প্রথম পর্ব
ডেমোক্রিটাসঃ দূর কালের এক দূরদর্শী দার্শনিক
(পর্ব-২)
পারমাণবিক বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি
By convention there is sweet, by convention there is bitter, by convention hot and cold, by convention color; but in reality there are only atoms and void. – Democritus
শুধুমাত্র পরমাণু এবং তাদের বিচলনকে বর্ণনা করেই ডেমোক্রিটাস সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে পরমাণু তত্ত্বকে পার্থিব বা জাগতিক এবং স্বর্গীয় বা অজাগতিক বস্তুসমূহের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করেছিলেন এবং সৃষ্টি করেছিলেন নতুন এক বিশ্ব জগতের ধারণা। তার সৃষ্ট এই বিশ্ব জগতের ধারণা পরবর্তীতে বৈজ্ঞানিক প্রধাণ ধারার দার্শনিক প্লেটো, এরিস্টটল বা টলেমির গড়া বিশ্ব জগতের ধারণার থেকে ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের।
ডেমোক্রিটাসের মতে, সৃষ্টি পুরোপুরিই এলোপাথারি প্রক্রিয়া। পরমাণুসমূহ বিশৃঙ্খলভাবে শূন্যের মধ্য দিয়ে ছোটাছুটি করার সময় একে অন্যের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। বৃহৎ কণিকাগুলোর প্রবণতা হচ্ছে একে অন্যকে শৃঙ্খলে আবদ্ধ করা এবং এর মাধ্যমে গুচ্ছ তৈরি করা। এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে এর অভ্যন্তরে তুলনামূলকভাবে ভারী ‘মৃত্তিকা’ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত । এর মধ্যে হালকা কণাগুলো এই মৃত্তিকাকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকার গতিতে ঘুরতে থাকে। ফলশ্রুতিতে তৈরি হয় বাতাস বা আগুনের মত হালকা বস্তুসমূহ। কিন্ত কিছু ভারী খণ্ড রয়ে যায় সুদূর আকাশে। এগুলোই পরিণত হয় গ্রহ-নক্ষত্র এবং অন্যান্য স্বর্গীয় বা অপার্থিব বস্তুতে।
ডেমোক্রিটাস বলেন যে, শুধুমাত্র অপার্থিব এবং অন্যান্য নিরেট বস্তুই যে শূন্যস্থানে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ারত পরমাণু থেকে সৃষ্টি হয়েছে তা নয়। প্রকৃতির অন্যান্য বিষয়গুলো, যেগুলোকে সাধারণত অস্পর্শনীয় (Intangible) বলে মনে করা হয় তাও পরমাণু দিয়ে তৈরি। উদাহরণ হিসাবে তাপমাত্রা, রঙ, হরফ, গন্ধ বা স্বাদ ইত্যাদি অনুভূতির ক্ষেত্রে ডেমোক্রিটাস তার টিকে থাকা এক ছিন্নপত্রে বলেছেন,
প্রচলিত রীতি অনুযায়ী রয়েছে মিষ্টি স্বাদ, তিতা স্বাদ, রঙ, গরম বা ঠান্ডা। কিন্তু বাস্তবে আসলে রয়েছে শুধুমাত্র পরমাণু আর শূন্যতা।
ডেমোক্রিটাস মত দিয়েছেন যে, এমনকি আত্মাও পরমাণু দিয়ে তৈরি। বিশেষ করে খুবই হালকা, নিগুঢ়, এবং গতিময় পরমাণু দিয়ে গঠিত হয়েছে আত্মা। এই বিশেষ পরমাণুগুলো মানুষ বা পশুপাখির শরীরে ঢোকার আগ পর্যন্ত বাতাসে কুণ্ডলী আকারে জড়ো হয়ে ভেসে থাকে। শরীরে ঢোকার পর শ্বাস-প্রশ্বাস আত্মাকে শরীরের ভিতর আটকে রাখে। এরিস্টটল (Aristotle) ডেমোক্রিটাস বর্ণিত এই প্রক্রিয়াকে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবেঃ
ডেমোক্রিটাসের মতে প্রাণীকূলের ক্ষেত্রে শ্বাস-প্রশ্বাসই আত্মাকে শরীর থেকে বাইরে চলে যেতে প্রতিরোধ করে…… বাতাসে অনেক কণিকা (গোলাকার এবং অতি ক্ষুদ্র) আছে যাদেরকে তিনি আত্মা এবং মন বলে চিহ্নিত করেছেন। আমরা যখন শ্বাস নেই তখন বাতাস আমাদের শরীরের মধ্যে ঢুকে যায়। আর তারই সাথে সাথে এগুলোও শরীরের মধ্যে প্রবেশ করে। বহিস্থঃ চাপকে সহ্য করে শ্বাস-প্রশ্বাস আত্মাকে আটকে রাখে শরীরের মধ্যে। এভাবেই ডেমোক্রিটাস কিভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে জীবন ও মৃত্যু জড়িত তা ব্যাখ্যা করেছেন। যখন চারপাশের বাতাস (ফুসফুসের মধ্যকার) এমনভাবে আত্মাকে চেপে ধরে যে প্রাণী আর শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে না তখনই মৃত্যু ঘটে……মৃত্যু হচ্ছে চারপাশের বাতাসের চাপে পরমাণু দিয়ে তৈরি আত্মার দেহ হতে নির্গমণ।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কিভাবে পরমাণু একত্রিত হয় সে সম্পর্কে ডেমোক্রিটাসের ধারণা পুরোপুরি অচল এবং তার পৃথিবী কেন্দ্রিক বিশ্বজগতের ধারণা এবং কিভাবে পার্থক্যজনিত পরমাণুর কারণে বিভিন্ন অনুভূতির উদ্ভব সমানভাবে ত্রুটিযুক্ত। এ ছাড়াও আধুনিক বিজ্ঞান এখন পর্যন্ত তার আত্মার ধারণার সমর্থনে কোন প্রমাণও খুঁজে পায়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও আশ্চর্যজনক যে, পরমাণুর মূল ধারণা বিষয়ে তার চিন্তাভাবনা সঠিক ছিল। প্রকৃতপক্ষেই পরমাণুসমূহ বৈচিত্র্যময় উপায়ে একত্রিত হয়ে প্রকৃতির বিভিন্ন উপাদান সৃষ্টি করে থাকে। তিনি খুব সঠিকভাবেই যুক্তি দিয়েছিলেন যে, শূন্য থেকে বস্তু তৈরি করা যায় না আবার একে ধ্বংস করেও শূন্যতায় ফিরে যাওয়া যায় না। আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানীরাও এই তত্ত্বকে মেনে নিয়েছেন। অধিকন্তু, তার সুপ্রাচীন বস্তুর মেঘমালার বর্ণনা, যার ভারী অংশ থেকে তৈরি হয়েছে পৃথিবীসহ স্বর্গীয় বস্তুসমূহ এবং স্বর্গীয় বস্তুসমূহ যে একটি জীবনচক্রের মধ্য দিয়ে যায় সেই বিবরণ অদ্ভুতভাবে সৌরজগতের জন্ম এবং মৃত্যু প্রক্রিয়ার আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে মিলে যায়। ফারিংটন (Farrington) বলেছেন,
ডেমোক্রিটাসের সময়কার মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞানের অবস্থা বিবেচনায় আনলে, তার বিশ্বজগত সম্পর্কে ধারণাকে বৈজ্ঞানিক চিন্তার ইতিহাসে অন্যতম সেরা সাফল্য হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে দেওয়া যায়।
সবকিছুর আসল কারণ
I would rather discover one scientific fact than become King of Persia – Democritus.
