আতঙ্ক
ছোট গল্প
আদনান আদনান
উৎসর্গ
মিখাইল লেরমন্তভ
সে এক বিশাল ঘটনা, যা ঘটে নব্বই দশকের শেষ দিকের কোনো এক সময়ে।
ঘটনাটার শুরু হয় যশোরের নীরালা সিনেমা হলের সামনের গলিতে। আসলে গলি না বলে রাস্তা বললেই ভালো হতো, কিন্তু এলাকার লোকজন গলিই বলে পিঁচের রাস্তাটি চওড়ায় ছোটো হওয়ার কারনে। তখন বেশ রাত। তবে ঠিক কোন সময়ে ঘটনাটা ঘটে তা জানা যায় না। কেউ কেউ বলে রাত একটার দিকে, আবার কেউ কেউ কেউ বলে তখন তিনটার কম হবে না। একটা প্রচন্ড চিৎকার শুনে গলির দু’পাশের প্রায় সবক’টি বাড়ির মানুষই জেগে ওঠে আর গলিতে বের হয়ে আসে। তাদের হৃৎপিন্ড কাঁপতে থাকে ভয়ে, কিছুতেই শান্ত হতে চায় না। কেউ কেউ বন্দুক বা লাঠি বা দা-ছুরি নিয়েও বের হয়ে আসে, কিন্তু কিছুই তাদের চোখে পড়ে না। ঘটনাটা বেশ অবাকই করে তাদের। এমন চিৎকার অথচ কেউ নেই গলিতে! ঐ গলিটি এমনিতেই কোনো লাইট না থাকায় বেশ অন্ধকারই থাকে, আর তাই তারা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না যে তাদের কি করা উচিৎ। কেউ কেউ গলির পাশের ঝোপ-জঙ্গলে বা গলির পাশের নর্দমায় দেখে কেউ পড়ে আছে কিনা। কেউ কেউ আবার বড় রাস্তায় (যে রাস্তাটা চার-খাম্বার মোড়ের থেকে জেলা স্কুলের দিকে চলে গেছে) উঠে দেখতে চেষ্টা করে কিছু চোখে পড়ে কি না। অনেকেই তাদের অনেক ধারণার কথা বলতে থাকে, কিন্তু তা আগ বাড়িয়ে নিজের কথাটাকে সত্য বলে প্রমাণ করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ ধরণের ব্যাপারে যা ঘটে আরকি! কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই যার যার ঘরে ফিরে যায় হতাশ হয়ে, কিন্তু ঐ রাতে আর কারো ঘুম হয় না। একটা আতঙ্কের ভাব মনের মধ্যে থেকেই যায়।
খুব ভোরে দারোগা রাশেদের ঘুম ভাঙ্গে তার দরজার কঁড়া নাড়ার শব্দ শুনে। তিনি থাকেন ঘোপ সেণ্ট্রাল রোডের মাঝামাঝি বুড়ো ডাক্তারের বাড়ির একটি ঘর ভাড়া নিয়ে। নিজের মনের কথাগুলো তার জোরে বলার একটা স্বভাব আছে, আর তাই তিনি বলে ওঠেন, “এত ভোরে আবার কে এলো!” তিনি তখন ফরিদপূর থেকে যশোরে এসেছেন মাস তিনেক হবে। যশোরে এসেই তিনি প্রতিটি মেয়েদের স্কুলে গিয়ে বলে এসেছেন যে কেউ যদি কোনো মেয়েকে বিরক্ত করে তবে তা যেনো তার কানে একবার পৌঁছে দেওয়া হয়। বেশ কিছু খবর যখন তার কানে আসে, তিনি যশোর শহরকে বখাঁটে ছেলে পিটানোর নামে ঠান্ডা করে দেন মাত্র আট দিনে। ঐ আট দিনে যশোরের মানুষ তাকে দেবতা ভাবতে শুরু করে। তারপর তিনি যখন বলেন, “আমার কোনো ভয় নেই। আমি মনে করি আমি একটা লাশ। আমাকে ফেলে দিলে ফেলে দাও, কিন্তু আমাকে থামানো যাবেনা তার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত”, তার উপরে মানুষের ভক্তির আর অভাব থাকে না। কাজেই তার দরজায় খুব ভোরে কঁড়া নাড়ায় তিনি অবাক হন না, শুধু রাতে ঘুম ভালো না হওয়ায় একটু বিরক্ত হন মাত্র।
দরজা খুলেই তিনি বলেন, “কি ব্যাপার পলাশ! তুমি এতো ভোরে?”
