য। আসলে ক্রাউস দুটো ভ্যাকুয়ামের কথাই বলেছেন। প্রথম ভ্যাকুয়ামটি দার্শনিক ভ্যাকুয়ামের খুবই কাছাকাছি। সেটা হল স্থান-কালহীন শুন্যতা। কোয়ান্টাম মহাকর্ষ (যেটা অসম্পূর্ণ) এর সুত্র প্রয়োগ করলে স্থানহীনতা থেকে স্থানময় বিশ্ব সৃষ্টি হতে পাতে বলে মত দিয়েছেন তিনি। সাধারণ মহাকর্ষ স্থান-কাল গতিশীল এক অস্তিত্ব, তাই কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের দ্বারা স্থানহীনতা স্থানে রুপান্তরিত হতে পারে। তিনি আবার কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়ামএর কথাও বলেছেন যেখানে স্থানময় বিশ্বে কণিকাবিহীন ভ্যাকুয়াম থেকে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের দ্বারা কণিকাময় ভ্যাকুয়াম সৃষ্টি হতে পারে। এটাকেই মূলত তিনি কিছু না থেকে কিছু বুঝিয়েছেন কারণ এটা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। কোয়ান্টাম মহাকর্ষ যেহেতু অসম্পূর্ন সেহেতু স্থান-হীনতা থেকে স্থান সৃষ্টিটা অতটা সুপ্রতিষ্ঠিত ধারণা নয়, যদিও সেটা সম্ভব বলে বলা হচ্ছে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও কোয়ান্টাম বলবিদ্যার প্রয়োগ লাগছেই। কোয়ান্টাম বলবিদ্যাহীন শুন্যতা (সব কিছুর অনস্তিত্ব, প্রকৃতির নিয়ম অন্তর্ভুক্ত) থেকে বিধানময় বিশ্ব সৃষ্টি্র রহস্য তাই পদার্থবিজ্ঞানের বাইরে। মাল্টিভার্সের কথা বলা হয়, সেটি কোয়ান্টাম বলবিদ্যার অধিক্ষেত্রের মধেয়ি পড়ে।
@অপার্থিব,
আমার মনে হয় ক্রাউস মূলত: প্রথোমক্ত শুণ্যতার কথাই বলেছেন। কারণ তিনি বলেছেন “ইউনিভার্স
ফ্রম নাথিং”। কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়ামে কণিকা তৈরী হয় কথাটা আসলে খুব প্রিসাইস নয়। কোয়ান্টাম
শুণ্যতা শুণ্যই থাকে কিন্ত ফ্লাকচুয়েট করে।
ধ্যন্যবাদ,
অনেক মূল্যবান তথ্য জানানোর জন্য।
খুবই ক্ষীণ সম্ভাবনার কোন কিছুর অস্তিত্বকে ব্যাখ্যা করবার জন্য এ্যানথ্রপিক প্রিন্সিপাল দরকারী। আমাদের অস্তিত্ব বা জীবনের উৎপত্তির সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ–উদাহরণস্বরূপ বিলিয়ন বিলিয়নভাগের একভাগ। তাহলে এত ক্ষীণ সম্ভাবনার একটি বিষয়ের প্রতি আমরা প্রায় ১০০% নিশ্চিৎ কিভাবে? কেন সেটি সত্য বলে মেনে নিই? কারণ এর সত্যতার সাক্ষ্য দেবার জন্য আমরা অস্তিত্বশীল–আমরা দেখছি আমরা আছি–আর আমাদের মহাবিশ্বের পরিস্থিতি আমাদের এই প্রায় অসম্ভব অস্তিত্বকে সম্ভব করেছে–এর “প্রত্যেকটি” ধ্রুবকের মান কোটিভাগের একভাগ কম বা বেশী হলে আমরা কোন প্রশ্ন করবার জন্যই থাকতাম না। একটি মাত্র একক মহাবিশ্ব জীবনের জন্য ফাইন টিউনড হওয়াটা যতটা গ্রহণযোগ্য তার চাইতে বিলিয়ন বিলিয়ন মহাবিশ্বের মধ্যে দৈবক্রমে একটির ফাইনড টিউনড হওয়াটা স্বাভাবিক–ঠিক যেমন মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান প্রাণীর অস্তিত্ব স্ট্যাটিস্টিক্যালি হাইলি প্রোব্যাবল। আর সেই হঠাৎ মহাবিশ্বের ফাইন টিউনড হওয়ার ফলেই আমাদের অস্তিত্ব সম্ভব হয়েছে–আর আমরা দেখছি যে সেটি ফাইন টিউনড। বিষয়টা একটু মাইনড্-বগলিং। ধর্মবাদীদের ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণস্বরূপ ফাইন টিউনিংকে আর্গুমেন্ট হিসেবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে অস্ত্র
হিসেবে আসলে এই এ্যানথ্রপিক প্রিন্সিপাল মাঝে মাঝে ব্যবহার করা হয়–যেমনটি ওয়াইনবার্গ বলেছেন।
@তানভীর হানিফ,
আমি আপনেরে একটা প্রশ্ন করি।
মহাবিশ্বের ফান্ডামেন্টাল ধ্রুবকের মেট্রিক স্পেইস রিয়াল নাম্বারের সাধারণ মেট্রিক স্পেইস কেন হতে হবে? অরেকটু হলেই “একভাগ কম বা বেশী” হয়ে যেত এবং আমরা বিলুপ্তি লাভ করতাম, এটা ভাবার জন্য এমন ভাবা জরুরি যে এসব ধ্রুবক আমের ঝাঁকার মত, যেখানে ১০০ টি আম থাকলে মনে করা যেতে পারে যে “আরেকটু হলেই” ১০১ টি আম থাকতে পারত।
@রৌরব,
ফান্ডামেন্টাল ধ্রুবকগুলো রিয়েল নাম্বার–ইমাজিনারি বা গ্রাসমান না। পদার্থবিজ্ঞানে যা কিছু পরিমাপ
করা হয় (ধ্রুবকগুলোসহ) সবই রিয়েল নাম্বার দ্বারা প্রকাশ করা হয়–ঠিক আছে? রিয়েল নাম্বার মেট্রিক স্পেস বলতে ঠিক কি বুঝিয়েছেন আমি বুঝলাম না। অণু-পরমাণু ছাড়াতো প্রাণের গঠন হত না। উদাহরণস্বরূপ তড়িৎ-চুম্বকীয় যে ধ্রুবকটির নির্দিষ্ট ভ্যালুর জন্য উদাহরণস্বরূপ কার্বন পরমাণু গঠিত হয় ধরুন, সেটি হল ১/১৩৭। যদি এটি ১/১৩৭ এর পরিবর্তে ১/১৩৬.৯৯৯… বা ১/১৩৭.০০০…১ হত–তাহলে কার্বন বা কার্বনজাত কোনকিছুই তৈরী হত না, পানিও তৈরী হতনা। পদার্থবিজ্ঞানে ভাবাভাবির অবসর কম। এখানে সবকিছুই চুলচেরা হিসাব করে দেখতে হয়। উইক ইন্টারাকশনের জন্য সূর্যের তাপ এবং আলো পাচ্ছি। এটির ইন্টারাকশন স্ট্রেন্থ যদি ক এর পরিবর্তে ক+.০০..১ অথবা ক-.০০..১ হত–তাহলে ফিউশন বিক্রিয়া হত না–কাজেই সূর্য আলো বা তাপও দিত না। এইটা মোটামুটি ফাইন টিউনিং এর সরল ব্যাখ্যা।
ধর্মীয় আর্গুমেন্ট হিসেবে সেটি ব্যবহার করা একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়–যেটি সম্পর্কে ওয়াইনবার্গের
মতন বিজ্ঞানীও সচেতন ছিলেন। ফাইন টিউনিংকে “ফ্যাক্ট” হিসেবে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার বস্তু হলে তিনি
কখনই এটিকে আর্গুমেন্ট হিসেবে মোকাবিলা করবার জন্য এ্যানথ্রপিক প্রিন্সিপাল যে নান-থেইস্টরা কার্যকর পন্থা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন এমনটি বলতেন না। Steven Weinberg believes the Anthropic Principle may be appropriated by cosmologists committed to nontheism, and refers to that Principle as a “turning point” in modern science because applying it to the string landscape “…may explain how the constants of nature that we observe can take values suitable for life without being fine-tuned by a benevolent creator—-মূল বক্তব্য হল ফাইন টিউনিং আছে কিন্ত
এটি ফাইন টিউনিং বাই “চান্স” নট “ডিজাইন”।
@তানভীর হানিফ,
আমার মনে হয় ‘ফাইন টিউনিং’ শব্দটাই সমস্যা করেছে, ফাইন টিউনিং না বলে ‘চান্স টিউনিং’ নামে অভিহিত করলে এই বিতর্ক হত না। 🙂
যা হোক, স্টেঙ্গরের পেপার থেকে কনক্লুশনগুলো (শেষ পৃষ্ঠায়) পড়লে কিন্তু ব্যাপারটাকে আর ‘ফাইন’ বলে মনে হয় না –
@অভিজিৎ,
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। ফাইন টিউনিং এর তর্কে অনেক সময়েই যেনো এই অনুমান করা হয় যে sentient বিয়িং তৈরি হবার সকল উপায় আমরা জেনে গিয়েছি। Sentient being এর জন্যে কার্বনজাত জিনিস লাগবেই এই অনুমানটা এক ধরনের ভাইটালিজম দোষে দুষ্ট।
@অভিজিৎ,
স্টেঙ্গারের বক্তব্যগুলোকে শুধুমাত্র এ্যাসারশান হিসেবে ট্রিট না করে সেগুলোকে কেউ অবজেক্টিভলি খন্ডন করতে পেরেছেন কিনা সেটি মনে হয় আমাদের দেখা উচিৎ। পদার্থবিজ্ঞানের অনেক খ্যাতনামা অথারিটিই যখন একটি বিষয়কে মেনে নিয়েছেন–তখন বিষয়টিকে ফেলে দেওয়ার আগে আমাদের খুবই গভীরভাবে যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমি যতটুকু জানি, উনি বহু বছর যাবৎ যতটা না বিজ্ঞানে সক্রিয় তার চেয়ে দর্শন ইত্যাদিতে অনেক বেশী (উনি এখন দর্শনশাস্ত্রও পড়ান মনে হয়)। আমার মনে হয় মুক্তমনা
হিসেবে আমাদেরকে মুদ্রার অপর পিঠটিও দেখতে হবে–তা এ্যাপারেন্টলি যতটাই অগ্রহণযোগ্য হোক না কেন। আশা করি সে ব্যাপারে আপনি আমার সাথে একমত হবেন। অস্ট্রেলিয়ার সিডনী ইনস্টিটিউট ফর এ্যাসট্রনমির একজন গবেষক স্টেঙ্গারকে খন্ডন করবার প্রয়াস পেয়েছেন তাঁর একটি ক্রিটিক্যাল রিভিউতে http://arxiv.org/PS_cache/arxiv/pdf/1112/1112.4647v1.pdf । স্টেঙ্গার অদ্যবধি এর জবাব দেননি–কাজেই তাঁর কাউন্টার-কাউন্টার আর্গুমেন্টগুলো কি হতে পারত তা এমূহুর্তে আমরা জানিনা। রিভিউটি পড়ে এর কোন ফ্যালাসি থাকলে সেটি নিয়ে আমরা ডিল করতে পারি।
@তানভীর হানিফ,
উনি আসলে দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যুক্ত ছিলেন। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা পড়াতেন, অন্যটায় দর্শন।
ঠিক নয় বোধ হয়। এখানে দিয়েছিলেন। এর বাইরেও আরো কিছু জায়গায় সম্ভবত লিখেছিলেন এ নিয়ে।
উইকিতেও দেখলাম ফাইন টিউনিং পেইজটাতে উনার এবং অন্যান্যদের এ নিয়ে কাজের উল্লেখ আছে ( Disputes regarding the existence and extent of fine-tuning), যদিও সংখ্যয় অনেক কম।
আমার মনে হয় অব্জেক্টিভলি দেখলে দুই দিকই গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
@অভিজিৎ,
ঠিক নয় বোধ হয়। এখানে দিয়েছিলেন। এর বাইরেও আরো কিছু জায়গায় সম্ভবত লিখেছিলেন এ নিয়ে।
খেয়াল করিনি। লিংকটি দেওয়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমার মনে হয় অব্জেক্টিভলি দেখলে দুই দিকই গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
৯৯.৯৯৯৯…% একমত 🙂
@তানভীর হানিফ,
আহ… বিজ্ঞানী আফটার অল। 🙂
ইয়ে …একটা ব্যাপার। কারো উদ্ধৃতি খন্ডন বা আলোচনা বা পর্যালচনা করতে গেলে এর পর থেকে সিলেকট করে ‘বোল্ড’ বাটনে চাপ না দিয়ে ‘উদ্ধৃতি’ বাটনে চাপ দিয়েন। 🙂 এর পর নীচে আপনার বক্তব্য লিখলেই ঠিক মত আসবে মিক্সড না হয়ে। এখানে দেখতে পারেন।
@তানভীর হানিফ, অভিজিৎ,
তানভীর হানিফঃ
অভিজিৎ:
উনি একজন পরীক্ষণমুখী কণা পদার্থবিদ ছিলেন (২০০০ সালে হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন। তাত্ত্বিক পদার্থবিৎ নন বা জ্যোতির্পদারত্থবিজ্ঞানীও নন বা পড়াতেন না। এক্সপেরিমেন্টাল নিউট্রিনো অ্যাস্ট্রোফিজিক্স এ কাজ করেছিলেন। যা হোক আস্তিকদের খন্ডন করতে তিনি কিছু বিভ্রান্তিকর দাবী করেছেন তাঁর বইয়ে, যার প্রয়োজন ছিলে না। আস্তিকদের খন্ডন করতে কামান দাগার প্রয়োজন নেই। সেটা হল যে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র (বা নিয়ম) গুলি নাকি কিছু সরল স্বতঃসিদ্ধ (Assumption) থেকে ডিরাইভ করা যায়। তার মানে তাঁর দাবী অনুযায়ী সরল স্বতঃসিদ্ধগুলি পদার্থবিজ্ঞান থেকে নেয়া নয়, তা না হলে এটা হত পদার্থবিজ্ঞান দ্বারা পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র ডিরাইভ করা হত। কিন্তু তিনি আসলে সেটাই করেছেন বলে আমার ধারণা। তিনি তো নতুন কিছু করেননি বা বলেননি। আগের জানা জিনিষকে সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেছেন। সেটা হলে পদার্থ বিজ্ঞানের সূত্রকে আরো মৌলিক রূপে প্রকাশ করে তার থেকে পরিচিত রূপ বের করা। তিনি এক পর্যায়ে কোয়ান্টাম ক্ষেত্র থেকে পরিচিত সমীকরণ বের করার জন্য বিশেষ লাগ্রাঞ্জিয়ান ঘনত্ব বেছে নিয়ে তা করেছেন, তদুপরী এটা বলেননি যে লাগ্রাঞ্জিয়ান ঘনত্ব বাছার পর তার দ্বারা অ্যাকশন গঠিন করে সেটাকে এক্সত্রিমাইজ করে তবেই পরিচিত সমীকরণ বের করা যায়। এসবই তো পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম। পদার্থবিজ্ঞানের পরিচিত সমীকরণ ডিরাইভ করতে যদি লাগ্রাঞ্জিয়ান বেছে সেটাকে এক্সত্রিমাইজ করতে হয় তাহলে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মকে গোড়া থেকে (পদার্থবিজ্ঞানের বাইরের থেকে) ডিরাইভ করার দাবী কেমন করে করেন। এই দাবী আমার জানা মতে কেবল তিনই করেছেন। কোন তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী করেননি। আপনার ইনপুট পেলে খুব ভাল হয় কারণ আপনি তাত্ত্বিল্ক পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে কোয়ান্টাম ক্ষেত্র ভালই জানেন।
@অপার্থিব,
হ্যা, উনি কণা পদার্থবিদ এবং নিউট্রিনো নিয়ে কাজ করেছেন জানি। তবে উনার বিভাগের নাম ছিল Physics and Astronomy (University of Hawaii)। পদার্থবিজ্ঞান এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান। আলাদা করে বলা উচিৎ ছিল, জ্যোতির্পদার্থবিজ্ঞান না বলে। বেশ কয়েক বছর আগে উনার সাইটে আমি জ্যোতির্বিজ্ঞানের কোর্সের উল্লেখ দেখেছিলাম সম্ভবত।
আমার ধারনা গ্রুপে এটার উত্তর উনি দিয়েছিলেন। খুঁজে পেলে পোস্ট করব। হয়তো প্রকাশ্যে কোন পেপারে বলেননি, কারণ আমি জানিনা আপনার বলা এই ব্যাপারটা উল্লেখ করে কেউ তার পেপারের খণ্ডন করেছিলেন কিনা। তবে Quanta, Logic and Spacetime বইয়ে S.A. Selesnick এবং Steve Selesnick এই ‘where does physics get its Lagrangians?’ ব্যাপারটা কভার করেছিলেন বলে হাল্কা ভাবে মনে পড়ছে। Stephen Ames এর একটা লেখায় আমি এর উল্লেখ দেখেছি। আমি নিশ্চিত স্টেঙ্গর কোথাও ব্যাখ্যা করেছিলেন। দেখি পাই কিনা।
@অপার্থিব,
উনি ঠিক কি বলেছেন তা যদি উল্লেখ করতেন তাহলে মন্তব্য করা সহজ হত। কিছু কিছু বিষয়ে তাঁর খুব স্ট্রং ওপিনিয়ন আছে–এটা ঠিক। উনার কিছু বক্তব্যকে আমার সাংঘর্ষিক এবং নান-মেইনস্ট্রিম মনে হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, উনি ঈশ্বরসম্পর্কিত মেইনস্ট্রিম এ্যাগনস্টিক ভিউকে ধারণ করেন বলে মনে হয়নি। উনার দাবী ঈশ্বর বা এ ধরণের “হাইপোথেসিস”কে বিজ্ঞান অপ্রমাণ বা ফলসিফাই করতে পারে–অর্থাৎ এগুলো সাইন্টিফিক্যালি ফলসিফিয়েবল ধারণা বা হাইপোথেসিস!!!
উপরে অভিজিৎ দার দেওয়া লিংকে দেখলাম উনি বলেছেন:
বক্তব্যটি আমার কাছে বেশ দ্ব্যর্থবোধক মনে হয়েছে। ফাইন-টিউনিং এর বিষয়টি যে একটি সমস্যা এবং সেটিকে “ব্যাখ্যা” করতে (খন্ডন করতে নয়) যে মাল্টিভার্স হাইপোথেসিসের উপযোগিতা বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীরা স্বীকার করে নিয়েছেন সেটিও তিনি বলছেন। আবার অস্পষ্টভাবে দ্বিমত পোষণ করছেন কিনা সেটিও কিন্ত স্পষ্ট নয় (While I fully respect this possibility)। বিষয়টিকে একটু ব্যাখ্যা করি। ধরুন, আপনি কতকগুলো অক্ষরের ব্লক মেঝেতে ছুড়ে মারলেন। অক্ষরগুলো এমনভাবে বিন্যস্ত হল যে সেটি হুবহু শেক্সপিয়ারের হ্যামলেটের একটি প্যারাগ্রাফ তৈরী করল। প্রশ্ন হল: ঘটনাটির সম্ভাবনা কত? ইনফাইনাইটেসিমালি স্মল–বাট নট জিরো। এখন বিষয়টি যদি সত্য সত্য আমাদের চোখের সামনে ঘটে তাহলে এর ব্যাখ্যা কিভাবে দেব? দু’ভাবে। আমরা বলতে পারি ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন মহাবিশ্ব আছে যাতে সম্ভাব্য সমস্ত বিন্যাসই ঘটছে। দৈবক্রমে বা বাই
চান্স আমরা সেই মহাবিশ্বটিতে আছি যেটিতে বিশিষ্ট বিন্যাসটি ঘটে গেল।এটি হল প্রথম ব্যাখ্যা। দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি হল ব্রুট ফোর্স। অর্থাৎ, এটি ঘটবার পেছনে কোন কারণ নাই, কোন ব্যাখ্যা বা এক্সপ্লেনেশান নাই। এটি এমনি এমনি ঘটেছে। দ্বিতীয় কারণটি বিজ্ঞানী, অবিজ্ঞানী, সন্দেহবাদী, নাস্তিক, ধর্মবাদী, ডেইস্ট কারও কাছেই স্যাটিসফাইং না। এজন্যই, ওয়াইনবার্গের মতে:
এর অর্থ হল স্পষ্ট। আমাদের মহাবিশ্ব অবশ্যই ফাইন টিউনড্ কিন্ত এটি ঈশ্বর কর্তৃক ফাইন টিউনড্ নয়। চান্স টিউনড্ শব্দটা এখানে সঠিক নয়–কারণ চান্স এক্ষেত্রে কোন মেকানিজম নির্দেশ করছে না–এটি বিষয়টিকে প্লজিবল করছে মাত্র।
আরেক জায়গাতে তিনি বলছেন: “no reputable physicist or cosmologist has disputed my basic conclusions.’
প্রশ্ন হল এখানে reputable physicist or cosmologist আর আগের কোটে উল্লিখিত scientific experts কি একই গ্রুপে পড়েন কি পড়েন না?
স্টেঙ্গার যদি বলে থাকেন যে পদার্থবিদ্যার সূত্র বা তত্ত্বগুলো বিশুদ্ধ চিন্তার মাধ্যমে নির্ধারণ করা সম্ভব তাহলে তিনি ভুল বলেছেন। আমার মনে হয়না তিনি সে কথা বলেছেন। তবে আপনি তাঁর উদ্ধৃতিটি উল্লেখ করলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে পদার্থবিজ্ঞান বাস্তবজগৎকে ব্যাখ্যা করে। সুতরাং এটির যেকোন তত্ত্ব বা হাইপোথেসিসকে বাস্তবতাই গাইড করবে। অর্থাৎ, গণিতের মাধ্যমে এটির তত্ত্ব নির্মাণ করা হলেও এটির মূল উপকরণসমূহ আসবে ইম্পিরিক্যাল তথ্য হিসেবে। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের একেবারে মৌলিক তত্ত্বদ্বয় হল ক্ষেত্রতত্ত্ব। মূলত: পরস্পর ইনকনসিস্টেন্ট দু’টি তত্ত্ব আছে: একটি চিরায়ত বা ক্ল্যাসিকাল যাকিনা মহাকর্ষকে ব্যাখ্যা করে–অপরটি কোয়ান্টাম যাকিনা বিদ্যুৎ-চুম্বকত্ব, দুর্বল এবং সবল নিউক্লীয় বলকে ব্যাখ্যা করে। কতকগুলো মুলনীতি থেকেই উভয় তত্ত্ব গঠন করা হয়েছে এবং এদেরকে বর্ণণা করা হয় একটি গাণিতিক রাশি ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান (একে স্পেস-টাইম হাইপারসার্ফেসে সমাকলন করে পাওয়া যায় এ্যাকশান) ঘনত্ব দ্বারা। এখন এ ধরণের তত্ত্ব কিভাবে গঠন করা হয়? কতকগুলো দাবী থেকে সমীকরণগুলো লিখে ফেলা হয় আর এ সমস্ত দাবী কিন্ত বিশুদ্ধ চিন্তা প্রসূত নয়–বরং বাস্তব অভিজ্ঞতা, পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণজাত। উদাহরণস্বরূপ, স্ট্যান্ডার্ড মডেলের তত্ত্বটিকে এমনভাবে লিখতে হবে যাতে এটি সমস্ত জানা কণিকাগুলোকে ধারণ করে, এটি আমাদের স্হান-কালিক দৃষ্টিভঙ্গি নিরপেক্ষ হয় (পঁয়কারে ইনভ্যারিয়ান্স), সর্বনিম্ন শক্তিস্তরের অস্তিত্ব থাকে (লোয়ার বাউন্ডেডনেস), যথেষ্ট পরিমাণ দূরত্বে সম্পাদিত পরীক্ষণসমূহ পরস্পরকে প্রভাবিত না করে (ক্লাস্টার ডিকম্পজিশান), সম্ভাবনা সংরক্ষিত হয়(ইউনিটারিটি) , সর্বোপরি বলসমূহকে নির্দিষ্টকারী গেজ প্রতিসাম্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। এগুলো বিবেচনা করলে আমরা যা পাই তা হল:
[img]http://img.photobucket.com/albums/v338/ellenjanuary/Standard_Model_Equation.gif[/img]
মহাকর্ষ এবং পদার্থবিজ্ঞানের কিছু অনাবিষ্কৃত বিষয় ছাড়া এর ভেতর রসায়ন, জীববিজ্ঞানসহ সমস্তকিছুই আছে।
@তানভীর হানিফ,
ঈশ্বরের দাবি সাইন্টিফিক্যালি ফলসিফিয়েবল নয়, ঠিক। কিন্তু
ঈশ্বরের দাবির এই অপ্রমাণযোগ্যতা কি ঠিক অ্যাগনস্টিসিজমই তৈরি করে? আমি বুঝতে পারছি, সেটা অ্যাগনস্টিসিজমের সংজ্ঞার সাথে যায়। তাহলে কি ইন জেনারেল বিজ্ঞাননিষ্ঠরা সকল মেটাফিজিক্যাল প্রশ্নে অ্যাগনস্টিক? ব্যাপারটা আগ্রহোদ্দীপক হলেও “মেইনস্ট্রিম এ্যাগনস্টিক ভিউ” ব্যাপারটা আমার কাছে নতুন। আমার ধারণা ছিলো লজিক্যাল পজিটিভিস্টরা মেটাফিজিক্সকে জানা অসম্ভবের জায়গায় জানার অযোগ্য বা জ্ঞানই নয় বলে নির্ধারণ করে। ফলে লজিক্যাল পজিটিভিস্টরা মোর এথিস্ট দ্যান অ্যাগনস্টিক। মেইনস্ট্রিম বিজ্ঞানীরাও প্রায় একই কারণে তা-ই, বলে আমার ধারণা। কিন্তু আপনার যুক্তি মতে আমাদের পর্যবেক্ষণের বাইরে একটা গোলাপি ইউনিকর্ন আছে, এমন দাবির ব্যাপারেও মেইনস্ট্রিমকে অ্যাগনস্টিক থাকতে হয়।
@রূপম (ধ্রুব),
এক্সাক্টলি। কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুসারে চীনের প্রাচীরের একপাশে পিং-পং বল ছুড়ে মারলে
সেটি ভেদ করে সেটির অপরপাশে যাবার সম্ভাবনা অশুণ্য। সেটি কি আমরা কখনও পর্যবেক্ষণ
করব বলে আপনার মনে হয়? আপনার কি মনে হয় ডকিন্স একজন এ্যাগনস্টিক নাকি এ্যাথেইস্ট?