ডেমোক্রিটাসের পরমাণু তত্ত্ব ছিল বিশাল এবং ব্যাপক বিস্তৃত। প্রাকৃতিক অসংখ্য প্রপঞ্চকে ব্যাখ্যা করেছে তার এই তত্ত্ব। ছুঁয়ে গেছে অসংখ্য বিষয়কে। তিনি কোন নির্দিষ্ট একটা সময়ে তত্ত্বটি দাঁড় করাননি। বরং তার সারা জীবন ধরে এই তত্ত্বকে বিস্তৃত এবং নিখুঁত করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। এর জন্য অবশ্য বিরাট সময়ও হাতে পেয়েছিলেন তিনি। প্রায় শত বছর বেঁচেছিলেন তিনি। (ডেমোক্রিটাস কত বছর বেঁচে ছিলেন সেটা নিয়ে অবশ্য আমি নিজেও দ্বিধান্বিত। উইকিপিডিয়া অনুযায়ী মৃত্যু হয়েছিল খ্রীষ্টপূর্ব ৩৭০ সালে। অন্যদিকে দুটো ভিন্ন বইতে আমি যথাক্রমে খ্রীষ্টপূর্ব ৩৬০ এবং খ্রীষ্টপূর্ব ৩৮৫ পেয়েছি)।
চল্লিশোর্ধ সময়ে ডেমোক্রিটাস তার ভ্রমণে ক্ষান্ত দেন এবং স্থায়ীভাবে তার নিজ শহর আবডেরাতে বসবাস শুরু করেন। প্রাচীন বিভিন্ন উৎস থেকে জানা যায় যে, উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সব টাকা পয়সাই তিনি পরবাসে খুঁইয়ে এসেছিলেন। ফলে প্রাথমিক অবস্থায় নিদারুণ দারিদ্রের মধ্যে পতিত হন তিনি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বিজ্ঞানী এবং লেখক হিসাবে তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে তার সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়ে যায় অতি দ্রুত। ডিওজেনেস লিখেছিলেন,
আবডেরাতে একটা বিচিত্র আইন ছিল……। যারা তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি বিদেশে গিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে তাদের দাফন শহর সীমানার মধ্যে করা যাবে না। এই অদ্ভুত আইনের কারণে তার মৃত্যুর পর তার লাশ শিয়াল কুকুরের ভক্ষ হবে এই আতংক থেকে ডেমোক্রিটাস জনসম্মুখে তার রচিত শ্রেষ্ঠতম গ্রন্থ Great Cosmos পাঠ করেন। এর ফলে তিনি নিজের জন্য বেশ বড়সড় অংকের বৃত্তি জোগাড় করে ফেলেন। শুধু তাই নয়, তারা তাকে খুশী হয়ে মূল্যবান ব্রোঞ্জের স্ট্যাচুও উপহার হিসেবে দিয়েছিল।
তারপর থেকে তাকে আর টাকা পয়সা নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি কখনো। টাকা পয়সার সমস্যা সমাধান হওয়া এবং জনগণের শ্রদ্ধা পাওয়ার ফলে তার পক্ষে সহজ হয়ে উঠে গবেষণাকর্ম পরিচালনা করা।
গোঁড়া বস্তুবাদী ডেমোক্রিটাস মৃত্যুকে কিভাবে নিয়েছিলেন তা অবশ্যই দারুণ কৌতুহল উদ্দীপক। তিনি কী তার সময়ের অন্য সব গ্রীকদের মত বিশ্বাস করতেন যে আত্মা অবিনশ্বর? নাকি তিনি পুরোপুরি বস্তুবাদী ধারণা থেকে এই বিশ্বাসে অটুট ছিলেন যে, মৃত্যুর মুহুর্তে পরমাণু দিয়ে তৈরি আত্মা দেহ ছেড়ে ভেসে যায় প্রকৃতির এলোপাতাড়ি এবং অবিনাশী কণিকার মিশ্রণ এবং শূন্যতার মঝে? তার লেখা এক খণ্ডিত কাগজে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তা দ্বিতীয় ধারণাকেই সমর্থন করেঃ