পলাশ এমন একটা ছেলে যাকে তিনি একদিন গুলি করে মারবেন বলে ধরেই রেখেছেন; কিন্তু আপাতত তিনি তাকে কিছু বলতে চান না। পলাশ কোনো রকমে কাঁপতে কাঁপতে বলে, “কিছু কথা আছে। আমি ভিতরে আসি, তারপর বলি।”
“তা তুমি ঘামছো কেনো এই সাত সকালে? আর পায়ের কি ব্যাপার?”
“আমার কথা শুনে কিন্তু হাসবেন না। আমি একটা দারুণ ভয় পাইছি গতরাতে।”
“তুমি বলতে থাকো আমি শুনছি। শুনতে শুনতে আমি কিছু কাজ করবো আরকি, কিন্তু আমি সবই শুনবো।”
“আমি বেশ রাত করেই বাড়ি ফিরছিলাম রেলষ্টেশনের দিক থেকে। আড্ডা দিতে দিতে বেশ দেরি হয়ে যায় আরকি। আমি চার-খাম্বার মোড়ের থেকে সোজা না গিয়ে বা দিক দিয়ে নীরালা সিনেমা হলের সামনে দিয়ে আড়াআড়ি আসছিলাম। বড়ো রাস্তার থেকে ডানে ঘুরে গলির ভিতরে শ’গজ যেতেই একপাল গলা কাটা কুকুর আমাকে আমারে ঘিরে ধরে। আমি থমকে দাঁড়ায়। পকেট থেকে ছুরিটা বের করে বলি, আই শালারা, কি করবি কর। প্রথমে মনে হয় যে এলাকার কেউ বদমায়েশি করতেছে, কিন্তু কুকুরগুলো আমার দিকে আস্তে আস্তে আসতে শুরু করে। আমি অবাক হয়ে দেখতে থাকি। এ কি ব্যাপার! এক সময় তারা আমার থেকে মাত্র হাত পাঁচেক দূরে এসে স্থীর হয়ে দাঁড়ায়ে পড়ে। আমি একপা এগোলে তারাও একপা এগোয়। এভাবে আমাকে ঘিরে তাদের বৃত্তটি ছোটো হতে থাকে। আমি ছুরি নিয়ে তাদের উপরে ঝাপায়ে পড়ি এক পর্যায়ে, আর ছুরি এলোপাথাড়ি চালাতে থাকি। এক পর্যায়ে আমার নিজেরই পা মচকে যায় আর আমি চিৎকার করে উঠি। তারপর আমি পাগলের মতো ছুটে মাইক পট্টির ভিতর দিয়ে আপনার বাড়ির সামনে এসে পড়ি। আমি অনেক আগের থেকেই ভোর হওয়ার অপেক্ষা করছিলাম, আর ভোর হতেই আপনার দরজার কঁড়া নাড়ি।”
“গলা কাটা কুকুর গুলোর কি হলো?”
“আমি জানি আমি বেশ কয়েকটিকে ছিঁড়েফেঁড়ে ফেলিছি। তাছাড়া তাদের ছিলো গলা কাটা। আমি সেটাই আপনাকে বলতি আসিছি। আমি যা দেখিছি নিজির চোখি দেখিছি। সত্যিই তাদের সবারই ছিলো গলা কাটা।”
“পলাশ তুমি একটু ভয় পেয়ে গেছো আরকি। গতরাতে কি নেশাটেশা করেছিলে নাকি? আমাকে নির্ভয়ে বলতে পারো।”
“মার কছম করে বলতিছি আমি যা দেখিছি নিজির চোখি দেখিছি। তাছাড়া আমার ছুরি এখনো ঐ গলিতে পড়ে থাকার কথা, আর কুকুরগুলোর রক্তও পড়ে থাকার কথা। অবশ্য একটু আগে হালকা বৃষ্টি হয়েছে, তাতে করে রক্ত কিছু ধুয়ে যাতিও পারে।”
“তুমি খাটে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ো। একটা ঘুম দাও। তারপর আমি আর তুমি ঐ গলিতে যাবো। ঠিক আছে?”