কেনি নামক একজন এ্যাগনস্টিক দার্শনিককে তিনি সম্ভাবনাভিত্তিক এ্যাগনোস্টিসিজমের একটি
সংজ্ঞা দিয়েছেন এবং নিজেকে কেনির মতন ৫০%-৫০% এ্যাগনোস্টিক না বলে .00000000…১%-৯৯% (সঠিক সংখ্যাটি মনে পড়ছেনা) জাতীয় এ্যাগনোস্টিক বলে স্বীকার করেছেন।
@তানভীর হানিফ,
সেই অর্থে মেইনস্ট্রিমরা অ্যাগনস্টিক হলেও হতে পারে। তবে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মডেল অনুযায়ী বাস্তবতা সম্পর্কে অবস্থান নেয়াটা কতোটা যুক্তিযুক্ত? আমার মনে হয় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ব্যাপারে নেওয়া অবস্থানের উপরে এটা অনেকাংশে নির্ভর করে। একটা অবস্থান হচ্ছে, বাস্তবতাকে বুঝতে আমরা কোয়ান্টাম মেকানিক্স ব্যবহার করি। আরেকটা হচ্ছে – বাস্তবতা কোয়ান্টাম মেকানিক্স মেনে চলে। আমার মতে দ্বিতীয় অবস্থান নিলে পরেই “কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুসারে চীনের প্রাচীরের একপাশে পিং-পং বল ছুড়ে মারলে সেটি ভেদ করে সেটির অপরপাশে যাবার সম্ভাবনা অশুণ্য” এমন ধারণা থেকে বাস্তবতা সম্পর্কে তদ্রুপ অবস্থান নেওয়া সম্ভব। কারণ দ্বিতীয় অবস্থানে কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও বাস্তবতা অভিন্ন। অন্যদিকে প্রথম অবস্থান “কোয়ান্টাম মেকানিক্স অনুসারে চীনের প্রাচীরের একপাশে পিং-পং বল ছুড়ে মারলে সেটি ভেদ করে সেটির অপরপাশে যাবার সম্ভাবনা অশুণ্য” বলেই ক্ষান্ত হবে। সেটাকে বাস্তবতার স্বরূপ বলে নেসেসারিলি মনে করবে না। ফলে প্রশ্ন হচ্ছে অদৃশ্য ইউনিকর্ন সম্পর্কে অবস্থান কোয়ান্টাম মেকানিক্স সিদ্ধ হওয়া জরুরি কিনা।
@রূপম (ধ্রুব),
কোয়ান্টাম মেকানিক্স আমি উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করেছি। কারণ এটি বাস্তবতার প্রচন্ড সফল
বিবরণ দেয়। আর এই সফল বিবরণটি অশুণ্য সম্ভাবনা নির্ভর। সেই হিসাবে, কোন কিছুর সম্ভাবনাই
শুণ্য হতে পারেনা এটির পরীক্ষণমূলক এভিডেন্স আছে।
@তানভীর হানিফ,
এখানে যে একটা সম্ভাব্য গোল বাধলো! অদৃশ্য গোলাপি ইউনিকর্ন থাকার প্রকল্পটা অবৈজ্ঞানিক, মেটাফিজিক্যাল বলে জানি। কোয়ান্টাম মেকানিক্সে আবার সেই প্রকল্পের সত্যতা/বাস্তবতার সম্ভাবনা অশূন্য (বলছেন)। কোয়ান্টাম মেকানিক্স আবার “বাস্তবতার প্রচন্ড সফল বিবরণ”ও (বলছেন)।
তাহলে খুব গোড়ার প্রশ্ন –
অদৃশ্য গোলাপি ইউনিকর্নের প্রকল্পের বাস্তবতার সম্ভাবনা অশূন্য, এই বিবরণটা কি বৈজ্ঞানিক, নাকি অবৈজ্ঞানিক? কোয়ান্টাম মেকানিক্স সঞ্জাত সকল বিবরণ বৈজ্ঞানিক কিনা? আমার ধারণা, উত্তর হচ্ছে – না। কোয়ান্টাম মেকানিক্সসিদ্ধ সকল বিবরণ বৈজ্ঞানিক নয়, মানে ফলসিফায়েবল নয়। কোয়ান্টাম মেকানিক্স পর্যবেক্ষণসাধ্য বাস্তবতাকে চমৎকার পূর্বাভাস/ব্যাখ্যা করেছে। তার মানে এই নয় যে – যেই বিষয় পর্যবেক্ষণ করে যাচাইয়ের সুযোগ নেই, সে বিষয়েও কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সকল ক্লেইম সত্য হতে বাধ্য। কোয়ান্টাম মেকানিক্স পর্যবেক্ষণসাধ্য বাস্তবতা সম্পর্কে মানুষের এই মুহূর্তে শ্রেষ্ঠ ব্যাখ্যা বলা আর কোয়ান্টাম মেকানিক্সই বাস্তবতা বলার মধ্যে ফারাক আছে। সেখানটাতেই “অদৃশ্য গোলাপি ইউনিকর্নের প্রকল্পের বাস্তবতার সম্ভাবনা অশূন্য” এমন বিবরণের নির্ভরতা/উপযোগ কতোটুকু উপলব্ধি করা যায়।
আমার মনে হয় এটা একটু ওভারস্টেটমেন্ট হয়ে গেছে। আপনি হয়তো একে একটু কোয়ালিফাই করতে চাইবেন। যেমন, “কিছু কিছু ক্ষেত্রে …”
@রূপম (ধ্রুব),
দেখুন, আমি প্রোবাবিলিটিভিত্তিক এ্যাগনোস্টিসিজমের কথা বলেছি–যেটি ডকিনস্ বলেছেন।
সেক্ষেত্রে, অবৈজ্ঞানিক এবং এভিডেন্সবিহীণ বস্তুরও ফাইনাইট সম্ভাবনা থাকে। আপনি একটি
বিষয়কে অবৈজ্ঞানিক বলতে পারেন কিন্ত সেটি তার অস্তিত্বের সম্ভাবনা শুণ্য নির্দেশ করেনা–হয়ত .০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০১ নির্দেশ করে।
উদাহরণস্বরূপ?
আমার মনে হয় এটা একটু ওভারস্টেটমেন্ট হয়ে গেছে। আপনি হয়তো একে একটু কোয়ালিফাই করতে চাইবেন। যেমন, “কিছু কিছু ক্ষেত্রে …”
কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখাতে গেলে অন্তত: একটি ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম মেকানিক্স ভুল ফলাফল দিচ্ছে সেটি
দেখাতে হবে–নয় কি?
@তানভীর হানিফ,
উদাহরণস্বরূপ, যখন অদৃশ্য গোলাপি ইউনিকর্নের অস্তিত্বের উপর কোয়ান্টাম মেকানিক্সসিদ্ধ বিবরণ প্রদান করবেন। কোয়ান্টাম মেকানিক্স ওতে অশূন্য সম্ভাবনা প্রদান করবে। অথচ বিষয়টি বাই ডেফিনিশন আনফলসিফায়েবল।
জগতের সকল ক্ষেত্রে পরীক্ষা করা হয় নি, সেই অর্থে বলেছি। যেমন অজস্র ম্যাক্রোস্কোপিক ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে হয়তো বলা যাবে যে কিছু কিছু ম্যাক্রোস্কোপিক ইভেন্টে কোয়ান্টাম মেকানিক্সসিদ্ধ পর্যবেক্ষণ পাওয়া গেছে। এটা নিশ্চয়ই তখন বলা যাবে না যে, “সকল ম্যাক্রোস্কোপিক ইভেন্টে কোয়ান্টাম মেকানিক্সসিদ্ধ পর্যবেক্ষণ পাওয়া গেছে।” কথাটা এই অর্থে বলা।
@রূপম (ধ্রুব),
বাই ডেফিনিশন আনফলসিফিয়েবল বলতে কি বুঝালেন? গোলাপী ইউনিকর্নের ওপর কোয়ান্টাম মেকানিক্সসিদ্ধ বিবরণ কিভাবে দেওয়া যাবে? যদি যায় অর্থাৎ কোয়ান্টাম মেকানিক্স দিয়ে হিসেব করে এর অস্তিত্বের সম্ভাবনা শুণ্যের কাছাকাছি দেখানো যায় তাহলে এই ফলাফলটি কি ফলসিফিয়েবল হবে না বলে আপনার ধারণা? কোন কিছুকে ফলসিফাই করলে যেমন সেটির অস্তিত্ব শুণ্য হবার সম্ভাবনা ১ হয়না ঠিক তেমনি কোন কিছু ফলসিফিয়েবল না হলেও এভিডেন্সের অসম্ভাব্যতার ভিত্তিতে সেটির অস্তিত্বের সম্ভাবনা হিসেব করা যায়-সেটি গোলাপী ইউনিকর্নের ক্ষেত্রেও যায় । মহাবিশ্বে এ্যালিয়েন থাকবার সম্ভাবনা বিচার করতে সরাসরি ভৌত বিজ্ঞানের দরকার পড়ে না। কোয়ান্টাম মেকানিক্স ম্যাক্রস্কপিক এবং মাইক্রোস্কপিক উভয় জগতের জন্যই সত্য তথা এটি সাধারণভাবে ভৌত জগতের জন্য সত্য। অশুণ্য সম্ভাবনার ভিত্তিতে এটি সফলভাবে ব্যতিক্রমহীণভাবে বাস্তবতাকে ব্যাখ্যা করেছে। ১ এবং ০ এর প্রান্তিক মান যে শুদ্ধতম স্ট্যান্ড নয় সেটির একটি শক্ত নির্দেশনা এটিকে বলা যায়।
@তানভীর হানিফ,
স্টেঙ্গারের পেপার টি এখানে পাবেনঃ
http://www.colorado.edu/philosophy/vstenger/Nothing/Laws.pdf
বিশেষ করে eq 14.14-17 লক্ষ্য করুন। পড়ার পর আপনার মূল্যায়নের অপেক্ষায় থাকলাম। ওই পেপারে তিনি আসলেই দাবী করছেন যে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম গুলি first principle দিয়ে “ডিরাইভ” করা যায়। আমার মতে এক রূপ থাকে আরেক রূপে (পরিচিত) পরিবর্তন করা যায়, গেজ ইনভেরিএন্স, আর অন্যান্য প্রতিসাম্যকে স্বতঃসিদ্ধ ধরে।
আপনার উদ্ধৃত বিশাল সমীকরণ্টা খুবই ইন্টেরেস্টিং। পাঠকেরা এবার বুঝবেন আশা করি পদার্থবিজ্ঞানের জনপ্রিয় দাবী বা মতের পেছনে কি ফর্মিডেব্ল্ গণিত কাজ করে।
@অপার্থিব,
এ্যাবস্ট্রাক্টে উনি যে দাবী করছেন সেটা হেরেটিকাল। লেখাটি পদার্থবিজ্ঞানের কোন জার্নালে প্রকাশ পেলে বিস্মিত হব। ভেতরের বিষয়বস্তু তথা সমীকরনসমূহে নতুন কিছু দেখলুম না। ফিজিসিস্টরা অবজার্ভেশনসমূহকে ডিস্ক্রাইব করবার জন্য মডেল গঠন করেন না–এক্সপ্লেইন করবার জন্য করেন। এই মডেল নতুন ফেনোমেনার ভবিষ্যদ্বানী করে আর পদার্থবিজ্ঞানের সফল ভবিষ্যদ্বানীগুলো কতটা বিস্ময়কর সেটা অচিন্তণীয়।এর সূত্রগুলো যদি পদার্থবিজ্ঞানীদের আচরণের উপর কনসট্রেইন্ট মাত্র হয় তাহলে এগুলো ব্যবহার করে বস্তু বা শক্তিকে ম্যানিপুলেট করা হয় কিভাবে–কিভাবে পারমাণবিক বোমা, জি পি এস সিস্টেম, পেট স্ক্যান বা সেল ফোন বানানো হয়? আমার মনে হয় এটা তাঁর অতাত্ত্বিক ব্যাকগ্রাউন্ড আর দর্শন চর্চার কুফল। পয়েন্ট অব ভিউ ইনভ্যারিয়েন্স এর ধারণাটি খুবই ইল ডিফাইন্ড এবং ডুবিয়াস। পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মগুলো অবশ্যই কতক ফার্স্ট প্রিন্সিপাল থেকে ডিরাইভ করা যায়–যেমন লোকাল গেজ ইনভ্যারিয়েন্স। কিন্ত সেটি কোথা থেকে এসেছে? এটি এসেছে আলোর গতির সর্বোচ্চমানের ইমপিরিক্যাল ফ্যাক্ট থেকে। তাঁর লেখার একটা রিভিউ নিশ্চয় থাকবার কথা। দেখেছেন কি?
@তানভীর হানিফ,
আপনার বিশ্লেষণের সাথে সহমত। তবে একটা কনফিউশন থেকেই যাচ্ছে। আপনি বলছেন যে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম ফার্স্ট প্রিন্সিপ্ল থেকে ডিরাইভ করা যায়। লাগ্র্যাঞ্জিয়ান বেছে সেটার দ্বারা অ্যাকশন কে এক্সট্রিমাইজ করে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম বের করাটা ফার্স্ট প্রিন্সিপ্ল হয়ে কি করে। লাগ্র্যাঞ্জিয়ান ব্যবহার না করে ক্লাইন গর্ডন সমীকরণ ডিরাইভ করা যায়? (স্টেঙ্গার বিশেষ লাগ্র্যাঞ্জিয়ান বেছে নিয়ে তার দ্বারাই তো ক্লাইন গর্ডন সমীকরণ ডিরাইভ করেছেন ১৪.১৪-১৭ তে)। পদার্থবিজ্ঞানকে (কোয়ান্টাম বলবিদ্যাসহ) ফার্স্ট প্রিন্সিপ্ল (অর্থাৎ গণিত ও যুক্তি) থেকে ডিরাইভ করা দাবী করলে পদার্থ বিজ্ঞানের কোন শব্দই (লাগ্র্যাঞ্জিয়ান, প্রিন্সিপ্ল অব লিস্ট অ্যাকশন ইত্যাদি) কিছুই ব্যবহার না করার কথা। আপনার সুচিন্তিত মত জানার অপেক্ষায়।
@অপার্থিব,
ধরুন আমি তড়িৎ-চুম্বকত্ব এবং এটির সাহায্যে বিক্রিয়াকারী কণিকাসমূহের তত্ত্ব (ল্যাগ্রাঞ্জিয়ান বা এ্যাকশন ) লিখতে চাই। এটিকে কিভাবে লেখা সম্ভব? আমি তত্ত্বটি এমনভাবে লিখব যাতে এটি কর্তৃক গণণাকৃত রাশিমালা অসীম হলে সেটিকে ডক্টর করে সসীম করা সম্ভব হয়, এটির স্বরূপ প্রসঙ্গকাঠামো নিরপেক্ষ হয়, এটির গেজ প্রতিসাম্য থাকে ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো কনসিডার করে তত্ত্বটি লেখার পর–এ্যাকশনটিকে মিনিমাইজ করলে আমরা ডিরাক সমীকরণ, ম্যাক্সওয়েল সমীকরণ সব পাব। স্টেঙ্গার নতুন কিছুই বলেননি। কিন্ত তাঁর ইন্টাপ্রিটেশন ভুল। যেই নীতিমালাগুলো (ইনক্লুডিং টেকিং এক্সট্রিমাম অব দ্য এ্যাকশন) ব্যবহার করে ডাইনামিক্স বের করা হয় তারা আকাশ থেকে আসে না বা তারা পদার্থবিদদের আচরণের ওপর কনস্ট্রেইন্টও নয়। এটি এ্যাটমোস্ট একটা পাগলামিপূর্ণ মন্তব্য। কোন সিরিয়াস পদার্থবিদ এমন মন্তব্য করতে পারেন না।
@অপার্থিব,
শুধু গণিত এবং বিশুদ্ধ যুক্তি দিয়ে পদার্থবিদ্যার সূত্রগুলো ডিরাইভ করা যায় না। কতক ফার্স্ট
প্রিন্সিপালে গণিত এবং বিশুদ্ধ যুক্তির প্রয়োগ করে যায়। কিন্ত এই ফার্স্ট প্রিন্সিপালগুলো আসে
ভৌতজগত থেকে।
@তানভীর হানিফ,
ভাল। ধরেন, এমন না হয়ে যদি এমন হত যে ১/১৩৬.৯৯৯… তেও কার্বন জাত জিনিস তৈরি হত। ধরেন একদম ১/৫০ এ গিয়ে দেখা যেত কার্বনজাত জিনিস তৈরি হইতেছেনা, তার আগ পর্যন্ত হইতেছে।
আমি বুঝতে পারছিনা, কেন এই দ্বিতীয় পৃথিবী আমাদের পৃথিবীর চেয়ে কম ফাইন টিউন্ড। আমার কাছে দুটাই সমান ফাইন টিউন্ড, সমান চান্স টিউন্ড, সমান আরবিট্রারি। একটি ফান্ডামেন্টাল কনস্ট্যান্ট (যদি আপনার দেয়া এই কনস্ট্যান্টটি ফান্ডামেন্টাল) হয়ে থাকে, সেটি কেন আমার ওজনের বাড়-বৃদ্ধি বা চুলের সংখ্যার মত “আরেকটু হলেই” ১/১৩৬.৯৯৯… হতে পারত, সেটি আমার কাছে বোধগম্য নয়। ১/১৩৭ আর ১/১৩৬.৯৯৯… এর দূরত্ব ১/১৩৭ আর ১/৫০ এর দূরত্বের চেয়ে কম, এই দাবীর ভেতরে implicitly একটি মেট্রিক স্পেইস অ্যাসাম্পন আছে। কেন করব এমন অ্যাসাম্পশন?
@রৌরব,
কিন্তু যদি এমন হয় যে কার্বনজাত জিনিস তৈরি হবার জন্যে উপযোগী ধ্রুবক ইউনিক, সেক্ষেত্রে কি মেট্রিক স্পেসের প্রসঙ্গ ব্যতিরেকেই বলা যায় না যে এখানে একটা হার্ড টিউনিং ঘটেছে? তবে এটা যদি একটা রেইন্জ অ্যালাও করে, তাহলে আপনার প্রশ্নটা তখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আবার, ধ্রুবকের যদি কোনো ইউনিট থাকলে তাহলে সেসব ইউনিটের উপর ভিত্তি করে মেট্রিক স্পেইস বিবেচনা করাটা প্রাসঙ্গিক হয়ে যেতে পারে না?
@রূপম (ধ্রুব),
ফাইন টিউন্ড (বা হার্ড টিউন্ড) এর সংজ্ঞা কি? একটি নন-ফাইন-টিউন্ড বিশ্বের উদাহরণ দিন।
আমি ইউনিক ধ্রুবকের প্রশ্নে আসছি, দাঁড়ান। আপনার জবাবটা শুনে নিই।
@রৌরব,
মেশিন লার্নিংয়ের এক্সপেরিমেন্টে ফাইন টিউনিং কথাটা যেভাবে ব্যবহৃত হয় বলি। আমার ধারণা ইন জেনারেল এটা অন্যান্য ক্ষেত্রেও কাছাকাছি উপায়ে প্রযোজ্য।
ধরুন একটা সংখ্যার ধারা আপনার কাছে অবিরত আসছে। হতে পারে এটা আবহাওয়া, বা তেলের দাম, বা আপনার শরীরের বিশেষ কোনো মেজার। আপনি একটা অ্যালগরিদম ডিজাইন করলেন, যেটা এই ধারার আগামি মুহূর্তের সংখ্যাটিকে প্রেডিক্ট করবে। আপনার অ্যালগরিদম একটা প্রেডিকশন দিলো। তারপর আসল সংখ্যাটা দেখা গেলো। সেখান থেকে আপনার অ্যালগরিদমের একটা অ্যাক্যুরেসি নির্ধারণ করা গেলো, যে কতোটা এরর হয়। এখন ধরুন আপনার অ্যালগরিদমের একটা প্যারামিটার আছে, যেটার মানের উপর অ্যালগরিদমের এম্পেরিকাল অ্যাক্যুরেসিটা নির্ভর করে। আপনি তাত্ত্বিকভাবে জানেন যে প্যারামিটারটার ভ্যালু (0, 1] এর মধ্যে না হলে অ্যালগরিদমটা ডাইভার্জ করবে, মানে উত্তরোত্তর ভুল থেকে ভুলতর প্রেডিক্শন দিবে। ফলে প্যারামিটারটার অ্যালাওয়েবল রেইন্জ হচ্ছে (0, 1]। কিন্তু আমাদের আলোচ্য সংখ্যার ধারাটার ক্ষেত্রে প্যারামিটারটার ঠিক কোন মানের জন্য অ্যালাগরিদমটা বেস্ট অ্যাক্যুরেসি দিবে, সেটা আমরা আগে থেকে জানি না। এম্পেরিকালি মেজার করা যায়। আপনি বিভিন্ন প্যারামিটারের মান দিয়ে দেখলেন, কেমন কাজ করে। পাওয়া গেলো, প্যারামিটারের মান কেবল 10^-6 থেকে 10^-5 এর মধ্যে থাকলে অ্যালগরিদমটা বেশ ভালো বা কাজের অ্যাকুরেসি দেখায়। বাদ বাকি রেইন্জের মানগুলোর জন্যে অ্যালগরিদমটার অ্যাকুরেসি যাচ্ছে তাই রকম খারাপ (যদিও ডাইভার্জ করছে না)। তো [10^-6, 10^-5] যেহেতু (0, 1] এর তুলনায় অতি ক্ষুদ্র, অতএব বলা হয় যে অ্যালগরিদমটা খুবই প্যারামিটার সেনসিটিভ এবং এটাকে কাজ করানোর জন্যে “ফাইন-টিউনিং” প্রয়োজন। অর্থাৎ এই সেন্সিটিভিটি ফাইন টিউনিংয়ের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।
এমন যদি হতো যে (0, 1] এর মধ্যে যে কোনো মানের জন্যে অ্যাগরিদমটা প্রায় একই রকম অ্যাকুরেসি দেয়, তাহলে বলা হতো অ্যালগরিদমটার অ্যাকুরেসি ওই প্যারামিটারের উপর সেন্সিটিভ না। [0, 1] এর মধ্যে যেকোনো মান নিলে চলে। ফাইন টিউনিংয়ের প্রয়োজন নেই।
এই সেন্সিটিভিটি পরিমাপ করার জন্যে অ্যালাওয়েবল রেইন্জ ভার্সেস “বেস্ট রেইন্জ”-এর তুলনাটা জরুরি। নাহলে একটা মান বাই ইটসেল্ফ “ফাইন টিউনিং”-এর প্রসঙ্গ আনতে পারে না।
@রূপম (ধ্রুব),
🙂
আপনার উদাহরণের ফাইন টিউন একধরণের cost কে রিপ্রেজেন্ট করছে। আপনার ৩২ বিটের রেজিস্টার আছে (ধরেন), অ্যালগিরদম যদি ফাইন টিউন্ড না হত, তাহলে একটা random সংখ্যা নিয়ে নিলেই হত, ফাইন টিউন্ড হওয়ায় হয়ত ২^৩২ এর একটি লুপ ঘোরাতে হচ্ছে।
ওই ৩২ বিটের রেজিস্টার বলে দিচ্ছে যে আপনার (কম্পিউটার) মহাবিশ্বে apriori সম্ভাব্য সংখ্যাগুলি কি। 2^32 এর একটা রেইঞ্জ সম্ভব বলে জানা আছে বলেই ফাইন টিউন্ড আর অফাইন টিউন্ড এর যত পার্থক্য। যদি একটা rom এ যদি ৭.৫ ভ্যালু টা লেখা থাকত আর কম্পিউটারের আর্কিটেকচার এমন হত যে ওই ভ্যালুই আপনাকে ব্যবহার করতে হবে তাহলে এই প্রশ্ন উঠত না।
@রৌরব,
এইটা আমি শিওর না। rom এর ভ্যালু ৭.৫ না হয়ে একটু এদিক সেদিক হলে কী হতো সেই স্পেকুলেশন থেকে আপনি মানুষকে ঠেকাতেন কীভাবে? :))
@রূপম (ধ্রুব),
আসলে rom এর উদাহরণটা খুব সুবিধার নয়, কারণ rom টাকে fundamental হিসেবে কল্পনা করা কঠিন। hmm….
@রূপম (ধ্রুব),
রাইট। আসলে অ্যানালজিটাকে কাজ করাতে হলে কম্পিউটারের “বাইরে” বসে মানুষ স্পেকুলেট করছে, যারা অন্য ডিজাইন ওয়ালা বহু কম্পিউটার দেখেছে, সেভাবে হবেনা। কম্পিউটারটাই মহাবিশ্ব, তার rom ডিজাইনটা ফান্ডামেন্টাল।
অন্য কথায়, কোন একটা কিছু ফাইন টিউন্ড, এটা বলার জন্য একটা prior সম্ভাবনা স্পেইস জানা থাকতে হবে, কিছু ইনফরমেশন থাকতে হবে, যার প্রেক্ষিতে মন্তব্যটা করা হচ্ছে।
মানুষের উচ্চতা কিছুটা random, জানা আছে। কাজেই যদি দেখি একটি পরিবারের সক্কলে একই উচ্চতার, বলতে পারি, তারা ফাইন টিউন্ড।
আপনি হয়ত অনেক অ্যালগরিদম দেখেছেন যারা মোটামুটি যেকোন ভ্যালুতেই কাজ করে, কাজেই খুব কম range এর অ্যালগরিদমকে বলছেন ফাইন টিউন্ড।
তুলনার একটা মানদণ্ড লাগবে। কিন্তু একটা “fundamental” (যা অন্য কোন কিছুর নির্ভরশীল নয়, অন্য কিছুর মত নয়, অন্তত apriori নয়) প্যারামিটারের ক্ষেত্রে সেটা কোথা থেকে আসছে?
স্পেকুলেশনে আমার আপত্তি নেই অবশ্য। কিন্তু সেটা একটা বৈজ্ঞানিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত কেন?
@রৌরব,
মোটামুটি যেকোন ভ্যালুতে কাজ করে এমন অনেক অ্যালগরিদম না দেখার ক্ষেত্রেও উপরের উদাহরণে ফাইন টিউন প্রাসঙ্গিক। কীভাবে, বলি।
ধরুন এর আগে যতো অ্যালগরিদমই দেখেছি, সবই একটা ছোট রেইন্জে কাজ করে। কিন্তু প্রায় প্রত্যেকটার ক্ষেত্রে এই রেইন্জ ভিন্ন। (এবং এটা আমার অভিজ্ঞতার সাথে সামাঞ্জস্যতাপূর্ণ।) সেক্ষেত্রে, নতুন একটি অ্যালগরিদমের ক্ষেত্রে এম্পেরিকাল ইভ্যালুয়েশনের আগে অ্যালগরিদমটার প্যারামিটারটার apriori probability distribution (0, 1] রেইন্জে ইউনিফর্ম বলা চলে। অর্থাৎ (0, 1] রেইন্জের মধ্যে কোনো বিশেষ সাব রেইন্জের ব্যাপারে আমাদের অতিরিক্ত জ্ঞান নাই। সেক্ষেত্রে অ্যালগরিদমটা যদি তুলনামূলক অতি ছোট রেইন্জে কাজ করলে, যেমন [10^-6, 10^-5], সেটার সম্ভাবনা কিন্তু অনেক কম হবে। ইউনিফর্ম ডিস্ট্রিবিউশন অনুযায়ী, সেটা হবে (10^-5 – 10^-6) / (1 – 0) = 0.000009, বেশ কম।
@রৌরব,
এটা আমাকে জিজ্ঞেস করে লাভ নাই। আমি, আপনি, সংশপ্তক, বহুদিন থেকেই এইসব অপর্যবেক্ষণাসাধ্য প্রশ্নের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক শব্দটার প্রয়োগের ব্যাপারে অনুযোগ করে আসছি। কিন্তু বিজ্ঞান যেমন জ্ঞানের একটা সুসংজ্ঞায়িত চর্চা (যেটার সাথে ফলসিফিকেশন জড়িত), এর বাইরে বিজ্ঞান একটা সাংস্কৃতিক চর্চাও। সেখানে বিজ্ঞানের সুসংজ্ঞায়িত রূপটার চর্চা যারা করেন, তাদের অন্যান্য অবৈজ্ঞানিক স্পেকুলেশনও “বিজ্ঞান-সংস্কৃতি”র অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। সেই সূত্রে “বৈজ্ঞানিক” শব্দটা চলে আসে। তবে বিজ্ঞজনেরা এ ব্যাপারে সতর্কতা রেখেই স্পেকুলেশন করেন।
@রৌরব,
ভাল। ধরেন, এমন না হয়ে যদি এমন হত যে ১/১৩৬.৯৯৯… তেও কার্বন জাত জিনিস তৈরি হত। ধরেন একদম ১/৫০ এ গিয়ে দেখা যেত কার্বনজাত জিনিস তৈরি হইতেছেনা, তার আগ পর্যন্ত হইতেছে।
“্যদি” তেমন হত–তাহলে আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা করা ্যেত। “্যদি” পৃথিবী সূর্্যের চারিদিকে না ঘুরে উল্টোটি ঘটত–তাহলে কি হত? অবশ্যই এধরণের প্রশ্ন ইন্টারেস্টিং–তবে তা পার্টিকুলারলি আমার আগ্রহের বা এক্সপার্টাইজের বিষয়বস্তু নয়। আর ফাইন স্ট্রাকচারের নির্দিষ্টমান ছাড়া কার্বন কেন– কোন কেমিক্যাল এলিমেন্টই তৈরী হতনা।
আমি বুঝতে পারছিনা, কেন এই দ্বিতীয় পৃথিবী আমাদের পৃথিবীর চেয়ে কম ফাইন টিউন্ড। আমার কাছে দুটাই সমান ফাইন টিউন্ড, সমান চান্স টিউন্ড, সমান আরবিট্রারি।
এই দ্বিতীয় পৃথিবীটি শুধুমাত্র অনুমানে সীমাবদ্ধ থাকলেতো হবেনা।
এই দাবীর ভেতরে implicitly একটি মেট্রিক স্পেইস অ্যাসাম্পন আছে। কেন করব এমন অ্যাসাম্পশন?
মেট্রিক স্পেস এ্যাজাম্পশনটা কি এখনও বুঝতে পারলাম না। আমার জানামতে মেট্রিক স্পেস কোন মেয়ার এ্যাজাম্পশন না–এটা প্রতিষ্ঠিত তত্ত্বসমূহের অংশ। নিউটনীয় বলবিদ্যার মেট্রিক স্পেস ইউক্লিদীয়, বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বের মিনকোওয়স্কীয় এবং সাধারণের রিমানীয়। এক্ষেত্রে এটির প্রাসঙ্গিকতা বুঝলাম না।
ফাইন টিউনিং একটা ফ্যাক্ট। এজন্যই ওয়াইনবার্গ, উইলচেক, স্মোলিন, সাসকিন্ড, রিচার্ড ডকিন্সের মতন বিজ্ঞানী এটিকে মেনে নিয়েছেন।
@তানভীর হানিফ,
রৌরবকে বলা ধারণাটা আপনাকে প্রশ্ন আকারেই করি। ধ্রুবকগুলো কি প্রিসাইসলি কেবল একটি মানের জন্যে উপযোগী বিশ্ব তৈরি করে? নাকি একটা রেইন্জ অ্যালাও করে? নাকি সেটা জানা নেই?
@রূপম (ধ্রুব),
দেখুন, আপনি যদি পার্টিকেল ড্যাটা গাইড দেখেন তাহলে দেখবেন সমস্ত পরীক্ষণলব্ধ উপাত্তের পরই
একটা অনিশ্চয়তাসূচক +/- বসানো হয়। এটি সাধারণভাবেই যেকোন পরীক্ষণলব্ধ উপাত্ত বা তা থেকে
গণণাকৃত রাশির জন্য প্রযোজ্য–তা সে যত সূক্ষ্মভাবেই মাপা হউক। আপনি কি সেই রেঞ্জের কথা
বুঝিয়েছেন?
@তানভীর হানিফ,
আপনার প্রশ্নটা আরো তাত্ত্বিক। যখন বলা হয় যে ধ্রুবকের মান সামান্য এদিক ওদিক হলেই অনুপযোগী বিশ্ব তৈরি হতো, তখন প্রশ্নটা আসে যে উপযোগী বিশ্বের ধ্রুবকটা কি একটা ইউনিক সংখ্যা, নাকি একটা বিশেষ রেইনজের মধ্যে ধ্রুবকের সকল মানের জন্যে উপযোগী বিশ্ব তৈরি হওয়া সম্ভব?