আমাদের নশ্বরতা কিভাবে প্রকৃতির মধ্যে বিলীন হয় সে সম্পর্কে কিছু লোকের কোন ধারণাই নেই। কিন্তু তারা জীবনের দুর্ভাগ্য সম্পর্কে খুব সচেতন এবং এই জীবনের পর অন্য জীবন আছে সেই গল্প বলে সবার মধ্যে আরো উদ্বেগ এবং ভীতি তৈরি করে দেয়।
ডিওজেনেসের লেখায় অবশ্য মৃত্যু সম্পর্কে দুটো ধারণারই সংমিশ্রণ দেখা যায়ঃ
ডেমোক্রিটাসের মতে মানবীয় কর্মকাণ্ডের সমাপ্তি হচ্ছে প্রশান্তি। যা আসে নীরবতা এবং ভয়, কুসংস্কার এবং অন্যান্য আবেগ থেকে মুক্ত আত্মার শক্তি থেকে। তিনি একে কল্যানও বলেছেন।
মৃত্যু সম্পর্কে ডেমোক্রিটাস যাই ভাবুন না কেন, তিনি জীবনকে উপভোগ করেছেন পরিপূর্ণভাবে। প্রাচীন সূত্র থেকে জানা যায় যে, তিনি চরম দুর্দশার সময়েও উৎফুল্ল থাকার জন্য সবাইকে উপদেশ দিতেন। শুধু উপদেশ দিয়েই ক্ষান্ত থাকতেন না। তিনি নিজেও তা পালন করতেন। ফলে সেই সময় তার ডাক নামই হয়ে গিয়েছিল ‘সদাহাস্যময় দার্শনিক’ হিসাবে। সুখী অথবা অসুখী যাই হোক না কেন, তার জীবন ছিল সৃষ্টিশীলতায় পরিপূর্ণ। আর হবেই না বা কেন। তিনি নিজেই একবার বলেছিলেন,
সমগ্র পারস্য রাজ্য পাওয়ার চেয়েও আমি বরং প্রকৃতির রহস্যের অন্তত একটা আসল কারণ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করবো।
তার সেই চেষ্টা যে বৃথা যায়নি সে কথা এখন বলাই বাহুল্য। সমস্ত ভুল অনুমান এবং খুঁত বা ত্রুটিকে বিবেচনায় এনেও তার পরমাণু সম্পর্কে বিশদ বর্ণনা ভবিষ্যত বিজ্ঞানীদেরকে সবচেয়ে আসল এবং মৌলিক কারণকে চিহ্নিত করে দিয়ে গেছে।
সম্পূর্ণ লেখাটি পিডিএফে পড়তে বা ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।
মায়ামি, ফ্লোরিডা। [email protected]
ডেমোক্রিটাসের দর্শন ও গ্রিক নামের প্রতিবর্ণীকরণ সম্পর্কে অনেক কিছু জানলাম।
ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
লিংক দুটো দেবার জন্য শিক্ষানবিশকে ধন্যবাদ।
আপনার প্রথম লিংক ধরে গ্রীক ভাষার প্রতিবর্ণীকরণের তালিকা এবং দ্বিতীয় লিংক থেকে উইকিপিডিয়া গ্রীক দার্শনিকদের নাম কীভাবে লিখেছে তা দেখলাম। কিন্তু একটা জিনিষ বুঝতে পারলাম না ঠিকঠাকমতো। এই তালিকাটা কে করেছে এবং কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে? এর গ্রহণযোগ্যতাই বা কতটুকু? বাংলা উইকিপিডিয়ার নিজেরই তৈরি করা নিশ্চয়ই, তাই না? এই প্রতিবর্ণী অনুসরণ করে দার্শনিকদের নামের যে উচ্চারণ আসছে, তাদের নামের উচ্চারণ কী গ্রীকে আদৌই সেরকম? তা যদি না হয় তবে খামোখা প্রতিবর্নীকরণ করে লাভটা কি? আমি যদি পশ্চিমা বিশ্বে ডেমোক্রিটাসকে দেমোক্রিতোস, লুক্রিশাসকে লুক্রেতিওস আর এপিকুরাসকে এপিকুরোস বলি তাহলেতো কার কথা বলছি সেটা বোঝাতেই জান বেরিয়ে যাবে।