“আমার খুব ভয় করছে কিন্তু। আমার মনে হয় ঘুম আসবে না।”
“না আসলেও শুয়ে থাকো। একটু বিশ্রাম করো। আমি খাবার আনাচ্ছি, চাঁপাতি রুটি আর সন্দেশ আর চা।” রাশেদ জানতো যে পলাশ একজন ভাড়াটে খুনি, কিন্তু রাশেদ পলাশকে যারা চালায় তাদের ধরার জন্য পলাশের সাথে একটা সম্পর্ক গড়ে তোলে। দারোগা রাশেদ এমনই একজন মানুষ ছিলেন। যার জন্য দয়ামায়া দরকার তার জন্য তিনি যেমন জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলেন, তেমনি যার জন্য দরকার লাঠির তার জন্য তিনি ছিলেন মৃত্যুসম।
পলাশ বিছানায় গা দিতে না দিতেই ঘুমিয়ে পড়ে। দারোগা রাশেদ তার ঘরের দরজা খোলা রেখেই বেরিয়ে পড়ে ঐ গলির উদ্দেশ্যে। সে বাড়ির থেকে একটু দূরে গিয়ে মোটর-সাইকেলে ষ্টার্ট দেয় যাতে পলাশের ঘুম না ভাঙ্গে। ঘটনাস্থলে সে ছুরি খুঁজে পায়, আর ছুরিতে শুকিয়ে যাওয়া রক্ত। আর গলির শুধু একটা জায়গায়ই পায় কুকুরের পায়ের অসংখ্য ছাঁপ। ঐ জায়গার বাইরে কোনো ছাঁপ দেখা যায়না। তার মনে হয় হতে পারে রাতের বৃষ্টিতে কিছু ছাঁপ ধুয়ে গেছে। এটা তার মনে হয়, কিন্তু বিশ্বাস হয় না। তিনি ঐ এলাকার অনেকের সাথেই কথা বলেন, কিন্তু সবাই ঐ একটা প্রচন্ড চিৎকারের কথাই বলে। সে যশোর সদর হাসপাতালে খবর নিয়ে জানতে পারে যে রাতে কেউ ছুরি খেয়ে আসে নি। সে বাড়ি ফিরে দেখে যে পলাশ ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে, আর তা গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। রাশেদ পলাশকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। রাসেল বিড়বিড় করে ভূত ভূত করতে করতে ঘন্টা খানেক পরে মারা যায়। সারা শহরে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে ভাড়াটে খুনি পলাশ ভূতের ভয়ে মারা গেছে।
ঐ দিন দুপুরের সাথে সাথেই নীরালা হলের সামনে কুকুরের পায়ের ছাঁপ দেখার জন্য হাজার হাজার লোকের ভিড় হয়। বিকেলের দিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে পলাশ যেসব লোকেদেরকে খুন করেছে তাদের আত্মা গলা কাটা কুকুর হয়ে এসে তাকে আক্রমণ করে, আর তাতেই ভয় পেয়ে সে মারা যায়। রাশেদ অবাক হয়ে ঐদিন রাতে লক্ষ্য করে যে রাত আটটার দিকেই শহর খালি হয়ে যায়। এই শহর খালি হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটাকে তার অলৌকিক বলে মনে হতে থাকে। ভূতের ভয়ে বিংশ শতাব্দির কাছাকাছি এসেও যে মানুষ এরকম আচরণ করতে পারে তা তার জানা ছিলো না।