অজস্র বিশ্ব হতে পারে বলে যে ধারণা করা হচ্ছে, তাদের কোনো কোনোটিতে কি ধ্রুবকের মানটা আমাদের বিশ্বের চেয়ে ভিন্ন হতে পারে? আপনার ইঙ্গিত দেখে মনে হচ্ছে পারে। সেক্ষেত্রে ধ্রুবকের মানটা কি -অসীম থেকে অসীমের মধ্যে যেকোনোটা ইউনিফর্মলি হতে পারে?
এমন হতে পারে না যে ধ্রুবকগুলো বিশ্বকে বোঝার জন্যে আমরা যেই উপায় অবলম্বন করছি, সেটার একটা আর্টিফ্যাক্ট? নাকি ধ্রুবকগুলো বাস্তবতার অংশ? অর্থাৎ ভিন্ন উপায়ে পরবর্তীতে ধ্রুবকগুলোকে যদি অপসারণ করা সম্ভব হয়, সেক্ষেত্রে কিন্তু আর এই ফাইন টিউনিংয়ে প্রশ্নটা আসবে না।
@রূপম (ধ্রুব),
* আমার প্রশ্নটা আরো তাত্ত্বিক
@রূপম (ধ্রুব),
আপনার প্রশ্নটা খুব সুন্দর। আচ্ছা আলোচনার সুবিধার্থে আমরা তিনটি ধ্রুবকে সীমাবদ্ধ থাকি। এর একটি তড়িৎ-চৌম্বক বলের প্রাখর্য এবং অপরদু’টি সবল এবং দুর্বল নিউক্লীয় বলের। আমরা জানি যে এরা শক্তির সাথে পরিবর্তিত হয়। বিগ ব্যাং এর পরপর এদের ভ্যালু আর এখনকার ভ্যালু এক নয়। আর সেজন্যই বিগ ব্যাং এর পর রাসায়নিক মৌলগুলো গঠিত হতে কিছুটা সময় নেয়। এগুলো তখনই গঠিত হয় যখন তড়িৎ-চুম্বকত্ব, সবল আর দুর্বল বলের প্রতিসাম্য ভেঙ্গে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, একটি হিলিয়াম পরমাণুর নিউক্লিয়াস্থ প্রোটন এবং নিউট্রনের মধ্যকার সবল বলের কথা চিন্তা করা যাক। আমরা যদি একে সম্পূর্ণভাবে এর উপাংশসমূহে ভেঙ্গে ফেলতে চাই তাহলে নির্দিষ্ট পরিমাণ শক্তি এর ওপর প্রয়োগ করতে হবে। এই শক্তির সর্বনিম্নমান বলদ্বয়ের প্রাখর্যনির্ভর। এই প্রাখর্য যদি খুবই খুবই সামান্য পরিমাণের কম বা বেশী হয় তাহলে হিলিয়াম পরমাণু গঠিত হবেনা। এর অর্থ হল বিগ ব্যাং এর পর প্রাইমোর্ডিয়াল হিলিয়াম সৃষ্টি হওয়া থেকে অদ্যবধি সূর্যের ফিউশন প্রক্রিয়াতে হিলিয়াম সৃষ্টি হওয়া পর্যন্ত এই প্রাখর্যের পরিবর্তণ খুবই খুবই সামান্য পরিমাণের কম বা বেশী হয়নি। যখন হবে তখন আবার মহাবিশ্বের রাসায়নিক মৌলগুলো এদের উপাংশে ভেঙ্গে পড়বে অথবা এদের স্ট্রাকচার চেঞ্জ হয়ে যাবে। প্রাণ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজণীয় অন্যান্য প্রত্যেকটি উপকরণসংশ্লিষ্ট প্রাখর্যের ক্ষেত্রে ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে-যেন কনস্টান্টগুলো খুবই সূক্ষ্মভাবে টিউনকৃত হয়েছে। এটিকেই ফাইন টিউনিং বলা হচ্ছে।
@রূপম (ধ্রুব),
বাই দ্য ওয়ে
একটা ভুল শুধরাই। অসীম ইন্টার্ভালে একটা ডিস্ট্রিবিউশন ইউনিফর্ম হতে পারে না। 😛
@তানভীর হানিফ,
আপনি যদি অনস্তিত্বশীল বিশ্বের ব্যাপারে প্রশ্নকে অবান্তর মনে করেন, তাহলে ফাইন টিউনিংকেই বা সমস্যা বলে মনে করছেন কেন?
আপনি একদিকে বলছেন…
অর্থাৎ স্পেকুলেটিভ পর্যবেক্ষণাতীত আলোচনায় আপনার খুব আগ্রহ নেই। আমারও নেই। কিন্তু তার সাথে…
এটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এখানে আপনি অস্তিত্বমান বলে জানা নেই, এমন সম্ভাবনা সম্বন্ধে আগ্রহী দেখা যাচ্ছে?
আমি আবার চেষ্টা করি। মহাবৈশ্বিক কন্স্ট্যান্ট ঙ এর-মান ২.০। মানটি ২.০০০০০০০০১ হলে বিশ্বের স্ট্রাকচার ভিন্ন হত। এটা কি বিস্ময়কর? হলে কেন? (আমার অবস্থানঃ এটা অজস্র তথ্যের মত স্রেফ একটি তথ্য। এটি পার্টিকুলারলি বিস্ময়করও নয়, এবং একে ফাইন টিউনিং বা কোন টিউনিং বলারই কোন কারণ নেই।)
@রৌরব,
মহাবৈশ্বিক কন্স্ট্যান্ট ঙ এর-মান ২.০। মানটি ২.০০০০০০০০১ হলে বিশ্বের স্ট্রাকচার ভিন্ন হত। এটা কি বিস্ময়কর? হলে কেন?
কঠিন প্রশ্ন 😕 বিস্ময়কর কেন তাতো জানিনা। শুণ্য থেকে কোন ইউনিকর্ন আমার ঘড়ে হঠাৎ উদয় হলে সেটি আমার কাছে বিস্ময়কর ঠেকবে। আমি তার ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করব। এখন যদি প্রশ্ন
করেন কেন বিস্ময়কর ঠেকল তাহলে এর উত্তর কিভাবে দোব? খুবই ক্ষুদ্র সম্ভাবনার বিষয়কে
সাধারণত: আমরা বিস্ময়কর বলি।
এটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এখানে আপনি অস্তিত্বমান বলে জানা নেই, এমন সম্ভাবনা সম্বন্ধে আগ্রহী দেখা যাচ্ছে?
কিছুই বুঝলাম না। হয়ত পাঠকদের কেউ আমাকে প্রশ্নটি বুঝতে সাহায্য করতে পারেন।
@তানভীর হানিফ,
রৌরব কিন্তু একটা চমৎকার পয়েন্ট তুলেছেন। ফাইন টিউনিংয়ের কথা বলা মানেই কিন্তু ধ্রুবকটার মান এখন যেমন, তেমন না হয়ে অন্য রকম হলে কী হতো সে নিয়ে তুলনা ও আগ্রহ দেখানো। কিন্তু অন্যরকম ধ্রুবকের মানঅলা বিশ্বের “অস্তিত্বের” কথা আমাদের জানা নেই। তার মানে আপনি একটি অনস্তিত্বমান বিশ্ব সম্পর্কে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কিন্তু উপরেই আবার আরেক ধরনের স্পেকুলেটিভ বিশ্ব সম্পর্কে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন –
এই বলে। অর্থাৎ যেমন ঘটে না, তেমন স্পেকুলেশন নিয়ে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন। কিন্তু ধ্রুবকের মানের ফাইন টিউনিংয়ের প্রসঙ্গে স্পেকুলেটিভ বিশ্বের প্রসঙ্গ অবশ্যম্ভাবী। ফাইন টিউনিং ব্যাপারটা হলো “মান”-এর একটা তুলনামূলক আলোচনা। সেখানে আমাদের বিশ্বের সাথে অন্যান্য স্পেকুলেটিভ বিশ্বের তুলনা এড়ানো যাবে কীভাবে?
@তানভীর হানিফ,
যা imply করে যে ওই phenomena-র apriori probability distribution টি আপনার জানা আছে। যেমন, মানুষের উচ্চতা কেমন হয় তার অতীত ডেটা থেকে আমাদের কাছে একটি empirical distribution জানা আছে, কাজেই হঠাৎ ১০০ হাত মানুষ দেখলে আমরা চমকে উঠব।
ফান্ডামেন্টাল কনস্ট্যান্টের probability distribution টি আপনি কিভাবে জানেন? সেই ডিসট্রিবিউশনটি কি?
@রৌরব,
ধ্রুবকের ব্যাপারটা মানুষের উচ্চতার ব্যাপারটা এক নয়। এখানে শুধু ধ্রুবকের মানটাই বিস্ময়কর বলা হচ্ছে না (মানুষের উচ্চতার বেলায় যেটা আপনি বলছেন)। ধ্রুবকের যে বিশেষ মানের জন্য যে প্রাণের উৎপত্তি ঘটতে পারে সেই মানটাই যে এই মহাবিশ্বে দেখছি সেটাকে বিস্ময়কর বলা হচ্ছে। ধ্রুবকের অন্য মান হলে প্রাণের উৎপত্তি হত না সেটা বৈজ্ঞানিক বিচারেই জানা। এর জন্য ধ্রুবকের কোন apriori probability distribution জানার দরকার নেই। আর তা ছাড়া এটা তো শুধু একটা ধ্রুবকের জন্য নয়। অন্তত ছয়টা ধ্রুবক এর মানের জন্য প্রাণের উদ্ভব ঘটে। ছয়টি ধ্রুবকের মান একই সাথে প্রাণবান্ধব মান হওয়াটা কি বিস্ময়কর নয়?
@অপার্থিব,
বিস্ময়কর বলতে কি আপনি “খুবই ক্ষুদ্র সম্ভাবনার বিষয়” বলছেন, যেমনটা তানভীর হানিফ ভাই বলেছেন?
সেক্ষেত্রে সম্ভাবনার প্রশ্ন চলে আসে, যেখানে apriori probability distribution জানাটা অবশ্য প্রয়োজনীয়। সেটা ছাড়া সম্ভাবনা নিয়ে বলা অপ্রাসঙ্গিক।
@রূপম (ধ্রুব),
Valid প্রশ্ন। কোন পূর্ব জ্ঞান ছাড়া আমরা সমান সম্ভাব্যতাই (Equal probability Distribution) ধরে নেই। সেই অর্থেই এটা ক্ষুদ্র সম্ভাবনার অর্থে বিস্ময়কর। পদার্থবিজ্ঞানের সম্পূর্ণ তত্ত্ব বা TOE জানলে ধ্রুবকগুলির মান হয়ত পদার্থবিজ্ঞানের দ্বারাই নির্ধারিত হয়ে যাবে, সেক্ষেত্রে সম্ভাব্যতাটা আর বিস্ময়কর থাকবে না, কারণ তখন probability Distribution টা হবে একটা Dirac Delta Function । তখন প্রাণের আবির্ভাব পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মের পরিণতিতে হয়েছে বলা যাবে। অবশ্য প্রাণে উৎপত্তির জন উপযুক্ত পরিবেশো চাই, শুধু ধ্রুবকের মান ঠিক হলেই হবে না। তাই জানা মহাবিশ্বে শুধু পৃথিবীতেই প্রাণের সৃষ্টি, যদিও ধ্রুবকের মান সব জায়গাতেই একই।
@রূপম (ধ্রুব),
@রূপম (ধ্রুব),
সেক্ষেত্রে সম্ভাবনার প্রশ্ন চলে আসে, যেখানে apriori probability distribution জানাটা অবশ্য প্রয়োজনীয়।
নট নেসেসারিলি। শেক্সপিয়ারের হ্যামলেটের যে উদাহরণটি দিয়েছি সেটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এক্ষেত্রে আমাদের এত জটিলতার মধ্যে যাওয়ার দরকার হবেনা–সেইটা মশা মারতে কামান দাগানোর অবস্থা হবে। ৬ টি ধ্রুবকের যতসংখ্যক কম্বিনেশনের জন্য প্রাণ সম্ভব নয়–তার সংখ্যা কি হতে পারে–এর মধ্যেই প্রশ্নটির উত্তর নিহিত ।
@তানভীর হানিফ,
ডিস্ট্রিবিউশন অ্যাসাম্পশন ছাড়া সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলা অবান্তর। আপনি হয়তো অন্য অর্থে মিন করেছেন, তবে সেটা কী হতে পারে আঁচ করতে পারছি না। হ্যামলেটের উদাহরণে implicitly assume করা হচ্ছে যে অক্ষরগুলোর যেকোনো বিন্যাস আসা সমান সম্ভাব্য (uniform distribution)। ধ্রুবকগুলোর মানের ক্ষেত্রেও আপনি দাবি করতে পারেন যে যেহেতু আমরা অতিরিক্ত কিছু জানি না, অতএব সবগুলো সংখ্যার সম্ভাবনা সমান। সেক্ষেত্রে আপনি একটা apriori probability distributionই assume করছেন।
এটা ইনাফ নাও হতে পারে। ধরুন, কথার কথা আমরা একটা ধ্রুবকের মান নিয়ে কথা বলছি, যার মান কেবল (0, 1] এর মধ্যে যেকোনোটি হতে পারে ইউনিফর্মলি (সম সম্ভাব্যভাবে)। এবার ধরুন (0.5, 1] রেইন্জের প্রতিটি সংখ্যার জন্যে প্রাণ তৈরি সম্ভব নয়। তো এই রেইন্জে কতোগুলো সংখ্যা হতে পারে? অগণনাযোগ্য অসীম সংখ্যক। তবে যেহেতু (0, 0.5] রেইন্জের প্রতিটি সংখ্যার জন্যে প্রাণ তৈরি সম্ভব, অতএব প্রাণ তৈরি হবার সুযোগযুক্ত ধ্রুবক পাবার সম্ভাবনা কিন্তু (0.5-0)/(1-0), বা 0.5, অর্থাৎ প্রাণ তৈরি না হবার সম্ভাবনার সমান। ফলে অসীম সংখ্যক অনুপোযোগী মান আছে বলাটাই এখানে ইনাফ না।
ফাইন টিউনিংয়ের মতো এতো বড় বিবরণ প্রদান করার পর সেটা আর মশাতুল্য রয় কি? এর জন্যে কামান দাগানোও বরং সামান্য হয়ে যায়। 🙂
আপনাকে দেখি সাহায্য করতে পারি কিনা। ধরুন, আপনি যদি দাবি করেন যে ধ্রুবক ছয়টির মান কেবল (0,1]^6 এর ইউনিট হাইপার কিউবে থাকতে পারে এবং এর ভেতরে সকল মান সম সম্ভাব্য (uniform distribution), এবং প্রাণ উৎপাদনের উপযোগী ধ্রুবকের মান একটা [0, e]^6 আকারের হাইপারকিউবে সীমাবদ্ধ, যেখানে e একটি অতি ক্ষুদ্র মান (epsilon), সেক্ষেত্রে বলতে পারেন যে ওই ধ্রুবক ছয়টির প্রাণ উৎপাদনকারী মান নেবার সম্ভাবনা e^6, বা অতি ক্ষুদ্র। প্রশ্ন হচ্ছে, ইজ দ্যাট দ্য কেইস?
@রূপম (ধ্রুব),
সেইটা একটা ডেল্টা-ফাংশন ডিস্ট্রিবিউশন হবে। এ ধরণের ডিস্ট্রিবিউশন থাকলে সেটা উল্লেখ করে অতিরিক্ত কোন তথ্য পাওয়া যায় না। আগামীকাল সূর্য না ওঠবার সম্ভাবনা কত তা জানার জন্য বা সে সম্পর্কে যৌক্তিক অনুমান করতে কি প্রোবাবিলিটি ডিস্ট্রিবিউশানের প্রয়োজণ পড়ে? সূর্য ওঠার বিষয়টিকে যদি কোয়ান্টিফাই করা যায় তাহলে আপনার যুক্তির ধারায় আগামীকাল এটির না ওঠার সম্ভাবনা ১০০% দেখানো যায়।
এ বিলিয়ন তলবিশিষ্ট একটি গুটিকে ছুড়ে মারা হলে ৭ পড়বার সম্ভাবনা কত? এর জন্য প্রোবাবিলিটি
ডিস্ট্রিবিউশন জানাটাই বা জরুরী কেন?
@তানভীর হানিফ,
এখানে একটা ইমপ্লিসিট অ্যাসাম্পশান আছে যেটা অনুক্ত থাকায় বিতর্কের নিষ্পত্তি হচ্ছে না । সেই অনুক্ত বা উহ্য অ্যাসাম্পশান হল গুটিটা বা মুদ্রাটা Unbiased . তাহলেই সব সঙ্খ্যা হবার সম্ভাবনা সমান আর যে কোন বিশেষ সঙ্খ্যা হবার সম্ভাবনা ক্ষুদ্র (বিলিয়ন তলবিশিষ্ট গুটি) বা ০.৫ (Unbiased মুদ্রা) হবে। কিন্তু একটা মুদ্রা একদিকে হেভিলি biased হলে (গঠনের ডিফেক্ট এর জন্য) হেড্স টেইলস্ হবার সম্ভাবনা ০.৫/০.৫ না হয়ে ০.০০০০০০০০০১/.৯৯৯৯৯৯৯৯৯৯ ও হতে পারে। ছয় ধ্রুবকের বেলায় সেটা হতে পারে, পদার্থবিজ্ঞানের অজানা সম্পূর্ণ তত্ত্ব হয়ত ছয় ধ্রুবকের মান একটা বিশেষ মানের প্রতি biased করতে পারে। যে ক্ষেত্রে আমি আর আপনি ডেল্টা ফাঙ্কশনের কথা বলছি। আমরা যেহেতু জানিনা ছয় ধ্রুবকের মান প্রাকৃতিক কোন কারণে বিশেষ মানের প্রতি biased কিন তাই সব মানই সমসম্ভাবনাময় ধরে ( বা ডেল্টা ফাঙ্কশন ডিস্ট্রিবিউশান যা পর্যবেক্ষণলব্ধ মানকে কেন্দ্র করে বিস্তৃত, সেটা ব্যতীত যে কোন ডিস্ট্রিবিউশন ধরে নিলেও) ছয়টি ধ্রুবকের মান প্রাণবান্ধব হবার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। আশা করি ব্যাপারটা রূপম(ধ্রুব) কে বোঝাতে পেরেছি।
@অপার্থিব,
মোক্ষম।
আমি আপনার আগের মন্তব্যটা কিন্তু ধরতে পেরেছি।
কিন্তু
এখানে একটা কনফ্লিক্ট তৈরি হচ্ছে। “সব মানই সমসম্ভাবনাময়” এর অর্থ কিন্তু ইউনিফর্ম ডিস্ট্রিবিউশন। আর ডেল্টা ফাংশন এর সম্পূর্ণ বিপরীত। এটা বলে যে কেবল একটা মানই সম্ভাব্য। অন্য সকল মান অ-স-ম্ভ-ব। তো ছয়টি ধ্রুবকের ক্ষেত্রে এই দুটি ডিস্ট্রিবিউশনের কোনটি apriori assumption হিসেবে নিচ্ছেন? কিংবা হয়তো আপনি ডেল্টা ফাংশন বলতে একটা ক্ষুদ্র রেইন্জে ইউনিফর্ম ডিস্ট্রিবিউশনই মিন করছেন।
@অপার্থিব,
আর তাছাড়া উপরের মন্তব্যে যখন বলেছিলেন যে –
তখন কিন্তু Dirac delta function এর সনাতন অর্থটা ধরেছিলেন বলেই মনে হচ্ছে। অর্থাৎ কিনা কেবল দেখা মানটাই সম্ভাব্য হয়ে যাবে, ফলে নো বিস্ময়।
@অপার্থিব,
তবে probability distribution নিয়ে আলাপে বেশ মজা হলো :))
@তানভীর হানিফ,
এ প্রশ্ন করলে প্রথমেই জানতে চাওয়া হয়, গুটিটা unbiased কিনা, যেটা প্রোবাবিলিটি ডিস্ট্রিবিউশন জানার সমতুল্য।
আর ৭ তো অ্যালাওয়েবল রেইনজের বাইরের মান। আমাদের বিশ্বের ধ্রুবকের মানটাতো তেমন না। হয়তো আপনার গুটিতে ৭ও অ্যালাওয়েবল। তো তখন গুটি unbiased কিনা না বললে এমন সম্ভাবনাও থাকে যে গুটিটা এমনভাবে কোণা করে বানানো যে সবসময় ৭ই দিবে। সেই অর্থে জানাটা আবশ্যক বলেছি।
আপনি যখন বলেছেন “নট নেসেসারিলি”, তখন ইউনিফর্ম ডিস্ট্রিবিউশনকে অনুল্লেখ্য মিন করেছেন, সেই অর্থেই তাহলে ধরছি। কিন্তু আমরা তো এটাই শিওর ছিলাম না যে কোনো apriori probability distribution আপনার জানা আছে, নাকি না। মানে ভাবছিলাম এমনও হতে পারে যে আপনি জানেন যে apriori probability distribution টা একটা বিশেষ মানের চারপাশে normally distributed। 🙂
এটা কীভাবে বললেন বুঝি নি। কিন্তু যেহেতু একটা দাবি করে বসলেন, যেটা আমি অসত্য মনে করি, তাহলে একটু বিস্তারিতে দেখাই, কেনো তা অসত্য। আমার যুক্তি বলতে কোনটা মিন করেছেন, তা নিশ্চিত নই। তবে probability দিয়ে অ্যাপ্রোচ করলে প্রতিদিন সূর্য ওঠাটা একটা experiment হিসেবে দেখা যায় এবং এর দুটো নমুনা, সূর্য ওঠা ও না ওঠা। ফলে P(সূর্য উঠবে) + P(উঠবে না) = 1. এখন প্রশ্ন হচ্ছে P(সূর্য উঠবে) আর P(উঠবে না) আলাদাভাবে কতো, অর্থাৎ এদের probability distribution কী? যদি আমাদের কোনো অ্যাপ্রায়োরি নলেজ না থাকতো, তাহলে 0.5 বলা যেতো। তবে যেহেতু এই experiment আমাদের জীবদ্দশায় বহুবার চালিত হয়েছে, এবং তার প্রতিবারই সূর্য উঠার ঘটনাটা ঘটেছে, ফলে আমাদের apriori probability distribution হচ্ছে P(আগামীকাল উঠবে না) = 0. সে জায়গায় আপনি 100% কীভাবে পেলেন, নিশ্চিত নই। তবে খুব সিরিয়াসলি না বলে থাকলে ব্যাপারটা বাদও দেওয়া যায়।
এটাই বরং ভালো পয়েন্ট হয়েছে। এটা কিন্তু ইউনিফর্মের চেয়ে ডিফারেন্ট। ডিরাক ডেল্টা ফাংশন ডিস্ট্রিবিউশনে অ্যালাওয়েবল রেইন্জের মধ্যে প্রিসাইসলি কেবল একটা মানের জন্যে সম্ভাবনা ১ হয়, অন্য সকল মানের জন্যে শূন্য। যেমনটা উপরের সূর্য ওঠার ক্ষেত্রে হয়েছে। unbiased গুটি বা অক্ষরের ব্লক ছোড়ার ক্ষেত্রে কিন্তু আবার ইউনিফর্ম অনুমান করা হচ্ছে। (এটা প্রমাণ করছে যে অনুমিত ডিস্ট্রিবিউশনটা পরিষ্কার করে বলাটা খুবই কাজের 🙂 ।) ডেল্টা ফাংশন ডিস্ট্রিবিউশনটা যদি আমাদের মহাবিশ্বের ধ্রুবকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য করেন, তাহলে কিন্তু ব্যাপারটা ফাইন টিউনিংয়ের বিপরীতে যাচ্ছে। এটা বলছে যে – যে মানটা আমরা দেখতে পেয়েছি, কেবল সেই মানটাই সম্ভাব্য। ফলে আমাদের বিশ্বের ধ্রুবকের উপরে ডেল্টা ফাংশন ডিস্ট্রিবিউশন অ্যাপ্লাই করলে ফাইন টিউনিংয়ের প্রশ্ন সিম্প্লি নাই হয়ে যায়। ফাইন টিউনিংয়ের দাবিটার জন্যে বরং ইউনিফর্ম ডিস্ট্রিবিউশন অনুমান করাটা সহায়ক, যেমনটা উপরে একটা উদাহরণস্বরূপ দেখিয়েছি (e^6)।
@রূপম (ধ্রুব),
আমার আগের এক মন্তব্যের উপর আপনার প্রতিমন্তব্যের (সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১২ at ২:১০ অপরাহ্ণ) জবাব এখানে দিতে হচ্ছে কারণ ওখানে মন্তব্যের সীমা অতিক্রম করায় মন্তব্যের অপশান নেই। আপনার মন্তব্যঃ
আপনি লক্ষ্য করবেন আমি সেখানে “বা” (অথবা) বলেছিলাম ( বা ডেল্টা ফাঙ্কশন ডিস্ট্রিবিউশান যা পর্যবেক্ষণলব্ধ মানকে কেন্দ্র করে বিস্তৃত, সেটা ব্যতীত যে কোন ডিস্ট্রিবিউশন ধরে নিলেও)। “সেটা ব্যতীত যে কোন ডিস্ট্রিবিউশন ধরে নিলেও” মানে আমি শুধু ইউনিফর্ম ডিস্ট্রিবিউশনে সীমাবদ্ধ রাখিনি। সোজা ভাষায় ডিরাক ডেল্টা ডিস্ট্রিবিউশন ছাড়া যে কোন ডিস্ট্রিবিউশনেই একটা বিশেষ মান হবার সম্ভাব্যতা প্রায় শূন্য।
@রূপম (ধ্রুব),
এখানে একটু ভুল আছে। একটু সাহায্য করি। আপনি যদি (0, 1] দ্বারা ধ্রুবকটির যে সমস্ত ভ্যালুর জন্য প্রাণ সৃষ্টি সম্ভব সে সমস্তকে ধরেন তাহলে হিসাব একরকম আর যদি সম্ভাব্য সমস্ত ভ্যালু ধরেন তাহলে আরেক রকম। যেহেতু (..] চিন্থ ব্যবহার করেছেন সেহেতু ধরে নিচ্ছি প্রথোমক্তটি ধরেছেন। সেক্ষেত্রে, প্রাণ সৃষ্টি সম্ভব নয় এমন ভ্যালুসমূহের জন্য (0.5, 1] ধরাটা পুরোপুরি ভুল। আর যদি (0, 1] দ্বারা ধ্রুবকটির সম্ভাব্য সমস্ত ভ্যালু ধরেন সেটাও ভুল। কারণ সেক্ষেত্রে রেঞ্জটি হবে (0, Infinity) । এখন
হিসাব করে দেখুন, সম্ভাবনা ৫০%-৫০% হবেনা। অন্য কথায়, ধ্রুবকটির যে মানের জন্য প্রাণ উৎপন্ন হবে তাকে এ্যাকচুয়ালি […] অর্থাৎ ডাবল বাউন্ডেড এবং সম্ভাব্য সমস্ত মানকে ডাবল্ আনবাউন্ডেড (..) ধরতে হবে। সেক্ষেত্রে, সম্ভাবনা হবে শুণ্যের নিকটবর্তী। দেখি, আমার বক্তব্যকে আরও পরিষ্কারভাবে বুঝাতে পারি কিনা। ধরা, যাক আমি একটা এ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে চাই। এটির পাসওয়ার্ড হল ১৫৩৮৯৬৭৪৩৭৮৫৭৪৪২৯৬ থেকে ১৫৩৮৯৬৭৪৩৭৮৫৭৪৪২৯৯ এর মধ্যবর্তী যেকোন সংখ্যা। । কিন্ত সেটি আমরা জানিনা। সুতরাং সম্ভাব্য পাসওয়ার্ডের সংখ্যা অসীম (..) কিন্ত প্রকৃত পাসওয়ার্ডের ভ্যালুসমূহের রেঞ্জ ডাবল বাউন্ডেড […] । এখন, আপনি কি বলতে চান যে নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ডটির বদলে যেকোন র্যা ন্ডম নম্বর বসিয়ে এ্যাকাউন্টটি হ্যাক হবার সম্ভাবনা ৫০%? অথবা আপনি কি বলতে চান যে এই রেঞ্জের বাইরে কোন সংখ্যা বায়াসড্ কিনা সেটি আমাদের জানতে হবে? সেই দাবীটি কি একটু অর্থহীণ মনে হয়না? মনে রাখতে হবে যে সম্ভাবনার মান সদাসর্বদাই ০ থেকে ১ এর মধ্যবর্তী হয়। ফাইন টিউনিং এর সুবিধা হল এর পাসওয়ার্ডটি বা এর ডাবল বাউন্ডেড রেঞ্জটিকে আমরা জানি। সেই রেঞ্জের বাইরে অসীম সংখ্যক সংখ্যা আছে। সেজন্য এ্যাকাউন্ট হ্যাক হবার সম্ভাবনা শুণ্যের নিকটবর্তী।
@অপার্থিব,
এক্ষেত্রে আপনার মত কি?