পাতা দুটার লিংক মন্তব্যের উপরের লিংক বাটনের মাধ্যমে যোগ করেছিলাম। কিন্তু আসছে না। এই অপশনে কোন সমস্যা আছে বোধহয়। এবার সরাসরি লিংক দিয়ে দিচ্ছি।
উইকিপেডিয়া:বাংলা ভাষায় গ্রিক শব্দের প্রতিবর্ণীকরণ
প্রাক-সক্রেটীয় দর্শন
উপরের লিংক দুটোও যদি কাজ না করে তাহলে গুগলে “বাংলা ভাষঅয় গ্রিক শব্দের প্রতিবর্ণীকরণ” লিখে সার্চ দিন। উইকির লিংক পেয়ে যাবেন। আর “প্রাক-সক্রেটীয় দর্শন” লিখে সার্চ দিলে সে সময়কার দার্শনিকদের উইকি অনুসৃত নাম পেয়ে যাবেন।
সত্যি বলতে কি উইকিপিডিয়ায় আমরা সব নামকেই যার যার ভাষার নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবর্ণীকরণ করার ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু অতি প্রতিষ্ঠিত নামগুলো পরিবর্তনে অনেকেই বাধ সাধছেন। যেমন: এরিস্টটল, প্লেটো বা সক্রেটিস। এই তিনটি নাম বাংলা উইকিপিডিয়ায় এভাবেই আছে। যদিও আমি এর পক্ষে নই। তারপরও সবার সম্মতিক্রমে এভাবে রাখা হয়েছে। অন্য সবগুলোতেই প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা হয়েছে।
(লিঙ্কগুলো ঠিক করে দেওয়া হল -মডারেটর)
দেমোক্রিতোস, লুক্রেতিওস, এপিকুরোস – বাহ! বেশ মজার লাগছেতো নামগুলো। এরিস্টটল, প্লেটো আর সক্রেটিস নিশ্চয়ই তাহলে হবে এরিস্ততল, প্লেতো এবং সক্রেতিস তাই না? ডেমোক্রিটাসকে দেমোক্রিতোস করে দিলে আমার প্রবন্ধের শিরোনামে অনুপ্রাসের যে সামান্য ত্রুটি ছিল সেটাও দেখছি ত্রুটিমুক্ত হয়ে যায়। আপনার পরামর্শ অনুযায়ী ঠিক করে দেব বলেই ভাবছি।
গ্রীক দর্শনের উপর আমি সামান্য যেটুকু পড়াশোনা করার চেষ্টা করছি তা মূলত ইংরেজী ভাষায়। সে কারণেই ইংরেজী উচ্চারণেই নামগুলো রাখার চেষ্টা করেছিলাম। এমনকি বাংলাতেও ডেমোক্রিটাস বা লুক্রিশাসকে কীভাবে লেখে তাও আমার জানা নেই। অবশ্য প্লেটো বা এরিস্টটলকে ইংরেজী উচ্চারণ অনুযায়ীই বাংলাতে লেখা হয় বলেইতো জানি।
যাই হোক গ্রীক নামের প্রতিবর্ণীকরণের উইকিপিডিয়ার পাতাটা কিন্তু খুঁজে পেলাম না। গ্রীক দর্শনের উপর টুকটাক আরো কিছু লেখার ইচ্ছা আছে। পাতাটা পেলে নামগুলো গ্রীক উচ্চারণে লেখা যেতো।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ পড়ার জন্য এবং সুন্দর পরামর্শের জন্য।
দেমোক্রিতোসের জীবন ও কর্মের কথা পড়ে খুব ভাল লাগলো। দেমোক্রিতোসের অতি অগ্রসর চিন্তাধারা আমাদেরকে আরও গভীরভাবে ভাবতে উৎসাহিত করে। কিন্তু আমি দেমোক্রিতোসের চেয়ে এপিকুরোসের দ্বারা বেশী প্রভাবিত।