ঐ রাতে প্রচন্ড সব চিৎকার শুনতে পায় শেখহাঁটি, কাঁজিপাড়া, পুলিশ লাইন, খঁয়েরতলা, বারান্দিপাড়া, চাঁচড়া, আর উপশহরের লোকেরা। ভোরে সারা শহর পুলিশে ঢেকে যায়, কিন্তু কোন আহত বা নিহত মানুষ কোথাও পাওয়া যায় না, কিন্তু শহরের বিভিন্ন যায়গায় কুকুরের পায়ের ছাঁপ পাওয়া যায়। খবর ছড়াতে থাকে বাতাসে – কুকুরের পায়ের ছাঁপে অনেকে রক্ত দেখতে পায়, কেউ কেউ আবার এক একটা নঁখে দেখতে পায় ছুরিকার আকৃতি, কেউ আবার কুকুরের পায়ের ছাঁপগুলো মানুষের হাতের মতো বড়ো ভাবে দেখে। ঐ দিন সন্ধ্যায় দু’পাতার বিশেষ খবরের কাগজ বের হয় বিভিন্ন যায়গার নখের ছাঁপের ছবি আর বিভিন্ন মানুষের ইন্টারভিউ সহ।
একজন যুবক ফটোগ্রাফার ঘোষণা করে যে সে রাতে সারা শহর ঘুরে বেড়াবে লুকিয়ে লুকিয়ে, আর প্রমান করে দেবে যে এ সবই কোনো ভূত নয় বরং কোনো বদছেলেদের বদমায়েশি। সে সান্ধ্যকাগজে বলে, “মানুষ এসবে বিশ্বাস করতে পারে না। মানুষ ভয়ের মধ্যে বেঁচে থাকতে পারে না। গুজব মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।” ঐদিন রাতে সমগ্র যশোর শহর কেঁপে ওঠে সহস্র প্রচন্ড চিৎকারে। আর সকালে ফটোগ্রাফার যুবকের লাশ পাওয়া যায় ষ্টেডিয়ামের ঠিক মধ্যখানে। তার শরীরে কুকুরের পায়ের ছাঁপ না, পাওয়া যায় শুয়োরের পায়ের ছাঁপ। একদল টুপি আক্রমন করে হিন্দুদের বাড়ি, দোকান, আর শরীরের উপর। তারা বলে, “এসব কাজ ঐ সব শুয়োরখোরদেরই। ওদেরকে এই শহর থেকে খেঁদাতে হবে।” আক্রমণে সত্তর জন হিন্দু মারা যায়। হিন্দুদের বিরুদ্ধে মিছিল বের হয়, আর বলা হয়, “তোরা কুকুর , তোরা জানোয়ার, তোরা শুয়োর। তোরা মর, তোরা মর, তোরা দূর হয়ে যা।” হিন্দুরা যে যেদিকে পারে পালায়, আর কিছু লুকিয়ে পড়ে নিজেদের বাড়িরই ভিতরে। হাজার হলেও নিজেদের জন্মস্থান। যাবে কোথায়?
দারোগা রাশেদ মাইকিং করে ও বাড়ি বাড়ি পুলিশ পাঠিয়ে সবাইকে শান্ত হতে বলে। খবরের কাগজগুলোর মাধ্যমে সে বলে, “এর পিছনে রয়েছে এক বিশাল চক্রান্ত। সাবাইকে শান্ত থাকতে হবে, আর পুলিশকে কাজ করতে দিতে হবে আসল ক্রিমিনালদের ধরার জন্য। সবাইকে পুলিশের সাথে একযোগে কাজ করতে হবে।” এই কথা তিনি নিজেও মাইকিং করে বলে বেড়াতে থাকেন সারা শহরময়। পরের দিন সকালে রাশেদকে মৃত পাওয়া যায় তারই খাটের উপর। তার সারা শরীরে গরুর ক্ষুরের দাগ পাওয়া যায়। দারোগা রাশেদের লাশের খবরে শহর ভয়ে কাঁপতে থাকে, আর হয়ে পড়ে প্রানহীন, রঙহীন, আর সাহসহীন। ঐ দিন সকালেই সবাই তাদের ইন্দ্রিয়গুলোতে দূর্বলতা অনুভব করতে শুরু করে। তাদের ইন্দ্রিয়গুলো কাজ করে, আবার করে না। ঐ দিন বিকেল