@রূপম (ধ্রুব), @তানভীর হানিফ
মন্ত্যব্যের অপশান স্যাচারেটেড হওয়ায় আমি এখানে ড: তানভীর হানিফের (সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১২ at ৫:২৩ অপরাহ্ণ) এর মন্তব্যঃ “@অপার্থিব,এক্ষেত্রে আপনার মত কি?” এর জবাব দিচ্ছি ।
আমার মনে হয় রূপম (ধ্রুব) দুটো সীমাবদ্ধ রেঞ্জের অনুপাতের কথা বলতে চেয়েছেন। (..] এর চিহ্ণ একটা বাড়তি জটিলতা সৃষ্টি করছে। আমি এভাবে এটাকে বুঝব। রূপম (ধ্রুব) বলতে চাইছেন যে যদি হাইপোথেটিক্যালি ধ্রুবকের মান [০,১] এর মধ্যে সীমিত থাকে সমসম্ভবভাবে (প্রাণ বান্ধিব অর্থে নয় মানের অর্থে) কিন্তু শুধু (০,.৫] এর মধ্যে থাকলেই প্রাণবান্ধব হবে তাহলে ধ্রুবকের প্রাণবান্ধব হবার সম্ভাবনা ০.৫ কারণ (০,.৫] হল (০,১) এর অর্ধেক। কিন্তু ধ্রুবকের মান প্রাণবান্ধব না হবার সংখ্যা আবার অসীম, কারণ (.৫,১] এর মধ্য ধ্রুবকের মানের সংখ্যা অসীম (কন্টিনিউয়াস রিয়াল নাম্বার যেহেতু)। লক্ষ্যণীয় এখানে প্রাণবান্ধব হবার ও না হবার রেঞ্জ দূটোই ফাইনাইট সেট। কিন্তু আপনি যথার্থই বলছেন যে যেহেতু ধ্রুবকের মান আসলে একটা ইনফিনিট সেট বা রেঞ্জ (০, অসীম) সেহেতু ধ্রুবকের প্রাণবান্ধব মান হবার (সেটা একটা নির্দিষ্ট মানই হোক বা ফাইনাইট রেঞ্জই হোক) সম্ভাবনা শুন্যের কাছাকাছি।
@তানভীর হানিফ,
উপরের মন্তব্যে
উপরের মন্তব্যের এই অংশ ঘ্যাচাং হবে।
@রূপম (ধ্রুব),
বিলিয়ন তলবিশিষ্ট একটি গুটির জায়গায় বিলিয়নটা ছক্কার গুটির কথা মাথায় কাজ করছিলো বোধহয় 😛
@তানভীর হানিফ,
গুটিটা কি আনবায়াস্ড?
“এ বিলিয়ন তলবিশিষ্ট একটি গুটিকে ছুড়ে মারা হলে ৭ পড়বার সম্ভাবনা কত” এটা জানা আর প্রবাবিলিটি ডিস্ট্রিবিউশন জানা একই জিনিস। ওটাই প্রবাবিলিটি ডিস্ট্রিবিউশনের সংজ্ঞা।
আপনার ও অপার্থিবের বক্তব্যের মোদ্দা কথা হচ্ছে, পরম ধ্রুবকের মান ০ থেকে অসীমের মধ্যে ইউনিফর্মনি ডিস্ট্রিবিউটেট, এটা ধরে নিতে হবে, যেখান থেকে ফাইন টিউনিং বা তদ্জাত বিস্ময়ের উৎপত্তি।
আমি (এবং সম্ভবত রূপম (ধ্রুব)) এই অনুমানের কোন কারণ দেখছি না। পরম ধ্রুবকের মানের প্রবাবিলিটি ডিস্ট্রিবিউশন কি, তা আমাদের জানা নেই, এবং এবিষয়ক অনুমানজাত বিস্ময় বোধেও সায় দিতে পারছি না। পরম ধ্রুবকের ডিস্ট্রিবিউশন যেকোন কিছুই হতে পারে। সেটা হতে পারে একটি মাত্র নির্দিষ্ট মানের ওপর ১ প্রবাবিলিটির মেজার।
@রৌরব,
উঁহু, দু’টোর মধ্যে তফাৎ আছে। প্রোবাবিলিটি ডিস্ট্রিবিউশন জানলে আপনি ৭ কেন যেকোন সংখ্যা পড়বার সম্ভাবনা জানতে পারবেন–প্রোভাইডেড ডিসট্রিবিউশনের সূত্রটি সঠিক আছে। ধরুন, ১০০ তল বিশিষ্ট একটি গুঁটি আপনি ১০০ বার চাললেন এবং ৯৯ বার ৭ পেলেন, ১ বার ৬ পেলেন তাহলে আপনি ৭ বা ৬ পাবার সম্ভাবনা হিসাব কষে বের করতে পারবেন। এর ওপর ভিত্তি করে গুটিটির বায়াসড বা আনবায়াসডনেস সম্পর্কে সিদ্ধান্তেও আসতে পারবেন। কিন্ত, ৮ পাবার সম্ভাবনা কত সেটি কি বলতে পারবেন? না পারলে আপনি যা বললেন সেটি প্রোবাবিলিটি ডিস্ট্রিবিউশনের সংজ্ঞা হয় কি করে? এটুকু পরিষ্কার হলে তারপর ইউনিফর্ম ডিস্ট্রিবিউশানের বিসয়ে আসা যাবে।
@তানভীর হানিফ,
sure। প্রবাবিলিটি ডিসট্রিবউশন জানা মানে হল প্রত্যেকটি ভ্যালুর প্রবাবিলিটি জানা আর ৭ এর সম্ভাবনা জানা মানে ডিসট্রিবিউশনটির অংশবিশেষ জানা, বলতে পারেন একটা প্রজেকশন জানা। কিন্তু এই পর্যবেক্ষণের implication কি? আমার আগের বক্তব্যই এখন আর একটু টেকনিক্যাল বা pedantic ভাবে লিখতে হবে—
গুটিটি ছুঁড়লে ৭ আসার সম্ভাবনা কত, এটা জানার জন্য probability distribution টি ৭ ভ্যালুটির ওপর কতটুকু measure বসিয়েছে, সেটা জানতে হবে।
কিন্তু সেটা আমরা জানছি কিভাবে? সেটা ইউনিফর্ম কেন?
@রৌরব,
@তানভীর হানিফ,
আমি আরও একভাবে চেষ্টা করি।
আপনি বলছেন মহাবিশ্ব “ফাইন টিউন্ড”। ফাইন টিউনিং এর সংজ্ঞা কি? একটি অ-ফাইন টিউন্ড মহাবিশ্বের উদাহরণ কি হতে পারে?
@রৌরব,
উপরে অপার্থিব ভাই এবং রূপম (ধ্রুব) ভাইকে করা কমেন্টে এর জবাব আছে। অ-ফাইন টিউন্ড মহাবিশ্বের
উদাহরণ হতে পারে এমন একটি মহাবিশ্ব যেটির এনট্রপি ম্যাক্সিমাল।
@তানভীর হানিফ,
মন্তব্য আর দেয়া সম্ভব না হওয়ায় রূপম (ধ্রুব)-এর তোলা একটি প্রসঙ্গে এখানে মন্তব্য করছি।
কেন বলুন তো? প্রাণ উৎপন্ন কারী ভ্যালু আন-বাউন্ডেড ধরা যাবে না কেন?
এনিওয়ে রূপম (ধ্রুব) যেটা বলতে চেয়েছেন, সেটা হল আপনি যে অসীম সেটই ধরেন না কেন, তার অর্ধেক মেজারের আরেকটা অসীম সেট পাওয়া সম্ভব। কাজেই সম্ভাব্য মান অসীম হলেও, এমন হতে পারে যে প্রাণ উৎপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা ০.৫। রূপম (ধ্রুব) উদাহরণ দিয়েছেন (০, ১] কে পুরো সেটা ধরে, কিন্ত (০, infinity] কে পুরো সেট ধরেও অতি সহজে একই উদাহরণ দেয়া যায় — কারণ এদুটো সেট Bijective (একই সেট অন্যভাবে লেখা)।
@রৌরব,
আপনার প্রশ্নটার সাথে - ভিন্ন ধ্রুবকের মানঅলা স্থিতিশীল বিশ্ব থাকতে পারে কিনা – এই প্রশ্ন কি রিলেটেড ধরা যায়?
@রূপম (ধ্রুব),
না। আমি “ফাইন্ড টিউনিং” এর ব্যাপারটা এত বিস্ময়কর কেন, সেটাই বুঝে উঠতে পারছিনা। আমাদের অভিজ্ঞতায় সংখ্যা জিনিসটা যেভাবে কাজ করে, তারা যেভাবে পরস্পর সংলগ্ন, বিশ্বের ফান্ডামেন্টাল কনস্ট্যান্টের সে ধরণের ব্যবহার করতে হবে কেন?
@রূপম (ধ্রুব),
আপনার এই মন্তব্যটি এখন বুঝতে পারলাম। আমি আপনার ০.৫ প্রাণ-বান্ধবতা প্রবাবিলিটির উপর একটি মন্তব্য করছি।
এই লেখা আর কমেন্টগুলোর মাঝে পুরনো মুক্তমনা ভাব আছে। সেই আলোচনা :))
@ইফতি,
হ্যা, আমারো এতদিন পরে এতজনের মতামত, অভিমত এবং বিতর্ক দেখে নিজেকে অনুপ্রাণিত লাগছে।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
অসাধারন দাদা। খুব ভালো লেগেছে।
@মোসাদ্দিক উজ্জ্বল,
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে ‘শুন্যতা’ নিয়ে কে কি বলেছে সেটা গুরুত্বপূর্ন নয়। আসল প্রশ্ন হচ্ছে যে , স্পেস-টাইমের নিরীখে ‘চরম শুন্যতাকে’ পদার্থবিজ্ঞানের ‘প্রতিষ্টিত তত্বসমূহ’ তথা প্রকৃতি অনুমোদন করে কি না ? এর পরেই আমরা প্রশ্ন রাখতে পারি , যে পর্যবেক্ষনযোগ্য বর্তমান যে মহাবিশ্বকে আমরা চিনি সেটা সর্বঅস্তিত্বমান অন্য কোন কিছুর (যেমন অন্য মহাবিশ্ব , বা যেকোন কিছু) বিবর্তিত রূপ কিনা। বিবর্তিত না হয়ে শুণ্যতা থেকে কেন কোন কিছুর উদ্ভব হতেই হবে সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। এই প্রশ্ন শুধুমাত্র পদার্তবিদ্যার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, আমাদের জীবজগতের উদ্ভব এবং অস্তিত্বের প্রশ্নে সাথেও জড়িত।
@সংশপ্তক,
না সেধরণের কোন চরম বা পরম শুণ্যতা বা এ্যাবসোলিউট ভয়ড পদার্থবিজ্ঞানের কোন তত্ত্বে অদ্যবধি নাই। ক্রাউসও প্রকারান্তরে সেটিই বলেছেন। অনুমোদিত কিনা সেটি ভিন্ন প্রশ্ন। আইনস্টাইনের তত্ত্বানুসারে স্থান-কাল এবং বস্তুর পরস্পর নিরপেক্ষ অস্তিত্ব নাই। মানে বস্তু-শক্তি উধাও করে দিলে স্হান-কালও উধাও হয়ে যাবে। স্পেস-টাইম সিংগুলারিটিতে যেখানে পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো ভেঙ্গে পড়ে সেখানে আসলেই কি হয় সেটি আমরা এখনও জানিনা। তবে সেটি এ্যাবসোলিউট ভয়ড হতে হবে (বা এ্যারিস্টোটলের ভাষায়—পাথড় যা নিয়ে ভাবে) এমন কথা পদার্থবিজ্ঞান বলেনা।
@তানভীর হানিফ,
তাহলে তো শূন্য থেকে কিছু উদ্ভব হওয়া নিয়ে তর্ক করাটাই অর্থহীন। একটি বৈজ্ঞানিক প্রকল্পের সফলতা নির্ভর করে সঠিক প্রশ্ন উত্থাপনের উপর। ভুল প্রশ্ন আমাদের ভুল পথেই পরিচালিত করবে। আমার মনে হয় যে , ‘শুন্য’ থেকে কিছু উদ্ভব হওয়ার মৌলিক ধারনাটির উৎস বিজ্ঞান নয় বরং অধিবিদ্যা বা ধর্ম। প্রাকৃতিক নিয়মগুলোর দিকে তাকালে আমারা কি দেখি ? আমরা দেখি যে প্রকৃতি ভ্যাকুউম বরদাশত করে না এবং ভ্যাকুয়াম তৈরী হতে দেয় না। আমরা কেন এই অনুকল্প নিয়ে অগ্রসর হইনা যে , সব সময়ই শুন্যতা নয় বরং কিছু না কিছু ছিল এবং আমাদের এই মহাবিশ্ব ও তার অন্তর্ভুক্ত সকল কিছুই ( সেই কিছুর) বিবর্তিত অবস্থা মাত্র যা সদা বিবর্তনশীল ?
@সংশপ্তক,
তখন সমস্যা হচ্ছে এটা প্রমাণ করবেন কীভাবে? প্লাস ধর্মবাদীদের সুযোগ থেকেই যায় বলার যে সেই “কিছু না কিছুকে” সময়ের আগে ঈশ্বর তৈরি করেছেন। কিংবা সেই কিছু না কিছুর ভেতরেই ঈশ্বর আছেন। সর্বস্থান ও কালে বিরাজমান।
এখানে লেখাটার একটা ইউটিলিটি আমি বুঝতে পারছি। ধারণা করছি যে সব অ্যাসাম্পশন পর্যবেক্ষণযোগ্য দুনিয়ার সাথে সামাঞ্জস্যতাপূর্ণ নয়। তো দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যে এমন সামাঞ্জস্যতাপূর্ণ অ্যাসাম্পশন আছে, যাতে ঈশ্বরের প্রয়োজন নেই। কিন্তু সামাঞ্জস্যতাপূর্ণ অ্যাসাম্পশন যদি ইউনিক না হয়, সেগুলোকে খুব সিরিয়াসলি নেওয়ারও কোনো সুযোগ দেখছি না। সেই কথাগুলোই ইন্টারেস্টিং, যেগুলো ফলসিফিকেশনের পরীক্ষায় বসতে রাজি।
@রূপম (ধ্রুব),
একটা বৈজ্ঞানিক প্রকল্প সফলভাবে প্রমান করার চেয়ে যখন কাল্পনিক ঈশ্বরের অনস্তিত্ব প্রমান করা বড় হয়ে দেখা দেয় , সেই প্রকল্পের সফলতার কোন সম্ভাবনাই নেই। কেন জানি , এক দল ‘বিজ্ঞানী’ পণ করেছেন যে , বিজ্ঞান গোল্লায় যায় যাক না কিন্তু কাল্পনিক ঈশ্বরকে ধুলায় মিশিয়ে দিতেই হবে। একারনে সাধারণ অবস্হায় যেসব অনুকল্প কোন বৈজ্ঞানিক মহলে একদম ধোপে টেকে না ফলসিফিকেশন না থাকায় , ঈশ্বরকে অস্তিত্বহীন করার মূলা ঝুলিয়ে দিলে আবার সেই একই অনুকল্পের পিয়ার রিভিউ পাওয়া যায়। বিজ্ঞানকে সামনে এগুতে হলে এই ঈশ্বর তুলাধুনা করার অবসেশন থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে।
@সংশপ্তক,
এ ব্যাপারটা এক-পাক্ষিক নয়। বরং উল্টো-পক্ষেরই দোষ আমি বেশি বলব। আমার মনে আছে বছর পাঁচ দশেক আগেও এগুলো নিয়ে গা করতেন না (জীববিজ্ঞানে যেমন রিচার্ড ডকিন্স জেরি কোয়েনরা ছিলেন আইডি ঠেকাতে, পদার্থবিজ্ঞানে তেমন কেউ ছিলেন না, এমনকি স্টিফেন হকিং এর মত বিজ্ঞানীও ‘মাইন্ড অব গড’ নিয়ে এসে নানা রহস্য আর ধানাই পানাই করতেন)। এর ফলে ‘ফাইন-টিউনিং আর্গুমেন্ট’ , ‘এন্থ্রপিক প্রিন্সিপাল’ এর মত ছদ্মধর্মীয় ছাইপাশ পদার্থবিজ্ঞানের মূল ধারার অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিল। আবার সেগুলার নানা ভাগ- Strong anthropic principle (SAP) , Weak anthropic principle (WAP)… ইত্যাদি। আমি এখনো বুঝি না এই ছাইপাঁশ কিভাবে পদার্থবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত হয়। আমার কাছে এগুলো সবই completely Ridiculous anthropic principle (CRAP). এখন কথা হচ্ছে বিপরীতপক্ষের বিজ্ঞানীরা (যেমন এন্থনি এগুরি, ক্রাউস, স্টেঙ্গর, ক্রিস্টোফার সিরোলা, ওয়েনবার্গ…) যদি এর বিপরীতে বলিষ্ঠ যুক্তি দেখাতে না শুরু করতেন শাখাটির অবস্থা এখনকার মতো অবস্থায় থাকতো বলেই আমার ধারণা। আমি মনে করি এরও দরকার আছে। পদার্থবিজ্ঞানে টিপ্লার আর শমশের আলী মার্কা লোকজন কম নেই, যারা ফুটো পেলেই ঈশ্বর গুজে দেয় … 🙂
@অভিজিৎ,
এ্যানথ্রপিক প্রিন্সিপালটি আমার কাছেও উদ্ভট মনে হয়। তবে সেটা হয়ত এর ব্যাখ্যা বোঝার ভুলও হতে পারে বা এর গ্রহণযোগ্য ভার্শান আচে। ডকিন্সের ব্যাখ্যাটি (http://www.youtube.com/watch?v=CexcmggApr4) মনে হয় কিছুটা বোধগম্য। ঈশ্বরের প্রমাণস্বরূপ ফাই টিউনিং আর্গুমেন্ট পদার্থবিদ্যার অংশ ছিল বলে জানা নেই। তবে ফাইন টিউনিং আছে অবশ্যই। হকিং বলেছেন:”The laws of science, as we know them at present, contain many fundamental numbers, like the size of the electric charge of the electron and the ratio of the masses of the proton and the electron. … The remarkable fact is that the values of these numbers seem to have been very finely adjusted to make possible the development of life.”বিজ্ঞানী পল ডেভিস বলেছেন:”There is now broad agreement among physicists and cosmologists that the Universe is in several respects ‘fine-tuned’ for life”.পেনরোজ বলেছেন:‘There has got to be fine tuning. This is fine tuning, this is incredible precision in the organisation of the initial universe.’ সেটিকে ব্যাখ্যা করবার জন্য দরকার হয় মাল্টিভার্স বা স্ট্রিং ল্যান্ডস্কেপের–যেটি আবার এ্যানথ্রপিক প্রিন্সিপাল নির্ভর। ওয়াইনবার্গের মত: Steven Weinberg believes the Anthropic Principle may be appropriated by cosmologists committed to nontheism, and refers to that Principle as a “turning point” in modern science because applying it to the string landscape “…may explain how the constants of nature that we observe can take values suitable for life without being fine-tuned by a benevolent creator.
অর্থাৎ, ওয়াইনবার্গ বলছেন না যে ফাইন টিউনিং নাই। তিনি বলছেন যে এ্যানথ্রপিক প্রিন্সিপাল ব্যবহার করে ঈশ্বরের অস্তিত্ব ছাড়াই এটি ব্যাখ্যা করা যাবে এবং নান-থেইস্ট বিজ্ঞানীদের কাছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয়না যে এই বিতর্কগুলো ধর্মীয় লাইনে হয়েচে। সাসকিন্ড, আন্দ্রে লিনডে, ডকিন্স, পেনরোজ বা ওয়াইনবার্গতো ধর্মবাদী নন। পশ্চিমে টিপলারের মতন ধার্মিক পদার্থবিদের সংখ্যা নগন্য।
@তানভীর হানিফ,
আপনাকে তাহলে ‘পদার্থবিদ’ হিউ রসের বইগুলো পড়তে হবে। যেখানে তিনি ফাইন টিউন আর্গুমেন্টকে ঈশ্বরের প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। এরকম একটি বই – Hugh Ross, The Creator and the Cosmos: How the Greatest Scientific Discoveries of the Century Reveal God. (Colorado Springs: NavPress)। রস ‘Reasons to Believe’ নামের ছদ্মবিজ্ঞান্ময় সাইটের ফাউন্ডার। অবশ্য অনেক পদার্থবিদই রসের এইসব ধানাই পানাইকে খণ্ডন করেছেন, একটি পেপার দেখুন এখানে।
হকিং এর উদ্ধৃতিটি ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম থেকে নেয়া। তখনো মাল্টিভার্স ছবিতে আসেনি। এমনকি মাল্টিভার্সের আবেদন ছাড়াও ফাইনটিউন আর্গুমেন্টকে বাতিল করা যায়। এমনকি স্ট্যান্ডার্ড ইনফ্লেশন দিয়েই ফাইন টিউনিং এর খণ্ডন সম্ভব। আমি একটা চমৎকার বই পড়েছি সম্প্রতি এ নিয়ে। ‘The Fallacy of Fine-Tuning: Why the Universe Is Not Designed for Us’ – পড়ে দেখতে পারেন।
@অভিজিৎ,
শমশের আলী, টিপলার বা রসের বক্তব্যতো পদার্থবিজ্ঞানের অংশ হতে পারেনা, যেমন কিথ
মুর বা ফ্রান্সিস কলিন্স কিছু লিখলেই তা এমব্রাইওলজি বা বায়োলজির অংশ হতে পারেনা।।
তার এধরণের কোন বক্তব্য কোন পিয়ার রিভিউড মেইন-স্ট্রিম জার্নালে প্রকাশিত হলে না
হয় সেটা একটা বিষয় হত।
আমি ফাইন টিউনড আর্গুমেন্টের পক্ষে কিন্ত বলছিনা বা আমি এটিও বলছি না যে ইউনিভার্স
ডিজাইনড ফর আস। আমি মহাবিশ্বের ফাইন টিউনিং যে একটি ফ্যাক্ট সেটি বলছি। সেটিকে
খন্ডন না–ব্যাখ্যা করা হয়। ওয়াইনবার্গের বক্তব্যটি উল্লেখযোগ্য।
@তানভীর হানিফ,
ওয়াইনবার্গ যেভাবে বলেছেন সেভাবে দেখলে ঠিকাছে, কিন্তু অনেক সময় ‘ফাইন টিউনিং’ এর ইন্টারপ্রেটেশনকে কেন্দ্র করে নানা ধরণের ঘোঁট পাকানো হয়, আপনি স্টেঙ্গরের ‘The Fallacy of Fine-Tuning: Why the Universe Is Not Designed for Us’ বইটি পড়লেই এর বাস্তবতা বুঝবেন। উনার দুটো পেপার আছে এখানে এবং এখানে, যেখানে বইটির সামারি পাবেন। বইটির পিয়ার রিভিউ আছে এখানে (Geraint Lewis এর করা)। শেষ লাইনটি খেয়াল করুন –
We are not out of the fine-tuning waters yet, but Stenger’s book is a good place to start getting to grips with the issues.
আমারও মনে হয় যত তাড়াতাড়ি আমরা ফাইনটিউন আর এন্থ্রোপিক রহস্য থেকে বেরুতে পারব, পদার্থবিজ্ঞানের জন্য তত মঙ্গল।
তবে আমি আপনার বক্তব্য বুঝতে পারছি কতটা ‘ফাইন’ তা নিয়ে বিতর্ক থাকলে সমন্বয় বা টিউন বলে একতা কিছু তো আছেই। রফেসর মার্টিন রীস ‘কেবল ছয়টি সংখ্যা’ (Just Six Numbers) শিরোনামে যে বই লিখেছেন সেটা তো ছয়টা গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটারের মধ্যে সমন্বয় তুলে ধরতেই। কিন্তু সেটার ইন্টারপ্রেটেশন কিভাবে করা হবে সেটাই হল কথা। আমি আমার’ আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ বইটায় এ নিয়ে হাল্কা ভাবে কিছু লিখেছিলাম। সেখানে দেখিয়েছিলাম যেভাবে ফাইন টিউনকে ফ্যাক্ট হিসেবে দেখানো হয়, তার বিপরীতে অনেক গবেষণাই কিন্তু আছে। যেমন, ‘Physical Review’ জার্নালে ২০০১ সালে প্রকাশিত একটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে বিজ্ঞানী অ্যান্থনি অ্যাগুরি (Anthony Aguirre) স্বতন্ত্রভাবে দেখিয়েছেন মহাবিশ্বের ছয়টি প্যারামিটার বা পরিবর্ত্যরাশিগুলো বিভিন্নভাবে অদলবদল করে গ্রহ, তারা এবং পরিশেষে কোন একটি গ্রহে বুদ্ধিদীপ্ত জীবন গঠনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব- কোন ধরনের ‘Anthropic Argument’ কিংবা ‘ফাইন টিউন’ এর এর আমদানি ছাড়াই [ রেফারেন্স – Anthony Aguirre, “The Cold Big-Bang Cosmology as a Counter-example to Several Anthropic Arguments”, Journal of Physical Rev, D64:083508, 2001]।
পদার্থবিজ্ঞানী ক্রিস্টোফার সিরোলার একটা পেপার আছে “Rough-Tuned Universe: How the “Fine-tuned” Argument of Intelligent Design Creationists Works Against Them”, Sirola, Skeptic, 16, 4 (2011)
ভিক্টর স্টেঙ্গরের মাঙ্কি গড প্রোগ্রাম আছে, যেটা তিনি The Unconscious Quantum’ এবং The Fallacy of Fine-Tuning বইয়েও অন্তর্ভুক্ত করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে মহাজাগতিক ধ্রুবক আর পরিবর্ত্য রাশিগুলির মান পরিবর্তন করে আমাদের মহাবিশ্বের মত আরও অসংখ্য মহাবিশ্ব তৈরি করা যায়, যেখানে প্রাণের উদ্ভবের মত পরিবেশের সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য ‘ফাইন টিউনিংয়ের’ কোন প্রয়োজন নেই।
আমি বলিনি যে আপনি বলেছেন, কিন্তু ঠিক উল্টো কথাটা এখানে শোনাতে চাইছি, এবং তা লাউডলি!!!!। আমি বলব, “মহাবিশ্ব মনুষ্যত্বের জন্য সূক্ষ্মভাবে সু-সমন্বিত নয়, বরং মনুষ্যত্বই মহাবিশ্বের সাথে সূক্ষ্মভাবে সু-সমন্বিত” । আমাদের চোখের কথাই ধরা যাক। মানুষের চোখ বিবর্তিত হয়েছে এমনভাবে যে, এটি লাল থেকে বেগুনী পর্যন্ত সীমার তাড়িতচৌম্বক বর্ণালীতে কেবল সংবেদনশীল। এর কারণ হল আমাদের বায়ুমণ্ডল ভেদ করে এই সীমার আলোই বছরের পর বছর ধরে পৃথিবীতে এসে পৌঁছুছে। কাজেই সেই অবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখে চোখের গড়ন সে ভাবেই বিবর্তিত হয়েছে। পুরো ব্যাপারটিকে আবার অন্য কেউ উল্টোভাবেও ব্যাখ্যা করতে চাইতে পারেন। যেমন তিনি বলতে পারেন যে ঈশ্বর বা কোন সূক্ষসমন্বয়ক আমাদের চোখকে লোল-বেগুনী সীমায় সংবেদনশীল করে তৈরি করবেন বলেই বায়ুমণ্ডলের ভিতর দিয়ে এই সংকীর্ণ পরিসরেরর (অর্থাৎ লাল থেকে বেগুনী) আলো আমাদের চোখে প্রবেশ করতে দেন। তাই আমাদের চোখ এরকম। কিন্তু এ ধরনের ব্যাখ্যাকরণ কতটা যৌক্তিক? অনেকটা ঘোড়ার আগে গাড়ী জুড়বার মতই শোনায়। এর পরও সূক্ষ্ম সমন্বয়কারীরা (সবাই অবশ্য নন, বিরিঞ্চি-বাবা টাইপের সমন্বয়কারীরা) ঠিক এ ধরণের যুক্তি দিতেই পছন্দ করেন। মহাজাগতিক ধ্রুবকগুলি কেন এ ধরনের মান গ্রহণ করল এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা না খুঁজে- তা ‘না হলে পরে পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি আর মানুষের আবির্ভাব ঘটত না’ এ ধরণের যুক্তি উত্থাপন করে থাকেন। আমি এই ধরণের পিছলামী যুক্তির বিরুদ্ধে বলতে চেয়েছি।
এর বাইরে আপনার বক্তব্যের সাথে আমার কোন পার্থক্য নেই।
@অভিজিৎ,
আমিতো আপনি যা বললেন তার সাথে আমার বক্তব্যের তেমন কোন পার্থক্যই দেখলুম না। কারণ, ইনটেলিজেন্ট ডিজাইনের জন্য ফাইন টিউনিং আর্গুমেন্টের সপক্ষে আমি কখনই বলিনি। ফাইন টিউনিং আর্গুমেন্ট আর ফাইন টিউনিং এ্যাজ এ ফ্যাক্ট–সম্পূর্ণই দু’টি ভিন্ন বস্তু। আপনি যে বললেন: “আমি বলব, “মহাবিশ্ব মনুষ্যত্বের জন্য সূক্ষ্মভাবে সু-সমন্বিত নয়, বরং মনুষ্যত্বই মহাবিশ্বের সাথে সূক্ষ্মভাবে সু-সমন্বিত”—এ্যানথ্রপিক প্রিন্সিপাল ব্যবহার করে এ ধরণের বক্তব্যই রাখা হয়। ডকিন্সের ক্লিপেও বিষয়টিকে মোটামুটি সেভাবেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
ফাইন টিউনিং দরকার নেই–কথাটা দ্ব্যর্থবোধক। এটা দরকার বা অদরকারের বিষয় নয়। বিষয়টি হল এটি বাস্তব কিনা–আমাদের মহাবিশ্ব ফাইন টিউনড কিনা। আমি বলেছি এটি ফাইন টিউনড। এ্যাগুরি বা স্টেঙ্গর দেখিয়েছেন যে একাধিক ফাইন টিউনড ইউনিভার্স সম্ভব অথবা ফাইন টিউনড প্যারামিটারসমূহের একাধিক সেট সম্ভব যেটি থেকে মহাবিশ্ব একটিকে বাছাই করেছে (অবশ্যই এদের কোন পরীক্ষণ বা পর্যবেক্ষণ এখনও হয়নি–এখনও এরা বিশুদ্ধ তত্ত্ব)। তাঁরা বলছেন না যে আমাদের মহাবিশ্ব ফাইন টিউনড নয় অথবা একমাত্র ফাইন টিউনড ইউনিভার্স থাকাটা (অর্থাৎ একটি একক মহাবিশ্ব একটি নির্দিষ্ট প্যারামিটারের সেট বেছে নিল) কোন সমস্যা নয়। যেমন ধরা যাক, আমি দাবী করলাম আমি দুনিয়ার একমাত্র ভালো মানুষ এবং আমি যে ভালো মানুষ সেটি হয়ত আসলেই সত্য। কেউ যুক্তি দিয়ে (সার্ভে করে নয়) দেখাল যে আরও একাধিক ভালো মানুষ আছেন বা ভালো মানুষ হিসেবে গণ্য হবার জন্য বিকল্প বৈশিষ্ট্যের একাধিক সেট আছে। এর অর্থ এই নয় যে তাঁরা বলছেন আমি খারাপ মানুষ। যদি আমাদের মহাবিশ্ব একমাত্র মহাবিশ্ব হয় তাহলে সেটি একটি সমস্যা–যেমন সমস্যা হল যদি একমাত্র পৃথিবীতেই প্রাণের অস্তিত্ব থাকে। তবে প্রথম ক্ষেত্রে আমাদের দরকার একাধিক মহাবিশ্ব বা মাল্টিভার্স–দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আমরা অলরেডি বিলিয়ন বিলিয়ন সৌরজগতের কথা জানি।
@সংশপ্তক,
এ্যাবসোলিউট ভয়ড নিয়ে মনে হয় না ক্রাউস কিছু বলেছেন। তবে সাধারণ পাঠক বা নান-সাইন্টিস্টদের এ ধরণের একটা ভুল ধারণা হওয়াটা স্বাভাবিক–যেটি আমি উল্লেখ করেছি। আমি আরও বলেছি যে ক্রাউস সম্ভবত: সচেতনভাবেই এ ধরণের একটা ইম্প্রেশান তৈরী করেছেন–হয়ত তাঁর বই বেশী বিক্রি হবার জন্য। পরম বা চরম শুণ্যতা বলে কিছু আছে কিনা সেটি কোন অর্থহীণ প্রশ্ন নয় যেমন ছিলনা সর্বব্যাপী কোন মাধ্যম আছে কিনা সেই প্রশ্নটি–কারণ এসব প্রশ্নের উত্তর বৈজ্ঞানিক পরীক্ষণ বা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে অবশ্যই ফলসিফিয়েবল। ক্লাসিক্যাল ভ্যাকুয়াম বা চিরায়ত শুণ্যতার ধারণাটি নিয়ে একটু বলি। ধরুন, কোন স্থান থেকে সমস্ত বস্তুকণিকা এমনকি রেডিয়েশানও সরিয়ে নেওয়া হল। তাহলে কিছুইতো রইল না। সেটিকেই বলা হল চিরায়ত শুণ্যস্থান। কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলল যে এইরকম শুন্যস্থানের আসলে জিরো-পয়েন্ট এনার্জি আছে। কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম থেকে স্বত:স্ফুর্তভাবে কণিকা-প্রতি-কণিকার পেয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। তাহলে শক্তির নিত্যতার সূত্রের কি হবে? হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার নীতি রক্ষাকর্তা হিসেবে এগিয়ে এল। খুবই ক্ষুদ্র সময়ে শুণ্য থেকে কণিকা-প্রতি-কণিকার জোড়া সৃষ্টি হয়ে আবার বিনাশপ্রাপ্ত হতে পারে বিকীর্ণ শক্তি হিসেবে–যেটি আবারও কণিকা-প্রতি-কণিকার জোড়া সৃষ্টি করবে। এভাবে চলতে থাকবে। গড়ে সেজন্য শুণ্যতার একটি শক্তি (জিরো পয়েন্ট এনার্জি) থাকবে। এটিই কোয়ান্টাম শুণ্যতার অস্থিতিশীলতা–আরও শুদ্ধভাবে ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন–যা আসলেই দার্শনিক গাঁজাখুরি নয়–বরং পরীক্ষণের মাধ্যমে রিগোরাসলি প্রমাণিত। এর জন্য উইলিস ল্যাম্ব পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলও পেয়েছেন। কাসিমির এফেক্টও এর জন্যই ঘটে। আচ্ছা একটু অন্যভাবে বলি। পরম শুণ্যতা থাকলে সেটিতো পর্যবেক্ষণ করা যাবে? তাই না?