দেমোক্রিতোস বোধহয় বলেছিলেন, পরমাণুগুলো তাদের সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয় এবং এই বিচ্যুত হওয়াটা পূর্ব নির্ধারিত। অর্থাৎ তিনি নিয়তিবাদে বিশ্বাস করতেন। এপিকুরোস (epicurus) এসে কিন্তু নিয়তিবাদকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে পরমাণুর স্বাধীন ইচ্ছার প্রবর্তন করেছেন। তিনি বলেছেন, পরমাণুগুলো নিজেদের ইচ্ছাতেই সরলরেখা থেকে বিচ্যুত হতে পারে। এভাবেই নতুন কিছু গঠিত হয়। এই বিচ্যুত হওয়ার নাম তিনি দিয়েছিলেন সোয়ার্ভ। তাই এপিকুরোসের বস্তুবাদই বেশী ভালো লাগে। পরবর্তী লুক্রেতিওস কিন্তু এপিকুরোসের এই সোয়ার্ভ দিয়েই মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা ব্যাখ্যা করেছিলেন। এভাবেই বস্তুবাদ অনেক এগিয়ে গিয়েছিলো। তাই বর্তমানে এপিকুরোসের প্রভাবই বোধহয় বিজ্ঞানী মহলে বেশী।
প্রতিবর্ণীকরণ প্রমিত গ্রিক নিয়ম মেনে করলাম। আপনি ইংরেজি উচ্চারণগুলোই রেখেছেন। চাইলে মূল গ্রিক উচ্চারণ অনুসরণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে নিচের পৃষ্ঠা দুটো কাজে দিতে পারে:
Avijit Roy
নভেম্বর 26, 2008 at 9:38 অপরাহ্ন
–
ভাল লাগলো ডেমোক্রিটাসের উপরে লেখা পড়ে। গ্রীক দর্শন একসময় সারা পৃথিবী জুড়ে বহু মানুষকে আকৃষ্ট করেছিল। গ্রীক দর্শনে দুটো ধারা সবসময়ই বহমান ছিল – একটা হচ্ছে থেলিস, ডেমোক্রিটাস, লিউসেপ্পাসের নেতৃত্বে বস্তুবাদী দর্শন, আর আরেকটা হচ্ছে সক্রেটিস, প্লেটো আর এরিস্টিটলের নেতৃত্বে ভাববাদী দর্শন। দেমোক্রিটাস, লিউসেপ্পাস (এবং পরে এপিকিউরাস এবং লুক্রেশিয়াস) বস্তুবাদের যে ভিত্তি পলে পলে গড়ে তুলেছিলেন, তা পরব্ররতীতে এরিস্টটল আর তার ভাববাদী সাঙ্গপাঙ্গদের হাতে পড়ে বিলুপ্ত হয়।
তারপরো ডেমোক্রিটসের অবদান অসামান্য। তার পরমানুবাদ যে পরবর্তীতে বিজ্ঞানকে দারুনভাবে প্রভাবিত করেছিল, এটা অস্বিকার করার জো নেই। গ্যাসেন্ডি, নিউটন এবং জন ড্যাল্টন ঋণ স্বীকার করে গেছেন গ্রীক পরমাণুবাদের কাছে।
ড শহীদুল ইসলামের একটা খুব ভাল বই আছে বাজারে – ‘বিজ্ঞানের দর্শন’ নামে। এ বইটার প্রথম পর্বে চমৎকার আলচনা আছে এ নিয়ে।
বাই দ্য ওয়ে, মাউস ইউজ করে বাংলা লেখার একটা অপশন এড করলাম (বাংলা কিবোর্ড লেআউটের নিচে দেখেন)। একটু গুতায় দেখেন ত কাজ করে কিনা । আমি অনেকদিন ধরেই গুতাগুতি করছি এ নিয়ে। ইন্টারনেটে দেখলাম ভার্চুয়াল কিবোর্ডের উপর বেশ কিছু কাজ হয়েছে। আমি তাদের (একুশে) ডেভেলপ করা কিছু ফীচার একটু অদল বদল করে নিজের মত ব্যবহার করেছি। ফিচার এড করার পর মনে হল, একুশের মূল দেভেলপার মানচুমহারাকে ধন্যবাদ না জানালে নিজেকে ছোট করা হবে। আমি এখানে ামার লেখার মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গেলাম। ইণতারনেট থেকে এ ধরনের আর অনেক ছোটখাট রিসোর্স পেয়েছি। যেমন, কনভার্শনের জন্য হাসিন সাহেবের স্ত্রিপ্গুলো খুবই চমৎকার। মুর্শেদের ইউনিকোডে কনভার্শনের লিঙ্ক তো নীচেই দিয়েছি। ভাবছি রিসোর্সের জন্য আলাদা একটা পাতা খুলব, কিংবা ব্লগের নীচে কোথাও লিঙ্ক এড করব সবার কাজের কথা উল্লেখ করে। বাংলার উপরে যে কাজ হয়েছে তাই এতদিন জানতাম না। সত্যই গর্ব করার মত বিষয়।