থেকে ছ’টার পরে আর রাস্তায় মানুষ থাকে না। যে যার ঘরে ফিরে যায়, আর টেলিভিশন দেখে সময় কাটাতে থাকে। বাড়ির সবাই ভুত, প্রেত, আর অলৌকিক সব গল্প করতে থাকে। প্রবীনেরা মজা পান গল্প বলতে, আর সৃষ্টি করতে থাকেন ইচ্ছে মতোন নানান রকম গল্প। সবাই শোনে, আবার শোনেনা, কিন্তু তাদের ভিতরে ভয়ের কুয়াশা নামতে থাকে, জমাট বাঁধতে থাকে। ভয়ের গল্প শুনতে শুনতে বা নিজেদের ভিতরে ভয়ের গল্প সৃষ্টি করতে করতে তারা নিজেদের ভিতরে গুটিয়ে যেতে থাকে। কেউ কেউ নিজেদের মনে সৃষ্টি হওয়া কাহিনিতেই ভয় পেয়ে জ্বরে ভুগে মারা যায় ভয় পাওয়ার প্রায় সাথে সাথেই।
এরকম এক পর্যায়ে ক্যান্টনমেণ্ট থেকে মিলিটারি আসে হাজারে হাজারে। ঢাকার থেকে আসে সাংবাদিকেরা। কিন্তু পরদিন সকালেই তাদের সবাই লাশ হয়ে পড়ে থাকে রাস্তায় রাস্তায়। শহর হয়ে পড়ে পুলিশ-মিলিটারিহীন পুলিশ-মিলিটারির লাশের শহর। এভাবে কেটে যায় কয়েকটি দিন। কতোদিন তা তাদের আর খেয়াল থাকেনা। তাদের আর খাওয়া দাওয়ার ইচ্ছে থাকে না। না খেয়ে না পান করেই তারা বেঁচে থাকতে থাকে। দিনের বেলায় কেউ কেউ রাস্তায় বের হয়, আর লাশের মতো হাটতে থাকে। কেউ কারো দিকে তাকায়না, কেউ কারো সাথে কথা বলেনা, তারা যেনো কিছু শুনতেও পায় না। যেনো তারা জীবিত না, রক্তমাংসের না। তারা বাড়িতে সারারাত আলো জ্বালিয়ে ঘুমাতে থাকে, আবার ঘুমাতে থাকে না। শহরে সব রাস্তায় বিভিন্ন জন্তুর পায়ের ছাঁপ দেখা যেতে থাকে। কিন্তু সবার ভয়ের বোধটা দূর্বল হয়ে যেতে থাকে, তাদের ভিতরটা অবশ হয়ে যেতে থাকে, অবশ হয়ে যায়। একপর্যায়ে তারা নিজেদের বাড়ির ভিতরে চিৎকার শুনতে শুরু করে, আর হৃৎপিন্ড বন্ধ হয়ে মরে পড়তে থাকে। মানুষ চোখের সামনে অনেককিছু দেখতে শুরু করে।
একজন বৃদ্ধ দেখে একপাল নগ্ন নারী তাকে ঘিরে নাচছে। তার হৃৎপিন্ডটি ফেটে যায়।
একরাতে এক বৃদ্ধা নার্স দেখে তার গলা টিপে ধরছে অসংখ্য শিশুর হাত। সে উন্মাদ হয়ে ছুটে গিয়ে আঘাত খায় ঘরের দেয়ালে। তার পিষ্ট শরীর দলা পাঁকিয়ে দেয়ালের পাশেই পড়ে থাকে।
এক আমলা তার পাছার ভিতরে বাঁশ ঢোকার ব্যথা অনুভব করে চিৎকার করেই মারা যায়।
এক প্রাক্তন মন্ত্রী নিজের পেটে নিজেই ছুরি মেরে মেরে মারা যায়।
বড়ো মসজিদের বড়ো হুজুর নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে কোরআন তেলওয়াৎ করতে করতে দৌঁড়াতে থাকে। সে ছাই হয়ে সারা শহরে ছড়িয়ে পড়ে।