ইন্টারাকশন ছাড়া কোন পর্যবেক্ষণই সম্ভব নয় আর যত সূক্ষ্মভাবে যত হাই রেজোলিউশানে শুণ্যতাকে পর্যবেক্ষণ করতে যাবেন–তত বেশী শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। সেটি ভ্যাকুয়ামকে ডিস্টার্ব করে কণিকা-প্রতি-কণিকার অসংখ্য পেয়ার সৃষ্টি করবে। কাজেই, পরম শুণ্যতা আছে সেরকম কোন সিদ্ধান্তে কোয়ান্টাম তত্ত্বানুসারে আমরা কখনই আসতে পারবনা। সুতরাং, যেহেতু কোয়ান্টাম তত্ত্ব বৈজ্ঞানিক পরীক্ষণের মাধ্যমে যথেষ্ট সফল। সুতরাং, আমরা পরম শুণ্যতাকে এক হিসেবে ফলসিফাই করতে পারি। লরেন্স ক্রাউস যে ধরণের শুণ্যতা থেকে মহাবিশ্বের অস্তিত্বলাভের কথা বলেছেন তা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ এবং কসমোলজিক্যাল অবজার্ভেশানের মাধ্যমে সেটি হয় অলরেডি যাচাই করা হয়েছে অথবা যাচাই খুবই সম্ভব।
সম্ভবত: মহাবিশ্বের জ্যামিতির ওপর এটি নির্ভরশীল।এতক্ষণ যেসব শুণ্যতার কথা বললুম লক্ষ্য করবেন সেগুলোকে শুণ্যস্থান বলেচি। এখন যদি বলি মহাবিশ্ব শুণ্যস্থান থেকে এসেচে তাহলে ভুল হবে–কারণ স্থান এবং মহাবিশ্বের (অন্যান্য অংশের) সৃষ্টি একইসাথে হয়েছে। সেক্ষেত্রে শুধু শুণ্য আছে–কিন্ত স্থান-কাল কিছুই নেই। এ ধরণের শুণ্যতা সম্পর্কে জানার জন্য দরকার কোয়ান্টাম গ্রাভিটি তত্ত্ব। তবে সেটি কি দার্শনিক এ্যাবসোলিউট শুণ্যতা কিনা তা কসমোলজিক্যাল অবজার্ভেশন থেকে বলা অসম্ভব নয় মোটেও।
প্রকৃতি শুণ্যতা পরিহার করে কথাটিতে আসলে একটি বিশেষণ বাদ গেছে–সেটি হবে চিরায়ত। তবে
এই হরর ভ্যাকুই এর ধারণাটি বহু আগেই টরিসেলি, অটো ফন গেরিক এবং প্যাসকেল পরীক্ষণের
মাধ্যমেই ভুল প্রমাণ করেছেন।
@তানভীর হানিফ,
ধন্যবাদ। এটা পরিস্কার যে টাইম-স্পেসে চরম শুণ্যতা থাকতে পারে না। এটা থেকে যে প্রশ্ন দুখানা মাথা চাড়া দিয়ে উঠে , কোন মেকানিজম এই টাইম-স্পেসে চরম শুণ্যতা সৃষ্টি হতে বাধা দিচ্ছে ? আমরা কি তাহলে একটা ‘সাইক্লিয়িক মহাবিশ্বে’ বসবাস করছি যা পূনপূনিক একটা সুপার কমপ্রেসড বিন্দুতে মিলিয়ে গিয়ে পুনরায় বিগ ব্যাঙের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করছে ?
@সংশপ্তক,
প্রথম প্রশ্নের উত্তর আমি আগের কমেন্টেই দিয়েছি: কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশান। দ্বিতীয়টির জবাব
আমার জানা নাই। এটুকু বলতে পারি যে সে বিষয়ে স্পেকুলেশান ছাড়া এমুহুর্তে কিছুই করা সম্ভব
নয়। তবে সাইক্লিক ইউনিভার্স তত্ত্বটি সম্ভবত: স্ট্রিং তত্ত্ব নির্ভর। সেজন্য, আমি সেটিকে ফিজিক্স নয়
মেটাফিজিক্স বলব। লন্ডনে টুরোকের সাথে এ নিয়ে বছর তিনেক আগে আমার তুমুল তর্ক হয়েছিল।
তবে এটিও ঠিক আমি সেসময় কিছুটা ইনটক্সিকেটেড ছিলাম 🙂
@সংশপ্তক,
একটি ব্যতিক্রম ছাড়া, যেটা আমি শফিকের উত্তরে বলেছি। আলেকজান্দার ভিলেঙ্কিন শূন্য থেকে মহাবিশ্বের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করেছেন ‘এবসলুট ভয়েড’ গোনায় নিয়েই। Physics letters 117B, 25-28 তে তার Creation of Universe from Nothing পেপারটি দেখতে পারেন। অ্যালেন গুথ তার ‘ইনফ্লেশনারি ইউনিভার্স’ বইয়ে ভিলেঙ্কিনের কাজ গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখও করেছেন।
@অভিজিৎ,
তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের সব কিছুকেই সিরিয়াসলি আমি নেই না। সুপারলুমিন্যাল পার্টিকেল বা টাকিয়ন নিয়ে
আরও বেশী লোক কাজ করছেন। অনেকে স্ট্রিং নিয়ে কাজ করছেন। পরম শুণ্যতা কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্বকে ভায়োলেট করে যটির ওপর ভিত্তি করে বেশীরভাগ রিয়েল ফিজিক্স হচ্ছে।
@তানভীর হানিফ,
সে ঠিক আছে, পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে আপনার অভিমতের গুরুত্ব তো থাকছেই। তবে আমার বক্তব্য ছিল, যখন কোয়ান্টাম শূন্যতা দিয়ে মহাবিশ্বের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করা হয় তখন আবার বিরিঞ্চিবাবারা যুক্তি নিয়ে আসেন সেতা এবসল্যুট শুন্য নয়। আমি কেবল জানান দিয়েছি, একটি পেপারে হলেও সেই এবসলুট শুন্যতাকেও বিজ্ঞান এড্রেস করেছে। একটি প্রতিষ্ঠিত জার্নলে পিয়ার রিভিউড হয়ে যখন প্রকাশিত হয়ছে তখন ধরেনেয়া যায় যে কোন জানা পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রকে ভায়োলেট করে সম্ভবতঃ পেপারটি প্রকাশিত হয়নি। এইটুকুই।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
এটি আমার ব্যক্তিগত অবস্থানমাত্র। তথাপি আমার অভিমতের ওপর আস্থা রাখবার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি আমার অবস্থানকে অবশ্যই ব্যাখ্যা করব। ১৯৮২ সালে ভিলেঙ্কিনের পেপারটি পাবলিশ হয়েছে। পদার্থবিজ্ঞান বিশেষত: তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের জন্য সেটি এক হিসেবে প্রাগৈতিহাসিক যুগ–কারণ গত কোয়ার্টার সেঞ্চুরিতে বহু কাজ হয়েছে, অনেক তত্ত্বের বিচার-বিশ্লেষন হয়েছে, কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়ামের ওপর ধারণাগত বিশ্লেষন হয়েছে, অনেক তত্ত্বকে হয়ত ছুড়েও ফেলা হয়েছে। খেয়াল করবেন এ নিয়ে এরপর আর কেউ তেমন কিছু করেনি। কেন করেনি? এর কারণ হল মেইন স্ট্রিম ফিজিসিস্টদের দ্বারা এটি পরিত্যক্ত হয়েছে। অবশ্যই পদার্থবিজ্ঞানের মূলনীতিসমূহ মেনেই যেকোন তত্ত্ব গঠন করতে হবে–এমনকি আলোর চেয়ে বেশী গতির কণিকার তত্ত্বও (রিলেটিভিটি পদার্থবিজ্ঞানের কোন ফার্স্ট অর্ডার মূলনীতি নয়–যেমন শক্তির নিত্যতা সূত্র)। এর পরেও সেটা মেটাফিজিক্স হতে পারে–যেমন স্ট্রিং তত্ত্ব অথবা হতে পারে বাতিল যেমন নর্ডস্ট্রমের মহাকর্ষ তত্ত্ব। বাই দ্য ওয়ে, বিরিঞ্চিবাবাদের মনে হয় এ্যাবসোলিউট শুণ্যতারই বেশী প্রয়োজণ।
কোয়ান্টাম মধ্যাকর্ষণ শূন্যকে স্থিতিশীল করার মত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন না হয়ে এ ধরণের বৈশিষ্ট্য-সম্পন্ন হল কেন?
যেকোন ব্যাখ্যা কিছু assumption-এর উপর নির্ভর করে যার আবার কিনা কোন ব্যাখ্যা নেই। আমার উপরের প্রশ্নটার জবাব যদি কোন দিন মেলে তাহলে তারও গোড়ায় কিছু assumption থাকবে যার ক্ষেত্রে একই ধরণের প্রশ্ন করা চলবে।
স্টিভেন ওয়াইনবার্গ কোন এক সাক্ষাৎকারে এই মৌলিক সমস্যার ব্যাপারে তার frustration ব্যাখ্যা করেছিলেন।
এধরণের “কেন”-র জবাব বিজ্ঞান কোনদিনই কিভাবে দেবে, তা ভাবা কঠিন। দর্শনের যে প্রশ্নটি নিয়ে ক্রাউস নাড়াচাড়া করছেন এটি সেই প্রশ্ন। ক্রাউস প্রশ্নটিকে deflect করেছেন মাত্র। দার্শনিকেরা বইটির রিভিউ-এ এই কথাটাই লিখেছেন। যার জবাবে ক্রাউস সহ অন্য বিজ্ঞানীরা যে জবাবটি দিয়েছেন সেটা হল যে এধরণের ক্রনিক “কেন?” প্রশ্ন অর্থহীন। এটাই হল আসল জবাব। এই জবাব কোয়ান্টাম মেকানিক্সের উদ্ভবের ফলে কম বা বেশি সত্য হয় নি।
@রৌরব,
আমি মোটামুটি আপনি যা বলেছেন তার সাথে একমত। ক্রাউস এক ধরণের ধাধা সৃষ্টি করেছেন তাঁর বইয়ের টাইটেলে। তিনি হয়ত এমন একটা ইমপ্রেশন তৈরী করেছেন যে প্রশ্নটি ধর্ম বা দর্শনের আওতা থেকে এখন বিজ্ঞানের আওতাতে চলে এসেছে। আমার মনে হয় ইম্প্রেশনটি ঠিক নয়। মহাবিশ্বের অস্তিত্বশীল হবার পেছনের উদ্দেশ্য কি? এই প্রশ্নটি বিজ্ঞানের আওতাতে চলে এসেছে–দাবীটি অনেকটা সেরকম। আসলে এ ধরণের প্রশ্ন বৈজ্ঞানিকভাবে অর্থহীণ–আর একটু এগিয়ে বললে যেকোন বিচারেই অর্থহীণ। কারণ এ ধরনের বেশীরভাগ প্রশ্নই (লরেন্সের বইয়ের শিরোনামের প্রশ্নটিসহ) এক ধরণের “উদ্দেশ্য” ইমপ্লাই করে। তিনি আসলে কি বলতে চেয়েছেন সেটি উনার বক্তব্য থেকেও স্পষ্ট: “But I don’t really give a damn about what “nothing” means to philosophers; I care about the “nothing” of reality. And if the “nothing” of reality is full of stuff, then I’ll go with that.” এজন্যই বলেচি যে এখানে একধরণের সেমান্টিক্যাল ট্রিক্স আছে। এটা অনেকটা কোন অপ্রথাগত ধার্মিক যদি বলে যে ঈশ্বর আছে–কারণ থিওলজিয়ান বা দার্শনিকেরা ঈশ্বর বলতে কি বুঝেন তাতে আমার কিছু আসে যায় না–আমার মতে ঈশ্বর হল মহাবৈশ্বিক বাস্তবতা অথবা পদার্থবিজ্ঞানের আইনসমূহ।
@রৌরব,
এরা আসলে বিজ্ঞানের ভেতরে লুকানো কিছু দার্শনিক, যারা বাতচিত-নির্ভর অন্যান্য দার্শনিকদের ভাত মারছে রিগোরাস ম্যাথ দিয়ে। 😀
কেনোর উত্তর করা ম্যাথও আদতে একটা হুলস্থুল দার্শনিক কপচাকপচি। যার সাথে আবার সেই একই গাণিতিকদের অবসর সময়ে এসে একটু পপুলার সায়েন্স করার সংস্কৃতি ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। সংস্কৃতি হিসেবে সেটা চমৎকার, তবে “আমারটা বিজ্ঞান, তোমারটা দর্শন” বলাটা “আমার দর্শন তোমার দর্শনের চেয়ে উত্তম” বলার চেয়ে বেশি কপট।
তবে এক সময় মানুষ এইসব অ্যাসাম্পশন নির্ভর রিগোরাস দার্শনিক কপচাকপচিকেও বিজ্ঞান নয়, দর্শন হিসেবেই চিনতে শুরু করবে, এই-ই আশা।
@রূপম (ধ্রুব),
হ ম্যাথ আর কোয়ান্টাম ফিজিক্স না জানা দার্শনিকদের সামনে বড়ই দুর্দিন। 🙂 এক মহারথী তো অলরেডি বইলা দিছে – ‘ফিলসফি ইজ ডেড’ 🙂 । দেখেন সামনে কোনভাবে জম্বি (আপনের টার্মে ‘জিন্দালাশ’) দার্শনিকদের আবার আত্মা পুইরা ফিরায় প্রাণবায়ু যোগান দিতে পারেন কিনা। :))
হুমম। তবে কিনা ‘মাই ডিক এই বিগার দ্যান ইয়োর্স’ – এই মেন্টালিটি কিন্তু বিজ্ঞানী বা দার্শনিকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না। ব্লগেও দেখা যায়। লিবার্টারিয়ান ফিলোসফি ইজ বেটার দ্যান লেফট অর রাইট 🙂 । প্রচারণার যুগ আফটার অল। সেল করতে পারলে অসুবিধা কি, হাঃ হাঃ!
আমার আপত্তি নাই আপনার এই মন্তব্যে। তবে এ বিষয়ে একটি কথাই কেবল বলব। পদার্থবিজ্ঞানের অন্য অনেক তত্ত্বের চেয়ে ইনফ্লেশন বা স্ফীতি তত্ত্ব অনেক বেশি রিগোরাস এবং পর্যবেক্ষণ দ্বারা সমর্থিত। সেজন্যই এটা প্রমিত জ্যোতির্বিজ্ঞানের (standard cosmology) অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। স্ফীতি তত্ত্ব আসার আগে হরিজন প্রোবলেম, মনোপল প্রবলেম সহ হাজারটা বিগ ব্যাং-এর সমস্যার সমাধানই করা যাচ্ছিল না। একমাত্র স্ফীতি তত্ত্ব থেকেই এর একটা সমাধানপাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, স্ফীতি তত্ত্ব গ্যালাক্সির ক্লাস্টারিং, এক্স রশ্মি এবং অবলোহিত তেজস্ক্রিয়তার বিন্যাস, মহাবিশ্বের প্রসারণের হার এবং এর বয়স, মহাবিশ্ব গঠনে এর উপাদান গুলোর প্রাচুর্য – সব কিছুই ব্যাখ্যা করতে পেরেছে নিখুঁত সৌন্দর্যে। ক্রাউসের বইটা স্ফীতি তত্ত্বেরই উপজাত। ইনফ্যাক্ট স্ফীতিতত্ত্বের জনক অ্যালেন গুথ একই কথাই বলেছিলেন (মহাবিশ্বকে ‘ফ্রি লাঞ্চ’ হিসেবে অভিহিত করে) যা ক্রাউস এখন বলছেন। ক্রাউস বইয়ের একটা ভিন্নধর্মী (অনেকের মতে ‘উত্তেজক শিরোনাম’) দেয়া ছাড়া তেমন নতুন কিছুই করেননি, আমার মতে।
যাই হোক, গণিত, কোয়ান্টাম ফিজিক্স সব বাদ দ্যান, আসেন এগুলা ছাড়া এই ক্যাচালের সমাধান করা যায় কিনা, দেখি। আপনে যেহেতু দার্শনিক ক্যাচাকেচি পছন্দ করেন, আপনের মনে ধরতেও পারে। জিম জোল্টের বইয়ে পাইছি।
মনে করেন দেয়ার ওয়্যার ‘নাথিং’। নাথিং মানে কিছু না, এমনকি কোন নিয়ম নীতি কিছুই নাই। কারন, নিয়ম থাকা মানেই কিছু একটা থাকা।
কোন নিয়ম না থাকার মানে, যে কোন কিছুই সেখানে সম্ভব (permitted)
যদি সবকিছুই পারমিটেড হয়, তাইলে নাথিং উইল বি ফরবিডেন!
তাই, ‘নাথিং’ বইলা কিছু থাকলে ‘নাথিং উইল বি ফরবিডেন’।
তাই নাথিং ব্যাপারটা ‘সেলফ ফরবিডিং’।
দেয়ারফর, দেয়ার মাস্ট বি সামথিং।
ক্যামুন বুঝলেন? 🙂
@অভিজিৎ,
বাতচিত নির্ভর দর্শন বাতচিত নির্ভর দর্শনই। সে নিজেরে বিজ্ঞান দাবি তো করে না। দর্শন করলে সেটারে দর্শনই বলেন। বা পর্যবেক্ষণঅসংশ্লিষ্ট গণিত বলেন। বা অন্তত বলেন যে এই মুহূর্তে এইটা একটা প্রকল্পই, যাকে পরীক্ষা করা যায় নাই। তার জায়গায় ঠাশ করে বৈজ্ঞানিক বলে দিলে মানা যায়? 🙂
প্রশ্নটা তো এইটা না যে লিবার্টারিয়ান ডিক অন্যগুলার চেয়ে বড় কিনা। প্রশ্ন হইলো লিবার্টারিয়ানিজম বৈজ্ঞানিক, লেফট রাইট অবৈজ্ঞানিক, তেমন কপটতা করা হইতেছে কি না। দর্শন চর্চা, গণিত চর্চা, বিজ্ঞান চর্চা কোনোটা নিয়াই আমার আপত্তি নাই। একটারে আরেকটা বইলা ক্লেইম করলে আছে।
সেই নিষ্ঠা আপনার থেকে কাম্য। 🙂
শারমার অকপটভাবে বলছেন –
বলেন নি যে এগারোটাই বৈজ্ঞানিক। বরং বলছেন –
আপনি সে জায়গায় বললেন –
শারমার উপসংহার টানছেন এই বলে যে –
যেটাকে আমার যথেষ্ট বিজ্ঞানসুলভ মনে হয়েছে।
আপনি বলছেন –
তথ্যের পাশাপাশি স্কেপটিকসুলভ মনোভাবটা অর্জনও সমান জরুরি। শারমারের কথা দিয়েই শেষ করি।
@রূপম (ধ্রুব),
এহহহ…মারছেন! সব জায়গায় ধর্মপ্রচারকদের মত কপটতা, সততা আর নৈতিকতার বটিকা না হয় নাই বা খাওয়ালেন। কাটিং এজ একটা বিষয়ের উপর যতদূর সম্ভব বিজ্ঞানভিত্তিক একটা লেখা লিখতে চেষ্টা করেছি, এখন যদি সততার পুলসিরাতের পরীক্ষা দেওন লাগে তাইলে তো বিপদ 🙂
শারমারকে টুল হিসেবে ব্যবহার করে আমার সততার কষ্টিপাথরে ফেলাটা আমি সমীচীন মনে করি না। মাইকেল শারমারের কোন প্রবন্ধের উল্লেখ করা মানে এই নয় যে আমার তার সব পয়েন্টের সাথে একমত হতে হবে। ইনফ্যাক্ট, আমি অনেক কিছুতেই নই। শারমারের বিশ্লেষণ তার, আমার বক্তব্য আমার।
উনি ‘এক ডজন পসিবিলিটিস’ ফর ‘ empirically testable hypotheses to account for the universe’ এর কথা বলে তালিকার প্রথমেই রেখেছেন ‘GOD’ । তালিকাটা প্রথম নজরে দেখলে যে কেউ ভাববে যে, ইনফ্লেশনারি কসমলজি প্রভৃতির মত ‘গড’ ব্যাপারটাও বোধ হয় একই রকমভাবে বৈজ্ঞানিক কোন থিওরির মত টেস্টেবল। মূলত তা নয়। আমি মনে করি ‘গড’ ব্যাপারটা এ সংক্রান্ত অন্যান্য বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফলের সাথে একই সাথে তালিকায় থাকার যোগ্যই নয়।
আরো ব্যাপার হল, empirically testable hypotheses এর তালিকায় কোয়ান্টাম মাল্টিভার্স, গ্র্যান্ড ইউনিফায়েড থিওরি, স্ট্রিং ইউনিভার্স সহ অনেক কিছুই আছে, যা সত্যিই উনার কথামত ’empirically testable hypotheses’ কিনা সেই প্রশ্ন থেকেই যায়। আরও অনেক ভুল করেছেন শারমার। তার ৯ম সমাধান STRING UNIVERSE এর মধ্যে ভিক্টর স্টেঙ্গরের প্রোগ্রামের উল্লেখ করেছেন। স্টেঙ্গরের প্রোগ্রামটা আমি নিজে ব্যবহার করেছি। ওটাকে বলে ‘মাঙ্কি গড’। উনি মূলতঃ মহাবিশ্বের ছয়টি প্যারামিটার পরিবর্তন করে সিমুলেশন করেছেন এবং কোন একটি মহাবিশ্বে জীবনোপযোগী পরিবেশের মত ভ্যারিয়েবল (যা আমাদের মহাবিশ্ব আছে) তা নির্ণয়ের চেষ্টা করেছেন। মাইকেল শারমার সেটাকে স্ট্রিং ইউনিভার্সের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন।
শুধু তাই নয় উনি উনার লিস্টকে লম্বা করার জন্য মাল্টিভার্সকে DARWINIAN MULTIVERSE, MANY-WORLDS MULTIVERSE, QUANTUM FOAM MULTIVERSE – এই তিনভাগ করেছেন। সবই আসলে মাল্টিভার্স সিনারিওরই রকমফের, আলাদা কিছু নয়। BRANE UNIVERSE আসলে STRING UNIVERSE এরই অংশ। ব্রেন ব্যাপারটা স্ট্রিং তাত্ত্বিকদেরই বৈজ্ঞানিক গবেষণার অংশ, আলাদা কোন সমাধান নয়। শারমারের দেয়া ১২ নম্বর সমাধানটা (যেটা ক্রাউসের বইয়ের মূল কথা) আসলে ইনফ্লেশনারি ইউনিভার্সেরই অংশ। আরো দেখুন উনি তালিকায় গড ছাড়াও রেখেছেন WRONG QUESTION – এটা এমনকি কোন বৈজ্ঞানিক সমাধানই না, স্রেফ উনার অভিমত বলা যায়। কাজেই পুরো লিস্টকে ছেঁটে খুব সহজেই ২/৩টায় নামিয়ে আনা সম্ভব।
কিন্তু যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা হল, ‘গড’ ব্যাপারটা বাদে অন্যগুলো বৈজ্ঞানিক গবেষণার অংশ, বর্তমানে এর সবগুলো ‘রিগোরাসলি’ টেস্টবল হোক আর নাই হোক। সেটাই ছিল আমার মূল কথা।
অবশ্যই। আমি সেটা অস্বীকার করিনি। এখন কথা হইতেছে, “it is also okay to say “I don’t know” and keep searching” ধরণের কথা শারমার বলেছেন সায়েন্টিফিক আমেরিকানে এক পাতার প্রবন্ধ লেখার পর Peter Woit এর বিশাল প্রতিক্রিয়া আসার পর। এ ধরণের কথার সেমেটিক বাদ দিলে সায়েন্টিফিক আমেরিকানের আগেকার প্রবন্ধটা আর পরের প্রবন্ধটার মধ্যে প্রভেদ সামান্যই। এইগুলা কথা আবেগকে জাগায় বটে, কিংবা হয়তো তৈরি করে এক ধরনের ‘সততার ইল্যুশন’, কিন্তু প্রবন্ধটা পড়লেই বোঝা যায়, কিন্তু শারমারের মূল কথা বলা আছে ঐ ১২ টি পয়েন্টেই। পরের অনুচ্ছেদগুলো কেবল কথামালা সাজিয়ে নিজেকে সুন্দর করে উপস্থাপনের প্রয়াস।
আমি আমার মত করে উপস্থাপন করেছি, এবং আমার কাছে সেটা মোটেই অসততা নয়। ভেবে দেখুন, একটা সময় পদার্থের উৎপত্তি, শৃঙ্খলার উৎপত্তি, মহাবিশ্বের উৎপত্তি, প্রাণের উৎপত্তি, প্রজাতির উৎপত্তি, নৈতিকতার উৎপত্তি কোন কিছুই বিজ্ঞানের অংশ ছিল না। দার্শনিক বা ভাষাগত সেমিটিক্স, কিংবা ধর্মবেত্তাদের নিরন্তর প্রিচিঙই ছিল একমাত্র জ্ঞানের উৎস। আমি বলব, বর্তমানে আমরা অনেক কিছুই বিজ্ঞানের গবেষণার মাধ্যমে উত্তর খোঁজার জায়গায় অন্তত: পৌঁছাতে পেরেছি।
সমালোচনার জন্য ধন্যবাদ। আপনার আলোচনা সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় আমার কাছে। ভাল থকুন।
আমি হয়তো নতুন বলেই মনে হয়, হয়তো অনেকে ব্যপার টা স্বাভাবিক ধরে নিয়েছে,“ অভিজিৎ সাহেবের গডে’র প্রতি কেন জানি খুব গোসসা, নাকি গড অনুরাগি খারাপ মানুষ গুলোর প্রতি গোসসা তাও বুঝিনা। তার প্রায় লেখাতে ইশ্বর নিয়া একটা পরোক্ষ কিংবা প্রত্যেক্ষ ক্যাচাল থাকে। তাই মাঝে মাঝে বলতে ইচ্ছে করে হে অভিজিৎ ঠাকুর আপনার বিজ্ঞান ভাবনা কি ইশ্বর বিরোধিতার পক্ষপাত মুক্ত হতে পারে না ? সব সৃষ্টির অকারন কিংবা স্বতঃস্ফুর্ত শৃঙ্খলের কারন হিসেবে ইশ্বর থাকুক এক কোনে পরে যতক্ষন না তা আপনার মৌলিক গবেষনার উপাত্ত হিসেবে কাজে লাগে। ইশ্বরের প্রতি শব্দ আপনি আসলে কি বসাতে চান তা বসিয়ে একটি মহা তত্ত্বর দিকে যেতেই পারেন।
মহাজাগতিক তত্ত্বঃ ইশ্বর= সর্বশক্তিমান=০০=প্রকৃতি=আবিষ্কৃত=অনাবিষ্কৃত=
“বারমুডা ট্রাইঙ্গেল নিয়ে অনেক কিছু পড়েছি কিন্তু সত্যটা এখনো জানলাম না, আপসোস!এমন কি কেও নেই যে চেয়ার টেবিল ছেড়ে সত্যি জায়গায় গিয়ে সত্যি টা জেনে আসে, আর সত্যি করে বলে ওখানে কি ঘঠছে 🙁 ।”
@নিখর তাবিক,
গোস্সার তো কিছু নেই। গডের প্রস্তাব অবৈজ্ঞানিক। পিরিয়ড।
@নিখর তাবিক,
ভাইজান,
আমার লেখাগুলো পড়লে বুঝবেন যে আমি বিজ্ঞানের একদম প্রান্তিক বিষয় আশয় নিয়াই লিখি, সেগুলা নিয়ে লিখতেই পছন্দ করি। সবারই তো কোন না কোন বিষয়ে প্যশন আছে, থাকে, তাই না? মনে করেন আমার প্যাশন ঐটাই। এই বিষয়গুলান (যেমন মহাবিশ্বের উৎপত্তি, পদার্থের উৎপত্তি, ভরের উৎপত্তি, শৃঙ্খলার উৎপত্তি, প্রাণের উৎপত্তি, প্রজাতির উৎপত্তি … ইত্যাদি) এতদিন ঈশ্বর আর ধর্মের দখলে ছিল। সেজন্যই ঈশ্বরের প্রসঙ্গ ঘুইরা ফিরা আসে।
এতে গোসস্যা করণের তো কিছু নাই। আপনি স্টিফেন হকিং এর গ্র্যান্ড ডিজাইন কিংবা এই প্রবন্ধে ক্রাউসের ‘ইনিভার্স ফ্রম নাথিং’ সহ যে কোন প্রান্তিক বিষয় এড্রেস করা বই পইড়া দেখেন লেখকেরা কত হাজার বার ‘গড’ ‘গড’ করে তাগো বইয়ে। হেরা কি সেটা গোস্যা থিকা করে, নাকি এতদিন অলৌকিক বইলা যে ব্যাপার গুলারে সব জায়গায় জাহির করা হইতো সেইটার অলৌকিকতা খন্ডন কইরা হের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিবার জন্য করে?
না আমার কোন গোস্যা নাই, তয় আমার লেখায় ঈশ্বর উল্লেখে কারো সত্যই গোস্যা আর চুলকানি শুরু হয় এইটা বুঝতাছি। এই চুলকানি কাম্য।
@অভিজিৎ,
কারনে অথবা অকারনে সৃষ্টি মহাজাগতিক বিষয়ে এপিঠ ওপিঠ মানসিক গবেষনার যে কোন একপিঠির তাবুর তলে বসে তাদের দিস্তা দিস্তা লেখালেখির কোন অংশের স্বউদ্যগী প্রকাশনা কিংবা সম্পাদনার মাধ্যমে কাম্য চুলকানির কারন হওয়া হয়তো গর্বের বিষয়ই। তবে অবাক হই – সৃষ্টির কারন হিসেবে অবৈজ্ঞানিক ধার্মিকরা অচিন্তিনিয় ইশ্বর এর একটি সিদ্ধান্তে প্যেছাতে পেরেছে, নিরেপেক্ষ অথবা ধার্মিক বৈজ্ঞানিকরা ইশ্বরের সৃষ্টি রহস্য নিয়ে কিংবা লজিক নিয়ে গবেষনা করে বলতে পারছেন যে ছবি আকার জন্য রং, তুলি, ক্যানভাস সহ নানান উপাদান বিদ্যমান কিন্তু ইশ্বর সেই মহান শিল্পী, ( কেও গান ধরছেন- এবিশ্ব লয়ে বিঢ়াট শিশু খেলিছ—-) । কিন্তু, অধার্মিক বিজ্ঞানিরা বা আপনার মতো প্রচন্ড এলেম ধারিরা আসলে স্পষ্ট করে কি বলতে পারছেন এটাই বুঝিনা, অনেক বিশাল বক্তব্যর সারমর্ম “নাথিং” এ গিয়ে ঠেকছে অথবা হলুদ,মরিচ, চাল মিলে সুন্দর খিচুরি হয়েছে, কেও ফাক (পাক/ রান্না) করে নাই এমনিতেই ফাক হয়েছে এই হলো শেষ কথা।ইশ্বর নিয়ে গবেষণা চলছে না শেষ হয়েছে , চললে কি ভাবে চলছে, রিসার্স মেখডোলজি বা কি এ বিষয়ে মৃদ কৌতুহল আমার আছে।
@নিখর তাবিক,
মহাবিশ্বটা যে একটা রং তুলির ক্যানভাসের লাহান সেইটা আপনের কানে কানে ক্যাডা কইয়া গেছে? তাও ধরলাম না হয় এইটা আপনের কওয়া সেই ক্যানভাসই। হ, রং তুলি ক্যানভাসের জন্য শিল্পী লাগে, হেইডা সবাই দেখে। কিন্তুক ভাইজান, এইটাও তো দেহে যে, প্রত্যকে শিল্পীরও একজন জন্মদাতা পিতা মাতা থাকে। এখন রং তুলি ক্যানভাসের উপমা দিলে এই রহস্যেরও সমাধান করণ লাগব, শিল্পী ঈশ্বরের জন্মদাতা পিতা মাতাটা আছিল কেডা, সেই পিতামাতাই বা কইত্থিকা আইলো? রং তুলি ক্যানভাস শিল্পীর উপমা দিবেন, মাগার ঈশ্বর আইলো কোইত্থিকা হের বেলায় আইসা গনেশ উল্টাইলে তো হইব না ভাইজান। হ নাস্তিক লজিক বুজতে সমস্যা হইবারই কথা। কারণ লজিকটা সিম্পল। সেই পুরানা ‘বার্ডেন অব প্রুফের’ মামলা। আপনে ভুত, প্রেত, ঈশ্বর, পেটা কাটা রাক্ষস, জিউস, হার্কিউলিস, হাতীর মাথা ওয়ালা গনেশ, ফ্লাইং স্পেগেটি মনস্টার – যা ইচ্ছাতে বিশ্বাস যাইবার লইতে পারেন, কিন্তু সেই বিশ্বাস প্রমাণের ভার আপনের কাঁধেই থাকব। যারা হেইগুলাতে বিশ্বাস করণের মত কোন কারণ খুঁইজা পায় নাই, তাগো উপ্রে ‘গোস্যার ভা’র চাপাইলে সেইটা এক ধরণের হেত্বাভাস বা ফ্যালাসি হইব -‘শিফটিং বার্ডেন অব প্রুফ’। সাফ কথা।
একাডেমিকালি – মেটাফিজিক্স বইলা একটা শাখাই আছে। আপনের যখন ‘মৃদ কৌতুহল’ আছেই, খিঁচুরির চুলকানি মিটাইতে দেইখা আর খাইয়া নিতে পারেন।
@অভিজিৎ,
আমি যা বলছি তা আগে রবিন্দ্র/ আইনেস্টাইন জাতীয় কেও বলেছে কিনা তা যারা জানতে চায় তাদের সাথে তর্কে যাওয়ার যোগ্যতা আমার নাই। তবে উৎসের উৎস যে রীতি মত পিতা-মাতাই হতে হবে তা যারা মনে করে তাদের মুক্তমনা ভাবের কিঞ্চিত সমস্যা আছে বলে আমার মনে হয়। ছবি সৃষ্টির কারন যেমন অন্য কোন ছবি না, গাড়ির ড্রাইভার যেমন অন্য আর একটি গাড়ি নয় একটি অযান্ত্রিক মানুষ, তেমন পুং/ স্ত্রী/ হিজরা/বৃক্ষ যদি কেও সৃষ্টি করে থাকে তবে সে এ সিস্টেমে এর কেও না হওয়াই স্বাভাবিক। আর আমি রাধা কৃঞ্চ কিংবা হারকিউলিস এর বাপ জিউস কেও টানিনা। মেটাফিজিক্স—-??? আচ্ছা—- ঠিকাছে– ধন্যবাদ–
@নিখর তাবিক,
খামাখা নিজেরে ডিফেন্ড করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ আর আইনস্টাইনকে বগলদাবা করার চেষ্টা করলে কি কোন লাভ হবে? রবীন্দ্রনাথ কোন বিজ্ঞানী ছিলেন না, আর আইনস্টাইন বিজ্ঞানী ছিলেন বটে কিন্তু প্রচলিত কোন ধর্ম বা ঈশ্বরে বিশ্বাস করতেন না। বিস্তারিত আলোচনায় যাবার আগে আপনাকে কিছু প্রাসঙ্গিক উক্তি দেই আইনস্টাইনের, কেমন? –
‘আমার ধর্ম-প্রীতি নিয়ে যা শোনা যায় তার সবটাই মিথ্যে ও উদ্দেশ্যমূলক-ভাবে প্রচারিত। আমি কোনো ব্যক্তি ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না এবং এটা আমি স্পষ্টভাবে বারবার জানিয়ে এসেছি। আমার মধ্যে ধর্মীয় ভাব বলতে শুধু আছে এই অসীম রহস্যময় মহাবিশ্বের বিশালতার প্রতি এক বিস্ময়’।
– Albert Einstein, in a letter March 24, 1954; from Albert Einstein, the Human Side, Helen Dukas and Banesh Hoffman, eds., Princeton, New Jersey, Princeton University Press, 1981, p 43
‘আমি তো এমন ঈশ্বরের কথা ভাবতেই পারি না যে তার নিজের সৃষ্টিকে শাস্তি দেয়। যার উদ্দেশ্য বিধেয় আমাদের নিজেদের মত করে বানানো। সোজা কথায়, এরকম ঈশ্বর মানবচরিত্রের প্রতিফলন।
– Albert Einstein, The World as I See It, Citadel Press, 1930
“আমি তো এমন ঈশ্বরের কথা ভাবতেই পারি না যে তার নিজের সৃষ্টিকে শাস্তি দেয়। যার উদ্দেশ্য বিধেয় আমাদের নিজেদের মত করে বানানো। সোজা কথায়, এরকম ঈশ্বর মানবচরিত্রের প্রতিফলন। আর মানুষ কি ভাবে মৃত্যুর পরেও বেঁচে ওঠে তাও কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়, যদিও ভয় পেয়ে বা ধর্মের ইগোর বশবর্তী হয়ে দুর্বলচিত্ত মানুষ তাও বিশ্বাস করে ।”
– Albert Einstein, obituary in New York Times, 19 April 1955
“ব্যক্তি ঈশ্বরের ধারনা আমার কাছে কল্পনার নরাত্বরোপ ছাড়া আর কিছু নয়, আর এটাকে আমি এত গুরুত্ব সহকারে নিতে পারি না।
– Albert Einstein, 1947, from Banesh Hoffmann, Albert Einstein: Creator and Rebel, New York: New American Library, 1972, p. 95.
“আমি সে রকম ঈশ্বরের ধারনাকে মন থেকে মেনে নিতে পারি না যার ভিত্তি গড়ে উঠেছে মৃত্যু ভীতি থেকে কিংবা অন্ধবিশ্বাসের কাঁধে ভর করে”।
-Albert Einstein, from Einstein: The life and Times, p. 622.
“আমি মানুষের অমরত্বে বিশ্বাসী নই। আমি মনে করি নৈতিকতা মানুষের জন্য ভাল কিন্তু এটা ব্যাখ্যা করার জন্য কোনো অতি-প্রাকৃতিক শক্তির কল্পনা করার প্রয়োজন নেই।”
– Albert Einstein, letter to a Baptist Pastor, from Albert Einstein: The Human Side, edited by Helen Dukas and Banesh Hoffman, Princeton University Press
উক্তিগুলো পড়ে কি মনে হচ্ছে? উনি বিশাল ঈশ্বরে বিশ্বাসী টাইপের কিছু ছিলেন? না ছিলেন না। তাতেও আপনার মন না ভরলে আইনস্টাইনের নতুন চিঠিটা, যেটা নিয়ে মিডিয়ায় আলোচনা শুরু হয়েছে সেটা দেখতে পারেন, হোরাসের এই লেখা থেকে – “আইনস্টাইনের অপ্রকাশিত “ঈশ্বর চিঠি” এবং সকল ভ্রান্তির অবসান”। প্রাসঙ্গিক উদ্ধৃতি দেই আইনস্টাইনের সেই চিঠি থেকে –
“ঈশ্বর” শব্দটি মানুষের দুর্বলতা থেকে সৃষ্ট এবং ভাব প্রকাশের জন্য ব্যবহৃত একটি শব্দ ছাড়া আর কিছুই না। বাইবেল হল কিছু গৌরবান্বিত পৌরাণিক কাহিনীর সমাহার যা অত্যন্ত শিশুতোষ। যে কোন নিগূঢ় অর্থই করা হোক না কেন তা আমার ভাবনায় কোন পরিবর্তন আনবে না। এই নিগূঢ় অর্থগুলি স্বভাব অনুযায়ীই নানা ধরণের হয়ে থাকে এবং প্রকৃত পাঠ্যাংশের সাথে কোন সামঞ্জস্য থাকে না। অন্যান্য সব ধর্মের মত ইহুদী ধর্মও প্রধানত: শিশুতোষ কুসংস্কারের অনুরূপ। আমি খুশি মনেই নিজেকে যাদের একজন বলে মনে করি এবং যাদের মানসের সাথে রয়েছে আমার গভীর সম্পৃক্ততা, সেই ইহুদী জনগোষ্ঠীরও অন্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় আলাদা কোন বিশেষ গুণাবলী আছে বলে মনে করি না। আমার অভিজ্ঞতা থেকে এতটুকু বলতে পারি অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় তারা খুব বেশী উন্নতও না। যদিও ক্ষমতার অভাবে তারা সবচেয়ে খারাপ ধরণের ক্যান্সার থেকে সুরক্ষিত আছে। এছাড়া আমি তাদের মধ্যে এমন কিছু দেখিনা যাতে তাদের নির্বাচিত (ঈশ্বর কর্তৃক) বলে মনে হবে।
কি বুঝলেন?
আইনস্টাইন কেন স্টিফেন হকিংকেও আমি উদ্ধৃত করেছি আমার এই প্রবন্ধেই, যিনি ‘গ্র্যাণ্ড ডিজাইন’ বইয়ে খুব পরিষ্কার করেই বলেন –
‘মহাবিশ্ব উৎপত্তির সময় বাতি জ্বালানোর জন্য ঈশ্বরের কোন প্রয়োজন নেই’।
এগুলো পড়ে আপনার বিজ্ঞানীদের প্রচণ্ড রকম ঈশ্বরে বিশ্বাসী কিছু বলে মনে হচ্ছে? আমার মনে হচ্ছে না। আমার কথা বিশ্বাস না হলে নেচার জার্নালে (Nature, Vol. 394, No. 6691, p. 313 (1998)) প্রকাশিত এই নিবন্ধটিও দেখতে পারেন, যেখানে পরিষ্কার করেই বলা হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠ লিডিং সায়েন্টিস্টেরা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন না (বিখ্যাত সায়েন্টিস্টদের মধ্যে চালানো জরিপে দেখা গেছে মাত্র সাত শতাংশ ঈশ্বরে বিশ্বাসী, বাকী ৯৩ ভাগ হয় অবিশ্বাসী নয়তো অজ্ঞেয়বাদী)–
Leading scientists still reject God
আবার এই কথা বইলেন না যে, এই বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের কেউ আপনার রং তুলি আর ক্যানভাসের কিংবা গাড়ীর ড্রাইভারের উপমা বোঝে না, কিংবা জীবনেও শুনে নাই, কিংবা বুইঝাও নাস্তিকদের মত অবুঝ হয়ে আছে।
হকিং আইনস্টাইনে যাওয়ারও আসলে দরকার নাই, কিংবা দরকার নাই বিখ্যাত সায়েন্টিস্টদের কয়জন ঈশ্বরে বিশ্বাস করে সেইটা নিয়ে খামোখা প্যাচালেরও, আপনি এত কথার প্যাচ না কষে স্রেফ ঈশ্বরের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ হাজির করলেই সেটা মেনে নেয়া হবে, সেটা যতক্ষণ না পারছেন – ততক্ষণ পর্যন্ত অবুঝ নাস্তিকদের লজিক আপনাকে হজম করতেই হবে। আমি নিরুপায়।
ভাই, এইগুলা খুব পুরানা লজিক, সেই ১৮০২ সালে প্যালের সময় থেকেই দেয়া হয়েছে। কেউ মহাবিশ্বকে দেখেছেন ঘড়ির মত, কেউ বা ক্যামেরার মত, আর আপনার মত কেউ দেখছেন গাড়ির মত। এগুলোর খণ্ডন দেখতে চাইলে দেখতে পারেন এখানে কিংবা এখানে।
এই প্যালের ঘড়ি-টাইপের আর আপনের গাড়ী-টাইপের যুক্তি বিজ্ঞান এবং দর্শনে এতোবার খণ্ডন করা হয়েছে যে, বুঝদার ধার্মিকেরাও এগুলো দিয়ে এখন ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করে না। আপনি করছেন দেখে বুঝলাম উনবিংশ শতকের পর থেকে দর্শন শাস্ত্রের বুৎপত্তি এবং এর বিকাশ নিয়ে আপনি খুব একটা ওয়াকিবহাল নন। আপনি পড়ে রয়েছেন সেই ১৮০২ সালে প্যালের যুগেই।
খুব সোজা কথা হল, ক্যামেরা, গাড়ি এগুলো বানাতে কাউকে না কাউকে সবসময়ই দেখা গেছে – আমি আপনি সবাই দেখেছি, কিন্তু এই মহাবিশ্ব বানাতে কেউ দেখেনি। এই স্যাম্পল একটাই। আমি বলব সেটা গাড়ীর মত নয়, এর ড্রাইভারও লাগে না। অন্যদিকে আপনারা সেটাকে কখনো ঘড়ি, ক্যামেরা কিংবা কখনো গাড়ির সাথে তুলনা করছেন, এবং সেটার পেছনে একজন অদৃশ্য কারিগর কিংবা ড্রাইভার ইত্যাদি বসিয়ে দিচ্ছেন, সেই ড্রাইভারের অস্তিত্ব সম্বন্ধে নিশ্চিত না হয়েই। শুধু তাই না, সেই কারিগরের পেছনে আর কোন কারিগরের অস্তিত্ব বানচাল করে দিচ্ছেন। কেন? ঈশ্বর বাবাজি – যিনি আপনাদের কথামত এত জটিল একটা মহাবিশ্ব বানালেন, তিনি এই মহাবিশ্বের চেয়েও জটিল একটা কিছু হবেন না? তাকে সৃষ্টি করতে কি আরও জটিল কোনো সৃষ্টিকর্তা প্রয়োজন না? সেই জটিল জটিল সৃষ্টিকর্তাই বা সৃষ্টি হলেন কিভাবে? এগুলোর কোনটারই উত্তর পাওয়া যাবে না, আর এগুলো প্রশ্ন করলেই আমরা হব ‘অবুঝ নাস্তিক’, তাই না? আপনার কথানুযায়ী, গাড়ির ড্রাইভার ‘অযান্ত্রিক মানুষ’ হতে পারে, কিন্তু কোন ড্রাইভারই তো স্বয়ম্ভূ হিসেবেও জন্মায় না (আপনি দেখেছেন নাকি জন্মাতে?), কোন ড্রাইভারই জন্মায় না তার কোন পূর্বপুরুষের অস্তিত্ব ছাড়া। অথচ ঈশ্বর বাবাজিকে ভুজুং ভাজুং দিয়ে সেটাই বানিয়ে ‘সব সমস্যার সমাধান’ হিসেবে প্লেটে করে হাজির করছেন। ব্যাপারটা কি একটু ক্লিন্ট ইস্টুডের এম্পটি চেয়ারের মত হয়ে গেল না?
এর চেয়ে ভাল সমাধান দেই বরং, শুনেন। একটা সময় জীবজগতের জন্যও মনে করা হত আলাদা আলাদা ভাবে ঈশ্বর বাঘ, সিংহ, হাতী, ঘোড়া, মানুষ একটা একটা করে বানিয়েছে। কিন্তু বিবর্তনের ধারনা থেকে আমরা আজ জানি কোন প্রজাতিকেই আলাদা আলাদা ভাবে সৃষ্টি করা হয়নি। প্রজাতির উদ্ভব ঘটে প্রাকৃতিক নিয়মেই প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রভাবে। কিভাবে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ঘটা বিবর্তন তত্ত্ব প্যালের ঘড়ির কারিগরের মত ডিজাইন আর্গুমেন্টকে বাতিল করে দেয় সেটা নিয়ে একটু পড়াশুনা কইরেন আবার উত্তর দেয়ার আগে। ডকিন্সের ‘ব্লাইণ্ড ওয়াচমেকার’ বইটা এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
জীবজগতের জন্য যেটা বুঝতে পেরেছিলেন জীববিজ্ঞানীরা, পদার্থবিজ্ঞানীরাও সেটা বুঝতে পারছেন মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে। প্রাকৃতিক-ভাবে প্রজাতির যেমন উদ্ভব হতে পারে, ঠিক তেমনি প্রাকৃতিক নিয়মেই মহাবিশ্বের সূচনা হতে পারে, এবং এর জন্য ঈশ্বরের প্রয়োজন নেই। আপনি স্টিফেন হকিং এর গ্র্যান্ড ডিজাইন কিংবা এই প্রবন্ধে লরেন্স ক্রাউসের ‘ইউনিভার্স ফ্রম নাথিং’ বইটা পড়ে নিতে পারেন।
আমিও তাই বলি!
@অভিজিৎ,
আপনি আমাকে অনেক সময় দিয়েছিন বলে ধন্যবাদ!
আপনার মত একজন জ্ঞানী বিচক্ষন যে উপরের ভুলটি করবে আমি ভাবতেই পারিনি। আমি মোটেও রবীন্দ্রনাথ আর আইনস্টাইনকে বগলদাবা করার চেষ্টা করিনি, আমার ভাববাদক লাইনটিকে আপনি আক্ষরিক ভাবে নিয়েছেন। হয়তো আপনাকে অনেক মন্তব্যের জবাব দিতে হয় বলে তড়িঘড়ি করে একঝলক দেখেই এভাবে উওর লিখেছেন।একটি বিষয় নিয়ে আমি কিভাবে ভাবছি- সেটাই আমি লেখার চেষ্টা করি, আমার আগে অনেকেই বিষয়টি ভেবে থাকতে পারে, এমন কি আমার ভাবনা ১৮০২ সালে কারও ভাবনার সাথে মিলে গেলেও আমার তেমন লজ্জা লাগেনা বা ও ভাবে চিন্তা করিনা। কোন বিষয় জানার জন্য সিম্পল প্রশ্ন করেই আমি এগুতে পছন্দ করি এবং সম্ভাব্য সব উত্তর গুলোর মধ্য নির্ভরযোগ্য কোনটি হতে পারে তা বেছে নেওয়ার জন্য -ডাউস ডাউস পুস্তক এর চেয়ে-আমার মস্তকের মুক্ত চিন্তার লজিকাল প্রবাহকেই প্রধান্য দেই। কোন এক বিশেষ ফিলোসফিকে এনালাইসিস করার জন্য- পুরো ফিলোসফি ওয়ালর্ড বা স্কুল অফ থট কে নিয়ে গোড়া থেকে এক্সার সাইস করা আমার কাছে সময় অপচয় কিংবা বিত্তবানের চিন্তার বিষয় মনে হয়। তবে কোন এক স্থাপ্ত্যর’ উপকরন খুজে পাওয়া মানেই স্থপতি’ কে খুজে পাওয়া নাও হতে পারে। মুল কথা আমার নিকট “ইশ্বর এর উৎস’ টপিক টি বৈজ্ঞানিক এর চেয়ে দার্শনিকই বেষি মনে হয়।
@নিখর তাবিক,
না আমার কোন ভুল হয়নি। ভাববাদী হোক আর আক্ষরিক হোক, আপনি রবীন্দ্রনাথ এবং আইনস্টাইনের উল্লেখ করেছিলেন যাতে আপনার যুক্তি জোরালো হয়। কিন্তু আমি দেখিয়েছি যে আপনার যুক্তি হালে পানি পায়নি। এমনকি আইনস্টাইনকে যে ভাবে উল্লেখ করেছিলেন সেটাও পুরোপুরি ভুল। বরং আইনস্টাইনের অবস্থান ছিল আপনার ভাবা চিন্তার পুরোপুরি বিপরীত।
হ্যা আপনি যে বইপত্র পড়েন না, বা পড়ার চেষ্টাও করেন না তা বুঝতে পেরেছি। ‘ডাউস ডাউস’ কিংবা ‘ঢাউস ঢাউস’ কিংবা ক্ষীণকায় কোন বইই যে আপনার মনোযোগ আকর্ষণ করবে না তা সহজেই বোঝা গেছে। এরকম একগুঁয়ে না হয়ে যদি বইপত্রের প্রতি খানিকটা হলেও আগ্রহ দেখাতেন, তাহলে দেখতেন, আপনার এই প্রশ্নগুলো আগেও বহুজনই করেছিলেন, এবং সেগুলো খণ্ডিতও হয়ে গেছে খুব জোরালো ভাবেই। সে ব্যাপারগুলো না জেনে বা না পড়ে ‘মনে মনে মন কলা খেলে’ আমি আর কি বলব বলুন!
আপনার ‘বেষি মনে’ হলে তো চলবে না ভাই। একটা সময় তো ‘ডাবের ভিতর পানি ক্যান’ থেকে শুরু করে ‘আকাশে থেকে বৃষ্টি পরে কেন’ সবকিছুই ঈশ্বরের মহিমা দিয়ে ব্যাখ্যা করা হত। এখন বিজ্ঞান দিয়ে আমরা এগুলোর ব্যাখ্যা দিতে পারি সহজেই। বিজ্ঞান যত এগুচ্ছে আপনাদের ঈশ্বর তত সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছেন সেটা কি খেয়াল করেছেন? যে প্রায় বিলীন হয়ে যাওয়া দু’একটি অন্ধকার গুহাতে ঈশ্বরকে বসিয়ে দর্শনের বুলি আওরাচ্ছেন সেগুলোও পূরণ হয়ে যাবে অচিরেই।
যা হোক, আপনার সাথে আলোচনা করে ভাল লাগলো। ভবিষ্যতে আরো আলোচনা হবে নিশ্চয়।
@অভিজিৎ,
দারুন! অভিজিৎ দা।
@কেশব অধিকারী,
ধন্যবাদ।
@রৌরব,
এটার বড় সড় ব্যাখ্যা আমি সোহেল চৌধুরীকে দিতে গিয়ে বলেছি। (দেখুন এখানে) মূল কারণ হল হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি।
এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি বা কোয়ান্টাম বলবিদ্যার নীতিগুলোই বা কোত্থেকে এল। ক্রাউসের মতে এটা র্যাণ্ডমলি বিভিন্ন মহাবিশ্বে বিভিন্নভাবে এডজাস্টেড হয়েছে। আমাদের মহাবিশ্বে পদার্থবিজ্ঞানের নীতিগুলো একরকম, অন্য মহাবিশ্বে সেগুলো অন্যরকম। এবং অন্যরকম বলে সেগুলোতে গ্যালাক্সি, নক্ষত্র, ছায়াপথ হয়তো সেখানে গঠিত হয়নি, হয়নি কোন জীবনোপযোগী পরিবেশের বিস্তার। তাই সেসব মহাবিশ্বে ‘হোয়াই দেয়ার ইজ সামথিং র্যাদার দ্যান নাথিং’ মার্কা প্রশ্ন করারও কেউ নেই।
আর কোয়ান্টাম বলবিদ্যা যদি বাদও দেই নাথিং’ ব্যাপারটি ডিফলট ধরে নেয়ার মধ্যেও দার্শনিক যুক্তি নেই। দেখতে পারেন এখানে, স্ট্যানফোর্ড এন্সাইক্লোপেডিয়া অব ফিলোসফি থেকে।
@অভিজিৎ,
এসবই ডিফ্লেকশন। প্রশ্নকে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দেয়া। র্যাণ্ডমলি? কোন প্রবাবিলিটি ডিসট্রিবিউশন অনুযায়ী? ওই প্রবাবিলিটি ডিসট্রিবিউশন কোথ-থেকে এল?