একবাড়ির এক ৯৭ বছর বয়স্ক বুড়ো বাড়ির কাজের মেয়ের দুধ খামছে ধরে, আর মেয়েটা রক্তক্ষরণ হতে হতে মারা যায়। পরে সবাই বুঝতে পারে বুড়ো আগেই মরে গিয়েছিলো আর তাই কেউ তার হাত ছাড়াতে পারে নি।
আর এক বাড়িতে আর এক বুড়ো আর এক কাজের মেয়ের দুধ খামছে ধরে। ডাক্তার আনা হয়। ডাক্তার বলে বুড়ো হাত কেটে ফেলতে। সবাই হৈ হৈ করে ওঠে। সবাই মেয়েটার দুধ কেটে ফেলে দিয়ে বুড়োর হাত ছাড়ায়।
একদল যুবক আত্মহত্যা করে একদল যুবতিকে ধর্ষনের পরে। ঘটনাটা ঘটে ঢাকার রোড ব্রিজের উপরে।
অনেকে তাদের বাড়ির ছাদের থেকে লাফ দিয়ে পড়ে মরে।
একদল হুজুর মরে পানিতে ডুবে।
এক স্কুলের হেডমাষ্টারের চিৎকার শুনে সবাই ছুটে এসে দেখে তার সারা শরীরে সজারুর কাটা, আর সে মৃত।
এর মাঝে শহরে দেখা দেয় গলা কাটা সাপ। গলা কাটা সাপের ভয়ে মানুষ কুঁকড়ে যেতে থাকে। নিজেদের ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকে। সব ছিদ্রে সিমেণ্ট লাগিয়ে দেয়। শুধু কিছু নেটের ভিতর দিয়ে বাতাস আসতে থাকে। আর এসবই তারা করে যন্ত্রের মতো। অনেকটা নিজেদের অজান্তেই।
বেশ কিছু ঘটনা ঘটে এমনঃ-
১। এক মা তার তিন বাচ্চাকে গলা টিপে মারে।
২। এক দম্পতি তাদের নবজাতক বাচ্চাকে মুখে নুন দিয়ে মারে।
৩। ফাতেমা হাস্পাতালে নবজাতক বাচ্চাদেরকে শুঁয়ো পোকায় হুল ফুটিয়ে মারে।
৪। একজন বাপ তার নয় মেয়েকে ধর্ষন করে। তারপর হাসতে হাসতে মারা যায়। তার মেয়েরা আত্মহত্যা করে।
৫। নারীরা তাদের সব সৌন্দর্যে এসিড ঢালতে থাকে।
৬। অনেকে তাদের মাথা ফাটিয়ে ঘিলু ফেলে দিতে থাকে।
৭। এক দাদা তার বউকে উলঙ্গ করে তার পাছায় আগুন লাগিয়ে দেয়।
আরো বেশ কিছু ঘটনা ঘটে এমনঃ-
১। এক ঝাক বাঁদুড় এক দল ডাক্তারের রক্ত চুষে নেয়।
২। কিছু টিকটিকি একদল টুপি ধর্ষন করে।
৩। স্থানীয় নেতাদের পাছা দিয়ে বের হতে থাকে তেলাপোকা।
৪। চোরদের হাত-পা কাটা যেতে থাকে রাতে।
৫। ডাকাতদের গলা কাটা যেতে থাকে দিন-দুপুরে।
৬। ব্যবসায়িদের ঠুকিয়ে ঠুকিয়ে মারে মুরগিরা।
৭। ঘুষখোঁরেরা মরে আত্মার আক্রমণে
আবার আরো বেশ কিছু ঘটনা ঘটে এমনঃ-
১। এক ছেলে তার মার গালে চড় মারে।
২। এক মাষ্টার তার বউকে পিটিয়ে মারে দরজার খিঁল দিয়ে।
৩। একদল মহিলা তাদের স্বামীদের শিশ্ন কেটে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেলে।
৪। একজন খুব ভালো এক ছাত্র রাস্তায় দাঁড়িয়ে গালাগাল করতে থাকে।
৫। একদল নারী শরীর বেচতে থাকে না মরা পর্যন্ত।
৬। একজন ইঞ্জিনিয়ার তার বাড়ির সবাইকে ব্লেড দিয়ে কেটে কেটে মারে।
৭। এক কবি কবিতার বইয়ের থেকে শব্দ খুঁটে খুঁটে থেকে থাকে।