আসল কথাই হল এগুলি কোন বৈজ্ঞানিক প্রশ্নই না। “কেন”-র জবাব বিজ্ঞান দিতে পারেনা, বিজ্ঞানের কাজ prediction। কেন বিজ্ঞানীরা এসব প্রশ্ন করে বেড়ান এটাই আমার কাছে একটা বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
এই পয়েন্ট অভ ভিউ এর সাথে কিন্তু anthropic principle এর তেমন পার্থক্য নেই।
@রৌরব,
প্রবাবিলিটি ডিসট্রিবিউশন পদার্থবিজ্ঞানের নীতি অনুসরণ করেই এসেছে। এখন যদি প্রশ্ন করেন, সেই নীতি কোত্থেকে এল – এটা সেই পুরোন তর্কে ফিরে যাওয়া, পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র গুলো কোত্থেকে এল, যেটা নিয়ে ইতিমধ্যেই আগে নানা আলোচনা হয়ে গেছে। স্টেঙ্গর এখানে বলেছেন,
।
পেপার এখানে। পল ডেভিসেরও কিছু লেকচার শুনেছিলাম এ নিয়ে।
যা হোক আমার কথা হল, সব সময়ই আরো প্রশ্ন করার, আরো গভীরে যাওয়ার ক্ষেত্র একটা না একটা থাকবেই। সেটা স্বাভাবিকই। সেটা মেনে নিয়েই এগিয়ে যাই বরং। 🙂
@অভিজিৎ,
রাইট। আমার পয়েন্ট হচ্ছে, এই প্রশ্নটিই দার্শনিকদের প্রশ্ন, যার জবাব কিনা লরেন্স ক্রাউস দিতে পারেননি, এবং পারবেন না (কারণ প্রশ্নটা যাচ্ছেতাই রকমের অবান্তর)।
শূণ্য-টূণ্য এগুলি মৌলিক প্রশ্নের instantiation মাত্র। মূল কথা হল, “এ জিনিসটা এরকম না হয়ে ওরকম হল কেন“, এটাকে যদি আপনি একটা বৈধ প্রশ্ন মনে করেন, তাহলে সেই প্রশ্নের status ১৮৫০ সালে যা ছিল আজও তাই আছে।
১৮৫০ এর ভার্শন: নিউটনের গতি সূত্র গুলি এরকম না হয়ে ওরকম হল কেন?
আজকের ভার্শন: ভয়েড-এর সিমেট্রি এরকম না হয়ে ওরকম হল কেন?
আজকের সবচেয়ে এডভান্সড বৈজ্ঞানিক construct কে ভয়েড নাম দিলে কিছুই এসে যায় না। আপনার দেয়া ভিক্টর স্ট্রেঙ্গার এর পেপারের প্রথম দুই লাইন থেকে..
অর্থাৎ “ভয়েড” হোক আর যাই হোক, সেটা পর্যবেক্ষণের ওপর একটা আরোপিত post-hoc construct। সেটা নিজে কোন কিছুকেই ব্যাখ্যা করে না (prediction এ সাহায্য করা ছাড়া)।
@রৌরব,
হয়তো। আমি বৈধ প্রশ্ন বলছি না, কিন্তু প্রশ্নগুলো তো করা হচ্ছেই, অন্ততঃ এভাবে সাধারণ মিডিয়ায় আসছে। আর তাছাড়া ‘কেন’র জায়গায় ‘কীভাবে হল’ বললেই যে খুব একটা জ্ঞানের উত্তোরণ ঘটছে তাও কিন্তু নয়। যে জ্ঞান অর্জিত হয়নি সেটা ‘কেন’ দিয়ে বললেও যা, ‘কীভাবে’ দিয়েও বললেও মনে হয় তা।
তবে কিছু ব্যাপার এর মধ্যে পাল্টাতে দেখেছি। আগে ‘বিগ ব্যাং এর আগে কি ছিল’ এ ব্যাপারটাকে স্ববিরোধী হিসেবে দেখা হত, অনেকটা ‘উত্তর মেরুর উত্তরে কি?’ এর মত। ইনফ্লেশন পিকচারে আসার পর বিজ্ঞানীরা কিন্তু সেভাবে দেখছেন না। ইনফ্লেশন কিভাবে হল, কিভাবে সেখান থেকে এক বা একাধিক বিগব্যাং এর জন্ম হতে পারে, তার মডেল করছেন। এটাও কিন্তু বাস্তবতা।
এটার একটা সমাধান না হলেও অন্ততঃ সমাধানের উপায় হিসেবে নিতে পারেন সেই ‘মডেল সেন্ট্রিক রিয়ালিজমের’ ধারণা, যেটা হকিং আর ম্লোডিনো তাদের গ্র্যান্ড ডিজাইন বইয়ে বলেছেন। মডেল সেন্ট্রিক রিয়ালিটির বাইরে আর কোন রিয়ালিটি থাকলেও সেটা আমরা কখনো জানব কিনা সেটাও একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে।
আমি এ বিষয়ে কিছু কাঁচা প্রশ্ন করছি,োনটি বেশি গ্রহণযোগ্য-singularity point থেকে big bang এর মাধ্যমে নাকি ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে মহাবিশ্বের ৃষ্টি ? নাকি ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে singularity point ৃষ্টি?
আর একটা কথা, অভ্র দিয়ে লেখা এত কষ্ট কেন?
@ীর্ঘশ্বাস,
মোটেই কাঁচা নয়, বরং ভাল প্রশ্ন করেছেন। তবে আপনার প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে হলে আমাকে একটু বিস্তারিতভাবে বলতে হবে।
আশির দশকে ইনফ্লেশন বা স্ফীতি তত্ত্ব আসার আগে সবাই ভাবতো, মহাবিশ্ব শুরু হয়েছে বিগ ব্যাং দিয়ে। কিন্তু ইনফ্লেশন তত্ত্ব এসে মহাজগতের ছবিটিকে একেবারেই উলটে দিয়েছে। লিন্ডে-গুথ-ভিলেঙ্কিনদের গবেষণা বলছে, বিগ ব্যাং দিয়ে মহাবিশ্বের শুরু নয়, বরং মহাবিশ্বের শুরু হয়েছে ইনফ্লেশশন দিয়ে। অর্থাৎ, বিগব্যাং এবং তারপরে স্ফীতির মাধ্যমে মহাবিশ্ব তৈরি (যা কিছুদিন আগেও সত্যি বলে ভাবা হত) হয়নি, বরং ইনফ্লেশনের ফলশ্রুতিতেই কিন্তু বিগব্যাং হয়েছে, তারপর সৃষ্ট হয়েছে আমাদের মহাবিশ্ব । আঁদ্রে লিন্ডে তার সায়েন্টিফিক আমেরিকানের একটা প্রবন্ধে (Self Reproducing Inflationary Universe, Andrei Linde, Scientific American, 1998 ) ব্যাপারটি পরিষ্কার করেছেন সাধারণ একটি বাক্যে –
“Inflation is not a part of big-bang theory as we thought 15 years ago. On the contrary, the big-bang is the part of inflationary model’
পুরো পেপারটা পড়তে পারেন এখান থেকে-
http://mukto-mona.net/science/physics/Inflation_lself_prod_inde.pdf
এবার সিঙ্গুলারিটি নিয়ে কিছু কথা বলা যাক।
১৯৭০ সালে জ্যোতি-পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এবং গণিতবিদ রজার পেনরোজ, পেনরোজের আগের একটি উপপাদ্যের আলোকে ধারনা করেন যে, বিগব্যাং-এর শুরুতে ‘সিংগুলারিটি’ বা অদ্বৈত বিন্দুর অস্তিত্ব ছিল। তারপর থেকেই সিঙ্গুলারিটি নিয়ে নানা উন্মাদনা তৈরি হয় সাধারণ মানুষের মাঝে। অনেকে আবার সিঙ্গুলারিটির মধ্যে ঈশ্বরের প্রতিচ্ছবি পাওয়া শুরু করলেন। এখনো অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানের বইপত্রে সিঙ্গুলারিটির উল্লেখ থাকে। কিন্তু যে ব্যাপারটা অনেকেই জানেন না যে, ১৯৭০ সালে হকিং এর গবেষণা প্রবন্ধে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার সমন্বয় ছিল না। পরে তারা (স্টিফেন হকিং এবং পেনরোজ ) কোয়ান্টাম মেকানিক্সের যখন সমন্বয় করলেন তখন তারা দেখলেন সিঙ্গুলারিটি বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। ১৯৮৮ সালে হকিং এ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ টাইম বইতে খুব পরিস্কার করেই বলেন, ‘There was in fact no singularity at the beginning of universe’. অর্থাৎ মহাবিশ্বের সূচনার সময়ে সিঙ্গুলারিটির অস্তিত্ব ছিল না। আপনি যদি বইটা পড়েন তাহলে দেখবেন যে হকিং আরো বলছেন –
‘এক সময় আমাদের (হকিং এবং পেনরোস) তত্ত্ব সবাই গ্রহণ করে নিলো এবং আজকাল দেখা যায় প্রায় সবাই এটা ধরে নিচ্ছে যে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে একটা বিন্দু (সিঙ্গুলারিটি) থেকে বিগব্যাং-এর মাধ্যমে। এটা হয়তো একটা পরিহাস যে এ বিষয়ে আমার মত পালটানোর পরে আমিই অন্য পদার্থবিজ্ঞানীদের আশ্বস্ত করতে চেষ্টা করছি, যে এমন কোনো সিঙ্গুলারিটি আসলে ছিল না-কারণ, কোয়ান্টাম ইফেক্টগুলো হিসেবে ধরলে সিঙ্গুলারিটি বলে কিছু আর থাকে না’।
অথচ ধর্মবেত্তারা আজ অব্দি সেই সিংগুলারিটি পয়েন্টকে কেন্দ্রে করে স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ বিষয়ক অসংখ্য বই লিখে চলছেন। এ ব্যাপারটি পরিস্কার করে আমি আর রায়হান ‘অবিশ্বাসের দর্শন’ বইটায় বিস্তৃত লিখেছি। দেখে নিতে পারেন চাইলে।
আপনি অনেকদূর চলে এসেছেন। আরেকটু লিখলেই দেখবেন, এটা আসলে সোজা, সবচেয়ে সোজা! 🙂
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
একটা বিষয় জানতে খুব ইচ্ছে করছে, ইনফ্লেশন বা স্ফীতি তত্ত্ব এর গোড়ার উপাখ্যানটা কি ? মহাবিশ্ব(?) স্ফিত হবার আগের মুহুর্তটিই বা কেমন ছিলো? কারণ ইনফ্লেশনের পরেই তো বিগব্যাং তার পরে মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রশ্ন!
@কেশব অধিকারী,
ধন্যবাদ আপনাকে। ইনফ্লেশনের গোঁড়ার উপাখ্যান বলতে গেলে অনেক কিছু বলতে হবে। আপনি বিস্তারিত তথ্যের জন্য The Inflationary Universe: The Quest for a New Theory of Cosmic Origins, Alan H. Guth, Perseus Books Group (March 1, 1998) বইটা দেখতে পারেন। এলেন গুথের উইকি পেইজেও ভাল আলোচনা আছে। সংক্ষেপে বললে বলা যায় –
‘বিগ ব্যাং’ তত্ত্বের গৌরবময় সাফল্য বিজ্ঞানীদের একেবারে সম্মোহিত করে রেখেছিলো। সবকিছুই সেই উত্তপ্ত মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে একসাথে সৃষ্টি হয়েছে, আর তার আগে কিছুই ছিলো না, এমন ভাবনা যেন বিজ্ঞানীরা অনেকটা স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন কয়েকদশক ধরে। কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যকগ্রাউন্ড রেডিয়েশনের প্রত্যক্ষ প্রমাণ পেয়ে অনেকে আবার বিগ-ব্যাং থিওরীর মধ্যে একেবারে ‘ঈশ্বরের প্রতিচ্ছবি’ পর্যন্ত দেখতে পেয়েছিলেন। এমনকি নিউজ উইকের মত ম্যাগাজিন ১৯৯৮ সালের ২০ এ নভেম্বর সম্পাদকীয় ছেপেছিলো এই বলে বিজ্ঞান নাকি ঈশ্বরকে পেয়ে গেছে!
তারপর যতদিন গেছে উত্তেজনা আর ‘সম্মোহনের ভাব’ ধীরে ধীরে থিতিয়ে এসেছে। আর তারপর বিজ্ঞানীরা নিজেরাই দেখেছেন বিগ ব্যাং -এর স্ট্যান্ডার্ড মডেল আসলে সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে না। যেমন, স্ট্যান্ডার্ড বিগ ব্যাং তত্ত্ব ‘ম্যাগনেটিক মনোপোল’ সমস্যার কোন সমাধান দিতে পারেনি। প্রাথমিক কণিকাতত্ত্বের সাথে সমন্নিত করা মহাবিস্ফোরণ তত্ত্ব বৈদ্যুতিক-চুম্বকীয় আধানযুক্ত অতি ভারী কিছু কণিকার প্রাচুর্য থাকবার ভবিষ্যৎবানী করেছিলো, যা প্রমাণিত হয়নি; বলতে পারে নি কেন আমাদের মহাবিশ্ব অতিমাত্রায় ফ্লাট বা সামতলিক (১০^২৮ সেন্টিমিটার স্কেলে), দিতে পারেনি দীগন্ত বা হোরিজন সমস্যার সুচারু সমাধানও; এমনকি আমাদের মহাবিশ্ব কেন এতো বড় – এ সমস্যা সমাধানও আমরা বিগ ব্যাং থেকে খুঁজে পাইনি।
আরো অনেক সমস্যা ছিল। সেগুলোর সমাধান পাওয়া গেছে স্ফীতিতত্ত্ব বা ইনফ্লেশন বাজারে আসার পরেই।
ইনফ্লেশনের সময় বা তার ঠিক আগে কি হয়েছিল কেউ জানে না। তবে বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন মডেল থেকে যা অনুমান করেছেন তা সংক্ষেপে বলা যায়। অ্যালেন গুথের প্রাথমিক ইনফ্লেশনারী মডেল অনুযায়ী এক ধরণের ‘ফলস ভ্যাকুয়াম’ থেকে যাত্রা শুরু করেছিল মহাবিশ্ব, ফেস ট্রাঞ্জিশনের মাধ্যমে পৌঁছিয়েছিল ‘ট্রু ভ্যাকুয়ামে’। আর ব্যাপারটা হয়েছিল প্রচণ্ড দ্রুতগতিতে, এমনকি স্থানের প্রসারণ আলোর গতিকেও হার মানিয়েছিল এই স্ফিতি। স্টিফেন হকিং সেটা গ্র্যান্ড ডিজাইন বইয়ে মজা করে লিখেছেন এভাবে (অনুবাদ তানভীরুল) –
… পদার্থবিজ্ঞানীরা এ প্রসারণকে বলেন ইনফ্লেশন বা স্ফীতি। আপনি যদি জিম্বাবুয়ের অধিবাসী না হন, যেখানে সম্প্রতি মুদ্রাস্ফীতি ২০০,০০০,০০০ শতাংশকেও ছাড়িয়ে গেছে, তাহলে হয়তো স্ফীতি শব্দটা তেমন বিস্ফোরক শোনাবে না। কিন্তু একদম রয়েসয়ে করা অনুমান অনুযায়ীও মহাজাগতিক স্ফীতির সময় মহাবিশ্ব ১,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০,০০০ গুণে স্ফীত হয়েছিলো মাত্র .০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০১ সেকেন্ডে। এ যেন একটা ১ সেন্টিমিটার ব্যাসের মুদ্রা হঠাৎ করে ফুলে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির দশ মিলিয়ন গুণ বড় হয়ে গেলো। শুনে মনে হতে পারে এতে আপেক্ষিকতার তত্ত্ব লঙ্ঘিত হচ্ছে, কারণ আমরা জানি কোনো কিছুই আলোর গতির চেয়ে দ্রুত যেতে পারে না, কিন্তু আসলে তা নয়। কারণ গতির এই সীমা স্থান-কালের নিজস্ব প্রসারণের উপর খাটে না।
তারপরে এই ইনফ্লেশনারী বা স্ফীতিশীল মডেল আরো সমৃদ্ধ হয়েছে, লিন্ডে এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীদের হাত দিয়ে। লিন্ডে দেখিয়েছেন ইনফ্লেশন একবার শুরু হলে আর থামে না (‘এটারনাল ইনফ্লেশন’)। তার চেও মজার ব্যাপার হল, স্ফীতিতত্ত্বের সর্বাধুনিক ধারণা অনুযায়ী, শুধু যে একবারই বিগব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ ঘটেছে তা কিন্তু নয়, এরকম বিগ ব্যাং কিন্তু হাজার হাজার, কোটি কোটি এমনকি অসীম-সংখ্যকবার ঘটতে পারে; তৈরি হতে পারে অসংখ্য ‘পকেট মহাবিশ্ব’। আমরা সম্ভবতঃ এমনই একটি পকেট-মহাবিশ্বে অবস্থান করছি বাকিগুলোর অস্তিত্ব সম্বন্ধে জ্ঞাত না হয়ে। এটাই সেই বিখ্যাত ‘মালটিভার্স’ বা ‘অনন্ত মহাবিশ্বের’ ধারনা।
কেন এই মডেলকে এখন এত গুরুত্ব দেন বিজ্ঞানীরা? কারণ, স্ফীতি তত্ত্ব বিগ ব্যাং-এর হরিজন সমস্যা, মনোপল সমস্যা ইত্যাদির সমাধান করে গ্যালাক্সির ক্লাস্টারিং, এক্স রশ্মি এবং অবলোহিত তেজস্ক্রিয়তার বিন্যাস, মহাবিশ্বের প্রসারণের হার এবং এর বয়স, মহাবিশ্ব গঠনে এর উপাদান গুলোর প্রাচুর্য – সব কিছুই ব্যাখ্যা করতে পেরেছে খুব চমৎকার ভাবে।
আপনি গুথের এই স্লাইডটা দেখতে পারেন, এখানে সামারি আকারে পাবেন –
http://www.phys.cwru.edu/events/grav_ws/guth-st-thomas.pdf
ধন্যবাদ।
@অভিজিৎ,
অসংখ্য ধন্যবাদ অভিজিৎ রায়। আপনার এই রিভিউটি এতো তথ্যপূর্ণ আর বিবরণ এতো প্রাঞ্জল যে আমি অভিভূত। আপনি যে লিংক গুলো দিয়েছেন, আমি পড়ে দেখি। প্রশ্ন জাগলে আবার বিরক্ত করতে আসবো। ধন্যবাদ আবারো।
ধন্যবাদ অভিজিৎ দা কে এমন একটি তথ্যবহুল লেখা আমাদেরকে উপহার দেয়ার জন্যে। মাঝে মাঝে লেখার চেয়ে সাক্ষাৎ আলোচনা বা লেকচার বুঝতে উপভোগ করতে সহজ মনে হয়। তেমনি একটি আলোচনা এখানে।
@আকাশ মালিক,
ধন্যবাদ। বাংলাদেশ থেকে ইউটিউব বন্ধ করে দিয়েছে সরকার মোল্লাদের তাণ্ডবে, শুনেছেন বোধ হয়।
তাই ইউটিউব এম্বেডেড করে দিলে পোস্টের কন্টেন্টই নাকি দেশ থেকে পড়া যায় না। আমি এম্বেডেড করার বদলে লিঙ্কায়িত করে দিলাম।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
এক নাগারে মুগ্ধ হয়ে পড়ে গেলাম। সত্যিই অসাধারণ লাগল। এই প্রশ্নটার উত্তর কী হবে সেই চিন্তা অনেকদিন থেকেই মগজটাকে দখল করে দেখেছিল। আজ উত্তরটা পেয়ে দারুণ লাগছে। তবে দাদা, কিছু প্রশ্ন মনের ভিতরে উকিঝুকি দিচ্ছে-
১। সমান্তরাল মহাবিশ্ব তত্তের ক্ষেত্রে অন্যান্য মহাবিশ্বগুলোর উত্পত্তির কারণও কি এই ‘নাথিং ব্যাপারটা অস্থিতিশীল’?
২। পল স্টাইনহার্ট ও নেইল টুরকের প্রস্তাবিত ‘সাইক্লিক মডেল’ বা চক্রাকার মহাবিশ্ব তত্তে ক্রাউসের এই ব্যাপারটা কীভাবে কাজ করবে? আদৌ করেছে কিনা?
@অয়ন সরকার,
মোটা দাগে সেটাই। কোয়ান্টাম লেভেলে শূন্যতা অস্থিতিশীল বলেই অনবরত ফ্লাকচুয়েশন হয়, এবং হচ্ছে। এখন, মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম সূত্র প্রয়োগ করতে গিয়ে লিন্ডে এবং আলেকজাণ্ডার ভিলেঙ্কিন প্রমুখ বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, ফ্লাকচুয়েশন এবং ইনফ্লেশনের ফলে শুধু যে একবারই বিগ ব্যাং বা মহাবিস্ফোরণ ঘটেছে তা কিন্তু নয়, এরকম বিগ ব্যাং কিন্তু হাজার হাজার, কোটি কোটি এমনকি অসীম-সংখ্যক বার ঘটতে পারে; তৈরি হতে পারে অসংখ্য ‘পকেট মহাবিশ্ব’। আমরা সম্ভবত: এমনই একটি পকেট-মহাবিশ্বে অবস্থান করছি বাকিগুলোর অস্তিত্ব সম্বন্ধে জ্ঞাত না হয়ে । এ ব্যাপারটিকে বলা হয় ‘মাল্টিভার্স বা অনন্ত মহাবিশ্বের ধারণা । আমি মাল্টিভার্সকে ‘অনন্ত মহাবিশ্ব’ হিসেবেই বলব – সমান্তরাল মহাবিশ্ব নয়। সমান্তরাল মহাবিশ্ব বা প্যারালাল ইউনিভার্স একটু আলাদা। সেই ইউনিভার্স হবে আমাদের মহাবিশ্বের মত আইডেন্টিকাল মহাবিশ্ব। সেখানে পদার্থবিজ্ঞানের নিয়ম নীতি গুলো আমাদের মহাবিশ্বের মত। চাইকি হয়ত সেরকম কোন মহাবিশ্বে আপনারই মত কাউকে হয়ত একই ভাবে আমি ব্লগে জবাব দিচ্ছি 🙂 । তবে সমান্তরাল মহাবিশ্ব এখনো একটু ফ্যান্টাসি ঘেঁষা বলেই আমার মনে হয়, সে তুলনায় মাল্টিভার্স অনেক শক্তপোক্ত অবস্থায় আছে।
পল স্টাইনহার্ট ও নেইল টুরকের প্রস্তাবিত ‘সাইক্লিক মডেল’ ইনফ্লেশনের বিকল্প একটি তত্ত্ব। তাঁদের আঁকা এ ছবিতে ‘বিগ ব্যাং’ দিয়ে স্থান-কালের (space-time) শুরু নয়, বিগ ব্যাং-কে তারা দেখিয়েছেন কেবল একটি ঘটনা হিসেবে – যার উদ্ভব হয় স্ট্রিংতাত্তিকদের কথিত দুটো ব্রেনের সংঘর্ষের (collision of branes) ফলশ্রুতিতে। এবং কেবলমাত্র একবারই এই মহাবিস্ফোরণ ঘটবে বা ঘটেছে তাও নয়, বরং এ মহাবিশ্ব প্রাকৃতিক বিবর্তনের চক্রে চির চলমান। তারা গাণিতিকভাবে দেখিয়েছেন, মহাবিশ্বের যাত্রাপথের প্রতিটি চক্রে বিগ ব্যাং উদ্ভব ঘটায় উত্তপ্ত পদার্থ এবং শক্তির। কালের পরিক্রমায় ক্রমশ শীতল হয়ে এর থেকে তৈরি হয় গ্যালাক্সি আর তারকারাজি, যা আমরা আজ চোখ মেললেই দেখতে পাই। আজ থেকে ট্রিলিয়ন বছর পরে আবারো বিগ ব্যাং ঘটবে এবং তৈরি করবে নতুন চক্রের। ইনফ্লেশনের মত না হলেও এটিও তত্ত্ব হিসেবে কোন কোন মহলে ভাল গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে, তবে এর কিছু সমস্যা আছে এন্ট্রপি হ্রাসের সমস্যা – থার্মোডায়নামিক্সের ২য় সূত্র ভায়োলেট করে সম্ভবত। তবে এর প্রবক্তারা এটার কিছু ফাঁক ভরাট করারা চেষ্টায় আছেন।
পড়ার এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
এখানে আরেকটি জিনিস লক্ষ্যণীয়। ক্রাউসের শিরোনামের দ্বিতীয় অংশটিকে এভাবেও ব্যখ্যা করা যায়: কখনই “নাথিং” ছিলনা–সবসময়ই “সামথিং” ছিল–কাজেই “নাথিং” থেকে “সামথিং” এসেচে এমনটি বলা যায় না। নাথিং এর অস্তিত্ব নাই–সেটি একটি এ্যাবসার্ডিটি। বিজ্ঞানও সেদিকে ইঙ্গিত করে। আবার এই বিশিষ্ট সামথিং থেকেই স্থান, কাল এবং বস্তুর সূচনা কিন্ত আর যাই হোক সেটি সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর বলে কিছু না–কারণ তাহলে বলতে হয় ঈশ্বর সৃষ্টিকর্তা নয় বরং নিজে বস্তু, শক্তি, স্হান-কালে পরিণত হয়েছে বা সেই জড় সামথিং এর কোন ইনটেলিজেন্স আচে। অন্তত: আব্রাহামিক ধর্মবাদীরাতো সেটি মানতে চাবেন না।সুতরাং:Why There Is Something Rather Than Nothing? প্রশ্নটাই অবান্তর।
উনি কিন্ত বলেননি: হাউ সামথিং কামস্ ফ্রম নাথিং? সেটি একটি লেজিটিমেট প্রশ্ন (নাথিং এর বৈজ্ঞানিক সংজ্ঞায়ন সাপেক্ষে)। অন্যকথায়, বৈজ্ঞানিক প্রশ্নটি (স্ট্রিক্টলি স্পিকিং-যা সবসময়ই “কেন” এর পরিবর্তে “কিভাবে” হয়ে থাকে) হওয়া উচিৎ: কিভাবে সামথিং (যা সর্বদাই অস্তিত্বশীল) রূপান্তরিত হয়ে স্থান-কাল, বস্তুতে পরিণত হল?নাথিং বলতে পরম শুণ্যতা বোঝালে সেটি দার্শনিক নাথিং—বৈজ্ঞানিক নাথিং নয়। আমার মনে হয় ক্রাউস সেটিই বলতে চেয়েছেন। দার্শনিক নাথিং এর প্রয়োজণ ধর্মবাদীদের–কারণ তারা আর্গু করবে যে পরম শুণ্যতা থেকে ঈশ্বর সামথিং ক্রিয়েট করেছে আর ঈশ্বর কোন থিং নয় বা কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাত কমপ্লেক্সিটিও নয় ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্ত বৈজ্ঞানিক নাথিং বা সামথিং যদি সর্বদাই থাকে তাহলে সেটির অস্তিত্বলাভের কোন কারণ প্রয়োজণ হয়না–কারণ সেটি অস্তিত্বলাভ করেনা। সেজন্য ঈশ্বরকে সেখানে কারণ হিসেবে আনবারও প্রয়োজণ পড়েনা। তবে এটিও ঠিক যে অনন্ত বৈজ্ঞানিক নাথিং এর অস্তিত্ব এখনও স্পেকুলেশানের ওপর নির্ভরশীল–এটি বৈজ্ঞানিক ফ্যাক্ট হিসেবে এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি–কারণ এর জন্য প্রয়োজণীয় কোয়ান্টাম গ্রাভিটি তত্ত্ব আমাদের এখনও জানা নেই। পরিশেষে এটাও বলে রাখছি–যদিও বিষয়টিকে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করেছি তথাপি এটি সরাসরি আমার ফিল্ড নয়। অনন্ত বৈজ্ঞানিক নাথিং কি বৈজ্ঞানিকভাবে আদৌ সংজ্ঞায়িত কিনা সেটি আমার চেয়ে ভালো বলতে পারবেন একজন মহাবিশ্বতাত্ত্বিক।
@তানভীর হানিফ,
প্রশ্নটা হয়তো অবান্তর, কিংবা হয়তো বলা যায় ভুল প্রশ্ন। তবে সেটা নাথিংকে আন্ডিফায়েন্ড করার ব্যর্থতা বা সফলতার কারণে নয়। এটা ভুল প্রশ্ন কারণ, পদার্থবিদেরা মনে করছেন আধুনিক কোয়ান্টাম বলবিদ্যা অনুযায়ী সেটা এখন আর অসম্ভব কিছু ব্যাপার নয়। সেটাই উল্লেখ করেছেন মাইকেল শারমার পদার্থবিজ্ঞানী স্টেঙ্গরকে উদ্ধৃত করে তার স্কেপ্টিক-এর প্রবন্ধটিতে –
আসলে উনি বলেছেন। উনি বইয়ে বলেছেন যে আমরা অনেক প্রশ্ন হোয়াই দিয়ে শুরু করলেও আসলে বুঝাতে চাই ‘হাও’। উনি বলতে চেয়েছেন যে তিনি এই ‘হাও’টাকেই এড্রেস করেছেন পুরো বইয়ে। ‘হোয়াই দেয়ার ইজ সাম্থিং র্যাদার…’ এটা একতা ওলড সেয়েইং বলেই অবিকৃতভাবে তিনি শিরোনামে ব্যবহার করেছেন যদিও ব্যাখ্যা করেছেন ‘হাও…’ হিসেবেই।
এ ক্ষেত্রে একমত, এবং যে জায়গাগুলোতে ভিন্নমত তা আগেই উল্লেখ করেছি।
@অভিজিৎ,
আমার মনে হচ্ছে না আপনার সাথে আমার তেমন ভিন্নমত আছে। আমি কিন্ত Why There Is Something Rather Than Nothing? প্রশ্নটা অবান্তর বলেছি কারণ (১) কোন ভালো বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন “কেন” দিয়ে শুরু হয়না।
(২) “কেন” এক ধরণের উদ্দেশ্য নির্দেশ করে যা বৈজ্ঞানিকভাবে অর্থহীণ (প্রকৃতি পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মগুলো কেন মেনে চলে?)। নাথিং বলতে পদার্থবিদেরা পরম শুণ্যতা বুঝিয়েছেন বলে মনে হয়না। সেই ধরণের কোন পরম শুণ্যতাকে তাঁরা সংজ্ঞায়িত করবার চেষ্টা করেছেন বলে আমার মনে হয়না। এটা অনেকটা আপেলকে আমি কলা বলব ধরণের হতে পারে। তাঁরা হয়ত কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম বা স্পেস-টাইম সিংগুলারিটিকেই নাথিং বলছেন। কাজেই কোন দার্শনিক প্রশ্ন নিয়ে আসলে পদার্থবিদ্যা নাড়াচাড়া শুরু করে দিয়েছে–এক্ষেত্রে হয়ত বিষয়টা এরকম নয়।
আসলে উনি বলেছেন।
আমি সেটি জানি। আমি বলতে চেয়েছি তাঁর বইয়ের শিরোনামটিতে সেটি তিনি বলেননি হয়ত উদ্দেশ্যমূলকভাবেই। বইটি পুরো পড়লে এর মাজেজা ধরা পড়ে।
@তানভীর হানিফ,
আমরা মনে হয় শেষ পর্যন্ত এক ধরণের ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারছি।
আজকের মত ক্ষান্ত দেই।
জমজমাট আলোচনা করার সুযোগ করে দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ! 🙂
অভিজিৎ দা, আমার একটা ফালতু টাইপের প্রশ্ন ছিল।
মানুষ কি সুদূর ভবিষ্যতে শূন্য থেকে পদার্থ আনতে সক্ষম হবে? সেটা কি একেবারে অবাস্তব না নুন্যতম হলেও সম্ভাবনা আছে?
সুন্দর লেখার জন্য (F)
@ইমরানহক সজীব,
এইখানে দুটো জিনিস। প্রথমতঃ ভ্যাকউয়াম ফ্লাকচুয়েশনের ব্যাপারটা এম্পটি স্পেসে হয়। আমাদের বিশ্ব জগত এখন আর ‘এম্পটি’ নেই – ম্যাটার আর রেডিয়েশন রাজত্ব করছে। তবে আমাদের মহাবিশ্বের বাইরে কোন এম্পটি স্পেসে হয়ত এভাবে ফ্লাকচুয়েট করে মহাবিশ্ব তৈরি হচ্ছে যেটা আমরা হয়তো কখনো জানতেও পারব না।
আর কোয়ান্টাম লেভেলে ‘জিরো পয়েন্ট’ এনার্জির অস্তিত্ব কেউ তাত্ত্বিকভাবে অস্বীকার করেন না (কাসিমিরের পরীক্ষা সহ অনেক কিছুতেই এটা প্রমাণিত), কিন্তু এই শক্তি অর্জন করে কাজে লাগানোর ব্যাপারটা কনট্রোভার্শিয়াল। অনেকেই ‘পারপেচুয়াল মোশন মেশিন’ টাইপের জিনিস বানিয়েছে দাবী করলেও সেগুলো সবই ভাঁওতাবাজি বলে প্রমাণিত হয়েছে। জিরো পয়েন্ট এনার্জিকে কেউ কাজে লাগাতে পেরেছেন এরকম কোন প্র্যাক্টিকাল উদাহরণ এই পর্যন্ত নেই। আপনি সায়েন্টিফিক আমেরিকানে প্রকাশিত্র এই লেখাটা পড়ে নিতে পারেন।
আমার জানামতে, লরেন্স ক্রাউস মূলত: একজন কণা-পদার্থবিদ যিনি বিগত বহু বছর যাবৎ মূলত: মহাবিশ্বতত্ত্ব এবং পার্টকেল ফিজিক্স এর সমন্বিত ক্ষেত্রে গবেষণা করছেন। যদিও নিউট্রিনো এ্যাসট্রোফিজিক্স তাঁর রিসার্চ ইন্টারেস্টের অন্তর্ভূক্ত। সেই হিসেবে তিনি একজন সব্যসাচী বিজ্ঞানী। সে যাই হোক। আমার কাছে মনে হয়েছে লরেন্স যতনা তাঁর বইয়ের শিরোনামকে জাস্টিফাই করেছেন তার তুলনায় তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল দার্শনিক, ধর্মবাদী এবং বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী সাইন্টিফিক লেম্যানদের উস্কে দেওয়া এবং তাঁর বইয়ের কাটতি বাড়ানো। আমার যতটুকুন মনে পড়ে এর অনেকটাই তিনি এক সাক্ষাৎকারে স্বীকারও করেছেন। লেডারম্যানের বইয়ের শিরোনামে একই ধরণের কারণে “ঈশ্বর” শব্দটিকে প্রকাশক ঢুকিয়ে দিয়েচেন। ক্রাউসকে একটু ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তাঁর বইয়ের শিরোনামকে কি এভাবে রি্ফ্রেস করা যায়?: অস্তিত্বের সমস্ত প্রশ্ন শেষ হয়ে গিয়েছে?” উত্তরে তিনি বলেছেন যে তিনি কখনও সেই দাবী করেননি:But in all seriousness, I never make that claim. In fact, in the preface I tried to be really clear that you can keep asking “Why?” forever. এখানে সেমানটিক্সের কিছুটা ট্রিক্স আছে মনে হয়। উনি নাথিং বলতে পরম শুণ্যতা বুঝিয়েছেন বলে মনে হয়নি। কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম বলতে সেটি বোঝানোও হয়না—সেখানে রিলেটিভিস্টিক কোয়ান্টাম ক্ষেত্রের অস্তিত্ব থাকে যারা নিয়ত ফ্লাকচুয়েট করছে। কাজেই, এ পর্যায়ে এসে এই অবান্তর প্রশ্নটি আবারও করা যায়: কোয়ান্টাম ফিল্ড না থাকবার বদলে কেন আছে? তবে মহাবিশ্বের অস্তিত্বের কারণ হিসেবে ঈশ্বরের অনুমানকে অক্কামের ক্ষুর ব্যবহার করে অপ্রয়োজণীয় করবার কার্যকারিতা অথবা প্যালির এ্যানালোজির রিফিউটেশন হিসেবে একজন কমপ্লেক্স ডিজাইনারের ইনফাইনাইট রিগ্রেশনের এ্যবসার্ডিটি অনেক বেশী শক্তিশালী (যদিও শেষোক্ত কারণটি দু’টির ভেতর অপেক্ষাকৃত দুর্বল)।
@তানভীর হানিফ,
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। আমি বাইরে বেরুচ্ছি। এসে আপনার সাথে আলোচনায় অন্সগ নেবার ইচ্ছে আছে। এর জন্য দীর্ঘ আলোচনায় যেতে হবে মনে হচ্ছে। 🙂
তবে মন্তব্যের জন্য আগাম ধন্যবাদ জানিয়ে যাচ্ছি।
@অভিজিৎ,
ধন্যবাদ। অপেক্ষায় রইলাম।
@তানভীর হানিফ,
শুরু করা যাক তাহলে। আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনাকে এ ধরণের বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনার সূত্রপাত ঘ্টানোর জন্য। আমরা দু’জনে যে দিক থেকে ব্যাপারটিকে দেখছি হয়তো ঐক্যমত্য হয়ে কোন উপসংহারে পৌঁছুতে পারব না। তারপরেও আলোচনার মাধ্যমে অনেক কিছু পরিষ্কার হবে এই আশায় আমার কিছু বক্তব্য দিচ্ছি।
প্রথমেই একটি বিষয়ে পরিষ্কার করি। লরেন্স ক্রাউস কি উদ্দেশ্যে বইটি লিখেছেন, এ ধরনের শিরোনাম করে তার বইয়ের কাটতি বাড়ানোটা উদ্দেশ্য ছিল কিনা, এই বিষয়গুলো আমরা দুজনে ব্লগে আলোচনা করে কখনোই নিষ্পত্তি করতে পারব না, আর সেটা অভিপ্রেতও নয়। আর সব লেখকই কিন্তু চান তার বই ভাল চলুক, সে উদ্দেশ্য থেকে যদি কেউ তার বইয়ের পছন্দমত বইয়ের শিরোনাম নির্ধারণ করেন, লেখককে আমি খুব একটা দোষে দুষ্ট করব না। ক্রাউস একটি সাক্ষাতকারে বলেওছেন – হ্যাঁ ‘মার্ভেলাস ইউনিভার্স’ টাপের শিরোনাম দেয়া যেত, কিন্তু সেটা বইয়ের কন্টেন্ট এবং উদ্দেশ্যের সাথে যেত না। যা হোক মূল কথা হল কে কোন উদ্দেশ্যে শিরোনাম করেছেন বা লিখেছেন, তার বদলে বইয়ে কি লিখেছেন সেটা নিয়ে কথা বললে আলোচনা এগুতে পারে।
আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় পরিষ্কার করি। লরেন্স ক্রাউসের বইটি দিয়ে আমি বিষয়টির অবতারণা করলেও আমার কাছে বিষয়টির আবেদনই মুখ্য ছিল, ক্রাউসের বইটি নয়। হ্যাঁ ক্রাউসের বইটি এ বিষয়টিকে এড্রেস করা পূর্ণাঙ্গ বই হিসেবে বাজারে বেড়িয়েছে, সেজন্যই প্রাসঙ্গিক-ভাবে এর উল্লেখ, কিন্তু আপনি যদি খেয়াল করেন যে, ক্রাউস কোন মৌলিক কিছু লেখেননি। এ ব্যাপারগুলো বিজ্ঞানীদের জানা ছিলোই। শুধু গবেষণাপত্রে নয়, পপুলার ধারার বইয়েও। শূন্য থেকে মহাবিশ্বের উৎপত্তি কিভাবে হতে পারে, এমনকি কিভাবে মাল্টিভার্সের মত প্রেক্ষাপটগুলো (কেওটিক কিংবা এটারনাল ইনফ্লেশন) তাদের গণনা থেকে বেরিয়ে এসেছে সেটা অ্যালেন গুথের লেখা ‘ইনফ্লেশনারি ইউনিভার্স’ (The Inflationary Universe: The Quest for a New Theory of Cosmic Origins, Alan H. Guth, Perseus Books Group) বইয়ে ছিলোই, যেখানে গুথ স্পষ্ট করেই মত দিয়েছিলেন (পৃষ্ঠা ১৫)–
কাজেই ‘নাথিং’ ব্যাপারটি নিয়ে ব্লগে দার্শনিক-ভাবে বিতর্ক করা হলেও পদার্থবিজ্ঞানীরা নাথিং বলতে কি বোঝেন তা গুথ সহ অনেকেই তাদের বহু বইয়ে ব্যাখ্যা করেছেন। সে আলোকেই ক্রাউসের বইটিকে দেখতে অনুরোধ করছি। উনি বিপ্লবী কিছু করেননি। গুথ-লিন্ডে-ভিলেঙ্কিনেরা যে কাজের ফাউন্ডেশন করে গিয়েছিলেন সেটাকেই ক্রাউস নিজের মত করে গ্রন্থিত করেছেন মাত্র।
তারপর ধরুন কোয়ান্টাম শূন্যতা ব্যাপারটা যে আনস্টেবল সেটার উল্লেখ ছিল নোবেল বিজয়ী পদার্থবিদ ফ্রাঙ্ক উইলজেক এর সায়েন্টিফিক আমেরিকানের প্রবন্ধে (যেটার উল্লেখ আমি করেছি আমার প্রবন্ধে) – The answer to the ancient question ‘Why is there something rather than nothing?’ would then be that ‘nothing’ is unstable.
পদার্থবিদ ভিক্টর স্টেঙ্গরও তার দুটি প্রবন্ধে এ ব্যাপারটার উল্লেখ করেছিলেন –
http://www.csicop.org/sb/show/why_is_there_something_rather_than_nothing
http://www.colorado.edu/philosophy/vstenger/Briefs/Something.pdf
আর স্টিফেন হকিং এবং ম্লোডিনোর শেষ বই গ্র্যাণ্ড ডিজাইনেও এটার ইঙ্গিত দেয়া ছিল –
ক্রাউস বিদ্যমান ধারনাগুলোকেই সংকলিত করেছেন তার বইয়ে।
আমি প্রশ্নটিকে অবান্তর মনে করি না। এমনকি আরো মূলে গেলে বিজ্ঞানী হুইলারের মত যদি কেউ প্রশ্ন করেন ‘হোয়াই কোয়ান্টাম?’ তাহলেও সেটি অবান্তর নয়। লিন্ডে তার একটা গবেষণাপত্রে (এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না কোথায় দেখেছিলাম) এই ‘হোয়াই কোয়ান্টাম?’ কে এড্রেস করেছিলেন। এখন আপনার বক্তব্যানুযায়ী ‘কোয়ান্টাম ফিল্ড না থাকবার বদলে কেন আছে?’ – ব্যাপারটা পদার্থবিজ্ঞানের সূত্রগুলো কেন আছে সেই দিকে চলে যাবে। এ নিয়ে বিজ্ঞানীদের মতে মতভেদ আছে বলাই বাহুল্য। লরেন্স ক্রাউসও নিজের অভিমত দিয়েছেন তার বইয়ের শেষ অধ্যায়ে। পড়ে দেখতে পারেন।
অক্কামের ক্ষুরের ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ, তবে সেটা কিভাবে প্রয়োগ করা যাবে সেটা হল কথা। আমি মনে করি না যতক্ষণ পর্যন্ত না আপনি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পারছেন কিভাবে কিংবা কোন প্রক্রিয়ায় প্রাকৃতিক-ভাবে মহাবিশ্বের উদ্ভব হল, ততক্ষণ আপনি অক্কামের ক্ষুরের পোচ সার্থক-ভাবে বসাতে পারবেন। আমার মনে হয় অ্যালেন, গুথ, লিন্ডে, ভিলেঙ্কিন, শন ক্যারল, হকিং , ক্রাউস প্রমুখ বিজ্ঞানীদের গবেষণা সঠিক দিকেই যাচ্ছে সে হিসেবে। কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটির পূর্ণাঙ্গ তত্ত্ব হাতে এলে ব্যাপারটা অনেকটাই পরিষ্কার হবে বলে আমার ধারনা। একই ধরণের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন স্টিফেন ওইনবার্গ তার ‘ড্রিমস অব এ ফাইনাল থিওরি’ বইয়েও। দেখা যাক।
আপনার বাকি মন্তব্যের উত্তর আপনার দ্বিতীয় মন্তব্যের ঘরে দিচ্ছি।
@তানভীর হানিফ,গ্রেট প্রশ্ন। আসলেই কোয়ান্টাম ভ্যাকুয়াম স্টেটকে স্পেস-টাইমের বাইরে অ্যাবসলিউট ভয়েড বলা যায় না। সুতরাং আসল প্রশ্নটি মনে হয় অমীমাংসীতই থাকছে।
@সফিক,
অ্যাবসুলুট ভয়েড বলে কোন কিছু আছে কিনা সেটা একটা কোটি টাকার প্রশ্ন। না থাকার সম্ভাবনাই বেশি। আজকের কোয়ান্টাম পদার্থবিদেরা শূন্যতাকে চিরায়ত শূন্যতার মত করে দেখেন না। তারপরেও যদি ধরে নেই থাকে, তবে আমার জানা মতে কেবল একজন বিজ্ঞানী এ ব্যাপারটাকে এড্রেস করেছেন। এবং তিনি সেটা করেছেন তথাকথিত ‘এবসলুট ভয়েড’ গোনায় নিয়েই। তিনি আলেকজান্দার ভিলেঙ্কিন। তার একটা বিখ্যাত পেপার আছে – Alexander Vilenkin, “Creation of Universe from Nothing” Physics letters 117B, 25-28, 1982। পড়ে দেখতে পারেন। তার নাথিং বা শূন্যতা এবসলুট শুন্যতাই। এলেন গুথের ‘Infiationary universe’ বইয়ে এ নিয়ে ভাল আলোচনা আছে। তবে অনেক বিজ্ঞানী (যেমন হকিং -হার্টলে ) মনে করেন পরম শূন্যতা আনার দরকার নেই। হকিং এর মডেলে পরম শূন্যতা জিনিসটা পরিহার করে মহাবিশ্বের উৎপত্তি আর অস্তিত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
@অভিজিৎ, আসলে অ্যাবসলুট ভয়েড মনে হয় পদার্থবিজ্ঞানের চেয়ে মেটাফিজিক্স এর কাছেই বেশী আকর্ষণীয় বিষয়। আমাদের কাছে এটাই গুরুত্বপূর্ণ যে শুন্য থেকে বিশ্বের সৃষ্টি থেকে আজকে মানুষের সভ্যতা পর্যন্ত বিশ্বের ব্যাখা করার জন্যে কোনো অতিমহাবিশ্বিক সত্বার প্রয়োজনীয়তা নেই। তবে আপনি ঠিকই বলেছেন, বিজ্ঞানীরা অ্যাবসলুট ভয়েডকেও এভয়েড করেন নি।
ভিলেনকিন এর পেপারে মহাবিশ্বের সৃষ্টি ব্যাখাতে পাথ ইনটিগ্রাল এবং ইনসটেনটন সলিউশনের (Path Integral, Instanton) ব্যবহার করেছেন। একেবারে শুন্য থেকে মহাবিশ্বের সৃষ্টি ব্যাখায় এই ধরনের এপ্রোচ এর আরেকটি সহজতর আর্টিকেল,
http://www.damtp.cam.ac.uk/research/gr/public/qg_qc.html
@সফিক, (Y)
অসাধারণ! ক্রাউসের কিছুই পড়া হয়নি এখনো। অবশ্য দারুণ কয়েকটা ভিডিও দেখেছি ইউটিউবে। সামথিং ফ্রম নাথিং শুরু করব করব করে ধরা হচ্ছে না। এইবার পড়ে ফেলতে হবে।
যাইহোক, একটা প্রশ্ন, শুন্যতা অস্থিতিশীল কেন, এ ব্যাপারে কি কারো কোন থিওরী বা মতামত আছে?
@সোহেল চৌধুরী,
শুরু করে দেন। তবে আমার ক্রাউসের বইয়ের চেয়ে লেকচারই বেশি ভাল লাগে। কেউ কেউ আছেন লিখার চেয়ে কথা বলায় স্বচ্ছন্দ্য। ক্রাউসকে আমার ঠিক তেমনই মনে হয়েছে। বইটা পড়ে মনে হয়েছে এর সাহিত্যমান আরো ভাল হতে পারতো 🙂
তবে বইয়ে কিছু কাব্যিক লাইন আছে।
আমার কিছু প্রিয় লাইন –
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
ধন্যবাদ অভিজিৎ দা। আপনার সাথে সহমত। ক্রাউসের সেন্স অব হিউমার কিন্তু অসাধারণ। আমার দেখা সেমিনার, কনভার্সেশন, ইত্যাদির ভিডিওগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভাল লেগেছে এরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি আর রিচার্ড ফাউন্ডেশনের আয়োজনে করা “সামথিং ফ্রম নাথিং” নামে রিচার্ড এর সাথে ক্রাউসের একটা আলোচনা। কসমোফিজিক্স, কোয়ান্টাম ফিজিক্স ইত্যাদি বিদঘুটে বিষয়ও যে হাসতে হাসতে উপভোগ করা যায় এ আলোচনা তার প্রমাণ। আমি শিওর আপনি আলোচনা দেখেছেন, তারপরও কারও প্রয়োজনে আসতে পারে ভেবে এখানে লিংক টা দিলাম।
অভিজিৎদা, আমি একটা প্রশ্ন করেছিলাম আগের কমেন্টে, “শূন্যতা কেন অস্থিতিশীল এ ব্যাপারে কেউ কি কিছু বলেন?”
@সোহেল চৌধুরী,
ধন্যবাদ। হ্যাঁ ভিডিওটা আগেই দেখেছি। তারপরেও দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। ডকিন্স আর ক্রাউসের কথোপকথন বরাবরই রোমাঞ্চকর।
এটার ছোট উত্তর দেয়া যায়, দেয়া যায় বড় উত্তরও। সাধারণ ভাবে বললে বলা যায় এটা শূন্যতার ধর্ম। আমরা চিরায়ত-ভাবে যে পরম শূন্যতার কথা বলি সেটা কোয়ান্টাম লেভেলে সত্যি নয়। , কোয়ান্টাম তত্ত্বানুযায়ী শূন্যতাকে অনেক তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়। শূন্যতা মানে আক্ষরিক অর্থে শূন্য নয়- পদার্থ বিজ্ঞানীদের মতে যে শূন্য-দেশকে আপাত: দৃষ্টিতে শান্ত, সমাহিত মনে হচ্ছে, তার সূক্ষস্তরে সবসময়ই নানান প্রক্রিয়া ঘটে চলেছে। এর মধ্যে নিহিত শক্তি থেকে পদার্থ-কণা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তৈরি হচ্ছে, আবার তারা নিজেকে সেই শক্তিতে বিলীন করে দিচ্ছে। যেমন, শূন্যাবস্থা থেকে সামান্য সময়ের ঝলকানির মধ্যে ইলেকট্রন এবং পজিট্রন (পদার্থ-প্রতি পদার্থ যুগল) থেকে পদার্থ তৈরি হয়েই আবার তা শূন্যতায় মিলিয়ে যেতে পারে। এই ইলেকট্রন এবং পজিট্রনের মধ্যকার ব্যবধান থাকে ১০^-১০ সেন্টিমিটারেরও কম, এবং পুরো ব্যাপারটার স্থায়িত্বকাল মাত্র ১০^-২১ সেকেন্ড । ব্যাপারটাকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন’। ফ্লাকচুয়েশন হয় বলেই শূন্যস্থান অস্থিতিশীল। আর এটা কিন্তু কেবল গাণিতিক কল্পনা নয়। বিজ্ঞানীরা কিন্তু ব্যবহারিক ভাবেই এর প্রমাণ পেয়েছেন। একটি প্রমাণ হচ্ছে ‘ল্যাম্ব শিফট’, যা আহিত পরমাণুর মধ্যস্থিত দুটো স্তরে শক্তির তারতম্য প্রকাশ করে । আরেকটি প্রমাণ হল টপ কোয়ার্কের ভরের পরিমাপ । তবে কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশনের সবচেয়ে জোরদার প্রমাণ পাওয়া গেছে বিখ্যাত ‘কাসিমিরের প্রভাব’ থেকে । (বিজ্ঞানী উইলস ল্যাম্ব ১৯৫৩ সালে ল্যাম্বশিফট আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কার পান। অন্যদিকে জাপানী বিজ্ঞানী মাকাতো কোবায়াশি এবং তোশিহিদে মাসকাওয়া ২০০৮ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পান ১৯৭৩ সালে টপ কোয়ার্ক সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণীর জন্য। টপ কোয়ার্ক ১৯৯৫ সালে ফার্মি ল্যাবে আবিষ্কৃত হয়। হেনরিক কাসিমির এবং ডিরিক পোল্ডার নোবেল পেয়েছিলেন ১৯৪৮ সালে)। এগুলো সবই বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।
এখন কথা হচ্ছে কেন শূন্যতার মধ্যে ফ্লাকচুয়েশন হয়? একটি কারণ হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি। ১৯২৭ সালে জার্মান পদার্থবিদ ওয়ার্নার হাইজেনবার্গ গানিতিকভাবে প্রমাণ করে দেখান যে, কোন বস্তুর অবস্থান এবং ভরবেগ যুগপৎ একসাথে নিশ্চিত ভাবে নির্ণয় করা সম্ভব নয়। বস্তুর অবস্থান ঠিক ঠাক মত মাপতে গেলে দেখা যাবে, ভরবেগের তথ্য যাচ্ছে হারিয়ে, আবার ভরবেগ চুলচেরা ভাবে পরিমাপ করতে গেলে বস্তুর অবস্থান অজানাই থেকে যাবে। কাজেই হাইজেনবার্গের এই সূত্র সত্যি হয়ে থাকলে, এমনকি পরম শূন্যেও একটি কণার ‘ফ্লাকচুয়েশন’ বজায় থাকার কথা, কারণ কণাটি নিশ্চল হয়ে যাওয়ার অর্থই হবে এর অবস্থান এবং ভরবেগ সম্বন্ধে আমাদেরকে নিশ্চিত তথ্য জানিয়ে দেওয়া, যা প্রকারান্তরে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা তত্ত্বের লঙ্ঘন। এ ছাড়া আরো অনেক ব্যাপার আছে, যেগুলো পরে লিন্ডে-গুথদের স্ফীতি-তত্ত্বে অন্তর্ভুক্ত হয়।
‘কোয়ান্টাম কসমোলজিস্টরা’ সেই ব্যাপারটিকেই মহাবিশ্বের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা শুরু করেছেন, মহাবিশ্ব কোয়ান্টাম ইভেন্ট হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে ধরে নিয়ে। এটার শুরু হয়েছিল বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড ট্রিয়ন এর মাধ্যমে। তিনি ১৯৭৩ সালে ‘নেচার’ নামক বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক জার্নালে Is the Universe a Vacuum Fluctuation? নামের একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিলেন। আশির দশকে ডেমোস কাজানাস , অ্যালেন গুথ এবং আদ্রে লিন্ডে পৃথক পৃথক ভাবে মহাবিশ্বের উৎপত্তির বিষয়ে নিজস্ব ফলাফল প্রকাশ করেন। তাদের গবেষণাগুলো বর্তমানে ‘স্ফীতিশীল মহাবিশ্ব’ (Inflationary Universe) হিসেবে প্রমিত জ্যোতির্বিজ্ঞানের (standard cosmology) অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। পরে হকিং-হার্টলে মডেল, ভিলেঙ্কিনের মডেল আরো অনেক মডেলই এসেছে। আমার আগের আর্টিকেলে এগুলো নিয়ে কথা বলেছি।
@অভিজিৎ,
কাজেই হাইজেনবার্গের এই সূত্র সত্যি হয়ে থাকলে, এমনকি পরম শূন্যেও একটি কণার ‘ফ্লাকচুয়েশন’ বজায় থাকার কথা, কারণ কণাটি নিশ্চল হয়ে যাওয়ার অর্থই হবে এর অবস্থান এবং ভরবেগ সম্বন্ধে আমাদেরকে নিশ্চিত তথ্য জানিয়ে দেওয়া, যা প্রকারান্তরে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা তত্ত্বের লঙ্ঘন।
এখানে একটু ধারণাগত সমস্যা আছে। পরম শুণ্যে কণিকার ফ্লাকচুয়েশন বিবেচনার প্রয়োজণ কি? আর সেটি সম্ভবই বা কিভাবে? পরম শুণ্যে আ প্রায়োরি কণিকার অস্তিত্ব থাকলে সেটি আর পরম শুণ্য থাকল কি করে? প্রকৃতপক্ষে, পরমশুণ্যে কোন বাস্তব কণিকার অস্তিত্ব নাই।আপনি যেই হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তার নীতির কথা এখানে বললেন সেটি দিয়ে মনে হয় ভ্যাকুয়াম ফ্লাকচুয়েশন ব্যাখ্যা করা হয় না। পরম শুণ্যেও কোয়ান্টাম ক্ষেত্রের আলোড়ন সৃষ্টি এবং ধ্বংস হয়–সেই অর্থে এটি ফ্লাকচুয়েশন। স্থানে অশুণ্য ভরবেগসম্পন্ন একটি কণিকা ফ্লাকচুয়েট করছে বিষয়টি এমন নয়। এটি স্হানের একটিমাত্র বিন্দুতেও (সুস্পষ্ট স্হানাংক-কালাংক অর্থে—স্থির বা শুণ্য বেগের কণিকা অর্থে নয়) হতে পারে।
@তানভীর হানিফ,
এটা আমি সায়েন্টিফিক আমেরিকানে প্রকাশিত ফিলিপ ইয়ামের একটা লেখায় পেয়েছিলাম…
তবে, আপনার কথা সঠিক হতেই পারে। আপনি যেহেতু এ বিষয়ে আরো গভীর ধারনা রাখেন।
শেকড়ের স্বাদ পেলাম। অনেক ধন্যবাদ “দাদা” । লেখা পড়ে অনেক ভালো লাগলো। (F)
@মোঃ আরিফুল ইসলাম,
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
(F)
@শান্ত শান,
🙂