ঘটনার শুরু ৪৮ দিন পরে যশোর শহরের মৃত্যু হয়। শহরে আর কেউ বেঁচে থাকে না। শুধু একটি ১২/১৩ বছর বয়স্ক মেয়ে হেঁটে হেঁটে কলকাতার দিকে যেতে থাকে। শুধু সেই বেঁচে যায়। এরপর জন্তুর পায়ের ছাপ দেখা যেতে থাকে বাঙলাদেশের বিভিন্ন শহরে। কেউ ঘরের বাইরে যেতে পারে না। আর গেলে আর ফিরে আসে না। জীবন চলতে থাকে নিজেরদের ঘরে বন্দি হয়ে। আর মানুষ মরতে থাকে এক এক রকম ভয়ে, যা তাদের ভিতরে থেকে উঠে আসতে থাকে। সারা বাঙলাদেশ হয়ে ওঠে যশোর।
সিলেটে এক বালিকার যোনিতে গজাতে থাকে খেজুরের কাটা।
খুলনায় এক উকিলের চোখে ছাগলের পায়ের খোঁচায় তার চোখ নষ্ট হয়ে যায়, ও রক্ত ঝরে ঝরে সে মারা যায়।
চট্টগ্রামে একদল মহিলা গাছের থেকে লাফিয়ে পড়ে পুরুষদের উপর। তারা সবাই মারা যায়। তাদের শরীরে দেখা যায় অসংখ্য মৌমাছির হুল।
বরিশালের এক বাড়িতে একজন বালকের শরীর থেকে এক খাবলা মাংস খুবলে নেয় এক অদৃশ্য বাঘে। তারপরে সবার শরীর থেকে বাঘ মাংস খুবলে নিতে থাকে।
কুমিল্লার রাস্তায় রাস্তায় মানুষ সঙ্গম করতে থাকে, আর সঙ্গম শেষে তাদেরকে শকুনে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে থাকে।
একের পর পর এক জেলা মরতে থাকে। বাঙলাদেশ মরতে থাকে।
সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী দেশ ও বিশ্বের উদ্দেশ্যে ভাষন দেওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। তিনি বাথরুমে ঢুকেছেন চল্লিশ মিনিট আগে। সবাই উদ্বীগ্ন হয়ে অপেক্ষায় আছে। এক পর্যায়ে মন্ত্রীরা বাথরুমের দরজা ভেঙ্গে ঢুকে দেখে প্রধানমন্ত্রী রুপান্তরিত হয়েছে বিষ্ঠায়, আর সেই বিষ্ঠায় কঁড়াপোকার ছড়াছড়ি। মন্ত্রীরা একে অন্যের গলা টিপে হত্যা করতে শুরু করে। আর তার ভিতরে শুরু হয় সজারুর কাটার ঝড়, যা গেঁথে যেতে থাকে মন্ত্রীদের আর আমলাদের চোখে-মুখে, বুকে, আর পাছায়। এই সব কাণ্ড সারা দেশ ও বিশ্বের মানুষ লাইভ টেলিভিশনে দেখতে থাকে।
আর তার পরপরই সমগ্র বিশ্বে একটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
২০০২
ছেলেদের শিশ্ন নিয়ে কিছু বলেননি,তাদের শিশ্নগুলু ঠিক মতো আছে নাকি একদল কামুক কুমারি ছেলেদের শিশ্ন শসার মতো চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলেছে । :lotpot:
@নিগ্রো,
গল্পটির এরকম ভয়ঙ্কর surrealistic দুনিয়ার collage লেখায় অনেক কিছুই সম্ভব!
ধন্যবাদ।
আতঙ্ক একটি সংক্রামক ব্যাধি .. ঘটনার শুরুর দিনে পলাশ মুক্তমনার বাংলা ব্লগ পড়ছিলেন ..
@পরমার্থ,
ভালো বলেছেন। একটা সাইক্লিক ব্যাপার হয়ে গেলো আরকি!
ধন্যবাদ।